Show less
১৭.৩.২০২২
যোগসাধনার গুহ্যতত্ত্ব - শ্রীগীতা - পঞ্চম অধ্যায় - কর্ম্মসন্যাস যোগঃ
শ্লোক নং ৫/২১-২৩
বাহ্যস্পর্শেষু-অসক্তাত্মা বিন্দত্যাত্মনি যৎ সুখম
স ব্রহ্মযোগ-যুক্তাত্মা সূক্ষ্মম-অক্ষয়ম অশ্নুতে। (৫/২১)
বাহ্য বিষয়ে অনাসক্ত ও ব্রহ্ম-ভাবে সমাহিত ব্যক্তি আত্মাতে আনন্দ লাভ করেন। এই অবস্থায় তিনি অক্ষয় আনন্দ উপভোগ করেন।
----------------------------
১৮.৩.২০২২
যোগসাধনার গুহ্যতত্ত্ব - শ্রীগীতা - পঞ্চম অধ্যায় - কর্ম্মসন্যাস যোগঃ
শ্লোক নং ৫/২৪-২৬
যঃ অন্তঃসুখঃ-অন্তরামঃ-তথা-অন্তর্য্যোতিঃ-এব যঃ
স যোগী ব্রহ্মনির্ব্বাণং ব্রহ্মভূত-অধিগচ্ছতি। ৫/২৪)
যাঁর আত্মাতেই সুখ, আত্মাতেই আরাম, আত্মাতেই যার জ্যোতি প্রকাশ হয়েছে, সেই যোগী ব্রহ্মভাব সম্পন্ন হয়ে ব্রহ্মনির্বাণ লাভ করে থাকেন।
যিনি আত্মাতে মনবুদ্ধিকে স্থির করতে পেরেছেন, তিনি আনন্দে আছেন। আমরা আগে শুনেছি, কাম-ক্রোধের বেগ প্রশমিত করতে হবে। এবার শুনছি, আত্মাতেই সুখ, আত্মাতেই সমস্ত আরাম। আত্মাতেই জ্যোতি অর্থাৎ জ্ঞানজ্যোতির প্রকাশ। গুরুসান্নিধ্যে থেকে, গুরুসেবা করে, সাধন ক্রিয়া করতে করতে একটা সময় প্রাণ-মনের স্থিরতা আসে। এই স্থির মনে সংকল্প থাকে না। মনের যে বিস্তার ক্ষেত্র তা একসময় সংকুচিত হতে হতে হতে কেন্দ্রীভূত হয়। আত্মাতে মন বিলীন হয়ে যায়। তখন যে আনন্দসাগরে যোগী অবগাহন করেন, সেখানে বিষয়ানন্দ প্রবেশ করতে পারে না। আর বিষয়ানন্দ আত্মানন্দের তুলনায় নিতান্ত তুচ্ছ। আত্মাতে স্থিত মন এক অন্তর -জ্যোতির দর্শন পায়। এই অন্তর-জ্যোতির সাহায্যে সমস্ত সূক্ষাতিসূক্ষ্ম পরমাণু দৃষ্টিগোচর হয়। মন তখন যা কিছু জানতে চায়, তা সে দূরের হোক, বা কাছের, সবই সে জ্ঞাত হতে পারে। সকল বস্তুর অন্তরস্থিত যে রূপ তা তখন সাময়িক জ্ঞানের বিষয় হয়। এই অবস্থায় যোগীর যে অনুভব হয়, তাকেই ব্রহ্মানুভব বা ব্রহ্মপদ লাভ বলে। একেই ব্রহ্মনির্বাণ বলা হয়ে থাকে। এই স্থিতিতে যোগীপুরুষ সমাধিবান হন। আবার সমাধি থেকে বুত্থিত হলেও, এই অনুভবের রেশ চলতে থাকে। তাই সমাধি থেকে উত্থিত হয়েও যোগী পুরুষ বিষয়ের অনুগত থাকেন না। বিষয়জনিত সুখ-দুঃখের অনুভূতির বাইরে অবস্থান করেন।
