করোনা - ভয় দূর করবো কি করে ?
ওম সর্ব্বেষাং মঙ্গলং ভূয়াৎ, সর্ব্বে সন্তু নিরাময়াঃ।
সর্ব্বে ভদ্রাণি পশ্যন্তু, মা কশ্চিৎ দুঃখভাক ভবেৎ।
চারিদিকে একটা ভয়ানক আতঙ্কের আবহ তৈরি হয়েছে। এতবড়ো আতঙ্ক ইতিহাসে কখনো তৈরি হয়েছে বলে জানা নেই। আর আতঙ্কের কারন হচ্ছে করোনা ভাইরাস। মারণরোগের অদৃশ্য জীবাণু। করোনা ভাইরাস একধরনের জীবাণু যা মানুষকে তৎক্ষণাৎ মেরে ফেলতে পারে । আর এর জন্য না আছে কোনো ঔষধ, না আছে কোনো প্রতিষেধক। এমনকি এই রোগটাকে বা এই রোগের ভাইরাসের বাহক হচ্ছে মানুষের শরীর। তাই এর জন্য মানুষকে বিচ্ছিন্ন রাখবার জন্য, একটা মরিয়া চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আসলে অজানাকে মানুষের ভীষণ ভয়। তা সে অজানা রোগই বলুন, আর অজানা ভবিষ্যৎ বলুন। সরকারের পক্ষ থেকে যা সাবধানতা নেওয়া হয়েছে, ডাক্তার বিশেষজ্ঞরা যা পরামর্শ দিচ্ছেন, তা আমাদের অবশ্য়ই পালন করা উচিত। একটা জিনিস খেয়াল রাখা উচিত সেটা হচ্ছে, আমার দ্বারা যেন অন্যের ক্ষতি না হয়।
আমাদের সমাজে সংক্রামক রোগের জীবাণুকে (virus) নাশ করবার জন্য, বা তাড়ানোর জন্য, একটা চিরাচরিত প্রথা আছে। আর তা হচ্ছে ধুপ-গোগগুল-লোবান-কর্পূর ইত্যাদি মিশিয়ে বা আলাদা ভাবে নারকেলের ছোবড়ার দিয়ে ধোঁয়া দেওয়া। এছাড়া, উলুধ্বনি,শঙ্খধ্বনি, ঘন্টার ধ্বনি, কাঁসরের ধ্বনি, এমনকি ডমরুর ধ্বনি, সংক্রামক জীবাণুকে দূরে তাড়াতে সাহায্য করে। সাধুগণ যে ধুনি জ্বেলে বসে থাকেন, তাতেও জীবাণু নাশ হতে পারে। ঘিয়ের প্রদীপ, নিদেন পক্ষে সর্ষের তেলের প্রদীপ, জ্বালিয়ে রাখলে এমনকি মোমের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখলেও, আমরা নির্দিষ্ট পরিসরে জীবাণু মুক্ত থাকতে পারি। এগুলো আপনাদের সবার জানা, আমরা শুধু মনে করিয়ে দিলাম।
এবার একটু অন্য কথায় আসি। এই করোনার মাধ্যমে আমরা কি ভালো কিছু পেতে পারি ? আপনি হয়তো ভাবছেন, সে আবার কি ? দেখুন, আমরা এখন ঘরবন্দি হয়ে আছি। চারিদিক এখন নিঝুম। এমনকি এখন শহর দূষণ মুক্ত। এই সময়টাকে কাজে লাগান। আসলে প্রত্যেক সাধকের একটু নির্জনতা প্রয়োজন। তো তো আজকের এই বাধ্যতামূলক নির্জনতা আমাদের জীবনকে বদলে দিতে পারে। এই সময়, ভালো বই পড়ুন, ধ্যান-ধারণায় একটু বেশি সময় দিতে পারি এখন আমরা । পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর সময়তো এটা। এর পরে আর এই সুযোগ পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ। তাই সবার সঙ্গে আনন্দে থাকুন। এই সময় অবশ্যই প্রাণায়াম করুন, নিয়ম করে। যারা সময়ের দোহাই দিয়ে প্রাণায়ামকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন, তাদেরকে বলি এই সময়ে প্রাণায়ামে অভ্যস্ত করে নিন নিজেকে । প্রাণায়ামে আপনার অবশ্যই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। তা সে যে কোনো রোগ-ই হোক না কেন। আর একটা কাজ করতে পারেন, সেটা হচ্ছে, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা। প্রার্থনার মধ্যে যে অসীম শক্তি রয়েছে, সেটা এবার নিজের থেকে পরীক্ষা করবার সময় এসেছে।
দেখুন মারা আমাদের সবার যেতেই হবে। এটা আমরা সবাই জানি। এই চিরসত্যকে স্বীকার করতেই শিখুন। তাই মৃত্যুকে ভয় না পেয়ে, যে কয়দিন বেঁচে আছেন, নির্ভয়ে বাঁচুন । কিন্তু নির্ভয় আমরা হবো কি করে ? দেখুন আজ থেকে ৬০-৭০ বছর আগে, এমনকি আমাদের ছেলেবেলায় আমরা দেখেছি, কলেরায় গ্রামের পর গ্রাম উজার হয়ে যেতে । কলেরার রুগীকে শেষকৃত্য করবার জন্য কোনো লোক পাওয়া যেত না। আমরা দেখেছি পক্স এর মহামারী। আমরা দেখেছি টি.বি. রুগীর কাছে কেউ যেত না। প্লেগে একসময় মহামারী হয়েছে। এইসব রোগ এখন হয় পালিয়ে গেছে, নতুবা আমাদের চিকিৎসার আয়ত্ত্বে মধ্যে এসে গেছে। সত্যি কথা বলতে কি, এই করোনা রোগটা আসছে বিদেশ থেকে। অর্থাৎ যাদের সঙ্গে বিদেশের যোগ আছে, তারাই এই রোগটাকে নিজেদের অজ্ঞাতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তাই এই মুহূর্তে এই রোগ শহর-কেন্দ্রিক। তো প্লেগ, কলেরা, টিবি যেমন ছিলো গ্রামের রোগ । তবে শুরুটা শহর থেকে হলেও, গ্রামে ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগবে না, যদি না আমরা সতর্ক হই। সত্যি বলতে কি এই করোনার ঔষধ অবশ্য়ই আবিষ্কার হয়ে যাবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা। তাই ধৈর্য্য ধরে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে। জয় কিন্তু মানুষেরই হবে, রোগের নয়। মানুষের বিজয় রথ ধ্বজা উড়িয়ে অবশ্য়ই এগিয়ে যাবে ।
আমরা সবাই কিন্তু ভাবছি, যে আমি মরছি না। তো আমি যদি নাই মারা যাই, তবে আর আমার ভয় কিসের ? ভাবনা কিসের ? আর সত্য কথা বলতে কি, আমরা তো কেউ মারাই যাই না। আমরা স্থূল শরীর ত্যাগ করি মাত্র। এবং অবশ্য়ই আমাদের বাসনা পূরণের জন্য, আবার নতুন শরীরে আমরা আসবো। তখন আর করোনা থাকবে না। তো ভয় না পেয়ে, দুশ্চিন্তা না করে, যতদিন, যতটুকু সময় আমরা এই শরীরে আছি, ততক্ষন আমরা যেন, আমাদের কর্তব্য থেকে বিরত না হই। সবাই ভালো থাকুন। অবশ্য়ই ভালো থাকবেন। জানবেন, ঈশ্বর যা কিছু করেন, আমাদের মঙ্গলের জন্যই করেন। আমরা ক্ষুদ্রবুদ্ধি দিয়ে বুঝতে পারি না। কিন্তু সত্য এটাই।
ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ। হরি ওম।
সর্ব্বে ভদ্রাণি পশ্যন্তু, মা কশ্চিৎ দুঃখভাক ভবেৎ।
বাড়িতে বসে করোনার পরীক্ষা কি করে করবো ? বা করোনা কি করে নিয়ন্ত্রণ করবো ?
