জন্ম মৃত্যু নেই ? (মাণ্ডুক্য উপনিষদ)
অদ্বৈতবাদীগণ, যাদের আমরা সর্বোচ্চ স্তরের সাধক বলে স্বীকার করে নিয়েছি, তাঁরা বলছেন, জন্ম-মৃত্যু বলে কিছু নেই। মুক্তানন্দ বলছেন, জন্ম-মৃত্যু আসলে মায়ার ভোজবাজির খেলা।
মাণ্ডুক্য উপনিষদদে শ্লোক নং ৪/৪৩ এ বলছেন :
অজাতেঃ ত্রসতাম - কোনো কিছুর জন্ম হয় না একথা শুনলেই একদল মানুষ, আঁতকে ওঠেন, ভয়পান, কারন তারা-তো সামনেই দেখছেন, এই জন্ম মৃত্যুর বিচিত্র খেলা। আমরা সবাই আমাদের চোখের সামনে দেখছি, জন্ম-মৃত্যুর খেলা। একে অস্বীকার করি কি করে ?
শ্রী ভগবান এই শ্রীমদ্ভগবৎ গীতাতে বলছেন, "বহুনি মে ব্যতীতানি জন্মানি তব চ অর্জ্জুন, তান্যহং বেদ সর্ব্বাণি ন ত্বং বেত্থু পরন্তপ । " - হে অর্জ্জুন আমার ও তোমার বহু জন্ম অতীত হয়েছে, আমি সে সবই জানি। হে পরন্তপ, তুমি তা জানো না।
তাহলে স্বয়ং ভগবান স্বীকার করছেন, তিনি নিজেই বারবার জন্ম গ্রহনা করেছেন। তো এই সত্যকে অস্বীকার করি কি করে ?
এর উত্তরে অদ্বৈতবাদীগণ আবার সেই গীতার শ্লোক টেনে বলছেন, গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজে একথাও বলছেন যে,
ন জায়তে ম্রীয়তে বা কদাচিৎ নায়ং ভূত্বা ভাবিত বা ন ভূয়ঃ
অজো নিত্যঃ শাশ্বতোহয়ং পুরানো ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে। (২/২০)
আত্মা কখনো জন্ম গ্রহণ করেন না, মরেনও না ; জন্মেছেন বা ভবিষ্যতে জন্মাবেন,এমন নয়। তিনি অজ নিত্য, শাশ্বত পুরাণঃ। শরীর বিনষ্ট হলেও এর বিনাশ নেই।
দ্বৈতবাদীগণ বলছেন, এখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যা বলছেন, তা সেই আত্মার কথা। চৈতন্যের কথা। চৈতন্যের কখনো জন্ম-মৃত্যু নেই। কিন্তু আমাদের অর্থাৎ এই জীবাত্মার দেহ ধারণ আছে, একথা যেমন ধ্রুব সত্য, আমাদের প্রত্যক্ষ অনুভূতি লব্ধ সত্য, তেমনি এই দেহের একদিন নাশ হয়, একথা অস্বীকার করি কি করে ? শুধু দেহ কেন, এই যে জড় বস্তুসমূহ এরও জন্মমৃত্যু আছে। উৎপন্ন আছে, ক্ষয় আছে।
অদ্বৈতবাদী বলছেন : জন্ম-মৃত্যু এমনকি এই যে দেহাদি ও দৃশ্যমান জগৎ এসব মিথ্যা মনের ভ্রম মাত্র। এসব অজ্ঞানের কারনে হয়ে থাকে। যারা আজকে দ্বৈতবাদী বলে জগৎকে সত্য বলে মনে করছেন, তারাইও একদিন সাধনার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অদ্বৈতবাদীদের কাছেই আসবেন। তখন জগৎ মিথ্যা বলে স্বীকার করবেন। কেননা সাধনক্রিয়াই সত্যকে অনুভব করায়, বৃথা যুক্তি জালে একে বোঝার চেষ্টা না করা ভালো।
দ্বৈতবাদী : তো যারা নিজেদেরকে কেবলমাত্র চৈতন্য মনে করেন, তাদের কাছে, জন্ম-মৃত্যু বলে কিছু নেই। কিন্তু এই দেহই চৈতন্যকে প্রকাশ করায়, উপলব্ধি করায়। এই দেহভিন্ন চৈতন্যের কোনো ব্যবহারিক দিক নেই। তাহলে দেহের মৃত্যু মানে তো চৈতন্যেরই বিলোপ সাধন।
