ভগবান কথা (10/4/2017) গীতা-সার
আমি আগে ছিলাম না তাহা নহে, আবার পরে থাকবো না তাহাও নহে। সকল জীবের যেমন বাল্য , যৌবন,ও বার্ধক্যঃ থাকে সেইমতো মৃত্যুও একটা অবস্থা মাত্র। ইন্দ্রিয় সমূহের সঙ্গে বিষয় সংযোগে সুখ দুঃখ বোধ জন্মে। এজন্য এগুলোকে অনিত্য জেনে সহ্য করা শ্রেয়ঃ। জ্ঞানী ব্যাক্তি সুখ দুঃখকে সমান মনে করেন। যে ধীর ব্যাক্তিকে ইন্দ্রিয় সকল পীড়া দিতে অক্ষম, তিনিই মোক্ষ লাভ করেন। অনিত্য বস্তূ অস্তিত্বহীন , নিত্য বস্তূ অবিনাশী। যিনি বিশ্বব্যাপি বিরাজিত তিনিই অবিনাশী।সেই অব্যয়রূপী আত্মাকে বিনাশ করা যায় না। আত্মা নিত্য বস্তূ , ভোগাদি রোহিত ও পরিনাম রোহিত। আত্মা অবিনশ্বর কিন্ত দেহ বিনাশশীল। আত্মাকে যিনি হ্ত বা হন্তা ভাবেন তারা অজ্ঞান। আত্মা কাউকে বধ করেন না আবার কারোর দ্বারা বধ হন না. আত্মা জন্ম মৃত্যু রোহিত। আত্মার বৃদ্ধিও নাই ক্ষয়ও নাই। আত্মা অজ নিত্য শ্বাশ্বত এবং চির পুরাতন।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন :
নিষ্কাম কর্মের বিনাশ নাই। এই কর্মে পাপ নাই। বিঘ্ন নাই। নিষ্কাম কর্মের অনুষ্ঠানে সংসার বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া যায়। মৃত্যু-ভয় থেকেও মুক্ত হওয়া যায়। নিষ্কাম কর্ম দ্বারা বুদ্ধি এক বিষয়ে স্থির হয়।মন যার এক বিষয়ে স্থির নয়,কামনার নিমিত্ত তার বুদ্ধি - মন নানা বিষয়ের দিকে ধাবিত হয়।জন্ম কর্ম নিমিত্য। জন্ম হলেই তার কর্ম আছে। আর কর্ম সর্বদা ফল-দায়ক। সকাম কর্মে ভোগ আপনার আপনার। ভোগযুক্ত মন কখনো ঈশ্বরে স্থির হয় না। সমস্ত কর্মফলের আশা পরিত্যাগ করে, আত্মতত্ত্ব জ্ঞানসম্পন্য হয়ে,সুখে-দুঃখে অবিচল থেকে, নিষ্কাম কর্ম করো। কিসে কি হবে, এই চিন্তা পরিহার করে আত্মাবান হও। বেদের কর্মকাণ্ডও ত্রিগুণাত্বক। বেদের কর্মকান্ডের অনুসরণ, তোমাকে কর্মফল ভোগ করবে করাবে। বেঁচে থাকার জন্য যেটুকু কর্ম প্রয়োজন, তুমি তাই করো।এর বেশী প্রয়োজন নাই। কর্মে তোমার অধিকার কিন্ত কর্মফলে নয়। তাই কর্মফলের আশা ত্যাগ করো। কর্ম ত্যাগ করো না। ফলের আশা বা কামনা ত্যাগ করে যোগস্থ হয়ে কর্ম করো। সুফল কুফল সমান জ্ঞান করে, কর্ম করো। সর্বাবস্থায় মনকে সাম্য- অবস্থায় রাখাই যোগ। মনকে স্থির রাখাই যোগ। চিত্তকে বিক্ষিপ্ত হতে না দেওয়াই যোগ। নিষ্কাম কর্মই কাম্য ও উত্তম । সকাম কর্ম নিকৃষ্ট ও পরিত্যাজ্য। ফলাফলে সমান জ্ঞান জন্মালে, সেই জ্ঞানী ব্যক্তি এই জন্মেই পাপ-পুন্য উভয়কেই ছাড়িয়ে যায়। নিষ্কাম কর্মের কৌশল-ই যোগ। কর্মযোগ। কর্মযোগের এই কৌশল যে আয়ত্ব করেছে, সেই জন্ম-মৃত্যু-সংসার বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে মোক্ষ লাভ করেন।
ভগবান কথা (৮/৫/২০১৭) (কর্মযোগ)
কর্ম হতে যজ্ঞ, কর্ম আবার বেদের (অনুশাসন ) থেকে। বেদ পরমেশ্বর থেকে সৃষ্ট। সেই সর্বব্যাপী ব্রহ্ম যজ্ঞে নিত্য বিরাজিত।ইন্দ্রিয়ে আসক্ত যে পাপাত্মা,এই সব (বেদ) প্রবর্তিত কর্মচক্রের অনুষ্ঠান না করে, তার জীবনই বৃথা। যার আত্মাতে প্রীতি আবার আত্মাতেই তৃপ্ত, আত্মাতেই তুষ্ট, সে রকম অত্মবান পুরুষের আর কোনো কর্তব্য থাকে না। এইসব আত্মারাম ব্যক্তির এই জগতে কর্মের দরকার হয় না। কর্ম ত্যাগ করলেও তার পাপ-পুন্য নাই। সর্ব্বভূতের মধ্যে কারুর আশ্রয়ে তার প্রয়োজন নেই। অতএব আসক্তিশূন্য হয়ে অবিরত কর্ম করো। অনাসক্ত ভাবে কর্ম করলে পুরুষ মুক্তি লাভ করে। জনকাদি মহাত্মাগণ কর্মযোগের দ্বারাই সিদ্ধিলাভ করেছেন। লোকসংগ্রহের প্রতি দৃষ্টি রেখেও তোমার কর্ম করা উচিত। কারণ, শ্রেষ্ট ব্যক্তিরা যেমন আচরণ করেন, অন্য্ লোকেরা তারই অনুকরণ করেন। তাঁরা যা প্রমান করে (যে আদর্শ উপস্থাপিত করে) জনসাধারণ তারই অনুকরণ করে থাকে। ৩/২১......
ভগবান কথা (১০/৫/২০১৭) (কর্মযোগ)
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন - ত্রিভুবনে আমার কিছু করার নেই, কিছু পাবারও নেই - তবু আমি কর্মে নিযুক্ত আছি। আমি যদি অলস হয়ে কর্ম না করতাম, তাহলে সকল মানুষই আমাকে অনুসরণ করে, অলস জীবনযাপন করতে চাইতো। আমি যদি কর্মে বিরত হই , তা হলে জনগণ কর্মহীন হয়ে উৎসন্নে যাবে।অর্থাৎ আমার-ই দোষে সকলে নষ্ট হয়ে যাবে। অজ্ঞানীগন কর্মে আসক্ত হয়ে যেমন কর্ম করে, জ্ঞানীগণ অনাসক্ত হয়ে লোকশিক্ষার জন্য কর্ম করে। কর্মে আসক্ত জ্ঞানহীন মনুষ্য-মধ্যে বুদ্ধি ভেদ জন্মায়। কারণ বিদ্বান ও জ্ঞানীগণ সব কাজ নিজে করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ও অপরকে কর্মে নিযুক্ত করায়। কর্ম সম্পন্ন হয় প্রকৃতির গুনের দ্বারা। কিন্ত অহংকারের বশীভূত বিমূঢ় ব্যক্তি ভাবে - আমিই করছি - আমিই কর্তা। প্রকৃত গুন্ ও কর্মের তত্ব সম্পর্কে যিনি জ্ঞাত তিনি জানেন - গুনের আশ্রয়ে সকল গুন্ থাকে। অতএব 'আমি করি' এমনটি সে ভাবে না। প্রকৃতির গুনে মোহাবিষ্ট হয়ে যে মূঢ়গণ বিষয়াসক্ত হয়, সর্বজ্ঞ জ্ঞানীগণও তাদের বিচলিত করতে সমর্থ হয় না। অতএব তোমার সমস্ত কর্ম আমাতে অর্পণ করো। .....৩০
ভগবান কথা (১১/৫/২০১৭) (কর্মযোগ)
যারা আমার মত শ্রদ্ধা সহকারে অনুকরণ করে,তারা কর্ম করেও কর্ম হতে মুক্ত থাকে। আমার মতের দোষ ধরে যারা আমার মত্ অনুসারে কর্ম না করে তারা মূঢ় ও জ্ঞান-ভ্রষ্ট বলে জানবে। জ্ঞানীগণও আপন প্রকৃতি অনুসারে কর্ম করে। কারণ সমস্ত প্রাণী নিজ নিজ স্বভাব অনুসারে চলে -কাজেই ইন্দ্রিয়-নিগ্রহে কি হবে ? স্বভাবই বলবান। সকল ইন্দ্রিয়েরই নিজ নিজ বিষয়ে আসক্তি ও বিদ্বেষ অবসম্ভাবী।এই দুটোর বশীভূত হওয়া উচিত নয়। এরা জীবের পরম শত্রূ বলে জানবে। পরের ধৰ্ম সর্বাঙ্গ সুন্দর হলেও, বিকলাঙ্গ আপন ধর্মই শ্রেষ্ট। আপন ধর্মে মরণও মঙ্গলজনক। কিনতু পরের ধৰ্ম ভয়াবহ জানবে।
মানুষ কেন বুঝেশুনেও পাপাচারে লিপ্ত হয় ? তার কারণ হলো, কাম এবং ক্রোধ। এই দুটোর সৃষ্টি রজো গুন্ থেকে। কাম বাধা পেলেই ক্রোধের উদ্রেক করে। এদের মতো শত্রূ এ জগতে আর কেউ নেই। ধোঁয়া যেমন আগুন-কে, ধূলি যেমন আয়নাকে, চর্ম যেমন গর্ভকে আবৃত করে রাখে - কামও তেমনি প্রকৃত জ্ঞানকে আবৃত করে রাখে। মানুষের পরম শত্রূ হচ্ছে কাম। কামকে তুষ্ট করা যায় না। এবং কামই জ্ঞান কে আবৃত করে রাখে। আবার কামের আশ্রয় হলো ইন্দ্রিয়সকল,মন,ও বুদ্ধি। এই গুলির সাহায্যেই কাম সৎ জ্ঞানকে ঢেকে রেখে অসৎ কর্মে মানুষকে উদবুদ্ধ করে।
তাই সবার আগে ইন্দ্রিয়কে বশে আনো, ইন্দ্রিয়কে দমন করো। শরীর অপেক্ষা ইন্দ্রিয় বলবান, ইন্দ্রিয় অপেক্ষা মন শ্রেষ্ট, মন অপেক্ষা বুদ্ধি শ্রেষ্ট আবার বুদ্ধি অপেক্ষা আত্মা শ্রেষ্ট। তাই আত্মাকে শ্রেষ্ট জেনে, আত্মার নির্দেশ জেনে - বুদ্ধির দ্বারা মনকে স্থির করো, মন দ্বারা ইন্দ্রিয়কে বশীভূত করো। ইন্দ্রিয় দ্বারা কামকে দমন করো ......৪৩/৩
ভগবান কথা (১৭/৫/২০১৭) (গুন -ত্রয়-বিভাগ -যোগ গীতা-সার - ৪ - জ্ঞান যোগ
শ্রীভগবান এবার জ্ঞানের মধ্যে যা সর্বশ্রেষ্ট জ্ঞান তার কথা বলছেন। যা শুনলে এবং বুঝলে পরম সিদ্ধি লাভ করা যায়।
এই জ্ঞান লাভ করলে জ্ঞানী ভগবানের স্বারূপ্য লাভ করেন। জন্ম মৃত্যু থেকে রেহাই পান। সুখ-দুঃখ -এর অতীত হয়ে যান। এই জ্ঞান কী ?
প্রকৃতি ভগবানের গর্ভধানের স্থান। প্রকৃতিতেই ভগবান জগৎ বিস্তারের বীজ নিক্ষেপ করেন। এই গর্ভাধান থেকেই সর্বভূতের সৃষ্টি। বিদ্যাশক্তির প্রভাবে জন্ম জন্মান্তের জ্ঞান অর্জন করা যায়। অবিদ্যায় আচ্ছন্ন থাকলে এসব জানা বোঝা যায় না। একই শক্তি বারবার জন্ম-মৃত্যুর খেলায় রত। ভগবান সবার ঈশ্বর। যিনি জন্ম মৃত্যু রোহিত। আবার প্রকৃতিকে আশ্রয় করে নিজ মায়া প্রভাবে নিজেকেই সৃষ্টি করেন।ভগবান বলছেন : যখন যখন ধর্মের গ্লানি অর্থাৎ পতন হয় তখনই আমি নিজেকে সৃষ্টি করে থাকি। সাধুগণের ত্রাণ , পাপীগণের বিনাশ ও ধর্মকে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই। আমার এইপ্রকার দিব্য জন্ম ও কর্ম সন্মন্ধে যিনি জ্ঞাত হন দেহত্যাগের পর তার আর জন্ম হয় না। তিনি আমাকেই লাভ করেন। এই সংসারে আসক্তি, ক্রোধ,ভয় ত্যাগ করে আমাতেই মন প্রাণ সমর্পন পূর্বক আমার শরণাগত হয়ে বহু মহাত্মা জ্ঞানে এবং তপস্যায় আমার ভাব অর্থাৎ মোক্ষ লাভ করেছেন। ৪/১০.......
আমাকে যে যেভাবে ভজনা করে, আমি সেইভাবেই তাদের কৃপা করি। মানবগন সব ভাবেই আমারি পথ অনুসরণ করে। কর্মফলকামীগন এ জগতে ফল লাভের আশায় দেবতাগনের উদ্দেশ্যে যাগযজ্ঞ করে থাকে।
গুন্ ও কর্ম বিভাগ অনুযাযী আমি চারটি বর্ণের সৃষ্টি করেছি। কিনতু স্রষ্টা হলেও আমি আসক্তিহীন বলে আমাকে অকর্তা বলে জানবে।
কোনো কর্মই আমাকে স্পর্শ করতে পারেনা। কর্মফলেও আমার স্পৃহা নেই। যিনি প্রকৃত সত্য জানেন তিনি কর্ম করলেও তিনি কর্মে আবদ্ধ হন না। ৪/১৪......
ভগবান কথা (১৮/৫/২০১৭) (গুন -ত্রয়-বিভাগ -যোগ )
আমি কোনো কর্ম করি না,এই সত্য জেনে মুক্তি লাভেচ্ছু ঋষিগণ কর্মে লিপ্ত হন। তুমিও "আমি কর্ম করি না " এই ভেবে প্রাচীন মহাত্মাদের মতো কর্ম করে যাও। এবার কর্ম কি আর অকর্মই বা কি - এটা জেনে রাখো। না হলে মোহগ্রস্থ হয়ে পড়বে । আবার এটা মেনে চললে তুমি অমঙ্গলজনক সংসারবাঁধন হতে মুক্ত হবে।
কর্ম - তিন প্রকার। কর্ম, বিকর্ম, ও অকর্ম। কর্ম কি,বিকর্ম কি, অকর্মই বা কী ? (কর্ম হচ্ছে ঈশ্বরের সৃষ্টিকার্যে ও তার সৃষ্টির অভ্যুদয় বা বিকাশে সহযোগিতা করা। বিকর্ম অর্থাৎ শাস্ত্র নির্দিষ্ট কর্ম বা জনহিতকর কর্ম। অকর্ম হচ্ছে আলসেমী বা আলস্য।) কর্মই গতি নির্ধারক। কর্ম সন্মন্ধে বিশেষ রূপে বুঝবার প্রয়োজন আছে। কৰ্মই সমস্ত সুখ দুঃখের কারন। যিনি কর্মে অকর্ম ও অকর্মে কর্ম দর্শন করেন, মনুষ্য মধ্যে তিনিই বুদ্ধিমান, তিনিই যোগী, তিনিই সর্ব কর্মের অনুষ্ঠান কর্তা। ৪/১৮.........
ভগবান কথা (১৯/৫/২০১৭) (গুন -ত্রয়-বিভাগ -যোগ )
সব কর্মেই যারা কামনাশূন্য, সব কর্ম যার জ্ঞানের অগ্নিতে দগ্ধ, জ্ঞানীগণ তাকেই পণ্ডিত বলেন। কর্ম ও কর্মফলে যার আসক্তি নাই, যিনি সব সময় নিত্যানন্দে পূর্ণ থাকেন, তিনি কর্মে লিপ্ত থাকলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি কিছুই করেন না। কামনা শুন্য যার মন, আত্মাতেই যার স্থিতি,সংযত, গ্রহণ-লিপ্সা যার ত্যাগ হয়েছে - তিনি শুধুমাত্র দেহাদির ধৰ্ম হিসেবে কর্ম করেন। কর্ম ফলও তাকে স্পর্শ করতে পারে না। যিনি বিনা চেষ্টায় যা পান তাতেই সনতুুষ্ট,যার কাছে সুখ দুঃখ সমান, যিনি সিদ্ধি বা অসিদ্ধি - কে সমান জ্ঞান করেন তিনি কর্ম করেও কর্ম ফলে আবদ্ধ হন না। ৪/২২.........
ভগবান কথা (২৫/৫/২০১৭) (গুন -ত্রয়-বিভাগ -যোগ)
ফলাকাঙ্ক্ষা-শুন্য হয়ে, হিংসা মুক্ত হয়ে, চিত্ত সর্বদা যার জ্ঞানাধিষ্ঠ, সর্ব কর্মই যার যজ্ঞ-সে মহাপুরুষের কর্মফল বলে কিছু নেই। যজ্ঞের সামগ্রী - অর্থাৎ ঘি, হোম, অগ্নি এমন কি যজ্ঞের পত্রাদি/পাত্রাদী
পর্যন্ত সমস্তই ব্রহ্ম এই জ্ঞানে যিনি কার্য্য করেন সেই ব্যক্তিই ব্রহ্ম লাভ করেন। যোগীরা দৈব কৃপার জন্য যজ্ঞ করেন। আর জ্ঞানীরা ব্রহ্মরূপ অগ্নিতে সকল কর্ম আহুতি দেন।
এক এক যোগী এক এক রকম ভাবে যজ্ঞ করেন। কেউ সংয্মরূপ অগ্নিতে ইন্দ্রিয় সকলকে আহুতি দেন। কেউ ইন্দ্রিয়-অগ্নিতে বিষয় সকল আহুতি দেন - অর্থাৎ আসক্তিহীন ভাবে বিষয় ভোগ করেন।
আবার অনেকে জ্ঞানদীপ্ত আত্মসংযমরূপ অগ্নিতে সকল ইন্দ্রিয় কর্ম এবং প্ৰাণকর্ম-সকলকে আহুতি দেন। যোগীদের মধ্যে কেউ দ্রব্য-যজ্ঞ কেউ যোগ-যজ্ঞ পরায়ণ। আবার কেউ যোগ দ্বারা জ্ঞান-যজ্ঞ পরায়ণ। কেউ আবার অত্যন্ত কষ্টকর নিয়মে বেদাদি শাস্ত্রজ্ঞানরূপ যজ্ঞ করে থাকেন। কোনো যোগী অপান বায়ুতে
প্রাণ বায়ু আহুতি দেন। কেউ আবার প্রাণ বায়ুতে অপান বায়ু আহুতি দেন। কেউ আবার প্রাণ - অপান দুটোরই গতি রুদ্ধ করে প্রাণায়ামে আহুতি দেন। এই সমস্ত যজ্ঞকারী যজ্ঞ সম্পাদন করে নিষ্পাপ হয়ে যান। যজ্ঞের শেষে অমৃত ভোজন করে সনাতন ব্রহ্মকে লাভ করেন। যিনি যজ্ঞে লিপ্ত হন না তার ইহলোকই নাই - পরলোক তো দূর অস্ত। এই সব কর্ম-উদভূত তত্ব বুঝলে তবেই মুক্তি লাভ সম্ভব।
দ্রব্য দ্বারা যে যজ্ঞ সম্পাদিত হয় তার থেকে তার থেকে জ্ঞান-যজ্ঞ (অর্থাৎ যজ্ঞের প্রকৃত উদ্দেশ্যের মনন ) শ্রেষ্ট। কারন সমস্ত কর্মই জ্ঞান বিকাশ হলেই শেষ হয়। ....৪/৩৩....
ভগবানকথা (২৭/৫/২০১৭) গুন্ ত্রয় বিভাগ যোগ
জ্ঞানীগণকে প্রণাম করো। সেবা করো। এবার নানা প্রকার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করো - তিনি তোমার প্রশ্নের উত্তর দেবেন। এই ভাবে জ্ঞান লাভ করলে তোমার মোহ দূর হবে। তখন তুমি নিজ আত্মাকে এবং পরমাত্মাকে অভিন্ন দেখবে। জ্ঞানরূপ তরীর সাহায্যে সকল পাপ সমুদ্র পাড় হতে পারবে। জ্বলন্ত আগুন যেমন কাঠকে পুড়িয়ে ভষ্মে পরিণত করে তেমনি জ্ঞান সমস্ত কর্ম ভস্মিভূত করে। ফলে কর্মফল বলে আর কিছু থাকে না। জ্ঞানের মতো পবিত্র আর কিছু নাই। জ্ঞানযোগেই সিদ্ধযোগী অনন্তকাল পরমাত্মায় লীন হয়ে থাকেন। শ্রদ্ধাবান ব্যক্তিই জ্ঞান লাভ করেন এবং ইন্দ্রিয় সংযমের মাধ্যমে শান্তি লাভ করে থাকেন। জ্ঞানহীন,শদ্ধাহীন ও সন্দেহমনা ব্যক্তি বিনাশ প্রাপ্ত হয়। যে ব্যক্তি শাস্ত্রাদির কথায় অবিশ্বাস করে, গুরুর উপদেশে সন্দেহ করে, তার পরলোক তো দূরের কথা, ইহলোকের বৈষয়িক সুখও পায় না। যে ব্যক্তি যোগবলে সমুদয় কর্ম ভগবানে অর্পণ করেছেন, সেই আত্মজ্ঞানই ব্যক্তি কর্ম বন্ধন থেকে মুক্তি পায় । তাই তুমি জ্ঞানরূপ বিবেক অস্ত্র দ্বারা হৃদয় মধ্যে স্থিত অজ্ঞান, সন্দেহ ছেদন করে নিষ্কাম কর্মযোগ অবলম্বন করো।
চতুর্থ অধ্যায় সমাপ্ত
পঞ্চম অধ্যায় (কর্ম-সন্যাস যোগ )
কর্ম সন্যাস ও কর্মযোগ উভয়ই মোক্ষদায়ক। কিনতু দুটির মধ্যে কর্মসন্যাস থেকে কর্ম-যোগ শ্রেষ্ট। যে ব্যক্তি হিংসা ও আসক্তিহীন,সুখে-দুঃখে বিরুদ্ধ-ভাব পোষণ করে না - সেই ব্যক্তিই নিত্য সন্যাসী। অনায়াসেই সেই ব্যক্তি সংসার বাঁধন হতে মুক্তি লাভ করতে পারে। সন্যাস ও কর্মযোগ পৃথক নয়। এর একটিকে অনুসরণ করলেই উভয় ফল লাভ হয়। জ্ঞান-যোগী ও কর্ম-যোগী উভয়ের একই গতি। সন্যাস ও কর্মযোগকে যিনি এক দেখেন তিনিই প্রকৃত জ্ঞানী বলে জানবে। নিষ্কাম কর্মযোগের অনুষ্ঠান ব্যাতিত কর্মত্যাগ দুঃখের কারণ। কর্মযোগী কর্মযোগে সিদ্ধিলাভ করে পরম ব্রহ্ম লাভ করেন। যোগযুক্ত ব্যক্তি বিশুদ্ধ আত্মা। আত্মজয়ী, জিতেন্দ্রিয় ও সর্বজীবে সমজ্ঞানী ব্যক্তি কর্মানুষ্ঠান করলেও কর্মে লিপ্ত হন না। ৫/৭......
২৯/৫/২০১৭ ভগবান কথা (কর্ম সন্যাস যোগ)
কর্মযোগীর তত্ত্বজ্ঞান হলে দর্শন, শ্রবণ, স্পর্শন, ঘ্রান ভোজন,গমন, স্বপ্ন,স্বাস গ্রহণ,কথন , ত্যাগ, উন্মেষ এবং নিষেধাদি কার্য করেও তিনি ভাবেন, এসব ইন্দ্রিয় কর্ম, আমি কিছুই করি না।
পদ্মপাত্রে জল পড়লেও জল থাকে না। সব কর্মফল ব্রহ্মকে অর্পণ করলে, আসক্তিহীন ভাবে কর্ম করলে তিনি কোনো পাপে লিপ্ত হন না। যোগীগণ চিত্মসুদ্ধির জন্যই আসক্তিহীন হয়ে দেহ, মন , বুদ্ধি ইন্দ্রিয়সকলের সাহায্যে কর্ম করে থাকেন।
যিনি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে কর্মের অনুষ্ঠান করেন তিনি কর্মফলে উদাসীন থাকার ফলে মোক্ষস্বরূপ শান্তি লাভ করেন। যিনি কামনার বশীভূত হয়ে নিজের জন্য ফল আশা করেন, তার সংসাররূপ বন্ধন দশা প্রাপ্ত হয়। ইন্দ্রিয় জয়ী ব্যক্তি মনের দ্বারা সকল কর্ম ত্যাগ করে নবদ্বার যুক্ত মনুষ্য দেহে পরম আনন্দে বাস করেন। প্রকৃত পক্ষে তিনি নিজেও কিছু করেন না অন্য কাউকে দিয়ে কিছু করান না। প্রভু জীবের কর্তৃত্বও সৃষ্টি করেন না। কর্মফলও সৃষ্টি করেন না। স্বভাববশেই মানুষ বা জীব প্রকৃতির প্রভাবে কর্মে প্রবৃত্ত হয়।
আত্মা সর্বব্যাপী। তিনি কারো পাপ বা পুন্য গ্রহণ করেন না। জীব অজ্ঞানে আচ্ছন্ন হয় বলেই মোহো গ্রস্থ হয়। জ্ঞানের প্রকাশের ফলে যার অজ্ঞানতা ধংস হয়েছে তাদের জ্ঞান, সূর্যের ন্যায় পরম বস্তূকে প্রকাশ করে থাকে। যাদের বুদ্ধি ব্রহ্ম-নিষ্ঠ,আত্মভাব পরব্রহ্মে স্থির, সেই সব ব্রহ্মনিষ্ঠ ব্যক্তিদের, জ্ঞানের দ্বারা সমস্ত পাপ নষ্ট হয়েছে জানবে। এদের আর পুনর্বার জন্ম হয় না। বিদ্যা ও বিনয় যার মধ্যে আছে তিনিই পণ্ডিত। এরা সর্ব ভূতে অর্থাৎ মনুষ্য পশু ব্রাহ্মণ চণ্ডাল সব কিছুতেই সমদর্শী থাকেন। সমজ্ঞানী ব্যক্তি সংসারে বাস করেও সৃষ্টিজয়ী। কারণ তিনি সর্বত্রই ব্রহ্ম দেখেন। সব কিছুতেই সমভাবাপন্ন - কোনো কিছুতেই দোষ দেখেন না। এই কারনে সমদর্শীগন সর্বদা ব্রহ্মতেই স্থিত আছেন।ব্রহ্মকে যে যোগী জেনেছে, সেই যোগীই ব্রহ্মে স্থিত আছেন । তিনি প্রিয় বস্তূ পেলেও আনন্দ লাভ করেন না আবার অপ্রিয় বস্তূ পেলেও দুঃখ পান না। যিনি বাহ্য ইন্দ্রিয় বিষয়ে আসক্তিহীন, তিনি আত্ম সম্পর্কীয় সুখে সুখহীন। এঁরা যোগের সাহায্যে ব্ৰহ্মে চিত্তকে যুক্ত করে পরমানন্দ লাভ করেন। মোটকথা - বিষয় সম্পর্কিত সকল সুখ-ই আসলে দুঃখের কারন। এই কারণে বিবেকবান ব্যক্তি বিষয় সুখে রত থাকেন না। কাম-ক্রোধকে যে মানুষ ইহলোকে আমৃত্যু সহ্য করতে পারবেন তিনিই প্রকৃত সমাহিত এবং সুখী। যার আত্মাতেই সুখ, আত্মাতেই আনন্দ, আত্মাতেই দৃষ্টি নিবদ্ধ -সেই যোগী পুরুষ ব্রহ্মে স্থিত হয়ে নির্বাণ লাভ করেন। যারা সন্দেহ রহিত,পাপশূন্য, সমাহিত চিত্ত ও সর্ব জীবের মঙ্গলে রত, সেই যোগীগণ ব্রহ্ম নির্বাণ লাভ করেন। কাম-ক্রোধ-শুন্য, সংযত চিত্ত,আত্মজ্ঞান সম্পন্ন যোগীগন জীবিত বা মৃত উভয় অবস্থাতেই ব্রহ্ম নির্বাণ লাভ করেন।
রূপ,রস, ইত্যাদি বাহ্যিক বিষয় থেকে মন সরিয়ে যিনি ভ্রূ-মধ্যে চক্ষুদ্বয়কে স্থাপন করে,প্রাণ,অপান,বায়ুকে উর্ধ্ব ও অধোগতি সমান করে, ইন্দ্রিয়, মন, বুদ্ধিকে সংযত এবং ইচ্ছা, ভয়, ও ক্রোধকে দূর করতে পারেন,তিনি জীবিত অবস্থাতেই মুক্তি লাভ করেন। ভগবানই যজ্ঞ ও তপস্যার ফল ভোগ করেন। তিনিই ত্রিলোকের স্বামী , সকলের সুহৃদ। এই জ্ঞান যার আছে, তিনিই পরম শান্তি ভোগ করেন। ৫/২৯..........
ষষ্ঠ অধ্যায় : ধ্যান যোগ (৩০/৫/২০১৭)
কর্মফলের আশা ত্যাগ করে যিনি নিজের কর্তব্য সম্পাদন করেন, তিনিই সন্যাসী ও যোগী। কর্ম ত্যাগ করলেই যোগী হয়ে যায় না। পন্ডিতগণ যাকে সন্যাস বলেন সেটাই যোগ। কারন কর্মত্যাগ না করলে সন্যাস বা যোগ কোনটা হতে পারে না। যোগারূঢ় মুনির কর্মত্যাগ-ই শ্রেষ্ঠ সাধনা। ইন্দ্রিয়ভোগ-কর্মে আসক্তিশুন্য, সঙ্কল্পত্যাগী এইরূপ যোগীকেই যোগারূঢ় বলা হয়। বুদ্ধি ও বিবেকের সাহায্যে আত্মার উদ্ধার করবে। আত্মাকে অধঃপতিত করবে না। মন-ই আত্মার শত্রূ, আবার মন-ই আত্মার মিত্র। যিনি নিজের দ্বারা নিজে বশীভূত, তিনি আত্মার সুহৃদ। আর যিনি নিজের বশীভূত নন তিনি-ই আত্মার শত্রূ। যিনি আত্মাকে জয় করেছেন, যার ইন্দ্রিয় সংযত, চিত্ত প্রশান্ত - তার মধ্যে পরমাত্মার প্রকাশ। তিনি শীত-গ্রীষ্ম;সুখ-দুঃখ ;মান-অপমান সবেতেই স্থির বুদ্ধি হয়ে থাকেন। ৬/৭......