যাঁরা সংযত, অর্থাৎ লক্ষে স্থির। আর যাঁরা লক্ষে স্থির থাকেন, তাঁদের লক্ষে পৌঁছানো কেবল সময়ের অপেক্ষা মাত্র। যার চিত্ত নির্ম্মল, যাঁর চিত্ত আত্মাতে স্থির ভাবে অবস্থান করছে, তাঁর দেহাভিমান থাকে না। ফলত তাঁরা কামনা বাসনার উর্দ্ধে অবস্থান করেন। আর যার মধ্যে কামনা বাসা বাঁধতে পারেনি, তিনি রাগ-দ্বেষাদির উর্দ্ধে। এঁরা সর্বত্র ও সদা নির্ভয়ে মুক্ত অবস্থায় বিচরণ করে থাকেন। আমাদের একটা ধারণা হচ্ছে, মানুষ মৃত্যুর পরে মুক্ত হন। কিন্তু সত্য হচ্ছে, যিনি দেহে থাকতে দেহাভিমান ত্যাগ করতে পারেন নি, রাগ-দ্বেষ ত্যাগ করতে পারেন নি, নিজেকে সংযত করতে পারেন নি, যার লক্ষ বিষয়ের দিকে, যার মন কখনো ব্রহ্মে স্থিত হতে পারেনি, তিনি মৃত্যুর পরেও উদবিগ্ন, আশঙ্কাযুক্ত থাকেন। কিন্তু দেহে থেকেও যিনি ব্রহ্মদৃষ্টি সম্পন্ন, তিনি ইহকালেই মুক্ত হয়ে যান। যাঁরা সাধনক্রিয়া পরায়ণ, যাদের গুরুসান্নিধ্যে গুরুর নির্দেশে সাধনক্রিয়ায় রত আছেন, তারাই মুক্তিপদ লাভ করে থাকেন। এর পরের দুটো শ্লোকেই যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ সেই গুহ্য ও অন্তরঙ্গ সাধনক্রিয়ার কথা বলছেন, আমরা শুনবো ।
১৯.৩.২০২২
যোগসাধনার গুহ্যতত্ত্ব - শ্রীগীতা - পঞ্চম অধ্যায় - কর্ম্মসন্যাস যোগঃ
শ্লোক নং ৫/২৭-২৯
স্পর্শ্বান কৃত্বা বহির্বাহ্যাং-শ্চক্ষু-শ্চৈবান্তরে ভ্রুবোঃ
প্রাণাপানৌ সমৌ কৃত্বা নাসাভ্যন্তর-চারিণৌ (৫/২৭)
যতেন্দ্রীয়-মনো-বুদ্ধির্মুনির্মোক্ষ-পরায়ণঃ
বিগতেচ্ছা ভয়ক্রোধো যঃ সদা মুক্ত এব সঃ। (৫/২৮)
বাহ্য বিষয় সংস্পর্শ পরিহার করে, চক্ষুদ্বয়কে ভ্রুদ্বয়ের মধ্যে আবদ্ধ করে, যিনি ইন্দ্রিয় মন বুদ্ধিকে সংযত করেছেন, এবং যিনি ইচ্ছা ভয়, ক্রোধ বর্জ্জিত ও মোক্ষপরায়ণ তিনি সর্বদা মুক্ত।
রূপ-রস-গন্ধ ইত্যাদি বাহ্য বিষয় যখন মনের চিন্তনের বিষয় হয়, তখন অন্তরে বিষয়বিষ প্রবেশ করে। এই বাহ্য বিষয় চিন্তা পরিত্যাগ করে, চক্ষুদ্বয় মুদ্রিত করে, ভ্রূযুগলের মধ্যে বহির্মুখী দৃষ্টিকে ঘুরিয়ে ভ্রূযুগলের মধ্যে স্থির ভাবে স্থাপন করে রাখতে হবে। তো এই সাধনপ্রক্রিয়ার প্রয়োগ করতে গেলে, প্রথমে প্রত্যাহারের সাহায্যে, মনকে বিষয় থেকে সরিয়ে আনতে হবে। কিন্তু এই কাজ যখন করতে যাবেন তখন বুঝতে পারবেন, বিষয় থেকে মনকে সরিয়ে আনা কত কঠিন। তাই আমাদের প্রাণায়ামের সাহায্যে প্রাণ ও অপান বায়ুকে (শ্বাস-প্রশ্বাস) নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শ্বাস-প্রশ্বাস বায়ুকে নাসিকার অভ্যন্তরে আবদ্ধ করতে হবে। তার পরে যোগেশ্বর নিদিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রবেশ করা যাবে। নতুবা, বিষয় চিন্তা চলতেই থাকবে। এই অনুশীলনী চালিয়ে গেলে, একসময় যোগসাধকের মন-বুদ্ধি-ইন্দ্রিয় সহজে সংযত ও বশীভূত হয়ে আসবে।
