গুরুবিনা কি সাধন হবে না ?
"সত্যধর্মের আলোতে "গুরুতত্ত্ব"- এক
সাধনার শেষ কথা হলো ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ। যে পথে গেলে ঈশ্বর অনুভূতি পাওয়া যাবে, সেটাই সাধন মার্গ । আর এই পথে যিনি হাত ধরে নিয়ে যান, বা যিনি এই পথের সন্ধান দেন তিনি গুরুপদ বাচ্য।'গু' কথার মানে হচ্ছে অন্ধকার। আর 'রু' কথাটার মানে হচ্ছে আলো। অন্ধকার থেকে যিনি আলোতে নিয়ে যান তিনিই গুরু।
জীবনপথে চলবার জন্য, প্রতিপদে আমাদের গুরু প্রয়োজন।
মহাত্মা গুরুনাথ বলছেন : গুরু আমাদের সাতজন।
যাবতীয় ভক্তিভাজন জনই গুরু।
আচার্য্য আমাদের গুরু।
রাজা আমাদের গুরু।
জন্মদাতা পিতা মাতা আমাদের মহাগুরু।
মন্ত্রদাতা আমাদের পরম গুরু।
অাক্ষর গুরু হচ্ছে মন্ত্র।
গুরুশ্রেষ্ট পরাৎপর গুরু হচ্ছে পরম-ঈশ্বর।
আসলে সাধনার জগতে অর্থাৎ আধ্যাত্মিক জগতে মন্ত্রদাতা পরমগুরুর সাহায্য গ্রহণ আমাদের একান্ত প্রয়োজন। মহাত্মা গুরুনাথ বলছেন, এই মন্ত্রদাতা বা দীক্ষাদাতা গুরুর কর্তব্য হচ্ছে : ১. পাপ গ্রহণ ও অভেদজ্ঞান পূর্বক দীক্ষাদান। ২. বিপদ হতে শিষ্যকে রক্ষা করা। ৩. তৃতীয় কর্তব্য, শিষ্যের উপযুক্ত অভিলাষ পূর্ন করা।
এই মন্ত্রদাতা গুরু কেমন গুণসম্পন্ন হবে তা একবার দেখুন :
১ ) সর্বশাস্ত্রপর - অর্থাৎ সব শাস্ত্র সম্পর্কে তার জ্ঞান থাকা আবশ্যক। তা সে সাহিত্য বলুন আর গণিত বলুন।
২) দক্ষ : সকল শাস্ত্র ও নানাবিধ ধর্মকর্মে সুনিপুন।
৩) সর্ব শাস্ত্রার্থবিদ : সমস্ত শাস্ত্রের প্রকৃত অর্থ তিনি জানেন।
৪) সুবচাঃ : অর্থাৎ এমন ভাবে সুবাক্যঃ বিন্যাসে কথা বলবেন যাতে শ্রোতার হৃদয় বিগলিত হয়।
৫) সুন্দর :প্রেমময় অবস্থার পরাকাষ্ঠা প্রাপ্ত। যাকে দেখলেই প্রেম করতে ইচ্ছা করে।
৬) বিকারশূন্য, সরল অন্তঃকরণ।
৭) কুলীন : জীবতত্ত্ব, প্রকৃতি তত্ত্ব, দিক, কাল, ও পঞ্চভূত - এই সব বিষয়ে জ্ঞান সম্পন্ন।
৮) শুভদর্শন : যিনি সব কিছুতেই শুভ দেখেন অর্থাৎ জগতের মঙ্গলসাধন জ্ঞান বিশিষ্ট।
৯) জিতেন্দ্রিয় : কাম. ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য্য - এই ছয়টি যার বশীভূত।
১০) সত্যবাদী : অর্থাৎ সত্য বই মিথ্যা বলেন না।
১১) ব্রাহ্মণ : ব্রহ্মজ্ঞ, ব্রহ্মদর্শী।
১২) শান্তমানস : স্থির চিত্ত।
১৩) মাতাপিতার হীতে যিনি সর্বদা যুক্ত।
১৪) সর্বকর্ম পরায়ণ।
১৫) আশ্ৰমী : যার হৃদয়ে সতত ঈশ্বর বিরাজমান।
১৬) দেশবাসী : স্থুল দেহধারী।
এর পরে আরো একটা সংযোজন করেছেন তা হচ্ছে, স্ত্রীলোকের কাছ থেকে দীক্ষা নিলে তা প্রকৃত দীক্ষা হয় না।
এখন কথা হচ্ছে, আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য গুরুদেবের প্রয়োজন, এটা অনস্বীকারযোগ্য । কিন্তু যদি উপযুক্ত গুরু আমাদের না জোটে তা হলে আমরা কি করবো। তাহলে কি হাত গুটিয়ে বসে থাকবো ?