অদ্বৈতবাদী : আজ যারা জগৎকে সত্য বলে মনে করছেন, এসব তাদের প্রতক্ষ্য অভিজ্ঞতা - ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান। তো যতক্ষন তিনি ইন্দ্রিয়ের অতীত জ্ঞানের সন্ধান না পাচ্ছেন, ততক্ষন তাদের কাছে এই জ্ঞান সত্য। একে আপনি ভ্রমজ্ঞান বলতে পারেন। এতে দোষের কিছু নেই। যতক্ষন আপনি জাদুকরের খেলা দেখছেন, প্রেক্ষ্যাগৃহে আছেন, ততক্ষন জাদুকরের দেখানো হাতিকে সত্য বলেই মনে করছেন। যতক্ষন আপনি আলো -অন্ধকারের মধ্যে দড়িকে সাপ বলে মনে করছেন, ততক্ষন আপনার কাছে সাপ থাকবে। যতক্ষন আপনি স্বপ্ন দেখছেন, ততক্ষন আপনার কাছে স্বপ্নে দেখা দৃশ্য, এমনকি স্বপ্নের আমিকে ও সত্য বলেই মনে করছেন। এতেও দোষের কিছু নেই। কিন্তু সত্য হচ্ছে, জাদুগৃহে জাদুকরের সামনে বসে, যা দেখছেন তা যেমন মিথ্যে, স্বপ্নে আপনি যা দেখছেন, তাও মিথ্যে। আজ যাকে আপনি সত্য বলে মনে করছেন, তা মিথ্যে বলে মনে হবে, যখন আপনি জাদুকরের জাদুঘর থেকে বেরিয়ে আসবেন। যখন আপনার সামনে আলো ভেসে উঠবে, তখন আলোর অভাবে ভ্রম বশতঃ দড়িকে যে সাপ ভেবেছিলেন, তা আবার দড়িতেই ফিরে আসবে। যখন আপনার ঘুম ভেঙে যাবে, আর স্বপ্ন থেকে জেগে উঠবেন, তখন স্বপ্ন যে কতবড় মিথ্যে তা আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন।
তর্ক দিয়ে এই মীমাংসা হবে না। এর জন্য দরকার সাধনক্রিয়া, যা আপনাকে একদিন এই সত্যের মুখোমুখি করে দেবে। তখন আপনার চোখের সামনে থেকে এই জগৎ উবে যাবে, আর সত্য উদ্ভাসিত হবে। ব্রহ্মজ্ঞানের আলোর মধ্যে আপনি বিচরণ করবেন।
দ্বৈতবাদী : দেখুন বাহ্য বস্তুর অস্তিত্ত্ব আছে। এই বস্তু যেমন আমার চোখের সামনে আছে, তেমনি আপনার চোখের সামনেও আছে। আপনার এই শরীর যেমন আমর চোখের সামনে আছে, তেমনি আপনার শরীর আমার চোখের সামনে প্রতক্ষ্য করছি। আর একে আপনি মিথ্যে বলছেন ? সবচেয়ে বড়ো কথা হচ্ছে, আমরা যে নানান রকম বস্তু দেখছি, এর একটা ব্যবহারিক দিক আছে। আপনি যাকে সত্য বলছেন, তার কোনো ব্যবহারিরক দিক নেই। এমনকি এই সত্য আপনি অন্যের উপল্বদ্ধিতে আনতে পারেন না। দেখুন, স্বপ্ন সত্য নয়, কারন এই সত্য কাউকে দেখানো যায় না। এটি কেবল ব্যক্তিগত অনুভূতি মাত্র, যা আমাদের স্বপ্নে এসে থাকে। কিন্তু জগৎ সত্য কারন একে আপনিও অনুভব করতে পারছেন। তো জগৎকে অস্বীকার করা মানে সত্যকে অস্বীকার করা।
অদ্বৈতবাদী : দেখো জাদুকর যা কিছু দেখাচ্ছে, তা জাদুকরের সৃষ্টি - এসব সত্য নয়। তেমনি তুমি যাকে জগৎ বলছো, তা মায়ার সৃষ্টি। দেখো, তুমি এই দেহ নও, তুমি চৈতন্য। তুমি শুদ্ধ চৈতন্য। তুমি শুদ্ধ চৈতন্য হয়েও মনে হচ্ছে যেন তোমার জন্ম-মৃত্যু হচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে চৈতন্য অনাদি, নিষ্ক্রিয়, অখন্ড অদ্বয়। সত্য হচ্ছে এই চৈতন্য। এই চৈতন্যকে বর্ননা করা যায় না। তার সম্পর্কে কিছু বলতে গেলে বলতে হয় - তিনি যা তিনি তাই।
