Wednesday 4 November 2020

মস্তিষ্কের ব্যায়াম BRAIN GYM ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়

 


মস্তিষ্কের ব্যায়াম - BRAIN GYM

আমার এক দক্ষিণী বন্ধু ছিল. কার্তিক কৃষ্ণান। অসম্ভব মেধাবী ছেলে। অক্সফোর্ড-এর ডিকশেনারি ওর মুখস্ত ছিল। কার্তিক আমার কাছে ছিল একটা বিস্ময় যুবক।  ও ছিলো স্টেনোগ্রাফার। কিন্তু ও স্টেনোগ্রাফের জন্য খাতার ব্যবহার খুব কমই করতো। চেম্বারে বসে বস যা বলতেন, বাইরে এসে টাইপ-রাইটার মেশিনে হুবহু তাই টাইপ করে ফেলতো। ও দুই হাত দিয়ে সমান দক্ষতায় খাবার খেতো, তা সে ভাত ডাল মাছ টোস্ট   যাই হোক না কেন ? আমরা ওর খাবার খাওয়ার কায়দা দেখে ভাবতাম, অবাঙালী তো তাই বোধ হয়, গুছিয়ে ডান  হাত দিয়ে খেতে পারে না। বহুদিন দেখেছি,  ওকে  উল্টো করে বই পড়তে । আমরা ভাবতাম, বই পড়ছে না, ও অন্যকিছু চিন্তা করছে বইটাকে সামনে রেখে। ও থাকতো বৌবাজারের চীনা পট্টিতে।  আমি তখন বৌবাজারে একটা মেসে থাকি।  একদিন সকালে গিয়ে দেখি, কার্তিক বা হাত দিয়ে নিম ডাল  দিয়ে দাঁত মাজছে, আর  একবার সামনে হাটছে, একবার পিছনে হাটছে । ওর সব কিছুতেই উল্টো ব্যাপার। প্রশ্ন করতেই বললো, এটা মস্তিষ্কের ব্যায়াম। এই মস্তিষ্কের ব্যায়াম ব্যাপারটা কি ?  আসলে আমরা যা কিছু অভ্যাস করি, আমরা তাই হয়ে যাই। এই ব্যাপারটা বুঝতে গেলে আমাদের মস্তিষ্কের ভিতরের ব্যাপারটা একটু বুঝতে হবে। 
আমাদের মাথার মধ্যে খানিকটা ফাঁকা জায়গা আছে, এগুলোকে বলা হয় প্রকোষ্ঠ বা VENTRICLE । এর মধ্যে মেরু-রস বা মস্তিস্ক-সুষুম্না রস দ্বারা পূর্ন। চারটি প্রকোষ্ঠ।  প্রথম দুটো আছে গুরুমস্তিষ্কের গোলার্ধে। তৃতীয় প্রকোষ্ঠ আছে অগ্রমস্তিষ্কের শেষভাগে। আর চতুর্থটি সুষুম্না নাড়ীর অগ্রভাগে।  সুষুম্না নাড়ী এখানে উন্মুক্ত।  আমরা জানি আমাদের মধ্যে অনেক সময় অনিচ্ছাকৃত ভাবে বিভিন্ন সংজ্ঞাবহ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এগুলোকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে REFLEX ACTION বা প্রতিবর্ত ক্রিয়া। এই প্রতিবর্ত ক্রিয়া সুষুম্নাকান্ড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, এবং খুব দ্রুত সম্পন্ন হয়। যেমন ধরুন, চোখে যদি টর্সের আলো আসে, তবে আমরা তাড়াতাড়ি চোখের পাতা বন্ধ করে দেই।  আবার পায়ে কাটা বিঁধলে, আগুনে হাত পড়লে, বা শরীরে আঘাতের সম্ভাবনা দেখলে, আমরা তাড়াতাড়ি সতর্ক হই, এবং হাত-পা-শরীর সরিয়ে নেই। আমাদের এই যে অভ্যাস এটি স্বতঃস্ফূর্ত। এই ক্রিয়া শর্তবিহীন, জন্মগত, প্রতিবর্ত ক্রিয়া। এই ক্রিয়া যে স্নায়ুপথ ধরে চলে, তা সুনির্দিষ্ট এবং জন্মসূত্রে প্রত্যেক জাতি তা সে মানুষ বা পশু যাই বলুন না কেন,  পেয়ে থাকে। শিশুর স্তনপান, মশার কামড় থেকে বাঁচা, উত্তাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া, পতনের ভয় - এগুলো প্রতিবর্ত ক্রিয়ার উদাহরণ। এই প্রতিবর্ত ক্রিয়া যেমন আমাদের সহজাত, ঠিক তেমনি কিছু প্রতিবর্ত  ক্রিয়া আমাদের  অভ্যাসের দ্বারা তৈরী করে হতে পারে । যেমন কথা বলা, হাটতে শেখা, গান করা, সাইকেল চালানো, ইত্যাদি এমনকি আমাদের যে নির্দিষ্ট সময়ে অর্থাৎ স্নানের আগে ক্ষুধার উদ্রেগ হয়, বা সকালে চা খাওয়া, বা খাবার পরে একটা সিগারেট ধরানো, এগুলো আমাদের নিরন্তর অভ্যাসের ফলে হয়ে থাকে। আমি যখন কুকুরের কাছে বিস্কুট নিয়ে যাই, আমি দেখেছি, তার মুখে দিয়ে লালা বেরুচ্ছে। কাউকে কিছু সুখাদ্য খেতে দেখলে আমাদের জিভে জল আসে। আবার আমার অপছন্দের কিছু যখন কেউ তা সে পশু-পাখি খেলেও, আমাদের মধ্যে ঘৃণার উদ্রেগ করে থাকে।  এগুলো আসলে আমাদের প্রতিবর্ত ক্রিয়ার ফল, যা আমরা নিরন্তর অভ্যাসের ফলে সংগ্রহ করেছি। এমনকি গাছপালার মধ্যেও এই প্রতিবর্ত ক্রিয়া হয়ে থাকে। 
এইবার আমরা দেখে নেই আমাদের দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কিভাবে বা কেন কাজ করে। আমরা ইন্দ্রিয় দ্বারা বহির্জগতের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। তাই এই ইন্দ্রিয়গুলো হচ্ছে গ্রাহক যন্ত্র।  এখন এই গ্রাহক যন্ত্রের দ্বারা গৃহীত ঘটনা বা চিত্র আমাদের মাথার মধ্যে যে প্রকোষ্ঠ আছে, আর তার মধ্যে যে মেরুরস আছে  তার মধ্যে একটা উদ্দীপনা বা আলোড়ন সৃষ্টি করে থাকে। এই উদ্দীপনা অন্তর্বাহী স্নায়ুর মাধ্যমে (AFFERENT NERVE) মস্তিস্ক হয়ে, সুষুম্না কাণ্ডে  পৌঁছায়। সুষুম্না কাণ্ডে  উদ্দীপনা বিশ্লেষিত হবার পর, আজ্ঞা বা নির্দেশ বহির্বাহী স্নায়ুর (EFFERNET NERVE) মাধ্যমে কারক অঙ্গ অর্থাৎ পেশী বা গ্রন্থিতে পৌঁছায়। একদম শেষে কারক অঙ্গে ক্রিয়া সংগঠিত হয়।   
আপনি যদি অমাবশ্যার গভীর রাতে আকাশের দিকে তাকান তবে দেখতে পাবেন, একটার পর একটা আলোর ফুলকি বিরামহীন ভাবে, ছুটে  বেড়াচ্ছে। এই যে ছোটা, এর একটা কারন আছে, কিন্তু সময়ের মাপ নির্দিষ্ট নেই অর্থাৎ সময় শৃঙ্খলে এই  ক্রিয়া বাঁধা নয় । আমাদের মাথার মধ্যেও এই আলোর  ফুলকি প্রতিনিয়ত ছুটে  বেড়াচ্ছে, যার কারন আমাদের মেরুরসে  উদ্দীপনা। আমাদের মাথার মধ্যে এই ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া যদি কোনো দিন ভিডিও করা যায়, তবে এটিকে পর্যবেক্ষেপন  করা সম্ভব হবে। এই ছোটাছুটিই  আমাদের বিভিন্ন বৃত্তির জন্ম দিচ্ছে।       
আমাদের মস্তিষ্কের পিছনের অংশে সহজাত বৃত্তির জন্মস্থান। মধ্যমস্তিষ্কের অংশ আবেগের আঁতুরঘর।আর সামনের অংশ আমাদের যুক্তি-বিচার-বুদ্ধির সংগ্রহশালা। আর এই তিন অংশের সঙ্গেই মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষের নিরন্তর লেনদেন চলছে। আমাদের মস্তিষ্কের কিছু অংশের অভ্যন্তরীন স্নায়ুকোষ বা নিউরোন আজীবন বংশ বৃদ্ধি করবার ক্ষমতা থাকে। আর এই স্নায়ুকোষগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে হতে পারে, হয়ে থাকে। আর এই স্নায়ুকোষগুলোর যে নেটওয়ার্ক, বা জোটবন্ধন তার ভিত্তিতেই এরা নিজেদের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে চলে। আমাদের মস্তিষ্কের যে কাজকর্ম্ম তা নির্ভর করে এই নেটওয়ার্কের উপরে, আবার এই স্নায়ু বন্ধন  আমাদের ব্যবহারিক, আচরণগত, ও চারিত্রিক বৈশিষ্ঠগুলোকে রূপ দেয়। এক-একটা স্নায়ুকোষ অন্তত ১০ হাজার স্নায়ুকোষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে। আর আমাদের মস্তিষ্কে এই স্নায়ুকোষের সংখ্যা অন্ততঃ ১০০ লক্ষ কোটি। আসলে এই সংখ্যা এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয় নি। এই যে স্নায়ুকোষগুলোর মধ্যে যোগাযোগের রাস্তা এটি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে, বা হতে পারে। অর্থাৎ অসংখ স্নায়ুকোষ হাজার হাজার স্নায়ুকোষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, কিন্তু তাদের যাতায়াতের রাস্তা নির্দিষ্ট নয়। আর এই জন্যই আমাদের ভাবনা চিন্তা বা আমাদের ব্যবহারিক দিক নিয়ত পরিবর্তনশীল। 
আপনি প্রতিদিন যে রাস্তা দিয়ে স্কুলে বা অফিসে যান,  হয়তো দেখা যাবে, সেটাই একমাত্র রাস্তা নয়। আপনি ইচ্ছে করলে ঘুরে-ফিরে হয়তো বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে আপনি যেতে পারেন আপনার গন্তব্যে । কিন্তু যে রাস্তা দিয়ে আপনি সাধারণত যান, সেটাই আপনার স্বাচ্ছন্দের  রাস্তা। বা বলা যেতে পারে সোজা রাস্তা। আর যেখান দিয়ে মানুষ যাতায়াত করে, সেখানে একটা রূপ-রেখা তৈরী হয়ে যায়। ধরুন, আপনি প্রতিবেশী  বন্ধুর বাড়িতে যাবার জন্য, খেলার মাঠ পেরিয়ে যান। তো কিছুদিন পরে দেখবেন মাঠের মধ্যে দিয়ে একটা সরু রাস্তা তৈরী হয়েছে, যেখানকার ঘাসগুলো মারা গেছে। এইজন্য বলা হয়ে থাকে মানুষের পায়ে ক্ষুর আছে। তো এই রাস্তা দিয়ে যদি বছর খানেক কেউ যাতায়াত না করে, তবে দেখবেন , সেই রাস্তার চিন্হ  আর নেই। ওখানে ঘাস গজিয়ে রাস্তাকে নিশ্চিন্হ করে দিয়েছে।আমাদের মস্তিষ্কের  স্নায়ুগুলো যখন যে পথে যাতায়ত করে, তাকে বলা হয় আমাদের  অভ্যাস। অর্থাৎ একই রাস্তায় যেতে যেতে আমাদের একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। আর এর ব্যবহার না করলে, রাস্তাটি মুছে যায়। এইজন্যই আমরা ডান  হাতে খাই, খেতে বসলে, কেউ বা হাত বার করি না।  কিন্তু বা হাত দিয়ে খাওয়া যায় না তা কিন্তু নয়।  আমরা যখন সাইকেলে চড়ি অভ্যাসের বসেই আমাদের পা প্যাডেল ঘোরাতে থাকে, হাত হ্যান্ডেল ঘোরাতে থাকে। আমরা যদি উল্টোটা অভ্যাস করতাম তবে তাই করতে পারতাম।  প্রতিবন্ধী মানুষ কিন্তু হাত দিয়ে প্যাডেল ঘোরায়। যাই হোক। আমরা যদি স্বভাবের পরিবর্তন করতে চাই, তবে স্নায়ুকোষগুলো প্রতিনিয়ত যে পথে  অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, সেই পথের পরিবর্তন করতে হবে।
আর একটা কথা হচ্ছে, স্নায়ুগুলোকে যদি আমরা গোষ্ঠীবদ্ধ ভাবে গতিশীল করতে পারি, তবে আমাদের মধ্যে একটা একগুঁয়ে ভাব, বা প্রবল ইচ্ছেশক্তি তৈরি হবে। আমাদের স্বভাব পরিবর্তনের জন্য, এই স্নায়গুলোকে গোষ্ঠীবদ্ধভাবে গতিশীল করতে হবে। অর্থাৎ যখন যে কাজটি করবো, সেই কাজেই আমাদের সমস্ত ইচ্ছাশক্তি নিয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ ধ্যানে বসবো, আর রান্নাঘরে বিড়াল ঢুকলো কিনা, সেটাও খেয়াল করবো, সেটি চলবে না। ধ্যানে বসবো আর মোবাইলে কে মেসেজ পাঠালো, সেটাও দেখে নেবো সেটি চলবে না। অর্থাৎ দুটো বিপরীত ধর্মী কাজ একসঙ্গে করা চলবে না। 
আমরা বাড়িঘর পরিষ্কার করি, জামাকাপড় পরিষ্কার করি, এমনকি আমাদের এই দেহকেও বাইরের দিক থেকে পরিষ্কার করি। এমনকি আমরা পাকস্থলী পরিষ্কার করি,   কিন্তু আমরা কখনো মস্তিস্ক পরিষ্কার করি না। আজ আমরা এই মস্তিষ্কের পরিষ্কার করবার কায়দা শিখবো। আসলে মস্তিস্ক পরিষ্কার করা মানে আমরা যে অভ্যাসের বাঁধনে আবদ্ধ সেখান থেকে বেরিয়ে আসা। আর এগুলোকে করতে হবে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলোকে সজাগ করে। 

