দেখুন, যার যেমন ভাব, তার তেমন লাভ। তবে একটা কথা বলি, নিজেকে চিনতে চেষ্টা করুন, নিজেকে বুঝবার চেষ্টা করুন । আপনি কোন্ ভাবের মানুষ তা বুঝবার চেষ্টা করুন। আপনার মধ্যে যে সুপ্ত গুন্ আছে, তাকে বিকশিত করবার চেষ্টা করুন। আপনার যে সৃজনশীল ক্ষমতা আছে, তাকে বুঝবার চেষ্টা করুন। এবং সেই অনুযায়ী, আপনি আপনার জীবনকে সার্থক করবার চেষ্টা করুন। অন্যের কি ভালো আছে, আমাকে তাই হতে হবে, এই চিন্তা মাথা থেকে দূর করে দিন।
আপনি কৃষ্ণ ভক্ত। কৃষ্ণছাড়া আপনার কাছে ঈশ্বর বলে কিছু নেই। তো আপনি শ্রীকৃষ্ণের জীবনী পড়ুন। আপনি শ্রীমদ্ভাগবৎ পাঠ করুন। আপনি শ্রীমদ্ভগবৎ গীতা পড়ুন। আপনি হরিবংশ পাঠ করুন। আপনি যে স্থুলশরীর নন আপনি একটা শুদ্ধ আত্মা শ্রীকৃষ্ণের এই কথায় আপনি বিশ্বাস করুন। ও এই সত্যে উপল্বদ্ধির স্তরে নিজেকে নিয়ে যান। আপনি কি জানেন, এই জন্মের পিতা মাতা, পূর্ব জীবনে আপনার সঙ্গে কোন সন্মন্ধে আবদ্ধ ছিলেন। আপনি এই স্থূল দেহ ত্যাগের পরে, কোথায় যাবেন , কোন দেহে স্থিত হবেন, তা কি আপনি জানেন ? আপনি কি এই জীবন নিয়ে সুখী ? এই সবকথা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জানতেন। এবং তিনি একজন জাতিস্মর ছিলেন। তিনি যোগেশ্বর ছিলেন। তিনি জানতেন, তিনি এর আগের জীবনে নারায়ণ নাম এই পৃথিতে এসেছিলেন, এবং নারায়ণ পর্বতে তপস্যা করে গিয়েছিলেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে কখনো কেউ দুঃখী হতে দেখেন নি। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন, সমস্ত অবস্থায় স্থির চিত্ত। আপনি কি নিজের উদ্বেগকে দূর করতে পেরেছেন ? ভগবান শ্রীমুখ নিঃসৃত গীতায় এইসব প্রশ্নের জবাব আছে। কিভাবে, জীবন-সংগ্রাম করতে হয়। কিভাবে নিজেকে জানতে হয়, তার উত্তর আছে, এই গীতার বাণীতে। আপনি সেই অনুযায়ী সাধনায় লিপ্ত হন। আমি কেবল শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত এই অবস্থায়, নিজেকে আটকে রাখবেন না। ভক্ত, ভগবানের উর্দ্ধে এই চতুর কথায় বিশ্বাস করে, নিজেকে প্রতারণা করবেন না। এই কথার যথার্থ অর্থ অনুধাবন করবার চেষ্টা করুন।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, কৰ্ম্মী অপেক্ষা জ্ঞানী শ্রেষ্ট, জ্ঞানী অপেক্ষা তপস্বী শ্রেষ্ট। তপস্বী অপেক্ষা যোগী শ্রেষ্ঠ। অতয়েব, হে অর্জুন, তুমি যোগী হও। (৬/৪৬) আবার পরবর্তী শ্লোকে বলছেন, যোগীদের মধ্যে যিনি মদ্গতচিত্ত হয়ে আমার ভজনা করেন, সমস্ত যোগীর মধ্যে তিনি আমার সাথে অধিকতর যুক্ত। (৬/৪৭)
তো আমাকে আগে কর্ম্ম করতে হবে, জ্ঞান অর্জন করতে হবে, তপস্যা করতে হবে, তারপর যোগী হতে হবে। একদম শেষে ভক্ত হতে হবে। নিস্কর্মা, অজ্ঞানী,, যার তপঃ সাধনা নেই, তার পক্ষে যোগী হওয়া সম্ভব নয়। আর সত্যিকারের যোগী না হয়ে, কখনোই যথার্থ ভক্ত হওয়া যায় না। যারা ভাবছেন, ভগবানের নামে আবেগের বশে কেঁদেকেটে সটান ভক্ত হয়ে যাবো, তিনি ভক্ত নয়, ভন্ড। তারা অন্যকে নয়, নিজেকেই প্রতারণা করছেন। ভাবের ঘরে চুরি করছেন।
--------------------
জীবনে কত প্রশ্নের জবাব পাওয়া হলো না। আমরা নানান রকম কষ্ট ভোগ করে থাকি। শারীরিক, মানসিক, প্রাকৃতিক, আধ্যাত্মিক ইত্যাদি নানান রকম কষ্ট জীবনে বেঁচে থাকার আনন্দকে কেড়ে নেয়।লোকে বলে, আমরাই আমাদের কষ্টের জন্য দায়ী। তো আমরা যদি দায়ী হই, তবে আমরা আমাদেরকে সংশোধনকরে নেই না কেন ? নাকি আমরাই চাই কষ্টে থাকতে ? বহু সৎ মানুষকেও দেখি দুর্দশাগ্রস্থ হতে। আমাদের ক্ষুদ্রবুদ্ধি, আমাদের সীমিত অন্তর্দৃষ্টি, এই কষ্টের কারন নির্ধারণ করতে পারে না। কিন্তু এইসব দুর্ভোগের হাত থেকে রেহাই পেতে পারতাম, যদি আমরা উত্তরণের কৌশলটি জানতাম আর তার প্রয়োগ করতে পারতাম।
আমাদের সাধারণ বুদ্ধিতে যা ধরা পরে, তা হচ্ছে, সুকর্ম্ম সুখপ্রদ, আর দুষ্কৰ্ম্ম দুঃখপ্রদ। কিন্তু এই সুকর্ম্ম ও দুষ্কর্ন্মের সূক্ষ্মতত্ত্ব আমরা বুঝতে পারি না। আমাদের দৃষ্টিতে যা সুকর্ম্ম, আমাদের দৃষ্টিতে যারা সৎমানুষ তাঁদেরও যখন দুর্দশাগ্রস্থ হতে দেখি, তখন আমরা অবাক হয়ে যাই । আশ্রমবাসী মহাত্মাকে, ঠাকুর রামকৃষ্ণকে যখন শারীরিক কষ্ট ভোগ করতে দেখি, তখন আমাদের সমস্ত বিদ্যা, সমস্ত জ্ঞান গুলিয়ে যায়। তখন আমাদের মনে হয়, এইসব প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই।
মহাত্মাগণ বলছেন, আগুন লাগার আগেই আমাদের সতর্ক হতে হবে। আর আগুন যদি লেগেই যায়, তার উৎস না খুঁজে আগুন নেভানোর কাজ করতে হবে। সব কিছুর, কার্যকারন সম্পর্ক, আমরা বুঝতে পারবো, তার কোনো মানে নেই। মানুষের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ মন কর্ম্মের এই উচ্চ মূল্যবোধগুলোকে বুঝতে পারে। আর আমরা ফ্যাল ফ্যাল করে ম্যাজিশিয়ানের ম্যাজিক দেখে অবাক হই । কোনো কার্য্য-কারন ব্যাখ্যা খুঁজে পাই না। তাই আমাদের উচিত মহাত্মাদের কথায় বিশ্বাস করা। তাদের উপদেশ অনুসারে কাজ করা। তাঁরা বলছেন, প্রার্থনা, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা, শুধু শুভবুদ্ধির জন্য প্রার্থনা, আমাদের এই দুঃখের জীবনকে আনন্দময় করে তুলতে পারে। এতে করে, আমাদের মন শুদ্ধ হবে, হৃদয় নির্মল হবে। আর এই শুদ্ধ মন, নির্মল হৃদয়ে আনন্দ অবস্থান করবে। ফুলে যখন মধু জমে, তখন যেমন ভোমরা মধু পান করতে করতে গুন্গুন্ করে গান গায়, তেমনি শুদ্ধমনে, নির্মল হৃদয়ে ঈশ্বরের আনন্দময় সত্তা এসে আমাদেরকে মধুর সুরে গান শোনাবো, আমাদের মনকে আনন্দে ভরিয়ে তুলবে ।
আমরা সবাই সেই সত্তার অংশ, যিনি সৎ-চিৎ-আনন্দম।
--------------------------
আত্মহত্যা একটা সামাজিক ব্যাধি। আত্মহত্যার প্রবণতা ঠেকাবেন কি করে ?
