Tuesday 3 October 2017

সত্য-ধর্ন্ম মহাত্মা গুরুনাথ - অন্যভাবে দেখা


সত্য-ধর্ম্ন

কলুষ-অনল-দগ্ধানাং শান্তয়ে-অমৃত বারিভিঃ ।
প্রকাশ্যতে  মুক্তয়ে মুক্তি-কাঙ্ক্ষিণাম ।।

(কলুষ অগ্নিতে দগ্ধ মনুষ্যকে  শান্ত করতে অমৃতবারি স্বরূপ সত্য-ধর্ম্ম প্রকাশিত হচ্ছে, যা মুক্তিকাঙ্খীকে মুক্ত করবে ) 


- মহাত্মা গুরুনাথ সেনগুপ্ত


মুখবন্ধ 
গুরুদেব  :-

আহা ! জগতের আজ কি শুভ দিন ! কি আনন্দময় দিন !! কি অমৃতময় দিন !!! কোটি কোটি মানবের উদ্ধারের  পথ  আজ প্রকাশিত হলো। পাপপূর্ণ জগৎ আজ পরিত্রানের পথ প্রাপ্ত হতে চললো। এর চেয়ে সুখের-আনন্দের  আর কি হতে পারে ??? হে মানবগন  তোমরা প্রস্তুত হও ; তোমাদিগের পরিত্রান করিতে পরম পিতা আজ উদ্যত হয়েছেন।

বুদ্ধি :

মহাত্মা গুরুনাথ  তাঁর সত্য-ধর্ম্ম গ্রন্থের শুরুতে মুখবন্ধ লিখতে গিয়ে এই ভাবেই শুরু করে ছিলেন। পড়তে পড়তে আমার ছোটবেলায় দেখা একটা পাগলের কথা মনে পরে গেলো।  আমি তখন  স্কুলের ছাত্র। রাস্তায় যেতে যেতে একটা পাগল, আমরা যাকে  গোপাল নাম ডাকতাম - পেয়ে গেছি,  পেয়ে গেছি, বলে চিৎকার করতো । উলঙ্গ গোপাল, কখনো বা  হাত দুটো মুঠো করে, দৌড়োচ্ছে আর চিৎকার করছে -   পেয়ে গেছি ,  পেয়ে গেছি। আমরা কয়েকজন হাফ-প্যান্ট পড়া  স্কুল ছাত্র, গোপালের পিছনে দৌড়াতাম। গোপাল খানিক দৌড়ে, থেমে  যেত, আর খিল খিল করে হাসতো। আমরা তার হাতের মুঠো জোর করে খুলে দেখতাম - কিছুই নেই।
কখনো গোপাল, আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতো।  হাসতো, হাত তালি  দিতো।  আমরা ভাবতাম, নিশ্চই ও কিছু একটা দেখছে। আমরাও আকাশের দিকে দেখতাম। কিন্তু ও কি দেখছে তা বুঝতেও পারতাম না - দেখতেও পারতাম না। পাগল কোথাকার।
আমার কি আজও  সেই পাগলের পিছনে দৌড়ানোর  নেশা কাটে নি ?

বিবেক  :
চিরকাল এমনতরো কিছু মানুষ থাকে, যারা পাগল আর ব্রহ্মজ্ঞানীর মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। রামকৃষ্ণদেবের আমলেও এমন মানুষ ছিল। রামকৃষ্ণকে তারা পাগল বলতো।এখন আর তাকে কেউ পাগল বলে না, বলে অবতার। কত জায়গায় যে তার পূজা হয় তার ইয়ত্বা নাই. বিবেকানন্দ যখন আমেরিকা গিয়েছিলো, তখন রাস্তার লোকেরা তাকে পাগল  ভাবতো।  তার পাগড়ি ধরে টানাটানি করতো। একবার তো তাকে তাড়া-করে মারতে গিয়েছিলো। এখন বিবেকানন্দ একজন সর্বজনগ্রাহ্য় মহাপুরুষ।  ত্রৈলঙ্গ স্বামীকে অনেকে জড়-ভরত ভাবতো। অতএব তুমি কি ভাবছো, সেটা বড় কথা নয়। তিনি কি ছিলেন সেটাই বড় কথা।
ভগবান শঙ্করাচার্য তার বিবেক চূড়ামণি গ্রন্থে ৫৩৩ নম্বর শ্লোকে বলছেন :

