অভেদ জ্ঞান
শিশু সবে বসতে শিখেছে। মায়ের অলক্ষে পায়খানা প্রস্রাব করে, দুহাত দিয়ে চটকাচ্ছে। মাঝে মধ্যে মুখেও দিচ্ছে। হঠাৎ মায়ের নজর পড়লো, শিশুর দিকে। হা-হা করে ছুটে এলেন। শিশুকে দুই হাতে তুলে বাথরুমে নিয়ে গেলেন, আর মুখে বলতে লাগলেন, একটু ভেদ জ্ঞান নেই। পায়খানা-প্রস্রাব কেউ মুখে দেয় ?
ত্রৈলঙ্গ স্বামীকে সাহেব তার খাবার অর্থাৎ গোস্ত খাবার জন্য, আহবান করলো। স্বামীজী বললেন, খেতে পারি, কিন্তু তোমাকেও তাহলে আমার খাবার খেতে হবে। বলে, মলদ্বারে হাত দিয়ে, খানিকটা মল নিয়ে খেতে লাগলেন। সাহেব ঘৃনায়, চোখ-মুখে রুমাল চাপা দিলেন। মনে মনে বলতে লাগলেন, সালা সাধুর কোনো ভেদ জ্ঞান নেই।
শিশু ও সাধুর মধ্যে কোনো ভেদ জ্ঞান থাকে না। জন্মের আগে আমাদের কোনো ভেদ জ্ঞান ছিল না। আবার জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ভেদ জ্ঞান রপ্ত করতে পারি না। আর ভেদ জ্ঞানের যখন বৃদ্ধি পায়, সেদিন থেকেই আমাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হতে থাকে। জগতের বৈষ্যমের কারন এই ভেদজ্ঞান। প্রায় এখন কথা হচ্ছে এই ভেদ আর অভেদ ব্যাপারটা কি ? দেখুন যার সুখ নেই দুঃখও নেই, ধর্ম্ম নেই অধর্ম্ম নেই, যার বিশ্বাস নেই অবিশ্বাস নেই, যিনি দয়াশীল নয় আবার নির্দয়ও নয়, যার কাছে শুভ-অশুভ বলে কিছু নেই, তাকে আমরা নির্জীব-অচেতন পদার্থ বলে থাকি । কিন্তু অধ্যাত্ম সাধন জগতে এই অভেদ জ্ঞান অর্জন করতে হয়। এই অভেদ জ্ঞান ব্যাপারটা কি ? কিভাবে এই জ্ঞান সংগ্রহ করতে হয়, আজ সেই সম্পর্কে আমরা শুনবো।
সোনা দিয়ে অলংকার তৈরী হলো। কারুর নাম, দুল, কারুর নাম মালা, কারুর নাম চুড়ি। আবার এই দুলের মধ্যে অনেক নামের দুল, মালার মধ্যেও অনেক নামের মালা, চুড়ির মধ্যেও অনেক ধরনের চুড়ি, যার প্রত্যেকটির নাম আলাদা আলাদা। এই চুড়ি-মালা-দুল এরা সবাই নিজেদেরকে আলাদা আলাদা ভাবতে লাগলো । একদিক থেকে দেখতে গেলে, এরা সবাই আলাদা আলাদা। আবার যদি এইসব দুল-মালা-চুড়ির উৎপাদনী শক্তি বা উৎপাদনী পদার্থের কথা চিন্তা করি, তবে বুঝতে পারবো এরা সবাই একই বস্তু সেই সোনার সমাহার মাত্র। শিল্পী তার নিজের ইচ্ছেমতো তৈরী করেছেন মাত্র। শিল্পী তার নিজের ইচ্ছে মতো আকার দিয়েছেন মাত্র।
অধ্যাত্ম জগতেও, বলা হয়ে থাকে, আমরা সবাই, তা সে চেতন পদার্থ বলুন, আর অচেতন পদার্থ বলুন, সবই একই শক্তির সমাহার, বা একই শক্তি থেকে উদ্ভূত। শুধু পরিমানের তারতম্য মাত্র।
এখন কথা হচ্ছে অভেদ জ্ঞান কাকে বলে। কারুরু কারুর ধারণা হচ্ছে, অভেদ জ্ঞান হচ্ছে ভেদ জ্ঞানের অভাব। ব্যাপারটা আদৌ তা নয়। দেখুন আমাদের সবার মধ্যে বহু গুনের সমাহার। এর মধ্যে কিছু গুন্ আছে, যা পরিবর্তনশীল অর্থাৎ আজ যা আমার কাছে সত্য বলে মনে হচ্ছে, কাল আমার সেই বিষয়ে জ্ঞানের গভীরতা হেতু, জ্ঞানের পরিবর্তন হচ্ছে। একদিন যাকে ঘৃণা করেছি, তাচ্ছিল্য করেছি, তার সঙ্গে যখন আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরী হলো, তখন তাকে আপনজন বলে ভাবতে লাগলাম। এতদিন যাকে আমি দূর দূর করেছি, সে যখন আমাকে অসুস্থতার সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলো, সেবাযত্ন করে আমাকে সুষ্ঠ করে তুললো, তখন তার সম্পর্কে আমার ধর্ণা পাল্টে গেলো। অর্থাৎ কিছু জ্ঞান আছে, যা পরিবর্তনশীল।
কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেক্ জ্ঞান আছে, যার কোনো পরিবর্তন হয় না, যে জ্ঞানের কোনো পরিবর্ধনও হয় না। এইসব জ্ঞানের কোনো লয় নেই। কিন্তু সেই জ্ঞান আমাদের মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে বাধ্য হয়, কারন এইসময় আমরা লয়শীল জ্ঞানের রাজত্ত্বে বিচরণ করে থাকি। কিন্তু আমরা যখন সাধন জগতে উৎকর্ষতা অর্জন করি, তখন আমাদের মধ্যে লয়শীল ও অলয়শীল এই দুই জ্ঞানের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য সংগঠিত হয়, এই অবস্থাতেই আমাদের অভেদ জ্ঞান হয়। এই অভেদজ্ঞানের বৃদ্ধিতে আমাদের মধ্যে জ্ঞান-সরলতা-বিশ্বাস-একাগ্রতা ইত্যাদির মধ্যে একটা সাদৃশ্য দেখা দেয়।
স্বামীজী বলছেন, অভেদ জ্ঞান তিন প্রকার। উত্তমর্ণ অভেদজ্ঞান - অন্নুনত আত্মা যখন উন্নত বা উন্নতগামী কিংবা সাধনহীন আত্মাকে যখন অভেদজ্ঞান করেন, তখন তাকে উত্তমর্ণ অভেদজ্ঞান বলে। আবার উন্নত বা উন্নতমার্গে ধাবিত আত্মা যখন অনুন্নত আত্মাকে অথবা উন্ন্তিমার্গে ধাবিত আত্মাকে যখন অভেদজ্ঞান করেন, তখন তাকে অধমর্ণ অভেদজ্ঞান বলে। সবশেষে উন্নত আত্মা, অনুন্নত আত্মা, বা উন্ন্তিমার্গে ধাবিত আত্মা যখন নিজেদেরকে অভেদজ্ঞান করেন, তখন তাকে সমর্ণ অভেদজ্ঞান বলে।
আসলে এই প্রকারভেদ সাধন জগতের সাধকের অবস্থা সূচিত করে থাকে।
অর্থাৎ যিনি যে অবস্থায় আছেন, সেই অবস্থার সমস্ত আত্মাকে যখন অভেদ জ্ঞান করা হয়, তাকে একধরনের অভেদজ্ঞান বলা হয়। যেমন ধরুন আপনি মানুষ - তো সমস্ত মানুষকেই আপনি এক ভাবেন। আবার কেউ সমস্ত জীবজগৎকেই সমজ্ঞান করেন, এও একধরনের অভেদ জ্ঞান। আবার কেউ সমস্ত জীব জগত তো বটেই, সমস্ত চেতন-অচেতন পদার্থ অর্থাৎ পাহাড় নদী, জঙ্গল, মায় জগতের সমস্ত পদার্থকেই একই উৎসশক্তির প্রকাশ মাত্র মনে করেন, একেই সর্বোচ্চ অভেদ জ্ঞান বলা হয়ে থাকে।
আবার ধরুন সমস্ত দেবতাগণ তা সে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, বা মহেশ্বর, আসলে সবাই একই শক্তি। এই জ্ঞান আমাদের নেই। যারা এই জ্ঞানের অধিকারী তাদের মধ্যে, বৈষ্ণব, শাক্ত, শৈব এর মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না। কিন্তু অনুন্নত সাধকগণ যার যার আরাধ্যকেই আঁকড়ে ধরে থাকেন, এবং এদের মধ্যে পার্থক্য সূচিত করে থাকেন। মানুষ তা ব্রাহ্মণ বলুন শূদ্র বলুন সবাই মানব সন্তান। এই জ্ঞান আমাদের না থাকার জন্য, আমরা মানুষে -মানুষে পার্থক্য দেখে থাকি। আসলে দুর্যোধন আর যুধিষ্ঠিরের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সবাই একই শক্তির সৃষ্টি। অন্তিমে সবাই একই শক্তির সাথে মিলিত হন।
জীব ভূমিষ্ট হবার আগে তাদের কোনো ভেদজ্ঞান থাকে না। ভূমিষ্ট হবার পরেই আমাদের মধ্যে ভেদজ্ঞানের সঞ্চার ঘটে থাকে। আবার এই ভেদবুদ্ধি আমরা সাধনা দ্বারা বিলোপ সাধন করতে পারি। অতএব বলা যেতে পারে, একটা সময় আমাদের মধ্যে কোনো ভেদ জ্ঞান ছিল না, জন্ম গ্রহণের পরেই এই ভেদজ্ঞানের উৎপত্তি হয়েছে, আবার সাধনার সাথে সাথে বা অন্তিমে আমাদের অভেদ জ্ঞানের বিকাশ হবে। এখন কথা হচ্ছে কিভাবে আমরা অভেদজ্ঞান উৎপন্ন করবো ?
