Wednesday 17 May 2017

ঈশ্বর উপবেশন প্রক্রিয়া

ওঁং ঈশ্বর  উপবেশন প্রক্রিয়া - শশাঙ্ক  শেখর শান্তিধাম  ওঁং

রাত্রির শেষ প্রহরে শয্যা ত্যাগ করুন। সূর্য উদয়ের এক ঘন্টা আগে থেকে সূর্য উদয়ের এক ঘন্টা পর পর্যন্ত ব্রাহ্ম মুহূর্ত। উপাসনার বা সাধনার সর্বোৎকৃষ্ট সময়। বিছানায় বসে বা উম্মুক্ত অঙ্গনে বা ঠাকুর ঘরে বসে গুরু বন্দনা দিয়ে শুরু করুন। 

গুরু বন্দনা  : 

ওঁম - অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন-শলাকায়া
          চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রী গুরবে নমঃ। 
ওঁম - মন্ত্র সত্যং পূজা সত্যং সত্যং দেব নিরাঞ্জনঃ 
          গুরোর্বাক্যং সদা সত্যং সত্যমেব পরম পদম।
ওঁম -  অখণ্ড-মণ্ডলাকারং ব্যাপিতাম যেন চরাচরম  
          তৎপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রী গুরবে নমঃ
ওঁম -  পিতৃ-মাতৃ-সুহৃদ্বন্ধ্ু-বিদ্যা-তীর্থানি দেবতা 
          ন তুল্যং গুরুনা শীঘ্রং স্পর্শয়েৎ পরমং পদম 
ওঁম -  গুরুর্ব্রহ্মা গুরুর্বিষ্ণু গুরুর্দেব মহেশ্বরঃ  
          গুরুরেব পরম ব্রহ্ম তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ
ওঁম -  ধ্যানমূলং গুরোর্মূর্তিঃ পূজামূলং গুরোঃ পদম 
          মন্ত্রমূলং গুরোর্বাক্যং মোক্ষমূলং গুরু কৃপা। 
ওঁম -  ব্রহ্মানন্দং পরমসুখদং কেবলম জ্ঞানমূর্তিম্
          দ্বন্দ্বাতীতং গগনসদৃশং তত্বমস্যাদিলক্ষ্যম্। 
ওঁম -  একং নিত্যং বিমলমচলংসর্ব্বধী সাক্ষিভূতম 
          ভবাতীতং ত্রিগুণরহিতং সৎগুরুং তং নমামি। 
ওঁম -  ত্বমেব মাতা চ পিতা ত্বমেব।  ত্বমেব বন্ধ্ুশ্চ সখা ত্বমেব 
          ত্বমেব বিদ্যা দ্রবিনং ত্বমেব। ত্বমেব সর্ব্বং মম দেবদেব।       

সুস্বাগতম। শশাঙ্ক শেখর শান্তি ধামের তরফ থেকে সমস্ত পবিত্র আত্মাকে স্বাগত জানাচ্ছি। আজকে আপনার উপস্থিতি প্রমান করে আপনি ঈশ্বরের কাছের মানুষ। আপনি ঈশ্বরের মধ্যেই আছেন।আপনার মধ্যেই ঈশ্বর আছেন। 

আজ আমরা কিছুক্ষন ঈশ্বরের কাছে উপবেশন করবো। আসুন  খানিকটা সময়ের জন্য আমরা ঈশ্বরে সমর্পিত হই।এখন থেকে আমি যা বলবো - আপনি তাই শুনবেন। আমি যা করতে বলবো আপনি তাই করবেন। সমর্পন।  একটু ক্ষনের জন্য ঈশ্বরের কাছে  সমর্পিত হই  আমরা। 