মহাত্মা আর এক জায়গায় বলছেন : আমি মুক্ত কন্ঠে বলছি , যে প্রকৃত গুরু ভিন্ন অন্য কারুর কাছ থেকে দীক্ষা গ্রহণ অপেক্ষা আজীবন অদীক্ষিত থাকা শত শত গুনে মঙ্গলদায়ক। যদি পরস্পর বিপরীত শাস্ত্র যুগ্মে অধিকারী, শাস্ত্রে মর্মজ্ঞ, কামাদিজাত গুন্ সমূহের লয়ে সমর্থ, নিয়ত পরম-ঈশ্বর পরায়ন ও জীবন মুক্ত গুরুলাভ করতে পারো, তবেই তাঁর নিকট দীক্ষা গ্রহণ করবে।
এখন আপনি ভাবুন তো এই গুরু আমরা কোথায় পাবো ? আর যদি কেউ থেকেও থাকেন তবে তিনি আমাদের মতো সাধারণ সাধককে কেন দীক্ষা দেবেন ? তার কি দায় পড়েছে আমার পাপ গ্রহণের ? আমাকে বিপদ থেকে রক্ষা করার ? বা আমার অভিলষিত ইচ্ছা পূরণের ? তাহলে আমরা কি করবো ?
এই জিজ্ঞাসা থেকেই আজকের আলোচনা।
আসলে নিজেকে তৈরী করতে হবে। নিজেকে উপযুক্ত করে তুলতে হবে। শুধু গুরু করলেই আপনার
সব পাপ ধুয়ে যাবে, আপনার সব কল্যান সাধিত হবে, এমন ভাবা আহম্মকের কাজ। এখনকার গুরুদের প্রতি যথাযথ সন্মান জানিয়ে বলছি, যে নিজের কল্যাণ চায়, তার কোনো মানুষ-গুরুর চক্করে পড়া উচিত নয়। কোনো মানুষকে গুরু না করলেও জগদীশ্বরের কৃপায় তার তত্ত্বজ্ঞান হতে পারে। আমার মতে , সৎসঙ্গ করুন , যতটা পারেন ভালো কথা গ্রহণ করুন , নিজের জীবনে সেটা কার্যকরী করুন । কাউকে গুরু করতে যাবেন না। তথাকথিত ব্যবসায়ী গুরুর পাল্লায় পড়বেন না। যেখানে ভালো কথা শুনবেন, সেখান থেকে তা নিয়ে নিন । আর যেখানে সেটা পাবেন না, সেখান থেকে দূরে হাটুন ।
কোনো ব্যক্তিকে না ধরে পরম-আত্মাকে ধরুন । ব্যক্তির মধ্যে পূর্নতা থাকে না। পরম-আত্মার মধ্যে পূর্নতা থাকে। আমরা যদি স্থির চিত্তে, শুদ্ধ অন্তঃকরণে পরম-আত্মার কাছে বসি, তবে তিনি আমাদের জ্ঞান, ভক্তি সবই দেবেন।
ঈশ্বর যখন আমাদের শরীর দিয়েছেন, তখন তিনি আমাদের বিবেকরূপী গুরুকেও দিয়েছেন। ভগবানের কাজে কখনো অপূর্নতা নেই। আপনি সেই বিবেকের আশ্রয় নেন। তাঁর কথা শুনুন। সেই মতো চলুন। বিবেকের চেয়ে বড়ো কোনো গুরু নেই। যার নিজের বিবেকের প্রতি শ্রদ্ধা নেই, সে বাইরের গুরু করলেও কিছু লাভ হবে না।