সাধারণ ভাবে প্রেমের শক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অভেদজ্ঞান উৎপন্ন হয়ে থাকে। এছাড়া কোনো বিষয়ের উপরে আমাদের একাগ্রতা, ঈশ্বর সন্মন্ধে জ্ঞান এবং সৃষ্টি সংক্রান্ত জ্ঞান যখন আমাদের বৃদ্ধি পায় তখন ভেদজ্ঞান লোপ পেতে থাকে।
অভেদ জ্ঞান সাধনার প্রথম সোপান হচ্ছে একাগ্রতা। একাগ্রতা যখন গভীর হয়, তখন জন্ম নেয় ধ্যান। এই ধ্যানের শক্তি যখন বৃদ্ধি পায়, তখন পরমার্থ সম্পর্কে একটা ধারণা জন্মায়। আর তা হলো, ইনি অনাদি-অনন্ত-অসীম-অচিন্ত। এই শক্তিই অনন্ত রূপের মধ্যে অধিষ্ঠান করছেন। আবার এই শক্তির মধ্যেই অনন্ত রূপের অধিষ্ঠান। সমস্ত গুনের অধীশ্বরই পরম-ঈশ্বর। ইনিই সৃষ্টি কর্তা, ইনিই সৃষ্টির পালনকর্তা, আবার ইনিই সমস্ত সৃষ্টির সংহারকর্তা। আমাদের চোখের সামনে যা কিছু দেখছি, তা সেই সর্বশক্তিমানের গুনবিশেষের অংশ। সূক্ষ্ম জগৎ যেমন তারই সাক্ষাৎ অংশ তেমনি স্থূল জগৎ তারই অসীম নিরাকারত্ব গুনের অংশ। ধ্যান অবস্থায় তদ্গত চিত্ত হয়ে, বারবার এই অনুশীলন করতে হয়, তাহলে সাধকের মধ্যে অভেদজ্ঞান জন্মায়।
এছাড়া, অভেদ জ্ঞান সাধনের আরো অনেক অনেক পদ্ধতি আছে, তবে সেগুলো গুরুসান্নিধ্যে ফলপ্রদ হয়ে থাকে। যদি কখনো সময়-সুযোগ হয়, তবে সে সম্পর্কে আমরা পরবর্তীকালে শুনবো।
ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ। হরি ওম।
সৎগুরুর খোঁজে - ভাগবতকথা
আমরা অনেকেই গুরুদেবের খোঁজ করছি। কথায় বলে গুরু মেলে লাখে লাখে শিষ্য মেলে এক। তো লাখে লাখে গুরু থাকা সত্ত্বেও আমরা গুরুর খোঁজ পাচ্ছি না। এ বড়ো আশ্চর্য্যের কথা। তাহলে কি আমরা উপযুক্ত শিষ্য নোই ? সত্যিই তাই, আমরা গুরুর সন্ধানে বেড়িয়েছি বটে, তবে যে গুরুর সন্ধান করছি, তাকে তো আমরা চিনিনা। বলা হয়ে থাকে গুরু তিনিই হতে পারেন, যার ব্রহ্মজ্ঞান হয়েছে। তো কার ব্রহ্মজ্ঞান হয়েছে, আর কার ব্রহ্মজ্ঞান হয়নি, তা আমরা বুঝবার মতো ক্ষমতা অর্জন করতে পারিনি। আমরা যদি সেই ক্ষমতা অর্জন করতে পারতাম, তবে শিষ্য নয়, আমিই গুরুসম হয়ে যেতে পারতাম।
একলব্য গুরু থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন। নিজের গুরু হিসেবে, আচার্য্য দ্রোণের একটা মাটির মূর্তি গড়ে, তার কাছ থেকে অস্ত্রবিদ্যা শিক্ষা লাভ করেছিলেন। দ্রোণাচার্য তা জানতেনই না।
জবালা পুত্র সত্যকাম ব্রহ্মবিদ্যা লাভ করেছিলেন, বায়ু, অগ্নি, সূর্য, ও প্রাণশক্তির কাছ থেকে। প্রাণশক্তি, শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি, ও মনঃশক্তি - এই চারটি কলায় ব্রহ্মের চারপাদ পূর্ন, একথা তিনি এই বায়ু-অগ্নি-সূর্য-প্রাণের মাধ্যমে জানতে পেরেছিলেন। । ছান্দোগ্য উপনিষদ (চতুর্থ অধ্যায়)
