Monday 23 July 2018

: সাফল্যের গোপন কথা :



বিবেকানন্দ বলতেন : তুমি যা চিন্তা করছো তুমি তাই হয়ে যাবে। তুমি কি চাও সেটা বড়ো কথা নয়, তুমি কি ভাবছো সেটা বড়ো কথা। জীবনে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের প্রকৃতির নিয়ম মেনে চলতে হয়। যাকে  বলে ভগবানের আইন।  বিধির বিধান।  বা কুদরত কি কানুন। আমাদের শরীর আকর্ষণের  কেন্দ্র বিন্দু মাত্র। এখানে পঞ্চভূত আকৃষ্ট হয়ে খেলা করছে। পৃথিবীর আকর্ষনে আমরা পৃথিবীবাসী হয়ে আছি।

১. যা চান, তাই ভাবুন
২. যা হোতে চান তাই ভাবুন
৩. যা চান না তা ভাবতে যাবেন না। 
৪. যা হতে চান না তা ভাবতে যাবেন না। 
৫. আমাদের ভাবনা অবিরত চলছে - শুধু আপনি আপনার ভাবনাকে সদর্থক করুন। 
৬. ঘুমিয়ে পড়ার আগে আপনার মূল্যবান ভাবনাকে টেনে আনুন।
৭. সকালে ঘুম থেকে উঠেই ভগবানকে স্মরণ  করুন।  তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানান, আরো একটা সুন্দর দিন আপনাকে উপহার দিয়েছেন।   

ঈশ্বরের আইন :

১. মহাবিশ্বের উৎপত্তির কারন  আকর্ষণ ও বিকর্ষণ। এটা আপনি বিশ্বাস করুন আর না করুন। আপনি বুঝুন আর না বুঝুন। আকর্ষণ ও বিকর্ষণ এর নিয়ম নিজের মতো কাজ করে চলেছে। আমি বলবো আপনাকে বুঝতে হবে না আপনি শুধু মেনে নিন।  আর যদি বুঝতে চান তবে কোয়ান্টাম ফিজিক্স পড়ুন আর বুঝে নিন। 

২. যে কোনো বস্তূ আসলে অসংখ্য বস্তুকণার সমষ্টি মাত্র। আকর্ষণ বিকর্ষণের চিরকালীন নিয়মের ফলেই বস্তূর সমষ্টিগত অবস্থা আমরা  চাক্ষুস করতে পারছি। এগুলো  বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে আমাদের চোখে ধরা পড়বে  না। আমরা ভাববো নেই।  আসলে আছে। 

৩. ঈশ্বরের  ভাবনা, এগুলোকে একবার জোড়া লাগাচ্ছে, আবার ভেঙে দিচ্ছে। ঈশ্বরের এই ভাবনা শক্তির একটা ক্ষুদ্রতম অংশ আছে আমাদের সবার মধ্যে। আমরা এই ভাবনার সাহায্যে আকর্ষণ-বিকর্ষণের মহাশক্তিকে কাজে লাগাতে পারি।  এটিও আপনি বিশ্বাস করুন আর না করুন তাতে কিছু এসে যায় না। বৃহৎ শক্তি বা পরম-ঈশ্বরের নিয়ম কারুর ধার ধারে না। 

৪. আমি আজ যেখানে আছি তা আমার পূর্ব ভাবনার ফল। আজ যা ভাবছি তা আমার ভবিষ্যৎ। আপনার আজকের ভাবনা আপনার ভবিষ্যতের  বীজ। যা আপনার ভবিষ্যৎ জীবন। 

৫. ভাবনাকে নিয়ন্ত্রিত করুন। কি ভাবছেন সেটা খেয়াল করুন। আর আপনি যা হতে চান সেই মতো ভাবুন। যা হতে চান না তা ভাববেন না। 

৬. মহাশক্তি বিষয় বোঝে।  না এবং হ্যাঁ এর পার্থক্য বোঝে না। তাই সঠিক ভাবে ভাবুন। ঈশ্বরের ভাষায় ভাবুন। যেমন :

