শিবভক্ত, মূলনিবাসী,আত্মবিশ্বাসী - শ্রীকৃষ্ণ
গুরুদেব : কেন একথা বলছো কেন ?
জিজ্ঞাসু : সুদর্শন চক্র, অর্থাৎ যে অস্ত্র সব থেকে মোক্ষম , যার দ্বারা শ্রীকৃষ্ণ সবাইকেই পরাস্থ করতে পারতেন, সেই সুদর্শন চক্র তিনি তো দেবাদিদেব মহাদেবের কাছ থেকেই পেছিলেন।
গুরুদেব : কিভাবে পেলেন ?
জিজ্ঞাসু : শুনেছি, ভগবান বিষ্ণু হচ্ছেন, জগতের পালনকর্তা। তখনকার দিনে সুর ও অসুরেরা সর্বদা স্বর্গ দখলের জন্য যুদ্ধে লিপ্ত থাকতো। এমনি একবার, সুর অসুরের যুদ্ধে সুরেরা পরাজিত হলেন। এখন সুর-দের প্রতিনিধি অর্থাৎ মর্তের ঋষি-মুনিরা দেবতাদের অর্ঘ প্রদান করেন, ফলতঃ অসুরেরা এতে বিরক্ত হন। এবং তাদের অর্ঘপ্রদান কার্যে বাধা দিতে থাকেন। তো মুনি ঋষিরা তখন সমবেত ভাবে, পালনকর্তা বিষ্ণুর কাছে উপস্থিত হয়ে আবেদন নিবেদন করতে লাগলেন, দুঃখ জানাতে লাগলেন। এখন বিষ্ণু জানতেন, অসুরেরা সবাই মহাদেবের সাধনা করে বড় লাভ করে, এই অসীম ক্ষমতার অধিকারী হয়েছে। তখন উপায় না পেয়ে, তিনিও তখন মহাদেবের পুজো করতে লাগলেন। মহাদেবের স্তুতি করতে লাগলেন। মহাদেবের শরণাপন্ন হলেন।মহাদেবের লিঙ্গকে গঙ্গাজল দিয়ে অবহাগন করাতে লাগলেন। একশত একটি পদ্মফুল সংগ্রহ করে, তা দিয়ে দেবাদিদেবকে অর্ঘ প্রদান করতে লাগলেন। দেবাদিদেবকে সন্তুষ্ট করতে লাগলেন। এদিকে মহাদেব মজা করে, একটা পদ্মফুল ওখান থেকে সরিয়ে রাখলেন। ভগবান বিষ্ণু যখন দেখলেন, একটি পদ্মফুল কম, আর তা কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তখন নিজের পদ্মাক্ষ অর্থাৎ নিজের চোখ দিয়ে অর্ঘ প্রদান করতে উদ্দত হলেন। মহাদেব এতে আরো খুশি হলেন। এবং বাঞ্চিত ফল প্রদান করতে চাইলেন। আসলে বিষ্ণুত নিজের জন্য কিছু চান না। তিনি অসুরদের পরাস্ত করার উপায়, ও মহাদেবের সহযোগিতা চাইছিলেন। মহাদেব খুশি হয়ে তখন তাঁকে এই দিব্য অস্ত্র প্রদান করেন, যার নাম সুদর্শন চক্র। এই সুদর্শন চক্রের এমনই ক্ষমতা, যার দ্বারা পৃথিবীতে কেউ অবধ্য় থাকবে না । সেই থেকে ভগবান বিষ্ণু, তার ভক্তদের রক্ষার জন্য, ও অভক্তদের বিনাশের জন্য এই মহার্ঘ অস্ত্রের ব্যবহার করতে লাগলেন, ও অপরাজেয় হয়ে ওঠেন। আসলে মহাদেবের কৃপাতেই বিষ্ণুর আধিপত্য জগতে বিস্তার লাভ করলো।
গুরুদেব : কিভাবে পেলেন ?
