তৃতীয় অধ্যায় - প্রথম পাদ
বেদে আত্মাকে বলা হয়েছে ব্রহ্ম। আজ আমরা ব্রহ্মসূত্র ধরে ব্রহ্মের খোঁজে বা আত্মার খোঁজে বেরোবো। জীবাত্মা কোথা থেকে আসে আর কোথায়ই বা যায় ? আমরা সেই খোঁজ করবো। আমরা বর্তমানে অসংখ্য জীব-আত্মার সঙ্গে আছি। একটু দেখে নেই জীবের মৃত্যুর পরে তার আত্মা কোথায় যাচ্ছে। এখানে একটা কথা বলি, ব্রহ্মা আর ব্রহ্ম কিন্তু এক নয়। ব্রহ্মা হচ্ছেন, এই সূর্যলোকের মালিক, আর ব্রহ্ম হচ্ছেন সমস্ত জগতের মালিক।
ব্রহ্মসূত্র বলছেন, মৃত্যুকালে জীবের দেহ থেকে যখন প্রাণবায়ু উৎক্রান্ত হয়, তখন জীবাত্মা এই স্থূল দেহের সূক্ষ্ম অনুর দ্বারা আচ্ছাদিত থাকে। জীৱাত্মা যখন শরীর ছেড়ে অনন্তের যাত্রায় বেরিয়ে পড়ে, তখন সে এই স্থূল দেহের অনুরূপ সূক্ষ্ম দেহের দ্বারা আবৃত থাকে। এবং একটি নতুন দেহপ্রাপ্তির আশায় ঘুরতে থাকে। এই দেহান্তরের প্রক্রিয়ায় জীবাত্মা তার স্থূল দেহের সূক্ষ্ম অংশকে ভাবি দেহের বীজ রূপে গ্রহণ করে।
জীব আত্মা যখন স্থুল শরীর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে তখন তার সঙ্গে তার ইন্দ্রিয়গুলোও যাত্রা শুরু করে। জীবাত্মা যখন বেরিয়ে পড়ে, তখন প্রাণের উৎক্রমন ঘটে। আর প্রাণের যাত্রার সঙ্গে সঙ্গে ইন্দ্রিয়গুলোও বেরিয়ে পড়ে। আর ইন্দ্রিয়গুলোর যখন যাত্রা শুরু হয়, তখন আমাদের অবশ্য়ই ধরে নিতে হবে যে এই ইন্দ্রিয়গুলোরও স্থূল আকার আছে। এইভাবেই জীবের ভাবি বা ভবিষ্যৎ জন্মের একটা সূচনা বা ভিত্তি স্থাপন হয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বৃহদারণ্যক উপনিষদ বলছে : মানুষের মৃত্যুতে বাক অগ্নিতে প্রবেশ করে, প্রাণ বায়ুতে প্রবেশ করে। মন চন্দ্রে, শ্রোত্র অর্থাৎ শ্রবণ শক্তি দিকসমূহেপ্রবেশ করে, শরীর পৃথিবীতে, হৃদয় মহাকাশে, লোমসকল ঔষধিগাছে, কেশ বনস্পতিতে, শুক্র ও শোনিত জলের মধ্যে প্রবেশ করে। তাই যদি হয়, তবে ইন্দ্রিয় সমূহ জীবাত্মার সঙ্গে গমন করে, সেটা কি বলা যায় ?
আবার কারুর কারুর মতে, জীবাত্মা কখনোই তার পূর্ব দেহের সূক্ষ্ম অংশগুলোকে অর্থাৎ সূক্ষ্ম দেহকে সঙ্গে নিয়ে যায় না। তার কারন হচ্ছে শরীর ধারণের উপযুক্ত উপাদান সমূহ সর্বত্র সহজলভ্য। তাই জীবাত্মা কখনোই তার পূর্ব দেহের ভূতবর্গের সূক্ষ্ম-অংশকে সঙ্গে নিয়ে যায় না সঙ্গে নেবার দরকারও পড়ে না।
এই ব্যাপারটা বুঝতে গেলে, এটা বুঝতে হবে পঞ্চভূতের আহুতি হয়ে গেলে আমাদের কি হয় সেটা সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখতে হবে। পঞ্চ আহুতি অর্থাৎ শ্রদ্ধা অর্থাৎ তরল আহুতির সুক্ষরূপ হচ্ছে শ্রদ্ধা এছাড়া সোম, বৃষ্টি, অন্ন, বীজ এগুলো পঞ্চ অগ্নিতে অর্পণ করা হয়। এই পঞ্চ অগ্নি হচ্ছে, স্বর্গ, পৰ্জন্য অর্থাৎ বৃষ্টি, পৃথিবী, মনুষ্য ও মানবী ইত্যাদিতে অর্পণ করা হয়। এইজন্য পঞ্চ আহুতি জলকে বলা হয় মনুষ্য। জীবাত্মা জলের দ্বারা আবৃত্ত হয়ে উর্দ্ধলোকে গমন করে। যদিও শরীরের সমস্ত উপাদান সমূহ সহজলভ্য, কিন্তু বীজ সহজলভ্য নয়। এমনকি জীবের যেসব উপাধি অর্থাৎ ইন্দ্রিয়াদি আছে, সেগুলো যেহেতু সে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। তাই এই ইন্দ্রিয়াদি ও জীবের পদার্থগত অস্তিত্ত্ব অবশ্য়ই আছে এটা ধরে নিতে হয়, তা না থাকলে ইন্দ্রিয়াদি জীবের সঙ্গে যেতে পারে না।
