Saturday 8 December 2018

সত্যধর্মের আলোতে ও পরোপকার


সত্যধর্মের আলোতে  ও পরোপকার


পরোপকার আমাদের সবার কাছে পরিচিত শব্দ। আমরা জানি পরোপকার মানে পরের উপকার করা। এবং এটা যে একটা ভালো কাজ, সেটাও আমরা সবাই জানি। এই ব্যাপারে বক্তৃতা দেবার কোনো জায়গা নেই, প্রয়োজনও নেই। তথাপি যখন এই "পরোপকার" নিয়ে আমাকে বলতে বলা হলো, তখন আমি বাধ্য হয়ে মহাত্মা গুরুনাথের বই পড়তে লাগলাম। আর গুরুদেবের বই পড়লেই আমি নতুন কিছু পাই।  কি বলেছেন তিনি এই ব্যাপারে ?

পরোপকার বলতে জানতাম, পরের উপকার। গুরুদেব বললেন - পর কথাটার মানে শ্রেষ্ঠ  অর্থাৎ পরোপকার মানে শ্রেষ্ঠ উপকার। এখন পরোপকার করে, অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ উপকার করে  আমার কি লাভ হবে।  আগে নিজের উপকার করি ! তার পরে পরেরটা দেখা যাবে। গুরুদেব বলছেন, যদি তুমি পরের উপকার করো,  তবে আখেরে তোমারই লাভ হবে। এই ব্যাপারটা অবশ্য আমাদের মতো সাধারণের মাথায় ঢোকে না। কেননা উপকার যদি পরেরই  হবে, তবে আমি তাতে কি ভাবে লাভবান হবো ? আমার-তো আরো কম পড়ে  যাবে। আমার প্কেট খালি হয়ে যাবে। এই জায়গা একটু ভালো করে বুঝতে হবে।

তার আগে বুঝে নেই ,পরোপকার ব্যাপারটা কি ?

গুরুদেব মহাত্মা বলছেন : পরোপকার একটা মহাযজ্ঞ।  দয়া, ন্যায়পরতা এই যজ্ঞের ইন্ধন। জ্ঞান এর প্রকৃষ্ট সাধন। স্বার্থপরতা এর আহুতি। আত্মপ্রেম এর দক্ষিনা।  আর ফল হচ্ছে আত্মপ্রসাদ। অতএব অন্যের খুশির জন্য নয়, নিজের খুশির জন্য পরের উপকার করার থেকে উৎকৃষ্ট উপায় আর কি আছে ?
এখন কথা হচ্ছে, মহাযজ্ঞ কি ? ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে কোনোকিছু সমর্পন-ই যজ্ঞ। আপনারা যজ্ঞ দেখেছেন। তাতে আগুন জ্বেলে ঘৃত ইত্যাদি পুরোহিত  আহুতি দেয়। গুরুদেব বলছেন, দয়া ও ন্যায়পরতা দিয়ে আগুন জ্বালুন। স্বার্থপরতা আহুতি দিন, আত্মপ্রেম দক্ষিণা হিসেবে দিন, আর অতুল আত্মপ্রসাদ লাভ করুন।  তাহলে পরোপকার মানেই হচ্ছে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে কোনো কিছু সমর্পন। যার দ্বারা আমি নিজে খুশি হতে পারি। অন্যকে খুশি করার কথা ভাবেন না। এবং এর দ্বারাই ঈশ্বরকে খুশি করা যায়। অতএব আপনি যদি অধ্যাত্বিক হতে চান, তবে পরোপকার একটা উৎকৃষ্ট উপায়। 

পরোপকার মানে এই নয় যে সবসময় টাকা-পয়সা দিয়ে উপকার করতে হবে। উপকার অনেক ভাবে করা যায়। 
কথা দিয়ে অর্থাৎ উপদেশ দিয়ে আপনি কারো উপকার করতে পারেন।

শ্রম দিয়ে আপনি কারো উপকার করতে পারেন।

নিজের সাময়িক স্বাছন্দ ত্যাগ করে, নিজের অসুবিধা না করে, আপনি কারুর উপকার করতে পারেন।

