Thursday, 26 September 2019

মহা-মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র

মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র

মহা-মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র - অর্থ ও উপযোগিতা
ॐ त्रयम्बकं यजामहे सुगन्धिं पुस्टिबरधनं ।
ऊर्बारुक्मिब बन्धनान मृत्युर्मुक्षीय मामृतात।।

ওঁং ত্র্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম্ । 
উর্বারুকমিব বন্ধনান্ মৃত্যুর্মুক্ষীয় মাঽমৃতাৎ।।
এই মন্ত্রের একটা বাঁধন আছে। সেই বাঁধন  দিয়ে মন্ত্রটি হবে এই রকম। 

ওঁং হৌং জূং স্বঃ ওঁং ভূর্ভূবঃ স্বাঃ
ওঁং  ত্র্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টি বর্ধনম। 
উর্ব্বারুক্মিব বন্ধনান্ মৃত্যুর্মুক্ষীয় মাঽমৃতাৎ।।
ওম্ স্বাহা ভুবঃ ভূঃ ওম্ স্বঃ জূং হৌং ওঁং 

আমরা ছোটবেলায় পড়েছি, আলিবাবা ও চল্লিশ চোরের গল্প। একটা গুহার মধ্যে ধনরত্ন গচ্ছিত রেখেছিলো ডাকাতের দল। একটা পাথরের দরজা ছিল। যা সাধারণের মানুষের দ্বারা খোলা সম্ভব ছিল না। তো এই দরজা খোলার একটা মন্ত্র ছিল, চিচিং ফাঁক।  এই মন্ত্র উচ্চারণ করলেই সেই মনি-রত্ন ভান্ডারের দরজা খুলে যেত। তো আধ্যাত্মিক জগতে প্রবেশের জন্যও একটা দরজা আছে। সেই দরজা খুলবার জন্য, শারীরিক শক্তি কোনো কাজ করতে পারে না। কিন্তু শব্দশক্তি বা মন্ত্রশক্তি মননশক্তি  এই অসাধ্য কাজ করতে পারে। এইরকম  দুটো মন্ত্র আমাদের কাছে খুব পরিচিত।  একটা হচ্ছে গায়ত্রী মন্ত্র, আর একটা হচ্ছে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র। আধ্যাত্মিক জগতের প্রবেশদ্বার উন্মোচনের মন্ত্র এগুলো। আজ আমরা সেই মহামৃত্যুঞ্জয় সম্পর্কে শুনবো। 
এই সুবিখ্যাত মন্ত্রটি মহামুনি মার্কন্ডেয় উদ্গীত নামে প্রচারিত। বলা হয়ে থাকে, চন্দ্রদেব একবার প্রজাপতি দক্ষের অভিশাপের কবলে পড়েন। তখন ঋষি মার্কেন্ডেয় প্রজাপতি দক্ষের কন্যা সতীকে এই মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র দান করেন।
অন্য কাহিনী হচ্ছে : এটি বীজ মন্ত্র। এই মন্ত্রের দ্রষ্টা হচ্ছেন ঋষি কহোল। ঋষি কহোল শিব সাধনায় এই মন্ত্র পেয়েছিলেন।
আর একটি কাহিনী আছে : এই মন্ত্র স্বয়ং শিব ঋষি শুক্রাচার্য্যকে  বলেছিলেন। শুক্রাচার্য্য় আবার ঋষি দধিচীকে দিয়েছিলেন।
যাইহোক, এই মন্ত্র মহাশক্তিশালী, এঁকে সর্বদা গোপন রাখা হতো। আজ আর অবশ্য এই গোপনীয়তা নেই।  এখন ঘরে ঘরে এই মন্ত্র সিডি ক্যাসেটের দৌলতে গীত হচ্ছে। এবং আমাদের  মনে হয়, এতে করে সবার মঙ্গল-ই হচ্ছে।  এঁকে কেউ বলে রুদ্র মন্ত্র  কেউ বলে, ত্র্যম্বকম মন্ত্র , কেউ বলেন, মৃত সঞ্জীবনী মন্ত্র , কেউ বলেন  মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র বা মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র।
বেদে দুই-তিন জায়গায় এই মন্ত্র বা এই মন্ত্রের অভাস পাই। 
প্রথমতঃ : ঋকবেদের ৭ম মন্ডলের ৫৯ নং সুক্তের ১২নং ঋক ।  : এই মন্ত্রের দেবতা "রুদ্রদেব" । অনুষ্ট্ুপ  ছন্দে লেখা।  বশিষ্ট ঋষির  উদ্গীত বা লেখা। এখানে বলছেন :
ত্র্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম্। 
উর্বারুকমিব বন্ধনান্ মৃত্যুর্মুক্ষীয় মাঽমৃতাৎ ।। 

