Tuesday, 7 April 2020

ভবিষ্যৎ মানুষ কেমন হবে ? সাধনা পর্ব - ১২


করোনার পরে, ভবিষ্যৎ মানুষ কেমন হবে ?
ওম সর্বেসাম মঙ্গলম  ভূয়াৎ। সর্বে  সন্তু নিরাময়াঃ।
সর্বে ভদ্রানী পশ্যন্তু মা কশ্চিৎ দুঃখভাগ ভবেৎ।
ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ। 
ঘরে বসে আছি।  একটু গল্প শোনা যাক।
একটা সাপের ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছে। তো সে ভগবানের কাছে ব্যাকুল হয়ে প্রার্থনা করছে, হে ভগবান আমাকে একটা ব্যাঙ দাও, খেয়ে বাঁচি। তো ভগবান তাকে একটা ব্যাঙ দিলো।  সাপটি অমনি ব্যাঙটাকে খপ করে ধরলো। এখন ব্যাঙটা ভয় পেয়ে গেলো। ভাবলো এবার মরেছি।  আর বাঁচার উপায় নেই। তো সে ভয়ে, প্রাণের তাগিদে, ভগবানের নাম করতে লাগলো। হে ভগবান আমাকে সাপের হাত থেকে বাঁচাও। তো ভগবান পরে গেল মহা বিপদে। কাকেই বা মারে, আর কাকেই বা
বাঁচায় ? ভগবান এখন উভয়  সংকটে। ব্যাঙকে বাঁচাতে গেলে সাপের খাবার জোটে না। আবার সাপের খাবার যোগান দিতে গেলে ব্যাঙের প্রাণ যায়। তো ভগবান এই উভয়-সঙ্কট থেকে বাঁচার জন্য একটা উপায় বের করলো। ব্যাঙকে বললো, মরেছিস তো মরার মতো মর। আর সাপকে বললো, ধরেছিস তো ধরার মতো ধর। এখন ব্যাঙ মরার মতো পড়ে  রইলো। সাপ ভাবলো, ব্যাঙটা  মরে  গেছে। এইবার সে মুখটাকে একটু আলগা করলো, গিলবে বলে। যেই না সাপ  মুখটাকে আলগা করেছে, অমনি ব্যাঙ লাফিয়ে পগার পার। তো সাপ  বললো, হে ভগবান, একি করলে আমার  খাবার ছিনিয়ে নিলে ? ভগবান বললো, তোকে বলেছিলাম, ধরার মতো ধর,  তো তুই ধরে আবার ছেড়ে দিলি কেন ?
আরো একটা গল্প, ব্রহ্মাপুত্র নারদমুনি ও ভগবান বিষ্ণু বিষ্ণুলোকে বসে আছেন। এদিকে কপোত  কপোতি ডালিম গাছে বসে প্রেম নিবেদন করছে। শিকারী শর নিক্ষেপ করবার জন্য, ধনুকে তীর স্থাপন করছে।  এই ঘটনা নারদের দৃষ্টিতে এলো। তো নারদ ভগবানকে বললেন, হে ভগবান, আপনি কপত  কপতিকে  বাঁচান। আপনার শ্রেষ্ঠ গুন্ প্রেম।  সেই প্রেম নিবেদনের সময়, কারুর প্রাণ গেলে, আপনার বদনাম হবে। তো ভগবান বললেন, কিন্তু শিকারী গত তিন দিন ধরে শিকার পায়  নি।  তার ঘরে ছেলে-মেয়েরা আজ তিন দিন উপবাসী। আমি কাকে রেখে কাকে ধরি। তো নারদের পীড়াপীড়িতে ভগবান সাপের রূপ ধরলেন, আর শিকারীকে কামড়ে দিলেন। শিকারী, হায় ভগবান বলে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। কপোত কপোতি সেই শব্দে উড়ে পালালো। ভগবান এবার ওঝার রূপ ধরলেন, আর শিকারীকে ঝাড়ফুঁক করে বাঁচিয়ে দিলেন।
তো আমরা যদি একবার আকুল ভাবে ভগবানকে ডাকি, তবে ভগবান অবশ্য়ই আমাদের সমস্ত দায়িত্ত্ব নেবেন। কিন্তু কথা হচ্ছে, আমাদের ভগবানের ইচ্ছে অনুযায়ী চলতেও হবে। ব্যাঙ, শিকারী, সাপ সবাই ভগবানকে আকুল ভাবে ডেকেছিল। কপোত  কপোতি ভগবানকে ডাকেনি।  তবু রক্ষা পেল কারন, ভগবানের শ্রেষ্ঠ গুনের সাধনা করছিলো তারা। তো আমাদের তিনটি কথা মনে রাখতে হবে। ১. ভগবানকে আকুল ভাবে ডাকতে হবে। ২. আমাদের ইচ্ছে অনুযায়ী নয়, ভগবানের ইচ্ছে অনুযায়ী চলতে হবে।  সবশেষে ৩. ভগবানের গুনের সাধনা করতে হবে। তাহলে আমরা অবশ্য়ই রক্ষা পাবো।
আমরা ভগবানের কাছে অনেককিছু চাই। কিন্তু ভগবানের কথা অনুযায়ী চলি না। ভগবানের গুনের সাধনাও  করি না। একজন শিশুর কাছে প্রার্থনা মানে যেমন সে মা-বাবার কাছে নানান জিনিস চায়, তেমনি ঈশ্বরকেও সে একজন বিরাট দাতা  মনে করে। এই শিশু অবস্থাই আমাদের সারা জীবন ধরে চলতে থাকে। আর আমার প্রার্থনার উত্তর না পেলে বা আকাঙ্খিত  বস্তু না পেলে, আমরা ঈশ্বরের অস্তিত্ত্বে সন্দিহান হয়ে উঠি।
 এখন একটা ভয়ানক যুদ্ধ চলছে। অদৃশ্য একটা শক্তি, যাকে  আমরা বলছি করোনা,  মানুষকে খুঁজে বেড়াচ্ছে, মেরে ফেলবার জন্য। আমরা তার ভয়ে, আক্ষরিক অর্থেই দরজা জানলা বন্ধ করে, বসে আছি। আমার একটা জিনিস মনে হচ্ছে, আমরা কি মানুষকে ভয় পাচ্ছি, না করোনাকে ? কারন আমরা তো এখন করোনার বাহক মানুষকেই এড়িয়ে যেতে চাইছি। কোরোনাকে তো আমরা চিনিনা। তার বাহককে আমরা চিনি। 
দেখুন পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টি হবার অনেক আগে থেকেই, জীবনের সৃষ্টি হয়েছিল। তাই জীবন সৃষ্টির প্রাথমিক অবস্থা সম্পর্কে মানুষের কোনো প্রতক্ষ্য অভিজ্ঞতা থাকা সম্ভব নয়। এই সন্মন্ধে, বিভিন্ন সম্প্রদায়, বিভিন্ন দার্শনিক বিভিন্ন রকম মত প্রদান করেছেন। 
কেউ বলছেন, সর্ব্বশক্তিমান ঈশ্বর জীবন সৃষ্টি করেছেন, আর সৃষ্টির আদিকাল থেকেই জীব একই রকম আছে। অপরিবর্তিত আছে। 
কেউ বলছেন, অজীব বস্তু থেকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই   জীবনের উৎপত্তি ঘটেছিলো। যেমন স্যাঁতসেতে মাটিতে এমনি-এমনি পোকার জন্ম হয়। 
আরো একদল আছেন, যারা বলে থাকেন,  পৃথিবীর বাইরে কোনো না কোনো গ্রহে, জীবনের বিকাশ ক্রিয়া চলছিল। সেখান থেকে মহাকাশ প্রতিরোধী রেনুর মাধ্যমে বা অন্য কোনো ভাবে, পৃথিবীতে জীবনের সঞ্চার হয়। পরাবিদ্যাবিদগন এই মতে  বিশ্বাস করেন।  
আর একদল আছেন, যারা বলে থাকেন, জীব একটা ধারাবাহিক রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফল মাত্র ।
তো যেভাবেই জীবের সৃষ্টি হোক না কেনো, পৃথিবী  যেমন মৌল পদার্থের সমন্বিত গ্যাসীয় ও বাস্পপূর্ণ একটা ঘূর্ণমান জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ড ছিল,  তেমনি জীবের সম্ভাবনাও  একদিন মৌল পদার্থের মধ্যে নিহিত ছিল। ধীরে ধীরে পরিবেশ ও জলে অবস্থিত রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রনের ফলে আমাদের জীবনের আদি পূর্বসূরী অণুগুলো যেমন এমাইনো, এসিড, সুগার, নাইট্রোজেন বেস ইত্যাদির সৃষ্টি হয়েছিল। আবার এই আদি অণুগুলোর পারস্পরিক মিশ্রণ ও বিক্রিয়ার ফলে, প্রোটিন, পলি-স্যাকারাইড, নিউক্লিক এসিড ইত্যাদি গঠিত হয়েছিল।          