নাক : বিভিন্ন গন্ধকে নির্বাচন করতে শিখুন। আপনি হয়তো শুয়ে আছেন। একটা সুগন্ধ বা দুর্গন্ধ আপনার নাকে আসছে, শুয়ে শুয়ে বোঝার চেষ্টা করুন, কোথেকে গন্ধটি  আসছে, এবং এটা কিসের গন্ধ। অর্থাৎ নাক দিয়ে জিনিসের কথা ভাবতে থাকুন। 
কান : আপনি বসে আছেন, একটা শব্দ আপনার কানে এলো।  বসে বসে বুঝবার চেষ্টা করুন, এটা কিসের শব্দ। বেড়াল লাফিয়ে পালালো, না কোনো বাসন পরার শব্দ, না কোনো গানের শব্দ, না মেঘের ডাক, না কোনো পাখির ডাক। পাখির ডাক হলে বোঝার চেষ্টা করুন, কোন পাখির ডাক। তার দেহরাটা মনে আনবার চেষ্টা করুন। গান হলে এটা কার গলার গান। ঘড়ির টিক টিক আওয়াজ শুনুন মন দিয়ে। ইত্যাদি ইত্যাদি। ব্যস্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে মোবাইলে রেকর্ডিং অন  করুন। বাড়ি এসে, রেকর্ড  করা শব্দকে একমনে শুনুন, আর চেষ্টা করুন বুঝতে কোনটা কিসে শব্দ।   
মুখ : কিছু মুখে দিয়ে, ভাববার চেষ্টা করুন, এটা কিসের স্বাদ। এর মধ্যে কি মসলা থাকতে পারে। শুকনো লংকার ঝাল, না কাঁচা লংকার ঝাল। পেঁয়াজ-রসুন-হিং-গরমমসলা কোনটা আছে।  ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ মুখ দিয়ে জিনিসের কথা চিন্তা করতে থাকুন। 
চোখ : দূরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন। আকাশের মেঘগুলোকে খেয়াল করুন। মেঘের মধ্যে আলোর আভা খেয়াল করুন। খেয়াল করুন, ক্ষনে ক্ষনে মেঘের আকৃতির পরিবর্তন হচ্ছে। দূরের  তালগাছটা দেখুন , অস্পষ্ট বাড়ি নজরে পড়ছে।  ওখানকার রাস্তা-ঘাট মানুষ-জন দেখতে চেষ্টা করুন। বাড়ি, পুকুর, মানুষ পশু গাছপালা আলাদা করতে চেষ্টা করুন।  
ত্বক : চোখ বুজে বাড়ির দেওয়ালে  হাত রাখুন, অনুভব করবার চেষ্টা করুন মসৃণতা বা এবড়ো খেবড়ো দেওয়াল। দেয়ালে কান পেতে শুনবার চেষ্টা করুন, দেওয়ালের ভিতরে কোনো জীবাশ্ম আটকে আছে কি না। দেওয়ালের গভীরতা মাপতে চেষ্টা করুন। আলতো  করে  বইটাকে বুকে চেপে ধরুন। বইয়ের কথাগুলোকে অনুভব করবার চেষ্টা করুন। চোখ বুজে বুক পকেটের টাকা বা প্যান্টের খুচরো পয়সা গুনুন তার আকার বা অনুভূতি দিয়ে। পুরোনো দিনের এলবামের ফাইল খুলুন - চোখ বুজে ছবিগুলোর উপরে হাত বোলান, আর ভাবতে থাকুন, কবে কোথায় এই ছবিগুলোকে তোলা হয়েছিল। কে-কে তখন ছিল। কি-কি- কথা হয়েছিল।  ইত্যাদি ইত্যাদি। 
উল্টো করে বই পড়ুন, পিছন দিকে হাঁটুন, পিছনে মুখ করে সামনের দিকে হাঁটুন, বা হাত দিয়ে খাবার খান, বা হাত দিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন, বা হাত দিয়ে লিখুন, ঠাকুরের সামনে আরতি  করুন অর্থাৎ এক হাতে ঘন্টা আর এক হাতে ধুনুচি বা প্রদীপ নিয়ে দুটো দুদিকে ঘোরান। ঘাড়  না ঘুরিয়ে পিছন দিকটা দেখতে থাকুন। অর্থাৎ আপনার মধ্যে যা কিছু স্বাভাবিক বলে মনে হয়, তার উল্টো পথে নিজেকে পরখ করুন।  

