Tuesday 28 September 2021

ঈশ্বর-দর্শন পাবার উপায়।

  

 ঈশ্বর-দর্শন পাবার উপায়। 

আমার খুব ভালো লাগে যখন আমি হরেক-রকম আনন্দের সঙ্গে কথা বলি। মুক্তানন্দ, পরমানন্দ, জ্ঞানানন্দ, চিদানন্দ, এমনিতর অনেক আনন্দপুরুষ আছেন, যাঁরা সর্বদা আধ্যাত্মিক আকাশে বিচরণ করেন।এঁরা  যেন পরশপাথর। এদের সংস্পর্শে এলে, নিজেকে আনন্দের অংশ বলে মনে হয়। আমিও একটা অন্য জগতে তা সে সাময়িক সময়ের জন্য হলেও ঘোরাফেরা শুরু করে দেই। একদা এক আনন্দ বলছিলেন, ঈশ্বরকে তুমি দেখোনি, আত্মা বলে একটা কিছু আছে, সেটি কি উপলব্ধি দিয়ে বুঝতে পারো ? যদি না পারো, তবে ঈশ্বর আছেন, বা আত্মা আছেন, একথা বলার অধিকার তোমার জন্মায় না ।  বরং তুমি বলো তিনি আছেন কি না সেটি আমি বোঝার চেষ্টা করছি, তিনি কোথায় আছেন তা জানবার চেষ্টা করছি, তার দর্শন পাবার চেষ্টা করছি।

আজকাল ধর্ম্মের বিরোধিতা করেন, এমন মানুষ দেখতে পাই না। তবে ধর্ম্মের নামকরে, মানুষ যে অধর্ম্ম আচরণ করেন, সেটা আমাদের সবার চোখের সামনেই ঘটছে। এর মধ্যে আবার  একদল মানুষ অবশ্য আছেন, যারা   পরজীবি, কিন্তু নিজেকে বুদ্ধিজিবী বলে পরিচয় দেন । নিজেকে পণ্ডিত বলে মনে করেন। এরা ধর্ম্ম-আচরণ সম্পর্কে একটা অদ্ভুত কথা বলে থাকেন, আর তা হচ্ছে, ধর্ম্ম দর্শন ইত্যাদির কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। কিন্তু এর একটা উপযোগিতা আছে, আর তা হচ্ছে, ধর্ম্ম মানুষকে প্রেরণা দিতে পারে। ধর্ম্ম  মানুষকে সৎ ও নীতিপরায়ণ করতে পারে। ধর্ম্ম মানুষকে কর্তব্যনিষ্ঠ করতে পারে। আসলে তারা বলতে চান, ধর্ম্ম মানুষকে দুর্বল করে দেয়, ধর্ম্ম মানুষকে ভীতু করতে পারে। ফলত ধর্ম্ম মানুষকে শোষণের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পারে।  ধর্ম্ম মানুষকে শোষণের একটা মোক্ষম উপায় হতে পারে। 

যারা এসব কথা বলে থাকেন, তাদের সম্পর্কে বলতে ইচ্ছে করে, ধর্ম্মকে এরা বোঝেননি। ধর্ম্ম মানে শুধু কতকগুলো অন্তঃসার শূন্য বাক্যের সমষ্টি  নয়, ধর্ম্মকথা কোনো প্রলাপ বাক্য  নয়। এরা পুরোহিতের দেওয়া প্রলাপবাক্যগুলোকে বিশ্বাস করে, একেই ধর্ম্ম বলে ভেবেছে। এরা  ধর্ম্মের গভীরে ঢোকে নি। এরা মানুষের অন্ধ বিশ্বাসগুলোকে ধর্ম্মের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছে। 

সমস্ত মানুষ যুগ-যুগ ধরে সত্যকে খুঁজছে। এই খোঁজা  বিরামহীন। বস্তু থেকে প্রাণ, প্রাণ থেকে চেতনা। চেতনা থেকে অন্তরশুদ্ধি। অন্তরশুদ্ধি থেকে দিব্য অনুভূতি। সন্দেহ-আশঙ্কার সমস্ত তমোজাল  ছিন্ন করে, জীবনের সমস্ত বাঁক ছুঁয়ে পরম-পুরুষের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম অনুভব করাই ধর্ম্ম। ধর্ম্ম কোনো শাস্ত্রগ্রন্থ নয়, ধর্ম্ম কোনো মনিষীর  বাক্য নয়, ধর্ম্ম অনুভূতিলব্ধ জ্ঞান,যা প্রত্যেকটি জীবনের জন্য চরম সত্য।  

