Saturday 12 October 2019

ধরো - মারো - কাটো - খাও

ধরো - মারো - কাটো - খাও

একবার এক পাগলা সাধুর কাছে, জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, সাধু জীবনের উদ্দেশ্য কি।  কিসে জীবন সার্থক হবে। তো পাগলা সাধু একটি আশ্চার্য্য জবাব দিয়েছিলো। সেটা হচ্ছে ধরো-মারো-কাটো-খাও।  সাধু যে সত্যি পাগোল, সেটা বুঝে নিয়ে তারা সবাই চলে গেল। পাগলের কাছ থেকে কিই বা আশা করা যেতে পারে ? সাধুকে পাগোল-ছাগল ইত্যাদি বলে গালাগাল দিতে দিতে তারা চলে গেল। সাধু হাসতে  লাগলো। 

একজন মূর্খ,  সাধুর কাছে বসে রইলো।  তো সাধু জিজ্ঞেস করলো।  তুই বসে আছিস কেন ? তো সে বললো আমি কিছু বুঝি নি তাই বসে আছি। আমি বোকা তো তাই কিছু বুঝিনি।   আমাকে একটু বুঝিয়ে বলুন। 

তো সাধু বললো, কে বললো তুই বোকা, তুই ব্যাটা আসলে চালাক। তাই এখনো বসে আছিস। যা ভাগ। তো মূর্খ বসেই থাকলো। সাধুকে তামাক সেজে দিলো। কল থেকে জল এনে দিলো।  বাড়ি থেকে খাবার এনে দিলো।

সাধু খুশি হয়ে বললো - শোন  ধরো-মারো-কাটো-খাও এর মানে হচ্ছে। যথার্থ গুরুকে ধরো। গুরুর কাছে মরার মতো পড়ে থাকো। কামনা বাসনাগুলোকে মারো। মায়ার বাঁধন কাটো। তার পরে পরমানন্দ ভোগ করো। মূর্খ সেই হয়, যে ঈশ্বর ছাড়া কিছু বোঝে না। পাগল সেই হয়, যে ঈশ্বরের প্রেম পেয়েছে। প্রেমেই তো মানুষ পাগল হয়।

আমাদের প্রেমের ধারাকে ঈশ্বরমুখী করতে হবে। 

এক ভদ্রলোক তার স্ত্রীকে ভীষণ ভালো বসেন। এক মুহূর্ত তাকে কাছছাড়া করতে পারেন না। স্ত্রী বাপের বাড়ি গেলে, পিছন পিছন ভদ্রলোক চলে যান ।  এই নিয়ে সবাই হাসাহাসি করে, কিন্তু ভদ্রলোকের  ভ্রূক্ষেপ নেই। তিনি এতে কোনো অপরাধ দেখতে পান না। কিন্তু স্ত্রীর  অস্বস্তি হয়।ভদ্রলোক স্ত্রীর প্রতি এতটাই মোহগ্রস্থ ছিলেন, যে একদিনের ছাড়াছাড়িও  সহ্য করতে পারতেন না। একবার হলো কি, দুপুরে স্ত্রী তার ভাইয়ের সাথে বাপের বাড়ি গছেন , আর রাতেই ভদ্রলোক গিয়ে উপস্থিত হলেন শ্বশুরবাড়ি। স্ত্রী বিরক্ত হলেন, ধমক দিয়ে বললেন, " আমার শরীরের প্রতি তোমার এত  আসক্তি, এইটুকু যদি তুমি ভগবানকে দিতে, তবে তোমার ভগবান লাভ হতো। লজ্বায় আমার মাথা কাটা যায়। দূর হও এখন থেকে।" - এই একটা কথায় ভদ্রলোকের অজ্ঞানের পর্দা ছিঁড়ে গেলো। জ্ঞান  ফিরে পেলেন। এবং সেই মুহূর্তেই তিনি  সংসার ত্যাগ করলেন, আর আধ্যাত্মিক পথে হাটা  শুরু করলেন। এই ভদ্রলোক আর কেউ নয় স্বয়ং তুলসীদাস। যার রামায়ন আমাদের  ঘরে ঘরে।

জীবন জিজ্ঞাসাই সঠিক ও পুন্য ভাবনা। কেবলমাত্র  শ্রবণ বা পাঠে পুন্য নেই।  পুন্য আছে অনুভবে।

যুদ্ধ করে করবি কি তাই বল। 

এক যুদ্ধবাজ রাজা। সে এক এক করে পৃথিবীর সমস্ত রাজ্য জয় করতে লাগলো। এদিকে যুদ্ধে প্রতিনিয়ত অসংখ্য সৈন্য নিহত হতে লাগলো। এবং প্রত্যেক যুদ্ধের শেষে সৈন্য সংগ্রহ করা একটা সমস্যা হতে লাগলো। রাজা নির্দেশ দিলেন, দেশে যত  যুবক আছে সবার সৈন্যবাহিনীতে যোগদান করতে হবে। রাজার পেয়াদারা ছুটলো সৈন্য সংগ্রহ অভিযানে। দেশের  সমস্ত যুবক লুকিয়ে থাকতে লাগলো। ফলে সৈন্য সংগ্রহ করা দুস্কর, হয়ে পড়লো।

একযুবক রাস্তার পার্শে পায়ের উপরে পা দিয়ে বসে বসে হাসছিলো, আর রাজার কান্ড দেখছিলো। পেয়াদা এসে তাকে পাকড়াও করলো।  রাজার কাছে নিয়ে গেল। যুবক বললো, রাজামহাশয় আপনি যুদ্ধ করে কি করবেন তা আমাকে বলুন। রাজা বললেন, এক এক করে সমস্ত পৃথিবীটাকে আমি জয় করবো। যুবক বললো - তাই নাকি ? তো সমস্ত পৃথিবী যায় হয়ে গেলে তার পরে কি করবেন ? তার পরে আমরা সবাই পায়ের উপর পা তুলে দিয়ে আনন্দ করবো।