আসলে আমি বলতে চাইছি, আপনি জীবনের চেনা পথে না হেটে, একটু সময় নিজের জন্য বের করে, একটু অন্য পথে হাঁটুন।  সকাল বা সন্ধ্যাবেলা যখন ভ্রমন করতে যাবেন, তখন মাঝে মধ্যে নতুন রাস্তায় হাঁটুন। নতুন লোকের সাথে কথা বলুন। চারিদিকের দৃশ্যের দিকে মনোযোগ দিন। কতদিন আগে এখানে এসেছিলেন, তখন কি দেখেছিলেন, মনে করবার চেষ্টা করুন। নতুন নতুন বই পড়ুন। পুরোনো বইগুলোকে আবার নতুন করে পড়ুন। এলবাম বের করে, পুরোনো চাবিগুলোকে দেখুন, আর পুরুনো দিনের কথা ভাবতে থাকুন। দেখবেন, আগে যা শোনেননি, আগে যা দেখেননি, আগে যা অনুভব করেননি, আজ তা দেখতে-শুনতে-অনুভব করতে পারছেন। 

এখন দেখবেন, আপনার মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলো নতুন পথে ঘোরাফেরা শুরু করেছে। আপনার ভিতরে একটা নতুন ভাবনা চিন্তা শুরু হয়েছে।  আপনার মস্তিস্ক যেন হালকা বোধ হচ্ছে, আপনার মস্তিষ্কে একটা আলোড়ন শুরু হয়েছে। আপনার স্মৃতিশক্তি, আপনার বৌদ্ধিক শক্তি, আপনার অনুভবের  শক্তিবৃদ্ধি  পেয়েছে। আপনি একটা নতুন জীবনের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন।  আপনার একঘেয়েমি কেটে যাবে, জীবন হয়ে উঠবে আরো আনন্দপূর্ণ, জীবন হয়ে উঠবে আরো সৃষ্টিধর্ম্মি, জীবন হয়ে উঠবে আরো অনুসন্ধানী। সবাই ভালো থাকবেন।     

ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।  হরি  ওম 

ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় - SIXTH SENCE 

বাড়িতে বেড়ালের খুব উৎপাত। তিনটে বাচ্চা হয়েছে। তো রাতের দিকে বিড়ালগুলোকে ধরে বস্তায় মুখ বন্ধ করে, বড় রাস্তার কাছে দিয়ে এলাম। পরেরদিন দুপুরে দেখলাম, বেড়ালগুলো আবার আমাদের বাড়িতে চলে এসেছে। একটা মানুষকে চোখ বেঁধে কোথাও নিয়ে গিয়ে অচেনা জায়গায় ছেড়ে দিলে, সে অন্য কারুর সহযোগিতা ছাড়া বাড়ি ফিরতে পারে না। বিড়াল কি করে পারে ? লোকটাকে দেখে ভালো মনে হয় না। কি এমন দেখলাম তার মধ্যে যে তাকে ভালো লোক বলে মনে হলোনা। ছেলের কথা ভাবছিলাম, হঠাৎ ছেলের টেলিফোন এলো। স্বামী যোগানন্দের গুরুদেব শ্রীযুক্তেশ্বরজী পুরীতে অসুস্থ হয়েছেন, খবর এসেছে স্বামী যোগানন্দের কাছে, যোগানন্দ বলছেন, শুয়ে আছি, হঠাৎ দেখি, দু'টো হেডলাইটের মতো আলো, আমার সামনে ঘুরছে। তখনই আমি বুঝেছি, গুরুদেব আর নেই। এই সব ঘটনার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে কি ? ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলে কিছু আমাদের শরীরে আছে কি ?

ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ব্যাপারটা কি ?

প্রথমে আমরা  নেই, ইন্দ্রিয় বলতে আমরা কি বুঝি? আমাদের পাঁচটি ইন্দ্রিয়।  আমরা এই পঞ্চইন্দ্রিয়ের দ্বারা আমরা পাঁচ রকমের অনুভূতি সংগ্রহ করে থাকি। আমাদের জ্ঞানীন্দ্রিয়  পাঁচটি। - চক্ষু, কর্ন, নাসিকা জিহ্বা ত্বক - অর্থাৎ দর্শন-শ্রবণ-ঘ্রান-স্বাদ-স্পর্শ -ইন্দ্রিয়। এই পাঁচটি ইন্দ্রিয় আবার  একাধিক কাজ করে থাকে। যেমন - 
চোখ - যেমন দেখে, তেমনি আলো বা বর্ণের গ্রাহক হিসেবে কাজ করে থাকে। 
কান - যেমন আমাদের শুনতে সাহায্য করে থাকে, তেমনি আমাদের দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে এই কান। 
নাক - যেমন ঘ্রান অনুভব করে, তেমনি আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস কাজে সাহায্য করে থাকে। 
জিহ্বা - যেমন স্বাদ গ্রহণ করে, তেমনি কথাবলা, এবং খাদ্যকে গলাদ্ধকরন করতে সাহায্য করে এই জিহ্বা। 
ত্বক বা চামড়া - যেমন স্পর্শ অনুভবে সাহায্য করে, আবার শীত-তাপ অনুভব করে চামড়া। ব্যাথা ও চাপ অনুভব করে। দেহের কোমল পেশিকে রক্ষা করে থাকে এই চামড়া।  ঘাম নিঃসরণ, দেহের তাপ  নিয়ন্ত্রণ, এমনকি দেহ থেকে দূষিত পদার্থ নির্গত করতে সাহায্য করে এই ত্বক।

এই পাঁচটি প্রধান ইন্দ্রিয় ছাড়াও, প্রাণী দেহের বিশেষ কোনো অঙ্গ ইন্দ্রিয়রূপে কাজ করে থাকে যেমন, মাছের দেহের দুই পার্শে কানকোর  পিছনে  ছোট্ট ছোট্ট দুটো পাখা থাকে, এর সাহায্যে মাছ জলের চাপ, তাপ , গভীরতা, এমনকি দেহের ভারসাম্য রক্ষায়, ও আত্মরক্ষায় সাহায্য করে থাকে।  এছাড়া আরশোলার সুর, বিড়ালের গোফ, শামুকের কর্ষিকা এগুলোকে বিশেষ ইন্দ্রিয় বলা হয়ে থাকে।  এই সমস্ত ইন্দ্রিয়ের কাজ হচ্ছে, পরিবেশ থেকে বিশেষ বিশেষ উদ্দীপনা গ্রহণ করা, ও নির্দিষ্ট স্নায়ুপথে স্নায়বিক  কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া। 
এখন আমরা শুনে নেই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলতে আমরা কি বুঝি ? আমাদের ধারণা হচ্ছে, ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় হচ্ছে
এমন একটা বিশেষ ইন্দ্রিয় যা আমাদের আগাম খবর এনে দিতে পারে, যে ইন্দ্রিয় অন্যান্য ইন্দ্রিয়গুলোর মতো দৃষ্টিগোচর নয়। আবার যা আমাদের সবার থাকে না। কিন্তু সত্য হচ্ছে, এই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় আমাদের সবার আছে। কারুর সেটি বেশি সক্রিয়, আবার কারুর সেটি নিস্পৃহ।
  