ভগবান কথা (৩১/০৫/২০১৭)
জ্ঞান বিজ্ঞানে যার মন তুষ্ট ; যিনি চিত্তজয়ী ; যিনি ইন্দ্রিয় জয়ী ;যার কাছে লোষ্ট্র অর্থাৎ মাটির ঢেলা বা ডিল এবং কাঞ্চন বা সোনা যার কাছে সমান - সেই যোগীকে যোগরূঢ় বলা হয়। সুহৃদ, বনধু, উদাসীন,মধ্যস্থ, দ্বেষ্য, সাধু, পাপী - সবেতেই যিনি সম জ্ঞান করেন।তিনিই শ্রেষ্ট পুরুষ এবং প্রশংসার যোগ্য।
যোগ প্রক্রিয়া :
সবসময় যোগী নির্জনে থেকে, সংযত চিত্তে, ভোগ পরিত্যাগ করে, কাহারও কিছু গ্রহণ না করে - একাকী মনকে সমাহিত করবেন। পবিত্র স্থানে যোগী মৃগচর্ম,ব্যাঘ্র চর্ম অথবা কুশনির্মিত আসন পাতবেন। আসনের জায়গা যেন বেশি উঁচু না হয় আবার বেশি নিচু না হয়। সেই আসনে একাগ্র মনে শুদ্ধ চিত্ত্বে যোগ অভ্যাস করবেন। এইভাবে যোগী, দেহ মস্তক , গ্রীবা, সরল ও স্থির ভাবে রেখে, ইতস্তত মনোযোগ না দিয়ে বা না তাকিয়ে কেবল মাত্র ভ্রূমধ্যে দৃষ্টি স্থির রেখে যোগাভ্যাস করবেন। এইভাবে মনকে সমাহিত করে যোগী যোগাভ্যাস করলে, নির্বাণ রূপ পরম শান্তি লাভ করবেন।
যোগের সাবধানতা :
অধিক আহারকারী, একান্ত অনাহারী আবার অধিক নিদ্রাতুর, বা অধিক জাগরণশীল ব্যক্তির যোগ হয় না। যিনি আহারে- বিহারে, কর্মে-নিদ্রায় এবং জাগরনে সমতা রক্ষা করেন - তার যোগাভ্যাস দুঃখ নাশ করে। যার মন সংযত হয়ে আত্মাতেই স্থিত থাকে ও কামনাশূন্য থাকে তাকেই যোগী বলে অবহিত করা হয়।
যোগের ফল :
প্রদীপের শিক্ষা যেমন বায়ুহীন স্থানে স্থির থাকে, সেই ভাবে মনকে স্থির রেখে বা সংযত করে যদি যোগী যোগযুক্ত হয়, তবে চিত্ত নিরুদ্ধ ও একেবারে স্থির হয়। সেই অবস্থায় পরব্রহ্মকে নিজের মধ্যে দর্শন করে যোগী নিজের মধ্যে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন। ইন্দ্রিয় সংযোগ ছাড়াই তখন সুখানুভব হয়। এই অবস্থায় যোগী আত্মার -স্বরূপ অনুভব করে এবং অবিচলিত থাকে। এই অবস্থায় সর্বপ্রকার লাভ-কেই তুচ্ছ মনে হয়। গুরুতর দুঃখতেও যোগী অবিচল থাকে। একেই যোগ বলে।
সুখ-দুঃখ ত্যাগের নামই যোগ। সংযতমনা ও সমস্ত কামনা ত্যাগ করেই যোগ সাধনা করতে হয়। বুদ্ধির সাহায্যে, ধৈর্য্য সহকারে, ক্রমে ক্রমে, মনকে আত্মগত করতে হয়। মনের সকল চিন্তা পরিত্যাগ করতে হয়। মনের স্বাভাব-ই অস্থিরতা, চঞ্চলতা। মন প্রতিনিয়ত বিষয়ের প্রতি ধাববান। সেইজন্য এই ধাববান-চঞ্চল মনকে অভ্যাসের দ্বারা ক্রমে ক্রমে আত্মাতে স্থির করতে হবে।সংযত মন যখন রজোগুন বর্জন করে শান্ত হয় তখনি ব্রহ্ম-ভাব প্রাপ্ত হয়। একেই সমাধি বলে। সমাধি সর্বত্তম সুখ। এই ভাবে রজঃ ও তমোগুণ বর্জিত হয়ে যোগযুক্ত হলেই ব্রহ্ম দর্শন হয়,পরম সুখ লাভ হয়।
সমদর্শী যোগী আপনাকে সর্বজীবে সমান দেখেন। আপন আত্মাকে সর্বভূতে অবস্থিত দেখেন আবার সর্বভূতকে নিজ আত্মাতে অবস্থিত দেখেন। ৬/২৯........
ভগবান কথা (০১/০৬/২০১৭)
যিনি ঈশ্বরকে সর্বভূতে দর্শন করেন আবার ঈশ্বরের মধ্যে সর্বভূতকে দর্শন করেন - ঈশ্বর তার কাছে প্রত্যক্ষ, ঈশ্বরও তাকেই দেখেন। যিনি ঈশ্বরকে পৃথক জ্ঞানে ভজনা করেন তিনি সকল বিষয়ে থাকলেও ঈশ্বরে বিরাজিত থাকেন। সকল জীবের সুখ-দুঃখকে যে যোগী নিজের মতো চিন্তা করেন - তিনিই শ্রেষ্ট।
মন যে সর্বদা অস্থির -এতে সন্দেহ নাই, কিনতু অভ্যাস ও বৈরাগ্যের দ্বারা মনকে দমন করা যায়। মন কে নিজ বশে না আনতে পারলে, তার পক্ষে যোগ সম্ভব না। মন যার বশীভূত তিনি সঠিক উপায় অবলম্বনে চেষ্টা করলে যোগ লাভ করতে পারেন। .......৬/৩৬
ভগবান কথা (০২/০৬/২০১৭)
যোগভ্ৰষ্টা অর্থাৎ কেউ যদি যোগে প্রবৃত্ত হবার পরে কিছুদিন যোগ করার পরে, চঞ্চল চিত্ত বা শিথিলতার কারণে যোগ ছেড়ে দেন তাতে তার কোনো ক্ষতি হয় না। বরং যোগভ্রষ্ট ব্যক্তি পুণ্যবানদিগের সাথে দীর্ঘকাল অবস্থান করে, পরে কোনো সদাচারী ধনবানের গৃহে, অথবা কোনো যোগীকুলে জন্ম গ্রহণ করেন। পূর্বজীবনের বুদ্ধিবৃত্তি নিয়ে পুনরায় মোক্ষ লাভের চেষ্টা করেন। ৬/৪৩....
ভগবান কথা (11.04.2017)আত্মতত্ত্ব
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন
আত্মা সর্বদা একই রূপে বিরাজমান। জন্ম,বৃদ্ধি, ক্ষয়শূন্য। আত্মার এই স্বরূপ যিনি জ্ঞাত আছেন,তিনি কাকেই বা বধ করেন আর কাকেই বা বধ করান। মনুষ্যগন যেরূপ জীর্ন পুরাতন বস্ত্র ত্যাগ করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে , সেই রকম আত্মাও জীর্ন পুরাতন দেহ ত্যাগ করে নবদেহ ধারণ করে। আত্মাকে অস্ত্র দ্বারা ছেদন করা যায় না, অগ্নি দগ্ধ্ করতে পারে না, জলে আদ্র করা যায় না, বায়ু শুষ্ক করতে পারেনা। আত্মা অবিচল। আত্মা নিত্য,স্থির, সর্বব্যাপী অচল অনাদি। আত্মা অব্যক্ত অচিন্ত্য অবিকারী। .......
এমনও যদি ভাবা হয় যে আত্মা নিত্য জন্মায় ও নিত্য মৃত্যু হয় তা হলেও কারুর মৃত্যুতে শোক করা উচিত নয়। কারণ মৃত্যু হলেও আবার জন্ম অবস্বম্ভাবী। অতএব শোক করা বৃথা মাত্র। জীবগন জন্মের পূর্বে কি ছিল আবার মৃত্যুর পারে কি হবে তা সে জানেনা। শুধুমাত্র মধ্যাবস্থার কথাই জানে। তাই শোক করা বৃথা। আত্মাকে কেউ জানতে পারেন না শুধু তার আশ্চর্যত্ব সম্পর্কে শুনে থাকেন। অনির্বচনীয় স্বরূপ এই আত্মা সকলের দেহে সর্বদাই অবধ্য।তাই কারোর মৃত্যুর জন্য শোক করা উচিত নয়. শুধু স্বধর্মের কথা চিন্তা করো। সুখ দুঃখ , লাভ ক্ষতি , জয় পরাজয় সমান চিন্তা করে কর্ম করো।
আত্মা সর্বদা একই রূপে বিরাজমান। জন্ম,বৃদ্ধি, ক্ষয়শূন্য। আত্মার এই স্বরূপ যিনি জ্ঞাত আছেন,তিনি কাকেই বা বধ করেন আর কাকেই বা বধ করান। মনুষ্যগন যেরূপ জীর্ন পুরাতন বস্ত্র ত্যাগ করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে , সেই রকম আত্মাও জীর্ন পুরাতন দেহ ত্যাগ করে নবদেহ ধারণ করে। আত্মাকে অস্ত্র দ্বারা ছেদন করা যায় না, অগ্নি দগ্ধ্ করতে পারে না, জলে আদ্র করা যায় না, বায়ু শুষ্ক করতে পারেনা। আত্মা অবিচল। আত্মা নিত্য,স্থির, সর্বব্যাপী অচল অনাদি। আত্মা অব্যক্ত অচিন্ত্য অবিকারী। .......
ভগবান কথা (12.04.2017)আত্মতত্ত্ব
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন :এমনও যদি ভাবা হয় যে আত্মা নিত্য জন্মায় ও নিত্য মৃত্যু হয় তা হলেও কারুর মৃত্যুতে শোক করা উচিত নয়। কারণ মৃত্যু হলেও আবার জন্ম অবস্বম্ভাবী। অতএব শোক করা বৃথা মাত্র। জীবগন জন্মের পূর্বে কি ছিল আবার মৃত্যুর পারে কি হবে তা সে জানেনা। শুধুমাত্র মধ্যাবস্থার কথাই জানে। তাই শোক করা বৃথা। আত্মাকে কেউ জানতে পারেন না শুধু তার আশ্চর্যত্ব সম্পর্কে শুনে থাকেন। অনির্বচনীয় স্বরূপ এই আত্মা সকলের দেহে সর্বদাই অবধ্য।তাই কারোর মৃত্যুর জন্য শোক করা উচিত নয়. শুধু স্বধর্মের কথা চিন্তা করো। সুখ দুঃখ , লাভ ক্ষতি , জয় পরাজয় সমান চিন্তা করে কর্ম করো।
ভগবান কথা (25.04.2017)- কর্মযোগ
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন :
নিষ্কাম কর্মের বিনাশ নাই। এই কর্মে পাপ নাই। বিঘ্ন নাই। নিষ্কাম কর্মের অনুষ্ঠানে সংসার বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া যায়। মৃত্যু-ভয় থেকেও মুক্ত হওয়া যায়। নিষ্কাম কর্ম দ্বারা বুদ্ধি এক বিষয়ে স্থির হয়।মন যার এক বিষয়ে স্থির নয়,কামনার নিমিত্ত তার বুদ্ধি - মন নানা বিষয়ের দিকে ধাবিত হয়।জন্ম কর্ম নিমিত্য। জন্ম হলেই তার কর্ম আছে। আর কর্ম সর্বদা ফল-দায়ক। সকাম কর্মে ভোগ আপনার আপনার। ভোগযুক্ত মন কখনো ঈশ্বরে স্থির হয় না। সমস্ত কর্মফলের আশা পরিত্যাগ করে, আত্মতত্ত্ব জ্ঞানসম্পন্য হয়ে,সুখে-দুঃখে অবিচল থেকে, নিষ্কাম কর্ম করো। কিসে কি হবে, এই চিন্তা পরিহার করে আত্মাবান হও। বেদের কর্মকাণ্ডও ত্রিগুণাত্বক। বেদের কর্মকান্ডের অনুসরণ, তোমাকে কর্মফল ভোগ করবে করাবে। বেঁচে থাকার জন্য যেটুকু কর্ম প্রয়োজন, তুমি তাই করো।এর বেশী প্রয়োজন নাই। কর্মে তোমার অধিকার কিন্ত কর্মফলে নয়। তাই কর্মফলের আশা ত্যাগ করো। কর্ম ত্যাগ করো না। ফলের আশা বা কামনা ত্যাগ করে যোগস্থ হয়ে কর্ম করো। সুফল কুফল সমান জ্ঞান করে, কর্ম করো। সর্বাবস্থায় মনকে সাম্য- অবস্থায় রাখাই যোগ। মনকে স্থির রাখাই যোগ। চিত্তকে বিক্ষিপ্ত হতে না দেওয়াই যোগ। নিষ্কাম কর্মই কাম্য ও উত্তম । সকাম কর্ম নিকৃষ্ট ও পরিত্যাজ্য। ফলাফলে সমান জ্ঞান জন্মালে, সেই জ্ঞানী ব্যক্তি এই জন্মেই পাপ-পুন্য উভয়কেই ছাড়িয়ে যায়। নিষ্কাম কর্মের কৌশল-ই যোগ। কর্মযোগ। কর্মযোগের এই কৌশল যে আয়ত্ব করেছে, সেই জন্ম-মৃত্যু-সংসার বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে মোক্ষ লাভ করেন।
ভগবান কথা (26.04.2017) :(স্থীতপ্রজ্ঞ)
যখন তোমার বুদ্ধি মোহস্বরূপ পাপ হইতে উত্তীর্ন হইতে পারিবে, তৎক্ষণাৎ তুমি শুনবার যোগ্য এবং যা শুনেছ সেই কর্মফল হেতু বৈরাগ্য লাভ করবে। বহু প্রকার বৈদিক ও লৌকিক কর্মযোগের কথায় তোমার মন চঞ্চল হয়েছে। যে সময় চঞ্চল মন নিশ্চলরূপে সমাধিতে স্থির হবে, তখনি তুমি যোগযুক্ত হবে।
যে সময় যোগী সর্বপ্রকার কামনা ত্যাগ করে আপনার মধ্যেই সন্তষ্ট থাকেন, তখনি তিনি স্থিতপ্রজ্ঞ বলে জানবে। যিনি দুঃখে অবিচল, সুখে স্পৃহাশূন্য এবং আসক্তিহীন, নির্ভিক এবং ক্রোধশুন্য, তিনিই স্থীতপ্রজ্ঞ। শুভ ফলে যে ব্যক্তি আনন্দিত বা কোনো প্রকার বিকারগ্রস্থ হন না, তারই প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিত বলে জানবে। ২/ ৫৭....
ভগবান কথা (27 .04.2017) :(স্থীতপ্রজ্ঞ)
কচ্ছপ যেমন আপন অঙ্গসমূহ সংকুচিত করে আপন দেহেই গুটিয়ে থাকে। সেইপ্রকার যিনি ইন্দ্রিয়গুলিকে ভোগ বস্তূ থেকে ফিরিয়ে আনে , তাঁরই প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অনেকে ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে বিষয়াদি ভোগ না করলেও তার ভোগ আকাঙ্খা থাকে। স্থিতপ্রজ্ঞের পরমাত্মা দর্শনেই ভোগাকাঙ্খা দূর হয়। মোক্ষ লাভের জন্য জ্ঞানী যাতনা করলেও, অনেক দূরন্ত ইন্দ্রিয়সমূহ তাদের মন ও চিত্তকে কু-পথে পরিচালিত করে। যোগীরা ইন্দ্রিয় সকলকে দমন করে মৎ-পরায়ণ হয়। যার ইন্দ্রিয়সকল এইরূপ বশীভূত তিনিই স্থিতপ্রজ্ঞ। বারংবার বিষয় চিন্তার ফলেই মানবের আসক্তি জন্মায়। আসক্তি হতে বাসনা - কামনা জন্মায়। কামনায় -বাসনায় বাধাপ্রাপ্ত হলে ক্রোধ জন্মায়। ক্রোধ থেকে মোহ এবং মোহ হতে স্মৃতিভ্রম হয়। স্মৃতিভ্রম হলে বুদ্ধিনাস এবং এতেই হয় অধঃপতন।
ভগবান কথা (27 .04.2017) :(শান্তি )
যার মন নিজের বশীভূত ও ইন্দ্রিয় সকল মনের বশীভূত - এমন ব্যক্তি বিষয় ভোগের মধ্যে থেকেও শান্তি লাভ করেন। যে ব্যক্তির মন স্থির ও প্রসন্ন ,তার সব রকম দুঃখ নাশ হয় ও বুদ্ধিও শীঘ্র স্থির হয়। মন স্থির ব্যতীত আত্মজ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। আবার যার আত্মজ্ঞান নাই তার শান্তিও নাই। শান্তি ব্যতিরেকে সুখ কোথায় ?
৬৬........
ভগবান কথা (28.04.2017) :(শান্তি )
বিষয় ভোগের জন্য ইন্দ্রিয়সকল সর্বদা অগ্রসর। এদের মধ্যে আবার মন যে কোনো একটির প্রতি অগ্রসর হয়। যেমন বাতাস সমুদ্রের বুকে ভাসমান তরনীকে ডুবিয়ে দেয়, তেমনি মন মানুষের প্রজ্ঞা হরন করে। যার ইন্দ্রিয়-সকল সব রকম বিষয়ভোগ হতে নিবৃত্ত, তারই প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জানবে। সাধারণের আত্মনিষ্ঠা যেখানে রাত্রির মতো, সংযমীপুরুষ সে রাত্রিতে জাগরুক। অন্য দিকে সাধারণ মানুষ বিষয়নিষ্ঠায় জাগ্রত, আত্মজ্ঞানী বিষয়বিমুখ হয়ে সুখে নিদ্রা যান। অসীম জলরাশি পূর্ণ সমুদ্রে যেরূপ নদ-নদীর জলরাশি এসে মিলিত হয়, কিন্ত পরিবর্তন হয় না। তেমনি জ্ঞানীব্যক্তিগণ ভোগের মধ্যে থেকেও শান্তি পান। কিন্ত বিষয়কামী কখনো শান্তি পান না। যে ব্যক্তি সব রকম কামনা ত্যাগ করে অহঙ্কারহীন হয়ে, স্পৃহা হীন হয়ে,মমতাহীন হয়ে সংসারে থাকেন, তিনিই প্রকৃতপক্ষে শান্তি লাভ করেন। ব্রহ্মনিষ্ঠায় অবস্থিতি একেই বলা হয়। ব্রহ্মনিষ্ঠা লাভ হলে, সংসার মোহে জীব আর আবদ্ধ হয় না। মৃত্যুকাল পর্যন্ত এই নিষ্ঠায় অবস্থিত থাকলে, জীবের ব্রহ্মনির্বান লাভ হয়ে থাকে।
ভগবান-উক্ত সাংখ্যযোগ এখানেই শেষ হলো। ..........৭২......
ভগবান কথা (03.05.2017) :(জ্ঞানযোগ ও কর্মযোগ এর তুলনা )
জ্ঞানীর জন্য জ্ঞানযোগ ভালো। কর্মীর জন্য কর্মযোগ ভালো। দুটোতেই নিষ্ঠা আবশ্যিক। প্রত্যেকের জন্মসূত্রে কর্মে অধিকার। কর্মহীন জীবন হয় না। আবার কর্মানুষ্ঠান ছাড়া জ্ঞান জন্মে না। আবার চিত্ত শুদ্ধি ছাড়া সন্যাস নিলেও তাতে মোক্ষ লাভ হয় না।
কর্ম ছাড়া কেউ এক মুহূর্ত থাকতে পারে না। সকলেই আপন গুন্ অনুসারে কর্ম করে থাকে। যে বোকা, কর্মেন্দ্রিয়গুলি সংযত করে মনে মনে বিষয় চিন্তা করে সে মিথ্যাচারী। যে মনের দ্বারা ইন্দ্রিয় সকল সংযত রেখে কৰ্মেন্দ্রিয়গুলির দ্বারা আসক্তিহীন ভাবে কর্ম করে - সেই ব্যক্তিই শ্রেষ্ঠ। সর্বদা কর্ম করো কর্ম ত্যাগ অপেক্ষা কর্ম করা উচিত।কর্মা না করলে এমনকি শরীর রক্ষাও হবে না। ..........৩/৮
ভগবান কথা (07.05.2017) :( কর্মযোগ )
ঈশ্বর প্রীতির জন্য কর্ম করো। ঈশ্বরপ্রীতিহীন কর্ম বন্ধনের কারণ।
তুমি ঈশ্বরপ্রীতির জন্য আসক্তিহীন ভাবে কর্ম করো।সৃষ্টির আদিতে প্রজাপতি ব্রহ্মা যজ্ঞসহকারে প্রজা সৃষ্টি করে বলেছিলেন এই যজ্ঞ অনুষ্ঠানকরে তোমার উন্নতি ও ইষ্টলাভ হোক। যজ্ঞ হবি দ্বারা তোমরা দেবতাগণকে তৃপ্ত করো, দেবতারাও তোমাদের
সুখী করুন। যজ্ঞে দেবতারা তোমাদের ইচ্ছা অনুসারে ফল বা ভোগ্য-বস্তূ দান করবেন। সেই সব দেবপ্রদত্ত বস্তূ দেবতাদের
উদ্দেশ্যে দান না করে যে ভোগ করে সে চোর। যজ্ঞ অবশিষ্ট খাদ্য ভোজনকারী সর্বপাপে মুক্ত হয়। কিনতু নিজের জন্য যে আহার প্রস্তূত করে, সে পাপই আহার করে। বৃষ্টিতে অন্নের উৎপত্তি, অন্নে জীব, আবার যজ্ঞ হতেই মেঘ ও কর্ম হতেই যজ্ঞ সৃষ্টি হয়। ....৩/১৪
ভগবান কথা (৮/৫/২০১৭) (কর্মযোগ)
কর্ম হতে যজ্ঞ, কর্ম আবার বেদের (অনুশাসন ) থেকে। বেদ পরমেশ্বর থেকে সৃষ্ট। সেই সর্বব্যাপী ব্রহ্ম যজ্ঞে নিত্য বিরাজিত।ইন্দ্রিয়ে আসক্ত যে পাপাত্মা,এই সব (বেদ) প্রবর্তিত কর্মচক্রের অনুষ্ঠান না করে, তার জীবনই বৃথা। যার আত্মাতে প্রীতি আবার আত্মাতেই তৃপ্ত, আত্মাতেই তুষ্ট, সে রকম অত্মবান পুরুষের আর কোনো কর্তব্য থাকে না। এইসব আত্মারাম ব্যক্তির এই জগতে কর্মের দরকার হয় না। কর্ম ত্যাগ করলেও তার পাপ-পুন্য নাই। সর্ব্বভূতের মধ্যে কারুর আশ্রয়ে তার প্রয়োজন নেই। অতএব আসক্তিশূন্য হয়ে অবিরত কর্ম করো। অনাসক্ত ভাবে কর্ম করলে পুরুষ মুক্তি লাভ করে। জনকাদি মহাত্মাগণ কর্মযোগের দ্বারাই সিদ্ধিলাভ করেছেন। লোকসংগ্রহের প্রতি দৃষ্টি রেখেও তোমার কর্ম করা উচিত। কারণ, শ্রেষ্ট ব্যক্তিরা যেমন আচরণ করেন, অন্য্ লোকেরা তারই অনুকরণ করেন। তাঁরা যা প্রমান করে (যে আদর্শ উপস্থাপিত করে) জনসাধারণ তারই অনুকরণ করে থাকে। ৩/২১......
ভগবান কথা (১০/৫/২০১৭) (কর্মযোগ)
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন - ত্রিভুবনে আমার কিছু করার নেই, কিছু পাবারও নেই - তবু আমি কর্মে নিযুক্ত আছি। আমি যদি অলস হয়ে কর্ম না করতাম, তাহলে সকল মানুষই আমাকে অনুসরণ করে, অলস জীবনযাপন করতে চাইতো। আমি যদি কর্মে বিরত হই , তা হলে জনগণ কর্মহীন হয়ে উৎসন্নে যাবে।অর্থাৎ আমার-ই দোষে সকলে নষ্ট হয়ে যাবে। অজ্ঞানীগন কর্মে আসক্ত হয়ে যেমন কর্ম করে, জ্ঞানীগণ অনাসক্ত হয়ে লোকশিক্ষার জন্য কর্ম করে। কর্মে আসক্ত জ্ঞানহীন মনুষ্য-মধ্যে বুদ্ধি ভেদ জন্মায়। কারণ বিদ্বান ও জ্ঞানীগণ সব কাজ নিজে করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ও অপরকে কর্মে নিযুক্ত করায়। কর্ম সম্পন্ন হয় প্রকৃতির গুনের দ্বারা। কিন্ত অহংকারের বশীভূত বিমূঢ় ব্যক্তি ভাবে - আমিই করছি - আমিই কর্তা। প্রকৃত গুন্ ও কর্মের তত্ব সম্পর্কে যিনি জ্ঞাত তিনি জানেন - গুনের আশ্রয়ে সকল গুন্ থাকে। অতএব 'আমি করি' এমনটি সে ভাবে না। প্রকৃতির গুনে মোহাবিষ্ট হয়ে যে মূঢ়গণ বিষয়াসক্ত হয়, সর্বজ্ঞ জ্ঞানীগণও তাদের বিচলিত করতে সমর্থ হয় না। অতএব তোমার সমস্ত কর্ম আমাতে অর্পণ করো। .....৩০
ভগবান কথা (১১/৫/২০১৭) (কর্মযোগ)
যারা আমার মত শ্রদ্ধা সহকারে অনুকরণ করে,তারা কর্ম করেও কর্ম হতে মুক্ত থাকে। আমার মতের দোষ ধরে যারা আমার মত্ অনুসারে কর্ম না করে তারা মূঢ় ও জ্ঞান-ভ্রষ্ট বলে জানবে। জ্ঞানীগণও আপন প্রকৃতি অনুসারে কর্ম করে। কারণ সমস্ত প্রাণী নিজ নিজ স্বভাব অনুসারে চলে -কাজেই ইন্দ্রিয়-নিগ্রহে কি হবে ? স্বভাবই বলবান। সকল ইন্দ্রিয়েরই নিজ নিজ বিষয়ে আসক্তি ও বিদ্বেষ অবসম্ভাবী।এই দুটোর বশীভূত হওয়া উচিত নয়। এরা জীবের পরম শত্রূ বলে জানবে। পরের ধৰ্ম সর্বাঙ্গ সুন্দর হলেও, বিকলাঙ্গ আপন ধর্মই শ্রেষ্ট। আপন ধর্মে মরণও মঙ্গলজনক। কিনতু পরের ধৰ্ম ভয়াবহ জানবে।
মানুষ কেন বুঝেশুনেও পাপাচারে লিপ্ত হয় ? তার কারণ হলো, কাম এবং ক্রোধ। এই দুটোর সৃষ্টি রজো গুন্ থেকে। কাম বাধা পেলেই ক্রোধের উদ্রেক করে। এদের মতো শত্রূ এ জগতে আর কেউ নেই। ধোঁয়া যেমন আগুন-কে, ধূলি যেমন আয়নাকে, চর্ম যেমন গর্ভকে আবৃত করে রাখে - কামও তেমনি প্রকৃত জ্ঞানকে আবৃত করে রাখে। মানুষের পরম শত্রূ হচ্ছে কাম। কামকে তুষ্ট করা যায় না। এবং কামই জ্ঞান কে আবৃত করে রাখে। আবার কামের আশ্রয় হলো ইন্দ্রিয়সকল,মন,ও বুদ্ধি। এই গুলির সাহায্যেই কাম সৎ জ্ঞানকে ঢেকে রেখে অসৎ কর্মে মানুষকে উদবুদ্ধ করে।
তাই সবার আগে ইন্দ্রিয়কে বশে আনো, ইন্দ্রিয়কে দমন করো। শরীর অপেক্ষা ইন্দ্রিয় বলবান, ইন্দ্রিয় অপেক্ষা মন শ্রেষ্ট, মন অপেক্ষা বুদ্ধি শ্রেষ্ট আবার বুদ্ধি অপেক্ষা আত্মা শ্রেষ্ট। তাই আত্মাকে শ্রেষ্ট জেনে, আত্মার নির্দেশ জেনে - বুদ্ধির দ্বারা মনকে স্থির করো, মন দ্বারা ইন্দ্রিয়কে বশীভূত করো। ইন্দ্রিয় দ্বারা কামকে দমন করো ......৪৩/৩
ভগবান কথা (১৭/৫/২০১৭) (গুন -ত্রয়-বিভাগ -যোগ গীতা-সার - ৪ - জ্ঞান যোগ
শ্রীভগবান এবার জ্ঞানের মধ্যে যা সর্বশ্রেষ্ট জ্ঞান তার কথা বলছেন। যা শুনলে এবং বুঝলে পরম সিদ্ধি লাভ করা যায়।
এই জ্ঞান লাভ করলে জ্ঞানী ভগবানের স্বারূপ্য লাভ করেন। জন্ম মৃত্যু থেকে রেহাই পান। সুখ-দুঃখ -এর অতীত হয়ে যান। এই জ্ঞান কী ?
প্রকৃতি ভগবানের গর্ভধানের স্থান। প্রকৃতিতেই ভগবান জগৎ বিস্তারের বীজ নিক্ষেপ করেন। এই গর্ভাধান থেকেই সর্বভূতের সৃষ্টি। বিদ্যাশক্তির প্রভাবে জন্ম জন্মান্তের জ্ঞান অর্জন করা যায়। অবিদ্যায় আচ্ছন্ন থাকলে এসব জানা বোঝা যায় না। একই শক্তি বারবার জন্ম-মৃত্যুর খেলায় রত। ভগবান সবার ঈশ্বর। যিনি জন্ম মৃত্যু রোহিত। আবার প্রকৃতিকে আশ্রয় করে নিজ মায়া প্রভাবে নিজেকেই সৃষ্টি করেন।ভগবান বলছেন : যখন যখন ধর্মের গ্লানি অর্থাৎ পতন হয় তখনই আমি নিজেকে সৃষ্টি করে থাকি। সাধুগণের ত্রাণ , পাপীগণের বিনাশ ও ধর্মকে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই। আমার এইপ্রকার দিব্য জন্ম ও কর্ম সন্মন্ধে যিনি জ্ঞাত হন দেহত্যাগের পর তার আর জন্ম হয় না। তিনি আমাকেই লাভ করেন। এই সংসারে আসক্তি, ক্রোধ,ভয় ত্যাগ করে আমাতেই মন প্রাণ সমর্পন পূর্বক আমার শরণাগত হয়ে বহু মহাত্মা জ্ঞানে এবং তপস্যায় আমার ভাব অর্থাৎ মোক্ষ লাভ করেছেন। ৪/১০.......
আমাকে যে যেভাবে ভজনা করে, আমি সেইভাবেই তাদের কৃপা করি। মানবগন সব ভাবেই আমারি পথ অনুসরণ করে। কর্মফলকামীগন এ জগতে ফল লাভের আশায় দেবতাগনের উদ্দেশ্যে যাগযজ্ঞ করে থাকে।
গুন্ ও কর্ম বিভাগ অনুযাযী আমি চারটি বর্ণের সৃষ্টি করেছি। কিনতু স্রষ্টা হলেও আমি আসক্তিহীন বলে আমাকে অকর্তা বলে জানবে।
কোনো কর্মই আমাকে স্পর্শ করতে পারেনা। কর্মফলেও আমার স্পৃহা নেই। যিনি প্রকৃত সত্য জানেন তিনি কর্ম করলেও তিনি কর্মে আবদ্ধ হন না। ৪/১৪......
ভগবান কথা (১৮/৫/২০১৭) (গুন -ত্রয়-বিভাগ -যোগ )
আমি কোনো কর্ম করি না,এই সত্য জেনে মুক্তি লাভেচ্ছু ঋষিগণ কর্মে লিপ্ত হন। তুমিও "আমি কর্ম করি না " এই ভেবে প্রাচীন মহাত্মাদের মতো কর্ম করে যাও। এবার কর্ম কি আর অকর্মই বা কি - এটা জেনে রাখো। না হলে মোহগ্রস্থ হয়ে পড়বে । আবার এটা মেনে চললে তুমি অমঙ্গলজনক সংসারবাঁধন হতে মুক্ত হবে।
কর্ম - তিন প্রকার। কর্ম, বিকর্ম, ও অকর্ম। কর্ম কি,বিকর্ম কি, অকর্মই বা কী ? (কর্ম হচ্ছে ঈশ্বরের সৃষ্টিকার্যে ও তার সৃষ্টির অভ্যুদয় বা বিকাশে সহযোগিতা করা। বিকর্ম অর্থাৎ শাস্ত্র নির্দিষ্ট কর্ম বা জনহিতকর কর্ম। অকর্ম হচ্ছে আলসেমী বা আলস্য।) কর্মই গতি নির্ধারক। কর্ম সন্মন্ধে বিশেষ রূপে বুঝবার প্রয়োজন আছে। কৰ্মই সমস্ত সুখ দুঃখের কারন। যিনি কর্মে অকর্ম ও অকর্মে কর্ম দর্শন করেন, মনুষ্য মধ্যে তিনিই বুদ্ধিমান, তিনিই যোগী, তিনিই সর্ব কর্মের অনুষ্ঠান কর্তা। ৪/১৮.........