এই চৈতন্যের কখনো জন্ম হয় না, মৃত্যুও হয় না। ধরো একটা শিশুর জন্ম হলো। তার নাম রাখা হলো কৃষ্ণ আসলে কৃষ্ণের জন্ম হয়নি, শুধু চৈতন্য এখানে শিশুদেহ রূপে প্রকাশিত হয়েছে। আর লোকে মনে করছে কৃষ্ণের জন্ম হয়েছে। আসলে এ সেই জাদুকরের মতো, কেবল মায়ার খেলা। কিছুদিন পরে এই শিশু কিশোর হলো, অর্থাৎ শিশু-কৃষ্ণের অন্তর্দ্ধান হলো, আবার কৃষ্ণ যুবক হলো, কিশোর-কৃষ্ণের অন্তর্দ্ধান হলো। যুবক একদিন বৃদ্ধ হলো, তো যুবক-কৃষ্ণ অন্তর্হিত হলো। কিন্তু আমরা দেখছি সেই একই কৃষ্ণকে। আসলে কে এইভাবে শিশু থেকে বৃদ্ধ হলো ? শিশু থেকে বৃদ্ধ হলো এই স্থূল দেহ। এই স্থূল দেহ যার আবরণ, সেই চৈতন্য একই রইলো। জামা একসময় নতুন ছিল, একসময় পুরান হোল, একসময় ছিঁড়ে গেলো। কিন্তু যার গায়ে এই জামা তিনি কিন্তু একই রইলেন। তো শুদ্ধ চৈতন্যের গায়ে যখন আবারণরূপ দেহ ঘিরে ধরে, তখন আমরা এই আবরণকেই দেহ বলি, যা চৈতন্যকে ঘিরে রেখেছ। চৈতন্য কে আমরা দেখতে পাই না, সেই দৃষ্টিশক্তি আমাদের নেই। কিন্তু সাধনযোগে আমরা এই দৃষ্টিশক্তি অৰ্জন করতে পারি। তখন সেই শুদ্ধ চৈতন্য আমাদের কাছে জ্ঞান রূপে প্রকাশ পাবে। এ হচ্ছে সেই শুদ্ধ চৈতন্য। এই শুদ্ধ চৈতন্যের কোনো পরিবর্তন হয় নি, যা ছিল তাই আছে, কেবল কৃষ্ণ নামের দেহটির পরিবর্তন হচ্ছে। যা চৈতন্যের উপর আরোপ করা হয়েছিল। এই হচ্ছে মায়ার খেলা, বা মায়ার কার্য্য।
দেখো, আমরা সিনেমা দেখে থাকি। এই সিনেমায় নানান চরিত্র, নানান রূপে আমাদের চোখের সামনে দৃশ্যমান হয়ে থাকে। সিনেমা দেখার সময় এই চরিত্রগুলোর সঙ্গে আমাদের মন একাত্বিভূত হয়ে যায়। এরা দুঃখ পেলে, আমার কান্না পায়। এরা সুখী হলে, আমার মনের মধ্যে একটা সুখের অনুভূতি হয়। এমনকি এদের কথায় আমরা উত্তেজিত হয়ে উঠি। কিন্তু একথা আমরা জানি, যে এই যে চরিত্রগুলো যা আমার চোখের সামনে ঘোরাফেরা করছে, এরা কেউ আসল নয়। প্রথমতঃ এই চরিত্রের যে সংলাপ তা যেমন পূর্ব নির্দিষ্ট, লেখকের লেখা বুলি, তেমনি যারা অভিনয় করছে, তারাও কেউ আসল নয়। সবচেয়ে বড়ো কথা হচ্ছে - এই যে মানুষগুলোকে আমি দেখছি, তা আসলে আলোর খেলা মাত্র। আলোর কারিকুরি - পর্দায় কেবল ভেসে উঠছে। এরা কেউ এমনকি রক্তমাংসের মানুষ নয়। তথাপি এদের কথাবার্তা, এদের সুখ-দুঃখ এমনকি এদের জন্ম-মৃত্যু আমাকে বিচলিত করছে।
আমরা জানি আলোর গতি সবসময় সোজা। কিন্তু জ্বলন্ত মশালকে ঘোরালে, অর্থাৎ আলোর উৎসকে ঘোরালে তার যে আলোর রেখা দেখেন, তা কখনো সোজা কখনও বাঁকা আবার কখনো অন্য কোনো আকৃতির বলে মনে হয়। ঠিক চৈতন্যের অবস্থা ভেদে তাকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে মনে হয়। চৈতন্য কখনো জ্ঞাত, কখনো জ্ঞেয় কখনো কারন, কখনো কার্য্য। যদিও আমরা জানি চৈতন্য এক এবং অপরিবর্তনীয় । আলোর উৎস যদি অচঞ্চল থাকে তবে আলোর রশ্মি আমাদের চোখের গোচরে নাও আসতে পারে, ঠিক তেমনি চৈতন্য যতক্ষন কোনো রূপের মধ্যে প্রকাশিত না হন, ততক্ষন তিনি আমাদের ইন্দ্রিয়গোচর হন না। তখন চৈতন্য চৈতন্যতেই অবস্থান করেন। (মাণ্ডুক্য - ৪/৪৯)