প্রায় পনেরো কুড়ি বছর আগের কথা। এই কলকাতার বুকে আমি একটা আশ্রমে গিয়েছিলাম। সেখানে রাজযোগের তালিম দেওয়া হয়। সাধারণ মানুষকে এই রাজযোগে আকৃষ্ট করবার জন্য, প্রথম দিন যোগের উপরে একটা সুন্দর ভাষণ দেওয়া হয়, আর সেটা বাধ্যমূলক ভাবে শুনতে হয় সবাইকে । ভাষণে যোগের উপকারিতা, পবিত্র জীবনে যোগের ভূমিকা ইত্যাদি নিয়ে কিছু কথা বলা হতো। এই বক্তব্যের মধ্যে, একটা কথা আমার কানে খুব বেজেছিল, আর সেটা হচ্ছে, ২০২৫ সাল থেকে নাকি পৃথিবীতে সত্যযুগ শুরু হবে। আর এই সত্যযুগে প্রবেশ করতে হলে আমাদেরকে একটা শোধন পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে, তা সে শারীরিক ভাবেই হোক বা মানসিক ভাবেই হোক।আমাদের চিন্তা ধারায় পবিত্রতা না এলে, আমাদের কর্ম্মে সততা না এলে, আমরা সেই সত্যযুগের জন্য, বিবেচিত হবো না। আর সেই শোধন পদ্ধতি হচ্ছে রাজযোগ। আমার কাছে সেদিন, কথাগুলোকে একটু অতিমাত্রায়, কল্পনার ফানুস বলে মনে হয়েছিল। শীঘ্রই মহাপ্রলয় আসবে, তাতেকরে এই এই শুদ্ধ আত্মাগুলো শুধু বেঁচে থাকবে, বাকি সবাই মারা যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
যাইহোক, করোনা ভাইরাস আমাদের দেশে এসে গেছে, এব্যাপারে কোনো সন্দেহের জায়গা নেই । কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে আক্রান্ত কি না সেটা আমরা জানি না। কারন প্রথম দিকে নাকি, এটা বোঝাই যায় না। আর এটা পরীক্ষা করতেও নাকি ৩-৫ দিন লাগে। আর এই পরীক্ষার ব্যবস্থা সবত্র পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করার সুযোগ এখনো সীমিত। তবে আমাদের অবশ্য়ই সতর্ক থাকতে হবে। আর সরকারি নির্দেশ মেনে, ডাক্তার বিশেষজ্ঞ দের পরামর্শ মেনে আমাদের নিজেদেরকে সামাজিক দূরত্ত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। আনন্দবাজারে দেখছিলাম, আমেরিকা নাকি এক ধরনের কিট আবিষ্কার করেছে, যার দ্বারা মাত্র মাত্র ৪৫ মিনিটে আক্রান্ত রুগীকে চিহ্নিত করতে পারে। যদিও আমাদের দেশে এখনো এই রিপোর্ট পেতে ৩-৫ দিন লেগে যাচ্ছে। এবং এই পরীক্ষা করবার জন্য যে কীটের প্রয়োজন তা পর্যাপ্ত পরিমানে রাজ্যের হাতে নেই।
যোগাচার্য্য রামদেব এই অবস্থায় একটা সমাধান দিয়েছেন। করোনা সম্পর্কে নিজেকে নিজেই শংসাপত্র দেবার একটা উপায় বলেছেন । আর এই বক্তব্য ABP NEWS CHANNEL গত ২০-০২-২০২০, প্রচার করেছে। আপনারা দেখে নিতে পারেন। তিনি বলছেন, অন্তর-কুম্ভক করবার জন্য। অর্থাৎ আপনি যদি, বুক ভোরে শ্বাস নিয়ে, জালন্ধর বন্ধ করে, ১ মিনিট অন্তর-কুম্ভক করতে পারেন, অর্থাৎ শ্বাসকে ১ মিনিট ভিতরে রুখে দিতে পারেন, তবে আপনি নিশ্চিত, যে করোনা ভাইরাস-এর মতো কোনো জীবাণু আপনার মধ্যে অবশ্য়ই নেই। আসলে কুম্ভক তা সে অন্তরকুম্ভক বলুন, বা বাহ্য কুম্ভক বলুন, এটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার একটা মাপকাঠি। আর সত্যি কথা বলতে গেলে, আমাদের মুনিঋষিগন বিভিন্ন আসনে বসে, এই কুম্ভকের সাহায্যে নিজেকে সুস্থ সবল রাখতেন বা রাখেন । আমাদের নিজেদের বাস্তব অভিজ্ঞতায় মনে হয়েছে, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে প্রাণায়ামের গুরুত্ত্ব অপরিসীম । আর প্রাণায়ামের অর্থ প্রাণবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করা। যোগাচার্য্য রামদেব পাঁচটি প্রাণায়ামের অভ্যাস করতে বলেছেন, সঙ্গে সূর্য-নমস্কার। সেগুলো হচ্ছে, ভস্ত্রিকা, কপালভাতি, অনুলোম-বিলোম, ভ্রামরী ও উদ্গীথ।
আসলে জীবন তো শ্বাসের খেলা। তো শ্বাসের নিয়ন্ত্রণ মানুষের জীবনী শক্তিকে উজ্জীবিত করে, এটা পরীক্ষিত সত্য । তবে যোগাচার্য্য যে এক মিনিট অন্তর-কুম্ভক করতে বলেছেন , সেটা সমস্ত সাধারণ মানুষের পক্ষে, বিশেষ করে যারা কোনোদিন প্রাণায়ামের অভ্যাস করেন নি। তাই বলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই । আচার্য্যদেব বলছেন, তিনি নিজে দুই থেকে আড়াই মিনিট কুম্ভক করতে পারেন। কিন্তু আমরা যদি ৩০-৪০ সেকেন্ড এই শ্বাসকে আমাদের ভিতরে রুদ্ধ করে রাখতে পারি, তাহলে জানবেন, স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আপনার মধ্যে আছে। অভ্যাসের মাধ্যমে আমাদের এই ক্ষমতাকে বাড়িয়ে নিতে হবে। তবে মনে রাখবেন, অন্তরকুম্ভক করুন, বাহ্য কুম্ভক নয়। বাহ্য কুম্ভক এক মিনিট করা, বহু অভ্যাসের মাধ্যমেই হতে পারে মাত্র । ৫-১০ সেকেন্ড যদি আপনি বাহ্য় কুম্ভক করতে পারেন, সেটাই যথেষ্ট। আসলে আমাদের যতক্ষন না নাড়ী শুদ্ধি হচ্ছে, ততক্ষন আমাদের দেহ বায়ুসাধন প্রক্রিয়া করার উপযুক্ত নয়। তাই আচার্য্য রামদেব যা বলেছেন, অর্থাৎ পাঁচটি প্রাণায়াম ও সূর্যপ্রণাম, এগুলো আপনি দিনে একবার, সম্ভব হলে ৫টি প্রাণায়াম দিনে দুই বার অভ্যাস করুন। খালি পেটে অভ্যাস করুন। আর নিজেকে পরীক্ষা করবার জন্য অন্তর-কুম্ভক দিনে তিন চার বার করুন । এতে করে আপনার শরীরের মধ্যে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বেড়ে যাবে। আর আপনি তখন বাইরের যেকোনো জীবাণুকে প্রতিহত করতে পারবেন। তা সে করোনা ভাইরাস হোক বা অন্য কোনো জীবাণু হোক ।
