Wednesday 15 July 2020

করোনা-পরবর্তী সমাজ শিবাম্বু

                                                              
করোনা-পরবর্তী সমাজ :

 নচিকেতা যমরাজের কাছে বড় চেয়েছিলো, আমি ফিরে গেলে পিতা যেন  আমাকে চিনতে পারেন । সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব কিছু পাল্টে যায়। সময়ের নিত্যসাথী এই পরিবর্তন। কিন্তু পরিবর্তন কখনো সময়কে পিছিয়ে দিতে  পারে না। সময়ের সঙ্গে তালমিলিয়ে পরিবর্তনকে এগিয়ে চলতে হয়। কিন্তু আজ একটা অদ্ভুত পরিস্থিতি  এসেছে, যখন আমরা সময়কে পিছিয়ে দিতে চাইছি। আমরা যেন ৫০০ বছর  পিছিয়ে যেতে চাইছি।
মৃত্যুকে, তা  সে যে কারণেই হোক, যারা  রুখে এমনকি পিছিয়ে দিতে চাইছেন, তারা মহামূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। মৃত্যু একটা অমোঘ সত্য। বুদ্ধদেব এই  রোগ-জরা ব্যাধি-বার্ধক্য দেখে বিড়ম্বিত  হয়েছিলেন। রাজার আসন  ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন, এর প্রতিকারের জন্য। কিন্তু তিনি যখন সত্যকে জানতে পারলেন, তখন এই অমোঘ নিয়মের পরিবর্তনের কথা আর ভাবেন নি, ভেবেছিলেন এর জন্য যে দুঃখ হয়, তা কিভাবে দূর করা যায়। পৃথিবীটার একদিকে আঁতুরঘর আর একদিকে শ্মশান। এটাকে যারা পরিবর্তন করতে চাইছেন, তারা সবাই  একদিন কবরে শুয়ে পড়বেন, পৃথিবী পৃথিবীর মতোই থাকবে।
গত পঞ্চাশ ষাট বছর ধরে মানুষ এগুচ্ছিলো দ্রুততালে। প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নিচ্ছে। আমাদেরকে প্রকৃতির সাথে সহযোগিতা করতে হবে। তা যদি না করতে পারি, তবে বার বার আমরা প্রকৃতির রোষের মুখে অবশ্য়ই পড়বো। 
আমাদের শরীরে, আমাদের অন্তরে, আমাদের জীবনচক্রে সময় একটা ছাপ রেখে যায়। এই ছাপ আমরা দেখতে পারি, আমাদের শরীরের পরিবর্তনের মাধ্যমে, অর্থাৎ বেঁচে থাকতে শিশু, কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ়, বার্ধক্য এবং শেষ পরিণতি হচ্ছে শরীরের মৃত্যু। শরীরের মৃত্যু তো আমাদের নাশ নয়, নতুন শরীরের খোঁজে আমরা বেরিয়ে পড়ি। এই যাত্রা অনন্ত , একে বেঁধে রাখে কার সাধ্যি। এটা যেমন  ব্যাক্তিসাপেক্ষে সত্য তেমনি সমষ্টিসাপেক্ষে সত্য। সময়ের এই চরিত্র একটি বহমান ধারা। সময় ও পরিবর্তনের  এই যে মেলবন্ধন একে সহযোগিতা করে, মারি-মহামারী। এই মৃত্যু নিশ্চই আমাদের সবাইকে প্রভাবিত করে, তবে সে সব সাময়িক, আমরা আবার উঠে দাঁড়াই, আবার আমরা জীবন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। আবার আমরা জীবনের স্বাদ নেই। কিন্তু থেমে  যাই না। আজ আমরা যেন থেমে যাচ্ছি। আমাদেরকে থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে।  কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে সময় কখনো থেমে  থাকবে না। আর সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। আমাদের শরীর  রক্ষার জন্য যেমন যত্নশীল হতে হবে, তেমনি শরীরের প্রয়োজনে শরীরকে খাদ্য জোগাতে হবে, এমনকি মনের খাদ্য জোগাতে হবে। শুধু রোগ প্রতিষেধক নিয়ে, ঔষধ খেয়ে, ব্যায়াম করে, মানুষ বাঁচতে পারে না। মানুষ মানুষের কাছে যাবে, মানুষ চলাফেরা করবে, মানুষ মানুষের সঙ্গে মনের আদানপ্রদান করবে, এটাই স্বাভাবিক। শরীরের সঙ্গে শরীরের মিলন হবে।  নতুন প্রজন্মের মুখ দেখবো আমরা।  মানুষকে নির্জন জঙ্গলে পাঠিয়ে সভ্য করা যায় না। মানুষকে হাসপাতালে পাঠিয়েই বাঁচিয়ে রাখা যায় না। এমনকি  চিরকালের জন্য সুস্থও করা যায় না।   মানুষকে জেলখানায় বা বাড়ির মধ্যে বন্ধ রেখেও  ভালো রাখা যায় না। হাজার হাজার বছরের যে জীবনযাত্রা, তাকে এক লহমায় পাল্টে দিলে মানুষের মধ্যে যে স্বাভাবিক আমি সত্ত্বা, তা হারিয়ে যাবে। তৈরী হবে কিছু মনোরোগী। যা মানুষের অস্বাভাবিক মানসিক চঞ্চলতার লক্ষণ। তৈরী হবে একটা অথর্ব, বধির  সমাজের মমি। 
ভাবুন তো, আপনি আপনার স্ত্রীকে নিয়ে, এমনকি আপনার ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে এক জায়গায় বসতে পারবেন না। হোক না সে পাড়াপড়শি, তাদের সাথে কথা বলতে গেলে তিন মিটার দূরত্ত্ব বজায় রাখতে হবে। সিঁড়িতে কারুর সাথে দেখা হলে, যেখানে আমরা হাসির বিনিময় করতাম, সেখানে পেছন ফিরে দেওয়াল সেটে দাঁড়িয়ে থাকে হবে। এমনকি শারীরিক দূরত্ত্বের দোহাই দিয়ে আমাদের সামাজিক দূরত্ত্ব টেনে আনা   হলো। আমাদের সম্পর্কগুলোকে সাবানগোলা জল দিয়ে পরিষ্কার করতে বলা হচ্ছে। আমাদের মুখ ঢেকে চলতে হবে। যেন আমরা সবাই অপরাধ জগতের মানুষ।   আজ যাকে করোনার রুগী ভেবে তফাৎ যাও তফাৎ যাও বা দূর দূর  করছি, আপনি কি ভাবছেন, ভগবানের কৃপায় সে যদি বেঁচে যায় ( যদিও  করোনার কোনো ঔষধ নেই - কোনো প্রতিষেধক নেই - তবু এই রোগ থেকে বেশিরভাগ মানুষ বেঁচে ফিরছে ) তবে এই দিনগুলোর কথা কি সে কোনোদিন ভুলতে পারবে ? মা-বাবার এমনকি আত্মীয়স্বজনের মৃতদেহ সৎকারের সময় আপনি উপস্থিত থাকতে পারবেন না। এমনকি ধর্ম্মীয় অনুষ্ঠান, যা আমাদের চিরাচরিত প্রথা, সেগুলো পালন করা যাবে না। ভবিষ্যতে  করোনা  না থাকলেও (যদিও করোনা  কোনোদিন যাবে না) করোনা পূর্বের দিনগুলোতে সে আর ফিরে যেতে পারবে না। পুরোনো সম্পর্কের দোলায় আর সে দুলতে পারবে না। পুরোনো সম্পর্কে আর সে ফিরে যেতে পারবে না। তাহলে আমাদের মধ্যে সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেবার যে ধারাবাহিকতা ছিল তা কি শেষ হয়ে যাবে ? মানুষ কখনোই কঠোর ব্যবস্থার দাস হয়ে থাকতে পারে না। মানুষের এই সমাজ তো আমাদের মেলামেশার ফল। তো এই সমাজটা কি ভেঙে আমরা ছিন্ন-ভিন্ন করে দিতে চাইছি ? আমাদের কি নতুন করে বাঁচতে শিখতে হবে ? আর তা শেখাবে এই রাষ্ট্রনেতাগন, রাজনৈতিক দল, কিছু গণসংগঠন, আর গণমাধ্যম  ? একটা গেলো গেলো রবে চিৎকার জুড়ে দিয়েছে, এইসব বুদ্ধিমানের দল । যে যেমন পারছে, প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ফতোয়া জারি করছে। কেউ বলছে, আংটির মধ্যে করোনা ঢুকে আছে, কেউ বলছে ফ্রিজের মধ্যে করোনা লুকিয়ে আছে। কেউ বলছে, নাক মুখ দিয়ে করোনা ঢুকছে, কেউ বলছে, চোখ-কান দিয়ে করোনা  ঢুকছে।  কেউ বলছে জুতোর মধ্যে করোনা লুকিয়ে আছে। আর মানুষগুলো অসহায় হয়ে বিভ্রান্তের মতো ছোট ছুটি করছে। অথচ যা হাওয়া উচিত ছিল, তা হলো ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা।  উচিত ছিল সঠিক পরীক্ষার ব্যবস্থা। যা এখনো নির্ভরশীল জায়গায় পৌঁছতে পারে নি।  
আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কি শুধু পুঁথিগত শিক্ষা গ্রহণের স্থান ? এখান থেকেই আমরা ভবিষ্যৎ জীবনের স্বপ্ন দেখি। শিক্ষকের আচরণ, আমাদের আচরণকে শুদ্ধ করে। সহপাঠীদের সঙ্গে সারা জীবনের সম্পর্ক তৈরি হয়। যারা আমার ব্যক্তিগত জীবনের সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে যায়। বন্ধুদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করি। কোথায় যাবে সে দিনগুলো ? সব হারিয়ে যাবে ? ভাবলেই আমার বুকটা দুরুদুরু করে ওঠে। অনলাইন শিক্ষা, আমাদের শিক্ষার সহযোগী অবশ্যই  হতে পারে, পরিপূরকও  হতে পারে, কিন্তু অনলাইন শিক্ষা কখনোই স্কুল-কলেজের শিক্ষার বিকল্প হতে পারে না। 
নিজের সঙ্গে কথা বলুন। নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া করুন। যারা আমাদের এই সোনার-পাথরবাটি কথা বলছে, তারা কারা ?  এরা  কি সমাজ-সংস্কারক ? এরা  কি স্বামী বিবেকানন্দ, রাজা রামমোহন, বিদ্যাসাগর, নেতাজি সুভাষ, ঋষি অরবিন্দ, রবীন্দ্রনাথ নাকি ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়  ?  এখন সমাজে এই সংক্রমণ ঠেকানোই  মূল কাজ। আমাদের সবার একদিন চোখের পাতা বন্ধ হয়ে যাবে, কিন্তু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা  কি রেখে যাচ্ছি ? কোরোনার ভয় একদিন থাকবে না। কিন্তু সমাজে এই যে সংক্রমণ, তা কি রোধ করা যাবে ? হে ভগবান, শুনেছি বিনাশকালে বুদ্ধিনাশ হয়, তুমি  এদের শুভবুদ্ধি দাও।  

ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।  হরি  ওম।

 করোনা সম্পর্কে  যে কথাগুলো এখনো বলার সময় হয়নি। 
ভাইরাস (VIRUS) শব্দটি ল্যাটিন যার অর্থ  হচ্ছে বিষ। ভাইরাস যতক্ষন না সজীব কোষের সংস্পর্শে আসছে, ততক্ষন এটি জড় পদার্থ। এটি জীব ও জড়ের মধ্যবর্তী পৰ্য্যায়ের বস্তু। এদের কোনো শ্বসন ও বিপাকীয় ক্রিয়া দেখা যায় না। ভাইরাসের কোনো বৃদ্ধি নাই এবং বিভাজিত হতেও পারে না। এরা  বাধ্যতামূলক ভাবে পরজীবী।এদের দেহ প্রোটিন দ্বারা গঠিত, ভিতরে থাকে কেন্দ্রীয় বস্তু হচ্ছে  নিউক্লিক এসিড। এই নিউক্লিক এসিড হয় দুই রকম DNA এবং RNA . বেশিরভাগ ভাইরাসের ক্ষেত্রে  নিউক্লিও বস্তু   যে কোনো একরকম অর্থাৎ DNA  হলেও বা RNA যুক্ত (একতন্ত্রী বা দ্বিতন্ত্রী প্রাণী ভাইরাস দেখা যায়। ভাইরাস বলতে আমরা বুঝি নিউক্লিও প্রোটিন দিয়ে গঠিত, অতিক্ষুদ্র, অকোষীয়, রোগসৃষ্টিকারী, সম্পূর্ণভাবে পরজীবী, কেবলমাত্র পোষক কোষের বিপাকীয় শক্তি নিয়ে জৈবিক  বৈশিষ্ট প্রকাশে সক্ষম, জীব ও জড়ের মধ্যবর্তী পর্যায়ের এক প্রকার বস্তু। COVID১৯ আসলে RNA যুক্ত অর্থাৎ একতন্ত্রী বা দ্বিতন্ত্রী। 

 (DNA i for Deoxyribo-nucleic acid and RNA for ribo-nucleic acid. DNA is a double stranded helix which also happens to be the carrier of genetic informations generation after generation. RNA is, on the other hand, generally single stranded and has three types viz. m RNA, r RNA and t RNA.)

করোনা সংক্রমন দিন দিন বাড়ছে, আরো বাড়বে। তবে সংক্রমণ মানে এই নয় যে কোরোনাতে মানুষের মৃত্যু হবে। আমাদের মিডিয়াগুলো প্রতিদিন করোনা সংক্রমণের সংখ্যাতত্ত্ব প্রচার করছে, আর এতে করে আমাদের ভয় বাড়ছে, আতঙ্ক বাড়ছে। একটা কথা নিশ্চিত  ভাবে বুঝে নিন, যে সংক্রমণ মানে মৃত্যু নয়। ভাইরোলজিষ্ট বিজ্ঞানী যশপাল সিংহ বলছেন, সংখ্যা বৃদ্ধি  থেকে আতঙ্কের কিছু নেই। কারন এই ভাইরাসের যে ধরন, তাতে করে আরো বেশি সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হতে পারেন বা হয়েছেন। কিন্তু সংক্রমণের হার আর মৃত্যুর হার সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। পরীক্ষার পরিমান যত  বাড়বে, সংক্রমণের সংখ্যা তত বাড়বে। কারন ইতিমধ্যে বহু মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন, যাদের এখনো  পরীক্ষার আয়ত্তে আনা  সম্ভব হয় নি। আর এদের মধ্যে প্রায় সবাই উপসর্গহীন। তবে যেখানে রুগীর সংখ্যা বেশী সেখানে মৃত্যুর হার তত বেশি হবে। আমরা যেমন অখাদ্য কুখাদ্য খেয়ে, নিজেদেরকে রোগগ্রস্থ করি, অনিমিয়ত জীবনযাত্রার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে রোগ ডেকে আনি  তেমনি  বার্ধক্যঃ জনিত কারনে আমাদের মধ্যে রোগ বাসা বাঁধে। আর করোনা  হচ্ছে, এমন একটা ভাইরাস যা আমাদের শরীরের পুরোনো রোগকে বাড়িয়ে তুলবে। করোনা নিজে কোনো রোগের কারন নয়, কিন্তু রোগের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে।  কবিরাজি ঔষধ দেবার কবিরাজ মহাশয় একটা কথা বলতেন, এখনো বলে থাকেন, মধু দিয়ে ঔষধ সেবন করবেন।  মধু হচ্ছে অনুপান। এই অনুপান ঔষধের গুন্ বা মাত্রাকে বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে থাকে। মধু যেমন ঔষদের অনুপান, করোনা  তেমনি রোগের অনুপান। 

বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, কোনো ভাইরাসের সংক্রমণের ক্ষমতা তার অর্গানিজম বা গঠনতন্ত্রের উপরে নির্ভর করে থাকে। সার্স-কোভ-২ সেই দিকথেকে সংক্রমণের ক্ষমতা বেশি রাখে। কিন্তু সংক্রমণ আর আর তার রোগ তৈরির ক্ষমতা দুটো আলাদা বিষয়। অর্থাৎ জীবের শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করলে সেটি কত সময়ের মধ্যে কি কি রোগ সৃষ্টি করতে পারে, এ-দুটি পুরো আলাদা বিষয়। মাইক্রো-বায়োলজিস্ট সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি শ্রী এ.এম. দেশমুখ বলছেন, সার্স কোভ-২ এর প্যাথোজেনিসিটি অর্থাৎ  রোগ তৈরি করবার ক্ষমতা কম। এই ভাইরাস সেখানেই বিপদজনক, যেখানে অন্য রোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট যেকোনো রোগের  মাত্রাকে এই ভাইরাস বাড়িয়ে দিতে পারে। এটি একটা অনুপান বা  অনুঘটকের কাজ করে থাকে। মাইক্রো-বায়োলজিস্ট সুখেন্দু মন্ডল, এ সম্পর্কে বলছেন,  ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলেই যে রোগের  বহিঃপ্রকাশ ঘটবে তা নয়। ভাইরাস শরীরে প্রবেশ মানে সংক্রমিত হওয়া, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই, কিন্তু সেই সংক্রমণ কতটা বিপদজনক হবে, সেটা নির্ভর করছে,তার রোগ তৈরির ক্ষমতার উপরে।  এই সংক্রমণে তাদেরই ক্ষতি হবার সম্ভাবনা যাদের অন্য রোগ ছিল। আর এক গবেষক বলছেন, আতঙ্কের কোনো কারন নেই। কোভিড-২ এ মৃত্যুর থেকে সুস্থ হয়ে উঠবার সংখ্যা অনেক বেশী, যদিও কোভিড-২ এর না আছে কোনো ঔষধ না আছে কোনো প্রতিষেধক। এর থেকেই বোঝা যায়, কোনো নিদিষ্ট ঔষধ না থাকলেও আমরা অবশ্য়ই চিরাচরিত চিকিৎসার দ্বারাই আমরা ভালো হয়ে উঠতে পারি। 

লকডাউন অবস্থায়, আমরা যেটা করতে পারতাম, সেটা হচ্ছে, স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রগুলোকে আরো উন্নত করতে পারতাম, এর পরিসর  বাড়াতে পারতাম, সত্যি বলতে কি, সেটা আমরা করতে পারিনি, বরং যেটা হয়েছে সেটা হচ্ছে, আমরা সতর্কতার  নামে  আতঙ্ক বাড়িয়েছি, সার্বিক ভীতির পরিবেশ তৈরি করেছি। আর এই ভয় আমাদের স্বার্থপর করে তুলেছে, অমানবিক করে তুলেছে। যার উদাহরণ আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছি। হাসপাতালে গেলে রুগী ভর্তি হতে পারছে না, পাড়ায় পাড়ায় ডাক্তাররা যে চেম্বার করতেন, যে পরিষেবা দিতেন, তা একসময় তো বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো, এখন এক-আধজনকে পাওয়া যাচ্ছে, যাদের পসার ছিল কম, বা RMP ডাক্তাররা আমাদের এখন ভরসা। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অহেতুক আতঙ্কগ্রস্থ না হয়ে, তিনটে সাধারণ নিয়ম মেনে চলুন, ১. মাস্ক পড়ুন। ২. হাত পরিষ্কার রাখুন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন, ৩. দূরত্ত্ব বিধি মেনে চলুন। 