তো আলোর আকৃতিগুলো যা আমরা সিনেমায় দেখছি, তা অলীক, তার মধ্যে কোনো মানুষ তো দূরে থাকুক, কোনো বস্তুই নেই। সে গুলো আবার আলো থেকে উৎপন্নও নয়, আলোর কারিকুরি মাত্র। তেমনি জন্ম মৃত্যুর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এই দুয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আমরা মনে করি তাদের অস্তিত্ত্ব আছে, তাই সেগুলো আছে, এরা সত্য নয়, মনের রচনা। আবার এই সিনেমার মধ্যে ঘটনার কার্য-কারন ফল ইত্যাদি দেখতে পাই, তাও লেখকের কল্পনা মাত্র। লেখকের মনের রচনা।
মাণ্ডুক্য উপনিষদ বলছেন, ৪/৫১), চৈতন্য যখন প্রকাশ পায় , তখন এই জগৎ প্রকাশ পায়, তার কার্য্যও প্রকাশ পায়। এগুলোর প্রকাশের চৈতন্য ভিন্ন আর কোনো উৎস নেই। কিন্তু চৈতন্যের প্রকাশ না হলে এই জগতেরও প্রকাশ থাকে না। কিন্তু এগুলো চৈতন্যে বিলীনও হয় না. কারন এগুলো অবস্তু, অর্থাৎ এগুলো অলীক, মিথ্যা, মনের সৃষ্টি, তাই এগুলো মনেই বিলীন হয়।
এইযে জন্ম মৃত্যু এসব অবস্তু, এর উৎপত্তি চৈতন্য থেকে নয়, আবার চৈতন্যে এর বিলোপ হবে, এমন ভাবার কোনো কারন নেই, কারন এই দুইয়ের মধ্যে কোনো কার্য্য-কারন সম্পর্ক নেই। প্রকৃত পক্ষে এর কোনো বাস্তব সত্ত্বা নেই। যতক্ষন কার্য্য কারন সম্পর্ককে আমরা গুরুত্ত্ব দেয়, ততক্ষন আমাদের জন্ম-মৃত্যু বা এই জগৎ সত্য বলে মনে হয়। কিন্তু যখন আমরা এই সম্পর্কের প্রতি উদাসীন থাকি তখন দেখা যায়, সম্পর্কটি মিথ্যে। সত্য হচ্ছে, জন্ম মৃত্যু আসলে একটা অলীক স্বপ্ন মাত্র, এর কোনো বাস্তব সত্ত্বা নেই।
ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ। হরি ওম।
-----------
আত্মজ্ঞান লাভের উপায় - ছান্দোগ্য উপনিষদ
ব্রাহ্মণ পিতা পূজাকার্য্যে ব্যস্ত ছিলেন। কিশোর পুত্র বারবার পিতাকে প্রশ্নবানে উত্তক্ত করছিলো। পূজা করলে কি হয় ? ভগবান কোথায় থাকে ? তুমি যে এই দুধগুলোকে প্রতিদিন এই পাথরের উপরে ঢালো, এ-তো দুধের অপচয় । আমাদের দেশে বহু ছেলেমেয়ে না খেয়ে অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগছে। প্রসাদের নামে যা কিছু ঠাকুরকে দাও, তাতো শেষে নিজেরাই খেয়ে নাও। এসব করে কাজের কাজ কিছুই হয় না। শুধু সময়ের অপচয় নয়, আর্থিক অপচয়। অথচ আমি টাকা চাইলেই নাই-নাই করো। পিতা এতক্ষন ধৈর্য্য ধরে শুনছিলেন। এবার পুত্র মোক্ষম কথাটি বললো, এসব তোমার ভাওতা - বুজরুকি, তুমি অসৎ, তুমি ঠগ, তুমি প্রতারক। তুমি কিছুই না জেনে, না বুঝে বোকার মতো অভ্যাসের বসে এসব পূজাদি করো, এতে কোনো লাভ হয় না। যেই না বলা, অমনি পিতা অগ্নিশৰ্ম্মা হয়ে পিতলের ঘট্ ছুড়ে দিলেন, পুত্রের দিকে। পিতলের ঘটের আঘাত এসে লাগলো, পুত্রের মাথায়। পুত্র সেই মুহূর্তেই ছটফট করতে করতে মারা গেলো।