হার্ট বা ফুসফুসকে অধিক ক্রিয়াশীল রাখতে আর একটা মোক্ষম দাওয়াই আছে, সেটা হচ্ছে প্রতিনিয়ত দুবেলা, আমাদের শাঁখ বাজানো। শঙ্খ বাজালেও আমাদের ফুসফুস অধিক ক্রিয়াশীল থাকতে পারে। মূল কথা হচ্ছে, আমাদেরকে নিজেদের থেকেই নিজের শরীরের মধ্যেই রোগের প্রতিষেধক ক্ষমতার বৃদ্ধি করতে হবে। তবেই আমরা সুস্থ -সবল থাকতে পারবো। তা সে আপনি যে বয়সেই থাকুন না কেন। যাদের এই অভ্যাস আছে, তারা জানেন, তাদের প্রত্যক্ষ করেছেন, বেঁচে থাকতে, সুস্থ থাকতে ডাক্তারের চেয়ে বা ঔষদের চেয়ে বেশি দরকার প্রাণবায়ুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, আর প্রতিনিয়ত তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা।
শ্রীমৎ স্বামী শিবানন্দ সরস্বতী তো বলছেন, প্রকৃত যোগী ইচ্ছামৃত্যু বরণ করতে পারেন । যারা হঠ যোগের সাধনা করেন, তারা আজীবন জিরোগ করতে পারেন।
এছাড়া, যোগাচার্য্য রামদেব আবার বলছেন, আমলা, এলেবেরা, গিলোই, তুলসী, এগুলোর সেবন, আপনাকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। নিজেকে ঘরবন্দি করা, নিয়মিত প্রাণায়াম করা, এবং আমলা -এলেবেরা-গিলোই-তুলসী সেবন করা, আর নিজেকে আনন্দে রাখা, এগুলো করলে শুধু করোনা ভাইরাস থেকে নয়, যেকোনো ভাইরাস থেকেই আপনি সুরক্ষিত থাকতে পারবেন।
দেখুন করোনা ভাইরাস আক্রমন থেকে আমাদের কি হয় ? করোনা প্রথমে আমাদের শ্বাস ক্রিয়াকে বাঁধা সৃষ্টি করে। আমাদের ফুসফুসের ক্রিয়াকে বাধা সৃষ্টি করে। তখন প্রাণ বায়ুকে নির্ধারিত পরিমানে পাবার জন্য, আমরা শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়াকে দ্রুত করতে বাধ্য হই। অর্থাৎ করোনা আমাদের ফুসফুসের স্বাভাবিক ক্রিয়াকে বাধা দেয়। । আমাদের শ্বাস স্বাভাবিক ভাবে যতটা গ্রহণ করবার দরকার, সেটা বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুততালে বইতে থাকে। অর্থাৎ আমাদের ফুসফুস সংক্রামিত হয়েছে। তো কোরোনার আক্রমনে একবার আমাদের ফুসফুস সংক্রামিত হয়ে গেলে, সেটাকে সারিয়ে তোলার ঔষধ এখনো আবিষ্কার হয় নি। ফুসফুসের ক্রিয়া আবার অন্য কারণেও ব্যাহত হতে পারে। তো যে কারণেই আমাদের ফুসফুস ক্রিয়া ব্যাহত হোক না কেন, তার জন্য, আমরা আগে থেকে যদি প্রাণায়ামে অভ্যস্থ থাকি, অর্থাৎ প্রাণবায়ু যদি আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে তবে বাহ্যিক কোনো আক্রমন আমাদের কাবু করতে পারবে না।
ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
ওম সর্ব্বেসাম স্বস্তিরভবতু, ওম সর্ব্বেসাম শান্তিরভবতু,
ওম সর্ব্বেসাম পূর্নম ভবতু, ওম সর্ব্বেসাম মঙ্গলম ভবতু।
ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ। হরি ওম।
যমরাজ কারুর বাপের কেনা গোলাম নয়।
পরম-পুরুষ শ্রী রামচন্দ্রের রাজত্বে, বাপের বর্তমানে ছেলের মৃত্যু হচ্ছে। পণ্ডিত ব্রাহ্মণগণ নিদান দিলেন, শুদ্র শম্বুকের উগ্র তপস্যা এর কারন। তো বিশ্বামিত্র মুনি রামচন্দ্রকে নিয়ে গভীর জঙ্গলে খুঁজে খুঁজে, শম্বুকের সন্ধান পেলেন। শম্বুক তপস্যা-রত ছিলেন। রামচন্দ্র তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জানো, তোমার এই তপস্যার জন্য, রাজ্যে অরাজকতা শুরু হয়েছে? পিতার বর্তমানে পুত্রের মৃত্যু হচ্ছে ? ঋষি শম্বুক বিনীত ভাবে বললেন, যমরাজ কারুর বাপের কেনা গোলাম নয়, মানুষ তার স্বকৃত কর্ম্মফল ভোগ করে মাত্র। বিধির নির্দেশেই জীবের জন্ম-মৃত্যু হয় । এতে মানুষের কোনো হাত নেই। রামচন্দ্র এই ধ্রুবসত্য বাক্য শুনে, ক্ষনিকের জন্য থমকে গেলেন। বিশ্বামিত্র মুনি রামচন্দ্রকে বললেন, দেখেছো শুদ্রের স্পর্ধা, রাজার মুখের উপরে কথা বলে। শীঘ্রই নিধন করো, এই পাপিষ্ঠকে। রামচন্দ্র তক্ষুনি ঋষি শম্বুককে তীরবিদ্ধ করে হত্যা করলেন।