যারা বিজ্ঞানের ছাত্র তারা জানেন,  তুষার যুগের শেষ ভাগে ক্রমাগনন মানুষ থেকে আধুনিক মানুষের উৎপত্তি ঘটেছিলো। এই আধুনিক মানুষের দক্ষতা ও কৃষ্টিগত পরিবর্তন হলেও, এদের শারীরিক বা গঠনগত পরিবর্তন বিশেষ কিছু হয় নি। এরা  প্রথম দিকে নদী, হ্রদ, সমুদ্র ইত্যাদির তীরে সমাজবদ্ধ ভাবে বসবাস আরম্ভ করেছিল । এরা তীর-ধনুক, বাসনপত্র, গহনা, কিছু ধাতব অস্ত্রসস্ত্র বানাতেও পারতো।  তবে এই ধাতু ছিল, মৌল-ধাতু। মাত্র হাজার পাঁচেক বছর  আগে,  মিশ্র ধাতু বা শংকর ধাতু অর্থাৎ ব্রোঞ্জের গঠন করতে সক্ষম হয়েছিল। এরা প্রথমে ক্যাসপিয়ান সাগরের তীরে আবির্ভূত হয়েছিল। পরে এরা  তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে তিনদিকে গমন করে। একদল আফ্রিকা-মালয়েশিয়া যাদের বলা হয়, নিগ্রয়েড (NIGROID) একদল ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায়, এদের বলা হয় - ককেসয়েড (CAUCASOID) আর এক দল মঙ্গোলয়েড (MONGOLOID) যারা চীন সাইবেরিয়া, জাপান ইত্যাদি স্থানে যাত্রা করেছিল। 
এই যুগের আগে ছিল,ক্রমাগনন  CRO-MAGNON MAN. ইটালি ও ফ্রান্সে এদের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। এদের উচ্চতা ছিল প্রায় ছয় ফুট (১.৮ মিটার) .এদের কপাল ছিল চ্যাপ্টা, চোখের উপরে ছিল একটা খাঁজ। এরা  সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারতো, দেহ  পশুদের মতো লোমে ভরা ছিলো না ।  কিন্তু অল্পবিস্তর লোমশ দেহ। এদের  নাক সরু ও উঁচু।   মুখ-মন্ডলের চোয়াল ছিল কিছুটা সামনের দিকে এগুনো। এরা গুহার মধ্যে বাস করতো।  পশু-চর্ম্ম দ্বারা নিজেদের দেহকে আবৃত করে রাখতো। যেখানে খাবারের প্রাচুর্য্য পেতো সেখানে এরা  দলবেঁধে বাস করতো। বলা হয়ে থাকে। পৃথিবী যখন তুষারে ঢেকে যায়, তখন এরা ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে চলে যায়। 
এর পরে  তুষারযুগের শেষ ভাগে আসে এই আধুনিক রূপের মানুষ। অর্থাৎ আধুনিক মানুষের বয়স মাত্র ১০ হাজার বছর  বা তার কাছাকাছি। 
এতো গেলো আমাদের পূর্বপুরুষের কথা। আমাদের ভবিষ্যতের প্রজন্ম কেমন হবে ? আজ মানুষ তাদের দৈহিক পরিবর্তন না করতে পারলেও, প্রযুক্তির উন্নতি সাধন করেছে। মানুষ এখন এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, সে এখন প্রকৃতির মরন কামড় সহ্য করতে পারে। এমনকি পরিবেশকে সে পরিবর্তন করতে পারে। নৃবিজ্ঞানীগন বলছেন, ভবিষ্যৎ মানুষ হবে আরো লম্বা, রোগা, মুখাকৃতি হবে গোল গম্বুজের মতো। মস্তিষ্কের আয়তন বৃদ্ধি  পাবে। দেহ হবে লোমশূন্য। এদের জীবিত-কাল বৃদ্ধি পাবে। এবং আশ্চর্য্যের ব্যাপার হচ্ছে, এদের পায়ের কেনো আঙুলটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। নৃ-বিজ্ঞানীগন  ভবিষ্যতের মানুষের  নাম রেখেছেন, হোমো সাপিয়েন্স ফিউচারিস - HOMO SAPIENS  FUTURIS.
পৃথিবীতে যে কতো ধরনের জীব আছে, তার ইয়ত্বা নেই। জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে এমনকি মাটির নিচে  যে কতো ধরনের জীব আছে, তা আমরা জানিও না।  এর মধ্যে মাত্র ১৭-১৮ লক্ষ ধরনের জীবের সন্ধান আমাদের বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন। পৃথিবীতে আরো কত লক্ষ ধরনের জীব বা জীবাণু আছে তার কথা আমরা এখনো জানিই না। এই ১৭-১৮ লক্ষ জীবের মধ্যে  জীবাণু আছে, ৪০০০ রকমের। এই ৪০০০ বা তার থেকে বেশি সংখ্যক জীবাণুর মধ্যে যেগুলো সংক্রামক এবং আমাদের  শরীরের পক্ষে বিষ তাকে বলা ভাইরাস।
পৃথিবীতে অবস্থিত, এই জীব গোষ্ঠী আসলে একে আরেক জনকে আশ্রয় করে বেঁচে আছে। এখান থেকেই আমরা খাদ্য পাচ্ছি, এখান থেকেই আমরা ঔষধ  পাচ্ছি। 
প্রকৃতি ও পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই জীব জগতের উথ্বান ও অবলুপ্তি ঘটছে। তো এখন পরিবেশের নিয়ন্ত্রণে মানুষের একটা ভূমিকা আছে। এই পরিবেশের দৌলতেই, বহু ধরনের জীবের অবলুপ্তি হচ্ছে, আবার  বিভিন্ন জীবাণুর উথ্বান ঘটছে, যা আমাদের সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকের করোনা এই পরিবেশের দান।  হ্যাঁ এই পরিবেশ হয়তো প্রথমে তৈরি হয়েছে চিনে বা বিদেশে, কিন্তু কোরোনার বেঁচে থাকার পরিবেশ আছে পৃথিবীর সর্বত্র। ঘূর্ণি ঝড়ের উৎপত্তি হয় জলাশয়ে, কিন্তু ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম গঞ্জে সর্বত্র । 
দেখুন এই পৃথিবীটা তো আমার আপনার একার নয়। সমস্ত জীবের এই পৃথিবীতে অধিকার। আমরা বা মানুষ  অধিক শক্তিশালী হবার কারনে, আমরা পরিবেশকে আমাদের নিয়ন্ত্রণে রাখবার চেষ্টা করছি।  আর এই করে, পৃথিবীর যে ইকোসিস্টেম তাকে আমরা নষ্ট করছি। আর নতুন যে পরিবেশের সৃষ্টি করছি, সেখানে দেখা দিচ্ছে, নতুন নতুন ব্যাক্টেরিয়া, বা ভাইরাস। এর কেউ ছিল না তা নয়, এরা  সুপ্ত ছিল, পরিবেশের দৌলতে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। জীব যেমন পরিবেশের জন্যই একদিন রূপ ধারণ করেছিল, ঠিক তেমনি পরিবেশের তারতম্যে জীবের নাশ বা জন্ম হতে পারে।  যেমন জমা জলে মশার উৎপত্তি হয়। তো জীবকে বেঁচে থাকবার জন্য, ভালো থাকার জন্য,  পরিবেশের  সংরক্ষণ করতে হবে। পালিয়ে বাঁচার উপায় নেই। ঘরের মধ্যে কতদিন বন্দি থাকবেন ? যদিও এই মুহূর্তে ঘরবন্দি থেকে সাময়িক সামাল দেওয়া যেতে পারে।  কিন্তু পৃথিবীর পরিবেশের সংরক্ষণ আরো বেশি জরুরি। আর একটা কথা হচ্ছে, ঘরে বসে সাময়িক সময়ের জন্য আমরা বাঁচতে পারি, কিন্তু বাইরের শত্রূ  কতদিন থাকবে, তা তো জানি না। তো কতদিন আমরা ঘরে বসে থাকবো। আমাদের যেটা দরকার আমাদের কোরোনার  সঙ্গে লড়াই করবার ক্ষমতা অর্জনের। তাই ঘরে বন্দি আছেন, থাকুন, কিন্তু এই সময় নিজেকে  শক্তিশালী করুন, কোরোনার  সঙ্গে লড়াই করবার শক্তি অর্জন করুন।  অর্থাৎ আমি বলতে চাইছি, আমাদের শরীরে যে ইমিউনিটি সিস্টেম আছে, অর্থাৎ স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধের  ক্ষমতা আছে, তাকে  বাড়িয়ে তুলুন। আর সেটা হচ্ছে, প্রতিদিন নিয়ম করে দুবেলা প্রাণায়াম করুন।আমাদের শরীরে যে দুজন ডাক্তার আছেন, অর্থাৎ অশ্বিনীকুমারদ্বয় আছেন, তাদের স্মরনাপন্ন হোন। অনুলোম। বিলোমের  অভ্যাস করুন। কপাল ভাতি  করুন। নিয়ম করে অভ্যাসের মাধ্যমে আমাদের কুম্ভকশক্তি অর্থাৎ দীর্ঘ সময়, শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিকে রুদ্ধ করবার ক্ষমতা অর্জন করুন। প্রাণ শক্তিকে ধরে রাখবার কৌশল আয়ত্ত্ব করুন।  তবেই আপনি করোনার সাথে লড়তে পারবেন। করোনা আপনাকে দেখে দূরে পালাবে। হায় হায় করে হতাশ হয়ে লাভ নেই। গালে হাত দিয়ে ঘরে বসে থেকে লাভ নেই।   বিমর্ষ হয়ে বসে থেকে লাভ নেই। আবার এটা ছুটি কাটানোর সময়ও  নয়।  এই সময়, আমাদের জীবনকে উচ্চ জীবন ধারায় পরিবর্তনের বা প্রবাহিত করবার  একটা উপযুক্ত সময়। এটা আমাদের জীবনের একটা টার্নিং পয়েন্ট।  সব সময়ই উপভোগের সময়। সব সময়ই শিক্ষার সময়।  তা সে যত  যন্ত্রণার দিন আসুক না কেন। আমাদের এর থেকে শিক্ষা নিতে হবে। 
আমার এক বন্ধুর পেটে জল জমেছিলো। তো ডাক্তারবাবু মোটা সিরিঞ্জ দিয়ে জল বার করতেন ।  তো একদিন হলো কি, সঠিক  জায়গায়   সিরিঞ্জ  না ঢুকবার কারণে বার বার স্থান পরিবর্তন করে, সিরিঞ্জ ঢোকাতে হচ্ছিলো ।  এতে করে আমার বন্ধুর কষ্ট হচ্ছিলো।  এমনকি ডাক্তার বাবুরও খারাপ লাগছিলো।  তো ডাক্তারবাবু বললেন, আপনার খুব কষ্ট  হচ্ছে ? বন্ধুটি তার উত্তরে বলেছিলো, আপনি করুন, এই দিন আর আসবে কি না জানিনা, আমাকে কষ্টটাকে উপভোগ করতে দিন।
 তো যেকোনো অবস্থাতে উপভোগ করুন।  আজ আপনি বাড়িতে বসে আছেন, ছুটির মেজাজে নয়, বরং সৃজনশীল কিছু করুন। আনন্দে থাকুন।  আর সব থেকে বড়ো  কথা, আর যাতে কোনোদিন এই অবস্থায়  যেতে না হয়, তার   জন্য, নিজের রোগ  প্রতিরোধ শক্তিকে বাড়ানোর যে প্রক্রিয়া, অর্থাৎ আমাদের মুনি ঋষিদের দেওয়া যে প্রক্রিয়া, অর্থাৎ  প্রাণায়ামে  নিজেকে অভ্যস্ত করে নিন। এবং এই অভ্যাসকে ভবিষ্যতেও চালিয়ে যান। তবেই সার্থক হবে আমাদের গৃহবন্দী কাল।

