আমরা এর মধ্যে জেনে গেছি, আমি এই দেহ নোই। আমি এই মন নোই। আমি বুদ্ধি নোই। তাহলে আমি কে ? আমি নাকি আত্মা। এই আত্মা ব্যাপারটা কি ? আত্মা বা আমি হচ্ছে চেতন শক্তি যা স্থানান্তরিত হয়। অর্থাৎ চেতন শক্তি প্রথমে আমাদের স্থূল শরীরে থাকে। তার পরে আমাদের স্থূল দেহের মৃত্যুর পরে মানসদেহে অবস্থান করে। তার পরে মানস দেহের অবলুপ্তিতে চেতনশক্তি আমাদের বিজ্ঞানময় দেহে অবস্থান করে। আমাদের তিনটি পার্থিব দেহের অর্থাৎ অন্নময়, প্রাণময়, ও মনময়, এই তিনটি দেহের যখন অবলুপ্তি হয় তখন এই চেতন শক্তি বিজ্ঞানময় দেহে ক্ষনিকের জন্য অবস্থান করে। তার পর বিজ্ঞানময় দেহ চেতনশক্তি সহ আনন্দময় দেহে অবস্থান করে, এবং সবশেষে আনন্দময় দেহ চেতনশক্তিকে নিয়ে তার উৎস অর্থাৎ বিশ্বশক্তি বা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সঙ্গে বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু এগুলো হচ্ছে তাত্ত্বিক কথা। সত্যি সত্যি আমাদের অমিকে কি আমরা ধরতে পারি ? যদি ধরতে পারি কিভাবে ধরবো ? সেই গোপন গূঢ়রহস্যঃ আজ আমরা শুনবো।
আমরা এও জেনে গেছি, যে আমাদের স্নায়ুকেন্দ্রে যখন ঢেউ ওঠে তাকে বলে আমাদের মনের চিন্তা- বা আমাদের কামনা-বাসনা। অর্থাৎ আমাদের মানসিক বৃত্তি। আমাদের চেতনা অর্থাৎ সত্যিকারের আমি যখন এই মানসিক বৃত্তির সঙ্গে মিশে থাকে, তখন আমরা তাকে ধরতে পারি না। তো আমাদের কাজ হচ্ছে আমাদের চেতনাকে এই বৃত্তি থেকে আলাদা করা। এটা কি ভাবে করবো ? এই প্রক্রিয়াকে বলতে পারেন, অমিকে ধরবার খেলা।
চুপচাপ মেরুদন্ড সোজা রেখে বসুন। মনের গভীরে ঢোকার চেষ্টা করুন। মনে কি কোনো চিন্তা উঠছে ? যদি ওঠে তবে তাকে পর্যবেক্ষন করুন। যতক্ষন না মনের চিন্তা দূরীভূত হচ্ছে, ততক্ষন এই অবস্থায় বসে থাকুন। মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন, যতক্ষন না মন চিন্তাশূন্য হচ্ছে ততক্ষন আমি মনকে ছাড়ছি না।
এই ভাবে অবস্থানের ফলে, মন চিন্তা ছেড়ে, জ্ঞানের মধ্যে প্রবেশ করবে। এবং আপনি একটা আলোর বিন্দু দেখতে পাবেন। এই আলো আসলে জ্ঞানের আলো। এই আলো আপনাকে পথ দেখাবে। এই আলোয় আপনি প্রথমে আপনার স্থূল দেহকে দেখতে পাবেন। অর্থাৎ প্রথম প্রথম মনে হবে, এই দেহই আমি। এর পরে, শুধু আপনি আপনার মুখটা দেখতে পাবেন। অর্থাৎ মনে হবে, আপনার মাথাটাই আপনি। এর পরে আরো অপেক্ষা করুন, মাথার আকৃতি একটি কালো চক্রে পরিণত হবে যার ভিতরে একটা আলোর বিন্দু দেখতে পাবেন। তখন মনে হবে, এই আলোর বিন্দু বা মাথার একটা নির্দিষ্ট অংশই আমি। এবার আপনি এই আলোর বিন্দুটাকে খেয়াল করুন, এটি মাথার কোথায় অবস্থান করছে ?