যুবক জবাব দিলো, তো আমি তো এখনই তাই করছি।

স্বর্গ-মর্ত-পাতাল

কালকূটের একটা উপন্যাস আছে, নাম তার "শাম্ব" . সেখানে  স্বর্গ-মর্ত-পাতাল সম্পর্কে কি বলছেন দেখুন।
বলছেন : আমি সুত অর্থাৎ শুদ্র।  স্বর্গের ঠিকানা আমার জানা আছে। ভারতের উত্তরে হিমালয়। হিমালয়ের উত্তরে হেমকূট।  তার দক্ষিণে কিম্পুরুষবর্ষ। হেমকূটের উত্তরে হরিবর্ষ। হরিবর্ষের উত্তরসীমা নিষধ পর্বত। নিষধের উত্তরে ইলাবৃতবর্ষ ।এই ইলাবৃতবর্ষ  এখন মধ্যে এশিয়ায় অবস্থিত। এখানকার পামির পূর্বতুর্কিস্থান ইলাবৃতবর্ষ-এর  অন্তর্গত। এই ইলাবৃতবর্ষের  অপর নাম স্বর্গ।

একটা সময় এই ইলাবৃতবর্ষ  অত্যন্ত সমৃদ্ধ রাজ্য ছিল। পরে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে,নদ  নদী শুকিয়ে, সেখানকার সভ্যতা লুপ্ত হয়। সেখানকার জনসংখ্যা ছিল ৩৩ কোটি। এদেরই বলা হোতো দেবতা।  এই স্বর্গ থেকে অর্থাৎ ইলাবৃতবর্ষ থেকে  সেখানকার অধিবাসীরা দক্ষিণ  দিকে ছড়িয়ে পড়ে । একটা অংশ চলে আসে ভারতবর্ষে।

পুরান বলছে, বলিরাজা যজ্ঞ করেছিল,  ইলাবৃতবর্ষে।  এই স্থানই দেবতাদের জন্ম স্থান। দেবগন আধুনিক তুর্কিস্থান থেকে শুরু করে কাশ্মীর, পাঞ্জাব থেকে শুরু করে বিন্ধাচলের উত্তরপ্রদেশ পর্যন্ত অধিকার করে ফেলেন। তার পরে বিন্ধের দক্ষিণে অগ্রসর হন। ভারতীয় আর্যরা যেহেতু প্রথমে কাশ্মীর থেকে এসেছিলেন। এই কাশ্মীরকে বলা হয় অন্তরীক্ষ।  এটাকে আবার পিতৃলোকেও বলা হয়ে থাকে, কারন তার পিতৃপুরুষ এখান থেকে এসেছিলেন। এই রাজ্যের  মধ্যভাগ অন্তরীক্ষ, উত্তরে স্বর্গ,  আর দক্ষিণে পাতাল। স্বর্গের  রাজাকে বলা হতো  ইন্দ্র। এই ইন্দ্রের যিনি প্রতিভূ তার নাম প্রজাপতি বা মনু। ইলাবৃত বর্ষ যেহেতু আদি বাসস্থান, তাই একে পবিত্র তীর্থভূমি বলা হতো। আর এই যাতায়াতের রাস্তাকে বলা হতো দেবযান।

এর পরে এক ইন্দ্র অর্থাৎ দেবতাদের রাজা,  সামরিক কারণে স্বর্গে যাতায়তের রাস্তা অর্থাৎ দেবযান,বজ্র দ্বারা অর্থাৎ পাহাড় ধ্বসিয়ে বন্ধ করে দেয়।  এই পথ ছিল ভারত ও মধ্যে এশিয়ার বণিকদের যাতায়তের পথ। কিন্তু স্বর্গ দেখার বা স্বর্গে যাবার  বাসনা কমেনি। তাই এবার থেকে  বদ্রীনারায়ণ আর মানস সরোবরের পথে অনেকে স্বর্গে যেত। যুধিষ্ঠির এই পথে স্বর্গে গিয়েছিলো। এই পথ আবার কৈলাশপতি রুদ্র অর্থাৎ শিবের রাজত্ত্বের মধ্যে ।

স্বর্গেরও  উত্তরে কুরুতে ছিল ব্রহ্মলোক আর বিষ্ণুলোক। দেবতাদের কাছে এই ব্রহ্মলোক ও বিষ্ণুলোক ছিল তীর্থক্ষেত্র। এখন এই লোক কাস্পিয়ান সাগর বা সাইবেরিয়ায় পাওয়া যেতে পারে।

আগেই বলেছি, বিন্ধাচলের দক্ষিণ ভাগ হচ্ছে পাতাল। এই হলো স্বর্গ মর্ত পাতালের কাহিনী।
আমি যা জানি তুমি তাই জানো।
একজন প্রবুদ্ধ পুরুষ একবার আমাকে বলেছিলেন, মানুষ আমার কাছে আসে, প্রশ্ন করে, আর সে যা শুনতে চায়, তাই আমার মুখে বসাতে চায়। সে যা বিশ্বাস করে, সেই কথাই আমার কাছ থেকে শুনতে চায়।  আমি তখন তাদের উল্টো কথা বলি, আর তারা আমাকে গালি দেয়।  আমি উপভোগ করি।

মরন কালে কি হয়  ?

মানুষ যখন জন্ম গ্রহণ করে, তখন তার দেহের সঙ্গে মায়ের দেহের নাড়ির একটা যোগ থাকে। ধাঁই সেটাকে কেটে মায়ের দেহ থেকে শিশুর দেহকে বিচ্ছিন্ন করে। ঠিক তেমনি মানুষ যখন মারা যায় তখন তার দেহ থেকে একটা বাষ্পময় বস্তূ বেরিয়ে আসে। প্রথম দিকে তাকে দেখতে মৃত ব্যক্তির দেহের অনুরূপ দেখায়। এবং এই বায়বীয় দেহ ও  মৃত দেহের সঙ্গে একটা সুতোর সংযোগ থাকে। পরে বায়বীয় দেহ এই সুতোর সংযোগকে বিচ্ছিন্নকরে। ও বায়বীয় দেহ ইতস্তত ঘুরতে থাকে। জ্ঞানীরা মনে করেন, এই সত্য একদিন শক্তিশালী ক্যামেরায় ধরা পড়বে।  