দ্বিতীয়তঃ :  শুক্লযজুর্বেদে তৃতীয় অধ্যায়ে ৬০ নং মন্ত্রে আবার একই মন্ত্র পাই যা  ঋষি যাজ্ঞবল্কের উক্তি।   

(তৃতীয়তঃ :  অথর্ববেদেও চতুর্থ কাণ্ডের প্রথম অনুবাকের প্রথম  সুক্ত মন্ত্র নং ১৭ ; এখানে আমরা শ্লোকটি বা মন্ত্রটি একটু অন্য ভাবে পাই। এটি আসলে বিয়ের মন্ত্র।  যাই হোক সেখানে পাই :
অর্যমনং  যজামহে সুবন্ধুং পতিবেদনম্। 
উর্বারুকমিব বন্ধনাৎ প্রেতো মুঞ্চামি নামুতঃ।। )

এখন আমরা এই মন্ত্রের শব্দার্থ জানবো। যদিও আগেই আমরা একথা শুনেছি, তথাপি আর একবার শুনবো।
মন্ত্রের প্রথম ও শেষ লাইন আসলে মন্ত্রের বাঁধন। এই লাইন দুটো  মন্ত্র নয়।  কিন্তু মন্ত্রের সুরক্ষার্থে বা মন্ত্র শক্তি বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করে থাকেন। প্রথম লাইন  শেষে গিয়ে  উল্টোদিক থেকে গাওয়া হয়েছে।  এবার আমরা মন্ত্রের শব্দার্থ শুনবো।   
ওঁং - ওঁ- ওং-ওম  : সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের নামই ওম। ওমকে প্রণব মন্ত্র বলা হয়।  হিন্দু ধর্মের সর্বজনগ্রাহ্য় মন্ত্র-ই ওম।  ওম-ই আদি শব্দ। সমস্ত মন্ত্রের বীজ আছে  এই ওম শব্দে।  অ-উ-ম এই তিন অক্ষরের মিলনেই ওম উচ্চারণ হয়। "অ" শব্দে ব্রহ্মা অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা ; "উ" অর্থাৎ বিষ্ণু বা পালনকর্তা ; আর "ম" বলতে বোঝায় মহেশ্বর - লয় কর্তা - যিনি সর্বদাই মঙ্গলময়। ওম শব্দটি যে কোনো বীজ মন্ত্রের আদি ও অন্তে ব্যবহৃত হয়। এটি সমস্ত মন্ত্রের বাঁধন। একটা জিনিস লক্ষ করুন, ওং এর বানান লিখবার সময় কেউ "ও" এর পরে অনুস্বার  অথবা   চন্দ্রবিন্দু  ব্যবহার করেন, কেউ কেউ দুটোই ব্যবহার করেন। এই চন্দ্র বিন্দুর অর্থ   দুঃখ নাশক, অনুস্বার এর অর্থ দুঃখ হরক ও সুখ বৃদ্ধিকারক। 
হৌং - ( হ্+ঔ+ং)= হৌং।  হ্ অর্থাৎ শিব। ঔ অর্থাৎ সদাশিব।  ং দুঃখ হরণ  ও সুখদায়ক। সর্বদা মঙ্গলকারী শিব আমার দুঃখ হরণ  করুন ও সুখ দায়ক হউন।  
জূং - জূ = সরস্বতী ; ং =  দুঃখ হরণ ও সুখদায়ক। হে বাগদেবী সরস্বতী আমার অজ্ঞানতা দূর করুন। "জু" কথাটার আর একটি অর্থ হচ্ছে, আকাশ অর্থাৎ ঈশ্বরের ব্যাপকত্ত্ব।  