আমাদের মাঝে মধ্যে মনে হয়, ধর্ম্ম সম্পর্কে মানুষ এতো অসহিষ্ণু কেন ? পৃথিবীতে আজ অবধি ধর্ম্ম-সংঘর্ষে যত লোক মারা গেছে, মহামারীতেও হয়তো অতো লোক মারা যায় নি। ধর্ম্মীয় কারনে যত দেশ বিভাজন হয়েছে, ধর্ম্মের কারনে বোধহয় কোনো সংযুক্তি হয়নি।
এই ধর্ম্ম সঙ্কটের কারন হচ্ছে বিশ্বাস অবিশ্বাস। তথাকথিত ধর্ম্মের জগতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। সন্দেহকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখা হয়। আর সত্যিকথা হচ্ছে, বিশ্বাস হচ্ছে একটা চাপিয়ে দেওয়া বোঝা, যা আমাদের পিতা মাতা, সমাজ, ধর্ম্মগুরুগন আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে থাকেন। হাজার বছর ধরে এই চাপিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াই চলছে। এর কারন হচ্ছে, চাপিয়ে দেওয়া বিদ্যার দ্বারা মানুষকে অজ্ঞান অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া যায়, আর তাকে নিজের ইচ্ছেমতো পরিচালনা করা যায়। শোষণ করা যায়, নির্ভরশীল করে রাখা যায়, গরিব করে রাখা যায়। মানুষ যতদিন নিজেকে না জানতে পারছে, নিজের শক্তি সম্পর্কে অবহিত না হতে পারছে, ততদিন সে ভীত সন্ত্রস্ত থাকবে। আর ভীতু মানুষকে সহজে আয়ত্ত্বে আনা সম্ভব হবে। আপনি বলতে পারেন, এতেকরে সমাজে একটা শৃঙ্খলা থাকে। আসলে শৃঙ্খলা নয়, বরং বলা যেতে পারে শৃঙ্খলিত করে রাখা যায়। তুমি গোয়ালার পুত্র, গরুর ভরন[পোষন তোমার কাজ, তুমি ধোপার পুত্র, কাপড়-কাচা তোমার কাজ। তুমি শূদ্র ক্ষত্রিয়-ব্রাহ্মণের সেবা তোমার কাজ। তুমি রাজকর্ম্মচারী, রাজার সেবা করা তোমার কাজ। এভাবে মানুষকে সত্যের থেকে দূরে রাখা হয়েছে। ধীরে ধীরে এই অবস্থার অবসান হচ্ছে সত্য, কিন্তু সত্যকে জানবার, প্রবৃত্তি আমাদের মধ্যে জাগে কৈ ?
দেখুন, আমাকে অনেকে জিজ্ঞেস করে, এটাতে তুমি বিশ্বাস করো ? ওঠাতে তুমি বিশ্বাস করো ? তুমি কি বুদ্ধের কথায় বিশ্বাস করো ? তুমি কি মোহাম্মদের কথায় বিশ্বাস করো ? তুমি কি যীশুর কথায় বিশ্বাস করো ? তুমি কি শ্রীকৃষ্ণের কথায় বিশ্বাস করো ? আমার তখন হাসি পায়। কেননা প্রশ্নটাই ভুল। কেননা জ্ঞানের জন্য বিশ্বাসের প্রয়োজন হয় না। অজ্ঞানীদের জন্য বিশ্বাস অবিশ্বাসের গুরুত্ত্ব থাকতে পারে। কেননা তারা অন্যের মুখে ঝাল খায়। আমাদের ধারণা হচ্ছে, অন্ধ বোধ হয়, কেবল অন্ধকারকেই দেখে, আর আলোকে দেখতে পায় না। আসলে ওরা অন্ধকারকেও দেখতে পায় না, আলোকেও দেখতে পায় না। কেননা দেখতে গেলে চোখ চাই। যার চোখই নেই, সে দেখবে কি করে। অন্ধকার বা আলো তার বিশ্বাস মাত্র। আসলে অন্ধকার ও আলো একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। আলো ও অন্ধকার দুটো জিনিস নয় - একই জিনিস। আলোর অভাবকে বলে অন্ধকার, আবার অন্ধকারের অভাবকে বলে আলো। আসলে কেবল মাত্রার তফাৎ। আমাদের চোখ একটা বিশেষ মাত্রায় (frequency) দেখতে পায়, এর বাইরের কোনো বস্তুকে সে দেখতে পায় না। শব্দের ক্ষেত্রেও একই কথা। শব্দের