বিজ্ঞান বলছে, আমরা সবাই এক একজন ভবিষ্যৎদ্রষ্টা। বিজ্ঞানের ভাষায় বলে প্রো-প্রায়োসেপশন। অর্থাৎ অনুমানের সাহায্যে আগাম জ্ঞান। আমরা আগেই শুনেছি, এই ক্ষমতা আমাদের সবার আছে।   আর এই ক্ষমতা যদি আমাদের না থাকতো, তবে আমরা আমাদের নিজেদের সম্পর্কে একটা বিভ্রান্তিতে ভুগতাম। এমনকি আমাদের অবস্থান সম্পর্কেও আমাদের কোনো ধারণা করতে পারতাম না। অর্থাৎ আমি যে আছি, এটা আমাদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের কাজ। ফুল ফুটলে আমরা বলতে পারি, ভবিষ্যতে ফল হবে। রেলগেটের সিগন্যাল লাল হলে আমরা বুঝতে পারি, এখন ট্রেন আসবার সময়। মেঘ দেখলে আমরা বলতে পারি, বৃষ্টি আসতে  পারে।  এই যে আগাম আভাস একেই বলে সিক্সথ সেন্স, বা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়। আপনি বলতে পারেন, এটি আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলে থাকি। ঠিক পূর্ব-অভিজ্ঞতা থেকেই জন্ম নেয়, ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়। আপনি নিশ্চয় জানেন, আমাদের শরীরে কিছু অং আছে, যা নিষ্ক্রিয়। অর্থাৎ তার কি কাজ তা আমরা জানিনা, যেমন এপেন্ডিসাইটিস। এপেন্ডিসাইটিসের কাজ আজও  চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা  আবিষ্কার করতে পারেন নি। আবার এই শাস্তি ইন্দ্রিয়ের অবস্থান সম্পর্কেও আমাদের বিজ্ঞান কিছু বলতে পারে নি।  কিন্তু   এই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়  আমাদের একটা সারভাইভাল সিস্টেম অর্থাৎ বেঁচে থাকবার কৌশল, আগাম বিপদের আভাস দিয়ে, আমাদেরকে সতর্ক করে থাকে এই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়  । এই প্রক্রিয়া  যদি আমাদের না থাকতো, তবে আমাদের পদে পদে বিপদ আসতো, আর আমরা অকালে মারা যেতাম। অর্থাৎ আমার অবস্থান ও বিপদের অবস্থান সম্পর্কে বিশেষ ধারণা এনে দেয়  এই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়।  একজন মানুষের বুদ্ধি, মেধা, পরিশ্রম, টাকাপয়সা, বাড়ি গাড়ি যাই থাকুক না কেন, Intuition বা স্বজ্ঞা বা আগাম অনুমান করবার ক্ষমতাই একজন মানুষের থেকে আর একজন মানুষের মধ্যে পার্থক্য সূচিত করে।  এই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় যার যত  সজাগ, সে তত এগিয়ে যেতে পারে। 

কোথায় থাকে ?

ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি-র একটা গবেষণা বলছে, আমাদের ব্রেনের মাঝখানে একটা সেন্টার থাকে এন্টিরিয়াল স্টিম্যুরিয়াল কর্টেক্স, যা আমাদের মনের সাথে সম্মিলিত ভাবে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের কার্যকলাপ করে থাকে। যদিও এই ব্যাপারে শেষ কথা বলবার সময় এখনো আসেনি।  
যাই হোক, ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়শক্তি  আমাদের সবার মধ্যে এমনকি সমস্ত জীব-জন্তুর মধ্যেই কম বেশি  আছে। এই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ই  আমাদেরকে "আমি" হিসেবে সব কিছু থেকে আলাদা করেছে। কিন্তু গবেষকগণ বলছেন, যাদের এই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় অতিরিক্ত শক্তিশালী, তাদের মধ্যে কিছু অদ্ভুত চরিত্র-লক্ষণ দেখা যায়। এরা নিজেদেরকে সবার থেকে আলাদা করে বিশেষভাবে  চিহ্নিত করে থাকে। এরা  সবার থেকে নিজেকে আলাদা করে ভাবে। এরা নিজেদের মধ্যে একটা ধ্বনি  শুনতে পান।  কেউ কেউ মনে করেন, তাদের কাছাকাছি অশরীরী  কেউ একজন ঘুরে বেড়ান। এবং নির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে এই অশরীরীর কাছ থেকে নির্দেশ আসে। এইসব মানুষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সৃজনশীল হয়ে থাকেন। এরা  নির্জনতা পছন্দ করেন। সমস্ত কিছু এরা খুঁটিয়ে দেখেন। অর্থাৎ তাদের অনুসন্ধানী মন। শরীরের বিভিন্ন অনুভূতি সম্পর্কে খুব  সতর্ক ও অনুভূতিশীল। এরা বাহ্যিক নিয়মের ধার ধারেন না। কঠোর বিশ্বাস এদের ঝুঁকি নিতে সাহায্য করে থাকে।

কিভাবে অর্জন করা যায় ?

 বিজ্ঞানীগন এই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের প্রবল অধিকারী সম্পর্কে কারন খুঁজতে গিয়ে দেখেছেন, এরা সাধরনত  ছোটবেলায়, কোনো চাইল্ড-হুড  ট্রমাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। গভীর কোনো সমস্যার মধ্যে দিয়ে তাকে যেতে হয়েছে। এতে করে তাকে  অতিরিক্ত উদ্বেগের মধ্য  সময় কাটাতে হয়েছে।  জীবনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিলো।  ফলতঃ  যেকোনো ছোটোখাটো বিষয়ে তাদের মধ্যে টেনশন হয়, এবং ঘটনার গভীরে স্বাভাবিক ভাবেই প্রবেশ করে। সব কিছুর মধ্যে সে একটা সাযুজ্য দেখতে পায়। সন্দেহপ্রবন বা বলা যেতে পারে অনুসন্ধিৎসু  মন হয় এদের। অর্থাৎ আগের কোনো অবাঞ্চিত ঘটনার সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে নিতে চায়। এরা অনেকবেশি  আত্মকেন্দ্রিক হয়। নিজেকে সবার থেকে স্বতন্ত্র ভাবে।  এদের স্মৃতিশক্তি গভীর হয়। অর্থাৎ যেকোনো ঘটনায়  সে নিজেকে গভীরভাবে জড়িয়ে ফেলে। আর এই গভীর স্মৃতি অর্থাৎ  কোনো ঘটনাকে তারা  বিশ্লেষণ করে তার পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। যেকোনো ঘটনার মধ্যে সে একটা নঞৰ্থক দিক খুঁজে নিতে পারে ।  ফলতঃ ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় যাদের প্রবল, তারা আগাম বিপদের আভাস দিতে সক্ষম হয়।  যদিও এই শক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার, অনাবশ্যক ভীতির সৃষ্টি করে। এদের অবচেতন মন বর্তমান ঘটনার সঙ্গে পুরনো ঘটনার সাযুজ্য খোঁজে। এতে যেমন বিপদ থেকে সে নিজেকে রক্ষা করতে পারে, তেমনি, এই নঞৰ্থক চিন্তা সেই দুর্ঘটনাকে  বাস্তবে পরিণত  করতে সাহায্য  করে। এখানেই  তার সাফল্য ।  আবার এটা আমাদের পক্ষে ক্ষতিকর। আমাদের দেশে মেয়েদের মধ্যে এই শক্তির প্রাবল্য বেশী। কারন এদের মধ্যে অসুরক্ষার, অনিশ্চয়তার মাত্রা অনেক বেশি। তাই তাদের  পর্যবেক্ষন ক্রিয়া গভীর ও  সন্দেহ প্রবন মন নিয়ে করে থাকে । আর এতে  করে তারা সহজেই মানুষ চিনতে পারে। ভবিষ্যৎ অমঙ্গল সম্পর্কে সচেতন হতে পারে।   

ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়  নিয়েই  আমরা সবাই  জন্মাই । 