আপনি যদি ডাক্তার হন, নিজের সুবিধা মতো ঘন্টাখানেক সময় আপনি বিনা পয়সায় দুস্থ রুগী দেখতে পারেন।

 আপনি যদি মাস্টার হন, তবে বিনা পারিশ্রমিকে আপনার পছন্দ মতো দু একটা ছাত্রকে পড়াতে পারেন।

আপনার ক্ষমতা অনুযায়ী আপনি যেকোনো ভাবে আপনি মানুষের উপকার করতে পারেন।

আপনার অব্যবহৃত জামা-প্যান্ট দুস্থদের দান করতে পারেন।  আপনার অব্যবহৃত ঔষধ আপনি দোকানে দিয়ে আসতে  পারেন।

আপনি সকালে, পাখিদের কিছু খাবার দিতে পারেন। আপনি রাস্তার কুকুরকে দুটো বিস্কুট দিতে পারেন।

 রাস্তায় কোনো অন্ধ লোককে আপনি রাস্তা পার করে দিতে পারেন।

আপনি কোনো বৃদ্ধ/বৃদ্ধাকে একটু সময় দিন। তারা কথা বলতে চায়।  কিন্তু লোক পায়  না।

বাড়ির পাশের কারুর বাজার করে দিতে পারেন। না এতে সন্মান যায় না।

উপায়গুলো আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে। 

আপনি কি একটু ভেবে দেখেছেন, আপনি মরলে কটা লোক আপনার কথা মনে রাখবে ? তের  দিন পরে কেউ আপনার কথা মনে রাখবে না। কারন কি ? আপনি কারুর জন্য কিছু করেন নি। আপনি শুধু নিজের কথা ভেবেছেন। যে কারণে আপনি একা হয়ে গেছেন। শেষ জীবনে এসেও আপনি আপনার সম্পত্তির বৃদ্ধি না হোক, অন্তত রক্ষার কথা ভাবছেনই । আপনি নিজের ছেলেমেয়ের কথা ভাবছেন। স্ত্রীর কথা ভাবছেন।  এটাই আপনার আতঙ্কের কারন, ভয়ের কারন। আপনি সব সময় ভীত হয়ে আছেন। আপনার একশোটি ছেলেমেয়ে থাকলেও আপনি একা হয়ে গেছেন। আপনি কর্তব্য করেছেন। দায়িত্ত্ব পালন করেছেন। আপনি নিজের ইচ্ছেয় কাজ করেছেন, আর ফল হয়েছে ভগবানের ইচ্ছেমতো। আপনি একটু ভগবানের ইচ্ছায় কাজ করে দেখুন, ফল হবে আপনার ইচ্ছে মতো।
গুরুদেব বলছেন : দাতা দান করে যে আনন্দ পায়, গ্রহীতা সে আনন্দ পায় না। কৃতজ্ঞতা গ্রহীতাকে সংকুচিত করে দেয়। বিশ্বামিত্র মুনি দীর্ঘদিন অনাহারে থেকে তপস্যা করে, ভগবানের কাছ থেকে এক বাটি প্রসাদ পেয়েছিলেন। ক্ষুদার্থ ব্রাহ্মণ-বেশি ইন্দ্রকে সেই প্রসাদ দান করেছিলেন। ইন্দ্রের খাওয়া শেষ  হয়ে গেলে, বিশ্বামিত্র নিজেকে গর্বিত মনে করেছিলেন, কিন্তু ইন্দ্র কাচুমাচু হয়ে গেছিলো।

ব্যাসদেব আমাদের জন্য বেদকে সংযোজন করেছিলেন, আমাদের উপকার করেছিলেন, তাই ব্যাসদেব মহান।

ভগবান গৌতম  বুদ্ধদেব  নিজে রাজার ছেলে, তার কোনো দুঃখ ছিল না।  কিন্তু আমাদের দুঃখ নিবারণের জন্য তপস্যায় রত হয়েছিলেন। নিদারুন শারীরিক কষ্ট  ভোগ করেছিলেন, শুধু আমাদের দুঃখের নিবৃত্তির জন্য।

আপনি একটা কথা শুনুন, জগতের সমস্ত জীব, ভগবানের সন্তান। পরম-পিতা পরম-মাতার সন্তান। তো ভগবানের সন্তানদের উপকার করলে ভগবান কি খুশী হবেন, না অখুশী হবেন  ?

