Sunday 23 December 2018

মানুষের আসা যাওয়া (চার) - পরাবিদ্যা - সৃষ্টিরহস্য

 মানুষের আসা যাওয়া (চার)- পরাবিদ্যা - সৃষ্টিরহস্যঃ


মহাত্মা গুরুনাথ সেনগুপ্ত তার সত্যধর্ম বইটির  মুখবন্ধে বলছেন : সত্যধর্ম, আত্মাকর্ষণ ধর্ম বা  স্পিরিচুয়ালিস্ট ধর্ম  থেকে  আলাদা।  কারন এই ধর্মে, অর্থাৎ স্পিরিচুয়ালিস্ট ধর্ম  কতকগুলি বৈজ্ঞানিক বিষয়ের সাদৃশ্য-প্রদর্শন আছে মাত্র। এখানে মহাত্মাদের উপদেশ নেই। অর্থাৎ পারলৌকিক মহাত্মাদের উপদেশ ছাড়া আর সব কথা সেখানে আছে, যা সত্যধর্ম বিশ্বাস করে, বা সত্যধর্মে আছে। এটা দেখে আমার স্পিরিচুয়ালিস্ট-দের সম্পর্কে আমার জানবার আগ্রহ জাগে। কি আছে সেখানে ? সেই ভাবনা থেকেই, মানুষের আসা যাওয়া সম্পর্কে জানতে গিয়ে আমি এই পরাবিদ্যার বই-এর সন্ধান করি। এবং সেখানে আমি কিছু অদ্ভুত ব্যাপার জানতে পারি। সেই সব নিয়ে আমরা আলোচনা করবো।
 আর একটা কথা মহাত্মা গুরুনাথের বই পরে জানতে পারি, উন্নত সাধকরা সূক্ষ্ম দেহে বিচরণ করতে পারেন। গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে যেতে পারেন। সেখানকার সব কিছু জানতে পারেন। তাই যদি হয়, তবেতো তারাই  বলতে পারেন, কোন গ্রহের কি অবস্থা, এবং সেখানে কোনো মানুষ আছেন কি না। তবে বৈজ্ঞানিকদের   সন্ধানকাজ  অনেক সহজ হয়। তারা তা হলে এসব বলছেন না কেন ? আমার মতো অবিশ্বাসী মনে এই রকম নানান সন্দেহ দানা বাধে। সেই সন্দেহ নিরসনের জন্য সন্ধানে রত হই। এই সব করতে গিয়ে আমি একটা বইয়ের সন্ধান পাই, যেটি ১৯৪৩ সালে লেখা শেষ হয়।   অর্থাৎ প্রায় ৭৫ বছর আগে লেখা  একটা বইয়ের সন্ধান পাই। বইটি শ্রী ক্ষিতিনাথ  ঘোষ-এর লেখা, এবং ১৯৫২ সালে কমলা বুক ডিপো, কোলকাতা থেকে প্রকাশিত। এই বইটির প্রথম ১০০ কপি বিনা মূল্যে শোকার্ত্ত ভাই-বোনদের মধ্যে বিতরন করা হয়। এই বইয়ের সবই বিষ্ময়কর । যেমন, এই পৃথিবীর আগে নাকি চাঁদ ছিলো মানুষের বাস ভূমি। আর এখনো নাকি শুক্রগ্রহে আমাদের  থেকে উন্নত মানুষ বাস করেন। পৃথিবীর পরে, বুধ গ্রহে জীবনের সঞ্চার হবে, এমনি আরো সব নতুন নতুন তথ্য আছে, যেমন প্লুটো আবিষ্কার হয় (১৯৩০)সালে, অথচ এই বইয়ের তথ্য সংগ্রহ হয় ১৯৩০ সালের আগে। এবং সেখানে বলা হয়, আরো দুটো গ্রহ আছে যা আবিষ্কার হয় নি।  আজ কিন্তু হয়েছে। এছাড়া আরো অনেক গ্রহ আছে যার আবিষ্কার হয়েছে আরো পরে,  যাদের  নাম দেওয়া হয়েছে সেরাস (cerus), চরণ (charon ), এবং  ২০০৩UB ৩১৩   ইত্যাদি ইত্যাদি। ..এমনি সব অদ্ভুত অদ্ভুত কথা . 
যাই হোক আসল কথায় আসি।        

Spritulist দের বলা হয়  পরাবিদ্যা বিজ্ঞানী। পরাবিদ্যা মানে উচ্চ বিদ্যা। বিদ্যা দুই রকম  পরা ও অপরা। স্থূল জগৎ সম্পর্কে জ্ঞান হচ্ছে অপরাবিদ্যা আর সূক্ষ্ম জগৎ সম্পর্কে জ্ঞানকে বলে পরা বিদ্যা।