ভগবান কথা (১৯/৫/২০১৭) (গুন -ত্রয়-বিভাগ -যোগ )
সব কর্মেই যারা কামনাশূন্য, সব কর্ম যার জ্ঞানের অগ্নিতে দগ্ধ, জ্ঞানীগণ তাকেই পণ্ডিত বলেন। কর্ম ও কর্মফলে যার আসক্তি নাই, যিনি সব সময় নিত্যানন্দে পূর্ণ থাকেন, তিনি কর্মে লিপ্ত থাকলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি কিছুই করেন না। কামনা শুন্য যার মন, আত্মাতেই যার স্থিতি,সংযত, গ্রহণ-লিপ্সা যার ত্যাগ হয়েছে - তিনি শুধুমাত্র দেহাদির ধৰ্ম হিসেবে কর্ম করেন। কর্ম ফলও তাকে স্পর্শ করতে পারে না। যিনি বিনা চেষ্টায় যা পান তাতেই সনতুুষ্ট,যার কাছে সুখ দুঃখ সমান, যিনি সিদ্ধি বা অসিদ্ধি - কে সমান জ্ঞান করেন তিনি কর্ম করেও কর্ম ফলে আবদ্ধ হন না। ৪/২২.........
ভগবান কথা (২৫/৫/২০১৭) (গুন -ত্রয়-বিভাগ -যোগ)
ফলাকাঙ্ক্ষা-শুন্য হয়ে, হিংসা মুক্ত হয়ে, চিত্ত সর্বদা যার জ্ঞানাধিষ্ঠ, সর্ব কর্মই যার যজ্ঞ-সে মহাপুরুষের কর্মফল বলে কিছু নেই। যজ্ঞের সামগ্রী - অর্থাৎ ঘি, হোম, অগ্নি এমন কি যজ্ঞের পত্রাদি/পাত্রাদী
পর্যন্ত সমস্তই ব্রহ্ম এই জ্ঞানে যিনি কার্য্য করেন সেই ব্যক্তিই ব্রহ্ম লাভ করেন। যোগীরা দৈব কৃপার জন্য যজ্ঞ করেন। আর জ্ঞানীরা ব্রহ্মরূপ অগ্নিতে সকল কর্ম আহুতি দেন।
এক এক যোগী এক এক রকম ভাবে যজ্ঞ করেন। কেউ সংয্মরূপ অগ্নিতে ইন্দ্রিয় সকলকে আহুতি দেন। কেউ ইন্দ্রিয়-অগ্নিতে বিষয় সকল আহুতি দেন - অর্থাৎ আসক্তিহীন ভাবে বিষয় ভোগ করেন।
আবার অনেকে জ্ঞানদীপ্ত আত্মসংযমরূপ অগ্নিতে সকল ইন্দ্রিয় কর্ম এবং প্ৰাণকর্ম-সকলকে আহুতি দেন। যোগীদের মধ্যে কেউ দ্রব্য-যজ্ঞ কেউ যোগ-যজ্ঞ পরায়ণ। আবার কেউ যোগ দ্বারা জ্ঞান-যজ্ঞ পরায়ণ। কেউ আবার অত্যন্ত কষ্টকর নিয়মে বেদাদি শাস্ত্রজ্ঞানরূপ যজ্ঞ করে থাকেন। কোনো যোগী অপান বায়ুতে
প্রাণ বায়ু আহুতি দেন। কেউ আবার প্রাণ বায়ুতে অপান বায়ু আহুতি দেন। কেউ আবার প্রাণ - অপান দুটোরই গতি রুদ্ধ করে প্রাণায়ামে আহুতি দেন। এই সমস্ত যজ্ঞকারী যজ্ঞ সম্পাদন করে নিষ্পাপ হয়ে যান। যজ্ঞের শেষে অমৃত ভোজন করে সনাতন ব্রহ্মকে লাভ করেন। যিনি যজ্ঞে লিপ্ত হন না তার ইহলোকই নাই - পরলোক তো দূর অস্ত। এই সব কর্ম-উদভূত তত্ব বুঝলে তবেই মুক্তি লাভ সম্ভব।
দ্রব্য দ্বারা যে যজ্ঞ সম্পাদিত হয় তার থেকে তার থেকে জ্ঞান-যজ্ঞ (অর্থাৎ যজ্ঞের প্রকৃত উদ্দেশ্যের মনন ) শ্রেষ্ট। কারন সমস্ত কর্মই জ্ঞান বিকাশ হলেই শেষ হয়। ....৪/৩৩....
ভগবানকথা (২৭/৫/২০১৭) গুন্ ত্রয় বিভাগ যোগ
জ্ঞানীগণকে প্রণাম করো। সেবা করো। এবার নানা প্রকার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করো - তিনি তোমার প্রশ্নের উত্তর দেবেন। এই ভাবে জ্ঞান লাভ করলে তোমার মোহ দূর হবে। তখন তুমি নিজ আত্মাকে এবং পরমাত্মাকে অভিন্ন দেখবে। জ্ঞানরূপ তরীর সাহায্যে সকল পাপ সমুদ্র পাড় হতে পারবে। জ্বলন্ত আগুন যেমন কাঠকে পুড়িয়ে ভষ্মে পরিণত করে তেমনি জ্ঞান সমস্ত কর্ম ভস্মিভূত করে। ফলে কর্মফল বলে আর কিছু থাকে না। জ্ঞানের মতো পবিত্র আর কিছু নাই। জ্ঞানযোগেই সিদ্ধযোগী অনন্তকাল পরমাত্মায় লীন হয়ে থাকেন। শ্রদ্ধাবান ব্যক্তিই জ্ঞান লাভ করেন এবং ইন্দ্রিয় সংযমের মাধ্যমে শান্তি লাভ করে থাকেন। জ্ঞানহীন,শদ্ধাহীন ও সন্দেহমনা ব্যক্তি বিনাশ প্রাপ্ত হয়। যে ব্যক্তি শাস্ত্রাদির কথায় অবিশ্বাস করে, গুরুর উপদেশে সন্দেহ করে, তার পরলোক তো দূরের কথা, ইহলোকের বৈষয়িক সুখও পায় না। যে ব্যক্তি যোগবলে সমুদয় কর্ম ভগবানে অর্পণ করেছেন, সেই আত্মজ্ঞানই ব্যক্তি কর্ম বন্ধন থেকে মুক্তি পায় । তাই তুমি জ্ঞানরূপ বিবেক অস্ত্র দ্বারা হৃদয় মধ্যে স্থিত অজ্ঞান, সন্দেহ ছেদন করে নিষ্কাম কর্মযোগ অবলম্বন করো।
চতুর্থ অধ্যায় সমাপ্ত
পঞ্চম অধ্যায় (কর্ম-সন্যাস যোগ )
কর্ম সন্যাস ও কর্মযোগ উভয়ই মোক্ষদায়ক। কিনতু দুটির মধ্যে কর্মসন্যাস থেকে কর্ম-যোগ শ্রেষ্ট। যে ব্যক্তি হিংসা ও আসক্তিহীন,সুখে-দুঃখে বিরুদ্ধ-ভাব পোষণ করে না - সেই ব্যক্তিই নিত্য সন্যাসী। অনায়াসেই সেই ব্যক্তি সংসার বাঁধন হতে মুক্তি লাভ করতে পারে। সন্যাস ও কর্মযোগ পৃথক নয়। এর একটিকে অনুসরণ করলেই উভয় ফল লাভ হয়। জ্ঞান-যোগী ও কর্ম-যোগী উভয়ের একই গতি। সন্যাস ও কর্মযোগকে যিনি এক দেখেন তিনিই প্রকৃত জ্ঞানী বলে জানবে। নিষ্কাম কর্মযোগের অনুষ্ঠান ব্যাতিত কর্মত্যাগ দুঃখের কারণ। কর্মযোগী কর্মযোগে সিদ্ধিলাভ করে পরম ব্রহ্ম লাভ করেন। যোগযুক্ত ব্যক্তি বিশুদ্ধ আত্মা। আত্মজয়ী, জিতেন্দ্রিয় ও সর্বজীবে সমজ্ঞানী ব্যক্তি কর্মানুষ্ঠান করলেও কর্মে লিপ্ত হন না। ৫/৭......
২৯/৫/২০১৭ ভগবান কথা (কর্ম সন্যাস যোগ)
কর্মযোগীর তত্ত্বজ্ঞান হলে দর্শন, শ্রবণ, স্পর্শন, ঘ্রান ভোজন,গমন, স্বপ্ন,স্বাস গ্রহণ,কথন , ত্যাগ, উন্মেষ এবং নিষেধাদি কার্য করেও তিনি ভাবেন, এসব ইন্দ্রিয় কর্ম, আমি কিছুই করি না।
পদ্মপাত্রে জল পড়লেও জল থাকে না। সব কর্মফল ব্রহ্মকে অর্পণ করলে, আসক্তিহীন ভাবে কর্ম করলে তিনি কোনো পাপে লিপ্ত হন না। যোগীগণ চিত্মসুদ্ধির জন্যই আসক্তিহীন হয়ে দেহ, মন , বুদ্ধি ইন্দ্রিয়সকলের সাহায্যে কর্ম করে থাকেন।
যিনি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে কর্মের অনুষ্ঠান করেন তিনি কর্মফলে উদাসীন থাকার ফলে মোক্ষস্বরূপ শান্তি লাভ করেন। যিনি কামনার বশীভূত হয়ে নিজের জন্য ফল আশা করেন, তার সংসাররূপ বন্ধন দশা প্রাপ্ত হয়। ইন্দ্রিয় জয়ী ব্যক্তি মনের দ্বারা সকল কর্ম ত্যাগ করে নবদ্বার যুক্ত মনুষ্য দেহে পরম আনন্দে বাস করেন। প্রকৃত পক্ষে তিনি নিজেও কিছু করেন না অন্য কাউকে দিয়ে কিছু করান না। প্রভু জীবের কর্তৃত্বও সৃষ্টি করেন না। কর্মফলও সৃষ্টি করেন না। স্বভাববশেই মানুষ বা জীব প্রকৃতির প্রভাবে কর্মে প্রবৃত্ত হয়।
আত্মা সর্বব্যাপী। তিনি কারো পাপ বা পুন্য গ্রহণ করেন না। জীব অজ্ঞানে আচ্ছন্ন হয় বলেই মোহো গ্রস্থ হয়। জ্ঞানের প্রকাশের ফলে যার অজ্ঞানতা ধংস হয়েছে তাদের জ্ঞান, সূর্যের ন্যায় পরম বস্তূকে প্রকাশ করে থাকে। যাদের বুদ্ধি ব্রহ্ম-নিষ্ঠ,আত্মভাব পরব্রহ্মে স্থির, সেই সব ব্রহ্মনিষ্ঠ ব্যক্তিদের, জ্ঞানের দ্বারা সমস্ত পাপ নষ্ট হয়েছে জানবে। এদের আর পুনর্বার জন্ম হয় না। বিদ্যা ও বিনয় যার মধ্যে আছে তিনিই পণ্ডিত। এরা সর্ব ভূতে অর্থাৎ মনুষ্য পশু ব্রাহ্মণ চণ্ডাল সব কিছুতেই সমদর্শী থাকেন। সমজ্ঞানী ব্যক্তি সংসারে বাস করেও সৃষ্টিজয়ী। কারণ তিনি সর্বত্রই ব্রহ্ম দেখেন। সব কিছুতেই সমভাবাপন্ন - কোনো কিছুতেই দোষ দেখেন না। এই কারনে সমদর্শীগন সর্বদা ব্রহ্মতেই স্থিত আছেন।ব্রহ্মকে যে যোগী জেনেছে, সেই যোগীই ব্রহ্মে স্থিত আছেন । তিনি প্রিয় বস্তূ পেলেও আনন্দ লাভ করেন না আবার অপ্রিয় বস্তূ পেলেও দুঃখ পান না। যিনি বাহ্য ইন্দ্রিয় বিষয়ে আসক্তিহীন, তিনি আত্ম সম্পর্কীয় সুখে সুখহীন। এঁরা যোগের সাহায্যে ব্ৰহ্মে চিত্তকে যুক্ত করে পরমানন্দ লাভ করেন। মোটকথা - বিষয় সম্পর্কিত সকল সুখ-ই আসলে দুঃখের কারন। এই কারণে বিবেকবান ব্যক্তি বিষয় সুখে রত থাকেন না। কাম-ক্রোধকে যে মানুষ ইহলোকে আমৃত্যু সহ্য করতে পারবেন তিনিই প্রকৃত সমাহিত এবং সুখী। যার আত্মাতেই সুখ, আত্মাতেই আনন্দ, আত্মাতেই দৃষ্টি নিবদ্ধ -সেই যোগী পুরুষ ব্রহ্মে স্থিত হয়ে নির্বাণ লাভ করেন। যারা সন্দেহ রহিত,পাপশূন্য, সমাহিত চিত্ত ও সর্ব জীবের মঙ্গলে রত, সেই যোগীগণ ব্রহ্ম নির্বাণ লাভ করেন। কাম-ক্রোধ-শুন্য, সংযত চিত্ত,আত্মজ্ঞান সম্পন্ন যোগীগন জীবিত বা মৃত উভয় অবস্থাতেই ব্রহ্ম নির্বাণ লাভ করেন।
রূপ,রস, ইত্যাদি বাহ্যিক বিষয় থেকে মন সরিয়ে যিনি ভ্রূ-মধ্যে চক্ষুদ্বয়কে স্থাপন করে,প্রাণ,অপান,বায়ুকে উর্ধ্ব ও অধোগতি সমান করে, ইন্দ্রিয়, মন, বুদ্ধিকে সংযত এবং ইচ্ছা, ভয়, ও ক্রোধকে দূর করতে পারেন,তিনি জীবিত অবস্থাতেই মুক্তি লাভ করেন। ভগবানই যজ্ঞ ও তপস্যার ফল ভোগ করেন। তিনিই ত্রিলোকের স্বামী , সকলের সুহৃদ। এই জ্ঞান যার আছে, তিনিই পরম শান্তি ভোগ করেন। ৫/২৯..........
ষষ্ঠ অধ্যায় : ধ্যান যোগ (৩০/৫/২০১৭)
কর্মফলের আশা ত্যাগ করে যিনি নিজের কর্তব্য সম্পাদন করেন, তিনিই সন্যাসী ও যোগী। কর্ম ত্যাগ করলেই যোগী হয়ে যায় না। পন্ডিতগণ যাকে সন্যাস বলেন সেটাই যোগ। কারন কর্মত্যাগ না করলে সন্যাস বা যোগ কোনটা হতে পারে না। যোগারূঢ় মুনির কর্মত্যাগ-ই শ্রেষ্ঠ সাধনা। ইন্দ্রিয়ভোগ-কর্মে আসক্তিশুন্য, সঙ্কল্পত্যাগী এইরূপ যোগীকেই যোগারূঢ় বলা হয়। বুদ্ধি ও বিবেকের সাহায্যে আত্মার উদ্ধার করবে। আত্মাকে অধঃপতিত করবে না। মন-ই আত্মার শত্রূ, আবার মন-ই আত্মার মিত্র। যিনি নিজের দ্বারা নিজে বশীভূত, তিনি আত্মার সুহৃদ। আর যিনি নিজের বশীভূত নন তিনি-ই আত্মার শত্রূ। যিনি আত্মাকে জয় করেছেন, যার ইন্দ্রিয় সংযত, চিত্ত প্রশান্ত - তার মধ্যে পরমাত্মার প্রকাশ। তিনি শীত-গ্রীষ্ম;সুখ-দুঃখ ;মান-অপমান সবেতেই স্থির বুদ্ধি হয়ে থাকেন। ৬/৭......
ভগবান কথা (৩১/০৫/২০১৭)
জ্ঞান বিজ্ঞানে যার মন তুষ্ট ; যিনি চিত্তজয়ী ; যিনি ইন্দ্রিয় জয়ী ;যার কাছে লোষ্ট্র অর্থাৎ মাটির ঢেলা বা ডিল এবং কাঞ্চন বা সোনা যার কাছে সমান - সেই যোগীকে যোগরূঢ় বলা হয়। সুহৃদ, বনধু, উদাসীন,মধ্যস্থ, দ্বেষ্য, সাধু, পাপী - সবেতেই যিনি সম জ্ঞান করেন।তিনিই শ্রেষ্ট পুরুষ এবং প্রশংসার যোগ্য।
যোগ প্রক্রিয়া :
সবসময় যোগী নির্জনে থেকে, সংযত চিত্তে, ভোগ পরিত্যাগ করে, কাহারও কিছু গ্রহণ না করে - একাকী মনকে সমাহিত করবেন। পবিত্র স্থানে যোগী মৃগচর্ম,ব্যাঘ্র চর্ম অথবা কুশনির্মিত আসন পাতবেন। আসনের জায়গা যেন বেশি উঁচু না হয় আবার বেশি নিচু না হয়। সেই আসনে একাগ্র মনে শুদ্ধ চিত্ত্বে যোগ অভ্যাস করবেন। এইভাবে যোগী, দেহ মস্তক , গ্রীবা, সরল ও স্থির ভাবে রেখে, ইতস্তত মনোযোগ না দিয়ে বা না তাকিয়ে কেবল মাত্র ভ্রূমধ্যে দৃষ্টি স্থির রেখে যোগাভ্যাস করবেন। এইভাবে মনকে সমাহিত করে যোগী যোগাভ্যাস করলে, নির্বাণ রূপ পরম শান্তি লাভ করবেন।
যোগের সাবধানতা :
অধিক আহারকারী, একান্ত অনাহারী আবার অধিক নিদ্রাতুর, বা অধিক জাগরণশীল ব্যক্তির যোগ হয় না। যিনি আহারে- বিহারে, কর্মে-নিদ্রায় এবং জাগরনে সমতা রক্ষা করেন - তার যোগাভ্যাস দুঃখ নাশ করে। যার মন সংযত হয়ে আত্মাতেই স্থিত থাকে ও কামনাশূন্য থাকে তাকেই যোগী বলে অবহিত করা হয়।
যোগের ফল :
প্রদীপের শিক্ষা যেমন বায়ুহীন স্থানে স্থির থাকে, সেই ভাবে মনকে স্থির রেখে বা সংযত করে যদি যোগী যোগযুক্ত হয়, তবে চিত্ত নিরুদ্ধ ও একেবারে স্থির হয়। সেই অবস্থায় পরব্রহ্মকে নিজের মধ্যে দর্শন করে যোগী নিজের মধ্যে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন। ইন্দ্রিয় সংযোগ ছাড়াই তখন সুখানুভব হয়। এই অবস্থায় যোগী আত্মার -স্বরূপ অনুভব করে এবং অবিচলিত থাকে। এই অবস্থায় সর্বপ্রকার লাভ-কেই তুচ্ছ মনে হয়। গুরুতর দুঃখতেও যোগী অবিচল থাকে। একেই যোগ বলে।
সুখ-দুঃখ ত্যাগের নামই যোগ। সংযতমনা ও সমস্ত কামনা ত্যাগ করেই যোগ সাধনা করতে হয়। বুদ্ধির সাহায্যে, ধৈর্য্য সহকারে, ক্রমে ক্রমে, মনকে আত্মগত করতে হয়। মনের সকল চিন্তা পরিত্যাগ করতে হয়। মনের স্বাভাব-ই অস্থিরতা, চঞ্চলতা। মন প্রতিনিয়ত বিষয়ের প্রতি ধাববান। সেইজন্য এই ধাববান-চঞ্চল মনকে অভ্যাসের দ্বারা ক্রমে ক্রমে আত্মাতে স্থির করতে হবে।সংযত মন যখন রজোগুন বর্জন করে শান্ত হয় তখনি ব্রহ্ম-ভাব প্রাপ্ত হয়। একেই সমাধি বলে। সমাধি সর্বত্তম সুখ। এই ভাবে রজঃ ও তমোগুণ বর্জিত হয়ে যোগযুক্ত হলেই ব্রহ্ম দর্শন হয়,পরম সুখ লাভ হয়।
সমদর্শী যোগী আপনাকে সর্বজীবে সমান দেখেন। আপন আত্মাকে সর্বভূতে অবস্থিত দেখেন আবার সর্বভূতকে নিজ আত্মাতে অবস্থিত দেখেন। ৬/২৯........
ভগবান কথা (০১/০৬/২০১৭)
যিনি ঈশ্বরকে সর্বভূতে দর্শন করেন আবার ঈশ্বরের মধ্যে সর্বভূতকে দর্শন করেন - ঈশ্বর তার কাছে প্রত্যক্ষ, ঈশ্বরও তাকেই দেখেন। যিনি ঈশ্বরকে পৃথক জ্ঞানে ভজনা করেন তিনি সকল বিষয়ে থাকলেও ঈশ্বরে বিরাজিত থাকেন। সকল জীবের সুখ-দুঃখকে যে যোগী নিজের মতো চিন্তা করেন - তিনিই শ্রেষ্ট।
মন যে সর্বদা অস্থির -এতে সন্দেহ নাই, কিনতু অভ্যাস ও বৈরাগ্যের দ্বারা মনকে দমন করা যায়। মন কে নিজ বশে না আনতে পারলে, তার পক্ষে যোগ সম্ভব না। মন যার বশীভূত তিনি সঠিক উপায় অবলম্বনে চেষ্টা করলে যোগ লাভ করতে পারেন। .......৬/৩৬
ভগবান কথা (০২/০৬/২০১৭)
যোগভ্ৰষ্টা অর্থাৎ কেউ যদি যোগে প্রবৃত্ত হবার পরে কিছুদিন যোগ করার পরে, চঞ্চল চিত্ত বা শিথিলতার কারণে যোগ ছেড়ে দেন তাতে তার কোনো ক্ষতি হয় না। বরং যোগভ্রষ্ট ব্যক্তি পুণ্যবানদিগের সাথে দীর্ঘকাল অবস্থান করে, পরে কোনো সদাচারী ধনবানের গৃহে, অথবা কোনো যোগীকুলে জন্ম গ্রহণ করেন। পূর্বজীবনের বুদ্ধিবৃত্তি নিয়ে পুনরায় মোক্ষ লাভের চেষ্টা করেন। ৬/৪৩....
ভগবান কথা (৪/৬/২০১৭)
যোগভ্ৰষ্ট যোগী নিজে চেষ্টা না করলেও পূর্ব জন্মের অভ্যাসের জন্য যোগে আকৃষ্ট হন। যোগ জিজ্ঞাসু সেই ব্যক্তি বেদবিহিত কর্মফলের অধিক ফল লাভ করেন। সেই যোগভ্ৰষ্ট যোগী অত্যন্ত যত্নের দ্বারা পাপ শুন্য হয়ে বহু জন্মের সঞ্চিত যোগ সাহায্যে সিদ্ধি লাভ করে পরমাগতি লাভ করেন। সেই যোগী, তপস্বী জ্ঞানী ও কর্মীদের থেকে শ্রেষ্ট। ভগবানে যার চিত্ত স্থির, ভগবানের সেবাই যার কর্ম - তিনিই শ্রেষ্ট যোগী। ৬/৪৭......
যোগভ্ৰষ্ট যোগী নিজে চেষ্টা না করলেও পূর্ব জন্মের অভ্যাসের জন্য যোগে আকৃষ্ট হন। যোগ জিজ্ঞাসু সেই ব্যক্তি বেদবিহিত কর্মফলের অধিক ফল লাভ করেন। সেই যোগভ্ৰষ্ট যোগী অত্যন্ত যত্নের দ্বারা পাপ শুন্য হয়ে বহু জন্মের সঞ্চিত যোগ সাহায্যে সিদ্ধি লাভ করে পরমাগতি লাভ করেন। সেই যোগী, তপস্বী জ্ঞানী ও কর্মীদের থেকে শ্রেষ্ট। ভগবানে যার চিত্ত স্থির, ভগবানের সেবাই যার কর্ম - তিনিই শ্রেষ্ট যোগী। ৬/৪৭......
জ্ঞান-বিজ্ঞান যোগ - ৭তম অধ্যায়।
ভগবানে চিত্ত নিবিষ্ট ও ভগবানের স্মরণ নিয়ে কি ভাবে ভগবানকে জানতে পারবে সেটা শোনো। শাস্ত্রের তত্ত্বজ্ঞান - যা জ্ঞাত হলে আর কিছুই জানবার থাকে না। হাজারের মধ্যে এক ব্যক্তি আত্মজ্ঞান লাভার জন্য চেষ্টা করেন। আবার হাজার হাজার আত্মজ্ঞান সম্পন্ন মানবের মধ্যে জন্মার্জিত সুকৃতির বশে হয়তো মাত্র একজন ব্যক্তি ভগবানের প্রকৃত স্বরূপ জানতে পারে।
ভূমি, জল, অনল, বায়ু, আকাশ, মন, বুদ্ধি ও অহংকার -ইহা ভগবানের ভিন্ন ভিন্ন আট প্রকার প্রকৃতি। ভগবানের এই আট প্রকার প্রকৃতি অপরা বা জড়। এগুলো জড় তাই নিকৃষ্ট। এছাড়া ভগবানের একটা পরা বা শ্রেষ্ট প্রকৃতি আছে। সেই পরা চেতনরূপ প্রকৃতিই জগৎকে ধারণ করে আছে। সকল প্রাণীই এই পরা ও অপরা প্রকৃতি হতে উদভুত । প্রকৃতি সহ সমস্ত জগতের সৃষ্টি ও প্রলয়ের কারণ স্বয়ং ভগবান।
ভগবান কথা (৭/৬/২০১৭)
ভগবান বলছেন : আমার অপেক্ষা শ্রেষ্ট কিছুই নাই। মালায় যেমন মনিসকল গাঁথা থাকে - তেমনি আমাতেই এই বিশ্ব জগৎ বিরাজিত আছে। জলের মধ্যে আমি রস স্বরূপ। আমি সূর্য ও সূর্যের প্রভাস্বরূপ। আমি সর্ববেদের প্রণব (ওম ) আকাশে শব্দ, মানবের মধ্যে আমি পুরুষকার। পৃথিবীর পবিত্র গন্ধরূপে,সূর্যের তেজরূপে, সর্বভূতে জীবনরূপে, তপস্বীদের তাপস্যারূপে আমিই বিরাজিত। সর্বভূতের আমি বীজ স্বরুপ, বুদ্ধিমানের বুদ্ধি, তেজষ্মীগণের আমিই তেজ।বলবান্গনের কামরাগ বর্জিত বল আমি। প্রাণীকুলের ধৰ্ম অবিরোধী শাস্ত্রসম্মত কার্য্য আমিই জানবে। সাস্ত্বিক, রাজসিক, ও তামসিক ইত্যাদি যে সমস্ত ভাব বর্তমান,আমা হতেই তাহার উৎপত্তি। কিনতু আমি এতে লিপ্ত নই। এসকল আমাতেই লিপ্ত।
এই ত্রিগুণাত্মক ভাবদ্বারা জগৎ মোহিত। সেই জন্যই ত্রিগুণাতীত চির অক্ষয় এবং আন্দস্বরূপ আমাকে বিশ্বজগত জানতে সক্ষম হয় না।
ত্রিগুণাত্মক আমার দৈবীমায়া, অতিক্রম করা খুবই কষ্টকর । কিনতু অনন্য শরণ হয়ে যারা আমাকেই ভজনা করে, তারাই শুধুমাত্র এই দুস্তর মায়া অতিক্রম করতে পারে। মায়ায় আচ্ছন্ন যাদের শাস্ত্র-উপদেশ-জাত জ্ঞান লোপ হয়েছে, তারা সবাই নরাধম-দুষ্কৃতকারী-মূঢ়। আমাকে তারা পায় না।
আর্ত,আত্মজ্ঞান-লাভেচ্ছু, অর্থকামী, ও জ্ঞানী এই চার প্রকার সুকৃতি পরায়ণ মানুষই আমার ভজনা করে। আবার এই চার প্রকার মানুষের মধ্যে আমা-পরায়ণ জ্ঞানীই শ্রেষ্ট। আমি জ্ঞানীর অত্যন্ত প্রিয় আবার জ্ঞানীও আমার অত্যন্ত প্রিয়। এই চার প্রকার পুণ্যবানই উদার। এদের মধ্যে জ্ঞানীই আমার আত্মার স্বরূপ। জ্ঞানীই সর্বশ্রেষ্ট পরাগতি স্বরূপ আমাকেই আশ্রয় করে। জ্ঞানী বহু জন্মের পর - শেষে বুঝতে পারে একমাত্র বাসুদেবই সব অর্থাৎ আমিই সব। সুতরাং এইরকম মহাপুরুষ জগতে দুর্লভ।
কামনার প্রভাবে যার জ্ঞান লুপ্ত, সেইসব লুপ্ত বিবেকীগন আপন আপন প্রকৃতির বশবর্তী হয়ে অন্যান্য দেবতার আরাধনা করে থাকেন। যে সমস্ত ভক্ত শ্রদ্ধা সহকারে যে যে দেবতার উপাসনা করে, আমি সেই সব দেবতাতেই তাঁর অচলা ভক্তি প্রদান করে থাকি। যে সব ভক্ত অচলা শ্রদ্ধাসহকারে যে যে দেবতার আরাধনা করে,সে সে দেবতা তাদের সকল বাসনা পূর্ণ করেন। কারন আমা কর্তৃক সেই সকল বিহিত হয়।
যাদের দৃষ্টি সীমাবদ্ধ, সেই সকল ভক্তদের দেব-আরাধনা ক্ষনস্থায়ী হয়। কারন, বিভিন্ন দেবতার আরাধনাকারী দেব লোকে গমন করেন। আমার ভক্তগণ কিনতু আমাকেই লাভ করেন।
যাদের অল্পবুদ্ধি, তারা আমার অব্যয় পরমভাব জ্ঞাত না হয়ে, মায়াতীত আমাকে, ব্যক্ত অর্থাৎ নানারূপে জন্ম গহন করি, এইরূপ মনে করে।
আমি মহামায়ায় আচ্ছন্ন থাকায় সবার নিকট প্রকাশিত নয়। সেই জন্য মূঢ় ব্যক্তিগণ আমাকে জন্মরহিত ও অব্যয় বলে বুঝতে পারে না।
অতীতে, বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে যা কিছু ঘটেছে, ঘটছে ও ঘটবে তা সবই আমি জানি, কিনতু আমাকে কেউ জানেনা।
জন্মকাল হতেই মোহের দ্বারা বাসনা এবং দ্বেষ হতে সুখ-দুঃখ প্রভৃতি বিরুদ্ধ ভাবগুলি জন্ম লাভ করে। যে সকল পুণ্যবান ব্যক্তিগণের পাপ নষ্ট হয়েছে, তারা সুখ দুঃখের অতীত হয়ে একাগ্র চিত্তে আমার ভজনা করে। জ্বরা -মরণ হতে মুক্তি লাভ হেতু যারা যত্ন সহকারে আমাকে আশ্রয় করে, তারা সর্ব কর্ম করেন আবার ব্রহ্মকেও জ্ঞাত হন।আমাকেই যারা অধিভূত, অধিদৈব ও অধিযজ্ঞ স্বরূপ বলে জানেন, তাঁরা মৃত্যু কালে আমাকেই পরমব্রহ্ম চিন্তা করেন। ৭/৩০.....
ভগবান কথা : ৮/৬/২০১৭
ব্রহ্ম কে ? পরমাত্মাই ব্রহ্ম।
কর্ম কী ? স্বভাব, অধ্যাত্ম এবং যজ্ঞাদি অর্থাৎ যে সমস্ত ক্রিয়ার দ্বারা মানবের জন্ম ও বৃদ্ধি হয় - তাহাই কর্ম।
অধিযজ্ঞ কাকে বলে? দেহাদি নশ্বর পদার্থই অধিভূত, অক্ষর সবিতৃমণ্ডল মধ্যস্থ বিরাট পুরুষই আধিদৈব ও যজ্ঞাদির ফলদাতা রূপে আমিই অধিযজ্ঞ। ৮/৪.....