এখন কথা হচ্ছে, ঈশ্বর আছেন। আমরা সবাই ঈশ্বর থেকে উদ্ভূত, ঈশ্বরের সঙ্গেই বাস  করছি, অন্তিমে ঈশ্বরেই মিশে যাচ্ছি। কিন্তু ঈশ্বরের দর্শন পাচ্ছি না। এ এক অদ্ভুত যাদু। দেখছি কিন্তু দেখছি না। শুনছি কিন্তু শুনছি না। এর কারন কী ? এর কারন  হচ্ছে, আমরা নিজেকে অশুদ্ধ করে ফেলেছি। আমরা যা নোই তার মধ্যে প্রবেশ করে, নিজেকে তাই ভাবতে ভাবতে বিভোর হয়ে গেছি। আর এই জন্যই ধর্ম্মের উদ্ভব। ধর্ম্ম মানুষের মনের ময়লা দূর করবার প্রক্রিয়া। শাস্ত্র সেই ইঙ্গিত দিতে পারে। মনীষীগণ নির্দেশ দিতে পারেন। কিন্তু জীববোধের বা জীবনবোধের  পরিবর্তন করতে পারেন না। জীবনবোধের পরিবর্তনই ধর্ম্ম যা কেবলমাত্র নিজেকেই করতে হয়। 

দূরের জিনিস দেখবার জন্য দূরবীন সাহায্য করতে পারে, কাছের জিনিস দেখবার জন্যও  অণুবীক্ষন  যন্ত্র আমাদের সাহায্য করতে পারে। কিন্তু মনকে দেখবার জন্য, নিজের অন্তরকে দেখবার জন্য কোনো বাহ্যিক  যন্ত্র সাহায্য করতে পারে না। এই যন্ত্র আমাদের সবার ভিতরেই ভগবান দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু যুগ যুগ ধরে, জন্ম জন্মান্তর ধরে,    এর অব্যবহারের ফলে, আমরা এই যন্ত্রের কথা ভুলেই গেছি। আমরা যদি আমাদের মনকে শুদ্ধ করতে পারি, অর্থাৎ মনের ময়লা কেটে গেলেই, আমরা সেই শুদ্ধ মনকে ধরতে পারি, যার আরো একটি নাম হচ্ছে হৃদয়। এই হৃদয় উদ্ভাসিত হলে আমাদের নতুন দৃষ্টিশক্তি জাগ্রত হয়ে ওঠে। অধ্যাত্ম জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, এই দিব্যদৃষ্টির বিকাশ সাধন। 

গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলছেন, তুমি তোমার স্থুল চর্ম্মচক্ষু দ্বারা আমার বিশ্বরূপ দর্শন করতে পারবে না। এইজন্য আমি তোমাকে দিব্যচক্ষু দান  করছি। এই দিব্যচক্ষু দ্বারা তুমি আমার ঐশ্বরিক যোগৈশ্বর্য্য দর্শন করো। আমার দেহে আদিত্য সকল, বসুদেব, বসুগন, রুদ্রগন, অশ্বিনীকুমারদ্বয় এবং বায়ুসকল দর্শন করো। যা তুমি এই কখনো দেখোনি। আমার  এই সর্বব্যাপী বিরাট দেহে, সমস্ত বিশ্ব  চরাচর বিদ্যমান। অর্জুন বিশ্বরূপ দর্শন করেছিলেন। অর্জুনের দেখা সেই  বিরাট দেহের একটা ক্ষুদ্র সংস্করণ হচ্ছে স্থুল মনুষ্য দেহ।  এই দেহ যখন যোগের সাহায্যে বিস্তারলাভ করে, তখন সমস্ত জগৎ ব্রহ্মান্ড, স্থাবর-জঙ্গম সমস্ত জগৎই  স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, অতীতে যা কিছু ঘটেছে, ভবিষ্যতে যা কিছু ঘটবে সবই তুমি আমার এই দেহে দেখতে পাবে।      

 ভগবান সখা অর্জুন ভাগ্যবান। জন্ম জন্মান্তরের সাধনায় অর্জুন ভগবানের সান্নিধ্যে আসতে   পেরেছিলেন ।  আর স্বয়ং ভগবানই  তাকে দিব্যদৃষ্টি দান  করেছিলেন।  আমাদেরকেও এই ভগবানের সান্নিধ্যে এসে দিব্যদৃষ্টি সম্পন্ন হতে হবে, তবেই আমরা সেই বিরাট পুরুষের দর্শন করতে পারবো। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, অতীতে যা কিছু ঘটেছে, ভবিষ্যতে যা কিছু ঘটবে সবই তুমি আমার এই দেহে দেখতে পাবে। কথাটা খেয়াল করুন, ভগবান বলছেন, তুমি আমার ঐশ্বরিক যোগৈশ্বর্য দর্শন করো। অর্থাৎ যোগৈশ্বর্যের সাহায্যেই  মানুষের ঈশ্বরপ্রাপ্তি ঘটতে পায়ে। 