ধর্ম কি ?
ধৰ্ম একটা ব্যক্তিগত ব্যাপার। নিজেকে জাগ্রত করবার প্রক্রিয়াকে বলে ধর্ম। আপনি যদি মানুষ হন তবে মনুষ্যত্ত্বকে জাগ্রত করা আপনার ধর্ম। দুনিয়াকে ধার্মিক করতে গেলে নিজেকে ধার্মিক হতে হয়। জন্ম-জন্মান্তরের সংস্কার নিয়ে আমরা জন্মেছি। আমরা মানুষ হয়ে জন্মাই  না, মানুষ  হবার জন্য জন্মাই।

ঈশ্বরে বিশ্বাস 
ধার্মিক ব্যক্তি কখনো ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন  না। কারন ঈশ্বরে বিশ্বাস তারাই করে, যারা ঈশ্বর সম্পর্কে শুনেছে মাত্র। ধার্মিক ব্যক্তি ঈশ্বরকে অনুভব করেছেনা।  তাই বিশ্বাস-অবিশ্বাস  নয়, এটা তার কাছে সত্য, জ্ঞানের বিষয় ।

হাড়ির মধ্যে জল।  টগবগ করে ফুটছে। কারন কী। কারন ওর পেছনে আছে আগুন। আর আগুনকে মদত যোগাচ্ছে  কাঠ।  মানুষ অসহ্য যন্ত্রনায় অস্থির কারন ওর পেছনে আছে  রাগ, দ্বেষ, মোহ। আর এর পেছনে আছে কামনা, বাসনা। এগুলোকে সরিয়ে দিলেই সব শান্ত।

ব্রাহ্মণ পন্ডিতের শাস্ত্রব্যাখ্যা : শিষ্য গুরুদেবকে স্নানের আগে, তেল মাখিয়ে দিচ্ছে। আর গুরুদেব ছান্দোগ্য উপনিষদ থেকে কঠিন শ্লোকের শব্দার্থ সহজ করে  বোঝাচ্ছে। "তস্য যথা কপ্যাসং পুন্ডরীকমেবাক্ষিনী (পুন্ডরীকম-এব-অক্ষিণী)"। এটি  একটি মন্ত্রের অংশ। গুরুদেব বলছেন, সূর্য্যমন্ডলের পুরুষের চক্ষুদুটি আরক্তিম, কেমন আরক্তিম না কপ্যাসং অর্থাৎ কপি মানে বানর অসং মানে পশ্চাৎভাগ। অর্থাৎ বাঁদরের পোঁদের  রঙ  যেমন  আরক্তিম, অর্থাৎ রক্তবর্ণ  ঠিক তেমনি পরমেশ্বরের চক্ষুদুটি বাঁদরের পোদের মতো লাল।

তো শিষ্য কাঁদতে লাগলেন। গুরু জিজ্ঞেস করলো তুই কাঁদছিস কেন ? শিষ্য বললো। ভগবানের রূপের বর্ণনায়,  বেদমধ্যে এমন নিকৃষ্ট উদাহরণ দিয়ে বোঝানো হয়েছে ?  গুরু বললেন - তো তাতে কি হয়েছে ? কাঁদার কি আছে ?
 শিষ্য বললেন : গুরুবাক্যের প্রতি অবিশ্বাস করা পাপ। কিন্তু একথা শুনতে আমার ভালো লাগে না। গুরু বললেন : শোন আচার্য্য শঙ্করও এইরূপ ব্যাখ্যা করেছেন।  এতে দোষের কি আছে  ?

এই গুরুদেব একসময় আচার্য্য শঙ্করের অনুগামী ছিলেন। আচার্য্য শঙ্করের সঙ্গে মতের মিল না হওয়ায়, তিনি এখন এক নতুন মত প্রবর্তন করেছেন। অথচ এখন তিনি আচার্য্য শঙ্করের দোহাই দিচ্ছেন।

শিষ্য বললেন, আমার ধৃষ্টতা মাপ  করবেন।  কপি অর্থে সূর্য। কপ্যাস শব্দের কং কথাটার মানে জল. আর পিবতি অর্থ যে পান করে বা যে আকর্ষণ করে। আর আস্ ধাতুর অর্থ রূপ অর্থাৎ বিকশিত। অর্থাৎ সূর্য্যের দ্বারা যে বিকশিত হয়।  অর্থাৎ পদ্ম। তাহলে এই শ্লোকের অর্থ হচ্ছে : সেই সুবর্ণবর্ন আদিত্যমন্ডল মধ্যবর্তী পুরুষের চক্ষু দুটি পদ্মের মতো।

গুরুদেব মনে মনে খুব রেগে গেলেন। কিন্তু মুখে শিষ্যের খুব প্রশংসা করতে লাগলেন। আর বললেন : তো আর তেল মাখাতে হবে না, আমি এখন স্নান করবো।

এই গুরুদেব হচ্ছেন : রামানুজের আচার্য্য যাদবপ্রকাশ। আর শিষ্য হচ্ছেন রামানুজ। পরে অবশ্য রামানুজকে যাদবপ্রকাশ তার টোল থেকে তাড়িয়ে দিয়ে ছিলেন। এমন শিষ্য কেউ রাখে ?

"আমার ভিতরে অসীম শক্তি আছে, সে সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা" - আমাদের শুধু এই ভাবনাই সেই অসীম শক্তিকে জাগ্রত করবার সোপান হতে পারে।

মানুষ রোগগ্রস্থ হয়ে মারা যায় না। মারা যাবার জন্য রোগগ্রস্থ হয়। যে সময় আমার মনে হবে, আমার রোগ হয়েছে, তখনই আমাদের রোগ আসবে। আমি ভালো আছি এই ভাবনা মানুষকে ভালো রাখে। আর আমার শরীরের সমস্ত দরজা খুলে যায়, বিশ্বশক্তি গ্রহণ করবার জন্য।

শবদেহ ছিঁড়ে খাচ্ছে শিয়াল-কুকুরে , পাগল বলছে - "নেই তাই খাচ্ছো, থাকলে কি খেতে ?"