সঠিক ভাবনা : আমি সাহসী হতে চাই। 
ভুল ভাবনা : আমি ভয় পেতে চাই না। 

আপনি যখনই বলছেন আমি ভয় পেতে চাই না। অমনি ভয় আপনাকে পেয়ে বসবে। কিন্তু আপনি যদি ভাবেন আমি সাহসী হতে চাই, তখন আপনাকে সাহসী করে তুলবে ঈশ্বর।  এটাই বিধির বিধান। 

আপনি যখনি ভাববেন আমি গরিব হতে চাই না।  তখনই আপনি গরিব হয়ে যাবেন ।  আর যদি ভাবেন আমি বড়লোক হতে চাই।  তখন আপনি বড়লোক হয়ে যাবেন। এটাই কুদরথ কী  কানুন।  

৭. ভগবানের ভাণ্ডারে অসীম সম্পদ।  আমরা চাই না তাই পাই না। আমরা খালি আমাদের অভাবের কথা ভাবি। তাই আমরা অভাবী হয়ে যাই। ঈশ্বরের কাছে অঢেল আছে, তিনি হাত খুলে বাড়িয়ে  আছেন আমাদের দেবার জন্য। আমরা চাইতে জানি না। আমরা ভাবি, আমাদের যোগ্যতা নেই। আমরা কি করে পাবো ? ঈশ্বর যোগ্যতা দেখেন না। তিনি আকুলতা দেখেন। যে চায় সেই পায়। শুধু চাইতে জানতে হবে। 

৮. কখন পাবেন ? ভগবানের কাছে একটা মানদণ্ড আছে, তা দিয়ে আপনার বিশ্বাস, আপনার ব্যাকুলতা, আপনার নির্ভরতা মাপেন।  সেটি যখন একটা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তখনি ঈশ্বর আপনাকে ভরিয়ে দেন। এই মুহূর্তেই আপনি সব পেতে পারেন, যদি আপনার নির্ভরতায় কোনো খাদ না থাকে।

৯. এর কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমান আছে কি ? কি নিয়ে এসেছিলেন আপনি ? সবই  তো এখান থেকে পেয়েছেন। আনন্দ এখানে  পেয়েছেন।  দুঃখ এখানে পেয়েছেন। মানুষ  কিছুই তৈরি করতে পারে না।  রূপান্তরিত করতে পারে মাত্র। পঞ্চভূতে সংসার। আর আমরা এই পঞ্চভূতের দ্বারাই রূপান্তর করছি মাত্র।  মানুষ, পুতুল  তৈরি করে।  মাটি তো ভগবানের। 
দেহটা কি আপনি বানিয়েছেন ? ভগবানের খেলার পুতুল আপনি। এই আকাশ, এই বাতাস, এই জল, এই মাটি, এই সূর্য  সবই তো ভগবানের।  আমরা বেঁচে আছি এদেরই দয়ায়।  

১০. ভগবান আপনাকে ভীষণ ভালো বাসে। আপনাকে জন্ম দেবার আগেই সব তৈরি করে রেখেছেন, আপনার জন্য। আপনার কাজ শুধু ভগবানকে ধন্যবান দেওয়া। ভগবানের  উপরে নির্ভর করা। 

ওঁং শান্তি শান্তি শান্তিঃ । 
ওঁং তৎ সৎ  ।।
     
  
  
  
      
    

Saturday 14 July 2018

"সত্যধর্মের আলোতে "গুরুতত্ত্ব" ( এক ) (গুরুবিনা কি সাধন হবে না ?



গুরুবিনা কি সাধন হবে না ?
"সত্যধর্মের আলোতে "গুরুতত্ত্ব"- এক 


সাধনার শেষ কথা হলো ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ। যে পথে গেলে ঈশ্বর অনুভূতি পাওয়া যাবে, সেটাই সাধন মার্গ । আর এই পথে যিনি হাত  ধরে নিয়ে যান, বা যিনি এই পথের সন্ধান দেন তিনি গুরুপদ বাচ্য।'গু' কথার মানে হচ্ছে অন্ধকার। আর 'রু' কথাটার মানে হচ্ছে আলো।  অন্ধকার থেকে যিনি আলোতে নিয়ে যান তিনিই গুরু।

জীবনপথে চলবার জন্য, প্রতিপদে আমাদের গুরু প্রয়োজন।
মহাত্মা গুরুনাথ বলছেন : গুরু আমাদের  সাতজন।