আমাদের যোগৈশ্বর্য্য তখনই দর্শন হতে পারে, যখন আমরা  শক্তিশালী মনের অধিকারী হবো।  যখন আমরা সুস্বাস্থের অধিকারী হবো, যখন আমরা পবিত্র হতে পারবো, যখন আমরা বীর্যবান হতে পারবো। আসলে ঐশ্বর্য্য দর্শনের প্রতিক্রিয়া সহ্য করবার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে আমাদের । আর এই শুদ্ধমনের যখন অধিকারী হবো, তখন আমরা অনুভব করবো  আমরা কোনো শরীর  নোই, মন নোই, আমরা একটা আধ্যাত্মিক সত্তা। আমরা অনন্ত পূর্ণের এক-একটা অংশ। এই প্রকৃত দর্শন আমাদের তখনই সম্ভব হতে পারে, যখন আমাদের ইন্দ্রিয়সকল স্থির, নিশ্চেষ্ট, আর সংযত হয়ে যায়, মন অচঞ্চল হয়ে যায়, আর চিত্তবৃত্তি নিরোধের অবস্থায় অবস্থান করে। 

কিন্তু কথা হচ্ছে, এই যে দর্শন, তা আসলে আমাদের চিত্ত-বিভ্রম নাকি সত্যিকারের দর্শন তা আমরা কি করে বুঝবো ? ঠাকুর রামকৃষ্ণ বলতেন, বাতাস তো বইছে, বাতাস সর্বত্র বইছে।  আমাদের কাজ হচ্ছে, পাল তুলে দেওয়া। পাল তুলতে পারলেই আমরা বাতাসের শক্তি অনুভব করতে পারবো। তখন ঈশ্বরের শক্তি আমাদের জীবন নৌকাকে নির্দিষ্ট পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকবে। প্রকৃত ঈশ্বর অনুভূতি যখন হবে, তখন এক অনির্বচনীয় আনন্দ, উল্লাস, প্রশান্তি আমাদেরকে ঘিরে থাকবে।  জাগতিক কোনো বিপর্যয়, আমাদের উদ্বিগ্ন করতে পারবে না। নিজের সন্মন্ধে  তখন এক সন্দেহাতীত জ্ঞানের উদ্ভব হবে। এই জ্ঞান কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনীয় নয়। নিজেই নিজের সঙ্গে তুলনীয়। আর এই অবস্থায় পৌঁছাতে গেলে, আমাদের আত্মা-ভিন্ন সমস্ত প্রিয়বস্তুকে সযত্নে পরিহার করতে হবে। বৃহদারণ্যক উপনিষদ বলছে, শ্রুতি, অনুভূতি আর যুক্তি, এই তিনটি আধ্যাত্মিক জীবনের সোপান। শ্রবণ, মনন ও নিদিধ্যসনের দ্বারা আত্মার দর্শন হয়, আবার এই দর্শন দ্বারাই সমস্ত কিছু বিদিত হয়। (বৃহদারণ্যক -২/৪/৫) এই হচ্ছে ধর্ম্ম। এই হচ্ছে দর্শন।   ক্রিয়াত্মক ধ্যানে  বিষয় জ্ঞান হয়। আর  জ্ঞানাত্মক ধ্যানে আত্মবিষয়ক জ্ঞান হয়। 

ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।  হরি ওম। 

ঈশ্বর দর্শনে আমাদের কি লাভ হয় ? 

যাঁরা ঈশ্বর দর্শন করেছেন, তাদের কি কোনো লাভ হয়েছে।  তাদের কি নতুন করে হাত-পা-মাথা  গজিয়েছে ? নাকি তাঁদের  পার্থিব দুঃখের অবসান হয়েছে ? তাঁরা  কি কোনো পরশপাথরের সন্ধান পেয়েছেন, যা থেকে তাঁদের সব  কষ্ট দূর হয়ে গেছে ?

দেখুন, সমস্ত কাজের একটা ফল আছে। এমনকি যে কোনো কাজকে আমরা বিচার করি তার ফল দিয়ে। তো আধ্যাত্মিক ক্রিয়া কর্ম্মের বিচার আমাদের তার ফল দিয়ে করতে হবে। এখন কথা হচ্ছে,  এতে  কি আমাদের পার্থিব অভাব পূরণ হবে ? আধাত্মিক ক্রিয়াকর্ম্মের দ্বারা আমরা কি নাটকীয় ভাবে কোনো পার্থিব বস্তু লাভের যোগ্য হবো ? আমাদের পার্থিব দুঃখের অবসান ঘটবে কি ? এমন অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে, আমাকে  অনেকবার। সোজা কথায় বলতে গেলে বলতেই হয়, না তেমনটি হবার কোনো সম্ভাবনা নেই এই রাস্তায়। তবে সম্ভাবনা একটা আছে, সেটা কেমনতরো, সেকথাও আমরা আজ  শুনবো।  