জীবন একটা স্রোতস্বিনী নদী। এই নদী সর্বদাই বইছে। নানা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলছে এই দেহনদী। যা সরে সরে যায়, তাই সংসার। দেহ-নদীর পাঁচটি ধারা বা স্রোত। নদীর উৎস পঞ্চভূত। নদীর ঢেউ পঞ্চবায়ু । নদীর মূল পঞ্চজ্ঞানীন্দ্রিয়। নদীর ঘূর্ণি পঞ্চইন্দ্রিয়ের বিষয়। নদীর পাঁচটি বাঁক - জন্ম, ভূমিষ্ট, জ্বরা, ব্যাধি, মৃত্যু। পাঁচটি বাঁধ - অবিদ্যা, অহংকার, আসক্তি, দ্বেষ, অত্যুৎসাহ।

I am neither a Professor nor a Guru. I am just a Lecturer. What I share is the knowledge of Mahatmas (the sacred sole).You may hear it or not, you may accept it or not, it is upto you only. I donot want to disturb my inner-sence.The question raised in mine, and the solution given by Mahatmas are the topics of my lecture. I donot feel that the body, where I am living is the true "I". Hence someone who wants to contact with the Lecturer, may hear the lecture only, where the true contac may happen.

আমি অধ্যক্ষ নোই, আচার্য্য নোই, গুরুও নোই। আমি একজন বক্তা মাত্র। আমার মাধ্যমে যে বার্তা আপনাদের কাছে যাচ্ছে, তা সবই মহাত্মাদের জ্ঞান। আপনি এটাকে শুনতে পারেন, আবার নাও শুনতে পারেন। আপনি এটাকে গ্রহণ করতে পারেন, আবার নাও গ্রহণ করতে পারেন। আমার ভিতরে এক জিজ্ঞাসু প্রশ্ন তোলে। আর সেইসব প্রশ্নের উত্তর মহাত্মারা দিয়ে থাকেন। এটাই আমার বক্তব্যের বিষয়। আমি জানি, এই দেহ যেখানে আমি আপাতত আশ্রয় নিয়েছি, সেটা আসল আমি নোই। আমি আমার অন্তরাত্মার অর্থাৎ সত্যিকারের আমির চঞ্চলতা পছন্দ করি না। তাই কেউ যদি, আমার সাথে সত্যিকারের সাক্ষাৎ করতে চায়, তবে এই বক্তব্যের মধ্যেই আমাকে খুঁজে পাবে। কি দেখবেন এসে, রক্ত মাংসের শরীর, যা চামড়ার খোল দিয়ে ঢাকা ? মানুষ অনেক কিছু জানতে চায়। মানুষ বাইরে খোঁজে তার জবাব। জবাব তো তার ভিতরেই আছে। শুধু দৃষ্টিটাকে বাইরের থেকে ভিতরের দিকে নিবদ্ধ করুন। সবাই ভালো থাকুন - নমস্কার

আমাদের এই ভৌতিক দেহ একটা যন্ত্র বিশেষ। একে আমাদের কার্যক্ষম রাখতে হবে। এর প্রোগ্রামিং-গুলো ভালো করে জানতে হবে। এর ব্যবহার ভালো করে জানতে হবে। এটি একটি সুপার-কম্পিউটার। এই শরীর শুধু বিনোদনের জন্য নয়। ঘৃণার, বা অবহেলার  বস্তূ নয়।  আবার আবর্জনাও নয়। এর মধ্যে যে সুপ্ত অবিনাশী ঐশ্বরিক চৈতন্য-শক্তি আছে, তাঁকে খুঁজে বের করতে হবে। এবং তার দ্বারা যেমন বহির্জগৎকে জানতে হবে, তেমনি আপাততো অদৃশ্য যে ৫১ টি জগৎ আছে, তাকে জানতে হবে। এই ভ্রমন যেমন কষ্টদায়ক, তেমনি অসীম আনন্দের। এই ভ্রমণের জন্য সম্ভব হলে একজন গাইড নিন, তবে এই ভ্রমন অল্পসময়ে বেশী আনন্দদায়ক হবে, জ্ঞানদায়ক হবে । আর এই চৈতন্য শক্তির বিনাশ নেই, তাই কালের উর্দ্ধে উঠে নিজেকে উপলব্ধি করুন। তখন বুঝবেন, জন্ম-মৃত্যু বলে কিছু নেই।


কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, রাস্তাই  রাস্তা দেখাবে। যদিও প্রেক্ষাপটটা অন্য। পাণ্ডবেরা যখন স্বর্গারোহণে যান, তখন স্বয়ং ধর্মরাজ কুকুরের বেশে তাঁদের সঙ্গ দিয়েছিলেন। এগুলো পুরানের কথা।  এখন কি তা হয় ? উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কৈলাশ ভ্রমনে যাচ্ছেন, সঙ্গে গাইডও আছে, অন্য কিছু সহযাত্রীও আছে । কিন্তু তাদের সঙ্গে সঙ্গে চলেছে একটা অনাহূত কুকুর। কিছু দূর যাবার পরে, কুকুরটা পাহাড়ের রাস্তা থেকে কিছুটা নিচের দিকে একটা সরু রাস্তা বেয়ে নেবে, এগুতে লাগলো। উমাবাবুদের দল, গাইডের নির্দেশ নিয়ে, পাহাড়ের মূল রাস্তা দিয়েই এগুতে লাগলো। খানিকটা এগিয়ে দেখলো, রাস্তায় ধস নেবেছে। গাইড ফিরে এসে,উমবাবুদের নিয়ে আবার কুকুরের দেখানো রাস্তায় খানিকটা গিয়ে, কুকুরের মতো মূল রাস্তায় পড়লো। এগুলো কল্পনা নয়, সত্যি। গাইড ঘরে বসেও পাওয়া যায়। একা একা যারা বেরোতে ভয় পান, তারা কি করেন ? কন্ডাক্টেড টুরে যান। আমাদের যাত্রাতেও অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে গাইড মেলে। আপনার আগ্রহ আপনাকে গাইড চিনে নিতে সাহায্য করবে। তবে যখন কৈলাশের পথ ধরবেন, তখন কুকুর এসেই যাবে, আপনাকে ডাকতে হবে না।
এই  "কুকুর" কে তা বোঝার চেষ্টা করুন। "কু" কথাটার মানে পৃথিবী, গোত্র বা কুল, আর কুর কথার মানে ত্যাগ করা।  তো যিনি পৃথিবীর ভোগ বিলাসকে ত্যাগ করেছেন, যিনি  গোত্রহীন, কূলহীন, তাকেই বলে কুকুর । "কু" কথাটার আর একটা মানে হচ্ছে, খারাপ। আর "কুর" মানে ত্যাগ করা অর্থাৎ খারাপকে যিনি ত্যাগ করতে পেরেছেন, অর্থাৎ মঙ্গলপথের যাত্রী। এটি আপনার বাড়ির সারমেয় নয়।
দেখি নাই কভু তোমারি মুরতি।
তবু গড়িয়াছি তোমারই আকৃতি।
ভেবেছিনু আমি সেই হবে তুমি।
চেয়ে দেখি, সে-তো তুমি নয়, আমি।