জিজ্ঞাসু : শুনেছি, ভগবান বিষ্ণু হচ্ছেন, জগতের পালনকর্তা। তখনকার দিনে সুর ও অসুরেরা সর্বদা স্বর্গ দখলের জন্য যুদ্ধে লিপ্ত থাকতো। এমনি একবার, সুর অসুরের যুদ্ধে সুরেরা পরাজিত হলেন। এখন সুর-দের প্রতিনিধি অর্থাৎ মর্তের ঋষি-মুনিরা দেবতাদের অর্ঘ প্রদান করেন, ফলতঃ অসুরেরা এতে বিরক্ত হন। এবং তাদের অর্ঘপ্রদান কার্যে বাধা দিতে থাকেন। তো মুনি ঋষিরা তখন সমবেত ভাবে, পালনকর্তা বিষ্ণুর কাছে উপস্থিত হয়ে আবেদন নিবেদন করতে লাগলেন, দুঃখ জানাতে লাগলেন। এখন বিষ্ণু জানতেন, অসুরেরা সবাই মহাদেবের সাধনা করে বড় লাভ করে, এই অসীম ক্ষমতার অধিকারী হয়েছে। তখন উপায় না পেয়ে, তিনিও তখন মহাদেবের পুজো করতে লাগলেন। মহাদেবের স্তুতি করতে লাগলেন। মহাদেবের শরণাপন্ন হলেন।মহাদেবের লিঙ্গকে গঙ্গাজল দিয়ে অবহাগন করাতে লাগলেন। একশত একটি পদ্মফুল সংগ্রহ করে, তা দিয়ে দেবাদিদেবকে অর্ঘ প্রদান করতে লাগলেন। দেবাদিদেবকে সন্তুষ্ট করতে লাগলেন। এদিকে মহাদেব মজা করে, একটা পদ্মফুল ওখান থেকে সরিয়ে রাখলেন। ভগবান বিষ্ণু যখন দেখলেন, একটি পদ্মফুল কম, আর তা কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তখন নিজের পদ্মাক্ষ অর্থাৎ নিজের চোখ দিয়ে অর্ঘ প্রদান করতে উদ্দত হলেন। মহাদেব এতে আরো খুশি হলেন। এবং বাঞ্চিত ফল প্রদান করতে চাইলেন। আসলে বিষ্ণুত নিজের জন্য কিছু চান না। তিনি অসুরদের পরাস্ত করার উপায়, ও মহাদেবের সহযোগিতা চাইছিলেন। মহাদেব খুশি হয়ে তখন তাঁকে এই দিব্য অস্ত্র প্রদান করেন, যার নাম সুদর্শন চক্র। এই সুদর্শন চক্রের এমনই ক্ষমতা, যার দ্বারা পৃথিবীতে কেউ অবধ্য় থাকবে না । সেই থেকে ভগবান বিষ্ণু, তার ভক্তদের রক্ষার জন্য, ও অভক্তদের বিনাশের জন্য এই মহার্ঘ অস্ত্রের ব্যবহার করতে লাগলেন, ও অপরাজেয় হয়ে ওঠেন। আসলে মহাদেবের কৃপাতেই বিষ্ণুর আধিপত্য জগতে বিস্তার লাভ করলো।
জিজ্ঞাসু : এছাড়া শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুন, পূর্বজন্মে নারায়ণ ও নর ছিলেন। সেই জনমে, তাঁরা, এখন যেখানে নর-নারায়ণ পর্বত সেখানে শিবের আরাধনা করতেন। এই সময় ইন্দ্র তাদের ধ্যান ভঙ্গ করার জন্য, মেনকা, উর্বশীদের পাঠিয়েছিল। কিন্তু, তাঁরা শিব পূজায় এতটাই নিমগ্ন ছিলেন, যে ওই সব নর্তকীরা তাদের সাধনায় বিঘ্ন ঘ পারেনি। এইভাবেই নর ও নারায়ণ শিব ভক্তির জোরে, স্বয়ং ভূতনাথের কৃপায় প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী হয়েছিলেন।
গুরুদেব, আমি এও শুনেছি যে, শ্রীকৃষ্ণ যখনই অসহায় হতেন, তখনই মহাদেবের স্মরণ নিতেন। এমনি একবার, অর্জুনপুত্র অভিমন্যুর বধকারী জয়দ্রথকে পরাস্ত করবার জন্য, শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং অর্জুনকে নিয়ে দেবাদিদেব মহাদেবের কাছে গিয়েছিলেন। সেখানে মহাদেব অর্জুন ও শ্রীকৃষ্ণকে নর ও নারায়ণ বলে সম্মোধন করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ সেখানে, মহাদেবের একটা অভূতপূর্ব স্তোত্র পাঠ করেছিলেন। যা থেকে বোঝা যায়, তিনি একজন মহাদেবের পরম ভক্ত ছিলেন।
গুরুদেব : স্তোত্রটা জানো ?