মহাত্মাগণ বলছেন, আমাদের যদি সত্যিকারের দর্শন হয়, অর্থাৎ আমরা যদি সত্যিকারের আধাত্মিক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারি, তবে আমাদের চরিত্রে একটা আমূল পরিবর্তন লক্ষ করা যাবে। আমরা তখন একটা পবিত্র জীবনের দিকে ঝুঁকবো।  আমাদের মানসিক শক্তি যাবে বেড়ে ।  এমনকি আমাদের অন্যের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিরও  পরিবর্তন ঘটতে থাকবে । অন্তরে নতুন আশার সঞ্চার হবে। আমরা অন্যের প্রতি অনেক বেশি উদার হয়ে যাবো। আমাদের দৈনন্দিন বা অর্থকরি  কাজের মধ্যেও  এই পরিবর্তন স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়বে। আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা জীবাত্মার উন্নতি সাধন করতে পারে। সাধকের মধ্যে তখন প্রাকৃতিক সম্পদের চেয়ে অতিপ্রাকৃত সম্পদ তাকে  সমৃদ্ধ করে তুলবে। 

তাহলে দেখা যাচ্ছে অধ্যাত্ম উন্নতিতে আমাদের  সরাসরি কোনো পার্থিব লাভ হবার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু সত্য হচ্ছে, অধ্যাত্মজীবন যখন পূর্নতা লাভ করে, তখন আমাদের পার্থিব অভাববোধ থাকে না। এমনকি অধ্যাত্ম জগতে বিচরণকারী মানুষ যা কিছু সংকল্প করেন, তা যদি পার্থিব বস্তু লাভের বিষয়ও হয়, তা অবশ্য়ই পূরণ হয়ে যায়।  আর তা যদি না হতো, বিবেকানন্দ ও তার সঙ্গীসাথীগন কোনো অর্থকরী কাজ না করেও, প্রচুর অর্থ ব্যয় করে, শুধু বেলুড় মঠ  নয়, বিভিন্ন জায়গায় হাজার হাজার মঠের স্থাপন করতে পারতেন না।  আপনি বলতে পারেন, এগুলোতো সব দানের অর্থে করা হয়েছে।  দেখুন, দান   কেউ কাউকে এমনি এমনি দেয়  না। অর্থব্যবস্থা বিনিময় প্রথার উপরে নির্ভরশীল। এই বিনিময় তখনই কার্যকরী হয়, যখন একে  অন্যের সন্তুষ্টি বিধান করতে পারে। আপনি অর্থের বিনিময়ে যেমন পার্থিব বস্তু সংগ্রহ করেন, তেমনি আপনি অর্থের বিনিময়ে অন্যের সেবাকর্ম্মের জন্য আগ্রহী হন। তো অর্থ একটা বিনিময়ের মাধ্যম, যার সাহায্যে আপনি আপনার বাঞ্ছিত  বস্তু বা সেবা গ্রহণ করে থাকেন। অর্থের কোনো নিজস্ব উপযোগিতা নেই। এটি বিনিময়ের একটা স্বীকৃত মাধ্যম মাত্র। তো বিবেকানন্দ বা তার সঙ্গীসাথীগন নিশ্চই এমন কিছু (অপার্থিব বস্তু যা নিশ্চই অর্থ নয় ) মানুষকে দিতে পেরেছিলেন, যার জন্য, মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে, অর্থ দান  করেছিলেন। তাই বলছি, আপনি যদি আধ্যাত্মিক দিকে অগ্রসর ব্যক্তি হন, আর আপনার মধ্যে যদি কোনো সংকল্প জাগে, তা পূরণ করবার জন্য, স্বয়ং ঈশ্বর মানুষের মাধ্যমেই আপনাকে সাহায্য করে থাকেন। এরজন্য, সেই সাধককে আলাদা করে, কোনো অর্থকরী কাজ করতে হয় না। এই অভিজ্ঞতা ঈশ্বরের কৃপায়, আমার  জীবনে বারবার হয়েছে।  আর সত্য কথা বলতে কি, এঁরা  আপনাতেই সন্তুষ্ট, অল্পতেই সন্তুষ্ট, তাই এঁদের  মধ্যে কোনো অভাববোধ থাকে না। একবেলা খাবার না জুটলেও, যেমন মুখের হাসি মিলিয়ে যায় না, তেমনি অতিরিক্ত কিছু পেলেও, এদের মধ্যে কোনো উচ্ছাস পরিলক্ষিত হয় না। এঁদের  মন  সদা আনন্দ সাগরে ভাসতে থাকে। 

কিন্তু কথা হচ্ছে কবে আসবে সেই দিন, যেদিন আমরা আনন্দ সাগরে স্নান করবো ? কবে হবে সেই দর্শন, যেদিন আমি আনন্দে বিহ্বল, কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাবো ? কবে আসবে সেই দিন, যেদিন আমরা অর্জুনের মতো বলতে পারবো, হে দেব, তোমার দেহে সমস্ত দেবতা, স্থাবর-জঙ্গমাত্মক বিশ্ব চরাচর, সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মাকে দেখতে পাচ্ছি। হে বিশ্বরূপ, তোমার আদি অন্ত  আমি দেখতে পারছি না। তোমার তেজঃরাশি আমি সর্বত্র দেখতে পাচ্ছি। তুমিই আশ্রয়, তুমিই রক্ষক, তুমিই সনাতন পুরুষ। 