আজো,  বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত  পন্ডিতরা, পুঁথিপত্র ঘেঁটে আত্মার অস্তিত্ত্ব বোঝার চেষ্টা করছে । হায়রে, কবে মানুষ অন্তরের দিকে দৃষ্টি ফেরাবে ?

পঞ্চ "ম" কার।

মৎস, মাংস, মদ, মৈথুন, মুদ্রা। এগুলোর অর্থ কি ?

মৎস : আমাদের শরীরে গঙ্গা যমুনা নদী আছে। যার আর এক নাম ইড়া-পিঙ্গলা। এর মধ্যে প্রাণ ও অপান বায়ু-রুপি মৎস সব সময় খেলা করছে। এই দুটিকে যিনি ধরতে পারেন,  অর্থাৎ প্রাণ-অপান এর ক্রিয়া যিনি নিরুদ্ধ করতে পারেন, তিনিই মৎস ভোজন করেন।

মাংস : কাম-ক্রোধ ইত্যাদি অসৎ পশুকে যিনি জ্ঞানরূপ অসি দিয়ে ছেদন করেন, এবং অবিষয় রূপ মাস যিনি ভোজন করেন, তিনি মাংস সাধক।

মদ : আমাদের ব্রহ্মরন্ধ্র থেকে যে রসধারা প্রতিনিয়ত নেবে আসছে, তাকে বলে সোমধারা। এই সোমরস ধারা যিনি পান করেন, তার জ্ঞানসমাধি হয়। একেই বলে মদ্যপান।

মৈথুন : সাধকের দেহধারিনী কুণ্ডলিনীর সঙ্গে সহস্রার  পদ্ম কর্ণিকার অন্তর্গত যে বিন্দুর যে মিলন তাকে বলে মৈথুন।  অর্থাৎ শিব রুপি বিন্দু, আর তার শক্তিরূপী কুণ্ডলিনী - এর মিলনকে বলে মৈথুন।

মুদ্রা : অসৎ সঙ্গ মুদ্রণ অর্থাৎ অসৎ সঙ্গ পরিত্যাগ করার নাম মুদ্রা। যিনি সহস্রার মহাপদ্মে কোটি সূর্য্যের প্রভার সঙ্গে কুণ্ডলিনী থেকে আত্মাকে নিয়ে জ্ঞানাকাশে বিচরণ করতে পারেন, তিনিই মুদ্রাযোগী।

ঈশ্বরের নামের একটা অমোঘ শক্তি আছে। এই নাম যোগপথের নানা বাধা বিপত্তি দূর করে। আমাদেরকে  অন্তরাত্মার সম্পর্কে সচেতন করে। রোগ, শোক, সংশয়, ভয়, ইত্যাদি মনের বিক্ষেপ দূর করে। নামের প্রতিনিয়ত জপ, আমাদের শরীরের  তন্ত্রগুলোর মধ্যে একটা সমন্বয় এনে দেয়।  ফলে আমাদের মন শান্ত হয়। মনের শক্তিগুলোকে বাড়িয়ে তোলে। ধ্যান জীবনের গোড়ায়, এটা বোঝা যায় না। নামের জপ যত গভীর ও অবিচ্ছিন্ন হবে, তত আমরা সেটা অনুভব করতে পারবো।

একটা বাসনা আর একটা বাসনাকে নিয়ে আসে। শেষে তার সংখ্যা এত হয়ে যায়, যে তাদের আর নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না। বর্তমান যেমন সত্য, ভবিষ্যতও তেমনি সত্য। মৃত্যুর পরে, আমাদের কি হবে ? বর্তমানের প্রতি অবশ্যই মনোযোগী হোন।  কিন্তু ভবিষ্যতের কথাও একটু ভাবুন। ভবিষ্যৎ তৈরি হবে আপনার বাসনা দিয়ে। তাই একে একটু মেজে ঘষে রাখুন।

সাধারণ মানুষের বিষয়ভোগেই আনন্দ।  আমরা মোক্ষ বা মুক্তির ধার ধারি না। বরং মৃত্যুর পরে , আবার জন্ম নেবার জন্য লালায়িত হই।  এইজন্য আমাদের আবার পুনর্বার জন্ম হবে কি না সেটা জানতে চাই। তবে এই ঘোর  আসক্তি বা অজ্ঞান অবস্থা মানুষের চিরকাল থাকে না। কারন আমাদের আসল স্বরূপের মধ্যে অজ্ঞান বা মোহের কোনো স্থান নেই। আমরা সবাই শুদ্ধ-মুক্ত-বুদ্ধ আত্মা। একদিন না একদিন আমাদের এই সত্যের উপলব্ধি আমাদের অবশ্যই হবে।  তা সে এই জন্মেই আর পরবর্তী জন্মে হোক। একদিন আমাদের বিষয়ের প্রতি বিরক্তি হবেই। একই জিনিসের প্রতি আমাদের আকর্ষণ যেমন চিরকাল থাকে না। ধীরে ধীরে আসক্তি কমে যায়, একসময় লুপ্ত হয়ে যায়। তেমনি কোনো এক শুভমুহূর্তে, আমাদের শুদ্ধ-বুদ্ধি আত্মস্থ হবেই। আর সেইদিন আমরা মহামুক্তির অধিকারী হবো।