ভগবান কথা : ৯/৬/২০১৭
ভগবান বলছেন : অন্তকালে আমাকে স্মরণ করতে করতে যিনি দেহ ত্যাগ করেন, তিনি আমাকেই প্রাপ্ত হন। এতে কোনো সংশয় নেই। মৃত্যুকালে যে ব্যক্তি যে সকল বিষয় স্মরণ করতে করতে দেহ ত্যাগ করেন সেই ব্যক্তি সেই ভাবই প্রাপ্ত হন। সেজন্য সর্বদা আমাকে চিন্তা করো এবং স্বধর্ম অনুযায়ী কর্মে প্রবৃত্ত হও। মন,বুদ্ধি আমাকে অর্পণ করে কর্ম করলে আমাকেই প্রাপ্ত হবে। সর্বদা ঈশ্বর চিন্তা করলে, মন অপরদিকে যায় না। এইভাবে চিন্তার ফলে অভ্যাস যোগের সাহায্যে দিব্য পরম পুরুষকে লাভ করা যায়। সেই পরম পুরুষ সর্বজ্ঞ, অনাদি, সবার নিয়ন্তা,সুক্ষ হতে সূক্ষতর, ব্রহ্মান্ডের পালক, অচিন্ত্য, সূর্যসম জ্যোতির্ময় ও প্রকৃতির অতীত পরম পুরুষ। ভক্তিপূর্বক যিনি একাগ্র চিত্তে যোগের সাহায্যে ভ্রূদ্বয়ের মধ্যে প্রাণবায়ু স্থাপন করে মৃত্যু সময় তাঁর চিন্তা করেন, তিনি সেই জ্যোতির্ময় পরম পুরুষকে অবশ্যই লাভ করেন।
বেদবিদ পণ্ডিতগন যাঁকে অক্ষর বলেন, বিষয় স্পৃহাহীন যোগীগণ যাকে লাভের হেতু ব্রহ্মাচার্য অনুষ্ঠান করেন, আমি সংক্ষেপে সেই ব্রহ্মের কথা বলছি।
ইন্দ্রিয় দ্বার সমূহ সংযত করে, মনকে হৃদয়ে স্থাপনপূর্বক ধৈর্য্য সহকারে যোগ দ্বারা প্রাণ-বায়ুকে ভ্রূদ্বয় মধ্যে স্থাপন করবে। অতঃপর "ওঁ " এই এক অক্ষর ব্রহ্ম শব্দটি মনে মনে উচ্চারণ করতে করতে যিনি দেহত্যাগ কেন, তিনি পরম গতি প্রাপ্ত করেন।
অনন্য চিত্তে আমায় স্মরণ সর্বদা স্মরণ করেন, সেই চিত্ত সমাহিত-যোগীর পক্ষে আমি অত্যন্ত সুলভ জানিও। মহাত্মাগণ আমাকে পেয়ে পরম সিদ্ধি লাভ করেন। সেই কারণ দুঃখময় অনিত্য সংসারে আর তাদের পুনর্জন্ম গ্রহণ করতে হয় না। ব্রহ্মলোক হতেও জীবকে ফিরে আসতে হয়। আমাকে পেলে তার আর পুনর্জন্ম নিতে হয় না।
এক সহস্র যুগে ব্রহ্মার একদিন ও রাত্রি। যিনি এটা জানেন, তিনিই দিন রাত্রি সন্মন্ধে প্রকৃত জ্ঞানী। ব্রহ্মার দিবা ভাগে জগৎ-সৃষ্টি হয়। আবার প্রলয়ে বিলীন হয়। এই ভাবে জীবগন ব্রহ্মার দিবা কালে জন্মলাভ করে আবার রাত্রিকালে বিলীন হয়।
সেই অব্যক্ত হতেও অব্যক্ত, চক্ষু,প্রভৃতি ইন্দ্রিয় অগোচর যে সনাতন ভাব, সর্বভূতে ধ্বংস প্রাপ্ত হলেও তা বিনাশপ্রাপ্ত হয় না। এটাই অব্যক্ত অক্ষর ও পরমাগতি যা প্রাপ্ত হলে আর সংসারে ফিরে আসতে হয় না। তাহাই আমার পরম ধাম।
যার মধ্যে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড নিহিত, যিনি জগৎ ব্যাপ্ত হয়ে বিরাজিত, সেই পরম পুরুষকে শুধুমাত্র দৃঢ় ভক্তি দ্বারাই লাভ করা যায়।
যে সময় যোগীদের মৃত্যু হলে আর আর আসতে হয় না এবং যে সময় মৃত্যুতে আসতে হয় - তা বলছি।
অগ্নির্জ্যোতি, দিন ও শুক্ল পক্ষ এবং উত্তরায়ণের ছয় মাস - এই সময় গমনকারী ব্ৰহ্মজ্ঞগণ ব্রহ্মকে প্রাপ্ত হন।
ধুম, রাত্রীঃ,কৃষ্ণপক্ষ, আর দক্ষিণায়নের ছয় মাস ; এই সময়ে যোগী চন্দ্রমার জ্যোতি প্রাপ্ত হয় ও পুনরায় মৃত্যুর অধীন হন।
শুল্কপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষ ইহা জগতে নিত্য শাশ্বত। শুক্লপক্ষে মুক্তি আর কৃষ্ণপক্ষে পুনর্জন্ম। শুক্লপক্ষ মোক্ষ আর কৃষ্ণপক্ষ সংসার স্বরূপ।এই দুটি পথই জ্ঞাত হয়ে যোগীগণ মোহগ্রস্থ হন না। বেদে, যজ্ঞে, তপস্যায় এবং দানে পুন্য লাভ হয়। এই পরম তত্ব জেনে যোগীপুরুষ এ সব অতিক্রম করেন। ৮/২৮......
ভগবান কথা : ১০/৬/২০১৭
রাজ্ বিদ্যা রাজগুহ্য অতি পবিত্র, সর্বশ্রেষ্ট , অতি গোপনীয়, উত্তম এবং উত্তম প্রত্যক্ষ ফলপ্রদ ধর্মমত, সুখসাধ্য ও অবিনশ্বর। যা জানলে শুভ মোক্ষলাভ হয়।
অব্যক্ত আমি জগতে পরিব্যাপ্ত। সমস্ত প্রাণী আমাতে অবস্থিত বটে কিনতু আমি কিছুতেই স্থিত নোই। আমি সর্বভূতকে পরমাত্মারূপে ধারণ করে আছি। কিনতু না আমি ভূতে স্থিত, না ভূত আমাতে স্থিত। আকাশে যেমন মহান বেগবান বায়ু সর্বগামী , সেই রকম সর্বভূতে আমাতেই স্থিত। প্রলয় সময়ে আমারই প্রকৃতিতে সর্ব-ভূত লীন হয়। আবার সৃষ্টিকালে পুনরায় আমিই সকল সৃষ্টি করি। আপন প্রকৃতিকে স্থির করে আমি নিজ মায়ার সাহায্যে এই ভুতগনকে বার বার সৃষ্টি করি। সর্ব বিষয়ে আমি উদাসীন-আসক্তিহীন, সেজন্য এ সকল কর্ম আমাকে বন্ধন করতে পারে না।
প্রকৃতি এই বিশ্ব চরাচর বার বার সৃষ্টি করে আমারই হেতু। এই কারণেই বিশ্বজগৎ বার বার সৃষ্টি হয়।
জ্ঞানহীন মূঢ়গন আমার এই পরম ভাব না বুঝে, আমার নরদেহধারী মূর্তিকে তুচ্ছ জ্ঞান করে। এই কারণে - তারা বেবেকশুন্য, অস্থির চিত্ত নিষ্ফলকর্মা ,জ্ঞানহীন,বিচারশুন্য হয়ে বুদ্ধিনাশকারিনী, আসুরী ও রাক্ষসী প্রকৃতিকে আশ্রয় করে। দৈবী প্রকৃতি আশ্রয়কারীগণ আমাকে সর্ব ভূতের আদি জেনে একান্তমনে আমারই ভজনা করে। সর্বদা আমার নাম কীর্তন করে। যত্ন ও ভক্তিপূর্বক আমাকে প্রণাম করে। নিত্যযোগে আমার উপাসনা করে। কেউ কেউ জ্ঞানযোগের দ্বারা আমার উপাসনা করে। কেউ আবার নিজেকে আমার সাথে অভেদ জ্ঞান করে ভজনা করে। কেউ আবার নিজেকে দাস ও আমাকে প্রভুরূপে চিন্তা করে আমাকে উপাসনা করে।৯/১৫.........
ভগবান কথা : ১১/৬/২০১৭
ভগবান বলছেন : আমিই ক্রতু, আমিই যজ্ঞ, আমিই স্বধা, আমিই ঔষধ,আমিই মন্ত্র,আমিই যজ্ঞের হবি,আমিই অগ্নি,আমিই হোমকর্ম। আমিই এই জগতের পিতা, মাতা,বিধাতা,পোষনকারী, পিতামহ।
আমিই জ্ঞেয় বস্তূ ,আমিই 'ওঁ' কার। আমিই ঋক, সাম,যজু, অথর্ব -সমস্ত বেদ। আমিই গতি, ভারত, প্রভু, সাক্ষী, জগৎ আশ্রয়, শরণ, সুহৃদ, উৎপত্তি স্থান, সংহারতা, প্রলয় ও আমিই অবিনাশী বীজ।
আদিত্য রূপে আমিই তাপ প্রদান করি। বৃষ্টি রূপে আমিই বর্ষণ করি। আমিই জলরাশি আকর্ষণ করি। আমিই জীবন। আমিই মৃত্যু। আমিই সৎ এবং অসৎ।
তিন বেদজ্ঞানী মহাত্মাগণ সোমরস পানে নিষ্ফল হয়ে স্বর্গ কামনা করে। তারা পুণ্যফলে স্বর্গপ্রাপ্ত হন। দিব্য স্বর্গসুখ ভোগ করেন। স্বর্গসুখ ভোগের পর আবার মর্ত্যলোকে ফিরে আসেন। এই ভাবে বেদ-উক্ত অনুবর্তনকারীগণ জন্ম-মৃত্যু লাভ করেন। অন্য্ দিকে যাঁরা একাগ্র মনে আমারই চিন্তা করেন, তাদের জীবিকা অর্জন ও রক্ষনা বেক্ষন আমিই করি। যারা শ্রদ্ধান্বিত হয়ে অন্যান্য দেবতার ভজনা করে তারাও অবিধিপূর্বক আমারই ভজনা করে। আমিই সমস্ত যজ্ঞের ভোক্তা ও প্রভু। আমাকে ভালো রূপে না জেনে মানুষ প্রকৃত পথ হতে বিচলিত হয়ে থাকেন।
দেবতার উপাসনায় দেব লোক প্রাপ্ত হয়। পিতৃগণের শ্রাদ্ধ দ্বারা পিতৃলোক প্রাপ্ত হয়। ভুতগনের অর্চনায় ভূতলোক প্রাপ্ত হয়। কিনতু আমার উপাসনার দ্বারা আমার উপাসকগন আমাকেই লাভ পরে থাকেন।
পত্র, পুষ্প, ফল, জল যে ব্যক্তি আমার উদ্দেশ্যে অর্পণ করে, আমি তার সেই ভক্তি-উপাচার যত্ন পূর্বক গ্রহণ করি। তুমি যা কারো, যা আহার করো, হোম করো,দান বা তপস্যা করো, তা সকলই আমাতে সমর্পন করো। তুমি এতে শুভাশুভ কর্মের বাঁধন হতে মুক্তি লাভ করবে। সান্যাসযোগযুক্ত আত্মা হয়ে আমাকেই লাভ করবে।
আমি সর্বভূতকে সমান দেখি, কারো প্রতি বিদ্বেষ নেই। আমার প্রিয় বা অপ্রিয় কেউ নেই। কিনতু ভক্তিযুক্ত হয়ে আমার ভজনা করে, আমি তাদের সঙ্গে থাকি ও তারাও আমার সঙ্গে থাকে। অতি দুরাচারী ব্যক্তিও যদি একান্ত ভাবে আমার ভজনা করে, লোকে সেই ব্যক্তিকে সাধু বলে মনে করে। খুব শীঘ্র সেই ব্যক্তি ধর্মাত্মা হয়ে, শাশ্বত শান্তি লাভ করে থাকে। ভক্ত কখনো বিনষ্ট হয় না। নিচ বংশে যার জন্ম, স্ত্রী-লোক বৈশ্য , শুদ্র - আমার স্মরণ নিলে পরমাগতি লাভ করে। ......৯/৩২.....
জাগতিক ভোগ সমূহ অনিত্য। এর পরিনাম দুঃখদায়ক। অতএব অনিত্য সুখে মোহগ্রস্থ না হয়ে আমাকে ভজনা করো। আমাতে মনোযোগ দাও। আমার ভক্ত হও। আমার উপাসনা করো। আমার উদ্দেশ্যে ভজনা করো। এই ভাবে আমা -পরায়ণ হয়ে আমাতে চিত্ত সমাহিত করে আমাকেই প্রাপ্ত হও। ৯/৩৪......
ভগবান কথা : ১২/৬/২০১৭
পরমতত্ব কথা শোনো। সমস্ত দেবতা বা মহর্ষিগন কেউই আমার তত্ব জ্ঞাত নয়। এর কারন আমি দেবতা মহর্ষিগনের আদিতে বিরাজিত। আমাকে যে ব্যক্তি জন্মরহিত অনাদি ও সর্বলোকের মহেশ্বর বলে জানেন, মর্তলোকে তিনিই সর্ব পাপ হতে মুক্ত হন।
জিবগনের বিভিন্ন ভাব আমা হতেই সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ বুদ্ধি,জ্ঞান,অব্যাকুলতা, ক্ষমা, দম, শম,সুখ, দুঃখ, জন্ম, মৃত্যু,ভয়,অভয়,অহিংসা, ক্ষমতা, তুষ্টি,তপ , দান, যশ, অযশ সবই আমা হতে সৃষ্টি।
ভৃগু প্রভৃতি সপ্ত মহর্ষি, তার পরে চারজন মনু আমার প্রভাবযুক্ত এবং আমার মানসসৃষ্ট। এই জীব জগৎ তাদেরই সন্তানরূপে বিদ্যমান। আমার এই যোগ ও বিভূতি যিনি সম্পূর্ণরূপে অবগত, তিনি অবিচলিত চিত্তে যোগ যুক্ত হন।
বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা আমিই। এই বিশ্বজগৎ আমাতেই প্রবর্তিত। জ্ঞানী ব্যক্তিগণ আমার ভাবযুক্ত হয়ে আমারই ভজনা করেন। আমার এই লীলা ও রূপ গুনে মুগ্ধ হয়ে, যারা আমাতেই মন প্রাণ সমর্পন করেছে, যারা আমার বিষয়ে আলোচনা করে, - তারা সদাই তৃপ্ত, আনন্দময় সদাশান্তি লাভ করে। করুনাবশে আমি এদের অন্তরে থেকে জ্ঞান আলোকে অন্ধকার নাশ করি।
আমার বিভূতি অনন্ত।
সর্বভূতে অবস্থিত আমি আত্মা।
আমিই আদি, মধ্যে ও অন্ত বলে জানবে।
দ্বাদশ আদিত্য মধ্যে আমি বিষ্ণু।
জ্যোতিস্ক মধ্যে আমি সুর্য্য।
মরুৎগনের মধ্যে আমি মরীচি।
নক্ষত্র সকলের মধ্যে আমি চন্দ্র।
বেদ সকলের মধ্যে আমি সাম বেদ।
দেবতাদের মধ্যে আমি ইন্দ্র।
ইন্দ্রিয়গনের মধ্যে আমি মন।
প্রাণীগণের মধ্যে আমি চেতনা স্বরূপ।
রুদ্রগনের মধ্যে আমি শঙ্কর।
যক্ষ ও রাক্ষস গনের মধ্যে আমি কুবের।
অষ্টবসুর মধ্যে আমি পাবক।
পর্বত সকলের মধ্যে আমি সুমেরু।
পুরহিতগণের মধ্যে আমি বৃহস্পতি।
সেনাপতিগণের মধ্যে আমি কার্তিকেয়।
জলাশয়ের মধ্যে আমি সাগর।
মহর্ষি গনের মধ্যে আমি ভৃগু।
অক্ষর মধ্যে আমি একাক্ষর ওঙ্কার।
যজ্ঞ মধ্যে আমি জপ্ যজ্ঞ।
স্থাবরগন মধ্যে আমি হিমালয়।
বৃক্ষ সকলের মধ্যে আমি অশ্বথ।
দেবর্ষিগণের মধ্যে আমি নারদ।
গন্ধর্ব গনের মধ্যে আমি চিত্ররথ।
সিদ্ধগন মধ্যে আমি কপিলমুনি।
অশ্বগন মধ্যে আমি, সমুদ্র মন্থনে উদভূত উচ্চৈঃশ্রবা।
হস্তি গনের মধ্যে আমি, সমুদ্র মন্থনে উদভূত ঐরাবত।
নরগনের মধ্যে আমি নরপতি। ১০/২৭.......
ভগবান কথা : ১২/০৬/২০১৭
ভগবান বলছেন :
অস্ত্র সকলের মধ্যে আমি বজ্র
ধেনু গনের মধ্যে আমি কাম ধেনু।
প্রজনন কার্যে আমি কন্দর্প।
সাপগনের মধ্যে আমি বাসুকি।
নাগগনের মধ্যে আমি অনন্ত।
জলচরের মধ্যে আমি বরুন।
পিতৃগণের মধ্যে আমি অর্য্যমা।
সংয়মকারীর মধ্যে আমি যম।
দৈত্য গনের মধ্যে আমি প্রহ্লাদ।
গ্রাসকারীগনের মধ্যে আমি কাল।
পশুগণের মধ্যে আমি সিংহ।
পাখী গনের মধ্যে আমি গরুড়।
বিজ্ঞানের মধ্যে আমি বায়ু।
শস্ত্রধারীগণের মধ্যে আমি রাম ।
জলজনতুগনের মধ্যে আমি মকর।
নদনদীর মধ্যে আমি জাহ্নবী।
আমি সৃষ্টির আদি, অন্ত মধ্য।
বিদ্যামধ্যে অধ্যাত্ব বিদ্যা।
তার্কিকগণের মধ্যে আমি তর্কবিদ্যা।
অক্ষর সকলের মধ্যে আমি অ-কার।
সমাস মধ্যে আমি দ্বন্দ্ব সমাস।
আমি অক্ষয়কাল স্বরূপ।
আমিই কর্মফলদাতা, বিধাতা।
সংহারকারীর মধ্যে আমি মৃত্যু।
ভবিষ্যৎ উৎপত্তির হেতু আমি।
নারী গনের মধ্যে আমি কীর্তি,শ্রী,স্মৃতি,মেধা,ধৃতি ও ক্ষমা।
সামবেদ মধ্যে আমি বৃহ্ৎসাম।
ছন্দগুলির মধ্যে আমি গায়ত্রী।
মাসগুলির মধ্যে আমি অগ্রহায়ণ (মার্গশীর্ষ).
ঋতুসকলের মধ্যে আমি বসন্ত।
ছলনাকারীর মধ্যে দ্যূতক্রীড়া।
তেজষ্মীগণের তেজ।
বিজয়ীদের মধ্যে জয়।
ব্যবসায়ীগনের ব্যবসা।
সাত্বিকগণের মধ্যে আমি সত্বগুন।
বৃষ্ণী বংশীয় অর্থাৎ যাদব বংশীয়দের মধ্যে বাসুদেব।
পাণ্ডবগণের মধ্যে আমি ধনঞ্জয়।
মুনিগণের মধ্যে ব্যাস
কবিগনের মধ্যে আমি উশনা (শুক্রাচার্য) .
দমন কারীদের মধ্যে আমি দণ্ড।
জিগীষু গনের মধ্যে আমি নীতি।
গোপনীয় বিষয়ে আমি মৌন।
জ্ঞানীগণের আমি তত্ত্বজ্ঞান।
সকল জীব সৃষ্টির বীজ স্বরূপ আমি। সেজন্য আমি ছাড়া পৃথক থাকতে পারে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে এমন কিছু নেই। আমার দিব্য বিভূতি অনন্ত। এই বিশ্বে যা কিছু শ্রীযুক্ত, সে সমস্ত আমারই তেজের একটি অংশ মাত্র। আমি আমার মাত্র একাংশের সাহায্যে জগৎব্যাপ্ত রয়েছি। ১০/৪২.....
ভগবান কথা : ১২/৬/২০১৭
এতক্ষন ভগবানের উক্তি শুনছিলাম। ভগবান - ঈশ্বর, আত্মা সম্পর্কে অনেক কথা বলছিলেন। কিনতু শ্রীগীতার এই অংশ ভগবানের উক্তি নয়। তবুও এখানেই ভগবানের প্রকাশ। নিজেকে নিজে তো দেখা যায় না। চোখ নিজেকে দেখতে পায় না। এখানে ভগবান দেখা দিয়েছিলেন। দেখে ছিলেন শিষ্য শ্রী অর্জুন। তিনি কি দেখেছিলেন ? আসুন আমরা অর্জুনের চোখের সাহায্যে দেখে নেই।
অর্জুন বলছে :হে পদ্মপত্রায়ত লোচন ! তুমিই যে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি ও প্রলয়ের কর্তা। সে মাহাত্মের কথা শুনলাম। নিজের বিষয় সম্পর্কে তুমি যা বললে তা সত্য। তবুও হে পুরুষত্তম !তোমার ঐশ্বরিক রূপ আমি দর্শন করতে চাই।
তখন ভগবান বললেন : হে পার্থ ! নানাপ্রকার দিব্যাকৃতি, অলৌকিক, নানাবর্ন যুক্ত ও আকৃতি বিশিষ্ট শত সহস্র রূপ দর্শন করো। আমার দেহে দ্বাদশ আদিত্য, অষ্টবসু,একাদশ রুদ্র, ঊনপঞ্চাশৎ বায়ু, অশ্বিনী কুমারদ্বয় দেখ। আমার দেহ মধ্যে বিশ্বচরাচর দর্শন করো। যা কিছু আরো দেখতে চাও তাও দর্শন করো। আমার যোগেশ্বর রূপ দর্শন করো।
এইবার সঞ্জয়ের মুখ দিয়ে শুনি : মহাযোগেশ্বর শ্রীহরি এই বলে আপন ঐশ্বরিক রূপ পার্থকে দেখালেন।
বহু বদন ও চক্ষুবিশিষ্ট অনেক অদভুত-দর্শন, বহু দিব্যা অলংকার যুক্ত, দিব্য অস্ত্রধারী মূর্তি। দিব্য মালা বস্ত্রাদিতে সজ্জিত,দিব্য গন্ধে লিপ্ত , সর্ব-আশ্চর্যময়, জ্যোতিপূর্ণ,অনন্ত ও সর্বত্র মুখ যুক্ত। যদি মহাকাশে একত্রে সহস্র সূর্য হয়,তবে সে মহাত্মার দীপ্তির কিছু সমান হতে পারে।
অর্জুন নত মস্তকে প্রণাম করলো এবং বললো - হে দেব তোমার দেব দেহের মধ্যে সব দেবতা, বিভিন্ন প্রাণী,কমল আসন-স্থিত ব্রহ্মা,
পুণ্যবান ঋষিগণ ও সর্পসকল দেখছি। আমি তোমার বহু উদর, বহু বদন, বহু চক্ষু বিশিষ্ট, সর্বব্যাপী দেখতে পেলাম। কিনতু আদি
অন্ত দেখলাম না।
অর্জুন আবার বলছেন - তুমিই কিরীটি, গঙ্গা, ও চক্রধারী। তোমার তেজরাশিতে সমস্ত দীপ্তিময়। সর্বত্রই তুমি তেজোদীপ্ত সূর্যসম, অত্যন্ত দুনিরীক্ষ, ও অপ্রমেয়। তুমি অক্ষর বেদবিদগণের জ্ঞেয় পরমব্রহ্ম। তুমি বিশ্বব্রমাণ্ডের আশ্রয়। অব্যক্ত, ও শাশ্বত ধর্মের রক্ষক সনাতন পুরুষ।
আবার বলছেন : তুমি অখণ্ড বীর্যবান আদি, মধ্যে ও অন্তহীন। অনন্ত বাহু সমন্বিত। চন্দ্র ও সূর্য তোমার নয়নদ্বয়। দীপ্ত হুতাশনের ন্যায় তোমার বদন মন্ডল। নিজ তেজে তুমি বিশ্ব চরাচর উত্তপ্ত করছো। তুমি স্বর্গ মর্ত ও মধ্যবর্তীস্থান - সর্বত্র ব্যাপিয়া বিরাজিত। ত্রিলোক তোমার এই বিশ্বরূপ দর্শন করে ভিত হচ্ছে। দেবতা সকল ভীত হয়ে তোমার স্তূতি করছে। মহর্ষিগন ও সিদ্ধ গন তোমার স্তব করছে। রুদ্র, আদিত্য,বসু গণ ,সাধ্যগণ, এবং বিশ্বের দেবতা গন, অশ্বিনী কুমার দ্বয়, মরুৎ গণ পিতৃগণ গন্ধর্ব,যক্ষ,অসুর, সকলে বিস্মিত হয়ে তোমাকে দেখছে। তুমি অসংখ্য বদন, নেত্র,বহু, উরু, পদ, উদর,ও দাঁতযুক্ত। ( এই সব দেখে অর্জুন ভয় পেয়ে গেছে - তার শান্তি নষ্ট হয়ে গেছে - ইত্যাদি ইত্যাদি আরো কি সব দেখলো ও বললো। আমরা এ সবের মধ্যে যাবো না। ভগবানের কথায় যাবো)
ভগবান বললেন : আমি লোক ধংশ কারী মহাকাল। সকল লোককে ক্ষয় করতে আমি প্রবৃত্ত। আমি প্রসন্ন হয়ে আত্মযোগ সাহায্যে, তোমাকে আমার বিশ্বব্যাপী অনাদি অনন্ত বিশ্বরূপ দেখালাম।
শুধুমাত্র অনন্যা ভক্তি থাকলেই আমাকে জানা যায়, বোঝা যায়। আমার জন্য যে ব্যক্তি কর্ম করেন, যিনি আমার শরণাপন্ন ও আসক্তিশুন্য,সর্বভূতে শত্রূ শুন্য, ইনিই আমাকে প্রাপ্ত হন। ১১/৫৫.........
ভগবান কথা : ১৪/০৬/২০১৭ (ভক্তিযোগ)
পরম শ্রদ্ধা সহকারে যাদের মন আমাতে নিবিষ্ট করে আমাকে উপাসনা করেন, তারাই শ্রেষ্ট যোগী।
যাঁরা সর্বদা সমবুদ্ধি যুক্ত, সর্ব ভূতে হিতে রত, সর্বত্র গমনকারী, অব্যক্ত, কূটস্থ, অচল, অচিন্তনীয়, ধ্রূব, ক্ষয়োদয় রোহিত, ব্রহ্মের উপাসনা করে তারাও আমাকে প্রাপ্ত হয়। অব্যক্ত বা নিরাকার নির্গুণ ব্রহ্মের উপাসকদের মুক্তিলাভ কষ্টকর হয়। কারণ, দেহধারীর নির্গুণ ব্রহ্মলাভ খুবই কষ্টসাধ্য।
কিনতু যাঁরা আমাপরায়ণ হয়ে, সর্ব কর্ম আমাতেই সমর্পন করে, স্থির চিত্তে, আমাকেই চিন্তা করতে করতে আমার উপাসনা করে, সেই সকল সাধককে আমি মৃত্যুপূর্ণ সংসার সমুদ্র হতে অচিরেই রক্ষা করি। আমাতেই মন নিবিষ্ট কর। আমাতেই বুদ্ধিযুক্ত হও, তাহলে দেহান্তে আমাকেই প্রাপ্ত হবে। স্থির ভাবে আমাতে চিত্ত স্থির করতে যদি সমর্থ না হও, তা হলে অভ্যাসের সাহায্যে আমাকে পেতে চেষ্টা করো। যদি অভ্যাসেও সামর্থ না হও, তাহলে আমার কাজে চিত্ত স্থির করো। আমার প্রীতির জন্য কর্ম করলেও তুমি সিদ্ধি লাভ করবে। তাও যদি সম্ভব না হয়, তবে আমার শরণাপন্ন হয়ে, সংযত চিত্ত হয়ে, সমস্ত কর্মফল ত্যাগ করো। অভ্যাস থেকে জ্ঞান শ্রেষ্ট - জ্ঞান হতে ধ্যান শ্রেষ্ট - কর্মফল ত্যাগ ধ্যান হতেও শ্রেষ্ট। ত্যাগেই পরম শান্তি।
যে ব্যক্তি সর্বভূতে হিংসা শূন্য, মৈত্রী ভাব সম্পন্ন, সবাকার প্রতি করুণা, মমতা শূন্য, অহংকার শূন্য, সুখ-দুঃখ সমান জ্ঞান করেন, ক্ষমাশীল, সর্বদা তুষ্ট,দৃঢ় বিশ্বাসী, মন বুদ্ধি যার আমাতে অর্পিত - সেই যোগী আমার ভক্ত ও প্রিয়।
যার দ্বারা উদ্বেগ প্রাপ্ত হয় না, নিজেও কারো ব্যবহারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন না, অপরের আনন্দ লাভে যিনি অসহিষ্ণুনহেন, ভয় ও উদ্বেগ শূন্য - সে-ই আমার প্রিয়। ১২/১৬.....
যে ব্যক্তির আনন্দের প্রকাশ নেই, চিত্ত ক্লেশ শূন্য, কামনা হীন, শুভ অশুভ ফল ত্যাগী সে ভক্তই আমার প্রিয়। যিনি শত্রূ-মিত্র, মান- অপমানে, শীত-গ্রীষ্মে, সুখে-দুঃখে অবিচলিত, সর্ব বিষয়ে আসক্তিহীন, নিন্দা প্রসংশায় সম জ্ঞানকারী, স্থির চিত্ত, নির্দিষ্ট বাসস্থান শুন্য, সেই ভক্তই আমার প্রিয়। যারা ভক্তি পূর্বক মৎপরায়ণ হয়ে, এই ধর্ম-অমৃত পান করেন, তারাই আমার অত্যন্ত প্রিয়।
১২/২০.........
ভগবান কথা : ১৫/০৬/২০১৭
এই সংসারের সৃষ্টিভূমি বা প্ররোহভূমি ব'লে এই শরীরকে ক্ষেত্র বলা হয়। যিনি এটা জানেন তিনি ক্ষেত্রজ্ঞ। সর্বক্ষেত্রেই ক্ষেত্রজ্ঞ রূপে আমাকেই জানবে। ক্ষেত্র - ক্ষেত্রজ্ঞ জ্ঞানী প্রকৃত পক্ষে আমার জ্ঞান।
এই শরীর বা ক্ষেত্র কি ? কি তার রূপ - বিকার কি -ক্ষেত্রে কি প্রকার -তার প্রভাব কেমন -স্বরূপ কি প্রকার ; শ্রবণ করো। ঋষিগণ বৈদিক মন্ত্রে - ছন্দে এই ক্ষেত্র - ক্ষেত্রজ্ঞ সম্পর্কে জ্ঞান নির্ধারণ করেছেন।
পঞ্চ মহাভূত - ক্ষিতি, অপ ,তেজ,মরুৎ , ব্যোম।
দশ ইন্দ্রিয় - অহংকার,বুদ্ধি (চক্ষু, জিহ্বা, কর্ন, চর্ম, নাসিকা, বাক,পাণি, পাদ , পায়ু , উপস্থ ) ইত্যাদি। এর মধ্যে পাঁচ ইন্দ্রিয়ের রূপ, রস, গন্ধ,স্পর্শ, শব্দ এই পাঁচটি বিষয় ও ইচ্ছা,দ্বেষ,সুখ, দুঃখ,শরীর, চেতনা এবং ধৈর্য্য এইগুলি ক্ষেত্র ও তার বিকার।
নিরভিমান, দম্ভ,অহিংসা,ক্ষমা,সহ্য,সারল্য,গুরুসেবা,দেহ-মনের শুচিতা,মনস্থির করা,সকল বিষয়ে বৈরাগ্য, অহংকার-শুন্যতা, জন্ম,মৃত্যু, জরা ব্যাধি , সুখ-দুঃখ, দ্বেষ প্রভৃতিতে আসক্তিহীন, স্ত্রী-পুত্র-গৃহে অনাসক্ত,ইষ্ট -অনিষ্টে সমজ্ঞানী, আমাতে একনিষ্ঠ ভক্তি, নির্জনে বাসকারী, আত্মতত্ব ও মোক্ষ বিষয়ে সদা উপলব্ধি, এই গুলো হলো জ্ঞান। এর বিপরীতে যা কিছু সবই অজ্ঞান।
জ্ঞেয় হচ্ছে পরমব্রহ্ম। ব্রহ্মকে জানলে পরম আনন্দ লাভ হয়। অনাদি পরব্রহ্ম সৎ বা অসৎ নহেন। ১৩/১৩.....