যাবতীয় ভক্তিভাজন জনই গুরু।
আচার্য্য আমাদের গুরু।
রাজা আমাদের গুরু।
 জন্মদাতা পিতা মাতা আমাদের মহাগুরু।
মন্ত্রদাতা  আমাদের পরম গুরু।
অাক্ষর গুরু হচ্ছে মন্ত্র।
গুরুশ্রেষ্ট পরাৎপর গুরু হচ্ছে পরম-ঈশ্বর।

আসলে সাধনার জগতে অর্থাৎ আধ্যাত্মিক জগতে মন্ত্রদাতা পরমগুরুর সাহায্য গ্রহণ আমাদের একান্ত প্রয়োজন। মহাত্মা গুরুনাথ বলছেন, এই মন্ত্রদাতা বা দীক্ষাদাতা গুরুর কর্তব্য হচ্ছে : ১. পাপ গ্রহণ ও অভেদজ্ঞান পূর্বক দীক্ষাদান।  ২. বিপদ হতে শিষ্যকে রক্ষা করা। ৩. তৃতীয় কর্তব্য, শিষ্যের উপযুক্ত অভিলাষ পূর্ন করা।

এই মন্ত্রদাতা গুরু কেমন গুণসম্পন্ন হবে তা একবার দেখুন :

১ ) সর্বশাস্ত্রপর - অর্থাৎ সব শাস্ত্র সম্পর্কে তার জ্ঞান থাকা আবশ্যক। তা সে সাহিত্য বলুন আর গণিত বলুন।

২) দক্ষ : সকল শাস্ত্র ও নানাবিধ ধর্মকর্মে সুনিপুন।

৩) সর্ব শাস্ত্রার্থবিদ : সমস্ত শাস্ত্রের প্রকৃত অর্থ তিনি জানেন।

৪) সুবচাঃ : অর্থাৎ এমন ভাবে সুবাক্যঃ বিন্যাসে কথা বলবেন যাতে শ্রোতার হৃদয় বিগলিত হয়।

৫)  সুন্দর :প্রেমময় অবস্থার পরাকাষ্ঠা প্রাপ্ত। যাকে  দেখলেই প্রেম করতে ইচ্ছা করে।

৬) বিকারশূন্য, সরল অন্তঃকরণ।

৭) কুলীন : জীবতত্ত্ব, প্রকৃতি তত্ত্ব, দিক, কাল, ও পঞ্চভূত - এই সব বিষয়ে জ্ঞান সম্পন্ন।

৮) শুভদর্শন : যিনি সব কিছুতেই শুভ দেখেন অর্থাৎ জগতের মঙ্গলসাধন জ্ঞান বিশিষ্ট।

৯) জিতেন্দ্রিয় : কাম. ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য্য - এই ছয়টি যার বশীভূত।

১০) সত্যবাদী : অর্থাৎ সত্য বই মিথ্যা বলেন না।

১১) ব্রাহ্মণ : ব্রহ্মজ্ঞ, ব্রহ্মদর্শী।

১২) শান্তমানস  : স্থির চিত্ত।

১৩) মাতাপিতার হীতে যিনি সর্বদা  যুক্ত।

১৪) সর্বকর্ম পরায়ণ।

১৫) আশ্ৰমী : যার হৃদয়ে সতত ঈশ্বর বিরাজমান।

১৬) দেশবাসী : স্থুল দেহধারী।

এর পরে আরো একটা সংযোজন করেছেন তা হচ্ছে, স্ত্রীলোকের কাছ থেকে  দীক্ষা নিলে তা প্রকৃত  দীক্ষা হয় না।
এখন কথা হচ্ছে, আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য  গুরুদেবের প্রয়োজন, এটা অনস্বীকারযোগ্য ।  কিন্তু যদি উপযুক্ত গুরু আমাদের না জোটে তা হলে আমরা কি করবো।  তাহলে কি হাত গুটিয়ে বসে থাকবো ?