দেবদত্তো-অহম-ইত্যে-তদ্-বিজ্ঞানম নিরপেক্ষম
তদ্বদ্ব্রহ্ম বিদো-অপ্যস্য ব্রহ্মা-হমিতি বেদনম।

অর্থাৎ আমি দেবদত্ত এই বোধ কোনো দেশ-কালাদির অপেক্ষা রাখে না। সেরূপ ব্রহ্মজ্ঞ ব্যক্তির পক্ষে আমি ব্রহ্ম এই অনুভবও স্বত-ই হয় অর্থাৎ এ জন্য কোনো কিছুরই  বিন্দু মাত্র অপেক্ষা রাখে না।
রাজা জনকেরও, আচার্য অষ্টাবক্রমুনির কাছ থেকে আত্ম-জ্ঞান লাভের পর এই উল্লাস হয়েছিল। এটাই স্বাভাবিক।  সাধারণে বুঝতে পারে না। ভাবে পাগল।  তুমিও কি তাই ভাবছো ?

গুরুদেব :
সত্য ধর্ম্মের যথাযথ বিবরণ এই গ্রন্থের প্রকরণ বিশেষে বিবৃত হবে। মুখবন্ধে এই মাত্র বলা যাচ্ছে যে, নিরাকার, (ফুটনোটে বলছেন : নিরাকার বললেও ঐশ্বরিক ভাব কিছুই বোঝা যায় না। এ কারন "উপাসনা" নামক গ্রন্থে ঈশ্বরের স্বরূপ পাঠ  করো ) অদ্বিতীয়, সর্ব্বব্যাপী, সর্বশক্তিমান, অনাদি-অনন্ত, অসীম,অনন্ত- গুণ- নিধান পরম পিতার উপাসনা করবে।

বুদ্ধি :
ছোটবেলা থেকে পুজো পাঠ করেছি তা নয়। তবে বাড়িতে পুজো-অনুষ্ঠান  হলে, আমাদের কাছে উৎসব উৎসব লাগতো। বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন আসতো।  বেশ ভালো লাগতো। এই পর্যন্ত-ই । বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, পুজো পাঠ  একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।  ভালো লাগে তাই করি। ভালো হয় কি না তা জানিনা। এখানেও গুরুদেব উপাসনা করতে বলছেন।  কেন উপাসনা করবো তা বলেন নি। আর ঈশ্বরের যে বর্ণনা উনি দিচ্ছেন - তাতে আমার মনে হয়,  সীমাহীন অনন্ত-কে ভাষায় ব্যক্ত করতে চাইছেন। এর দ্বারা না কিছু বোঝা যায় - না কিছু বোঝানো যায়। অন্তত আমিতো কিছু বুঝতে পারি নি।

বিবেক :
গুরুদেব এক কথায় ঈশ্বরের স্বরূপ বলে দিলেন।  এবং এক মাত্র উপাস্য যে তিনিই, সেটাও বলে দিলেন। তুমি কি বুঝলে, বা মানলে সেটা বড়ো কথা নয়। সত্য কি ? কর্তব্যই বা  কি ? তা এক কথায়  বলে দিলেন।  যদি তোমার জ্ঞান ভাণ্ডারে জঞ্জাল জমে না থাকে, তবে এই সার সত্য জ্ঞান ভাণ্ডারে রেখে দাও।  যখন সময় হবে ঠিক বুঝতে পারবে। পরিবেশ পেলে এখান থেকেই কল্পতরু জন্ম নেবে। তুমি শুধু অপেক্ষা কারো।

