Wednesday 6 April 2022

কার জন্য খেটে মরছ তুমি ? সশরীরে ভগবানের সাক্ষাৎ দর্শন


কার জন্য খেটে  মরছ তুমি ? 

এক মহাত্মা বলেছিলেন, জীবনের অশান্তি দূর করবার জন্য কাজ করুন, হয় নিজের জন্য নতুবা পরের জন্য। জীবন সমস্যা থেকে রেহাই পাবার আর থেকে মূল্যবান উপদেশ আর কিছু হতে পারে না। কথাটা শুনে দ্বন্দে পড়ে গিয়েছিলাম। আমরা তো সবাই  কাজ করি হয়, নিজের জন্য নতুবা পরের  জন্য।  এর মধ্যে নতুন কি আছে ? পড়াশুনা করেছিলাম, নিজের জন্য, বড়ো চাকরি পাবো, গাড়ি হবে, বাড়ি হবে, সুন্দরী বৌ হবে ইত্যাদি ইত্যাদি স্বপ্ন পূরণের ইচ্ছে থেকেই ভালো করে পড়াশুনা করেছি।  আর এখন কাজ করছি, ছেলেমেয়েদের জন্য, স্ত্রীর জন্য। ভবিষ্যতে যাতে স্ত্রী-ছেলেমেয়ে ভালো থাকবে।  আর এরা  সবাই ভালো থাকলে, আমি নিজেও সুখী হবো। 

মহাত্মা বলছেন, ব্যাপারটা এমন নয়। একটু খুলেই বলি। দেখো নিজের কাজ করতে গেলে আগে নিজেকে চিনতে হবে।  তুমি কে তাকি  তুমি জানো ? তুমি হয়তো বলবে । আমি অমুক, পিতার নাম অমুক। অমুক জায়গার বাসিন্দা। আমি একজন শিক্ষক। আমার ববয়স ৪৫ বছর। ইত্যাদি ইত্যাদি বলে, নিজের পরিচয় দেবে। আসলে এই যাকিছু  তুমি নিজের বলে ভাবছো, বা যাকে  তুমি "আমি" বলে ভাবছো, এরা  কেউ তুমি নও। এরা সবাই "তোমার".এমনকি তুমি, না এই শরীর, না এই মন, এগুলো সবই "তোমার" "তুমি" নয়। তুমি হোচ্ছ আত্মা। যা তুমি ভুলে বসে আছো। তো নিজের স্মৃতিকে জাগিয়ে তোলো, আগে নিজেকে সনাক্ত করো। তাহলেই না তুমি নিজের জন্য কাজ করতে পারবে। এর জন্য দরকার সাধনক্রিয়া।  যা তুমি করো না। সাধনক্রিয়া করে, যখন তুমি তোমার স্মৃতিকে জাগিয়ে তুলতে পারবে, তখন তুমি তোমার স্বরূপকে জানতে পারবে।  তখন তুমি যাকিছু করবে, তা হবে তোমার নিজের কর্ম্ম। যদিও তখন তোমার আর কর্ম্ম অবশিষ্ট থাকবে না। তখন যা কিছু করবে, তা হবে সেই পরমপুরুষের কাজ। আর পরমপুরুষ কাজে যখন তুমি নিযুক্ত হবে, তখন দেখবে, তোমার মধ্যে থেকে সমস্ত দুশ্চিন্তা চলে গেছে। কোনো কাজের পরিনাম নিয়ে তখন তোমাকে আর ভাবতে হবে না। কারন যাঁর হয়ে তখন তুমি কাজ করবে, সে-ই তোমার সমস্ত কাজের ভালো-মন্দ নিয়ে নেবেন।  তুমি তখন নিমিত্ত মাত্র।  সমস্ত কর্ম্মের কর্তা  হয়ে যাবেন, তখন সেই পরমপুরুষ।  আর তুমি নিশ্চিন্তে জীবন অতিবাহিত করতে থাকবে। তো যা বলছিলাম নিজের জন্য যদি কিছু করতে চাও, তবে তা হবে তোমার সাধনা - সাধনকর্ম্ম। এই সাধনক্রিয়া না করে, আর যাকিছু জাগতিক কর্ম্ম করছো, তা আসলে তোমার জন্য নয়, এগুলো সবই অন্যের জন্য, আর এই অন্যের জন্য কাজ করতে করতে তুমি হয়রান হয়ে গেছো, নিজেকে ফলাফলের ভাগিদার ভেবে, নিজেকে বঞ্চিত করছো। তো আগে নিজেকে চেনো, তার পরে নিজের জন্য কাজ করতে পারবে। 