আমার উদ্দেশ্য মানুষের আসা যাওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা। পরাবিদ্যা জ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের আসা যাওয়া সম্পর্কে জানতে গেলে, সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। পরাবিদ্যবিদগন বলছেন : আমাদের সৌরজগতে দশবার ক্রমবিকাশ শক্তি আবির্ভূত হয়ে, প্রাথমিক অবস্থা থেকে আরম্ভ করে পরিপূর্নতা লাভ করবে, এবং পরে লয় প্রাপ্ত হবে। সাতটি গ্রহ নিয়ে একটা শৃঙ্খল।  এর মধ্যে অনেকগুলি গ্রহ অদৃশ্য। জীবন-তরঙ্গ বা জীবনী শক্তির বিকাশ যতদিন যে গ্রহে বা যে  জগতে থাকবে তার নাম সেই গ্রহের জগৎকাল। এই সময়ের মধ্যে সাতটি প্রথম মানবজাতি জন্ম গ্রহণ করবে।  প্রত্যেক প্রধান জাতির সাতটি  শাখাজাতি থাকবে।  প্রত্যেক শাখাজাতি থেকে আবার সাতটি প্রশাখাজাতি উৎপন্ন হবে। এই ভাবে সাতটি গ্রহের জগৎকাল একত্র করলে তাকে বলা হয় একটা প্রদক্ষিণকাল।  এইরকম সাতটি প্রদক্ষিণকাল একত্রে এক মন্বন্তর হয়। অর্থাৎ স্থিতিকাল। এমনি সাতটি মন্বন্তর একত্রে একটা ক্রমবিকাশকাল নির্ণীত হয়। 

সৌর জগতে এমনি দশটি ক্রমবিকাশের শৃঙ্খল আছে। বর্ত্তমানে পৃথিবীতে জীবনতরঙ্গের চতুর্থ প্রদক্ষিণ কাল চলছে। এবং আমরা, এই সাতটির মধ্যে  পঞ্চম মূল প্রধান জাতির অন্তর্গত। জীবনী শক্তি যখন যে গ্রহে বা জগতে কাজ করতে থাকে, তখন সেখানেই জীবজন্তু ও উদ্ভিদাদি আবির্ভূত হয়। এর দৃষ্টান্ত আমাদের পৃথিবী। পৃথিবী যখন, উত্তপ্ত তরল পিণ্ডাকার পদার্থ ছিল, তখন চন্দ্রলোকে জীবনী শক্তি কাজ করছিলো। এখন সেখানে জীবনীশক্তির কোনো কাজ নেই। এখন পৃথিবীতে এই জীবনীশক্তির বিকাশ হয়েছে। পৃথিবীতে আরো দুটি মূল জাতির অভ্যুদয় হবে।  তাদের জীবনী শক্তির কাজ এখানে অর্থাৎ পৃথিবীতে  শেষ হয়ে গেলে, পরে বুধ গ্রহে এই জীবনী শক্তির কাজ আরম্ভ হবে। চন্দ্রলোকে যখন জীবনীশক্তির কাজ শেষ হয় তখন সেখানে অনুন্নত জাতি, জন্তু, উদ্ভিদ ছিল এবং অনেক উন্নত শ্রেণীর জীবও  ছিলেন। সিদ্ধ মহাপুরুষেরাও ছিলেন। তারা সকলের সহিত এই পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণ করেছেন। লোকশিক্ষার জন্য, অনেক সিদ্ধপুরুষ পৃথিবীতে মানুষ হয়ে জন্ম গ্রহণ করেন। 

বিজ্ঞান এখনো পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনো গ্রহে মানুষের মত দেহধারী প্রাণীর সন্ধান পায়নি। পরাবিদ্যা বলছে,  সৃষ্টির ক্রমবিকাশ শক্তি সর্বত্র কাজ করছে। মানুষের ন্যায় রক্তমাংসের দেহ অন্য গ্রহে নেই, কিন্তু  অন্য প্রকার প্রকৃতি বিশিষ্ট জীব আছেন। পরাবিদ্যা বলছে, ৭টি গ্রহ নিয়ে একটা শৃঙ্খল।আর এগুলো হচ্ছে মঙ্গল, পৃথিবী, বুধ হচ্ছে ভৌতিক অন্য চারটির মধ্যে দুটি সূক্ষ্ম অর্থাৎ অভৌতিকদেহ বিশিষ্ট, এবং অন্য দুটি অতিসূক্ষ্ম মানসদেহ বিশিষ্ট।  এইরকম দশটি ক্রমবিকাশ শৃঙ্খল।  অর্থাৎ ৭০-টি গ্রহ আছে। 