তাই গুরুদেব বলছেন পরের উপকার করা মানে নিজের উপকার করা। আমাদের মতো সাধারণ লোক, অজ্ঞানীরা ভাবি পরোপকার মানে অন্যের উপকার। আর জ্ঞানীরা ভাবেন পরোপকার মানে শ্রেষ্ঠ উপকার, আর শ্রেষ্ঠ উপকার তো নিজের জন্যই করা উচিত। আর সেটাই করে থাকেন, মহৎ পুরুষেরা।

একটা কথা শুনুন, আপনি  যা দেবেন, তার হাজার গুন্ ভগবান আপনাকে দেবেন। আসলে সবই তো ভগবানের।  আপনি তো ওছি। দেখভালের দায়িত্ত্ব পেয়েছেন মাত্র। সবই  তাঁর।  এক সময় এগুলো অন্যের ছিলো, আজ আপনার হয়েছে, কাল অন্য কারুর হয়ে যাবে। এটাই জগতের নিয়ম। ধৃতরাষ্ট্রের ১০১ সন্তান থাকা সত্ত্বেও তিনি এক সময় একা হয়ে গেছিলেন। এমনকি আজ যাকে আপনি আপনার ছেলে/মেয়ে/নাতি/নাতনি  ভাবছেন, তারা সবাই   মাত্র কদিন আগে কার ছেলে, বা কার বাবা ছিল, তা কি আপনি জানেন ? আপনি মৃত্যুর পরে, কার ছেলে হবেন তা কি আপনি জানেন ? জানেন না। তাই এই সাময়িক সম্পর্কের মায়া ত্যাগ করুন। সবই তাঁর, তার জিনিষ তাকে দিয়ে আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমান। 

কে উপকার করতে পারে ?

আমরা সাধারণত বুঝি, যার আছে, সেই উপকার করতে পারে। গুরুদেব বলছেন, না উপকার করতে গেলেও জ্ঞান থাকা দরকার। কিসে কার উপকার হবে, আর তাতে তোমার কোনো অপকার হবে কি না সেটাও বোঝা দরকার। গুরুদেব বলছেন, যদি বিশিষ্ট জ্ঞান না থাকে, তবে হয়তো যা উপকার বলে বোধ হচ্ছে , অনেক স্থলে তা অপকার ভিন্ন আর কিছু নয়। গুরুদেব এই ব্যাপারে একটা উদাহরন দিয়ে বুঝিয়েছেন। আমি আমার জীবনের দুটো ঘটনার কথা বলি।