এখন শোনো পরের জন্য কিভাবে কাজ করতে হয়। তুমি কোথায় কাজ করো ? রেলে ? দেখো রেখে কাজ করছো, রেল তোমাকে মাস গেলে মাইনে  দিচ্ছে। মাইনের টাকা দিয়ে তুমি তোমার স্ত্রী-ছেলেমেয়েদের, পিতা-মাতার ভরন-পোষণের দায়িত্ত্ব পালন করছো। দূর্গা পুজোর মায়ের মূর্তি দেখেছো ? সামনে থেকে তো নিশ্চই দেখেছো। কি সুন্দর মায়ের মূর্তি। দেখলে মন জুড়িয়ে যায়।  কিন্তু পিছন দিকে গিয়ে দেখেছো কখনো ? পিছনে গেলে দেখতে পারবে, মায়ের পিছনটা খড়-কুটো-বাঁশ-কাঠ দিয়ে তৈরী।  এতটুকু রং তো দূরের কথা একমুঠো মাটি দিয়ে তাকে ঢাকার চেষ্টা করা হয় নি। তুমি হয়তো বলবে, হ্যাঁ তা আমি জানি। মায়ের পুজো হয় সামনের দিকে, পিছনটা ওমনিই থাকে। কখনো কি ভেবে দেখেছো, সামনের দিকটা এতো সুন্দর করা হলেও, কেন মায়ের পিছন দিকে নগ্ন করে রাখা হয় ? কখনো কি ভেবে দেখেছো, মায়ের সামনের দিকে কাপড় থাকলেও, মায়ের পিছন দিকটা কেন উন্মুক্ত থাকে।  উদ্যোক্তাদের কি সত্যিই টাকা পয়সার  অভাব বা এতটুকু কাপড়ের অভাব, বা মাটি রঙের অভাব, যাতে তারা মায়ের পিছন দিকটাকে সুন্দর করে তৈরী করতে পারে না। কখনো কি ভেবে দেখেছো, মা কালীর পায়ের তলায় কেন দেবাদিদেব  শিব ঠাকুরকে শুইয়ে, মা পা দিয়ে চেপে ধরেছেন, আবার লজ্জ্বায় জীব কাটছেন ?  

সশরীরে ভগবানের সাক্ষাৎ সম্ভব ? 

ভগবানকে কে এই চর্ম্মচক্ষু দিয়ে  দেখা যায় ? অর্জ্জুন ভগবান-এর বিশ্বরূপ  দেখেছিলেন।  কিন্তু সে দেখা চর্ম্মচক্ষু দিয়ে নয়, দিব্য চক্ষু দিয়ে।  আমার মাঝে মধ্যে মনে হয়, প্রকৃতি পুরুষের মিলনে, মায়ের শরীরে মধ্যে সন্তানের সাক্ষাৎ জন্ম হয়।  এক সময় এই সন্তান ভূমিষ্ট হলে সন্তানের সাক্ষাৎ দর্শন পাওয়া যায়। নিজের মধ্যে নিজের অনুরূপ একটা স্থুলদেহ। এই যে সৃষ্টিশক্তি এটি স্রষ্টার  হ্লাদিনী শক্তির প্রকাশ  স্বরূপ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে  ভগবান কি ভগবানের জন্ম দিতে পারে ?  

স্বয়ং ভগবানকেও নাকি স্থুল ভাবে সাক্ষাৎ লাভ করা যায়। সত্যিই কি এটা সম্ভব ? ভগবানকে কি সশরীরে সন্তানের মতো  দেখতে পাওয়া যায় ? যদি পাওয়া যায় তবে কিভাবে সেটা সম্ভব ? আমরা সেই সম্পর্কে শুনবো।

মহামহোপাধ্যায় ডক্টর গোপীনাথ কবিরাজ একবার এক বন্ধুর কাছে শুনলেন, কাশিতে এক মহাপুরুষের আবির্ভাব হয়েছে, তাকে লোকে ভগবানের অবতার বলে শ্রদ্ধা করে। তো তার খোঁজ করতে করতে একদিন "প্রণব আশ্রমে" যান।  এই প্রণব আশ্রম হচ্ছে যোগরাজ শ্যামাচরণ লাহিড়ীর শিষ্য প্রণব মহারাজের নামাঙ্কিত। ১৯২০ সালের কথা তখন প্রণব মহারাজ আর বেঁচে নেই।