যারা আমাকে (নিজেকে) জানতে চায়, তারা অহংকে (নিজেকে) গুরুত্ত্ব দেয়। তাই আত্মকে (নিজেকে) জানতে পারে না। যার আমি (অহং) বলে কিছু নেই, সেই নিজেকে জানতে পারে।

শক্তি তিনটি - সৎ-চিৎ-আনন্দ। সৎ ভাবে যিনি কাজ করেন, তিনি সৎ। আর এর ফলে তিনি হন প্রতাপশালী। চিৎ অর্থাৎ চেতনা বা জ্ঞান। এই শক্তির ফলে তিনি সত্য জ্ঞান  লাভ করেন। সবশেষে যে শক্তিতে যিনি নিজেকে আনন্দিত করেন, তাই আনন্দ। এই তিনকে  একসাথে বলে পরম-ঈশ্বর।

আগুন প্রজ্জ্বলিত হয় ইন্ধনের সাহায্যে, চাঁদ আলোকিত হয় সূর্য্যের আলোতে, সূর্য্য আলোকিত হয় হিলিয়াম গ্যাসের কারনে, আত্মাই একমাত্র যার নিজস্ব জ্যোতিঃ আছে। আসলে সব আলোর উৎসই আত্মা।

মৃত্যুতে আমাদের শুধু স্থুল দেহের নাশ হয়, পরিবেশের পরিবর্তন হয়। কিন্তু আমাদের  চেতনার কেন্দ্রবিন্দু অর্থাৎ ঈশ্বর সব সময় আমাদের মধ্যে আছেন। তাই ইহজন্মে আপনি যা কিছু আধ্যাত্মিক ধন সংগ্রহ করছেন, তা আপনার হারাবার নয়। সাধকের গতি সবসময় উর্দ্ধগতি হয়, আর সাধনলব্ধ জ্ঞান তাকে আধ্যাত্মিক সাধনার ধারা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই মৃত্যুর পরে, এমনকি অন্য শরীরে প্রবেশ করলেও তার তিনি ঈশ্বরের পাদপদ্মেই স্থিত থাকেন, আর আর সাধনক্রিয়া চলতেই থাকে। এটা একটা ধারা, যতই ঈশ্বরমুখী হয় ততই বাড়তে থাকে।

মন আমাদের চেতনকেন্দ্রের স্ফূরণ মাত্র  । প্রত্যেক সাধকের উচিত নিম্নতর চেতনকেন্দ্রের কাজ যথাসম্ভব বন্ধ করা আর উচ্চতর চেতনকেন্দ্রের উদ্দীপনা বৃদ্ধি করা। এবং সেটা করতে হবে আমাদের সচেতন ভাবে। বুদ্ধিযুক্ত চিন্তা যখন সচেতন ভাবে হয়, তখন আমাদের মধ্যে মনঃশক্তি প্রবাহের গতি দ্রুত বাড়তে থাকবে। এইজন্য, সচেতনভাবে নতুন ভাব আনার চেষ্টা করুন। এবং সেটা যেন হয় উচ্চতর চেতনকেন্দ্রে।

মা, আপনার যে অবস্থার কথা লিখেছেন, সেটা দুটো কারণে হতে পারে, ১. স্নায়ুর  দুর্বলতা থেকে ; এর জন্য, আপনাকে ডাক্তার দেখতে হবে। ২. ধ্যানের প্রক্রিয়া শুরু করবার আগে, শরীর ও মনের  ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য, যে প্রক্রিয়াগুলোর অনুসরণ করবার দরকার, তা না করার জন্য। সৎগুরুর আশ্রয়ে থেকে ধ্যান করাই উচিত ও শ্রেয় । উপযুক্ত শিক্ষক পেলে, আধ্যাত্মিক জীবন অবশ্যই সুখের হবার কথা, তা সে শারীরিক হোক বা মানসিক হোক। গোলমালটা কোথায়, সেটা নিজে ধরার চেষ্টা করুন, এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন। দেরি না করা ভালো। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুন।মা একটা কথা শুনুন, আমি ডাক্তারও নোই, গুরু বা আচার্য্য নোই। আমি একজন বক্তা মাত্র। আমাকে ভুল বুঝবেন না, দয়াকরে।

একটা গুহ্য কথা বলি - জপ-ধ্যানের  ফল আমরা অবশ্যই পাবো।  কিন্তু এই ফলের জন্য আমরা যেন প্রত্যাশা না করি। ফল  সময়মতো ফলবে। কিন্তু এই ফলের জন্য আমরা যদি উদগ্রীব হই, তবে আমাদের আমাদের আধ্যাত্মিক সাধনার পথে অসম্পূর্ণতা থেকে যাবে। আপনি মাটি খুঁড়ে ফলের বীজ পুঁতেছেন।  এখন যদি প্রতিদিন একবার করে, বীজটা মাটি থেকে তুলে দেখতে যান, যে অংকুর হলো  কি না, তবে কি হবে ? কোনোদিন অংকুর হতে পারবে না। আর আপনি ভাববেন বীজ পুতলে গাছ হয় না। আধ্যাত্মিক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ন বিষয় হচ্ছে আত্মসমর্পন। আপনার ক্ষুদ্র ইচ্ছেকে ভগবৎ ইচ্ছের সঙ্গে যুক্ত করতে শিখুন - তখনই সব  অলৌকিক ঘটনা ঘটতে থাকবে। একটা কথা মনে রাখবেন, আমাদের অন্তরাত্মার সঙ্গে সেই অনন্ত ঈশ্বরের অনন্ত সম্পর্ক চিরকালীন। আমাদের  কাজ অনন্যমনা হয়ে, ভক্তি সহকারে নিরন্তর অনুশীলনে রত থাকা।