শ্রীকৃষ্ণ যজ্ঞ করছেন। এক ব্রাহ্মণ এসে, কান্নাকাটি জুড়ে দিলেন। তাঁর নাকি সন্তান জন্মের পরেই পঞ্চত্বপ্রাপ্ত হয়। এর জন্য দায়ী নিশ্চই রাজ্যের রাজা। তো উপস্থিত সবাই তাকে শান্ত হতে বললেন। কিন্তু ব্রাহ্মণ কথা শুনছেন না। চিৎকার চ্যাঁচামেচি জুড়ে দিয়েছেন । তো শ্রী কৃষ্ণের কাছে খবর গেলো। শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে পাঠালেন। অর্জুন ব্রাহ্মণকে নিয়ে তার বাড়িতে গেলেন, সেখানে কড়া পাহারা দিতে লাগলেন, যাতে যম ব্রাহ্মণের বাড়ির ত্রিসীমানায় না আসতে পারে। কিন্তু শত চেষ্টা করেও, সমস্যার সমাধান করতে পারলেন না। শেষে শ্রীকৃষ্ণ নিজেই সমস্যা সমাধানের জন্য, যমরাজের কাছে গেলেন। যমরাজ বিনীত ভাবে বললেন, বিধির বিধান খণ্ডন করবার ক্ষমতা তার নেই। তো শ্রীকৃষ্ণ সেখান থেকে চললেন, বিধির বিধায়ক সেই পরম পুরুষ নারায়ণের কাছে। সেখান থেকে তার অনুমিত নিয়ে, ব্রাহ্মণের সমস্ত সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে এলেন।
দুটোই পৌরাণিক কাহিনী। তো মৃত্যুকে আপনি কিভাবে দূরে রাখবেন ? সেতো আপনার অধীন নয়। আপনি নিজের সন্তুষ্টির জন্য, মৃত্যুর জন্য অন্যকে দায়ী করে তাকে মারতে পারেন। আপনি মৃত্যুকে ডাকতে পারেন। কিন্তু আপনি মৃত্যুকে দূরে সরিয়ে দিতে পারেন না। রামচন্দ্র মৃত্যুকে দূর করবার পরিবর্তে মৃত্যুকেই ডেকে এনেছিলেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ মৃত্যুর সীমিত ক্ষমতাকে অস্বীকার করেন নি, বরং জীবনের মূল উৎসে চলে গিয়েছিলেন। আর সেখান থেকেই পুনরায় জীবনকে ফিরিয়ে এনেছিলেন। তো আমরা কোন পথ অবলম্বন করবো ?
বছর পাঁচেক আগে আমর এক অন্তরঙ্গ বন্ধু মারা যায়। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে আমরি হাসপাতালে গেলাম। সামান্য একদিনের অসুস্থতায় সে মারা যায়। অথচ, প্রতিনিয়ত সে ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী, বডি চেক-আপ করতো। তার এই অকালমৃত্যু আমাকে অসহায় করে তোলে। বন্ধুটির একটি মাত্র মেয়ে। ইঞ্জিনিয়ারিং পাঠ শেষ করে, সবে চাকরি পেয়েছে। ভাবলাম, ওর তো ছেলে নেই, মেয়ে-বৌ কতদূর কি করবে, যাই সৎকারের ব্যবস্থা তো করতে হবে। তো আমাদের আর এক বন্ধুকে নিয়ে আমরি হসপিটালে গেলাম। গিয়ে দেখলাম, ওর স্ত্রী ভেঙে পড়েছেন । কিন্তু মেয়েটিকে দেখলাম, একদিনেই সে যেন বড়ো হয়ে গেছে। মাকে সামলাচ্ছে, হসপিটালের বিল মেটাচ্ছে, হাসপাতালের স্টাফদের সাথে কথা বলছে, কিভাবে কি করতে হবে, সব জেনে নিচ্ছে।
ত্রিবান্দ্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের মালয়ালাম ভাষার অধ্যাপক ছিলেন, মিস্টার নায়ার। বিশিষ্ট ভদ্রলোক কিন্তু ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই। তাদের ছয় বছরের শিশুটি কিছুদিন ধরেই অসুস্থ থেকে মারা যায় । শিশুটি মৃত্যুর ঠিক আগে, মাকে বললো বাবাকে একটু ডেকে দাও। । বাবা কাছে এলে, ছেলেটি উচ্চস্বরে একটা স্তোত্র পাঠ করতে লাগলো। বাবা তো অবাক, এই স্তোত্র তাকে কখনো শেখানো হয় নি। সে নিজেও এই স্ত্রোত্র কখনো শোনেনি। এর পরেই ছেলেটি দেহ ত্যাগ করলো। এই ঘটনা শ্রী নায়ার-এর জীবনে একটি চরম পরিবর্তন আনলো। যা তাকে ঈশ্বরমুখী করে দিয়েছিলো। আর একটা জিনিস সে বুঝছিলো, তা হচ্ছে, মানুষ প্রতিনিয়ত তার সংস্কার নিয়ে দেহ থেকে দেহান্তরে ভ্রমন করছে। আমরা স্বল্পবুদ্ধি নিয়ে এর সত্যতা বুঝতে পারবো না।
জীবের মৃত্যু কখন এসে হানা দেবে, তা সাধারন জীবের অজ্ঞাত। আর এই মৃত্যু মুহূর্তে মানুষ বড় অসহায় বোধ করে। মানুষ যখন সুস্থ সবল থাকে, তখন সে ধুলিকনাকে মাড়িয়ে চলে। মৃত্যুতে সে নিজেই ধুলিকনাতে পরিণত হয়ে যায়। চুল যখন মাথায় থাকে, তখন আমাদের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে। যখন সে খাবার থালায় বসতে চায়, তখন সে ঘৃণার বস্তু হয়ে যায়। সাপ যখন শিবের মাথায় থাকে, তখন সে পূজার যোগ্য, মাথা থেকে নেবে গেলেই লাঠির আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয়ে যায়। দেহে যতক্ষন প্রাণ থাকে, ততক্ষন দেহের কদর। প্রাণহীন দেহ পরম-প্রিয়জনের কাছেও ত্যাগের বস্তু, ভয়ের বস্তু। সবথেকে আশ্চর্য্যের কথা হচ্ছে, প্রতিমুহূর্তে আমরা মৃত্যুর সম্মুখীন হচ্ছি, তথাপি ভাবছি, মৃত্যুর আমার জন্য নয়। সব মৃত্যুর কথাই আমরা ভুলে যাই। এমনকি আমরা আমাদের নিজেদের মৃত্যুর কথাও ভুলে যাই। আমি নিজে যে কতবার মারা গেছি, সে সব আমি ভুলে বসে আছি। আমি আবার মরবো, আবার ভুলে যাবো। কিন্তু মৃত্যুভয় আমাদের পিছু হটে না। তাই আমরা সবাই মৃত্যু ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে আছি। জীবনে চার-পাঁচটি জিনিস আমাদের এড়িয়ে যাবার উপায় নেই।