ওম সর্বেসাম স্বস্তিরভবতু।
ওম সর্বেসাম শান্তিরভবতু।
ওম সর্বেসাম পূর্নমভবতু।
ওম সর্বেসাম মঙ্গলম ভবতু।
ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ। হরি ওম।

সাধনা পর্ব - ১২ প্রাণায়ামে কেন আমরা সমৃদ্ধ হই  ?

নমস্তে হর শোচিষে নমস্তে  অস্ত্বর্চিষে।
অন্যাঁস্তে অস্মত্তপন্তু হেতয়ঃ পাবক অস্মভ্যং শিবো ভব। (শুক্ল যজুর্বেদ ৩৬/২০)

হে অগ্নি, সকল রসের শোষক, পদার্থের প্রকাশক তোমার তেজকে নমস্কার। তোমার জ্বালাসমূহ আমাদের ছাড়া অপরকে জ্বালা দিক, আমাদের প্রতি শোধক ও শান্ত হও।

মশার জ্বালায় ধ্যান করা, একটা বিড়ম্বনা হয়েছে। কোরোনাকে না মারতে পারলে, মানুষ বাঁচতে পারবে না।
পাশ্চাত্য বিজ্ঞান ও প্রাচ্য বিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, একটা গোপন বিদ্যা বা গোষ্ঠী বিদ্যা আর একটা সার্বজনীন বিদ্যা। পাশ্চাত্য বিজ্ঞান বা আধুনিক বিজ্ঞানে সব মানুষের অধিকার, আর প্রাচ্য বা আধ্যাত্মিক বিদ্যা একটা বিশেষ মনুষ্য গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। আর এই কারণেই প্রাচ্যের যে অধ্যাত্ম বিদ্যা  তা দিনে দিনে লোপ পেয়ে গেছে। আর আধুনিক বিজ্ঞানের প্রসার ঘটেছে। বেদে অর্থাৎ জ্ঞানে আমাদের  মা-বোনের অধিকার ছিল না । এমনকি আপনি যদি ব্রাহ্মণের ঘরে জন্ম না নিয়ে থাকেন, তবে বেদ আপনার জন্য নয়। ভারত একসময় চিকিৎসা শাস্ত্রে, সমৃদ্ধ ছিল। আজ আর নেই, তার কারন হচ্ছে, ভারতের যে চিকিৎসা পদ্ধতি, তার কার্য্য কারন আমরা এখন আর জানি না। ভারতের  অনেক মহাত্মা  নাকি মরা মানুষকে জ্যান্ত করতে পারতেন। একজনের কাটা মাথা এমনকি অন্যের শরীরেও   জোড়া লাগাতে পারতেন। শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের মাথাকে জোড়া লাগিয়েছিলেন। রাজা দক্ষের শরীরে ছাগলের মাথা বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। গনেশের শরীরে হাতির মাথা বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এসব আমাদের কাছে গল্প কাহিনী। এর যদি কোনো সঠিক পদ্ধতি আমাদের জানা থাকতো, তবে আমরা বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারতাম। ঋষি পুরুষ আপনাকে ছুঁয়ে দিলে, আপনার মধ্যে বিদ্যুতের চমক বইতে পারে। ঠাকুর রামকৃষ্ণ নরেনকে ছুঁয়ে দিতেই, নরেনের মাথা বনবন করে ঘুরেছিল, অখণ্ড ব্রহ্মের অনুভূতি হয়েছিল । এমনকি মহাত্মাগণ  মানুষের মনের পরিবর্তন করে দিতে পারতেন। অর্থাৎ মানসিক  রোগের চিকিৎসার  কথাও তারা জানতেন। আজ সে সব কথা আমাদের কাছে, বুজরিকির মতো শোনায়।  তার একমাত্র কারন হচ্ছে, এই বিদ্যা তথাকথিত গুরুদেবরা নিজেদের মধ্যে কুক্ষিগত করে রাখতেন । ফলে গুরুদেবের মৃত্যুর পরে, সেই সব বিদ্যা লোপ পেয়ে গেছে। অথবা এসব বিদ্যা সীমিত মানুষের মধ্যে কুক্ষিগত হয়ে রয়েছে।  সার্বজনীন হতে পারে নি। আমরাও পাশ্চাত্য বিজ্ঞানের  উপরে নির্ভরশীল হয়ে গেছি। তবে আমি একটা কথা বিশ্বাস করি, আমাদের পুরান কাহিনীতে যে সব কথা রূপকের মাধ্যমে লেখা আছে, তার যদি যথাযথ অর্থ আমরা বুঝতে পারতাম, তবে অনেক  গুহ্যবিদ্যা আমাদের কাছে ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠতে পারতো।   মানুষ যা কিছু কল্পনা করতে পারে, তা এই বিশ্ব-ব্রমান্ডের কোথাও না কোথাও ব্যক্ত বা অব্যক্ত অবস্থায় অবশ্য়ই আছে। আমাদের ভাবনা যত  গভীর হবে, আমরা তখন অবশ্য়ই সেইমতো কর্ম্মে প্রবৃত্ত হবো, আর আমাদের কল্পিত বস্তু তত  প্রস্ফুটিত হবে। তাই আমাদের পুরানের  গল্প,  আমার কাছে কল্পনা নয়, সত্যি।
প্রাণায়াম এই রকমই একটা প্রক্রিয়া, যা আমাদের ঋষি-মুনিগন আয়ত্ত্ব  করেছিলেন।  সরকার যার স্বীকৃতি দেয়  নি। সাধারণের মধ্যে   যার কদর মেলেনি। এমনকি স্বাধীনতার পরেও, বিচ্ছিন্ন ভাবে, কারুর কারুর একক প্রচেষ্টায়, যেমন শ্রীমৎ স্বামী শিবানন্দ সরস্বতী মতো মনিষীদের চেষ্টায়  এই প্রণায়ামের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলেও, সম্প্রচার করা হয় নি। গত কয়েক  বছর, বিশেষ করে, যোগাচার্য্য রামদের দৌলতে, এবং মিডিয়ার দৌলতে,  এই প্রাণায়ামের প্রচার প্রসার হয়েছে। এবং এখনকার ভারত সরকার, এর কদর করছে।
এখন কথা হচ্ছে, এই প্রাণায়াম আমাদের কি করতে পারে ? আসলে প্রাণায়াম আধ্যাত্মিক যোগ সাধনার প্রবেশ দ্বার। আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীন যে সব দোষত্রূটি আছে, আমাদের যে অজ্ঞানতা  আছে, তাকে দূর করবার জন্য, চিত্তবৃত্তিকে ধীর স্থির করে, সমাধি লাভের  দ্বারা  একটা অনাবিল আনন্দ লাভের  জন্য, মুনি ঋষিগণ কিছু যৌগিক প্রক্রিয়ার আবিষ্কার করেছিলেন, প্রাণায়াম সেই যৌগিক প্রক্রিয়ার অন্তর্গত একটা ক্রিয়া মাত্র। আর এই যৌগিক প্রক্রিয়ার অনুসরণে কিছু উপরি-লাভ   হয়। এই অতিরিক্ত পাওনাই  হচ্ছে, শারীরিক সুস্থতা। এখন কথা হচ্ছে, প্রাণায়াম আমাদের শরীরে কি ভাবে কাজ করে ? শ্বাস-প্রশ্বাস তো আমাদের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, তো প্রাণায়াম অর্থাৎ বিশেষভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস, কি ভাবে আমাদের শরীরে উপকার বা বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে, তা আমরা আলোচনা করবো।
প্রথমে বলি, শ্বাসকে নিয়ন্ত্রণ না করেও, শুধু শ্বাসের প্রতি মনোযোগ দিয়ে বসে থাকলেও আমরা শ্বাসের  সাহায্যে ভালো ফল পেতে পারি। ধরুন, আপনার দুটি  দশ-বারো  বছরের ছেলে-মেয়ে  পড়তে বসেছে। তো আপনি যদি তাদের প্রতি মনোযোগ দেন, অর্থাৎ আপনি যদি তাদের পাশে শুধু বসে থাকেন, তবে দেখবেন , আপনার ছেলে-মেয়ে দুটো মনোযোগ দিয়ে পড়ছে। আর যদি আপনি রান্না ঘরে যান, তবে দুটিতে গল্প জুড়ে দেবে, বা খুনটুসি শুরু করবে।  ঠিক তেমনি, শ্বাসের প্রতি মনোযোগ দেওয়া আর না দেওয়ার মধ্যে পার্থক্য।
এবারে আমরা একটু গভীরে প্রবেশ করবো। শ্বাস নেওয়া মানে  বাতাস নেওয়া। এই বাতাসের মধ্যে কি আছে ? বাতাসের মধ্যে প্রায় ৭৮%  আছে নাইট্রোজেন, ২১% আছে অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড  আছে  .০৩% । এ ছাড়া আছে, আর্গন, হাইড্রোজেন, নিয়ন, হিলিয়াম, মিথেন, ক্রিপ্টন ইত্যাদি সব দুষ্প্রাপ্য গ্যাস। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের  ধারণা হচ্ছে, বাতাস থেকে আমরা অক্সিজেন নেই আর কার্বন-ডাইঅক্সাইড ছেড়ে দেই। ব্যাপার অর্দ্ধ  সত্য। আমরা যে বায়ু গ্রহণ করি, তার মধ্যে বেশিরভাগ থাকে নাইট্রোজেন (৭৮%) আবার যেটা ছেড়ে দেই তার মধ্যেও  বেশিরভাগই  নাইট্রোজেন, অক্সিজেন থাকে ১৬.৪% কার্বন-ডাইঅক্সাইড থাকে ৪.০০% অর্থাৎ যখন বায়ু ছাড়ছি, তার মধ্যে CO২ নেবার থেকে ছাড়ছি বেশি।    .
আমাদের শরীরের মধ্যে ভগবান যে কাঠামো তৈরি করেছেন তাতে ফুসফুস থেকে রক্ত কণিকা অক্সিজেনই শোষণ করে, এবং কার্বন-ডাইঅক্সাইড ছেড়ে দেয়। তাই নাইট্রোজেন ইত্যাদি যা কিছু আমাদের শরীরে প্রবেশ করে, সেগুলো শোষণ করে না, বা করতে পারে না। শ্বাসক্রিয়ার সাহায্যে আমরা আমাদের শরীরের কোষগুলোর পুষ্টি সাধন করে থাকি। অর্থাৎ অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকি। অন্যদিকে কার্বন-ডাইঅক্সাইড নির্গত করে থাকি। আবার এটাও জেনে  রাখা দরকার, কার্বন-ডাইঅক্সাইড একটা মাত্রায় রক্তে থাকা আবশ্যক।