মহাত্মাগণ বলছেন, এই অভিজ্ঞতা লাভের  জন্য, অধৈর্য হলে চলবে না। সাধক যখন প্রস্তুত হবে, যখন জীবাত্মা প্রস্তুত হবে তখন এই দর্শন অবশ্য়ই হবে। আর জানবেন, প্রতিটি  জীবাত্মার অবশ্য়ই এই দিন আসবে, যেদিন জীবাত্মার  উদ্গমন  হয়। পরমপিতা পরম-ঈশ্বর আমাদের দর্শন দিয়ে কোলে তুলে নেবেন। কেননা, প্রতিটি জীবাত্মার এটাই পরিণতি। বীজ পরিবেশ পেলে যেমন, নিজেকে নিঃশেষ করে  গাছে পরিণত হয়, তেমনি জীবাত্মা একসময় পরম-আত্মায় নিঃশেষিত হয়। 

কিছু অধৈর্য্য ও দুর্বলচিত্তের মানুষ আছেন, যারা দেবদেবীর মূর্তি স্বপ্নে দেখে ভাবেন, তাদের অনেক উন্নতি হয়েছে। দেখুন কোনো কোনো স্বপ্ন আমাদের গুপ্ত বাসনা থেকে আসে। কতকগুলো স্বপ্ন প্রতীক  হিসেবে দেখা দেয়। স্বপ্নের সঠিক তাৎপর্য বিশ্লেষণ না করে, স্বপ্নের বস্তুর নির্নয় সম্ভব নয়। স্বপ্নের পরীক্ষা করলে, আমরা স্বপ্নদ্রষ্টার ব্যাক্তিত্ত্বের একটা নতুন দিকের সন্ধান পেতে পারি। আমাদের ব্যক্তিত্বের অনেক সুপ্ত দিক আমাদের স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পায়। আবার স্বপ্নে অনেক ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে, আমাদের মধ্যে ভয়ের উদ্রেগ হয়। আসলে আমাদের মধ্যে যা সত্য, তা যদি আমরা স্বপ্নের মাধ্যমে জানতে পারি, তবে আমাদের অনেক উপকার হতে পারে।  আমরা আমাদের ত্রুটিগুলোকে বা বিচ্যুতি গুলোকে সংশোধন করে নিতে পারি। নতুবা স্বপ্ন আমাদের কোনো কাজে লাগতে পারে না।  আসলে অনেক সময় স্বপ্ন আসে আমাদের চেতনার গভীর স্তর  থেকে।  অনেকেই স্বপ্নের মাধ্যমে তার সংশয় নিরসনের সন্ধান পেতে পারেন। যে প্রশ্ন তাকে বারবার উদ্বিগ্ন করছে, সেই জটিল প্রশ্নের উত্তর আমাদের স্বপ্নের মাধ্যমে আসতে  পারে। কোনো কোনো স্বপ্ন আমাদের আত্মার গভীর আকাংখ্যা ব্যক্ত করে থাকে। কেউ কেউ স্বপ্নে মন্ত্রের ধ্বনি শুনতে পান। আর পরবর্তীতে দেখা যায়, গুরুপ্রদত্ত মন্ত্রের সঙ্গে স্বপ্নে শোনা মন্ত্র হুবহু মিলে  গেছে। তবে একটা কথা বলা যেতে পারে, স্বপ্ন যখন আমাদের গভীর  চেতন মনের স্তর থেকে আসে. তখন  তার আধ্যাত্মিক মূল্য অসীম।  আর যদি স্বপ্ন আমাদের চেতন স্তর  থেকে না আসে, তবে সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। 

