Wednesday 20 March 2019

সনাতন ক্ষত্রিয়দের বংশ রক্ষার ধৰ্ম কি ও কেন - দীর্ঘতমাঃ-র আখ্যান

Image result for sasanka sekhar peace foundationদীর্ঘতমাঃ-র আখ্যান 


সনাতন ক্ষত্রিয়দের  বংশ রক্ষার ধৰ্ম  কি ও কেন এই ব্যাপারে, মহাবীর ভীষ্ম কি বলেছিলেন, আমরা একটু দেখে নেবো। ভীষ্মের বিমাতা সত্যবতী, তার  পুত্র বিচিত্রবীর্যের যক্ষারোগের কারনে  মৃত্যুতে শোকাতুর হয়ে পড়লেন। শুধু শোকাতুর হয়ে পড়লেন না। কুরু বংশ কি ভাবে রক্ষা পাবে, সেই ব্যাপারে চিন্তিত হয়ে পড়লেন। কেননা ভীষ্ম তো বিয়ে করবে না। বিচিত্রবীর্য অকালে মারা গেলেন। এখন কি হবে।  তাই অন্য কোনো উপায় না দেখে, ভীষ্মকে ভ্রাতৃবধূদের বিয়ে করে, সন্তান উৎপাদন করতে বললেন । কিন্তু  ভীষ্ম রাজি হন না। আর ভীষ্ম  রাজি না হওয়াতে  শেষমেশ সত্যবতী তার  কুমারী অবস্থায় পরাশরের বীর্যে  প্রথম পুত্র ব্যাসদেব বা দ্বৈপায়নকে  দিয়ে ধৃতরাষ্ট্র, পান্ডু, ও বিদুরের জন্ম প্রক্রিয়া চালালেন।

পরশুরাম কর্তৃক পৃথিবী  একুশবার নিঃক্ষত্রিয় হয়েছিল। বিনাশ-উন্মুখ এই ক্ষত্রিয়কূল কি ভাবে তাদের বংশ রক্ষা করেছিলো ? সেই গল্প শুনুন। মহাভারতের আদিপর্বে এই কাহিনীর উল্লেখ পাই।

পেটে সন্তান এলেই তা তার পানিগ্রহীতা স্বামীর সন্তান  বলেই গণ্য  হবে। এটাই সনাতন ধর্ম্ম। সেই সনাতন ধর্ম্ম স্মরণ করে ক্ষত্রিয়পত্নীরা ব্রাহ্মণদের সঙ্গে মিলিত হতেন।  আর এ ভাবেই, ক্ষত্রিয়দের পুনর্ভাব সম্ভব হয়েছে। এই নীতির কি ভাবে প্রচলন হলো সে সম্পর্কে একটা সুন্দর কাহিনী আছে।