যে প্রক্রিয়ার দ্বারা অক্সিজেনের গ্রহণের মাত্রা ফুসফুসে বেড়ে যায়, এবং কার্বন-ডাইঅক্সাইড নিষ্কাশনের মাত্রাও বেড়ে যায়, সেই ক্রিয়াকে বলে প্রাণায়াম। এখন আমাদের বোঝা দরকার, অক্সিজেন গ্রহণে  প্রাণায়াম  কি ভাবে কাজ করে।
আমরা জানি, এই শ্বাসকার্যে আমাদের সাহায্য করে দুটো  ফুসফুস। আবার ফুসফুসকে সাহায্য করে শ্বাসপেশি। শ্বাস কার্য্যে আমাদের বুকের ভিতরে যে ফাঁকা জায়গা আছে তার সংকোচন সম্প্রসারণ হয়। এটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম হয়। অর্থাৎ আমরা যখন বিশ্রামে থাকি, তখন আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস মিনিটে ১০-১৮ বার হয়ে থাকে। কিন্তু আমরা যখন পরিশ্রান্ত হই, বা পরিশ্রমের কাজ করি, তখন এই গতি বেড়ে যায়। অর্থাৎ তখন আমাদের অক্সিজেন-এর প্রয়োজন বেশি হয়। যাইহোক, আমাদের এই ফুসফুস দুটোর নিচে আছে, পেটের  ঠিক উপরে আছে  ডায়াফ্রাম Diaphragm আমরা যখন শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজ করি, তখন এই মধ্যচ্ছদা বা ডায়াফ্রাম সংকুচিত হয়ে নিচের দিকে নেবে যায়।  তখন আমাদের বক্ষগহ্বর বা বুকের ভিতরের ফাঁকা জায়গা প্রসারিত হয়। প্রাণায়ামের সময় আমরা এই মধ্যচ্ছদাকে ইচ্ছেমতো বৃদ্ধি করে থাকি। আর একটা কথা হচ্ছে, বিশ্রামের সময়, আমাদের নিঃশ্বাস একটা নিষ্ক্রিয় পদ্ধতি, কিন্তু বলপূর্বক যখন আমরা শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজ করি, তখন এই পেশিগুলো ক্রিয়াশীল হয়। আর একটা কথা হচ্ছে, শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া করবার সময়, কিছু বায়ু, নাসারন্ধ্রে, শ্বাসনালিতে এবং Bronchiole ইত্যাদি অংশে আবদ্ধ  থাকে। এই বায়ু বায়ুথলিতে প্রবেশ করতে পারে না, এবং স্বাভাবিক গ্যাসীয় আদান-প্রদান প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করতে পারে না। কিন্তু আমরা যখন প্রাণায়াম করি, অর্থাৎ বায়ুকে নিবদ্ধ করে রাকি, বা জোরে জোরে, বা দীর্ঘক্ষণ ধরে শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্রিয়াকে কার্যকরী করি, তখন এইআবদ্ধ বায়ুর বেশিরভাগ গ্যাসীয় লেনদেনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারি।
আমরা যে পরিবেশে বাস করি, তার সঙ্গে আমাদের খাপ খাইয়ে চলতে হয়। আমাদের চারিদিকে বহু অদৃশ্য জীব যাকে আণুবীক্ষণিক জীব বলা হয়ে থাকে।  অর্থাৎ যা একমাত্র অণুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা আমরা দেখতে পারি। এইসব জীবের দেহজাত পদার্থ আমাদের দেহে প্রবেশ করে আমাদেরকে অসুস্থ করে তোলে। এই অদৃশ্য জীবকেই বলে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, তাদের প্রতিবিষ এবং নানাপ্রকার বিজাতীয় প্রোটিন ইত্যাদি ইত্যাদি । আমাদের দেহের বাইরের থেকে যেসব প্রোটিন জাতীয় বস্তু দেহের মধ্যে প্রবেশ করে, তাকে বলে এন্টিজেন। এই এন্টিজেনকে বাধা দেবার জন্য, আমাদের দেহে যে প্রোটিন থাকে, তাদের বলে এন্টিবডি।  রোগসৃষ্টিকারী জীবাণু, ভাইরাস ইত্যাদি বিজাতীয় পদার্থের বিরুদ্ধে দেহে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠে তাকেই বলে ইমিউনিটি সিস্টেম, বা রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা। ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রী,  এই ইমমুনিটিসিস্টেম বাড়িয়ে কোরোনার বিরুদ্ধে লড়বার কথা বলেছিলেন। কিন্তু সহজাত ইমিউনিটি সিস্টেম বাড়ানো  আসলে সময়সাপেক্ষ।   যাইহোক, এই প্রতিরোধ  ক্ষমতা দুই রকম, একটা হচ্ছে, সহজাত আর একটা হচ্ছে অর্জিত।
সহজাত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা আমাদের জন্মগত। আমরা মায়ের দুধ থেকেই এটি প্রথমে সংগ্রহ করে থাকি আমরা । এটি কোনো নির্দিষ্ট জীবাণুর জন্য কাজ করে এমন নয়, যে কোনো জীবাণু যা আমাদের দেহের ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক তার বিরুদ্ধেই লড়াই চালিয়ে  যেতে পারে।
আর অর্জিত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা আমরা বিভিন্ন রকমের ভ্যাকসিন গ্রহণের মাধ্যমে পেতে পারি। এটি নির্দিষ্ট নির্দিষ্ট জীবাণুর জন্য কাজ করে থাকে।
আমাদের শরীরে অক্সিজেনের ভূমিকা গুরুত্ত্বপূর্ন। কারন অক্সিজেন হচ্ছে, আমাদের কোষগুলোর খাদ্য। কোষের দুর্বলতা, বা মৃত্যু মানেই আমাদের শরীরের অসুস্থতা বা মৃত্যু। তাই  যে কোনো উপায়ে আমাদের অক্সিজেন সংগ্রহ করতে হবেই, নতুবা আমরা প্রাণহীন হয়ে যাবো। নিয়মিত প্রাণায়ামের অভ্যাসে ফলে আমাদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের প্রাপ্তি ঘটে। সাধারণত আমরা যখন শ্বাস গ্রহণ করি তখন আমরা মাত্রা ৫০০ মিলি বায়ু গ্রহণ করে থাকি।  কিন্তু আমরা যখন গভীর ভাবে শ্বাস গ্রহণ করি, তখন বা গভীর ভাবে  শ্বাস ছাড়ি, তখন আমরা ৪-লিটার  পর্যন্ত শ্বাস গ্রহণ করতে পারি। এতে করে, আমাদের বুক ফুলে ওঠে, আর এই ফুলে ওঠার সময় আমাদের ফুসফুসের মধ্যে যে শ্বসন অংশ আছে, আছে, যারা গাদাগাদি করে অবস্থান করছে, তারা একটু বেশি স্থান নিয়ে অবস্থান করতে পারে, ও দহন  ক্রিয়ায়  অংশ গ্রহণ করতে পারে। অর্থাৎ বাতাস থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ ও কার্বন-ডাইঅক্সাইড ছেড়ে দেবার যে ক্রিয়া, তা বেশি সময় ধরে এবং বেশি পরিমান শিরারক্ত বায়ুথলি থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে, ও কার্বন-ডাই অক্সাইড ছেড়ে দিতে পারে।
এছাড়া যে নিষ্ক্রিয় বায়ুস্থান  আমাদের মধ্যে থাকে তা দিনে দিনে বাড়তে থাকে, অর্থাৎ বেশ খানিকটা বায়ু দহনক্রিয়ায় অংশগ্রহণ  করতে পারে না। সুস্থ  মানুষের ক্ষেত্রে এই নিষ্ক্রিয় বায়ুরস্থান প্রায় একই থাকে।  কিন্তু যখন ফুসফুসে  কোনো রোগের  প্রকোপ দেখা দেয়, তখন এই নিষ্ক্রিয় বায়ুর পরিমান বাড়তে থাকে। প্রাণায়াম অর্থাৎ শ্বাসপ্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ, এই নিষ্ক্রিয়বায়ুর পরিমাণকে সীমাবদ্ধ রাখে। ফলে আমরা অক্সিজেন বেশি পরিমানে রক্তে  প্রবাহিত করতে পারি। আমরা যখন কপালভাতি করি, তখন নিষ্ক্রিয় বায়ু বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে। আবার যখন অনুলোমবিলোম করি, তখন আমাদের ডায়াফ্রাম সংকুচিত করে, বুকের মধ্যে বায়ু ধারনের জন্য বেশি জায়গা করে দিতে পারি।
আর এইভাবে, প্রাণায়ামের সাহায্যে, আমরা আমাদের শরীরে অক্সিজেনের  মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারি। আর অক্সিজেন যদি আমাদের শরীরে, মস্তিষ্কে বেশি মাত্রায় প্রবেশ করে, তবে আমাদের মধ্যে সমস্ত কোষের পুষ্টি হবে, আর কোষের পুষ্টি মানেই তো শরীরের সমৃদ্ধি। কেননা আমাদের শরীর তো কতকগুলো কোষের সমষ্টি মাত্র।  আর আমরা অবশ্য়ই রোগমুক্ত শরীর নিয়ে, দীর্ঘজীবী হবো।
সবশেষে বলি, আমাদের এই শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া পরিচালনা করে মস্তিস্ক। তো আমরা যখন শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ দেবো, তখন অবশ্যই  আমাদের মস্তিস্ক আরো বেশি ক্রিয়াশীল হয়ে উঠবে।আর আমরা হয়ে উঠবো, আরো বেশি ধীশক্তি সম্পন্ন। চিকিৎসায় বিদ্যায় একটা বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে এই প্রাণায়াম।

ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ।  হরি ওম।

শান্তির খোঁজে।
ইশঃ করতু কল্যাণং সর্বে সন্তু নিরাময়াঃ।
সর্ব্বঃ শ্রেয়ঃ সমাপ্নোতু সর্ব্বো নিৰ্ব্বণমৃচ্ছতু। ।
সর্ব্বস্তরতু দুর্গাণি সর্ব্বো ভদ্রাণি পশ্যতু।
সর্ব্বঃ কামানবাপ্নোতু  সর্ব্বঃ সর্ব্বত্র নন্দতু। ।
ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।

চারিদিকে একটা দমবন্ধ করা অবস্থা চলছিল কিছুদিন থেকে । এরই মধ্যে একটা শান্তির বাতাস বইতে শুরু করেছে।আপনারা খেয়াল করেছেন কিনা জানিনা।  কালবৈশাখী যখন শুরু হয়, একটা তপ্ত  ঝোড়ো হাওয়া  আমাদের সবকিছুকে  ওলটপালট করে দেয়। শেষে এক পশলা বৃষ্টি, বাতাসকে ঠান্ডা করে দেয়। ঝড়ের দাপটও কমে যায়।   আমাদের হৃদয়ে একটা প্রশান্তির, একটা স্বস্তির বাতাবরণ তৈরি করে দেয়। মমতার মাতৃহস্ত আমাদের সেই স্বস্তির হাওয়া গায়ে  লাগিয়েছে। আজ কোরোনায় আক্রান্তকারীরা সুস্থ হয়ে ঘরে  ফিরতে শুরু করেছেন । মমতাময়ীর একটা আবেদন আমার কানে সুধা ঢেলেছে, সেটা হচ্ছে, মানবিক হোন।  সবাই ভালো থাকুন। এইখানেই আমরা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি।
আমরা কতটা মানুষের পক্ষে, আর কতটা করোনার  বিপক্ষে। হাসপাতালগুলো এখন খাঁ-খাঁ করছে। কারন রোগ বা রুগী নেই তা নয়। হাসপাতালে পৌঁছতে গেলে যে যান-বাহন দরকার তা এখন আর মিলছে না। তাই তারা হাসপাতালে পৌঁছতে পারছে না। এতে করে কত মানুষ বিনা চিকিৎসায় মরতে বাধ্য হচ্ছে, তার পরিসংখ্যান কে  রাখে ?  কিছুদিন থেকে অপারেশন টেবিল ফাঁকা। পাড়ায় কোনো ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছে না। সব চেম্বার বন্ধ। ঔষধের দোকান খোলা, কিন্তু ডাক্তার নেই। সবাইকে নাকি বাধ্যতামূলক ভাবে হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে। এ এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি।