জিজ্ঞাসু : হ্যাঁ মহাভারতে আছে, সেখানে বলা হচ্ছে - ধর্মাত্মা বাসুদেব সেই শরাসনধারী ভূতনাথ ভবানীপতিকে দেখে সনাতন ব্রহ্মনাম উচ্চারণ করে, পার্থের সাথে ভূমিষ্ট হয়ে প্রণাম করলেন। এবং স্তব শুরু করলেন - যে মহাত্মা সকল লোকের আদি, অজন্মা, ঈশান, অব্যয় মনের পরম কারন আকাশ ও বায়ু স্বরূপ, সমস্ত জ্যোতির যিনি আধার, পরব্রহ্ম, ব্ৰহ্মজ্ঞদিগের আশ্রয়, চরাচরের স্রষ্টা ও প্রতিহর্ত্তা, এবং বীরত্ব ও প্রচন্ডতার উদয় স্থান, সূক্ষ্ম অধ্যাত্ম পদলাভার্থী জ্ঞানীগণ যাঁকে প্রাপ্ত হন এবং সংহারকালে যাঁর কোপের উদয় হয়, সেই মহাত্মাকে বাসুদেব বাক্য-মন-বুদ্ধি ও কর্ম্ম দ্বারা বন্দনা করছেন।এই সময় অর্জুনও দেবাদিদেব মহাদেবকে ভূত-ভবিষ্যৎ-বর্তমানের কারন জেনে বারবার অভিবাদন করতে লাগলেন। এইভাবে শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুন উভয়েই সেই কারণস্বরূপ, আত্মাস্বরূপ মহাদেবের শরণাপন্ন হলেন ও ভূমিষ্ট হয়ে প্রণামরত থাকলেন।
তখন দেবাদিদেব মহাদেব প্রসন্ন মনে, সহাস্য বদনে স্বাগত প্রশ্ন করলেন। হে নর-নারায়ণ, হে নরোত্তম বীরদ্বয়, তোমরা গাত্রোত্থান করো। তোমাদের ক্লেশ দূর হউক। তোমাদের অভিলাষ ব্যক্ত করো, তোমরা যে জন্য এসেছো আমি তা সম্পাদন করবো। তোমরা নিজেদের কল্যান প্রার্থনা করো, আমি তা প্রদান করবো।
একথা শুনে, বাসুদেব ও অর্জুন উঠে দাঁড়িয়ে হাতজোড় করে, মহাদেবের স্তব শুরু করলেন।
"হে দেব, তুমি ভব, শর্ব্ব, রুদ্র, বরদ, পশুপতি, উগ্র, কপর্দ্দী, মহাদেব, ভীম, ত্র্যম্বক, শান্ত, ঈশান, ও মখঘ্ন, তুমি অন্ধকঘাতী, কার্তিকের পিতা, নীলগ্রীব ও বেধাঃ, তুমি পিনাকী, হবিষ্য়, সত্য, বিভু, বিলোহিত, ধুম্র, ব্যাধ ও অপরাজিত, তুমি নিত্য, নীল, শিখন্ডী, শূলধারী, দিব্যচক্ষুঃ, হর্ত্তা, পাতা, ত্রিনেত্র ও বসুরেতাঃ, তুমি অচিন্ত্য, অম্বিকানাথ, সর্ব্বদেবস্তুত, বৃষধ্বজ, মুন্ড, জটিল ও ব্রহ্মচারী। তুমি সলিল মধ্যস্থ তপস্বী, ব্রহ্মণ্য, অজিত, বিশ্বাত্মা, বিশ্বস্রষ্টা ও বিশ্বব্যাপী, তুমি ভূতগনের সেবনীয়, প্রভু ও বেদমুখ, তুমি সর্ব্ব শঙ্কর ও শিব, তুমি বাক্যের পতি, প্রজাপতি, বিশ্বপতি, ও মাহাতের পতি, তুমি সহস্রশিরাঃ, সহস্রভূজ, সহস্রনেত্র, সহস্রপাদ ও অসংখ্যেয়কর্ম্মা, তুমি সংহর্তা, হিরণ্যবর্ণ, হিরণ্যকবচ ও ভক্তানুকম্পী, তোমাকে নমস্কার। হে প্রভো ! আমাদের বাঞ্ছা পরিপূর্ন করো। এই ভাবে, শ্রীকৃষ্ণ মহাদেবকে প্রসন্ন করতে লাগলেন। .......