মানুষ আসলে নিজেই নিজের মিত্র, আবার নিজেই নিজের শত্রূ। দেখুন কেউ আপনাকে উদ্ধার করতে পারবে না, যদি না কিনা আপনি নিজের উদ্ধার চান। আমি বলি আপনার পতনের জন্য আপনিই দায়ী। আবার আপনার উদ্ধার আপনাকেই করতে হবে। ভগবান যার সঙ্গে আছেন, তার উদ্ধারের জন্য অন্য কারুর প্রয়োজন নেই। আর ভগবান, তিনি তো অবশ্যই আপনার, আমার সবার মধ্যে আছেন। শ্রীমদ্ভগবৎ গীতায় (৬/৫) যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ বলছেন :
উদ্ধরেৎ আত্মনা আত্মানং ন আত্মানম অবসাদয়েৎ।
আত্মৈব হি আত্মনো বন্ধুঃ আত্মা এব রিপুরাত্মানঃ। ।
আত্মাই আত্মার উদ্ধার করবে,আত্মাকে কখনো অবসাদগ্রস্থ হতে দিও না। আত্মাই আত্মার বন্ধু, আত্মাই আত্মার শত্রূ।
গুরুদেব খাদ্য জোগাড় করে দিতে পারেন , আলো দেখাতে পারেন। কিন্তু খাবো তো আমি। আমার যদি ক্ষিদে না পায়, তা হলে গুরুর পরিবেশিত খাবার আমার কোন কাজে লাগবে ? আলো তো গুরু দেখাতে পারেন, কিন্তু চলতে হবে আমাকে। আমি যদি পা না বাড়াই, গুরু আমার কি করবে ?
এই জন্য নিজেকেই নিজে উপদেশ দিন । নিজেই নিজের গুরু হয়ে যান ।
দেহধারী গুরু খুঁজতে গেলে বাইরে যেতে হবে। কিন্তু বিবেকরূপী ভগবান তো আমার-আপনার সঙ্গেই আছেন। আপনি তার কথা শুনুন। তিনিই আসল গুরু। আচার্য্য চানক্য বলছেন, ফুলে যেমন গন্ধ আছে, কাঠে যেমন অগ্নি আছে, আখে যেমন গুড় আছে, তেমনি দেহের মধ্যে বিবেক আছে। এই বিবেককে আমাদের জাগ্রত করতে হবে, এবং এই বিবেক দ্বারাই দেহের ভিতরের আত্মাকে জানতে হবে, আত্মাকে দেখতে হবে।
কত সাধু এলো-গেলো। কত অবতার এলো গেলো। আমাদের কি দুঃখ গেলো ? ধনী অনেক আছে, তাতে আমার কি যায় আসে। আমি যদি পুরুষাকার কাজ না লাগাই, আমাকে কে ধনী করতে পারে ?আপনার আগ্রহ বাড়ান। নিজেকে প্রশ্ন করুন। নিজের মধ্যেই জবাব খুজুন। নিজেই নিজের আচার্য্য বোনে যান।
আমার যদি ব্যাকুলতা না থাকে, আমার যদি চেষ্টা না থাকে, হাজার গুরু করলেও আমার কোনো উন্নতি হবে না। আমি যদি আন্তরিক না হই স্বয়ং ভগবানও আমার ভালো করতে পারবে না। আর আমার যদি ব্যাকুলতা থাকে, আমার যদি আন্তরিকতা থাকে, আমার যদি প্রবল আগ্রহ থাকে তবে ভালো গুরুও পাওয়া যাবে, ভগবানকেও পাওয়া যাবে। মাটিতে চিনি ফেলে রাখুন, কোত্থেকে পিঁপড়ে এসে যাবে, আপনি জানেন না। গাছে ফল পাঁকলে, কোত্থেকে কাঠবিড়াল, পাখি এসে যাবে তা আপনি জানেন না। কিন্তু আসে। এটাই সত্য। আমরা যদি খাঁটি শিষ্য হতে পারি, তবে সত্যিকারের গুরু কোত্থেকে আসবেন, কবে আসবেন। তা আপনি-আমি জানি না। তবে আসবে এটা নিশ্চিত।
জয় জয় গুরুদেবের জয়।