ঘটনা ১. আজ থেকে প্রায় পচিঁশ/ত্রিশ বছর আগের কথা। শুনলাম আমাদের এক অফিসকর্ম্মী সুরেনের বড়ো ছেলে আত্মহত্যা করেছে। ও ব্যারাকপুরে একটা ভাড়া বাড়িতে থাকে। দুই ছেলে। বড়টি সেবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে, ছোটোটি ক্লাস ওয়ানে পড়ে। সুরেন তখন অফিসে । ওঁদের মা তখন বাজারে বেরিয়েছে। পাড়ার একটি ছেলে, যে ওদের বন্ধু এসেছে, বাড়িতে খেলা করবে বলে। ওর মা বাজার থেকে বাড়িতে এসে দেখে, জানালার রডের সঙ্গে দড়িতে বড়ো ছেলের গলা বাঁধা। নিথর দেহ। বাড়িতে পুলিশ এলো। সন্দেহ হলো, কেউ ওর গলা বেঁধে হত্যা করেছে। নাকি আত্মহত্যা ?
ঘটনা ২ :আমাদের গ্রামের বাড়ির পাড়ায়, খবর রটে গেলো, একটি মেয়ে গলায় দড়ি দিয়ে গাছের ডালে আত্মহত্যা করেছে। আমরা সবাই দেখতে গেলাম। দেখলাম, যে গাছে, মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে, সেই গাছটি কেটে ফেলা হলো। মেয়েটির সঙ্গে গাছেরও প্রাণ গেলো। শুনলাম পাড়ার ছেলে শুভময় বাড়িছেড়ে পালিয়েছে। সেই শুভময়কে আর কোনোদিন পাড়ায় আমরা দেখিনি। কিন্তু শুনেছি, সে নাকি আজও সেই গাছের কাছে আসে। কান্নাকাটি করে।
ঘটনা ৩ : আরো একটি জোড়া আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছিলো, আমাদের পাড়ায়। কিন্তু সেটি আমি দেখতে যায়নি। দুইজন একসাথে, একটি ১৭/১৮ বছরের ছেলে, ও একটি ১৪/১৫ বছরের মেয়ে একই ঘরের মধ্যে ঘরের আড়ার সঙ্গে দড়ি বেঁধে একই দিনে একই সাথে আত্মহত্যা করেছে।
ঘটনা ৪ : মায়ের একমাত্র ছেলে। পড়াশুনায় খুবই ভালো। বিদেশে চাকুরী পেয়ে সবে সেখানে গেছে। একবছরের মধ্যে জানা গেলো, ছেলেটি আত্মহত্যা করেছে। এই ঘটনা খবরের কাগজে বেরিয়েছিল। ছেলেটিকে বিয়ে দেবার জন্য মা চেষ্টা করছিলো। মেয়েও ঠিক হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু ছেলেটি চাকুরী স্থল থেকে ছুটি পায়নি। আর অফিসের মধ্যেই আত্মহত্যা করেছে।
এমনি অসংখ্য আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে চলেছে প্রতিদিন। এই কয়েকদিন আগে, আমাদের বাড়ির পার্শে এক ভদ্রমহিলা বছর ৬০ বয়স হবে। নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে, আগুন লাগিয়ে মারা গেলেন। ভদ্রমহিলার এক ছেলে, এক মেয়ে। নিজে বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। গরিব পরিবার। শোনা যায়, ছেলেমেয়েরা চিকিৎসার জন্য, দৌড়োদৌড়ি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলো। তাই মাকে যথেষ্ট নজর দিতে পারছিলো না। আর মা নিজেকে অসহায় ভেবে, আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
আমাদের সবারই জানতে ইচ্ছে করে, মানুষ কেন আত্মহত্যা করে ? প্রথম ঘটনাটির কারন কি খেলা ? দড়ি নিয়ে খেলতে খেলতে গলায় ফাঁস লেগে গিয়েছিলো ? অনেকে সুরেনকে এই ঘটনার জন্য প্রতিবেশী ছেলেটির বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করতে বলেছিলো। কিন্তু সুরেন তা করেনি। ও বলতো, আমার ছেলে মারা গেছে, ওকে আর ফিরে পাবো না। কিন্তু আরো একটা সংসারে দুঃখের আগুন জ্বালাতে চাইনা।
দ্বিতীয় ঘটনাটি, একটা মারাত্মক সামাজিক ভুলের ঘটনা। মেয়েটি নাকি বন্ধুর সাথে খেলতে খেলতে সন্তানের মা হতে চলেছিল। কুমারী অবস্থায়, সন্তানের মা হওয়া জৈবিক কারনে ঘটতে পারলেও, সামাজিক দৃষ্টিতে এটি অসম্ভব ঘটনা। সমাজ এই ঘটনাকে মেনে নেয় না। পরিবারের কেউও এই আকস্মিক ঘটনার জন্য, ক্ষমা করে না। মৃত্যুই তাকে এই সমস্যার সমাধান এনে দিতে পারে। আর সেই পথই সে বেঁচে নিয়েছিল।
তৃতীয় ঘটনা নিতান্তই বাল্যপ্রেমের ঘটনা। এই প্রেমের মূল্য চুকিয়েছিলো, প্রেমিক-প্রেমিকা নিজেদেরকে শেষ করে। সমাজ, পরিবার যাকে স্বীকৃতি দিতে পারে না, সেই অস্বীকৃতির সম্ভাবনাই ডেকে আনে মৃত্যুর মতো বিভীষিকাকে।
চতুর্থ ঘটনা মনে হয়, একাকীত্ত্বের যন্ত্রনা ও অফিসের নিয়মের বেড়াজাল। যে ছেলেটি, মায়ের আঁচলে আঁচলে ঘুরেছে, একদিন তাকে মাকে ছেড়ে, উচ্চাশা পূরণের জন্য, বিদেশে যেতে হয়েছিলো। মাকে ছেড়ে দিয়ে ছেলেটি বড্ড একা হয়ে গিয়েছিলো। এই নিঃসঙ্গতা, এবং এর থেকে কিছুতেই বেরুতে না পারার জন্য আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিয়েছিল।
আত্মহত্যা সম্পর্কে মনোবিজ্ঞানীগন বলে থাকে, এটি আত্মহত্যাকারীর তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত। কেউ কেউ বলে থাকেন, যার মধ্যে একবার আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়, সে আর সেই প্রবণতা থেকে বেরুতে পারে না। ফলত দেখা যায়, বারবার সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে থাকে।
কিন্তু কেন এই আত্মহত্যা ? আর এর থেকে আমরা বেরুবো কি করে। আত্মহত্যার ঘটনাগুলোকে বিশ্লেষণ করলে, আমরা কি দেখতে পাই ?