এই সময় আপনার মধ্যে আবার চিন্তা উঠতে থাকবে। না একে এড়িয়ে যাবেন না। চিন্তাগুলোকেই লক্ষ্য কোরতে থাকেন। এবার খুজুন কে চিন্তাগুলোকে দেখছে ? এবং মনের মধ্যে প্রশ্ন তুলতে থাকুন, আমি কে ? আমি কে ? প্রশ্ন করুন, আর মনকে গভীর ভাবে লক্ষ করুন। এখন চিন্তা সরে যাবে। আর ভিতরে অর্থাৎ চেতন কেন্দ্র উদ্ভাসিত হবে। এই সময় আপনি একটা অখণ্ডতা নিস্তব্ধতা অনুভব করবেন। এই নিস্তব্ধতার অনুভবই আমি বোধ। বা অহং বোধ। এবার এটাকে ভালো করে লক্ষ করতে থাকুন। একটা জ্যোতি আপনি এখন দেখতে পাচ্ছেন।আপনার মনে একটা আনন্দ-অনুভব হচ্ছে। এই সময়, আপনার প্রশ্ন অর্থাৎ আমি কে, এটাকে দৃঢ় রেখে অপেক্ষা করুন।
এর পরের কাজগুলো আপনাকেই করতে হবে। গুরুদেব বলছেন, সাধককে এবার একলা যাত্রা করতে হবে। সব শেষে একটা কথা বলি, আমি যতটা সহজে কথাগুলো বলে গেলাম, এটাকে কার্যকরী করা এতটা সহজ নয়। এটি প্রথমত সময় সাপেক্ষ, দ্বিতীয়ত একমাত্র গুরুর সান্নিধ্যে, গুরুর নির্দেশে এসব করতে হয়। আমার কথায় একাজ করতে যাবেন না।
ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ হরি ওম।
"অমি"-কে ধরবেন কি করে ? (২)
আলোচনা করছিলাম, আমার "অমি"কে ধরবো কি করে। গুরুদেব আগের দিন কিছুটা নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, এবার একলা যাত্রা করতে হবে। এই পথে কি একলা যাওয়া যায় ? যাকে চিনি না, জানিনা, তাকে ধরতে গেলে, তাকে পেলেও আমি সনাক্ত করতে পারবো না। গুরুদেবকে এ কথা বলতেই তিনি যা বলেছিলেন, আমরা আজ সেই কথা শুনবো।
আমরা যখন যার মধ্যে অবস্থান করি, তখন আমরা তাই হয়ে যাই। আমরা যখন দেহের মধ্যে প্রবেশ করি তখন আমরা দেহী হয়ে যাই। আমরা যখন জ্ঞানের মধ্যে প্রবেশ করি তখন আমরা জ্ঞানী হয়ে যাই। আমরা যখন পাপের মধ্যে প্রবেশ করি তখন আমরা পাপী হয়ে যাই। আসলে আমি ও আমার এই কথাটা ভালো করে বুঝতে হবে। আমি মানুষ, আমি জ্ঞানী, আমি গায়ক, আমি সাধক, আমি লেখক, এগুলো হচ্ছে আমাদের অহং জ্ঞান। আবার আমার দেহ, আমার ছেলে, আমার মেয়ে ইত্যাদি হচ্ছে সম্মন্ধ-জাত জ্ঞান বা মমতা । অর্থাৎ যার সাথে আমার সম্মন্ধ হয়েছে। এগুলো সবই সাময়িক। কেননা আমি চিরকাল মানুষ, বা গায়ক, বা সাধক, বা লেখক থাকবো না, অর্থাৎ এগুলো সবই কালের অধীন। আবার আমার যাদের সাথে সন্মন্ধ হয়েছে, এগুলোও একসময় থাকবে না। কিন্তু আমি থাকবো। তো আমি এখন কিসের মধ্যে প্রবেশ করেছি সেটা একটু ধ্যান দিয়ে দেখি।
ধ্যান যখন গভীর হবে, আমি বোধকে আলাদা করে নিয়ে মনের উপরে নিবিষ্ট করলে, এই কালের বা সাময়িক সম্পর্ক গুলোকে আমরা বিচ্ছিন্ন করতে পারবো। আমি কে - এই প্রশ্নটাকে আমাদের মধ্যে দৃঢ় রাখতে হবে। অর্থাৎ আমাদের মূল উদ্দেশ্য আমিকে জানা বা ধরা। এই ভাব যেন ক্ষনিকের জন্যও ত্যাগ না করি।
আমরা জানি আমাদের পাঁচটা শরীর। বা পাঁচকোষের এই শরীর ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। আমি বোধকে ধরবার যে প্রক্রিয়া সেটা আমরা আগের দিন আলোচনা করেছিলাম। সেই প্রক্রিয়ার দ্বারা আমরা মনের স্তরে প্রবেশ করেছিলাম। অর্থাৎ অন্নময় - প্রাণময় কোষ পেরিয়ে মনময় কোষে প্রবেশ করেছিলাম। এবং গভীর ধ্যানে লিপ্ত থেকে মনকে চিন্তা মুক্ত করেছিলাম। এই অবস্থায় মন কিন্তু বিলীন হয়ে যায় না। এই সময় মনের বৃত্তিগুলো সংস্কার রূপে সুপ্তভাবে থাকে। এই অবস্থায় মনের সংস্কারগুলো মাঝে মধ্যেই জেগে ওঠে। এই অবস্থায় ধ্যানের গভীরতা যত বাড়াতে পারবো, তখন
