Wednesday 3 July 2019

ইচ্ছাশক্তির রহস্যঃ

ইচ্ছাশক্তির  রহস্যঃ

ইচ্ছে শক্তি, WILL POWER . কার ইচ্ছায় চলি আমরা ? ইচ্ছে ব্যাপারটা কি ? আমি ইচ্ছে করলেই কি সব কিছু বদলে যাবে ? ইচ্ছে ব্যাপারটা অদ্ভুত।  আপনি যা ইচ্ছে করেন, তা কিভাবে পাবেন ? আপনি যা হতে চান, তা কি ভাবে হবেন ? কিভাবেই বা ইচ্ছেটা করবেন ? 

ইচ্ছে আর কিছুই নয়, ইচ্ছে হচ্ছে আমাদের ভাবনা বা চিন্তার অব্যক্ত অবস্থা । আমরা যা ভাবছি, তা আমাদের ইচ্ছেশক্তি দ্বারা সম্ভব হচ্ছে। । ইচ্ছে অব্যক্ত, এই ইচ্ছে যখন ক্রিয়াশীল হয় তখন তাকে আমরা বলি  চিন্তা বা ভাবনা ।   বলা যেতে পারে, আমাদের সবার ভাবনা বা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ভাবনাই ভগবানের ইচ্ছে। আর ইচ্ছেই রূপ পরিগ্রহ করে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে আমরা যা কিছু দেখছি, সবই আমাদের ভাবনা প্রসূত। আমি আপনি যা কিছু ভাবছি,  সেটাই রূপ পরিগ্রহ করছে। সৃষ্টির আদি থেকে এই নিয়ম চলে আসছে, এবং ভবিষ্যতেও চলবে। তাই আমাদের ভাবনার নিয়ম জানতে হবে, যাতে প্রত্যেকটি ভাবনা মঙ্গল প্রসব করে।

কোয়ান্টাম ফিজিক্স (quantam physics ) বলছে, আমাদের এই যে বিশ্বব্রহ্মান্ড তার উৎপত্তি হয়েছে, ভাবনা থেকে। ভাবনা হচ্ছে একটা ক্রিয়া, যার ফলে এই বিশ্বব্রহ্মান্ড সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কার ক্রিয়া। ইচ্ছাশক্তির ক্রিয়া।  অব্যক্ত ইচ্ছাশক্তি যখন ক্রিয়াশীল হয় তখন তাকে আমরা বলি ভাবনা। আর ভাবনা থেকেই সৃষ্টি।

আমরা সবাই আসলে ঈশ্বরের ইচ্ছাশক্তির ভাবনার ফল। ঈশ্বরের ইচ্ছাশক্তির একটা ক্ষুদ্রতম অংশ আছে, আমাদের সবার মধ্যে। যার ফলে আমরা প্রতিনিয়ত ভাবি। খুব কম সময় আছে, যখন আমরা ভাবনা রোহিত হতে পারি। তা সেটা বুঝি আর না বুঝি। এমনকি আমরা যখন কোনো কাজে নিযুক্ত আছি, তখনও আমরা কিছু না কিছু ভেবে চলেছি।

আমাদের তিনটি অবস্থা।  জাগ্রত, স্বপ্ন, ও সুষুপ্তি। আমরা জাগ্রত অবস্থায়  চিন্তা তো  করিই, এমনকি স্বপ্নেও আমারদের ভাবনা চলতে পারে।  কেবলমাত্র সুসুপ্তিতে আমরা ভবনাবিহীন থাকতে পারি।

আমরা জানি, আমাদের চিন্তার একটা রূপ আছে। আর এই রূপ,  সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অনু দিয়ে তৈরি, এমনকি তার কিঞ্চিৎ চৈতন্যশক্তিও আছে। আমাদের চিন্তার লক্ষবস্তূ যদি কাছাকাছি থাকে, তবে এই সূক্ষ্ম চিন্তাদেহ তক্ষুনি লক্ষবস্তুর দিকে ধাবিত হয়। এমনকি লক্ষবস্তু যদি, বহু দূরেও থাকে সেখানে সে দ্রুত পৌঁছে যায়। এবং সেখানে লক্ষবস্তুর ভিতরে আমার ভাবনা প্রভাবিত করে।

এই প্রসঙ্গে একটা ঘটনা বলি। আমি যখন চাকরি করি। আমার অফিসে তখন কাজের খুব চাপ। আর আমার যিনি সুপার বস,মিস্টার সুদান,  তিনি কিছু কাজ বোঝেন না, কারন তিনি ছিলেন সামরিক বাহিনীতে। এবং সরাসরি, দেশোয়ালি ভাইয়ের সহযোগীতায় উচ্চপদে বহাল হয়েছেন, তাই কাজ না বোঝার জন্য, ওপরওয়ালার কাছ থেকে গালাগালি খেতেন, আর আমাদের দিয়ে,  কাজ করানোর জন্য, তার একমাত্র  সম্বল ছিল মেজাজ । মাঝে মধ্যে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতেন। এমনকি একদিন, সে আমাকে শারীরিক ভাবে নির্যাতন করার চেষ্টাও  করেছিলেন ।  আমি ছিলাম অসহায়। আমি ভেঙে পড়লাম। আকুল ভাবে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করলাম, ভগবান ওকে শুভবুদ্ধি দাও।  আমার কাছে একটা বই ছিল, মিস্টার  আর.কে.  গোয়েঙ্কার লেখা,  THE ART OF  LIVING, - আমি   সেই বইটা নিয়ে, আর এক প্যাকেট মিষ্টি নিয়ে, ভয়ে ভয়ে তার চেম্বারে গিয়ে, তাকে দিলাম। বললাম বইটা পড়বেন।  ঈশ্বরের অপার  করুনা, তার পর দিন, রবিবার, সুদানের টেলিফোন পেলাম,  আমাদের বাড়িতে আসতে চায়, - এবং বললো, আমি তোমার বড়ভাই, আমি তোমার কাছে, ক্ষমা চাইছি। আমি স্তম্ভিত, আশ্বস্ত হলাম।  এর পরে, আর কোনোদিন, সুদান, কাউকে গালাগালি করতো না। মানুষটা কেমন যেন পাল্টে গেলো।

যেকোনো পরিস্থিতিতে, আপনার চিন্তাকে মঙ্গলের পথে পরিচালিত করুন। দেখবেন, আপনার শুভচিন্তা অন্যকে প্রভাবিত করবেই করবে।

মানুষের সঙ্গে অন্যান্য জীবের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, মানুষ শুভ চিন্তা করতে পারে, অন্যান্য জীব শুভ চিন্তা করতে পারে না। তারা শারীরবোধের উপরে উঠতে পারে না।

অনেকে বলেন, আমরা আমাদের ভাবনার মাধ্যমে, আমাদের আর্থিক উন্নতি পড়তে পারি। কথাটা সর্ব্বত সত্য। আসলে যে যা চায়, সে তাই  পায়। আজ যাদের আপনি, অর্থবান দেখছেন, তারা সবাই সর্ব্বক্ষন অর্থের কথাই চিন্তা করছেন,- তাই তারা অর্থবান হচ্ছেন। তবে একটা কথা খেয়াল করবেন, অর্থ মানুষের তিন পুরুষের বেশি থাকে না। কারন, প্রচুর অর্থ এসে গেলে , মানুষের মধ্যে একটা ভয় কাজ করে, হারানোর ভয়, তখন শুধু তারা হারানোর ভয়ে আক্রান্ত হন। এবং এই হারানোর ভয় থেকেই তাদের সত্যি সত্যি অর্থলোপ পেতে থাকে।    কিন্তু মানুষের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত, আনন্দ। পার্থিব জিনিস আমাদের সুখ দিতে পারে। কিন্তু পার্থিব জিনিসের সুখ সাময়িক, শুধু সাময়িক নয়, এটা  দুঃখের বাহকও বটে ।

আপনার ইচ্ছেকে আপনার ভাবনাকে প্রভাবিত করতে চাইলে, আপনার মনকে শান্ত করতে হবে। আর মনকে শান্ত করার একমাত্র ও অব্যর্থ উপায় হচ্ছে প্রাণায়াম - ধ্যান - ধারণা - । এই তিনটি জিনিস যদি আপনি, নিমিয়ত করতে পারেন, তা সে যত  অল্প সময় হোক, আপনি দেখবেন, আপনার ইচ্ছাশক্তি প্রবল থেকে প্রবল হচ্ছে। আপনার নিজের প্রতি বিশ্বাস, এবং সব বিষয়ে একটা সদর্থক ভাব আপনাকে শক্তি যোগাবে। একটা জিনিস জানবেন, আমরা একটা শব্দ ও আলোর তরঙ্গে ভাসমান। এই তরঙ্গের ফ্রিকোয়েন্সি আপনাকে স্থির বা অস্থির করছে । ধ্যান, প্রাণায়াম, এই তরঙ্গের ফ্রেকুয়েন্সিকে এডজাস্ট করবে। আপনি এক অনাবিল আনন্দে থাকবেন।

ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ - হরি ওম।

আমরা আলোচনা করছিলাম ইচ্ছেশক্তি নিয়ে। ইচ্ছে করলেই নাকি আমরা ভালো থাকতে পারি।  আমাদের ভাবনাই নাকি, আমাদের ভালো রাখে, বা মন্দ রাখে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কেউ আমাদের খারাপ চাই না। কেউ ইচ্ছে করে, অবাঞ্চিত বস্তু বা অবাঞ্চিত ব্যবহার আশা করেন  না। তবুও এগুলো হয়।  তাহলে এগুলো কি করে হচ্ছে ? এমন চিন্তাও তো  কেউ করে না যাতে  তার নিজের অমঙ্গল হয়। কিন্তু আমাদের অমঙ্গল তো হচ্ছে।

প্রথমে বলি, প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধাচরণ করে কেউ পার পাবে না। আপনি আগুনে হাত দেবেন আর আপনার হাত পুড়বে  না, এটা হবে না। আপনি ছাদ থেকে ঝাঁপ মারবেন, আর আপনার হাত পা ভাঙবে না, এটা হবে না। আপনি বৃষ্টিতে ভিজবেন, আর আপনার জ্বর হবে না, সেটা চিন্তা করবেন না। তবে এগুলো করার আগে আপনার ভাবনা, আপনাকে ভোগাচ্ছে, এটা সত্য। আগুনে হাত পড়ার আগে বা পরে  আপনি ভয় পেয়েছিলেন কি না ভাবুন, যদি ভয়-ভাবনা আপনার এসে থাকে তবেই আপনার হাত পুড়বে।  ছাদ  থেকে পড়ার আগে আপনার ভয়-ভাবনা আপনাকে ভোগাবে। একই ঘটনায় কেউ কেউ বেঁচে যায়, তার কারন তার মধ্যে ভয়-ভাবনা একদমই  আসেনি। এরকম কদাচিৎ হয়, কিন্তু হয়। শ্রী  শৈলেন্দ্র নারায়ণ ঘোষাল, নর্মদা পরিক্রমাকালে  পাহাড় থেকে পড়ে  গিয়েছিলেন। তন্দ্রাছন্ন অবস্থায় তার মনে হয়েছিল, কেউ যেন তাকে কোলে করে পাহাড় থেকে নিচে নেবে এসেছেন । এগুলো গল্পকথা নয়।  ভাবনাবিহীন মানুষের ক্ষতি করা শুধু শক্ত নয়, অসম্ভব।

দেখুন বিজ্ঞান বলছে, আমরা প্রতিনিয়ত হাজার হাজার চিন্তা করছি। আমাদের চিন্তার প্রতি আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আমরা যা কিছু দেখছি, শুনছি  তা থেকে আমাদের  যেমন অভিজ্ঞতা হচ্ছে, তেমনি চিন্তার রশদ যোগাচ্ছে এগুলো। একই ঘটনা বা একই দৃশ্য আমাদের বিভিন্ন লোকের মনে, বিভিন্ন রকমের দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবাচ্ছে। কারুর মৃত্যু,  তার পরিবারে একরকম চিন্তার উদ্রেক করে, আবার প্রতিবেশীর মনে অন্যরকম। কাছের কেউ মারা গেলে একরকম, দূরের কেউ মারা গেলে আর এক রকম। আপনি যখন কোনো সংবাদ শুনছেন, আপনার পাকস্থলীতে আপনার অন্ত্রের স্নায়ু মণ্ডলীতে ঠিক তক্ষুনি একটা প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। আপনার  একটা বিশেষ অনুভূতি শুরু হয়, এবং আপনার ভাবনাকে প্রভাবিত করে এই অনুভূতি। আপনি কাল্পনিক অনেক কিছু ভাবা শুরু করেন। অর্থাৎ এই শ্রুতি বা দর্শন হচ্ছে একটা সংকেত, যা আপনাকে চিন্তান্বিত হতে বাধ্য করে। আপনার এই অনুভূতি সম্পর্কে আপনি সজাগ থাকুন। অর্থাৎ চিন্তার উৎস সম্পর্কে সজাগ থাকুন। এবং এ সম্পর্কে আপনি কি ভাবছেন, যেটা বোঝার চেষ্টা করুন।

আমাদের দুরকমের অনুভূতি, একটা ভালো আর একটা মন্দ। কোন অনুভূতি  আপনাকে রাগিয়ে দেবে, অর্থাৎ আপনার ভিতরে ক্ষোভের সৃষ্টি করবে, কোনটা আপনাকে হতাশ করবে, অসহায় করে দেবে। এগুলো সবই খারাপ অনুভূতি। আবার কিছু অনুভূতি আপনাকে উৎসাহ যোগাবে,  উদ্দীপিত করবে।  এগুলো আপনার ভালো অনুভূতি। যখন আপনার খারাপ অনুভূতি হবে, তখন আপনি ভালো ভাববেন, এটা কখনোই হবে না। তাই আপনার অনুভূতির উপরে নির্ভর করবে আপনার ভাবনা। আপনার ভাবনার একটা ফ্রীকোয়েন্সি বা তরঙ্গের মাত্রা আছে। আপনি যে তরঙ্গে যখন থাকবেন, আপনার ভাবনা সেই তরঙ্গে প্রবাহিত হবে। আপনার তরঙ্গ যত  দ্রুততালে প্রবাহিত হবে, আপনার ভাবনায় তত খারাপ জিনিস প্রবাহিত হবে , বা উত্তেজক চিন্তা প্রবাহিত হবে।  এবং যত আপনি উত্তেজক চিন্তা করবেন, তত আপনি আরো দ্রুত তরঙ্গের উচ্চ স্কেলে পৌঁছে যাবেন। এবং আপনার ভাবনার মধ্যে আরো খারাপ অনুভূতি বৃদ্ধি পাবে। খারাপ পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে নিয়ে যায়, খারাপ ভাবনা আরো খারাপ ভাবনার দিকে নিয়ে যায়।

কিন্তু উল্টোটা করে দেখুন, অর্থাৎ আপনার তরঙ্গের গতি স্থির করুন,  আপনার শরীরের স্পন্দন ধীর করার চেষ্টা করুন, আপনার পালসবিট্ স্বাভাবিক করার চেষ্টা করুন, আপনার মধ্যে স্থিরতা আসবে, আপনার ভাবনার মধ্যে ভালো অনুভূতি আসবে। আপনি যত   খারাপ ভাববেন তত খারাপ  হবে, আপনি যত  ভালো ভাববেন, তত ভালো হবে। অর্থাৎ যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজের দিকে খেয়াল করুন, পরিস্থিতির বিশ্লেষণ শুরু করুন, নিজেকে নিজের জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিন, পরিস্থিতির স্বীকার হতে দেবেন না। ঘটে যাওয়া কোনোকিছুকে আপনি বদলাতে পারবেন না। কিন্তু ভবিষ্যতের ঘটনার উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ আছে।  সেটা ভেবে, নিজের ভাবনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

