ছান্দোগ্য উপনিষদ সৎ ও অসৎ
আপনি কি রাজার চোখের অসুখ গল্পটা জানেন ? শুনুন, এক রাজার চোখের অসুখ হয়েছে। তো কবিরাজ মহাশয় বলেছেন, রাজামশাই আপনি রোজ তিন ঘন্টা সবুজের দিকে তাকিয়ে থাকবেন। তো তিনি তো মহারাজা, তিনি কেন সবুজের দিকে তাকিয়ে সময় নষ্ট করতে যাবেন। তো ঠিক হলো, রাজ্যের সবকিছু সবুজ রঙ করে দাও। তাহলে আর রাজামশাইয়ের সময় নষ্ট করে, সবুজের দিকে তাঁকিয়ে থাকতে হবে না। রাজা মশায়ের মন্ত্রী ছিল বিজ্ঞব্যক্তি। তিনি রাজামশায়কে পরামর্শ দিলেন, আপনি চোখে একটা সবুজ চশমা লাগিয়ে নিন। তাহলে আপনি সব সবুজ দেখতে পাবেন। আপনার কাছে তখন জগৎটা সবুজ হয়ে যাবে।
তো আমরা যখন জগতের দিকে তাকাই, আমরা জগৎটাকে রঙ্গিন দেখি। আসলে এই রঙ তো আসল নয়, এগুলো সব সূর্য্যের কাছ থেকে জগৎ ধার করেছে। জগৎটাকে আমরা সাদামাঠা দেখতে চাই না। তাই আমরা জগৎটার আসল রূপ দেখতে চাই না। আমি যা চাই তাই দেখি। সত্য হারিয়ে যায়। আমরা অসত্যকে দেখি, সত্যকে আমরা দেখতে পাই না।
উপনিষদ বলছে, যা-কিছুকে মানুষ সত্য বলে মনে করে, বা গ্রহণ করে, সেটাই তার সমগ্র সত্ত্বাকে, তার সমস্ত চিন্তাধারাকে, তার সমস্ত অনুভূতিকে, তার আকাঙ্খাকে আকর্ষণ করে। আমি যদি এই মিথ্যা জগৎকে সত্য বলে মনে করি, তবে তাই আমাদের সমগ্র সত্ত্বাকে আকর্ষণ করবে।
যখন আমরা যাকে সত্য বলে মনে করি, তখন আমরা তাতেই আকৃষ্ট হই । ছোটবেলায়, আমরা খেলনায় আকৃষ্ট হয়ে থাকি।আর তাতেই আমরা তন্ময় হয়ে থাকি। এই খেলনা থেকে বিচ্যুত হলে, আমরা কান্নাকাটি জুড়ে দেই । আমরা কষ্ট পাই। কিন্তু বয়স হবার সঙ্গে সঙ্গে সেই একই খেলনাতে আকর্ষণ আর থাকে না। ঠিক তেমনি কিছুদিন আমরা এই জগৎটাকে সত্য বলে মনে করি, আর তাতেই আমরা পরিপূর্ন, তন্ময় হয়ে থাকি। এই জগৎটাকে আমরা ধরতে চাই। এই জগৎটাকে ঘিরেই আমরা বেঁচে থাকতে চাই। কিন্তু জ্ঞান হবার সঙ্গে সঙ্গে আমরা আর এই জগতের সঙ্গে আর কোনো আকর্ষণ অনুভব করি না। জগৎ তখন ওই ছেলেবেলার খেলনার মতো মনে হয়। আর হাসি পায়, এগুলো নিয়ে আমি একসময় খেলতাম। আনন্দ পেতাম। সত্য সবই, খেলনা যেমন সত্য, জগৎ সত্য, শুধু বদলে গেছে, আমার ধারণা, বদলে গেছে আমার মানসিকতা। এখন আমাদের কাছে ঈশ্বর সত্য বলে মনে হয়। আর ঈশ্বর সত্য বলে মনে হয় বলেই আমরা হৃদয় দিয়ে তাকেই ভালোবাসি, তাকেই অনুসরণ করি। যেমন এককালে খেলনাটাকে হৃদয় দিয়ে ভালো বাসতাম, যেমন একদিন এই জগৎটাকে হৃদয় দিয়ে ভালো বাসতাম, ঠিক তেমনি জ্ঞানের উন্মোচনের সাথে সাথে এখন আমরা ঈশ্বরকে ভালোবাসি। তাকে আমি কাছ ছাড়া হয়ে থাকতে পারি না।
তাই আমাদের যেটা দরকার, সেটা হচ্ছে সত্যের অনুসন্ধান করা। আর এই সত্য অনুসন্ধানের পথে আমরা যতদূর এগুবো, আমাদের চারিদিকের দৃশ্য বদলে যাবে। বদলে যাবে আমার দৃষ্টিভঙ্গি। তাই আমাদের নিজেদের ধারণার উপরেই নির্ভর করছে, সৎ বস্তুর সম্পর্কে আমাদের ধারণা। শিশুর কাছে, পুতুলগুলো সত্য বলে প্রতিভাত হয়। সে তাকে জামা-কাপড় পড়ায়। তাদের বিয়ে দেয়। পুতুল নিয়ে সে আনন্দে মেতে থাকে। এমনকি পুতুল নিয়ে সে ঘুমুতে যায়। বড়রা বকলে তার কষ্ট হয়। কিন্তু সে যখন বড়ো হয়, তার নিজের মধ্যে ধারণার পরিবর্তন হয়। পুতুল তার কাছে আর জীবন্ত মনে হয় না। পুতুল তাকে আর আকর্ষণ করে না। জীবন সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়। প্রত্যক্ষ এই জগৎ সম্পর্কেও ধীরে ধীরে তার জ্ঞানের পরিবর্তন হয়। আগে মাংস-মিষ্টিতে সে আকর্ষণ বোধ করতো। এখন সে নিরামিষ খায়। আসলে সেই সবুজ চশমা। যে রঙের চশমা যখন আমাদের চোখে লাগানো থাকে জগৎটাকে আমি সেই রঙের দেখতে থাকি। আসলে চশমাটা আমাদের চোখে। রঙ আমাদের চোখে লাগানো আছে, জগৎ যা ছিল তাই আছে। কেবল আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে।
একটা সময় ভৌত জগৎকে আমাদের আধ্যাত্মিক জগৎ থেকে বেশী সত্য বলে মনে হয়। একটা সময় আমাদের এই শরীরটাকে আত্মা থেকে বেশী সত্য বলে মনে হয়। আসলে চেতন স্তর থেকে আমরা যত নিচে অবস্থান করি, ততই জগৎ, এই শরীর আমাদের কাছে সত্য বলে হয় । চেতন স্তর থেকে যত আমরা নিচে নাবতে থাকি, ততই আমাদের দেহ চেতনার মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর ঠিক যখন এর উল্টোটা হয়, আমরা যখন আমাদের চেতন স্তরের মাত্রাকে ধ্যানের মাধ্যমে বৃদ্ধি করতে পারি, তখন আমাদের এই দেহ, এই বাহ্যিক জগৎ আমাদের কাছে গুরত্ত্ব হারিয়ে ফেলে।
