Thursday 30 May 2019

THE TRUE MEANING OF HAREKRISHNA MANTRA

THE TRUE MEANING OF HAREKRISHNA MANTRA.

HARE KRISHNA HARE KRISHNA KRISHNA KRISHNA HARE HARE  
HARE RAMA HARE RAMA  RAMA RAMA HARE HARE

HARE RAM HARE KRISHNA MANTRA IS A POPULAR MANTRA NOT ONLY IN INDIA, BUT THROUGHOUT THE WORLD. ESPECIALLY, ISKCON SPREED THIS HIGHLY SPIRITUAL MANTRA, ALL OVER THE UNIVERSE, THROUGH THEIR KRISHNA DEVOTEES.
Mantra  that we understand IS COMPILATION OF  words or vocabulary, which CREATES SUCH A SOUND VIBRATION OR DHANI WHICH can help to liberate our mind, or wisdom of our mind. CHANTING OF HINDU MANTRA GIVES US A WANDERFUL FEELING. In the Vedas we get the mantras in various forms, but, the Brahmin's BY BIRTH  have got the monopoly in it. There is no right of general people especially sudras, or feminine ON these PROFOUND words. Besides, there is a certain rhythm of these mantras. As Gayatri is singing in Trishtup rhythm. These are the main subjects of mantra chanting, i.e rhythm. That is to learn its proper pronunciation from the Guru i.e teacher who belongs to brahmin  community only. Otherwise, the mantra energy or power is not awakened. 
Sri Sri Chaitanyadev gave us a simple, very simple, and universal Mantra for the general public. There is no specific tune. even, it has no secrecy. This mantra can sing like a loud voice. Again you can sing in a sloppy voice during japa. This universal mantra has enlightened the people. This mantra is an octagonal song from the house to  house, with the crescendo. You can also sing in the empty voice. This majesty of strange have got high spiritual power.
There are three words here. Hare, - eight recited times; . Krishna, - recited four times;  Ram, - recited four times. Total sixteen words, and thirty-two letters. It is the manifestation of this mantra, offered or pronounced by Sri Sri Chaitanyadev.


HARE :

It comes from Hari. Hari means the absolute-man "Parmeshwar", the supreme GOD.  Hare is the femine Gender. hare i.e. wife of Hari, viz. Sri Lakshmimata..

There is another meaning in the word 'hare'. That is, he who takes away the hearts of all of us, is called Hari or Hare.


It can be said again, that through this sacreed mantra,  the devotee is praying to the God, through all these words, to take away all the sorrows. Once, approached to Krishna is , again  approached to Rama  . This Sri Ramchandra and Sri krishna are, according to the Hindus, the incarnation of Lord Vishnu, the ruller or savier of the visha bramhanda, i.e the whole universe.



Another lexical meaning of the word Hari, is that the people of the community who are called untouchables in Hinduism. Sri Sri Chaitanyadev is the manifestator of this mantra. It is believed that he is an incarnation of  Lord krishna & Srimati Radha. Sri Chaitanyadev  born for the reformation of Hindu religion. He saw, the self-proclaimed Pandit Brahmin's brutality, barbarity, and also their follishness. Sri Chaitanyadev was also the  victim by the socalled pandit brahmins. He has given this most simple mantra to rescue the Hindu society from the so called Brahmin scholars. Hari means  creatures, and everything created by him are the part of God. The people of this group, i.e untouchable people  are also part of God, Chaitanyadev gave this message to society, through this mantra.



One more thing to notice, Chaitanyadev understood that, in  empty stomach, the memory of God is not remembered. So he did the service of Nar-Narayan Seva. That is, the arrangement for the service of Narayana Seva at the end of the Harinam Sankirtan. It is mandatory. Food arrangements irrespective of the caste & creed, regardless of the rich & poor, the wise and the ignorant. And the food is very common and vegetarian food. But whoever ate, he knows, it has got a wonderful taste, this prosad. That is, a way of feeding people. Here everyone is sitting in one line and people take this meal. Here is the speciality of Sri Sri Chaitanya. Even today, if you go to Vrindavan, you can observe that mandir committee, arrange food for many greedy people after harinam sankirtan. Here, if you participate in kirtan, money, food etc. are available. Here, Shri Chaitanyadev has spread the greatness of all religions. In this celebration, there is no race, no gender discrimination. Everyone embraces everyone. This was very important for the traditional Hindu religion. Sarbesesam Sasthir bhavatu, Sarbesesam Shantir Bhavtu, Sarbbesam Purnam Bhabtu, Sarbbesam Mangalam Bhabatu. They who lost all that, will regain through chanting this harinam sankirtan.



KRISHNA :

Krishna is the SON OF DEVOKI & BASUDEV( বসুদেব ). AS BELIEVED, LORD KRISHNA IS THE  INCARNATION OF LORD VISHNU, as enumerated in our Mahabharata. Those devotees of Lord Shrikrishna have accepted this meaning.


Krishna refers to the origin of the agricultural metals (Agricultural + N) which uses for the preperation of land before seading.



One more meaning - The person who attracts everyone's heart is Krishna.



Another meaning of the word krishna is that it is  gravitational force. That's what attracts  all of us. The world is bound in this love or attraction chain. The attraction keeps the universe i.e Brahmanda properly. So Krishna is called love-loving.



Again the word Krishna was divided into raising (কৃৎস্ন + ন ). The meaning of the "কৃৎস্ন"  is everything. Another meaning, the heap of water. "ন " is the meaning of the soul. It is called a heap of unlimited  soul in the water. For this we see Krishna or Vishnu lying in the sea. Sit in the   "khirodsagar", sitting next to Sri Lakshmimata i.e nature, or female god.



Another meaning of the word krishna  is "black". That is, the darkness. That means zero. The creation of the world from zero, is now acceptable to the scientists. That is, the Creator is being reminded through the name of Krishna , or dovotees are praying to him.



RAM :

Ramchandra :  Ramchandra was the first son of  the king Dasharatha. Ramchandra is  alo the incarnation of Lord Vishnu The deciple of Ramchandra accepted this meaning. Ramchandra is the symble of satwik bhab i.e. pure thoughts, proceeding from the quality of goodness. But lord krishna is the symble of Rajashik bhab i.e. impassioned.
Another meaning of Ram is one of the biggest i.e supreme.

Another acceptable meaning of the word Ram is রময়তি যঃ  স  রামঃ  "Rammati ja  sa ram". That is, who is in the verse. The two entities of God are a verse, i.e cosmology and  the one who is  active with GOD.. These words of God are being talked about by the word of Rama.

Ramamati ja sa ram Who plays with ramva or  with Laksmi. The word is magnificent - RA (রা) means God having supreme authority,  and  M (ম)  means bliss, welfare, happiness etc. that is, the most wonderful God, having supreme authority, and always blissful.

Ramamati ja ram Some people think that Sriradha is being remembered with this word "RAM", who is doing Raman or playing with God.



However, according to the class of fans or dovotees, they will understand. But one thing is true that this mantra is universal, so it's spiritual value is infinite. The same word  chanting repeatedly gives us a feeling of joy in the body and our mind. Eradicate  fear from our mind, a strange hilarity makes our bodies and in mind.



Haribol Haribol Haribol Joy Sri Sri Chaitanyadever Jay

































Wednesday 29 May 2019

পরাবিদ্যা - দিব্যদৃষ্টি লাভের উপায়

পরাবিদ্যা - দিব্যদৃষ্টি লাভের উপায়

দিব্যদৃষ্টি  বলে একটা কথা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। কিন্তু কিভাবে এটা লাভ করা যায় ? পাতঞ্জলদর্শনের বিভূতিপাদ-এ  এই সম্পর্কে উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়। যোগের ফলে বহু বিভূতির লাভ হয়, তার মধ্যে দিব্যদৃষ্টি একটা। ঋষি পতঞ্জলি   বলছেন, চিত্তবৃত্তি নিরোধের নাম যোগ। আর যোগের একতানতা বা নিরবিচ্ছিন্নতা থেকে হয় ধ্যান। আর এই ধ্যান  থেকে বিভিন্ন বিভূতি বা অলৌকিক ক্ষমতা লাভ যায়,  তার মধ্যে একটি হচ্ছে দিব্যদৃষ্টি। আর এটা যে অসম্ভব  নয়,  তা আমরা একটা সাধারণ উদাহরণ থেকে বুঝতে  পারি।  আমাদের চারিদিকে  বায়ুমণ্ডল, বিশাল জলরাশি, জলের নিচে আছে আবার মৃত্তিকাখণ্ড বা পৃথিবী,  সবই এই  এই জগতের অংশ, এবং এসবই ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত। পাখিরা আকাশে বিচরণ করছে, জন্তুরা ডাঙায় চড়ে বেড়াচ্ছে, জলচর প্রাণী জলে বিচরণ করছে। কে কার খোঁজ রাখে বলুন   তো ? মাটির নিচেও আছে অনেক জীব।  এরা কেউ কারুর অস্তিত্ত্ব সম্পর্কে অবহিত নয়। অন্যদিকে দেখুন মানুষ কিন্তু এ সম্পর্কে সম্যকভাবে  ওয়াকিবহাল। তবে এও আবার ঠিক অনেক সাধারণ মানুষ কিন্তু এ সম্পর্কে কোনো খোঁজ খবর রাখেন  না।