আসলে কি জানেন, আমরা যার কাছাকাছি আছি, যারা আমাদেরকে ঘিরে রেখেছে, যারা আমাদেরকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করছে, তাদের দিকে যদি আমরা একটু ধ্যান নেই, তবে আমরা গুরুসান্নিধ্যের উপকরণ পেয়ে যেতে পারি। আমাদের চারিদিকে শিক্ষাগুরু অবস্থান করছেন, কিন্তু তাদের প্রতি আমরা মনোযোগ দেই না, তাই আমরা গুরুদেবকে খুঁজে পাই না।
শ্রীকৃষ্ণ ১২৫ বছর বয়সে, সংকল্প করেছেন, তিনি এখন মৃত্যুপুরী ছেড়ে স্বধামে গমন করবেন। এখন থেকে মাত্র সাত দিনের মধ্যেই ইহলোক ত্যাগ করবেন। তো উদ্ধব এই কথা শুনে অতল সাগরে পড়লেন। ভেবেছিলেন, সংসার পথে শ্রীকৃষ্ণকে অনুকরণ করে, কৃষ্ণভক্তদের সঙ্গে হাসি-তামাশা করে, শ্রীকৃষ্ণের গুনকীর্তন করে, এই দুস্তর সংসার সাগর পার হয়ে যাবেন । এখন শ্রীকৃষ্ণ চলে গেলে, তার কি হবে। শ্রীকৃষ্ণ তো তার শুধু জ্ঞাতিভাই বা সখা নয়, শ্রীকৃষ্ণ আসলে আশ্রয়দাতা, সংসারের সমস্ত অনিষ্ট থেকে রক্ষা করে থাকেন তিনি। তো শ্রীকৃষ্ণ বললেন, এক কাজ করো, তুমি সর্বস্ব ত্যাগ করো, আত্মীয়স্বজনদের প্রতি স্নেহ-মমতা রোহিত হও, আর আমাতে মন স্থির করে সমদর্শী হয়ে পৃথিবী পর্যটন করো।
ত্বন্তু সর্বং পরিত্যজ্য স্নেহং স্বজনবন্ধুষু ।
ময্যাবেশ্য মনঃ সম্যক্ সমদৃগ বিচরস্ব গাম্।। ১১-৭-৬ - ভাগবত-কথা
তো উদ্ধব বলছেন, দেখুন, আমার মতো বিষয়াসক্ত অভক্তের পক্ষে এই উপদেশ পালন করা সম্ভব নয়। সংসার বাসনা ত্যাগের সহজ উপায় বলুন।
আপনি কি জানেন, গাধা কখনো, মালিকের নিৰ্দেশভিন্ন পথ খুঁজে পায় না। আবার মালিক যদি গাধার পিঠে চাপে, তবে গাধা ধীরে ধীরে রাস্তার ডানদিকের দেওয়াল ঘেঁসে বা গর্ত ঘেঁষে চলতে থাকবে। যাতে মালিকের পা দেওয়ালে ঘষা লেগে ছড়ে যায়, অথবা মালিক গর্তের মধ্যে পড়ে যাবার ভয়ে, পিঠ থেকে নেবে পড়ে। লোকে বলে গাধার বুদ্ধি নেই, কিন্তু গাধার বদমায়েশি বুদ্ধি ষোলো আনাই আছে। যাই হোক,
শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, দেখো জগতে বহু প্রকার জীব সৃষ্টি হয়েছে, এর মধ্যে এই মনুষ্য দেহই আমার সবচেয়ে প্রিয়। কারন এই মানুষই একমাত্র ঈশ্বরের সন্ধান করে থাকে। অন্যরা-তো ঈশ্বর সম্পর্কে নির্লিপ্ত। তো তোমাকে একটা গল্প বলি।
ধর্ম্মজ্ঞ যদু একদিন এক মহাত্মা অবধূতকে দেখে বললেন, আপনি মহাশয় বিদ্বান, বুদ্ধিমান কিন্তু নিস্কর্মা। আপনার বয়স হলেও আপনি বালকের মতো আচরণ করেন। আপনি মান অপমান বোধ শূন্য। আপনি সমর্থ, মেধাবী, কর্ম্মদক্ষ, সুন্দর এমনকি আপনি মধুরভাষী। যেসব গুন্ থাকলে একজন মানুষ সংসারে সাফল্য লাভ করতে পারে, তার সবই আপনার মধ্যে আছে। এতসব গুন্ থাকা সত্ত্বেও আপনি কেমন যেন জড়বৎ-উন্মাদ-পিশাচের ন্যায় ব্যবহার করেন। আবার মানুষ যেখানে কামনা-বাসনা-লোভ-লালসার আগুনে জ্বলছে, সেখানে আপনি নির্বিকার অথচ সদানন্দ রূপে অবস্থান করছেন। আপনার এই আচরণের রহস্যঃ কি ? এই শিক্ষা আপনি কোথা থেকে পেলেন ?
