Wednesday 3 April 2019

হরিনাম মহামন্ত্র ও তার তাৎপর্য

হরিনাম মহামন্ত্র ও তার তাৎপর্য 
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। 
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে। ।

এই মহামন্ত্র শোনেনি এমন কেউ আজ আর পৃথিবীটিতে আছে কিনা সন্দেহ। ঘরে ঘরে এই নাম উচ্চস্বরে ধ্বনিত হচ্ছে। খোল করতাল সহযোগে বিভিন্ন সুরে, গীত হচ্ছে এই মহামন্ত্র। এই মন্ত্রের উদ্গাতা মহাপ্রভু শ্রীশ্রী চৈতন্য।  কি আছে এই মন্ত্রে ? আমরা শ্রী শ্রী চরণ দাস বাবাজির - কাছ থেকে শুনবো। 

ষোলো সখা ষোলো সখী বত্রিশ অক্ষর /হরিনাম তত্ত্ব ধর্ম্ম অতি গুরতর।
মাধুর্য্য মহিমা তত্ত্ব যে জন জানয় / রাধাকৃষ্ণ নিত্যধামে গমন করয়। 
হরে, কৃষ্ণ, রাম, এই মন্ত্র ষড়ক্ষর /এই তিন নাম তন্ত্রে কৈলা হর। 
তিন নামে ষোলো নাম বত্রিশ অক্ষর / বৃত্তি করি কৈলা গৌড় জগৎ গোচর। 
নামরূপে প্রেম দিল আপনি যাচিয়া / নাম মত্ত ভক্ত চিত্ত বেড়ায় নাচিয়া। 
করুনার কল্পতরু এই হরিনাম  / কামনায় হবে মুক্তি প্রেম ব্রজধাম। 
সংক্ষেপে কহিনু  এই হরিনাম তত্ত্ব / জীবের দুর্লভ এই প্রেমের মহত্ত্ব।।

হরে কৃষ্ণ হরে রাম খুবই সহজ সরল মন্ত্র। শুনতে খুবই সাধারণ কিন্তু অসীম ক্ষমতাশালী আধ্যাত্মিক মন্ত্র এটি। হরে কথাটার অর্থ ভগবানের ভক্তিমূলক শক্তি। কৃষ্ণ এবং রাম  হলেন, দেবত্বের ব্যক্তিত্ত্ব।  ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উপাসকেরা বিশ্বাস করেন যে এই মংত্র উচ্চারণ করে আমরা আমাদের কৃষ্ণচেতনা অর্থাৎ ভগবানের প্রতি ভালোবাসাকে জাগ্রত করতে পারি।  এই মন্ত্রের ধীর পুনরাবৃত্তি করলে আধাত্মিক শক্তি পাওয়া যায়।  ঘরে ঘরে এই মন্ত্রের অষ্টপ্রহর কীর্তন, মানুষকে ভক্তিরসে আপ্লুত করে।

এই মন্ত্রে চারবার "কৃষ্ণ" কথাটি আছে।  শ্রী শ্রী চরণ দাস  বাবাজি বলছেন, এই চার কৃষ্ণের অর্থ হচ্ছে - ১. পরমব্রহ্ম শ্রীগোবিন্দ  ২. শ্রী বাসুদেব ৩. শ্রী জগন্নাথ, ৪. শ্রী কৃষ্ণ-বলভদ্র।
চারবার "রাম" কথাটি আছে। এর অর্থ হচ্ছে ১. শ্রীরাধিকা, ২. শ্রীলক্ষ্মী,  ৩. শ্রী সরস্বতী, ৪. শ্রীমতি সুভদ্রা।
আটবার "হরে" এই শব্দটি আছে।  এর অর্থ হচ্ছে।  ১. চন্দ্রাবলী, ২. প্রেমময়ী শ্রীরাধা, ৩. সুভাষিণী, ৪. সিংহাসন,  ৫. সুদর্শন, ৬. শেষদেব, ৭. সাবিত্রী, ৮. রেবতী।

নামের ফল :
হরে : হ -কারে হিঙ্গুলবর্ন হয় সর্ব্ব শ্রেষ্ঠ /  জ্ঞানে বা অজ্ঞানে যত পাপ করে নষ্ট।  রে - করতে রক্তবর্ণ গোপাল নির্নয় / গুর্বাঙ্গনা উপগত পাপ হয় ক্ষয়।
কৃষ্ণ : কৃ-কার কজ্জ্বল বর্ণ  উপপাতক নাশে / গতি, শক্তি, রতি, প্রেম, ইহাতেই আসে। ষ্ণ-কার লোহিত বর্ণ নরক হইতে / মানবের উদ্ধার করে পাপ জন্মার্জিতে।
রাম  :  রা-কার বর্ণ হয় চন্দ্র সূর্য্য জ্যোতি / অজ্ঞান তমনাশক বর শক্তি ধৃতি। ম - কার স্বরূপ জ্যোতি  কলঙ্ক রোহিত / নিত্য স্থায়ী হয় মিথ্যা পাপ বিনাশিত।

এরূপ প্রতীক বর্ণে আছে শক্তিচয়/এইগুলি যাবে সম্মিলিত হয়।
ধরয়ে অসীম শক্তি মন্ত্র নাম তার / ষোলো নাম বত্রিশ অক্ষর জগতে প্রচার।
পাপ তাপ ভীত জীব শুনে উপদেশ / হরে কৃষ্ণ রাম নাম দূর করো ক্লেশ।
কলিকালে তরিবারে হরিনাম ভজ / গুরুপাশে লও শিক্ষা লয়ে পদব্রজ।
ভক্তিতে ভজনে পূর্ন হবে প্রেমভক্তি / ভক্তিবলে অবশ্য়ই হইবেক মুক্তি।             

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। 
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে। ।

  




No comments:

Post a Comment