বিশেষ মাত্রার তরঙ্গ আমাদের শ্রুতিগোচর করে থাকে। এর বাইরে আমরা কিছুই শুনতে পাই না। অন্ধকে দৃষ্টিশক্তি দিতে গেলে, তাকে দর্শনশাস্ত্র পড়ে শোনালে দর্শনশক্তি ফিরে আসবে না। তাকে চক্ষু দান করতে হবে। আর এইজন্য দরকার ডাক্তার, দার্শনিক নয়। সুচিকিৎসার ফলে যখন সে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবে, তখন তার সামনে আলো ফুটে উঠবে। তো আলোর দর্শনের জন্য দর্শনশাস্ত্র নয়, দরকার চক্ষু চিকিৎসক।
ঈশ্বর আছে কি নেই, এই কথা মুখে বলে বোঝানো সম্ভব নয়। ঈশ্বর ও আপনার মধ্যে যে চোখের ছানির মতো যে মেঘ জমাট বেঁধে রয়েছে, তাকে দূর করে না দিতে পারলে, ঈশ্বর দর্শন সম্ভব নয়।
আর এর জন্য দরকার একটা জিজ্ঞাসু মন, একটা অনুসন্ধিৎসু মন। এখন কথা হচ্ছে, ঈশ্বর কি সন্ধানের বিষয় ? তাই যদি হতো, তবে তো সকল ধর্ম্ম অনুসন্ধানের কথা বলতো। কিন্তু তা না বলে, সমস্ত তথাকথিত ধর্ম্ম মত বলছে, তুমি প্রথমে বিশ্বাস করো, মাঝেও বিশ্বাস করো, আর সবশেষেও বিশ্বাস করো । এমনকি আমাদের ধর্ম্ম বলছে, তর্ক করো না, বিশ্বাস করো। বিস্বাসে মেলায় বস্তু তর্কে বহু দূর।
কিন্তু কথা হচ্ছে, তর্কে না হয়, না পাওয়া গেলো, বিশ্বাসে পাওয়া যাবে কি ? দেখুন বিশ্বাস বা অবিশ্বাস কোনোটাই আপনাকে সত্যে পৌঁছতে সাহায্য করতে পারে না। আমরা বলে থাকি, অনুসন্ধান করুন, ধ্যান করুন, নিজের মধ্যে প্রবেশ করুন। তখন আপনি এক বাস্তবতার মধ্যে প্রবেশ করবেন। না ঈশ্বর নয়, বাস্তবতা। এই বাস্তবতা হচ্ছে চৈতন্য যা আপনাকে সবকিছুর অনুভব এনে দিচ্ছে। না এখানে কোনো শ্বেত-শশ্রুধারী চার হাত, চার মাথা ওয়ালা পুরুষের সন্ধান পাবেন তা নয়, যা ঈশ্বর সম্পর্কে আমাদেরকে এতদিন ধরে বলা হয়েছে, বা আমরা চিরকাল ধ্যরে শুনে এসেছি। ধ্যানাদির ফলে, একসময় এই দেহাদির উর্দ্ধে একটা নতুন সত্ত্বার সন্ধান পাবেন, যাকে বলা যায় চৈতন্য। আর এই চৈতন্যের প্রভাবেই সমস্ত কিছু চৈতন্যবান হচ্ছে, প্রাণবন্ত বলে মনে হচ্ছে। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলায় না দুলে, অনুসন্ধান করুন। আর তা কেবল নিজের মধ্যে। বোঝার চেষ্টা করুন, কে এইসব দেখছে, কে এইসব শুনছে, কে এইসব বলছে ? অনুসন্ধানক্রিয়া কেবলমাত্র অনুসন্ধানকারীর দ্বারাই সম্ভব হতে পারে। দৃশ্য থাকলে দ্রষ্টা থাকবে। বিজ্ঞান দৃশ্যকে বিশ্লেষণ করে থাকে ,দ্রষ্টাকে নয়। আধ্যাত্মিকতা, মানুষকে তার দৃশ্যমান জগৎকে অদৃশ্য করে দেয়, আর বিজ্ঞান সবকিছুকে প্রকাশমান করে থাকে। একটা বহির্মুখী, আর একটা অন্তর্মুখী যাত্রা। তবে যাকিছুই করুন না কেন, খোলা মন নিয়ে করুন। আপনার বিশ্বাস বা অবিশ্বাস নিয়ে অনুসন্ধান করতে গেলে, সত্য আপনার সংস্কার দ্বারা আবৃত হয়ে পড়বে। তখন সত্যকে ধরতে পারবেন না।