মহাত্মা ব্রহ্মজ্ঞ অবধূত এই কথা শুনে, বললেন দেখো আমি সবসময় গুরুসান্নিধ্যে আছি। গুরুর উপদেশে, গুরুজ্ঞানে, আমি মুক্ত আছি, আর পৃথিবী পর্যটন করে বেড়াচ্ছি। পৃথিবী, বায়ু,আকাশ, জল, অগ্নি, চন্দ্র, সূর্য, সমুদ্র এরা সবাই আমার গুরু।
মহাত্মা যদু, যিনি যদু বংশের প্রতিষ্ঠাতা বললেন, এরা তো কেউ দেহধারী নয়, আর এরা কেউ কথাও বলতে পারে না। এরা কিভাবে আপনাকে জ্ঞান দান করে থাকে ?
অবধূত বললেন, দেহধারী যদি বলো, তেমন অনেক গুরুও আমার আছে। যেমন ধরো , কপোত, অজগর, পতঙ্গ, মৌমাছি, হাতি, ব্যাধ, হরিণ, মাছ, এমনকি দেহপসারিনী, শ্বেত চিল, বালক, কুমারী, বান-নির্মাতা, সাপ, মাকড়শা, এবং কাঁচপোকা, এরা সবাই আমার গুরু।
পৃথিবী : পৃথিবীর কাছ থেকে আমি ক্ষমবিদ্যা লাভ করেছি। দেখো পৃথিবীকে মানুষ নানানভাবে উৎপীড়ন করে থাকে, কিন্তু পৃথিবী সবাইকে ক্ষমা করে দেয়। আমরা যে কষ্ট পাই , তা আমাদের প্রারব্ধ। তাই কেউ আমাকে কষ্ট দিলে, আমি বুঝি এটা আমার প্রারব্ধ, তাই আমি সবাইকে ক্ষমা করে দেই।
বায়ু : বায়ুর কাছ থেকে নির্লিপ্ত থাকবার শিক্ষা লাভ করেছি। বায়ু সর্বত্র বয়ে বেড়াচ্ছে। সুগন্ধ, দুর্গন্ধ সব বায়ু সহ্য করে থাকে। বনে-জঙ্গলে এমনকি লোকালয়ে আগুন লেগে গেলেও, বায়ু ক্ষুব্ধ হয় না। আমিও শীত-গ্রীষ্ম, সুখ-দুঃখ বিষয়-অবিষয় যার সংস্পর্শেই আমি আসি না কেন, আমি বায়ুর মতো নির্লিপ্ত থাকি।
আকাশ : পরমাত্মার ব্যাপকত্ত্ব, পরমাত্মা সর্বজীবে স্থিত, অথচ নির্বিকার এই শিক্ষা আমি আকাশের কাছ থেকে পেয়েছি। আকাশ সর্বব্যাপী, আকাশ অচ্ছেদ্য, সীমাহীন, আকাশ অসঙ্গ। ঠিক তেমনি পরমাত্মাও সমস্ত জীবের মধ্যে ব্যাপ্ত হয়েও সীমাবদ্ধ নয়। অন্যদিকে ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ দেহকে আশ্রয় করে থাকলেও, দেহের ধর্ম্মে তিনি উদাসীন, নির্লিপ্ত।
জল : জলের কাছ থেকে আমি নির্মলতা, স্নিদ্ধতা ও মধুরতা জ্ঞানপ্রাপ্ত হয়েছি। জলের স্বভাব নির্মলতা, স্নিগ্ধতা মধুরতা। এই গুনগুলোও ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষকে আশ্রয় করে থাকে।
অগ্নি : অগ্নির কাছে আমি সর্বভুখ হতে শিখেছি। আমি উর্দ্ধগতি সম্পন্ন হতে শিখেছি। অগ্নি সব কিছুকেই গ্রহণ করে থাকে। তা সে ভালো-মন্দ যাই হোক না কেন। অগ্নি সবকিছুকেই উর্দ্ধ বা ঈশ্বর অভিমুখী করে দেয়। অগ্নি মূলভূতকে স্বধামে প্রেরণ করে থাকে। তাই ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষে, যা কিছু প্রদত্ত হয়, সব কিছু তিনি গ্রহণ করেন, কিন্তু নিজে কখনো মলিনতা প্রাপ্ত হন না।
চন্দ্র : কালের পরিবর্তন হয়, আত্মার পরিবর্তন হয় না। এই শিক্ষা আমি চাঁদের কাছ থেকে পেয়েছি। দেখো, চাঁদের কলাসূহের হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে থাকে, কিন্তু তাতে চাঁদের কোনো পরিবর্তন হয় না। তেমনি, কালের প্রবাহে, জীবের জন্ম -অস্তিত্ত্ব-বৃদ্ধি হয় আবার পরিণামে মৃত্যু বা নাশ প্রাপ্ত হয়। এই যে পরিবর্তন এতেকরে দেহরূপ আত্মার কোনো পরিবর্তন হয় না।