আসুন - ঈশ্বরের কাছে যাবার প্রারম্ভে , মনে মনে বলুন - আমি দেহ নোই, আমার জন্ম নেই, জরা নেই, মৃত্যু নেই।  আমি নিত্য শুদ্ধ আত্মা। এই চিন্তা করতে করতে একটা সংস্কৃত শ্লোক উচ্চারণ করুন "অহং  দেব ন চান্যো অস্মিন  ব্রহ্মৈবাস্মিন ন শোকভাক্
সচ্চিদানন্দ রূপ অস্মি নিত্য-মুক্ত-স্বভাববান্। "

এবার স্থির হয়ে বসুন।মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। সমস্ত শরীর   শিথিল করে দিন। কল্পনা করুন - গোলাকার এই পৃথিবী। আপনি পৃথিবীর একদম উপরে  আসন পেতে বসেছেন। আপনার সামনে সীমাহীন সমুদ্র।  আপনার উপরে অনন্ত আকাশ। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, উপগ্রহ,নক্ষত্র,তারকা-রাজি।  আকাশে সাদা মেঘের মেলা।  মেঘের ফাঁক দিয়ে আপনি সবাইকে দেখছেন, সবাই আপনাকে দেখছে। সমুদ্র তটে বালুকা রাশির উপরে অর্থাৎ পৃথিবীর একদম উপরে আপনি বসে আছেন। আকাশের দিকে মুখ করুন - বলুন 
" ওম ব্রহ্মামুরারিস্ত্রীপুরান্তকারী ভানু শশী  ভূমিসূতোবুধশ্চ।
গুরুশ্চ শুক্রঃ শনি-রাহু-কেতু কুর্বন্তসর্ব্বে মম সুপ্রভাতম। 
প্রাতরউত্থায় সায়ান্নাংসায়ান্নাৎ প্রাতরন্ততঃ। 
যৎ করোমি জগন্নাৎ্স্তদেব তব পুজনম্। "

হ্যাঁ - এবার মেরুদণ্ড সোজা করে , ধীরে ধীরে গভীর স্বাস নিন।  ধীরে ধীরে দম ছাড়ুন- তিন বার এটি করুন। 

ডান হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে নাকের ডান  পাশ চেপে, বা নাক দিয়ে  গভীর দম নিন -দুই -তিন সেকেন্ড কুম্ভক করুন- অনামিকা দিয়ে বা নাক চেপে ধীরে ধীরে ছাড়ুন।আবার বা নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিন -দুই তিন সেকন্ড কুম্ভক করুন,ডান নাক দিয়ে ছাড়ুন।  এটি তিন বার করুন।এটি অনুলোম-বিলোম -এর মতো, কিন্ত দম বুকে ভরে সামান্য  কুম্ভক আর দম ছেড়ে সামান্য কুম্ভক। 

এবার নিজের জন্মদাতা পরম আরাধ্য মাতা-পিতাকে স্মরণ করুন। একটা শ্লোক আমার সঙ্গে মনে মনে বলুন  -

"ওম  - পুন্য শ্লোকো নলোরাজা পুন্য শ্লোকো যুধিষ্ঠিরঃ
পুন্য শ্লোকা চ বৈদেহী পুন্য শ্লোকো জনার্দনঃ। 
অহল্যা দ্রৌপদী কুন্তী তারা মন্দোদরী তথা 
পঞ্চকন্যা স্মরেন্নিত্যং মহাপাতক নাশনম্। "