আসলে আস্তিক আর নাস্তিকের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তারা একই নৌকার যাত্রী, তেমনি হিন্দু, ইহুদি, মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন, এমনকি ডানপন্থী, বামপন্থী, মধ্যপন্থী সবাই একটা বিশ্বাস নিয়ে চলছে। আর এই বিশ্বাসের মধ্যে যথার্থ সত্য নেই বলেই, একজন আর একজনের সাথে লড়াই করে মরছে। এই লড়াই থেমে যাবে, যেদিন সত্যকে জানা যাবে। কেননা সত্য তো একটাই, এখানে কোনো দ্বৈত নেই, ভেদ নেই।
সবশেষে ছান্দোগ্য উপনিষদ থেকে একটা পরিচিত গল্প বলি,
পুরাকালে ঋষি উদ্দালক বলে একটা ঋষি ছিলেন। তার পুত্রের নাম শ্বেতকেতু। ঋষি উদ্দালক তার পুত্রকে একজন স্বনামধন্য আচার্য্যের কাছে পাঠালেন, বিদ্যা অৰ্জনের জন্য। শ্বেতকেতু এক এক করে সমস্ত বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে, হাসিমুখে বাড়িতে ফিরে এলেন। এসে পিতা-মাতাকে প্রণাম করে বললেন, আমি আমার বিদ্যা অৰ্জন সমাপ্ত করেছি। ঋষি উদ্দালক দেখলেন, শ্বেতকেতু বহু শাস্ত্রগ্রন্থ সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে, আর নিয়ে এসেছে, একটা পান্ডিত্যের অহমিকা। উদ্দালক বললেন, হে পুত্র তুমি কি নিজেকে জানতে পেরেছো ? শ্বেতকেতু বললেন, আমি ভাষা শিক্ষা করেছি, ব্যাকরণ শিক্ষা করেছি, আমি আয়ুর্বেদ শিক্ষা করেছি, আমি যজ্ঞাদি সম্পন্ন করতে শিক্ষা করেছি। কিন্তু আমাদের সূচিপত্রে এমন কোনো বিষয় ছিল না, যার দ্বারা নিজেকে জানা যায়। এমনকি নিজেকে জানার কথা কোনো আচার্য্য আমাকে বলেন নি।
ঋষি উদ্দালক বললেন, পুড়িয়ে দাও, এইসব বইপত্র, যা তুমি সঙ্গে করে নিয়ে এসেছো, আর ফিরে যাও আচার্য্যের কাছে, সেখানে গিয়ে আত্মবিদ্যা আয়ত্ত্ব করো। ঋষি শ্বেতকেতু ভেবেছিলেন, পিতার কাছে এসে তিনি প্রশ্রয় পাবেন, সমস্ত বিদ্যা আয়ত্ত্ব করেছেন বলে প্রসংসা পাবেন। কিন্তু পিটা বলছেন, সব জ্ঞানের পুস্তক পুড়িয়ে দিয়ে আচার্য্যের কাছে ফিরে যেতে। একটু রাগ হলো, অভিমান হলো, আচার্য্যের প্রতি - কেননা, এই আত্মবিদ্যা কেন গুরুদেব তাকে শিক্ষা দেন নি। যাইহোক ঋষি শ্বেতকেতু বিমর্ষ মনে আচার্য্যের কাছে ফিরে গেলেন। এবং সেখানে গিয়ে গুরুদেবের কাছে, পিতার কথা অনুযায়ী আত্মবিদ্যার শিক্ষা প্রার্থনা করলেন। এবং এই ভুলের জন্য পিতার কাছে তাকে তিরস্কার স্বীকার করতে হয়েছে, এই দুঃখের কথাও জানালেন।
গুরুদেব বললেন, হে শিষ্য, আমি তো আত্মবিদ্যা সম্পর্কে তোমাকে কোনো শিক্ষা দিতে পারবো না। কেননা এই বিদ্যা দানের বস্তু নয়, এই বিদ্যা কাউকে দান করা যায় না। এই বিদ্যা কেবলমাত্র স্ব-উপার্জ্জিত। এই বিদ্যা বাইরে থেকে অৰ্জন করা যায় না, বাইরে থেকে কাউকে দেওয়াও যায় না। তুমি এক কাজ করতে পারো, আমি তোমাকে ১০০ গাভী দিচ্ছি, এগুলোকে নিয়ে তুমি গোচারণ ভূমিতে যাও , আর এই গাভীর সংখ্যা এক হাজার হলে তবে ফিরে এসো। শ্বেতকেতু গুরুবাক্য শিরধার্য্য করে, গোচারনে রওনা দিলেন। মনে মনে ভাবতে লাগলো, এই গোচারণ ক্রিয়া কিভাবে আমাকে আত্মবিদ্যা লাভ করতে সাহায্য করবে ?