সূর্য : আসক্তিবিহীন বিষয় ভোগ ও বিশুদ্ধ-রূপ বিষয় ত্যাগ, এই শিক্ষা আমি সূর্য্যের কাছ থেকে শিখেছি। সূর্য জলরাশিকে আকর্ষণ করে, শুদ্ধ করে, আবার যথাকালে বর্ষণরূপে জলকে ফিরিয়ে দেয়। জলের দ্বারা সে আসক্ত হয় না। তেমনি ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ অবস্থা বিশেষে বিষয়কে গ্রহণ করে থাকে, আবার যথাসময়ে বিষয় ত্যাগ করে থাকে। কিন্তু নিজে বিষয়ের প্রতি আসক্ত হয় না।
সমুদ্র : সমুদ্রের কাছ থেকে আমি প্রশান্ত হতে শিখেছি গম্ভীর হতে শিখেছি এবং সুখে দুঃখে সমভাবে অবস্থান করবার শিক্ষা পেয়েছি। সমুদ্রের গভীরে প্রশান্ত গম্ভীর। সমুদ্রের ভিতরে আছে মণিরত্ন। তেমনি ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষের স্বভাব শান্ত-গম্ভীর। ভিতরে আছে অনন্ত বিভূতি ঐশ্বর্য। বর্ষায় সমুদ্র বেলাভূমি অতিক্রম করে না, আবার গ্রীষ্মকালে সমুদ্র শুকিয়েও যায় না। জ্ঞানী ব্যক্তি সুখে উৎফুল্ল হন না, দুঃখে উদ্বিগ্ন হন না।
কপোত পাখি : কপোত পাখির কাছ থেকে আমি মায়াকে পরিত্যাগের শিক্ষা পেয়েছি। কপোত পাখি সন্তানের মায়ায় নিজেও ব্যাধের কবলে পড়ে মৃত্যু যন্ত্রনা ভোগ করে। সংসারের প্রতি আসক্তিই আমাদের পরিণামে দুঃখ ভোগ করায়। এই মনুষ্য দেহ মুক্তিলাভের সোপান, কিন্তু সেই মনুষ্য দেহকে যারা মুক্তির জন্য ব্যবহার না করে, সাংসারিক বিষয়ে আসক্ত করে ফেলে, তারা দুর্ভাগা, তারা ওই কপোত পাখির মতো মৃত্যু যন্ত্রনা ভোগ করে থাকে।
অজগর সাপ : অজগরের কাছ থেকে শরীর রক্ষার আজব কৌশল শিখেছি, যাকে বলে অজগর বৃত্তি । অজগর সাপ তার শরীর রক্ষার জন্য কোনো প্রয়াস করে না। সামনে যা আসে, বিনা চেষ্টায় যা আসে, তা সে ভালো হোক বা মন্দ হোক, সবই সে গ্রহণ করে। জ্ঞানী পুরুষ শারীরিক কর্ম্মে অক্ষম নয়, তথাপি বিনা চেষ্টায় যা কিছু সে পাবে, তাই খেয়ে সে জীবন ধারণ করবে।
পতঙ্গ : রূপের আসক্তি যে কি ভয়ঙ্কর তা আমি এই পতঙ্গের কাছ থেকে শিখেছি। পতঙ্গ আগুনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে, মৃত্যু বরণ করে থাকে। ইন্দ্রিয়ে আসক্ত ব্যক্তি রমণীর রুপের মোহে আকৃষ্ট হয়ে বিনাশপ্রাপ্ত হয়। জ্ঞানী ব্যক্তি তাই রূপের আসক্তি ত্যাগ করে থাকেন।
মৌমাছি : সঞ্চয়ের দিকে মনোযোগ না দেওয়া আমি মৌমাছির কাছ থেকে শিখেছি। জ্ঞানী ব্যক্তি কখনো সঞ্চয় করবেন না। মৌমাছি অতিরিক্ত মধু সংগ্রহ ক'রে, মৌচাকে রেখে দেয়, আর পরবর্তীতে কেউ না কেউ সেই মৌচাক ভেঙে মধু নিয়ে যায়। মৌমাছি যেমন ফুল থেকে একটু একটু মধু সংগ্রহ করে, তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তি গৃহস্থের কাছ থেকে মাধুকরী করে জীবন ধারণ করবে। কখনো সঞ্চয়ের প্রবৃত্তি যেন না থাকে।
