Sunday, 27 October 2019

শালগ্রাম শিলা

শালগ্রাম শিলা

শালগ্রাম শিলা 
আমি যে পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছি, তারা সবাই কৃষ্ণ ভক্ত। বাড়িতে রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহের নিত্যপূজা হয়। এছাড়া বাড়িতে বিভিন্ন ঠাকুর দেবতার পূজা লেগেই থাকতো। এর মধ্যে সব থেকে বেশি হতো সত্যনারায়নের পুজো। তো সেখানে দেখতাম আমাদের পারিবারিক পুরোহিত  কালাঠাকুর, ভালো নাম শ্রী কালিপদ চক্রবর্তী, পুজো করবার সময়, লাল কাপড়ে মুড়ে, একটা কালো রঙের গোল মসৃন পাথরের টুকরো সঙ্গে করে  নিয়ে আসতো। এবং সমস্ত পুজোর আগেই এই কালো রঙের পাথরটিকে ফুল, জল, তুলসীপাতা দিয়ে পুজো করতেন। আবার পুজো শেষ হয়ে গেলে সেটি লাল কাপড়ে মুড়ে সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন। এই পাথরটির উপরে আমার একটা অদম্য আকর্ষণ ছিল। কিন্তু কালঠাকুর, এই পাথরটিকে কাউকে ছুতে দিতেন না। বলতেন, এটি স্বয়ং নারায়ণ।  এখন নিজেই একটা পাথর এক সাধুর কাছ থেকে কিনে নিয়েছি। বাড়িতে তার নিত্যপূজা হয়।

সাধারণ ভক্তের কাছে, এই শালগ্রাম শিলা পালনকর্তা বিষ্ণুর প্রতীক। দেবাদিদেব মহাদেবের প্রতীক যেমন শিবলিঙ্গ, বাণলিঙ্গ তেমনি শালগ্রাম শিলা নারায়ণের প্রতীক। বাণলিঙ্গ যেমন নর্মদা নদীর তীরে পাওয়া যায়, তেমনি এই শালগ্রাম শিলা গণ্ডকী নদীর  তীরে পাওয়া যায় । বাণলিঙ্গ যেমন প্রাকৃতিক  ভাবে নদীর স্রোতে পাথর কেটে তৈরী হয়, তেমনি শালগ্রামশিলা প্রাকৃতিক ভাবে তৈরী। তবে এই পাথরের একটা বৈশিষ্ঠ আছে। এবং এর পূজার প্রচলন শোনা যায়, আদি শঙ্করাচার্য্য প্রথম শুরু করেন। 

প্রথমে দেখে নেই শালগ্রাম বা শালিগ্রাম শিলা  কথাটা কি ভাবে এলো। এখন যেখানে গণ্ডকী নদী, তারই গর্ভে, গণ্ডকী নদীর জন্মের আগে, একসময় শালগ্রাম নামে এক প্রদেশ ছিল। সেখানকার পাষান বলে একে বলা হয় শালগ্রাম শিলা। এই পাষান আসলে একধরনের ammonoid fossils অমনোইড ফসিলস, যা পৃথিবীর গ্যাসীয় যুগে বর্তমান ছিল। বলা হয়ে থাকে ৪০০০ লক্ষ বছর থেকে ৬৬০ লক্ষ (৪০০-৬৬ million ) বছর আগে এই fossils -এর স্থিতিকাল ছিলো । এই পাষান আবার বজ্রকীট দ্বারা ক্ষোদিত বিভিন্ন দৃশ্য সহ।  খোদাইক্রিয়া  দেখতে নানান রকম। বজ্রকীট হচ্ছে একধরনের কৃমি জাতীয় জীব, যা হিমালয় সৃষ্টির ৫ কোটি বাঁচার আগে বর্তমান ছিল। আর তাদের অঙ্কন বড়ো  অদ্ভুত। কোনটা চক্রের মতো, কোনটা শাঁখের মতো।  কোনটা গদার মতো। এমনি ১৬ রকম চিন্হ দেখা যায়। প্রত্যেকটি শালগ্রাম শিলার মধ্যে আবার একটা ছিদ্র আছে।  অঙ্কনগুলো আবার এই ছিদ্রের মধ্যেও দেখা যায়।   এগুলোকেই বলে আসল শালগ্রাম শিলা। এখন কথা হচ্ছে এগুলো তো প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক কথা এর মধ্যে আধ্যাত্মিক কি আছে, যাতে মানুষ এগুলোর পুজো অর্চনা করে ?

দেখুন মানুষের শরীর  কোষের সমষ্টি ভিন্ন নয়। আর শালগ্রাম শিলা  হচ্ছে কতকগুলো এককোষী জীবের জীবাশ্ম। অর্থাৎ কত কোটি কোটি  বছরের ইতিহাস লেখা আছে এই শালগ্রাম শিলার মধ্যে, চিন্তা করুন । জীবের প্রথম পুরুষের অস্তি - আজ পাষাণে পরিণত হয়েছে। কত কোটি কোটি বছর ধরে এই জীবাশ্ম  বহন করে নিয়ে চলেছে, এই শালগ্রাম শিলা।

শালগ্রাম শিলার পূজা মানে আমাদের আদি পুরুষের পূজা। আদি পুরুষের অস্থি  আছে এই শালগ্রাম শিলার মধ্যে। আর আদি পুরুষ ছিল সৃষ্টিকর্তার সব থেকে কাছাকাছি। তাই এর মাধ্যমে আমরা আদি পুরুষের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারি। শ্রদ্ধা ভক্তি সহকারে, এই শালগ্রামের পূজা করলে যে যার বিশ্বাস ও কামনা অনুযায়ী ফল লাভ করতে পারেন। দেখুন, পূজা - বিশ্বাস, ভক্তি, ও  শ্রদ্ধা  দিয়েই শুরু হয়, আর বিশ্বাসেই মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর।

ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ।  হরি ওম।


    

No comments:

Post a Comment