জলের তিনটি উপাদান, শ্রদ্ধা-সোম-বৃষ্টি। জল এই তিনটি উপাদান সমন্বিত বলে, মানব শরীরে জলের আধিক্য দেখা যায়। আমরা জানি পঞ্চভূতের মধ্যে অপ একটি। অর্থাৎ জল একটি। কিন্তু আসলে এই জলের মধ্যে আছে জলের সূক্ষ্মরূপ অর্থাৎ শ্রদ্ধা, সোম ও বৃষ্টি। তরল আহুতির সূক্ষ্ম রূপকে বলে শ্রদ্ধা।
ব্রহ্মসূত্র বলছে, এই জলই , কালক্রমে মনুষ্যে রূপান্তরিত হয়। জীব মৃত্যুকালে জলাদি সমন্বিত হয়ে উৎক্রমন করে,এবং তারপরে আবার মনুষ্যরূপে জন্ম গ্রহণ করে।
আমাদের সৎকর্মের ফলভোগ শেষ হয়ে গেলে আমরা আবার পৃথিবীতে নেবে আসি। আমরা যে পথে গিয়েছিলাম আবার সেই পথেয় নেবে আসি। এখন কথা হচ্ছে, আমরা যদি কর্মফল ভোগ করার পরে , নেবে আসি আবার পৃথিবীতে, তবে যে বলা হয়ে থাকে যে আমরা প্রারব্ধ ফল ভোগ করার জন্য পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণ করি, সেটা কি তা হলে সত্য নয় ? আসলে দেবতা হয়ে মানুষ তার সৎকর্মের ফল ভোগ করে। কিন্তু তার যে অসৎ কর্মফল সঞ্চিত হয়েছে, তার কি হবে ? শুভ কর্মফল ভোগের জন্য যেমন দেব-দেহের প্রয়োজন, তেমনি মন্দ কর্মের ফল ভোগের জন্য পশু দেহ বা কর্ম অনুযায়ী ফলভোগের উপযুক্ত দেহের প্রয়োজন। তাই আমরা আবার দেহ ধরনের জন্য উদগ্রীব হই কিন্তু জীবের যাতায়াতের রাস্তাটা কি ?
ব্রহ্মসূত্র বলছে, মানুষ যে পথে আসে সেই পথেই যায়। কোথা থেকে আসে আর কোথায়ই বা যায়। ব্রহ্মসূত্র বলছে, মানুষ তার সুকর্মের জন্য স্বর্গ বা চন্দ্রলোকের দিকে যাত্রা করে। আর সেই একই মানুষের, তার দুস্কর্মের জন্য তাকে যেতে হয় যমলোকে। আর সঞ্চিত কর্মফলের ভোগ-অবশিষ্ট অংশ ভোগই নব জন্মের কারন। কতকগুলো কর্ম আছে, যার ফল দেহ ভিন্ন ভোগ সম্ভব নয়। তা সে ইতর জীবদেহ হতে পারে, আবার উৎকৃষ্ট মনুষ্য দেহ হতে পারে।
এই চন্দ্রলোক ও যমলোক কোথায়, এবং কাকে বলে, সে সম্পর্কে আমরা একটু জেনে নেবো। পড়াবিদ্যাবিদগণ বলছেন, এই পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টির পূর্বে চন্দ্রে জীবনের খেলা চলছিল। এই চন্দ্র তখন ছিল গ্রহ। কালে কালে চন্দ্রে জীবনীশক্তির বিস্তার ও রক্ষার পরিবেশ নষ্ট হতে থাকে। চন্দ্র নিজেও আস্তে আস্তে ছোট হতে থাকে। একটা সময় চন্দ্র ধোঁয়াশায় পরিণত হবে। এবং অদৃশ্য হয়ে যাবে।
আমরা জানি উদ্ধারের দুটো রাস্তা একটা কর্ম আর একটা জ্ঞান। কর্মের মাধ্যমে মানুষ পিতৃযানের প্রাপ্তি ঘটে, আবার বিদ্যা বা জ্ঞান দ্বারা মানুষ দেবযানের প্রাপ্তি ঘটে। আর একটা আছে ভক্তি যোগ, এরা কর্ম করে না আবার জ্ঞানের রাস্তাতেও যায় না কেবল জন্মায় আর মরে - "জায়স্ব-ম্রিয়স্ব" .। এরা তৃতীয় লোকের বাসিন্দা।
