সত্যধর্ম ও "প্রণব-মন্ত্র"
প্রণব মন্ত্র জানেনা এমন কেউ আছে কিনা সন্দেহ। আমাদের অজ্ঞাতসারেই আমরা জন্ম থেকেই প্রণব মন্ত্র উচ্চারণ করি। প্রণব কথাটার মানে প্রতিনিয়ত নতুন। কথিত আছে ব্রহ্মা সৃষ্টির প্রারম্ভে এই প্রণব মন্ত্র উচ্চারণ করেছিলেন। আর এই প্রণব থেকেই সমস্ত সৃষ্টি। অতএব ব্রহ্মা যদি আমাদের পিতা হন তবে প্রণব আমাদের আদি মাতা। এই প্রণবের গর্ভেই আমাদের সবার জন্ম।
সত্যধর্মেও প্রণব মন্ত্রের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ও বাধ্যতামূলক। গুরুদেব মহাত্মা গুরুনাথ সেনগুপ্তের মতে আমাদের সবার বীজ মন্ত্র প্রণবপুত হওয়া জরুরী। নতুবা বীজ মন্ত্রের শক্তি অপ্রকাশিত থাকে।
এখন কথা হচ্ছে এই প্রণব নিয়ে আলোচনা কেন ? আমি এতদিন জানতাম প্রণব হচ্ছে
"ওম ". এবং এটাকে ভাঙলে দাঁড়ায় অ-উ-ম। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর অর্থাৎ সৃষ্টি, স্থিতি, লয় এর কর্তা। বা সত্ত্বঃ, রজঃ, তমঃ এই তিন গুনের প্রতীক হচ্ছে "ওম"। কিন্তু সত্যধর্মের যে কোনো অনুষ্ঠানে যাই না কেন, সেখানে দেখতে পাই "ওম" কথাটার বানান লেখা আছে "ওঁং". এর কারন কী ? এই জিজ্ঞাসা থেকেই এই আলোচনা।
মহাত্মা গুরুনাথ কথিত প্রণব ব্যাখ্যায় যাবার আগে আমরা ছান্দোগ্য উপনিষদের থেকে জেনে নেবো সেখানে কি বলা হয়েছে।
ওম-ইত্যে-তদ্-অক্ষরম-উদগীথম-উপাসিত : অর্থাৎ উদ্গীথ শব্দ বাচ্য "ওম" এই অক্ষরকে উপাসনা করবে।
ওম-ইতি হ্যূদ্-গায়তি : ওম দিয়েই উদ্গীথ গান করা হয়। (উদ্গাতার গেয় অংশই উদ্গীথ।)
বাক্ ও প্রাণ যখন মিলিত হয় তখন উদ্গীথ জন্ম নেয়। এই উদ্গীথ - এর বর্ণাত্মক অক্ষরই ওম বা ওঁ।
"ওম" সম্মতিসূচক শব্দ। ওম অর্থাৎ হ্যাঁ।
আচার্য্য চানক্য বলছেন, বেদে "ওম" কে পরব্রহ্ম বলে স্বীকার করা হয়েছে। এই "ওম" শব্দের সঠিক প্রয়োগে, ও জ্ঞান অর্জনের দ্বারা, স্বর্গলোক এমনকি এই পার্থিব জগতের সমস্ত কিছুই লাভ করা যায়।
তান্ত্রিক সন্ধ্যা পদ্ধতির এক জায়গায় পড়ছিলাম স্ত্রী ও শূদ্রদের ওঁ বা ওম উচ্চারন করার অধিকার নেই। তারা বলবে "ঔং"অর্থাৎ দীর্ঘ প্রণব। যজুর্বেদীয় তর্পন পদ্ধতিতেও বলা আছে, শূদ্রগন "ওঁ" না বলে "নমঃ" বলবে।
এইবার মহাত্মা গুরুনাথের কথায় যাবো। আমরা জানি অ, উ, ম - এই তিনটি বর্ণ নিয়ে ওম বা ওঁ কিন্তু গুরুদেব বললেন, অ-আ-উ-ম্ এই চারটি বর্ণ নিয়ে প্রণব গঠিত। এবং প্রণব চার রকম -ওম , ওঁ, ওং, ওঁং।