স্বঃ - স্বাঃ-স্বাহা -  শব্দে  ঈশ্বরের ব্যাপ্তির কথা বলা হচ্ছে। ইনি সর্বত্র স্বমহিমায় স্বেছায় প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বব্রহ্মান্ড ব্যাপী সমস্ত কিছুতে এনার  অবস্থিতি।  নিজের কোনো রূপ না থাকলেও সমস্ত পার্থিব বস্তূতে ইনি প্রকট।  এই ভাবেই তিনি নিজের সাথে ক্রীড়ারত।  নিজের সৃষ্টিতে অবস্থান করছেন, অবগাহন করছেন,শাসন করছেন,সুস্থ ও সঠিক কার্যে রত থাকছেন।  
ভূর্ভুবঃ স্বঃ(ভূঃ-ভূবঃ-স্বঃ) -
ভূঃ :কথার মানে স্থিতি। ঈশ্বর স্বস্থিত।  সমস্ত কারণের কারণ এই ঈশ্বর।  এটি স্বাধীন, শ্বাশত , অপ্রাকৃত, অপরিবর্তনীয়। সীমাহীন - না আছে শুরু, না শেষ। সমস্ত তত্ত্বে এর অবস্থিতি, চিরকালীন অবস্থিতি, বিরামহীন গমন। 
ভূ -এর অন্য অর্থ পৃথিবী।  যে উৎপন্ন হয়েছিল বা যাতে উৎপন্ন হয়।
যেখানে আমরা জন্ম গ্রহণ করেছি। বেঁচে বর্তে আছি। এই পৃথিবীই আমাদের বেঁচে থাকার রসদ যোগাচ্ছে।  তার পরম কৃপা যা আমাদের উপর প্রতিনিয়ত বর্ষিত হচ্ছে, আমাদেরকে রক্ষা করছেন  , জীবন দান করছেন । 
ভূ - আর এক অর্থে প্রাণ অথবা জীবন। স্থুল  অর্থে নিঃস্বাস-প্রশ্বাস।
ভূবঃ- বলতে বোঝায় চেতনা। ঈশ্বরের চেতনা। চেতন স্বত্বা। এই চেতন সত্ত্বাই   বিশ্বভুবন শাসন করছেন ।  এই চেতন শক্তির দ্বারাই ঈশ্বর বিশ্বভুবনের সঙ্গে যোগসূত্র রক্ষা করছেন ।  এই শক্তি আকাশ, বিশ্বচরাচর থেকেও বৃহৎ ব্যাপক। এই শক্তি  বন্ধনহীন, অসীম। এই চেতনা সমস্ত যন্ত্রণার অবসানকারী। একেই বলে 'অপান'।
স্বঃ - স্বাঃ-স্বাহা একে মানে আগেই বলা হয়েছে।    
এর পরে মূল   মন্ত্র যা আসলে আমরা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র নামে জানি সেটা হচ্ছে :
এ্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টি বর্ধনম। অর্থাৎ মূল মন্ত্রের প্রথম লাইন।  
ত্র্যম্বকং : ত্রি- অম্বকম অর্থাৎ যিনি তিন নেত্রের অধিকারী। স্বয়ং শিব, এখানে রুদ্রদেব । 
অম্বক কথাটার আর একটা অর্থ পিতা, তো ত্রিলোকের যিনি পিতা তিনি এ্যম্বক। অম্বা কথাটার অর্থ  মাতা। তো যার তিনজন মা তিনি এ্যম্বক।  