আমিকে আরো ভালো করে ধরতে পারবো। এবং এই আমি-বোধে স্থির হয়ে থাকার শক্তি ও সময় অর্থাৎ স্থিতিকাল বৃদ্ধি পাবে। এই অবস্থায় আমরা, আমাদের দৈনন্দিন কাজের সময়ও , এই আমি বোধকে অন্যান্য মানসিক বৃত্তি থেকে আলাদা করতে পারবো। এই রকম হলে, আপনি জানবেন, আপনার সাধন জীবনের উন্নতি হয়েছে। মনে রাখবেন, ধ্যান একটা নিরবিচ্ছিন্ন অবস্থা। এমন নয় যে যতক্ষন আমরা ধ্যানাসনে আছি, শুধু সেই সময়টুকু আমাদের উচ্চ অবস্থা থাকবে, আর তার পরেই আমরা আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবো। ব্যাপারটা এমন নয়। আমার আমিবোধকে মানসিক বৃত্তি থেকে আলাদা করে আমার দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপ চালিয়ে যাবো। এটাই প্রকৃত ধ্যানের প্রাপ্তি।
এই ভাবে আমার আমি-বোধকে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে ধরে রাখতে পারলে, এবং নিয়মিত ধ্যান সাধনা চালিয়ে গেলে আমরা মনময় কোষ ত্যাগ করে বিজ্ঞানময় কোষে উত্তীর্ন হতে পারবো। এই অবস্থা একটু ভালো করে খেয়াল করুন। এই অবস্থায় আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাস-এর গতি কমে যাবে। সাধারণত আমরা যখন শ্বাস নেই সেটা আমাদের নাক থেকে বুকে, বুক থেকে পেটে চলে যায়। কিন্তু আমাদের আমিবোধ যখন মনময় কোষ ছেড়ে বিজ্ঞানময় কোষে ওঠে, তখন আমাদের শ্বাস নাকের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। এবং আরো পরে একসময় কেবলমাত্র নাসিকাগ্রে অবস্থান করে। এই অবস্থায় আমাদের অস্বস্তি বোধ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু গুরুর নির্দেশ নিয়ে, এই সময় ধ্যানে অবস্থানের সময় বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। এবং তাতে এই অসুবিধা বা অস্বস্তি কেটে যাবে। এই সময় আরো কতগুলো অস্বাভাবিকতা আপনার মধ্যে দেখা দিতে পারে। যেমন শরীরে একটা কম্পন - যার উৎস হচ্ছে মেরুদন্ড। মেরুদণ্ডের মধ্যে একটা শিরশিরানি ভাব। এমনকি এও মনে হতে পারে, যে একটা ছুঁচ আপনার মেরুদণ্ডের ভেতর দিয়ে কেউ যেন উপরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই শারীরিক অস্বস্তির সময় ধ্যানে নিরত থাকুন। আপাতত ধ্যান বন্ধ রাখুন। অথবা কাউকে বলুন, মেরুদণ্ডে ম্যাসেজ করে দিতে। ম্যাসেজ করার সময় খেয়াল করবেন, হাত দিয়ে আলতো করে পাশাপাশি ম্যাসেজ করতে। ভুলেও উপর নিচ করবেন না। যদি এতেও অস্বস্তি না যায়, তবে কয়েকদিন ধ্যান বন্ধ রাখুন। দেখবেন আবার স্বাভাবিক হয়ে গেছেন। কিন্তু স্বাভাবিক হয়ে গেলেই আবার ধ্যানের অভ্যাস শুরু করুন। দরকার হয় এই অস্বস্তি অল্পবিস্তর সহ্য করুন।
এই সময় থেকে আপনার নানান-রকম দর্শন হতে পারে। জ্যোতি দর্শন হতে পারে। নানানরকম দেবদেবী যা আপনার চেনা বা অচেনা মূর্তি, বিভিন্ন জায়গা, বিভিন্ন দৃশ্য, তা সে ভালোমন্দ সবই হতে পারে। সুন্দর, কুৎসিত, এমনকি ভয়ঙ্কর হতে পারে। এগুলো একটা সময় চলে যাবে, আর আপনার মানসিক শক্তির বিকাশ ঘটবে। এগুলো দেখায় আপনার মধ্যে আনন্দ বা ভয় বা উদ্বেগ দেখা দিতে পারে। আপনি নিস্পৃহ থাকুন। আর আপনি আপনার মধ্যে চিন্তা ওঠান যে এগুলো কে দেখছে ? অর্থাৎ আপনার সেই মূল ও প্রাথমিক প্রশ্ন আমি কে ? এই প্রশ্নকে আঁকড়ে ধরুন। আমি কে ?