কিন্তু আমি বলবো, আমাদের সবার নাকে একটা মাস্ক ভগবান দিয়ে রেখেছেন। তা হচ্ছে আমাদের নাকের  লোম।   যাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা আছে, তারা মাস্ক পড়লে, অর্থাৎ নাক-মুখ ঢেকে রাখলে, তাদের  শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা বাড়তে পারে। আর তা ছাড়া, এই যে মাস্ক সর্ব্বসাধারণ ব্যবহার করছে, এতে ধুলোবালি অবশ্যই  আটকানো যেতে পারে, কিন্তু কোনো ভাইরাস আটকানো যায় না।  এর জন্য PPE ব্যবহার করতে হয়।  সাধারণ কাপড়ের মাস্ক আমাদের ধুলোবালি আটকাবে। একটা জিনিস আমাদের বুঝতে হবে, আমরা শরীরে যত  বেশি অক্সিজেন নিতে পারবো, তত আমরা সুস্থ থাকতে পারবো। কেউ অসুস্থ হলে আমরা একটু বাতাস দেই, দরজা জানলা খুলে দেই , ভিড় সরিয়ে দেই, কারন বাতাসেই আছে আমাদের প্রাণশক্তি। এইপ্রাণশক্তির যাতায়াতের পথ বন্ধ করে, আর যাই হোক আমরা ভালো থাকতে পারবো না। আর একটা কথা হচ্ছে বাতাস থেকে শুধু আমরা অক্সিজেন নেই তাতো নয়, বাতাসের মধ্যে আছে নাইট্রোজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, আছে নানান রকম গ্যাস।  বাতাসের সঙ্গে মিশে থাকা এই সব কিছুই আমাদের বাধ্যতামূলক ভাবে নিতে হয়, কিন্তু আমাদের প্রয়োজন মতো অক্সিজেন ইত্যাদি নিয়ে আমরা বাকি বাতাস আবার ছেড়ে দেই। তাই বাতাসকে সেঁকে নিলে ভাইরাস ঢুকবে না, এই তত্ত্বে আমি বিশ্বাস করিনা। বাতাস সেঁকে শুধু অক্সিজেন নেবো, বাকিটা নেবো না, এটা সম্ভব নয়।  বরং এখনতো WHO পর্যন্ত বলছে, প্রাতঃভ্রমন বা সান্ধ্য ভ্রমন  কালে, প্রাণায়াম বা ব্যায়াম করবার সময় মাস্ক ক্ষতিকারক। এবং এটা ১০০% সত্য, যা WHO আগে বলতে পারে নি। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অবশ্যই  থাকুন। হাত পা সব সময় পরিষ্কার রাখুন। ঘর-বিছানা সব সময় পরিষ্কার রাখুন। সম্ভব হলে, ঘরের বাইরের দিকেও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। দূরত্ত্ব বজায় সেখানেই রাখুন, যেখানে দরকার। ঘরের লোকের সাথে, দূরত্ত্ব বজায় রাখা, সব সময় সম্ভব নয়। আর তার জন্য কোনো ক্ষতি হবার সম্ভাবনাও  নেই। যেখানেই থাকুন, হাঁচি, কাশি থেকে দূরে থাকুন। ব্যাস নির্ভয়ে থাকুন। যত  ভয় করবেন, তত আপনি দুর্বল হবেন। আর দুর্বল মন, সন্দেহপ্রবন মন, আমাদের রোগপ্রতিরোধ শক্তি কমিয়ে দেয়। তাই অহেতুক আতঙ্কগ্রস্থ হবেন না। মনে করবেন, আপনি সুস্থ আছেন, আর সুস্থই  থাকবেন।  আপনি ঈশ্বরের সন্তান।  আপনাকে ঈশ্বর যা কাজ দিয়ে পাঠিয়েছেন, সেইসব কাজ আপনাকে সম্পন্ন করতেই হবে। আর তা এই শরীরের মাধ্যমেই হবে। 

এখন কথা হচ্ছে, রোগ হলে তার চিকিৎসা দরকার। কোরোনার ক্ষেত্র বেশিরভাগ মানুষের তেমন কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না। আসলে আপনার যদি কোনো উপসর্গ থাকে, তবে সেই উপসর্গের চিকিৎসাতেই আপনি ভালো হয়ে উঠবেন। তাই অকারনে ঘাবড়ে যাবার কোনো কারন নেই। 

যারা ভ্যাকসিনের আশায় আছেন, তাদেরকে বলি, ভ্যাকসিন হচ্ছে হাতি দিয়ে হাতি ধরা। করোনার  জীবাণু নিষ্ক্রিয় করে, আমাদের শরীরের ভিতরে প্রবেশ করাতে হবে, তাতে করে, সুস্থ মানুষের শরীরে যে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আছে, তা তখন জীবাণুটিকে চিনে ফেলে। এই অবস্থায়, আগামীদিনে শরীরে ওই ভাইরাস  প্রবেশ করলে, রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা সহজেই জীবাণুকে চিনে নেয়। এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই হচ্ছে ভ্যাকসিন। 

ইতিহাস বলছে, আজ পর্যন্ত কোনো ভ্যাকসিন ৫ বছরের কমে আবিষ্কার করা সম্ভব হয় নি। এগুলো আবিষ্কারের নিদিষ্ট কিছু ধাপ আছে। প্রথমে কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন একটা কোষের উপরে প্রয়োগ করে দেখা হয়। এখানে সাফল্য মিললে, মানুষ বাদে অন্য কোনো প্রাণীর দেহে পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এখানে সাফল্য পেলে ১০-৩০ জন মানুষের মধ্যে পরীক্ষা করা হয়।  এর পরে একটু বেশি সংখ্যাক মানুষের মধ্যে প্রয়োগ করে তার পরীক্ষা নিরীক্ষা চলে। একদম শেষে একসঙ্গে বহু মানুষের মধ্যে এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। আর এতে মানুষকে কতটা সুরক্ষা দিচ্ছে, আর কতদিন সুরক্ষা দিচ্ছে, সেটাও  দেখতে হয়। কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া আছে কি না, সেটাও দেখতে হয়। আর এইসব পরীক্ষা যত দিন বেশি ধরে করা যায়, এর সুরক্ষা সম্পর্কে আমরা তত নিশ্চিন্ত হতে পারি। ধরুন, দীর্ঘ পরীক্ষার প্রক্রিয়াকে এড়িয়ে আমরা যদি তাড়াহুড়ো করে কোনো ভ্যাকসিন সবার মধ্যে প্রয়োগ করতে শুরু করি, তবে হিতে বিপরীত হতে পারে। এবং সেটা অবশ্যই প্রত্যাশিত নয়।  যাইহোক আমরা আশাবাদী, যত  তাড়াতাড়ি এটা করা যায়, ততই মঙ্গল।  সারাবিশ্বের বহু বিজ্ঞানী এই কাজে হাত লাগিয়েছেন। 

যাই হোক, আমাদের করোনা নিয়েই বাঁচতে হবে। তাই করোনা প্রতিরোধে আমাদের রোগপ্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে হবে। তবে এটাও বলি করোনা কোনো রোগ নয়, তাই আমার শরীরে করোনা আছে মানে এই নয় যে আমি রুগী। করোনা আমার শরীরে থাকলেও, আমি অবশ্যই  সুস্থ  থাকবো, যদি আমার মধ্যে স্বাভাবিক যে রোগপ্রতিরোধ শক্তি আছে, সেটা ঠিকঠাক থাকে। আর এর জন্য, আমাদের যা করতে হবে তা হচ্ছে প্রাণায়াম। ভস্ত্রিকা, কপালভাতি, বাহ্য, অগ্নিসার, অনুলোম-বিলোম, ভ্রামরী, উদ্গীথ, শীতলী, সীৎকারী। যেকোনো বয়সের মানুষের পক্ষেই এগুলো করা সম্ভব। আর একটা কথা আমরা শুনেছি, মূলত আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এই ভাইরাস আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে। তাই আমাদের গলা সবসময় জীবাণুমুক্ত রাখতে চেষ্টা করতে হবে। এর জন্য, গরমজল, তুলসীপাতা-অদা-গোলমরিচ ইত্যাদি  দিয়ে চা  পান করতে পারি। গরম জলে লবন দিয়ে গার্গলিং করতে  পারি। মোদ্দাকথা সতর্ক থাকাই শেষ কথা। নির্ভয় থাকাই মোদ্দা কথা। 

এর পরেও একটা কথা বলি, আগামী পাঁচ বছরে যত  স্বাভাবিক মৃত্যু হবে তাদের সবার মধ্যেই করোনা ভাইরাস পাওয়া হবে। এবং সেটা ১০০-১৫০ কোটি হলেও আশ্চর্য হবো না। কেননা, এখন প্রতি বারো সেকেন্ডে একজন মানুষ পৃথিবীতে মারা যান।  সে হিসেবে দেখলে, আগামী পাঁচ বছরে মৃত্যুর সংখ্যা  ১,৩১,৪০,০০০ হবার কথা। সেই সংখ্যাটা সামান্য বেড়ে ১৪০ কোটি হতে পারে।  কিন্তু ৮ সেকেন্ডে একজন শিশুর জন্ম হচ্ছে, ২০০ কোটি শিশু আবার নতুন পৃথিবীতে আসছে। অতএব পৃথিবী পৃথিবীর মতোই প্রাণবন্ত থাকবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আর নতুন প্রজন্ম অবশ্য়ই বেশি প্রতিরোধ শক্তি নিয়ে জন্মাবে।  

ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।  হরি ওম।

করোনা কি মানুষের সৃষ্টি ? 