এই প্রসঙ্গে পুরানে একটা কাহিনী আছে, পৌষ্যরাজা অর্থাৎ দক্ষের পৌত্র (নাতি) . দক্ষের পুত্র পূষা , পুষার পুত্র পৌষ্য। পৌষ্যের কোনো সন্তান ছিল না। ছিল তিন ভাৰ্য্যা। পুত্র কামনায় ব্রহ্মার শরণাগত হন তাঁরা । ব্রহ্মা তাদের একটা উজ্জ্বল সুবর্নবর্নের রসালো ফল প্রদান করেন। আর  শিবের আরাধনা করতে বলেন। তো তাঁরা শিব আরাধনা করতে থাকেন। শিব সন্তুষ্ট হয়ে ওই ফলের মধ্যে প্রবেশ করেন। আর ওই ফল তিন ভাগ করে ভক্ষণ করেন পৌষ্যের তিন ভাৰ্য্যা। ফলে তিন ভাৰ্য্যা তিনটি অঙ্গ প্রসব করেন, একজন শশীকলাযুক্ত শিরোদেশ, অন্যজন  মধ্য-অঙ্গ  ও অপরজন  নিম্ন-অঙ্গ।  এই তিনটি অঙ্গ একত্রিত হয়ে  স্বয়ং শিব পূষ্যার পুত্র হন। এইভাবে তিন খন্ডে  জন্মে ছিলেন বলে, শিব "ত্র্যম্বক" নামে খ্যাত হলেন।    
যজামহে : যার উদ্দেশ্যে যজ্ঞ করা হয়।  অর্থাৎ যিনি যজ্ঞ ফল প্রাপক।  যজ কথাটা অর্থ পূজা। যিনি পূজার যোগ্য তিনি যজামহে।  
সুগন্ধিং : সুগন্ধযুক্ত।  সুগন্ধ কথাটার  অর্থ হচ্ছে রুদ্র-জটা। আর সুগন্ধি কথাটার অর্থ  হচ্ছে, ধর্ম্মাত্মা বা পরম-আত্মা।
পুষ্টি : পোষণ করা। যিনি ষোড়শ মাতৃকা। যার ইচ্ছায় ভরন, পোষন, পালন ও বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়।  
বর্ধনম্  : বর্ধনকারী। বর্দ্ধন কথার মানে ছেদন করা বা বৃদ্ধি পাওয়া। যার দ্বারা ছেদন করা যায় তিনিই বর্ধনম। তো দেবাদিদেব আমাদের ভববন্ধন থেকে মুক্তি প্রদান করে থাকেন।  
উর্ব্বারুক্মিব : (উরু + রুক্ম + ইব )উরু অর্থাৎ বড়, রুক্ম অর্থাৎ স্বর্নযুক্ত, ইব অর্থাৎ  এই। বিশাল স্বর্ণাভ ঈশ্বর। 
উর্ব্বারু কথাটার আর একটা মানে হচ্ছে কাঁকুড় (ফুটি) ।  অর্থাৎ বড় সোনালী রঙের অর্থাৎ পাঁকা কাঁকুড় (ফুটি)। 
বন্ধনান্ : বাঁধন থেকে। এখানে বলা হচ্ছে, ভব-বন্ধন থেকে।   
মৃত্যুর্মুক্ষীয় :মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে, অর্থাৎ মৃত্যুর পর মোক্ষ হতে যেন বিযুক্ত না হই।  
মামৃতাত্ : অমৃতত্ত্বে।
তাহলে মুখ মন্ত্রটির যথাযথ সম্পূর্ণ ভাবার্থ   হচ্ছে :  হে ভগবন, পার্বতীবল্লভে, আপনি ত্রিনেত্র ও সুগন্ধিযুক্ত।  ভক্তদের আপনি পুষ্টি বর্ধন করেন। আমরা আপনার পূজা করি। কর্কটি (ফুটি) ফল পাকলে যেমন অনাসায়ে খসে পড়ে, তেমনি আমরা যেন মৃত্যুর পর সহজেই মুক্ত হই, মোক্ষ হতে যেন বিযুক্ত না হই।