এই অবস্থায় অনেকের চিন্তা শক্তি হারিয়ে যায়। ক্ষনিকের জন্য চেতন শক্তিও হারিয়ে যায়। যদিও এটা কয়েক মুহূর্তের জন্য হয়ে থাকে। তথাপি এই অবস্থা থেকে ফিরে এলে মনে হয়, আমি কি সমাধিতে ছিলাম। আসলে এটি সমাধি নয়, বলা যেতে পারে আপনার মূর্ছা হয়েছিল।বা আপনি খানিকটা সুসুপ্তির অবস্থায় চলে গিয়েছিলেন। মন তখন কয়েক মুহূর্তের জন্য লয় হয়ে গিয়ে ছিলো।
আমাদের একটা কথা সব সময় মনে রাখতে হবে, আমি আমাকে খুঁজছি। তাই আমি কে, অর্থাৎ আমি একটা চেতন সত্ত্বা। অর্থাৎ যে সব কিছু উপলব্ধি করছে তা একটা চেতন সত্ত্বা এই কথাটা আমাদের সব সময় স্মরণে রাখতে হবে। এই অবস্থায় আমাদের অনেকের ঘুম পায়। আর ঘুম পেলে জানবেন, আপনার যাত্রা পথে এটি একটি বড়ো বাঁধা। আপনাকে সজাগ থাকতে হবে। চেতন থাকতে হবে। এই বিজ্ঞানময় কোষে যখন আপনি অবস্থান করেন, তখন আরেকটা অদ্ভুত উপলব্ধি হয়, আর তা হচ্ছে আমি যেন শরীর নোই। শরীরের মধ্যেও আমি নেই। এই সময় আমাদের চেতন সত্ত্বাটি শরীরের চারিদিকে ঘুরে বেড়ায়। শরীরের মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করে, কিন্তু পারে না। তখন যেন মনে হয়, আমি মারা গেছি। শরীরের সঙ্গে মনের যোগসূত্রটি কেটে গেছে। শরীর স্থির হয়ে বসে আছে, আর আমি শরীরের বাইরে।এমনটি হলে, প্রথম প্রথম আমাদের ভীষণ ভয়ের উদ্রেগ হয়। কিন্তু ভয়ের কিছু নেই। এইসময় দেহের সম্পর্কে কোনো চিন্তা ওঠালে অর্থাৎ কোনো স্মৃতি বার বার ওঠালে, এই অবস্থা কেটে যায়। সাধক তখন সাধারণ অবস্থায় স্থিতিশীল হয়।
বিজ্ঞানময় কোষে যাতায়াত ও স্থিতি যখন আমাদের সহজ মনে হয়, অর্থাৎ বার বার যাতায়াত করতে করতে এই ব্যাপারটা যখন সহজ মনে হয়, তখন এই বিজ্ঞানময় কোষকে অতিক্রম করবার চেষ্টা করতে হয়। শান্ত মনে চেতনাকে আমিবোধে নিবিষ্ট করতে হয়। এইখানে জ্ঞাতা ও জ্ঞেয় এক হয়ে যায়। তখন আমাদের মধ্যে আমি আমাকে জানছি এইরকমটা মনে হয়। দ্রষ্টা ও দৃশ্য এক হয়ে যায়। এই অবস্থায় আমরা চেতন সত্ত্বার উপরে আমি বোধ বা আমিত্ব আরোপ করে ধ্যানের প্রক্রিয়া চালাতে থাকুন। প্রক্রিয়াটা এই রকম। প্রথমে বিষয় সম্পর্কে যে চৈতন্য বা বিষয়ের সঙ্গে যে চৈতন্য মিশে আছে, অর্থাৎ বুদ্ধির সঙ্গে বিষয় মিশে যে চৈতন্য আমি বোধের সৃষ্টি করেছে, তাকে আলাদা করতে হয়। অর্থাৎ প্রথমে ভাবুন, আমি আমাকে জানছি, এর পরে কেবলমাত্র আমাকে জানছি, তারও পরে শুধু জানছি এই ভাবে "আমি"কে আলাদা করুন। আমি আমার মধ্যে আছি, তারপরে আমার মধ্যে আছি, তারপরে শুধুই আছি। এইভাবে আমিকে আলাদা করুন। অর্থাৎ জ্ঞাতা ও জ্ঞেয় বলে কিছু থাকবে না, দ্রষ্টা-দৃশ্য বলে কিছু থাকবে না। জ্ঞাতা-জ্ঞেয় মিশে যাবে, দ্রষ্টা দৃশ্য মিশে যাবে। বিজ্ঞানময় কোষে নিজেকে উত্তীর্ন হতে পারলে এই আছি বোধ স্থির হতে থাকবে। আপনি এক অপূর্ব শান্তি, অহেতুক আনন্দ আপনার মধ্যে স্ফূরিত হতে থাকবে। আমি ও আনন্দ তখন এক হয়ে যাবে। অর্থাৎ আমি যে আনন্দময় সত্ত্বা সেটা আমাদের উপল্বদ্ধিতে স্থায়িত্ত্ব লাভ করবে। যাকে আমরা এতদিন,শরীর-মন-বুদ্ধি-চিত্ত্ব-অহংকার বলে অনুভব করতাম, সেই আমি এখন একমাত্র আনন্দময় সত্ত্বা বলে অনুভব হবে। আমাদের মনে হবে আমরা আনন্দের মধ্যে বিলীন হয়ে গেছি। আর এটাকেই বলে আনন্দময় শরীরে প্রবেশ।