এক :  আমি তখন, সবে চাকরি পেয়েছি। ডেকার্স লেনে আমাদের অফিস। তখন, ঠাকুরনগর থেকে অফিসে যেতাম। আর যেহেতু একটু দূর থেকেই অফিসে যেতাম, একটু আগে আগেই অফিসে পৌঁছে  যেতাম। তো সেদিন দেখি, কার্জন পার্কের পাশের রাস্তায় একটু জটলা। জটলা দেখে এগিয়ে গেলাম। গিয়ে দেখি,  ৪০/৪২ বৎসরের এক ভদ্রলোক স্কুটার এক্সিডেন্ট করেছে, একটা পা স্কুটারে চাপা পড়েছে। টানাটানি করছে, কিন্তু বের করতে পারছে না। সবাই পাশে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসছে না। আমি তাড়াতাড়ি, ভিড় ঠেলে গিয়ে স্কুটারটা তুলে ধরলাম। ভদ্রলোক পা বার করলেন, কিন্তু দাঁড়াতে পারছেন না। আমি  ভদ্রালোককে ধরে ধরে, রাস্তার পাশে বসিয়ে দিলাম। পা-টা ছড়ে গেছে।  হসপিটালে নিয়ে গেলে ভালো হয়। কিন্তু ভদ্রলোক তাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে বললো। তার কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে, অফিসে কোনো রকমে এটেন্ডেন্স দিয়ে, একটা ট্যাক্সি করে, তাকে বাড়ির দিকে নিয়ে চললাম। রাস্তায় তিনি অচেতন হয়ে পড়লেন। ভয় পেয়ে গেলাম।  মরে যাবে না তো ? যাই হোক ভগবানের কৃপায় সে মরলো  না। ঠিকানা দেখে, বাড়ির কাছে গিয়ে, বাড়ির কড়া নাড়লাম। এক ভদ্র মহিলা বেরিয়ে এলো। তাকে ব্যাপারটা বলতেই, কেমন যেন একটু বিরক্তি প্রকাশ করলো। এবং দরজা খোলা রেখে ভিতরে চলে গেল। আমি খানিক্ষন দাঁড়িয়ে, কারুর সহযোগীতা না পেয়ে, ভদ্রলোককে, কোনো রকমে টেনে হিচঁড়ে উপরে তুললাম। নিজের প্কেট থেকে ট্যাক্সির টাকা দিয়ে বাসে করে অফিসে ফিরলাম। অফিসে ফিরে আসতেই, সহকর্মীরা, আমাকে এই মারে কি সেই মারে। ব্যাটা পুলিশ-কেস  খেতে গেছো ? তোমার নতুন চাকরি, পুলিশ কেস হলে, চাকরিটা যাবে। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। পরোপকারের চেয়ে, চাকরিটা আমার দরকার বেশী।

আর একটা কাহিনী বলি :
দুই : চৈত্র মাসের এক পড়ন্ত দুপুরে, তখন প্রায় তিনটে/সাড়ে তিনটে বাজে। এক ভদ্রলোক কয়েকটা ধুপ কাঠির প্যাকেট নিয়ে আমাদের বাড়িতে এলো, এই বিশারপাড়াতেই। বললো, আমি ডানলপে কাজ করতাম। ডানলপ বন্ধ হয়ে গেছে, ছেলেমেয়ে নিয়ে বিপদে পড়েছি। যদি একটা ধুপ কাঠি কেনেন। বলতে বলতে সিঁড়িতে বসে পড়লেন। আমি একটু বিরক্ত হলাম।  এরা  সব ধান্ধাবাজ, মিথ্যে কথা বলে ব্যবসা করে।  কথা শুনে, আমার স্ত্রী বেরিয়ে এলো। ক্লান্ত-শ্রান্ত এক ভদ্রলোককে দেখে, স্ত্রীর কি মনে হলো, বললো, আপনি কিছু খাবেন ? আসলে মায়ের মন তো - এঁরা  আবার একটু নরম নরম হয়। ভদ্রলোক আমার স্ত্রীর দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো। বললো, দুদিন কিছু খাইনি। শুনে আমারও খারাপ লাগলো। কি আছে, দেও  যদি খায়। আসলে আমরা মাত্র দুইজন - আর একটা বাচ্চা। বড় পরিবারে, খাবার পরেও কিছু থাকে, অন্তত ভাত-টা  থাকে। কিন্তু আমাদের তো তাও নেই। বাড়িতে দুধ, মুড়ি ছিল। আমার স্ত্রী সেই দুধ-মুড়ি আর একটু চিনি এনে দিলেন। ভদ্রলোক তৃপ্তি নিয়ে খেলেন। আমার খুব ভালো লাগছিলো। কিন্তু একী ? ভদ্রলোক হড়হড় করে বমি করে দিলেন। আর মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। আমি কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে গেলাম। ভদ্রলোক মরে যাবে না তো ? একটা ভয়, আশঙ্কা আমাকে ঘিরে ধরলো। যাই হোক মাথায় জল-টল দিয়ে সুস্থ করলাম। কিন্তু একটা শিক্ষা হলো - কি দিয়ে কি হয় - বোঝা বড় দায়।