 গুরুদেব আবার বলছেন :
 মানুষ স্ব-কৃত কর্মানুসারে আত্ম প্রসাদ বা আত্ম  গ্লানি ভোগ করে, দেহ-ত্যাগান্তে  পরলোকে অবস্থিতি করে,  আর পরলোক-গতদিগের মধ্যে কতকগুলি আত্মা , পুনরায় জন্ম গ্রহণ করে থাকেন, কেহ কেহ আর জন্ম গ্রহণ করেন না।

বুদ্ধি :
একথাগুলো যুক্তি ছাড়া। কল্পনার জগতে যারা বাস করেন, তারা এই সব কথা বলে, মানুষকে কল্যানমুলক কাজে উদ্বুদ্ধ করেন। বা অনিষ্টকর কাজ থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করেন। আমি মনে করি না যে মানুষ, শুধু তার নিজের কাজের জন্য ভালো থাকে, বা খারাপ থাকে। এই ভালো থাকা বা খারাপ থাকার জন্য অনেকগুলো উৎপাদক-শক্তি কাজ করে। এই আলোচনা পরে করবো।
দেহ ত্যাগের পরে আত্মা পরলোকে অবস্থান করে।  এ সব-ই  কল্পনা মাত্র। দেহ ত্যাগের পরে,কেউ ফিরে আসেনি। বা  কেউ এসে বলতে পারেনি,  যে, আমি দেহ ত্যাগের পরে  এখানে ছিলাম, বা এই রকম ছিলাম। এগুলো কষ্ট কল্পনা মাত্র। এর মধ্যে কোনো সত্যতা নেই।  আজগুবি গল্প কথা। শুনতে ভালো লাগে। তাই আমরা শুনি।  আর আত্মতৃপ্তি বা আত্মগ্লানি ভোগ করি। ভুতের গল্প আর কি !
আমি উপনিষদে পড়ছিলাম, মানুষ যদি উত্তরায়ণে মারা যায়, তবে আর ফিরে আসে না। আর যদি দক্ষিণায়নে মারা যায়, তবে আবার জন্ম গ্রহণ করে।  আবার কেউ কেউ বলেন, বাসনার তৃপ্তি না হলে, মানুষ আবার ফিরে আসে। হিন্দু শাস্ত্রে পুনর্জন্ম স্বীকার করা হয়েছে। আমি এর মধ্যে কোনো যুক্তি খুঁজে  পাইনি। তাই যেটা জানিনা - সেটা মানিও না।  তবে পুনর্জন্ম সন্মন্ধে আমার কিছু ধারণা আছে। সে গুলো উপযুক্ত সময়ে আলোচনা করবো।