সর্বত্রই ব্রহ্মের হস্ত, পদ,মস্তক, মুখ ও কর্ন। তিনি বিশ্বব্রম্মান্ড ব্যাপী বিরাজিত। তিনি সর্ব ইন্দ্রিয়ের গুনের আভাস বা অধিকারী আবার সর্ব ইন্দ্রিয়-বিবর্জিত। তিনি কোনো কিছুতাই আসক্ত নয় আবার সর্ব গুনের আধার। নির্গুণ অথচ গুনের ভোক্তা। তিনি সর্ব ভূতের অন্তরে অবস্থিত।তিনি স্থাবর-জঙ্গম অর্থাৎ অচল আবার সচল রূপে বিরাজিত। তিনি সূক্ষ্ম হতে সূক্ষতর, তিনি দুরস্ত হয়েও নিকটে অবস্থিত। সর্বভূতে তিনি যুক্ত অথচ অবিছিন্ন, অচঞ্চল। তিনি সর্ব ভূতকে পালন পোষন করেন, প্রলয়কালে গ্রাস করেন। পুনরায় সৃষ্টিকালে বিভিন্নরূপে প্রকাশিত হন। তিনিই সকালের মূল। জ্যোতিষ্কগনের তিনিই জ্যোতি। তিনি তমোরূপ অন্ধকারের অতীত। তিনি জ্ঞান; তিনি জ্ঞেয় ; আবার তিনিই জ্ঞানগম্য। তিনি সর্ব ভূতের হৃদয়ে অবস্থিত। আমার ভক্তগণ বিশেষরূপে এসব জেনে আমার স্বরূপ অবগত হন বা আমাকে প্রাপ্ত হন।......১৩/১৯.....
ভগবান কথা : ১৭/০৬/২০১৭
প্রকৃতি ও পুরুষ অনাদি। গুন্ সকল প্রকৃতি হতে জাত। কার্য্য, কারন ( শরীর, ইন্দ্রিয় ) উভয়ের হেতু প্রকৃতি। সুখ-দুঃখের হেতু ভোগ। আবার ভোগের হেতু পুরুষ। পুরুষ প্রকৃতিতে অবস্থান করে সুখ দুঃখ অর্থাৎ প্রকৃতির গুন্ ভোগ করে। এই গুন্ সুমুহের সঙ্গই পুরুষ সৎ অসৎ যোনিতে জন্ম গ্রহণ করে। সকল দেহেই পরম পুরুষ বিরাজিত। তিনি উপদেষ্টা বা সাক্ষী। তিনিই অনুমানতা অর্থাৎ অনুমতিদাতা। তিনিই ভর্তা , ভোক্তা,মহেশ্বর। তিনিই পরম আত্মা।
যিনি প্রকৃতি ও পুরুষের এই সকল গুনের কথা জানেন তিনি যে অবস্থায়ই থাকুন না কেন, দেহান্তে তাঁর পুনর্জন্ম হয় না।
কেই ধ্যান যোগের সাহায্যে,কেউ জ্ঞান যোগের সাহায্যে , কেউ বা কর্মযোগের সাহায্যে আত্মাকে দর্শন করেন। আবার কেউ এই সমস্ত ভাব না জেনে শুধু অপরের মুখে শুনে তার উপাসনা করেন। এবং এতেই তিনি মৃত্যুময় সংসার অতিক্রম করেন।
স্থাবর জঙ্গম, জগতে যা কিছু পদার্থের উৎপত্তি হয় ,সে সকলই ক্ষেত্রে-ক্ষত্রজ্ঞ সংযোগেই হয়। ১৩/২৭.......
ভগবান কথা : ১৮/০৬/২০১৭
যিনি সমভাবে, সর্বভূতে বিরাজিত ও বিনাশশীল পদার্থে অবিনাশী আত্মাকে দর্শন করেন, তিনিই সমদর্শী এবং পরমেশ্বরকে তিনিই যথার্থ রূপে জানেন। সর্বভূতে সমানভাবে যিনি ঈশ্বরকে সবত্র ব্যাপী বিরাজমান দেখে আত্মহিংসা মুক্ত, তিনিই মোক্ষ লাভ করেন। সমস্ত কার্যই করেন প্রকৃতি আত্মা অকর্তা ও নিষ্ক্রিয় এইরূপ যিনি দর্শন করেন এবং বুদ্ধির সাহায্যে বুঝতে পারেন - তিনিই সত্যদ্রষ্টা। ...১৩/৩০....
ভগবান কথা : ১৯/০৬/২০১৭
পৃথক পৃথক ভূত সকলকে যিনি আত্মাতে স্থিত জানেন, সৃষ্টি সময়ে পুনরায় ভুতগন আত্মা হতে পৃথক হন - এই তত্ব যিনি জ্ঞাত হন তিনিই ব্রহ্মত্ব লাভ করেন। অনাদি, নির্গুণ এবং অব্যয় বলে, এই দেহে অবস্থান করেও তিনি কিছুই করেন না। তাই তিনি নির্লিপ্ত। সর্বব্যাপী আকাশ যেমন সকল বস্তূতে ব্যাপ্ত হয়েও সূক্ষ্ম বলে সে কিছুতে লিপ্ত হয় না। তেমনি আত্মা সর্ব প্রকার দেহে থেকেও নির্লিপ্ত থাকেন। একমাত্র সূর্য যেমন বিশ্ব প্রকাশ করেন তেমনি ক্ষেত্রী অর্থাৎ আত্মা সমস্ত ক্ষেত্রকে প্রকাশ করেন। যারা ক্ষেত্র - ক্ষেত্রজ্ঞের পার্থক্য এবং ভূত ও প্রকৃতি হতে মুক্তিলাভের উপায় জ্ঞানদৃষ্টির দ্বারা উপলব্ধি করেছেন - তারাই পরমাগতি লাভ করেন। ১৩/৩৫....
ভগবান কথা : ২০/০৬/২০১৭
ভগবান বলছেন : সকল যোনিতে যে দেহ উৎপত্তি হয়, মহৎ ব্রহ্ম অর্থাৎ প্রকৃতি তাদের জননী, আর আমিই বীজপ্রদ পিতা।
সত্ব, রজঃ, তমঃ এই ত্রিগুন প্রকৃতি হতে জাত। এই ত্রিগুন নিত্য আত্মাকে আবদ্ধ করে রাখে। এই ত্রিগুণের মধ্যে সত্ত্বগুণ নির্মল। এই সত্ত্বগুণ প্রকাশক ও মলিনতা শুন্য। এই সত্ত্বগুণ-ই জীবকে সুখের আসক্তি ও জ্ঞানের আসক্তিতে সংসারে আবদ্ধ করে রাখে।
রজগুন আসক্তিময় ও পিপাসাময়। রজগুনে কামনা জন্মে ও জীবকে আসক্তি দ্বারা কর্ম বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে।
অজ্ঞানতা হতে তম গুনের সৃষ্টি। তমঃগুণ ভ্রান্তি কারক। এই গুন্ জীবকে প্রমাদ, আলস্য, নিদ্রা দ্বারা জীবকে আবদ্ধ করে।
সত্বগুন্ জীবকে সুখ দান করে। রজোগুণ কর্মে প্রবৃত্ত করে। তমগুণ জীবের জ্ঞানকে আচ্ছন্ন করে ভ্রমে পতিত করে। কোনো কোনো সময় সত্ত্বগুণ - রজঃ ও তমোগুণকে অতিক্রম করে প্রবল হয়ে উঠে। ঠিক তেমনি কখনো রজঃগুন -সত্ব ও তম গুনকে অতিক্রম করে প্রবল হয়। আবার কোনো কোনো সময় তম গুণও
সত্ব ও রজ গুনকে অতিক্রম করে প্রবল হয়ে ওঠে।
যে সময় সর্বদ্বার অর্থাৎ ইন্দ্রিয় দ্বারা দেহে জ্ঞান প্রকাশ পায় - তখনি সত্বঃগুন বৃদ্ধি হয়েছে জানবে।
রজঃ গুণ বৃদ্ধিতে লোভ, কর্মে প্রবৃত্তি, অশান্তি ইত্যাদি লক্ষ্মণ প্রকাশ পায়।
তমঃগুণ বৃদ্ধিতে বিবেকহীনতা, কর্তব্যহীনতা, আলস্য,অসাবধানতা এবং ভ্রম ইত্যাদি লক্ষ্মণ প্রকাশ পায়।
সত্বঃগুন্ বৃদ্ধিকালে যদি জীবের দেহান্ত হয়, তবে তত্ত্বজ্ঞানী ব্যক্তিগণ যে নিস্কলুষ স্থান প্রাপ্ত হন সেই জীব সেই স্থান প্রাপ্ত হয়।
রজঃ গুন্ বৃদ্ধিকালে যদি জীবের মৃত্যু হয় তবে তার মানব যোনিতেই জন্ম হয়।
তমঃগুণ বৃদ্ধিকালে যদি কারো দেহান্ত হয় তবে সে পশু-পক্ষী যোনিতে জন্ম গ্রহণ করে। ১৪/১৫......
ভগবান কথা : ২১/০৬/২০১৭
সাত্বিক কর্মের ফল নিস্কলঙ্ক। রাজসিক কর্মের ফল দুঃখদায়ক। তামসিক কর্মের ফল অজ্ঞানতা। সত্ব গুণান্বিত কার্যে প্রকৃত জ্ঞান লাভ। রজোগুণান্বিত কর্মে লোভ। তমগুনান্বিত কর্মে মোহ ও অজ্ঞানতা জন্মায়। সত্ব গুন্ ঊর্ধ্বলোকে ; তমোগুণ জঘন্য কাজের জন্য অন্ধকারলোকে ; ও রজগুণ মধ্য অর্থাৎ মৃত্যু লোকে প্রেরন করে। যিনি সমস্ত কর্ম বিষয়ে গুনকেই কর্তা জানেন ও আত্মাকে গুণাতীত বলে জানেন, তিনি আমার ভাব প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। জীব জীবিত কাল হতেই গুন্ তিনটিকে অতিক্রম করে জন্ম, মৃত্যু,জরা প্রভৃতি দুঃখ হতে মুক্ত হয়ে অমৃতত্ব লাভ করেন।
সত্ব, রজঃ, তম গুনের প্রকাশ অর্থাৎ মোহ,প্রবৃত্তি ইত্যাদি কর্মকে যিনি আত্মার কার্য মনে করেন এবং এতে প্রবৃত্ত বা নিবৃত্ত হন না - তিনিই গুণাতীত। যিনি সাক্ষী মনে করে উদাসীনের ন্যায় অবস্থিতি করেন, সত্বাদি তিন গুনের প্রভাবে তিনি প্রভাবিত হন না। তিনিই গুণাতীত। যিনি সুখ দুঃখ, প্রিয়-অপ্রিয়, লোষ্ট্র অর্থাৎ মাটির ঢেলা বা কাঞ্চন অর্থাৎ সোনা সমান চক্ষে দেখেন সেই ধীর ব্যাক্তিই গুণাতীত। মান-অপমান, শত্রূ-মিত্র -তে যিনি সমজ্ঞান করেন ; যিনি সর্বকর্মে উদ্যম পরিত্যাগ করেছেন, তিনিই গুণাতীত। একান্ত ভক্তি সহকারে যিনি আমাকে সেবা করেন, তিনিই এই তিন গুনকে অতিক্রম করে ব্রহ্মভাব প্রাপ্ত হন। আমিই ব্রহ্মে প্রতিষ্ঠা স্বরূপ অমৃত ও অব্যয়। আমি শাশ্বত ধৰ্ম এবং ঐকান্তিক সুখের নিদান।
১৪/২৭.......
ভগবান কথা : ২২/০৬/২০১৭
যার মূলদেশ ঊর্ধে, শাখা নিচে, এইরূপ সংসার অশ্বথ-বৃক্ষ অব্যয়। কর্মকাণ্ড যুক্ত ছ্ন্দযুক্ত চতুর্বেদ এর পাতা। যিনি এই সংসাররূপ অশ্বথ বৃক্ষকে অবগত হয়েছেন তিনিই বেদজ্ঞ।
এই সংসাররূপ বৃক্ষের শাখা সমূহ গুণত্রয় দ্বারা বর্ধিত ও বিষয়রূপ প্রবাল বিশিষ্ট, এর শাখা সমূহ উর্দ্ধে ও অধোদেশে বিস্তার করে আছে। এর মূল সকল অধোদিকে মনুষ্য লোকে প্রসারিত। এই মূল সকল ধৰ্মা-ধর্মরূপ কর্মের কারন।
জীবগন এই সংসার রূপ অশ্বথ-বৃক্ষের আকার উপলব্ধি করতে পারে না। এর আদি-অন্ত -মধ্যে ও স্থিতি দুর্বোধ্য। জ্ঞানীগণ অনাসক্তি রূপ অস্ত্রের সাহায্যে এর সুদৃঢ় মূল উচ্ছেদ করে ব্রহ্মকে জানতে পারেন। এদের আর ফিরে আসতে হয় না।যা হতে চিরন্তনী সংসারগাতি বিস্তার হয়েছে সে আদি পুরুষের আশ্রয় করে সেই পদকে অন্বেষণ করতে হয়। যারা অভিমান ও মোহ ত্যাগ করেছে, যারা অনাসক্ত, আত্মজ্ঞানময়, কামনা হীন, সুখ দুঃখরূপ দ্বন্দ্ব বিমুক্ত তারা পরম পদ প্রাপ্ত হয়। আমার যে পরম ধাম - যা প্রাপ্ত হলে জীবের আর পুনর্বার জন্ম হয় না,সে ধামকে সূর্য্য চন্দ্র অগ্নি প্রকাশ করতে পারে না। আমার সনাতন অংশ জীব হয়ে প্রকৃতিতে অবস্থিত মন ও পাঁচ ইন্দ্রিয়কে সংসারে আকর্ষণ করে। বায়ু যেমন পুষ্পাদি হতে সুগন্ধ কনা নিয়ে যায়, তেমনি জীব যখন এক দেহ থেকে অন্য দেহে প্রবেশ করে তখন এই সকলকে সঙ্গে নিয়ে যায়। জীবাত্মা চক্ষু, কর্ন, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক এবং মনকে আশ্রয় করে বিষয় ভোগ করে। জীব-আত্মা কিভাবে সত্বাদিগুন(সত্ব, রজঃ, তম) যুক্ত হয়ে দেহে অবস্থিত করে, বিষয় ভোগ করে, আবার কিভাবে দেহ হতে উত্ক্রান্ত হয় তা অজ্ঞ ব্যাক্তিগন দেখতে পায় না। কিনতু জ্ঞাননেত্র বিশিষ্ট জ্ঞানীগণ তা দেখতে পারেন।সমাহিতচিত্ত যোগীগণ আপনাতে অবস্থিত এই আত্মাকে দর্শন করে থাকেন। কিনতু অজিতেন্দ্রিয় ও অবিবেকী যারা তারা শত চেষ্টাতেও তাকে দেখতে পান না। যে তেজ সূর্যে অবস্থিত থেকে জগৎ উদ্ভাসিত করে এবং যে তেজ চন্দ্র ও অগ্নিতে বিদ্যমান - তা আমারই জানবে। ১৫/১২....
আমি পৃথিবীতে অনুপ্রবিষ্ট হয়ে আপন শক্তির সাহায্যে ভূত সকলকে ধারণ করে আছি। আমি রসময় সমরূপ ঔষধি সকল রসাত্বক করছি। বৈশ্বানর রূপে আমি সব জীবের দেহে আশ্রয় পূর্বক প্রাণ ও অপান চতুর্বিধ অন্ন (চর্ব্য-চুষ্য-লেহ্য-পেয় ) পরিপাক করি। সর্ব জীবের হৃদয় মাঝে আমি অধিষ্ঠিত। আমা হতেই জীব সকল স্মৃতি, জ্ঞান ও বিবেচনা শক্তি লাভ করে। আমি বেদের জ্ঞাতব্য বস্তূ, বেদান্ত কর্তা, ও একমাত্র বেদজ্ঞ। ত্রিলোকে ক্ষর অর্থাৎ বিনাশশীল ও অক্ষর অর্থাৎ অবিনাশী নামে দুটি পুরুষ বর্তমান। তার মধ্যে ক্ষর নামক পুরুষ সকল জীবে একীভূত আছেন। এবং অক্ষর পুরুষ কূটস্থ এবং নির্বিকার ভাবে আছেন। এই ক্ষর ও অক্ষর পুরুষ অপেক্ষা উত্তম পুরুষ হলেন পরম আত্মা। তিনি নির্বিকার হয়েও নিয়ন্তা রূপে তিন লোক ধারণ করে আছেন। ক্ষর -অক্ষর অর্থাৎ নশ্বর ও অবিনশ্বর পুরুষ অপেক্ষা আমি শ্রেষ্ট। সে জন্য বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড এবং বেদ সকলে আমাকে পুরুষোত্তম বলে থাকে। মোহো মুক্ত চিত্তে যিনি আমাকে পুরুষোত্তম বলে জ্ঞাত হন, সেই সর্বজ্ঞ পুরুষ আমারই ভজনা করেন। নিষ্পাপ পুরুষই এই গুহ্য কথা জানতে পারেন। .........১৫/২০....
ভগবান কথা : ২৩/০৬/২০১৭
ভয় শুন্যতা, চিত্ত শুদ্ধি,আত্মজ্ঞান নিষ্ঠা, কর্মযোগে তৎপরতা,দান, ইন্দ্রিয় সংযম, যজ্ঞ, শাস্ত্র অধ্যয়ন, তপস্যা, সরলতা, অহিংসা, সত্য, ক্রোধহীনতা,ত্যাগ, শান্তি, পরনিন্দা বর্জন,দয়া, লোভহীনতা, বিনয়, কুকর্মে লজ্জা, অ-চাপল্য , তেজস্বিতা, ক্ষমা, ধৃতি, শৌচ,অদ্রোহ,নিরভিমানিতা - এই সকল গুন্ গুলি জাতকের দৈব সম্পদ। ১৬/৩......
ভগবান কথা : ২৪/০৬/২০১৭
দম্ভ, দর্প ,অভিমান,ক্রোধ,নিষ্ঠূরতা ও অজ্ঞানতা এগুলি আসুরিক সম্পদ - জাত। দৈবী সম্পদ মোক্ষের হেতু। আসুরী সম্পদ বন্ধনের কারন। দুঃখ করো না তুমি দৈবীসম্পদ নিয়েই জন্ম গ্রহণ করেছো।
আসুরী প্রকৃতি সম্পন্ন ব্যক্তিগণ ধৰ্ম বিষয়ে প্রবৃত্তি কি - অধর্ম বিষয়ে নিবৃত্তি কি তা জানে না। তাদের মধ্যে শুচিতা, সদাচার, সত্য বলে কিছুই নাই। এই জগৎ অসত্য। ন্যায় - অন্যায় বলে কিছু নাই। ঈশ্বর বলে কিছু নাই।স্ত্রী - পুরুষের কামনাই সৃষ্টির কারণ। এইরূপ দৃষ্টি অবলম্বন করে বিকৃতি বুদ্ধি, নীচমন, উগ্রকর্মা, ও জগতের অহিতকার কার্যে প্রভাবিত করে। ..১৬/.৯....
এদের কামনা দুষ্পূরণীয়। দম্ভ, অভিমান ও গর্বের অধীন হয়ে মোহবশতঃ অসৎ কর্মে প্রবৃত্ত হয়। বিভিন্ন অশুচিতে অবস্থান করে।
কাম ভোগকে শ্রেষ্ট মনে করে এতেই মগ্ন থাকে। কামভোগকেই সার বস্তূ মনে করে। শত শত আশা-পাশে আবদ্ধ থাকে। কাম ক্রোধের বশবর্তী হয়ে অসৎ পথে অর্থ সঞ্চয়ে মন দেয়।
আজ আমার এই লাভ হলো , ভবিষ্যতে আমার এই মনোরথ পূর্ণ হবে। এই ধন আমার আছে -ভবিষ্যতে এই লাভ হবে। এই শত্রূ বধ করেছি - অপর সব শত্রূ -কেও বধ করবো। আমি সকলের প্রভূ। আমি সকল ভোগ সুখের অধিকারী। আমিই সিদ্ধ বা কৃতকৃত্য। আমি বলবান। আমিই সুখী। আমি ধনবান, আমি কুলীন, আমার তুল্য আর কে আছে ? আমি যজ্ঞ করবো, আমি দান করবো। এই ভাবে নানা মোহবশে, কামভোগে, আসক্ত চিত্ত হয়ে নরকে পতিত হয়ে থাকে। এরা নিজেদের বড়ো জ্ঞান করে। আর্থিক মান বশে গর্বিত হয়ে, আসুরিক দম্ভ সহকারে অবিধিপূর্বক নাম ও যশ লোভে বিধিহীন যজ্ঞের অনুষ্ঠান করে।
অহংকার, শক্তি, দর্প , কাম ও ক্রোধকে আশ্রয় করে যারা নিজদেহে ও পরদেহে আমার প্রতি হিংসা করে ও আমার নিন্দা করে। আমা - বিদ্বেষী সেই ক্রূর প্রকৃতি নরাধম দিগকে বার বার আমি আসুরি যোনিতে নিক্ষেপ করে - সিংহ -ব্যাঘ্র -সর্প ইত্যাদি যোনিতে নিক্ষেপ করি। এই সকল মূঢ়গন আসুরি যোনিতে জন্ম গ্রহণ করে জন্ম - জন্মান্তরে আমাকে প্রাপ্ত না হয়ে আরো অধম গতি প্রাপ্ত হয়। কাম, ক্রোধ, লোভ, এই তিন নরকের দ্বার স্বরূপ, ইহা আত্মার বিনাশ করে। সে জন্য এই তিনটি সর্বদা পরিত্যাগ করবে। ....১৬/২১....
নরকের দ্বার স্বরূপ কাম, ক্রোধ, ও লোভ। যে এই তিনটি হতে মুক্ত,সেই মুক্ত পুরুষ যদি আপন শ্রেয় সাধন জন্য জাগ্-যজ্ঞ তাপস্যাদির অনুষ্ঠান করে, তবে সে পরমাগতি লাভ করেন। যে শাস্ত্র বিধি ত্যাগ করে যথেচ্ছ ভাবে কাজ করে, সে কখনো সিদ্ধি লাভ করতে পারে না। সে কখনো সুখ বা পরমাগতি লাভ করে না। সে জন্য কর্তব্য বিষয়ে শাস্ত্রের উপদেশই মানবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করবে। ১৬/২৪.......
ভগবান কথা : ২৬/০৬/২০১৭
ভগবান বলছেন, দেহীদিগের তিন প্রকার নিষ্ঠা স্বভাবজাত। সাত্বিক,রাজসিক, তামসিক। সত্বার তারতম্য অনুযায়ী, দেহিগনের শ্রদ্ধা হয়ে থাকে। সত্ত্বগুণের ব্যক্তিগণ দেবতার অর্চনা করেন। রাজসিক ব্যক্তিগণ যক্ষ-রাক্ষসগনের পূজা করেন। তমোগুণের ব্যক্তিগণ ভূত প্রেতাদির পূজা করেন। যারা অশাস্ত্রীয় কঠোর তপস্যা করে, দম্ভ ও অহংকার বশে আসক্তি পরায়ন হয়, শক্তিশালী হয়ে দেহস্থিত ভূতগণকে ক্লেশ দেয় ও শরীরস্থ আমাকেও কষ্ট দান করে, তারা অসুর প্রকৃতির জানবে।
সকলের আহার, দান, যজ্ঞ ও তপস্যাও বিভিন্ন।
আয়ু, উদ্যম ,শক্তি, আরোগ্য, সুখ ও প্রীতি বর্দ্ধনকারী এবং সরস ও স্নিগ্ধ, যার ফল দেহ মধ্যে বহুকাল থাকে, যা খেলে আনন্দ হয় - তাই সাত্বিক আহার।
অধিক কটু, অতি অম্ল, অতি লবনাত্বক, অতি উষ্ণ,অতি রুক্ষ, অতি ঝাল, অতিরিক্ত বিদাহী এসব রাজসিক ব্যক্তির প্রিয়। এই খাদ্য দুঃখ, শোক ব্যাধির সৃষ্টি করে।
অনেক আগে প্রস্তূত খাদ্য, নিরস, বাসি দুর্গন্ধ যুক্ত, উচ্ছিষ্ট, অপবিত্র খাদ্য, তামসিক ব্যক্তির প্রিয়।
ফলাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করে এক মনে অবশ্য কর্তব্য জ্ঞানে শাস্ত্রবিধি অনুযায়ী যে যজ্ঞ করা হয় -সেটাই সাত্বিক যজ্ঞ বলে জানবে। ফলাকাঙ্ক্ষা এবং আপন মহত্ব ও দম্ভ প্রকাশন করে যে যজ্ঞ করা হয় তাই রাজসিক।
অশাস্ত্রীয় রূপে, অন্নদান না করে, যথাবিধি দক্ষিণা না দিয়ে, শ্রদ্ধাহীন ভাবে যে যজ্ঞ করা হয় তাই তামসিক যজ্ঞ।
দেবতা, ব্রাহ্মণ গুরু ও জ্ঞানীগণের পূজা, সূচিত সরলতা, ব্রহ্মচর্য ও অহিংসা এই সকল শারীরিক তপস্যা। অনুদ্বেগকর বাক্য, সত্য অথচ প্রিয় বাক্য বেদ অধ্যায়নে যুক্ত থাকাকে বাচিক তপস্যা বলে। .......১৭/১৫....
মনের প্রসন্নতা, সৌম্য ভাব, মৌনতা, আত্মনিগ্রহ, এবং অন্তরশুদ্ধি, এই সকল মানসিক তপস্যা। ফলের কামনা ত্যাগ করে, একাগ্র মনে
পরম শ্রদ্ধা সহকারে এই তিন প্রকার অনুষ্ঠানকেই সাত্বিক তপস্যা বলে। লোকের প্রশংসা লাভ ও পূজা পাবার জন্য যে তপশ্চরণ করা হয় তাই রাজসিক তপস্যা। অবিবেকী ব্যক্তি দুষ্টবুদ্ধি বশে শরীর প্রভৃতির পীড়া জন্মিয়ে বা অপরের ক্ষতিকরার উদ্দেশে যে তপস্যা করা হয়, তাই তামসিক তপস্যা। দান করা কর্তব্য মনে করে, প্রত্যুপকারীকে দেশ -কাল -পাত্র বুঝে যে দান করা হয়, তাকে সাত্বিক দান বলে। প্রত্যুপকারের আশায়,ফল কামনায়,বা মনের ক্লেশে, যে দান করা হয় - তাকে রাজসিক দান বলা হয়।
ওঁ-তৎ-সৎ এই তিনটি ব্রহ্মের নাম। এর সাহায্যে ব্রহ্মা সৃষ্টির প্রথমে
যজ্ঞ কর্তা ব্রাহ্মণ ও যজ্ঞের হেতু বেদ সৃষ্টি করেছিলেন। এই কারণে "ওঁ" ওঙ্কার শব্দ উচ্চারণ পূর্বক সর্বদা শাস্ত্র-উক্ত যজ্ঞ-দান ও তপস্যা সম্পন্ন করা কর্তব্য। "তৎ" এই শব্দ উচ্চারণ করে মুক্তিকামীগন ফল কামনা ত্যাগ করে নানা প্রকার যজ্ঞ, তপস্যা দান প্রভৃতি ক্রিয়া সম্পাদন করেন। সমস্ত বস্তূর ব্রহ্ম ভাব নির্দেশে এবং সাধুত্বে "সৎ" শব্দ প্রযুক্ত হয়। কর্মেও "সৎ" শব্দ উচ্চারণ করা হয়। যজ্ঞ, তপস্যা, ও দানে যে নিষ্ঠা তাতেও "সৎ" শব্দ ব্যবহার করা হয়। ঈশ্বরের উদ্দেশে যে কার্য করা হয় তাকেও "সৎ" বলা হয়।
অশ্রদ্ধাপূর্বক যে যজ্ঞ, দান, তপস্যা ও অন্যান্য যা কিছু অনুষ্ঠিত হয় তা সকলই অসৎ বলে জানবে। এই সব অসৎ পথ-আশ্রয়ীর
ইহ-লোকে, পরলোকে কোথাও কোনো শুভ ফল হয় না। ১৭/২৮....