তো কবিরাজ মহাশয় প্রনবাশ্ৰমে গিয়ে সেখানকার সাধক সাধিকাদের কাছ থেকে শুনলেন, তাঁরা নাকি অনেকেই অলক্ষে ভগবানের দর্শন পান। ভক্তদের মধ্যে যিনি প্রধান তিনি বললেন, প্রথম দিন গোপালমূর্তির দর্শন পেয়েছিলাম। মধ্যরাতে ঘরের দরজা বন্ধ করে, আলো  নিভিয়ে ধ্যানে বসতে হতো। চারিদিক  নিঃশব্দ, গভীর রাত্রি। একসময় অনুভব হলো একটা শিশু  কোলে বসে আছে। শ্রীগুরুর আদেশে সাধনকালে চোখখোলা নিষেধ।  তাই চোখ বন্ধ ছিল। শিশুটিকে চোখে  দেখতে পাই নি, কিন্তু তার স্পর্শ অনুভব করছিলাম।  আর অন্তর্দৃষ্টিতে তাকে দেখতে পাচ্ছিলাম। সারারাত গভীর ধ্যানে মগ্ন ছিলাম। সকালবেলা বুত্থিত হয়ে স্মৃতিমন্থন করতে লাগলাম, এবং এই ঘটনা সত্য বলেই মনে হয়েছিলো। এর পরের দিন, আমি ফুল দিয়ে মুকুট, মালা, নুপুর, আংটি, মণিবন্ধ, দুল ইত্যাদি ফুলের গয়না তৈরি করে যত্ন সহকারে, পূজা গৃহে রেখে নিজের আসনে বসে ধ্যানস্থ হলাম। আজও একটা শিশুর আবির্ভাব হলো। আমি ফুলের অলঙ্কার দিয়ে শিশুটিকে সাজালাম। পুষ্প সজ্জায় সজ্জিত শিশু আমার কোলে এসে বসলো। শিশুটি কোলে এসে বসবার  পরেই  আমি  ধ্যানমগ্ন হয়ে গেলাম।  সকালবেলা যখন ধ্যান ভাঙলো, তখন আমার পূর্বরাত্রির স্মৃতি জেগে উঠলো।  দেখলাম, ফুলের অলংকারগুলো  কোথাও নেই। শিশু মূর্তি যেমন অদৃশ্য হয়ে গেছে, তেমনি ফুলের মালাগুলোও তিরোহিত হয়েছে। 
 এর পরে, কিশোর গোপালের দর্শন হতে লাগলো। আর এই কিশোর গোপাল অবিকল ভগবান তারাকিশোরের মূর্তি। ভগবান অর্থাৎ  তারাকিশোর চৌধুরী মহাশয় ।  আর এই কিশোর  মূর্তি তাকে যোগ ও জ্ঞানের উপদেশ দিতেন। এই ধরনের দর্শন নাকি ওই প্রনবাশ্রমের অনেকের প্রতক্ষ্য হয়েছে।  
যাইহোক, এইধরনের অলৌকিক দর্শনের কথা শুনে, কবিরাজ মহাশয়ের কৌতূহল তীব্র  হয়। এবং এই সাধনার যিনি উপদেষ্টা তার সাক্ষাৎ করতে যান।       
অর্থাৎ প্রণবাশ্রম  থেকে খবর পেয়ে তিনি স্বয়ং ভগবানের দ্বারে উপস্থিত হন। এনার আসল নাম শ্রী তারাকিশোর চৌধুরী। কলকাতায় ওকালতি করতেন। বহুদিন কলকাতায় অবস্থানের পরে, শেষ বয়সে কাশীবাসের জন্য আগমন করেন। ইনি সন্তদাস  বাবাজির ঘনিষ্ট ছিলেন। তাঁর কাছ থেকেই পাতঞ্জল দর্শনের ব্যাসভাষ্য অধ্যায়ন করেছিলেন। যাইহোক,  মহাত্মাপুরুষকে একথা বলতেই তিনি বললেন - "ওর আমাকে ভগবান বলে ডাকে বুঝি  ?" .... অজ্ঞ লোকে যা মনে করে, তা সত্য নয়। তবে,  সাধারণ লোকের ধারণা, ভগবানের দর্শন পাওয়া যায় না। কঠোর তপস্যা ভিন্ন হৃদয়মধ্যে তার সারা পাওয়া যায় না। ইত্যাদি ইত্যাদি আসলে  ভগবানের দর্শন পেতে গেলে মনের বাসনাকে নিরুদ্ধ করে, নিত্য-চিন্ময় জগতে প্রবেশ করতে হয়। সরলতা, বিশ্বাস এবং একনিষ্ঠতা থাকলে এই কলিযুগেও ভগবৎ দর্শন সম্ভব।".....মানুষ বিশ্বাস করতে পারে না বলে দর্শন পায় না। কলিযুগে ভগবৎকৃপা অন্যযুগের তুলনায় অধিক। কলিযুগে জীব নানাভাবে পীড়িত হয়ে, নানা তাপে  তাপিত হয়ে, নিরাশ্রয় হয়ে হাহাকার করছে। তাই ভগৎকৃপার অভিব্যক্তির  এটাই উপযুক্ত সময়।"