ঠিক তেমনি আমাদের পৃথিবীর সঙ্গে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত সাতটি লোক আছে  - যেমন ভূ -ভূব -স্বঃ - মহঃ - জনঃ - তপঃ  এবং সত্যম। এগুলো আর কিছুই নয়, একটা একটা dimension বা মাত্রা বা স্তর। যদিও আমি মনে করি, এই স্তরের সংখ্যা বহু, আবার কারুর কারুর মতে ৫১ টি। সে যাই হোক,  এগুলো সবই আমাদেরকে ঘিরে অবস্থান করছে। আমাদের মতো সাধারণ লোক, এগুলো বুঝি না, বা আমাদের  মধ্যে এগুলো ধরা পড়ে না। কিন্তু যদি দিব্যদৃষ্টি লাভ করতে পারেন, তবে তিনি এইসব জগৎ পর্যবেক্ষণ  করতে পারবেন। এখন সাধারণ মানুষ এ সম্পর্কে কিছু জানে না, বা তাদের অনুভূতিতে আসে না বলে এগুলো নেই তা নয়। আছে, এবং সেটা আমরা একটু চেষ্টা করলেই ধরতে পারবো। আসলে আমরা পর্যবেক্ষেন করি কি ভাবে ? আলো ও শব্দের তরঙ্গ আমাদের অনুভূতি জাগায়, বা বলা যেতে পারে, আলো ও শব্দ তরঙ্গ অনুভব করবার শক্তি আমাদের থাকা আবশ্যক। সাধারণ মানুষের এই শক্তি নেই বলে, বা কম বলে, তারা এটা  বুঝতে পারে না। অতএব এই সব জগতের স্পন্দন অনুভব করার শক্তি জাগ্রত করাই দিব্যদৃষ্টি লাভের  উপায়।

এই ক্ষমতার আবার সামর্থ্যভেদ আছে। প্রথম দিকে, এই জগতের অস্তিত্ত্ব অনুভব হয় মাত্র। তার পরে, সেখানকার অর্থাৎ সেই জগতের অধিবাসীর সঙ্গে আলাপ ব্যবহার করার  শক্তি জন্মায়। এই পর্যায়ে দূরের জিনিস দেখবার শক্তি জন্মায় না।  অনাগত ভবিষ্যৎ বা অতীত সম্পর্কেও কিছু জানা যায় না। কিন্তু সাধনার উৎকর্ষতা যত  বৃদ্ধি পায়, তত এই দুটি বিষয় সম্পর্কেও জ্ঞান জন্মায়।

আর একটা ব্যাপার হচ্ছে, স্থূল দেহকে অভিভূত করতে পারলে আমরা সুক্ষদেহে বিচরণ করতে পারি। এই ব্যাপারটা আমরা ঘুমোনো অবস্থায় প্রত্যেকেই অনুভব করতে পারি। শুধু নিদ্রিত অবস্থায় নয়, বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বা ক্লোরোফর্মের সাহায্যেও আমরা আমাদের সূক্ষ্ম দেহকে আমাদের স্থুল দেহ থেকে আলাদা করতে পারি। যদি কেউ সংকল্প দ্বারা নিজের সূক্ষ্ম দেহের ইন্দ্রিয়গুলোকে জাগ্রত করতে পারেন,  তবে তিনি সূক্ষ্ম দেহে যা কিছু করেন বা দেখেন তার কিছু অংশ  প্রকৃতিস্থ হবার পরেও মনে করতে পারেন। বার বার অভ্যাস করলে, সেটা স্বভাবে পরিণত হয়ে যায়।  অনেক সময় কোনো বিশেষ গন্ধ, মানুষকে এই অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে। আবার উন্মত্যবৎ নৃত্য, বা একনাগাড়ে মাথা ঘোরালেও, এই অবস্থার  উন্মেষ হতে পারে। ভার বা ভর পড়া যেখানে অকৃত্তিম, সেখানেও এই ব্যাপার ঘটতে পারে। কিন্তু এগুলো শারীরিক দিক থেকে ক্ষতিকর, এবং এর ফলও স্থায়ী হয় না। এমনকি আপনি যদি নিজের নাম বা যে কোনো ধ্বনি বার বার উচ্চারণ করতে পারেন, তবে এক সময় আপনি একটা বিশেষ দশায় উপস্থিত হবেন, যাতে আপনি এই সব জগতের অবস্থা অনুভব করবেন।

আমাদের দেশে, একটা পন্থা আছে, প্রাণায়াম, সেটা হচ্ছে, শ্বাস-প্রশ্বাসের  ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ। পূরক, অন্তঃকুম্ভ (৪-৮)  রেচক, বাহ্যকুম্ভ (১৬-৩২)। এইভাবে  শ্বাসের ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে, চিত্ত স্থির হয়, এবং এতেও এই শক্তি লাভ করতে পারা  যায়। তবে, উপযুক্ত গুরু বা আচার্য্য ব্যতীত এই পথ বিপদমুক্ত নয়। এতে শরীর ও মন ব্যাধিগ্রস্থ হতে পারে। এর ফলে, আমি নিজেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। তাই এই পথে উপযুক্ত নির্দেশক ভিন্ন না এগুনো ভালো।

 পরাবিদ্যাবিদগন এইসব  পদ্ধতি অনুমোদন করেন না। তাদের মতে, দিব্যদৃষ্টি লাভ করবার শক্তি সংগ্রহের জন্য, প্রথমে দরকার  আত্মানুসন্ধান। মানসিক ও নৈতিক উৎকর্ষ লাভ না করে, এই পথে পা বাড়ানো উচিত নয়। এসব করে সাময়িক ভাবে আপনার হয়তো ক্ষমতা লাভ হতে পারে, কিন্তু আপনার স্বভাব উন্নত না হওয়ার কারণে , আপনার নবজাত শক্তি আপনাকে বিপথে পরিচালিত করবে।

উৎকৃষ্ট উপায় হচ্ছে ধ্যান-ধারণা । প্রতিদিন নিয়মিত সময়ে, নির্জন স্থানে, স্থির ভাবে বসে চিত্তকে একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে নিবিষ্ট রাখতে হবে। মনে অন্য কোনো বিষয় না আসতে  পারে, তা দেখতে হবে। এই ভাবে প্রথমে একাগ্রতা অভ্যাস করতে হবে। এই অভ্যাস থেকেই ধীরে ধীরে ধ্যানের মধ্যে ঢুকে  যাবেন  আপনি।  কথাটা যত  সহজে বলে দিলাম আমি, ব্যাপারটা তত সহজ নয়। চিন্তা রোহিত হওয়া ভীষণ কঠিন। ছোটবেলায় আমাদের গ্রামে একটা প্রতিযোগিতা হতো।  কলাগাছ বেয়ে ওঠা। মাত্র দশফুট কলাগাছে বেয়ে ওঠা ও উপরে রাখা পতাকা নিয়ে নাবা শুধু কষ্ট সাধ্য নয়, কোনো কোনো বছর এই প্রতিযোগিতাতে কেউ সাফল্য পেত  না।  তবে অসম্ভব নয়। একটু চেষ্টা করে দেখবেন, মাত্র পাঁচমিনিট চিন্তারোহিত থাকা কত কঠিন। কিন্তু সম্ভব।

কেউ যদি মনে করেন, জগতে এত জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা হচ্ছে, আর এই বিষয়টা চেষ্টা করলে হবে
না ? নিশ্চই হবে, তবে সব থেকে আগে যেটা দরকার সেটা হচ্ছে চরিত্র গঠন, চরিত্র সংশোধন। কুচিন্তা, কুঅভ্যাস, কুকার্য্য এগুলো আমাদের নিত্য সহচর। ধ্যান ধারণা  সমাধিতে অভিনিবেশ করতে গেলে এগুলো আগে ত্যাগ করতে হবে। আমরা মনে মনে এমন সব চিন্তা করি, যা কার্য্যে পরিণত হলে, সমাজে এক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। আমাদের কামনা বাসনা এত নিম্ন পর্যায়ের, যা আমাদের উচ্চ ধারণা পোষণ করতে প্রতিপদে বাধা দেয়।  তাই আগে আত্ম সংশোধন  দরকার, তবেই চিত্তে উচ্চ ভাব আসবে।

