Monday 20 March 2023

বৃহৎ-আরণ্যক উপনিষদ - ভগবান কেন নারী পুরুষ সৃষ্টি করলেন ?

বৃহৎ-আরণ্যক উপনিষদ -  ১

ভগবান কেন স্বামী-স্ত্রী  সৃষ্টি করলেন ?

বহুদিন  আগের কথা, পশ্চিমের একটা আশ্রমে গিয়ে এক সাংবাদিক দেখলেন, সেখানে নারী গিজগিজ করছে।  পুরুষের সংখ্যা নিতান্ত নগন্য। তো সাংবাদিক মহারাজকে জিজ্ঞেস করলো , আপনার আশ্রমে এতো মহিলাদের আগমন কেন ? মহারাজ বললেন, আমি একজন পুরুষ, তাই নারী আমার আকর্ষনে আসে।  বিশ্বাস করো, এরা  সবাই আমাকেই  দেখতে আসে। এরা  সবাই একজন পুরুষের ভালোবাসা চায়। এরা  বাইরে, এমনকি নিজের ঘরে পুরুষের ভালোবাসা পায় না, তাই এরা  সবাই আমার কাছে ছুটে  আসে। আসলে কি জান  নারী আর পুরুষের মধ্যে কোনো ভেদ নেই। এই ভেদবুদ্ধি আমরাই মানুষের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছি। 

আমরা ছোটবেলা থেকে কাউকে মেয়ে ভাবতে শিখিয়েছি , কাউকে ছেলে ভাবতে শিখিয়েছি। নারী পুরুষের মধ্যে কাজের পার্থক্য করে দিয়েছি, পোশাকের পার্থক্য করে দিয়েছি। একটা বাচ্চা মেয়ের কাছে, গাছে ওঠা মানা। কিন্তু ছেলের মানা  নেই।  একটা ছেলে যখন কান্না  করে, আমরা বলি, মেয়েদের মতো শুধু কান্নাকাটি করছো কেন ? অর্থাৎ মেয়েরা কাঁদতে পারে, ছেলেদের কান্নাকাটি  শোভা পায়  না। আমরা ছেলেকে সাহসী হতে বলেছি, মেয়েদের সাহস দেখাতে নিষেধ করেছি। এরা  দুজনেই একই মাতা-পিতার সন্তান। এদের দুজনের মধ্যেই সেই একই মাতা-পিতার রক্ত বইছে।  একজন হয়তো মায়ের মতো চেহারা পেয়েছে, একজন হয়তো পিতার মতো চেহারা পেয়েছে।  কিন্তু দুজনের মধ্যে আছে সেই একই মাতা-পিতার রজঃ -বীর্যঃ। দেখো আমি একজন পুরুষ, তাই আমি মেয়েদেরকে ভালোবাসি। এই ভালোবাসা আমার সহজাত। সৃষ্টির প্রথমেই প্রজাপতির মধ্যে মিলনের ইচ্ছে জেগেছিলো। তাই তিনি নিজেকে পুরুষ ও নারীতে ভাগ করেছিলেন।   তাই বলে ভেবোনা আমি তোমাদের মতো পুরুষকে ভালোবাসি না।  আমি সমস্ত পুরুষকেও  ভালোবাসি তার কারন হচ্ছে, এই পুরুষের মধ্যেই  আছে অর্দ্ধেক নারী। আবার নারীর মধ্যে আছে অর্দ্ধেক পুরুষ। তাই এদের কাউকেই আমি পূর্নপুরুষ বা পূর্ননারী বলে ভালোবাসি না। আমি সবাইকে অর্দ্ধেক নারী ভেবে ভালোবাসি - কেননা আমার ধর্ম্ম হচ্ছে ভালোবাসা।  আর আমি ? আমি পূর্নপুরুষ।  মানুষ ভালোবাসার কাঙাল, আর পূর্ন  ভালোবাসা একজন পূর্ন  পুরুষই দিতে পারে, তাই এরা  সবাই আমার কাছে ছুটে  আসে। এই পূর্ন  পুরুষ নিজেকে ভগবান বলে পরিচয় দিতেন। আজ আর তিনি নেই, কিন্তু তাঁর কথাগুলো রয়ে গেছে। 