জেলে নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে সিঁদুরের কৌটার মতো একটা কৌটা পেলো। কৌতূহলবশতঃ সেটা খুলতেই, বেরিয়ে এলো একটা বিরাট বায়বীয় দৈত্য। বেরিয়ে এসেই, বললো, হে প্রভু, বলুন কি করতে হবে। আমি আপনার দাস, আপনার আদেশ পালন করা, আমার কর্তব্য। কাজ না পেলে আমি আপনার ঘাড়  মটকাবো। প্রথম দিকে জেলে, তার ইচ্ছেপূরণের জন্য, সব বাঞ্ছিত  বস্তু আনতে  বললো। কিন্তু কত আর বলবে, শেষে বুদ্ধি করে বললো, তোমার এই  বিরাট দেহ, কি করে এই ছোট্ট কৌটায় তুমি ছিলে সেটা দেখাও তো ! তো দৈত্য কৌটার মধ্যে প্রবেশ করতেই, জেলে কৌটার মুখ বন্ধ  করে দিলো। তো এই ব্রহ্মদৈত্য কৌটার মধ্যে থাকলে নিষ্ক্রিয়। আবার বাইরে বেরুলেই যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। তো ভাইরাস কি সেই ব্রহ্মদৈত্য যাকে  আমরা কৌটা থেকে বের করে ফেলেছি ?

এর মধ্যে আমরা জেনে গেছি, পৃথিবী সৃষ্টির প্রথমে ছিলো তপ্ত গ্যাসীয় পদার্থ। ধীরে ধীরে তা ঠান্ডা হতে লাগলো, তরল হতে লাগলো, তরল থেকে কঠিনে  রূপান্তরিত হয়েছে। তো এই  পদার্থ থেকে প্রাণ কি করে এলো ? পদার্থ থেকে প্রাণ সৃষ্টির মধ্যে একটা পর্যায় বিজ্ঞানীগন  দেখতে পেলেন । আর সেটা হচ্ছে, ভাইরাস।  যার প্রাণ নেই, কিন্তু প্রাণের সংস্পর্শে এলেই প্রাণবন্ত হয়ে উঠতে পারে।    

 পুনঃপ্রচার : ভাইরাস (VIRUS) শব্দটি ল্যাটিন যার অর্থ  হচ্ছে বিষ। ভাইরাস যতক্ষন না সজীব কোষের সংস্পর্শে আসছে, ততক্ষন এটি জড় পদার্থ। এটি জীব ও জড়ের মধ্যবর্তী পৰ্য্যায়ের বস্তু। এদের কোনো শ্বসন ও বিপাকীয় ক্রিয়া দেখা যায় না। ভাইরাসের কোনো বৃদ্ধি নাই এবং বিভাজিত হতেও পারে না। এরা  বাধ্যতামূলক ভাবে পরজীবী।এদের দেহ প্রোটিন দ্বারা গঠিত, ভিতরে থাকে কেন্দ্রীয় বস্তু যা আসলে   নিউক্লিক এসিড। এই নিউক্লিক এসিড হয় দুই রকম DNA (DNA  for Deoxy-ribo-nucleic acid) এবং RNA (RNA for ribo-nucleic acid). বেশিরভাগ ভাইরাসের ক্ষেত্রে  নিউক্লিও বস্তু   যে কোনো একরকম অর্থাৎ DNA   বা RNA যুক্ত (একতন্ত্রী বা দ্বিতন্ত্রী) প্রাণীহীন  ভাইরাস দেখা যায়। 
অতএব ভাইরাস বলতে আমরা বুঝি নিউক্লিও প্রোটিন দিয়ে গঠিত, অতিক্ষুদ্র, অকোষীয়, রোগসৃষ্টিকারী, সম্পূর্ণভাবে পরজীবী, কেবলমাত্র পোষক কোষের বিপাকীয় শক্তি নিয়ে জৈবিক  বৈশিষ্ট প্রকাশে সক্ষম, জীব ও জড়ের মধ্যবর্তী পর্যায়ের এক প্রকার বস্তু। COVID১৯ আসলে RNA বা DNA যুক্ত অর্থাৎ একতন্ত্রী বা দ্বিতন্ত্রী।

তো পদার্থ থেকে ভাইরাসের জন্ম হচ্ছে, বা পদার্থ কিভাবে ভাইরাসে  পরিণত হয়, সেটা জানলে আমরা পদার্থ থেকে ভাইরাস, আবার ভাইরাস থেকে প্রাণের জন্ম দিতে পারবো, এমনকি আমরা মানুষেরও জন্ম দিতে পারবো। এই ধারণা নিয়েই বিশ্বের বিজ্ঞানীগন গবেষণা করে চলেছেন।  

২০১২ সালের জুন মাসে, ডাক্তার আলী মোহাম্মদ জাকি , একজন রুগীকে দেখছেন, সৌদি আরবের  জেড্ডায়, যার জ্বর-কাশি এবং শ্বাসকষ্ট সারছে না। মাঝে মধ্যে শ্বাসকষ্ট এতটাই বেড়ে যাচ্ছে, যে প্রায় হার্ট ফেলিওর হবার সম্ভাবনা। রুটিন চেক-আপে কিছু ধরায় পড়ছে না। ভাইরাল সংক্রমণ তো বটেই, কিন্তু কিছুতেই সারছে  না। ভাইরাসটা  একটু অন্য রকম বলে মনে হচ্ছে।  তাই ডাক্তার জাকি, অন্য একটা ভাইরোলজি ক্লিনিকে স্যাম্পেল পাঠালেন।  আর সেটা হচ্ছে, নেদারল্যান্ড এমারসন মেডিক্যাল সেন্টার, যেখানে ডঃ জাকিরের  এক বন্ধু ডঃ রন কাজ করেন। ডঃ রন পরীক্ষা করলেন, কিন্তু ভাইরাসের গতি-প্রকৃতি ঠিক ধরতে পারলেন  না। এমনকি রিয়েল টাইম পলিমেরাস চেন রিঅ্যাকশন টেস্ট করাও হলো।  এই টেস্টে সাধারণত ভাইরাসের বৈশিষ্ট্যগুলোর সঙ্গে চেনা-জানা ভাইরাসের পার্থক্য জানা যায়। এর পরে নমুনা পাঠনো হলো, ডঃ ফ্রাঙ্কের কাছে। ডঃ ফ্রাঙ্ক কাজ করেন, কানাডার ন্যাশানাল মাইক্রো-বায়োলজি ল্যাবরেটরীতে , যা বিশ্বেখ্যাত। তো ডাক্তার ফ্রাঙ্ক সেই নমুনা থেকে পেলেন, ভাইরাসের একটা নতুন লক্ষণ যা আগে কখনো দেখা যায় নি।  ভাবলেন, তাহলে কি নতুন কোনো ভাইরাসের দেখা মিললো ? কিন্তু তা দেখতে গেলেতো সময় লাগবে।  আরও রিসার্চ করা দরকার। 

আর ঠিক এই সময়, বিশ্বজুড়ে  এক কানাঘুষা  শোনা যেতে লাগলো, আর তা হচ্ছে, কানাডা থেকে  ভাইরাসের  কিছু এজেন্ট নাকি গোপন-পথে  চিনে চলে গেছে। 

মার্চ ২০১৩- কানাডা কি তবে জেনেশুনে এইসব ভাইরাস চীনের গবেষণাগারে পাঠিয়েছে ? কিন্তু সেরকম তো হবার  কথা নয়, কারন চীনের সঙ্গে কানাডার কোনো মেডিকেল রিসার্চ চুক্তি  নেই। তাহলে কি হলো ? কানাডা সরকার কানাডার ভাইরোলজি দপ্তরকে কারন দর্শাতে  বললো। ভাইরোলজি দপ্তর এ সম্পর্কে কিছু বলতে পারলো না। তাহলে প্রশ্ন উঠলো, তাহলেকি চুরি হয়েছে ভাইরাস ? কে চুরি করলো।  সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এই ভাইরাস ভুললোকের  হাতে পড়লে, তা হয়ে উঠতে পারে মারাত্মক।  হয়ে উঠতে পারে জৈব অস্ত্র। যা দিয়ে ইচ্ছে করলে শত্রুপক্ষের যে কোনো দেশের মানুষকে মেরে ফেলতে পারে, নিঃশব্দে। 

এই সময় চীন বিজ্ঞানী জিয়াং গো কিউ কাজ করতেন কানাডার ল্যাবে। তিনি ভাইরাস ম্যাপিং করতেন। ইবোলা ভাইরাসের জেড ম্যাপিং ডেভেলপ করবার জন্য, আর তার অধীনে ছিল  কিছু পি.এইচ.ডি ছাত্র  যারা চীনের অধিবাসী ।  এর পরে, জানাগেলো, ডঃ জিয়াংগো কিউ নিজেই স্পাইং করছিলেন। ইবোলা নিয়ে তার কাজ।  আর ২০১৪ সালে, এই মারাত্মক ভাইরাস পশ্চিম আফ্রিকার কিছু দেশে হঠাৎ ছাড়িয়ে পড়ে। তদন্তে জানা গেলো, বহু  মূল্যবান ফাইল পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক নমুনা বা ভাইরাসের স্যাম্পল তাদের ডিপ-ফ্রিজে নেই। তদন্তে কোনো হদিস পাওয়া গেলো না, কে চুরি করেছে।  কিন্তু যেহেতু ফাইল নেই, ডিপ ফ্রিজ ফাঁকা তো কেউ না কেউ তো অবশ্যই  চুরি করেছে। এর পরে, দেখা গেলো, চীনা সায়েন্টিস্ট কিউ এর কম্পিউটার থেকে সমস্ত ডেটা, ডকুমেন্ট, ফর্মুলা ওরিয়েন্টেশন আর ফর্মেশন ফাইল সব উধাও। কে নিলো, সন্দেহ অবশ্যই  ওই চীনের দিকে। 