এবার আমরা ঈশ্বরের কাছে যাবার  জন্য প্রস্তূত। 

হাত দুটো মস্তিষ্কে তালুতে স্পর্শ করুন  - মনে মনে বলুন  - হে পরম পিতা পরমেশ্বর - তোমাকে কোটি কোটি প্রণাম।  এই মস্তিষ্ক সর্বদা তোমারি চিন্তায় মগ্ন  থাকুক।  আমি যেন সদা  সর্বদা তোমারি চিন্তায় মগ্ন  থাকতে পারি, এই আশীর্বাদ করো প্রভু। 
হাত দুটো দিয়ে দুই চক্ষু স্পর্শ করুন  - মনে  মনে বলুন  - হে ঠাকুর এই চক্ষুদ্বয় যেন সর্বদা তোমাকেই দেখে - এই আশীর্বাদ করো প্রভু।
হাত দুটো এবার নিয়ে আসুন  নাসিকা অগ্রে - নাসিকা অগ্রে স্পর্শ করে মনে মনে বলুন  - হে ঠাকুর এই নাসিকায় যেন সর্বদা তোমারি দেওয়া সুগন্ধি প্রাণবায়ু প্রবাহিত হয় - এই আশীর্বাদ করো প্রভু। 
এবার হাত দুটো নাবিয়ে আনুন  মুখে, ঠোটের উপরে।  মনে মনে বলুন  - হে পরমপিতা পরমেশ্বর, এই মুখ যেন সর্বদা তোমারি কথা বলে - এই আশীর্বাদ করো প্রভু। 
হাত দুটো কন্ঠে স্পর্শ করুন  - মনে মনে বলুন  - হে প্রভু, এই কন্ঠে যেন সর্বদা তোমারি সুর ধ্বনীত হয় - এই আশীর্বাদ করো দয়াময়।
হাতের চেটো বাহুতে স্পর্শ করুন । মনে মনে বলুন  - হে ঠাকুর  - এই হাত দুটো যেন সর্বদা তোমারি কর্মে লিপ্ত থাকে -এই আশীর্বাদ করো প্রভু।
এবার হাত দুটো দিয়ে পা-দুটো স্পর্শ করুন  - মনে মনে বলুন  - হে প্রভু এই পদদ্বয় যেন সর্বদা তোমাকেই প্রদক্ষিনীতে ব্যস্ত থাকে - এই আশীর্বাদ করো প্রভু। 
এর পর হাত দুটো নিয়ে আসুন  নাভি মূলে।  মনে মনে বলুন  - হে পরমাত্মা ! পিতৃমাতৃ প্রদত্ব , পঞ্চভূতের এই শরীর - এই শরীর তুমি শুদ্ধ করো,পবিত্র করো, সুস্থ করো, নীরোগ করো। 
সবশেষে হাত দুটো  নিয়ে যান  হৃদয় স্থলে - স্পর্শ করতে করতে বলুন  - হে পরম-আত্মা পরম-ঈশ্বর তোমাকে কোটি কোটি  প্রণাম - এই হৃদয়পদ্মে তোমার স্থান - এই হৃদয় তুমি পবিত্র করো - নির্মল করো - স্বচ্ছ করো - তোমার প্রতিকৃতি এই হৃদয়ে আরো স্পষ্ট প্রতিভাত  হোক। 

ওম নমঃ শিবায়- ওম নমঃ শ্রী ভাগবতে বাসুদেবায় - ওম পরম পিতা পরমেশ্বরায়  নমঃ- ওম তৎ সৎ