"আমি-আমার" এই বোধ আমাদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের কাজ। তাই জন্ম থেকেই "আমি-সত্তা", আমাদের মধ্যে কাজ শুরু করে দেয়।  এছাড়া, কার কোথায় অবস্থান, সেটাও এই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ঠিক করে দেয়।    যেমন শব্দ কোথা থেকে আসছে, সম-মানসিকতার, বা ভালোবাসার মানুষকে চিনে নেওয়া, খাদ্য বা মায়ের দুধের প্রতি আকর্ষণ এটা আমাদের জন্মগত অর্থাৎ পূর্ব-পূর্ব জীবনের অভিজ্ঞতার নিরিখে স্বাভাবিক ভাবেই, আমার জাতি অনুযায়ী কিছু আগাম জ্ঞান আমাদের অবচেতন মনে সঞ্চয় হয়ে থাকে ।  
এই ভবিষ্যৎ ঘটনা সম্পর্কে  জ্ঞান অর্জনের ক্ষমতা যেমন আমাদের জন্মগত, তেমনি এই ক্ষমতা আমরা অর্জনও  করতে পারি। আর  দুই ভাবে আমাদের জ্ঞান  অর্জন হয়ে থাকে।  এক, কোনো কিছুকে সচেতন ভাবে শেখা। আর একটা হচ্ছে অজান্তে শেখা। আমরা কারুর হাসি দেখে বুঝতে পারি, সে ব্যাঙ্গের  হাসি হাসছে, না ক্রূর হাসি, না ভালোবাসার হাসি। আমরা কারুর চোখ দেখে বুঝতে পারি, সে রেগে আছে কি না। এগুলো আমরা আমাদের অজান্তেই শিখেছি।  এর জন্য আমাদের কোনো প্রশিক্ষণ নিতে হয় না । আবার গুরুজনদের কাছ থেকে শুনে  বা বই পড়ে, আমরা অনেক জ্ঞান সংগ্রহ করে থাকি, যা আমাদের ভবিষ্যৎ জীবন সম্পর্কে  আগাম সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করে থাকে। যেমন হিংস্র জীব-জন্তু থেকে নিজেকে আড়াল করতে হবে। আগুন থেকে, রোদ-বৃষ্টি থেকে কিভাবে আমরা বাঁচবো, সেটা আমরা সচেতন ভাবে শিখি।  এই সমাজে কিসে ভালো হবে, কিসে মন্দ হবে, তা আমাদের গুরুজন শিখিয়ে দেন। 
সাধারণ ভাবে, আমরা যাকে  ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়র কাজ  বলতে বুঝি, তা  আর কিছু নয়, ভবিষ্যৎ ঘটনার আগাম আভাস। এটা আমাদের যেমন জন্মগত তেমনি আমাদের অর্জিত। এই অর্জিত ক্ষমতা দুই ভাবে হতে পারে, এক হচ্ছে বাধ্য হয়ে প্রতিকূল পরিবেশে যারা মানুষ হয়েছেন, জীবনে যাদের বহু আকস্মিক বিপদের মধ্যে দিয়ে আসতে  হয়েছে, তাদের মধ্যে আশঙ্কার মাত্রা থাকে  তীব্র। তাই তারা যে কোনোকিছু, গভীর বিশ্লেষণাত্মক মন নিয়ে দেখেন। আর বিষয়ের গভীরে যখন তারা ঢোকেন, তখন তারা বিষয়ের ভূত-ভবিষ্যৎ দেখতে পান। কিন্তু যেহেতু এরা নঞৰ্থক উদ্দেশ্য নিয়ে ঘটনার বিশ্লেষণ করে থাকেন, তাই তারা আগাম বিপদের সংকেত দিতে পারেন।  কিন্তু সব ক্ষেত্রে তা ঠিকও  হয় না। 
আর একটা হচ্ছে, যারা মন নিয়ে কাজ করেন, অর্থাৎ ধ্যানাদিতে লিপ্ত থাকেন,  এবং পবিত্র জীবন যাপন করেন, পবিত্র মনের অধিকারী, যারা অষ্টাঙ্গ যোগের পালন করে থাকেন, নির্জনে বাস করেন, তারাই বিষয়ের প্রকৃত  ভূত ভবিষ্যৎ সম্পর্কে  সম্যক ধারণা  করতে পারেন। তারাই  প্রকৃত ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়  বা স্বজ্ঞা  এদের সব থেকে শক্তিশালী। সাধন জীবনে যারা খানিকটা অগ্রসর ব্যক্তি, তাদের মধ্যে এই ক্ষমতা স্বাভাবিক ভাবেই এসে থাকে। তাই আমরা দেখে থাকি, জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে, তারা অনেক কথা বলেন, যা তারা নিজেরাই জানেন না, কেন বললেন। আর এইসব ক্ষমতার কোনো কার্য্য-কারন সম্পর্ক সন্মান্ধেও  তারা জ্ঞাত নন। সাধন যোগে যারা সমাধিস্থ বা কৈবল্য লাভ করেছেন, তাঁদের মধ্যে এই ক্ষমতার স্ফূরণ বেশি হয়ে থাকে। 
একদম শেষে দুটো কথা বলি, যা দিয়ে শুরু করেছিলাম।  এক হচ্ছে - বিড়াল কিভাবে বাড়ি ফেরে, বিড়ালদের গোফ বিশেষ ইন্দ্রিয়ের কাজ করে থাকে।  সে তার প্রতিমুহূর্তের  অবস্থান বুঝতে পারে এই গোভের সাহায্যে, তাই তার চোখ বন্ধ থাকলেও, নতুন অবস্থান থেকে পুরুনো অবস্থানে যেতে তার কোনো অসুবিধা হয় না। কাউকে দেখে ভালো লাগা বা না লাগা এটাও আমাদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের কাজ। ভালোবাসার মানুষের ভালো-মন্দ অনুভূতি নিজের শরীরে জেগে ওঠা,  এই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের কাজ।   

ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।  হরি ওম। 

Monday 2 November 2020

ধ্যান ও তার ফল - শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ


 ধ্যান ও তার ফল  - শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ 

 একসময় কিছু ব্রহ্ম জিজ্ঞাসু এক জায়গায় মিলিত হয়েছেন। তো কথায় কথায়, তাদের মধ্যে জিজ্ঞাসা উঠলো, এই জগতের কারন কি ব্রহ্ম ? জগতের মধ্যে বিচরণকারী এই যে আমরা - আমরা কোথা থেকে এসেছি ? আমাদেরকে কে লালন পালন করছে ? মৃত্যুর পরে আমরা কোথায় চলে যাবো ? কোন আইনে আমরা সুখ দুঃখ ভোগ করে থাকি ?

ঋষি শ্বেতাশ্বতর বলছেন, এসব বুঝতে গেলে, গভীর ধ্যানে মগ্ন হতে হবে, তখন জানা যাবে জ্যোতির্ময় পরমাত্মার শক্তিই এই জগতের কারন। মায়া তার তিন গুনের সাহায্যে অর্থাৎ সত্ত্ব-রজঃ-তম গুনের সাহায্যে সেই পরমাত্মাকে এই বিশ্বের কাছ থেকে আড়াল করে রেখেছেন। সেই এক এবং অদ্বিতীয় পরমাত্মা সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করছেন, এমনকি জীবাত্মাকে নিয়ন্ত্রণ করছেন।
এখন কথা হচ্ছে গভীর ধ্যান মানে কি ? ধ্যান অর্থ গভীর অনুসন্ধানী মন। ভদ্রলোক চায়ের দোকানে চা পান করবার জন্য বেঞ্চে বসে আছে, উনুনে কেটলিতে জল ফুটছে। ভদ্রলোক মনোযোগ দিয়ে দেখছেন। নিজের মধ্যে প্রশ্নের পর প্রশ্ন জেগে উঠছে। হঠাৎ তার মধ্যে স্বজ্ঞা জাগ্রত হলো, আবিষ্কার হলো বাষ্প চালিত রেলগাড়ী। মনের মধ্যে হঠাৎ একটা আলোর ঝলকানি। বহুদিনের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেয় এই স্বজ্ঞা। ধ্যান হচ্ছে সেই প্রক্রিয়া যার সাহায্যে স্বজ্ঞা জাগ্রত হয়। আর সব বহুদিনের সঞ্চিত প্রশ্নের জবাব এক ঝলকেই মিলতে পারে। তাই ঋষি শ্বেতাশ্বতর বলছেন, গভীর ধ্যান করো।

এখন কথা হচ্ছে এই জগতের কারন কি ? কিভাবে কথা থেকে উৎপত্তি হলো এই জগতের ? কেউ বলে থাকেন, কালের নিয়মে এই জগৎ সৃষ্টি হয়েছে, আবার কালের প্রভাবে এই জগতের বিলোপ ঘটবে। কেউ বলে থাকেন বস্তুর স্বভাবের মধ্যেই আছে জগৎ সৃষ্টির কারন ও তার কার্য্য। কেউ বলেন, জগতের সৃষ্টি একটা আকস্মিক ঘটনা। এর কোনো কার্য কারন নেই। কেউ বলেন, পঞ্চভূতই এই জগৎ সৃষ্টির কারন, অর্থাৎ ক্ষিতি-অপ-তেজ-মরুৎ-ব্যোম এগুলোর সমন্নয়ে গঠিত হয়েছে জগৎ। আবার কেউ বলছেন, এগুলোর কোন একটি বা এগুলো সমষ্টিগত ভাবেও জগৎ সৃষ্টির করেন হতে পারে না। কারন এগুলোকে অর্থাৎ পঞ্চভূতকে একত্রিত করতে পারে জীবাত্মা। কিন্তু জীবাত্মা আবার কর্ম্মফলের অধীন। অতএব জীবাত্মা স্বাধীন নয়, জীবাত্মা নিজের প্রভু নয়।

ঋষিগণ ধ্যানমগ্ন হলেন। এবং দেখলেন, জ্যোতির্ময় পরমাত্মার শক্তিই এই জগতের কারন। মায়া তার তিনটি গুনের সাহায্যে তাকে আড়াল করে রেখেছে। এই পরমাত্মাই সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করছেন।