মহারাজের আশ্রম থেকে ফিরে এসে সাংবাদিক ভাবছিলো, ভগবান কেন মানুষকে এমনকি সমস্ত জীব জন্তুকে নারী-পুরুষে ভাগ করেছেন ? আর নারী-পুরুষের মিলন ক্রিয়াই বা কে শেখালেন ? ভগবান নিজে নারী না পুরুষ না উভয়লিঙ্গ তা জানা যায় না । শাস্ত্রমতে তিনি পুরুষ। প্রত্যেকের শরীর  হচ্ছে নারী আর ভিতরটা হচ্ছে পুরুষ।  শরীরকে বলা হয় প্রকৃতি আর আত্মা হচ্ছেন পুরুষ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে একটা সময় তো ছিল, যখন নারী পুরুষ বলে কিছু ছিল না। আমাদের শরীরের মৃত্যুর পরেও, হয়তো আমাদের এই লিঙ্গভেদ থাকবে না। এমন হতে পারে, পূর্বজীবনে আমি নারী ছিলাম, এই জন্মে আমি পুরুষ হয়েছি। আবার উল্টোটাও হতে পারে। প্রশ্নটা হচ্ছে ভগবান কেন নারী-পুরুষের ভেদ করলেন, বা নারীপুরুষ সৃষ্টি করলেন। 

এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে খুঁজতে নজরে পড়লো বৃহদারণ্যক। সেখানে বলা হচ্ছে পুরুষের আকাংখ্যা পূরণের জন্য নারীর (প্রকৃতির) সৃষ্টি করা হয়েছে। 

উপনিষদ বলা হচ্ছে সমস্ত  সূক্ষ্মবস্তুর  সমষ্টিতে যিনি অভিমানী তাকে  বলা হয় হিরণ্যগর্ভ , আর স্থুলবস্তুর   সমষ্টিতে যিনি  অভিমানী তিনি হচ্ছেন বিরাট পুরুষ। হিরণ্য কথাটির অর্থ সুবর্ন, আর হিরণ্যগর্ভ বলতে বোঝায়  ব্রহ্মাকে। 

 বৃহদারণ্যক-এর প্রথম অধ্যায়ের চতুর্থ ব্রাহ্মণ-এ বলা হচ্ছে : শরীর  ইত্যাদি সৃষ্টি পূর্ব্বে, বিভিন্ন দেহসমষ্টি রূপ এই জগৎ হস্ত  পদাদি যুক্ত পুরুষাকার প্রথম জাত  বিরাট পুরুষ রূপেই ছিলো। অর্থাৎ প্রথক পৃথক আত্মাভিমানী প্রাণিবর্গ তখনও সৃষ্টি হয় নি। সেই বিরাট পুরুষ  ভাবতে লাগলেন, এবং উচ্চস্বরে বলতে লাগলেন, আমি কে ?- আমার স্বরূপ কি ?  কিন্তু, দেহ-ইন্দ্রিয় সমষ্টিরূপ আপনা থেকে তিনি ভিন্ন কিছু দেখতে পেলেন না। অর্থাৎ নিজেকে ছাড়া কাউকেই দেখতে পেলেন না। তখন তিনি "অহম -অস্মি-সঃ" - "আমি হই  সেই " - এই  কথা প্রথমে উচ্চারণ করলেন। যেহেতু তিনি পূর্ব সংস্কার অনুযায়ী নিজেকে "আমি" বলে  নির্দেশ করলেন, সেইজন্য তিনি "আমি" এই নামধারী হলেন। 

আর সেই থেকেই  আমরা সবাই "আমি" হয়ে গেলাম। আমরা সবাই আমি।  এর থেকে মনে হয়, বা অনুমান করা যায়, "আমি" এই কথাটা আমাদের সবার কারণস্বরূপ সেই বিরাট পুরুষের নাম। এর পরে যা কিছু নাম-রূপের সৃষ্টি হয়েছে, তা সবই আমি-এর পরে এসেছে।  তো আমি বলতে সেই প্রথম পুরুষকে বা ব্রহ্মাকে  বোঝানো হয়। 