যোগসিদ্ধ এই দিব্যদৃষ্টি লাভ করা কঠিন নয়, অনেকের এই শক্তি স্বভাবজাত। অনেকে সিন্ধুকের মধ্যে কি আছে, তা বাইরে থেকে দেখতে পায়। মাটির নিচে কোনো জন্তু থাকলে, বা কোনো জিনিস থাকলে তা তারা দেখতে পায়।  সাধনার সাহায্যে এই শক্তি সঞ্চয় করা যায়। এবং ক্রমশঃ সূক্ষ্ম জগৎ পর্যবেক্ষণ করবার ক্ষমতা জন্মে। যারা এর  চর্চা করেন, তারা সব সময় অনুভব করেন, যেন একটা শক্তি বা অদৃশ্য কেউ তাদের সঙ্গে সঙ্গে আছেন।  তাদের কাছে নির্জনতা অর্থহীন হয়ে যায়। এই অবস্থা হলে বুঝতে হবে, সূক্ষ্মদৃষ্টি শক্তির উন্মেষ ঘটতে চলেছে। এবং সেই কারণেই এই সব সূক্ষ্ম আত্মার উপস্থিতি তিনি টের পাচ্ছেন। এই সময়, কখনো কখনো অন্তরে, একটা জ্যোতি, বা আলোর চ্ছটা অনুভব করেন।বর্ণময় আলোর বিচ্ছুরণ এক অনাবিল আনন্দ এনে দেয়।  আধ্যাত্মিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এই সকল বিভূতি আপনা আপনি হয়।

তবে একটা কথা আবার বলি, চিন্তা শক্তির একাগ্রতা, একতানতা অর্থাৎ contituatuion থাকা চাই। প্রতিদিন, নিয়মিত ভাবে, নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট স্থানে, এবং নির্জনে এই অভ্যাস করা চাই। একটা উচ্চভাব মনে পোষণ করতে হবে, প্রতিনিয়ত এবং তাতেই তন্ময় থাকতে হবে। অসৎসঙ্গ, অসৎবাক্য, অসৎচিন্তা পরিত্যাগ করতে হবে। প্রথমে পাঁচ মিনিট থেকে শুরু করুন। ক্রমে দিনে ২-৩ ঘন্টা মনকে এই ভাবে ভাবরসে ডুবিয়ে রাখুন। একটা কথা মনে রাখবেন, একদিনের অনভ্যাস আপনাকে দশদিন পিছিয়ে দেবে। যিনি প্রতিনিয়ত ২-৩ ঘন্টা এইভাবে চিত্তকে  স্থির রাখতে পারেন, তাঁর  সিদ্ধিলাভের সময় কাছে এসে গেছে বুঝতে হবে। তবে আপনার  চিন্তা শক্তির পবিত্রতা ভেদে সাফল্যের সময় নির্ধারণ হবে।

এর জন্য কোনো শিক্ষকের প্রয়োজন নেই। আর একটা কথা শুনুন, আপনি উপযুক্ত হলে, শিক্ষক এসে যাবেন, আর যতদিন আপনি উপযুক্ত না হচ্ছেন, শিক্ষক পাবার কোনো আশা নেই। নিজেকে অমৃত পথে চালিত করতে অন্যের সাহায্য প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন বিবেকের নির্দেশ মেনে চলা।

ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ।  হরি  ওম।              


























  

Saturday 25 May 2019

"হিন্দু" শব্দের অর্থ কী ?

"হিন্দু" শব্দের অর্থ কী ?

আমার এক অহিন্দু বন্ধু আমাকে বলেছিলো, মুসলমানরা নাকি "হিন্দু" শব্দের অর্থে কাফের অর্থাৎ বিধর্মী, বর্বর, দুরাচারী  বোঝে।  ইংরেজরা নাকি একই ভাবে  HEATHEN বা BLACK NATIVE বোঝে যার অর্থ হলো  প্রধান বিশ্ব-ধর্মগুলোর ( যেমন : ইহুদি, খ্রিস্টান, মুসলমান ) বাইরে যাদের অবস্থান, বিধর্মী, পৌত্তলিক, ম্লেচ্ছ, বর্ব্বর, দুরাচারী  । আবার ইংরেজরা এদের BLACK NATIVE  বা কালো আদিবাসী বলে অভিহিত করে। 

আমার ধারণা ছিল সিন্ধু কথাটা থেকে হিন্দু কথাটা এসেছে। সিন্ধু একটা নদীর নাম, তো সেই নদীর তীরে যারা বসবাস করতেন, তাদেরকে হিন্দু বলা হয়। সিন্ধু তো একটা নদীর  নাম, তাহলে সিন্ধু থেকে যদি হিন্দু শব্দ এসে থাকে, তবে হিন্দু এদের ধর্ম নয়। তার কারন, সিন্ধু নদের তীরে, যারা বসবাস করতেন, তাদের সবার ধর্ম একই নাও হতে পারে। আবার জায়গার নামে সেখানকার বসবাসকারী দের ডাকা যেতে পারে, যেমন, বাংলাদেশি, ভারতবাসী, ইংল্যান্ডবাসী, ইত্যাদি। .... কিন্তু তাদের সবার তথাকথিত ধর্ম আলাদা হতে পারে। 

আমাদের সেই বন্ধুটি আরো বলেছিলো, প্রত্যেক  ধর্মের একজন প্রচারক আছেন , হিন্দু ধর্মের কোনো নির্দিষ্ট  প্রচারক নেই। তাহলে এর প্রতিষ্ঠাতা কে ? এই ধর্মের কোনো ধর্মগুরু নেই। এদের কোনো নির্দিষ্ট উপাসকও নেই। কেউ সূর্যের ভক্ত - অর্থাৎ সৌর, কেউ শিবের ভক্ত - শৈব, কেউ বিষ্ণুর ভক্ত - বৈষ্ণৱ, আবার কেউ গনপতির ভক্ত - গানপত্য,  কেউ বুদ্ধের ভক্ত তাই বৌদ্ধ। একটি নদীর নাম থেকে একটি ধর্মের নাম এবং যার অর্থ কদর্য-ব্যাঞ্জক। এটা কি করে সম্ভব ? 

বন্ধুটিকে বললাম - দেখো, তোমাদের দেওয়া, অর্থাৎ পরপ্রদত্ত কদর্য-ব্যঞ্জক শব্দ আমরা ব্যবহার করছি না। একদেশের বুলি, এক দেশের গালি। যে যেমন শিখেছে আর কি ! বাংলায় একটা কথা আছে "হরিবোল" - শুনেছে ? কথাটার মানে ঈশ্বরকে ডাকো। ইংরেজিতে একই শব্দ HORRIBLE কথাটার মানে ভয়ংকর বা বীভৎস। বাংলায় একটা কথা বাল - এটি মানুষের  নির্দিষ্ট জায়গার পশমকে বোঝায়।
যা আমরা গালি অর্থে ব্যবহার করি। কিন্তু একই শব্দ হিন্দিতে গালি মনে করি না।

হিন্দুস্থান কথাটার অভিধানগত অর্থ হচ্ছে, গৌরবান্বিত রাজ্য। আর হিন্দু কথাটার মানে, গৌরবানিত্ব জাতি বা মানুষ। মার্কিন মুলুকে, ভারতের অধিবাসী মানেই হিন্দুস্থানী বা হিন্দু। তা সে মুসলমান, খ্রিস্টান  হলেও। বাংলা ভাষার অভিধানে আছে, "শোনা যায়, ভারত থেকে যে সব মুসলমান আরব দেশে হজ করতে যান, তাদেরকেও ওই দেশের লোকেরা, হিন্দু বলে থাকে"। 

আসলে হিন্দু কোনো ধর্ম নয়।  এর কোনো প্রতিষ্ঠাতা নেই। হিন্দু কোনো জাতি নয়। হিন্দু বলতে কোনো সাম্প্রদায়কেও বোঝায় না। হিন্দু শব্দের  অর্থ উদার বিশ্বজনীতা, হিন্দু শব্দ সংস্কৃতি বাচক।  এই শব্দ অপৌরুষেয়। প্রাচীন ব্রহ্মাবর্তবর্ষ, তারই একটা অংশ আজকে যেটা ভারতবর্ষ বা হিন্দুস্থান নামে পরিচিত। এখানে যারাই বাস  করেন, তা সে বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, এমনকি মুসলমান এরা সবাই হিন্দু নামের যোগ্য। আজকে যাদের আপনি, মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ দেখছেন,  এরা একটা মতের  আশ্রয় নিয়েছে মাত্র। এদের পূর্বপুরুষ হিন্দু নামপদবাচ্য। বৌদ্ধদেবের  বৌদ্ধঘরে ঘরে জন্ম হয়  নি।হজরফ মোহাম্মদ মুসলমান ঘরে জন্ম গ্রহণকরেন নি। এমনকি যীশুখ্রিস্ট খ্রিস্টান ঘরে জন্ম গ্রহণ করেন নি। এরা  সবাই হিন্দু নামের যোগ্য। 

হীনতা বর্জনকারী মানব নিচয়। 
হিন্দু নাম আপনার দেয় পরিচয়। 

যিনি হীনতা ত্যাগ করতে পারেন, বা পেরেছেন, তিনিই হিন্দু। হিন্দু কথাটা অপৌরুষেয়। হীন+দুষ-ডু-যে - নিপাতনে সিদ্ধ এই ধ্বনি। দুষ্টের যিনি দন্ডদাতা, সৎ-ধর্মের যিনি পালক, তিনিই হিন্দু। 