ঋষি শ্বেতাশ্বতর  বলছেন, ধ্যানে প্রবেশ করতে গেলে, চুপ-চাপ একাসনে বসে থাকলেই ধ্যান হয় না। আধ্যাত্মিক জগতে প্রবেশ করতে গেলে, প্রথমে প্রার্থনা দিয়ে শুরু করতে হবে। তো কার কাছে প্রার্থনা করবো ? কিসের জন্য প্রার্থনা করবো ? ঋষি বলছেন,  পরমাত্মার কাছে প্রার্থনা করতে হবে ।  কিন্তু পরমাত্মা সম্পর্কে আমরা কোনো ধারণা  করতে পারি না। তাই ঋষি বলছেন, সূর্য বা সবিতার কাছে  প্রার্থনা করতে হবে। আর আমাদের মন-বুদ্ধিকে উপযুক্ত করে তুলবার জন্য প্রার্থনা  করতে হবে। ।  প্রথম কথা হচ্ছে, সূর্য আমাদের দৃষ্টিগোচর বস্তুর মধ্যে বিরাট-বিশাল। সূর্য্যের শক্তি সম্পর্কে আমাদের একটা ধারণাও  আছে। সূর্যই, এই পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির  কারন, প্রাণ রক্ষার কারন, এমনকি সূর্যই আমাদের লালন পালন করছে। তো সূর্য আমাদের দৃষ্টিগোচর জগৎ পদার্থের মধ্যে বিশ্বস্রষ্টার শক্তিশালী প্রতিনিধি।  এছাড়া জাগতিক বস্তুই আমাদের আকর্ষণের বিষয়। এই জগৎই আমাদের মনকে টেনে রেখেছে। তাই আমরা সূর্যকে কেন্দ্র করে পরমাত্মার কাছে প্রার্থনা করতে পারি। 
"হে জ্যোতিস্বরূপ সূর্য আমার মন-বুদ্ধিকে পরমাত্মা অভিমুখী করে তোলো। হে অগ্নির প্রকাশশক্তি আমার ইন্দ্রিয়গুলোকে প্রজ্বল করে তোলো। হে অগ্নের-জ্যোতি  আমার স্থূল দেহ যেন পরমাত্মার উপল্বদ্ধির যোগ্য হয়ে উঠতে পারে। আমি জগতের উৎস ব্রহ্মের উপলব্ধি করতে চাই। দয়া করে, তুমি আমার মন বুদ্ধি ও ইন্দ্রিয়গুলোকে ব্রহ্মের সাথে যুক্ত করো। " 

আমাদের পরিচিত সাবিত্রী বা গায়ত্রী মন্ত্রেও  এই একই প্রার্থনার কথা বলা আছে।  
ওঁং ভূর্ভুবঃ স্বঃ। তৎসবিতুর্বরেন্যং।
ভর্গো দেবস্য ধীমহি। ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ ওঁং।
হে (ভূঃ-ভূবঃ-স্বঃ) ত্রিলোকেশ্বর ! সবিতাদেবের পরব্রহ্মাত্মক সেই বরণীয় তেজকে আমরা ধ্যান করি। সেই সবিতা আমাদের বুদ্ধি-বৃত্তিকে প্রেরিত করুন।

ঋষি বলছেন, সমাধি লাভ করতে হলে, যোগীকে মাথা-ঘাড়-বুক শরীরের এই তিনটি অংশকে সমান্তরাল রেখে বসতে হবে। এর পর মনের সাহায্যে ইন্দ্রিয়গুলোকে ধরে এনে প্রণব বা ওম নৌকায় বা ভেলায় বসাতে হবে। এখন কথা হচ্ছে ধ্যান, আমরা যতদূর জানি মনের ব্যাপার। তো দেহ কি অবস্থায় থাকলো, তাতে কি এসে যায় ? ঠিকই বলেছেন, ধ্যান দেহের কাজ নয়, ধ্যান মনের ক্রিয়া। আসলে ঋষিগণ অভিজ্ঞতায় বুঝেছেন, মাথা-ঘাড় ও বুক সরলরেখায় রাখলে মন একাগ্র হয়। আর এই মনের একাগ্রতা ধ্যানের জন্য খুব প্রয়োজন। আমাদের গীতাতেও একই নির্দেশ আছে। সমং কায়-শিরো-গ্রীবং ধারয়ন্নচলং স্থিরঃ (৬/১৩) অর্থাৎ মাথা ঘাড় বুক ঋজু ও সমুন্নত থাকলে শরীর অচঞ্চল হয়। যদিও যোগে অভ্যস্থ ব্যক্তির জন্য, এর কোনো প্রয়োজন নেই, তারা সর্বদা যোগনিষ্ঠ।
যাই হোক, এই অবস্থায়, সংপ্রেক্ষ্য নাসিকাগ্রং স্বম। নাসিকাগ্রে মনকে স্থির করতে হবে। অর্থাৎ প্রাণবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ক্লান্তি বোধ না হাওয়া পর্যন্ত নিঃশ্বাস ত্যাগ করবেন না, আবার যতক্ষন সম্ভব শ্বাসকে বাইরে রাখবার অভ্যাস করতে হবে। দৃষ্টি থাকবে নাকের অগ্রভাগে।

এখানে গীতার আর একটা কথা স্মরণে রাখতে হবে, যে যোগীকে মিতাহারী হতে হবে। অর্থাৎখাবার বেশিও গ্রহণ করা চলবে না, আবার উপোষ থাকলে চলবে না। নিদ্রার ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত ঘুম বা একেবারে না ঘুমোনো চলবে না। অর্থাৎ আপনাকে সংযত থাকতে হবে, মধ্যাবস্থা অবলম্বন করতে হবে। । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, মনকে বসে আনা আর বাতাসকে নিয়ন্ত্রণ করা দুরূহ, কিন্তু এই অসাধ্য কাজটি করতে পারে আমাদের সংযম, অভ্যাস । তাই যোগীকে অবশ্যই সংযমী হতে হবে। নিরন্তর অভ্যাস চালিয়ে যেতে হবে। মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখবার জন্য, রেচক-পূরক-কুম্ভক-এর সাহায্য নিতে হবে। শ্বাস ত্যাগ প্রলয়ের প্রতীক, শ্বাস গ্রহণ সৃষ্টির প্রতীক ও কুম্ভক স্থিতির প্রতীক।

এবার কোথায় বসে আমরা ধ্যান করবো ? ঋষি শ্বেতাশ্বতর বলছেন, সমান স্থান, শুদ্ধ স্থান, যেখানে নুড়ি-পাথর-আগুন-বালি থাকবে না, কোলাহল মুক্ত হবে, জলাশয়ের কাছে হবে না। স্থানটি হবে মনোরম নয়ন-সুখকর। বাতাস যেখানে শান্ত অর্থাৎ গুহা বা ওই জাতীয় কিছু হলে ভালো হয়।

এখন কথা হচ্ছে, আপনি তো ধ্যানে বসলেন, কিন্তু আপনার কোনো উন্নতি হচ্ছে কি না, সেটা আপনি কিভাবে বুঝবেন ? ঋষি শ্বেতাশ্বতর বলছেন, ব্রহ্মজ্ঞান উপল্বদ্ধির আগে, যোগী তুষার, ধোয়া, সূর্য, বাতাস, আগুন, জোনাকি, স্ফাটিক, চাঁদ ইত্যাদি দেখতে পান। এগুলো সবই ব্রহ্মজ্ঞানের পূর্বাভাস। এই লক্ষণগুলো শারীরিক নয়, মানসিক। সাধক মনের গভীরে এগুলো প্রতক্ষ্য করে থাকেন। এইসব দর্শন থেকেই বোঝা যায়, ব্রহ্ম ক্রমশ তার অন্তরে উন্মোচিত হতে চলেছে।

আমরা যখন কোনো বস্তুর বা মানুষের প্রতি গভীর ভাবে আকৃষ্ট হই, বা মনোযোগ দেই, তখন সেই বস্তুর বা মানুষের গুণগুলো আমাদের কাছে স্পষ্ট হতে থাকে। আমরা জানি, জগতের সমস্ত কিছু পঞ্চভূতের সমষ্টি। পঞ্চভূতের পাঁচটি গুন্ আছে, অর্থাৎ শব্দ-স্পর্শ-রূপ-রস-গন্ধ। এই গুনগুলোর সঙ্গে তখন যোগীর যোগাযোগ ঘটবে। এমনকি নিজের মধ্যে যে সূক্ষ্ম গুন্ আছে, তার সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হতে থাকে। আর এই জ্ঞান তখন যোগীর দেহের মধ্যে স্পষ্ট হতে থাকে। এতে করে যোগীর দেহের মধ্যেও রূপান্তর ঘটতে থাকে। দেহ তখন শুদ্ধ হতে থাকে। ইচ্ছাশক্তি বৃদ্ধি হতে থাকে। আর যোগীর ইচ্ছাশক্তি যখন ক্রিয়াশক্তিতে পরিণত হয়, তখন তার মৃত্যুও তারই ইচ্ছামতো হয়ে থাকে।