গুরুদেব  :
এই বিশুদ্ধ ধর্ম্মের  মতে  সাকার উপাসনা নাই। (ফুটনোটে :সাকারের উপাসনা নাই, কিন্তু অর্চনা আছে। এর বিস্তৃত  বিবরণ "উপাসনা" নামক গ্রন্থে দেখো।)  যোগ সাধন নাই। জাতিভেদ নাই। এবং নির্বাণ( ঈশ্বরে লিন হওয়া )নাই। (ফুটনোট : স্ব-প্রযত্নে যে কেহ লীন হতে পারে না ,এটাই এর উদ্দেশ্য।  ঈশ্বরের ইচ্ছা হলে যে কেহ লীন হতে পারে। ) সত্য-ধর্মের মতে গুন্ সাধন সর্ব প্রধান কার্য। সুতরাং ঈশ্বর উপাসনা ও গুনের অভ্যাস একমাত্র কার্য।
 এই ধৰ্ম্ন  অনুসারে  জগতের সমস্ত ণর নারীকে সহোদর ও সহোদরের ন্যায় জ্ঞান করতে হয়। এই অভেদ ভাব অবশেষে সমস্ত চেতন পদার্থে পরিণত হয়। 
এই ধর্ম্ম অবলম্বনার্থে হিন্দুশাস্ত্রোক্ত চতুর্বিধ আশ্রমের বিশেষ কোনো আশ্রম প্রয়োজনীয় নহে। সকল আশ্রমীই এই ধর্ম্ম অবলম্বন করতে পারেন। সত্য ধর্মের আশ্রয় হৃদয়, যাতে পরমাত্মা আসীন থাকেন। আশ্রম গ্রহণ করো বললে বুঝতে হবে যে হৃদয়ে জগদীশ্বরকে স্থান দাও। যে নিরাশ্রমী তার হৃদয় নেই তাতে পরমাত্মা বসতে পারেন না। কেবল উপরি উপরি রক্ষা করেন।, কিন্তু পরিত্যাগ করেন না। 
মহাত্মা গুরুনাথ বলছেন : সত্য-ধর্ম্ম  যে পৃথিবীর সমস্ত  প্রচলিত ধর্ম্ম অপেক্ষা সত্য ও উৎকৃষ্টতম, তা প্রথম পরিচ্ছেদে বর্ণিত হবে। এখন কেবল, এই ধর্ম্ম যে অন্যান্য প্রচিলিত ধর্ম্ম  অপেক্ষা বিভিন্ন তা প্রদর্শিত হচ্ছে। 
১. সত্য ধর্ম্মে সাকার উপাসনা নাই।  সুতরাং সমস্ত সাকারবাদপূর্ণ  ধর্ম্ম হতে এই ধর্ম্ম বিভিন্ন।
 ২. এতে হঠ যোগাদির ন্যায় কোনো প্রকার যোগ সাধনা নাই। এবং পদ্মা-আসনাদির  ন্যায়, কোনো প্রকার আসন সিদ্ধিও নাই।  সুতরাং এই ধর্ম্ম সমস্ত যোগ-সাধন ধর্ম্ম ও আসন -সাধন ধর্ম্ম হতে বিভিন্ন।
৩.  নিরাকারবাদী বেদান্ত প্রতিপাদ্য ধর্ম্ম ও স্বল্পকাল প্রচলিত ব্রাহ্ম ধৰ্ম হতেও এই ধর্ম্ম বিভিন্ন।  কারন বেদান্তের অতি  ভীষণ অহংকারময় অন্যায্য "সো-অহং" (সোহহং) প্রভৃভাবেও এই ধর্ম্ম দূষিত নয়। এবং ব্রাহ্ম-ধর্ম্মের  ন্যায় "একবার মাত্র মনুষ্য জন্ম গ্রহণ করে " ইত্যাদি অদূরদর্শিতায়ও এই সত্যধারনম মহত্মাশূন্য নয়। 
৪. পরম পিতার সহিত "পুত্র ও পবিত্র আত্মার" অভেদ জ্ঞান প্রযুক্ত খ্রিস্টীয় ধর্ম্ম হতে সত্য-ধর্ম্ম  বিভিন্ন।  মহম্মদীয় ধর্ম্মে নর হত্যার বিধি দেয়।  সত্য ধর্ম্ম নরকে জীবন দান করে।   
৫. বৌদ্ধেরা যদিও পরম সত্য অহিংসা বিষয়ে সত্য-ধর্ম্মের  কিছুটা কাছের, কিন্তু ঈশ্বর জ্ঞান, পরলোক ও মুক্তি প্রভৃতির পরিস্ফুট  বোধ এবং উপাসনা প্রভৃত দূরস্থিত ও নিম্নস্থিত। সুতরাং সত্য ধর্ম্ম বৌদ্ধ ধর্ম্ম থেকেও আলাদা। 
৬. সত্য-ধর্ম্ম আধুনিক "থিওজফিস্ট-ধর্ম্ম" হতেও বিভিন্ন। কারন পারলো ও পুনর্জন্মদি বিষয়ে এর সাথে ঐক্য নাই। আর থিওজফিস্ট ধর্ম্মে কোনো কোনো গুনের উন্নতির বিধি  থাকলেও, এখানেও "সোহহং" এই ভীষণতম অহংকার পূর্ণ ভাবে কলুষিত। 
৭. সত্য-ধর্ম্ম সাধারণ আত্মা আকর্ষণ (আমেরিকাদি মহাদেশে প্রচলিত  স্পিরিচুয়ালিস্ট ) ধর্ম্ম অপেক্ষা বিভিন্ন। কারন এই ধর্ম্মে অত্যুন্নত মহাত্মা দিগের উপদেশ নাই। কেবল কতকগুলি বৈজ্ঞানিক বিষয়ের সাদৃশ্য প্রদর্শন মাত্রা আছে।  
উপরে যা যা লেখা হলো তাতে, এ কথা বিশদ রূপে প্রদর্শিত হয়েছে যে, সত্য-ধর্ম্ম অন্যান্য প্রচিলিত ধর্ম্ম থেকে বিভিন্ন। এর সর্বউৎকৃষ্টতার ও সত্যতার বিষয়ও আনুষঙ্গিক কিছু কিছু লিখিত হয়েছে বটে, কিন্তু এসব বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ সত্য-ধর্ম্ম বইয়ের প্রথম পরিচ্ছেদে লেখা হবে। ধর্ম্মার্থী সহজেই জিজ্ঞেস করতে পারেন যে, যদি তোমাদের এ ধর্ম্ম অন্য কোনো প্রচলিত ধর্ম্মতুল্য অকিঞ্চিৎকর  নয়, তবে এই অমূল্য রত্ন তোমরা পেলে কোথায় ? এই প্রশ্নের উত্তর দান এই মুখবন্ধের আর একটা উদ্দেশ্য। 
এখন, বক্তব্য এই যে, আমরা আত্মা-আকর্ষণরূপ উৎকৃষ্ট উপায় দ্বারা পারলৌকিক মহাত্মাদিগের নিকট থেকে  এই ধর্ম্ম  প্রাপ্ত হয়েছি। ( যে সকল পারলৌকিক আত্মারা অনন্ত গুণধাম পরম পিতার সান্নিধ্য-নিবন্ধন অতুল আত্মপ্রসাদ সাগরে ভাসমান,   তাদেরকে পারলৌকিক মহাত্মা  বলে। ) যেমন প্রদীপ হতে যে আলোক প্রাপ্ত হওয়া যায় , তা সামান্য ও সহজে নির্বাণ হয়, কিন্তু সূর্যের আলোক বিশ্ব ব্যাপী ও অনির্বাপনীয়,  তদ্রুপ, কালে অর্থাৎ ভবিষ্যতে জগতের সমস্ত ধর্ম্মার্থীর হৃদয় হতে অন্যান্য ধর্মপ্রদীপ  (যা এই সত্য ধর্ম্মের অংশের কণিকামাত্র ) নির্ব্বাপিত হয়ে দূরীভূত হবে ; এবং সত্য-ধর্ম্মরূপ মহা জ্যোতিঃ চির বিরাজিত থাকবে। 