কোনো এক গ্রাম্য কবি, একসময় ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন "আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে" । কিছু দিন আগে কথা, বিমল যে কিনা আমাদের বাড়িতে মাঝে মধ্যেই টুকটাক কাজ করতে আসে, সেদিনও সে  আমাদের বাড়িতে কাজ করতে আসে। তো সেদিন লক্ষ করলাম, বিমল যেন কাজে ফাঁকি দিচ্ছে,  নয়, কাজের গতি নেই। তো আমি বিমলকে জিজ্ঞেস করলাম,  কি খবর বিমল, তোমার শরীর   ঠিক আছে তো ? বিমল বললো,  না শরীরটা ভালো লাগছে না।
জন্ম মৃত্যু দুটো প্রচলিত শব্দ মাত্র। সূক্ষ্মভাবে বিচার করলে, এর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।রূপান্তর বা পরিবর্তন সাধনের কারণরূপে  উভয়েই সমান ধর্ম্ম বিশিষ্ট।  আমরা যাকে  জীবিত বলি, সেও প্রতিমুহূর্তে পরিবর্তিত হচ্ছে। আমাদের শৈশব, আমাদের বাল্য, কৈশর, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ত্ব, বার্ধক্য প্রভৃতি অবস্থার মূল কারন এই পরিবর্তন। আমাদের মৃত্যুও একটা পরিবর্তনের সোপান মাত্র। জীবদেহ প্রতিনিয়ত পৰিৱর্তনের ফলে অবস্থান্তর প্রাপ্ত হচ্ছে। আমাদের মৃত্যুও সেই রকম একটা পরিবর্তন সাধন করে, আমাদের নতুন দেহ প্রাপ্তির হেতু হয়ে থাকে। জন্ম কালে যেমন আমরা নতুন দেহ প্রাপ্ত হই, মৃত্যুকালেও আমরা নতুন দেহ প্রাপ্ত হই। সুতরাং জন্ম-মৃত্যু উভয় ক্ষেত্রে আমাদের নতুন দেহ প্রাপ্তি করায়।  সেই দিক থেকে দেখতে গেলে জন্ম-মৃত্যু একই ব্যাপার। জন্মে আমরা স্থূল দেহ পাই, আর মৃত্যুতে আমরা সূক্ষ্ম দেহ পাই। এটা একটা আবর্তন মাত্র। বরং মৃত্যুতে আমরা উজ্জ্বলতর জীবনে প্রবেশ করি। আর সত্যি কথা বলতে কি, আমাদের নিজস্ব কোনো সম্পত্তির ক্ষয় বা পরিবর্তন হয় না। আমাদের স্বভাব, আমাদের স্মৃতি, আমাদের আকৃতি, আমাদের বুদ্ধি, আমাদের মন, আমাদের ইন্দ্রিয়বৃত্তি ইত্যাদি পূর্ন মাত্রায় বর্তমান থাকে। মৃত্যুর মাধ্যমে আমরা যে আত্মীয়কে আজ হারিয়েছি ভাবছি, তা সত্য নয়। কিছুকালের জন্য, তিনি আমাদের চক্ষুর অন্তরালে থাকেন মাত্র। এযেন বিদেশে চাকরি করতে যাওয়া, বা শিক্ষা গ্রহণ করতে যাওয়া। বা বলা যেতে পারে, আমরা আজ শিক্ষা গ্রহণ করতে স্থূল দেহ ধারণ করেছিলাম, মৃত্যুতে আমরা দেশে ফিরে যাই। আমরা যাদের ভালোবাসি, আমাদের যারা আত্মীয়, এমনকি আমাদের যারা শত্রূ, তাদের কাউকেই আমরা হারাতে পারি না, হারাতে হয় না। কিছুদিন আমাদের দৃষ্টিশক্তির আড়ালে থাকে মাত্র। কখনো কখনো এই দৃষ্টিশক্তি আমাদের খুলে যেতে পারে, আমাদের নিদ্রাকালীন অবস্থায়। তাই আমরা অনেকে স্বপ্নে তাদের সাথে মিলিত হই । আর স্বপ্ন আমাদের বেশি করে আসা শুরু হয়, আমাদের নিজেদের মৃত্যু আসন্ন হয়। তাই মৃত্যুর কিছু আগে,আমরা আমাদের মৃত আত্মীয়-স্বজনদের স্বপ্নে দেখতে পাই।

আমাদের এই স্থূল জগতের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে সূক্ষ্ম থেকে আরো সূক্ষ্মতর আরো অনেকগুলো জগৎ। এই সব জগতেও জীবের বাস আছে। সেখানেও আমাদের স্থুল জগতের অনুরূপ আর একটা জগৎ। স্থূল জগৎ যেমন নিয়মের অধীন।  সূক্ষ্ম জগৎ তেমনি নিয়মের অধীন। নিয়ম বহির্ভূত কোনো কর্ম্ম সংগঠিত হয় না।  যিনি সকল কিছুর নিয়ন্তা, তিনি প্রেমের আধার। জীবের কল্যানে তিনি যে সব ব্যবস্থা করে রেখেছে, তা আমাদের কাছে আপাতত বৈষম্যমূলক মনে হলেও, এগুলো ন্যায়ের উপরে প্রতিষ্ঠিত এবং যার পরিনাম অবশ্য়ই সুখবহ।

আমরা জানি আর না জানি, একটা কথা শুনে রাখুন, জীব জগৎ পরিচালনা করবার জন্য, উন্নত মহান আত্মারা সর্বদা মঙ্গল কর্ম্মে রত আছেন। এঁরা ঈশ্বরের কাজকে সহায়তা করে থাকেন। বিশ্বের মঙ্গল কামনায়, তারা অহর্নিশ নিযুক্ত আছেন। সাধন জগতের সঙ্গে যুক্ত থাকলে, প্রতিনিয়ত তাদের উপস্থিতি আপনি উপলব্ধি করবেন। ইটা কোনো কল্পনার বিষয় নয়। এসব ধ্রুব সত্য।

জগতে সুখ-দুঃখ একটা আপেক্ষিক  শব্দ। প্রকৃত পক্ষে দুঃখের কোনো কারন নেই। যদি আপনি দুঃখে থাকেন, তবে জানবেন, আপনি ঈশ্বরের কাছাকাছি আছেন। দুঃখ জীব জগৎকে কল্যাণের পথে চালিত করে থাকে। দুঃখ আমাদের স্বকৃত, কল্পিত।  আর এই দুঃখে ভগবানের কোনো কর্তৃত্ত্ব নেই। এটি আসলে আমাদের কর্ম্মঋণ। দুঃখ কর্ম্মঋণ শোধ করবার একটা উপায় মাত্র। তাই এটিকে আমাদের সাদরে গ্রহণ করা উচিত। প্রকৃতপক্ষে জীব-আত্মা  সুখ-দুঃখের অতীত। আমাদের স্থূল দেহ বা মানস-দেহ সুখ-দুঃখ অনুভব করে মাত্র। আমাদের কামনার দেহ শোকে স্পন্দিত হয়। কিন্তু জীবাত্মা এইসব দুঃখ-শোকের বাইরে অবস্থান করে থাকে। যারা সত্যিকারের আধ্যাত্মিক জগতে প্রবেশ করতে পেরেছেন, তারা কখনো সুখ-দুঃখে বিচলিত হন না। আমাদের পার্থিব জীবন সুখ-দুঃখের মিশ্রণ। গাছপালা যেমন জল-বাতাস-মাটি-আলো থেকে পরিপুষ্ট হয়।  জীবআত্মা তেমনি সুখ-দুঃখে পুষ্টি  লাভ করে থাকে। তাই বলা হয়ে থাকে, জীবাত্মার উন্নতিতে আমাদের সুখ-দুঃখের প্রয়োজন আছে। আমাদের প্রিয়জনের মৃত্যু আমাদের ক্ষণিকের বিচ্ছেদ মাত্র। আমার যেমন বিনাশনেই, প্রিয়জনেরও বিনাশ নেই। শুধু অবস্থান্তর মাত্র। তাই মৃত্যু একটা অলীক কল্পনা মাত্র। আসলে আমাদের পরলোক সম্পর্কে কোনো ধারণার না থাকার জন্য, এবং আমাদের কামনাময় দেহ বা মানষদেহের ক্ষুধার জন্য আমরা শোক করে থাকি। এছাড়া, আমাদের তথাকথিত ধর্ম্মশাস্ত্র পরলোক সন্মন্ধে একটা অস্পষ্ট, একটা অনিশ্চিত, একটা ভয়াবহ, একটা বিভীষিকার জন্ম দিয়েছে। নিশ্চয়তা ত্যাগ করে, অনিশ্চিতে আমাদের ভয়ের উদ্রেগ হয়। তেমনি একটা নিশ্চিত আশ্রয়, যা আমাদের জীবন দিয়েছে, সেটাকে ছেড়ে আমরা পরলোকে যেতে ভয় পাই। পরলোক সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের অভাবই  এই ভীতির কারন। সংসারে যার বন্ধন  নেই, মরণেও তার  ভয় নেই। পরলোক আসলে একটা শান্তির স্থান, সুখের স্থান।  সেখানে  আমরা বহুকাল যাবৎ আত্মীয় প্রিজন সহ পরম সুখে বাস করতে পারি। যার এই সংসারে কোনো বন্ধন নেই, সেই মৃত্যুতে আনন্দিত হয়। কারন, সে জানে, দীর্ঘ প্রবাসের পর, আজ সে গৃহে যাত্রা করছে। সংসার একটা শিক্ষাকেন্দ্র। এখানে আমরা আসি শিক্ষা গ্রহণ করবার জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এখানে এসে বিষয়ের চমকে আমাদের এখানে আসার উদ্দেশ্য ভুলে যাই। আর শিক্ষা গ্রহণ সমাপ্ত হবার আগেই যখন, আমাদের চূড়ান্ত পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়, তখন আমরা ভীত হয়ে পড়ি। বাড়িতে গেলে বাবা বকবে, পরীক্ষায় পাশ হলো না। আমরা আসলে স্বগৃহে ফিরে যাচ্ছি। যারা আমার সঙ্গে যেতে পারছে না, তাদেরও একদিন সেখানে যেতে হবে।  তখন আমরা একত্রে মিলিত হতে পারবো। একটা কথা বলি, সংসারের প্রতি আপনার যত  আসক্তি থাকবে, প্রিয়জনদের প্রতি জট আপনার মোহ থাকবে, তত আপনার মৃত্যুটাকে ভয়ানক, কষ্টকর, বেদনাদায়ক মনে হবে। নতুবা বাড়ি ফেরা তো আনন্দের।