আমরা জানতাম, অ-উ-ম। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর অর্থাৎ সৃষ্টি, স্থিতি, লয়। অর্থাৎ "অ " হচ্ছে ব্রহ্মা বা সৃষ্টিকর্তা, "উ" হচ্ছে বিষ্ণু অর্থাৎ পালনকর্তা এবং "ম" অর্থাৎ মহেশ্বের বা মহাদেব অর্থাৎ লয় কর্তা ।
গুরুদেব বললেন : অ-কার হচ্ছে পালন কর্তা , আ-কার হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা অর্থাৎ ব্রহ্ম, উ কারে লয় কর্তা অর্থাৎ তমোগুণাত্মক ব্রহ্ম এবং ম বা ং (অনুস্বার) শব্দে পরব্রহ্ম অর্থাৎ গুণাতীত ব্রহ্ম। আর চন্দ্রবিন্দু হচ্ছে স্বরের অনুনাসিকত্ব জ্ঞাপক।
এইখানে একটা কথা আমি বলি। প্রণব অর্থাৎ ওম, বা ওং বা ওঁ। একটা জিনিষ খেয়াল করুন, ও এর সঙ্গে ম বা ং বা ঁ যোগ করা আছে -। "ম" অর্থাৎ মহেশ্বর বা গুরুদেবের কথায় পরব্রহ্ম বা গুনাতীত ব্রহ্ম . কিন্তু,এই অনুস্বার বা চন্দ্রবিন্দু এর অর্থ কি ? বীজ মন্ত্রের অর্থ খুঁজতে গিয়ে দেখেছি ঁ (চন্দ্রবিন্দু ) হচ্ছে দুঃখ হরাত্মক বাচক। আর ং ( অনুস্বর ) হচ্ছে সুখপ্রদ ও দুঃখনাশন। কথাটা মোটামুটি একই।
গুরুদেব আবার বলছেন ওম , ওঁ, ওং, ওঁং - এই চারটিই প্রণব বাচক। কিন্তু ওঁং এর ব্যবহার অর্থাৎ সত্যধর্ম যে বানানে প্রণব ব্যবহার করে তা অন্য কোথাও প্রায় নেই বললেই চলে।
প্রথম "ওম" প্রনবটি তমোগুণের প্রতিপাদক, তাই জ্ঞানীরা ব্যবহার করেন না। গুরুনাথ বলছেন বিড়াল-রা যখন পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ বশতঃ আক্রমণে উদ্দত হয় - তখন অবিকল এই শব্দ বা প্রণব উচ্চারণ করে।
দ্বিতীয় প্রণব অর্থাৎ ওঁ নৈসর্গিক ঘটনায় শোনা যায়। বহু শাস্ত্রে, এই প্রণবের ব্যবহার পাওয়া যায়।
তৃতীয় প্রণব অর্থাৎ ওং কার ত্রিদেবাত্মক অর্থাৎ ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের প্রতীক। অনেকেই এটির ব্যবহার করেছেন। মনু এই ওং -এর উল্লেখ করেছেন।
চতুর্থ প্রণব অর্থাৎ ওঁং এর কথা প্রায় শোনা যায় না। তার কারন হচ্ছে - যাদের সগুন সাধনা সমাপ্ত না হয়েছে, তাদের পক্ষে এর ব্যবহার শক্তির অধিক কাজ বলে নির্দিষ্ট হয়। যাদের ভিতর থেকে জাতিভেদ জ্ঞান দূর হয় নাই, নির্গুণ সাধনার যোগ্য হন নাই, তাদের পক্ষে এই চতুর্থ প্রণব ব্যবহার করা উচিত নয়। সত্যধর্মে জাতিভেদ নেই, সগুন অর্থাৎ মূর্তি পূজার ব্যবস্থা নেই। তাই সত্যধর্মে এই ওঁং ব্যবহার অনুমিত। এবং এখানেই সত্যধর্ম ও অন্য ধর্মের মধ্যে পার্থক্য।