তাই গুরুদেব বলছেন, আপনি যাকে  উপকার ভাবছেন, সেটা অন্যের জন্য এমনকি আপনার জন্যও ভালো নাও হতে পারে। তাই গুরুদেব বলছেন, উপকার করতে চাওয়া ব্যক্তির পক্ষে যেমন দয়া, ন্যায়পরতা,দরকার,তেমনি স্বার্থপরতা ও আত্মপ্রেম বিসর্জন আবশ্যক আর সবশেষে যেটা দরকার সেটা হচ্ছে  জ্ঞানবত্তা  ।

পরোপকার করার সময় কয়েকটা নিয়ম মেনে চলুন :

১. নিজের যা  নেই, তা অন্য কাউকে দিতে যাবেন না। আমরা অনেক সময় নিজে  কোনো বিষয়ে সম্যকরূপে না  জেনে, অন্যকে জ্ঞান দেওয়া শুরু করি। আমরা ডাক্তার না হয়েও অনেক ডাক্তারি উপদেশ দেই। আমরা ফুটবল না খেলেও, পেলের খেলার ভুল ধরি, উপদেশ দেই , আমরা ক্রিকেট না খেলেও সৌরভকে উপদেশ দেয়। নিজে পড়াশুনা না করে, অন্যকে পড়াশুনার উপদেশ দেই। এমনি অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়। নিজের আধ্যাত্মিক জ্ঞান না থাকলেও অন্যকে উপদেশ দেই। এটা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গাছে। এতে তার আরো খারাপ হতে পারে। সেটা আমরা বুঝি না।
তাই গুরুদেব বলছেন : অজ্ঞানীর মতো অন্যের উপকার করতে যেও না।


২.যার যেটা লাগবে তাকে তাই দিন। অর্থাৎস্থান, কাল,.পাত্র বুঝে দান করুন, কার কিসে উপকার হবে, সেটা বুঝে উপকার করার চেষ্টা করুন। আমি একটা বন্ধুকে দেখতাম মাঝে মধ্যে ও নিজের পয়সায় বই কিনে দান করতো। শুনলে মনে হবে কাজটা ভালো। কিন্তু শুনলে অবাক হবেন, ও আম্বেদকর বই, পেরিয়ার-এর বই, জহরলাল নেহরুর বই, ইত্যাদি বই ক্লাস ফাইভ থেকে এইটের ছেলেমেয়েদের দেন করতো। আমার মনে হয় না কেউ ওগুলো পড়তো।

পরোপকার করলে কি হয় অর্থাৎ পরোপকারের ফল কী  ? 

আপনি যেমন দেবেন, আপনি তেমন পাবেন। আপনি যেমন কর্ম করবেন, তেমনি ফল পাবেন। বাংলার দুটো সংগঠন সারা পৃথিবীতে খুব নাম করেছে। আর সে দুটো হচ্ছে ভারত সেবাশ্রম ও রামকৃষ্ণ মিশন।  এরা  আধ্যাত্মিক উন্নতির সাথে মানব সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করেছে।  অর্থাৎ পরোপকার কার্যে নিজেদের নিয়োগ করেছে। আর তাই এদের সদস্যদের আধ্যাত্মিক উন্নতিও সহজ সরল হয়েছে। এদের দেখলেও আপনার ভালো লাগবে। আসলে, পরোপকারের কাজে নিযুক্ত থাকলে, নিজের মন উৎফুল্ল থাকে। নিজের ভিতরে ভয়, ভীতি থাকে না। সদা প্রসন্ন মন, নির্মল আনন্দ উপভোগ করে।