১. শিশু থেকে আমরা একদিন অবশ্য়ই বৃদ্ধ হবো।
২. কোনো না কোনো দিন আমাদের এই শরীর অসুস্থ হয়ে পড়বেই। তা আপনি যতই সাবধানে চলুন না কেন, বা আপনি নিজে ডাক্তার হলেও অসুখ আপনাকে রেয়াত করবে না।
৩. আমাদের সবাইকে একদিন মরতেই হবে। এবং তাও একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই। অর্থাৎ যে ধরনের শরীর আপনি পেয়েছেন, সেই শরীরের পরমায়ু জন্মের সময় নির্দিষ্ট হয়ে গেছে।
৪. প্রতিনিয়ত আমাদের চাহিদার পরিবর্তন হতে থাকবে। এর থেকে রেহাই নেই।
৫. আমাদের ভাবনা-চিন্তা, কর্ম্ম আমাদের পরবর্তী শরীরের রূপ নির্দিষ্ট করছে, এর কোনো অন্যথা নেই।
অর্থাৎ আজকে আমি যে শরীর প্রাপ্ত হয়েছি, তা আমার পূর্ব্ব-পূর্ব্ব জীবনের কর্ম্ম ও ভাবনা-চিন্তার ফল। বার্ধক্যে আমাদের যৌবনের অহংকার থাকে না। অসুস্থ অবস্থায় আমার স্বাস্থ্যের অহংকার আঘাতপ্রাপ্ত হয়। মৃত্যুতে আমাদের জীবনের অহংকার থাকে না। কোনো জিনিস দীর্ঘকাল ব্যবহারের ফলে জীর্ন হয়ে গেলে, বা আমাদের কোনো জিনিস হারিয়ে গেলে, তার প্রতি আমাদের আসক্তি ত্যাগ করা উচিত। এবং বোঝা উচিত যে হয়, সেটি আমার দোষে হারিয়ে গেছে, বা বহুদিন ব্যবহারের ফলে, সেটি আর ব্যবহার-যোগ্য নেই। এর জন্য অন্য কেউ দায়ী নয়। নিয়তি, বা অপব্যবহার জনিত কারনে এটি ঘটে থাকতে পারে। আসলে আমিই আমার বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী।
একটা অদৃশ্য শক্তি প্রতিনিয়ত নিখিল বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছে। একটু ধীর হয়ে বসে ভাবলেই, এটা আমরা বেশ ভালোভাবে বুঝতে পারি । কিন্তু আমাদের মৃত্যুর আগে কি ছিলাম, আর মৃত্যুর পরে আমরা কি হবো, সেটা আমাদের কাছে অজানা। আমরা কেন সুখ-দুঃখের মধ্যে হাবুডুবু খাই, তা আমরা জানি না। এই পৃথিবীলোক বলুন, আর সৌরজগৎ বলুন, সবই সূক্ষ্ম নিয়মের দ্বারা শৃঙ্খলিত। এ সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যে সময়ের যে ব্যবধান, একে আজও আমরা বুঝে উঠতে পারিনি। বটগাছ কেন দীর্ঘকাল বাঁচে, কচ্ছপ কেন দীর্ঘকাল বাঁচে, স্বামী ত্রৈলঙ্গ বা বাবা লোকনাথ কেন সাধারণের মানুষের থেকে বেশিদিন বাঁচেন , তা আমরা জানি না। অথবা একটা কীট কেন কয়েকঘন্টা বাঁচে, পাখী কেন মাত্র ২-৩ বছর বাঁচে, একটা কুকুর কেন ৮-১০ বছর বাঁচে, মানুষ কেন ৮০-১০০ বছর বাঁচে, তা আমরা জানি না । জীবে জীবে এই যে জীবনধারণের সময়কাল, কে এর নিয়ন্তা, কে এর নির্ধারক ? এর ব্যতিক্রম কিভাবেই হয়। এই সব প্রশ্নের জবাব আমাদের কাছে নেই। তবে এটা ঠিক যে, কিছু মহাত্মা আছেন, কিছু অনুসন্ধিৎসু মানুষ আছেন, যাঁরা এইসব প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন। এই মহাত্মাগণ আসলে বহু জন্মের অভিজ্ঞতালব্ধ মহান পুরুষ। আমরা যারা সদ্য সদ্য মনুষ্য শরীর পেয়েছি, তাদের পক্ষে এদের কথার গুরুত্ত্ব বোঝা সম্ভব নয়। আমাদের মধ্যে নিম্নতর পশুবৃত্তি লোপ পায়নি, যথার্থ জ্ঞানের উন্মেষ হয় নি।
যাই হোক, তাঁরা বলছেন, আমাদের সুখ-দুঃখের মূল হচ্ছে আমাদের মন। আর আমাদের অজ্ঞানতা আমাদের দুঃখ দুর্দশার মূল। আমরা যত অজ্ঞানতা কাটিয়ে উঠতে পারবো, আমাদের মন তত পরিষ্কার হবে, আর আমরা আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবো। ঠাকুর বলতেন, যে সয় সেই রয়। প্রতিটি সংসারে সহনশীল মানুষের সংখ্যা যত বেশি থাকবে,সেই সংসার তত সুখের হবে। পৃথিবীটা সহাবস্থানের জায়গা। এখানে একজন আর একজনের সহযোগিতার মাধ্যমেই বেঁচে থাকে। কিন্তু আমরা আমাদের ব্যক্তি স্বার্থে, গোষ্ঠীস্বার্থে, দেশের স্বার্থে অন্যের ক্ষতি সাধন করবার কথা ভাবি। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের একে অন্যের পরিপূরক হতে হবে। একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। আমাকে কেউ যেন ভয় না পায়। আমিও যেন অন্যকে ভয় না করি। অন্তরের ভিতর থেকে ভালো বাসতে হবে সবাইকে । বসুধৈব কুটুম্বকম।
কিন্তু আমাদের মুশকিল হচ্ছে, আমাদের যারা শিক্ষক, সমাজের যারা অধ্যাপক, তাঁরা আমাদের মধ্যে রাগ, দ্বেষ, ঘৃণা ইত্যাদি আবেগকে জাগিয়ে সমাজকে উদ্দীপ্ত করে, তাপ গ্রহণ করতে চান।
তাইতো দেখি, বৈদিক শাস্ত্রের অমোঘ বাণী :