কল্পনা করুন :আসনে বসে আছি।  সমস্ত শরীর আমার শিথিল। নিজেকে ঈশ্বরের কাছে নিয়ে যাবার জন্য - ঈশ্বরের কাছে উপবেশন করবার জন্য প্রস্তূত করছি।  আসনে বসেছি।  ধীর-স্থির- শান্ত-ভাবে আসনে বসে আছি।  সমস্ত শরীর আমার শিথিল হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে কল্পনা করবো - 
আমার মস্তিকের তালুতে ঈশ্বরের অবস্থান -
 আমার মস্তিকের তালু ঈশ্বরের নিকট  - 
আমার সমস্ত মস্তিক ঈশ্বরে নিবদ্ধ  -  
আমার নিমীলিত চক্ষুদ্বয় ঈশ্বরকে দেখছে  - 
কর্ণদ্বয় ঈশ্বরকে শুনছে  -
আমার নাসিকায় ঈশ্বরের দেওয়া সুগন্ধি প্রাণবায়ু প্রবাহিত হচ্ছে। আমার মুখ ঈশ্বরের কথা বলছে। 
 আমার কন্ঠে ঈশ্বরের সুর ধ্বনিত হচ্ছে।
 আমার বাহুদ্বয় ঈশ্বরের কর্মে লিপ্ত আছে। 
 আমার পদদ্বয় ঈশ্বরকে প্রদক্ষিণ করছে। 
আমার এই দেহ ঈশ্বরকে প্রদক্ষিনে  ব্যস্ত আছে।
 পঞ্চভূতের তৈরি এই শরীর।  
এই শরীর আমার শুদ্ধ-পবিত্র-নীরোগ। 
ঈশ্বর আমার হৃদয়ে অবস্থান করছে।  
আমার হৃদয়ে ঈশ্বরের অবস্থান।
আমি ঈশ্বরের সাথে। 
কল্পনা করুন আমি ঈশ্বরের সাথে-সাথে।  
ঈশ্বর আমার সাথে-সাথে।
আমার চারিদিকে ঈশ্বর। 
আমি ঈশ্বরের মধ্যে।
ঈশ্বর আমার সর্বত্র। 
আমিও ঈশ্বর -আমিই  ঈশ্বর।     
কল্পনা করুন :
আপনি এখন সমস্ত শরীরে উত্তাপ অনুভব করছেন। উত্তাপ দ্রুত গতিতে বাড়ছে। আপনি প্রজ্জ্বলিত অগ্নির মধ্যে বসে আছেন। জ্বলন্ত অগ্নির মধ্যে আসন পেতেছেন। চারিদিকে উত্তাপ অনুভব করছেন , উপভোগ করছেন। আস্তে আস্তে আপনার দেহ জ্বলন্ত  অগ্নিশিখায় পরিণত হলো।  অগ্নি খন্ডে পরিণত হলো।  আপনার দেহ দাউ দাউ করে জ্বলছে।  আপনি সে অগ্নি শিখার ভিতরে বসে  অগ্নি মন্ত্র  উচারণ করছেন। 
- হে অগ্নি, আমার কোটি কোটি প্রণাম গ্রহণ করো।  আমি জানি ঈশ্বরের কাছে যাবার তুমিই একমাত্র বাহক।  তোমার প্রজ্বলিত শিখা সর্বদা ঈশ্বর মুখী, সর্বত্র ঈশ্বর মুখী । আমি ঈশ্বরের কাছে যাবো - আমি ঈশ্বরের কাছে যাবো। আমি তোমার স্মরণাগত।  আমাকে ঈশ্বরের কাছে নিয়ে চল।  হে অগ্নি তুমি আমাকে ঈশ্বরমুখী করে দাও।  ওঁম অগ্নির্জ্যোতি -জ্যোতিরাগ্নি স্বাহা।  আমার এই দেহ আমি তোমাকে আহুতি দিচ্ছি।  আমাকে ঈশ্বরের কাছে নিয়ে চলো। কল্পনা করুন :  