সত্যধর্মের "ওঁং" বানানের প্রতিধ্বনি পাই শিব পূরণে। সেখানে ভগবান শিব, ব্রহ্মা ও বিষ্ণুকে বলছেন : আমার পাঁচটা মুখ। আর তা হচ্ছে সৃষ্টি, পালন, সংহার, তিরোভাব এবং অনুগ্রহ। সৃষ্টি ভূমিতে, স্থিতি জলে,সংহার অগ্নিতে, তিরোভাব বায়ুতে,অনুগ্রহ আকাশে স্থিত। পৃথিবী থেকে সৃষ্টি, জল থেকে বৃদ্ধি, অগ্নিতে সংহার, বায়ুতে স্থানান্তর আর আকাশ সকলকে অনুগ্রহিত করে। সর্বপ্রথম আমার মুখ থেকে ওঁকার উদ্গারিত হয়। উত্তরদিকের মুখ থেকে অকার, পশ্চিম মুখ থেকে উকার, দক্ষিণ মুখ থেকে মকার, পূর্ব মুখ থেকে বিন্দু (ঁ) মধ্যের মুখ থেকে নাদ (ং) উচ্চারিত হয়েছে। এইভাবে পাঁচ অবয়ব দ্বারা "ওঁং"কার বিস্তারিত হয়েছে।
পরিশেষে গুরুদেব বলছেন : প্রণব আসলে ত্রিবর্ণাত্মক। আ বর্ণটি প্রথমটির অর্থাৎ অ এর উচ্চারণ ভেদ মাত্র।
প্রণবকে ত্রিবর্ণাত্মক, অর্থাৎ সত্ত্ব, রজ, তম গুনের প্রতীক বলা যেতে পারে। আবার পঞ্চবর্নাত্বক অর্থাৎ অ-আ-উ-ঊ-ম অর্থাৎ পঞ্চভূতের (ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ,
ব্যোম )-এর প্রতীক বলা যেতে পারে।
আবার একাক্ষর বলা যেতে পারে। অর্থাৎ অনুস্বার, চন্দ্রবিন্দু এগুলোকে বর্ণ থেকে বাদ দিয়ে এক অক্ষর বলা যেতে পারে। গুরুদেব বলছেন স্বরই পূর্ণ বর্ণ। কেবল স্বরেই পূর্ণমাত্রা আছে। ব্যঞ্জন পূর্ণ বর্ণ নহে। স্বর, স্বয়ং উচ্চারিত হতে পারে। কিন্তু ব্যঞ্জন, অন্যকে আশ্রয় করে উচ্চারিত হয়। সুতরং ও এবং ম্ এই দুটিতে মিলিত হয়ে যে ওম বা ওং হয়েছে, এঁকে এক বর্ণ বা এক অক্ষর বলা যেতে পারে। অতএব ব্যঞ্জন ও একটি স্বর একত্র থাকলে, এই দুটিকে একটি বর্ণ বলা হয়।
এর পরে গুরুদেব আর একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছেন। স্রষ্টা-সৃষ্টি-সৃষ্ট এ তিনই এক। কিন্তু এ সব কথা যতক্ষন সাধকের ব্রহ্মজ্ঞান না জন্মায় অর্থাৎ এক ব্রহ্মর জ্ঞান না জন্মায় ততক্ষন অনুধাবন করা যায় না। এইজন্য, যেমন সাধক, সে অনুযায়ী সে বোঝে বা তাকে সেইভাবে বোঝানো হয়। অর্থাৎ প্রণব এক-অক্ষর, আবার দুই-তিন-চার-পাঁচ অক্ষর বলে বর্ণনা করা হয়।
প্রণব অসীম শক্তির আধার। এই শক্তি অজ্ঞানীর কাছে সুপ্ত। জ্ঞানীর কাছে উদ্ভাসিত। এই প্রসঙ্গে একটা প্রচলিত গল্প বলি।