১. অস্বীকৃত প্রেম - প্রেমে ব্যর্থতা - যা অনেক ক্ষেত্রে কিশোর কিশোরীর মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা এনে দিতে পারে।
২. অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্খ্যা : নিজের উচ্চাকাঙ্খ্যা বা মা-বাবার উচ্চাকাঙ্খ্যা পূরণের অসফল হয়ে, নিজেকে অযোগ্য, অসহায় মনে হয়। তা সে স্কুল-কলেজের পড়াশুনার ফল বলুন, বা বাবার কাছ থেকে, প্রত্যাশিত জিনিস না পাওয়া হোক। আমি দেখেছি, বাবার কাছে, একটা সাইকেল চেয়ে না পেয়ে, একটা মেয়ে আত্মহত্যা করেছিল। তো জীবনের আকাঙ্খিত বস্তুকে না পাবার ব্যর্থতা থেকে নিজের মধ্যে একটা হীনমন্যতা গ্রাস করে। আর এর থেকে মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকবার ইচ্ছেটাই চলে যায়।।
৩. সমাজের রক্তচক্ষু। নিজের ইচ্ছে ও সমাজের ইচ্ছেকে পূরণ করতে না পারলে, নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে। আমি যা করেছি, তাতে সবাই আমাকে ছিঃ-ছিঃ করবে। এই ভয় থেকে, অপমান থেকে বাঁচার জন্য, সুন্দর জীবনকে সে বিসর্জন দেয়।
৪. শারীরিক ব্যাধি জনিত যন্ত্রনা থেকেও অনেকে জীবনে বেঁচে থাকবার ইচ্ছে লোপ পেয়ে যায়।
দেখুন, আমরা সবাই সৎ-চিৎ-আনন্দ স্বরূপের অংশ। জীবনে বেঁচে থেকে আমরা সবাই এই আনন্দের সন্ধান করে থাকি। অর্থাৎ নিজেকে খুঁজে থাকি। আসলে দেহ ধারণ করবার সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরকে বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট করা হয়। আর তাই আমরা বিষয়ের মধ্যেই নিজের অজ্ঞাতসারে আনন্দ অর্থাৎ নিজের সত্তাকে খুঁজে ফিরি। এই আনন্দের উত্তাপ গ্রহণ করবার জন্য, যদি আমরা বাঁধাপ্রাপ্ত হই তখন আমাদের বেঁচে থাকবার জন্য, যে ইচ্ছেশক্তি তা হ্রাস পায়। আমরা সবাই হয়তো ভুলে গেছি, আমরা দেহ ধারণ করি, আমাদের সংকল্প পূরণের জন্য, বাসনা পূরণের জন্য। তো যদি দেহ আমাদের এই কাজে বাধা দেয়, তবে আমরা বেঁচে থাকবার কোনো অর্থ খুঁজে পাই না।
ভালোবাসা : মানুষ ভালোবাসার কাঙাল। এই ভালোবাসা ব্যতীত কোনো মানুষই বেঁচে থাকতে পারে না। জন্মের পর থেকেই, মায়ের স্নেহ, বাপের আদর, আত্মীয়স্বজনের অহযোগিতা, প্রিয়ার হাসি মুখ - একজন মানুষকে ধীরে বেঁচে বেড়ে উঠবার জন্য সহযোগিতা করে থাকে। এই জায়গায় সমাজের, পরিবারের একটা ভূমিকা থাকে। এই ভালোবাসায় যদি আঘাত আসে, বা বঞ্চিত হই, তখন আমাদের বেঁচে থাকবার ইচ্ছে ক্ষীণ হয়ে আসে।
উদ্দেশ্য : কোনো মানুষই উদ্দেশ্যবিহীন হয়ে জীবন ধারণ করতে পারে না। যিনি পাহাড়ের চূড়াতে অবস্থান করছেন, গভীর জঙ্গলে অবস্থান করছে, তারও একটা উদ্দেশ্য আছে। তো আমাদের সবার বেঁচে থাকবার জন্য, একটা উদ্দেশ্য চাই। কথায় বলে আশায় বাঁচে চাষা। অর্থাৎ প্রতিনিয়ত উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় আমার বেঁচে থাকতে চাই। এই আশা থেকে বঞ্চিত হয়, তারা হতাশ হয়ে, জীবনের উদ্দেশ্যকেই ব্যর্থ মনে করে। তখন বেঁচে থাকবার আর কোনো অর্থ সে খুঁজে পায় না। ফলত সে নিজেকে শেষ করে দেয়।
তো আত্মহত্যার প্রবণতা রোধ করতে গেলে, আমাদের সবার মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। আপনার কাছের মানুষের প্রতি, আপনি মনোযোগ দিন। সবাই সবাইকে বুঝবার চেষ্টা করুন। তাচ্ছিল্য নয়, উপেক্ষা নয়, তাহলেই দেখবেন, জীবন আনন্দময় হয়ে উঠবে। যে কেউ ভুল করতে পারে, তাকে ভুল শুধরাবার সুযোগ করে দিন। কাউকেই অসহায় হতে দেবেন না। তাহলে দেখবেন, আত্মহত্যা করবার মানসিকতা দূর হয়ে গেছে।
সহ্য করবার ক্ষমতা বৃদ্ধি করবার চেষ্টা করুন। দেখুন, যেকোনো মানুষের জীবনেই সুখ-দুঃখ আসবে। বিপর্যয় আসবে। দুঃখহীন জীবন বলে কিছু হয় না। তো দুঃখের মোকাবিলা করবার শক্তি অর্জন করবার জন্য, বিশ্বশক্তির কাছে প্রার্থনা করুন। তো দেখবেন, বিশ্বশক্তি আপনাকে মনের সাহস এনে দিয়েছে। আপনি যখন বিশ্বশক্তির আশ্রিত হয়ে যাবেন, তখন আপনার ভয় দূর হয়ে যাবে, দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যাবে। জীবন হয়ে উঠবে অর্থপূর্ণ।