সমাপ্ত।
জীবনপথে চলবার জন্য, প্রতিপদে আমাদের গুরু প্রয়োজন।
মহাত্মা গুরুনাথ বলছেন : গুরু আমাদের সাতজন।
যাবতীয় ভক্তিভাজন জনই গুরু।
আচার্য্য আমাদের গুরু।
রাজা আমাদের গুরু।
জন্মদাতা পিতা মাতা আমাদের মহাগুরু।
মন্ত্রদাতা আমাদের পরম গুরু।
অাক্ষর গুরু হচ্ছে মন্ত্র।
গুরুশ্রেষ্ট পরাৎপর গুরু হচ্ছে পরম-ঈশ্বর।
আসলে সাধনার জগতে অর্থাৎ আধ্যাত্মিক জগতে মন্ত্রদাতা পরমগুরুর সাহায্য গ্রহণ আমাদের একান্ত প্রয়োজন। মহাত্মা গুরুনাথ বলছেন, এই মন্ত্রদাতা বা দীক্ষাদাতা গুরুর কর্তব্য হচ্ছে : ১. পাপ গ্রহণ ও অভেদজ্ঞান পূর্বক দীক্ষাদান। ২. বিপদ হতে শিষ্যকে রক্ষা করা। ৩. তৃতীয় কর্তব্য, শিষ্যের উপযুক্ত অভিলাষ পূর্ন করা।
এই মন্ত্রদাতা গুরু কেমন গুণসম্পন্ন হবে তা একবার দেখুন :
১ ) সর্বশাস্ত্রপর - অর্থাৎ সব শাস্ত্র সম্পর্কে তার জ্ঞান থাকা আবশ্যক। তা সে সাহিত্য বলুন আর গণিত বলুন।
২) দক্ষ : সকল শাস্ত্র ও নানাবিধ ধর্মকর্মে সুনিপুন।
৩) সর্ব শাস্ত্রার্থবিদ : সমস্ত শাস্ত্রের প্রকৃত অর্থ তিনি জানেন।
৪) সুবচাঃ : অর্থাৎ এমন ভাবে সুবাক্যঃ বিন্যাসে কথা বলবেন যাতে শ্রোতার হৃদয় বিগলিত হয়।
৫) সুন্দর :প্রেমময় অবস্থার পরাকাষ্ঠা প্রাপ্ত। যাকে দেখলেই প্রেম করতে ইচ্ছা করে।
৬) বিকারশূন্য, সরল অন্তঃকরণ।
৭) কুলীন : জীবতত্ত্ব, প্রকৃতি তত্ত্ব, দিক, কাল, ও পঞ্চভূত - এই সব বিষয়ে জ্ঞান সম্পন্ন।
৮) শুভদর্শন : যিনি সব কিছুতেই শুভ দেখেন অর্থাৎ জগতের মঙ্গলসাধন জ্ঞান বিশিষ্ট।
৯) জিতেন্দ্রিয় : কাম. ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য্য - এই ছয়টি যার বশীভূত।
১০) সত্যবাদী : অর্থাৎ সত্য বই মিথ্যা বলেন না।
১১) ব্রাহ্মণ : ব্রহ্মজ্ঞ, ব্রহ্মদর্শী।
১২) শান্তমানস : স্থির চিত্ত।
১৩) মাতাপিতার হীতে যিনি সর্বদা যুক্ত।
১৪) সর্বকর্ম পরায়ণ।
১৫) আশ্ৰমী : যার হৃদয়ে সতত ঈশ্বর বিরাজমান।
১৬) দেশবাসী : স্থুল দেহধারী।
এর পরে আরো একটা সংযোজন করেছেন তা হচ্ছে, স্ত্রীলোকের কাছ থেকে দীক্ষা নিলে তা প্রকৃত দীক্ষা হয় না।
এখন কথা হচ্ছে, আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য গুরুদেবের প্রয়োজন, এটা অনস্বীকারযোগ্য । কিন্তু যদি উপযুক্ত গুরু আমাদের না জোটে তা হলে আমরা কি করবো। তাহলে কি হাত গুটিয়ে বসে থাকবো ?