মন্ত্রের উপযোগিতা : কিছুদিন আগে একটা বাংলা দৈনিকে, পড়ছিলাম, দিল্লির একটা বিখ্যাত সরকারি মেডিকেল কলেজে, এই মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র  নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। সেখানে মুমূর্ষু রোগীকে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র পাঠ করে শোনানো হচ্ছে। এর ফলে নাকি মৃত্যু্-পথযাত্রী জীবনপথে ফিরে আসবে। এই সব মহাপন্ডিতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই, এঁরা মন্ত্রের যথাযথ উদ্দেশ্য ও নির্ণায়ক শক্তি সম্পর্কে সম্যকরূপে সচেতন নন। এতে করে মন্ত্রের প্রতি আমাদের বিশ্বাস হারাবো।  
একটা কথা আছে, যে ভূতে বিশ্বাস করে, তাকেই ভূতে ধরে। আপনার যদি মন্ত্রে বিশ্বাস থাকে তবেই আপনার মন্ত্রে কাজ হতে পারে,  নতুবা নয়। আমরা অনেকেই লক্ষ্য করেছি, মৃতব্যক্তির বুকের উপরে, একখানা গীতা রেখে দেওয়া হয়। মৃত্যু-পথ যাত্রীর কানে হরে-কৃষ্ণ মন্ত্র শোনানো হয়। এতে নাকি তাদের বিষ্ণুলোক প্রাপ্তি হবে। এদের উচিত গীতার বাক্যকে জীবন থাকতে উপলব্ধি করা এবং নিজের জীবনে গীতার বাণী মেনে চলা। 
আমার এক পরিচিত প্রতিবেশী ফাৰ্মাসিস্ট, সত্তরের দশকে সাপে-কাটা রুগীর চিকিৎসা করতেন। অনেক রুগী  সেখান থেকে ভালো হয়েছেন, এটা আমার চোখে দেখা । বাড়িতে ১০/১২টা বেড পেতে দিয়েছিলেন, রুগীরদের জন্য। তো আমি তাকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, দাদা ডাক্তাররা   বলছেন, সাপেকাটা রুগীকে অবশ্য়ই যথাশীঘ্র হাসপাতালে নিয়ে যেতে। তো আপনি এদের চিকিৎসা করছেন। কিভাবেই বা এদের ভালো করছেন ? তো তিনি বলেছিলেন, দেখো বেশিরভাগ সাপ বিষাক্ত নয়। সাপে কাটা রুগীর গায়ে সাপের কাটা*-দাগ দেখে আমি বুঝতে পারি, বিষাক্ত সাপ  কেটেছে নাকি, নির্বিষ সাপ  কামড়েছে। বিষাক্ত সাপ  হলে সেই রুগীকে আমি রাখি না।  দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলি। তাই আমার কাছে যারা চিকিৎসা পায়, তাদের মনের জোর বাড়িয়ে দেওয়াই আমার কাজ। অনেক মানুষ ভয়ে মারা যায়। আমি তাদের নির্ভয় দেই , সামান্য ঔষধ দেই, যা না দিলেও চলে।    আর আমার কাজ মনের জোর বাড়িয়ে দেওয়া মাত্র। তো সেই সময়, বিজ্ঞান-মনস্ক কিছু মানুষ কলকাতা থেকে গিয়ে তাকে বিষাক্ত সাপে কাটা মানুষকে বাঁচাবার জন্য, চ্যালেঞ্জ করে। এবং শেষমেশ তিনি তার ব্যবসা গুটিয়ে বাংলাদেশে চলে যান।      