অথর্ববেদ দ্বিতীয় কান্ড : চতুর্থ অনুবাক : দ্বিতীয় সুক্ত : পৃ : ৪৭
অগ্নে যৎ তে তপস্তেন তং প্রতি তপ যোঽস্মান দ্বেষ্টি যং বয়ং দ্বিস্মঃ। ১
হে অগ্নি তোমার যে সন্তাপ শক্তি আছে, তা দিয়ে আমাদের শত্রুর প্রতি প্রজ্বলিত হও, যে শত্রূ আমাদের বিদ্বেষ করে, আমরা যাদের দ্বেষ করি।
অগ্নে যৎ হরস্তেন তং প্রতি হর যোঽস্মান দ্বেষ্টি যং বয়ং দ্বিস্মঃ। ২
হে অগ্নি তোমার যে সংহার শক্তি আছে, তা দিয়ে তুমি শত্রুদের সংহার করো, যে শত্রূ আমাদের বিদ্বেষ করে, আমরা যাদের দ্বেষ করি।
অগ্নে যৎ তেঽর্চিস্তেন তং প্রত্যর্চ যোঽস্মান দ্বেষ্টি যং বয়ং দ্বিস্মঃ। ৩
হে অগ্নি, তোমার যে দীপ্তি আছে, তা দিয়ে তাকে দগ্ধ করবার জন্য দীপ্ত হও, যে শত্রূ আমাদের বিদ্বেষ করে, আমরা যাদের দ্বেষ করি।
অগ্নে যৎ তে শোচিস্তেন তং প্রতি শোচ যোঽস্মান দ্বেষ্টি যং বয়ং দ্বিস্মঃ। ৪
হে অগ্নি, তোমার যে শোকজনন সামর্থ আছে, তা দিয়ে তাকে শোকযুক্ত করো, যে শত্রূ আমাদের বিদ্বেষ করে, আমরা যাদের দ্বেষ করি।
অগ্নে যৎ তে তেজস্তেন তম তেজসং কৃনু যোঽস্মান দ্বেষ্টি যং বয়ং দ্বিস্মঃ। ৫
হে অগ্নি, তোমার যে পরকে অভিভব করার যে তেজ আছে, তা দিয়ে তাকে নিস্তেজ করো, যে শত্রূ আমাদের বিদ্বেষ করে, আমরা যাদের দ্বেষ করি।
অগ্নিদেব আমাদের কথা অনুযায়ী কাজ করেন কি না জানিনা। কিন্তু আমরাই অগ্নিকে ইন্ধন যোগাই, একথা সত্য । অথচ অধিক সত্য হচ্ছে, পৃথিবীতে আমরা কেউ কারুর শত্রূ নোই। আমরা সবাই পরমাত্মার অংশ। পরম-পিতার সন্তান। আমরা সবাই এক - অভিন্ন।এই অমোঘ সত্য আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে। সবাই ভালো থাকুক, সবাই নিরাতঙ্কে থাকুক।
ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ। হরি ওম।
যমরাজ কারুর বাপের কেনা গোলাম নয়।
পরম-পুরুষ শ্রী রামচন্দ্রের রাজত্বে, বাপের বর্তমানে ছেলের মৃত্যু হচ্ছে। পণ্ডিত ব্রাহ্মণগণ নিদান দিলেন, শুদ্র শম্বুকের উগ্র তপস্যা এর কারন। তো বিশ্বামিত্র মুনি রামচন্দ্রকে নিয়ে গভীর জঙ্গলে খুঁজে খুঁজে, শম্বুকের সন্ধান পেলেন। শম্বুক তপস্যা-রত ছিলেন। রামচন্দ্র তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জানো, তোমার এই তপস্যার জন্য, রাজ্যে অরাজকতা শুরু হয়েছে? পিতার বর্তমানে পুত্রের মৃত্যু হচ্ছে ? ঋষি শম্বুক বিনীত ভাবে বললেন, যমরাজ কারুর বাপের কেনা গোলাম নয়, মানুষ তার স্বকৃত কর্ম্মফল ভোগ করে মাত্র। বিধির নির্দেশেই জীবের জন্ম-মৃত্যু হয় । এতে মানুষের কোনো হাত নেই। রামচন্দ্র এই ধ্রুবসত্য বাক্য শুনে, ক্ষনিকের জন্য থমকে গেলেন। বিশ্বামিত্র মুনি রামচন্দ্রকে বললেন, দেখেছো শুদ্রের স্পর্ধা, রাজার মুখের উপরে কথা বলে। শীঘ্রই নিধন করো, এই পাপিষ্ঠকে। রামচন্দ্র তক্ষুনি ঋষি শম্বুককে তীরবিদ্ধ করে হত্যা করলেন।
শ্রীকৃষ্ণ যজ্ঞ করছেন। এক ব্রাহ্মণ এসে, কান্নাকাটি জুড়ে দিলেন। তাঁর নাকি সন্তান জন্মের পরেই পঞ্চত্বপ্রাপ্ত হয়। এর জন্য দায়ী নিশ্চই রাজ্যের রাজা। তো উপস্থিত সবাই তাকে শান্ত হতে বললেন। কিন্তু ব্রাহ্মণ কথা শুনছেন না। চিৎকার চ্যাঁচামেচি জুড়ে দিয়েছেন । তো শ্রী কৃষ্ণের কাছে খবর গেলো। শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে পাঠালেন। অর্জুন ব্রাহ্মণকে নিয়ে তার বাড়িতে গেলেন, সেখানে কড়া পাহারা দিতে লাগলেন, যাতে যম ব্রাহ্মণের বাড়ির ত্রিসীমানায় না আসতে পারে। কিন্তু শত চেষ্টা করেও, সমস্যার সমাধান করতে পারলেন না। শেষে শ্রীকৃষ্ণ নিজেই সমস্যা সমাধানের জন্য, যমরাজের কাছে গেলেন। যমরাজ বিনীত ভাবে বললেন, বিধির বিধান খণ্ডন করবার ক্ষমতা তার নেই। তো শ্রীকৃষ্ণ সেখান থেকে চললেন, বিধির বিধায়ক সেই পরম পুরুষ নারায়ণের কাছে। সেখান থেকে তার অনুমিত নিয়ে, ব্রাহ্মণের সমস্ত সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে এলেন।
দুটোই পৌরাণিক কাহিনী। তো মৃত্যুকে আপনি কিভাবে দূরে রাখবেন ? সেতো আপনার অধীন নয়। আপনি নিজের সন্তুষ্টির জন্য, মৃত্যুর জন্য অন্যকে দায়ী করে তাকে মারতে পারেন। আপনি মৃত্যুকে ডাকতে পারেন। কিন্তু আপনি মৃত্যুকে দূরে সরিয়ে দিতে পারেন না। রামচন্দ্র মৃত্যুকে দূর করবার পরিবর্তে মৃত্যুকেই ডেকে এনেছিলেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ মৃত্যুর সীমিত ক্ষমতাকে অস্বীকার করেন নি, বরং জীবনের মূল উৎসে চলে গিয়েছিলেন। আর সেখান থেকেই পুনরায় জীবনকে ফিরিয়ে এনেছিলেন। তো আমরা কোন পথ অবলম্বন করবো ?