বৈজ্ঞানিকগণ এখনো ১০/১২টি গ্রহের সন্ধান দিতে পেরেছে। এই কয়দিন আগে ছিল মাত্র ৯ টি। এই বই যখন লেখা হয়, তখন বিজ্ঞানের দ্বারা আবিষ্কৃত গ্রহ ছিল মাত্র ৭টি (বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহিস্পতি,ও শনি,ইউরেনাস,) এর পরে   নেপচুন, প্লুটো আবিষ্কার হয় (১৯৩০)। এখন বলাহচ্ছে,  আরো তিনটি গ্রহের নাম - সেগুলো হচ্ছে  সেরাস (cerus), চরণ (charon ), এবং  ২০০৩UB ৩১৩।    

পরা বিদ্যাবিদগণ বলছেন, অন্য গ্রহ গুলি ভৌতিক দেহ সম্পন্ন নয়।

এখন আমাদের আলোচ্য বিষয় যে হেতু পৃথিবী যে শৃঙ্খল-এ আছে সেই শৃঙ্খল, সেজন্য প্রথমে এই শৃঙ্খলের ৭টি গ্রহের অবস্থা নিয়ে কথা বলবো। এই ৭টির মধ্যে তিনটি অর্থাৎ বুধ, পৃথিবী, ও মঙ্গল-এর ভৌতিক দেহ আছে।  এবং প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম গ্রহগণের স্থূল দেহ নেই। আমাদের পৃথিবীর অবস্থান চতুর্থ। জীবনী শক্তি পর্যায়ক্রমে, প্রথম গ্রহ থেকে আরম্ভ করে, এখন চতুর্থ গ্রহে অর্থাৎ এখন পৃথিবীতে কাজ করছে। এইভাবে সাতটি গ্রহ প্রদক্ষিণ করে এলে , একটা প্রদক্ষিণ কাল হয়। তিনবার এই ভাবে প্রদক্ষিণ করা হয়ে গেছে। এখন চতুর্থ বারের কাজ চলছে। এইভাবে, সাতবার প্রদক্ষিণ কাজ শেষ হলে একটা শৃঙ্খলকাল হবে। একে বলে মন্বন্তর। পরাবিদরা বলছেন, এখন চতুর্থ মন্বন্তর চলছে।

( সাতটি প্রদক্ষিণকালে এক শৃঙ্খল কাল হয়। সুতরাং পৃথিবীশৃঙ্খল বা চতুর্থ শৃঙ্খলে সাত বার পৃথিবীতে জীবনী শক্তির বিকাশ হবে। প্রত্যেক বারে সাতটি  মূল জাতির আবির্ভাব ও তিরোধান হবে।  ক্রমবিকাশ যখন সাতবার প্রদক্ষিণ করবে, তখন পৃথিবী-শৃঙ্খল সাতবার কাজ করবে। অর্থাৎ ৪৯-বার পৃথিবীতে জীবনীশক্তির আবির্ভাব ও তিরোভাব হবে। ) 

সুতরাং আমরা যে ক্রমবিকাশ শক্তির অন্তর্গত  তার মধ্যে স্থূল গ্রহ - মঙ্গল, পৃথিবী,বুধ। বাকি চারটি অদৃশ্য। আর আমরা ক্রমবিকাশ শক্তির চতুর্থ শৃঙ্খলের, চতুর্থ প্রদক্ষিণকালের চতুর্থ গ্রহ, এবং পঞ্চম মূল জাতির অন্তর্গত। পরাবিদগন বলছেন, পৃথিবীতে এখন পঞ্চম ও ষষ্ঠ শাখাজাতি বর্তমান আছে।      যতদিন যাবে, ততই পৃথিবীতে সর্ববিধ উন্নতির বিকাশ দেখা যাবে। ষষ্ঠ ও সপ্তম মূল জাতির আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে  বর্তমান জগতের শিক্ষিত ব্যক্তিগণ, ক্রমশ ধর্মবুদ্ধি লাভ ক'রে, সিদ্ধ শ্রেণীভুক্ত হবেন। সপ্তম মূল-জাতির অস্তিত্ব শেষ হতে কত লক্ষ বৎসর লাগবে, তা বলা যায় না। 

পৃথিবী শৃঙ্খল শেষ হলে, নতুন গ্রহকে অবলম্বন করে পঞ্চম শৃঙ্খলের কাজ আরম্ভ হবে। আর তখন asteroids নামক যে গ্রহপুঞ্জ দেখতে পাওয়া যায়, সেটা পিণ্ডীভূত হয়ে একটা বড়ো গ্রহ হবে। এবং ছয়টি অদৃশ্য গ্রহকে নিয়ে, পঞ্চম শৃঙ্খলের কাজ আরম্ভ হবে।