উপনিষদ বলা হচ্ছে সমস্ত  সূক্ষ্মবস্তু  সমষ্টিতে যিনি অভিমানী তাকে  বলা হয় হিরণ্যগর্ভ , আর স্থুলবস্তু   সমষ্টিতে যিনি  অভিমানী তিনি হচ্ছেন বিরাট পুরুষ।  এই উভয়কেই বলা হয় প্রজাপতি। তো বলা হচ্ছে, এই প্রজাপতি ভয় পেলেন, তিনি আর কাউকে দেখতে পাচ্ছেন না। আজো  লোকে একা একা  থাকতে ভয় পায়।  তো সেই বিরাট পুরুষ আবার চিন্তা করতে লাগলেন,  আমি  হতে ভিন্ন কেউ নেই, তখন কাকে আমি ভয় পাচ্ছি ? এই ভাবনার ফলেই  তার ভয় দূর হলো। 

উপনিষদের এই কতগুলো থেকে আমরা দুটো জিনিস দেখতে পাই, এক মানুষের স্বভাব হচ্ছে নিজেকে জানা।  আমি কে ? দ্বিতীয়ত হচ্ছে ভয়। যা সে জন্ম থেকেই মনের মধ্যে বহন করে নিয়ে চলেছে। এইজন্য বলা হয়, হিরণ্য গর্ভের  মধ্যে ছিল ভয়।  আর আজও  জীবকুলের মধ্যে সেই ভয়। এর থেকে অনুমান করা যায়, হিরণ্যগর্ভ  সংসারাতীত নয়। হিরণ্যগর্ভ আমাদেরই মতো সংসারী ছিলেন। তা না হলে তার মধ্যে ভয়ের উদ্রেগ হতো না। 

আবার এই  ভয়ের নিস্পত্তি কি করে হবে ? এই প্রশ্নের উত্তর আছে এই উপনিষদের  মধ্যেই।  জ্ঞানের সাহায্যে অজ্ঞানের নাশ হয়. জ্ঞানের উদয়ে ভ্রমজনিত ভয়াদির নাশ হয়, যেমন বিরাট পুরুষের হয়েছিল। বিরাট পুরুষ যখন দেখলেন, তিনি ছাড়া আর কেউ নেই, তাঁর  মধ্যে যখন এই জ্ঞানের উদয় হলো, তখন তার মধ্যে থেকে ভয় দূরীভূত হলো। সুতরাং এই বিরাট পুরুষ নিশ্চই আমাদের মতো সংসারী পুরুষ ছিলেন। আরো একটা এর থেকে বোঝা যায়,  অদ্বৈত জ্ঞান লাভ  হওয়ায় ভয় দূর হয়। দ্বৈত জ্ঞান আসলে আশঙ্কা তৈরী করে, দ্বৈত জ্ঞান অনুমান করা কিছু নয়। তথাপি দ্বৈত জ্ঞানের কারণেই ভয়ের জন্ম হয়।   আর অদ্বৈতজ্ঞান হলে  ভয়ের নিস্পত্তি হয়।   

এখন কথা হচ্ছে, হিরণ্যগর্ভ সংসার-অন্তর্গত হলেও, আমাদের সাথে তাঁর  পার্থক্য আছে।  আমারা হিরণ্যগর্ভের  ন্যায় স্বরূপত ব্রহ্ম হলেও আমাদের উপাধিসকল অত্যন্ত মলিন।  কিন্তু হিরণ্যগর্ভের উপাধি  অতি বিশুদ্ধ।  সুতরাং  তিনি সাধারণ জীবের উপাস্য। ব্রহ্ম সাধারণ জীবের উপাস্য। 

তো ব্রহ্মার মধ্যে আনন্দ নেই। তিনি নিঃসঙ্গ। আর নিঃসঙ্গ অবস্থায় কেই বা সুখী হয়, তাই তিনি সঙ্গীর অভিলাষ করলেন। নিজের মধ্যে এই সঙ্কল্প হেতু স্বামী-স্ত্রী আলিঙ্গিত হলে  যে পরিমান হয়, তিনি সেই পরিমান হলেন। এবং নিজেকে দ্বিধাবিভক্ত করলেন। এখন কথা হচ্ছে, ব্রহ্মা যখন নিজেকে দ্বিধা বিভক্ত করলেন, তখন কি ব্রহ্মার নাশ  হলো ? এখন শুধুই নারী-পুরুষ হলেন ? না ব্যাপারটা এমন নয়। 