আমরা কর্ম্ম করতে পৃথিবীতে আসি।  শুভ-অশুভ সমস্ত কর্ম্মের ফল আমাদের অবশ্যই  ভোগ করতে হবে। এখানে না আছে কোনো হিসেবের ভুল, না আছে ঈশ্বরের হাত। আমাদের এই পার্থিব জীবনে, অথবা  কামনার লোকে, মানস  শরীরে দুঃখের কারন হচ্ছে, আমাদের স্বকৃত কর্ম্ম। আর একমাত্র ভোগের দ্বারাই সেই কর্ম্ম ফলের ক্ষয় হতে পারে। কিন্তু যাদের তত্ত্বজ্ঞান জন্মেছে, তাদের বর্তমান কর্ম্মফল দগ্ধ হয়, কিন্তু প্রারব্ধ কর্ম্মের ফল ভোগ করতেই হয়। প্রারব্ধ কর্ম্মফল অখণ্ডনীয়। আমাদের অনেকের ধারণা আছে, শারীরিক কর্ম্মই কর্ম্ম, না আমাদের চিন্তাও কর্ম্ম। এমনকি শারীরিক কর্ম্ম থেকে আমাদের মানসিক কর্ম্মের প্রভাব অনেক বেশি। একটা কথা ভাবুন, শরীরের সুখ সীমাবদ্ধ সময়ের জন্য কিন্তু আমাদের মানসিক কল্পিত সুখ অনন্ত।

অদৃশ্য জগৎ যেখানে করোনার বাস।

করোনাকে আমরা সাধারণ মানুষেরা  বলছি জীবাণু। আসলে করোনা কিন্তু জীবানু  নয়। করোনা হচ্ছে একটা ভাইরাসের নাম। আর VIRAS কথাটা আসলে ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ হচ্ছে বিষ। ভাইরাস হচ্ছে একটা বস্তু। জীব ও জড়ের মধ্যবর্তী পর্যায়ের একপ্রকার বস্তু। অর্থাৎ না জীব না জড়। এটি নিউক্লিয় প্রোটিন দিয়ে গঠিত। অতিশয় ক্ষুদ্র আকৃতি, অৰ্থাৎ অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া আমাদের খালি চোখে ধরা পড়ে  না। ভাইরাস সম্পূর্ণ ভাবে পরজীবী। জীবের শরীরে যে কোষ আছে, সেই কোষের বিপাকীয় শক্তি নিয়ে এর জৈবিক বৈশিষ্ঠ প্রকাশ হয়।  অর্থাৎ তখন সে জীবাণুতে পরিণত হয়। যতক্ষন সে পোষোক  কোষের সাহায্য  না পায়, ততক্ষন সে নিষ্ক্রিয়, অর্থাৎ নির্জীব। অর্থাৎ ভাইরাস যতক্ষন আমাদের শরীরের ভিতরে কোষের সংস্পর্শে না আসছে, ততক্ষন এটি একটি বস্তু মাত্র। এবং এর কোনো প্রজনন ক্ষমতা বা বংশবৃদ্ধি হয় না। ক্ষতিও করতে পারে না। বিষ যেমন আমাদের শরীরে প্রবেশ না করলে  কোনো ক্রিয়া করতে পারে না, তেমনি করোনা আমাদের শরীরের মধ্যে প্রবেশ না করলে আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না। আর এই প্রবেশ দ্বার হচ্ছে মূলত আমাদের নাক, মুখ, চোখ ইত্যাদি দিয়ে। অতএব  এই জায়গাগুলোকে সুরক্ষিত রাখুন।

এই নিউক্লীয় বস্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে DNA যুক্ত হলেও RNA যুক্ত ভাইরাসও দেখা যায়। প্রোটিনের প্রকারভেদে  এরা তিন রকম হতে পারে। এর মধ্যে A  স্ট্রেন এর বিস্তৃতি ও রোগ সৃষ্টি করবার ক্ষমতা বেশি।

ভাইরাসের দেহকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত হচ্ছে বাইরের দিকটা বা বাইরের আবরণ হচ্ছে ক্যাপসিড CAPSID ।  এটা প্রোটিন দিয়ে গঠিত। কেন্দ্রের অংশটি লিপিড LIPID  দ্বারা গঠিত। আর মাঝের অংশটিকে নিউক্লিওয়েড  NUCLEOID

আমরা জানি আমাদের এই যে দেহ, তা কিছু জড় পদার্থের সমষ্টি মাত্র। এর মধ্যে যতক্ষন প্রাণশক্তির গমন-নির্গমন অব্যাহত থাকছে, ততক্ষন আমরা জীবিত বা প্রাণবন্ত। জড় পদার্থ বিকারশীল।  অর্থাৎ জড়ের সর্বদা পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু চৈতন্যের কোনো বিকার নেই, নির্বিকার।  চৈতন্যের কোনো পরিবর্তন নেই।

জীবজগতের যে ক্রমবিকাশ তা ত্যাগের উপরে প্রতিষ্ঠিত।  প্রকৃতি যে উন্নত থেকে উন্নততর, মহৎ থেকে মহত্তর  কোটি কোটি মূর্তি সৃজন  করছেন,  সৃষ্টিবৈচিত্রের প্রত্যেক পর্ব্বে যে উন্নয়ন আমরা লক্ষ করছি, তার মুলে আছে বিসর্জন। একটা মূর্তি বিনাশপ্রাপ্ত না হলে আর একটা নতুন মূর্তির সৃষ্টি হতে পারে না। পৃথিবীর আদি থেকে খনিজ পদার্থ থেকে মানুষ সৃষ্টি পর্যন্ত সমস্ত প্রক্রিয়াই ত্যাগের উপরে প্রতিষ্ঠিত। এ'কের বিনাশে অন্যের উদ্ভব। দুর্বলের বিনাশে সবলের স্থিতি।

পৃথিবীতে বা প্রকৃতিতে আমাদের সমস্ত জীব এমনকি অজীব পদার্থের মধ্যে একটা খাদ্য-খাদকের সম্পর্ক। একেই বলে বাস্তুতন্ত্র। আমরা মাছ, মাংস উদ্ভিদ খেয়ে বেঁচে থাকি। মাছ ছোট মাছ বা পোকা খেয়ে বেঁচে থাকে। ছোটমাছ জুপ্লাঙ্কটন খেয়ে বেঁচে থাকে জুপ্লাঙ্কটন আবার ফাইটোপ্ল্যাংটন  খেয়ে বেঁচে থাকে। এই ফাইটোপ্ল্যাংটন  সৌর শক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে। এই রাসায়নিক শক্তি তখন ফাইটোপ্ল্যাংটোনের মধ্যে শক্তিরূপে আবদ্ধ থাকে। আমাদের যে সবুজ ঘাস বা  উদ্ভিদ এরাও সূর্য্যশক্তি কে  নিজের দেহে  রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে। কিছু প্রাণী আছে তৃণভোজী।  এই তৃণভোজীদের খেয়ে বেঁচে থাকে আবার মাংশাসী প্রাণী।