ধীরে ধীরে আপনার দেহ পুড়ে ছাই হয়ে গেল। আপনার দেহ ছাই হয়ে গেল। সমুদ্রের বালুকণার সঙ্গে মিশে গেল।কিছুক্ষনের মধ্যে,সমুদ্রের ঢেউ এসে আপনার ভস্মীভূত দেহ সমুদ্রের জলে ভাসিয়ে নিয়ে গেল।  জলে দ্রবীভূত হয়ে গেছেন আপনি - আপনার স্থুল দেহ। পড়ে  আছে  এক চৈতন্য। আপনি এখন সূক্ষাতিসূক্ষ এক আলোর বিন্দু। জ্যোতির্বিন্দু। আপনার দেহ ভষ্ম   হয়ে গেছে। জলে ভেসে গেছে - সমুদ্রে মিশে গেছে।  বেঁচে আছে শুধু আপনার চেতনা , আপনার আত্মা। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এক আলোর বিন্দু - চেতনা।  
চলুন - এবার আমরা পরমপিতা পরমেশ্বর কাছে যাবো - পরম  করুনাময় মায়ের বাড়ি যাবো।  আমাদের নিজ ধামে যাবো। পরম  শান্তির ধামে যাবো। আসুন - পৃথিবীতে আর নয়।  এবার আমরা নিজ ধামে যাবো।  পরম  শান্তির ধামে যাবো।  কল্পনা
 করুন : 
এক শুদ্ধ চেতনা, এক বিন্দু আলোর কনা, আকাশের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আপনি  নিজ ধামে,পিতৃ-মাতৃ ধামে দ্রুত বেগে ধাবিত হচ্ছেন । আপনার চেতন শক্তি এগিয়ে চলছে। আপনি এগিয়ে  চলছেন। পৃথিবী ছেড়ে  এক অনুখা যাত্রা, এক আনন্দময় যাত্রা। মনে মনে ভাবুন, আপনি এক আলোর বিন্দু ,পৃথিবী ছেড়ে চন্দ্রে পৌঁছে গেছেন। চন্দ্রকে স্পর্শ করে আপনি এক অনির্বচনীয় আনন্দ উপলব্ধি করছেন। একবার চন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে আপনি এখন  মঙ্গলের পথে। মঙ্গলকে ডান  দিকে রেখে আপনি বুধে চলে এসেছেন। বুধের পরে বৃহস্পতি।  এখন আপনি সূর্যের পাশ  দিয়ে যাচ্ছেন। জ্যোতির্ময়  এই সূর্যদেবকে মনে মনে প্রণাম করুন। ইনিই পৃথিবীর প্রাণের উৎস। আরো এগিয়ে চলুন। শুক্র, শনি, নেপচুন, প্ল্টো। ........অসংখ্য  তারা, নক্ষত্র, হাজার হাজার সূর্য  দ্রুত অতিক্রম করে এগিয়ে চলেছি আমি এক ক্ষদ্রাতিক্ষুদ্র আলোর কনা। চলেছি  পিতৃধামে। শান্তির ধামে। 
ওই দেখা যায় নীল  আলোর সমুদ্র। উজ্বল অথচ স্নিক্ধ। জ্যোতির্ময়।  আমাকে যেন ডাকছে। আমাকে দেখে যেন হাসছে। আমি ধীরে ধীরে নীল আলোর সমুদ্রে মিশে গেলাম।  আঃ পরম শান্তি -শান্তি-
শান্তিঃ। এটাই আমার বাড়ি, এটি আমার পরম  পিতা পরমেশ্বরের শান্তির ধাম।  এখানেই আমি এখন অবস্থান করবো।         
এই অবস্থায় আপনার পক্ষে যতটা সম্ভব স্থির হয়ে উপভোগ করুন।
এর পর দেবাদিদেব মহাদেবকে প্রণাম করুন এবং মনে মনে বলুন :
ওম নমঃ শিবায়ঃ : ওম নমঃ শ্রীভগবতে বাসুদেবায়  : ওম পরম পিতা পরমেশ্বরায় নমঃ।  হরি ওম ; হরি  ওম ; হরি ওম তৎ সৎ।  