আপনার সন্তান বা প্রিয়জনের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দিলে তাকে প্রথমেই উচিত মনোবিদের কাছে নিয়ে যাওয়া। নেশাগ্রস্থদের নেশা নিরাময়ের চিকিৎসা করা। তাকে বেশি করে, মানুষের মধ্যে মেলামেশার সুযোগ করে দেওয়া। তার বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার মনের কথা জানবার চেষ্টা করা। এবং তার মনে যদি কোনো ভয়, ক্ষোভ, উদ্বেগ বা অশান্তির জন্ম হয়ে থাকে তবে তাকে নির্মূল করবার চেষ্টা করা উচিত। বাড়িতে বা তার কাছে, অস্ত্রশস্ত্র, বিষ জাতীয় ঔষধ, না রাখা। বেশি ঔষধ খাওয়া, বা খাওয়ানো একদম ঠিক নয়। সন্দেহভাজন ব্যক্তি থেকে তাকে দূরে রাখা উচিত । প্রতিনিয়ত তাকে আশ্বাস বাক্য দেওয়া। সন্তান যাতে মুখচোরা না থাকে, তার জন্য তাকে সহজ-সরল জীবনের মধ্যে নিয়ে আসা। সন্তানকে চোখে চোখে রাখা। এব্যাপারে, কারুর সাথে, অহেতুক আলোচনা না করা। আত্মহত্যা জনিত কোনো সিনেমা বা চ্যানেল দেখতে না দেওয়া। এইসময় সৎসঙ্গের খুবই প্রয়োজন।
সবশেষে বলি, ঠাকুরের কাছে সকল সন্ধ্যে প্রার্থনা করুন। প্রতিদিন নিয়ম করে প্রাণায়াম করুন, সবাইকে প্রাণায়ামের সুফলের কথা বলুন, এবং পরিবারের যেকোনো বয়সের সদস্যকে প্রাণায়াম করতে উৎসাহ জোগান । বাড়ির সবাইকে তা সে বুড়ো-বাচ্চা সবাইকে প্রাণায়াম কোরবার জন্য উৎসাহ দিন। আর জানবেন, প্রাণায়ামে একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলে, তার মধ্যে সবসময় সদর্থক চিন্তার উদ্রেগ হবে। জীবন হবে গতিশীল। প্রকৃতির নিয়মে তো সবার একদিন স্থুল দেহ ছেড়ে চলে যেতেই হবে। কিন্তু সেটি তখন আর অকালে হবে না। আত্মহত্যা অর্থাৎ নিজেকে শেষ করবার চিন্তা, তখন আর মাথার মধ্যে কিছুতেই আসবে না। দৈনন্দিন কাজের মধ্যেও একটা উৎসাহ দেখা দেবে। জীবন হবে উদ্বেগহীন। নিরাশা তখন আর তাকে ঘিরে ফেলতে পারবে না। জীবন হবে উচ্চাশায় পরিপূর্ন, ও কর্তব্য-পরায়ণ। একটা শান্তির বাতাবরণ তখন জীবনকে ঘিরে রাখবে। আমরা দীর্ঘ শান্তিময় জীবনের অধিকারী হবো আমরা ।
ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ। হরি ওম।
ধর্ম্মীয় গোড়ামীর উর্দ্ধে এক বিশেষ সাধন প্রক্রিয়া
ধর্ম্মে উন্নতি করতে গোড়ামি না থাকাই ভালো। কিন্তু এই গোড়ামি থেকে রেহাই পাবো কি করে ?
ঋষি অরবিন্দ, তিনি একাধারে বিপ্লবী অন্য দিকে তিনি ঋষি। ঋষি অরবিন্দ একসময় তার সহধর্মিনী মৃণালিনী দেবীকে এক চিঠিতে লেখেন, ভগবান আমায় যে গুন্ দিয়েছেন, যে শিক্ষা যে বিদ্যা দিয়েছেন, যে ধন দিয়েছেন, সবই ভগবানের। এসব যদি আমি নিজের জন্য ব্যবহার করি, তবে চোর সাব্যস্ত হবো। আমার উচিত প্রয়োজনীয় টুকু রেখে বাকিটা ভগবানের প্রতিভূ ত্রিশকোটি ভাইবোনের জন্য, তাদের হিতের জন্য এই সম্পদ বিলিয়ে দেওয়া। এই বিষয়ে তুমি আমার সহধর্ম্মিণী হবে ? এর উত্তরে মৃণালিনী দেবী, এক অদ্ভুত জবাব দিয়েছিলেন। লিখছেন, যেকোনো মতে ভগবানের সাক্ষাৎ দর্শন করতে হবে। ঈশ্বর যদি থাকেন, তবে তার সাক্ষাৎ করবার কোনো না কোনো পথ অবশ্য়ই থাকবে। হিন্দুধর্ম্ম বলে, নিজের শরীরের মধ্যে নিজের মনের মধ্যে সেই পথ আছে। সেই পথে যাবার নিয়মও তারা দেখিয়ে দিয়েছেন। সেইসব নিয়ম আমি পালন করতে আরম্ভ করেছি। আর এক মাসের মধ্যেই আমি অনুভব করতে পারলাম, হিন্দু ধর্ম্মের কথা মিথ্যে নয়। আমার ইচ্ছে তোমাকেও সেই পথে নিয়ে যাই।
আজকাল ধর্ম্ম ও গোড়ামির মধ্যে আর কোনো পার্থক্য নেই। বরং বলা যেতে পারে, গোড়া-ধর্মান্ধ মানুষকেই বেশি ধর্ম্মিক বলে মনে হয়। ধর্ম্মের সঙ্গে গোড়ামি যেন মিলেমিশে এক হয়ে গেছে। আবার আমরা মুখে অনেক বড়ো বড়ো কথা বলি, কিন্তু আমাদের মধ্যে যে গোড়া সংস্কার জগদ্দল পাথরের মতো, চেপে বসে আছে , তা আমরা সহজে ত্যাগ করতে পারি না। হিন্দু সমাজের জাতিভেদ নামক কু-প্রথা, গুরু-সর্বস্য ধর্ম্ম ও বিভিন্ন আচার-বিচারের মধ্যে গোড়ামিকে ভেঙে ফেলতে তৈরি হয়েছিল ব্রাহ্মসমাজ। যারা হিন্দুদের গোড়ামিগুলোকে যুক্তি দিয়ে খন্ডন করতেন। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, ব্রাহ্ম সমাজ আসলে হয়ে উঠেছিল, নতুন ব্রাহ্মণদের একটা সমাজ। শ্রী বিজয় গোস্বামী সাধনজগতের প্রথম দিকে এই ব্রাহ্মসমাজের সভ্য ছিলেন। এবং অন্যতম প্রচারক ছিলেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তার সত্য-সন্ধানী মন, বিদ্রোহ করে ওঠে। এই সম্প্রদায়ের প্রবর্তক ছিলেন, মহর্ষি দেবেন্দ্র নাথ ঠাকুর। তো একদিন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে যুবক বিজয়কৃষ্ণ প্রশ্ন করে বসলেন, আচ্ছা বলুনতো, জাতিভেদই যদি আমরা না মানি তবে আর এই উপবীত রাখা কেন ? পৈতে রেখে, নিজেকে ব্রাহ্মণ প্রমান করা, আর জাতিভেদ না মেনে নিজেকে ব্রাহ্ম পরিচয় দেওয়া, এতো কপটাচার। দেবেন্দ্রনাথ বিজয়কৃষ্ণের এই কথায় পৈতে ত্যাগ করেন নি, কিন্তু যুবক বিজয়কৃষ্ণ পৈতে ত্যাগ করেছিলেন, সেই দিন থেকেই। এবং বিজয়কৃষ্ণ একদিন সত্যকে উপলব্ধি করেছিলেন।
আসলে, দৈনন্দিন জীবনের মতো, অধ্যাত্ম জীবনের ক্রিয়া-কর্ম্মেও আমরা কিছু বাঁধাধরা নিয়মের মধ্যে দিয়ে চলতে ভালোবাসি। ধর্ম্মের মধ্যে কোনো ভেদ নেই। ভেদ সৃষ্টি হয়, আমাদের মতবাদে। সত্য সন্মন্ধে আমাদের একটা একদেশদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি আছে। আমরা আধ্যাত্মিক জগতের যে যে স্তরে অবস্থান করি, সেখান থেকে সত্যের একটা রূপ দেখি। আমরা ভুলে যাই, যে আমরা সত্যের যে রূপটি দেখছি, তা সত্যের নানান রূপের মধ্যে একটা রূপ মাত্র। বিশাল হিমালয়। এর প্রাকৃতিক আবহাওয়া, রূপ, সৌন্দৰ্য্য, সর্বত্র এক নয়। আবার এই বহুত্ত্বের মধ্যেও একটা একত্ত্ব আছে। এই একত্ত্বকে উপলব্ধি গেলে, আমাদের উচ্চ থেকে উচ্চ স্তরে নিজেকে নিয়ে যেতে হবে। আমরা যে চেতন স্তর থেকে রুপগুলোকে উপলব্ধি করি, তা আসলে একদেশদর্শী। পূর্ন সত্য নয়। মহাত্মাগণ বলছেন, জ্ঞানাতীত নিরপেক্ষ স্তরে উঠতে পারলে, প্রকৃত স্বরূপ সন্মন্ধে আমাদের সঠিক উপলব্ধি হতে পরে।
আমরা যখন যার উপাসনা করি, তখন আমাদের সেই চেতন স্তরের উপলব্ধি হয়। আমরা যদি কৃষ্ণের উপাসনা করি, তবে আমাদের কৃষ্ণ চেতনা জাগে। আমরা যখন মা-কালির উপাসনা করি, তখন আমাদের শক্তি-চেতনা জাগে। আমরা যখন শিবের উপাসনা করি, তখন আমাদের মধ্যে শিব চেতনা জাগে। এমনকি আমরা যখন, খ্রিস্টের উপাসনা করি, তখন আমাদের খ্রিস্ট চেতনা জাগে। আমরা যখন বৌদ্ধের উপাসনা করি, তখন আমাদের মধ্যে বৌদ্ধ-চেতনা জাগে। আবার আমরা যখন রামকৃষ্ণের উপাসনা করি, তখন আমাদের মধ্যে রামকৃষ্ণ চেতনা জেগে উঠতে পারে। আমরা যখন গুরুনানকের উপাসনা করি, তখন আমাদের নানক-চেতনা জাগে। আমরা যখন মোহাম্মদের উপাসনা করি তখন আমাদের মধ্যে মোহাম্মদের চেতনা জাগে।
এইযে আলাদা আলাদা চেতন-স্তর, এই প্রত্যেক চেতন স্তর থেকেই আমরা সেই জ্ঞানাতীত চেতন স্তরে পৌঁছতে পারি। তার কারন হচ্ছে, এঁদের সবাই, সেই জ্ঞানাতীত স্তরের সঙ্গেই যুক্ত। সূর্যদেবের অনেক গ্রহ আছে। গ্রহের আবার উপগ্রহ আছে। এঁরা সবাই কিন্তু সেই সূর্য্যের আলোতে আলোকিত। তো যেখান থেকেই আপনি শুরু করুন না কেন, আপনি সেই সূর্য্যের আলোতেই আলোকপ্রাপ্ত হতে পাবেন। এমনকি সেখান থেকেই আপনি সূর্য্যে যাবার রাস্তা পেয়ে যেতে পারেন। কিন্তু যে রূপ, যে শক্তি, যে মহাত্মা আপনাকে প্রেরণা দিতে পারে না, তার সাধনায় কখনো সিদ্ধি আসতে পারে না। আমাদের সেই মহাত্মাকেই অনুসরণ করা উচিত, যার সঙ্গে আমার মানসিক প্রবণতার সাযুজ্য আছে। যিনি আমাকে আমার আদর্শ অনুযায়ী তৃপ্তি দিতে পারেন। যিনি কৃষ্ণের উপাসনা করছেন, তাকে বুদ্ধদেবের উপাসনার কথা বললে, কাজে লাগবে না। আবার যারা বুদ্ধের উপাসনা করছেন, তাকে কৃষ্ণের উপাসনার কথা বলা ঠিক হবে না। এতে তার আধ্যাত্মিক জীবন ব্যর্থ হয়ে যাবে। ধর্ম্ম বিষয়ে যারা অন্ধ, তারা অন্যকেও অন্ধ করে রাখতে চায়।
জগতে সমস্ত মহান অবতারগন, পয়গম্বরগন, একই ঈশ্বর তত্ত্বের ভিন্ন-ভিন্ন প্রকাশ মাত্র। সকলের জন্য একজন-মাত্র ত্রাতা আছেন, এমনটি নয়। ত্রাতাগন সবার জন্য হতে পারেন, কিন্তু আমরা সবাই আলাদা আলাদা, তাই আমাদের ত্রাতাও আলাদা আলাদা। তাই সকলের উপরে একজন ত্রাতাকে চাপিয়ে দেওয়া, একটা ক্ষতিকারক মনোভাবের পরিচায়ক।