জীবের গঠন তিনটি বিষয়ের দ্বারা হয়ে থাকে। মন-অহং-চিদাভাস। এই তিনটি আবার তিনটি গুনের সমাহার - সত্ত্ব, রজ, তম। এই তিন গুনের মিলনে জাত হচ্ছে মায়া। এই মনই অহং চেতনাকে জাগিয়ে তোলে এবং সেখানে ব্রহ্ম-জ্যোতিঃ প্রতিফলিত হয়। অহং চেতনা সম্বলিত এই প্রতিফলিত জ্যোতিঃ হচ্ছে জীবাত্মা। যখন উচ্চতর জ্ঞানের সাহায্যে এই প্রতিফলনকারী দর্পণটি বিনাশপ্রাপ্ত হয়, তখন ব্রহ্ম জ্যোতিঃ ব্রহ্মতে লিন হয়ে যায়। ব্রহ্মের সঙ্গে অভিন্ন হয়ে যায়। তাই বলা হয়ে থাকে, গুণাতীত অবস্থায়, জীব ও ব্রহ্ম একই। যতদিন এই দর্পন অর্থাৎ অহং রয়েছে, ততদিন জীবের অস্তিত্ত্ব থাকে। অহং সীমার মধ্যে আবদ্ধ। ব্রহ্ম অসীম। অহংয়ের লোপ সাধনে অসীম ব্রহ্মই থাকে। তাই বলা হয়ে থাকে ব্রহ্ম এক ও অদ্বিতীয় - একমেব-অদ্বিতীয়ম।
শ্বেতকেতু নামে মহর্ষি আরুণির এক পুত্র ছিল। শ্বেতকেতু বহু দিন গুরুগৃহে থেকে বেদ পাঠ করেছেন। এখন সে বড় পণ্ডিত হয়েছেন। তো পণ্ডিত শ্বেতকেতুকে পিতা আরুণি দেখেই বুঝলেন, শ্বেতকেতুর পান্ডিত্যের অহংকার হয়েছে, কিন্তু আত্মজ্ঞান হয়নি। তো তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে পুত্র তোমার্ কি আত্মজ্ঞান হয়েছে ? তোমার কি সেই একবিদ্যা জানা হয়েছে, যা জানলে অশ্রুত বিষয় শোনা যায়, যা জানলে অচিন্তনীয় বিষয় চিন্তা করা যায়, যা জানলে সমস্ত অজ্ঞাত বিষয়ের জ্ঞান হয় ?
শ্বেতকেতু ভাবতে লাগলেন, কি এমন বিষয় যা জানলে অন্য বিষয়ে জ্ঞান হয় ? যা জানলে সবকিছুকে জানা যায় ? প্রত্যেকটি জিনিষকে তো আলাদা আলাদা ভাবেই জানতে হয়। কিন্তু পিতা বলছেন, আত্মজ্ঞান হয়েছে কি না। অর্থাৎ আত্ম-বিষয়ে জ্ঞান হলে যা আমি শুনিনি তাও শোনা হয়ে যায়, যা চিন্তা করিনি তাও চিন্তা করা হয়ে যায়। এতো বড় আশ্চর্য্যের কথা, অবাস্তব কথা।
পিতা বলছেন, হে পুত্র, মাটিকে জানলে যেমন মাটির সব পাত্রকে জানা হয়। সোনাকে জানলে যেমন সব অলংকার সম্পর্কে জানা হয়,লোহাকে জানলে যেমন লোহার তৈরি সব বস্তুকে জানা হয় তেমনি আত্মাকে জানলে সব কিছুকে জানা হয়। তুমি কি আত্মাকে জেনেছো ?
মহর্ষি আরুণি, এবার বলতে শুরু করলেন :
দেখো শুন্য থেকে কোনো সৃষ্টি হতে পারে না। এই জগতে যা কিছু দেখছো, যা কিছু চিন্তা করছো, যা কিছু শুনছো, সবই একবস্তু থেকে জাত। তুমি যদি সেই একবস্তুকে জেনে নিতে পারো, তবে জগতের সব বস্তু সম্পর্কে তোমার জ্ঞান হতে পারে। বেদান্ত শাস্ত্র সেই এক বস্তুকে বলে সৎ। অর্থাৎ যার অস্তিত্ত্ব আছে। এটি অখন্ড, এক, অদ্বিতীয়, সর্বব্যাপী, নিরাকার, বাক্য ও মনের অতীত, শুদ্ধ ও চৈতন্যস্বরূপ।
দেখো, আজ যে জগৎ তুমি দেখছো, এই জগৎ আগেও ছিল, কিন্তু এখন যে রূপে দেখছো, সেই রূপে ছিল না। সাপ কখনো লম্বা হয়ে থাকে, কখনো সে কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকে, কিন্তু সাপ, সাপই থাকে। ঠিক তেমনি আজ যে নাম ও রূপে জগৎকে তুমি দেখছো, একসময় সে নামরূপ হীন অবস্থায়, অর্থাৎ সৎ -রূপে বর্তমান ছিল। কিন্তু কথা হচ্ছে, তাহলে এত নাম-রূপ এলো কোথেকে ? আসলে এই যে নাম-রূপ তুমি দেখছো, এগুলো আসলে সৎ-এর উপরে আরোপিত মাত্র, এর কোনো বাস্তব সত্ত্বা নেই। এই সৎ থেকেই অগ্নি, অগ্নি থেকে জল। কেউযখন অগ্নিশর্মা হয়, অর্থাৎ রেগে যায়, তার থেকে ঘাম বের হতে থাকে। কেউ যখন শোকগ্রস্থ হয়, তখন তার চক্ষু থেকে জল গড়িয়ে পড়ে। অর্থাৎ তেজ থেকে জল। জল যখন ঠান্ডা হতে থাকে, তখন সে কঠিন বস্তুতে পরিণত হয়, অর্থাৎ পৃথিবী সৃষ্টি হয়। এই তেজ ও জল সৃষ্টি করে অন্ন। আর এই অন্ন থেকেই জীবের সৃষ্টি। সমস্ত প্রাণীর সৃষ্টি। এই জল, তেজ, ও পৃথিবীর মধ্যে যিনি আছেন, তিনিই ব্রহ্ম। কিন্তু তিনি এই রূপের দ্বারা প্রভাবিত নন। এগুলোতে তিনি প্রতিবিম্বিত মাত্র। প্রতিবিম্ব ভিন্নতর হয়, পাত্রের কারণে। সূর্য্য আমাদের দৃষ্টিশক্তি দান করে, কিন্তু চোখের অসুখ থাকলে দৃষ্টিশক্তি কাজ করতে পারে না। তাতে সূর্য্যের কিন্তু এসে যায় না, বা সূর্য্যের গুনের কোনো পরিবর্তন হয় না। ঠিক তেমনি ব্রহ্ম সর্বত্র। ব্রহ্ম সবসময়, এক ও অপরিবর্তনীয়। ব্রহ্ম ছাড়া এই নাম-রূপের কোনো অস্তিত্ত্ব নেই। তাই মনে রেখো, শুধু এক ব্রহ্মই আছেন, আর কিছু নেই। আমরা যা কিছু দেখছি, শুনছি সবই এক ব্রহ্মের রূপ ও নাম।