এবার ধীরে ধীরে আসন ত্যাগ করুন।....... ওং ..........       
    


















Sunday 7 May 2017

শিব ধ্যান

শিব ধ্যান 

ওম্-ওম্-ওম্ 
ওম্ সর্বেসাম স্বস্তিরভবতু ;
ওম্ সর্বেসাম শান্তিরভবতু ;
ওম্ সর্বেসাম পূর্ণম  ভবতু ;
ওম্ সর্বেসাম  মঙ্গলম ভবতু। 

ওম্ নমস্তভ্যং  বিরূপাক্ষ নমস্তে দিব্যচক্ষুষে
নমঃ পিনাক-হস্তায় বজ্র-হস্তায়  বৈ  নমঃ। 
নমস্ত্রিশূলহস্তায় দণ্ডপাশাসিপানয়ে
নমস্ত্রৈলোক্যনাথায় ভূতানাং  পতয়ে নমঃ। 
বানেশ্বরায় নরকার্ণবতারণায়, জ্ঞান প্রদায় করুণাময়সাগরায় 
কর্পূর-কুন্দ -ধবলেন্দু-জটাধরায়,  দারিদ্র দুঃখ দহনায় নমঃ শিবায়। নমঃশিবায় শান্তায় কারণত্রয়হেতবে, 
নিবেদয়ামি চাত্মানাং ত্বং গতিঃ পরমেশ্বর।

ওম্ নমঃ শম্ভূবায় চ ময়ভবায় চ
নমঃ শঙ্করায় চ ময়স্করায় চ 
নমঃ শিবায় চ শিবতরায় চ। 

কল্পনা করছি  : বরফ ঢাকা কৈলাশ পর্বত। আমি  ধ্যান আসনে কৈলাস পর্বতের শিখরে বসে আছি। চক্ষু মুদ্রিত অবস্থায় দেবাদিদেব মহাদেবের-ধ্যান কল্পে বসেছি । চারিদিকে স্বেতবর্ণের বরফ আচ্ছাদিত পর্বত শিখর। ঊর্ধে  অসীম আকাশ।  আকাশে অসংখ্য তারকারাজি। যেন এক-এক-জন ধ্যানস্থ মুনি।  সবাই আমার  উপস্থিতিকে স্বাগত জানাচ্ছে। 
 আমি  যে পর্বত শিখরে  ধ্যান কল্পে উপস্থিত হয়েছি  তার ঠিক সামনেই বসে আছেন ধ্যানস্থ ত্রৈলোক্যনাথ। দৃঢ় শরীর।  পায়ে ঝুমুর। ব্যঘ্রচর্ম আবৃত নিম্নাঙ্গ। উম্মুক্ত বক্ষ। সর্বাঙ্গে বিভূতির প্রলেপ। কন্ঠে মসীবর্ণ সর্প, মালার আকারে শোভা পাচ্ছে। দেহরক্ষীর মতো সর্পদেব ফনা তুলে চারিদিকে নিরীক্ষণ করছেন । ত্রিকালজ্ঞে কন্ঠের বর্ণ  নীল, সমুদ্র উত্থিত বিষ ধারণের চিহ্ন বহন করছে। ওষ্ঠে মৃদু হাসি।  চক্ষু মুদ্রিত।  কর্নে দুল। হস্তের কব্জিতে রুদ্রাক্ষের মালা, বাহুতেও রুদ্রাক্ষের মালা। কন্ঠে রুদ্রাক্ষের মালা।  দুই চক্ষু মুদ্রিত হলে কি হবে, ত্রিনেত্র কিন্ত উন্মিলিত। এক জ্যোতি রেখা ত্রিনেত্র থেকে উজ্জ্বল তীক্ষ্ন জ্যোতি  বিকিরণ করছে। সেই জ্যোতি আমার  শরীরে এসে পড়েছে। শিব বাবার মস্তকে জটা।  বিশাল জটা রুদ্রাক্ষের বন্ধনেও  অবাধ্য।  শিরের উপরে জটার  খোপা, আর একটা শির মনে হচ্ছে। জটার আড়ালে অর্ধ চন্দ্র শোভা  পাচ্ছে। বা-হাতে কমণ্ডলু। ডান হাতে ত্রিশূল। দেবাদিদেব মহাদেব ব্যাঘ্রচর্মের আসনে আসীন। মহাকালকে,মঙ্গলময়কে দু হাত তুলে দূর থেকে মনেমনে প্রণাম করি ।
দেবদেব মহাদেবের ধ্যানের  জন্য প্রস্ত্ত করছি। 