এই ভুল বোঝাবুঝি শুধু অবতারবাদীদের ক্ষেত্রে নয়, দ্বৈত-অদ্বৈত বিশিষ্টাদ্বৈত বাদীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কেউ বলছেন, দেব-দেবী এমনকি অবতারগন সবই মায়ার দ্বারা সৃষ্ট। অতয়েব এঁদের উপাসনা ভ্রান্ত পথ। এইসব কথা যারা বলছেন, তাঁরাও নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিচ্ছেন। যারা অদ্বৈতবাদী তাদের স্মরণ রাখা উচিত, সর্বভূতেই একমাত্র ঈশ্বরের প্রকাশ দেখতে পাই। নির্গুণ ব্রহ্ম ও সগুন ব্রহ্মের মধ্যে গুরুত্ত্বের দিক থেকে কোনো পার্থক্য নেই। জ্ঞানাতীত নিরপেক্ষ স্তরে পৌঁছাতে গেলে, সর্বভূতে ঈশ্বরের ব্যাপ্তি - এই ভাবনা থেকে, এই উপলব্ধি থেকেই সেই উচ্চস্তরে পৌঁছানো যেতে পারে।
প্রথমে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে, ঈশ্বর আমার অন্তরে অবস্থান করছেন। তারপরে উপলব্ধি করতে হবে, এই একই ঈশ্বর অন্য সবার অন্তরে অবস্থান করছেন। এর পরে এই নাম-রূপের অতীতে তাঁর অবস্থান উপলব্ধি করতে হবে। সবসময় মনে রাখতে হবে, জগৎ ব্রহ্মময়। জগৎ পরিবর্তনশীল হলেও, সময়ের নিরিখে জগৎ অসৎ নয়। কেননা, জগতের মধ্যেই ব্রহ্ম বিরাজ করছেন। তো ব্রহ্মকে স্বীকার করলে, জগৎকে অস্বীকার করা চলে না।
আমাদের মতো সাধারণ ঈশ্বর অনুসন্ধানীর বিড়ম্বনা হলো, আমরা আমাদের নিজেদের পছন্দমত ব্যক্তি-রূপটিকে ধরে রাখতে চাই। আর এই স্বাচ্ছন্দ্যের অবস্থান থেকে আমরা নিজেকে আলাদা করতে পারি না। এটি আসলে আমাদের জড়বাদী মানসিকতার জন্য হয়ে থাকে। কেননা আমরা নিজেকে এই জড় শরীরের মধ্যে আবদ্ধ রেখে, নিজেকে শরীর ভেবে নিশ্চিন্ত আছি। আর এই জড়রূপী, দেবতামূর্তি বা দেহধারী অবতারগনকে, আমার থেকে আলাদা করে ঈশ্বরের জায়গায় আসন পেতে দিয়েছি। এমনকি আমরা ভাবছি, এটাই আধাত্মিক জগতের উচ্চতর স্থান।
যদিও আমরা যারা শরীর-সর্বস্য জীব, আমাদের পক্ষে অনন্ত চৈতন্যের ধারণা বা ধ্যান করা সম্ভব নয়। তবুও আমাদেরকে এই কাল্পনিক জগতে কল্পনার সাহায্যে স্থাপন করতে বাধা কোথায় ? আমাদের দেহ সত্য, আমাদের ব্যক্তিত্ত্ব সত্য, আমাদের চিন্তাও সত্য। তাই আমরা যদি চিন্তা করতে পারি যে, আমরা এই দেহ থেকে পৃথক একটা সত্ত্বা। যার নাম আত্মা বা অন্য কোনো কিছু, যা একটা বিশ্বব্যাপী শক্তি। অনন্তে যার পরিব্যাপ্তি। তার পরে, নিজেকে একটা আলোর বিন্দু, অনন্ত ঈশ্বর-আলোকের অংশ হিসেবে কল্পনা করতে পারি। যে আলোকবিন্দু অসীম-অনন্ত আলোর অংশ হিসেবে আলোর মধ্যেই ডুবে আছে। এই ভাবনার মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে দিতে পারলে, নিজের জড়ভাবকে একদিন খর্ব করা যাবে।
আবার একবার বলি - আমরা সবাই এক-একটি জীবাত্মা। আর প্রত্যেকটি জীবাত্মা কতকগুলো স্থুল-সূক্ষ্ম-অতিসূক্ষ্ম শরীর নামক আবরণের দ্বারা ঢাকা। প্রত্যেকের একটা করে স্থুল আবরণ আছে, প্রাণময় আবরণ আছে, মনোময় , জ্ঞানময়, আনন্দময়, আবরণ আছে। আর শরীররূপী আবরনে নিজেকে ঢেকে, জীবন নাটকে অভিনয় করছে, সেই আলোর বিন্দু, যার নাম আত্মা।
আপনি যদি একটু গভীর ভাবে চিন্তা করেন, নিজেকে প্রশ্ন করেন, আপনার এই রূপ কিভাবে এলো ? আপনার ব্যাক্তিত্ত্বের উন্মেষ কিভাবে হলো ? এইভাবে চিন্তা করতে করতে দেখবেন, আপনার এই "আমি" ধারণা নিরাকার সত্তায় মিশে যাচ্ছে। আমরা এই নিরাকার সত্তার সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করতে পারি না। কিন্তু আমরা যাদের মহাত্মা বলি, যাদের আমরা অবতার বলি, তারা সবাই এই নিরাকার পরম চৈতন্য সত্তার সঙ্গে নিজেকে একাত্ম অনুভব করেছিলেন। আর চৈতন্যের সংস্পর্শে একবার এলে, আমরা জীবজগতের সীমানা ছাড়িয়ে চৈতন্যের জগতের বিশ্বচেতনা অনুভব করে, ধন্য হই।
সাধক সাধনায় যত অগ্রসর হতে থাকে, সে ধীরে ধীরে উপলব্ধি করে, সে এককালে নিরাকার ছিল, ধীরে ধীরে নিরাকার থেকে সাকার হয়েছে, আবার সে আকার থেকে নিরাকারে মিলিয়ে যাচ্ছে। এটাই পরিণতি। এটাই ভবিতব্য। যতদিন আমরা আকারে আসক্ত থাকবো, ততদিন আমরা জন্ম-মৃত্যুর চক্রে আবদ্ধ থাকবো। ভাবনা থেকেই আকারের জন্ম, আবার ভাবনাই আমাদেরকে নিরাকারে লীন করে দিতে পারে। নিরাকারে লীন হওয়াই ঈশ্বরপ্রাপ্তি। তখন মন এমনটা উচ্চস্তরে আপনাকে স্থাপন করে দেবে, যেন আপনি ঈশ্বরভূত।
ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ। হরি ওম।
দুশ্চিন্তাহীন নতুন জীবন (৪)
জীবন-জমিতে কিভাবে ভালো অর্থকরী ফসল উৎপাদন করবেন ?