একজন গৃহী পুরুষ, সংসারে বীতশ্রদ্ধ হয়ে, এক আশ্রমে গিয়ে উপস্থিত হন। সেখানে গুরুদেবকে পেয়ে, তার কাছে আবদার করতে থাকেন, আমি সাধনা করতে চাই। আমাকে একটা গুহ্য মন্ত্র দিন। যা জপলে আমি মুক্তি লাভ করতে পারি।
গুরুদেব বললেন : তুমি আগে অগ্নির সেবা করো। তারপরে তোমাকে মন্ত্র দেব। গৃহী পুরুষ এক বছর ধরে যজ্ঞের কাঠ সংগ্রহ করা, যজ্ঞ প্রজ্জ্বলিত করা, অগ্নিকুন্ড পরিষ্কার করা ইত্যাদি কাজে লিপ্ত থাকলো। এর পর অধৈর্য্য হয়ে উঠলো।
গুরুদেবকে গিয়ে বললেন : একবছর হয়ে গেলো আমি এই আশ্রমে আছি। আপনার কথা অনুযায়ী অগ্নির সেবা করছি। আমাকে আপনি মন্ত্র দেবেন বলেছিলেন, কিন্তু আপনি এখনো আমাকে কিছু বলছেন না। আমি আর কতদিন অপেক্ষা করবো ? আমার তো সাধন ভজন কিছুই হচ্ছে না।
গুরুদেব বললেন : তোমার এখনো সময় হয় নি।
গৃহস্থ : একি বলছেন আপনি ? আমার পরে যারা এলো তারাও মন্ত্র পেয়ে গেলো। আমার এখনো সময় হয় নি ? বলে বিমর্ষ হয়ে, মুখ ফিরিয়ে হাটা দিল। গুরুদেব পিছন থেকে ডাক দিলেন। ঠিক আছে কাল ভোরে স্নান করে আমার কাছে এসো। কালই তোমার দীক্ষা হবে।
তো পরদিন তার ঘটা করে দীক্ষা হয়ে গেল। গুরুদেব বলে দিলেন : প্রতিদিন পাঁচ বার এই মন্ত্র জপ্ করবে। অর্থাৎ ভোরবেলা -সকালবেলা - দুপুরবেলা - সন্ধ্যাবেলা -এবং রাত্রি দ্বিপ্রহর কালে এই পাঁচ প্রহরে পাঁচ ঘন্টা জপ্ করবে। গৃহস্থের তো খুব আনন্দ হল। গুহ্য মন্ত্র পেয়ে গেছে।
এখন হলো কি, মন্ত্র জপার জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা ছিল। সেখানে গিয়ে সবাই জপ্ করতো। গৃহস্থও সেখানে গিয়ে জপ্ শুরু করলো।
এখন, ও যেই জপ্ শুরু করলো তখন শোনে একই ধ্বনি বাইরের থেকে ভেসে আসছে। ভাবলো গুরুদেবের দেওয়া মন্ত্রতো, নিশ্চই ওরই বলা মন্ত্র প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসছে।
প্রতিদিন একই জিনিস হওয়াতে ওর সন্দেহ হলো। আসলে মন্ত্রে ওর মন ছিলো না। ও চাইছিল কিছু অলৌকিক ঘটনা। কিন্তু মনতো সন্দেহে ভরা। আসন থেকে উঠে এদিক ওদিক দেখতে লাগলো। কোথাথেকে শব্দ আসছে ? আর দেখতে পেলো সব শিষ্য ওই একই মন্ত্র জপ্ করছে। অর্থাৎ গুরুদেব সবাইকে ওই একই মন্ত্র দান করছেন ? কিন্তু সবাইকে আলাদা করে। যাতে একেরটা অন্য কেউ জানতে না পারে। এবং সেটাও সবার পরিচিত কথা আর তা হচ্ছে "ওম" .