গল্পটা  এই রকম : ভগবান তারাকিশোর চৌধুরী বলছেন : 

লাহিড়ী মহাশয়ের সাক্ষাৎ শিষ্য প্রণবানন্দ মহারাজ নামাঙ্কিত এই আশ্রম তার এক প্রধান শিষ্যের দানে তৈরী হয়। প্রণবানন্দ মহারাজের অনেক শিষ্য ছিলেন। মহারাজের মৃত্যুতে তারা সবাই শোকাহত হন। গুরুদেবের দেহান্তরে তারা সবাই নিরাশ্রয় হয়ে পড়েন।  এই আশ্রমে  পুলিশ  বিভাগের একজন উচ্চশ্রেণীর কর্ম্মচারীও যাতায়াত করতেন। এই ভদ্রলোকের সাথে আমার    আগে থেকে পরিচয় ছিল। তো এই পুলিশ কর্ম্মচারীর কথায়, প্রনাবন্দ মহারাজের কয়েকজন শিষ্য আমার সাথে দেখা করে।  তাদের বিশেষ অনুরোধে আমি বিকেলবেলায় ওই আশ্রমে গিয়ে তাদের কিছু ধর্ম্ম-উপদেশ  দিতে সম্মত হলাম।  তাদের আর্তি দেখে আমার মনের মধ্যে সমবেদনা উৎপন্ন হয়েছিল। এর পর থেকে প্রতিদিন আমি ওই আশ্রমে এক ঘন্টা বসতাম। তাদের  কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতাম।  একদিন ওই আশ্রমের নির্ন্মাতা ভক্ত আমাকে বললেন, আমাদের গুরুদেবের মৃত্যু হয়েছে। আমরা অত্যন্ত শোকাহত। সাধন পথে উপদেষ্টার অভাবে সাধন পথের  নানান সমস্যার সমাধান করতে পারছি না। আপনি যদি দয়া  করে সাহায্য করেন। 
তো আমি তাদের বললাম, তোমরা বলছো, তোমাদের গুরুদেবের মৃত্যু হয়েছে। বাস্তবে গুরুদেবের কখনো মৃত্যু হয় না। তোমাদের কথায় বোঝা যাচ্ছে, তোমরা গুরুদেবকে চিনতে  পারোনি। যদি পারতে  তবে একথা বলতে না। যিনি মৃত্যু থেকে উদ্ধ্বার করবেন, তারই যদি মৃত্যু হয়, তবে গুরুদেবের সার্থকতা কোথায় ? তোমরা এখনো সত্যিকারের গুরুপ্রাপ্ত হতে পারো নি। তো আমি তাদের বললাম, আগে গুরু লাভ করো.. গুরু গুরুই হয়।  গুরু নিত্য।  গুরু কখনো মানুষ হতে পরে না, আবার মানুষ কখনো গুরু হতে পারে না। আমার এ কথায় সবাই বিব্রত বোধ করলো। আমি বললাম, গুরু খুঁজতে হয় না। শিষ্য হতে পারলে, গুরু সহজেই পাওয়া যায়। তোমরা আসলে কেউ এখনো শিষ্য হতে পারো নি। আগে নিজের মধ্যে শিষ্যোচিত গুনের বিকাশের চেষ্টা করো। এ-কথায় প্রধান ভক্ত বলে উঠেন, আমরা কি তাহলে এতদিন গুরুআজ্ঞা পালন করিনি ? 