পৃথিবী তখন, জরাজীর্ন ও ক্ষুদ্রাকার হয়ে, নতুন গ্রহের উপগ্রহ রূপে গণ্য  হবে। 

প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় শৃঙ্খলের কাজ শেষ হয়ে গেছে। একমাত্র চাঁদ ছাড়া, আর কোনো গ্রহের চিন্হ নেই। চাঁদও  কালক্রমে জ্যোতির্ময় কুয়াশায় পরিণত হবে। চন্দ্রলোকে যারা জন্তু ছিলো, তারা এখন মানুষ হয়ে জন্মেছে, আর চাঁদে যারা উদ্ভিদ ছিল তারা এখন জন্তু হয়ে জন্মেছে। পৃথিবীর শৃঙ্খলকাজ শেষ হলে, এখানেও এই প্রকার ঘটবে। যে নতুন গ্রহে, পঞ্চম শৃঙ্খল-এর  কাজ আরম্ভ হবে সেখানেও এই প্রকার হবে। আমাদের উদ্ভিদ ওখানে জন্তু হবে, আমাদের জন্তু ওখানে মানুষ হবে, কিন্তু অপেক্ষা করতে হবে, যতদিন না মানুষ সৃষ্টির পরিবেশ তৈরি হয়।  আর যে সব মানুষ পৃথিবীতে আত্মউন্নতি লাভ করতে পারবে না, তাদের তাদেরও  অপেক্ষা করতে হবে, যতদিন না ওখানে মানুষের আবির্ভাব হয়। এই অপেক্ষাকাল হবে, দীর্ঘ থেকে  দীর্ঘতর। এটাকে বিচারাধীন কাল (Aeoniam  Condemnation Period  ) বলা যেতে পারে।

বর্তমান সৌরজগতে, ক্রমবিকাশ শক্তি বিকাশের সাতটি ক্ষেত্রে আছে। 

প্রথম ক্ষেত্র এখন অদৃশ্য। এই  ক্ষেত্রের সাতটি গ্রহের মধ্যে ভালকান গ্রহ  হার্শেল দেখেছিলেন। এখন আর দেখা যায় না। বাকি ছয়টি  গ্রহ কখনো দেখা যায় নি। 

দ্বিতীয় ক্ষেত্র শুক্র গ্রহকে অবলম্বন করে আরো ছয়টি অদৃশ্য গ্রহ যুক্ত। 

তৃতীয় ক্ষেত্রে মঙ্গল, বুধ, পৃথিবী এবং অন্যান্য চারটি অদৃশ্য গ্রহ। 

চতুর্থ ক্ষেত্রে আছে বৃহস্পতি, ও ছয়টি অদৃশ্য ক্ষেত্র। 

পঞ্চম ক্ষেত্রে আছে শনি, ও অনান্য ছয়টি অদৃশ্য ক্ষেত্র। 

ষষ্ঠ ক্ষেত্রে হচ্ছে  ইউরেনাস ও অন্যান্য ছয়টি অদৃশ্য ক্ষেত্র। 

সপ্তম হচ্ছে নেপচুন ও অন্য ছয়টি অদৃশ্য গ্রহ।

সকল ক্ষেত্রে ক্রমবিকাশ সমান ভাবে অগ্রসর হয় নি। পৃথিবীতে চতুর্থ শৃঙ্খল চলছে। শুক্রগ্রহে পঞ্চম শৃঙ্খলকাল চলছে। 

চন্দ্রলোকে, তৃতীয় শৃঙ্খলের কাজ শেষ হওয়ার পরে, চাঁদ বৃদ্ধ ও জরাগ্রস্থ হয়ে যায়। 

পৃথিবীর এখন যৌবনকাল চলছে। স্থূল বিষয়েও পূর্নতা এসেছে। ভবিষ্যতে সূক্ষ্মতার পথে অগ্রসর হতে হবে, সবাইকেই । মানুষের মধ্যে ক্রমশ আধ্যাত্বিক ভাবের উন্মেষ ঘটবে।