জন্ডিজের ঔষধ।

আমি তখন কলেজে পড়ি।  আমার এক বন্ধুর জন্ডিস হয়েছে, খবর পেয়ে আমরা বন্ধুরা মিলে  দেখতে গেলাম তাকে । সেখানে গিয়ে  জন্ডিস ভালো করবার এক অতি  আশ্চর্য্য প্রক্রিয়ার  কথা জানতে পারলাম। দেখলাম, বন্ধুটি একটা মালা পড়ে  বসে আছে। বললাম এটা কি ? তো সে বললো, ওর মা নাকি কার কাছ থেকে এনে দিয়েছে। মাত্র ১০ টাকা দাম। স্বপ্নে পাওয়া মালা। এটা নাকি ভীষণ উপকারী।   টাকাটা নাকি ব্যয় হয় ঠাকুর পুজোয়। ভদ্রলোক মালার কোনো দাম নেন না। কোনো পারিশ্রমিক নেন না। অব্যর্থ প্রক্রিয়া।  মালাটা নাকি মাথায় বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল।  এখন দেখলাম গলায়। ধীরে ধীরে মালার পরিধি বড়  হবে। এক সময় মালা বড় হতে হোতে  কোমর দিয়ে বেরিয়ে যাবে। ব্যাস জন্ডিস ক্ষতম। দারুন ব্যাপার। বললাম, ডাক্তারের কাছে যাস নি ?  না, আর এসব ব্যাপারে ডাক্তারের কাছে গিয়ে লাভ নেই।  অহেতুক পয়সা খরচ। এই মালা পরে অসংখ্য লোক ভালো হয়েছে।  শুধু শুধু ডাক্তারের কাছে যাবো কেন ? আমি বিমর্ষ হয়ে চলে আসি। বিজ্ঞান মনস্ক মন আমার আমি এইসব টোটকাতে বিশ্বাস করি না।  দুই একজনের কাছে খোঁজ নিয়ে জানলাম, স্বপ্নে পাওয়া মালার নাকি খুব চাহিদা। আর এতে করে রোগ ভালোও হচ্ছে। একটু ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করলাম। ব্যাপারটা কি ? মালা তৈরি যিনি করেন, তার কাছেও গেলাম। কিভাবে কি দিয়ে মালা  তৈরি করছেন, ইত্যাদি জানতে।  তো তিনি বললেন, বিশ্বাস থাকতে হবে, কিছু নিয়ম কানুন মানতে হবে তবে রোগ ভালো হয়ে যাবে। নিয়মকানুন না মানলে রোগ সারবে না। আমার বিজ্ঞান আশ্রিত  মন খুব বিপদে পড়ে  গেল।

ভদ্রলোকের কাছে যাতায়াত শুরু করলাম। দেখলাম, বামনহাটি গাছের ডাল, কখনো কখনো ভৃঙ্গরাজ গাছের ডাল  দিয়ে  মালাটা তৈরী করছেন। মালা তৈরী করার মধ্যে একটা কারিগরী কৌশল আছে। ডালগুলোকে একইঞ্চি মতো, ছোট ছোট টুকরো করে কেটে কাঁচা অবস্থাতেই মালা তৈরি করা হয়। টুকরোগুলো আড়াআড়ি ভাবে ধরে আঙুলে দুইপাক সুতোর ফাঁস দিয়ে পর পর ঘেসে আলগা করে গাঁথা হয়। এই সুতোর গিটগুলোর মধ্যে একটা বিশেষ কায়দা থাকে। গাছের টুকরো যখন শুকোতে  থাকে, অর্থাৎ ফাঁপা ডালগুলো যখন শুকোতে থাকে, তখন কাঠিগুলো সরু হয়, আর সুতোর বাঁধন  ততই ঢিলে হতে থাকে। ফলে দুটো কাঠির মধ্যে ফাঁক বাড়তে থাকে, আর মালার দৈর্ঘ বাড়তে থাকে। অর্থাৎ মালা যখন গাঁথা হয়, তখন মালার দীর্ঘ যা থাকে, মালা যত  শুকোতে থাকে মালা তত বড়ো হয়, কিন্তু বাঁধন প্রক্রিয়ার ফলে মালা টাইট থাকে। তাই ছোট মালা একসময় যা মাথা দিয়ে ঢুকতো না, সেটা একসময় কোমর দিয়ে বেরিয়ে যায়। আসলে এই মালা আপনি শরীরে ধারণ না করে যদি, দেওয়ালে পেরেকে ঝুলিয়ে রাখেন, তাহলেও এই মালা দিন দিন শুকোবে আর বড়ো  হবে। অদ্ভুত কৌশল।

এতো গেলো মালা তৈরির কৌশল, কিন্তু লোকে যে বলে এতে করে জন্ডিসের মতো একটা মারাত্মক অসুখ সেরে যায়, তার কি অসত্য ? তা যদি না হয়, তবে ব্যাপারটা কি ?

এই ব্যাপারটা বুঝতে গেলে, আমাদের বুঝে নিতে হবে, জন্ডিস ব্যাপারটা কি ? বাংলায় এই রোগকে বলে কামলা, বা পান্ডু  রোগ।  আমরা জানি জন্ডিসে আমাদের  মূত্র হলুদ বর্ণের হয়। চোখ এমনকি আমাদের শরীর খানিকটা হলুদ বর্ণ ধারণ করে।

আমাদের শরীরে একটা গুরুত্ত্বপূর্ন গ্রন্থি হচ্ছে যকৃৎ বা liver এইখানে আছে আমাদের রক্ত তৈরির কারখানা, পিত্ত তৈরির কারখানা, আর চিনি বা কাৰ্বোহাইড্রেড  তৈরির কারখানা । আমরা যে খাবার খাই, তা  জীর্ন হয়ে  রস রূপে যকৃতে গমন করে। সেখানে রঞ্জক-পিত্ত-এর সাহায্যে এই রসকে রক্তে  পরিণত করে। রক্তে কোনো দূষিত পদার্থ থাকলে, সেটিকে সেঁকে শুদ্ধ করে আমাদের লিভার। রক্তকে লাল করে হিমোগ্লোবিন। সুস্থ শরীরে রক্তের লোহিত কণিকা ভেঙে তৈরি হয় হলুদ রঙের যৌগ  বিলিরুবিন। প্রথমে বিলিরুবিন লিভারে তৈরি হয়। সেখান থেকে বিভিন্ন পর্য্যায়ে নানান পথ বেয়ে প্রধানত চর্ব্বি জাতীয় খাদ্য হজম করতে সাহায্য করে, এই বিলিরুবিন। আর এই কারণে খাদ্য হজম করতে ইন্টেস্টাইনে বা অন্ত্রে  আসে। এখানে পরিপাক ক্রিয়া হয়ে যাবার পরে, বিলিরুবিনের বেশিরভাগটা স্টার্কো বিলিনোজেনে পরিণত হয়ে আমাদের বর্জ্য পদার্থের সঙ্গে বেরিয়ে যায়।  এবং সেই কারণেই আমাদের মলের রঙ হলুদ। খানিকটা আবার পেচ্ছাপের সঙ্গে বেরিয়ে যায়, সেই কারণে আমাদের পেচ্ছাপের রঙও হালুন বর্ণের দেখা যায়। এবার যদি কোনো কারণে আমাদের শরীরে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়, তখন অতিরিক্ত বিলিরুবিন আমাদের দেহের চামড়া বা মিউকাস মেমব্রেনে ছড়িয়ে পড়ে। তখন আমাদের শরীর হয় হলুদ বর্ণের। আর একেই আমরা বলি কামলা বা জন্ডিস। এখন কথা হচ্ছে, এটা কেন হয় ? 

আমাদের লিভারের মধ্যে যে সরু সরু নালী আছে, সেখানে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণে লিভার কোষের কার্য্য ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। তার ফলে ১. বিলিরুবিন স্বাভাবিক ভাবে বেরুতে পারে না, জমতে থাকে। এর থেকে হয় হেপাটাইটিস রোগের  উৎপত্তি। আমাদের রক্তে যে স্বাভাবিক রঞ্জক পদার্থ আছে, তাকেই বলে যৌগ পিগমেন্ট বা বিলিরুবিন। রক্তের লোহিত কণিকা ভেঙে তৈরি হয় বিলিরুবিন। এই বিলিরুবিন তৈরির একটা নির্দিষ্ট সময় আছে, যদি কোনো কারনে এই সময়সীমার আগেই লোহিত কণিকা ভাঙতে শুরু করে, তবে আমাদের শরীরে বিলিরুবিনের মাত্রা অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায়। আর এর ফলেই জন্ডিসের রোগের  উৎপত্তির হতে পারে । এখন কথা হচ্ছে, ইটা কি ভাবে ভালো হতে পারে ?

আমাদের শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এই রোগকে নির্মূল করতে পারে। আর এর জন্য দরকার আমাদের সম্পূর্ণ বিশ্রাম। খাবার মধ্যে প্রচুর পরিমানে গুলুকোজ, ভিটামিন ও পরিশুদ্ধ জল। এছাড়া এই সময় অবশ্য়ই চর্ব্বি  জাতীয় খাবার পরিত্যাগ করতে হবে। এতে আমাদের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবেই এন্টিবডি তৈরি হবে। এবং আমরা সত্বর  সুস্থ হয়ে উঠবো। 

যাইহোক আমাদের আলোচনার বিষয় শরীর নয়, আমাদের আলোচ্য বিষয় কুসংস্কার। আমাদের লিভার যখন ঠিক ঠিক মতো কাজ করতে না পারে, তখন আমাদের এই কামলা হবার সম্ভাবনা থাকে। সেখান থেকে বাঁচতে গেলে আমাদের যেটা করতে হবে, তা হচ্ছে, আমাদের খাদ্যের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া চলবে  না ,বিশ্রাম নিতে হবে।  গ্লুকোজ, ভিটামিন এবং পরিশুদ্ধ জল খেতে হবে। এতে করে আমাদের মধ্যে এন্টিবডি তৈরি হবে, লিভারের মধ্যে যে ভাইরাস ছিল, তার  ধংশ হবে। এতে বামনহাটি  বা ভৃঙ্গরাজ গাছের ডালের মালার কোনো ভূমিকা নেই।




No comments:

Post a Comment