আমরা জানি চক্ষু উন্মীলনে আমাদের বাইরের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়, আবার চক্ষু নিমীলনে আমাদের নিদ্রা আসে। এই উভয়ের মাঝে অর্থাৎ চক্ষু অর্দ্ধ-নিমীলন দ্বারা বা অর্দ্ধ-উন্মীলন দ্বারা ভ্রূমধ্যে দৃষ্টি স্থাপন করে, শ্বাস বায়ুকে আহরণ পূর্বক স্তম্ভন অর্থাৎ শ্বাসের যে উর্দ্ধগতি বা অধোগতি তাকে নিরোধ করে, সমান বায়ুতে স্থির থাকতে হবে। তখন প্রাণ যাতে বাইরে না যায়, আর অপান যাতে ভিতরে প্রবেশ না করে, কিন্তু দুটো নাসিকার গহ্বরের মধ্যেই যাতে সঞ্চরণ বা চলাফেরা করে, এইভাবে ধীরে ধীরে শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে হবে। এইভাবে প্রাণ-অপান সমান করে, যিনি মন-বুদ্ধি-ইন্দ্রিয়কে সংযত করেছেন, মোক্ষপদ একমাত্র তাঁরই অধিগত হয়। এই মোক্ষপদ প্রাপ্ত যোগীর ভয়, ক্রোধ, এমনকি ইচ্ছা বিগতপ্রায় হয়ে যায়। এই অবস্থায় যোগী দেহে থেকেও অর্থাৎ জীবিত থেকেও মুক্তমনের অধিকারী হয়ে থাকেন।
বিষয় আমাদের অন্তরে প্রবেশ করে ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে সত্য, আবার এই ইন্দ্রিয়ের পরিচালক হচ্ছে আমাদের মন। তো মন যদি বিষয় চিন্তা না করে, তবে বিষয় অন্তরে প্রবেশ করতে পারে না। এখন কথা হচ্ছে, গীতার এই কথা অধ্যায়ন করে, বা কারুর কাছ থেকে শুনে এই প্রক্রিয়ার সুবিধে পাওয়া যায় না। এর জন্য দরকার নিরন্তর বিধিসম্মত ভাবে যোগাভ্যাস। এই যোগ অভ্যাসই একসময় যোগীকে ব্রাহ্মনির্বাণ লাভ করাতে পারে।
প্রাণ-অপান-সমান-উদান-ব্যান এই পঞ্চবায়ু যথাক্রমে, হৃদয়ে, গুহ্য, নাভি, কন্ঠ, এবং সর্ব্বশরীর। এই পঞ্চবায়ুই আমাদে শরীরের যাবতীয় কর্ম্ম করে আমাদের শরীরকে রক্ষা করছে। এই যে হৃদয়স্থিত বাহ্যগতি সম্পন্ন প্রাণবায়ু এঁকে বহির্মুখী হতে না দিয়ে নিরুদ্ধ করতে হবে, গুহ্যস্থ অপানবায়ুতে এই প্রাণ বায়ুকে আনয়ন করতে হবে। এর পরে সুষুম্না নাড়ীতে এই বায়ু চালনা করতে হবে। এতে বায়ুর কুম্ভক ইত্যাদি কষ্টকর ক্রিয়া নেই। যোগী পুরুষ চিত্তের বিক্ষেপকারী যে শব্দ, স্পর্শ , রূপ, রস, গন্ধ - এদের গ্রহণ বিষয়ে সংযমী হতে হবে। ভ্রূমধ্যে দৃষ্টিকে সংযত রেখে এই প্রাণায়ামের অভ্যাস চালিয়ে যেতে হবে। এই অভ্যাসের ফলেই একসময় যোগীর প্রাণবায়ু সুষুম্না নাড়ীতে প্রবেশ করবে।