মহাত্মা আর এক জায়গায় বলছেন : আমি মুক্ত কন্ঠে বলছি , যে প্রকৃত গুরু ভিন্ন অন্য কারুর কাছ থেকে দীক্ষা গ্রহণ অপেক্ষা আজীবন অদীক্ষিত থাকা শত শত গুনে মঙ্গলদায়ক। যদি পরস্পর বিপরীত শাস্ত্র যুগ্মে অধিকারী, শাস্ত্রে মর্মজ্ঞ, কামাদিজাত গুন্ সমূহের লয়ে সমর্থ, নিয়ত পরম-ঈশ্বর পরায়ন ও জীবন মুক্ত গুরুলাভ করতে পারো, তবেই তাঁর নিকট দীক্ষা গ্রহণ করবে।
এখন আপনি ভাবুন তো এই গুরু আমরা কোথায় পাবো ? আর যদি কেউ থেকেও থাকেন তবে তিনি আমাদের মতো সাধারণ সাধককে কেন দীক্ষা দেবেন ? তার কি দায় পড়েছে আমার পাপ গ্রহণের ? আমাকে বিপদ থেকে রক্ষা করার ? বা আমার অভিলষিত ইচ্ছা পূরণের ? তাহলে আমরা কি করবো ?
এই জিজ্ঞাসা থেকেই আজকের আলোচনা।
আসলে নিজেকে তৈরী করতে হবে। নিজেকে উপযুক্ত করে তুলতে হবে। শুধু গুরু করলেই আপনার
সব পাপ ধুয়ে যাবে, আপনার সব কল্যান সাধিত হবে, এমন ভাবা আহম্মকের কাজ। এখনকার গুরুদের প্রতি যথাযথ সন্মান জানিয়ে বলছি, যে নিজের কল্যাণ চায়, তার কোনো মানুষ-গুরুর চক্করে পড়া উচিত নয়। কোনো মানুষকে গুরু না করলেও জগদীশ্বরের কৃপায় তার তত্ত্বজ্ঞান হতে পারে। আমার মতে , সৎসঙ্গ করুন , যতটা পারেন ভালো কথা গ্রহণ করুন , নিজের জীবনে সেটা কার্যকরী করুন । কাউকে গুরু করতে যাবেন না। তথাকথিত ব্যবসায়ী গুরুর পাল্লায় পড়বেন না। যেখানে ভালো কথা শুনবেন, সেখান থেকে তা নিয়ে নিন । আর যেখানে সেটা পাবেন না, সেখান থেকে দূরে হাটুন ।
কোনো ব্যক্তিকে না ধরে পরম-আত্মাকে ধরুন । ব্যক্তির মধ্যে পূর্নতা থাকে না। পরম-আত্মার মধ্যে পূর্নতা থাকে। আমরা যদি স্থির চিত্তে, শুদ্ধ অন্তঃকরণে পরম-আত্মার কাছে বসি, তবে তিনি আমাদের জ্ঞান, ভক্তি সবই দেবেন।
ঈশ্বর যখন আমাদের শরীর দিয়েছেন, তখন তিনি আমাদের বিবেকরূপী গুরুকেও দিয়েছেন। ভগবানের কাজে কখনো অপূর্নতা নেই। আপনি সেই বিবেকের আশ্রয় নেন। তাঁর কথা শুনুন। সেই মতো চলুন। বিবেকের চেয়ে বড়ো কোনো গুরু নেই। যার নিজের বিবেকের প্রতি শ্রদ্ধা নেই, সে বাইরের গুরু করলেও কিছু লাভ হবে না।
মানুষ আসলে নিজেই নিজের মিত্র, আবার নিজেই নিজের শত্রূ। দেখুন কেউ আপনাকে উদ্ধার করতে পারবে না, যদি না কিনা আপনি নিজের উদ্ধার চান। আমি বলি আপনার পতনের জন্য আপনিই দায়ী। আবার আপনার উদ্ধার আপনাকেই করতে হবে। ভগবান যার সঙ্গে আছেন, তার উদ্ধারের জন্য অন্য কারুর প্রয়োজন নেই। আর ভগবান, তিনি তো অবশ্যই আপনার, আমার সবার মধ্যে আছেন। শ্রীমদ্ভগবৎ গীতায় (৬/৫) যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ বলছেন :