আমাদের ভাবনার মধ্যে একটা বিশাল জায়গা জুড়ে আছে ভয়। আর ভয় ব্যাপারটা পুরোপুরি কাল্পনিক। আশঙ্কা থেকে ভয়ের উৎপত্তি। আশঙ্কা অমূলক নাও হতে পারে, কিন্তু ভয় কাল্পনিক। একটা ঘটনা বলি, আমার একবার হঠাৎ বদলি হয়ে গেল কলকাতা থেকে দুর্গাপুরে। আমি ঘরকুনো মানুষ । আমার মন যেতে চাইছে না। সারাজীবন কলকাতায় থেকে এসেছি। এমনকি প্রমোশন পর্যন্ত নেইনি, এই বদলির ভয়ে। এখন সেই বদলি হতে হলো , এই ব্যাটা নাটগুন্ডের জন্য । নাটগুন্ডে মানে আমাদের জি.এম। ভাবতে লাগলাম - ছেলেটা সবে ১২ ক্লাস পরীক্ষা দিয়েছে, কদিন পরে ওকে কলেজে ভর্তি করতে হবে। স্ত্রী কি করে এসব ঝামেলা সামলাবে ? এই বয়েসে বাচ্চাদের বাবার অবিভাবকত্ত্ব, খুব দরকার, এখনতো মায়ের কথায় ছেলেটা পাত্তাই দে না। নিশ্চই ছেলেটা  বকে যাবে।
দুর্গাপুর একটা ছোট্ট শহর, আধুনিক জীবনযাত্রার পক্ষে এটি সুবিধার নয়। কলকাতার বন্ধুবান্ধবদের ছেড়ে যেতে হবে। ওখানে নাকি মাওবাদীদের ঝামেলা।  শিল্পাঞ্চলে বাড়িভাড়া পাওয়া ঝামেলা, তাছাড়া বাড়িভাড়াও বেশী।   ঠান্ডা-গরম দুটোই  ওখানে খুব বেশী।ওখানে নাকি, বাতাসে কয়লার কনা ঘুরে বেড়ায়। ভবিষ্যতে টি.বি. নির্ঘাৎ।  এখন আমার বয়স ৫৫, এই বয়সে নতুন জায়গায় এডজাস্ট করতে আমার খুব অসুবিধা হবে।  ইত্যাদি ইত্যাদি নানান কিছু ভাবতে লাগলাম। কিন্তু উপায় না থাকায়, নিমরস চিবোতে চিবোতে, ঈশ্বরের উপরে ভরসা করে, দুর্গাপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।  রাত নটায় ট্রেন পৌঁছনোর কথা পৌঁছলো রাত  বারোটায়। দুর্গাপুর চিনি না। ওই রাতে হোটেল খোঁজা অসম্ভব। ভগবানের কি অসীম কৃপা দেখুন, তাপস নামে  এক সহকর্মী বন্ধুকে খবর দিয়েছিলাম, ও ওখানকার ছেলে, সে হোটেল বুক করে, ওই রাতে স্টেশানে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমাকে একটা রিক্সা করে দিয়ে, ও বাড়িতে চলে গেলো। এর পরে, খুব ভালো জায়গায়, খুব কম পয়সায় থাকার জায়গা পেয়েছি। অফিসের সবার সহযোগিতা পেয়েছি। অসংখ পুরোনো বন্ধুদের সাথে দেখা হয়েছে, নতুন বন্ধু পেয়েছি। ছেলেকে বর্ধমান ইউনিভার্সিটির - একটা কলেজে ভর্তি করাতে পেরেছি। চার বছর ছিলাম, কষ্ট হয়েছে, কিন্তু ভালো ছিলাম। সবাই সহযোগিতা করেছে , এখন মনে হয়, বাইরে আথিতিয়তা, আন্তরিকতা  অনেক বেশী। তাই কাল্পনিক ভায়ের ভাবনা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখুন।

আমরা অনেকে ভাবি, ভাবনার উপরে আবার নিয়ন্ত্রণ রাখা যায় নাকি ? ভাবনাতো এমনি এমনি আসে। আমাদের ভাবনা, আমাদের অনুভূতি এরা তো নিজেরাই নিজেদের চালক। তাদেরকে একটা কথা বলি, আমি ভালো আছি, এটা ভাবার চেষ্টা করে দেখুন, আর এটা ভাবলে, আপনি ভালো অনুভব করবেন, আর এ থেকেই আপনার ভবিষ্যৎ ভালোর দিকে যাবে। একটা শক্তিশালী ফ্রীকোয়েন্সি আপনার মধ্যে কাজ শুরু করবে। আর এটা প্রতিনিয়ত  অভ্যাস করলে, আপনার মধ্যে একটা আদত  তৈরি হয়ে যাবে, ভালো থাকার। এবং আপনি নিজেকে একটা নতুন ফ্রেকুয়েন্সিতে নিয়ে গেছেন বলে মনে হবে। সর্বদা একটা সুখের অনুভূতি সারাদিন ধরে রাখতে পারবেন। হোক না খারাপ ঘটনা, আপনি নিজেকে ভালো বাসুন, নিজের যেটা খারাপ লাগে, সেটাকে অবহেলা করে, উদ্দেশ্যমূলকভাবেই  আপনি ভালো থাকার কাজ চালিয়ে যান। যেকোনো ঘটনায়, কয়েক মুহূর্ত নিয়ে, নিজের ভেতরের দিকে ফোকাস করুন, আলো  ফেলুন, দেখুন-ভাবুন, আপনার অনুভূতিটা ভালো না খারাপ, যদি ভালো অনুভব না করেন,  তবে অন্তরের অনুভূতির উপরে, উদ্দেশ্যমূলক ভাবে, ভালো থাকার আলো ফেলুন।  ৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত চোখ বুজে, অন্তরের অনুভূতির উপরে, সুখানুভূতির আলো ফেলুন। এটা প্রথমদিকে একটু কঠিন মনে হবে, কিন্তু পরে দেখবেন, অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। এতে শুধু আপনি ভালো থাকবেন তাই নয়, আপনার বাঞ্ছিত  বস্তূ, আপনার কাছে আসতে  শুরু করবে। তাহলে আজ থেকেই শুরু করুন, ইচ্ছেশক্তির সাহায্যে ভালো থাকার খেলা ।

ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ - হরি ওম।

আজ আমরা ইচ্ছা শক্তির তৃতীয় পর্ব্বে প্রবেশ করবো। আমাদের পুরান কাহিনীতে , অনেক গভীর তত্ত্বকথা গল্পের আকারে বলা আছে । যাতে সাধারণ লোক বুঝতে পারে। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষরা সেটাকে গল্প বলেই ভাবি। ভিতরের তত্ত্বকে বুঝতে পারি না। আপনারা পরশ পাথরের গল্প গুনেছেন, আলাদীনের  প্রদীপ-এর গল্প শুনেছেন। গল্পগুলো শুনে আমাদের ভালো লাগে, কিন্তু এগুলো যে সত্যি হতে পারে, সেটা আমরা জানি না। আলাদিনের প্রদীপের গল্পই ধরুন। আলাদিন, প্রদীপটা হাতে নিয়ে ঘষতো অমনি একটা জীন বেরিয়ে আসতো। বলতো, "প্রভু, বান্দা হাজির, আদেশ করুন, কি করতে হবে, আপনার ইচ্ছেই আমার কাছে আদেশ।"  এই যে ইচ্ছের কথা বলা হচ্ছে, এর কোনো সীমারেখা নেই।  যা ইচ্ছে তাই  চাইতে পারে আলাদীন ।  আর তা  পূরণ করে দেবে, এই জিনটি। ব্যাপারটা কেমন অদ্ভুত লাগে, আমরা ভাবি, হলেতো ভালোই হয়, কিন্তু এসব তো গল্প।  আর গল্পের গরু গাছে চড়ে । এমনটা যে সত্যিই হতে পারে, আজ সেই গল্প বলবো ।   শুধু বলবো না, প্রয়োগ করে দেখে নেবেন আপনারা ।

দেখুন, এই বিরাট মহাবিশ্ব , তার যে শক্তি, সেটার রূপ হলো ওই  জীন। অসংখ্যা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শক্তি কনায় তৈরি এই জিনের শরীর। একে আপনি অবতার বলতে পারেন, ঈশ্বরের দূত  বলতে পারেন, জীন বলতে পারেন । যে নামেই আপনি ডাকুন না কেন,  এটি আসলে আপনারই বৃহত্তর সত্ত্বা।  যে আপনার ভিতরেই আছেন, কিন্তু সুপ্ত ভাবে। তাই আমরা তাকে চিনতে বা জানতে পারি না। ইনি আমাদের সবকিছুই নজরে রাখছেন। ইনি আমাদের ইচ্ছাশক্তির প্রয়োগকর্তা। ইনি কোনো প্রশ্ন করেন না, শুধু আপনার ভাবনার দিকে নজর রাখছেন। এই শক্তি ধরে নেয়, আপনি যা ভাবছেন, আপনি তাই চাইছেন। এই শক্তি কোনো প্রশ্ন করে না। আপনি যা ভাবেন, এই শক্তি, সঙ্গে সঙ্গে আপনার সেই  ইচ্ছে অনুযায়ী মহাবিশ্বে পরিবেশ ও ঘটনার মধ্যে দিয়ে, যন্ত্রচালিতের মতো ইচ্ছে পূরণ করে দেয়।