তবে এই প্রসঙ্গে আমরা বৃহদারণ্যক উপনিষদে একটা গভীর  সংকেত পেতে পারি। সেখানে বলা হচ্ছে, যখন চন্দ্র-সূর্য-আগুন এমনকি শব্দের অস্তিত্ত্ব থাকে না, তখন আমরা কোন আলোর সাহায্যে কাজ করে থাকি ? সেই আলো  হচ্ছে আত্মার আলো। আসলে সমস্ত আলো যা বহির্জগৎ থেকে আসে, তা আমাদের জাগ্রত অবস্থায় কাজ করতে সাহায্য করে থাকে।  কিন্তু যখন আমরা নিদ্রিত থাকি, অর্থাৎ স্বপ্নাবস্থাতে থাকি, তখন কোন আলো  আমাদের পথ দেখায় ? তখন কোন্ আলোতে আমরা স্বপ্নের সমস্ত কাজ করে থাকি ? এই আলোকেই বলা হয়ে থাকে আত্মার জ্যোতি।  এই আত্মজ্যোতির সাহায্যেই আমরা গভীর ঘুমে জ্ঞান সংগ্রহ করি, আনন্দ আস্বাদন করে থাকি, এমনকি বিভিন্ন স্বপ্ন-ক্রিয়া করে থাকি।  এই আত্মজ্যোতিই সমস্ত কিছুকে আলোকিত করে থাকেন। যা আমাদের দৃষ্টগোচর নয়। আত্মজ্যোতি স্ব-প্রকাশিত। আত্মজ্যোতি স্বয়ং প্রকাশিত।  অন্যকেউ এঁকে  কেউ প্রকাশ করেন না। আমরা নিদ্রাকালকে বিশ্রামের সময় বলে মনে করি।  অগভীর ঘুমে আমরা স্বপ্ন দেখি, গভীর ঘুমে আমরা অচেতন থাকি। কিন্তু যোগীপুরুষ গভীরঘুমবৎ সুসুপ্তিতে জাগ্রত থাকেন, চেতন থাকেন । এইজন্য বলা হয়ে থাকে সবাই যখন নিদ্রামগ্ন, যোগী তখন জেগে আছেন।

যাইহোক, আমরা যে আলোচনা করছিলাম, আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতায় আমাদের কি লাভ হয় ?  আমাদের একাগ্রতা যত  গভীর হয়, আমাদের দিব্যগুণের তত উন্মেষ ঘটতে থাকে। এই সময় সাধকের শুদ্ধসত্তা ব্যক্তি চেতনাকে অতিক্রম করে সমষ্টি চেতনার মধ্যে প্রবেশ করে। অর্থাৎ ব্যষ্টি চেতনার বিস্তার লাভ করতে করতে একসময় সমষ্টির মধ্যে আমরা প্রবেশ করি। সাকার তখন নিরাকারে মিলিয়ে যায়। আমরা অনুভব করি, সমস্ত অভিব্যক্তি একই আত্মার অখন্ড চৈতন্য সত্তা। সমস্ত বিভ্রান্তি দূর হয়ে যায়, সমস্ত বিভেদ দূর হয়ে যায়।  নিজের মধ্যে অনন্ত প্রেম-করুনার উদ্ভব হয়।  আমরা যেন পূর্ন  হয়ে উঠি। এইসময় প্রথমে একটা জাগতিক স্পন্দন  অনুভব হয়। শরীরের ভিতরের কোনো একটা কেন্দ্র থেকে যেন এই স্পন্দন চক্রাকারে বর্ধিত হতে হতে  বিরাটের সঙ্গে মিলিত হতে শুরু করে। স্থূল দেহ তখন চিন্তাদেহে পরিণত হয়। 

এই আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতাকে আপনি কিভাবে যাচাই করবেন ?  নিজের এই অভিজ্ঞতা বারবার স্পন্দিত হচ্ছে কি না খেয়াল করুন । এইসময় গুরুবাক্যের কথা স্মরণ করুন । দেখুন, গুবাক্যের সঙ্গে আপনার অভিজ্ঞতা মিলছে কি না। নিজের অভিজ্ঞতাকে শাস্ত্রবাক্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে চেষ্টা করুন । এই তিনভাবে যদি নিজেকে যাচাই করে দেখেন, তবে আত্ম-প্রবঞ্চনার শিকার হতে হবে না। 

সবশেষে একটা কথা বলি, আমাদের এই দেহ জড়বস্তুর সমাহার। তাই জড়জগতের সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আমরা আমাদের মনের জগতে বিচরণ করবো। আমরা অতিচেতন স্তর  অর্থাৎ আধ্যাত্মিক স্তরে নিজেকে নিয়ে যাবো। কিন্তু নিজেকে সেই  উচ্চ-স্তর থেকে নামিয়ে শরীরকে সাম্যবস্থাতে ফিরিয়ে আনার কৌশল আয়ত্ত্ব করতে হবে।  অর্থাৎ বাহ্যজ্ঞান হারালে চলবে না। আমাদের চেতন থাকতে হবে।  এইসময় আমাদের একজন সাহায্যকারীর প্রয়োজন হয়। তাকে   আপনি গুরুদেব বলতে পারেন, বা সাধনসাথী বলতে পারেন। এদের সান্নিধ্যে, এদের সাহায্যে আপনিই আধ্যাত্মিক জগতের অমৃত আস্বাদন করতে পারবেন। 

ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।  হরি  ওম।


ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।  হরি ওম। 

মুমুর্ষ রুগীর মহৌষধি মহামন্ত্র 

ওঁং তৎ সবিতুর্বরেণ্যম ত্র্যম্বকং যজামহে 
সুগন্ধিম পুষ্টিবর্দ্ধনম ভৰ্গোদেবস্য ধীমহি। 
উর্বারুক্মিব বন্ধনাৎ ধিয়ো য়োনঃ  প্রচোদয়াৎ
মৃত্যুর্মুক্ষীয় অমৃতাৎ। ওঁং  