প্রাণায়াম করতে করতে একসময় আমাদের শ্বাস সরু সুতোর মতো হয়ে যাবে। শ্বাসবায়ুর প্রবাহ এতটাই ক্ষীণ হয়ে যাবে, যে বাইরে থেকে তা বোঝা যাবে না। কিন্তু বায়ু প্রবাহ চলতে থাকে। এই অবস্থায় প্রাণ-অপানের গতি সমান হয়ে যায়। তখন সাধকের মন-প্রাণ-বুদ্ধি-ইন্দ্রিয় সংযত হয়ে আসে। তখন আমাদের রাজসিক ভাব, বা তামসিক ভাব অন্তর্হিত হয়ে যায়। জোর করে সংযম আসে না। কিন্তু প্রক্রিয়ার দীর্ঘদিনের অনুশীলনী থেকে আপনা থেকেই সংযম এসে যায়। এই অবস্থায় অর্দ্ধউন্মীলিত চোখে কোনো পলক পড়ে না। একসময় শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি স্তিমিত হতে স্তব্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থা না জাগ্রত, না নিদ্রা, না স্বপ্ন। এই প্রাণক্রিয়ার ফলে মন-প্রাণ স্থির হয়। আর স্থির মন-প্রাণে এক সত্যের প্রকাশ ঘটে। তখন বৈরাগ্য আপনা থেকেই আসে। জ্ঞানালোকের প্রকাশ ঘটে।
এর পরে ষষ্ঠ অধ্যায়ে ধ্যানযোগের সম্পর্কে যোগেশ্বরের কাছে শুনবো।
ভোক্তারং যজ্ঞতপসাং সর্ব্বলোক-মহেশ্বরম
সুহৃদং সর্ব্ব ভূতানাং জ্ঞাত্বা মাং শান্তিম-ঋচ্ছতি। (৫/২৯)
যোগসিদ্ধ মুক্ত পুরুষ আমাকে যজ্ঞ ও তপস্যার ভোক্তা, সর্ব্বলোকের মহা ঈশ্বর ও সর্ব্বলোকের সুহৃদ জেনে পরম শান্তি লাভ করেন।
এইযে সাধনক্রিয়ার কথা আমরা যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে শুনলাম, এর দ্বারা আমাদের কূটস্থের জ্ঞান হয়। তখন বুঝতে পারা যায়, তিনিই সর্বব্যাপী বিরাজ করছেন। তিনিই বিষ্ণুরূপে সমস্ত কর্ম্মের ফল ভোগ করছেন।বিষ্ণু অর্থাৎ পঞ্চভূতময় এই বিশ্ব যাতে প্রবেশ করছে। যোগী বিশ্বব্যাপী বলে, বিশ্বকে আর পৃথক বলে মনে হয় না। প্রাণক্রিয়ার দ্বারা বায়ুকে মস্তকে স্থির করলে, আপনাতে আপনি থাকা যায়।একটা জিনিস জানবেন, শ্রীকৃষ্ণকে এমনকি ঈশ্বরকে জানবার জন্য এই সাধনক্রিয়া নয়, নিজেকে জানবার জন্যই সমস্ত সাধনক্রিয়া। যখন নিজেকে জানতে পারবেন, তখন ঈশ্বরকেই জানা হবে। সমস্ত মানুষের মধ্যেই আছে এই কূটস্থ। যখন সর্ব্বের জ্ঞান হয়, তখনই কূটস্থ জ্যোতিরূপে যোগীর অনুভবে আসে। এক ও অখন্ড সত্তা। এই সত্তাই প্রাণরূপে এই দৃশ্যমান জগৎ প্রকাশিত হয়েছে। আবার তার মধ্যেই বাস করছে। এই জ্ঞানের উন্মেষ হলেই একটা শান্তির পরাবস্থা প্রাপ্ত হয়। তখন আমি বা আমার বলে কিছু থাকেনা। দেহাত্মবোধ থেকেই আসে আমি-আমার ভাব। সাধনক্রিয়ার ফলে এই দেহাত্মবোধ লোপ পায়। আর আমিত্ব বা আমার এই ভাব নির্মূল হয়ে যায়। মহাশূন্যই মহেশ্বর। তাঁর সত্তাতেই সমস্ত সত্তা। এই জ্ঞানের উন্মেষের সংযাগে সঙ্গে সমস্ত বেদনার পরিসমাপ্তি হয়।