তাই আমাদের যেটা উচিত, সেটা হচ্ছে,  প্রথমত চাইতে শেখা। অর্থাৎ সঠিক ভাবনা। আপনি কি চান সেটা সম্পর্কে আপনি স্বচ্ছ, দৃঢ়, ও নিশ্চিত হন। তার পর অর্ডার দিয়ে চুপচাপ অপেক্ষা করুন, সন্দেহ প্রকাশ করবেন না, যে আপনার কথা ইচ্ছেশক্তি শুনেছেন  কি না। আপনি ধরুন, কোনো ক্যান্টিনে গেছেন, ক্যাটালগ দেখে খাবারের অর্ডার করেছেন, এখন খাবার গরম করতে, বা তৈরী করতে সময় লাগে, সেটুকু সময় অপেক্ষা করুন, বার বার জিজ্ঞেস করবেন না যে আমার অর্ডার নেওয়া হয়েছে কি না। আপনার কাজ শুধু অর্ডার করা আর অপেক্ষা করা। ইচ্ছেশক্তি আপনার কথা শুনলো কি না, সেই সন্দেহ যেন আপনার মনের মধ্যে না আসে। আপনি  শুধু নিজে  নিশ্চিত হোন, যে আপনার যা দরকার সেটা আপনি চেয়েছেন। এবং ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করুন।

এর পরের  পদক্ষেপ হচ্ছে, বিশ্বাস করা। আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে, যে আপনি যা চেয়েছেন, তা আপনার জন্য এসে গেছে, আপনি এবার সেটা খাচ্ছেন, বা ব্যবহার করছেন। আপনি সেই খাবারের সুগন্ধ পাচ্ছেন।  বা আপনি যে জিনিষের অর্ডার করেছিলেন, সেটা আপনি পেয়ে গেছেন। এবং আপনি সেটা ব্যবহার করছেন। আমাদের আধ্যাত্মিক জগতেও এইরকম প্রথম দিকে একটা কল্পনা করার ব্যাপার আছে। সেটা হচ্ছে, আমরা যখন প্রথম প্রথম বিভিন্ন চক্রের উপরে ধ্যান শুরু করি, তখন চক্রের অবস্থান আমাদের কল্পনা করে নিতে হয়। পরবর্তীকালে, এইসব চক্রের সঠিক অবস্থান নিজে থেকেই  উপলব্ধি করা যায়।

একটা কথা বলি, এই বিশ্বের কোনোকিছুই আপনার বা আমার নয়।  সবই পরমপিতার, পরম-ঈশ্বরের। আমরা তার সন্তান।  তো আপনার পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী আপনি। আপনি যেমন এগুলো ব্যবহার করতে পারেন, তেমনি এ-সব কিছুতে, আপনারই একমাত্র অধিকার। এক্ষেত্রে আপনার কোনো যোগ্যতার দরকার নেই , কেবলমাত্র আপনি যে, পরম-পিতার সন্তান, আর  এই সমস্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকারী, সেটা আপনাকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস  করতে হবে।

কিন্তু  কথা হচ্ছে, যা আপনি  সত্যি সত্যি পান নি, তা পেয়ে গেছেন সেটা কেন ভাবতে যাবেন ? দেখুন, আপনার মনে আপনি যে প্রতিচ্ছবি তৈরি করছেন, সেটা মহাবিশ্বের ইচ্ছাশক্তিতে প্রতিফলিত হচ্ছে।  অর্থাৎ বিশ্ব-ইচ্ছাশক্তি হচ্ছে  আয়না।  আপনি যা ভাবছেন, তার প্রতিচ্ছবি সেই  আয়নায় প্রতিফলিত হচ্ছে। আর আয়নায় যদি কিছুর প্রতিচ্ছবি পড়ে তাহলে জানবেন, বহির্বিশ্বে সেই ছবির অনুরূপ বস্তু অবশ্যই  অবস্থান করে থাকবে। আর আপনার কাম্য বস্তু তখন আপনার হাতের নাগালে।

আর একটা কথা বলি, আপনার ব্যাকুলতা বাড়াতে হবে।   ভগবান ব্যাকুলতা দেখেন , যোগ্যতা নয়। মানুষ কেন গরিব হয় জানেন, তারা চাইতে জানে না।  সে জানে, বা  সে ধরে নিয়েছে যে  তার বাবা গরিব, বাবা দিতে পারবে না। তাই সব সময় ভাবে, আমরা গরিব। আমাদের চাওয়া সাজে না। তাই  তারা গরিব  হয়েই  থাকে।

একটা ঘটনা বলি, আমার ছেলে তখন ছোট। পাড়ার কারুর সাইকেল দেখে, তার সাইকেল পাবার বাসনা হয়েছিল। আর  আমার কাছে, এইসব বায়না ছিল অহেতুক, বড়োলোকের খেয়াল। কেননা সাইকেল দিয়ে কি হবে ? বরং মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করুক, ভবিষ্যতে অনেক সাইকেল হবে। ছেলে চুপ হয়ে গিয়েছিলো। একদিন হঠাৎ দেখি, গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে ঘরের মধ্যে কি যেন  খুঁজছে। আমি বললাম কি হয়েছে বাবা ? বললো আমার সাইকেল কোথায়।  এইখানেই তো ছিল। আমি অবাক হয়ে গেলাম, আমি তো সাইকেল কিনে দেই  নি। পরদিন কি মনে হল, ও.ডি থেকে টাকা তুলে, অর্থাৎ ধার করে,  বেন্টিক স্ট্রিট থেকে ছেলের জন্য সাইকেল কিনে  নিয়ে এলাম। এখন মনে হয়, মানুষ যখন ব্যাকুল হয়, পরমপিতা তার সমস্ত ইচ্ছে পূরণ করেন।

আপনি যে পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছেন, উত্তরাধিকার সূত্রে সেই পরিবারের সম্পত্তির উপরে আপনার অধিকার আছে। এখন আপনি  এই মুহূর্তে সেই সম্পত্তি পেয়েছেন কি না সেটা বড় কথা নয়, আপনি পাবেন, এই বিশ্বাস আপনার থাকা উচিত। এবং এই মুহূর্তেই আপনি অবশ্য়ই তার মালিক, এবং আপনি সে সব  ব্যবহারও করছেন। এই যে পিতার সম্পত্তিতে পুত্রের অধিকার আছে, এটা আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে। দেখুন, এই আলো, এই বাতাস, এই জল, এই জমি এগুলো কোনো মানুষের নয়, এগুলো সব পরম-পিতার সম্পত্তি। আমরা ব্যবহার করার অনুমতি পেয়েছি মাত্র।

 এর পরেও যদি আপনার অবিশ্বাস থাকে তবে, অন্ততঃ বিশ্বাস করার ভান করুন। অভিনয় করুন, যেন আপনি সব পেয়ে গেছেন। আর এই ভান, বা অভিনয় করতে করতে আপনি একসময় গভীর ভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করবেন যে আপনি এগুলোর মালিক, আপনি সবকিছু পেয়ে গেছেন। আপনি পেয়েছেন, এই বিশ্বাস যখন আপনার দৃঢ় হয়ে গেছে, তখন দেখুন কি মিরাকেল ঘটতে চলেছে আপনার জীবনে। মহাবিশ্বের ইচ্ছাশক্তি, আপনাকে আপনার কাঙ্ক্ষিত বস্তু দেবার জন্য প্রস্তূতি শুরু করে দেবে। কি ভাবে আপনাকে দেবে, তা  আপনার জানার দরকার নেই। শুধু বলবো, সন্দেহ করবেন না। নিরাশ হবেন না।  হতাশ হবেন না। শুধু অনুভব করুন, আপনার কাঙ্খিত বস্তুর সাথে, আপনি মিলিত হয়েছেন। ঠিক সেই সময় একটা জিনিস ঘটবে, তা হচ্ছে আপনার ফ্রীকোয়েন্সিতে পরিবর্তন আসবে। এখানে বুদ্ধি কাজ করে না। এই খেলাটা আপনার ফ্রীকোয়েন্সির পারিবর্তনের খেলা।  নিজেকে ভালো অনুভূতির ফ্রেকুয়েন্সিতে রাখতে পারলেই, আপনি সফল।  আর কাঙ্খিত বস্তু আপনার হাতের মুঠোয় এসে যাবে ।

ওম শান্তি, শান্তি, শান্তিঃ - হরি ওম

আমরা এবার ইচ্ছাশক্তির চতুর্থ পর্ব্বে প্রবেশ করবো। কল্যাণীর এক ভদ্রলোক রামকৃষ্ণ মিশনের এক স্বামীজীর কাছে চিঠি লিখেছেন, "আমার ক্যানছার হয়েছে, ডাক্তারবাবু বলেছেন আমার আয়ু আর একবছর। আমি ভীষণ ভেঙে পড়েছি। কি করবো বুঝতে পারছি না। আমাকে কিছু উপদেশ দেবেন।" তো স্বামীজী, তক্ষুনি তাকে লিখলেন, আপনি তো তবু এক বছর বাঁচবেন, বলেছেন ডাক্তারবাবু। আমাকে কিন্তু কোনো ডাক্তার এক বছর  কেন একদিনও বাঁচার প্রতিশ্রূতি দেয়নি। আপনি ভাগ্যবান আরো এক বছর আপনি মানুষের সেবায় কাজ করতে পারবেন। ঈশ্বর মঙ্গলময়। আপনার মঙ্গল করুন। - ইতি ভবদীয়। ....