এই আনন্দময় শরীরকেও আমাদের ছাড়তে হবে। তা না হলে আমরা শরীর বিহীন হতে পারবো না। অর্থাৎ এক-এক করে পাঁচটা শরীরকে ছেড়ে যাবো। এইজন্য ধ্যানের এই অবস্থায়, আমাদের খেয়াল করতে হবে, এই আনন্দ আসছে কোথা থেকে ? এই আনন্দের উৎস খুঁজতে হবে। এই সময় আমাদের চেতনা শরীর শূন্য হয়ে পড়ে। অহংহীন হয়ে পড়ে। আর আমাদের মনে হয় মহাশূন্য আমাদের গ্রাস করে নিচ্ছে। আমি যেন মহাশূন্যে মিলিয়ে যাচ্ছি। মহাশুন্য আর আমার মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকছে না। মহাশূন্য আর আমি একই সত্ত্বা। এবার মনে হয়, আমি আর আমিতে থাকছি না। আমার যেন নিজস্ব সত্ত্বা বলে কিছু নেই। এই সময় এক গভীর অন্ধকার, এক মহাশুন্য, আমাকে অপ্রকাশ করে ফেলছে। আমি যেন বিশ্বসত্ত্বার সঙ্গে মিলিয়ে যাচ্ছি। বিশ্বসত্ত্বা আর আমি এক হয়ে গেছি। আমার অহং বলে আর কিছু থাকছে না। এক অব্যক্ত সাম্যাবস্থা। সমস্ত গুনের বন্ধন, সমস্ত সত্ত্বার বন্ধন, সমস্ত শরীরের বন্ধন আমার কেটে গেছে। আমি বিশ্বগ্রাসে পতিত। সমস্ত রহস্যভেদ হয়ে গেছে। এই সময়, অস্তিত্ত্বের দাবি অস্বীকার হয়ে গছে। আমি বলে কিছু নেই। আমি মহাশূন্যের, মহাশূন্যই আমি। এটাই আমার প্রকৃত সত্ত্বা। শিবোহম শিবোহম, তুহি তুহি।
ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ হরি ওম।
"অমি"-কে ধরবেন কি করে ? (২)
আলোচনা করছিলাম, আমার "অমি"কে ধরবো কি করে। গুরুদেব আগের দিন কিছুটা নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, এবার একলা যাত্রা করতে হবে। এই পথে কি একলা যাওয়া যায় ? যাকে চিনি না, জানিনা, তাকে ধরতে গেলে, তাকে পেলেও আমি সনাক্ত করতে পারবো না। গুরুদেবকে এ কথা বলতেই তিনি যা বলেছিলেন, আমরা আজ সেই কথা শুনবো।
আমরা যখন যার মধ্যে অবস্থান করি, তখন আমরা তাই হয়ে যাই। আমরা যখন দেহের মধ্যে প্রবেশ করি তখন আমরা দেহী হয়ে যাই। আমরা যখন জ্ঞানের মধ্যে প্রবেশ করি তখন আমরা জ্ঞানী হয়ে যাই। আমরা যখন পাপের মধ্যে প্রবেশ করি তখন আমরা পাপী হয়ে যাই। আসলে আমি ও আমার এই কথাটা ভালো করে বুঝতে হবে। আমি মানুষ, আমি জ্ঞানী, আমি গায়ক, আমি সাধক, আমি লেখক, এগুলো হচ্ছে আমাদের অহং জ্ঞান। আবার আমার দেহ, আমার ছেলে, আমার মেয়ে ইত্যাদি হচ্ছে সম্মন্ধ-জাত জ্ঞান বা মমতা । অর্থাৎ যার সাথে আমার সম্মন্ধ হয়েছে। এগুলো সবই সাময়িক। কেননা আমি চিরকাল মানুষ, বা গায়ক, বা সাধক, বা লেখক থাকবো না, অর্থাৎ এগুলো সবই কালের অধীন। আবার আমার যাদের সাথে সন্মন্ধ হয়েছে, এগুলোও একসময় থাকবে না। কিন্তু আমি থাকবো। তো আমি এখন কিসের মধ্যে প্রবেশ করেছি সেটা একটু ধ্যান দিয়ে দেখি।
