Wednesday 19 July 2017

সত্যধর্ম - একজন কৌতূহলীর দৃষ্টিতে


সত্যধর্ম - একজন কৌতূহলীর দৃষ্টিতে 


সত্যধর্মের প্রবর্তক মহাত্মা গুরুনাথ সেনগুপ্ত। পিতা রামনাথ সেনগুপ্ত, মাতা গৌরী দেবী, অর্থাৎ বৈদ্য ব্রাহ্মণ। 
জীবনের অভিজ্ঞতায় যাদের আমি দূরের মানুষ মনে করি। এদের কুটিল  জ্ঞানের প্রভাবে, ভারতের জনসংখ্যার মাত্র  ১৫% হওয়া সত্বেও ৮৫% ভাগ সম্পদের অধিকারী। এরা  আমাদের পূর্বপুরুষদের  বঞ্চিত করেছে। এদের আমরা গুরু হিসেবে চাই, কিনতু  এরা আমাদের শিষ্য হিসেবে চায় না। একলব্য চেয়েছিলো কিনতু দ্রোণাচার্য্য চায় নি। তাই ব্রাম্মণদের সংগঠন থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলি।
সুতপার সঙ্গে  বিয়ে হওয়ার পর জানতে পারলাম, আমার স্ত্রী মহাত্মা গুরুনাথ সেনগুপ্তের প্রবর্তিত সত্য-ধৰ্মের সন্যাসীদাদার (হরিশ চন্দ্র বিশ্বাস) কাছ থেকে দীক্ষিত । মেনে নিতে পারিনি। বাড়িতে কৃষ্ণমন্দির। বাড়িতে কৃষ্ণা পূজা হয়। শ্বশুরবাড়িতে মহাত্মাগুরুনাথের ছবির সামনে  ১-টাকা (অর্থাৎ ১৬ আনা) দিয়ে, বললাম, তোমার শিষ্যা ডলি-কে আমাকে দিয়ে দাও। কিছু মনে করো না।
না কোনো ধৰ্মগুরুর প্রতি আমার বিরূপতা নেই। জানবার আগ্রহ আছে। কে কি বলছে সেটা জানবার চেষ্টা করি। সে আগ্রহ থেকেই
মহাত্মা গুরুনাথের লেখা "সত্য-ধৰ্ম" ১৯৯৫ সালে প্রথম পড়ি। এর পর তত্ত্বজ্ঞান-সাধনা ও তত্ত্বজ্ঞান -উপাসনা, এবং আরো কিছু বই ভক্তদের লেখা - আমার পড়বার সুযোগ হয়। না তাতে যে আমার কিছু পরিবর্তন হয়েছে তা নয়।  
বাড়িতে আমার শাশুড়ীমায়ের  উদ্যোগে উপাসনা হয়েছে।  উপাসনা গুলি আমার ভালো লেগেছে। এই পর্যন্তই। 

 মহাত্মা গুরুনাথের জীবনী পরে আমার মনে হয়েছে, দেহধারী গুরু ছাড়াও, সাধনা হয়। মহাত্মা গুরুনাথতো পেরে ছিলেন। মহাত্মাগুরুনাথের প্রতি আমার প্রথম আকর্ষণ এখানে। 

মহাত্মা গুরুনাথের বাবা ছিলেন ব্রাহ্মণ কবিরাজ। গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঔষধ, এক অর্থে ফেরি করতেন। খুবই গরিব। ধার্মিক ছিলেন কিনতু  গোড়া ছিলেন - এমন কথা কোথাও পাইনি।  -  গ্রহণযোগ্যতার দ্বিতীয় দিক। 

মহাত্মা গুরুনাথ বিয়ে করেন বরিশাল জেলার শৈলা গ্রামের রামচন্দ্র দাসের কন্যা আদরিনী  দেবীকে । দাস নিশ্চই ব্রাহ্মণ নয়।  অতএব ধরে নিতে পারি এঁরা গোড়া ব্রাহ্মণ  নয়। - তৃতীয় দিক 

মহাত্মা গুরুনাথের জীবনীতে পাই (পৃ ৩০৬) : 

"সহসা তাহার সমস্ত ইন্দ্রিয়, প্রাণ মন চকিত হইয়া উঠিল  -  সম্মুখে তিনি ইসলাম ধৰ্ম প্রবর্তক মহাপুরুষ মহম্মদকে দেখিতে পাইলেন এবং তাহাকে অমৃতায়মান  বচনে বলিতে শুনিলেন - সত্বর প্রস্তূত হও, অনতি  বিলম্বে  তোমার নিবিড় অভীষ্ট পূর্ণ হইবে। ক্রমে  আরো বহু অত্যুন্নত সাধক সাধিকাকে দর্শন করিলেন। ......তখন বাংলা ১২৯৫ সালের বৈশাখ মাস, ইংরেজি ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দ।" এটা যদি সত্যি হয় তবে তার ধর্মের সংকীর্ণতা নেই - এ কথা ভাবতেই পারি।  -  চতুর্থ দিক 

দীক্ষা দানের বীজ মন্ত্র বৈজিক  ভাষায় লেখা।  এই ভাষাতেই নাকি পশু পাখিরা কথা বলে।জানিনা এই ভাষা জানার কোনো উপায় আছে কি না।  - এটা  আমাকে আকর্ষণ করে। 