উদ্ধরেৎ আত্মনা আত্মানং ন আত্মানম অবসাদয়েৎ।
আত্মৈব হি আত্মনো বন্ধুঃ আত্মা এব রিপুরাত্মানঃ। ।
আত্মাই আত্মার উদ্ধার করবে,আত্মাকে কখনো অবসাদগ্রস্থ হতে দিও না। আত্মাই আত্মার বন্ধু, আত্মাই আত্মার শত্রূ।
গুরুদেব খাদ্য জোগাড় করে দিতে পারেন , আলো দেখাতে পারেন। কিন্তু খাবো তো আমি। আমার যদি ক্ষিদে না পায়, তা হলে গুরুর পরিবেশিত খাবার আমার কোন কাজে লাগবে ? আলো তো গুরু দেখাতে পারেন, কিন্তু চলতে হবে আমাকে। আমি যদি পা না বাড়াই, গুরু আমার কি করবে ?
এই জন্য নিজেকেই নিজে উপদেশ দিন । নিজেই নিজের গুরু হয়ে যান ।
দেহধারী গুরু খুঁজতে গেলে বাইরে যেতে হবে। কিন্তু বিবেকরূপী ভগবান তো আমার-আপনার সঙ্গেই আছেন। আপনি তার কথা শুনুন। তিনিই আসল গুরু। আচার্য্য চানক্য বলছেন, ফুলে যেমন গন্ধ আছে, কাঠে যেমন অগ্নি আছে, আখে যেমন গুড় আছে, তেমনি দেহের মধ্যে বিবেক আছে। এই বিবেককে আমাদের জাগ্রত করতে হবে, এবং এই বিবেক দ্বারাই দেহের ভিতরের আত্মাকে জানতে হবে, আত্মাকে দেখতে হবে।
কত সাধু এলো-গেলো। কত অবতার এলো গেলো। আমাদের কি দুঃখ গেলো ? ধনী অনেক আছে, তাতে আমার কি যায় আসে। আমি যদি পুরুষাকার কাজ না লাগাই, আমাকে কে ধনী করতে পারে ?আপনার আগ্রহ বাড়ান। নিজেকে প্রশ্ন করুন। নিজের মধ্যেই জবাব খুজুন। নিজেই নিজের আচার্য্য বোনে যান।
আমার যদি ব্যাকুলতা না থাকে, আমার যদি চেষ্টা না থাকে, হাজার গুরু করলেও আমার কোনো উন্নতি হবে না। আমি যদি আন্তরিক না হই স্বয়ং ভগবানও আমার ভালো করতে পারবে না। আর আমার যদি ব্যাকুলতা থাকে, আমার যদি আন্তরিকতা থাকে, আমার যদি প্রবল আগ্রহ থাকে তবে ভালো গুরুও পাওয়া যাবে, ভগবানকেও পাওয়া যাবে। মাটিতে চিনি ফেলে রাখুন, কোত্থেকে পিঁপড়ে এসে যাবে, আপনি জানেন না। গাছে ফল পাঁকলে, কোত্থেকে কাঠবিড়াল, পাখি এসে যাবে তা আপনি জানেন না। কিন্তু আসে। এটাই সত্য। আমরা যদি খাঁটি শিষ্য হতে পারি, তবে সত্যিকারের গুরু কোত্থেকে আসবেন, কবে আসবেন। তা আপনি-আমি জানি না। তবে আসবে এটা নিশ্চিত।
জয় জয় গুরুদেবের জয়।
সমাপ্ত।
No comments:
Post a Comment