ধ্যান যখন গভীর হবে, আমি বোধকে আলাদা করে নিয়ে মনের উপরে নিবিষ্ট করলে, এই কালের বা সাময়িক সম্পর্ক গুলোকে আমরা বিচ্ছিন্ন করতে পারবো। আমি কে - এই প্রশ্নটাকে আমাদের মধ্যে দৃঢ় রাখতে হবে। অর্থাৎ আমাদের মূল উদ্দেশ্য আমিকে জানা বা ধরা। এই ভাব যেন ক্ষনিকের জন্যও ত্যাগ না করি।
আমরা জানি আমাদের পাঁচটা শরীর। বা পাঁচকোষের এই শরীর ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। আমি বোধকে ধরবার যে প্রক্রিয়া সেটা আমরা আগের দিন আলোচনা করেছিলাম। সেই প্রক্রিয়ার দ্বারা আমরা মনের স্তরে প্রবেশ করেছিলাম। অর্থাৎ অন্নময় - প্রাণময় কোষ পেরিয়ে মনময় কোষে প্রবেশ করেছিলাম। এবং গভীর ধ্যানে লিপ্ত থেকে মনকে চিন্তা মুক্ত করেছিলাম। এই অবস্থায় মন কিন্তু বিলীন হয়ে যায় না। এই সময় মনের বৃত্তিগুলো সংস্কার রূপে সুপ্তভাবে থাকে। এই অবস্থায় মনের সংস্কারগুলো মাঝে মধ্যেই জেগে ওঠে। এই অবস্থায় ধ্যানের গভীরতা যত বাড়াতে পারবো, তখন
আমিকে আরো ভালো করে ধরতে পারবো। এবং এই আমি-বোধে স্থির হয়ে থাকার শক্তি ও সময় অর্থাৎ স্থিতিকাল বৃদ্ধি পাবে। এই অবস্থায় আমরা, আমাদের দৈনন্দিন কাজের সময়ও , এই আমি বোধকে অন্যান্য মানসিক বৃত্তি থেকে আলাদা করতে পারবো। এই রকম হলে, আপনি জানবেন, আপনার সাধন জীবনের উন্নতি হয়েছে। মনে রাখবেন, ধ্যান একটা নিরবিচ্ছিন্ন অবস্থা। এমন নয় যে যতক্ষন আমরা ধ্যানাসনে আছি, শুধু সেই সময়টুকু আমাদের উচ্চ অবস্থা থাকবে, আর তার পরেই আমরা আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবো। ব্যাপারটা এমন নয়। আমার আমিবোধকে মানসিক বৃত্তি থেকে আলাদা করে আমার দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপ চালিয়ে যাবো। এটাই প্রকৃত ধ্যানের প্রাপ্তি।
এই ভাবে আমার আমি-বোধকে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে ধরে রাখতে পারলে, এবং নিয়মিত ধ্যান সাধনা চালিয়ে গেলে আমরা মনময় কোষ ত্যাগ করে বিজ্ঞানময় কোষে উত্তীর্ন হতে পারবো। এই অবস্থা একটু ভালো করে খেয়াল করুন। এই অবস্থায় আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাস-এর গতি কমে যাবে। সাধারণত আমরা যখন শ্বাস নেই সেটা আমাদের নাক থেকে বুকে, বুক থেকে পেটে চলে যায়। কিন্তু আমাদের আমিবোধ যখন মনময় কোষ ছেড়ে বিজ্ঞানময় কোষে ওঠে, তখন আমাদের শ্বাস নাকের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। এবং আরো পরে একসময় কেবলমাত্র নাসিকাগ্রে অবস্থান করে। এই অবস্থায় আমাদের অস্বস্তি বোধ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু গুরুর নির্দেশ নিয়ে, এই সময় ধ্যানে অবস্থানের সময় বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। এবং তাতে এই অসুবিধা বা অস্বস্তি কেটে যাবে। এই সময় আরো কতগুলো অস্বাভাবিকতা আপনার মধ্যে দেখা দিতে পারে। যেমন শরীরে একটা কম্পন - যার উৎস হচ্ছে মেরুদন্ড। মেরুদণ্ডের মধ্যে একটা