ভদ্রলোক এখন নেই, কিন্তু এই ঘটনার পরেও  ভদ্রলোক বারো বছর  বেঁচে ছিলেন। এবং মানুষের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন।

আমার এক সহকর্মী বন্ধু আছে, মোহনলাল তিওয়ারি,  তার কোমরের হাড়ে দু দুবার অপারেশন করতে হয়েছে। একবার পেটে জল জমে গিয়েছিলো।   ডাক্তার বাবু , মোটা সিরিঞ্জ দিয়ে জল বার করতেন। তো একবার হলো কি, জায়গা  মতো নিডল না ঢোকার জন্য, বার বার ফুটো করতে হচ্ছিলো। ডাক্তারবাবু অনুতাপের স্বরে বলেছিলেন, আপনার খুব কষ্ট  হচ্ছে তাই না , তার জবাবে মোহন বলেছিলো, না না - " you proceed, I am enjoying,আপনি করুন,  আমি উপভোগ  করছি, , এই ব্যাথা  আর কোনো দিন হবে কি না  জানিনা। আমাকে উপলব্ধি করতে দিন।  মোহনলাল এখন পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে বেড়ায়। ভালো আছে।

আমার এক বন্ধু আছে, পবিত্র সরকার। আমি তখন কলেজে পড়ি, পবিত্র অসুস্থ হয়েছে। সাতদিন ধরে, পেটে ভীষণ ব্যাথা  । ঠাকুরনগর হাসপাতালের তৎকালীন ডাক্তারবাবু ডক্টর রমেন দাস, বললেন ওকে হাসপাতালে ভর্তি করে দাও।  আমরা ওকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিলাম। এক  দিন পরেই, ওর পেটব্যথা সেরে গেল। আমরা ডাক্তারবাবুকে জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছিল ? ডাক্তারবাবু একটা আশ্চর্য্য কথা বললেন, কিছুই হয় নি। ওকে কোনো ওষুধও  দেই  নি।

আমার বাবা ডাক্তার ছিলেন। বাবাকে দেখেছি, যেকোনো রুগীকে উনি সব সময় আশ্বাসের বাণী শোনাতেন। বলতেন, কিছুই হয় নি। ভালো হয়ে যাবে। আমি তো আছি না - কি ? বহু লোককে বলতে শুনেছি ব্রজেন ডাক্তারবাবুর কাছে গেলে আমার অর্ধেক রোগ সেরে যায়।  কেন এমন হয় ?

এই রহস্যকে ধরবার চেষ্টা করবো আমরা।  আমাদের মধ্যে কিছু অন্তর্নিহিত সত্য আছে। আমরা যা ভাবি যা বিশ্বাস করি তাই হয়। রুগী যদি সত্যিই ভাবে ও বিশ্বাস করে, ট্যাবলেটে কাজ হবে তাহলে সে সুস্থ হয়ে যাবে। ওষুধের সাথে মনের ভাবনা যদি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তবে তা আশ্চর্য্য ফল দেয়। আপনি এই মহাবিশ্বের অসীম শক্তিকে অনুভব করবার জন্য যদি নিজেকে উম্মুক্ত  করেন, তবে মহাশক্তি আপনাকে সব ভালো কিছু দেবার জন্য উন্মূখ হবে। আর নেতিবাচক ভাবনার আশ্রয় নিয়ে যদি নিজের দরজা বন্ধ করে রাখেন, তবে আপনি  অস্বাছন্দ  অবস্থাতেই থাকবেন। জীবন হবে যন্ত্রণাদায়ক, তা সে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেই বলুন, আর আর্থিক দিক থেকেই বলুন। আমাদের অধিকাংশ  শারীরিক রোগ আমাদের নেতিবাচক ভাবনার ফল, আমাদের দুশ্চিন্তার  ফল। শরীরকে ভালো বাসুন, শরীরের সঙ্গে কথা বলুন। তাকে খানিকটা সময় দিন। শরীর  ও মনের পুষ্টির জন্য শৃঙ্খলা বজায় রাখুন।

আমাদের দেহে যখন কোনো রোগের প্রকাশ ঘটে, আমরা যখন  অস্বাছন্দ অনুভব করি, তখন তাকে সঠিক ভাবনার ঔষধ দিয়ে, বদলে দিতে পারি। মজার সিনেমা দেখুন, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নাচুন, মন খুলে হাসুন, এবং সঠিক ভাবনা, ভাবতে শিখুন সব ঠিক হয়ে যাবে।

ভগবান আমাদের শরীর তৈরি করবার সময়,  আমাদের শরীরের মধ্যেই শরীর সারাইয়ের প্রক্রিয়া করে রেখেছেন। আমাদের ছোটবেলায়, ছোটোখাটো আঘাত, বা ছড়ে গেলে কোনো ওষুধের সাহায্য নিতাম না। আমি অবশ্য এখনো নেই না। এমনি এমনি সেরে যেত। এখনো যায়।  সমস্ত রোগের  প্রতিরোধ করবার ক্ষমতা আমাদের নিজেদের মধ্যেই আছে। আমাদের শরীর প্রতিমুহূর্তে লক্ষ লক্ষ কোষকে শরীর  থেকে বের করে দেয়, আবার লক্ষ লক্ষ নতুন কোষকে সৃষ্টি করে। আমাদের দেহ প্রতিদিনই বদলে যাচ্ছে। আমরা প্রতিদিনই নতুন দেহ পাচ্ছি। তাহলে, যে সব কোষকে আমরা অসুস্থ ভাবছি, বা আমাদেরকে অসুস্থ করছে, তারা কি করে বছরের পর বছর  থাকতে পারে ? আসলে আমাদের ভাবনাই তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখে। আপনি সব সময় নিজেকে পূর্ন ভাবুন, অসম্পূর্ন ভাববেন না। ভগবান আপনাকে সামঞ্জস্য পূর্ন শরীর দিয়েছে, কিন্তু আপনি নিজেকে অপূর্ন ভাবছেন, তাই আপনি অসামঞ্জস্য হয়ে পড়ছেন।

বার্ধক্যও আমাদের ভাবনার ফল। আপনি আদর্শ স্বাস্থ্যের কথা ভাবুন, অনন্ত যৌবনের কথা ভাবুন।  ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে  দেখুন,  ১২৫ বছর  বয়সেও তাকে যুবক মনে হয়। বাবাজিকে ২৫০ বছরেও কিশোর মনে হতো ।

যারা সারাক্ষন রোগের  কথা বলে, তারা রুগী হয়েই থাকে। আপনার  রোগ সব ডাক্তারকে দিয়ে দিন, আর আপনি ভালো থাকুন। নিজে বলুন, আমি খুব ভালো আছি।  আপনি অনুভব করুন, আপনি মহাসুখী।  আপনি সেই সব ভাবুন, যাতে আপনি ভালো থাকেন। আমি পারবো না যারা বলে, তারা পারে না। আর যারা পারবে বলে, তারা পারে।  আজ নয়তো কাল, তারা পারবেই।