আমার বাড়ির পাশে একটা ছেলে আছে। বয়স কত হবে - বড়জোর ত্রিশ-বত্রিশ। ছেলেটি লেখাপড়া বিশেষকিছু করেনি। প্রাইমারি স্কুলের গন্ডি পেরুতে পারেনি। ওর বাবা একজন মাতাল। ওর বাবার কোনো আয় নেই। ওর মা পরের বাড়িতে কাজ ক'রে, সংসার চালায়। সংসারে ছোটবেলা থেকে সে দেখে এসেছে, দারিদ্র আর ঝগড়াঝাটি । ওর মা ভীষণ ঝগড়ুটে। তথাপি একদিন নাকি ওর মা-বাবা প্রেম করে বিয়ে হয়েছিল। কাছেই মামা বাড়ি। ওর বাবা চেয়েচিন্তে মদ খেয়ে বাড়িতে আসে, আর মায়ের মুখের গালাগালি, এমনকি মারধর খেয়ে ঘুমিয়ে পরে। মাঝেমধ্যে বাড়ির সামনে রাস্তায় শুয়ে থাকে। মা-ছেলে মিলে বকাবকি করে, মারধর করে, বাড়িতে নিয়ে যায়।ছেলেটি এর মধ্যেও প্রেম করে, একটা বিয়েও করেছিল, কিন্তু ওর মায়ের গালাগালি সহ্য করতে না পেরে ওর বৌ বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। পৈতৃকসূত্রে (আসলে ভ্রাতৃসূত্রে) ১ কাঠা জমি পেয়েছে। ধীরে ধীরে সে ওই একচিলতে জমিতে এখন একটা ২.১/২ তলা বাড়ি তুলেছে। বাড়িতে এখন সে পায়রার ব্যবসা করে, আরো অনেক পাখি কেনা বেচা করে। আরো একটা সে কাজ করে তা হচ্ছে, জমির বাড়ি কেনা বেচার দালালি। কিন্তু তার সাফল্যের পিছনে রহস্যটা কি ? দেখুন, আপনি গরিব ঘরে জন্ম গ্রহণ করেছেন কি বড়োলোকের ঘরে জন্ম গ্রহণ করেছেন, সেটা বড়ো কথা নয়, কোনো অপরাধও নয়। আপনি সারাজীবন গরিব থেকে যাওয়াটাই অপরাধ। আপনি ব্রাহ্মণের ঘরে জন্ম গ্রহণ করেছেন কি শুদ্রের ঘরে জন্ম গ্রহণ করেছেন সেটা আপনার কোনো অপরাধ নয়, আপনি চিরকাল অজ্ঞান থেকে যাওয়াই অপরাধ। জীবন হচ্ছে, অগ্রগতির সোপান। জীবন কেবল বইয়ে দেওয়া নয়। জীবন অজ্ঞানতা থেকে জ্ঞানের পথে এগিয়ে যাওয়াই জীবন। জীবন একটা কর্ম্মক্ষেত্ৰ। এখানে কর্ম্মের মাধ্যমে আমরা আমাদের ভবিষ্য়্ত্কে পাল্টে নিতে পারি। যা কিনা স্বর্গের দেবতারাও পারে না। কারন স্বর্গের দেবতাদের কোনো কর্ম্মফল সঞ্চয় হয় না। কিন্তু মানুষের কর্ম্মফল সঞ্চিত হতে পারে। এখন কথা হচ্ছে, আপনি কি জানেন, আপনার জীবনের উদ্দেশ্য কি ? কেন আপনি এই পৃথিবীতে এসেছেন ? আর এর জন্য আপনাকে কি করতে হবে ? আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই এই প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর জানি না। একজন শিশুকে প্রশ্ন করলে, সে বলবে, সে ডাক্তার হতে চায়, সে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। সে পাইলট হতে চায়। ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু একজন পরিণত মানুষ জানেই না তার জীবনের লক্ষ কি ? কিন্তু আপনি যদি আপনার ইচ্ছেমতো জীবন পেতে চান, তা সে এই জীবনেই হোক, বা পরবর্তী জীবনে হোক, আপনাকে আগে লক্ষ স্থির করতে হবে। আপনি কোথায় যাবেন, সেটা না জানলে, আপনাকে টিকিট বিক্রেতা আপনাকে টিকিট দেবে না। বিভ্রান্ত মানুষ কখনও গন্তব্য ঠিক করতে পারে না। তাই তারা জীবনের ইতস্তত গন্ধ-অন্ধ গলিতে সারাজীবন ঘুরে ঘুরে মরে। তো আপনাকে একটা লক্ষ ঠিক করতে হবে। আর এই লক্ষে পৌঁছোবার জন্য, আপনাকে একটা পরিকল্পনা করতে হবে। আপনি কি চান, সেটা একটা কাগজে লিখে ফেলুন। এরপর আপনার বাঞ্চিত বস্তু বা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য, সম্ভাব্য সমস্ত উপায়ের কথা ভেবে, লিখে ফেলুন। এই সম্ভাব্য উপায়ের মধ্যে কোনটি সর্বোৎকৃষ্ট ও আপনার পক্ষে সহজ বলে মনে হয়, সেটিকে নির্দিষ্ট করুন। দেখুন, আমাদের জীবনে কি দরকার ? সুস্থ দেহ, মনের শান্তি, আর জীবনে সাফল্য। ঈশ্বর আপনাকে এগুলো পাবার জন্য, সমস্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রীর যোগান দেবেন। কিন্তু ভগবানকেও আপনাকে কিছু দিতে হবে। আপনার ভিতরে একটা ইস্হেশক্তি আছে। সেই ইচ্ছেটাকে সাফল্যের ভেলায় চাপিয়ে দিতে হবে। সাফল্যের ইচ্ছেটা ভগবানকে দিতে হবে। প্রত্যেকের কাছে আরো একটা জিনিস আছে আর সেটা হচ্ছে, প্রশ্ন করবার শক্তি - আর ভগবানের কাছে আছে সেই প্রশ্নের উত্তর। প্রত্যেকের আছে চাইবার শক্তি, আর ভগবানের কাছে সেই জিনিস দেবার শক্তি। কিন্তু ভগবানের কাছে কিছু চাইতে যাবেন না। যে ছেলে খাই খাই করে, তাকে মা গুরুত্ত্ব দেয় না। বরং বকুনি দেয়। কিন্তু যে ছেলে খাবারের জন্য, মায়ের কাছে বায়না করে না, মা সেই সন্তানের প্রতি অতিরিক্ত নজর দিয়ে থাকেন। তাই ভগবানের কাছে চাইতে যাবেন না, বরং ভগবানকে বলুন, হে ভগবান বাঞ্চিত বস্তু পাবার জন্য, আমার সংকল্প পূরণের জন্য, আমাকে উপায় বলে দাও। এখন ভগবানের কাছে যখন আপনি প্রশ্ন করবেন, তখন ভগবান আপনাকে কিছু টাস্ক দেবেন, আর বলবেন, এগুলো করলেই