এই যে স্থুল বস্তু দেখছো, এগুলো এই তিন দেবতার মিশ্রণ অর্থাৎ তেজ, জল, পৃথিবী - এর মিশ্রণ।
এই মিশ্রনের সময় যে তত্ত্বের ভাগ বেশি থাকে যেটাতে, সেটা সেই নামধ্যেও। যেমন স্থুল জলের মধ্যে অর্ধেক সূক্ষ্ম জল এক-চতুর্থাংশ করে সূক্ষ্ম তেজ ও পৃথিবী।
আমরা জানি পাঁচটি মহাভূত। অর্থাৎ আকাশ, বায়ু, তেজ, জল, ও পৃথিবী। এর থেকেই সৃষ্টি হয়েছে স্থুল সমস্ত বস্তু। এই বস্তুর পঞ্চীকরন প্রক্রিয়া এই রকম।
অর্থাৎ অর্ধেক সূক্ষ্ম পৃথিবী, এবং এক-অষ্টমাংশ করে আছে, সূক্ষ্ম -আকাশ, বায়ু,তেজ, ও জল।এইভাবে গঠিত হয়েছে স্থুল পৃথিবী। এই সৎ-পঞ্চভূতের মধ্যেই বিরাজ করছেন , সেই সৎ ব্রহ্ম অন্তরাত্মা রূপে। প্রথমে তিনি পঞ্চভূতের এক সমষ্টি রূপে, প্রকাশিত হলেন, তারপরে নাম-রূপের মধ্যে দিয়ে নিজেকে প্রকাশিত করলেন। এইসব গুহ্য কথা আমরা আরো বিস্তারিত শুনবো , মহামুনি আরুণির কাছ থেকে, যা লিপিবদ্ধ আছে, ছান্দোগ্য উপনিষদের ষষ্ঠ অধ্যায়ে। আজ বাক্যের বিরাম দিলাম।
ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ। হরি ওম্।
18.12.2019 - সৎ ও অসৎ
আমাদের ছোটবেলায়, একটা খেলা খেলতাম, আমি যা দেখতে পাচ্ছি, তুমিও কি তা দেখতে পাচ্ছো ? আমি কিছু একটা লুকোনো জিনিস দেখে মুখ ঘুরিয়ে থাকতাম। আর বন্ধুকে জিজ্ঞেস করতাম, সে সেটা দেখতে পাচ্ছে কি না। অর্থাৎ আমি যা দেখছি তুমি যদি তাই দেখো, তাহলে তুমি জিততে পারবে। তা না হলে তোমার হার।তো একটা চালাক ছেলে, করতো কি, যাকে দেখতে বলছে, তার জামা প্যান্ট বা শরীরের কোনো চিহ্নকে নির্দিষ্ট করতো, তো সাথী সেটা দেখতেই পারতো না। আসলে আমরা আমার দিকে দেখতে পাই না। তো আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারা এই বাইরের জগৎটাকেই দেখছি। আর সেটাই সত্য বলে মনে করছি। কিন্তু এর ভিতরে কি আছে, সেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আর তাকে সত্য বলে ভাবতেও পারি না। কিন্তু উপনিষদ বলছে, এই সবই এক বস্তু, আর পিছনে একই চেতন শক্তি নিহিত আছে। সেটাই চিরসত্য। আর এই মুহূর্তে যা আমাদের চোখের সামনে আসছে, সেটা এই আছে, এই নাই। অর্থাৎ মূল সত্ত্বাকে স্থির রেখে প্রতিমুহূর্তে দৃশ্যপটের পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।
আমরা শুনছিলাম ছান্দোগ্য উপনিষদ থেকে। মহর্ষি আরুণি তার ছেলেকে অর্থাৎ শ্বেতকেতুকে আত্মজ্ঞান সম্পর্কে কি বলছেন। অর্থাৎ এই দৃশ্যমান জগতের ভিতরে আসলে কি আছে ? কিভাবেই সৎ থেকে এই অসৎ অর্থাৎ অস্থায়ী জগতের প্রকাশ হলো ?
আমরা শুনছিলাম, সৎ বস্তু থেকে ধীরে ধীরে কি ভাবে অসৎ বস্তু তৈরি হল। আমরা শুনেছিলাম, তেজ জল ও পৃথিবী এগুলো প্রথমে সূক্ষ্ম আকারে ব্রহ্ম থেকেই উদ্ভূত হয় ও ব্রহ্মকে আচ্ছাদিত করে রাখে। যেমন রেশম কিট করে থাকে। নিজের দ্বারা নিজেকে আচ্ছাদিত করে ফেলে। এগুলো ব্রহ্ম নয়, কিন্তু ব্রহ্ম থেকেই উদ্ভূত। এর আকার তখন সূক্ষ্ম। এইবার এগুলোর বিভিন্ন নুপাতিক মিশ্রনের ফলে তৈরি হল স্থুল তেজ,, স্থুল জল, স্থুল পৃথিবী। আর এর পরিমান গত পার্থক্য হচ্ছে >স্থুল তেজের মধ্যে আছে, অর্ধেক সূক্ষ্ম তেজ, এক-চতুর্থাংশ সূক্ষ্ম জল ও এক-চতুর্থাংশ সূক্ষ্ম পৃথিবী। ঠিক তেমনি স্থুল জল হচ্ছে, অর্ধেক সূক্ষ্ম জল এবং একচতুর্থাংশ করে, সূক্ষ্ম পৃথিবী ও সূক্ষ্ম তেজ। আর স্থূল পৃথিবী হচ্ছে, অর্ধেক সূক্ষ্ম পৃথিবী একচতুর্থাংশ করে সূক্ষ্ম তেজ ও সূক্ষ্ম জল। তো আমরা সূক্ষ্ম তেজ, জল, পৃথিবী থেকে কিভাবে স্থূল তেজ, জল ও পৃথিবী হলো সেটা শুনলাম। আর ও বুঝলাম, সূক্ষ্ম থেকেই স্থূলের উৎপত্তি।
ষষ্ঠ অধ্যায় - পঞ্চম খন্ড :
মহর্ষি আরুণি শ্বেতকেতুকে বলছেন, আমরা যে খাবার খাই, তা আমাদের শরীরের ভিতরে গিয়ে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এর মধ্যে স্থূল অংশ আমাদের মলের আকার নেয়। মধ্যম অংশ মাংসের আকার নেয়। আর সূক্ষ্মতম অংশ মনে পরিণত হয়।