গুরুদেব বলছেন, পরের উপকার করলে আত্মপ্রসাদ লাভ করা যায়। যিনি ন্য়ায়নিষ্ঠা, জীব-অনুকম্পা ও বিশুদ্ধ জ্ঞানের দ্বারা ও বিশুদ্ধ জ্ঞানের সাহচর্য্য অবলম্বন এবং স্বার্থপরতা সমূলে উৎপাটন করে, পরোপকার সাধনে প্রবৃত্ত হন তিনি যে শুধু ভৌতিক জগতে গন্যমান্য হন তাই নন তিনি অধ্যাত্মজগতেও ধর্মানুষ্ঠান পরায়ণ  বলে পরিগণিত হন। মহাত্মা  আর একটা মূল্যবান কথা বলছেন, তিনি অর্থাৎ পরোপকারী ব্যক্তি, সাধনার জগতে, সাধন দ্বারা কষ্টসাধ্য বিষয় অনায়াসে আয়ত্ত্ব করতে পারেন। গুরুদেব বলছেন, স্বার্থপর হয়ে বহু পরিশ্রম করে, যে ব্যক্তি ধন উপার্জন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সেই  তিনিই  স্বার্থ ত্যাগ করে, পরার্থে যখন নিজেকে নিয়োজিত করেন, তখন তার পদতলে কোটি কোটি ধন-রত্ন এসে জড়ো  হতে থাকে।  স্বার্থ ত্যাগ-ই  মানুষের একটার মধুময় বন্ধনের আস্বাদন দিতে পারে। পরার্থে নিয়োজিত প্রাণ-ই অমর হয়। শুনতে বেশ ভালো লাগে। জানিনা করা যায় কি না।

এবার পরোপকারের প্রতিদানের একটা ঘটনার কথা বলে শেষ করবো। আমি তখন দুর্গাপুরে থাকি।দুর্গাপুরে কলকাতা থেকে একটু বেশি শীত পড়ে। এক শীতের সন্ধ্যায়, প্রায় আটটা বাজে।  অফিস থেকে ফেরার পথে দুর্গাপুর স্টেশনের ফুলব্রিজ পার হচ্ছি। তো ব্রিজের উপরে দেখি একদম খালি গায় এক ভিখারী জড়সড় হয়ে বসে কাঁপছে। এ দৃশ্য আমার প্রায়ই চোখে পড়ে।  আমি দেখেও দেখি না। কিন্তু সেদিন কি হলো, আমার মায়া হলো, ভিখারীকে বললাম, চলো ওপারে কম্বলের দোকান আছে।  তোমার পছন্দ মতো একটা কম্বল কিনে দেব। ও আমার দিকে একবার তাকালো, তাকিয়ে মাথানেড়ে  জানালো সে যাবে না। আমার খারাপ লাগলো। একটু রাগও হলো। যাবে না দেখে আমি হাঁটা দিলাম। কিছুদূর গিয়ে আবার কি মনে হলো, ওর কাছে ফিরে  গিয়ে জিগ্যাসা করলাম, কম্বল কিনে দিলে গায়  দেবে তো ? তো আবার মাথা নাড়লো। অর্থাৎ হ্যাঁ গায়  দেবে। তো আমি গিয়ে একটা কম্বল কিনে দিলাম।  কম্বলটা পেয়ে খুব খুশী। নেড়েচেড়ে দেখার পরে , অতি কষ্টে কম্বলটা খুলে গায় দিলো, আর আমি তখনই বুঝলাম, ওর নাড়াচড়ার  শক্তি নেই।  ও আসলে পঙ্গু। আমার নিজেকে অপরাধী লাগলো, আবার একটা ভালো লাগা ভিতরে ভিতরে কাজ করছে। কম্বলটা দিয়ে আমি আবার ফিরছি ঘরের দিকে। ঠিক সেই সময় আমার মোবাইল বেজে উঠলো - আমার স্ত্রী টেলিফোন করেছেন ।  বলছেন
"জান মা আজকে তোমার জন্য একটা সুন্দর কম্বল কিনে দিয়েছে " । ঘটনাটা কাকতালীয়। কিন্তু আমার ভিতরে তখন এক সত্যানুভূতি হলো। ঈশ্বর তুমি দেখছো ?

সমাপ্ত  
    
         

        

  

         

          























           

No comments:

Post a Comment