এর পর ২০১৯ চীনের উহান প্রদেশে ভাইরোলজিস্ট ডঃ ওয়েং লিয়ান জানালেন, একটা ভাইরাস কিন্তু  ছড়িয়ে পড়েছে। একের পর এক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, এখনই একটা কিছু করা দরকার। ডঃ লিয়ান সতর্ক করলেন, চীন সরকারকে।  কিন্তু চীনা সরকার, লিয়ানকে মুখ বন্ধ করতে বললেন । আপনি এসব কথা প্রকাশ্যে বলবেন না। কিসের ভিত্তিতে আপনি এসব বলছেন ? এরকম কথা বলবেন না। ডঃ লিয়ান আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন। কেন বলবো না ? তাঁর হাসপালেই একঝাঁক রুগী ভর্তি হয়েছে। যাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে, অন্যরকম ভাইরাস। না এগুলো কোনো প্রাণী থেকে আসেনি, এসেছে কোনো ল্যাব থেকে। এর ঠিক একমাস পরে, ডঃ ওয়েং লিয়ান নিজেই সেই ভাইরাসেই আক্রান্ত হলেন। সত্যি-মিথ্যে ঈশ্বর জানেন, তাঁর এমন কিছু অসুস্থতা ছিল না।  তাকে ভেন্টিলেশনেও দেওয়া হয় নি। কিন্তু তিনি মারা গেলেন। কেউ কি তাকে মেরে ফেললো ? 

এর পরে আমরা দেখলাম, বিশ্বের লাখ লাখ লোক আক্রান্ত। টেস্টের কিড নেই।  চীন কিড পাঠানো শুরু করলো। ব্যবসা করতে লাগলো। আর সবচেয়ে আশ্চার্য্য হচ্ছে, সেই কিড ছিল ত্রূটিপূর্ন।  ভুল রিপোর্ট আসছে। এগুলো কি ইচ্ছাকৃত ? মাস্কের কারখানায় দেখা গেলো, পৰ্য্যাপ্ত মাস্ক আগে থেকেই তৈরি আছে। এগুলো সে এখন রপ্তানি করতে লাগলো। এখন ভ্যাকসিন তৈরির জন্য, কাঁচামাল অর্থাৎ কীট আসছে চীন থেকে।  বিশ্ব স্বাস্থ্য-সংস্থাকে প্রথম কয়েক দিন সে এই খবর দিলো না। এমনকি বিশ্ব-সংস্থার কাউকেই চিনে ঢুকতে দেওয়া হলো না। এর থেকে কি মনে হয় ?

জানুয়ারী ২০২০ তে আমরা দেখেছি, কিছু ভিডিও ছড়িয়েছে চীন যাতে দেখা যাচ্ছে, মানুষ রাস্তায় যেতে যেতে আক্রান্ত হচ্ছে, আর রাস্তাতেই ধপাস ধপাস করে পড়ে মারা যাচ্ছে মানুষ। সারা বিশ্ব  এই দৃশ্য দেখে আতঙ্কগ্রস্থ হচ্ছে। চীন হাসছে। এখন মনে হয়, এসগুলো ছিলো নকল ভিডিও, যার কোনো তদন্ত হয়েছে কিনা জানা নেই।  কোরোনাতে কখনোই এমনটি হয় নি। এ থেকেই বোঝা যায়, চীন আমাদের ভয় দেখাচ্ছে, ভুল পথে চালিত করছে, সত্য গোপন করছে, আর আমরা চীনের কথায় আম -বস্তা দুই ফেলে কাঁটাতারের বেড়া ডিঙোনোর চেষ্টা করছি। - তথ্যসূত্রঃ সাপ্তাহিক বর্তমান - প্রবন্ধ - মৃনাল কান্তি দাস। এবং  অন্য দৈনিক পত্রিকা। 

ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।  হরি ওম। 

পৃথিবীতে একদল লোক আছে, যারা জগৎকে উদ্ধার করতে চায়। অথচ তারা জানেনা, নিজেদের উদ্ধারের উপায় টা  কি ? নিজের সমস্যার সমাধান না করে, তুমি জগতের সমস্যার সমাধান করতে পারো না। আর আমরা যদি সবাই নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে পারি,তবে জগতের সমস্যার সমাধান হতে পারে। বেশিরভাগ অতি-আগ্রহী সংস্কারকদের ক্ষেত্রেই এই সমস্যা, এই যন্ত্রনা। প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেদের সন্মন্ধেই কিছু জানে না, অথচ অন্যদের সংস্কার করতে চায়। এদের এমনি বেয়ারা স্বভাব যে শুধু কাজ বাড়াতে থাকে। আর একসময়, ঐ কাজই তার সব মনোযোগ ও জীবনীশক্তি শুষে নেয়। যেকোনো কাজ সময়মতো করা ভালো, কিন্তু অযথা  কাজের  দ্রুততা বাড়ানো উচিত নয়। এতেকরে, ভালোর চাইতে মন্দকেই আমরা ডেকে আনি। আর এই প্রবণতা আজ বিশ্বজুড়ে। 

অতিরিক্ত কাজ সুস্থ জীবনের জন্য বাধাস্বরূপ।  শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত কাজ, অতি দ্রুত কাজ, আমাদের জীবনের স্বাভাবিক ধারাকে নষ্ট করে দেয়। আমরা ভুল পথে পা বাড়াই। মানুষের এই যে কর্ম্ম-বৃদ্ধির  প্রবণতা, বার বার আমাদের  নজরে পড়ে।  বিশেষত অস্থিরতা ও উদ্দেশ্যবিহীন আবেগ প্রবণতার সংক্রমণ এখন আমাদের দেশেও দেখা যাচ্ছে। কিছু লোকের কর্ম্ম-বৃদ্ধি  ও কর্তব্য বৃদ্ধির  প্রবণতা থাকে।আর এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, সঞ্চয়।  ঠাকুর রামকৃষ্ণ সেটিকে কখনোই উৎসাহ দিতেন না।

আমরা মরতে ভয় পাই, তাই যমরাজ আমাদের পিছু হটে  না। আমরা নিজের জন্য সঞ্চয় করতে চাই, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সঞ্চয়  করতে চাই, দেশের জন্য, দশের জন্য, অনেক কিছু করতে চাই, আর এইসব করতে করতে আমাদের অশান্তি বাড়ে, ভাবনা চিন্তা জোটে। 

ঠাকুর বলছেন, একজায়গায় জেলেরা মাছ ধরছিলো, একটা চিল এসে একটা মাছকে ছোঁ-মেরে নিয়ে গেলো। তো মাছ দেখে, হাজারটা কাক চিলের পিছু নিলো। কা-কা করে হাজার কাক চিৎকার জুড়ে দিলো, আর মাছ  নিয়ে চিল  যেদিকে যায়, সেদিকে ধাওয়া  করতে লাগলো। চিলটা পূব  দিকে যায় তো কাকেরাও পূব  দিকে যায়, পশ্চিম দিকে যায়, তো কাকেরা সেই দিকেই যায়। গাছের ডালে বসে তো কাকেরা তাকে ঘিরে থাকে। বাড়ির চালে বসে তো কাকেরা মাছের লোভে চিলকেই  ছিঁড়ে  খেতে চায়.।
এই অবস্থায়, অসহায়  চিল একসময় পরিশ্রান্ত হয়ে গেল, আর ঠোঁট আলগা হয়ে, মাছটা পড়ে  গেলো। কাকগুলো চিল ছেড়ে মাছের দিকে ধাবিত হলো।   এবার চিলটা গাছের ডালে নিশ্চিন্তে বসে বিশ্রাম করতে লাগলো।  
অনেক সাধ্যসাধনা করে, কোরোনার সাথে লড়াই করবার জন্য, ভ্যাকসিনের আবিষ্কার করা গেছে।  অনেক ভাগ্যবান  ভ্যাকসিন নিয়ে নিয়েছেন। আমরা সবাই ভেবেছিলাম, এবার রেহাই পেলাম। কিন্তু রেহাই  পেলাম কি ? ভ্যাকসিন নেবার পরেও, কোরোনার  আক্রমন থেকে রেহাই নেই। এমনকি আমার এক বন্ধু ভ্যাকসিন (দুটো ডোজ) নেবার পরেও, কোরোনার সাথে লড়াইয়ে হেরে শ্মশানবাসী হয়েছে। তাহলে আমরা যাবো কোথায় ? 
এদিকে WHO - বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা - এর মুখ্য বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথন বলছেন, " কোরোনার বি.১.৬১৭ প্রজাতিটি ভারতে সক্রিয়।  এটি ক্রমাগত চরিত্র পাল্টে নিজের সংক্রমণ ক্ষমতা বৃদ্ধি  করছে। ভবিষ্যতে হয়তো টিকা বা স্বাভাবিক কারনে তৈরী হওয়া অ্যান্টিবডিকেও  রুখে দিয়ে পারে এটি"

"এই গতিতে টিকাকরন চললে, সবাইকে টিকা দিতে দিতে বছর  পেরিয়ে যাবে। ততদিনে ভাইরাস চরিত্র বদল করে ফেললে এখনকার টিকার আর কার্যকারিতা থাকবে না।" 
(আনন্দবাজার পত্রিকা ১০.০৫.২০২১ ) 