প্রকৃত গুরু আমাদের সবার অন্তরেই অবস্থান করছেন। অধ্যাত্ম জীবনের প্রথমদিকে, আমরা দেহধারী  আচার্য্যের সাহায্য নিতে পারি।  কিন্তু অধ্যাত্ম জীবনে যত  আমরা অগ্রসর হবো, ততই আমরা দেখতে পারবো, আচার্য্যের কাছ থেকে আমরা যা শুনছি, তা আমাদের হৃদয়ের কথা। আমরা যদি অন্তরের গুরু বা দেহধারী  গুরুর কাছে আত্ম সমর্পন করি তবে তিনি আমাদেরকে নিম্নতর স্তরের অনুভূতি থেকে উচ্চতর স্তরের অনুভূতির দিকে নিয়ে যাবেন। এই অভিজ্ঞতা বাস্তবিক সবার হতে পারে। আমাদের কাজ হচ্ছে ঐকান্তিক ভাবে আধ্যাত্মিক পথে চলার শর্ত মেনে পা ফেলা।আমাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। সূক্ষ্ম ভাবাবেগ যেন আমাদের অকর্তব্য করিয়ে না নিতে পারে। আমরা যে কাজ করতে চাই, তা যেন প্রকৃত অনাসক্তি সম্পন্ন হয়। এই অনাশক্তিভাব না থাকলে আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনের কথা না ভাবাই ভালো। সময় কাটাবার জন্য আধ্যাত্মিক জীবন নয়। সময়কে সঠিক  কাজে লাগাবার জন্য আধাত্মিক জীবন।

ত্বং স্বাহা ত্বঃ স্বধা ত্বং হি বষটকারঃ স্বরাত্মিকা
সুধা ত্বমক্ষরে নিত্যে ত্রিমাত্রাত্মিকা স্থিতা। (মার্কন্ডেয় দেবী মাহাত্ম শ্লোক-৫২)

হে মাতা, তুমি স্বাহা অর্থাৎ তুমি হবি গ্রহণের যোগ্য।এটি যজ্ঞের হবি প্রদানের মন্ত্র।  তুমি স্বধা - এটি পিতৃকার্য্যের মন্ত্র। আর বষটকার এটি সব মন্ত্রের উপলক্ষ্মণ।  স্বরাত্মিকা অর্থাৎ উদাত্তাদি স্বর বা উচ্চগ্রামে যে উচ্চারণ হয়।অর্থাৎ স্বরের সমস্ত মাত্রা (পরা-পশ্যন্তি-মধ্যমা-বৈখরী) এর মধ্যে আছে।   তুমি সুধা - অর্থাৎ মমতাময়ী। তুমি অক্ষরে অর্থাৎ পরমাত্মায় নিত্য স্থিত। আবার ত্রিমাত্রায় অর্থাৎ স্বর্গ-মর্ত-পাতাল  সর্বত্র স্থিত, অর্থাৎ তিনটি স্তরে অবস্থিত ।

মন্ত্রে যখন চেতনাশক্তি প্রবাহিত হয়, অর্থাৎ মন্ত্রে যখন ইষ্টদেব প্রতিষ্টিত হয় তখন তার উচ্চারনে দেবতা প্রত্যক্ষ হয়। ফুসকা কথাটা শুনলে আমাদের জিভে জল আসে, কারন ফুসকা সম্পর্কে আমাদের প্রত্যক্ষ জ্ঞান  আছে। অর্থবহ শব্দ চেতনকেন্দ্রে স্ফূরণ ঘটায়। আবার কতকগুলো শব্দ যার কোনো অর্থ নেই, যেমন বজ্রের ধ্বনি, আমাদের চেতনকেন্দ্রে  চমক আনে। এটি কেবলমাত্র ধ্বনির কার্যকারিতা।

অধ্যাত্ম জীবনে শরীর সম্পর্কে দুটো জিনিষ খেয়াল রাখতে হয়। এক হচ্ছে শরীরকে ভালোবাসা, আর একটি হচ্ছে শরীরকে অবহেলা করা। এই দুটোই ক্ষতিকর। শরীর হচ্ছে ঈশ্বরের মন্দির। তো মন্দিরের ইট-কাঠ-পাথর ঈশ্বর নয়। আবার মন্দিরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, কারন এখানেই ঈশ্বর অবস্থান করছেন।

ওঁ ভদ্রং কর্নেভিঃ শৃনুয়াম দেবা ভদ্রং পশ্যেম অক্ষভিঃ যজত্রাঃ।
স্থিরৈ অঙ্গৈ তুষ্টূবাংস তনুভিঃ ব্যশেম দেবহিতং যদায়ুঃ।।
 ওঁং শান্তি শান্তি শান্তিঃ।।

এটি একটি মঙ্গলাচরণ।  অর্থাৎ দেবতাদের কাছে, প্রার্থনা। সব উপনিষদের প্রারম্ভে এই ধরনের একটা না একটা প্রার্থনা সঙ্গীত থাকে। এইগুলো সবই অর্থবহ, এবং মন্ত্রের মতো কাজ করে। যথযথ অর্থ মননের ফলে, আমাদের মনের পবিত্রতা ও শক্তি বৃদ্ধি হয়, ভয় দূর হয় ।
 এখানে বলা হচ্ছে, হে পরমেশ্বর আমরা যেন যা কিছু ভালো, শুধু তাই-ই কান দিয়ে শুনি।  চোখ দিয়ে যেন শুধু ভালো কিছুই দেখি। কায়মনবাক্যে অর্থাৎ শরীর-মন ও বাক্য দ্বারা যেন সদা তোমারই জয়গান করি। আমাকে যে আয়ু দিয়ে এখানে পাঠিয়েছো, তা যেন বজায় রাখতে পারি। আমাদের শরীর ও মনের শান্তি বজায় থাকুক।  পরিবেশ ও প্রাকৃতিক শান্তি বজায় থাকুক।  জীব, কীটপতঙ্গ, ও হিংস্র প্রাণী হতে আমাদের রক্ষা করুন। 



অদ্বৈত তত্ত্বের ধারণা করা কঠিনতম। এই তত্ত্ব সুগভীর, অনাদি, অপরিবর্তনীয়, শুদ্ধ ও পরম সত্য। যিনি এই তত্ত্বকে বোঝার জন্য সর্ব্বশক্তি প্রয়োগ করেছেন, তাঁকে  প্রণাম। এই পরম সত্যতেই  সবার  শ্রদ্ধা জাগুক, প্রতিষ্ঠিত হোক  ।