আমি তখন খুলনা মেসে থাকি, ১৮৫, বিবি গাঙ্গুলি  স্ট্রিটে। তো আমাদের সঙ্গে কালিদা থাকতো।  বড্ড খুঁতখুঁতে।আমি আর শ্যামল মিলে  ঠিক করলাম, লোকটাকে অসুস্থ করে তুলবো। অল্প বয়সের দুস্টুমি আর কি। আমাদের সঙ্গে একজন ডাক্তারবন্ধু ছিল, ও কলকাতা মেডিকেলে পড়তো।  তো তার কাছ থেকে আমরা  কতগুলো লিফলেট পেয়েছিলাম। সেখানে বিভিন্ন রোগের উপসর্গ লেখা থাকতো।আমরা  প্রতিদিন, একটা করে লিফলেট কালিদার টেবিলে রেখে দিতাম। এবং লক্ষ করতাম কালিদা সেটা মনোযোগ দিয়ে পড়ছে । এবং পড়বার পর বিছানার তলায় লুকিয়ে রাখতো।  দুচার দিন পরেই লক্ষ করলাম, কালিদা ওই ডাক্তার বন্ধুর সঙ্গে তার অসুবিধাগুলো নিয়ে আলোচনা করছে। তার নাকি প্রেশার বেড়ে গেছে, সুগার দেখা দিয়েছে। বুকের মধ্যে ডীপ ডীপ করে, ইত্যাদি ইত্যাদি। অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন । পাচ্ছে রাস্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন ।

ঠাকুর রামকৃষ্ণ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। তার অনুগামীরা সবাই বলছেন, আপনি মাকে  একবার বলুন না আপনাকে ব্যাধি থেকে মুক্তি দিতে  - আপনি যা বলেন, মা তো তাই শোনেন । ঠাকুর মাকে এই তুচ্ছ কথা বলতে পারেন নি।  ঠাকুর জানেন, মানুষ প্রারব্ধ ভোগ করার জন্য, জন্ম গ্রহণ করেন, ঠাকুর চাইতেন, মা আমাকে জ্ঞান দাও, ভক্তি দাও, বৈরাগ্য দাও। ঠাকুর যা চেয়েছেন, তাই পেয়েছেন।

আবার অন্যদিকে দেখুন, শাম্ব তার পিতা শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে যখন জানতে পারলেন, যে তার কুষ্ঠ হবে, তখন ভগবানের কাছে জানতে চাইলেন, আমাকে ভালো হবার উপায় বলে দিন। তো ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাকে সরজু নদির তীরে, তপস্যা করতে বলেছিলেন, এবং তাই করে  সে ভালো হয়েছিল। তো আপনি যা চান তাই হবে, আপনি যা ভাববেন, তাই হবে।

আপনি যদি অন্যের অসুস্থতার কথা শোনেন, আপনার মধ্যে সেই ভাবনা আসবে, এবং আপনি কষ্ট  পাবেন। আর এতে, আপনার জীবনে সেই অসুস্থতাকেই ডেকে আনবেন। তার চেয়ে আপনি ওই ব্যক্তির সুস্থতার  কামনা করুন শক্তিশালী ভাবনা দিয়ে, সহাভূতি দেখান, তার পরে ভুলে যান। কোনো মানুষের কষ্টের বা অসুস্থতার প্রতি নজর দেবেন না, বরং তার সুস্থতার দিকে নজর ঘুরিয়ে দিন। ভালো থাকার এটাই নিয়ম।

আপনি যখন ভাবছেন, আপনার মধ্যে এক বিশেষ ধরনের রাসায়নিক ক্রিয়া সংগঠিত হচ্ছে, আপনার স্নায়ুকেন্দ্রে বিশেষ ধরনের লালা নিঃসৃত হচ্ছে। আপনার শরীরকে নতুন করে সংগঠিত করছে, নতুন কোষের সৃষ্টি করছে। আপনার চারিদিকে কি হচ্ছে সেটা বড় কথা নয়, আপনার ভাবনাই আপনার ভিতরে পরিবর্তন করছে। সঠিক ভাবনা, অর্থাৎ আমি ভালো আছি, আমি সুস্থ আছি, আপনাকে  সুস্থ রাখবেই। মানুষ তাই হয়, যা সে ভাবে।

ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ

ওম পূর্নমদঃ পূর্নমিদং পূর্ণাৎ পূর্নম-উদচ্যতে ।
পূর্নস্য পূর্নমাদায় পূর্নমে-অবশিষ্যতে ।।
ওম শান্তি-শান্তি-শান্তিঃ।
ইন্দ্রিয়-অগোচর অপার্থিব-সূক্ষ্ম জগৎ এবং ইন্দ্রিয় গোচর  এই পার্থিব জগৎ উভয়ই বিশ্বশক্তিতে পরিপূর্ন। আর এই বিশ্বশক্তি হতেই তাবৎ সৃষ্টি পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয়ে আছে। বিশ্বশক্তি থেকে এই সৃষ্টি হলেও বিশ্বশক্তি পূর্নরূপেই অবশিষ্ট আছে।