বছর পাঁচেক আগে আমর এক অন্তরঙ্গ বন্ধু মারা যায়। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে আমরি হাসপাতালে গেলাম। সামান্য একদিনের অসুস্থতায় সে মারা যায়। অথচ, প্রতিনিয়ত সে ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী, বডি চেক-আপ করতো। তার এই অকালমৃত্যু আমাকে অসহায় করে তোলে। বন্ধুটির একটি মাত্র মেয়ে। ইঞ্জিনিয়ারিং পাঠ শেষ করে, সবে চাকরি পেয়েছে। ভাবলাম, ওর তো ছেলে নেই, মেয়ে-বৌ কতদূর কি করবে, যাই সৎকারের ব্যবস্থা তো করতে হবে। তো আমাদের আর এক বন্ধুকে নিয়ে আমরি হসপিটালে গেলাম। গিয়ে দেখলাম, ওর স্ত্রী ভেঙে পড়েছেন । কিন্তু মেয়েটিকে দেখলাম, একদিনেই সে যেন বড়ো হয়ে গেছে। মাকে সামলাচ্ছে, হসপিটালের বিল মেটাচ্ছে, হাসপাতালের স্টাফদের সাথে কথা বলছে, কিভাবে কি করতে হবে, সব জেনে নিচ্ছে।
ত্রিবান্দ্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের মালয়ালাম ভাষার অধ্যাপক ছিলেন, মিস্টার নায়ার। বিশিষ্ট ভদ্রলোক কিন্তু ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই। তাদের ছয় বছরের শিশুটি কিছুদিন ধরেই অসুস্থ থেকে মারা যায় । শিশুটি মৃত্যুর ঠিক আগে, মাকে বললো বাবাকে একটু ডেকে দাও। । বাবা কাছে এলে, ছেলেটি উচ্চস্বরে একটা স্তোত্র পাঠ করতে লাগলো। বাবা তো অবাক, এই স্তোত্র তাকে কখনো শেখানো হয় নি। সে নিজেও এই স্ত্রোত্র কখনো শোনেনি। এর পরেই ছেলেটি দেহ ত্যাগ করলো। এই ঘটনা শ্রী নায়ার-এর জীবনে একটি চরম পরিবর্তন আনলো। যা তাকে ঈশ্বরমুখী করে দিয়েছিলো। আর একটা জিনিস সে বুঝছিলো, তা হচ্ছে, মানুষ প্রতিনিয়ত তার সংস্কার নিয়ে দেহ থেকে দেহান্তরে ভ্রমন করছে। আমরা স্বল্পবুদ্ধি নিয়ে এর সত্যতা বুঝতে পারবো না।
জীবের মৃত্যু কখন এসে হানা দেবে, তা সাধারন জীবের অজ্ঞাত। আর এই মৃত্যু মুহূর্তে মানুষ বড় অসহায় বোধ করে। মানুষ যখন সুস্থ সবল থাকে, তখন সে ধুলিকনাকে মাড়িয়ে চলে। মৃত্যুতে সে নিজেই ধুলিকনাতে পরিণত হয়ে যায়। চুল যখন মাথায় থাকে, তখন আমাদের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে। যখন সে খাবার থালায় বসতে চায়, তখন সে ঘৃণার বস্তু হয়ে যায়। সাপ যখন শিবের মাথায় থাকে, তখন সে পূজার যোগ্য, মাথা থেকে নেবে গেলেই লাঠির আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয়ে যায়। দেহে যতক্ষন প্রাণ থাকে, ততক্ষন দেহের কদর। প্রাণহীন দেহ পরম-প্রিয়জনের কাছেও ত্যাগের বস্তু, ভয়ের বস্তু। সবথেকে আশ্চর্য্যের কথা হচ্ছে, প্রতিমুহূর্তে আমরা মৃত্যুর সম্মুখীন হচ্ছি, তথাপি ভাবছি, মৃত্যুর আমার জন্য নয়। সব মৃত্যুর কথাই আমরা ভুলে যাই। এমনকি আমরা আমাদের নিজেদের মৃত্যুর কথাও ভুলে যাই। আমি নিজে যে কতবার মারা গেছি, সে সব আমি ভুলে বসে আছি। আমি আবার মরবো, আবার ভুলে যাবো। কিন্তু মৃত্যুভয় আমাদের পিছু হটে না। তাই আমরা সবাই মৃত্যু ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে আছি। জীবনে চার-পাঁচটি জিনিস আমাদের এড়িয়ে যাবার উপায় নেই।
১. শিশু থেকে আমরা একদিন অবশ্য়ই বৃদ্ধ হবো।
২. কোনো না কোনো দিন আমাদের এই শরীর অসুস্থ হয়ে পড়বেই। তা আপনি যতই সাবধানে চলুন না কেন, বা আপনি নিজে ডাক্তার হলেও অসুখ আপনাকে রেয়াত করবে না।
৩. আমাদের সবাইকে একদিন মরতেই হবে। এবং তাও একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই। অর্থাৎ যে ধরনের শরীর আপনি পেয়েছেন, সেই শরীরের পরমায়ু জন্মের সময় নির্দিষ্ট হয়ে গেছে।
৪. প্রতিনিয়ত আমাদের চাহিদার পরিবর্তন হতে থাকবে। এর থেকে রেহাই নেই।
৫. আমাদের ভাবনা-চিন্তা, কর্ম্ম আমাদের পরবর্তী শরীরের রূপ নির্দিষ্ট করছে, এর কোনো অন্যথা নেই।
অর্থাৎ আজকে আমি যে শরীর প্রাপ্ত হয়েছি, তা আমার পূর্ব্ব-পূর্ব্ব জীবনের কর্ম্ম ও ভাবনা-চিন্তার ফল। বার্ধক্যে আমাদের যৌবনের অহংকার থাকে না। অসুস্থ অবস্থায় আমার স্বাস্থ্যের অহংকার আঘাতপ্রাপ্ত হয়। মৃত্যুতে আমাদের জীবনের অহংকার থাকে না। কোনো জিনিস দীর্ঘকাল ব্যবহারের ফলে জীর্ন হয়ে গেলে, বা আমাদের কোনো জিনিস হারিয়ে গেলে, তার প্রতি আমাদের আসক্তি ত্যাগ করা উচিত। এবং বোঝা উচিত যে হয়, সেটি আমার দোষে হারিয়ে গেছে, বা বহুদিন ব্যবহারের ফলে, সেটি আর ব্যবহার-যোগ্য নেই। এর জন্য অন্য কেউ দায়ী নয়। নিয়তি, বা অপব্যবহার জনিত কারনে এটি ঘটে থাকতে পারে। আসলে আমিই আমার বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী।