ঋষি শ্বেতাশ্বতর বলছেন, শরীর তখন হালকা হয়ে যায়, গড়ন হয় ছিপছিপে। মনে আসে অনাসক্তি। গায়ের রঙ হয় উজ্জ্বল, কন্ঠস্বর হয় মধুর। দেহে একটা সুগন্ধ পাওয়া যায়, এমনকি মলমূত্রের পরিমান যায় কমে। এগুলো যোগের প্রাপ্তি। কিন্তু স্বামী লোকেশ্বরানন্দ বলছেন, এই লক্ষণগুলো সবসময় দেখা যাবে, তার কোনো মানে নেই।

কিন্তু এই যে পরিবর্তন, এগুলো কি ভাবে হতে পারে ? ঋষি বলছেন, ধুলোমাখা একতাল সোনা যেমন ধুলে তার স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য ফিরে আসে, তেমনি কেউ যদি নিজেকে আত্মা বলে উপলব্ধি করতে পারে, অর্থাৎ আত্মার উপরে যে ধুলো-ময়লা স্বরূপ অহং-এর আভরণ আছে, তা মুছে ফেলতে পারে, আবার নিজের আত্মাকে সকলের আত্মা বলে উপলব্ধি করতে পারে, তখন এই রূপান্তর সম্ভব হতে পারে। যোগী তখন নিজেকে ব্রহ্মজ্যোতি স্বরূপ স্পষ্ট অনুভব করেন।

পরমাত্মা পরমেশ্বর সর্বত্র বিরাজ করছেন। তিনি জ্যোতিরূপে প্রথম প্রকাশিত হন। তিনিই মাতৃগর্ভে ভ্রূণ রূপে আসেন, ভবিষ্যতে শিশু হয়ে জন্মান। তিনি সমস্ত দেহের সমষ্টি। তিনি সমস্ত সত্তায় বিরাজ করছেন। সেই জ্যোতির্ময় পরমাত্মা আছেন অগ্নিতে, আছেন জলে, আছেন ঔষধি রূপে, জলচর রূপে, স্থলচর রূপে, উভচর রূপে। এই সত্য আমাদের কাছে শোনা কথা, কিন্তু ধ্যানযোগীর কাছে তখন এগুলো প্রতক্ষ্য সত্য হয়ে দেখা দেয়।
সেই পরমাত্মাকে আমরা নমস্কার করি।
ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ। হরি ওম।

ধ্যানের মনোবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।
গবান বুদ্ধ আত্মা সম্পর্কে নীরব, কিন্তু মানুষের দুঃখ সম্পর্কে সরব। তো ভগবান বুদ্ধের এক শিষ্য তাকে প্রশ্ন করেছিলেন। বলছেন আমরা তো আপনার সমস্ত উপদেশ শুনি, সেই অনুযায়ী কার্য্য করে থাকি। কিন্তু আমাদের দুঃখ গেলো কি ? আমরা জরা ব্যাধি মৃত্যু থেকে তো রেহাই পাইনি।

আচার্য্যদেব বললেন, মানুষের জীবনে দুঃখের তীর আসে দুই দিক থেকে। একটা বাইরে থেকে আর একটা আসে ভিতর থেকে। বাইরের তীর থেকে রক্ষা পাবার জন্য, মানুষ অনেক প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পরে। কিন্তু ভিতরের তীর মানুষকে বিদ্ধ করলে, তার কোনো প্রতিষেধক পাওয়া যায় না। মহাপুরুষগন এই ভিতরের তীর থেকে মানুষকে রক্ষা করে থাকেন। দেখো আমরা কেউ প্রকৃতির নিয়ন্ত্রক নোই। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা আসবে। জীবের জন্ম-মৃত্যু আমরা প্রতিরোধ করতে পারি না। তবে কি জান, প্রত্যেকটি ঘটনার একটা প্রতিক্রিয়া আছে। এই প্রতিক্রিয়াই আমাদের সুখ-দুঃখের কারন । সন্তানের জন্ম হলে, মানুষ আনন্দ পায়। আবার মৃত্যু হলে সে শোকাচ্ছন্ন হয়। এই সুখ-দুঃখের কারন হচ্ছে সম্পর্ক। আবার নির্ভরতা মানুষকে যেমন স্বস্তি দিতে পারে, তেমনি বিচ্ছেদ মানুষকে অসহায় করে তুলতে পারে। তুমি কেমন থাকবে সেটা নির্ভর করবে তোমার অবস্থানের উপরে। তুমি যদি নিজেকে দাহ্য পদার্থ অর্থাৎ পেট্রল বা কেরোসিন করে রাখো, তবে সামান্য জ্বলন্ত দেশলাইকাঠি তোমারকে জ্বালিয়ে পুড়িযে শেষ করে দেবে। আর তুমি যদি নিজেকে জলের পাত্র করতে পারো, তবে দেশলাই কাঠি তোমাতেই নিঃশেষিত হয়ে যাবে। অর্থাৎ তোমার অবস্থান, তোমার উপরে ঘটনার প্রতিক্রিয়া বা প্রভাব তোমাকে সুখ দুঃখের অনুভূতি এনে দেবে। তাই প্রতিক্রিয়ার কৌশল আয়ত্ত্ব বা প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করবার শিক্ষাই মহাপুরুষগন দিয়ে থাকেন। প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করবার শিক্ষা নয়, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করবার শিক্ষা । আর এটি করবার কৌশলই হচ্ছে ধ্যান।
মহাত্মাগণ বলে গেছেন, সত্যকে জানতে গেলে ধ্যান করো। শান্তিতে থাকতে গেলে ধ্যান করো। ধ্যান করলে শারীরিক ছোটোখাটো ব্যামো ভালো হয়। ধ্যান করলে মনের অসুখ ভালো হয়। কিন্তু কিভাবেই বা ধ্যান আমাদের শরীরে বা মনে কাজ করে সেসম্পর্কে আমরা বিশেষ কিছু জানি না। আজ আমরা সেই সম্পর্কে শুনবো।
ধ্যানের এই বৈজ্ঞানিক ক্রিয়া বুঝতে গেলে আমাদের ধ্যানের প্রক্রিয়া সম্পর্কে একটা ধারণা থাকতে হবে। দেখুন যোগের যেমন হাজার এক প্রক্রিয়া আছে, তেমনি ধ্যানের গতিপথ ও চলার ছন্দ প্রত্যেকটি মানুষের ক্ষেত্রেই আলাদা আলাদা। তাই এই ব্যাপারে একটা একক সিদ্ধান্তে আসা খুব মুশকিল। ধ্যান আসলে মনের সাহায্যেই প্রাথমিক ভাবে শুরু করতে হয়। আবার মন যেহেতু শরীরের একটা সূক্ষ্ম পদার্থ বা আমাদের স্নায়ুর ক্রিয়া মাত্র তাই আমাদের স্থূল শরীরেও একটা ধ্যানের প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে।

আমরা আমাদের তিনটি অবস্থার সঙ্গে বেশ পরিচিত। সেগুলো হচ্ছে জাগ্রত, স্বপ্ন, ও সুষুপ্তি। মন এই তিন অবস্থায় তিন রকম কাজ করে থাকে।

আবার জাগ্রত অবস্থায় আমাদের মন একই রকম থাকে না। কখনো স্থির,কখনো চঞ্চল, কখনো ম্রিয়মান কখনো উৎফুল্ল। মন আপন খেয়ালে কাজ করে। ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে যখন আমরা বিষয়ের সংস্পর্শে আসি, তখন মন কর্ম্ম চঞ্চল থাকে। এই-সময় আমাদের বিবেক বিবেচনা কাজ করে না। যেমন একজন শিশু, বা নির্বোধ ব্যক্তি করে থাকে।
আবার এমন অনেক সময় আসে, যখন মন আমাদের কোনো স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারে না। মনের এই অবস্থাকে বলা হয়ে থাকে হতবুদ্ধি অবস্থা মুঢ় অবস্থা। এটি আমাদের সাময়িক ভাবে হতে পারে, আবার শারীরিকভাবে দুর্বল মুহূর্তে হতে পারে, বা এটা মানসিক দুর্বলতার লক্ষণ হিসেবে দেখা যেতে পারে।
আসলে আমাদের মতো সাধারনের মানুষের মনে সব সময় দুটি ভিন্ন চিন্তার উদয় হয়, ভালো কি মন্দ, উচিত কি অনুচিত, ধরবো কি ছাড়বো অর্থাৎ, দুটি বিপরীত সংস্কারের উদয় হয়। আবার আমরা যখন কোনো বিশেষ একটি বিষয়ে একাগ্র হই তখন আমাদের মন শান্ত প্রকৃতির হয়ে যায়। এই শান্ত অবস্থা বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করতে সাহায্য করে থাকে। বৈজ্ঞানিক, শিল্পী, কবি, দার্শনিকগন মনের এই অবস্থার সাক্ষী।
এই একাগ্র অবস্থা বিষয়কেন্দ্রিক না হয়ে যদি শূন্য বা বিন্দুর মতো বিষয়-রোহিত হয় তখন মন আরো স্থির হতে পারে। যোগের দৃষ্টিতে মনের আরো একটি অবস্থা আছে, যাকে বলা হয়, নিরুদ্ধ অবস্থা। এই অবস্থায়, মনের মধ্যে কোনো বিষয় যেমন থাকে না, তেমনি কোনো চিন্তাও থাকে না। এই চিন্তাহীন মনের অবস্থা একে বলে নিরুদ্ধ অবস্থা। এইসময় মন চেতনাতে স্থিত থাকে।