এই জগৎ আসলে ব্রহ্মে  প্রতিষ্ঠিত। সব কিছুর মধ্যেই এক পরম চৈতন্য সত্ত্বা আছে। তিনি নিজেই নিজের মধ্যে ক্রিয়ারত। ধৈর্য্য, ক্ষমা, ইন্দ্রিয় সংযম, বুদ্ধি, বিদ্যা, সত্য, ইত্যাদি মানসিক সদ্গুণই আসলে ধর্ম। যে ধর্মের অনুষ্ঠানে, কুকার্য্য ও কলুষতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, এবং সংসারে যেটি স্থিতির  কারন, তাই হিন্দু ধর্ম। আমাদের যজুর্বেদের উপদেশ হলো,মিত্রের চোখে সকলকে দেখবে।
নিজের কল্যাণকে বড়ো  করে দেখো না। ব্যষ্টির  কল্যানে, সমষ্টির কল্যাণ। 

যশ্চ মাং দ্বেষ্টি লোকে অস্মিন সোহপি ভদ্রানী পশ্যতু - যে আমাকে হিংসে করে, সেও মঙ্গল দর্শন করুক। সর্বেষাং মঙ্গলাং ভূয়াৎ, সর্ব্বে সন্তু নিরাময়াঃ, সর্ব্বে ভদ্রানী পশ্যন্তু, মা কশ্চিৎ দুঃখভাগ ভবেৎ। - সবার মঙ্গল হোক। সবাই নীরোগ থাকুক, সবাই ভালো  থাকুক, কেউ যেন দুঃখ না পায়। এই বিশ্ব মৈত্রীয়ের ভাব হিন্দু ধর্মে ভাবনা। 

দেখুন, মাত্র দুই হাজার বছর আগে, যিশুখ্রিস্ট এসেছিলেন। ২৬০০ বছর  আগে ইসলামের প্রবর্তন হয়েছে। বেদের সৃষ্টি পাঁচ হাজার বছর আগে ।  তার আগেও তো মানুষ ছিল।  তাদের ধর্ম কি ছিল ? সেই ধর্মের নামই  সনাতন ধর্ম। এবং সেই সনাতন ধর্মের ধারক বাহক হচ্ছে হিন্দুরা। 

যীশু খ্রিস্ট যা বলেছিলেন, সেটা পরবর্তী কালে সংকলিত করে, করা হয়েছে বাইবেল। মোহাম্মদ যা বলেছিলেন, তাই সংকলিত করে বানানো হয়ে কোরান। বুদ্ধ যা বলেছিলেন, তাই পরবর্তী কালে সংকলিত করে করা হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটক । মহাবীর যা বলেছিলে, সেটাই জৈনদের ধর্মগ্রন্থ আগম । নানক সাহেব যা বলেছিলেন, শিখদের ধর্ম্মগ্রন্থ। বিভিন্ন ঋষিরা যা বলেছিলেন, সেটা বেদ। শ্রীকৃষ্ণ যা বলেছিলেন, সেটা গীতা। 

সব প্রবর্তিত ধর্মের লোক বলতে পারে, তাদের ধর্মগ্রন্থের নাম, এবং বক্তা বা লেখক বা প্রবর্তক। কিন্তু আপনাকে যদি প্রশ্নে করা হয়, পদার্থবিদ্যার লেখক কে ? আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, রাসায়নবিদ্যার লেখক কে,  আপনি  বলতে পারবেন ? না তার কারন বিষয়টা বহু পুরানো, তার কোনো নির্দিষ্ট লেখক হয় না।  আর তার লেখক বহু। ধর্ম তেমনি বিশ্ব সৃষ্টির সময় থেকেই আছে, আর এর লেখক বা বক্তা বহু। তাই সনাতন ধর্মের যারা ধারক ও  বাহক তাদের কোনো নির্দিষ্ট লেখক নেই, নির্দিষ্ট কোনো বক্তা নেই। এটি প্রাচীন, ও শাশ্বত।  এটি শুধু উপদেশের ধর্ম নয়, এটি উপল্বদ্ধির ধর্ম। যারা বস্তুর উপাসনা না কোরে, চৈতন্যের উপাসনা করেন, প্রাত্যহিক জীবনে যারা হীনতা, হিংসা বর্জন করতে পেরেছেন, যারা বিশ্ব-ভ্রাতৃত্যবোধে বিশ্বাস করেন, তারাই সনাতন, তারাই হিন্দু। হিন্দু কথাটার কে কি মানে বা অর্থ করলো তাতে কিছু আসে যায় না। হিন্দুত্ব একটা ধারা, যা মনুষ্য সৃষ্টির কাল থেকেই প্রবাহিত। তাই অন্য ধর্মে অবতার পুরুষরা আসেন না, কারন তারা যুগোপযুগি কথা বলেন ।  তারা দুই, আড়াই  বছর বা পাঁচ হাজার বছর মাত্র আগে এসেছিলেন। এই হিন্দু ধর্ম, মনুষ্য সৃষ্টির কাল থেকেই প্রবাহিত ধর্মের ধারা । এটি চিরকালীন।  কে কি বললো তাতে কিছুই আসে যায় না।   

ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ      


















    
















    

Thursday 23 May 2019

ধ্যানরহস্যঃ - নিগূঢ়ানন্দ - খুঁজে ফিরি কুণ্ডলিনী থেকে নির্বাচিত কিছু অংশ


ধ্যানরহস্যঃ  - নিগূঢ়ানন্দ - খুঁজে ফিরি কুণ্ডলিনী  থেকে নির্বাচিত কিছু অংশ

আমার জীবনে লাহিড়ীবাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ একটা স্মরণীয় ঘটনা, সন্দেহ নেই। না ইনি সেই যোগীশ্রেষ্ট বাবাজির শিষ্য  শ্যামাচরণ লাহিড়ী   নন। ইনি শ্যামাচরণ লাহিড়ীর নাতি সরোজ কুমার লাহিড়ী। হাওড়া রামরাজতলা বাকসারা  গ্রামে তিনি থাকেন । লাহিড়ী বাবার সঙ্গে আমার দ্বিতীয় সাক্ষাতের দিনের রাতেই অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হলো আমার। আমাকে অনেকে অনেকদিন ধ্যান করতে বলেছিলেন।  কিন্তু ধ্যানে আমার কখনো প্রবৃত্তি হয় নি। সেদিন রাতে খাওয়া দাওয়ার পরে বিছানায় বসে মনে হলো একটু ধ্যান করে দেখিই না। চোখ বুজতেই দেখি আশ্চর্য্য জিনিষ ! বহু দূর থেকে গাঢ় নীলবর্ণের জ্যোতি বিন্দুরূপে ফুটে উঠে বড় হয়ে ছুটে আসছে আমার দিকে। সেই বিন্দু আলোর বৃত্ত রচনা করছে। তার মধ্যে যে অন্ধকার, সেই অন্ধকার থেকে আবার একটা বিন্দু ফুটে উঠে বড় হয়ে ছুটে আসছে আমার দিকে। সেই বিন্দু আলোর বৃত্ত রচনা করছে। তার মধ্যে যে অন্ধকার, সেই অন্ধকার থেকে আবার একটি বিন্দু ফুটে উঠে,আরও বৃহত্তর আলোর বৃত্ত রচনা করছে।  তার মধ্যে অন্ধকার থেকে আবার নতুন বিন্দু বেরুচ্ছে।  অদ্ভুত! এমনতো কখনো ভাবিনি। চিন্তা করিনি। এটা কি ? অপরিসীম একটা জিজ্ঞাসা  ফুটে উঠলো মনের মধ্যে।

কোথা থেকে কি হলো বুঝতে পারলাম না। কিছুদিন ধরেই শরীর ভালো করার জন্য যোগব্যায়াম করছিলাম। মায় শীর্ষাসন পর্যন্ত। ব্যায়াম গুলো যথেষ্ট কঠিন।  কিন্তু আমি ব্যায়ামগুলো অভ্যাস করতে গিয়ে দেখলাম, আমাকে বিন্দুমাত্র বেগ পেতে হচ্ছে না। আমার শরীর যে এত কোমল তা আমি জানতাম না। চক্রাকারে বেঁকে যেতেও আমার মোটেও বেগ পেতে হয় না। অকারণে আসন দুটো করছিলাম, সিদ্ধাসন ও ভদ্রাসন।  দুটো আসনই ব্রহ্মচর্যের জন্য। সিদ্ধাসন সম্পর্কে লেখা আছে, এ আসন করলে,জপ্, প্রাণায়াম, ধ্যান-ধারাণাদি অভ্যাস করলে, সহজে ও অল্প সময়ের মধ্যে সিদ্ধি লাভ করা যায়। ভদ্রাসন করলে ব্রহ্মচর্য রক্ষা পায়।  সিদ্ধাসন করে নিশ্বাস উর্দ্ধদিকে  টানলে কুণ্ডলিনীও জেগে উঠেন বলে অনেকের ধারণা। আমি অবশ্য ধ্যান জপ্, তপ্ ইত্যাদি কোনো উদ্দেশ্য মনে রেখে এ সব করিনি। অকারণেই করা।