এখন কথা হচ্ছে, স্থূল অংশ মলে পরিণত হলো, এটা বোঝা গেল, মধ্যম অংশ মাংসে পরিণত হলো, এটাও নাহয় বোঝা গেল কিন্তু সূক্ষ্মতম অংশ মনে পরিণত হলো ? এটা কিভাবে সম্ভব। আসলে এটা বুঝতে গেলে, আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, মন কিন্তু জড় পদার্থ। এবং মন কাজ করে আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে। এই স্নায়ুতন্ত্রের নাম হচ্ছে, হিতা। হিতা অর্থাৎ মঙ্গলকারিনী। কিন্তু খাদ্য কিভাবে মনে পরিণত হয় ? এখন, আমরা জানি খাদ্যের ক্ষুদ্রতম অংশ রক্তে পরিণত হয়। এবং আমাদের হৃদযন্ত্রে প্রবেশ করে, সেখান থেকে ধমনী বা শিরার মধ্যে প্রবেশ করে। আর সেখানে একটা তরঙ্গ সৃষ্টি হয়। এই তরঙ্গগুলোই আসলে আমাদের মনের চিন্তা, অনুভবশক্তি, বা ইচ্ছাশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এছাড়াও ইন্দিয়গুলোকে সক্রিয় রাখতে এই শক্তিই কাজ করে।
এর জন্যই আমরা যখন অনাহারে থাকি, আমাদের মন অবসন্ন হয়ে পড়ে। দেহ সংকুচিত হতে থাকে।
আমরা যে জল পান করি, তাও আমাদের শরীরের ভিতরে গিয়ে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এই জলের স্থুলতম অংশ আমাদের মূত্রে পরিণত হয়। মাধ্যম অংশ রক্তের মধ্যে প্রবাহিত হয়, আর সূক্ষ্মতম অংশ প্রাণবায়ুতে রূপান্তরিত হয়। এইজন্য আমরা যদি জলপান বন্ধ রাখি, তবে, আমাদের মূত্রত্যাগ ক্রিয়া বন্ধ হবে, আমাদের রক্ত ঘন হতে থাকবে, ফলে রক্তের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হবে। এমনকি আমাদের প্রাণের ক্রিয়া অর্থাৎ শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে ।মহর্ষি আরুণি, আরো বলছেন, আমরা যে তেজস্কর খাদ্য খাই যেমন ঘি, মাখন ইত্যাদি সেগুলো আমাদের শরীরে গিয়ে তিন ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এই তেজষ্ক্রিয় পদার্থের স্থূল ভাগ অস্থিতে পরিণত হয়। মধ্যম অংশের দ্বারা তৈরি হয় মজ্জা, আর সূক্ষ্মতম অংশ দ্বারা গঠিত হয় আমাদের বাক। অর্থাৎ আমরা যে বিচারবুদ্ধি খাটিয়ে কথা বলতে পারি, তা এই তেজস্ক্রিয় পদার্থের জন্যই হয়ে থাকে।
মহর্ষি আরুণি বললেন, হে পুত্র তাহলে তুমি নিশ্চয় বুঝতে পারছো, আমাদের মন খাদ্যের দ্বারা পুষ্ট হচ্ছে। প্রাণ জলের দ্বারা পুষ্ট হচ্ছে, আর আমাদের বুদ্ধি বা বাক তেজের দ্বারা পুষ্ট হচ্ছে। ।
কিন্তু শ্বেতকেতুর কাছে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয় নি, তাই মহর্ষি আরুণি এবার উদাহরনের সাহায্যে ব্যাপারটা পরিষ্কার করে বলছেন -
ষষ্ঠ খন্ড : হে সোমপুত্র, দই যখন মন্থন করা হয়, তখন তার সূক্ষ্ম অংশ উপরে উঠে আসে, একেই বলে মাখন। মাখন দইয়ের মধ্যেই ছিল, কিন্তু সুপ্ত অবস্থায়,যখন মন্থন ক্রিয়া সম্পন্ন হল, তখন ধীরে ধীরে মাখন অর্থাৎ সূক্ষ্ম অংশ আমাদের দৃষ্টিগোচর হলো। আর ঠিক এই ভাবেই, আমরা যা কিছু খাই সেই ভুক্ত খাদ্যের সূক্ষ্মতম অংশ আলাদা হয়ে উপরে উঠে আসে, যাক আমরা "মন" বলি। তাহলে এটা বলা যেতে পারে, মন হচ্ছে জড় বস্তুর সার পদার্থ। ঠিক তেমনি ঘি-মাখন অর্থাৎ তেজস্ক্রিয় পদার্থ যখন আমরা খাই, সেখান থেকে যে ক্ষুদ্রতম পদার্থ উঠে আসে তা আমাদের বাক-এ পরিণত হয়। বাক অর্থাৎ ধীশক্তির প্রকাশ হচ্ছে। অর্থাৎ আমাদের ধীশক্তি বৃদ্ধি পায়।
তাহলে আমরা বুঝলাম, খাদ্য বা অন্ন থেকে পুষ্ট হয় মন, জল থেকে পুষ্ট হয় প্রাণ,আর তেজ থেকে পুষ্ট হয় আমাদের বাক বা ধীশক্তি।
সপ্তম খন্ড : মহর্ষি আরুণি বলছেন, হে চন্দ্রপুত্র, মানুষের ষোলোটি কলা আছে। কলা অর্থাৎ অংশ। মানুষ যদি পনেরো দিন আহার না করে, শুধু জল পান করে থাকে, তাহলে তার প্রাণ বিয়োগ হয় না। কিন্তু মন তখন ম্রিয়মান হয়ে থাকে। আর মনের মধ্যে যে স্মৃতি বা সংস্কার আছে, সেগুলো তখন স্তিমিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ আগুনে যদি জ্বালানী না দেওয়া হয়, তবে অগ্নি আর দাউ দাউ করে জ্বলতে পারে না। কিন্তু স্তিমিত অবস্থাতেও স্ফুলিঙ্গ থেকে যায়। ঠিক তেমনি আমরা যদি পনেরো দিন, না খেয়ে থাকি, কিন্তু শুধু জল পান করি, তবে আমাদের মন ওই স্ফুলিঙ্গর মতো হয়ে থাকে, আবার যদি জ্বালানী পায়, তবে ধীরে ধীরে সেই স্ফুলিঙ্গ একসময় দাউ দাউ করে জ্বলে উঠতে পারে। আমাদের মনও অভুক্ত অবস্থায়, ফুলকির মতো। আবার ইন্ধন অর্থাৎ খাদ্য পেলে, সক্রিয় হয়ে যায়। কিন্তু এই স্ফুলিঙ্গের স্থিতিকাল খুব বেশিদিন থাকে না। তাই বেশিদিন না খেয়ে থাকলে, ধীরে ধীরে আমাদের মনের ক্রিয়া নষ্ট হয়ে যায়। প্রাণ পূষ্টি পেলেও, অন্য কলাগুলো, আর কার্যক্ষম থাকে না, ধীরে ধীরে বিলোপের পথে চলে যায়। তখন জল থেকে প্রাণশক্তি সংগ্রহ করবার শক্তি থাকে না। ফলে প্রাণও ক্রিয়াহীন হয়ে যায়।