এখন কথা হচ্ছে, তাহলে আমরা সাধারণ মানুষরা  কি  করবো ? আপনি বলবেন, কেন চিকিৎসা করবো। হ্যাঁ সাধারণ ভাবে এটাই তো মনে হয়, যে কোনো রোগে আমরা যেমন ডাক্তারবাবুর কাছে যাই, হাসপাতালে ছুটে  যাই, এখানেও তেমনটি  করবো। ডাক্তার অমিতাভ চক্রবর্তী বলছেন, কোনো ভাইরাস ঘটিত রোগেরই জুতসই কোনো চিকিৎসা নেই। আর করোনা হচ্ছে, একেবারেই একটা নতুন ভাইরাস, তার উপরে আবার এই ভাইরাস তার শক্তি বৃদ্ধি করতে করতে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। তো যার কোনো চিকিৎসা নেই, তার জন্য ১০-১৩ দিনের মধ্যে লক্ষ লক্ষ টাকার বিল হচ্ছে। আসলে কোরোনার জূজূ দেখিযে লুটতোরাজ্ শুরু হয়েছে। 

আসলে এই রোগ উপসর্গহীন হতে পারে, আবার একেকজনের ক্ষেত্রে হচ্ছে, এক-একরকম উপসর্গ।  

 শিবাম্বু মহা ঔষধি (রম্য রচনা)

আসলে লকডাউন আমার  মাথাটা খেয়েছে। এই লকডাউনে আমার দুপুরের খাবার পরে একটু ভাতঘুম দেবার অভ্যাস হয়ে গেছে। তো সেদিন দুপুরে, খেয়েদেয়ে ভাতঘুমের নেশায় তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম। এমন সময় শান্তিদা এলেন। শ্রী শান্তিলাল ভট্টাচার্য্য। আপনারা অনেকে এনার নাম শুনে থাকবেন। এসেই বললেন, পেছাপটা পরীক্ষা করেছে ? আরে এই বয়েসে মাঝে মধ্যে তিনটে জিনিসের দিকে খেয়াল রাখবে,   রক্তচাপ, আর পেচ্ছাপ। আর রক্ত আপনা আপনি তৈরি হয়, কিন্তু পেচ্ছাপ তৈরি করতে গেলে কসরত করতে হয়। আর এই পেচ্ছাপটা যদি প্রতিনিয়ত পান করতে পারো, তোমার আর ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না। 

বললুম, কিযে বলেন, পেচ্ছাপ আবার পান করা যায় নাকি। মল, মূত্র , আর ঘাম - এগুলো আমাদের দেহের পক্ষে যা অপ্রোজনীয়, ক্ষতিকর বলেই না শরীর   সেসব  বের করে দেয়। তো এগুলো যদি কেউ আবার গ্রহণ করে, তবে সে তো বিষ পান করার সমান হবে। আপনি কি আমাকে বিষ পান করতে বলছেন ? 

তো শান্তিদা বললেন,  দেখো আমাদের মূত্রের মধ্যে কি আছে ? এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছে, ইউরিয়া বা নাইট্রোজেন, ক্রিয়েটনিন, এমিনো, এমোনিয়া, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ইউরিক এসিড, ইত্যাদি প্রায় কুড়িটি উপাদান। একটা কথা শুনে রাখো, দেখো গাছ যে পাতাগুলোকে ফেলে দেয়, সেগুলো সে অপ্রয়োজনীয় বলেই ফেলে দেয়।  আবার এই পাতাগুলোকে পচিয়ে সার করে গাছের গোড়ায় দাও, তবে সেগুলো গাছের পক্ষে পুষ্টিকর সার বা গাছের  খাদ্য হতে পারে। এই যে যত ভ্যাকসিন-এর কথা আমরা শুনে থাকি, এগুলো সবই আমাদের শরীরের রোগ-বীজ। এই রোগবিজগুলোকে যদি বিশেষ পদ্ধতিতে আবার শরীরে প্রবেশ করানো যায়, তবে আমাদের শরীরের রোগ-প্রতিরোধ শক্তি বাড়তে পারে। আমাদের মূত্রের সঙ্গে যে বীজ বাইরে চলে যাচ্ছে, তাকে যদি আমরা পুনরায়, পাকস্থলীর মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করিয়ে দিতে পারি, তবে পাকস্থলীর জারক রসে ওই  রোগবিজ আমাদের রোগ-প্রতিরোধী অর্থাৎ antibody হিসেবে কাজ করতে পারে। 

প্রথম প্রথম মূত্রের স্বাদ ও গন্ধ একটু খারাপ লাগতে পারে। কিন্তু দেখো, কত বিশ্রী স্বাদের ঔষধ আমাদের পান করতে হয়, কতো তেতো ঔষধ আমাদের পান করতে হয়। আসলে মল মূত্র সম্পর্কে আমাদের একটা বিরূপ মনোভাব, ছোটবেলা থেকে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।  আর এই দীর্ঘকালীন অনাভ্যাস আমাদের মধ্যে বিরূপ মনোভাবের জন্য দায়ী। দেখো, ছোটবেলায়, আমরা কত মল-মূত্র খেয়েছি, তখন তো আমাদের খারাপ লাগে নি।  তুমি বলতে পারো, তখন আমাদের জ্ঞান ছিল না।  না ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়, ছোটবেলায়, আমাদের স্বাদবোধ ছিল।  একটা ছোট বাচ্চাকে তেতো খেতে দাও, সে মুখ ফিরিয়ে নেবে, কিন্তু মিষ্টি খেতে দাও, সে মুখ বাড়িয়ে দেবে। তো এই যে মল-মূত্রের প্রতি আমাদের ঘৃণা, এটা আমাদের দীর্ঘ কালের অভ্যাসের ফল। আসলে আমাদের মূত্র লবনাক্ত।  যাদের পিত্তাধিক্য শরীর, তাদের মূত্র একটু তেতো লাগতে পারে। আর গন্ধের কথা যদি বোলো, তবে বলি, টাটকা মূত্রে গন্ধ প্রায় নেই বললেই চলে। আর বাসি প্রস্রাবে একটা উগ্র গন্ধ পাবে, সেটা আসলে এমোনিয়ার (ammonia) প্রভাবে হয়ে থাকে। কিছুদিন যদি তুমি নিজের মূত্র পান করতে পারো, তবে কিডনির পরিশ্রবণ ক্ষমতা অবশ্য়ই উন্নত হবে। তখন আর তুমি এই গন্ধ বা স্বাদ কিছুই পাবে না। নিজে একটু পরীক্ষা করে দেখো। সংস্কার মুক্ত হয়ে, একবার এর পরীক্ষা করেই দেখোনা। 

আমাদের হিন্দুশাস্ত্রে, ডামরতন্ত্রে শিবাম্বু কল্পে এই শিবাম্বু ঔষধি প্রয়োগের বিধান দেওয়া আছে। আসলে আমাদের মস্তিষ্কের তলদেশে এক সুরক্ষিত প্রদেশে আছে শিবগ্রন্থি (পিটুইটারি গ্রন্থি  -pituitary gland )। .আমাদের প্রস্রাবের কম বেশি এই শিবগ্রন্থির নিয়ন্ত্রণের ফলেই হয়ে থাকে। আমাদের বহু তান্ত্রিকসাধু হঠযোগী, লামা, সহজিয়া বৈরাগী ও বাউল সম্প্রদায়ের মধ্যে এই শিবাম্বু  ব্যাবহারের রীতি আছে বলে শোনা যায়। বাইবেলের Command -V এর নির্দেশ হচ্ছে, "Drink water of  thy- cistern". ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোরারজী দেশাই, গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ যুবরাজ মেটা, শ্রী কাকা কালেকর, বিনোবা ভাবে এই চিকিৎসার জন্য প্রচার করেছেন। 

আচ্ছা শান্তিদা, এই শিবাম্বু কিভাবে রোগ নিরাময়ে কাজ করে থাকে ? 

দেখো, প্রথমত আমাদের শরীরে যখন দূষিত মল সঞ্চিত হয়, তখন তার দূষিত বিষক্রিয়ায় রোগের  উৎপন্ন হয়।  আর এই স্ব-মূত্র আমাদের দেহের সমস্ত মল ঝাড়ুদারের মতো বের করে দেয়। আসলে  কারী কারী ঔষধের সেবন, আর কথায় কথায় ডাক্তারের কাছে ছোটা স্বাস্থ্য সচেতনার লক্ষণ নয়। বরং ঔষধের প্রয়োজনীয়তা না থাকলেই ভালো। আর একটা কথা হচ্ছে, যে কোনো চিকিৎসায়, রোগ নির্নয় ও ঔষধ নির্বাচন খুবই গুরুত্ত্বপূর্ন। এই নির্বাচন অভ্রান্ত হলে, চিকিৎসায় সাফল্য আসে। আর এই ভুল চিকিৎসায়, আমাদের দেশে বহু রুগীর জীবন সংশয় দেখা যায়। এই শিবাম্বু চিকিৎসায় এসব ঝামেলা নেই। শিবাম্বুর প্রথম কাজ হচ্ছে, দেহের অভ্যন্তরে সঞ্চিত মল বের করে দেওয়া, ফলে এটি বিষ নাশক। অন্য দিকে মূত্রে আছে অনেক পুষ্টিকারক  উপাদান যা রুগীকে সুস্থ  হয়ে উঠতে সাহায্য করে। 

 শিবাম্বু দুই ভাবে ব্যবহার করতে হয়, এক) শিবাম্বু পান, দুই) শিবাম্বু মালিশ। এছাড়া শিবাম্বু দিয়ে পট্টি দেওয়া যেতে পারে। 