মহাত্মা আর এক জায়গায় বলছেন : আমি মুক্ত কন্ঠে বলছি , যে প্রকৃত গুরু ভিন্ন অন্য  কারুর কাছ থেকে দীক্ষা গ্রহণ অপেক্ষা আজীবন অদীক্ষিত থাকা শত শত গুনে মঙ্গলদায়ক। যদি পরস্পর বিপরীত শাস্ত্র যুগ্মে অধিকারী, শাস্ত্রে মর্মজ্ঞ, কামাদিজাত গুন্ সমূহের লয়ে সমর্থ, নিয়ত পরম-ঈশ্বর পরায়ন ও জীবন মুক্ত গুরুলাভ করতে পারো, তবেই তাঁর নিকট দীক্ষা গ্রহণ করবে।

এখন আপনি ভাবুন তো এই গুরু আমরা কোথায় পাবো ? আর যদি কেউ থেকেও থাকেন তবে তিনি  আমাদের মতো সাধারণ সাধককে কেন দীক্ষা দেবেন ? তার কি দায়  পড়েছে  আমার পাপ গ্রহণের ? আমাকে বিপদ থেকে রক্ষা করার ? বা আমার অভিলষিত ইচ্ছা পূরণের  ?  তাহলে আমরা কি করবো ?
এই জিজ্ঞাসা থেকেই আজকের আলোচনা।

আসলে নিজেকে তৈরী করতে হবে। নিজেকে উপযুক্ত করে তুলতে হবে। শুধু গুরু করলেই আপনার
 সব পাপ ধুয়ে যাবে, আপনার  সব কল্যান  সাধিত হবে, এমন ভাবা আহম্মকের কাজ। এখনকার গুরুদের প্রতি যথাযথ সন্মান জানিয়ে বলছি, যে নিজের কল্যাণ চায়, তার কোনো মানুষ-গুরুর চক্করে পড়া  উচিত নয়।  কোনো মানুষকে গুরু না করলেও জগদীশ্বরের কৃপায় তার তত্ত্বজ্ঞান হতে পারে। আমার মতে , সৎসঙ্গ করুন , যতটা পারেন  ভালো কথা গ্রহণ করুন , নিজের জীবনে সেটা কার্যকরী করুন ।  কাউকে গুরু করতে যাবেন  না। তথাকথিত ব্যবসায়ী গুরুর পাল্লায় পড়বেন না।  যেখানে ভালো কথা শুনবেন, সেখান থেকে তা নিয়ে নিন ।  আর যেখানে সেটা পাবেন না, সেখান থেকে দূরে হাটুন ।

কোনো ব্যক্তিকে না ধরে পরম-আত্মাকে ধরুন ।  ব্যক্তির মধ্যে পূর্নতা থাকে না। পরম-আত্মার মধ্যে পূর্নতা থাকে। আমরা যদি স্থির চিত্তে, শুদ্ধ অন্তঃকরণে পরম-আত্মার কাছে বসি, তবে তিনি আমাদের জ্ঞান, ভক্তি  সবই   দেবেন।

ঈশ্বর যখন আমাদের শরীর  দিয়েছেন, তখন তিনি আমাদের বিবেকরূপী গুরুকেও দিয়েছেন। ভগবানের কাজে কখনো অপূর্নতা নেই। আপনি সেই বিবেকের আশ্রয় নেন। তাঁর  কথা শুনুন।  সেই মতো চলুন। বিবেকের চেয়ে বড়ো  কোনো গুরু নেই। যার নিজের বিবেকের প্রতি শ্রদ্ধা নেই, সে বাইরের গুরু করলেও কিছু লাভ হবে না।

মানুষ আসলে নিজেই নিজের মিত্র, আবার নিজেই নিজের শত্রূ। দেখুন কেউ আপনাকে  উদ্ধার করতে পারবে না, যদি না কিনা আপনি নিজের  উদ্ধার চান। আমি বলি আপনার পতনের জন্য আপনিই দায়ী।  আবার আপনার উদ্ধার আপনাকেই করতে হবে। ভগবান যার সঙ্গে আছেন, তার উদ্ধারের জন্য অন্য কারুর প্রয়োজন নেই।  আর ভগবান, তিনি তো অবশ্যই আপনার, আমার সবার মধ্যে আছেন। শ্রীমদ্ভগবৎ গীতায় (৬/৫) যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ বলছেন :