মানুষের দেহ একটা বিশাল শক্তিশালী যন্ত্র ভিন্ন কিছু নয়। আর এই যন্ত্রকে কার্যকরী রাখছে, প্রাণ, মন, ও বাক শক্তি। এই তিন শক্তি আবার অন্ন, জল, ও তেজের উপরে নির্ভরশীল। আবার এই তিনটি জিনিস স্বতন্ত্র নয়। স্থূল পৃথিবী যেমন সূক্ষ্ম পৃথিবী, সূক্ষ্ম জল ও সূক্ষ্ম তেজের সমন্বয়, ঠিক তেমনি স্থূল জল সূক্ষ্ম জল,সূক্ষ্ম তেজ বা আগুন ও সূক্ষ্ম পৃথিবীর সমন্বয়। আবার স্থূল অগ্নি হচ্ছে সূক্ষ্ম তেজ, সূক্ষ্ম জল এবং সুক্ষ পৃথিবীর মিশ্রণ মাত্র। অর্থাৎ মহাভূতকে বিভিন্ন অনুপাতে মেশানো হয়েছে। মহর্ষি আরুণির কথা থেকে আমরা বুঝলাম, আমরা যে স্থূল ভূত দেখতে পাচ্ছি, সেগুলো এক-একটা মিশ্রিত অবস্থা মাত্র। আর এগুলোই যখন অবিমিশ্র অবস্থায় থাকে, তাকেই একমাত্র সৎ-বস্তু বলতে পারি। আর আর সৎ বস্তুর মিশ্রিত অবস্থায় স্থুল ভূতের সৃষ্টি হয়েছে। জগতের কোনো বস্তুই স্বতন্ত্র নয়। তাহলে স্বতন্ত্র কে ? এই স্বতন্ত্র বস্তুই হচ্ছে সৎ-ব্রহ্ম। উপনিষদ বলছে এই সৎ-বস্তুই আমাদের প্রকৃত স্বরূপ। ইনিই সেকমাত্র শুদ্ধ চৈতন্য স্বরূপ।
গোটা ব্যাপারটাকে আমরা দুটো দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে পারি। ব্যষ্টি ও সমষ্টি। পার্থিব ও অপার্থিব। পার্থিব দিক থেকে দেখলে, স্থুল মহাভূত অর্থাৎ ক্ষিতি-অপ-তেজ-মরুৎ-ব্যোম থেকে আমাদের মন বুদ্ধি বা বাক, প্রাণশক্তি উৎপত্তি হয়েছে। আর এই সব মহাভূত সৃষ্টি হয়েছে সূক্ষ্ম মহাভূত থেকে। আর সুক্ষ মহাভূত সৃষ্টি হয়েছে শুদ্ধ চৈতন্য থেকে। অতএব শুদ্ধ চৈতন্য-ই একমাত্র সত্য। এবং একে আশ্রয় করেই আছে সব সূক্ষ্ম, বা স্থূল সব কিছু।
এইজন্যই বলা হয়ে থাকে জড় আর চৈতন্য আলাদা কিছু নয়। যে-কোনো জড় বস্তু ভেঙে টুকরো টুকরো করে যদি উৎসে যাবার চেষ্টা করি, তবে আমরা সেই শুদ্ধ চৈতন্যকেই দেখতে পাবো। একটা পাথরের টুকরাকে ভাঙতে ভাঙতে আমরা সেই গতিশীল পরমাণুগুলোকেই দেখতে পাবো, যা সেই সৎ-স্বরূপ চৈতন্য থেকেই এসেছে।
ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ , হরি ওম।
জীবের গঠন তিনটি বিষয়ের দ্বারা হয়ে থাকে। মন-অহং-চিদাভাস। এই তিনটি আবার তিনটি গুনের সমাহার - সত্ত্ব, রজ, তম। এই তিন গুনের মিলনে জাত হচ্ছে মায়া। এই মনই অহং চেতনাকে জাগিয়ে তোলে এবং সেখানে ব্রহ্ম-জ্যোতিঃ প্রতিফলিত হয়। অহং চেতনা সম্বলিত এই প্রতিফলিত জ্যোতিঃ হচ্ছে জীবাত্মা। যখন উচ্চতর জ্ঞানের সাহায্যে এই প্রতিফলনকারী দর্পণটি বিনাশপ্রাপ্ত হয়, তখন ব্রহ্ম জ্যোতিঃ ব্রহ্মতে লিন হয়ে যায়। ব্রহ্মের সঙ্গে অভিন্ন হয়ে যায়। তাই বলা হয়ে থাকে, গুণাতীত অবস্থায়, জীব ও ব্রহ্ম একই। যতদিন এই দর্পন অর্থাৎ অহং রয়েছে, ততদিন জীবের অস্তিত্ত্ব থাকে। অহং সীমার মধ্যে আবদ্ধ। ব্রহ্ম অসীম। অহংয়ের লোপ সাধনে অসীম ব্রহ্মই থাকে। তাই বলা হয়ে থাকে ব্রহ্ম এক ও অদ্বিতীয় - একমেব-অদ্বিতীয়ম।
শ্বেতকেতু নামে মহর্ষি আরুণির এক পুত্র ছিল। শ্বেতকেতু বহু দিন গুরুগৃহে থেকে বেদ পাঠ করেছেন। এখন সে বড় পণ্ডিত হয়েছেন। তো পণ্ডিত শ্বেতকেতুকে পিতা আরুণি দেখেই বুঝলেন, শ্বেতকেতুর পান্ডিত্যের অহংকার হয়েছে, কিন্তু আত্মজ্ঞান হয়নি। তো তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে পুত্র তোমার্ কি আত্মজ্ঞান হয়েছে ? তোমার কি সেই একবিদ্যা জানা হয়েছে, যা জানলে অশ্রুত বিষয় শোনা যায়, যা জানলে অচিন্তনীয় বিষয় চিন্তা করা যায়, যা জানলে সমস্ত অজ্ঞাত বিষয়ের জ্ঞান হয় ?
শ্বেতকেতু ভাবতে লাগলেন, কি এমন বিষয় যা জানলে অন্য বিষয়ে জ্ঞান হয় ? যা জানলে সবকিছুকে জানা যায় ? প্রত্যেকটি জিনিষকে তো আলাদা আলাদা ভাবেই জানতে হয়। কিন্তু পিতা বলছেন, আত্মজ্ঞান হয়েছে কি না। অর্থাৎ আত্ম-বিষয়ে জ্ঞান হলে যা আমি শুনিনি তাও শোনা হয়ে যায়, যা চিন্তা করিনি তাও চিন্তা করা হয়ে যায়। এতো বড় আশ্চর্য্যের কথা, অবাস্তব কথা।
পিতা বলছেন, হে পুত্র, মাটিকে জানলে যেমন মাটির সব পাত্রকে জানা হয়। সোনাকে জানলে যেমন সব অলংকার সম্পর্কে জানা হয়,লোহাকে জানলে যেমন লোহার তৈরি সব বস্তুকে জানা হয় তেমনি আত্মাকে জানলে সব কিছুকে জানা হয়। তুমি কি আত্মাকে জেনেছো ?