গুরুদেব : এটা তুমি কোথায় পেলে ?
জিজ্ঞাসু : এটা মহাভারতের দ্রোণপর্ব্বে আছে।
গুরুদেব, আমি এও শুনেছি যে, শ্রীকৃষ্ণ যখনই অসহায় হতেন, তখনই মহাদেবের স্মরণ নিতেন। এমনি একবার, অর্জুনপুত্র অভিমন্যুর বধকারী জয়দ্রথকে পরাস্ত করবার জন্য, শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং অর্জুনকে নিয়ে দেবাদিদেব মহাদেবের কাছে গিয়েছিলেন। সেখানে মহাদেব অর্জুন ও শ্রীকৃষ্ণকে নর ও নারায়ণ বলে সম্মোধন করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ সেখানে, মহাদেবের একটা অভূতপূর্ব স্তোত্র পাঠ করেছিলেন। যা থেকে বোঝা যায়, তিনি একজন মহাদেবের পরম ভক্ত ছিলেন।
গুরুদেব : স্তোত্রটা জানো ?
জিজ্ঞাসু : হ্যাঁ মহাভারতে আছে, সেখানে বলা হচ্ছে - ধর্মাত্মা বাসুদেব সেই শরাসনধারী ভূতনাথ ভবানীপতিকে দেখে সনাতন ব্রহ্মনাম উচ্চারণ করে, পার্থের সাথে ভূমিষ্ট হয়ে প্রণাম করলেন। এবং স্তব শুরু করলেন - যে মহাত্মা সকল লোকের আদি, অজন্মা, ঈশান, অব্যয় মনের পরম কারন আকাশ ও বায়ু স্বরূপ, সমস্ত জ্যোতির যিনি আধার, পরব্রহ্ম, ব্ৰহ্মজ্ঞদিগের আশ্রয়, চরাচরের স্রষ্টা ও প্রতিহর্ত্তা, এবং বীরত্ব ও প্রচন্ডতার উদয় স্থান, সূক্ষ্ম অধ্যাত্ম পদলাভার্থী জ্ঞানীগণ যাঁকে প্রাপ্ত হন এবং সংহারকালে যাঁর কোপের উদয় হয়, সেই মহাত্মাকে বাসুদেব বাক্য-মন-বুদ্ধি ও কর্ম্ম দ্বারা বন্দনা করছেন।এই সময় অর্জুনও দেবাদিদেব মহাদেবকে ভূত-ভবিষ্যৎ-বর্তমানের কারন জেনে বারবার অভিবাদন করতে লাগলেন। এইভাবে শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুন উভয়েই সেই কারণস্বরূপ, আত্মাস্বরূপ মহাদেবের শরণাপন্ন হলেন ও ভূমিষ্ট হয়ে প্রণামরত থাকলেন।
তখন দেবাদিদেব মহাদেব প্রসন্ন মনে, সহাস্য বদনে স্বাগত প্রশ্ন করলেন। হে নর-নারায়ণ, হে নরোত্তম বীরদ্বয়, তোমরা গাত্রোত্থান করো। তোমাদের ক্লেশ দূর হউক। তোমাদের অভিলাষ ব্যক্ত করো, তোমরা যে জন্য এসেছো আমি তা সম্পাদন করবো। তোমরা নিজেদের কল্যান প্রার্থনা করো, আমি তা প্রদান করবো।
একথা শুনে, বাসুদেব ও অর্জুন উঠে দাঁড়িয়ে হাতজোড় করে, মহাদেবের স্তব শুরু করলেন।