আমি বললাম, গুরু আজ্ঞা পালন করেছো ঠিকই কিন্তু বিচারপূর্বক। গুরু-আজ্ঞায় বিচার করতে নেই। দেখো গুরু সর্বজ্ঞ।  তোমার আধার কতটুকু তোমার সামর্থ কি তা তিনি জানেন। প্রকৃতপক্ষে গুরুর কৃপাভিন্ন শিষ্যের মধ্যে প্রকৃত  শিষ্যত্ব জাগে না। গুরুদেবের অসীম ক্ষমতা, জ্ঞান, এবং তার দৈনন্দিন আচরণ শিষ্যকে গুরুর কাছে মাথা নত করতে বাধ্য করে। তখন শিষ্যের সঙ্গে গুরুর আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরে এমন একটা সময় আসে, যখন গুরু-শিষ্য ভেদ মুছে যায়।  শিষ্য তখন গুরুর পদে আসীন হন । 

যাইহোক, আমরা কথা যারা  শুনছিলো, তার মধ্যে দুই তিন জনকে আমি আলাদা করে কিছু উপদেশ দিলাম। এই উপদেশ আর কিছুই নয়, কিভাবে ধ্যান করবে, কিভাবে নাম-জপ করবে। বললাম, ধ্যানের নিমিত্ত আসনে বসবার আগে, ধ্যানগৃহের দরজা বন্ধ  করে দেবে, যাতে সাধনার সময় অন্য কেউ ব্যাঘাত না করতে পারে। সাধনার পক্ষে রাত্রিকাল উপযুক্ত সময়। সাধনার সময় আসন ত্যাগ করতে নেই। এমনকি বিশেষ দর্শনে ভীত হয়েও আসন আঁকড়ে বসে থাকতে হবে। মনের মধ্যে সরলতা, ঐকান্তিকতা, নিষ্ঠা ও দৃঢ় বিশ্বাস - এইসব গুন্ থাকা আবশ্যিক। আমরা যেমন প্রিয়জনের আগমনের অপেক্ষায় দিনের পর দিন, রাতের পর রাত তারই চিন্তা, তারই পথপানে চেয়ে থাকি সেই মতো হৃদয়ে প্রতীক্ষার ভাব পোষণ করতে হবে। 

এই ছিল আমার উপদেশ। এতে করে, যারা নিষ্ঠার সঙ্গে আমার কথা মতো সাধনার অভ্যাস নিয়মিত করেছে, তাদের মধ্যে একটা পরিবর্তন সংগঠিত হতে লাগলো। এর পরে তিন-চার মাস গত হয়ে গেছে। একদিন খবর পেলাম,  শিষ্যদের মধ্যে যিনি প্রধান, তিনি ভগবানের দর্শন করতে শুরু করলেন। দর্শন অবস্থায় আবির্ভূত রূপের কাছ থেকে সে নানান উপদেশ লাভ করতে লাগলো। আরো দুই একজনের মধ্যেও এই রূপের দর্শন হতে লাগলো। কিছু যোগক্রিয়া, আসন, মুদ্রা, ইত্যাদির অভ্যাসে, তাদের মধ্যে নানান পরিবর্তন লক্ষিত হতে লাগলো। শারীরিক সুস্থতা দেখা দিতে লাগলো। যোগক্রিয়ায়, ধ্যানাদিতে তাদের উৎসাহ বর্দ্ধিত হতে লাগলো। 

একজন ভক্তের জীবনে আধ্যাত্মিক পরিবর্তন দেখে, অনেকেই এই সাধন পদ্ধতিতে আকৃষ্ট হলো, উৎসাহ ও আন্তরিকতা নিয়ে সাধনের ফলে কারুর কারুর মধ্যে অল্পবিস্তর সাধনার ফলও  ফলতে লাগলো। শেষে এই ভাবের বিস্তার এমন ভাবে ঘটেছে, যে যাদের সংযাগে আমার কোনোদিন সাক্ষাৎ হয় নি, তারাও নিজ নিজ বিশ্বাস ও ভক্তির জোরে, সাধনফল প্রাপ্ত হতে লাগলো। কেউ কেউ আমার সঙ্গে দেখাও করতে আসতো। এই সাধনা নতুন কিছু নয়, বৈদিক যুগ  থেকে চলে আসছে । বস্তুত এই সাধন ভক্তি সাধনা। এই সাধন থেকেই কর্ম্ম ও জ্ঞান আপনা আপনি ফুটে ওঠে। 
----------------------------    




 



             

No comments:

Post a Comment