মহর্ষি আরুণি, এবার বলতে শুরু করলেন :
দেখো শুন্য থেকে কোনো সৃষ্টি হতে পারে না। এই জগতে যা কিছু দেখছো, যা কিছু চিন্তা করছো, যা কিছু শুনছো, সবই একবস্তু থেকে জাত। তুমি যদি সেই একবস্তুকে জেনে নিতে পারো, তবে জগতের সব বস্তু সম্পর্কে তোমার জ্ঞান হতে পারে। বেদান্ত শাস্ত্র সেই এক বস্তুকে বলে সৎ। অর্থাৎ যার অস্তিত্ত্ব আছে। এটি অখন্ড, এক, অদ্বিতীয়, সর্বব্যাপী, নিরাকার, বাক্য ও মনের অতীত, শুদ্ধ ও চৈতন্যস্বরূপ।
দেখো, আজ যে জগৎ তুমি দেখছো, এই জগৎ আগেও ছিল, কিন্তু এখন যে রূপে দেখছো, সেই রূপে ছিল না। সাপ কখনো লম্বা হয়ে থাকে, কখনো সে কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকে, কিন্তু সাপ, সাপই থাকে। ঠিক তেমনি আজ যে নাম ও রূপে জগৎকে তুমি দেখছো, একসময় সে নামরূপ হীন অবস্থায়, অর্থাৎ সৎ -রূপে বর্তমান ছিল। কিন্তু কথা হচ্ছে, তাহলে এত নাম-রূপ এলো কোথেকে ? আসলে এই যে নাম-রূপ তুমি দেখছো, এগুলো আসলে সৎ-এর উপরে আরোপিত মাত্র, এর কোনো বাস্তব সত্ত্বা নেই। এই সৎ থেকেই অগ্নি, অগ্নি থেকে জল। কেউযখন অগ্নিশর্মা হয়, অর্থাৎ রেগে যায়, তার থেকে ঘাম বের হতে থাকে। কেউ যখন শোকগ্রস্থ হয়, তখন তার চক্ষু থেকে জল গড়িয়ে পড়ে। অর্থাৎ তেজ থেকে জল। জল যখন ঠান্ডা হতে থাকে, তখন সে কঠিন বস্তুতে পরিণত হয়, অর্থাৎ পৃথিবী সৃষ্টি হয়। এই তেজ ও জল সৃষ্টি করে অন্ন। আর এই অন্ন থেকেই জীবের সৃষ্টি। সমস্ত প্রাণীর সৃষ্টি। এই জল, তেজ, ও পৃথিবীর মধ্যে যিনি আছেন, তিনিই ব্রহ্ম। কিন্তু তিনি এই রূপের দ্বারা প্রভাবিত নন। এগুলোতে তিনি প্রতিবিম্বিত মাত্র। প্রতিবিম্ব ভিন্নতর হয়, পাত্রের কারণে। সূর্য্য আমাদের দৃষ্টিশক্তি দান করে, কিন্তু চোখের অসুখ থাকলে দৃষ্টিশক্তি কাজ করতে পারে না। তাতে সূর্য্যের কিন্তু এসে যায় না, বা সূর্য্যের গুনের কোনো পরিবর্তন হয় না। ঠিক তেমনি ব্রহ্ম সর্বত্র। ব্রহ্ম সবসময়, এক ও অপরিবর্তনীয়। ব্রহ্ম ছাড়া এই নাম-রূপের কোনো অস্তিত্ত্ব নেই। তাই মনে রেখো, শুধু এক ব্রহ্মই আছেন, আর কিছু নেই। আমরা যা কিছু দেখছি, শুনছি সবই এক ব্রহ্মের রূপ ও নাম।
এই যে স্থুল বস্তু দেখছো, এগুলো এই তিন দেবতার মিশ্রণ অর্থাৎ তেজ, জল, পৃথিবী - এর মিশ্রণ।
এই মিশ্রনের সময় যে তত্ত্বের ভাগ বেশি থাকে যেটাতে, সেটা সেই নামধ্যেও। যেমন স্থুল জলের মধ্যে অর্ধেক সূক্ষ্ম জল এক-চতুর্থাংশ করে সূক্ষ্ম তেজ ও পৃথিবী।
আমরা জানি পাঁচটি মহাভূত। অর্থাৎ আকাশ, বায়ু, তেজ, জল, ও পৃথিবী। এর থেকেই সৃষ্টি হয়েছে স্থুল সমস্ত বস্তু। এই বস্তুর পঞ্চীকরন প্রক্রিয়া এই রকম।
অর্থাৎ অর্ধেক সূক্ষ্ম পৃথিবী, এবং এক-অষ্টমাংশ করে আছে, সূক্ষ্ম -আকাশ, বায়ু,তেজ, ও জল।এইভাবে গঠিত হয়েছে স্থুল পৃথিবী। এই সৎ-পঞ্চভূতের মধ্যেই বিরাজ করছেন , সেই সৎ ব্রহ্ম অন্তরাত্মা রূপে। প্রথমে তিনি পঞ্চভূতের এক সমষ্টি রূপে, প্রকাশিত হলেন, তারপরে নাম-রূপের মধ্যে দিয়ে নিজেকে প্রকাশিত করলেন। এইসব গুহ্য কথা আমরা আরো বিস্তারিত শুনবো , মহামুনি আরুণির কাছ থেকে, যা লিপিবদ্ধ আছে, ছান্দোগ্য উপনিষদের ষষ্ঠ অধ্যায়ে। আজ বাক্যের বিরাম দিলাম।
ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ। হরি ওম্।
18.12.2019 - সৎ ও অসৎ
আমাদের ছোটবেলায়, একটা খেলা খেলতাম, আমি যা দেখতে পাচ্ছি, তুমিও কি তা দেখতে পাচ্ছো ? আমি কিছু একটা লুকোনো জিনিস দেখে মুখ ঘুরিয়ে থাকতাম। আর বন্ধুকে জিজ্ঞেস করতাম, সে সেটা দেখতে পাচ্ছে কি না। অর্থাৎ আমি যা দেখছি তুমি যদি তাই দেখো, তাহলে তুমি জিততে পারবে। তা না হলে তোমার হার।তো একটা চালাক ছেলে, করতো কি, যাকে দেখতে বলছে, তার জামা প্যান্ট বা শরীরের কোনো চিহ্নকে নির্দিষ্ট করতো, তো সাথী সেটা দেখতেই পারতো না। আসলে আমরা আমার দিকে দেখতে পাই না। তো আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারা এই বাইরের জগৎটাকেই দেখছি। আর সেটাই সত্য বলে মনে করছি। কিন্তু এর ভিতরে কি আছে, সেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আর তাকে সত্য বলে ভাবতেও পারি না। কিন্তু উপনিষদ বলছে, এই সবই এক বস্তু, আর পিছনে একই চেতন শক্তি নিহিত আছে। সেটাই চিরসত্য। আর এই মুহূর্তে যা আমাদের চোখের সামনে আসছে, সেটা এই আছে, এই নাই। অর্থাৎ মূল সত্ত্বাকে স্থির রেখে প্রতিমুহূর্তে দৃশ্যপটের পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।
আমরা শুনছিলাম ছান্দোগ্য উপনিষদ থেকে। মহর্ষি আরুণি তার ছেলেকে অর্থাৎ শ্বেতকেতুকে আত্মজ্ঞান সম্পর্কে কি বলছেন। অর্থাৎ এই দৃশ্যমান জগতের ভিতরে আসলে কি আছে ? কিভাবেই সৎ থেকে এই অসৎ অর্থাৎ অস্থায়ী জগতের প্রকাশ হলো ?