হাত দুটো মস্তিষ্কে তালুতে স্পর্শ করলাম - মনে মনে বললাম - হে পরম পিতা পরমেশ্বর - তোমাকে কোটি কোটি প্রণাম।  এই মস্তিষ্ক সর্বদা তোমারি চিন্তায় মগন থাকুক।  আমি যেন সদা  সর্বদা তোমারি চিন্তায় মগ্ন  থাকতে পারি, এই আশীর্বাদ করো প্রভু। 
হাত দুটো দিয়ে দুই চক্ষু স্পর্শ করলাম - মনে  মনে বললাম - হে ঠাকুর এই চক্ষুদ্বয় যেন সর্বদা তোমাকেই দেখে - এই আশীর্বাদ করো প্রভু।
হাত দুটো এবার নিয়ে এলাম নাসিকা অগ্রে - নাসিকা অগ্রে স্পর্শ করে মনে মনে বললাম - হে ঠাকুর এই নাসিকায় যেন সর্বদা তোমারি দেওয়া সুগন্ধি প্রাণবায়ু প্রবাহিত হয় - এই আশীর্বাদ করো প্রভু। 
এবার হাত দুটো নাবিয়ে আনলাম মুখে, ঠোটের উপরে।  মনে মনে বললাম - হে পরমপিতা পরমেশ্বর, এই মুখ যেন সর্বদা তোমারি কথা বলে - এই আশীর্বাদ করো প্রভু। 
হাত দুটো কন্ঠে স্পর্শ করলাম - মনে মনে বললাম - হে প্রভু, এই কন্ঠে যেন সর্বদা তোমারি সুর ধ্বনীত হয় - এই আশীর্বাদ করো দয়াময়।
হাতের চেটো বাহুতে স্পর্শ করলাম। মনে মনে বললাম - হে ঠাকুর  - এই হাত দুটো যেন সর্বদা তোমারি কর্মে লিপ্ত থাকে -এই আশীর্বাদ করো প্রভু।
এবার হাত দুটো দিয়ে পা-দুটো স্পর্শ করলাম - মনে মনে বললাম - হে প্রভু এই পদদ্বয় যেন সর্বদা তোমাকেই প্রদক্ষিনে ব্যস্ত থাকে - এই আশীর্বাদ করো প্রভু। 
এর পর হাত দুটো নিয়ে এলাম নাভি মূলে।  মনে মনে বললাম - হে পরমাত্মা, পরমপিতা পরম-ঈশ্বর  ! পিতৃমাতৃ প্রদত্য, পঞ্চভূতের এই শরীর - এই শরীর তুমি শুদ্ধ করো,পবিত্র করো, সুস্থ করো, নীরোগ করো। 
সবশেষে হাত দুটো  নিয়ে গেলাম হৃদয় স্থলে - স্পর্শ করতে করতে বললাম - হে পরম-আত্মা পরম-ঈশ্বর তোমাকে কোটি কোটি  প্রণাম - এই হৃদয়পদ্মে তোমার স্থান - এই হৃদয় তুমি পবিত্র করো - নির্মল করো - স্বচ্ছ করো - তোমার প্রতিকৃতি এই হৃদয়ে আরো স্পষ্ট প্রতিভাত  হোক। 
ওম নমঃ শিবায়- ওম নমঃ শিবায়- ওম নমঃ শিবায়- ওম তৎ সৎ-হরি ওম হরি  ওম হরি ওম.........

এর পর 'ওম নমঃ শিবায়' এই পঞ্চাক্ষর  মন্ত্র জপ্ করতে লাগলাম। 
কতক্ষন জপ্ করে ছিলাম বলতে পারবনা।  একটা সময় দেহবোধ লোপ পেয়ে গেল। আমার মনে হলো দেহ বলে আমার কিছু নাই। আমি এক জ্যোতির্বিন্দু। একটা চেতনা মাত্র।  আস্তে আস্তে দেবাদিদেব মহাদেবের জ্যোতির মধ্যে আমি মিলিয়ে গেলাম।
জীব-আত্মা, পরমাত্মার সঙ্গে মিলিত হলো।  তার পর আর কিছু মনে নেই। .........মঙ্গলময় পরম  পিতা মহাদেব ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রের শতকোটি প্রণাম গ্রহণ করুন।