পারবিদ্যাবিদগণ বলেন মানুষের মধ্যে যিনি পরিপূর্নতা লাভ করেন তার, সামনে সাতটি পথ উপস্থিত হয় : 
১. তিনি মানুষের সঙ্গে থেকে মানুষের নৈতিক উন্নতিতে সাহায্য করতে পারেন। 
২.বিদেহী কামবর্জিত জীব রূপে অবস্থান করতে পারেন। 
৩. পৃথিবীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে, ইচ্ছা মূর্তি ধারণ করে, মানুষের সাহায্য করতে পারেন। 
৪.দেবত্ত্ব লাভ করতে পারেন। 
৫. অন্য জগতের শাসন কার্যে নিযুক্ত থাকতে পারেন। 
৬.পরবর্ত্তী শৃঙ্খলে কি কাজ হবে, তার ব্যবস্থা করতে পারেন। 
৭ আর সব শেষে,.নির্ব্বান  লাভ করতে পারেন।

চন্দ্রলোকেও অনেক উন্নত শ্রেণীর  জীব ছিলেন। পৃথিবীতে জীবনের বিকাশ আরম্ভ হলে তারা এখানে এসেছেন। মানুষের হিতকর ব্যাপারে লিপ্ত, তারাই আমাদের পথপ্রদর্শক। যুগে যুগে জ্ঞানের আলো  জ্বেলেছেন। ভ্রান্ত মানুষকে সত্যের সন্ধান দিয়েছেন, এবং এখনো  দিচ্ছেন। 

পরাবিদ্যাবিদগন বলছেন, শুক্রগ্রহে জীবনী শক্তির  অনেক উন্নতি লাভ করেছে। সেখান হতেও অনেক মহাপুরুষ পৃথিবীর সৃষ্টি রক্ষার জন্য এসেছেন।

ব্যাপারগুলো সবই  অলৌকিক। এই সব ব্যাপারে আলোচনা করতে গেলে সময় সন্মন্ধে একটা জ্ঞান থাকা দরকার। যুগ, কল্প, মন্বন্তর ইত্যাদি সম্পর্কে মোটামুটি একটা জ্ঞান থাকলে, ক্রমবিকাশ শক্তির ব্যাপকত্ত্ব বুঝতে সুবিধা হয়। 

১ দিন - পৃথিবী তার নিজের কেন্দ্রে একবার ঘোরাকে বলা হয় একদিন। 
১ মাস - পৃথিবীর চারিদিকে চাঁদের একবার ঘোরাকে বলে একমাস। 
১ বছর - পৃথিবী যখন সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে। 

মহাযুগ - যুগ চারটি, সত্য-ত্রেতা-দ্বাপর-কলি।  এই চার যুগের সমষ্টিকে বলে মহাযুগ। 

সত্যযুগ -              ১৭,২৮,০০০ বছর। 
ত্রেতাযুগে -          ১২,৯৬,০০০ বছর। 
দ্বাপরযুগ -             ৮,৬৪,০০০ বছর।
কলিযুগ  -               ৪,৩২,০০০ বছর। 
মহাযুগ -               ৪৩,২০,০০০ বছর। (চার যুগের সমষ্টি)

এক মনুর রাজত্বকাল :                ৩০,৬৭,২০,০০০ বছর। (৭১-টি মহাযুগ = এক মনুর রাজত্ত্ব কাল। )

১৪-জন মনুর মোট 
রাজত্বকাল  :                            ৪,২৯,৪০,৮০,০০০  বছর  (১৪*৩০৬৭২০০০০)
(১৪*৩০,৬৭,২০,০০০)
৬ মহাযুগ মনুসন্ধি কাল :              ২,৫৯,২০,০০০    বছর
এক কল্প অর্থাৎ 
১০০০টা মহাযুগ :                     ৪৩২,০০,০০,০০০    বছর  (ব্রহ্মার এক দিবস) -চারশত বত্রিশ কোটি বছর 

ব্রহ্মার এক দিনরাত্রি :              ৮৬৪,০০,০০,০০০   বছর। - আটশত চৌষষ্টি কোটি বছর।   .

ব্রহ্মার এক বছর  :           ৩১,১০,৪০,০০,০০,০০০    বছর। - তিন লক্ষ এগারো হাজার চল্লিশ কোটি বছর। 

মহাকল্প - ব্রহ্মার জীবন ৩,১১,০৪,০০,০০,০০,০০০   বছর।  - ৩১ লক্ষ ১০ হাজার ৪০০ কোটি বছর। 
(শত বৎসর)
__________________________________________________________________________
__________________________________________________________________________