আমরা একটা কথা বারবার করে বলি স্থুল  শরীরেই ঈশ্বর উপলব্ধি হতে পারে। শরীরে বিনা সাধন নেই। এই শরীর আবার ইতর শ্রেণীর হলে হবে না। এই শরীর হতে হবে যথার্থ মনুষ্য শরীর। পশুর শরীরে যেমন অধ্যাত্ম জ্ঞান সঞ্চয়ের সুযোগ নেই, তেমনি মনুষ্যেতর শরীরে অধ্যাত্ম জ্ঞান লাভ হয় না। হ্যাঁ পার্থিব জ্ঞান তো হতেই পারে, কিন্তু অপার্থিব জ্ঞান উন্নত শরীরেই সম্ভব। 
কঠোপনিষদে বলা হচ্ছে, আত্মা (জীবাত্মা) এই শরীররূপী  রথের রথী। বুদ্ধি হচ্ছে সারথি আর মন হচ্ছে বল্গা বা লাগাম। এখন কথাটা হচ্ছে গাড়ী  যদি ঠিক থাকে, তবে গাড়ী  চালিয়ে আমরা যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারি।  কিন্তু গাড়ী  যদি ঠিক না থাকে, তবে সেই গাড়ী  চালিয়ে আমরা যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারবো না। আর এই যাত্রা যদি দীর্ঘ হয়, তবে তো আমাদের আরো বেশি যত্ন নিতে হবে শরীররূপী গাড়ীর । এখন এই গাড়ী আমি বাড়িতে গ্যারাজে ফেলে রাখবো, অর্থাৎ সংসারজালে বদ্ধ করে রাখবো, না মুক্তির পথে পারি দেবার জন্য ব্যবহার করবো, তা আমাদের নিজেদের হাতে। শরীররূপী গাড়ীতে চালক হিসেবে বসে আছেন আমাদের বুদ্ধি। এই বুদ্ধির ভূমিকা খুবই গুরুত্ত্বপূর্ন। বুদ্ধি সজাগ থাকলে, আমরা যাত্রাপথে সংকটে পড়বো না। কিন্তু আমাদের বুদ্ধি যদি স্তিমিত থাকে, বুদ্ধি যদি ঝিমোতে থাকে, তবে গাড়ীর যাত্রাপথ হবে বিপদসংকুল। 

আর এই দেহরূপী রথকে টেনে নিয়ে যাবার জন্য দরকার অশ্ব।  এই অশ্ব হচ্ছে, আমাদের ইন্দ্রিয়সকল ।
ইন্দ্রিয়ের বিষয় হচ্ছে রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, শব্দ। এই বিষয় রাজপথের দৃশ্যসকল। জীবাত্মাই ভোক্তা। যদিও জীবাত্মাই আসলে পরমাত্মা।  কিন্তু পরমাত্মা যখন মায়ার প্রভাবে আরোপিত থাকেন, এবং বিশেষ বিশেষ গুনে গুণান্বিত হন, তখন তাকে বলা হয় জীবাত্মা। এইসব গুন্ আসলে আমাদের মনের দ্বারা আরোপিত। তপঃশক্তির দ্বারা এইসব আরোপিত গুন্  বিনাশ প্রাপ্ত হতে পারে। মন যখন সংযত হয়, তখন জীবাত্মা ও পরমাত্মার ভেদরেখা মুছে যায়। এইজন্য বলা হলে থাকে মন আমাদের বন্ধনের কারন। আবার মনই আমাদের মুক্তির দুয়ার খুলে দিতে।

মনকে পরিচালিত করে থাকে আমাদের বুদ্ধি। এই বুদ্ধি যদি উচিত-অনুচিত, শ্রেয়-প্রেয় মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে, তখন সে মনকে সংযত করতে পারে। আর মন যদি ন্যায় অন্যায় বিচার করতে অক্ষম হয়, তবে সে হয়, প্রবৃত্তির দাস। অর্থাৎ যারা প্রবৃত্তির দাস, তাদের মন অসংযত। আর এদের জন্ম জন্মান্তর ধরে দুর্গতি ভোগ করতে হয়। তাই আধ্যাত্মিক উন্নতি বলতে আমরা বুঝি আত্মসংযম। যার বুদ্ধি বিবেকবান, মন সংযত তাকে ইন্দ্রিয়রূপী অশ্ব বিপথগামী করতে পারে না। তিনি আত্মজ্ঞান লাভের  পথে, নির্বিগ্নে এগিয়ে যেতে পারেন। 