হস্তী : নারীর প্রতি অনাসক্তি আমাকে জংলাহাতি শিখিয়েছে। বিশালদেহী হাতি যেমন কুনকি হস্তিনীর আকর্ষনে অর্থাৎ স্ত্রী হাতির ডাকে আকৃষ্ট হয়ে, মানুষের দাসত্ব করতে বাধ্য হয়, তেমনি, অজ্ঞানী ব্যক্তি স্ত্রীলোকের দ্বারা মোহিত হয়ে, ক্রীতদাসের জীবন বেছে নেয়। হাতি আমাকে এই শিক্ষা দিয়েছে, যে নারীর প্রতি আসক্তি মানুষের বন্ধন ও ব্যর্থ জীবনের কারন।
মধু আহরণকারী : অর্থসংগ্রহ শুধুমাত্র সঞ্চয়ের জন্য নয়, অর্থের যথার্থ ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ। এই শিক্ষা আমি মধু শিকারীর কাছ থেকে শিখেছি। কেবল অর্থ সঞ্চয় করবার জন্য, অর্থ উপার্জন করবে না। অর্থাৎ সৎব্যবহার করবে। কৃপনের ধন অপরে ব্যবহার করে থাকে। মৌচাকের মধু মৌমাছির ভোগে লাগে না। মধুশিকারী এসে সেই মধু নিয়ে যায়।
হরিণ : সন্যাসীর কখনো নৃত্যগীতে আকৃষ্ট হওয়া উচিত নয়। এই শিক্ষা আমি হরিনের কাছ থেকে শিখেছি। হরিণ ব্যাধের বাঁশির ধ্বনিতে আকৃষ্ট হয়ে, ব্যাধের হাতে মারা যায়। তাই হরিনের কাছ থেকে এই শিক্ষা পেয়েছি যে, কখনো নৃত্য-গীতে আকৃষ্ট হবে না। নৃত্যগীতে আকৃষ্ট হয়ে ঋষ্যশৃঙ্গ মুনি রমণীর বশীভূত হয়েছিলেন।
মাছ : জিহ্বার লালসা ত্যাগ করতে আমাকে মৎস শিখিয়েছে। বড়শিতে গাঁথা খাদ্য খেতে গিয়ে মাছ মৃত্যু বরণ করে। লোভী, ভোজনবিলাসী মানুষ সুস্বাদু খাদ্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে, রোগগ্রস্থ হয়ে পড়ে ।
বারবনিতা পিঙ্গলা : দেহপসারিনী পিঙ্গলা সেজেগুজে ধনবান যুবা পুরুষের জন্য অপেক্ষা করে থাকে।আশায় আশায় থাকে, কোনোদিন কেউ আসে, কোনোদিন কেউ আসে না। যেদিন কেউ আসে না, সেদিন তার নিদ্রাহীন রাত্রি কাটে। তো পিংলা ভাবলো, হাড়-মাংস-রক্ত-মল-মূত্র-চুল-নখ-চামড়ার এই দেহ। এই দেহ থেকে অনবরত মল-মূত্র-ঘাম-কফ বেরোচ্ছে। এই দেহের অপেক্ষায় আমি বসে থাকি ? এই দেহের মধ্যে আছে সেই অচ্যুত পরমানন্দ। তাই পিঙ্গলার কাছ থেকে আমি শিখেছি, আশা মানুষকে দুঃখ এনে দেয়। আশা ত্যাগ করতে পারলেই পরমসুখে প্রাপ্ত হয়।
চিল : অন্যের প্রিয়বস্তুতে আসক্তিহীন হবার শিক্ষা আমি পেয়েছি ওই দুর্বল-চিলের কাছ থেকে। এক দুর্বল চিল এক খন্ড মাংস নিয়ে, নিশ্চিন্তে খাবার জন্য যাচ্ছিলো নিরাপদ আশ্রয়ে। হঠাৎ একটা সবল চিল তাকে মেরে মাংসের টুকরোকে কেড়ে নেয়। আসলে অন্যের প্রিয়বস্তুতে আসক্তি দুঃখের কারন হতে পারে। তাই তা ত্যাগ করলেই অনন্ত সুখ লাভ করা যায়।
বালক : বালককে দেখে আমি অভিমানশূন্য হয়ে থাকা এবং খাওয়া-ঘুম-বাহ্য কোনো ব্যাপারেই চিন্তা না করা শিখে নিয়েছি । একটা বালকের মান-অপমান জ্ঞান নেই, থাকা-খাওয়ার বিষয়েও সে চিন্তা রোহিত।
চুড়ি-বালা : একসঙ্গে বহু মানুষ থাকলে বৃথা বাক্যে সময়ের অপচয় হয়। কুমারীর হাতে একাধিক চুড়ি থাকলে ঠোকাঠুকি লেগেই থাকবে, কিন্তু একটি চুড়ি কখনো ঠোকাঠুকির মতো অবান্তর শব্দবন্ধ সৃষ্টি করবে না। তাই আমি কুমারীর বালার শব্দ শুনে বুঝেছি, যোগী-ব্যাক্তির ভিড়ের মধ্যে না থাকাই ভালো।