এবারে আমরা আসল কথায়  যাবো। 

আগের কথায়  আমরা বুঝতে পারলাম  যে, আমাদের এই সৌরজগতে, ৭ বা ১০টি ক্ষেত্র বা শৃঙ্খল আছে যেখানে জীবনের ক্রমবিকাশ চলছে।  আর প্রত্যেক শৃঙ্খলে ৭টি গ্রহ আছে। এর মধ্যে কেউ কেউ দৃশ্যমান বা স্থূল, আবার কেউ কেউ অদৃশ্য বা সূক্ষ্ম। কেউ ভৌতিক কেউ অভৌতিক। জীবনের উন্মীলনের জন্য, জীবন-তরঙ্গ ক্রিয়াশীল। প্রত্যেক ক্ষেত্রে যে সাতটি জগৎ আছে, অর্থাৎ যে সাতটি গ্রহ আছে তার সব কয়টিতেই একটার পর একটায় জীবন প্রবাহ প্রকাশ হবে। আমাদের বা পৃথিবীকে নিয়ে যে শৃঙ্খল বা ক্ষেত্র তাতেও ৭টি গ্রহ আছে। তার মধ্যে মঙ্গল, পৃথিবী, ও বুধ ভৌতিক। অর্থাৎ প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম গ্রহ অভৌতিক, এবং এদের কোনো নাম নেই ,ও তৃতীয় -মঙ্গল, চতুর্থ -পৃথিবী ও পঞ্চম-বুধ এগুলো ভৌতিক। যা আমাদের দৃষ্টিগোচর। অভৌতিক গ্রহগুলোর মধ্যে আবার দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ গ্রহ সূক্ষ্মজগৎ  এবং প্রথম ও সপ্তম গ্রহ  অতিসুক্ষ বা  মনোজগৎ। প্রত্যেক মন্বন্তরে প্রত্যেক ক্ষেত্রে জীবন প্রবাহ ৭বার প্রবাহিত হয়। একটিতে কাজ শেষ হলে অপরটিতে কাজ করে। আমাদের পৃথিবী যে ক্ষেত্রের  অন্তর্গত তাতে বর্তমান মন্বন্তরে তিনবার জীবনপ্রবাহ প্রদক্ষিণ কার্য্য সম্পূর্ণ করেছে। চতুর্থবার প্রদক্ষিণকার্য্য চলছে। এবং চতুর্থ-জগৎ অর্থাৎ পৃথিবী এর  কার্যক্ষেত্র। ৭বার কোনো ক্ষেত্রকে প্রদক্ষিণ করলে, এক শৃঙ্খলকাল বা মন্বন্তর হয়।  বর্তমানে চতুর্থ মন্বন্তর চলছে। অর্থাৎ আরো তিনটি মন্বন্তর ধরে এই পৃথিবীতেই জীবনী শক্তির বিকাশ ঘটবে । এবং তারপরে, অর্থাৎ পৃথিবীতে জীবনপ্রবাহ শেষ হলে, বুধে এই জীবনপ্রবাহ চলে যাবে। পৃথিবী তখন নিদ্রিত অবস্থায় থাকবে। অর্থাৎ পৃথিবীতে জীবনী শক্তির কোনো চিন্হ থাকবে না।  কিন্তু পৃথিবী গ্রহটি থাকবে। এক মন্বন্তরের মধ্যে ছয়বার এরূপ ঘটবে, কিন্তু সপ্তমবার জীবনপ্রবাহ শেষ হবে। তখন প্রলয় শুরু হবে। পরে আবার নতুন মন্বন্তর আরম্ভ হলে এক এক করে আবার সাতটি  গ্রহ উৎপন্ন হবে। এবং পর্যায়ক্রমে সব পুরাতন  গ্রহের সঙ্গে নতুন গ্রহের সম্মন্ধ বর্তমান থাকে। 

এতক্ষন আমরা চতুর্থ মন্বন্তরের কথা আলোচনা করছিলাম। চতুর্থ মন্বন্তরে সাতটি গ্রহে বা জগতে জীবনী শক্তি কাজ করছে। এটা একটা ক্ষেত্র। এইরকম সাতটি বা দশটি ক্ষেত্র আছে। 

এই ক্ষেত্রের বা গ্রহের   অবস্থা তৃতীয় মন্বন্তরে অন্য রকম ছিল। তখন চতুর্থ গ্রহ ছিল চন্দ্র।  এবং মঙ্গল ও বুধের স্থানে দুটি সূক্ষ্ম গ্রহ ছিল।  এবং প্রথম ও সপ্তম স্থানে ছিল অতি সূক্ষ্ম অর্থাৎ মনোজগৎ-এর উচ্চতর অবস্থা। এবং দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ ছিল নিম্নতর অবস্থা।  তৃতীয় মন্বন্তর শেষ হলে, চাঁদ ক্রমশ লয়প্রাপ্ত হচ্ছে।  ক্রমশঃ এই চাঁদ যাঁকে  আমরা এখন পৃথিবীর উপগ্রহ বলছি, নীহারিকারুপ জ্যোতির্ময় বলয়ে পরিণত হয়ে যাবে। 