গুরুকরন পদ্ধতি : আমরা সাধারণত জানি, গুরু মানেই নমস্য, তিনি বিচারের উর্দ্ধে - সাক্ষাৎ ভগবানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করেন।  গুরুবাক্য অলংঘনীয়।গুরুই  ব্রহ্মা,বিষ্ণু, মহেশ্বর। মহাত্মা গুরুনাথ বলছেন :পারলৌকিক মহাত্মারাই এই ধর্মের প্রচারক। সুতরাং তাহারাই এই ধর্মের দীক্ষা দাতা। তবুও প্রচলিত পদ্ধতির মতো এখানেও গুরুবাদ স্বীকৃত। এখানে নাকি দীক্ষাদানের পদ্ধতি অদ্ভুত।  এখানে গুরুর মধ্যে অহংভাব থাকবে না আমিত্ববোধ থাকে না ।  গুরু-শিষ্যের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ভাব বজায় রাখতে হয়। 
এখানে - দীক্ষাদানের সময়,দীক্ষার্থীর করযুগল, গুরু তার নিজ করে ধারণ করে প্রেম, ভক্তি, শ্রদ্ধা সহকারে দীক্ষাদাতা (গুরু) বলবে যে, : হে অসীম, অনন্ত গুণধাম প্রভু দয়াময় পিতা ! আজ থেকে আমার সহোদর প্রতিম অমুককে   তোমার পথাবলম্বী হতে ব্যাকুল অন্তঃকরণে যাচ্ঞা করাতে, তাকে তোমার চরণে সমর্পন করলাম। " এর পর পরস্পর পরস্পরের হাতে চুম্বন করবে। - জানিনা এতে শিষ্যের অহমিকা যায় কি না, কিনতু  গুরুকে যে অহমিকা শূন্য হতে হবে এটা পরিষ্কার।  

গুরু সম্পর্কে আর একটা কথা বলা আছে -  গুরুকে জ্ঞানের দিক থেকে কুলীন হতে হবে, অর্থাৎ পঞ্চভূত,প্রকৃতি তত্ত্ব, জীবতত্ত্ব, কাল ও দিক প্রভৃতি বিষয়ে জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে। 

এই সত্য-ধর্মে আর একটা নতুন দিক আছে। ইহলোকের অর্থাৎ পৃথিবীর বাইরে পরলোকের অবস্থান।  এটাকে অধিকাংশ লোক কল্পনা বলে। সত্যধর্ম বলছে ইহলোকে অবস্থান  করেও, পরলোকে যাওয়া সম্ভব।  সেখানকার তথ্যাদি জানা যেতে পারে। 

সত্যধর্ম উপাসনা ভিত্তিক। উপাসনার প্রথম পর্যায়ে গান যাকে ঈশ্বরের  গুনকীর্তন বলা হয়। গুণকীর্তনের পর পরম পিতার কাছে পাপ স্বীকার। এটি খ্রিস্টীয় ধর্মের মতো মনে হয়। এর পর ঈশ্বরের
 কাছে  প্রার্থনা।

সত্য-ধর্মে গুন্ সাধনা অন্যতম। গুন্ বলতে : প্রেম, একাগ্রতা,আকুলতা, শুদ্ধ ভক্তি।  এগুলোর সাধনা দ্বারা নিজের উন্নতি সাধন। ভক্তির কথা বলতে প্রথমে  মা, বাবা, তারপরে গুরু বা দীক্ষা গুরু, এর পর উন্নত আত্মাদের প্রতি ভক্তি।  এটাই গুন্ সাধনা। 
শেষ করছি আবার জাতের কথা দিয়ে।  তথাকথিত ব্রাহ্মণদের মধ্যে এই ধর্মের প্রাধান্য নেই।  তার কারন মহাত্মা গুরুনাথের প্রথম ও প্রধান শিষ্য মহাত্মা নিবারণ চন্দ্র পাণ্ডে, যিনি নমঃশূদ্র। এই নমঃশুদ্ররাই এই সত্যধর্মের ধারাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এমন কি ও শুনেছি, মহাত্মা গুরুনাথের  অনেক বংশধররাও এই ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহী নয়, অবশ্যই  সব বংশধররা নয়। বাড়িতে একটা ছবি টাঙিয়ে রেখেছে এই মাত্র।

সবশেষে যে কথাটা মনে আসে সেটা হলো, স্রষ্টাকে-তো ইন্দ্রিয় দ্বারা উপলব্ধি করতে পারি না।  তার সৃষ্টিকে পারি। যার সৃষ্টি এতো সুন্দর না জানি সে কত বড়ো শিল্পী আরো কত সুন্দর। সত্য-ধর্মের সৎ-সতীদের দেখে মনে হয় মহাত্মা গুরুনাথের মৃত্যুর ১০০ বছর  পরেও আপনারা যে ভাবে তার আদর্শকে সামনে রেখে, প্রেম ভালোবাসা বিলিয়ে চলছেন তা আমাকে আপ্লূত করে, আপনাদের দেখে আমার ভালো লাগে।  
পরম পিতা পরমেশ্বরকে  প্রণাম করি।  সমস্ত উপস্থিত মহাত্মাকে আমার শ্রদ্ধা জানাই।     

সমাপ্ত  (১৯/০৭/২০১৭)

  


         

   
     









          

No comments:

Post a Comment