সকালবেলা উঠে শিবাম্বুর পান খুবই উপকারী।  তবে শিবাম্বুর প্রথম ও শেষ অংশ ফেলে মাঝের অংশ একটা পাত্রে গ্রহণ করে পান করতে হবে। প্রথম প্রথম খুবই অল্প পরিমানে, এবং গরম-গরম পান করে ভালো। অভ্যাস হয়ে গেলে, দিনে দুই তিন বার পান করা যেতে পারে। তবে শিবাম্বু খেলে পাতলা পায়খানা হতে পারে।  এতে ভয় পাবার কিছু নেই।  কারন শিবাম্বুর প্রথম কাজ হচ্ছে, পেট পরিষ্কার করা। 
তবে বিভিন্ন রোগে, শিবাম্বু মালিশও  করা যেতে পারে। চারদিনের বাসি শিবাম্বু একটু গরম করে প্রথমে, মাথায়, পরে পায়ে, পায়ের তলায়, সবশেষে বুকে ও পিঠে মাখতে হবে। 

এখন চারিদিকে সর্দি-কাশি-ইন্ফ্লুঞ্জা শ্বাস-কষ্ট  হচ্ছে। এই সময় শিবাম্বু চিকিৎসা খুবই ভালো। দেখো, অত্যধিক ঠান্ডা লাগা বা গরমে আমাদের সর্দি হয়ে, গলায় ক্ষতের সৃষ্ট হয়, পরে ফুসফুস আক্রান্ত হলে কফ শুকিয়ে গিয়ে কাশির সৃষ্টি হয়। অনেক সময় অত্যধিক কফ বুকে জমেও কাশি হতে পারে।  মাঝে মাঝে কপালে সর্দি বসে গিয়ে ভয়ানক মাথা ব্যথা  হয়।  এই সমস্ত ক্ষেত্রেই প্রথমে একদিন শিবাম্বু উপবাস করে সারাদিন শিবাম্বু পান করবে। সকালে ও সন্ধ্যায় শিবাম্বু নাসা পান করা কর্তব্য।  রক্তে  EOSINOPHIL ইউসিনোফিল  বেড়ে গিয়ে হাঁপানি হলেও অর্থাৎ শ্বাস কষ্ট  হলেও এই পদ্ধতিতে  ২/৩ দিনের মধ্যেই রোগমুক্ত হতে পারবে। সেই সঙ্গে ৪ দিনের বাসি শিবাম্বু একটু গরম করে বুকে, পিঠে গলায় কপালে ও মুখে মালিশ করতে হবে।
 ইন্ফ্লুয়েঞ্জা  হলে শুধু শিবাম্বু নাসা পান ও একদিনের শিবাম্বু উপবাসে রোগারোগ্য হবে। 
হুপিং কাশি হলেও, দুদিনের শিবাম্বু উপবাস ও সঙ্গে বুকে পিঠে গলায় ও মাথায় শিবাম্বু মালিশ করে পরে ঠান্ডা জলে স্নান করলে এই দুরারোগ্য কাশি সেরে যাবে।  শীতের দিনে শিবাম্বু গরম করে নিয়ে ঈষদ-উষ্ম জলে গা ধুয়ে ঠান্ডা  জল দিয়ে স্নান করতে হবে। 

এইসব কথা শোনার পরেই আমার ঘুম ভেঙে গেল।  শান্তিদাকে আর দেখতে পেলাম না। শান্তিদার আত্মার শান্তি হোক। 

তথ্যসূত্র : সর্ব্বৌষধি শিবাম্বু - শ্রী শান্তিলাল ভট্টাচার্য। প্রকাশক ভারত স্টেশনার্স। 

অর্শ : প্রকৃত পক্ষে অর্শ যকৃতের দুর্বলতা থেকে হয়। খাদ্য ঠিক মতো হজম না হলে, কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।  একদম শেষে অর্শের সৃষ্টি হয়। যাইহোক, আমাদের শান্তিদা বলছেন। যখন রক্তপাত হতে থাকবে, তখন শিবাম্বু উপবাস  করতে হবে।

আপনি দয়াকরে "সর্ব্বৌষধি শিবাম্বু" - শ্রী শান্তিলাল ভট্টাচার্য, ভারত স্টেশনার্স, ১৫, কলেজ স্কোয়ার, কলকাতা -৭৩ থেকে   বইটি কিনে নেবেন, এখানে বহু  রোগের শিবাম্বু  চিকিৎসার কথা লেখা আছে।

শিবাম্বু সবসময় নাক দিয়ে পান করা উচিত। অন্ততঃ সকাল ও সন্ধ্যায় শিবাম্বু নাক দিয়ে পান করা উচিত। তাহলে সর্দি, কাশি ও জ্বর কখনো হবে না। প্রথমে শিবাম্বু একটি পাত্রে  ভর্তি করে  নিন। এইবার শিবাম্বুপুর্ন পাত্রটিকে যে নাক খোলা থাকে, সেটি ডুবিয়ে অপর নাকটি চেপে বন্ধ করে, ঘুমের মধ্যে নাক ডাকার সময় যেভাবে শ্বাস নেয়, ঠিক সেই ভাবে শ্বাস নিতে চেষ্টা করলেই ডোবানো নাক দিয়ে শিবাম্বু গলায় চলে আসবে। তখন অনায়াসে গিলে ফেলতে পারবেন। এইভাবে প্রতি নাক দিয়ে পর্যায়ক্রমে আধ গ্লাস করে পান করলে দুটি নাকি সর্বদা পরিষ্কার থাকবে।  জ্বর বা সর্দি কখনো হবে না।  যদি ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ডেঙ্গু জ্বর হয় তবে তা একদিনেই ভালো হয়ে যাবে। কোনো অবস্থাতেই তাহলে মাথা ধরবে না।  

আমাদের দেহে রোগ প্রবেশের প্রধান দুটো দরজা।  আর তা হলো নাক ও মুখ।  আমরা মুখ ব্যবহার করি শুধু খাবার সময়।  তাই মুখ  দিয়ে রোগ যাবার সুযোগ খুব কম।  কিন্তু আমাদের নাক হচ্ছে, অবারিত দ্বার। বেঁচে থাকতে গেলে, আমরা নাক বন্ধ করে রাখতে পারি না। এইজন্য শতকরা ৯০ ভাগ রোগই নাক দিয়ে দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। বিশেষ করে ভাইরাস  ঘটিত রোগ নাক দিয়েই প্রবেশ করে। এরা  নাক দিয়ে ঢুকেই কিন্তু দেহে উৎপাত সৃষ্টি করতে পারে না। প্রথমে নাকের গোড়ায়, কিছুক্ষণ  পরে গলায়, সবশেষে বুকে ও পেটে প্রবেশ করে।  এই ভাইরাস একমাত্র লবনাক্ত জলে মারা যেতে পারে। আমাদের মূত্রে নানানরকম জৈব ও অজৈব রাসায়নিক পদার্থ ছাড়াও প্রচুর লবন আছে। নাক দিয়ে শিবাম্বু পান করলে, এইসব রোগবিজ সূচনাতেই মরে যাবে। এইজন্য আমাদের গলায় ব্যথা বা সর্দি হলে তখন লবন-জল দিয়ে গলা পরিষ্কার করার ব্যবস্থা ডাক্তারগন দিয়ে থাকেন। 

বন্ধু আমি ডাক্তার নোই, আমি আপনার শুভাকাঙ্খি মাত্র। বইটা পড়ে দেখুন। আর আমি এই শিবাম্বু চিকিৎসা হাতে কলমে পরীক্ষা করে দেখিনি। শুধু বহুদিন থেকে আমার শরীরে কেটেছেড়ে গেলে শিবাম্বু লাগাবার অভ্যাস আমার বহুদিনের। এতে আমি সুফল পাই।  তাই এর ফলাফল সম্পর্কে কোনো মতামত দেবার অধিকারী আমি  নোই। ভিডিওতে যা কিছু বলা হয়েছে, সবই ওই বই থেকে ধার করা। এবং সেটা আমি উল্লেখ করে দিয়েছি। - ভালো থাকুন, অবশ্যই ভালো থাকবেন। 

করোনায় কি করণীয় নয়। 

করোনা-আতঙ্ক নিয়ে আমাদের প্রায় এক  ছয় মাস  কেটে গেছে। কোরোনাকে যারা সঙ্গী করে দেহত্যাগ করেছেন, তাদের অমর আত্মার শান্তি কামনা করি। কোরোনায় যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে প্রায় ২ শতাংশ মানুষ মারা গেছেন। কিন্তু করোনা নিয়ে ভুল বুঝে বা গুজবে আক্রান্তের সংখ্যা শতকরা একশ ভাগ। এই করোনা-আতঙ্ক এখন দুরারোগ্য ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এর থেকে আমরা মুক্তি পাবো কি করে ? কোরোনার কোনো ঔষধ নেই বললেই চলে। কিন্তু ৯৮ শতাংশ করণারূগী ভালো হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু সমাজে জ্বলে উঠেছে, করোনা হিংসার আগুন। এই আগুন নিভবে কি করে ?