আবার চতুর্থ মন্বন্তর শেষ হলে, মঙ্গল, পৃথিবী ও বুধের সাথে অন্য যে চারটি অদৃশ্য গ্রহ আছে তাও লয়  প্রাপ্ত হবে। এবং আবার নতুন করে  সাতটি গ্রহের উৎপত্তি হবে। এই সাতটি গ্রহ তখন তৃতীয় মন্বন্তরের গ্রহগুলির অনুরূপ হবে। তখন চাঁদ যেমন ছিল স্থূল গ্রহ তেমনি পঞ্চম মন্বন্তরে একটি স্থূল গ্রহ হবে। গ্রহাণুগুলো (Asteroids ) মিলিত হয়ে এই গ্রহটি উৎপাদন করবে। আমাদের পৃথিবী তখন সেই নতুন গ্রহের উপগ্রহে পরিণত হবে। 

পরাবিদ্যাবিদগন বলছেন, শুক্রগ্রহে বর্তমানে, পঞ্চম মন্বন্তরের সপ্তম প্রদক্ষিণকার্য্য চলছে। সুতরাং সেখানকার বর্তমান অবস্থা আমাদের পৃথিবী থেকে অনেক উন্নত। শুক্র গ্রহে এখন উন্নত শ্রেণীর জীব ও উন্নত শ্রেণীর জীবনীশক্তির আবাসভূমি। আমাদের পৃথিবী ক্ষেত্রে যখন চতুর্থ মন্বন্তর আরম্ভ হয় এবং চতুর্থবার জীবনীশক্তির বিকাশের সূত্রপাত হয় তখন শুক্র গ্রহ থেকে উন্নত পুরুষগন এই জীবনীশক্তি পরিচালনা করতে এসেছিলেন। তাঁরা এখনো আছেন। চন্দ্রে যখন তৃতীয় মন্বন্তরের কাজ শেষ হয়েছিল তখনও ওখানকার জীব-জন্তু, উদ্ভিদাদি পৃথিবীতে এসেছিলো। পৃথিবীতে এখন পঞ্চম মূল জাতির বিস্তার হচ্ছে। এর পরে আরোদুটো মূল জাতি উৎপন্ন হবে। সপ্তম জাতির অস্তিত্ব শেষ হলে, পৃথিবীতে জীবনের লোপ পাবে। এবং নতুনকরে, জীবনী-শক্তির  কাজ বুধ গ্রহে শুরু হবে। 

মন্বন্তরের মধ্যে জগৎ  অর্থাৎ গ্রহগুলি থাকবে।  কিন্তু নতুন মন্বন্তরে বর্তমানের সাতটি গ্রহের স্থানে অন্য সাতটি গ্রহ উৎপন্ন হবে। এইভাবে সাতটি বা ততোধিক মন্বন্তরের এক একটা ক্ষেত্রে কাজ শেষ হবে। সপ্তম মন্বন্তরের পরে কি অবস্থা হবে, তা মানুষের জ্ঞানের অতীত। হয়তো সমুদয় সৌরজগৎ মৌলিক নীহারিকাপুঞ্জে বিলীন হবে। 

প্রত্যেক মন্বন্তরের পরে নতুন সৃষ্টি আরম্ভ হয়। এই পৃথিবীতে চতুর্থ মন্বন্তরএর শুরুতে জীবনীশক্তির প্রথম আবির্ভাবে যে জীব সৃষ্টি হয়েছিল তা ছিল আকৃতিবিহীন, ধোঁয়ার মতো সূক্ষ্ম-কণিকাপুঞ্জ মাত্র।
ক্রমশঃ উন্নত হতে হতে তৃতীয়বার জীবনীশক্তির  আবির্ভাবে, জীবদেহ মানুষের আকৃতি ধারণ করে। এবং ক্রমশ স্ত্রী-পুরুষ ভেদ হওয়ায় স্ত্রী-পুরুষের মিলনে বংশ বিস্তার ঘটছে।এর আগে স্ত্রী-পুরুষ ভেদ ছিল না। এমিবার মধ্যে আমরা যেমন নির্দিষ্ট সময়ের পরে দ্বিখণ্ডিত হতে দেখি, সেই ভাবেই জীবের বংশ বিস্তার হতো। এইভাবেই জীবের ক্রমোন্নতি সাধিত হচ্ছে। আমরা আবার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হয়ে যাবো, কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তি আমাদের ক্রমশ উন্নত হবে। 