"হে দেব, তুমি ভব, শর্ব্ব, রুদ্র, বরদ, পশুপতি, উগ্র, কপর্দ্দী, মহাদেব, ভীম, ত্র্যম্বক, শান্ত, ঈশান, ও মখঘ্ন, তুমি অন্ধকঘাতী, কার্তিকের পিতা, নীলগ্রীব ও বেধাঃ, তুমি পিনাকী, হবিষ্য়, সত্য, বিভু, বিলোহিত, ধুম্র, ব্যাধ ও অপরাজিত, তুমি নিত্য, নীল, শিখন্ডী, শূলধারী, দিব্যচক্ষুঃ, হর্ত্তা, পাতা, ত্রিনেত্র ও বসুরেতাঃ, তুমি অচিন্ত্য, অম্বিকানাথ, সর্ব্বদেবস্তুত, বৃষধ্বজ, মুন্ড, জটিল ও ব্রহ্মচারী। তুমি সলিল মধ্যস্থ তপস্বী, ব্রহ্মণ্য, অজিত, বিশ্বাত্মা, বিশ্বস্রষ্টা ও বিশ্বব্যাপী, তুমি ভূতগনের সেবনীয়, প্রভু ও বেদমুখ, তুমি সর্ব্ব শঙ্কর ও শিব, তুমি বাক্যের পতি, প্রজাপতি, বিশ্বপতি, ও মাহাতের পতি, তুমি সহস্রশিরাঃ, সহস্রভূজ, সহস্রনেত্র, সহস্রপাদ ও অসংখ্যেয়কর্ম্মা, তুমি সংহর্তা, হিরণ্যবর্ণ, হিরণ্যকবচ ও ভক্তানুকম্পী, তোমাকে নমস্কার। হে প্রভো ! আমাদের বাঞ্ছা পরিপূর্ন করো। এই ভাবে, শ্রীকৃষ্ণ মহাদেবকে প্রসন্ন করতে লাগলেন। .......
গুরুদেব : এটা তুমি কোথায় পেলে ?
জিজ্ঞাসু : এটা মহাভারতের দ্রোণপর্ব্বে আছে।
এমনকি মহাভারতে পড়েছি, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বানাসুরকে বধ করবার জন্য, অর্থাৎ তার অহংকারকে বিনষ্ট করবার জন্য, যখন সুদর্শন চক্র দিয়ে তাকে বধ করবার জন্য উদ্দত হয়েছিলেন, তখন শিবের নির্দেশে সুদর্শন চক্রকে বিরত করেছিলেন।এবং তার নাতি অনিরুদ্ধের সাথে বাণাসুরের মেয়ে ঊষার বিয়ে দিয়েছিলেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দেবাদিদেব শিবকে ভীষণ মান্য করতেন ।
অতয়েব হে সদাশিব গুরুদেব ! শ্রীকৃষ্ণ বা নারায়ণ, বা বিষ্ণু আসলে দেবাদিদেব মহাদেবের পরম ভক্ত, এবং মহাদেবের শক্তিতেই বিষ্ণু বা শ্রীকৃষ্ণের শক্তি এই কথাটা সত্য। আর তিনি সত্যিকারের আমাদেরই লোক।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
অতয়েব হে সদাশিব গুরুদেব ! শ্রীকৃষ্ণ বা নারায়ণ, বা বিষ্ণু আসলে দেবাদিদেব মহাদেবের পরম ভক্ত, এবং মহাদেবের শক্তিতেই বিষ্ণু বা শ্রীকৃষ্ণের শক্তি এই কথাটা সত্য। আর তিনি সত্যিকারের আমাদেরই লোক।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
জিজ্ঞাসু :হে গুরুদেব ! ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বেদ বিরোধী ছিলেন, সেইজন্য তাঁকে আস্তিক বলা যেতে পারে।
গুরুদেব : কেন একথা বলছো কেন ?