ইচ্ছে শক্তির পঞ্চম পর্ব।

আমি যখন চাকরিতে ঢুকি তখন সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কে দুটো কর্মচারী সংগঠন। একটি বামপন্থী।  যাদের স্লোগান ছিল - লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই। আর একটি ছিল দক্ষিণপন্থী সংগঠন যাদের স্লোগান ছিল - হামকো যো টকরায়গা, চুড় চুড় হো যায়গা।
প্রত্যেক মানুষের প্রবণতা হলো, তার যা ভালো লাগে, সে তাই চায়। সে সুখ চায়, তাই সে সুখের কথা ভাবে। আবার সে অনেক কিছু চায় না। দুঃখ, লাঞ্চনা, দারিদ্র এগুলো সে চায় না।  এগুলো কি ভাবে দূর করতে হবে, তার কথা সে আরো বেশি করে ভাবে। সে যা চায়, তার থেকে বেশি মনোযোগ দেয় যেগুলো সে চায় না সেগুলোর প্রতি।
আমরা সর্ব্বক্ষন লড়াইয়ের জন্য তৈরী হয়েই আছি। আমরা রোগের বিরুদ্ধে, অভাবের বিরুদ্ধে, আতঙ্কের বিরুদ্ধে, হিংসার বিরুদ্ধে লড়াই করেই চলেছি। যা চাই না তার বিরুদ্ধে লড়াই করাটা যেন আমাদের একমাত্র কাজ। এই জন্যই যেন আমরা জন্ম গ্রহণ করেছি।
আর হচ্ছে ঠিক উল্টো। যা চাইছি না তাই বাড়ছে। হিংসা বেড়েই চলেছে, আতঙ্কবাদ বেড়েই চলেছে, হাসপাতালে রুগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।এমনকি রোগের  সংখ্যাও  বেড়েই চলেছে।  আমাদের অভাব বেড়েই চলেছে। আমাদের দারিদ্রতা বেড়েই চলেছে। তো যা  চাইছি না তাই বাড়ছে। আর যা চাইছি তার দেখা মিলছে না। অধর্মের যুদ্ধ করে কৌরব বংশ শেষ হয়ে গেছে, আর ধর্মের যুদ্ধ করে যদু বংশ শেষ হয়ে গেছে। দ্রৌপদীর মর্যাদা রক্ষায় যে অর্জুন অজেয় আখ্যা পেয়েছিলো, সেই অর্জুন  যদুবংশের নারীদের মর্যাদা রক্ষা করতে পারে নি। ভগবান রামচন্দ্র সীতামায়ের সতিত্ত্বে সন্দিহান হয়েছিলো, তাই রাজ্যের প্রজারাও সন্দেহ প্রকাশ করেছিল।   বিচিত্র এই জগৎ।  
আসলে ব্যাপারটা কি জানেন, আমরা যার কথা  বেশি  চিন্তা করি, আমরা তাকেই জন্ম দেই। আমরা যার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করি, আমরা তাকেই সৃষ্টি করি। আমরা যুদ্ধ চাই না, তাই যুদ্ধ হয়। আমরা লড়াই চাই না তাই লড়াই হয়।  আমরা দুর্ভোগ চাইনা, তাই আমাদের কাছে দুর্ভোগ আসে। আমরা যখন যার চিন্তা করি, তখন আমাদের সমস্ত শক্তি তার সঙ্গে যুক্ত করি, আর আমাদের সেই  অবাঞ্চিত বস্তুর শক্তি তখন বৃদ্ধি হয়ে যায়।
যুদ্ধ-বিরোধী কোনো আন্দোলন হওয়া উচিত নয়, গরিবী হঠাও কোনো আন্দোলন হতে পারে না। সন্ত্রাস বিরোধী কোনো আন্দোলন হতে পারে না। হিংসা-বিরোধী কোনো আন্দোলন হতে পারে না। কারন যা আমরা চাই না - এই আন্দোলন সেই জিনিসের উপরে আলোকপাত করছে। যা ছিল অজানা তাই জ্ঞানে এসে গেল। এবং শক্তিশালী হয়ে গেল।
তখন বামপন্থীদের রমরমা। তারাই সরকার চালাচ্ছে। তো SUCI একটা বন্ধ ডাকলো।  খবরের কাগজে তার কোনো প্রচার নেই। সাধারণ মানুষ কিছু জানে না।  তো সন্ধেবেলা বামপন্থীদের মিছিল বেড়োলো, বন্ধ  মানছি না মানব না। .... পরদিন দেখলাম সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেল। আমরা যা চাই না, তার প্রচার, তার প্রতি দৃষ্টিপাত, বা আলোকপাত করা মানে তাকে শক্তিশালী করে দেওয়া।
আমাদের মুখ্যমন্ত্রী জয় শ্রীরাম ধ্বনি শুনতে চান না। বাচ্চা ছেলেদের দিকে তেড়ে গেলেন। আর তখনই বিস্ফোরণটা ঘটলো, চারিদিকে জয় শ্রীরাম ধ্বনি শুরু হয়ে গেল।
আপনি যার বিরোধী তাকে উপেক্ষা করুন। আপনি যা চান তাই ভাবুন। বামপন্থীরা একবার যুদ্ধ-বিরোধী মিছিলে যোগ দেবার জন্য,  মাতা টেরেসাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। মাতা টেরেসা বলেছিলেন, আপনারা শান্তির জন্য  মিছিল করুন, আমি থাকবো।
আসলে বিরোধিতা করা, সঠিক জীবন দর্শন নয়। আপনি যুদ্ধ বিরোধী না হয়ে শান্তিকামী হন। আপনি দারিদ্রতার বিরুদ্ধে লড়াই না করে, আপনি ধনী হবার  জন্য লড়াই করুন, নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে লড়াই নয়, স্বরাক্ষরতার সমর্থনে লড়াই হওয়া উচিত। আপনি যা হতে চান, তাই বলুন, যা হতে চান না তা ভাবতে যাবেন না। আপনি কাকে চান না, সেটা ভাববেন না, আপনি যাকে চান তার কথা ভাবুন। আমরা যদি খারাপ জিনিস থেকে মন সরিয়ে ভালো জিনিসে মনকে কেন্দ্রীভূত করতে পারি, তবে খারাপ জিনিস থাকতেই পারে না। সব খারাপ অদৃশ্য হয়ে যাবে। আপনি যেটা চান  না, সেটা কত খারাপ, সেটা কত ক্ষতিকর, ভয়ানক ইত্যাদি কথা  বললে তর্ক বেড়ে যাবে। আর সেই জিনিসই এসে যাবে। আপনার সেই খারাপ জিনিসের চিন্তা খারাপ জিনিসের শক্তিকে বাড়িয়ে দেবে। নেতিবাচক চিন্তা দিয়ে আপনি জগতের কোনো উপকার করতে পারবেন না। তাই আপনি দুনিয়ার খারাপ ঘটনার দিকে  মনযোগ  দেবেন, ততই খারাপ ঘটনার সঙ্গে আপনার যোগাযোগ ঘটে যাবে।
স্বামী প্রনাবন্দজী তার আশ্রমে একসময় কোনো খবরের কাগজ রাখতেন না, কারন উনি দেখেছেন, খবরের কাগজে প্রধান প্রধান খবরই নেতিবাচক। আর তা আশ্রমীদের  মধ্যে খারাপ প্রভাব বিস্তার  করবে। আশ্রমীদের মধ্যে কাউকে খবরের কাগজ পড়তে দেখলে বলতেন কাগজে কি আশ্রমের খবর আছে ? আপনার চারপাশে কি ঘটছে, সেটা কোনো কথা নয়, আপনি যা চান তার প্রতি আপনার শক্তিশালী ভাবনাকে  কেন্দ্রীভূত করুন। আর আপনার ভালো ভাবনা দিয়ে ভালো থাকার অনুভূতি দিয়ে জগৎকে বার্তা পাঠান। খবর রাখা এক জিনিষ আর খবরের দ্বারা  প্রভাবিত হওয়া অন্য জিনিষ। আপনি প্রভাবিত হবেন না, আপনি প্রভাবিত করুন। এই জগতে এক মহোৎসব চলছে, আপনি সেই মহোৎসবের সঙ্গে নিজেকে সামিল করুন।
এই পরিবর্তনশীল জগতে দুটো জিনিষ চিরকাল ছিল - আছে - থাকবে।  আর তা হলো সুতিকাগৃহ আর শ্মশান। জীবন এই দুইয়ের  মাঝখানে একটি প্রবাহমান নৌকার যাত্রী আপনি । যদি আপনার ভিতরে ভয়, লোভ, পরিপূর্ন হয়ে থাকে, আর না পাওয়ার বেদনা আপনার অভিজ্ঞতা হয়, তবে তো আপনি নিজেকে অভিশপ্ত মনে করবেন। আপনার ভিতর যে সৃজন-ভাবনা আছে ভালো বাসা আছে, প্রেম আছে তা আপনি জগৎকে বিলোতে থাকেন। আর যত আপনি বিলোবেন, তত যাবে বেড়ে। আপনি শত্রূদের  জন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা করুন, তাদের শুভবুদ্ধি দেবার জন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা করুন, তাদের আশীর্বাদ করুন। তখন তারা আপনার কাছে ঘুরে আসবে আর মিত্র হয়ে যাবে। আপনার নেতিবাচক সমালোচনা ওদের অশুভ শক্তিকে শক্তি যোগাবে। আপনি ওদের যত প্রশংসা করবেন, তত ওরা  দুর্বল হবে, আর আপনিও নতুন ফ্রেকুয়েন্সিতে বাস করবেন, একটা ভালো লাগার অনুভূতিতে আপনার উত্তরণ ঘটবে।