ভাবলাম তাহলে, যোগব্যায়ামের ফলেই এই আলো দর্শন হলো না তো ? কিন্তু এই আলো দর্শন যেন একটা নেশা। রাতের পর রাত  জেগে এই আলো  দর্শনের চেষ্টা করতে লাগলাম।

কয়েকদিন পরে লক্ষ করলাম, আসনে বসে ভ্রূ মধ্যে বিন্দুরূপ আলো  কল্পনা করলেই, শরীরটা যেন কিসে দোলায়।  সে দোলানির মধ্যে একটা আনন্দও আছে। বেশ চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা। যেন একটা খেলা। ভাবলাম এই রহস্যের মানে জানতে হবে।  আবার লাহিড়ী বাবার (সরোজ কুমার লাহিড়ী) কাছে যাবো বলে ঠিক করলাম।

লাহিড়ী বাবা বললেন,  অনেক মহাপুরুষ আপনার সঙ্গে দেখা করবেন।  তারা আপনাকে চোখে চোখে রেখেছেন। আপনার দ্বারা লোক শিক্ষার কাজ হবে বলে।

লাহিড়ীবাবার কাছ থেকে ফিরে এলাম। একটা নতুন প্রেরণা যেন।  ধ্যানে যেন একটা নেশা চেপে গেল। কখন সেই নির্দিষ্ট সময় আসবে, সে সময়ের জন্য অপেক্ষা করে থাকতাম। বাসে চলতে চলতে দাঁড়িয়ে থাকি বা বসে থাকি, মনে হয় চোখ বুজি।  চোখ বুজে একটু অপেক্ষা করলেই, সেই আলো  দেখতে পাই।  কখনো যদি সেই আলো আসতে  একটু দেরি হয়, ভয়ানক  যন্ত্রনা হয়। জেদ  চেপে যায়। যতক্ষন না সেই আলো  দেখবো বিশ্রাম নেই। সেই আলো  এসে  বেশিক্ষন থাকতো না।  আবার তাকে টেনে আনবার ইচ্ছা হতো। এই ভাবে অনেক রাত অবধি জেগে থাকতে লাগলাম। এর মধ্যে হঠাৎ একটা নতুন অভিজ্ঞতা হলো। মনে হতে লাগলো, পদ্মাসনে বসলে শরীরটা দুলতে থাকে।  শরীরটা খুব হালকা বোধ হয়। রাত জাগলে শরীর  খারাপ হয় জানি।  আগে রাত  জেগে পড়াশুনা করতে গিয়ে শরীর খারাপ হয়েছিলো। কিন্তু এখন রাত জাগলেও শরীরে কোনো অস্বস্তি বোধ করলাম না।

এর মধ্যে একদিন, তন্ত্রসাধক জ্যোতিষী ননীগোপাল চট্টোপাধ্যায়ের যাকে সবাই "বেণুদা"  বলে ডাকে, তার কাছে দুলালবাবুকে নিয়ে গেলাম। বেণুদা যাকে  সবাই  জ্যোতিষী বলে জানে,  বেণুদা আমার হাত দেখে বললেন, আপনার জ্যোতি দর্শন হচ্ছে ? বললাম হ্যাঁ একটা আলো  দেখি। বললেন, সাধনার প্রথম  স্টেজ। ধ্যান চালিয়ে যান।

আমি বললাম, এই জ্যোতি দর্শনের ফল কি ? বেণুদা বললেন, আপনি এখন পারিবারিক ও আর্থিক দিক থেকে প্রচন্ড বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। এই জ্যোতি দর্শন আপনাকে রক্ষা করছে। সবই তাঁরা মায়ের ইচ্ছা।

বেনুদার কাছ থেকে ফিরে আসার পর যথারীতি ধ্যান করতে লাগলাম। হঠাৎ মনে হল শুধু রাতে নয়, ভোরেও ধ্যান করলে ক্ষতি কি ? শুনেছি ব্রাহ্ম মুহূর্তে ধ্যান করা বিধেয়। তখন দেবতাদের বিচরণের সময়। কিন্তু আমি সে সময় বেছে  নিলাম না।  মনে হলো, ভোর বেলা উঠে হাত মুখ ধুয়ে, প্রাতঃকৃত্য সেরে একবারে বসবো। সে কথা ভাবতে গিয়েই আর এক নতুন অভিজ্ঞতা।

প্রাক্তন বা পূর্বজন্ম সম্পর্কে আগে আমার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। এখন মনে হয় পূর্বজন্ম বা প্রাক্তন বলে একটা কিছু থাকলেও থাকতে পারে। একটা অদৃশ্য শক্তিও আছেন যিনি আমাদের চালান, নির্দেশ দেন। তিনিই বোধহয় প্রকৃত গুরু।  প্রতিপদে সেই শক্তিরই পরিচয় পেতে লাগলাম।

একদিন সকালবেলা উঠেই মনে হল জল খেয়ে নি। পর পর কয়েক মগ জল খেয়ে ফেললাম, একেবারে আকন্ঠ। তারপর দাঁত  মেজে মুখ ধুতে গেলাম। জিভ কচলাতে গিয়ে দেখি, পেটের ভিতর থেকে হড়হড় করে জল বেরিয়ে পড়ছে। অম্ল পিত্ত যা ছিল বেরিয়ে গেলো।  ফলে পায়খানাও পরিষ্কার হলো। শরীরটা হালকা বোধ হতে লাগলো। বেশ কিছুদিন থেকে আমি কোষ্ঠকাঠিন্য ও অম্লতে ভুগছিলাম, যার ফলে পেটে  বায়ু হচ্ছিলো। শরীর  ভার ভার লাগতো।  একদিনেই শরীরটা হালকা বোধ হলো। মনে হলো মন্দ নয়তো। এইভাবে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক একটা রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে, তা আমি ভাবতেও পারিনি কখনো। বহু চিকিৎসা করেও যে রোগ থেকে আমি মুক্ত হতে পারিনি, তা যেন একদিনেই সেরে গেলো।

যাই হোক : সেদিন সকালে ধ্যানে বসতেই নতুন জিনিস দেখতে পেলাম। আলোর বিন্দু খুব তাড়াতাড়ি এলো।  তারপরই ছড়িয়ে পড়লো। আগে যেমন বৃত্ত রচনা করতো তেমন নয়। যেন চোখের সামনের  স্পেস আলোর রশ্মিতে ছেয়ে গেলো। শুধু তাই নয়, যেন, ক্রমশঃ স্টেজের পর স্টেজ অতি দ্রুত উঠে যেতে লাগলাম। কখনো  কখনো ভয় পেতে লাগলাম। বন্ধ চোখেই, মন যখন নিচের দিকে তাকায়, তখন আলোর এক ভাব।  সামনে তাকালে এক ভাব, আবার উর্দ্ধে তাকালে আর এক ভাব। নতুন অভিজ্ঞতায় কেমন আশ্চর্য্য বোধ করলাম। এর অর্থ কি ? ভাববার চেষ্টা করলাম। এমনি এক দিনে হঠাৎ আমার এক আত্মীয় আমাকে দুটি ইংরেজি পত্রিকা এনে দিলেন।  লেখক দ্বারকনাথ ভট্টাচার্য্য়।  পুস্তিকা দুটির নাম "SIMPLE KRIYA  YOG" এবং "SOME TALKS ON KRIYA YOG " . পড়ে আশ্চার্য্য হয়ে দেখলাম, সাধক যখন সাধনা করেন, তখন এমনই ভাবে তিনি অগ্রসর হন। তারও এমনি অভিজ্ঞতা হয়। মনে মনে উৎফুল্ল বোধ করলাম। রাত্রি বেলায়ও  দেখতে লাগলাম, বিন্দু তত আসছে না , আসছে শুধু আলো। নানা বর্ণের নানা তরঙ্গের আলো। সেই আলোর স্তরগুলো আমি পার হতে লাগলাম, একটা পাখির মতো। যেন একটা শকুন, পাক খেয়ে খেয়ে আকাশের অনেক উর্দ্ধে উঠছি। আকাশের বহু স্তর ভেদ  করছি আর অপূর্ব আনন্দ পাচ্ছি। ক্রমশঃ যেন আলোর দীপ্তি বাড়ছে। আলোর বিভিন্ন স্তরে, বিভিন্ন রকম ভাবনা হচ্ছে। মনে পড়ছে, রবীন্দ্র সঙ্গীত - "আনন্দধারা বহিছে ভুবনে". আলো ফুটবার প্রথম পর্যায়ে আরো একটা গানের কালী মনে পড়ছে "এই জ্যোতি সমুদ্র মাঝে, যে শতদল পদ্মরাজে, তারই মধু পান করেছি, ধন্য আমি তাই। "