গুরু বৃথাই শিষ্যকে উপদেশ দেন। কারন ঈশ্বরকে বাক্যের দ্বারা বোঝানো যায় না। তবু যদি কেউ ঈশ্বরকে কথা দ্বারা বোঝাবার চেষ্টা করে, বা বোঝবার চেষ্টা করে, তবে সেটা  অপব্যাখ্যাই হবে। তাই সৎগুরু বোবা। আর গুরুর কাছ থেকে শুনে ঈশ্বরের স্বরূপ সম্পর্কে ধারণা করতে পারে না বলে, সত্যিকারের শিষ্য বোবা। সে শুধু গুরুমুখী হয়ে বসে থাকে। ঈশ্বর একমাত্র উপলব্ধি দ্বারা  অধিগম্য। গুরু-শিষ্যের মধ্যে অন্তরের আদান-প্রদান, শিষ্যকে ঈশ্বরের দিকে টেনে নিয়ে যায়।

সমস্যা যত গভীর, সমাধান তত সহজ। কেবল দেখতে থাকুন, সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আপনার ছেলেটি, বা আপনার বাড়ির কাজের লোক, আপনার কথা শোনে না। মুখে মুখে তর্ক  করে , বড্ড বেয়ারা। কিছু বলার দরকার নেই তাকে। সতর্ক হয়ে, কেবল তাকে পর্যবেক্ষেপন করুন। গভীর মনোযোগ দিয়ে কেবল তাকে দেখতে থাকুন। অভিব্যক্তি বিহীন হয়ে দেখতে থাকুন। একটা কথা মনে রাখবেন, চোর যদি বুঝতে পারে, আপনি জেগে আছেন, তবে সে আপনার ঘরে ঢুকবে না। আপনি শুধু নিজের আলোটা আপনার ঘরে জ্বালিয়ে রাখুন। তবেই দেখবেন, আপনার চারিদিকে সবাই সতর্ক হয়ে গেছে।

স্বামী সোমেশ্বরানন্দের কাছে এক ভদ্রমহিলা এসেছিলেন কথা বলতে। তার মেয়ে বড় হয়েছে। বিয়ের চেষ্টা চলছে। কিন্তু কিছুতেই  বিয়ে হচ্ছে না। কোনো ছেলেকেই ভদ্রমহিলার পছন্দ হয় না। আর যাকে পছন্দ হয়, সেখানে কথা কিছুদূর এগিয়েও ভেঙে যায়। ভদ্রমহিলা জিজ্ঞেস করলেন, আমার মেয়ে কি পূর্বজন্মে কোনো পাপ করেছিল যে  এই জন্মে তার বিয়ে হচ্ছে না ?

স্বামীজী হেসে বললেন, দেখুন ম্যাডাম, আমিও বিয়ে করিনি। আমি তো মনে করি, আগের জন্মে আমি নিশ্চয়ই অ-নে-ক পুন্য করেছিলাম, যে জন্য এজন্যে বিয়ে করতে হয় নি।

ভগবান ওশো রাজনীশ।  পুনাতে যার আশ্রম আছে। যিনি নেশা ও নারীকে বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে গ্রহণ করেছেন । তো তার কাছে এক ভদ্রলোক  এলেন। সে ত্রিশ  ধরে সিগেরেট খায়। এখন সে সিগেরেট ছাড়তে চায়, কিন্তু কিছুতেই পারছে না। এর জন্য তার নিজের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে।

রাজনীশ বললেন - সিগারেটে ছাড়ার কথা আপনি ছেড়ে দিন।  কি হবে সিগারেটে ছেড়ে দিয়ে ? যার সঙ্গে আপনি দীর্ঘ ত্রিশ বছর  একসাথে আছেন ? আপনি ত্রিশ বছর  ধরে অভ্যাস করছেন, আপনি তো বিশাল যোগী।

ভদ্রলোক বললেন - সিগারেটে খাওয়া খুব খারাপ, আমার কাশি হচ্ছে। এতে আমার আয়ু কমে যাচ্ছে।

ওশো বললেন : ঠিক এটা সত্য। কিন্তু আপনি একে ছেড়ে দেবার কথা ভুলে যান। কি হবে,দীর্ঘদিন বেঁচে।  কি যায় আসে, আপনি আজ মরবেন কি কাল মরবেন  মানুষের রোগ-ভোগ নিত্যসঙ্গী। কে কবে এর থেকে রেহাই পেয়েছে ? বরং  এর পর থেকে আপনি সিগারেট নিয়েই ধ্যান করুন।

সিগারেটে দিয়ে ধ্যান ? আপনি কি আমার সাথে মশকরা করছেন।

না মোটেই না। জেন্ ধর্মাবলম্বীরা চায়ের আসরে মেডিডেশন করে। আপনি সিগারেটে নিয়ে মেডিটেশন করতে পারেন।

কি ভাবে ?

সিগারেটের সৌন্দর্য্য দেখুন। সিগারেটের গন্ধ নিন। ভগবানের এ এক অপূর্ব সৃষ্টি। সিগেরেট খাবার প্রতিটি মুহূর্ত আপনি সতর্ক থাকুন, তা সে প্যাকেট থেকে সিগেরেট বার করা থেকে শুরু করে, প্রতিটি টানে, আপনি ঈশ্বরকে স্মরণ করুন। ঈশ্বরকে উপলব্ধি করুন।

আপনি নিশ্চয়  আমার  সঙ্গে মশকরা করছেন।

দেখুন, আমি যখন মশকরা করি, তখনও আমি মশকরা করি না।

সাগর ও তার তরঙ্গ একই বস্তূ। সূর্য ও তার রশ্মি একই বস্তূ। যে কোনো বস্তূ ঈশ্বরের প্রতীক হবার যোগ্য, কেননা সমস্ত বস্তুই ঈশ্বর হতে সৃষ্ট। তবে একটা মনে রাখতে ঈশ্বরের প্রতীক আর ঈশ্বর এক নয়। তাই ধ্যানে আমাদের দৃষ্টি প্রসারিত করতে হবে সেই শাশ্বত বস্তুতে, স্বয়ং জ্যোতিতে।      



















   

No comments:

Post a Comment