পুরাকালে,  উতথ্য নামক  এক মহর্ষি ছিলেন। তার পত্নীর নাম মমতা। উতথ্যের  ভাইয়ের নাম ছিল বৃহস্পতি।  ইনি আবার দেবতাদের পুরোহিত। তিনি একদিন মদনাতুর হয়ে মমতার নিকট আসলেন। মমতা বললো, হে দেবর, আমি তোমার বড় ভাইয়ের দ্বারা গর্ভবতী হয়েছি। অতএব, তোমার এই রমনেচ্ছা সম্বরন করো। আমার পক্ষে, দুই সন্তানকে একসাথে গর্ভে ধারণ করা সম্ভব নয়। বৃহস্পতি, অর্থাৎ দেবপুরহিত মমতার অসম্মতিতেই বলপূর্বক ধর্ষণ করতে লাগলো। এখন গর্ভস্থ শিশু সন্তান, চেঁচামেচি শুরু করে দিলো। বললো আমি আগে এসেছি।  এই ছোট্ট কুক্ষিতে দুইজনের স্থান হবে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা।  বৃহস্পতি তার রমন ক্রিয়া চালিয়ে যেতে লাগলো। এবং অবশেষে বীর্যপাত করে ফেললো। এদিকে, গর্ভস্থ সন্তান করলো কি, পা দিয়ে শুক্রের পথ অবরোধ করে বসলো। এখন শুক্র গর্ভে প্রবেশ পথ না পেয়ে, মাটিতে পড়ে গেলো। এই না দেখে, বৃহস্পতি, রাগে গড়গড় করতে লাগলো। আর এই সব ঋষিরা যা করে থাকে, তাই করলো অর্থাৎ অভিশাপ দিলো। বললো, তুই সারা জীবন অন্ধ হয়ে থাকবি। এই অন্ধ পুত্রর নাম  দীর্ঘতমাঃ, যিনি পরবর্তীকালে, প্রদ্বেষী নামে এক ব্রাহ্মণকন্যার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ও  গৌতম প্রভৃতি পুত্রের জন্ম দান করেন। এবং গোচারণে প্রবৃত্ত হলেন। এখন দীর্ঘতমাঃ যেহেতু গোচারনে লিপ্ত থাকে, ব্রাহ্মণরা তাকে পরিত্যাগ করলো। এমকি তার স্ত্রীও  তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে লাগলো। স্ত্রী প্রদ্বেষী, কেন খারাপ ব্যবহার করছে, সেকথা জিজ্ঞাসা করাতে, প্রদ্বেষী বললো - তুমি আমার, এবং পুত্রদের ভরণ পোষন করতে পারো না। সবই আমাকে করতে হচ্ছে। আমার দ্বারা আর  তোমার সন্তানদের দেখাশুনা করা সম্ভব নয়। এসব করতে গিয়ে আমি অত্যন্ত ক্লান্ত।  আর পারছি না। দীর্ঘতমাঃ এসব শুনে বুঝতে পারলো, ও এখন অন্য পুরুষের সঙ্গে থাকতে চায়। একথা শুনে, দীর্ঘতমাঃ খুব দুঃখ পেলো, ও স্ত্রী প্রদ্বেষীকে  অভিশাপ দিলো। বিধান দিলো - পতি জীবিত থাকতে, অথবা মারা গেলেও  যদি নারী অন্য পুরুষের ভজনা করে, তাহলে অবশ্যি সে পতিতা হবে। এবং স্বামীর সম্পত্তিতে তার কোনো অধিকার থাকবে না। একথা শুনে, প্রদ্বেষীর রাগ আরো বেড়ে গেলো। সে তার পুত্র গৌতম ইত্যাদিদের বললো ব্যাটা বুড়োকে দড়ি দিয়ে ভেলায় বেঁধে নদীতে বিসর্জন  দাও। লোভ মোহাভিভূত পুত্রগণ তাই করলো।

দীর্ঘতমাঃ ভেলাকে আশ্রয় করে ভাসতে ভাসতে চলতে লাগলো। এদিকে, পুত্রহীন রাজা বলি গঙ্গা স্নানে এসে দেখেন, ভেলায় বাঁধা এক অন্ধ পুরুষ। তার দয়া হয় এবং  দীর্ঘতমাকে সঙ্গে করে প্রাসাদে  নিয়ে যান।
সেখানে তিনি রানী সুদেষ্ণাকে তার সেবা যত্নের দায়িত্ব দিয়ে  রাখেন। একে অন্ধ, তার আবার বৃদ্ধ, সুদেষ্ণার একেবারেই পছন্দ নয়।  তিনি এক দাসীকে তার সেবা যত্নের জন্য রেখে দিলেন। এই শুদ্র দাসীর গর্ভে সন্তান এলো। রাজা ভাবলেন, এরা  সবাই সুদেষ্ণার  পুত্র। অর্থাৎ বলি রাজার বিবাহিত স্ত্রীর পুত্র। এই শুদ্রযোনিতে কার্ক্ষীবৎ প্রভৃতি এগারোজন পুত্রের জন্ম হয়েছিলো। রাজা বললেন, এরা আমার পুত্র। দীর্ঘতমাঃ বললো না এরা  তোমার পুত্র নয়। তখন রাজা বলি আবার সুদেষ্ণাকে ওই বৃদ্ধের কাছে  পাঠালো পুত্র উৎপাদনের জন্য। এবার সুদেষ্ণার গর্ভে যারা জন্ম নিলো তারা হলো অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, পুন্ড্র, ও  সুহ্ম।  এরা  যেখানে রাজত্ব করতো এদের নাম অনুসারে সেই পাঁচটি রাজ্যের নাম হয়েছিল - অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, পুন্ড্র ও সুহ্ম। এইভাবে বলি রাজার বংশ বিস্তার হয়েছিল। এবং ব্রাহ্মণগণ দ্বারাই  পৃথিবীতে ক্ষত্রিয় কুলের বিস্তার হয়েছিল।

মহাভারতের যুদ্ধের পরেও দেখি,

সমাপ্ত





 





















          

No comments:

Post a Comment