আরো একটা জিনিস লক্ষ্য করছি।  ধ্যানের সময় শরীর হালকা হয়ে থাকে। হাতদুটো তুলবার চেষ্টা করতেই মনে হচ্ছে পাখির দানার মতো হাওয়ার উপরে ভাসছে। জলের মধ্যে দেহটাকে ছেড়ে দিলে যেমন জলের চাপ যেমন দেহটাকে ঠেলে উপরে তোলার চেষ্টা করে, ঠিক যেন তেমন ভাব।  এছাড়া আরো একটা জিনিস লক্ষ্য করেও অবাক হতে লাগলাম। কখনো সূক্ষ্ম অন্ধকারের একটা স্তরকে পাতলা কাঁচের মতো মনে হচ্ছে। তার মধ্যে জীবন্ত কতকগুলো মানুষের মুখ ভেসে উঠছে। কারা, কাদের এ মুখ কে জানে। জীবনে এহেন মুখ আগে কখনো দেখিনি। কয়েক দিন আশ্চর্য্য হয়ে লক্ষ্য করলাম, আমার নিজেকেই আমি দেখছি। সামনে থেকে নয়, পিছন থেকে ও পাশ থেকে।

দুইবেলা নিয়মিত ধ্যান করছি। অভিজ্ঞতার সংগ্রহশালায় নতুন সংযোজিত হলো "ওঁ"  শব্দ।  এক রাত্রে ধ্যান করছি, স্তরে স্তরে মহাকাশে রঙের খেলা চলছে, ক্রমশ যেন উর্দ্ধে উঠছি।  হঠাৎ মনে হলো "ওঁ" শব্দ উচ্চারণ করি।  কেন মনে হলো জানিনা। ঘটনা প্রবাহ যে ভাবে চলছে, তাতে আমার "সচেতন আমি" নিতান্তই দিশেহারা।  অবচেতনের চরিত্রটাও মাঝে মধ্যে ধরতে পারি। এই স্তর ছাড়িয়ে আছে আর এক স্তর, মনের অচেতন স্তর। আসলে সেখানেই মানুষের মধ্যে যে সত্যিকারের মানুষ "মানুষ রতন" সেই কাজ করে। তার কাজের ধারা বোঝা সচেতন মনের সাধ্যের অতীত।  বুঝতে পারছি সেখান থেকেই কিছু ঘটছে। তার কাছেই ধীরে ধীরে যেন আত্মসমর্পন করছি। সুতরাং মনে যে হঠাৎ কেন মাঝে মাঝে অদ্ভুত একটা ইচ্ছা জাগে আমার বাইরের আমি তা বুঝতে পারে না।  সেই ভেতরের "আমি" র নির্দেশেই এখন এগিয়ে চলেছি। সুতারং যেই মনে হল, "ওঁ" শব্দ উচ্চারণ করি, তক্ষুনি ধরনের একটা বিশেষ স্তরে,আলোর একটা বিশেষ স্তরে যখন বিচরণ করছি, সেই "ওঁ" শব্দ উচ্চারণ করলাম। সঙ্গে সঙ্গে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা।  শুনলাম, মহাকাশ সেই ওঙ্কার ধ্বনিতে গমগম করছে। সেই ধ্বনি শুনে প্রচন্ড আনন্দ বোধ হতে লাগলো। বার বার ওঁ শব্দ উচ্চারণ করতে লাগলাম।  শব্দটা এমন যেন কোনো গুহায় বসে তা উচ্চারণ করছি।পারে দেখেছি, মনের মধ্যে শব্দটা সামান্য উচ্চারিত হলেই ধরনের বিশেষ এক স্তরে মহাকাশ অ-উ-ম, অ-উ-ম শব্দে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে।

এর মধ্যে লাহিড়ীবাবা একদিন এলেন আমার বাড়িতে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, এসব হচ্ছে কেন বলুন তো ? লাহিড়ীবাবা বললেন, আপনার যে পূর্ব্ব জন্মের সাধনা ছিল, তা ফুটে উঠছে। বহু মহাপুরুষ আপনাকে তাদের দৃষ্টিতে রেখেছেন। সময়মত তারা এসে আপনার সাথে দেখা করবেন। বহুদিন আপনার গুরু লাগবে না।  আপনার ভেতরের বীজ তার নিজের চরিত্র অনুযায়ী প্রস্ফুটিত হতে থাকবে।

আমার ভিতরে এমন জিনিস আছে, যা সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা, এই ভাবনাটাই আমার কাছে বিভ্রান্তিকর। বিভ্রান্ত না হোয়ে  উপায়ই বা কি ?

একদিন পদ্মাসনে বসে ধ্যান করছি। হঠাৎ মনে হল উপরে উঠে যাচ্ছি, উপরে উঠছি। আসনে যেন আমার শরীর  আর লেগে নেই। আমার শরীরটা যেন একটা রাবারের টিউব। ভেতরের বায়ু তাতে আশ্চর্য রকম খেলা করছে। ভেতরটা বায়ুপূর্ণ হয়ে যাওয়াতেই আমি ভাসছি।লাহিড়ীবাবাকে একথা বলতে  তিনি বললেন, এটা হঠযোগ। ভাবলাম, আমিতো কখনো অভ্যাস হঠযোগ  করিনি। লাহিড়ীবাবা বললেন,গভীর মনোযোগ হলে হঠযোগ আপনিই হয়।

জানিনা এসব বিদ্যায় আমি রপ্ত নোই। কিন্তু কোথা থেকে যে কি হচ্ছে, সেটাই আশ্চার্য্য ব্যাপার। কিন্তু এসব ব্যাপারে যেমন অদ্ভুত অভিজ্ঞতা তেমনি আমার সাংসারিক জীবনে দারিদ্র্য ও ঝঞ্ঝাট বাড়ছে। ধর্ম সন্মন্ধে আমার কৌতহল আছে। একটা জেদ  আছে।  দেখতে হবে এর মধ্যে কি আছে ?সাধু সন্ন্যাসীরা আসলে কি ? সাধুসন্ত সম্পর্কে আমার ধারণা  সমাজের পরজীবী শ্রেণী। কিন্তু তথাকথিত দেবদেবী, ঈশ্বর, ব্রহ্মন এসব আসলে আসলে কি সঠিক না ধাপ্পা সেটা জানার জন্য চেষ্টা করে যাই। পুরোহিতদের সম্পর্কে আমার ধারণা এরা (imposter ) অর্থাৎ ভন্ড বা প্রতারক।  কোনো জিনিস সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবার আগে তাকে ভালোভাবে না জেনে তার সম্পর্কে মন্তব্য কার উচিত নয়। এজন্য আমার একটা জেদ  চেপে গেছে। সুতরাং ধ্যান করতেই লাগলাম।

অনেক সময় মনে হচ্ছে, আমি কি আসলে ধ্যান করছি, নাকি পাজলেড ব্রেনের  একটা কারসাজি। লাহিড়ীবাবা বলছিলেন এটা ধ্যানের স্তরগুলি আমি যেভাবে দ্রুত পেরিয়ে যাচ্ছি, তাকে বিপ্লব বলা যেতে পারে। সাধনার জন্য মানুষকে বনে-জঙ্গলে, পাহাড়ে-পর্বতে দিনের পর দিন ঘুরে বেড়াতে হয়। আর আমি ঘরে বসেই এই বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। কিন্তু আমার মন( kant )কান্ট্-এর নয়, অর্থাৎ আমি বলতে চাইনা যে GOD WITHOUT CERTAIN TRUTH . বরং আমার মন HUME - হুম এর সঙ্গে একমত। আর তা হচ্ছে TRUTH WITHOUT GOD আমি সত্যদ্রষ্টা, সত্যকে জানতে চাই। সত্য যদি ঈশ্বরবিহীন হয়, তাহলেও আমি সেটাকেই জানতে চাই। বই পড়ে নয়। নিজের মধ্যে জানতে চাই।  সাধকরা যা বলেছেন, তার সত্যতা কতদূর।  উপনিষৎ বলছে "আত্মানং বিদ্ধি" .নিজেকে জানার জন্য মনের মধ্যে ডুব দিতে বলা হয়েছে। আমি সেই মনের মধ্যেই ডুব দেবার চেষ্টা করছি। বাউলরা বলেন, দেহের মধ্যে বিশ্বব্রহ্মান্ড। চোখবুজে ভেতরে তাকালে কিন্তু সে কথাটা অবিশ্বাস্য মনে হয় না।