নোবেল করোনা ভাইরাস ডিজিস-১৯। নোবেল কথাটার অর্থ অভিজাত বা উন্নতমানের।  করোনা কথাটার মানে হচ্ছে, মুকুট, সূর্য্যের বা চন্দ্রের গ্রহণকালে দৃষ্ট আলোকমণ্ডল। পুষ্প দলের মধ্যে মুকুট। এই ভাইরাসের গায়ে  ব্যাঙের ছাতার মতো দেখতে প্রোটিন স্পাইক থাকে । যা দেখতে মুকুটের  মতো। তাই একে বলা হচ্ছে করোনা। ভাইরাস জীবাণু ও বস্তুর মধ্যবর্তী অবস্থা। ডিজিস অর্থাৎ রোগ। বা ভাইরাস বাহিত রোগ। ১৯ অর্থাৎ ২০১৯ সালে এটির সন্ধান মেলে। 

রোগের উপসর্গ - যেমন সর্দি, কাশি, মাথাধরা, জ্বর, নাক বন্ধ, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ঘ্রাণশক্তি কমে যাওয়া, জিভে স্বাদ না পাওয়া, পেটের অসুখ, এমনকি চুলকানি। আবার উপসর্গহীন থাকতেও পারে। 

এইসব উপসর্গের বা রোগের  চিকিৎসা বাড়িতে বসেই করা সম্ভব। অর্থাৎ এইসব রোগের জন্য আমরা আগে যেমন করতাম, তেমন ভাবেই চিরাচরিত চিকিৎসা করতে পারি। তবে বাড়াবাড়ি হলে অবশ্যই  হাসপাতালে যাওয়া প্রয়োজন। কেননা সেখানে ডাক্তারদের আনাগোনা বেশি থাকে, যন্ত্রপাতির অর্থাৎ অক্সিজেন অর্থাৎ অক্সিমিটার ও অক্সিজেন সিলিন্ডার পাবার সুবিধা অনেক বেশি থাকে।

তবে একটা কথা বলি, আপনার আশঙ্কা থেকে আপনার মধ্যে ভয়ের উদ্রেক হবে। কিছু লোকের মধ্যে এই ভয় একটা বাতিকে পরিণত হয়ে গেছে। এমনকি পাগলামিতে পরিণত হয়েছে। কারুর বাড়িতে করোনা হয়েছে শুনলে, তাদের বাড়ি বাইরে থেকে তালা দিয়ে দিচ্ছে। এমনকি নিজের স্বামীকে বা স্ত্রীকে হাসপাতাল থেকে নিজের বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছে না। এ এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি।  তাই বলি অহেতুক টেনশন করবেন না, টেনশন থেকেও আপনার শ্বাস-কষ্ট হতে পারে। এমনকি আপনার দেহের তাপমাত্রাও বেড়ে যেতে পারে। আপনার হার্টবিট বেড়ে যেতে পারে। প্রেশার বেড়ে যেতে পারে। তাই এইসময় টেনশন মুক্ত জীবনই মুক্তির উপায়। 

আমরা আগেই বলেছি, যেকোনো রোগের হাত থেকে বাঁচতে গেলে, আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে।  তার জন্য, আমাদের প্রতিনিয়ত প্রাণায়ামের অভ্যাস করতে হবে। একটা জিনিস আমাদের বুঝতে হবে, করোনা কোনো রোগ নয়। তাই কোরোনার কোনো ঔষধ হয় না। করোনা আমাদের শরীরে স্থিত রোগবৃদ্ধিতে অনুপান হিসেবে কাজ করে। যেকোনো রোগ যখন আপনার শরীরে আশ্রয় করে, তখন তাকে সহযোগিতা করে, এই করোনা। করোনা নিজে বহিরাগত, প্রাণবন্ত হবার জন্য, আমাদের শরীরকে আশ্রয় করে থাকে, অর্থাৎ সে জীবন্ত হতে চায়  - আর অন্য বহিরাগতের সঙ্গে সে বন্ধুত্ত্ব গড়ে তোলে মাত্র।  

কিছু স্বঘোষিত বিশেষজ্ঞ সংবাদ মাধ্যমে, বা সামাজিক মাধ্যমে নানান-রকম বিভ্রান্তি প্রচার করছেন। এদের গল্পের গরু গাছে চড়ছে । এদের থেকে সাবধান থাকুন। দরকার হয়, এইসব প্রচার শোনা বন্ধ রাখুন। 

যেহেতু মনে করা হচ্ছে, কোরোনার প্রাথমিক উপসর্গ হচ্ছে, সর্দ্দি, কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট।ঋতু পরিবর্তনের সময় এগুলোর উৎপাত বাড়ে।  এবং এগুলো থেকে বাঁচবার জন্য, আমরা আমলকি, চ্যাবনপ্রাস ইত্যাদি সেবন করে থাকি। তাই অনেকের ধারণা  হয়েছে, ভিটামিন সি স্ট্রিপ বেশি খেলে করোনা চলে যাবে ? যেকোনো ভিটামিন আমাদের শরীরের পক্ষে ভালো।  কিন্তু ভিটামিন অতিরিক্ত খেলে, তা আমাদের শরীরের কাজে লাগবে, এমন ধারণা ভুল।    একজন মানুষের দেহে ৫০-১০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি প্রয়োজন।  তার বেশি নয়।  বাজারি ট্যাবলেটে ৫০০মিলি ভিটামিন সি থাকে। শরীর  এই অতিরিক্ত ভিটামিন  জমিয়ে রাখতে পারে না। তাই এর কোনো প্রয়োজন নেই।  আমাদের প্রতিনিয়ত খাবার  থেকেই ভিটামিন পেতে পারি। হ্যাঁ কেউ যদি অপুষ্টিতে ভোগেন, তবে তার অবশ্যই  ভিটামিন আলাদা করে নেবার প্রয়োজন পড়তে পারে। ডাক্তার অমিতাভ ভট্টাচার্য্য বলছেন, অতিরিক্ত ভিটামিন সি খেলে আমাদের মূত্রে অক্সালেটের পরিমান বাড়বে, কিডনিরও  ক্ষতি হতে পারে। তাই করোনা থেকে বাঁচবার জন্য, অতিরিক্ত ভিটামিন সি স্ট্রিপ যেন না গ্রহণ করি। বরং পাতিলেবুর রস, কুল, টম্যাটো, লিচু, পেঁপে, জাম, নানান ধরনের শাক, আলু খান।  এতে করে আপনি ভিটামিন সি পেতে পারেন। 

হলুদ, নিমপাতার রস, তুলসী পাতার রস, - এগুলো করোনা ভালো করতে পারে, এমন তথ্য এখনো , আমাদের হাতে আসে নি। এগুলোর আলাদা আলাদা গুন্ নিশ্চই আছে, কিন্তু কোরোনাকে তাড়াবার জন্য,  এর কোনো ভূমিকা আছে, এমন কোনো প্রমান আজও  পাওয়া যায় নি।

গার্গলিং - ঈষদ গরম জলে এক চিমটে লবন ফেলে,  দিনে দুই তিন বার গার্গলিং করা যেতে পারে। এতে করে গলা ভালো থাকবে, রোগ জীবাণু থেকে গলাকে ভালো রাখা যাবে। কিন্তু ঘন ঘন গার্গলিং, বা অতিরিক্ত গরম জলে গার্গলিং বা অতিরিক্ত লবন মিশিয়ে গার্গলিং করতে যাবেন না। 

এখন একটা সরকারি নিয়ম হয়ে গেছে, মাস্ক না পড়ে  কোথাও যাবেন না। WHO এতদিন বলছিলো, N -৯৫ মাস্ক ছাড়া করোনা আটকানো যায় না।এখন উল্টো কথা বলছে। দেখুন করোনা ভাইরাস মাত্র ১০০মাইক্রোমিটার বা তার কাছাকাছি ব্যাপ্তির। ফলে ১০০-মাইক্রোমিটার এর বেশি বড়ো ছিদ্রে সে অনায়াসে ঢুকে যেতে পারে। আমরা যে মাস্ক ব্যবহার করি, অর্থাৎ দ্বিস্তরের বা ত্রিস্তরের মাস্ক দিনে অন্তত একবার গরম জলে ধুয়ে ব্যবহার করুন। যদিও চরম সত্যি হচ্ছে, মাস্ক আপনি কতক্ষন পরে থাকবেন, আপনি নিশ্চয়ই খাবার  সময় পড়বেন না । সরকার বলছে, বাড়ির মধ্যে মাস্ক না পড়লেও চলবে। যেন আপনার বাড়ির মধ্যে করোনা ঢুকতে পারবে না। ব্যাপারগুলো ভীষণ ভাবে অবৈজ্ঞানিক। আসলে মাস্ক পড়ুন, আর মানুষ থেকে  চোদ্দ-ফুট দূরে অবস্থান করুন, আপনার করোনা থেকে রেহাই নেই। তবে ভয় পাবেন না, করোনা আপনার ক্ষতি তখনি করবে, যখন আপনার শরীরে অন্য কোনো রোগের  প্রকোপ হবে। এখন কথা হচ্ছে, আমরা কেউ নীরোগ নোই আমাদের প্রত্যেকের  শরীরে পরীক্ষা করলে দেখা যাবে, জন্ম থেকেই আমরা কোনো না কোনো রোগ  বা জীবাণুর বাহক। কিন্তু তথাপি আমরা স্বাভাবিক জীবনেই আছি।  তাই বলছি, ভয় পাবার কিছু নেই। শুধু রোগ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তুলুন আপনার ভিতরে। আর এর জন্য নিয়ম করে প্রাণায়াম করুন।  প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা আধাঘন্টা করে প্রাণায়াম করুন।  অর্থাৎ ভস্ত্রিকা, কপালভাতি, অনুলোম বিলোম, অগ্নিসার, বাহ্য,  ভ্রামরী, উদ্গীথ। এর মধ্যে অনুলোম বিলোম  ও কপালভাতি ১০/১৫ মিনিট করুন। বাকিগুলো ২ মিনিট করলেই যথেষ্ট। আপনি দুইবেলা এই প্রাণায়ামের ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে, আপনার সমস্ত রোগ-ভীতি দূর হয়ে যাবে। অন্তর কুম্ভক করুন। অর্থাৎ শ্বাসকে পেটের-বুকের ভিতর নিয়ে ১০ সেকেন্ড থেকে ধীরে ধীরে ১ মিনিট রুখে দেবার চেষ্টা করুন।  ব্যাস কেল্লা ফতে।  আপনি এখন রোগমুক্ত জানবেন।     







   

 
   












        



  




 

     
















  


















 

No comments:

Post a Comment