জিজ্ঞাসু : হে গুরুদেব ! বেদে যাদের বিশ্বাস নেই তাদেরকেই বলা হয় আস্তিক। আর দেবতাদের প্রতি যাদের বিশ্বাস নেই তাদেরকে বলা হয় আস্তিক। ভগবানের মুখনিঃসৃত গীতায় দেখছি, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, বেদের কর্মযজ্ঞ, জ্ঞানযজ্ঞ, করে কিছু হবে না। তার চাইতে ভক্তিযোগ অনেক ভালো ও সহজ।
বেদে আমরা দেখেছি, ইন্দ্রের স্তূতিতে ভরা।বিভিন্ন দেব দেবতার স্তূতিতে ভাড়া এই বেদ। অর্থাৎ বেদ-অনুসারীরা ইন্দ্র, বরুন, অগ্নি ইত্যাদি দেবতার পূজা করতেন, বা তাদের স্তূতি গানে ভরা এই বেদ । কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ তাঁর পালক-পিতাকে অর্থাৎ নন্দকে ইন্দ্রের পূজা করতে নিষেধ করেছিলেন। শুধু তাই নয় তার প্রকোপ থেকে বাঁচাতে, পর্বতকে তুলে ধরে, তার নিচে গোকুলবাসীদের নিরাপত্তা দিয়েছিলেন, তবু ইন্দ্রের পূজা হতে দেন নি।
আস্তিকেরা ঈশ্বর মানেন। নাস্তিকেরা ঈশ্বর মানেন না। শ্রীকৃষ্ণ নিজেকে ভগবান বলে মনে করতেন। অন্য কারুর পূজা বা আরাধনা না করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজেকেই পূজা করার কথা বলেছেন। অন্য সব তথাকথিত ধর্ম ত্যাগ করতে বলেছেন।
জিজ্ঞাসু : হে সদাশিব ! ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আসলে মূলনিবাসী অর্থাৎ অনার্য ছিলেন। সেইজন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে আসলে মূল ভারতবাসী বলা যেতে পারে। তিনি গ্রিক থেকে আসেননি।
গুরুদেব : কেন একথা বলছো কেন ?
জিজ্ঞাসু : শ্রীকৃষ্ণের পিতা ও তার পূর্বপুরুষ এখানকার এলাহাবাদে তখনকার প্রয়াগে রাজত্ত্ব করতেন।
শ্রীকৃষ্ণের ছত্রিশটি পূর্বপুরুষ কেউ বাইরে থেকে অর্থাৎ গ্রীক থেকে ভারতে আসেন নি। তাঁরা সবাই এই ভারতবর্ষের অধিবাসী। তাহলে বলা যেতে পারে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মূলনিবাসী ছিলেন। অর্থাৎ ভারতবাসী ছিলেন। তাঁর গায়ের রং দেখুন কেমন কালো। আর্যদের গায়ের রং তো কালো ছিল, তাই না। তাই তিনিতো আমাদেরই লোক।
শ্রীকৃষ্ণ বাণাসুরের মেয়ে ঊষার সাথে অনিরুদ্ধের বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। আবার অর্জুনের সাথে তার বোন উত্তরার বিয়ে দিয়েছিলেন। এ থেকে বোঝা যায়, তিনি আর্য্য - অনার্য্যে কোনো ভেদ করতেন না। মহামুনি উত্তঙ্গকে শিক্ষা দেবার জন্য, এক চণ্ডালের হাতে অমৃত বারি পাঠিয়েছিলেন। ভৃগুপুত্র উত্তঙ্গ চণ্ডালের হাতে সেই অমৃতবারি গ্রহণ করতে রাজি না হওয়ায়, সে অমৃতবারি থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। এসব থেকে মনে হয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জাত -পাতের উর্দ্ধে ছিলেন।