উদ্ধরেৎ আত্মনা আত্মানং ন আত্মানম অবসাদয়েৎ। 
আত্মৈব হি  আত্মনো বন্ধুঃ আত্মা এব রিপুরাত্মানঃ। ।

আত্মাই আত্মার উদ্ধার করবে,আত্মাকে কখনো অবসাদগ্রস্থ হতে দিও না। আত্মাই আত্মার বন্ধু, আত্মাই আত্মার শত্রূ।

গুরুদেব খাদ্য জোগাড় করে দিতে পারেন , আলো  দেখাতে পারেন।  কিন্তু খাবো তো আমি। আমার যদি ক্ষিদে না পায়, তা হলে গুরুর পরিবেশিত খাবার আমার কোন কাজে লাগবে ? আলো  তো গুরু  দেখাতে পারেন, কিন্তু চলতে হবে আমাকে। আমি যদি পা না বাড়াই, গুরু আমার কি করবে ?
এই জন্য নিজেকেই নিজে উপদেশ দিন । নিজেই নিজের গুরু হয়ে যান ।

দেহধারী গুরু খুঁজতে গেলে বাইরে যেতে হবে।  কিন্তু বিবেকরূপী ভগবান তো আমার-আপনার  সঙ্গেই আছেন। আপনি তার কথা শুনুন। তিনিই আসল গুরু। আচার্য্য চানক্য বলছেন, ফুলে যেমন গন্ধ আছে, কাঠে যেমন অগ্নি আছে, আখে যেমন গুড় আছে, তেমনি দেহের মধ্যে বিবেক আছে।  এই বিবেককে আমাদের জাগ্রত করতে হবে, এবং এই বিবেক দ্বারাই দেহের ভিতরের আত্মাকে জানতে হবে, আত্মাকে দেখতে হবে।

কত সাধু এলো-গেলো।  কত অবতার এলো গেলো।  আমাদের কি দুঃখ গেলো ? ধনী অনেক আছে, তাতে আমার কি যায় আসে। আমি যদি পুরুষাকার কাজ না লাগাই, আমাকে কে ধনী করতে পারে ?আপনার আগ্রহ বাড়ান। নিজেকে প্রশ্ন করুন।  নিজের মধ্যেই জবাব খুজুন। নিজেই নিজের আচার্য্য বোনে যান।

আমার যদি ব্যাকুলতা না থাকে, আমার যদি চেষ্টা না থাকে, হাজার গুরু করলেও আমার  কোনো উন্নতি হবে না। আমি যদি আন্তরিক না হই   স্বয়ং ভগবানও আমার ভালো করতে পারবে না। আর আমার যদি ব্যাকুলতা থাকে,  আমার যদি আন্তরিকতা থাকে, আমার যদি প্রবল আগ্রহ থাকে তবে ভালো গুরুও পাওয়া যাবে, ভগবানকেও পাওয়া যাবে। মাটিতে চিনি ফেলে রাখুন, কোত্থেকে পিঁপড়ে এসে যাবে, আপনি জানেন না। গাছে ফল পাঁকলে, কোত্থেকে কাঠবিড়াল, পাখি এসে যাবে তা আপনি জানেন না।  কিন্তু আসে। এটাই সত্য। আমরা যদি খাঁটি শিষ্য হতে পারি, তবে সত্যিকারের গুরু কোত্থেকে আসবেন, কবে আসবেন। তা আপনি-আমি জানি না। তবে আসবে এটা  নিশ্চিত।

জয়  জয়  গুরুদেবের জয়। 

সমাপ্ত। 





     






     

Friday 6 July 2018

ভগবানের আইন। বিধির বিধান। কুদরত কি কানুন।



 ভালো থাকার উপায় সম্পর্কে কয়েকটা কথা  বলি, 

বিবেকানন্দ বলতেন : তুমি যা চিন্তা করছো তুমি তাই হয়ে যাবে। তুমি কি চাও সেটা বড়ো কথা নয়, তুমি কি ভাবছো সেটা বড়ো কথা। জীবনে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের প্রকৃতির নিয়ম মেনে চলতে হয়। যাকে  বলে ভগবানের আইন।  বিধির বিধান।  বা কুদরত কি কানুন। আমাদের শরীর বিশ্বশক্তির অমোঘ নিয়ম, অর্থাৎ আকর্ষণের  কেন্দ্র বিন্দু মাত্র। এখানে পঞ্চভূত আকৃষ্ট হয়ে খেলা করছে। পৃথিবীর আকর্ষনে আমরা পৃথিবীবাসী হয়ে আছি।