আমরা শুনছিলাম, সৎ বস্তু থেকে ধীরে ধীরে কি ভাবে অসৎ বস্তু তৈরি হল। আমরা শুনেছিলাম, তেজ জল ও পৃথিবী এগুলো প্রথমে সূক্ষ্ম আকারে ব্রহ্ম থেকেই উদ্ভূত হয় ও ব্রহ্মকে আচ্ছাদিত করে রাখে। যেমন রেশম কিট করে থাকে। নিজের দ্বারা নিজেকে আচ্ছাদিত করে ফেলে। এগুলো ব্রহ্ম নয়, কিন্তু ব্রহ্ম থেকেই উদ্ভূত। এর আকার তখন সূক্ষ্ম। এইবার এগুলোর বিভিন্ন নুপাতিক মিশ্রনের ফলে তৈরি হল স্থুল তেজ,, স্থুল জল, স্থুল পৃথিবী। আর এর পরিমান গত পার্থক্য হচ্ছে >স্থুল তেজের মধ্যে আছে, অর্ধেক সূক্ষ্ম তেজ, এক-চতুর্থাংশ সূক্ষ্ম জল ও এক-চতুর্থাংশ সূক্ষ্ম পৃথিবী। ঠিক তেমনি স্থুল জল হচ্ছে, অর্ধেক সূক্ষ্ম জল এবং একচতুর্থাংশ করে, সূক্ষ্ম পৃথিবী ও সূক্ষ্ম তেজ। আর স্থূল পৃথিবী হচ্ছে, অর্ধেক সূক্ষ্ম পৃথিবী একচতুর্থাংশ করে সূক্ষ্ম তেজ ও সূক্ষ্ম জল। তো আমরা সূক্ষ্ম তেজ, জল, পৃথিবী থেকে কিভাবে স্থূল তেজ, জল ও পৃথিবী হলো সেটা শুনলাম। আর ও বুঝলাম, সূক্ষ্ম থেকেই স্থূলের উৎপত্তি।
ষষ্ঠ অধ্যায় - পঞ্চম খন্ড :
মহর্ষি আরুণি শ্বেতকেতুকে বলছেন, আমরা যে খাবার খাই, তা আমাদের শরীরের ভিতরে গিয়ে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এর মধ্যে স্থূল অংশ আমাদের মলের আকার নেয়। মধ্যম অংশ মাংসের আকার নেয়। আর সূক্ষ্মতম অংশ মনে পরিণত হয়।
এখন কথা হচ্ছে, স্থূল অংশ মলে পরিণত হলো, এটা বোঝা গেল, মধ্যম অংশ মাংসে পরিণত হলো, এটাও নাহয় বোঝা গেল কিন্তু সূক্ষ্মতম অংশ মনে পরিণত হলো ? এটা কিভাবে সম্ভব। আসলে এটা বুঝতে গেলে, আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, মন কিন্তু জড় পদার্থ। এবং মন কাজ করে আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে। এই স্নায়ুতন্ত্রের নাম হচ্ছে, হিতা। হিতা অর্থাৎ মঙ্গলকারিনী। কিন্তু খাদ্য কিভাবে মনে পরিণত হয় ? এখন, আমরা জানি খাদ্যের ক্ষুদ্রতম অংশ রক্তে পরিণত হয়। এবং আমাদের হৃদযন্ত্রে প্রবেশ করে, সেখান থেকে ধমনী বা শিরার মধ্যে প্রবেশ করে। আর সেখানে একটা তরঙ্গ সৃষ্টি হয়। এই তরঙ্গগুলোই আসলে আমাদের মনের চিন্তা, অনুভবশক্তি, বা ইচ্ছাশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এছাড়াও ইন্দিয়গুলোকে সক্রিয় রাখতে এই শক্তিই কাজ করে।
এর জন্যই আমরা যখন অনাহারে থাকি, আমাদের মন অবসন্ন হয়ে পড়ে। দেহ সংকুচিত হতে থাকে।
আমরা যে জল পান করি, তাও আমাদের শরীরের ভিতরে গিয়ে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এই জলের স্থুলতম অংশ আমাদের মূত্রে পরিণত হয়। মাধ্যম অংশ রক্তের মধ্যে প্রবাহিত হয়, আর সূক্ষ্মতম অংশ প্রাণবায়ুতে রূপান্তরিত হয়। এইজন্য আমরা যদি জলপান বন্ধ রাখি, তবে, আমাদের মূত্রত্যাগ ক্রিয়া বন্ধ হবে, আমাদের রক্ত ঘন হতে থাকবে, ফলে রক্তের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হবে। এমনকি আমাদের প্রাণের ক্রিয়া অর্থাৎ শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে ।মহর্ষি আরুণি, আরো বলছেন, আমরা যে তেজস্কর খাদ্য খাই যেমন ঘি, মাখন ইত্যাদি সেগুলো আমাদের শরীরে গিয়ে তিন ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এই তেজষ্ক্রিয় পদার্থের স্থূল ভাগ অস্থিতে পরিণত হয়। মধ্যম অংশের দ্বারা তৈরি হয় মজ্জা, আর সূক্ষ্মতম অংশ দ্বারা গঠিত হয় আমাদের বাক। অর্থাৎ আমরা যে বিচারবুদ্ধি খাটিয়ে কথা বলতে পারি, তা এই তেজস্ক্রিয় পদার্থের জন্যই হয়ে থাকে।
মহর্ষি আরুণি বললেন, হে পুত্র তাহলে তুমি নিশ্চয় বুঝতে পারছো, আমাদের মন খাদ্যের দ্বারা পুষ্ট হচ্ছে। প্রাণ জলের দ্বারা পুষ্ট হচ্ছে, আর আমাদের বুদ্ধি বা বাক তেজের দ্বারা পুষ্ট হচ্ছে। ।
কিন্তু শ্বেতকেতুর কাছে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয় নি, তাই মহর্ষি আরুণি এবার উদাহরনের সাহায্যে ব্যাপারটা পরিষ্কার করে বলছেন -