ভগবান কথা: ০১/০৭/২০১৭
জ্ঞানীগণ কাম্য সকল ত্যাগকেই সন্যাস বলে জানেন। বিচক্ষণ ব্যাক্তিগন কর্মফল ত্যাগকেই সন্যাস বলে জানেন।
ত্যাগ তিন প্রকার। যজ্ঞ, দান, ও তপস্যা-র কর্মফল ত্যাগ করা উচিত। নিত্যকর্ম ত্যাগ করা উচিত। মোহ বশতঃ নিত্য কর্ম ত্যাগকে তামসিক ত্যাগ বলে। কস্টকর মনে করে, বা দেহক্লেশের ভয়ে যে কর্মা ত্যাগ করে তা রাজসিক ত্যাগ। এই ধরনের ত্যাগে কোনো ফল লাভ হয় না।
কর্তব্য জ্ঞানে যে নিত্য কর্ম করা হয় - সে কর্মের ফল ত্যাগ করাকেই সাত্বিক ত্যাগ বলা হয়। সত্বগুনযুক্ত, মেধাবী, সংশয়হীন ত্যাগী পুরুষ কস্টকর কর্মে বিরক্ত বা সুখকর কার্যে প্রীতি অনুভব করেন না। পৃথিবীতে দেহ-সকল কর্ম ত্যাগ করতে পারে না। তবে কর্মফল ত্যাগী ব্যক্তি প্রকৃত ত্যাগী বলে অবহিত হয়।
অত্যাগী বা সকাম ব্যাক্তিগন মির্ত্যুর পর - ইষ্ট, অনিষ্ট ও ইষ্ট-অনিষ্ট মিশ্রিত, এই ত্রিবিধ কর্ম-ফল প্রাপ্ত করেন।
সর্ব কার্য সিদ্ধির জন্য সাংখ্যে এবং বেদান্তে পাঁচটি কারন বর্ণনা করা হয়েছে। দেহ, অহংকার, ইন্দ্রিয়, প্রাণ-অপান ও দৈব - এই পাঁচটি কারন। দেহ বাক্য ও মনের দ্বারা মানুষ ধৰ্ম বা অধর্ম যা কিছুই করুক - এই পাঁচটি সকলের হেতু। সে জন্য এই পাঁচটিকে না জেনে যে মানুষ আপনাকে কর্তা মনে করে - সে দুর্মতি সত্য জানতে পারে না। আমি কর্তা - বলে যার অভিমান নেই, যার বুদ্ধি কর্মফলে আসক্ত হয় না তিনি সমস্ত লোক হত্যা করলেও, কিছুই হত্যা করেন না এবং তার ফলে তিনি আবদ্ধ হন না।
জ্ঞান, জ্ঞেয়, ও পরিজ্ঞাতা এই কর্ম -প্রবৃত্তির হেতু। করণ অর্থাৎ উপায়। কর্মা, ও কর্তা এই তিনটি ক্রিয়ার আশ্রয়। সাংখ্য দর্শনে জ্ঞান,কর্ম ও কর্তাকে গুনভেদে তিন প্রকার বলা হয়েছে। যে জ্ঞানের দ্বারা পরস্পর বিভক্ত ভাবে অবস্থিত সর্বভূতে এক নিত্য অদ্বয় বস্তুর দর্শন হয়, তাকে সাত্বিক জ্ঞান বলে জানবে। যে জ্ঞানের সাহায্যে ভিন্ন ভিন্ন ভূত সমূহে পৃথক পৃথক ভাবের অনুভব হয়, তা রাজসিক জ্ঞান। যে গুণের সাহায্যে যুক্তি প্রমান শূন্য প্রাণী স্থুল পদার্থে বিশ্ব জগতের তত্ব আরোপ করে তাতে আসক্ত হয়, সেই জ্ঞান তামসিক জ্ঞান।
যে ব্যক্তি অনাসক্ত ভাবে অনুরাগ বা বিদ্বেষ বর্জিত হয়ে অবশ্য করণীয়রূপে যে বিহিত কর্ম করেন, তাকে সাত্বিক কর্ম বলা হয়।
কামনার বশে অহংকার পূর্বক অতি কষ্টে যে কর্মের অনুষ্ঠান করা হয়, তাকেই রাজসিক কর্ম বলা হয়। অপরিণাম দর্শী হয়ে, বিত্ত ক্ষয় পূর্বক হিংসা ও সামর্থ বিচার না করে, মোহবশে যে কর্মা করা হয় তাকেই তামসিক কর্মা বলা হয়।
আসক্তিহীন,অহংকার শূন্য, ধৈর্য্যশীল এবং উৎসাহযুক্ত -সিদ্ধি-অসিদ্ধিতে নির্বিকার কর্তাকে সাত্বিক কর্তা বলে। অনুরাগ পরায়ণ , কর্মফলাকাঙ্খী, লোভী, হিংসুক,অশুচি আনন্দ ও শোকযুক্ত কর্তাকে রাজসিক কর্তা বলা হয়। একাগ্রহীন,অবিনয়ী প্রতারক,মূঢ়, ক্রূর, বিষাদ যুক্ত অলস ও দীর্ঘসূত্রী কর্তাকে তামসিক কর্তা জানবে।
যে বুদ্ধির সাহায্যে মানুষ প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তি, কার্য্য ও অকার্য্য, ভয় ও অভয় বন্ধন ও মুক্তি সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান লাভ করে, তাকে সাত্বিক বুদ্ধি বলা হয়। যে বুদ্ধির দ্বারা ধৰ্ম অধর্ম, কর্তব্য অকর্তব্য যথাযথ জ্ঞান হওয়া যায় না, তাই রাজসিক বুদ্ধি। যে বুদ্ধি দ্বারা ধর্মকে অধর্ম জ্ঞান হয়, কর্তব্যকে অকর্তব্য এইরূপ মিথ্যা জ্ঞান দান করে, তা তামসিক বুদ্ধি।
যে ব্যভিচারিণী ধৃতির সাহায্যে মন-প্রাণ ইন্দ্রিয়ের ক্রিয়া সকলকে সংযত করা হয় তাকে সাত্বিক ধৃতি বলে। যে ধৃতির দ্বারা ধর্ম অর্থ-কাম প্রধান বলে স্থির হয় ও যাতে ফালাকাঙ্ক্ষা জন্মে,তাকে রাজসিক ধৃতি বলে। যে ধৃতির দ্বারা অবিবেকী ব্যক্তি নিদ্রা-ভয়-শোক-বিষাদ ও গর্ব কখনো ত্যাগ করে না, সেটাই তামসী ধৃতি।
যা প্রথমে বিষের মতো মনে হয় - অথচ পরিণামে অমৃতের মতো মনে হয় , আত্মবুদ্ধির প্রসন্নতা জনিত সে সুখকে সাত্বিক সুখ বলে।
ইন্দ্রিয়-সহ বিষয় সংযোগে যে সুখ প্রথমে অমৃতের মতো মনে হয় কিনতু পরিণামে বিষের ন্যায় মনে হয় তাকে রাজসিক সুখ বলে।
যে সুখ প্রথমে ও পরিণামে সর্বদাই মোহ জন্মায়, নিদ্রা, আলস্য ও প্রমাদ হতে সৃষ্ট সে সুখ তামস।
পৃথিবীতে বা স্বর্গলোকে দেবগনের মধ্যেও এমন কেহ নেই যিনি প্রকৃতিজাত এই তিনটি গুন্ থেকে মুক্ত। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্রের কর্ম-সকল তাদের স্বভাব গুন্ অনুসারে ভাগ করা হয়েছে।মানসিক শান্তি, ইন্দ্রিয় দমন, তপস্যা, শুচিতা, ক্ষমা, সরলতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান এই নয়টি ব্রাহ্মণের স্বভাবজাত কর্ম। পরাক্রম, তেজ, ধৈর্য্য, দক্ষতা,যুদ্ধে অপলায়ান, দান ও সকলকে আয়ত্বে রাখার ক্ষমতা - এগুলো ক্ষত্রিয়ের গুন্। কৃষিকার্য, গো ইত্যাদি পশু পালন,বাণিজ্য এগুলো বৈশ্যের স্বভাব জাত কর্ম। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যের সেবা করাই, শুদ্রের স্বভাব জাত কর্ম। আপন আপন কর্মে নিষ্ঠাবান ব্যক্তি কর্মে ব্যাপৃত থাকলে সিদ্ধিলাভ করে।
যার ইচ্ছেয় মানুষ কর্মে প্রেরণা লাভ করে ও যিনি সর্বব্যাপ্ত আছেন , তাকে উপাসনা করলে সর্বসিদ্ধি হয়। নিয়মিত ভাবে পরধর্ম অনুষ্ঠান করার চেয়ে, নিজ ধৰ্ম অঙ্গহীন হলেও প্রসংশনীয়। করেন মানুষ স্বাভাভি জাত কর্ম করলে পাপ ভোগী হয় না। সহজাত কর্ম দোষযুক্ত হলেও, ত্যাগ করা অনুচিত। করেন অগ্নি যেমন ধুম - আবৃত থাকে, তেমনি কর্ম দোষাবৃত থাকে। যিনি সকল বিষয়ে নিরাসক্ত, জিতেন্দ্রিয়, যার কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই, তিনি সন্যাসের সাহায্যে নিষ্কাম কর্ম ত্যাগ করে, সকল কর্ম বন্ধন মুক্ত হন।
শুদ্ধবুদ্ধি যুক্ত হয়ে, সাত্বিক ধৈর্য্য সহকারে। স্থির চিত্তে, সাব্দাদি বিষয় সমূহ ত্যাগ করে, রাগ দ্বেষ ত্যাগ পূর্বক নির্জনে মিতভোজী হয়ে, বাকি, মন, প্রভৃতিকে সংযত করে ধ্যান ও বৈরাগ্য আশ্রয় করে, অহংকার, বল, দর্প , কাম, ক্রোধ ও পরিগ্রহ পরিত্যাগী, এই রূপ মমতা ও বিক্ষেপ শুণ্য ব্যক্তি ব্রহ্ম সাক্ষাৎকার লাভ করেন। ব্রহ্মভাব প্রাপ্ত, নির্মলচিত্ত ব্যক্তির শোক বা আকাঙ্খা নেই। সকল ভূতে সামা ভাবাপন্ন হয়ে আমাতে পরমাভক্তি লাভ করেন। সেই পরমভক্তির জন্য আমাকে সর্ব্যাপী ও সচ্চিদানন্দ স্বরূপ, তা জানতে পারেন। এবং তা জেনে জ্ঞান বশে আমাতেই প্রবেশ করেন। আমার শরণাপন্ন হয়ে সর্বদা সব প্রকার কর্ম করে, আমার প্রসাদে সর্বদা শাশ্বত অব্যয় পদ লাভ করেন। ......১৮/৫৬....
ভগবান বলছেন - তুমি মনের সাহায্যে আমা পরায়ণ হয়ে, মনে মনে সকল কর্ম আমাতে সমর্পণ করে, বুদ্ধিযোগ আশ্রয়ে অমতেই স্থির করো। আমাতে চিত্ত স্থির হলে, আমার কৃপায়, সব রকম দুর্গম পথ পার হতে সক্ষম হবে। আর যদি অহংকার বশে, আমার কথা না শোনো, তবে তুমি বিনষ্ট হয়ে যাবে। যদি অহংকার বশে যুদ্ধ করবো না বলে স্থির সংকল্প হও, কিন্তু জন্মজাত পূর্ব সংস্কার, তোমাকে যুদ্ধে উৎসাহিত করবে। মোহবশে যে কাজ তুমি করতে ইচ্ছা করছো না, তাও স্বভাব জাত আপন কর্মের বশে তোমাকে করতে হবে। সর্বজীবের হৃদয়ে বিরাজিত ঈশ্বর মায়ায় মোহিত করে, যন্ত্রের ন্যায় কাজ করাছেন বা ঘোরাচ্ছেন। সর্বপ্রকারে তুমি তারই শরণাপন্ন হও। তার প্রসাদে তুমি পরম শান্তি ও শাশ্বত নিত্যধাম প্রাপ্ত হবে। আমি তোমাকে গুহ্য থেকে গুহ্যতর জ্ঞান সম্পর্কে উপদেশ দিলাম। আমার দেওয়া জ্ঞানের সম্যক বিবেচনা পূর্বক - যা ইচ্ছে তাই করো।
শ্রী ভগবান অর্জুনকে বলছেন : তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয়। তাই তোমার মঙ্গলের জন্য আমি আবার সবচেয়ে গুহ্যতম কথা তোমাকে বলছি - শোনো।
তুমি আমাগত চিত্ত হও। আমাকে ভক্তি করো। আমার পূজা করো। আমাকে নমস্কার করো। তাতে আমার প্রসাদে আমাকেই প্রাপ্ত হবে। তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয়। সে জন্য তোমার কাছে আমি সত্য অঙ্গীকার করছি যে, অবশ্যই তুমি আমাকে পাবে। তুমি সকল ধৰ্ম ত্যাগ করে একমাত্র আমারি শরণাপন্ন হও, আমি তোমার সকল পাপ মুক্ত করবো।
আমার এই সকল কথা স্বধর্মানুষ্ঠানহীন, অভক্ত, শুশ্রূষা রহিত ব্যক্তিকে বলবে না। যে ব্যক্তি অসূয়া পরবশ হয়ে আমার নিন্দা করে, তাকে বোলো না। আমার ভক্তবৃন্দের কাছে, এই পরম গুহ্য কথা যে বলবে তিনি আমাতে সর্বোত্তম ভক্তি রেখে পরাগতি লাভ করবেন।
মানুষের মধ্যে তার চেয়ে আমার প্রিয় আর কেউ নেই,ভবিষ্যতেও হবে না। যে ব্যক্তি আমাদের এই ধর্মালোচনা অধ্যয়ন করবেন, তিনি জ্ঞানরূপ যজ্ঞ দ্বারা আমার পূজা করবেন। এটাই আমার মত। যে ব্যক্তি শ্রদ্ধাযুক্ত হয়ে, ঘৃণা দ্বেষ শুন্য হয়ে ইহা শ্রবণ করেন, তিনিও পাপ হতে মুক্ত হয়ে পুণ্যাত্মা গনের প্রাপ্য শুভলোক প্রাপ্ত হন।
ভগবান বলছেন : হে পার্থ অর্থাৎ অর্জুন তুমি একান্ত মনে আমার সকল কথা শুনেছো তো ? হে ধনঞ্জয় ! (ধনকে যিনি জয় করেছেন ) তোমার অজ্ঞান জনিত মোহ দূরীভূত হয়েছে তো ?
ভগবান মুখনিঃসৃত বাক্য শ্রী গীতায় আর নেই। এর পরে -
অর্জুন বলছেন : হে অচ্যুত ! তোমার প্রসাদে আমার মোহো দূর হয়েছে। আমি আমার আত্ম স্মৃতি ফিরে পেয়ে স্থির সংকল্প হয়েছি। আমার আর কোনো সংশয় নেই। এখন থেকে আমি তোমার বচন বা নির্দেশ পালন করবো।
এই অব্দি বলে সঞ্জয়, যিনি দিব্য দৃষ্টি-বলে এই অদৃশ্যপূর্ব ঘটনাবলী দেখছিলেন এবং রাজা ধৃতরাষ্ট্রকে আনুপূর্বক বর্ণনা করছিলেন - তিনি বললেন : হে মহারাজ ! মহাত্মা বাসুদেব ও অর্জুনের এই অদ্ভুত রোমহর্ষক কথোপকথন আমি শুনলাম। ব্যাসের প্রসাদে আমি স্বয়ং যোগেশ্বের শ্রীকৃষ্ণের শ্রীমুখে এই অতিগুহ্য যোগের কথা শুনেছি। হে রাজন ! শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের সেই এটি অদ্ভুত বিশ্বরূপ স্মরণ করে, আমার মহা বিস্ময় হচ্ছে। আমি বার বার রোমাঞ্চিত কলেবর হচ্ছি। যেখানে যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ,যেখানে ধনুর্ধার পার্থ, সেখানে শ্রী,জয়,ঐশর্য্য, নীতি বিরাজিত।এই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
ভগবানে চিত্ত নিবিষ্ট ও ভগবানের স্মরণ নিয়ে কি ভাবে ভগবানকে জানতে পারবে সেটা শোনো। শাস্ত্রের তত্ত্বজ্ঞান - যা জ্ঞাত হলে আর কিছুই জানবার থাকে না। হাজারের মধ্যে এক ব্যক্তি আত্মজ্ঞান লাভার জন্য চেষ্টা করেন। আবার হাজার হাজার আত্মজ্ঞান সম্পন্ন মানবের মধ্যে জন্মার্জিত সুকৃতির বশে হয়তো মাত্র একজন ব্যক্তি ভগবানের প্রকৃত স্বরূপ জানতে পারে।
ভূমি, জল, অনল, বায়ু, আকাশ, মন, বুদ্ধি ও অহংকার -ইহা ভগবানের ভিন্ন ভিন্ন আট প্রকার প্রকৃতি। ভগবানের এই আট প্রকার প্রকৃতি অপরা বা জড়। এগুলো জড় তাই নিকৃষ্ট। এছাড়া ভগবানের একটা পরা বা শ্রেষ্ট প্রকৃতি আছে। সেই পরা চেতনরূপ প্রকৃতিই জগৎকে ধারণ করে আছে। সকল প্রাণীই এই পরা ও অপরা প্রকৃতি হতে উদভুত । প্রকৃতি সহ সমস্ত জগতের সৃষ্টি ও প্রলয়ের কারণ স্বয়ং ভগবান।
ভগবান কথা (৭/৬/২০১৭)
ভগবান বলছেন : আমার অপেক্ষা শ্রেষ্ট কিছুই নাই। মালায় যেমন মনিসকল গাঁথা থাকে - তেমনি আমাতেই এই বিশ্ব জগৎ বিরাজিত আছে। জলের মধ্যে আমি রস স্বরূপ। আমি সূর্য ও সূর্যের প্রভাস্বরূপ। আমি সর্ববেদের প্রণব (ওম ) আকাশে শব্দ, মানবের মধ্যে আমি পুরুষকার। পৃথিবীর পবিত্র গন্ধরূপে,সূর্যের তেজরূপে, সর্বভূতে জীবনরূপে, তপস্বীদের তাপস্যারূপে আমিই বিরাজিত। সর্বভূতের আমি বীজ স্বরুপ, বুদ্ধিমানের বুদ্ধি, তেজষ্মীগণের আমিই তেজ।বলবান্গনের কামরাগ বর্জিত বল আমি। প্রাণীকুলের ধৰ্ম অবিরোধী শাস্ত্রসম্মত কার্য্য আমিই জানবে। সাস্ত্বিক, রাজসিক, ও তামসিক ইত্যাদি যে সমস্ত ভাব বর্তমান,আমা হতেই তাহার উৎপত্তি। কিনতু আমি এতে লিপ্ত নই। এসকল আমাতেই লিপ্ত।
এই ত্রিগুণাত্মক ভাবদ্বারা জগৎ মোহিত। সেই জন্যই ত্রিগুণাতীত চির অক্ষয় এবং আন্দস্বরূপ আমাকে বিশ্বজগত জানতে সক্ষম হয় না।
ত্রিগুণাত্মক আমার দৈবীমায়া, অতিক্রম করা খুবই কষ্টকর । কিনতু অনন্য শরণ হয়ে যারা আমাকেই ভজনা করে, তারাই শুধুমাত্র এই দুস্তর মায়া অতিক্রম করতে পারে। মায়ায় আচ্ছন্ন যাদের শাস্ত্র-উপদেশ-জাত জ্ঞান লোপ হয়েছে, তারা সবাই নরাধম-দুষ্কৃতকারী-মূঢ়। আমাকে তারা পায় না।
আর্ত,আত্মজ্ঞান-লাভেচ্ছু, অর্থকামী, ও জ্ঞানী এই চার প্রকার সুকৃতি পরায়ণ মানুষই আমার ভজনা করে। আবার এই চার প্রকার মানুষের মধ্যে আমা-পরায়ণ জ্ঞানীই শ্রেষ্ট। আমি জ্ঞানীর অত্যন্ত প্রিয় আবার জ্ঞানীও আমার অত্যন্ত প্রিয়। এই চার প্রকার পুণ্যবানই উদার। এদের মধ্যে জ্ঞানীই আমার আত্মার স্বরূপ। জ্ঞানীই সর্বশ্রেষ্ট পরাগতি স্বরূপ আমাকেই আশ্রয় করে। জ্ঞানী বহু জন্মের পর - শেষে বুঝতে পারে একমাত্র বাসুদেবই সব অর্থাৎ আমিই সব। সুতরাং এইরকম মহাপুরুষ জগতে দুর্লভ।
কামনার প্রভাবে যার জ্ঞান লুপ্ত, সেইসব লুপ্ত বিবেকীগন আপন আপন প্রকৃতির বশবর্তী হয়ে অন্যান্য দেবতার আরাধনা করে থাকেন। যে সমস্ত ভক্ত শ্রদ্ধা সহকারে যে যে দেবতার উপাসনা করে, আমি সেই সব দেবতাতেই তাঁর অচলা ভক্তি প্রদান করে থাকি। যে সব ভক্ত অচলা শ্রদ্ধাসহকারে যে যে দেবতার আরাধনা করে,সে সে দেবতা তাদের সকল বাসনা পূর্ণ করেন। কারন আমা কর্তৃক সেই সকল বিহিত হয়।
যাদের দৃষ্টি সীমাবদ্ধ, সেই সকল ভক্তদের দেব-আরাধনা ক্ষনস্থায়ী হয়। কারন, বিভিন্ন দেবতার আরাধনাকারী দেব লোকে গমন করেন। আমার ভক্তগণ কিনতু আমাকেই লাভ করেন।
যাদের অল্পবুদ্ধি, তারা আমার অব্যয় পরমভাব জ্ঞাত না হয়ে, মায়াতীত আমাকে, ব্যক্ত অর্থাৎ নানারূপে জন্ম গহন করি, এইরূপ মনে করে।
আমি মহামায়ায় আচ্ছন্ন থাকায় সবার নিকট প্রকাশিত নয়। সেই জন্য মূঢ় ব্যক্তিগণ আমাকে জন্মরহিত ও অব্যয় বলে বুঝতে পারে না।
অতীতে, বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে যা কিছু ঘটেছে, ঘটছে ও ঘটবে তা সবই আমি জানি, কিনতু আমাকে কেউ জানেনা।
জন্মকাল হতেই মোহের দ্বারা বাসনা এবং দ্বেষ হতে সুখ-দুঃখ প্রভৃতি বিরুদ্ধ ভাবগুলি জন্ম লাভ করে। যে সকল পুণ্যবান ব্যক্তিগণের পাপ নষ্ট হয়েছে, তারা সুখ দুঃখের অতীত হয়ে একাগ্র চিত্তে আমার ভজনা করে। জ্বরা -মরণ হতে মুক্তি লাভ হেতু যারা যত্ন সহকারে আমাকে আশ্রয় করে, তারা সর্ব কর্ম করেন আবার ব্রহ্মকেও জ্ঞাত হন।আমাকেই যারা অধিভূত, অধিদৈব ও অধিযজ্ঞ স্বরূপ বলে জানেন, তাঁরা মৃত্যু কালে আমাকেই পরমব্রহ্ম চিন্তা করেন। ৭/৩০.....
ভগবান কথা : ৮/৬/২০১৭
ব্রহ্ম কে ? পরমাত্মাই ব্রহ্ম।
কর্ম কী ? স্বভাব, অধ্যাত্ম এবং যজ্ঞাদি অর্থাৎ যে সমস্ত ক্রিয়ার দ্বারা মানবের জন্ম ও বৃদ্ধি হয় - তাহাই কর্ম।
অধিযজ্ঞ কাকে বলে? দেহাদি নশ্বর পদার্থই অধিভূত, অক্ষর সবিতৃমণ্ডল মধ্যস্থ বিরাট পুরুষই আধিদৈব ও যজ্ঞাদির ফলদাতা রূপে আমিই অধিযজ্ঞ। ৮/৪.....
ভগবান কথা : ৯/৬/২০১৭
ভগবান বলছেন : অন্তকালে আমাকে স্মরণ করতে করতে যিনি দেহ ত্যাগ করেন, তিনি আমাকেই প্রাপ্ত হন। এতে কোনো সংশয় নেই। মৃত্যুকালে যে ব্যক্তি যে সকল বিষয় স্মরণ করতে করতে দেহ ত্যাগ করেন সেই ব্যক্তি সেই ভাবই প্রাপ্ত হন। সেজন্য সর্বদা আমাকে চিন্তা করো এবং স্বধর্ম অনুযায়ী কর্মে প্রবৃত্ত হও। মন,বুদ্ধি আমাকে অর্পণ করে কর্ম করলে আমাকেই প্রাপ্ত হবে। সর্বদা ঈশ্বর চিন্তা করলে, মন অপরদিকে যায় না। এইভাবে চিন্তার ফলে অভ্যাস যোগের সাহায্যে দিব্য পরম পুরুষকে লাভ করা যায়। সেই পরম পুরুষ সর্বজ্ঞ, অনাদি, সবার নিয়ন্তা,সুক্ষ হতে সূক্ষতর, ব্রহ্মান্ডের পালক, অচিন্ত্য, সূর্যসম জ্যোতির্ময় ও প্রকৃতির অতীত পরম পুরুষ। ভক্তিপূর্বক যিনি একাগ্র চিত্তে যোগের সাহায্যে ভ্রূদ্বয়ের মধ্যে প্রাণবায়ু স্থাপন করে মৃত্যু সময় তাঁর চিন্তা করেন, তিনি সেই জ্যোতির্ময় পরম পুরুষকে অবশ্যই লাভ করেন।
বেদবিদ পণ্ডিতগন যাঁকে অক্ষর বলেন, বিষয় স্পৃহাহীন যোগীগণ যাকে লাভের হেতু ব্রহ্মাচার্য অনুষ্ঠান করেন, আমি সংক্ষেপে সেই ব্রহ্মের কথা বলছি।
ইন্দ্রিয় দ্বার সমূহ সংযত করে, মনকে হৃদয়ে স্থাপনপূর্বক ধৈর্য্য সহকারে যোগ দ্বারা প্রাণ-বায়ুকে ভ্রূদ্বয় মধ্যে স্থাপন করবে। অতঃপর "ওঁ " এই এক অক্ষর ব্রহ্ম শব্দটি মনে মনে উচ্চারণ করতে করতে যিনি দেহত্যাগ কেন, তিনি পরম গতি প্রাপ্ত করেন।
অনন্য চিত্তে আমায় স্মরণ সর্বদা স্মরণ করেন, সেই চিত্ত সমাহিত-যোগীর পক্ষে আমি অত্যন্ত সুলভ জানিও। মহাত্মাগণ আমাকে পেয়ে পরম সিদ্ধি লাভ করেন। সেই কারণ দুঃখময় অনিত্য সংসারে আর তাদের পুনর্জন্ম গ্রহণ করতে হয় না। ব্রহ্মলোক হতেও জীবকে ফিরে আসতে হয়। আমাকে পেলে তার আর পুনর্জন্ম নিতে হয় না।
এক সহস্র যুগে ব্রহ্মার একদিন ও রাত্রি। যিনি এটা জানেন, তিনিই দিন রাত্রি সন্মন্ধে প্রকৃত জ্ঞানী। ব্রহ্মার দিবা ভাগে জগৎ-সৃষ্টি হয়। আবার প্রলয়ে বিলীন হয়। এই ভাবে জীবগন ব্রহ্মার দিবা কালে জন্মলাভ করে আবার রাত্রিকালে বিলীন হয়।
সেই অব্যক্ত হতেও অব্যক্ত, চক্ষু,প্রভৃতি ইন্দ্রিয় অগোচর যে সনাতন ভাব, সর্বভূতে ধ্বংস প্রাপ্ত হলেও তা বিনাশপ্রাপ্ত হয় না। এটাই অব্যক্ত অক্ষর ও পরমাগতি যা প্রাপ্ত হলে আর সংসারে ফিরে আসতে হয় না। তাহাই আমার পরম ধাম।
যার মধ্যে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড নিহিত, যিনি জগৎ ব্যাপ্ত হয়ে বিরাজিত, সেই পরম পুরুষকে শুধুমাত্র দৃঢ় ভক্তি দ্বারাই লাভ করা যায়।
যে সময় যোগীদের মৃত্যু হলে আর আর আসতে হয় না এবং যে সময় মৃত্যুতে আসতে হয় - তা বলছি।
অগ্নির্জ্যোতি, দিন ও শুক্ল পক্ষ এবং উত্তরায়ণের ছয় মাস - এই সময় গমনকারী ব্ৰহ্মজ্ঞগণ ব্রহ্মকে প্রাপ্ত হন।
ধুম, রাত্রীঃ,কৃষ্ণপক্ষ, আর দক্ষিণায়নের ছয় মাস ; এই সময়ে যোগী চন্দ্রমার জ্যোতি প্রাপ্ত হয় ও পুনরায় মৃত্যুর অধীন হন।
শুল্কপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষ ইহা জগতে নিত্য শাশ্বত। শুক্লপক্ষে মুক্তি আর কৃষ্ণপক্ষে পুনর্জন্ম। শুক্লপক্ষ মোক্ষ আর কৃষ্ণপক্ষ সংসার স্বরূপ।এই দুটি পথই জ্ঞাত হয়ে যোগীগণ মোহগ্রস্থ হন না। বেদে, যজ্ঞে, তপস্যায় এবং দানে পুন্য লাভ হয়। এই পরম তত্ব জেনে যোগীপুরুষ এ সব অতিক্রম করেন। ৮/২৮......
ভগবান কথা : ১০/৬/২০১৭
রাজ্ বিদ্যা রাজগুহ্য অতি পবিত্র, সর্বশ্রেষ্ট , অতি গোপনীয়, উত্তম এবং উত্তম প্রত্যক্ষ ফলপ্রদ ধর্মমত, সুখসাধ্য ও অবিনশ্বর। যা জানলে শুভ মোক্ষলাভ হয়।
অব্যক্ত আমি জগতে পরিব্যাপ্ত। সমস্ত প্রাণী আমাতে অবস্থিত বটে কিনতু আমি কিছুতেই স্থিত নোই। আমি সর্বভূতকে পরমাত্মারূপে ধারণ করে আছি। কিনতু না আমি ভূতে স্থিত, না ভূত আমাতে স্থিত। আকাশে যেমন মহান বেগবান বায়ু সর্বগামী , সেই রকম সর্বভূতে আমাতেই স্থিত। প্রলয় সময়ে আমারই প্রকৃতিতে সর্ব-ভূত লীন হয়। আবার সৃষ্টিকালে পুনরায় আমিই সকল সৃষ্টি করি। আপন প্রকৃতিকে স্থির করে আমি নিজ মায়ার সাহায্যে এই ভুতগনকে বার বার সৃষ্টি করি। সর্ব বিষয়ে আমি উদাসীন-আসক্তিহীন, সেজন্য এ সকল কর্ম আমাকে বন্ধন করতে পারে না।
প্রকৃতি এই বিশ্ব চরাচর বার বার সৃষ্টি করে আমারই হেতু। এই কারণেই বিশ্বজগৎ বার বার সৃষ্টি হয়।
জ্ঞানহীন মূঢ়গন আমার এই পরম ভাব না বুঝে, আমার নরদেহধারী মূর্তিকে তুচ্ছ জ্ঞান করে। এই কারণে - তারা বেবেকশুন্য, অস্থির চিত্ত নিষ্ফলকর্মা ,জ্ঞানহীন,বিচারশুন্য হয়ে বুদ্ধিনাশকারিনী, আসুরী ও রাক্ষসী প্রকৃতিকে আশ্রয় করে। দৈবী প্রকৃতি আশ্রয়কারীগণ আমাকে সর্ব ভূতের আদি জেনে একান্তমনে আমারই ভজনা করে। সর্বদা আমার নাম কীর্তন করে। যত্ন ও ভক্তিপূর্বক আমাকে প্রণাম করে। নিত্যযোগে আমার উপাসনা করে। কেউ কেউ জ্ঞানযোগের দ্বারা আমার উপাসনা করে। কেউ আবার নিজেকে আমার সাথে অভেদ জ্ঞান করে ভজনা করে। কেউ আবার নিজেকে দাস ও আমাকে প্রভুরূপে চিন্তা করে আমাকে উপাসনা করে।৯/১৫.........
ভগবান কথা : ১১/৬/২০১৭
ভগবান বলছেন : আমিই ক্রতু, আমিই যজ্ঞ, আমিই স্বধা, আমিই ঔষধ,আমিই মন্ত্র,আমিই যজ্ঞের হবি,আমিই অগ্নি,আমিই হোমকর্ম। আমিই এই জগতের পিতা, মাতা,বিধাতা,পোষনকারী, পিতামহ।
আমিই জ্ঞেয় বস্তূ ,আমিই 'ওঁ' কার। আমিই ঋক, সাম,যজু, অথর্ব -সমস্ত বেদ। আমিই গতি, ভারত, প্রভু, সাক্ষী, জগৎ আশ্রয়, শরণ, সুহৃদ, উৎপত্তি স্থান, সংহারতা, প্রলয় ও আমিই অবিনাশী বীজ।
আদিত্য রূপে আমিই তাপ প্রদান করি। বৃষ্টি রূপে আমিই বর্ষণ করি। আমিই জলরাশি আকর্ষণ করি। আমিই জীবন। আমিই মৃত্যু। আমিই সৎ এবং অসৎ।
তিন বেদজ্ঞানী মহাত্মাগণ সোমরস পানে নিষ্ফল হয়ে স্বর্গ কামনা করে। তারা পুণ্যফলে স্বর্গপ্রাপ্ত হন। দিব্য স্বর্গসুখ ভোগ করেন। স্বর্গসুখ ভোগের পর আবার মর্ত্যলোকে ফিরে আসেন। এই ভাবে বেদ-উক্ত অনুবর্তনকারীগণ জন্ম-মৃত্যু লাভ করেন। অন্য্ দিকে যাঁরা একাগ্র মনে আমারই চিন্তা করেন, তাদের জীবিকা অর্জন ও রক্ষনা বেক্ষন আমিই করি। যারা শ্রদ্ধান্বিত হয়ে অন্যান্য দেবতার ভজনা করে তারাও অবিধিপূর্বক আমারই ভজনা করে। আমিই সমস্ত যজ্ঞের ভোক্তা ও প্রভু। আমাকে ভালো রূপে না জেনে মানুষ প্রকৃত পথ হতে বিচলিত হয়ে থাকেন।
দেবতার উপাসনায় দেব লোক প্রাপ্ত হয়। পিতৃগণের শ্রাদ্ধ দ্বারা পিতৃলোক প্রাপ্ত হয়। ভুতগনের অর্চনায় ভূতলোক প্রাপ্ত হয়। কিনতু আমার উপাসনার দ্বারা আমার উপাসকগন আমাকেই লাভ পরে থাকেন।
পত্র, পুষ্প, ফল, জল যে ব্যক্তি আমার উদ্দেশ্যে অর্পণ করে, আমি তার সেই ভক্তি-উপাচার যত্ন পূর্বক গ্রহণ করি। তুমি যা কারো, যা আহার করো, হোম করো,দান বা তপস্যা করো, তা সকলই আমাতে সমর্পন করো। তুমি এতে শুভাশুভ কর্মের বাঁধন হতে মুক্তি লাভ করবে। সান্যাসযোগযুক্ত আত্মা হয়ে আমাকেই লাভ করবে।
আমি সর্বভূতকে সমান দেখি, কারো প্রতি বিদ্বেষ নেই। আমার প্রিয় বা অপ্রিয় কেউ নেই। কিনতু ভক্তিযুক্ত হয়ে আমার ভজনা করে, আমি তাদের সঙ্গে থাকি ও তারাও আমার সঙ্গে থাকে। অতি দুরাচারী ব্যক্তিও যদি একান্ত ভাবে আমার ভজনা করে, লোকে সেই ব্যক্তিকে সাধু বলে মনে করে। খুব শীঘ্র সেই ব্যক্তি ধর্মাত্মা হয়ে, শাশ্বত শান্তি লাভ করে থাকে। ভক্ত কখনো বিনষ্ট হয় না। নিচ বংশে যার জন্ম, স্ত্রী-লোক বৈশ্য , শুদ্র - আমার স্মরণ নিলে পরমাগতি লাভ করে। ......৯/৩২.....