আমরা ধ্যানে যেটা করি, সেটা হচ্ছে মনের এই শেষ অবস্থা। কিন্তু এই শেষ অবস্থায় অর্থাৎ মনকে নিরুদ্ধ অবস্থায় আনতে গেলে, প্রথমে মনকে একাগ্র করতে হয়। অর্থাৎ প্রথমে যেকোনো একটি বিষয়ে আমাদের মনকে একাগ্র করে থাকি।

এখন কথা হচ্ছে, মনকে যখন আপনি একাগ্র করতে যাবেন, বা একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে নিবদ্ধ করতে যাবেন, তখন আপনার মধ্যে নানান রকম প্রশ্ন উঠতে থাকবে। অর্থাৎ এটা করে কি হবে। অহেতুক সময় নষ্ট করছো। তার চেয়ে চলো একটু বেরিয়ে আসি। বা এসব করে কিছু হবে না , তার চেয়ে কিছু অর্থকরী কাজ করো। বেঁচে থাকতে গেলে, বসে থেকে ধ্যান করলে কিছু হবেনা । এতে দুঃখ বাড়বে বৈ কমবে না। সংসারে থাকতে গেলে, তোমাকে এইভাবে সময় নষ্ট করা ঠিক নয়। ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ মনের মধ্যে নানান রকম প্রশ্ন উঠতে থাকবে। এই যে প্রশ্ন - এগুলো বিশ্লেষণ করলে বুঝতে পারবেন, এগুলো আসলে আপনার পূর্বার্জিত সংস্কার। ধ্যানময় জীবন শুরুর আগে যে কর্ম্মময় জীবন আপনি অতিবাহিত করেছেন, সেই অভিজ্ঞতা আপনার স্মৃতিতে জমা হয়ে আছে। কিন্তু ধ্যান-জনিত কোনো সংস্কার বা অভিজ্ঞতা আপনার মধ্যে আগে থেকে সঞ্চিত নেই। তাই এই সব পুরোনো সংস্কার আপনার এই ধ্যানের কাজে বাধা স্বরূপ হয়ে দাঁড়াবে।

এইসময় সাধক যেটা করে থাকেন,সেটা হচ্ছে ইচ্ছেশক্তির সাহায্যে পুরোনো সংস্কারকে দূরে সরিয়ে রেখে নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হওয়া। এইসময় সাধক নিজেকে চিনতে পারেন। অর্থাৎ তার পূর্ব পূর্ব সংস্কারকে তিনি এইসময় সাক্ষাৎ করে থাকেন। এখন ইচ্ছেশক্তির প্রাবল্য যত বাড়বে, তত আপনি পুরোনো সংস্কারকে পিছনে ফেলে দিয়ে এগিয়ে যেতে পারবেন। আর এটি তখনই সম্ভব হয়, যখন আপনার মধ্যে সত্যকে জানবার জন্য আকুলতা-ব্যাকুলতা একটা ঝড়ের আকার নেবে।

যখন আপনার ইচ্ছে শক্তি মনের উপরে প্রভুত্ত্ব বিস্তার করতে পারবে, তত সাধক ধ্যানের পথে অগ্রসর হতে পারবে। আসলে এই সংস্কারগুলো আমাদের মনকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। এখন থেকে মন কিছুতেই বেরিয়ে আসতে পারে না। কিন্তু ইচ্ছেশক্তির ধারালো অস্ত্র দিয়ে, এই বাঁধনগুলোকে কেটে স্বচ্ছ মনকে সত্যের সন্ধানী করে তুলতে হবে। এটাই ধ্যানের কাজ।

এখন কথা হচ্ছে, মন এখান থেকে বেরুবে কি করে ? দেখুন আমাদের মন কাজ করে আমাদের পুরোনো সংস্কার ও আবেগের দ্বারা তাড়িত হয়ে। এর জন্যই আমরা লক্ষ করেছি, অধিকাংশ মানুষই একটা যান্ত্রিক স্বভাবের দাস। এমনকি সে তার জীবনের উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে থাকে তার পুরোনো সংস্কারের দ্বারা।

আমরা আমাদের মনের চিন্তাকে না পারি নিয়ন্ত্রণ করতে, না পারি চিন্তাকে রোধ করতে। ফলে হয় কি, আমরা সবসময় কোনো না কোনো চিন্তার মধ্যেই আবদ্ধ হয়ে থাকি। একাগ্রতা বা এক বিষয়ে মনকে নিবদ্ধ করতে পারলে, আমরা মনের চিন্তাকে একমুখী করে তুলতে পারি। তখন চিন্তার যে এলোমেলো স্রোত সেটা একমুখী হয়ে যেতে পারে। এইজন্য সাধককে প্রথমে ধারণা বা ইষ্টচিন্তা করতে বলা হয়।

চিন্তা হচ্ছে স্নায়ুর ক্রিয়া মাত্র, যাকে আমরা মনের কাজ বলে থাকি। আর সংস্কার হচ্ছে, আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা যা আমাদের স্মৃতিতে ধরা আছে। অর্থাৎ আমাদের কারন শরীরে যে স্মৃতিভান্ডার জন্ম-জন্মান্তর থেকে সংরক্ষিত আছে, তাকেই বলে সংস্কার। এই কারন শরীরের অনুভূতি আমাদের নেই। আসলে আমাদের সব অনুভূতিই দুর্বল প্রকৃতির। আমাদের চোখ বেঁধে দিলে, আমরা আমাদের নিজেদের স্থূল শরীরের সঠিক অবস্থান সম্পর্কে বিস্মৃত হই। তো কারন শরীরের কথা তো দূর অস্ত।

যাইহোক, ধারণা বা ইষ্টচিন্তা আমাদের মনকে শান্ত করতে পারে। যেকোনো জিনিষকে আপনি ভালো করে একাগ্র চিত্তে লক্ষ্য করুন, দেখবেন আপনার মন শান্ত হতে থাকবে। এমনকি আপনার যে সব গুন্ বা দোষ আছে, সেগুলোর দিকেও যদি আপনি খেয়াল করতে থাকেন, তবে দেখবেন, আপনার সেই গুন্ বা দোষ স্থির হয়ে যাবে। প্রতিক্রিয়াহীন হয়ে যাবে। আর তখন আপনার এই দোষ বা গুনের প্রতি নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বাড়তে থাকবে। তাই ধ্যান হচ্ছে, মনকে শান্ত করবার একটি অনন্য উপায়। মনকে নিয়ন্ত্রণ করবার উপায়ও বটে।

আমাদের সঞ্চিত সংস্কারের সঙ্গে প্রথম দিকে ইচ্ছেশক্তি প্রভাব ফেলতে পারে না। কিন্তু নিরন্তর ধ্যানের অভ্যাসের ফলে, আমাদের ইচ্ছেশক্তির ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পুরোনো সংস্কারের বিলোপ না হলেও, নতুন-নতুন অভিজ্ঞতা বা সংস্কারের জন্ম হবার ফলে, পুরোনো সংস্কার বা বৃত্তি ধীরে ধীরে চাপা পড়ে যায়। অর্থাৎ পুরোনো সংস্কারের শক্তিক্ষয় হতে থাকে।

আমাদের প্রতিটি কাজের উৎস হচ্ছে মন। আর মনের গতিবিধি নির্দিষ্ট হয় তার পুরোনো সংস্কার থেকে। মনের কাজ হচ্ছে চিন্তা। আর চিন্তা পুষ্টিলাভ করে আমাদের কামনা-সংকল্প থেকে। শরীর অর্থাৎ ইন্দ্রিয়গুলো থেকে কামনার উদ্রেগ হয়, তবে সেই সংস্কার শরীর ও ইন্দ্রিয়কে ঘিরেই প্রকাশিত হবার চেষ্টা করে থাকে। সুতরাং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমাদের কি ধরনের চিন্তার উদ্ভব হচ্ছে, সেগুলোর দিকে খেয়াল রাখা দরকার। মনকে পবিত্র চিন্তা দিয়ে ভরিয়ে দিতে হবে। মনের মধ্যে পবিত্র চিন্তার সঙ্গে আমাদের শারীরিক পবিত্রতার সম্পর্ক আছে। তার আমাদের শরীরকেও পবিত্র রাখতে হবে। আর এতে করে, আমাদের জীবনের চিন্তাধারা বদলে যাবে। আর আমাদের চিন্তাধারার বদল হলে, আমাদের জীবনধারা বদলে যাবে।

ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ। হরি ওম।


-------------------