দেখুন দুধ যখন দই-এ পরিণত হয়, তখন দুধের স্বরূপের বিকৃতি ঘটে। কিন্তু দুধ উত্তাপের ফলে দ্বিধা বিভক্ত হয়, দুধের উপরে ভাসে সর, নিচে দুধ যেমন ছিলো তেমনই  থাকে। তেমনি ব্রহ্মা নিজে যেমন ছিলেন, তেমনই  থেকে গেলেন, কিন্তু দেহকে দুইভাগে ভাগ করলেন।  এর থেকেই পতি  ও পত্নী জাত  হলো। ব্রহ্মার মধ্যে আকাশরূপ পত্নীর জন্ম হলো। আর এই আকাশ পত্নীর দ্বারা তিনি পূর্ন  হলেন। তিনি তাতেই উপগত হলেন। এই উপগতির  কারনে দেবতা, অসুর, মনুষ্যগন  জাত  হলেন। এই পত্নীর নাম শতরূপা। তিনি প্রশ্ন তুললেন, আমাকে আপনা থেকে উৎপন্ন করে, আপনি আমাতেই  উপগত হচ্ছেন ? তো শত শত রূপ ধরলেন, একজন  গাভী, একজন বৃষ হয়ে উপগত হলেন, কখনো ঘোটকী ঘটক  হলেন, কখনো গর্দভ গর্দভী হলেন, কখনো ছাগ-ছাগী হলেন। কখনো নর-নারী হলেন। আর উপজাতের ফলে একই শরীরে নারী-পুরুষের  সৃষ্টি হতে শুরু হলো। 

এই হচ্ছে উপনিষদ উক্ত পুরুষ-স্ত্রী, নর-নারীর জন্ম কাহিনী।

ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।  হরি  ওম। 

এই দেহ থেকে বিমুক্ত হয়ে তুমি কোথায় যাবে ? - বৃহদারণ্যক উপনিষদ (৪/২) চতুর্থ অধ্যায় দ্বিতীয় ব্রাহ্মণ 

সাধারনত শিষ্য গুরুদেবকে প্রশ্ন করে, এবং গুরুদেব সেই প্রশ্নের জবাব দেন। কিন্তু এখানে অর্থাৎ বৃহদারণ্যক উপনিষদে চতুর্থ অধ্যায়ের দ্বিতীয় ব্রাহ্মণে প্রশ্ন করছেন ঋষি যাজ্ঞবল্ক, উত্তর দিচ্ছেন ঋষি যাজ্ঞবল্ক, আর শুনছেন বৈদেহ জনক রাজা। 

যাজ্ঞবল্ক বলছেন, হে সম্রাট,  তুমি দীর্ঘ পথ অতিক্রমন করে আমার সমীপে উপস্থিত হয়েছো, তুমি সেই রহস্যের সন্ধানে একাগ্র চিত্ত হয়েছো, তুমি সম্রাট হয়েছো, তুমি ধনী হয়েছো, আবার পূজা অর্চনা করেছো, তুমি বেদাদি শাস্ত্র গ্রন্থ  অধ্যয়ন করেছো,  তুমি উপনিষদ পড়েছো, কিন্তু তুমি কি জানো এই দেহ থেকে মুক্ত হয়ে তুমি কোথায় যাবে ? 

রাজা জনক বললেন, হে ভগবান আমি তা জানি না। 

যাজ্ঞবল্ক বললেন, হে জনক তাহলে শোনো এই দেহ থেকে বিমুক্ত হয়ে তুমি কোথায় যাবে। 


যাগ্যবল্ক্য বলছেন, যিনি ডান  চোখে বিশেষভাবে অধিষ্ঠিত পুরুষ এঁর নাম ইন্ধ, যিনি দীপ্তিময়। এই ইন্ধ নামধারী পুরুষকে জ্ঞানীগণ  পরোক্ষ ভাবে বলে থাকেন, ইন্দ্র। 