ভালো থাকতে গেলে যা করতে হবে তা হলো :
 যা চান, তাই ভাবুন
 যা হোতে চান তাই ভাবুন
 যা চান না তা ভাবতে যাবেন না। 
 যা হতে চান না তা ভাবতে যাবেন না। 
 আমাদের ভাবনা অবিরত চলছে - শুধু আপনি আপনার ভাবনাকে সদর্থক করুন। 
 ঘুমিয়ে পড়ার আগে আপনার মূল্যবান ভাবনাকে টেনে আনুন। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিন একটা শুভদিন অতিবাহিত করবার জন্য। আর আগামীতে ঈশ্বরের কোলে মাথা রেখে সুখ নিদ্রার জন্য। 
 সকালে ঘুম থেকে উঠেই ঈশ্বরকে  স্মরণ  করুন।  তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানান, আরো একটা সুন্দর দিন তিনি আপনাকে উপহার দিয়েছেন।   

ঈশ্বরের জগতে কিছু  আইন বা নিয়ম  আছে  : যেমন 

মহাবিশ্বের উৎপত্তির কারন  আকর্ষণ ও বিকর্ষণ। এটা আপনি বিশ্বাস করুন আর না করুন। আপনি বুঝুন আর না বুঝুন। আকর্ষণ ও বিকর্ষণ এর নিয়ম নিজের মতো কাজ করে চলেছে। আমি বলবো আপনাকে বুঝতে হবে না আপনি শুধু মেনে নিন।  আর যদি বুঝতে চান তবে কোয়ান্টাম ফিজিক্স পড়ুন আর বুঝে নিন। আমরা তো অনেক কিছুই বুঝি না। প্রতিদিন টিভি দেখছি, কিন্তু কি ভাবে এই শব্দ, এই চলন্ত ছবি টিভিতে ধরা পড়ে তা আমরা জানিনা। আমরা খাই, হজম হয়, কিন্তু কি ভাবে হজম হয় তা জানি না। আমরা দেখি কিন্তু কি ভাবে এই দেখার কাজ সম্পন্ন হয় তা আমরা জানিনা। আমরা শুনি কিন্তু কি ভাবে এই শোনার কাজ সম্পন্ন হয় তা আমরা জানিনা। আমরা প্রতিনিয়ত নিঃস্বাস নিচ্ছি, প্রশ্বাস ছাড়ছি, কার নির্দেশে, কেনই বা করছি তা আমরা জানিনা , এমনি অনেক কিছুই আমরা জানিনা।  আমাদের জানার দরকার নেই, না জেনেই সব করছি, বা হচ্ছে।  


যে কোনো বস্তূ, আসলে অসংখ্য বস্তুকণার সমষ্টি মাত্র। আকর্ষণ বিকর্ষণের চিরকালীন নিয়মের ফলেই বস্তূর সমষ্টিগত অবস্থা আমরা  চাক্ষুস করতে পারছি। এগুলো  বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে আমাদের চোখে ধরা পড়বে  না। আমরা ভাববো নেই।  আসলে কিন্তু  আছে। 


ঈশ্বরের  ভাবনা, এগুলোকে একবার জোড়া লাগাচ্ছে, আবার ভেঙে দিচ্ছে। ঈশ্বরের এই ভাবনা শক্তির একটা ক্ষুদ্রতম অংশ আছে আমাদের সবার মধ্যে। আমরা এই ভাবনার সাহায্যে আকর্ষণ-বিকর্ষণের মহাশক্তিকে কাজে লাগাতে পারি।  এটিও আপনি বিশ্বাস করুন আর না করুন তাতে কিছু এসে যায় না। বৃহৎ শক্তি বা পরম-ঈশ্বরের নিয়ম কারুর ধার ধারে না। 


আমি আজ যেখানে আছি তা আমার পূর্ব বা আগের  ভাবনার ফল। আজ যা ভাবছি তা আমার ভবিষ্যৎ। আপনার আজকের ভাবনা আপনার ভবিষ্যতের  বীজ। যা আপনার ভবিষ্যৎ জীবন। 


ভাবনাকে নিয়ন্ত্রিত করুন। কি ভাবছেন সেটা খেয়াল করুন। আর আপনি যা হতে চান সেই মতো ভাবুন। যা হতে চান না তা ভাববেন না। 


মহাশক্তি বিষয় বোঝে।  না এবং হ্যাঁ এর পার্থক্য বোঝে না। তাই সঠিক ভাবে ভাবুন। ঈশ্বরের ভাষায় ভাবুন। যেমন :


সঠিক ভাবনা : আমি সাহসী হতে চাই। 

ভুল ভাবনা : আমি ভয় পেতে চাই না। 

আপনি যখনই বলছেন আমি ভয় পেতে চাই না। অমনি ভয় আপনাকে পেয়ে বসবে। কিন্তু আপনি যদি ভাবেন আমি সাহসী হতে চাই, তখন আপনাকে সাহসী করে তুলবে ঈশ্বর।  এটাই বিধির বিধান। 


আপনি যখনি ভাববেন আমি গরিব হতে চাই না।  তখনই আপনি গরিব হয়ে যাবেন ।  আর যদি ভাবেন আমি বড়লোক হতে চাই।  তখন আপনি বড়লোক হয়ে যাবেন। এটাই কুদরথ কী  কানুন।  


 ঈশ্বরের  ভাণ্ডারে অসীম সম্পদ।  আমরা চাই না তাই পাই না। আমরা খালি আমাদের অভাবের কথা ভাবি। তাই আমরা অভাবী হয়ে যাই। ঈশ্বরের কাছে অঢেল আছে, তিনি হাত খুলে বাড়িয়ে  আছেন আমাদের দেবার জন্য। আমরা চাইতে জানি না। আমরা ভাবি, আমাদের যোগ্যতা নেই। আমরা কি করে পাবো ? ঈশ্বর যোগ্যতা দেখেন না। তিনি আকুলতা দেখেন। যে চায় সেই পায়। শুধু চাইতে জানতে হবে। 


কখন পাবেন ? ঈশ্বরের  কাছে একটা মানদণ্ড আছে, তা দিয়ে আপনার বিশ্বাস, আপনার ব্যাকুলতা, আপনার নির্ভরতা মাপেন তিনি ।  সেটি যখন একটা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তখনি ঈশ্বর আপনাকে ভরিয়ে দেন। এই মুহূর্তেই আপনি সব পেতে পারেন, যদি আপনার নির্ভরতায় কোনো খাদ না থাকে।


এর কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমান আছে কি ? হ্যাঁ আছে।  আপনি বলুন তো,  কি নিয়ে এসেছিলেন আপনি ? সবই  তো এখান থেকে পেয়েছেন। আনন্দ এখানে  পেয়েছেন।  দুঃখ এখানে পেয়েছেন। মানুষ  কিছুই তৈরি করতে পারে না।  রূপান্তরিত করতে পারে মাত্র। পঞ্চভূতের  সংসার। আর আমরা এই পঞ্চভূতের দ্বারাই আমরা বস্তূর  রূপান্তর করছি মাত্র।  মানুষ, পুতুল  তৈরি করে।  মাটি তো ঈশ্বরের । 

দেহটা কি আপনি বানিয়েছেন ? ঈশ্বরের  খেলার পুতুল আপনি। এই আকাশ, এই বাতাস, এই জল, এই মাটি, এই সূর্য  সবই তো ঈশ্বরের ।  আমরা বেঁচে আছি এঁদেরই দয়ায়।  

ঈশ্বর  আপনাকে ভীষণ ভালো বাসেন। আপনাকে জন্ম দেবার আগেই সব তৈরি করে রেখেছেন তিনি , আপনার জন্য। আপনার কাজ শুধু ভগবানকে ধন্যবান দেওয়া। ভগবানের  উপরে নির্ভর করা। আপনার শুভবুদ্ধির উদয় হোক।  পরম পিতা পরম ঈশ্বর আপনার সার্বিক মঙ্গল করুন।    

     
ওম শান্তি ওম শান্তি ও শান্তিঃ।