ইতি শ্রীমদ্ভগবতগীতাসু উপনিষৎসু ব্রহ্মবিদ্যায়াং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জ্জুন সংবাদে সন্ন্যাসযোগো নাম পঞ্চম-অধ্যায়ঃ।
বিঃদ্রঃ শ্রী গীতার পঞ্চম অধ্যায়ের শেষে, একটা কথা বার বার কে মনে হয়, সাধনতত্ত্ব পরমার্থ তত্ত্ব, অধ্যয়ন, মনন যেমন দরকার, তেমনি দরকার যোগাভ্যাস। কেননা যোগেশ্বর যে কথাগুলো বলছেন, সেগুলো শুধু বোঝার বিষয় নয়, এগুলো মুখস্ত করবার বিষয়ও হয়। এগুলো অবশ্য়ই একটা প্রয়োগবিধি। এই প্রয়োগবিধির কথা শুধু শুনে, পড়, এমনকি বুঝলেও আমাদের কোনো কাজে আসবে না। এই যোগের অভ্যাস না করলে আমাদের যে জন্ম জন্মান্তরের অভ্যাস বা সংস্কার তা বদলানো সম্ভব হয় না। কাম-ক্রোধ-লোভ-মোহ-মাৎসর্য এগুলোকে প্রথমে সহ্য করা বা হজম করা সহজসাধ্য নয়। আবার এগুলোকে বৰ্জন করাও সহজ সাধ্য নয়। ইন্দ্রিয়ের বহির্মুখী ভাবকে অন্তর্মুখী করতে হবে। ইন্দ্রিয়সুখে অনুরক্ত থাকলে চলবে না। স্বাভাবিক ভাবে জীবের শ্বাসক্রিয়া তার নিজস্ব নিয়মে চলতেই থাকে। এর জন্য আলাদা কোনো প্রয়াস করতে হয় না। এই শ্বাসক্রিয়ার শুরুতেই সংসার জীবনের শুরু। আবার এই শ্বাসক্রিয়ার শেষে জীবনের শেষ। এই প্রক্রিয়া জীবের জন্মসূত্রে পেয়ে থাকে। এখন মুক্তিকামী সাধকের এই পরম্পরা নিয়ে চললে, গতানুগতিক জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না, জন্ম-মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই মিলবে না । বহু সাধনার ফলে, বহু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে, আমাদের প্রাচীন মুনি ঋষিগণ আমাদের যে যোগক্রিয়ার কথা বলে গেছেন, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে নিহিত আছে, আমাদের স্বভাবকে পরিবর্তন করবার সহজসাধ্য উপায়। যদি আমরা এই সব যোগক্রিয়াকে অবহেলা করি, আর মনে মনে ভাবি, শুধু গীতা অধ্যায়ন করলেই, স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদের চিরশান্তির পথে নিয়ে যাবেন, আমাদের উদ্ধার করবেন, তাহলে আমরা নিজেকে ঠকাবো। আমরা শুনেছি, এই স্থুল দেহের মৃত্যুর পরেও, আমরা সুক্ষ দেহে আমাদের মন-বুদ্ধি-সংস্কার নিয়ে বাস করে থাকি। এই জন্ম-জন্মান্তরের সংস্কারের যতদিন না বিলোপ সাধন হয়, ততদিন আমাদের মুক্তি নেই। এই কথা মনের মধ্যে দৃঢ়ভাবে স্থাপন করুন।
----------------------