জাগতিক ভোগ সমূহ অনিত্য। এর পরিনাম দুঃখদায়ক। অতএব অনিত্য সুখে মোহগ্রস্থ না হয়ে আমাকে ভজনা করো। আমাতে মনোযোগ দাও। আমার ভক্ত হও। আমার উপাসনা করো। আমার উদ্দেশ্যে ভজনা করো। এই ভাবে আমা -পরায়ণ হয়ে আমাতে চিত্ত সমাহিত করে আমাকেই প্রাপ্ত হও। ৯/৩৪......
ভগবান কথা : ১২/৬/২০১৭
পরমতত্ব কথা শোনো। সমস্ত দেবতা বা মহর্ষিগন কেউই আমার তত্ব জ্ঞাত নয়। এর কারন আমি দেবতা মহর্ষিগনের আদিতে বিরাজিত। আমাকে যে ব্যক্তি জন্মরহিত অনাদি ও সর্বলোকের মহেশ্বর বলে জানেন, মর্তলোকে তিনিই সর্ব পাপ হতে মুক্ত হন।
জিবগনের বিভিন্ন ভাব আমা হতেই সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ বুদ্ধি,জ্ঞান,অব্যাকুলতা, ক্ষমা, দম, শম,সুখ, দুঃখ, জন্ম, মৃত্যু,ভয়,অভয়,অহিংসা, ক্ষমতা, তুষ্টি,তপ , দান, যশ, অযশ সবই আমা হতে সৃষ্টি।
ভৃগু প্রভৃতি সপ্ত মহর্ষি, তার পরে চারজন মনু আমার প্রভাবযুক্ত এবং আমার মানসসৃষ্ট। এই জীব জগৎ তাদেরই সন্তানরূপে বিদ্যমান। আমার এই যোগ ও বিভূতি যিনি সম্পূর্ণরূপে অবগত, তিনি অবিচলিত চিত্তে যোগ যুক্ত হন।
বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা আমিই। এই বিশ্বজগৎ আমাতেই প্রবর্তিত। জ্ঞানী ব্যক্তিগণ আমার ভাবযুক্ত হয়ে আমারই ভজনা করেন। আমার এই লীলা ও রূপ গুনে মুগ্ধ হয়ে, যারা আমাতেই মন প্রাণ সমর্পন করেছে, যারা আমার বিষয়ে আলোচনা করে, - তারা সদাই তৃপ্ত, আনন্দময় সদাশান্তি লাভ করে। করুনাবশে আমি এদের অন্তরে থেকে জ্ঞান আলোকে অন্ধকার নাশ করি।
আমার বিভূতি অনন্ত।
সর্বভূতে অবস্থিত আমি আত্মা।
আমিই আদি, মধ্যে ও অন্ত বলে জানবে।
দ্বাদশ আদিত্য মধ্যে আমি বিষ্ণু।
জ্যোতিস্ক মধ্যে আমি সুর্য্য।
মরুৎগনের মধ্যে আমি মরীচি।
নক্ষত্র সকলের মধ্যে আমি চন্দ্র।
বেদ সকলের মধ্যে আমি সাম বেদ।
দেবতাদের মধ্যে আমি ইন্দ্র।
ইন্দ্রিয়গনের মধ্যে আমি মন।
প্রাণীগণের মধ্যে আমি চেতনা স্বরূপ।
রুদ্রগনের মধ্যে আমি শঙ্কর।
যক্ষ ও রাক্ষস গনের মধ্যে আমি কুবের।
অষ্টবসুর মধ্যে আমি পাবক।
পর্বত সকলের মধ্যে আমি সুমেরু।
পুরহিতগণের মধ্যে আমি বৃহস্পতি।
সেনাপতিগণের মধ্যে আমি কার্তিকেয়।
জলাশয়ের মধ্যে আমি সাগর।
মহর্ষি গনের মধ্যে আমি ভৃগু।
অক্ষর মধ্যে আমি একাক্ষর ওঙ্কার।
যজ্ঞ মধ্যে আমি জপ্ যজ্ঞ।
স্থাবরগন মধ্যে আমি হিমালয়।
বৃক্ষ সকলের মধ্যে আমি অশ্বথ।
দেবর্ষিগণের মধ্যে আমি নারদ।
গন্ধর্ব গনের মধ্যে আমি চিত্ররথ।
সিদ্ধগন মধ্যে আমি কপিলমুনি।
অশ্বগন মধ্যে আমি, সমুদ্র মন্থনে উদভূত উচ্চৈঃশ্রবা।
হস্তি গনের মধ্যে আমি, সমুদ্র মন্থনে উদভূত ঐরাবত।
নরগনের মধ্যে আমি নরপতি। ১০/২৭.......
ভগবান কথা : ১২/০৬/২০১৭
ভগবান বলছেন :
অস্ত্র সকলের মধ্যে আমি বজ্র
ধেনু গনের মধ্যে আমি কাম ধেনু।
প্রজনন কার্যে আমি কন্দর্প।
সাপগনের মধ্যে আমি বাসুকি।
নাগগনের মধ্যে আমি অনন্ত।
জলচরের মধ্যে আমি বরুন।
পিতৃগণের মধ্যে আমি অর্য্যমা।
সংয়মকারীর মধ্যে আমি যম।
দৈত্য গনের মধ্যে আমি প্রহ্লাদ।
গ্রাসকারীগনের মধ্যে আমি কাল।
পশুগণের মধ্যে আমি সিংহ।
পাখী গনের মধ্যে আমি গরুড়।
বিজ্ঞানের মধ্যে আমি বায়ু।
শস্ত্রধারীগণের মধ্যে আমি রাম ।
জলজনতুগনের মধ্যে আমি মকর।
নদনদীর মধ্যে আমি জাহ্নবী।
আমি সৃষ্টির আদি, অন্ত মধ্য।
বিদ্যামধ্যে অধ্যাত্ব বিদ্যা।
তার্কিকগণের মধ্যে আমি তর্কবিদ্যা।
অক্ষর সকলের মধ্যে আমি অ-কার।
সমাস মধ্যে আমি দ্বন্দ্ব সমাস।
আমি অক্ষয়কাল স্বরূপ।
আমিই কর্মফলদাতা, বিধাতা।
সংহারকারীর মধ্যে আমি মৃত্যু।
ভবিষ্যৎ উৎপত্তির হেতু আমি।
নারী গনের মধ্যে আমি কীর্তি,শ্রী,স্মৃতি,মেধা,ধৃতি ও ক্ষমা।
সামবেদ মধ্যে আমি বৃহ্ৎসাম।
ছন্দগুলির মধ্যে আমি গায়ত্রী।
মাসগুলির মধ্যে আমি অগ্রহায়ণ (মার্গশীর্ষ).
ঋতুসকলের মধ্যে আমি বসন্ত।
ছলনাকারীর মধ্যে দ্যূতক্রীড়া।
তেজষ্মীগণের তেজ।
বিজয়ীদের মধ্যে জয়।
ব্যবসায়ীগনের ব্যবসা।
সাত্বিকগণের মধ্যে আমি সত্বগুন।
বৃষ্ণী বংশীয় অর্থাৎ যাদব বংশীয়দের মধ্যে বাসুদেব।
পাণ্ডবগণের মধ্যে আমি ধনঞ্জয়।
মুনিগণের মধ্যে ব্যাস
কবিগনের মধ্যে আমি উশনা (শুক্রাচার্য) .
দমন কারীদের মধ্যে আমি দণ্ড।
জিগীষু গনের মধ্যে আমি নীতি।
গোপনীয় বিষয়ে আমি মৌন।
জ্ঞানীগণের আমি তত্ত্বজ্ঞান।
সকল জীব সৃষ্টির বীজ স্বরূপ আমি। সেজন্য আমি ছাড়া পৃথক থাকতে পারে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে এমন কিছু নেই। আমার দিব্য বিভূতি অনন্ত। এই বিশ্বে যা কিছু শ্রীযুক্ত, সে সমস্ত আমারই তেজের একটি অংশ মাত্র। আমি আমার মাত্র একাংশের সাহায্যে জগৎব্যাপ্ত রয়েছি। ১০/৪২.....
ভগবান কথা : ১২/৬/২০১৭
এতক্ষন ভগবানের উক্তি শুনছিলাম। ভগবান - ঈশ্বর, আত্মা সম্পর্কে অনেক কথা বলছিলেন। কিনতু শ্রীগীতার এই অংশ ভগবানের উক্তি নয়। তবুও এখানেই ভগবানের প্রকাশ। নিজেকে নিজে তো দেখা যায় না। চোখ নিজেকে দেখতে পায় না। এখানে ভগবান দেখা দিয়েছিলেন। দেখে ছিলেন শিষ্য শ্রী অর্জুন। তিনি কি দেখেছিলেন ? আসুন আমরা অর্জুনের চোখের সাহায্যে দেখে নেই।
অর্জুন বলছে :হে পদ্মপত্রায়ত লোচন ! তুমিই যে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি ও প্রলয়ের কর্তা। সে মাহাত্মের কথা শুনলাম। নিজের বিষয় সম্পর্কে তুমি যা বললে তা সত্য। তবুও হে পুরুষত্তম !তোমার ঐশ্বরিক রূপ আমি দর্শন করতে চাই।
তখন ভগবান বললেন : হে পার্থ ! নানাপ্রকার দিব্যাকৃতি, অলৌকিক, নানাবর্ন যুক্ত ও আকৃতি বিশিষ্ট শত সহস্র রূপ দর্শন করো। আমার দেহে দ্বাদশ আদিত্য, অষ্টবসু,একাদশ রুদ্র, ঊনপঞ্চাশৎ বায়ু, অশ্বিনী কুমারদ্বয় দেখ। আমার দেহ মধ্যে বিশ্বচরাচর দর্শন করো। যা কিছু আরো দেখতে চাও তাও দর্শন করো। আমার যোগেশ্বর রূপ দর্শন করো।
এইবার সঞ্জয়ের মুখ দিয়ে শুনি : মহাযোগেশ্বর শ্রীহরি এই বলে আপন ঐশ্বরিক রূপ পার্থকে দেখালেন।
বহু বদন ও চক্ষুবিশিষ্ট অনেক অদভুত-দর্শন, বহু দিব্যা অলংকার যুক্ত, দিব্য অস্ত্রধারী মূর্তি। দিব্য মালা বস্ত্রাদিতে সজ্জিত,দিব্য গন্ধে লিপ্ত , সর্ব-আশ্চর্যময়, জ্যোতিপূর্ণ,অনন্ত ও সর্বত্র মুখ যুক্ত। যদি মহাকাশে একত্রে সহস্র সূর্য হয়,তবে সে মহাত্মার দীপ্তির কিছু সমান হতে পারে।
অর্জুন নত মস্তকে প্রণাম করলো এবং বললো - হে দেব তোমার দেব দেহের মধ্যে সব দেবতা, বিভিন্ন প্রাণী,কমল আসন-স্থিত ব্রহ্মা,
পুণ্যবান ঋষিগণ ও সর্পসকল দেখছি। আমি তোমার বহু উদর, বহু বদন, বহু চক্ষু বিশিষ্ট, সর্বব্যাপী দেখতে পেলাম। কিনতু আদি
অন্ত দেখলাম না।
অর্জুন আবার বলছেন - তুমিই কিরীটি, গঙ্গা, ও চক্রধারী। তোমার তেজরাশিতে সমস্ত দীপ্তিময়। সর্বত্রই তুমি তেজোদীপ্ত সূর্যসম, অত্যন্ত দুনিরীক্ষ, ও অপ্রমেয়। তুমি অক্ষর বেদবিদগণের জ্ঞেয় পরমব্রহ্ম। তুমি বিশ্বব্রমাণ্ডের আশ্রয়। অব্যক্ত, ও শাশ্বত ধর্মের রক্ষক সনাতন পুরুষ।
আবার বলছেন : তুমি অখণ্ড বীর্যবান আদি, মধ্যে ও অন্তহীন। অনন্ত বাহু সমন্বিত। চন্দ্র ও সূর্য তোমার নয়নদ্বয়। দীপ্ত হুতাশনের ন্যায় তোমার বদন মন্ডল। নিজ তেজে তুমি বিশ্ব চরাচর উত্তপ্ত করছো। তুমি স্বর্গ মর্ত ও মধ্যবর্তীস্থান - সর্বত্র ব্যাপিয়া বিরাজিত। ত্রিলোক তোমার এই বিশ্বরূপ দর্শন করে ভিত হচ্ছে। দেবতা সকল ভীত হয়ে তোমার স্তূতি করছে। মহর্ষিগন ও সিদ্ধ গন তোমার স্তব করছে। রুদ্র, আদিত্য,বসু গণ ,সাধ্যগণ, এবং বিশ্বের দেবতা গন, অশ্বিনী কুমার দ্বয়, মরুৎ গণ পিতৃগণ গন্ধর্ব,যক্ষ,অসুর, সকলে বিস্মিত হয়ে তোমাকে দেখছে। তুমি অসংখ্য বদন, নেত্র,বহু, উরু, পদ, উদর,ও দাঁতযুক্ত। ( এই সব দেখে অর্জুন ভয় পেয়ে গেছে - তার শান্তি নষ্ট হয়ে গেছে - ইত্যাদি ইত্যাদি আরো কি সব দেখলো ও বললো। আমরা এ সবের মধ্যে যাবো না। ভগবানের কথায় যাবো)
ভগবান বললেন : আমি লোক ধংশ কারী মহাকাল। সকল লোককে ক্ষয় করতে আমি প্রবৃত্ত। আমি প্রসন্ন হয়ে আত্মযোগ সাহায্যে, তোমাকে আমার বিশ্বব্যাপী অনাদি অনন্ত বিশ্বরূপ দেখালাম।
শুধুমাত্র অনন্যা ভক্তি থাকলেই আমাকে জানা যায়, বোঝা যায়। আমার জন্য যে ব্যক্তি কর্ম করেন, যিনি আমার শরণাপন্ন ও আসক্তিশুন্য,সর্বভূতে শত্রূ শুন্য, ইনিই আমাকে প্রাপ্ত হন। ১১/৫৫.........
ভগবান কথা : ১৪/০৬/২০১৭ (ভক্তিযোগ)
পরম শ্রদ্ধা সহকারে যাদের মন আমাতে নিবিষ্ট করে আমাকে উপাসনা করেন, তারাই শ্রেষ্ট যোগী।
যাঁরা সর্বদা সমবুদ্ধি যুক্ত, সর্ব ভূতে হিতে রত, সর্বত্র গমনকারী, অব্যক্ত, কূটস্থ, অচল, অচিন্তনীয়, ধ্রূব, ক্ষয়োদয় রোহিত, ব্রহ্মের উপাসনা করে তারাও আমাকে প্রাপ্ত হয়। অব্যক্ত বা নিরাকার নির্গুণ ব্রহ্মের উপাসকদের মুক্তিলাভ কষ্টকর হয়। কারণ, দেহধারীর নির্গুণ ব্রহ্মলাভ খুবই কষ্টসাধ্য।
কিনতু যাঁরা আমাপরায়ণ হয়ে, সর্ব কর্ম আমাতেই সমর্পন করে, স্থির চিত্তে, আমাকেই চিন্তা করতে করতে আমার উপাসনা করে, সেই সকল সাধককে আমি মৃত্যুপূর্ণ সংসার সমুদ্র হতে অচিরেই রক্ষা করি। আমাতেই মন নিবিষ্ট কর। আমাতেই বুদ্ধিযুক্ত হও, তাহলে দেহান্তে আমাকেই প্রাপ্ত হবে। স্থির ভাবে আমাতে চিত্ত স্থির করতে যদি সমর্থ না হও, তা হলে অভ্যাসের সাহায্যে আমাকে পেতে চেষ্টা করো। যদি অভ্যাসেও সামর্থ না হও, তাহলে আমার কাজে চিত্ত স্থির করো। আমার প্রীতির জন্য কর্ম করলেও তুমি সিদ্ধি লাভ করবে। তাও যদি সম্ভব না হয়, তবে আমার শরণাপন্ন হয়ে, সংযত চিত্ত হয়ে, সমস্ত কর্মফল ত্যাগ করো। অভ্যাস থেকে জ্ঞান শ্রেষ্ট - জ্ঞান হতে ধ্যান শ্রেষ্ট - কর্মফল ত্যাগ ধ্যান হতেও শ্রেষ্ট। ত্যাগেই পরম শান্তি।
যে ব্যক্তি সর্বভূতে হিংসা শূন্য, মৈত্রী ভাব সম্পন্ন, সবাকার প্রতি করুণা, মমতা শূন্য, অহংকার শূন্য, সুখ-দুঃখ সমান জ্ঞান করেন, ক্ষমাশীল, সর্বদা তুষ্ট,দৃঢ় বিশ্বাসী, মন বুদ্ধি যার আমাতে অর্পিত - সেই যোগী আমার ভক্ত ও প্রিয়।
যার দ্বারা উদ্বেগ প্রাপ্ত হয় না, নিজেও কারো ব্যবহারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন না, অপরের আনন্দ লাভে যিনি অসহিষ্ণুনহেন, ভয় ও উদ্বেগ শূন্য - সে-ই আমার প্রিয়। ১২/১৬.....
যে ব্যক্তির আনন্দের প্রকাশ নেই, চিত্ত ক্লেশ শূন্য, কামনা হীন, শুভ অশুভ ফল ত্যাগী সে ভক্তই আমার প্রিয়। যিনি শত্রূ-মিত্র, মান- অপমানে, শীত-গ্রীষ্মে, সুখে-দুঃখে অবিচলিত, সর্ব বিষয়ে আসক্তিহীন, নিন্দা প্রসংশায় সম জ্ঞানকারী, স্থির চিত্ত, নির্দিষ্ট বাসস্থান শুন্য, সেই ভক্তই আমার প্রিয়। যারা ভক্তি পূর্বক মৎপরায়ণ হয়ে, এই ধর্ম-অমৃত পান করেন, তারাই আমার অত্যন্ত প্রিয়।
১২/২০.........
ভগবান কথা : ১৫/০৬/২০১৭
এই সংসারের সৃষ্টিভূমি বা প্ররোহভূমি ব'লে এই শরীরকে ক্ষেত্র বলা হয়। যিনি এটা জানেন তিনি ক্ষেত্রজ্ঞ। সর্বক্ষেত্রেই ক্ষেত্রজ্ঞ রূপে আমাকেই জানবে। ক্ষেত্র - ক্ষেত্রজ্ঞ জ্ঞানী প্রকৃত পক্ষে আমার জ্ঞান।
এই শরীর বা ক্ষেত্র কি ? কি তার রূপ - বিকার কি -ক্ষেত্রে কি প্রকার -তার প্রভাব কেমন -স্বরূপ কি প্রকার ; শ্রবণ করো। ঋষিগণ বৈদিক মন্ত্রে - ছন্দে এই ক্ষেত্র - ক্ষেত্রজ্ঞ সম্পর্কে জ্ঞান নির্ধারণ করেছেন।
পঞ্চ মহাভূত - ক্ষিতি, অপ ,তেজ,মরুৎ , ব্যোম।
দশ ইন্দ্রিয় - অহংকার,বুদ্ধি (চক্ষু, জিহ্বা, কর্ন, চর্ম, নাসিকা, বাক,পাণি, পাদ , পায়ু , উপস্থ ) ইত্যাদি। এর মধ্যে পাঁচ ইন্দ্রিয়ের রূপ, রস, গন্ধ,স্পর্শ, শব্দ এই পাঁচটি বিষয় ও ইচ্ছা,দ্বেষ,সুখ, দুঃখ,শরীর, চেতনা এবং ধৈর্য্য এইগুলি ক্ষেত্র ও তার বিকার।
নিরভিমান, দম্ভ,অহিংসা,ক্ষমা,সহ্য,সারল্য,গুরুসেবা,দেহ-মনের শুচিতা,মনস্থির করা,সকল বিষয়ে বৈরাগ্য, অহংকার-শুন্যতা, জন্ম,মৃত্যু, জরা ব্যাধি , সুখ-দুঃখ, দ্বেষ প্রভৃতিতে আসক্তিহীন, স্ত্রী-পুত্র-গৃহে অনাসক্ত,ইষ্ট -অনিষ্টে সমজ্ঞানী, আমাতে একনিষ্ঠ ভক্তি, নির্জনে বাসকারী, আত্মতত্ব ও মোক্ষ বিষয়ে সদা উপলব্ধি, এই গুলো হলো জ্ঞান। এর বিপরীতে যা কিছু সবই অজ্ঞান।
জ্ঞেয় হচ্ছে পরমব্রহ্ম। ব্রহ্মকে জানলে পরম আনন্দ লাভ হয়। অনাদি পরব্রহ্ম সৎ বা অসৎ নহেন। ১৩/১৩.....
সর্বত্রই ব্রহ্মের হস্ত, পদ,মস্তক, মুখ ও কর্ন। তিনি বিশ্বব্রম্মান্ড ব্যাপী বিরাজিত। তিনি সর্ব ইন্দ্রিয়ের গুনের আভাস বা অধিকারী আবার সর্ব ইন্দ্রিয়-বিবর্জিত। তিনি কোনো কিছুতাই আসক্ত নয় আবার সর্ব গুনের আধার। নির্গুণ অথচ গুনের ভোক্তা। তিনি সর্ব ভূতের অন্তরে অবস্থিত।তিনি স্থাবর-জঙ্গম অর্থাৎ অচল আবার সচল রূপে বিরাজিত। তিনি সূক্ষ্ম হতে সূক্ষতর, তিনি দুরস্ত হয়েও নিকটে অবস্থিত। সর্বভূতে তিনি যুক্ত অথচ অবিছিন্ন, অচঞ্চল। তিনি সর্ব ভূতকে পালন পোষন করেন, প্রলয়কালে গ্রাস করেন। পুনরায় সৃষ্টিকালে বিভিন্নরূপে প্রকাশিত হন। তিনিই সকালের মূল। জ্যোতিষ্কগনের তিনিই জ্যোতি। তিনি তমোরূপ অন্ধকারের অতীত। তিনি জ্ঞান; তিনি জ্ঞেয় ; আবার তিনিই জ্ঞানগম্য। তিনি সর্ব ভূতের হৃদয়ে অবস্থিত। আমার ভক্তগণ বিশেষরূপে এসব জেনে আমার স্বরূপ অবগত হন বা আমাকে প্রাপ্ত হন।......১৩/১৯.....
ভগবান কথা : ১৭/০৬/২০১৭
প্রকৃতি ও পুরুষ অনাদি। গুন্ সকল প্রকৃতি হতে জাত। কার্য্য, কারন ( শরীর, ইন্দ্রিয় ) উভয়ের হেতু প্রকৃতি। সুখ-দুঃখের হেতু ভোগ। আবার ভোগের হেতু পুরুষ। পুরুষ প্রকৃতিতে অবস্থান করে সুখ দুঃখ অর্থাৎ প্রকৃতির গুন্ ভোগ করে। এই গুন্ সুমুহের সঙ্গই পুরুষ সৎ অসৎ যোনিতে জন্ম গ্রহণ করে। সকল দেহেই পরম পুরুষ বিরাজিত। তিনি উপদেষ্টা বা সাক্ষী। তিনিই অনুমানতা অর্থাৎ অনুমতিদাতা। তিনিই ভর্তা , ভোক্তা,মহেশ্বর। তিনিই পরম আত্মা।
যিনি প্রকৃতি ও পুরুষের এই সকল গুনের কথা জানেন তিনি যে অবস্থায়ই থাকুন না কেন, দেহান্তে তাঁর পুনর্জন্ম হয় না।
কেই ধ্যান যোগের সাহায্যে,কেউ জ্ঞান যোগের সাহায্যে , কেউ বা কর্মযোগের সাহায্যে আত্মাকে দর্শন করেন। আবার কেউ এই সমস্ত ভাব না জেনে শুধু অপরের মুখে শুনে তার উপাসনা করেন। এবং এতেই তিনি মৃত্যুময় সংসার অতিক্রম করেন।
স্থাবর জঙ্গম, জগতে যা কিছু পদার্থের উৎপত্তি হয় ,সে সকলই ক্ষেত্রে-ক্ষত্রজ্ঞ সংযোগেই হয়। ১৩/২৭.......
ভগবান কথা : ১৮/০৬/২০১৭
যিনি সমভাবে, সর্বভূতে বিরাজিত ও বিনাশশীল পদার্থে অবিনাশী আত্মাকে দর্শন করেন, তিনিই সমদর্শী এবং পরমেশ্বরকে তিনিই যথার্থ রূপে জানেন। সর্বভূতে সমানভাবে যিনি ঈশ্বরকে সবত্র ব্যাপী বিরাজমান দেখে আত্মহিংসা মুক্ত, তিনিই মোক্ষ লাভ করেন। সমস্ত কার্যই করেন প্রকৃতি আত্মা অকর্তা ও নিষ্ক্রিয় এইরূপ যিনি দর্শন করেন এবং বুদ্ধির সাহায্যে বুঝতে পারেন - তিনিই সত্যদ্রষ্টা। ...১৩/৩০....
ভগবান কথা : ১৯/০৬/২০১৭
পৃথক পৃথক ভূত সকলকে যিনি আত্মাতে স্থিত জানেন, সৃষ্টি সময়ে পুনরায় ভুতগন আত্মা হতে পৃথক হন - এই তত্ব যিনি জ্ঞাত হন তিনিই ব্রহ্মত্ব লাভ করেন। অনাদি, নির্গুণ এবং অব্যয় বলে, এই দেহে অবস্থান করেও তিনি কিছুই করেন না। তাই তিনি নির্লিপ্ত। সর্বব্যাপী আকাশ যেমন সকল বস্তূতে ব্যাপ্ত হয়েও সূক্ষ্ম বলে সে কিছুতে লিপ্ত হয় না। তেমনি আত্মা সর্ব প্রকার দেহে থেকেও নির্লিপ্ত থাকেন। একমাত্র সূর্য যেমন বিশ্ব প্রকাশ করেন তেমনি ক্ষেত্রী অর্থাৎ আত্মা সমস্ত ক্ষেত্রকে প্রকাশ করেন। যারা ক্ষেত্র - ক্ষেত্রজ্ঞের পার্থক্য এবং ভূত ও প্রকৃতি হতে মুক্তিলাভের উপায় জ্ঞানদৃষ্টির দ্বারা উপলব্ধি করেছেন - তারাই পরমাগতি লাভ করেন। ১৩/৩৫....
ভগবান কথা : ২০/০৬/২০১৭
ভগবান বলছেন : সকল যোনিতে যে দেহ উৎপত্তি হয়, মহৎ ব্রহ্ম অর্থাৎ প্রকৃতি তাদের জননী, আর আমিই বীজপ্রদ পিতা।
সত্ব, রজঃ, তমঃ এই ত্রিগুন প্রকৃতি হতে জাত। এই ত্রিগুন নিত্য আত্মাকে আবদ্ধ করে রাখে। এই ত্রিগুণের মধ্যে সত্ত্বগুণ নির্মল। এই সত্ত্বগুণ প্রকাশক ও মলিনতা শুন্য। এই সত্ত্বগুণ-ই জীবকে সুখের আসক্তি ও জ্ঞানের আসক্তিতে সংসারে আবদ্ধ করে রাখে।
রজগুন আসক্তিময় ও পিপাসাময়। রজগুনে কামনা জন্মে ও জীবকে আসক্তি দ্বারা কর্ম বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে।
অজ্ঞানতা হতে তম গুনের সৃষ্টি। তমঃগুণ ভ্রান্তি কারক। এই গুন্ জীবকে প্রমাদ, আলস্য, নিদ্রা দ্বারা জীবকে আবদ্ধ করে।
সত্বগুন্ জীবকে সুখ দান করে। রজোগুণ কর্মে প্রবৃত্ত করে। তমগুণ জীবের জ্ঞানকে আচ্ছন্ন করে ভ্রমে পতিত করে। কোনো কোনো সময় সত্ত্বগুণ - রজঃ ও তমোগুণকে অতিক্রম করে প্রবল হয়ে উঠে। ঠিক তেমনি কখনো রজঃগুন -সত্ব ও তম গুনকে অতিক্রম করে প্রবল হয়। আবার কোনো কোনো সময় তম গুণও
সত্ব ও রজ গুনকে অতিক্রম করে প্রবল হয়ে ওঠে।
যে সময় সর্বদ্বার অর্থাৎ ইন্দ্রিয় দ্বারা দেহে জ্ঞান প্রকাশ পায় - তখনি সত্বঃগুন বৃদ্ধি হয়েছে জানবে।
রজঃ গুণ বৃদ্ধিতে লোভ, কর্মে প্রবৃত্তি, অশান্তি ইত্যাদি লক্ষ্মণ প্রকাশ পায়।
তমঃগুণ বৃদ্ধিতে বিবেকহীনতা, কর্তব্যহীনতা, আলস্য,অসাবধানতা এবং ভ্রম ইত্যাদি লক্ষ্মণ প্রকাশ পায়।
সত্বঃগুন্ বৃদ্ধিকালে যদি জীবের দেহান্ত হয়, তবে তত্ত্বজ্ঞানী ব্যক্তিগণ যে নিস্কলুষ স্থান প্রাপ্ত হন সেই জীব সেই স্থান প্রাপ্ত হয়।
রজঃ গুন্ বৃদ্ধিকালে যদি জীবের মৃত্যু হয় তবে তার মানব যোনিতেই জন্ম হয়।
তমঃগুণ বৃদ্ধিকালে যদি কারো দেহান্ত হয় তবে সে পশু-পক্ষী যোনিতে জন্ম গ্রহণ করে। ১৪/১৫......
ভগবান কথা : ২১/০৬/২০১৭
সাত্বিক কর্মের ফল নিস্কলঙ্ক। রাজসিক কর্মের ফল দুঃখদায়ক। তামসিক কর্মের ফল অজ্ঞানতা। সত্ব গুণান্বিত কার্যে প্রকৃত জ্ঞান লাভ। রজোগুণান্বিত কর্মে লোভ। তমগুনান্বিত কর্মে মোহ ও অজ্ঞানতা জন্মায়। সত্ব গুন্ ঊর্ধ্বলোকে ; তমোগুণ জঘন্য কাজের জন্য অন্ধকারলোকে ; ও রজগুণ মধ্য অর্থাৎ মৃত্যু লোকে প্রেরন করে। যিনি সমস্ত কর্ম বিষয়ে গুনকেই কর্তা জানেন ও আত্মাকে গুণাতীত বলে জানেন, তিনি আমার ভাব প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। জীব জীবিত কাল হতেই গুন্ তিনটিকে অতিক্রম করে জন্ম, মৃত্যু,জরা প্রভৃতি দুঃখ হতে মুক্ত হয়ে অমৃতত্ব লাভ করেন।
সত্ব, রজঃ, তম গুনের প্রকাশ অর্থাৎ মোহ,প্রবৃত্তি ইত্যাদি কর্মকে যিনি আত্মার কার্য মনে করেন এবং এতে প্রবৃত্ত বা নিবৃত্ত হন না - তিনিই গুণাতীত। যিনি সাক্ষী মনে করে উদাসীনের ন্যায় অবস্থিতি করেন, সত্বাদি তিন গুনের প্রভাবে তিনি প্রভাবিত হন না। তিনিই গুণাতীত। যিনি সুখ দুঃখ, প্রিয়-অপ্রিয়, লোষ্ট্র অর্থাৎ মাটির ঢেলা বা কাঞ্চন অর্থাৎ সোনা সমান চক্ষে দেখেন সেই ধীর ব্যাক্তিই গুণাতীত। মান-অপমান, শত্রূ-মিত্র -তে যিনি সমজ্ঞান করেন ; যিনি সর্বকর্মে উদ্যম পরিত্যাগ করেছেন, তিনিই গুণাতীত। একান্ত ভক্তি সহকারে যিনি আমাকে সেবা করেন, তিনিই এই তিন গুনকে অতিক্রম করে ব্রহ্মভাব প্রাপ্ত হন। আমিই ব্রহ্মে প্রতিষ্ঠা স্বরূপ অমৃত ও অব্যয়। আমি শাশ্বত ধৰ্ম এবং ঐকান্তিক সুখের নিদান।
১৪/২৭.......