অতএব হে সদাশিব গুরুদেব ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদেরই লোক। তাকে আমাদের প্রণাম করা উচিত।
ওঁং নমঃ শ্রী ভাগবতে বাসুদেবায়। ওঁং নমঃ শিবায়ঃ।
গুরুদেব : হে পুত্র ! শ্রীকৃষ্ণ একটা আয়না। তার সামনে দাঁড়ালে, তোমার স্বরূপেই তিনি প্রকাশ হবেন। তুমি যা চাও, তুমি যা দেখতে চাও, তুমি তাই দেখবে। অর্থাৎ তুমি যা, তুমি তাই দেখবে, তুমি সরে গেলে, আয়না আবার স্বচ্ছ হয়ে যাবে।
ওঁং নমঃ শ্রী ভাগবতে বাসুদেবায়। ওঁং নমঃ শিবায়ঃ।
অতএব হে সদাশিব গুরুদেব ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদেরই লোক। তাকে আমাদের প্রণাম করা উচিত।
ওঁং নমঃ শ্রী ভাগবতে বাসুদেবায়। ওঁং নমঃ শিবায়ঃ।
গুরুদেব : হে পুত্র ! শ্রীকৃষ্ণ একটা আয়না। তার সামনে দাঁড়ালে, তোমার স্বরূপেই তিনি প্রকাশ হবেন। তুমি যা চাও, তুমি যা দেখতে চাও, তুমি তাই দেখবে। অর্থাৎ তুমি যা, তুমি তাই দেখবে, তুমি সরে গেলে, আয়না আবার স্বচ্ছ হয়ে যাবে।
এই প্রসঙ্গে শ্রী রামকৃষ্ণের বলা একটা গল্পের কথা বলি।
নদীর পারে, একটা উইয়ের ঢিপি। তো অন্ধকারে, সন্ধ্যার সময় এক মাতাল এলো। উইয়ের ঢিপিটাকে দেখে ভাবলো, ব্যাটা কেমন সন্ধে থেকে মাল খেয়ে ভুর হয়ে আছে দেখো। আসলে মাতাল উইয়ের ঢিপিটাকে ভেবেছে আর একটা মাতাল। গভীর রাতে এক চোর এলো, সে উইয়ের ঢিপি দেখে ভাবলো একটা চোর। মনে মনে বললো : ব্যাটা সব কাজ সেরে এখানে বসে আছো ? আমার এখনো কিছুই হলো না। এবার শেষ রাতে এলো সাধু, সাধু উইয়ের ঢিপি দেখে ভাবলো, এ একজন বারো সাধু, ব্যাটা কেমন সমাধিতে বিভোর হয়ে গেছে, আমি এখনো ধ্যানেই বসতে পারলাম না।
আসলে আমরা যা, তাই দেখি।
শ্রীকৃষ্ণের নিজের কোনো ব্যক্তিত্ব নেই। তিনি কোনো ব্যক্তিও নন। তিনি এক পূর্ণ পুরুষ। তিনি আকর্ষক। তিনি কালো, অন্ধকার। অর্থাৎ সৃষ্টির আঁতুরঘর। আবার শূন্য। শুন্য, অর্থাৎ তার কাছে সব আছে আবার কিছুই নেই। শুন্য সদাই পূর্ন। শূন্য কখনো অপূর্ন হয় না। শুন্য কখনো ভগ্নাংশ হয় না। আর সব সংখ্যার ভগ্নাংশ হয়। শুন্যের ভগ্নাংশ হয় না। শুন্য থেকে শুরু আবার শূন্যতেই শেষ। শ্রীকৃষ্ণ কিছুই নয়। শ্রীকৃষ্ণের কোনো মূল্য নেই। শুন্যের কোনো মূল্য নেই, সংখ্যার ডান দিকে বসলে, সংখ্যার গুরুত্ত্ব বাড়ে। অদ্ভুত ব্যাপার। যাঁকে সদ্ভাবে নিলে, যে নেয় তার গুরুত্ত্ব বাড়ে। আর যে অসৎ ভাবে নেয়, অর্থাৎ বা দিকে নিলে তার কোনো গুরুত্ত্বের হেরফের হয় না। তুমি যেমন শ্রীকৃষ্ণকে দেখতে চাও তেমনি তাকে দেখতে পাবে, তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। এস ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম করি। ওঁং নমঃ শ্রী ভাগবতে বাসুদেবায়। ওঁং নমঃ শিবায়ঃ।
No comments:
Post a Comment