বুদ্ধি :
নিজের ঢাক তো নিজেই পিটিয়ে গেলেন। সব ধর্মের থেকে সত্য-ধর্ম্ম শ্রেষ্ট। অন্য সব ধৰ্ম লোপ পেয়ে যাবে। শুধু এই ধর্ম অর্থাৎ সত্য-ধর্ম্ম মহা জ্যোতি রূপে চির বিরাজিত থাকবে। মহাত্মা গুরুনাথ  এই ধৰ্ম প্রচার শুরু করেছেন কবে ? ১৮৪৭ সালে জন্মে ছিলেন।  যখন বয়স তার চল্লিশ /বেয়াল্লিশ তখন তিনি এই ধৰ্ম সন্মন্ধে জ্ঞাত হয়েছেন।  অর্থাৎ প্রায় ১২৫ বছর  হয়ে গেছে, এই ধর্মের প্রকাশ কাল থেকে। এর মধ্যে কটা ধৰ্ম লোপ পেয়ে গেছে ? আর সত্য-ধর্ম্মই বা কত প্রসার পেয়েছে ? পৃথিবীতে কজন এই সত্য-ধর্ম্ম  সন্মন্ধে জানে ? কেন প্রচার হচ্ছে না ? নিশ্চয় কোনো দুর্বলতা আছে। এতটা আবেগ তাড়িত হয়ে কথা না বললে, তিনি  অসত্য ভাষণের জন্য দায়ী হতেন না। ভবিষ্যতের গর্ভেই তো বর্তমান আছে। একদিন তো ভবিষ্যৎ বর্তমান রূপে প্রকটিত হবে। জ্ঞানীরা ভবিষ্যৎ দেখতে পান। শুধু স্বপ্ন দেখাবার জন্য ভবিষ্যৎকে বিকৃত করা কি উচিত ? 