ভগবান কথা : ২২/০৬/২০১৭
যার মূলদেশ ঊর্ধে, শাখা নিচে, এইরূপ সংসার অশ্বথ-বৃক্ষ অব্যয়। কর্মকাণ্ড যুক্ত ছ্ন্দযুক্ত চতুর্বেদ এর পাতা। যিনি এই সংসাররূপ অশ্বথ বৃক্ষকে অবগত হয়েছেন তিনিই বেদজ্ঞ।
এই সংসাররূপ বৃক্ষের শাখা সমূহ গুণত্রয় দ্বারা বর্ধিত ও বিষয়রূপ প্রবাল বিশিষ্ট, এর শাখা সমূহ উর্দ্ধে ও অধোদেশে বিস্তার করে আছে। এর মূল সকল অধোদিকে মনুষ্য লোকে প্রসারিত। এই মূল সকল ধৰ্মা-ধর্মরূপ কর্মের কারন।
জীবগন এই সংসার রূপ অশ্বথ-বৃক্ষের আকার উপলব্ধি করতে পারে না। এর আদি-অন্ত -মধ্যে ও স্থিতি দুর্বোধ্য। জ্ঞানীগণ অনাসক্তি রূপ অস্ত্রের সাহায্যে এর সুদৃঢ় মূল উচ্ছেদ করে ব্রহ্মকে জানতে পারেন। এদের আর ফিরে আসতে হয় না।যা হতে চিরন্তনী সংসারগাতি বিস্তার হয়েছে সে আদি পুরুষের আশ্রয় করে সেই পদকে অন্বেষণ করতে হয়। যারা অভিমান ও মোহ ত্যাগ করেছে, যারা অনাসক্ত, আত্মজ্ঞানময়, কামনা হীন, সুখ দুঃখরূপ দ্বন্দ্ব বিমুক্ত তারা পরম পদ প্রাপ্ত হয়। আমার যে পরম ধাম - যা প্রাপ্ত হলে জীবের আর পুনর্বার জন্ম হয় না,সে ধামকে সূর্য্য চন্দ্র অগ্নি প্রকাশ করতে পারে না। আমার সনাতন অংশ জীব হয়ে প্রকৃতিতে অবস্থিত মন ও পাঁচ ইন্দ্রিয়কে সংসারে আকর্ষণ করে। বায়ু যেমন পুষ্পাদি হতে সুগন্ধ কনা নিয়ে যায়, তেমনি জীব যখন এক দেহ থেকে অন্য দেহে প্রবেশ করে তখন এই সকলকে সঙ্গে নিয়ে যায়। জীবাত্মা চক্ষু, কর্ন, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক এবং মনকে আশ্রয় করে বিষয় ভোগ করে। জীব-আত্মা কিভাবে সত্বাদিগুন(সত্ব, রজঃ, তম) যুক্ত হয়ে দেহে অবস্থিত করে, বিষয় ভোগ করে, আবার কিভাবে দেহ হতে উত্ক্রান্ত হয় তা অজ্ঞ ব্যাক্তিগন দেখতে পায় না। কিনতু জ্ঞাননেত্র বিশিষ্ট জ্ঞানীগণ তা দেখতে পারেন।সমাহিতচিত্ত যোগীগণ আপনাতে অবস্থিত এই আত্মাকে দর্শন করে থাকেন। কিনতু অজিতেন্দ্রিয় ও অবিবেকী যারা তারা শত চেষ্টাতেও তাকে দেখতে পান না। যে তেজ সূর্যে অবস্থিত থেকে জগৎ উদ্ভাসিত করে এবং যে তেজ চন্দ্র ও অগ্নিতে বিদ্যমান - তা আমারই জানবে। ১৫/১২....
আমি পৃথিবীতে অনুপ্রবিষ্ট হয়ে আপন শক্তির সাহায্যে ভূত সকলকে ধারণ করে আছি। আমি রসময় সমরূপ ঔষধি সকল রসাত্বক করছি। বৈশ্বানর রূপে আমি সব জীবের দেহে আশ্রয় পূর্বক প্রাণ ও অপান চতুর্বিধ অন্ন (চর্ব্য-চুষ্য-লেহ্য-পেয় ) পরিপাক করি। সর্ব জীবের হৃদয় মাঝে আমি অধিষ্ঠিত। আমা হতেই জীব সকল স্মৃতি, জ্ঞান ও বিবেচনা শক্তি লাভ করে। আমি বেদের জ্ঞাতব্য বস্তূ, বেদান্ত কর্তা, ও একমাত্র বেদজ্ঞ। ত্রিলোকে ক্ষর অর্থাৎ বিনাশশীল ও অক্ষর অর্থাৎ অবিনাশী নামে দুটি পুরুষ বর্তমান। তার মধ্যে ক্ষর নামক পুরুষ সকল জীবে একীভূত আছেন। এবং অক্ষর পুরুষ কূটস্থ এবং নির্বিকার ভাবে আছেন। এই ক্ষর ও অক্ষর পুরুষ অপেক্ষা উত্তম পুরুষ হলেন পরম আত্মা। তিনি নির্বিকার হয়েও নিয়ন্তা রূপে তিন লোক ধারণ করে আছেন। ক্ষর -অক্ষর অর্থাৎ নশ্বর ও অবিনশ্বর পুরুষ অপেক্ষা আমি শ্রেষ্ট। সে জন্য বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড এবং বেদ সকলে আমাকে পুরুষোত্তম বলে থাকে। মোহো মুক্ত চিত্তে যিনি আমাকে পুরুষোত্তম বলে জ্ঞাত হন, সেই সর্বজ্ঞ পুরুষ আমারই ভজনা করেন। নিষ্পাপ পুরুষই এই গুহ্য কথা জানতে পারেন। .........১৫/২০....
ভগবান কথা : ২৩/০৬/২০১৭
ভয় শুন্যতা, চিত্ত শুদ্ধি,আত্মজ্ঞান নিষ্ঠা, কর্মযোগে তৎপরতা,দান, ইন্দ্রিয় সংযম, যজ্ঞ, শাস্ত্র অধ্যয়ন, তপস্যা, সরলতা, অহিংসা, সত্য, ক্রোধহীনতা,ত্যাগ, শান্তি, পরনিন্দা বর্জন,দয়া, লোভহীনতা, বিনয়, কুকর্মে লজ্জা, অ-চাপল্য , তেজস্বিতা, ক্ষমা, ধৃতি, শৌচ,অদ্রোহ,নিরভিমানিতা - এই সকল গুন্ গুলি জাতকের দৈব সম্পদ। ১৬/৩......
ভগবান কথা : ২৪/০৬/২০১৭
দম্ভ, দর্প ,অভিমান,ক্রোধ,নিষ্ঠূরতা ও অজ্ঞানতা এগুলি আসুরিক সম্পদ - জাত। দৈবী সম্পদ মোক্ষের হেতু। আসুরী সম্পদ বন্ধনের কারন। দুঃখ করো না তুমি দৈবীসম্পদ নিয়েই জন্ম গ্রহণ করেছো।
আসুরী প্রকৃতি সম্পন্ন ব্যক্তিগণ ধৰ্ম বিষয়ে প্রবৃত্তি কি - অধর্ম বিষয়ে নিবৃত্তি কি তা জানে না। তাদের মধ্যে শুচিতা, সদাচার, সত্য বলে কিছুই নাই। এই জগৎ অসত্য। ন্যায় - অন্যায় বলে কিছু নাই। ঈশ্বর বলে কিছু নাই।স্ত্রী - পুরুষের কামনাই সৃষ্টির কারণ। এইরূপ দৃষ্টি অবলম্বন করে বিকৃতি বুদ্ধি, নীচমন, উগ্রকর্মা, ও জগতের অহিতকার কার্যে প্রভাবিত করে। ..১৬/.৯....
এদের কামনা দুষ্পূরণীয়। দম্ভ, অভিমান ও গর্বের অধীন হয়ে মোহবশতঃ অসৎ কর্মে প্রবৃত্ত হয়। বিভিন্ন অশুচিতে অবস্থান করে।
কাম ভোগকে শ্রেষ্ট মনে করে এতেই মগ্ন থাকে। কামভোগকেই সার বস্তূ মনে করে। শত শত আশা-পাশে আবদ্ধ থাকে। কাম ক্রোধের বশবর্তী হয়ে অসৎ পথে অর্থ সঞ্চয়ে মন দেয়।
আজ আমার এই লাভ হলো , ভবিষ্যতে আমার এই মনোরথ পূর্ণ হবে। এই ধন আমার আছে -ভবিষ্যতে এই লাভ হবে। এই শত্রূ বধ করেছি - অপর সব শত্রূ -কেও বধ করবো। আমি সকলের প্রভূ। আমি সকল ভোগ সুখের অধিকারী। আমিই সিদ্ধ বা কৃতকৃত্য। আমি বলবান। আমিই সুখী। আমি ধনবান, আমি কুলীন, আমার তুল্য আর কে আছে ? আমি যজ্ঞ করবো, আমি দান করবো। এই ভাবে নানা মোহবশে, কামভোগে, আসক্ত চিত্ত হয়ে নরকে পতিত হয়ে থাকে। এরা নিজেদের বড়ো জ্ঞান করে। আর্থিক মান বশে গর্বিত হয়ে, আসুরিক দম্ভ সহকারে অবিধিপূর্বক নাম ও যশ লোভে বিধিহীন যজ্ঞের অনুষ্ঠান করে।
অহংকার, শক্তি, দর্প , কাম ও ক্রোধকে আশ্রয় করে যারা নিজদেহে ও পরদেহে আমার প্রতি হিংসা করে ও আমার নিন্দা করে। আমা - বিদ্বেষী সেই ক্রূর প্রকৃতি নরাধম দিগকে বার বার আমি আসুরি যোনিতে নিক্ষেপ করে - সিংহ -ব্যাঘ্র -সর্প ইত্যাদি যোনিতে নিক্ষেপ করি। এই সকল মূঢ়গন আসুরি যোনিতে জন্ম গ্রহণ করে জন্ম - জন্মান্তরে আমাকে প্রাপ্ত না হয়ে আরো অধম গতি প্রাপ্ত হয়। কাম, ক্রোধ, লোভ, এই তিন নরকের দ্বার স্বরূপ, ইহা আত্মার বিনাশ করে। সে জন্য এই তিনটি সর্বদা পরিত্যাগ করবে। ....১৬/২১....
নরকের দ্বার স্বরূপ কাম, ক্রোধ, ও লোভ। যে এই তিনটি হতে মুক্ত,সেই মুক্ত পুরুষ যদি আপন শ্রেয় সাধন জন্য জাগ্-যজ্ঞ তাপস্যাদির অনুষ্ঠান করে, তবে সে পরমাগতি লাভ করেন। যে শাস্ত্র বিধি ত্যাগ করে যথেচ্ছ ভাবে কাজ করে, সে কখনো সিদ্ধি লাভ করতে পারে না। সে কখনো সুখ বা পরমাগতি লাভ করে না। সে জন্য কর্তব্য বিষয়ে শাস্ত্রের উপদেশই মানবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করবে। ১৬/২৪.......
ভগবান কথা : ২৬/০৬/২০১৭
ভগবান বলছেন, দেহীদিগের তিন প্রকার নিষ্ঠা স্বভাবজাত। সাত্বিক,রাজসিক, তামসিক। সত্বার তারতম্য অনুযায়ী, দেহিগনের শ্রদ্ধা হয়ে থাকে। সত্ত্বগুণের ব্যক্তিগণ দেবতার অর্চনা করেন। রাজসিক ব্যক্তিগণ যক্ষ-রাক্ষসগনের পূজা করেন। তমোগুণের ব্যক্তিগণ ভূত প্রেতাদির পূজা করেন। যারা অশাস্ত্রীয় কঠোর তপস্যা করে, দম্ভ ও অহংকার বশে আসক্তি পরায়ন হয়, শক্তিশালী হয়ে দেহস্থিত ভূতগণকে ক্লেশ দেয় ও শরীরস্থ আমাকেও কষ্ট দান করে, তারা অসুর প্রকৃতির জানবে।
সকলের আহার, দান, যজ্ঞ ও তপস্যাও বিভিন্ন।
আয়ু, উদ্যম ,শক্তি, আরোগ্য, সুখ ও প্রীতি বর্দ্ধনকারী এবং সরস ও স্নিগ্ধ, যার ফল দেহ মধ্যে বহুকাল থাকে, যা খেলে আনন্দ হয় - তাই সাত্বিক আহার।
অধিক কটু, অতি অম্ল, অতি লবনাত্বক, অতি উষ্ণ,অতি রুক্ষ, অতি ঝাল, অতিরিক্ত বিদাহী এসব রাজসিক ব্যক্তির প্রিয়। এই খাদ্য দুঃখ, শোক ব্যাধির সৃষ্টি করে।
অনেক আগে প্রস্তূত খাদ্য, নিরস, বাসি দুর্গন্ধ যুক্ত, উচ্ছিষ্ট, অপবিত্র খাদ্য, তামসিক ব্যক্তির প্রিয়।
ফলাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করে এক মনে অবশ্য কর্তব্য জ্ঞানে শাস্ত্রবিধি অনুযায়ী যে যজ্ঞ করা হয় -সেটাই সাত্বিক যজ্ঞ বলে জানবে। ফলাকাঙ্ক্ষা এবং আপন মহত্ব ও দম্ভ প্রকাশন করে যে যজ্ঞ করা হয় তাই রাজসিক।
অশাস্ত্রীয় রূপে, অন্নদান না করে, যথাবিধি দক্ষিণা না দিয়ে, শ্রদ্ধাহীন ভাবে যে যজ্ঞ করা হয় তাই তামসিক যজ্ঞ।
দেবতা, ব্রাহ্মণ গুরু ও জ্ঞানীগণের পূজা, সূচিত সরলতা, ব্রহ্মচর্য ও অহিংসা এই সকল শারীরিক তপস্যা। অনুদ্বেগকর বাক্য, সত্য অথচ প্রিয় বাক্য বেদ অধ্যায়নে যুক্ত থাকাকে বাচিক তপস্যা বলে। .......১৭/১৫....
মনের প্রসন্নতা, সৌম্য ভাব, মৌনতা, আত্মনিগ্রহ, এবং অন্তরশুদ্ধি, এই সকল মানসিক তপস্যা। ফলের কামনা ত্যাগ করে, একাগ্র মনে
পরম শ্রদ্ধা সহকারে এই তিন প্রকার অনুষ্ঠানকেই সাত্বিক তপস্যা বলে। লোকের প্রশংসা লাভ ও পূজা পাবার জন্য যে তপশ্চরণ করা হয় তাই রাজসিক তপস্যা। অবিবেকী ব্যক্তি দুষ্টবুদ্ধি বশে শরীর প্রভৃতির পীড়া জন্মিয়ে বা অপরের ক্ষতিকরার উদ্দেশে যে তপস্যা করা হয়, তাই তামসিক তপস্যা। দান করা কর্তব্য মনে করে, প্রত্যুপকারীকে দেশ -কাল -পাত্র বুঝে যে দান করা হয়, তাকে সাত্বিক দান বলে। প্রত্যুপকারের আশায়,ফল কামনায়,বা মনের ক্লেশে, যে দান করা হয় - তাকে রাজসিক দান বলা হয়।
ওঁ-তৎ-সৎ এই তিনটি ব্রহ্মের নাম। এর সাহায্যে ব্রহ্মা সৃষ্টির প্রথমে
যজ্ঞ কর্তা ব্রাহ্মণ ও যজ্ঞের হেতু বেদ সৃষ্টি করেছিলেন। এই কারণে "ওঁ" ওঙ্কার শব্দ উচ্চারণ পূর্বক সর্বদা শাস্ত্র-উক্ত যজ্ঞ-দান ও তপস্যা সম্পন্ন করা কর্তব্য। "তৎ" এই শব্দ উচ্চারণ করে মুক্তিকামীগন ফল কামনা ত্যাগ করে নানা প্রকার যজ্ঞ, তপস্যা দান প্রভৃতি ক্রিয়া সম্পাদন করেন। সমস্ত বস্তূর ব্রহ্ম ভাব নির্দেশে এবং সাধুত্বে "সৎ" শব্দ প্রযুক্ত হয়। কর্মেও "সৎ" শব্দ উচ্চারণ করা হয়। যজ্ঞ, তপস্যা, ও দানে যে নিষ্ঠা তাতেও "সৎ" শব্দ ব্যবহার করা হয়। ঈশ্বরের উদ্দেশে যে কার্য করা হয় তাকেও "সৎ" বলা হয়।
অশ্রদ্ধাপূর্বক যে যজ্ঞ, দান, তপস্যা ও অন্যান্য যা কিছু অনুষ্ঠিত হয় তা সকলই অসৎ বলে জানবে। এই সব অসৎ পথ-আশ্রয়ীর
ইহ-লোকে, পরলোকে কোথাও কোনো শুভ ফল হয় না। ১৭/২৮....
ভগবান কথা: ০১/০৭/২০১৭
জ্ঞানীগণ কাম্য সকল ত্যাগকেই সন্যাস বলে জানেন। বিচক্ষণ ব্যাক্তিগন কর্মফল ত্যাগকেই সন্যাস বলে জানেন।
ত্যাগ তিন প্রকার। যজ্ঞ, দান, ও তপস্যা-র কর্মফল ত্যাগ করা উচিত। নিত্যকর্ম ত্যাগ করা উচিত। মোহ বশতঃ নিত্য কর্ম ত্যাগকে তামসিক ত্যাগ বলে। কস্টকর মনে করে, বা দেহক্লেশের ভয়ে যে কর্মা ত্যাগ করে তা রাজসিক ত্যাগ। এই ধরনের ত্যাগে কোনো ফল লাভ হয় না।
কর্তব্য জ্ঞানে যে নিত্য কর্ম করা হয় - সে কর্মের ফল ত্যাগ করাকেই সাত্বিক ত্যাগ বলা হয়। সত্বগুনযুক্ত, মেধাবী, সংশয়হীন ত্যাগী পুরুষ কস্টকর কর্মে বিরক্ত বা সুখকর কার্যে প্রীতি অনুভব করেন না। পৃথিবীতে দেহ-সকল কর্ম ত্যাগ করতে পারে না। তবে কর্মফল ত্যাগী ব্যক্তি প্রকৃত ত্যাগী বলে অবহিত হয়।
অত্যাগী বা সকাম ব্যাক্তিগন মির্ত্যুর পর - ইষ্ট, অনিষ্ট ও ইষ্ট-অনিষ্ট মিশ্রিত, এই ত্রিবিধ কর্ম-ফল প্রাপ্ত করেন।
সর্ব কার্য সিদ্ধির জন্য সাংখ্যে এবং বেদান্তে পাঁচটি কারন বর্ণনা করা হয়েছে। দেহ, অহংকার, ইন্দ্রিয়, প্রাণ-অপান ও দৈব - এই পাঁচটি কারন। দেহ বাক্য ও মনের দ্বারা মানুষ ধৰ্ম বা অধর্ম যা কিছুই করুক - এই পাঁচটি সকলের হেতু। সে জন্য এই পাঁচটিকে না জেনে যে মানুষ আপনাকে কর্তা মনে করে - সে দুর্মতি সত্য জানতে পারে না। আমি কর্তা - বলে যার অভিমান নেই, যার বুদ্ধি কর্মফলে আসক্ত হয় না তিনি সমস্ত লোক হত্যা করলেও, কিছুই হত্যা করেন না এবং তার ফলে তিনি আবদ্ধ হন না।
জ্ঞান, জ্ঞেয়, ও পরিজ্ঞাতা এই কর্ম -প্রবৃত্তির হেতু। করণ অর্থাৎ উপায়। কর্মা, ও কর্তা এই তিনটি ক্রিয়ার আশ্রয়। সাংখ্য দর্শনে জ্ঞান,কর্ম ও কর্তাকে গুনভেদে তিন প্রকার বলা হয়েছে। যে জ্ঞানের দ্বারা পরস্পর বিভক্ত ভাবে অবস্থিত সর্বভূতে এক নিত্য অদ্বয় বস্তুর দর্শন হয়, তাকে সাত্বিক জ্ঞান বলে জানবে। যে জ্ঞানের সাহায্যে ভিন্ন ভিন্ন ভূত সমূহে পৃথক পৃথক ভাবের অনুভব হয়, তা রাজসিক জ্ঞান। যে গুণের সাহায্যে যুক্তি প্রমান শূন্য প্রাণী স্থুল পদার্থে বিশ্ব জগতের তত্ব আরোপ করে তাতে আসক্ত হয়, সেই জ্ঞান তামসিক জ্ঞান।
যে ব্যক্তি অনাসক্ত ভাবে অনুরাগ বা বিদ্বেষ বর্জিত হয়ে অবশ্য করণীয়রূপে যে বিহিত কর্ম করেন, তাকে সাত্বিক কর্ম বলা হয়।
কামনার বশে অহংকার পূর্বক অতি কষ্টে যে কর্মের অনুষ্ঠান করা হয়, তাকেই রাজসিক কর্ম বলা হয়। অপরিণাম দর্শী হয়ে, বিত্ত ক্ষয় পূর্বক হিংসা ও সামর্থ বিচার না করে, মোহবশে যে কর্মা করা হয় তাকেই তামসিক কর্মা বলা হয়।
আসক্তিহীন,অহংকার শূন্য, ধৈর্য্যশীল এবং উৎসাহযুক্ত -সিদ্ধি-অসিদ্ধিতে নির্বিকার কর্তাকে সাত্বিক কর্তা বলে। অনুরাগ পরায়ণ , কর্মফলাকাঙ্খী, লোভী, হিংসুক,অশুচি আনন্দ ও শোকযুক্ত কর্তাকে রাজসিক কর্তা বলা হয়। একাগ্রহীন,অবিনয়ী প্রতারক,মূঢ়, ক্রূর, বিষাদ যুক্ত অলস ও দীর্ঘসূত্রী কর্তাকে তামসিক কর্তা জানবে।
যে বুদ্ধির সাহায্যে মানুষ প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তি, কার্য্য ও অকার্য্য, ভয় ও অভয় বন্ধন ও মুক্তি সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান লাভ করে, তাকে সাত্বিক বুদ্ধি বলা হয়। যে বুদ্ধির দ্বারা ধৰ্ম অধর্ম, কর্তব্য অকর্তব্য যথাযথ জ্ঞান হওয়া যায় না, তাই রাজসিক বুদ্ধি। যে বুদ্ধি দ্বারা ধর্মকে অধর্ম জ্ঞান হয়, কর্তব্যকে অকর্তব্য এইরূপ মিথ্যা জ্ঞান দান করে, তা তামসিক বুদ্ধি।
যে ব্যভিচারিণী ধৃতির সাহায্যে মন-প্রাণ ইন্দ্রিয়ের ক্রিয়া সকলকে সংযত করা হয় তাকে সাত্বিক ধৃতি বলে। যে ধৃতির দ্বারা ধর্ম অর্থ-কাম প্রধান বলে স্থির হয় ও যাতে ফালাকাঙ্ক্ষা জন্মে,তাকে রাজসিক ধৃতি বলে। যে ধৃতির দ্বারা অবিবেকী ব্যক্তি নিদ্রা-ভয়-শোক-বিষাদ ও গর্ব কখনো ত্যাগ করে না, সেটাই তামসী ধৃতি।
যা প্রথমে বিষের মতো মনে হয় - অথচ পরিণামে অমৃতের মতো মনে হয় , আত্মবুদ্ধির প্রসন্নতা জনিত সে সুখকে সাত্বিক সুখ বলে।
ইন্দ্রিয়-সহ বিষয় সংযোগে যে সুখ প্রথমে অমৃতের মতো মনে হয় কিনতু পরিণামে বিষের ন্যায় মনে হয় তাকে রাজসিক সুখ বলে।
যে সুখ প্রথমে ও পরিণামে সর্বদাই মোহ জন্মায়, নিদ্রা, আলস্য ও প্রমাদ হতে সৃষ্ট সে সুখ তামস।
পৃথিবীতে বা স্বর্গলোকে দেবগনের মধ্যেও এমন কেহ নেই যিনি প্রকৃতিজাত এই তিনটি গুন্ থেকে মুক্ত। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্রের কর্ম-সকল তাদের স্বভাব গুন্ অনুসারে ভাগ করা হয়েছে।মানসিক শান্তি, ইন্দ্রিয় দমন, তপস্যা, শুচিতা, ক্ষমা, সরলতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান এই নয়টি ব্রাহ্মণের স্বভাবজাত কর্ম। পরাক্রম, তেজ, ধৈর্য্য, দক্ষতা,যুদ্ধে অপলায়ান, দান ও সকলকে আয়ত্বে রাখার ক্ষমতা - এগুলো ক্ষত্রিয়ের গুন্। কৃষিকার্য, গো ইত্যাদি পশু পালন,বাণিজ্য এগুলো বৈশ্যের স্বভাব জাত কর্ম। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যের সেবা করাই, শুদ্রের স্বভাব জাত কর্ম। আপন আপন কর্মে নিষ্ঠাবান ব্যক্তি কর্মে ব্যাপৃত থাকলে সিদ্ধিলাভ করে।
যার ইচ্ছেয় মানুষ কর্মে প্রেরণা লাভ করে ও যিনি সর্বব্যাপ্ত আছেন , তাকে উপাসনা করলে সর্বসিদ্ধি হয়। নিয়মিত ভাবে পরধর্ম অনুষ্ঠান করার চেয়ে, নিজ ধৰ্ম অঙ্গহীন হলেও প্রসংশনীয়। করেন মানুষ স্বাভাভি জাত কর্ম করলে পাপ ভোগী হয় না। সহজাত কর্ম দোষযুক্ত হলেও, ত্যাগ করা অনুচিত। করেন অগ্নি যেমন ধুম - আবৃত থাকে, তেমনি কর্ম দোষাবৃত থাকে। যিনি সকল বিষয়ে নিরাসক্ত, জিতেন্দ্রিয়, যার কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই, তিনি সন্যাসের সাহায্যে নিষ্কাম কর্ম ত্যাগ করে, সকল কর্ম বন্ধন মুক্ত হন।
শুদ্ধবুদ্ধি যুক্ত হয়ে, সাত্বিক ধৈর্য্য সহকারে। স্থির চিত্তে, সাব্দাদি বিষয় সমূহ ত্যাগ করে, রাগ দ্বেষ ত্যাগ পূর্বক নির্জনে মিতভোজী হয়ে, বাকি, মন, প্রভৃতিকে সংযত করে ধ্যান ও বৈরাগ্য আশ্রয় করে, অহংকার, বল, দর্প , কাম, ক্রোধ ও পরিগ্রহ পরিত্যাগী, এই রূপ মমতা ও বিক্ষেপ শুণ্য ব্যক্তি ব্রহ্ম সাক্ষাৎকার লাভ করেন। ব্রহ্মভাব প্রাপ্ত, নির্মলচিত্ত ব্যক্তির শোক বা আকাঙ্খা নেই। সকল ভূতে সামা ভাবাপন্ন হয়ে আমাতে পরমাভক্তি লাভ করেন। সেই পরমভক্তির জন্য আমাকে সর্ব্যাপী ও সচ্চিদানন্দ স্বরূপ, তা জানতে পারেন। এবং তা জেনে জ্ঞান বশে আমাতেই প্রবেশ করেন। আমার শরণাপন্ন হয়ে সর্বদা সব প্রকার কর্ম করে, আমার প্রসাদে সর্বদা শাশ্বত অব্যয় পদ লাভ করেন। ......১৮/৫৬....
ভগবান বলছেন - তুমি মনের সাহায্যে আমা পরায়ণ হয়ে, মনে মনে সকল কর্ম আমাতে সমর্পণ করে, বুদ্ধিযোগ আশ্রয়ে অমতেই স্থির করো। আমাতে চিত্ত স্থির হলে, আমার কৃপায়, সব রকম দুর্গম পথ পার হতে সক্ষম হবে। আর যদি অহংকার বশে, আমার কথা না শোনো, তবে তুমি বিনষ্ট হয়ে যাবে। যদি অহংকার বশে যুদ্ধ করবো না বলে স্থির সংকল্প হও, কিন্তু জন্মজাত পূর্ব সংস্কার, তোমাকে যুদ্ধে উৎসাহিত করবে। মোহবশে যে কাজ তুমি করতে ইচ্ছা করছো না, তাও স্বভাব জাত আপন কর্মের বশে তোমাকে করতে হবে। সর্বজীবের হৃদয়ে বিরাজিত ঈশ্বর মায়ায় মোহিত করে, যন্ত্রের ন্যায় কাজ করাছেন বা ঘোরাচ্ছেন। সর্বপ্রকারে তুমি তারই শরণাপন্ন হও। তার প্রসাদে তুমি পরম শান্তি ও শাশ্বত নিত্যধাম প্রাপ্ত হবে। আমি তোমাকে গুহ্য থেকে গুহ্যতর জ্ঞান সম্পর্কে উপদেশ দিলাম। আমার দেওয়া জ্ঞানের সম্যক বিবেচনা পূর্বক - যা ইচ্ছে তাই করো।
শ্রী ভগবান অর্জুনকে বলছেন : তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয়। তাই তোমার মঙ্গলের জন্য আমি আবার সবচেয়ে গুহ্যতম কথা তোমাকে বলছি - শোনো।
তুমি আমাগত চিত্ত হও। আমাকে ভক্তি করো। আমার পূজা করো। আমাকে নমস্কার করো। তাতে আমার প্রসাদে আমাকেই প্রাপ্ত হবে। তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয়। সে জন্য তোমার কাছে আমি সত্য অঙ্গীকার করছি যে, অবশ্যই তুমি আমাকে পাবে। তুমি সকল ধৰ্ম ত্যাগ করে একমাত্র আমারি শরণাপন্ন হও, আমি তোমার সকল পাপ মুক্ত করবো।
আমার এই সকল কথা স্বধর্মানুষ্ঠানহীন, অভক্ত, শুশ্রূষা রহিত ব্যক্তিকে বলবে না। যে ব্যক্তি অসূয়া পরবশ হয়ে আমার নিন্দা করে, তাকে বোলো না। আমার ভক্তবৃন্দের কাছে, এই পরম গুহ্য কথা যে বলবে তিনি আমাতে সর্বোত্তম ভক্তি রেখে পরাগতি লাভ করবেন।
মানুষের মধ্যে তার চেয়ে আমার প্রিয় আর কেউ নেই,ভবিষ্যতেও হবে না। যে ব্যক্তি আমাদের এই ধর্মালোচনা অধ্যয়ন করবেন, তিনি জ্ঞানরূপ যজ্ঞ দ্বারা আমার পূজা করবেন। এটাই আমার মত। যে ব্যক্তি শ্রদ্ধাযুক্ত হয়ে, ঘৃণা দ্বেষ শুন্য হয়ে ইহা শ্রবণ করেন, তিনিও পাপ হতে মুক্ত হয়ে পুণ্যাত্মা গনের প্রাপ্য শুভলোক প্রাপ্ত হন।
ভগবান বলছেন : হে পার্থ অর্থাৎ অর্জুন তুমি একান্ত মনে আমার সকল কথা শুনেছো তো ? হে ধনঞ্জয় ! (ধনকে যিনি জয় করেছেন ) তোমার অজ্ঞান জনিত মোহ দূরীভূত হয়েছে তো ?
ভগবান মুখনিঃসৃত বাক্য শ্রী গীতায় আর নেই। এর পরে -
অর্জুন বলছেন : হে অচ্যুত ! তোমার প্রসাদে আমার মোহো দূর হয়েছে। আমি আমার আত্ম স্মৃতি ফিরে পেয়ে স্থির সংকল্প হয়েছি। আমার আর কোনো সংশয় নেই। এখন থেকে আমি তোমার বচন বা নির্দেশ পালন করবো।
এই অব্দি বলে সঞ্জয়, যিনি দিব্য দৃষ্টি-বলে এই অদৃশ্যপূর্ব ঘটনাবলী দেখছিলেন এবং রাজা ধৃতরাষ্ট্রকে আনুপূর্বক বর্ণনা করছিলেন - তিনি বললেন : হে মহারাজ ! মহাত্মা বাসুদেব ও অর্জুনের এই অদ্ভুত রোমহর্ষক কথোপকথন আমি শুনলাম। ব্যাসের প্রসাদে আমি স্বয়ং যোগেশ্বের শ্রীকৃষ্ণের শ্রীমুখে এই অতিগুহ্য যোগের কথা শুনেছি। হে রাজন ! শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের সেই এটি অদ্ভুত বিশ্বরূপ স্মরণ করে, আমার মহা বিস্ময় হচ্ছে। আমি বার বার রোমাঞ্চিত কলেবর হচ্ছি। যেখানে যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ,যেখানে ধনুর্ধার পার্থ, সেখানে শ্রী,জয়,ঐশর্য্য, নীতি বিরাজিত।এই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
ওম শ্রী বাসুদেবায় নমঃ।
ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ। হরি ওম.
No comments:
Post a Comment