চিত্রগুপ্তের খাতা বলে সত্যি কিছু আছে কি না আপনি-আমি জানিনা। আর সেখানে আমার-আপনার  ভাগ্যের কথা লেখা আছে কি না, তাও  জানিনা। এই মুহূর্তে আমরা  আছি।  কাল আমরা  থাকবো না। কিন্তু আমরা  কেন আছি, কিই বা করছি, সেটা ভবিষ্যতের কাউকে জানতে গেলে এই চিত্রগুপ্তের খাতার সন্ধান করতে হবে। চিত্রগুপ্তের খাতায় আমাদের  কথা কবে লেখা হয় ? আমার-আপনার  জন্মের আগে না পরে। আমরা শুনেছি, রাম  জন্মের আগে রামায়ন লেখা হয়েছিল। তার মানে জীবন শুরুর আগে জীবনী লেখা হয়।  আমার-আপনার  জীবন তেমনই হবে, যা সেই পরম-পুরুষ আগে থেকে রচনা করে রেখেছেন। তাহলে আবার বিচার কিসের ?  আর যদি ভবিষ্যতে লেখা হয় তবে আমরা  ভবিষ্যতের বিচারের কথা না ভেবে, এখন আপনার   জীবনে যা ইচ্ছে তাই আপনি করতে পারেন। আপনার জীবন খাতায়, যা কিছু লেখা আছে, অর্থাৎ চিত্রগুপ্ত যদি কিছু লিখে থাকেন, তা সব মুছে ফেলুন, আর আপনি যা ইচ্ছে তাই লিখে রাখুন। আপনি আগে কি করেছিলেন, সব ভুলে যান। আপনার জীবন এখন থেকেই শুরু হোক।  হ্যাঁ এখনই। আপনি আপনার আনন্দ খুঁজে নিন। এবং তাতেই জীবন কাটান।
আমরা ভবিষ্যতের কথা ভেবে, বর্তমানকে কষ্টকর করে তুলি। আর সব সময় এটা হতে থাকে। বারবার ভেবেছি, এটা  করলে ভবিষ্যৎ ভালো হবে না, কিন্তু ভবিষ্যতের সেই ভালো দিনটা আর আসে না।  মানুষ ভাবে এক আর হয় আর এক। ছোটবেলায়, মা-বাবার শাসন - তারপরে মাস্টার-মহাশয়ের শাসন, তারপরে অফিসের বসের শাসন, বাড়িতে বৌয়ের শাসন, শেষদিকে ছেলের শাসন। বৌমার শাসন। আর প্রত্যেকেই বলেছে, এটা করলে ভালো হবে না। আর এখন শুনছি, আগে যদি  এটা করতে, তবে  ভালো হতো। এই সব করতে করতে, শুনতে শুনতে আমি হেজে গেছি। এখন ভাবি, আমার যা ভালো লাগে আমি তাই করবো। যাতে আমি আনন্দ পাই, আমি তাই করবো। যাতে আমি স্বাধীনতা পাই, আমি তাই করবো। যাতে আমি সুখে থাকি, আমি তাই করবো, আমি হাসতে  চাই। আমি যদি এক-ঘন্টা ধ্যান করে আনন্দ পাই, তবে আমি তাই করবো। যদি আমি নিরামিষ খেয়ে আনন্দ পাই তবে আমি তাই করবো। পোষা বিড়ালটাকে আমার স্ত্রী যখন আদর করে, দেখেছি সে আনন্দে থাকে। রাস্তার কুকুরটাকে যখন সে খাবার দেয়, তখন সে আনন্দ অনুভব করে। অর্থাৎ আমি যা চাই, তা যাতে আছে আমি তাই করবো। এবং তখন সেটাই হবে।
প্রত্যেকটি কাজে অন্তরের আনন্দ আমাদের  সাফল্য এনে দেয়। আনন্দহীন কাজ সাফল্য আনতে  পারে না। তাই আমি কাজ করবো, আনন্দের জন্য, আর এটাই সাফল্যের চাবিকাঠি। আপনি এখন আমার কথা শুনছেন,যদি আপনার ভালো লাগে তবেই শুনবেন, নতুবা বন্ধ করে দিন। আর যা ভালো লাগে তা খুঁজে বের  করুন। যা আপনার হৃদয়ের কথা, আপনি তাই শুনুন। আপনি নিজের জন্য যা বেছে নেবেন, সেটাই ঠিক। বেছে নেবার অধিকার আপনার, স্বাধীনতাও আপনার। আপনি শুধু আনন্দকে অনুসরণ করুন।
আপনি যদি আনন্দে থাকতে পারেন, অবিরাম একটা আনন্দময় জীবনের জগতে বাস করতে পারেন, তবে বিশ্বশক্তির আসল হৃদ্স্পন্দন আপনি অনুভব করতে পারবেন। হৃদয়ের সুর আপনি শুনতে পারবেন । এবং বিশ্বশক্তি আপনাকে প্রাচুর্য্যে ভরিয়ে দেবে। আপনি শুধু আনন্দকে অনুসরণ করুন, ভিড়ের পেছেনে দৌড়াবেন না, তবেই আপনার পেছনে ভিড় দৌড়োবে। বিশ্বশক্তি আপনার জন্য দুয়ার খুলে দেবে। একটা কথা আপনারা  শুনে থাকবেন। পরম-ঈশ্বর আনন্দময়, আপনিও সেই ফ্রীকোয়েন্সিতে থাকুন, যা আন্দময়, তাহলে পরম-ঈশ্বরের ফ্রীকোয়েন্সি আর আপনার ফ্রিকোয়েন্সি মিলে যাবে।
অনুষ্ঠান বাড়িতে গেলে দেখবেন, মেয়েরা মেয়েরা এক জায়গায় হয়ে যায়। পুরুষ-পুরুষ এক জায়গায় হয়ে যায়।  পুরুষের মধ্যে যারা রেলে  কাজ করে, তারা এক জায়গায় হয়ে যায়, আর যারা ব্যাঙ্কে কাজ করে তারা এক জায়গায় হয়ে যায়। কারন তাদের ভাবনা এক - আলোচ্য বিষয়ও এক। আপনি সেই ফ্রেকুয়েন্সিতে নিজেকে রাখুন, যা পরম-পিতা পরম-ঈশ্বরের ফ্রিকোয়েন্সি।  তাহলে আপনি সেই বিশ্বশক্তিকে অনুভব করবেন। এবং মহাবিশ্বের প্রাচুর্য্য আপনার কাছে উন্মুক্ত হয়ে যাবে। আপনি যাতে উৎসাহিত বোধ করেন, আপনি যে কাজে আপনার আবেগ মেশাতে পারবেন, যে কাজ আপনাকে উদ্দীপনা দেবে,  আপনি সেই ভাবে, সেই কাজে নিযুক্ত রাখুন নিজেকে। যদি গান ভালো লাগে আপনি তাই করুন, যদি বই পড়তে ভালো লাগে আপনি তাই করুন। যদি বেড়াতে ভালো লাগে, তবে আপনি তাই করুন। আপনি আপনার নিজস্ব বাস্তবতায় বাস করবেন, কিন্তু এক ভিন্ন জগতে  নিয়ে যান মনকে।
এর পর আপনি দেখবেন, আপনার কাছে অসম্ভব বলে কিছু থাকবে না। একটা সীমাহীন মহাশূন্যে মনকে নিয়ে যান। একটা কল্পনার জগৎ তৈরী করুন, মনে করুন, যেখানে আপনার মনের অনুভূতি য আপনার ব্যবহারিক সম্ভাবনাকে ছুঁয়ে থাকে মনে মনে ভাবুন, আমি যা খুশি করতে পারি। যেখানে খুশি যেতে পারি, যা খুশি পেতে পারি।
আমরা সব সময় অসম্ভবের কথা ভেবেছি। ভালো রেজাল্ট করতে পারবো কি না।  ভালো চাকরি পাবো কি না। আমার স্ত্রী ভালো হবে কি না। আমার ছেলে ভালো হবে কি না। এইসব নেতিবাচক চিন্তা ছেড়ে দিন। আপনি সীমাহীন শক্তির অধিকারী। আপনি ভাবুন, আমি ভালো ছাত্র, আমার ভালো রেজাল্ট হবেই। আমি ভালো চাকরি পাবোই। আমি ভালো, তাই আমার স্ত্রী ভালো হবেই। আমি ভালো তাই আমার ছেলে ভালো হবেই।  সুস্বপ্নের ভালোর মধ্যে নিজেকে দেখুন।  আপনার ভিতরে অসীম শক্তি। আর এই শক্তির যত ব্যবহার করবেন, ততই আপনি নিজের ভিতরে তা অনুভব করবেন। আপনি সুখী হবার জন্য জন্ম গ্রহণ করেছেন। আপনি মানুষকে অনেককিছু দেবার জন্য জন্ম গ্রহণ করেছেন। আপনি আজ যা আছেন, তার থেকে আরো বড় কিছু, আরো ভালো কিছু হবার কথা আপনার। আপনি সেই শক্তিকে জাগিয়ে তুলুন। আপনি আপনার ভাগ্যের স্রষ্টা। আপনি কি করবেন, কি হবেন,তা আপনিই ঠিক করবেন। আপনি ঈশ্বরের আশীর্বাদ ধন্য।
দরকার শুধু ভাবনার পরিবর্তন করা। ব্যাস তারপর দেখবেন , আপনার জীবনে মিরাকেল এসে যাবে। ভাবতে শুরু করুন, দুনিয়ার সব থেকে বড় শক্তি আপনার ভিতরে। সেই সবাইকে পুষ্টি যোগাচ্ছে, সেই আপনাকে আচ্ছাদন দিচ্ছে, সেই আপনাকে রক্ষা করছে, সেই সমস্ত অস্তিত্ত্বকে রক্ষা করছে। সেই একই শক্তির  নির্দেশেই সূর্য্য আপন কক্ষপথে ঘুরছে। তার নির্দেশেই বাতাস বইছে। তার নির্দেশেই পৃথিবী আমাদের আশ্রয় দিয়েছে। চারিদিকে যাকিছু, ভালো, যাকিছু সুন্দর, সবই আমার অপেক্ষা করছে। আপনি আগে যা ভেবেছেন, আপনি এখন তাই হয়েছেন। আপনি এখন যা ভাবছেন, ভবিষ্যতে আপনি তাই হয়ে যাবেন। বিশ্বপিতার সন্তান আপনি। এই বিশাল সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী আপনি। আপনি পূর্ন, আপনি আনন্দ, আপনার মধ্যে নিরানন্দ কৃত্তিম, আপনার মধ্যে অপূর্নতা কৃত্তিম। আপনি আনন্দময় সত্ত্বার  সন্তান। আপনি পূর্ণের  বংশধর। মানুষের সন্তান তো মানুষ হয়। ঈশ্বরের সন্তান ঈশ্বরই হয়।

ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ। হরি ওম।


No comments:

Post a Comment