শিরশিরানি ভাব। এমনকি এও মনে হতে পারে, যে একটা ছুঁচ আপনার মেরুদণ্ডের ভেতর দিয়ে কেউ যেন উপরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই শারীরিক অস্বস্তির সময় ধ্যানে নিরত থাকুন। আপাতত ধ্যান বন্ধ রাখুন। অথবা কাউকে বলুন, মেরুদণ্ডে ম্যাসেজ করে দিতে। ম্যাসেজ করার সময় খেয়াল করবেন, হাত দিয়ে আলতো করে পাশাপাশি ম্যাসেজ করতে। ভুলেও উপর নিচ করবেন না। যদি এতেও অস্বস্তি না যায়, তবে কয়েকদিন ধ্যান বন্ধ রাখুন। দেখবেন আবার স্বাভাবিক হয়ে গেছেন। কিন্তু স্বাভাবিক হয়ে গেলেই আবার ধ্যানের অভ্যাস শুরু করুন। দরকার হয় এই অস্বস্তি অল্পবিস্তর সহ্য করুন।
এই সময় থেকে আপনার নানান-রকম দর্শন হতে পারে। জ্যোতি দর্শন হতে পারে। নানানরকম দেবদেবী যা আপনার চেনা বা অচেনা মূর্তি, বিভিন্ন জায়গা, বিভিন্ন দৃশ্য, তা সে ভালোমন্দ সবই হতে পারে। সুন্দর, কুৎসিত, এমনকি ভয়ঙ্কর হতে পারে। এগুলো একটা সময় চলে যাবে, আর আপনার মানসিক শক্তির বিকাশ ঘটবে। এগুলো দেখায় আপনার মধ্যে আনন্দ বা ভয় বা উদ্বেগ দেখা দিতে পারে। আপনি নিস্পৃহ থাকুন। আর আপনি আপনার মধ্যে চিন্তা ওঠান যে এগুলো কে দেখছে ? অর্থাৎ আপনার সেই মূল ও প্রাথমিক প্রশ্ন আমি কে ? এই প্রশ্নকে আঁকড়ে ধরুন। আমি কে ?
এই অবস্থায় অনেকের চিন্তা শক্তি হারিয়ে যায়। ক্ষনিকের জন্য চেতন শক্তিও হারিয়ে যায়। যদিও এটা কয়েক মুহূর্তের জন্য হয়ে থাকে। তথাপি এই অবস্থা থেকে ফিরে এলে মনে হয়, আমি কি সমাধিতে ছিলাম। আসলে এটি সমাধি নয়, বলা যেতে পারে আপনার মূর্ছা হয়েছিল।বা আপনি খানিকটা সুসুপ্তির অবস্থায় চলে গিয়েছিলেন। মন তখন কয়েক মুহূর্তের জন্য লয় হয়ে গিয়ে ছিলো।
আমাদের একটা কথা সব সময় মনে রাখতে হবে, আমি আমাকে খুঁজছি। তাই আমি কে, অর্থাৎ আমি একটা চেতন সত্ত্বা। অর্থাৎ যে সব কিছু উপলব্ধি করছে তা একটা চেতন সত্ত্বা এই কথাটা আমাদের সব সময় স্মরণে রাখতে হবে। এই অবস্থায় আমাদের অনেকের ঘুম পায়। আর ঘুম পেলে জানবেন, আপনার যাত্রা পথে এটি একটি বড়ো বাঁধা। আপনাকে সজাগ থাকতে হবে। চেতন থাকতে হবে। এই বিজ্ঞানময় কোষে যখন আপনি অবস্থান করেন, তখন আরেকটা অদ্ভুত উপলব্ধি হয়, আর তা হচ্ছে আমি যেন শরীর নোই। শরীরের মধ্যেও আমি নেই। এই সময় আমাদের চেতন সত্ত্বাটি শরীরের চারিদিকে ঘুরে বেড়ায়। শরীরের মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করে, কিন্তু পারে না। তখন যেন মনে হয়, আমি মারা গেছি। শরীরের সঙ্গে মনের যোগসূত্রটি কেটে গেছে। শরীর স্থির হয়ে বসে আছে, আর আমি শরীরের বাইরে।এমনটি হলে, প্রথম প্রথম আমাদের ভীষণ ভয়ের উদ্রেগ হয়। কিন্তু ভয়ের কিছু নেই। এইসময় দেহের সম্পর্কে কোনো চিন্তা ওঠালে অর্থাৎ কোনো স্মৃতি বার বার ওঠালে, এই অবস্থা কেটে যায়। সাধক তখন সাধারণ অবস্থায় স্থিতিশীল হয়।