 কিন্তু কথা হচ্ছে এসব আমাদের  মতো সাধারণ মানুষের কাছে তত্ত্বকথা। এইসব কথা আমরা যে শুনিনি তা নয়, বহুবার বহু জন্মে আমরা এই তাত্ত্বিক জ্ঞানের কথা শুনেছি। কিন্তু আমাদের কাছে বাস্তব হচ্ছে, ইন্দ্রিয় দ্বারাই আমরা এই জগৎকে আস্বাদন করছি। জগতের ভালো মন্দ বুঝতে আমরা এইসব ইন্দ্রিয়সকলকেই ব্যবহার করে থাকি। দেখুন, চোখ আছে অথচ আমরা দেখবো না, কান আছে, আমরা শুনবো না। ত্বক আছে অথচ আমাদের স্পর্শশক্তি কাজ করবে না, নাক আছে, অথচ আমাদের ঘ্রাণশক্তি কাজ করবে না, তবে তো আমরা জড়বৎ হয়ে যাবো। তেতুল আর নিমের পার্থক্য আমাদের ইন্দ্রিয়শক্তি দ্বারাই হয়ে থাকে। শীত-উষ্ণ, ঝাল-মিষ্টি আমাদের ইন্দ্রিয় দ্বারাই উপলব্ধ হয়ে থাকে।  আর এই ইন্দ্রিয়সকল যদি কাজ না করে, বা এদের যদি স্তিমিত করে রাখা হয়,  তবে তো  আমরা চেতনাহীন জড়বস্তুতে পরিণত হয়ে যাবো। তাহলে জড়বস্তু আর  আমাদের মধ্যে পার্থক্য থাকলো কোথায় ?

দেখুন, আধ্যাত্বিক দিকে থেকে অজ্ঞানী ভালো খায়, ভালো হজম করে,  রাতে তার ভালো ঘুমও হয়। সে স্কুল কলেজে যায়, জাগতিক জ্ঞান অর্জন করে,.আমাদের দৃষ্টিতে সে একজন সভ্য, পার্থিব জ্ঞানসম্পন্ন, প্রভাশালী, মানি মানুষ হয়। জীবনকে এবার সে ভোগের জন্য গুছিয়ে বসে। আর সে তখন গতিহীন ইন্দ্রিয়ভোগের স্তরে থেমে  থাকে। তার অন্তরে যে সৃজনমুখী তেজশক্তি সুপ্ত  আকারে অন্তর্নিহিত ছিল, তা তখন স্তিমিত হয়ে যায়। 

কিন্তু প্রত্যেক জীবন ক্রোম বিবর্তনের মাধ্যমে ক্রমবিকাশের দিকে ধাবিত হবে। একটা সময় শরীর কালের প্রবাহে, বৃদ্ধাবস্থা প্রাপ্ত হয়।  এটাই অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। একটা সময় আসে, যখন   ধীরে ধীরে তার পার্থিব জ্ঞান পিপাসা বাড়ে। ভোগের স্পৃহা বাড়ে। কিন্তু ভোগের ক্ষমতা, জ্ঞান আহরণের ক্ষমতা, পিপাসা  নিবৃত্তির ক্ষমতা কমতে থাকে।  আর এই অতৃপ্ত  পিপাসা তাকে একটা অব্যক্ত উত্তেজনাপূর্ন ও দুঃখময় জীবনের দিকে ঠেলে দেয়। কারন এখন আর সে হজম করতে পারে না, রাতে আর  তার ঘুম আসে না। এখন সে নানান রোগের  শিকার। 

এখান থেকে আমাদের নিষ্কৃতি কিভাবে হতে পারে ? দেখুন, এই জড় শরীরে আমরা যখন প্রবেশ করেছি, তখন আমাদের মধ্যে আরো একটা শক্তি যা অজড়, যা আসলে আমার নিজস্ব সত্তা তার পুষ্টি বর্ধনের জন্য আমরা কিছুই করিনি। বরং জীবনের যে স্বাভাবিক গতি বা উদ্দেশ্য তাকে আমরা বাঁধ দিয়ে রেখেছি। আধুনিক সভ্যতা এই অজড় শক্তির বিকাশের দিকে খেয়াল করে নি। তাদের এই অজড় শক্তি উপল্বদ্ধিতে আসেনি। আমাদের প্রাচীন ঋষিমানবগন কিন্তু এটা সম্যকরূপে উপলব্ধি করেছিলেন। তাই তাঁরা স্থুল  শরীরে প্রবেশের যে উদ্দেশ্য তা শরীরের মাধ্যমেই এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তাই বলা হয়ে থাকে অপরাবিদ্যা আমাদের উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারে না। পারে একমাত্র পরাবিদ্যা। যেখানে বলা হচ্ছে, আমাদের  শরীরে যেমন স্থুল মস্তিস্ক অবস্থান করছে, তেমনি এই শরীরেই আছে আরো একটা সূক্ষ্ম বস্তু, আর  তা হচ্ছে আমাদের হৃদয়। মেধা ও চৈতন্য উভয়ের মিলিত উন্নতিতে মানবজাতির উন্নতি সম্ভব। আর এই কাজটাই করে থাকে আমাদের ঋষি প্রবর্তিত হঠযোগবিদ্যা। ..........                       








           

 

No comments:

Post a Comment