বান্ নির্মাতা : মনকে একাগ্র না করতে পারলে, সুক্ষ তীরের ফলা তৈরী করা যায় না। আমি এই বান্ নির্মাতাদের কাছ থেকে শিখেছি এই একাগ্রতা। স্থির আসনে বসে, প্রাণায়াম দ্বারা বায়ুকে সংযত করে, নিরন্তর বৈরাগ্যের অভ্যাস দ্বারা মনকে ভগবানে যুক্ত রাখাই যোগ।
সাপ : সাপ কখনও নিজের ঘর তৈরী করে না। কিন্তু সতর্ক থাকে। দেহি দেহে অবস্থান করবে, কিন্তু সদা সতর্ক থাকতে হবে, প্রকৃতির দ্বারা তৈরী অর্থাৎ অপরের গৃহে অবস্থান করছি, এই সত্যকে ভুলে গেলে চলবে না। আবার এই নশ্বর দেহের জন্য, গৃহ নির্মাণ করা, নিষ্ফল, এমনকি গৃহরক্ষার দায়িত্ত্ব রক্ষা করতে গিয়ে দুঃখ পোহাতে হয়। সাধুর যেখানে আশ্রয়, তা সে মন্দির মসজিদ, বা গাছের তলায় হোক, সব সময় সাবধানে এবং ভগবত চিন্তায় তন্ময় থাকতে হয়।
মাকড়শা : মাকড়শা নিজের লালা দিয়ে জাল বিস্তার ক'রে সেই জালের মধ্যেই অবস্থান করে থাকে, আবার একসময় সেই জাল নিজেই গ্রাস করে। ভগবান নিজেই নিজের সৃষ্টির মধ্যে নিজেই প্রবিষ্ট হন শেষে এই সৃষ্টি নিজের মধ্যেই নিজেকে বিলীন করে নেন। ভগবানের এই অপূর্ব সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের প্রক্রিয়া আমি মাকড়সার কাছ থেকে শিখেছি।
কাঁচপোকা : কাঁচপোকা যখন আরশোলাকে ধরে, আরশোলা তখন ভয়ে ভয়ে কাঁচপোকার চিন্তা করতে থাকে। ধীরে ধীরে আরশোলা কাঁচপোকার মতো রূপ ধারণ করে থাকে। দেহী যখন দ্বেষ বশত বা ভয় বশত সমস্ত মন দিয়ে যার চিন্তা করে, তখন দেহী সেই ভাবপ্রাপ্ত হয়। মানুষ যদি সারাক্ষন ভগবানের কথা চিন্তা করে, তা সে ভয় বশত হোক, শ্রদ্ধা বশতঃ হোক বা প্রেমবশত হোক, সে তখন ভগবানের সাযুজ্য অণুভব করে।
এইভাবে মহাত্মা অবধূত নিজের ২৪জন শিক্ষাগুরু কথা বলে, সবশেষে বললেন, ভগবান নিজ শক্তি প্রভাবে বহুবিধ জীব সৃষ্টি করেও সুখী হতে না পেরে, এই বুদ্ধিদীপ্ত মনুষ্য নামক জীবের সৃষ্টি করলেন । মনুষ্য দেহ ক্ষণভঙ্গুর হলেও, পুরুষার্থপ্রদ। ব্রহ্মজ্ঞান বলুন, মুক্তিলাভ বলুন, একমাত্র এই মনুষ্যদেহেই সম্ভব হতে পারে। তাই মুক্তির আকাংখ্যা যার মনে জেগেছে, তার উচিত এই শরীরে থেকেই মুক্তির জন্য প্রয়াস করা। প্রকৃতির শিক্ষা, যথযথ বৈরাগ্য, এবং আত্মজ্ঞানে প্রতিষ্ঠালাভ, অহঙ্কারশূন্য হয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করাই ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষের বিধান।
গল্প শেষ করে শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, হে উদ্ধব পরমজ্ঞানী অবধূত এইসব কথা বললে যদুবংশের প্রবর্তক মাহামনা যদু সমস্ত বিষয় বাসনা শ্রীভগবানে সমাহিত চিত্ত হয়েছিলেন। হে উদ্ধব তুমিও বিষয়-বাসনা ত্যাগ করে, শ্রীভগবানে চিত্ত সমাহিত করো। তখন আমার অভাব নয়, আমাতেই নিমগ্ন থাকতে পারবে।
সবশেষে বলি, যারা যথার্থ গুরু খুঁজছেন, তারা নিশ্চয়ই, ভগবানের বলা এই গুরু খুঁজে পাবেন।
ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ। হরি ওম।
আমাদের সবার মধ্যে ভালো কাজ করবার একটা প্রবৃত্তি আছে।
No comments:
Post a Comment