আসলে গুরুদেবদের নিজস্ব কিছু ভঙ্গিমা আছে, প্রক্রিয়া আছে, অর্থাৎ যে বিদ্যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, যে বিদ্যা মুখে বলা যায় না, সেই ব্রহ্মবিদ্যা দানের জন্য, গুরুদেব এমন কিছু অবস্থার সৃষ্টি করেন, একটা পরিস্থিতির অবতারণা করেন, যে অবস্থা পরিস্থিতি শিষ্যকে আত্মজ্ঞান লাভে সাহায্য করে।
যাইহোক, শ্বেতকেতু পাহাড়ের পাদভূমিতে চলে গেলেন। সেখানে ধীরে ধীরে আকাশ,নদী, জঙ্গল, লতাগুল্ম আর গরুগুলোর সঙ্গে ধীরে ধীরে একাত্ম হয়ে গেলেন। ধীরে ধীরে তার মধ্যে প্রকৃতির জ্ঞানের উন্মেষ হতে লাগলো। কিন্তু যে জ্ঞান তিনি এতদিন ধরে গুরুগৃহে অৰ্জন করেছিলেন, সেই জ্ঞান ভুলে যেতে লাগলেন। শ্বেতকেতু এখানে গাছের নিচে বসে বসে প্রকৃতির খেলা দেখে, আর গরুসকল খাস খেয়ে বেড়ায়। আর শ্বেতকেতু অপেক্ষা করে কবে, গরুর সংখ্যা ১০০ থেকে ১০০০ হবে। প্রথম দিকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় ও সকালে একবার করে গরুগুলোকে গোনে। যত দিন যেতে লাগলো, তত সে যেমন তার পুরানো অর্জ্জিত বিদ্যা ভুলে যেতে লাগলো, তেমনি সে জীবনের অতীত, বর্ত্তমান, ভবিষ্যৎ সব ভুলে যেতে লাগলো। এমনকি একসময় সে গরু-গুলোকে গুনতেও ভুলে যেতে লাগলো। সে যেন প্রকৃতির একজন হয়ে উঠলো, সে যেন এই গরুগুলোর একজন হয়ে উঠলো। তার বুদ্ধি যেমন ধীরে ধীরে এই প্রকৃতি ও গরুগুলোর মতোই সহজ-সরল হতে শুরু করবো। এতো যে পুঁথিগত বিদ্যা সে আয়ত্ত্ব করেছিল, তা আর কোনো কাজেই এলো না। শ্বেতকেতু এখন পরিবেশের একজন হয়ে উঠলো। গাছ, নদী, পাহাড়, জঙ্গল,লতা, গুল্ম, গরু আর শ্বেতকেতুর মধ্যে কোনো পার্থক্য রইলো না। বসে বসে সে বাতাসের সাথে কথা বলে, গাছের সাথে কথা বলে, নদীর জলের সাথে কোলাকুলি করে।
একদিন হঠাৎ শুনলো, যেন গরুগুলো বলছে, আমরা হাজার হয়ে গেছি। শ্বেতকেতু গরু-গোনা ছেড়ে দিয়েছিলো - তাই সে জানতেই পারেনি, কবে গরুর সংখ্যা হাজার হয়ে গেছে। এবার তার সম্বিৎ ফিরে এলো। গুরুদেবের কথা মনে হলো, আর গরুগুলোকে সঙ্গে নিয়ে গুরুগৃহে ফিরে এলো। এসে গুরুদেবকে প্রণাম করে বললো, হে গুরুদেব, হাজার গরু হয়েছে। বলে উদাসভাবে গুরুদেবের দিকে তাকিয়ে রইলো। গুরুদেব বললেন, হাজার একটা হয়েছে। শ্বেতকেতু হাসলো, কেননা, সে গুনতে ভুলে গেছে, হতে পারে একটা গরু বেশি হয়েছে। শ্বেতকেতু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। গুরুদেব আবার স্মিত হেসে বললেন, হাজারটা তো চারপেয়ে গরু, আর একটা দুপায়ে গরু দেখতে পাচ্ছি আমি। তার নাম শ্বেতকেতু। শ্বেতকেতু হাসলো, বললো, সব ভুলে গেছি, সমস্ত শাস্ত্র ভুলে গেছি, গরুর সাথে সাথে আমিও নিজেকে গরু ভাবতে শিখেছি। গাছের নিচে থাকতে থাকতে নিজেকে একটা গাছ বলে মনে হয়, নির্জনে থাকতে থাকতে নিজের মধ্যে কখন নিৰ্জনতা ঘিরে ধরেছে , তা আমি জানি না। আমি কখনো ধ্যানে বসিনি, আমি কখনো ধ্যানের কথা চিন্তা করিনি, কিন্তু আমি কখন যেন ধ্যানস্থ হয়ে গেছি। একটা সময় এসেছে, যখন আমাদের মধ্যে থেকে চিন্তা করবার শক্তি তিরোহিত হয়েছে। আমি চিন্তারহিত হয়ে আমি আমাকে ভুলে গেছি । এখন আমি বলে কেউ নেই, কিছু নেই। সমস্ত ভাষা মিথ্যে, সমস্ত ব্যাকরণ মিথ্যে, সমস্ত শাস্ত্রবাক্য অপ্রোজনীয় , কেবল একটা কথা বলতে পারি, আমি দেহবোধের উর্দ্ধে, অহংবোধের উর্দ্ধে - এটা চেতন সত্ত্বা মাত্র। গুরুদেব বললেন, যাও তোমার পিতা তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন, তাঁর কাছে ফিরে যাও। শ্বেতকেতু বাড়ির উদ্দেশ্য হাঁটা শুরু করলেন। পিতা শ্বেতকেতুকে দেখে বললেন, এস পুত্র, এখন আমি শান্তিতে মরতে পারবো, তোমার আত্মজ্ঞান হয়েছে ।
এই হচ্ছে, আত্মবিদ্যা লাভের উপায়, যা শাস্ত্রগ্রন্থ পাঠ করে, এমনকি গুরুদেবের মুখের কথায় হয় না, এ কেবল উপল্বদ্ধির বিষয় যা সাধকের ভিতর থেকে আসে।
ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ। হরি ওম।
No comments:
Post a Comment