বিবেক
মহাত্মা গুরুনাথ প্রথমে অন্য্ ধর্ম্ম থেকে সত্য-ধর্ম্মের পার্থক্যটা বুঝিয়ে গেছেন। সেটা তো সত্য। আর নিজের প্রচারিত ধর্ম্ম-মত  শ্রেষ্ট, এটা  যদি কেউ মনে প্রাণে বিশ্বাস না করে, তবে তার সেই ধর্ম্ম-মত প্রচার করাই  উচিত নয়। উনি যেটা পেয়েছেন, যেটা আমাদেরকে দিয়েছেন, সেটা শুধু অলৌকিক নয়, একটা পরিশীলিত ধর্ম্ম-মত, যেটা সত্য এবং কল্যাণকর। ঈশ্বর পাবার জন্য সাধনা নয়, ঈশ্বরের গুনের সাধনাই মানুষের উন্নতির পথ।  ভালো থাকার পথ।  
আর কে না নিজের ধর্ম্মমত প্রচারে একটু বেশি বেশি বলেছেন ?  শ্রীকৃষ্ণ তো নিজেকেই  ভগবান বলে প্রচার করেছেন।  আচার্য শঙ্কর নিজেকে ভগবান বলে আক্ষা  দিয়েছেন। এই কয়দিন আগে রজনীশ হয়েছেন ভগবান ওশো।  মহাত্মা গুরুনাথ তো তবু নিজেকেই ভগবান বলেন নি। তিনি কেবল নিজের ধৰ্ম-মতকে শ্রেষ্ট বলেছেন। 
আর ধৰ্ম লোপ পাবার কথা বলছো ? ব্রাহ্ম-ধর্ম্ম আছে ? থিওজফিস্ট আছে ? বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার তো দূরের কথা নিজেরেই মারামারি করে মরছে। খ্রিস্টানরা ধর্ম্ম দিয়ে নয়, টাকা দিয়ে লোক জোগাড় করছে। মুসলমানরা ভয় দেখিয়ে লোক জোগাড় করছে। মারামারিতে মুসলমানরাই এখন এক নম্বরে আছে। এরা  তো মানবতার ধর্ম্মও ভুলে গেছে।  আর সত্যি কথা বলতে কি, এখন তো অধর্ম্মের রমরমা। সব-ধৰ্মই  তো লোপ পেয়ে গেছে। তাহলে ? গুরুদেব যে বলেছিলেন,  সব তথাকথিত ধর্ম্মের লোপ পাবে - সেটাই তো হয়েছে। এবার কি বিশ্বাস হলো ?
ধর্মের প্রচার হয় উপযুক্ত শিষ্যের দ্বারা। রামকৃষ্ণকে কেউ চিনতো না, যদি বিবেকানন্দ না থাকতো। নিবারণ বাবুর অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল। তৎ সত্বেও ধর্মটা যে একশো পঁচিশ বছর  ধরে একটু একটু করে বাড়ছে, সেটা এই ধর্ম্মের গুনগত মানের জন্য। আরো বাড়বে দেখে নিও।

সমাপ্ত