চতুর্থ জাতির বিকাশকালে, শুক্রগ্রহ থেকে যে সব মহাত্মারা পৃথিবীতে এসেছিলেন, তারা আমাদের প্রভূত উপকার সাধন করেছেন। তারা সবাই অশরীরী দেবাত্মা। জীবনী শক্তির চতুর্থ আবর্তনে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তির উন্মেষ হবার কথা নয়। কিন্তু সেই সময়, ওই সব মহাপুরুষদের কৃপায় আমরা বুদ্ধিবৃত্তিতে উৎকর্ষ লাভ করেছি। হয়তো সপ্তম জাতির অভ্যুদয়ের আগেই, বর্তমান যুগের অনেক মানব দেবত্ব প্রাপ্ত হবে। আমাদের আধ্যাত্মিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আকৃতির উন্নতি  হচ্ছে। শুক্রগ্রহ থেকে যে সব মহাত্মারা এসেছিলেন, তারাই আমাদের উন্নতির কারন। তাদের মধ্যে যারা এখনো আমাদের পৃথিবীতে আছেন, তাদের দ্বারাই এই জগতের কাজ চলছে। এই মন্বন্তর শেষ হবার আগেই যারা অর্থাৎ যে সকল মানুষ সিদ্ধি লাভ করতে না পারবেন, তারা নতুন মন্বন্তরের আবির্ভাবে জীব সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত পরলোকেই বাস করবেন। এই সময়টা সব থেকে কষ্টদায়ক ও দীর্ঘ।  একেই কেউ কেউ বলেন নরক,  বা অনভিপ্রেত অপেক্ষমান কাল।  একে Aeonian Condemnation বলা যেতে পারে। 

বর্তমান সৌরজগতে যে দশটি ক্রমবিকাশ-ক্ষেত্র আছে, তার মধ্যে তিনটি ক্ষেত্রে  কোনো স্থূল-জগৎ নেই। সুতরাং সেই তিনটি সূক্ষ্ম জগৎ বাদ  দিয়ে ৭টি ক্রমবিকাশ ক্ষেত্র মনে করা যেতে পারে। 

পৃথিবী ও নেপচুন ক্ষেত্রে চতুর্থ মন্বন্তর চলছে। শুক্রে পঞ্চম মন্বন্তর এর সপ্তম আবর্তন চলছে। অন্য সব ক্ষেত্রে তৃতীয় মন্বন্তরের কাজ  চলছে।  নেপচুন-এর সঙ্গে আরো দুটি স্থূল জগৎ আছে , এর মধ্যে একটা প্লুটো যা কিছুদিন আগে আবিষ্কার হয়েছে। অন্যটি এখনো আবিষ্কৃত হয় নি।  ( এখন আবিষ্কার হয়েছে - আর তা হচ্ছে সেরাস (cerus), এছাড়া আরো দুটি গ্রহ আবিষ্কার হয়েছে আর তা হচ্ছে : চরণ (charon ), এবং  ২০০৩UB ৩১৩। ) উত্তাপের অভাবে বা অন্য্ প্রাকৃতিক কারণে এই সব ক্ষেত্রে মানুষের ন্যায় জীবের অস্তিত্ব সম্ভবপর নয়, তবুও সূক্ষ্মলোকের জীবগন, সেখানে থেকে ক্রমবিকাশের পথে অগ্রসর হচ্ছেন। এভাবেই সৃষ্টির উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে। 

মানুষ ক্রমশঃ উন্নতির পথে চলছে। ক্রমবিকাশের রীতি এই যে সূক্ষ্ম হতে স্থুল, স্থুল থেকে স্থুলতম এবং তারপরে, আবার ক্রমশঃ সূক্ষ্ম হতে  আরাম্ভ করে ও প্রাথমিক অবস্থায় পরিণত হয়। সর্বত্রই এই নিয়মে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের নিয়ম লক্ষিত হয়। পৃথিবীই স্থুলতম জগৎ।  চতুর্থ মূল-জাতি জড়বাদীর চরম অবস্থায় পৌঁছাবে। পঞ্চম জাতিতে আধ্যাত্মিক বিকাশ শুরু হয়েছে। পরাবাদীরা  বলছেন, সাত/আট  শত বছর পরে, ষষ্ঠ-মূল জাতির অভ্যুদয়  হবে।  জ্ঞান, বুদ্ধি, ধর্ম সব বিষয়ে পৃথিবীতে তারা যে উৎকর্ষ লাভ  করবেন, তা মানব জাতির পরম গৌরবের বিষয়। 

সৃষ্টি-তত্ত্ব সমাপ্ত।  
এর পরে আমরা আবার "মানুষের আসা যাওয়া" নিয়ে  আলোচনা করবো।           
           


  


   


    
   





     



No comments:

Post a Comment