একটা অদৃশ্য শক্তি প্রতিনিয়ত নিখিল বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছে। একটু ধীর হয়ে বসে ভাবলেই, এটা আমরা বেশ ভালোভাবে বুঝতে পারি । কিন্তু আমাদের মৃত্যুর আগে কি ছিলাম, আর মৃত্যুর পরে আমরা কি হবো, সেটা আমাদের কাছে অজানা। আমরা কেন সুখ-দুঃখের মধ্যে হাবুডুবু খাই, তা আমরা জানি না। এই পৃথিবীলোক বলুন, আর সৌরজগৎ বলুন, সবই সূক্ষ্ম নিয়মের দ্বারা শৃঙ্খলিত। এ সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যে সময়ের যে ব্যবধান, একে আজও আমরা বুঝে উঠতে পারিনি। বটগাছ কেন দীর্ঘকাল বাঁচে, কচ্ছপ কেন দীর্ঘকাল বাঁচে, স্বামী ত্রৈলঙ্গ বা বাবা লোকনাথ কেন সাধারণের মানুষের থেকে বেশিদিন বাঁচেন , তা আমরা জানি না। অথবা একটা কীট কেন কয়েকঘন্টা বাঁচে, পাখী কেন মাত্র ২-৩ বছর বাঁচে, একটা কুকুর কেন ৮-১০ বছর বাঁচে, মানুষ কেন ৮০-১০০ বছর বাঁচে, তা আমরা জানি না । জীবে জীবে এই যে জীবনধারণের সময়কাল, কে এর নিয়ন্তা, কে এর নির্ধারক ? এর ব্যতিক্রম কিভাবেই হয়। এই সব প্রশ্নের জবাব আমাদের কাছে নেই। তবে এটা ঠিক যে, কিছু মহাত্মা আছেন, কিছু অনুসন্ধিৎসু মানুষ আছেন, যাঁরা এইসব প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন। এই মহাত্মাগণ আসলে বহু জন্মের অভিজ্ঞতালব্ধ মহান পুরুষ। আমরা যারা সদ্য সদ্য মনুষ্য শরীর পেয়েছি, তাদের পক্ষে এদের কথার গুরুত্ত্ব বোঝা সম্ভব নয়। আমাদের মধ্যে নিম্নতর পশুবৃত্তি লোপ পায়নি, যথার্থ জ্ঞানের উন্মেষ হয় নি।
যাই হোক, তাঁরা বলছেন, আমাদের সুখ-দুঃখের মূল হচ্ছে আমাদের মন। আর আমাদের অজ্ঞানতা আমাদের দুঃখ দুর্দশার মূল। আমরা যত অজ্ঞানতা কাটিয়ে উঠতে পারবো, আমাদের মন তত পরিষ্কার হবে, আর আমরা আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবো। ঠাকুর বলতেন, যে সয় সেই রয়। প্রতিটি সংসারে সহনশীল মানুষের সংখ্যা যত বেশি থাকবে,সেই সংসার তত সুখের হবে। পৃথিবীটা সহাবস্থানের জায়গা। এখানে একজন আর একজনের সহযোগিতার মাধ্যমেই বেঁচে থাকে। কিন্তু আমরা আমাদের ব্যক্তি স্বার্থে, গোষ্ঠীস্বার্থে, দেশের স্বার্থে অন্যের ক্ষতি সাধন করবার কথা ভাবি। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের একে অন্যের পরিপূরক হতে হবে। একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। আমাকে কেউ যেন ভয় না পায়। আমিও যেন অন্যকে ভয় না করি। অন্তরের ভিতর থেকে ভালো বাসতে হবে সবাইকে । বসুধৈব কুটুম্বকম।
কিন্তু আমাদের মুশকিল হচ্ছে, আমাদের যারা শিক্ষক, সমাজের যারা অধ্যাপক, তাঁরা আমাদের মধ্যে রাগ, দ্বেষ, ঘৃণা ইত্যাদি আবেগকে জাগিয়ে সমাজকে উদ্দীপ্ত করে, তাপ গ্রহণ করতে চান।
তাইতো দেখি, বৈদিক শাস্ত্রের অমোঘ বাণী :
অথর্ববেদ দ্বিতীয় কান্ড : চতুর্থ অনুবাক : দ্বিতীয় সুক্ত : পৃ : ৪৭
হে অগ্নি তোমার যে সন্তাপ শক্তি আছে, তা দিয়ে আমাদের শত্রুর প্রতি প্রজ্বলিত হও, যে শত্রূ আমাদের বিদ্বেষ করে, আমরা যাদের দ্বেষ করি।
অগ্নে যৎ হরস্তেন তং প্রতি হর যোঽস্মান দ্বেষ্টি যং বয়ং দ্বিস্মঃ। ২
হে অগ্নি তোমার যে সংহার শক্তি আছে, তা দিয়ে তুমি শত্রুদের সংহার করো, যে শত্রূ আমাদের বিদ্বেষ করে, আমরা যাদের দ্বেষ করি।
অগ্নে যৎ তেঽর্চিস্তেন তং প্রত্যর্চ যোঽস্মান দ্বেষ্টি যং বয়ং দ্বিস্মঃ। ৩
হে অগ্নি, তোমার যে দীপ্তি আছে, তা দিয়ে তাকে দগ্ধ করবার জন্য দীপ্ত হও, যে শত্রূ আমাদের বিদ্বেষ করে, আমরা যাদের দ্বেষ করি।
অগ্নে যৎ তে শোচিস্তেন তং প্রতি শোচ যোঽস্মান দ্বেষ্টি যং বয়ং দ্বিস্মঃ। ৪
হে অগ্নি, তোমার যে শোকজনন সামর্থ আছে, তা দিয়ে তাকে শোকযুক্ত করো, যে শত্রূ আমাদের বিদ্বেষ করে, আমরা যাদের দ্বেষ করি।
অগ্নে যৎ তে তেজস্তেন তম তেজসং কৃনু যোঽস্মান দ্বেষ্টি যং বয়ং দ্বিস্মঃ। ৫
হে অগ্নি, তোমার যে পরকে অভিভব করার যে তেজ আছে, তা দিয়ে তাকে নিস্তেজ করো, যে শত্রূ আমাদের বিদ্বেষ করে, আমরা যাদের দ্বেষ করি।
অগ্নিদেব আমাদের কথা অনুযায়ী কাজ করেন কি না জানিনা। কিন্তু আমরাই অগ্নিকে ইন্ধন যোগাই, একথা সত্য । অথচ অধিক সত্য হচ্ছে, পৃথিবীতে আমরা কেউ কারুর শত্রূ নোই। আমরা সবাই পরমাত্মার অংশ। পরম-পিতার সন্তান। আমরা সবাই এক - অভিন্ন।এই অমোঘ সত্য আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে। সবাই ভালো থাকুক, সবাই নিরাতঙ্কে থাকুক।
ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ। হরি ওম।
No comments:
Post a Comment