এখন দেখছি চোখবুজলেই চেতনা যেন মহাবেগে উর্দ্ধে লাফিয়ে ওঠে।  স্তরের পর স্তর ভেদ করে দ্রুত ছুটে চলে যে, অনেক সময় ভয় করে মোর যাবো না তো ?   রঙ নানা স্তর পাল্টাতে থাকে। এত স্তর মনে হয় অসংখ্য। তন্ত্রে আছে দেহের মধ্যে ষটচক্র ভেদ করতে হয়। এক এক স্তর ভেদ করলে এক এক রকম অভিজ্ঞতা। আমার মনে হয় এই একএকটা স্তরেই রয়েছে অসংখ্য পর্যায়। তাই এই বিচিত্র রঙের খেলা দেখা যায়। এক একটা স্তর পার হয়ে আর এক স্তরে যাবার মুখে এক ধরনের অন্ধকারের স্তর আসে বলে মনে হয়। অন্ধকার স্তরের মধ্যে দিয়ে চলতে ভয় লাগে সব থেকে বেশি। কিন্তু সেই স্তর পার হয়ে যখন আবার নতুন আলোর জগতে যাওয়া যায়, তখন মনে সাহস ফিরে আসে। কোনো আলো তীব্র, যেন আনন্দের ঝর্ণাধারা নিয়ে সমস্ত দেহ মনকে নাচায়। কোনো এল মৃদু। কোনো এল মধুর চন্দ্রালোকের মতো। কখনো দেখা যায়, দুধকাটা চানায় ভরা আকাশের মতো। তার ফাঁকে নীল আকাশ উঁকি দে।  সেই আকাশে একটা মধুর স্নিগ্ধ সূক্ষ্ম আলোর বন্যা বইতে থাকে। মনের মধ্যে অকারণে অভূতপূর্ব একটা আনন্দের সঞ্চার হয়। কখনো সুগন্ধি ধূপের গন্ধ পাই। কখনো যজ্ঞের ধোয়ার গন্ধ অর্থাৎ ঘিপোড়া গন্ধ পাই। কখনো অত্যন্ত শীতল হাওয়া লাগে গায়। কখনো শুনি অ-উ-ম। কখনো মনে হয় মহাকাশে করা যেন কথা বলছে। এক এক সময় মনে হয়, আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। সত্যিই এ এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করে চলেছি আমি। আমার মতো এমন দিশেহারা ভাবে লোকে বোধহয় কম পড়েছে।  অনেক সময় আমার কান্না পায়।  আমি কি পাগল হয়ে গেলাম ?

ধ্যান আমাকে ছাড়লো না।  নির্দিষ্ট সময় এলে মোহগ্রস্থের মতো ধ্যানে বসে যেতাম। বিচিত্র অভিজ্ঞতা বিচিত্রতর হচ্ছে। হঠাৎ একদিন ধ্যানের মধ্যে চোখের পাতা একটু জোর করে চেপে ধরতেই,  মনে হল কোটি কোটি সূর্য্য জ্বলে উঠেছে। চোখ অন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে হলো। তারপর কয়েকবার সেই কোটি কোটি সূর্য্যের আলো বিস্ফোরিত হবার পর টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে গেলো। একটি গোল আলো সূর্য্যের মতো দূর থেকে কপালের দিকে এগুতে লাগলো।  পাতলা নীল জ্যোৎস্নায় ভরা একটা আকাশ সেই ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিতে লাগলো।  আকাশের বিশেষ একটি স্তরে এসে আমার মনে হতে লাগলো, আমি ভাসছি। অমিতাভ বুদ্ধের মতো পদ্মাসনে বসে আমি ভাসছি : আমিই অমিতাভ বুদ্ধ।

ধ্যানের জগতে যে আলোর বিচিত্র খেলা, তা কখনো স্থির নয়। কিন্তু যতই উর্দ্ধগতি ততই তা কম দ্রুততর।  দ্রুততর কম হলে  মনে মধ্যে একটা স্বস্তির ভাব জাগে।  মহাকাশে পদ্মাসনে বসে আমি একটা বেলুনের মত ভাসছি বলে মনে হয়। সে বোধটা আসার সঙ্গে সঙ্গে অভূতপূর্ব আনন্দের ভাবও বোধ করি।  সবটাই মনের একটা ভ্রান্তি কিনা কে জানে ?

আশ্চার্য্য দৃশ্য আমার সামনে ভাসছে।  বেশির ভাগই দেখি নানা চেহারার যোগাসনে উপবিষ্ট ধ্যানরত ঋষিদের।  শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস ও শ্রীশ্রীসারদা মাকেও দেখি। সঙ্গে সঙ্গে মনে হয়, ওঁরা তো মোক্ষলাভ করেছেন। আকাশের কোনো স্তরেই তাদের থাকা সম্ভব নয়। হয়তো আমার মনের ভিতরে রেখে দেওয়া ছবিই ভেসে ওঠে।  কিন্তু আর সব যোগী ? তাছাড়া বরফ-আচ্ছন্ন হিমালয়ের বহু গিরিশৃঙ্গের ছবি  দেখি। দেখি বিচিত্র সব অস্পষ্ট  শহর।  সাহেব জাতীয় কিছু লোক। কোনো কোনো দিন মনে হয়, মহাশুন্য  নয়, একটা সূক্ষ্ম তরল জলের সমুদ্র।  পুরীর সমুদ্রের ঢেউয়ের মত ঢেউ উঠছে।  ঢেউয়ের মাথায় মাথায় কখনো আমি উঠছি  এবং নামছি। দোল খাওয়া ছেলেদের মতো তখন দারুন ভালো লাগে।

এতো সব দর্শনে আমি অর্থনৈতিক অভাব কিন্তু গেলো না। সাংসারিক ঝঞ্ঝাট থেকেও আমি কিন্তু নিস্তার  পাইনি। আমার নানা সমস্যা, দুঃখ দরিদ্রের যন্ত্রনা যেন ক্রমশঃ বেশি করে এগিয়ে আসছে।তাহলে কি সেই কথাটাই সত্যি - যে করে আমার আশ, তার করি সর্বনাশ। ।    



































































   

Wednesday 22 May 2019

শাঁখা, সিঁদুর, নোয়া, পলা - কেন ধারণ করে ?


শাঁখা, সিঁদুর, নোয়া, পলা - কেন ধারণ করে ?

হিন্দু বাঙালির বিয়েতে শাঁখা, সিঁদুর, নোয়া, পলা আবশ্যিক।  কিন্তু কেন ?
বাঙালী হিন্দুদের বিয়ে একটা উন্নত সংস্কৃতির ধারক। একটা পরম্পরা, যা গভীর আত্মবিশ্বাস ও ঋজুতা নিয়ে পালন করা হয়। বাঙালি বিয়ের কনেকে, অন্যান্য অনেকের মতো লাল শাড়ী ব্লাউজ দিয়ে সাজানো হয় । এমনি অনেক ঐতিহ্যপূর্ণ অনুপম ধর্মীয় সংস্কার পালন করা হয়।

প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যে যেমন বিয়ের দিনে বা বিয়ের দিন থেকে বিয়ের  নিদর্শন স্বরূপ কিছু শিষ্টাচার পালন করা হয়, তেমনি কিছু নিদর্শন বা চিহ্ন  মেয়েরা  সারা জীবন বহন করে নিয়ে চলে। এগুলোকে সৌভাগ্যের চিহ্ন বলে মনে করা হয়।  এই সৌভাগ্যের চিহ্নেগুলোর   মধ্যে প্রধান হচ্ছে শাঁখা, সিঁদুর, পলা ও নোয়া (লোহা)।

শাঁখা :  এটি একটি সাদা রঙের  চুড়ি, যা তৈরি হয়,  সামুদ্রিক শঙ্খ থেকে। দুই হাতেই এই শাঁখা পরিধান করা হয়। খেয়াল রাখতে হয় যাতে, এই শাঁখা বিয়ের এক বছরের মধ্যে ভেঙে না যায়। যদি কোনো কারণে, এই শাঁখা এক বছরের  মধ্যে ভেঙে যায়, তবে তাকে অশুভ লক্ষণ বলে মনে করা হয়। যদিও এর মধ্যে কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই।

পলা : এটি একটি লাল রঙের চুড়ি।  যা তৈরি হয় লাল coral  বা প্রবাল  থেকে। প্রবাল সামুদ্রিক প্রাণী। তার জীবাশ্ম থেকেই এই প্রবাল বা পলা তৈরি করা হয়ে থাকে।  দুই হাতেই এই পলা পরিধান করা হয়। পলার ক্ষেত্রেও খেয়াল রাখতে হয় যাতে এটি এক বছরের মধ্যে নষ্ট না হয়।  শাঁখার মতো পলাও যদি  এক বছরের  মধ্যে ভেঙে যায়, তবে তাকে অশুভ লক্ষণ বলে মনে করা হয়। যদিও এর মধ্যে কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই।

নোয়া : নোয়া কথাটা লোহার অপভ্ৰংশ। আসলে লোহা বা iron দিয়ে এই চুড়ি তৈরি করা হয়।  এটি কেবলমাত্র "বা" হাতে ধারণ করা হয়। এটি কেউ কেউ, সোনা বা বা রুপা দিয়ে আচ্ছাদন করে বানিয়ে নেন ।

সিঁদুর : এটি আসলে লাল রঙের মাটি। সিঁদুর শরীরের দুই জায়গায় পড়ানো হয়। দুই ভ্রূযুগলের মাঝে গোল আকারে এবং সিঁথিতে লম্বা করে।

এই চারটি আসলে বিবাহিত মেয়ের চিহ্ন। যতদিন স্বামী জীবিত থাকেন, হিন্দু বাঙালিরা এই চিহ্ন বহন করে নিয়ে চলেন। অনেকের বিশ্বাস, এগুলো ধারণ করলে এর দ্বারা অশুভ শক্তিকে বিতাড়িত করা সম্ভব হয়।