বিজ্ঞানময় কোষে যাতায়াত ও স্থিতি যখন আমাদের সহজ মনে হয়, অর্থাৎ বার বার যাতায়াত করতে করতে এই ব্যাপারটা যখন সহজ মনে হয়, তখন এই বিজ্ঞানময় কোষকে অতিক্রম করবার চেষ্টা করতে হয়। শান্ত মনে চেতনাকে আমিবোধে নিবিষ্ট করতে হয়। এইখানে জ্ঞাতা ও জ্ঞেয় এক হয়ে যায়। তখন আমাদের মধ্যে আমি আমাকে জানছি এইরকমটা মনে হয়। দ্রষ্টা ও দৃশ্য এক হয়ে যায়। এই অবস্থায় আমরা চেতন সত্ত্বার উপরে আমি বোধ বা আমিত্ব আরোপ করে ধ্যানের প্রক্রিয়া চালাতে থাকুন। প্রক্রিয়াটা এই রকম। প্রথমে বিষয় সম্পর্কে যে চৈতন্য বা বিষয়ের সঙ্গে যে চৈতন্য মিশে আছে, অর্থাৎ বুদ্ধির সঙ্গে বিষয় মিশে যে চৈতন্য আমি বোধের সৃষ্টি করেছে, তাকে আলাদা করতে হয়। অর্থাৎ প্রথমে ভাবুন, আমি আমাকে জানছি, এর পরে কেবলমাত্র আমাকে জানছি, তারও পরে শুধু জানছি এই ভাবে "আমি"কে আলাদা করুন। আমি আমার মধ্যে আছি, তারপরে আমার মধ্যে আছি, তারপরে শুধুই আছি। এইভাবে আমিকে আলাদা করুন। অর্থাৎ জ্ঞাতা ও জ্ঞেয় বলে কিছু থাকবে না, দ্রষ্টা-দৃশ্য বলে কিছু থাকবে না। জ্ঞাতা-জ্ঞেয় মিশে যাবে, দ্রষ্টা দৃশ্য মিশে যাবে। বিজ্ঞানময় কোষে নিজেকে উত্তীর্ন হতে পারলে এই আছি বোধ স্থির হতে থাকবে। আপনি এক অপূর্ব শান্তি, অহেতুক আনন্দ আপনার মধ্যে স্ফূরিত হতে থাকবে। আমি ও আনন্দ তখন এক হয়ে যাবে। অর্থাৎ আমি যে আনন্দময় সত্ত্বা সেটা আমাদের উপল্বদ্ধিতে স্থায়িত্ত্ব লাভ করবে। যাকে আমরা এতদিন,শরীর-মন-বুদ্ধি-চিত্ত্ব-অহংকার বলে অনুভব করতাম, সেই আমি এখন একমাত্র আনন্দময় সত্ত্বা বলে অনুভব হবে। আমাদের মনে হবে আমরা আনন্দের মধ্যে বিলীন হয়ে গেছি। আর এটাকেই বলে আনন্দময় শরীরে প্রবেশ।
এই আনন্দময় শরীরকেও আমাদের ছাড়তে হবে। তা না হলে আমরা শরীর বিহীন হতে পারবো না। অর্থাৎ এক-এক করে পাঁচটা শরীরকে ছেড়ে যাবো। এইজন্য ধ্যানের এই অবস্থায়, আমাদের খেয়াল করতে হবে, এই আনন্দ আসছে কোথা থেকে ? এই আনন্দের উৎস খুঁজতে হবে। এই সময় আমাদের চেতনা শরীর শূন্য হয়ে পড়ে। অহংহীন হয়ে পড়ে। আর আমাদের মনে হয় মহাশূন্য আমাদের গ্রাস করে নিচ্ছে। আমি যেন মহাশূন্যে মিলিয়ে যাচ্ছি। মহাশুন্য আর আমার মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকছে না। মহাশূন্য আর আমি একই সত্ত্বা। এবার মনে হয়, আমি আর আমিতে থাকছি না। আমার যেন নিজস্ব সত্ত্বা বলে কিছু নেই। এই সময় এক গভীর অন্ধকার, এক মহাশুন্য, আমাকে অপ্রকাশ করে ফেলছে। আমি যেন বিশ্বসত্ত্বার সঙ্গে মিলিয়ে যাচ্ছি। বিশ্বসত্ত্বা আর আমি এক হয়ে গেছি। আমার অহং বলে আর কিছু থাকছে না। এক অব্যক্ত সাম্যাবস্থা। সমস্ত গুনের বন্ধন, সমস্ত সত্ত্বার বন্ধন, সমস্ত শরীরের বন্ধন আমার কেটে গেছে। আমি বিশ্বগ্রাসে পতিত। সমস্ত রহস্যভেদ হয়ে গেছে। এই সময়, অস্তিত্ত্বের দাবি অস্বীকার হয়ে গছে। আমি বলে কিছু নেই। আমি মহাশূন্যের, মহাশূন্যই আমি। এটাই আমার প্রকৃত সত্ত্বা। শিবোহম শিবোহম, তুহি তুহি।
ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ হরি ওম।
No comments:
Post a Comment