তোমার বাঞ্চিত ফল তুমি পেতে পারো। এখন আমাকে সেই টাস্কগুলো করে ভগবানকে দেখাতে হবে। তবেই তিনি আমাদের পুরস্কৃত করবেন। তাই শুধু স্বপ্ন দেখলে হবে না। শুয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখলে, আপনাকে বিফলতার যন্ত্রনা ভোগ করতে হবে। কিন্তু যারা স্বপ্ন পূরণের দাওয়াই-এর খোঁজ করে, তারাই স্বপ্ন পূরণ করে জীবন স্বার্থক করতে পারে। আমাদের শাস্ত্র পূরণে অনেক যাগযজ্ঞের কথা বলা আছে, যাতে নাকি আমাদের সমস্ত আশা পূরণ হতে পারে, এমনকি আমাদের শত্রুদের নাশ করতে পারে এই যাগযজ্ঞ। কিন্তু যাগযজ্ঞ মানে হচ্ছে উদ্দেশ্য পূরণের জন্য যথাবিধি কর্ম্ম করা। অর্থাৎ বুদ্ধিসহযোগে কর্ম্ম সম্পাদন করা। দেখুন আপনি যখন সাফল্যলাভ করতে চাইবেন, তখন আপনাকে অবশ্যই কিছু না কিছু দিতে হবে। সাফল্য কোনো সস্তা বস্তুও নয়। আবার ভীষণ দামিও নয়। তবে, এখানেও দরকষাকষির ব্যাপার আছে। যারা লক্ষপূরণের জন্য, কঠোর পরিশ্রম করতে প্রস্তুত। তারা একটা রাস্তা পেয়ে যাবেন। কিন্তু শুধু পরিশ্রম করলে হবে না, আপনার লক্ষবস্তুর বিষয়ের উপরে জ্ঞান অর্জন করতে হবে, কাজে যাবার আগে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হবে। তবে কর্ম্ম আপনাকে আশানুরূপ ফল প্রদান করবে। আমরা প্রথমে যে ছেলেটির কথা শুনেছি, সেই ছেলেটির কিছুই ছিল না। না বিদ্যে-বুদ্ধি না টাকা পয়সা, না আত্মীয়স্বজন। কিন্তু তার মাথার মধ্যে ছিল দুটো জিনিস এক প্রবল ইচ্ছেশক্তি, আর একটি হচ্ছে মাথার মধ্যে একটা পরিকল্পনা। ছেলেটা আমাকে বলেছিলো, সে শুধু বাড়ি-জমির ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতো। আর এর জন্য সে জনবহুল জায়গায়, রেলস্টেশনে নিজের নাম ঠিকানা দিয়ে পোস্টার সেটে রাখতো। এবং প্রতিদিন কিছু সময় সেই পোস্টারের আছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পোস্টার পড়বার ভান করতো । আর তার দাঁড়িয়ে থাকাটাই এক অদ্ভুত কাজ করতো। তাকে দাঁড়িয়ে পোস্টার পড়তে দেখে অন্যরাও সেই পোস্টার পড়তে লাগলো। এই কাজটুকুই তাকে লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার করতে মন্ত্রের মতো শক্তি জুগিয়েছিল। শুধু একটা পরিকল্পনা। ইচ্ছেশক্তি, পরিশ্রম করবার মানসিকতা ও সঠিক পরিকল্পনা, আপনার জীবনে অবশ্যি সাফল্য এনে দেবে। সুতারং জীবনে সাফল্য পেতে গেলে, একটা সুষ্ঠূ পরিকল্পনা করতে হবে। পরিকল্পনাবিহীন কর্ম্ম নিষ্ফলা। এমনকি কুফল প্রদান করতে পারে।আর এই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজে নিযুক্ত হতে হবে। সাফল্য তখন আপনার হাতের মুঠোয় এসে যাবে।
ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ। হরি ওম।
---------------------
মানুষের দুঃখ যাবে কবে ?
আমার মাঝে মধ্যে হয়, যে মানুষ নিজেই নানান রকম দুঃখের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে, সে কি করে অন্যের দুঃখের নিবৃত্তি করবে ? যে মানুষ নিজেই খেতে পায় না, সে অন্যের ক্ষিধে কিভাবে মেটাবে ? তবু দেখি, মানুষ মানুষের উপকার করবার জন্য, উঠেপরে লেগে আছে। যতদূর জানি, মানুষ, শুধু মানুষ কেন সমস্ত জীবজন্তু সবথেকে নিজেকেই ভালোবাসে। আবার এও মনে হয়, মানুষ নিজের দুঃখে যত কষ্ট পায়, তার থেকে অধিক কষ্ট পায়, অন্যের দুঃখ মোচন করতে না পারার জন্য। মানুষ যে কেন মানুষকে ভালোবাসে, এটাও আমার বোধের বাইরে।
ভগবান বুদ্ধ এসেছিলেন, মানুষের দুঃখ নিবৃত্তি করবার জন্য, ভগবান বুদ্ধ চলে গেছেন। কিন্তু মানুষের দুঃখ কি গেছে ? ঈশ্বরের সন্তান যিশুখ্রিস্ট এসেছিলেন, মানুষের দুঃখ দূর করবার জন্য। কিন্তু মানুষের দুঃখ কি চলে গেছে। ভগবান রামচন্দ্র, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এসেছিলেন, ধর্ম্ম-রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু ধর্ম্ম রাজ্য কি প্রতিষ্ঠা হয়েছে। বিবেকানন্দ মানুষের দুঃখ দেখে, ঈশ্বরকে ছেড়ে মানুষের দুঃখ দূরকরবার জন্য বলেছেন, নিজেও অক্লান্ত পরিশ্রম করে, অকালে দেহ ছেড়েছেন। কিন্তু মানুষের দুঃখের সীমানা তাতে এতটুকু কমেছে কি ? কেন মানুষ মানুষের উপকার করতে চায়, আর কেনই বা সবাই দুঃখে থাকে ? কে দেবে এর উত্তর ? আমাদের পন্ডিতমশাই একদিন আক্ষেপ করে বলেছিলেন, সবাই যেন সবাইকে ঠকাতে চাইছে। আর এতে করে আমরা সবাই আসলে অন্যের কাছে ঠকে যাচ্ছি। কিন্তু ব্যাপারে যদি উল্টো হতো, অর্থাৎ আমরা সবাই সবাইকে যদি জিতিয়ে দিতে চাইতাম, তবে হয়তো আমরা সবাই জিতে যেতাম। হায়রে, পণ্ডিতমশাইয়ের এই আশা যদি পূরণ হতো !
--------------------------------- .
No comments:
Post a Comment