আধ্যাত্মিক জগতের দ্বার উন্মোচন করতে পারে মন্ত্র। বলা হয়ে থাকে, এ মন্ত্র জপে মানসিক, আমাদের আবেগের, ও শারীরিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য খুবই উপকারী। এমনকি দীর্ঘ-জীবন, অমরত্ত্ব, এমনকি মোক্ষ দান করতে পারে এই মন্ত্র। পুরান মতে, এই মন্ত্র মুনি-ঋষিরা ব্যবহার করতেন। দক্ষ-কন্যা সতী প্রজাপতি দক্ষের অভিশাপে যখন চন্দ্রদেব অর্থাৎ তার স্বামী পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়েছিলেন, তখন এই মন্ত্র জপ করায় চন্দ্রদেব শিবের মস্তকে স্থান পেয়েছিলেন। অকাল-মৃত্যুর হাত থেকে এই মন্ত্র জীবকে রক্ষা করতে পারে। এই মন্ত্র জপের সময়  বিভিন্ন বিভূতি আমাদের শরীরের উপরে ভর করে, যা যজ্ঞ বা হোম করবার ফলে হয়ে থাকে। এই মন্ত্র আমাদের চেতনশক্তির সঙ্গে মিলন ঘটিয়ে দেয়।  প্রকৃতির প্রভাব থেকে শরীরকে রক্ষা করে। বার বার এই মন্ত্রের জপ আমাদের একাগ্রতা বৃদ্ধি করে, ফলে যেকোনো বিষয় জ্ঞান সহজেই লাভ করা সম্ভব হয়। আরোগ্য লাভ, জীবনীশক্তি পুনরুদ্ধারে ধাত্রী-মায়ের মতো কাজ করে এই মন্ত্র।
তাই বলি এই মন্ত্র জপ্ করে, মরা মানুষ জ্যান্ত হয়ে  যাবে, এমন ভাবার কোনো মানে নেই । খেয়াল করুন, এই মন্ত্র জপ করে চন্দ্রদেব মহাদেবের মস্তকে স্থান পেয়েছিলেন। অর্থাৎ শিব লোক প্রাপ্ত হয়েছেন। আমরা যা কিছু ভাবনা চিন্তা করি, সেটাই আমাদের মানস শরীর গঠনের উপাদান। অর্থাৎ আমরা যদি ত্র্যম্বকের বা ত্রিকালেশ্বরের   অর্থাৎ মঙ্গলময়ের চিন্তা করি, আর ভব বন্ধন থেকে মুক্ত হবার জন্য প্রার্থনা করি, অমৃতের পথে যাবার জন্য লালায়িত হই, তবে আমরা তাই প্রাপ্ত  হবো। স্থুল শরীর ত্যাগের পরে আমরা সবাই মানস শরীরে অবস্থান করি। মানস শরীর ত্যাগের পরে আমরা বিজ্ঞানময় শরীরে অবস্থান করি, অর্থাৎ আমরা স্থুল শরীরে থেকে যে চিন্তা করেছিলাম, সেই মতো মানস শরীর  প্রাপ্ত হবো।  আবার যে জ্ঞান সংগ্রহ করেছিলাম,  সেইমতো আমরা বিজ্ঞানময় শরীর প্রাপ্ত হবো। এই মন্ত্রের সঠিক অর্থ জানা, ও সেইমতো মনন করা, যেকোনো মন্ত্র জপের বা পাঠের উদ্দেশ্য। আর এই উদ্দেশ্য যদি আমরা সঠিক ভাবে বুঝতে পারি এবং আত্মস্থ করতে পারি তবে আমরা অবশ্য়ই অমরত্ত্ব লাভ করতে পারবো। মন্ত্র কোনো ভেলকি নয়। মন্ত্র মনকে ত্রাণ  করে। যাঁরা এই মন্ত্রের মধ্যে সঠিক ভাবে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পেরেছেন, তারা অবশ্য়ই এই উপলব্ধি পেয়ে থাকবেন।    


ওম নমঃ ভগবতে রুদ্রায়। 

ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ ।।  

No comments:

Post a Comment