রাগে গড়গড় করতে করতে ও গুরুদেবের কাছে গেলো। বিস্তারিত বললো। এবং এও বললো - একেতো আমার জানা মন্ত্র আমার কানে কানে বলেছেন। মন্ত্র সব সময় গোপন হওয়া উচিত। তবু ভেবেছিলাম অন্যরা কেউ এটা জানে না। কিন্তু দেখছি আপনি একই মন্ত্র সবাইকে বলছেন - আর তাও একটা জানা শব্দ। এতে কি হবে ? গুরুদেব বললেন : তুমি কাল সকালে এসো। গৃহস্থ বিমর্ষ হয়ে ফিরে গেলো। ভাবলো আজই আশ্রম ত্যাগ করবে। কিন্তু ভাবলো : গুরুদেবের এতো শিষ্য। সবাই তাকে এত শ্রদ্ধা করে, নিশ্চয়ই কিছু কারন আছে। ঠিক আছে এতো দিন তো গেল আরতো একটা দিন। দেখা যাক।
পরদিন সকালে গুরুদেব একটা পাথরের টুকরো, যা আসলে মূল্যবান রত্ন, গৃহস্থকে দিয়ে বললো, বাজারে যাও এই পাথরটার মূল্য জেনে আসো। কিন্তু খবরদার পাথরটি বিক্রি করে এসো না। শুধু মূল্য যাচাই করে এসো।
গৃহস্থ পাথরটা নিয়ে প্রথমে সবজি ওয়ালার কাছে গেলো। ও তো প্রথমে কোনো মূল্যই দিতে চাইলো না। অনেক পীড়াপীড়িতে পাথরের ওজনের সবজি দিতে রাজি হলো।
এর পরে গেলো এক কুমোরের কাছে। কুমোর পাথরের পরিবর্তে কিছুই দিতে চাইলো না। এটা যেহেতু জল দিয়ে গলানো যাবে না তাই এটা তার কোনো কাজে লাগবে না।
এর পরে সে গেলো এক জহুরির কাছে। জহুরি এটা দেখে অবাক। বলে এটা আপনি কোথায় পেয়েছেন? এ জিনিস হয় চোর, বা অতি ধনী, বা সম্রাটদের কাছে থাকে। আপনি কোথায় পেলেন এটা ? গৃহস্থ, গুরুদেবের কথা বললো। তা শুনে জহুরি বললো - কোনো সম্রাট নিশ্চয়ই আপনার গুরুদেবকে এটা দান করেছেন। এটার মূল্য দেবার ক্ষমতা আমার নেই। আপনি কোনো বড়ো দোকানে যান।
গৃহস্থের এবার অবাক হবার পালা। গুরুদেবের কাছে এই অমূল্য সম্পদ অথচ অবলীলায় আমাকে বিশ্বাস করে দিয়ে দিয়েছেন। গুরুদেবের কাছে আরো বড়ো সম্পদ নিশ্চই আছে। এবং এটাও বুঝলেন গুরুদেব যে মন্ত্র তাকে দিয়েছেন তার মূল্য নিশ্চই আছে । যা আমি বুঝতে পারিনি।
ফিরে এসে গুরুদেবের পায়ে পড়ে অঝোরে কাঁদতে লাগলেন। গুরুদেব বললেন : আজ তুমি যোগ্য হলে, আজ তোমার সত্যিকারের দীক্ষা হলো। যাও অবিরত জপে মত্ত হও।
"ওম" বা প্রণবের মাহাত্য ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। অবিরত জপ্-ই এর উত্তর দিতে পারে।
পতঞ্জলি প্রণবের সন্মন্ধে বলছেন :
২৫ - তত্র নিরতিশয়ং সর্বজ্ঞ বীজম।
সেখানে সর্বজ্ঞ বীজ সদা সর্বদা বিরাজমান।
২৬ - পূর্বেষামপি গুরুঃ কালেন অনবচ্ছেদাৎ।
তিনি পূর্ব পূর্ব গুরুদেরও গুরু, কারন কাল দিয়ে তাকে ছেদন করা যায় না।
২৭ - তস্য বাচকঃ প্রণবঃ।
সেই বাচক অর্থাৎ শব্দই প্রণব বা ওঁ-কার।
২৮ - তৎ জপ তদ্ অর্থ ভাবনম্।
তৎ অর্থাৎ প্রণব বা ওঁ জপ করো, এবং তার অন্তর্নিহিত অর্থ ভাবো। তারই জপ্ তারই অর্থ ভাবনা।
২৯ - তৎ প্রত্যেক চেতন অধিগমঃ অপি অন্তরায় অভাবশ্চ।
তৎ অর্থাৎ এই ভাবে জপ্ করলে প্রত্যেক চেতনে অধিগমন হয় অর্থাৎ সমস্ত চেতনার জ্ঞান হয়, এবং সমস্ত অন্তরায় দূর হয় বা অন্তরায়ের অভাব হয়।
প্রণব সন্মন্ধে শব্দের বিরাম দেব। শেষ করার আগে শুধু একটা কথা বলবো :
গুরুদেব মহাত্মা গুরুনাথ সেনগুপ্ত যে ভাবে প্রণবের কথা বললেন, তাতে গুরুদেবের প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়ে গেলো।
মহাত্মা গুরুনাথের চরণে প্রণাম করি।
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment