Sunday 23 April 2017

কিসে আমাদের সত্যিকারের ভালো হবে ?

কিসে আমাদের সত্যিকারের ভালো হবে ?

সব বীজ বৃক্ষ হতে পারে , কিন্ত  হয় না। সমস্ত আত্মাই ঈশ্বরের বীজ । সমস্ত আত্মাই পরমাত্মায় মিলিত হতে পারে।  সম্ভাবনা সম্পূর্নই আছে।  কিন্ত হয় না।  কারণ কী  ? কি সেই বাঁধা, যা আমাদের পূর্ণ হতে দেয় না। কি করলে আমাদের কল্যাণ হবে ?

কোম্পানী যখন কোনো জিনিষ তৈরি করে, তখন প্যাকেটের গায়ে ছোট ছোট অক্ষরে ব্যবহারিক নির্দেশ লিখে দেয়।  আমরা সব সময় সেগুলো দেখি না।  আমাদের সুবিধা অনুযায়ী জিনিষের ব্যবহার করি।  তাতে করে জিনিষের আয়ু কমে যায়। ভগবান যখন জীবের সৃষ্টি করেছেন, তখন কিছু সাবধান বাণী বা ব্যবহারিক নির্দেশ দিয়ে ছিলেন।  আমরা যদি সেগুলো মেনে চলি তবে আমাদের কল্যান হতে পারে।
ভগবান বলছেন : তুমি  তোমার ইচ্ছানুযায়ী কর্ম করো, ফল হয় আমার ইচ্ছামতো। তুমি যদি আমার ইচ্ছা মতো কর্ম করো তো ফল হবে তোমার ইচ্ছা মতো। 
যা মঙ্গলময় তাই সত্যি।  যা সত্যি, তাই মঙ্গলময়।  সত্যকে জানবার চেষ্টা করো।  সত্য পথে চলবার চেষ্টা করো। সত্য আবরণে ঢাকা আছে। চমকানো আবরণে সত্য ঢাকা। চমক দেখে ভুলে যেও না।  আবরণ উন্মোচন করো।  সত্যকে উপলব্ধি করো। সত্যই  মঙ্গলময়।

 মানুষ স্বাদের পিছনে ছুটছে। স্বাদের জন্য মানুষ পাগল। কেননা স্বাদই মানুষের কাছে সত্য এবং আকর্ষণীয়।  কিন্ত সত্য স্বাদের মধ্যে নয়। 
মানুষ আরামের জন্য ছুটছে।  ভাবছে আরামের মধ্যেই তো আনন্দ। কিন্ত আরাম কষ্টকেই ডেকে আনছে। সমস্ত শিথিলতা, আলস্য আমাদের আনন্দ দেয়। কিন্ত আজকের  এই আলস্য আমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দেবে। 
মানুষ ভাবে সমস্যা থেকে ভাগতে  পারলেই সমস্যা মুক্ত হবো।  সমস্যামুক্ত হবার জন্য মানুষ নেশা করে। কিন্ত এতে সমস্যা কমে না বরং বাড়ে। 
মানুষ মনে করে মনোরঞ্জন করতে পারলেই আনন্দ। কিন্ত নিজেকে ধোকা দেবার জন্য মনোরঞ্জন হচ্ছে। 
এতে মনে হয় জীবনের মঙ্গলময় সত্য, আবরণে ঢাকা।  তা হলে সত্য কী ?
জীবনকে সরল বানাতে চাও তো কঠিন পথেই চলা শুরু করো। আর জীবনকে মুস্কিলে ফেলতে যদি চাও তবে আরামের পথে চলো। তুমি 
 যত মুশকিলের মোকাবিলা করবে, ততো মুশকিল তোমার থেকে ভেগে যাবে। আর যত আরামের পথে চলবে ততো আরাম তোমার কাছ থেকে ভেগে পড়বে। 

মুশকিল লাগে ভোর বেলা ওঠা। আর ভালো লাগে ভোর-বেলা বিছানা আঁকড়ে পড়ে থাকতে। চাদর জড়িয়ে সকালে বিছানায় কোলবালিশ নিয়ে শুয়ে থাকলে মনে হয় - স্বর্গ-তো এখানেই। বিছানাতেই স্বর্গের শান্তি। ওঠার ইচ্ছেই হচ্ছে না।  কিন্ত যদি ওই আরাম ত্যাগ করে বিছানা ছেড়ে, সকালের মুক্ত হাওয়ায় চার-চক্র ঘুরে আসো, যদি একটু প্রাণায়াম - ব্যায়াম  করো তবে তার পরিনাম কী  হবে? যে আরামের সাথে বিছানায় কাটায় সে পরবর্তী কালে ডাক্তারের চেম্বারে লাইন দেয়।  না জানি কতো কঠিন কঠিন রোগে তাকে ধরে, কত তেতো ওষুধ তাকে খেতে হয় , ইঞ্জেকশন  নিতে হয়, হাজার হাজার টাকা  ডাক্তারের হাতে দিয়ে আসে।

এই জন্যে বলছি আরামের পথে যাবে তো তোমার জীবন কঠিন হয়ে যাবে। আর যদি আরাম ছাড়তে পারো তবে জীবন হবে সহজ সরল।  আরাম তোমার পেছনে দৌড়বে। 

যে বাচ্চা স্কুল থেকে পালায়, সমস্যা থেকে ভাগতে  চায় , তাকে  সারাটা জীবন মুস্কিলে পড়তে হবে। আর যেদিন ও কঠিনের  সম্মুখীন হবে, সেদিন থেকে ওর জীবন সহজ সরল হয়ে যাবে।এই জন্যে কঠিনের  সম্মুখীন হও।  জীবন সহজ হবে, সরল হবে. জীবনের নিয়মগুলোকে বোঝার চেষ্টা করো। 
মানুষ স্বাদের প্রতি আকৃষ্ট , উপকারের প্রতি নয়। যেদিন স্বাদের বদলে উপকারের প্রতি আকৃষ্ট হবে সেদিন জীবন সহজ হবে।  মানুষ স্বাদের জন্যে ভিখারী হয়ে যায়। তেলেভাজার দোকানে,ফুসকার দোকানে, আলুকাবলির দোকানে, হাতে পাতার পাত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কেবলমাত্র স্বাদের আশায়।স্বাদ মানুষকে ভিখারির মতো রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দেয়। 
এই জন্য বলছি - সত্যকে বোঝার চেষ্টা কারো।  আপাতত যা 
মনোরঞ্জক, বাস্তবে সেটাই কষ্টের কারণ। আর আপাতত যা কষ্টকর  বাস্তবে সেটাই আরামদায়ক।সত্য পথে জীবন সহজ হবে ; সরল হবে........
মানুষ ভিড়ের পিছনে দৌড়োচ্ছে। যে মানুষ ভিড়ের পিছনে দৌড়ায় না , তার পিছনেই ভিড় দৌড়ায়। যে সত্যকে জেনেছে, সে নিজের ইচ্ছে  মতো চলে,ভবিষ্যতে তার পিছনেই ভিড় সব সময় লেগে থাকে। কিন্ত অসত্যকে  (আরাম,স্বাদ) যে সত্য ভেবেছে তার জীবনে কষ্ট লেগেই আছে। 
আবার বলছি, জীবনে সত্য-কি তা বোঝার চেষ্টা করো। আরামে আরাম নেই - কঠিনেই  আরাম। স্বাদে স্বাদ নেই নিবৃত্তিতেই নিরাময়।

পুরুষ্ট গদি ওয়ালা বিছানায় আরাম নেই, এ.সি. ঘরে আরাম নেই।  এ.সি. যদি লাগাতেই হয় তবে দেমাকের মধ্যে লাগাও। দেমাক ঠান্ডা থাকলে যেখানেই তুমি ঘুমাও তোমার ঘুম আসবে, ঘুম আরামের হবে।  আর যদি মন শান্ত না থাকে এ.সি. ঘর বলো আর ডানলপের গদিই  বলো - ছটফট করতে হবে, ঘুম আসবে না. পয়সা কামাই কম হোক, কিন্ত শান্তি কামাই বেশী  করে করো।  তবেই জীবন সহজ হবে, সরল হবে। 

চাহিদার সীমা রাখো।  যোগ্যতা অনুযায়ী চাইতে শেখো।  যোগ্যতা বাড়াও।  চাহিদা বাড়িও না।ভগবানের কাছে গুনের সাধনা করো। ভগবানের কাছে ভিক্ষা চেও না। ভগবান ভিখারিকে দেন না, গুনের অধিকারীকে দেন। প্রার্থনা করতে হয়, ভগবানের কাছে করো, ভিখারির  কাছে নয়।মানুষের কাছে সাহায্য জন্য হাত বাড়িও না সাহায্য  যদি চাইতেই হয় তবে ভগবানের কাছে চাও। 

সাময়িক দুশ্চিন্তা কোনো ব্যাপার নয়।  লাগাতার দুশ্চিন্তা মানুষকে রোগগ্রস্থ করে তোলে। দুশ্চিন্তা মোকাবেলা করতে শিখতে হবে।  সামান্য কষ্টে  ভেঙে পড়লে চলবে না। কষ্ট সহ্য করতে শিখতে হবে।  এমন হলে চলবে না যে, সমস্যা এলেই ভেঙে পড়বো। দুঃশ্চিন্তাকে প্রশ্রয় দিলে চলবেনা। ভেঙে পড়লে চলবে না। আজকাল বিজ্ঞানীরা বলছে - ৭০% রোগ  লাগাতার দুঃশ্চিন্তা থেকে হচ্ছে। আজ আমাদের জীবন ভীষণ  চাপগ্রস্থ হয়ে গেছে। সারাক্ষন আমরা চাপে আছি।  জীবন দৌড়ে প্রথম হবার আশায়, লাগাতার নিজেদেরকে চাপে  রাখছি। ফলত  এক চিন্তা,এক চাপ, এক অসুরক্ষা, এক ভয় আমাদের সর্বদা চাপে রাখছে। আমাদেরকে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ করে তুলছে। আর এর থেকেই আমাদের দুঃখ বেড়েই চলছে। 
ধন উপার্জনের জন্য আমরা উদয়-অস্ত খেটে  চলেছি। কিন্ত মনে রেখো ধন শুধু টাকা পয়সাই নয়। সন্মান, শান্তি, এগুলো আরো বড়ো  ধন। ঘরের লোকের সাথে প্রেম আরো বড়ো  ধন।  আর খুশি কেবল ধন উপার্জনেই নয়, কেবল পছন্দের জিনিষ  কেনাতেই নয়।  বিনা ধনেও তুমি খুশি হতে পারো। ছোট্ট একটু ভালোবাসার কথা তোমাকে অনেক খুশি দিতে পারে। 

ক্ষমা করতে শেখো।  ধন্যবাদী হয়ে বাঁচো। যে তোমার জন্য এতটুকু করেছে তাকে ধন্যবাদ দাও। যে তোমার জন্য কিছুই করেনি তাকেও ভালোবাসো। যে তোমার ক্ষতি করেছে তাকে ক্ষমা করে দাও।  যার জন্য তুমি অনেক করেছো, অথচ সে তোমাকে চিনতে পারছে না - তাকেও  তুমি ক্ষমা করে দাও।  তার জন্য ঈশ্বরের কাছে মঙ্গল প্রার্থনা করো।
 ধন্যবাদী হয়ে বাঁচো।  ভগবানকে ধন্যবাদ দাও। 
"ভগবান তোমাকে অশেষ ধন্যবাদ।  যা তুমি দিয়েছো তাতো অনেক। তোমার দেওয়ায় কিছু কমতি নেই।  কমতি আমার সামলানোর শক্তি। ভগবান তোমাকে লাখ লাখ প্রণাম। তোমার দানেই আমার জীবন। তোমার দানেই আমার রক্ষা।  তোমার দানেই আমার সমৃদ্ধি।তোমার দেওয়া দান তো আমার কাছে প্রসাদ। প্রসাদ কম হোক, বেশী হোক, প্রসাদ তো প্রসাদই। তোমাকে আমার সহস্র কোটি প্রণাম।  তোমার দেওয়া জমি, তোমার দেওয়া অন্ন ,তোমার দেওয়া প্রাণবায়ু, তোমার দেওয়া এই শরীর  - কোথাও তো তুমি কম দাওনি। কমতি হলো আমার প্রাণের আকুলতা - যা তোমাকে আমার দেওয়া উচিত। হে ঠাকুর, বাহ্যিক ধন কামাতে আমি মনের শান্তি নষ্ট করেছি।  আমাকে ক্ষমা করো।  কোলে তুলে নাও। "
ধন্যবাদী হয়ে যাও।  জীবনের সত্যকে জানো। 

সত্য তো এটাও  যে - পরিবারের সদস্য হওয়ার জন্য, তুমিও  পরিবারের জন্য।  সবার সাথে ভালোবাসা রাখো।  কিন্ত মোহ রেখো না।   
ওম্ সর্বেসাম্ স্বস্তির্ভবতুঃ
ওম্ সর্বেসাম্  শান্তির্ভবতুঃ 
ওম্ সর্বেসাম্ পূর্ণম্ ভবতুঃ
ওম্  সর্বেসাম্ মঙ্গলম্ ভবতুঃ
ওম্ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