ষষ্ঠ খন্ড : হে সোমপুত্র, দই যখন মন্থন করা হয়, তখন তার সূক্ষ্ম অংশ উপরে উঠে আসে, একেই বলে মাখন। মাখন দইয়ের মধ্যেই ছিল, কিন্তু সুপ্ত অবস্থায়,যখন মন্থন ক্রিয়া সম্পন্ন হল, তখন ধীরে ধীরে মাখন অর্থাৎ সূক্ষ্ম অংশ আমাদের দৃষ্টিগোচর হলো। আর ঠিক এই ভাবেই, আমরা যা কিছু খাই সেই ভুক্ত খাদ্যের সূক্ষ্মতম অংশ আলাদা হয়ে উপরে উঠে আসে, যাক আমরা "মন" বলি। তাহলে এটা বলা যেতে পারে, মন হচ্ছে জড় বস্তুর সার পদার্থ। ঠিক তেমনি ঘি-মাখন অর্থাৎ তেজস্ক্রিয় পদার্থ যখন আমরা খাই, সেখান থেকে যে ক্ষুদ্রতম পদার্থ উঠে আসে তা আমাদের বাক-এ পরিণত হয়। বাক অর্থাৎ ধীশক্তির প্রকাশ হচ্ছে। অর্থাৎ আমাদের ধীশক্তি বৃদ্ধি পায়।
তাহলে আমরা বুঝলাম, খাদ্য বা অন্ন থেকে পুষ্ট হয় মন, জল থেকে পুষ্ট হয় প্রাণ,আর তেজ থেকে পুষ্ট হয় আমাদের বাক বা ধীশক্তি।
সপ্তম খন্ড : মহর্ষি আরুণি বলছেন, হে চন্দ্রপুত্র, মানুষের ষোলোটি কলা আছে। কলা অর্থাৎ অংশ। মানুষ যদি পনেরো দিন আহার না করে, শুধু জল পান করে থাকে, তাহলে তার প্রাণ বিয়োগ হয় না। কিন্তু মন তখন ম্রিয়মান হয়ে থাকে। আর মনের মধ্যে যে স্মৃতি বা সংস্কার আছে, সেগুলো তখন স্তিমিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ আগুনে যদি জ্বালানী না দেওয়া হয়, তবে অগ্নি আর দাউ দাউ করে জ্বলতে পারে না। কিন্তু স্তিমিত অবস্থাতেও স্ফুলিঙ্গ থেকে যায়। ঠিক তেমনি আমরা যদি পনেরো দিন, না খেয়ে থাকি, কিন্তু শুধু জল পান করি, তবে আমাদের মন ওই স্ফুলিঙ্গর মতো হয়ে থাকে, আবার যদি জ্বালানী পায়, তবে ধীরে ধীরে সেই স্ফুলিঙ্গ একসময় দাউ দাউ করে জ্বলে উঠতে পারে। আমাদের মনও অভুক্ত অবস্থায়, ফুলকির মতো। আবার ইন্ধন অর্থাৎ খাদ্য পেলে, সক্রিয় হয়ে যায়। কিন্তু এই স্ফুলিঙ্গের স্থিতিকাল খুব বেশিদিন থাকে না। তাই বেশিদিন না খেয়ে থাকলে, ধীরে ধীরে আমাদের মনের ক্রিয়া নষ্ট হয়ে যায়। প্রাণ পূষ্টি পেলেও, অন্য কলাগুলো, আর কার্যক্ষম থাকে না, ধীরে ধীরে বিলোপের পথে চলে যায়। তখন জল থেকে প্রাণশক্তি সংগ্রহ করবার শক্তি থাকে না। ফলে প্রাণও ক্রিয়াহীন হয়ে যায়।
মানুষের দেহ একটা বিশাল শক্তিশালী যন্ত্র ভিন্ন কিছু নয়। আর এই যন্ত্রকে কার্যকরী রাখছে, প্রাণ, মন, ও বাক শক্তি। এই তিন শক্তি আবার অন্ন, জল, ও তেজের উপরে নির্ভরশীল। আবার এই তিনটি জিনিস স্বতন্ত্র নয়। স্থূল পৃথিবী যেমন সূক্ষ্ম পৃথিবী, সূক্ষ্ম জল ও সূক্ষ্ম তেজের সমন্বয়, ঠিক তেমনি স্থূল জল সূক্ষ্ম জল,সূক্ষ্ম তেজ বা আগুন ও সূক্ষ্ম পৃথিবীর সমন্বয়। আবার স্থূল অগ্নি হচ্ছে সূক্ষ্ম তেজ, সূক্ষ্ম জল এবং সুক্ষ পৃথিবীর মিশ্রণ মাত্র। অর্থাৎ মহাভূতকে বিভিন্ন অনুপাতে মেশানো হয়েছে। মহর্ষি আরুণির কথা থেকে আমরা বুঝলাম, আমরা যে স্থূল ভূত দেখতে পাচ্ছি, সেগুলো এক-একটা মিশ্রিত অবস্থা মাত্র। আর এগুলোই যখন অবিমিশ্র অবস্থায় থাকে, তাকেই একমাত্র সৎ-বস্তু বলতে পারি। আর আর সৎ বস্তুর মিশ্রিত অবস্থায় স্থুল ভূতের সৃষ্টি হয়েছে। জগতের কোনো বস্তুই স্বতন্ত্র নয়। তাহলে স্বতন্ত্র কে ? এই স্বতন্ত্র বস্তুই হচ্ছে সৎ-ব্রহ্ম। উপনিষদ বলছে এই সৎ-বস্তুই আমাদের প্রকৃত স্বরূপ। ইনিই সেকমাত্র শুদ্ধ চৈতন্য স্বরূপ।
গোটা ব্যাপারটাকে আমরা দুটো দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে পারি। ব্যষ্টি ও সমষ্টি। পার্থিব ও অপার্থিব। পার্থিব দিক থেকে দেখলে, স্থুল মহাভূত অর্থাৎ ক্ষিতি-অপ-তেজ-মরুৎ-ব্যোম থেকে আমাদের মন বুদ্ধি বা বাক, প্রাণশক্তি উৎপত্তি হয়েছে। আর এই সব মহাভূত সৃষ্টি হয়েছে সূক্ষ্ম মহাভূত থেকে। আর সুক্ষ মহাভূত সৃষ্টি হয়েছে শুদ্ধ চৈতন্য থেকে। অতএব শুদ্ধ চৈতন্য-ই একমাত্র সত্য। এবং একে আশ্রয় করেই আছে সব সূক্ষ্ম, বা স্থূল সব কিছু।
এইজন্যই বলা হয়ে থাকে জড় আর চৈতন্য আলাদা কিছু নয়। যে-কোনো জড় বস্তু ভেঙে টুকরো টুকরো করে যদি উৎসে যাবার চেষ্টা করি, তবে আমরা সেই শুদ্ধ চৈতন্যকেই দেখতে পাবো। একটা পাথরের টুকরাকে ভাঙতে ভাঙতে আমরা সেই গতিশীল পরমাণুগুলোকেই দেখতে পাবো, যা সেই সৎ-স্বরূপ চৈতন্য থেকেই এসেছে।
ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ , হরি ওম।
No comments:
Post a Comment