এখন ডানচোখে যে পুরুষ অধিষ্টিত তাকে বলা হচ্ছে অক্ষিপুরুষ। অর্থাৎ এই যে সৃষ্টি যা আমাদের চোখের সামনে ভাসছে, তার মুলে আছে আদিত্যপুরুষ অর্থাৎ সূর্যদেব। এই সূর্য্যের প্রভাবেই আমাদের সামনে এই জগৎ প্রকাশিত হয়েছে, এবং হচ্ছে। এই সূর্য্যই প্রাথমিক ও প্রধান কারন। বলা হচ্ছে, এই সূর্য শক্তি আমাদের ডান চোখে বিরাজ করছে। আসলে ইনি  হচ্ছেন বৈশ্বানর আত্মা। যা জীবকূলকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আসলে সমস্ত জীবকুলের জঠরে প্রতিনিয়ত বহ্নিতেজঃ শক্তি প্রজ্বলিত হচ্ছে। আর এই অগ্নি প্রজ্বলনের কারন হচ্ছে অন্নরূপ ইন্ধন। তাই যাজ্ঞবল্ক্য বলছেন এই পুরুষের নাম ইন্ধ। অন্নভিন্ন কেউ বাঁচতে পারে না। হে সম্রাট আপনি উপাসনার দ্বারা এরই সাথে অভিন্নতা লাভ করেছেন। অর্থাৎ খাদ্য থেকে উৎপন্ন শরীরের সাথে আপনি একাত্মীভূত হয়ে গেছেন। খাদ্য ও খাদকের মধ্যে কোনো পার্থক্য আপনি ধরতে পারছেন না। অর্থাৎ অন্ন দ্বারা নির্মিত এই শরীর সাম্রাট জনক হয়েছেন। আপনি যখন একটা আপেল খাচ্ছেন, তখন সেই আপেল আর আপেল থাকছে না, সেটি তখন সম্রাট হয়ে যাচ্ছে। তো সম্রাট ও আপেল বা অন্ন অভিন্ন। 

আবার বাম চোখে যে পুরুষাকার ইনি  ইন্দ্রের পত্নী। হৃদয় মধ্যে যে আকাশ বা শূন্যস্থান এটি হচ্ছে ইন্দ্র ও ইন্দ্রানীর মিলন স্থল। রক্তপিণ্ডাকারে পরিণত সূক্ষ্ম অন্নরস ইন্দ্র-ইন্দ্রানীর দেহে অবস্থিতির কারন। 


তোমার এই  ডান চোখে (সূর্য) যিনি বিশেষভাবে প্রতিষ্ঠিত যাঁর কথা তোমাকে আমি আগেই বলেছি, এঁর নাম ইন্ধ, যিনি দীপ্তিময়। এই ইন্ধ নামধারী তিনি সেই পুরুষকে পরোক্ষভাবে দর্শন করে থাকেন। আমাদের সমস্ত ইন্দ্রিয়াদি দেবতাগণ পরম পুরুষকে পরোক্ষ ভাবেই দর্শন করতে ভালোবাসেন। ইন্দ্রিয়াদি দেবতা সেই পরম পুরুষকে প্রতক্ষ্যভাবে দেখতে পায় না। 

আবার বাম  চক্ষে যে পুরুষাকার দৃষ্ট হয়, যিনি এনার পত্নী বিরাট। হৃদয়ের মধ্যে যে আকাশ তা এই দুজনের মিলনভূমি। হৃদয়ের মধ্যে যে রক্তপিন্ড তা তাদের অন্ন। হৃদয়ের মধ্যে যে জালাকার  অংশ তা তাদের আবরণ। অতি সূক্ষ্ম যে নাড়ী সকল হৃদয় হতে উর্দ্ধদিকে উত্থিত হয়েছে, তা এদের সঞ্চরণ পথ। এই দেহস্থ হিতানামক নাড়ী সকল হৃৎপিণ্ডে বা হৃদয়স্থলে গ্রথিত হয়ে আছে। অন্নরস যখন শরীরের মধ্যে সঞ্চারিত হতে শুরু করে, তখন এই অন্নরসকে  অবলম্বন করেই তাঁরা গমনাগমন  করে থাকে। এইজন্য এঁকে সূক্ষ্ম-অন্নভোজী বলে মনে হয়। 




















No comments:

Post a Comment