এগুলো আসলে মেয়েদের সাজানোর জন্য অলংকার। শাঁখা, সিঁদুর, পলা পড়লে কনেকে এক ঐশ্বরিক সৌন্দর্য প্রদান করে। এমনকি, অন্য পুরুষের কুনজর থেকে বাঁচবার জন্য, এক রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করে।

তবে এর কিছু দ্রব্যগুন, ও রঙের প্রভাব আছে।  যা মানুষকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ  রাখে। শুধু তাই নয়, বিয়ের দিন সকালে  এই শাঁখা ও পলা  কনের মা পড়িয়ে দেন। বিয়ের সময় সিঁদুর পাড়িয়ে দেন, স্বামী। আর লোহা পরিয়ে দেন, কনের শাশুড়ি অর্থাৎ বরের মা। তাই এগুলো তাদের আশীর্বাদের চিহ্ন।

শাঁখা যেমন দুই হাতেই পড়ানো  হয়, তেমনি পলাও দুই হাতেই ধারণ করা যেতে পারে। লোহা বা নোয়া কেবলমাত্র "বা" হাতে পড়ানো হয়। শাঁখা ও সিঁদূর হিন্দু বাঙালিদের মধ্যে এতটাই গভীর রেখাপাত করে, যে অবিবাহিত মেয়েরা কিছুতেই এদুটো ধারণ করবে না। তা সে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যই হোক বা অন্য কোনো কারণে হোক। তবে তারা শাখা বা পলার আংটি ব্যবহার করে থাকে, এর দ্রাব্যগুন পাবার জন্য।

এখন দেখে নেবো এগুলোতে আদৌ কোনো উপকার হয় কি না। দেখুন, পৃথিবীটা রং ও আলোর খেলা। সূর্য রশ্মি থেকে যে আলোর বন্যা বয়ে বেড়াচ্ছে, সেখান  থেকেই  আমরা পুষ্টি বর্ধন করছি। এই আলো ৭টি রঙের সমাহার। আলোর মধ্যে থেকে যে রং বেরোচ্ছে তা আলোর গুন্। আমরা যে বিভিন্ন গ্রহ রত্ন ধারণ করি, তা আসলে ওই সূর্য্যরশ্মি থেকে রং সংগ্রহ করবার জন্য, যা আমাদের সুস্থ রাখবে, মানসিক শান্তি প্রদান করবে।অর্থাৎ শরীর ও মন দুটোকেই প্রভাবিত করে এই সূর্য্যের আলো বা তার রঙ। তাই সাদা, এবং  লাল, রং থেকে পুষ্টি বর্ধন করবার জন্য, আমাদের শাঁখা পলা ও সিঁদুর একটা বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে।

তবে শাঁখাকে সাক্ষাৎ মা-লক্ষ্মীর প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়। এছাড়া, শঙ্খের অনেক প্রাকৃতিক গুন্ আছে। শাঁখা ভেজানো জল, বা শাঁখার গুঁড়ো, আমাদের অনেক রোগের উপশম করে । এছাড়া শঙ্খ  হিন্দুদের কাছে একটি পবিত্র বস্তু, শাঁখের ধ্বনি-তরঙ্গ  পরিবেশের negative energy-কে প্রতিহত করে।    আমরা জানি, যে পদার্থ সূর্য থেকে যে রং গ্রহণ করবার ক্ষমতা রাখে, সেই  বস্তু  সেই রং ধারণ করে। তাই শাঁখা যেমন সাদা রং সংগ্রহ করে তাই পবিত্রতা প্রশ্নাতীত।  মানুষের মনকে পবিত্র রাখতে এই সাদা রঙের প্রভাব আছে। 

তেমনি পলা ও সিঁদুর লাল রং সংগ্রহ করে। পলারও কিছু দ্রব্য গুন্ আছে। শরীরে রক্তাল্পতা কমাতে, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে পলা ধারণের বা পলা ভেজানো জল খাবার বাব্যস্থা আছে। পলা ধারণ করলে, মেয়েদের রজঃস্রাব জনিত ব্যাথা ও সমস্যা প্রশমিত হয়।  মেয়েদের শরীরের ক্ষয় পুরুষের থেকে অনেক বেশি। আর সেটা শুরু হয় মেয়েরা যখন রজঃস্বলা হয়। তখন থেকেই এই সব জিনিসের শারীরিক  প্রভাব প্রয়োজনীয়।

লাল সিঁদুর পড়ানো হয় দুটো জায়গায়।  এক, ভ্রূযুগলের মাঝে, এবং সিঁথিতে।  অর্থাৎ যাকে আমরা আমাদের ত্রিনয়নের অবস্থান বলি বা আজ্ঞাচক্র বলি। । এটি খুব স্পর্শকাতর জায়গা। এই আজ্ঞাচক্র সক্রিয় থাকলে, মানুষের মধ্যে ভবিষ্যৎ বোঝার  সম্ভাবনা শক্তি জাগ্রত হয় । আমি অনেক মায়েদের দেখছি, এমনকি আমার স্ত্রীকে দেখেছি, ওঁরা সহজে মানুষের ভিতরটা দেখতে পায়। তার উদ্দেশ্য বুঝতে পারে। এই ক্ষমতা ওর সিঁদুর পড়ার জন্য হয়েছে বলে আমার ধারণা। এই আজ্ঞাচক্রেই  শাক্তরা সিঁদুর ধারণ করেন। বৈষ্ণবরা তিলক বা চন্দন ধারণ করেন।  জ্যোতি ধ্যানের জন্য এই আজ্ঞাচক্রকেই নির্দিষ্ট করা আছে।অতয়েব জ্ঞাতসারে হোক বা অজ্ঞাত সারে হোক এই আজ্ঞাচক্র সক্রিয় করার জন্য সিঁদুর পড়া উপকারী বৈকি !

এছাড়া, নোয়ার চুড়ি অর্থাৎ লোহা বা ধাতব পদার্থ মানুষের শরীরে গুরুত্ত্বপূর্ন। iron tablet খেতে হবে না যদি আমরা প্রতিদিন লোহা ভেজান জল খেতে পারি। এছাড়া লোহা আমাদের শরীরের negative ও posetive শক্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এগুলো যেমন সুস্বাস্থের জন্য দরকার, তেমনি এটি সৌভাগ্যের প্রতীক। এগুলো মেয়েদের সহ্যশক্তির সীমা  বাড়িয়ে দেয় অর্থাৎ যেকোনো পরিস্থিতে নিজেকে শান্ত রাখতে পারে। ফলতঃ দাম্পত্য কলহের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। আজকাল যেমন এর ব্যবহার কমে যাচ্ছে, তেমনি পারিবারিক জীবনে অশান্তিও বাড়ছে।

প্রত্যেক সমাজেই বিবাহিত মেয়েদের, কোননা কোনো  ধরনের  প্রতীক ব্যবহার করতে দেখা যায়।  কেউ মঙ্গলসূত্র ব্যবহার করেন , উচ্চবিত্তের মধ্যে হীরের আংটি প্রদানের প্রথা চালু আছে। এগুলোও সুস্বাস্থ  ও সৌভাগ্যের প্রতীক। তবে বাঙালি পরিবারে এই শাঁখা-পলা-সিঁদুর-নোয়া পরিধানের , এই যে সংস্কৃতি তা  তাদের দাম্পত্য জীবনের সুখ, নির্বিরোধী মানসিকতা, এবং শারীরিক দিক থেকে, সুস্থ  থাকতে সাহায্য করে।

এখন প্রশ্ন হলো এগুলো যদি উপকারী তবে, অবিবাহিত মেয়েরা পড়ে না কেন ? আসলে, আজ থেকে ৭০/৭৫ বছর  আগেও মেয়েরা রজঃস্বলা হলেই তাদের বিয়ের বন্দোবস্ত করা হতো। এবং এই শাঁখা পলা সিঁদুর লোহা ধারনের ব্যবস্থা হতো। এখন সময়ের ডাকে, সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু পুরানো সংস্কার আমাদের পিছু ছাড়েনি। তাই অবিবাহিত মেয়েরা এগুলো ধারণ করলে, সমাজে একটা ভুল বার্তা যাবে, অর্থাৎ ধরে নেওয়া হবে যে সে বিবাহিত।  এই কারণেই অবিবাহিত মেয়েরা এগুলো ধারণ করেন না।  তবে লক্ষ করবেন, বেশির ভাগ মেয়েরা পলার বা শাঁখার  আংটি ব্যবহার করে থাকেন ।  এবং এতে তাদের উপকার হয়।

অতয়েব বাঙালি হিন্দুদের এই শুভ সংস্কার, মেনে চললে উপকার ভিন্ন অপকার  নেই। এছাড়া শাঁখা পলা ও সিঁদুর মায়েদের একটা স্বর্গীয় সৌন্দর্য এনে দেয়। মমতাময়ী মায়ের চেহারা দৃষ্ট হয়। মেয়ে তখন "মা" হয়ে ওঠে। 

ওঁ শান্তি শান্তি শান্তিঃ।  হরি  ওং