পৃথিবীতে চার ধরনের প্রাণী দেখা যায়। জরায়ুজ, অণ্ডজ, একটা স্বেদজ বা শ্যাওলা আর একটা হচ্ছে উদ্ভিদ । শ্যাওলা জল থেকে জাত। উদ্ভিদ পৃথিবীতে থেকে জাত, অর্থাৎ এই প্রকার প্রাণী স্ত্রী-পুরুষের মিলন ছাড়াই জন্ম নিয়ে থাকে।
জীব চন্দ্রলোক থেকে যাত্রা ক'রে, বিভিন্ন বাহনের মাধ্যমে, অর্থাৎ প্রথমে আকাশ, তার পড়ে বায়ু, বায়ু থেকে ধুম, ধুম থেকে কুয়াশা, কুয়াশা থেকে মেঘ, মেঘ থেকে বৃষ্টি। তারপর ব্রীহি অর্থাৎ উৎকৃষ্ট ধান উৎপাদনের শক্তি, বা অন্ন - ঔষধি গাছ, অর্থাৎ যে সব গাছ ফল উৎপাদনের পরেই মারা যায়। তার পরে বনস্পতি ইত্যাদি রূপে জাত হন। এবার যে কেউ এই ব্রিহী বা অন্ন যখন ভক্ষণ করে, তখন তার দেহে শুক্র উৎপন্ন হয়। এই শুক্র আবার যোনিপথে গর্ভে প্রবেশ করে। এবং গর্ভ থেকে একটা নতুন দেহের জন্ম হয়। যোনিকে আশ্রয় করে জীব স্বীয় ভোগায়তান দেহ লাভ করে। "যোনেঃ শরীরম।"
একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে, মানুষ কিন্তু এই ব্রীহি বা উদ্ভিদ হয়ে যান না। এগুলো হচ্ছে তাদের বাহন। এই বাহন গুলোতে চেপে জীব পৃথিবীতে আসে। মানুষ যখন মারা যায়, তখন তাকে চিতার অগ্নিতে বা কবরে চড়িয়ে দেওয়া হয়। এবার এই দেহ থেকে উদ্ভূত জল ধোঁয়া হয়ে উপরে উঠে যায়। এবং চন্দ্রলোকে গিয়ে ভোগ শরীর নির্মাণ করে। চন্দ্রলোকে হচ্ছে ভোগক্ষেত্র। চন্দ্রলোকে জীবগন দেবভোগ্য। অর্থাৎ দেবগন এদেরকে পেয়ে, দর্শন করে তৃপ্তি অনুভব করেন।
মানুষ যখন উর্দ্ধলোকে যান, তখন জ্ঞানীগণ পূর্ণমাত্রায় সচেতন থাকেন, অর্থাৎ আমাদের যেমন ইন্দ্রিয় অনুভূতি আছে, তাঁরাও ইন্দ্রিয় অনুভূতি সম্পন্ন থাকেন।তাদের গতি সম্পর্কে তারা পূর্ণমাত্রায় সচেতন থাকেন। কিন্তু যখন তারা ইহজগতে নেবে আসেন, তখন তারা সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। পাহাড় থেকে মানুষ পড়ে গেলে মানুষ যেমন কিছুটা সময়ের জন্য সংজ্ঞাহীন হয়ে যান, পরে আত্মীয়স্বজনরা তাকে সেবাসুশ্রতা দিয়ে, সুস্থ করে তুললে তিনি আবার জ্ঞান ফিরে পান। ঠিক তেমনি নেবে আসার যে যাত্রাপথ, জীবের এই অবস্থায়, সে সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই তার থাকে না। এবং তার ভাবনা অনুযায়ী বা সংকল্প-বাসনা অনুযায়ী তার দেহধারন হয়। জ্ঞানী আত্মা স্বর্গলোককেই নিজেদের বাসভূমি মনে করেন, আর পৃথিবীতে তাদের স্থিতিকালকে স্বপ্নাবস্থা মনে করেন।
এখন এই যে আমাদের যাত্রা এটি কে পরিচালনা করে ? উপনিষদ বলছেন এটি বৈশ্বানর। এখন এই বৈশ্বানর কে ? এই সম্পর্কে একটা গল্প শুনুন।
উপমন্যুর পুত্র প্রাচীনশাল, পুলস্ত পুত্র সত্যযজ্ঞ, ভাল্লবির পুত্র ইন্দ্রদ্যুম্ন, এবং শর্করাক্ষ পুত্র জন এছাড়া অশ্বতরাশ্বের পুত্র বুড়িল এই কয়জন গৃহস্থ সন্যাসীর মনে প্রশ্ন জাগলো, আমাদের আত্মা কে ? ব্ৰহ্মই বা কি ? তো এই প্রশ্নের উত্তর পাবার জন্য উদ্দালক, আরুণি মুনির কাছে গেলেন। তিনি এদের কেকয় পুত্র অশ্বপতির কাছে নিয়ে গেলেন।
অশ্বপতি বললেন : ১. যাকিছু সুন্দর, যাকিছু উজ্বল তাই বৈশ্বানর। কিন্তু এই দ্যুলোক আত্মার মস্তক মাত্র ২. আদিত্য বা সূর্য ও তার তেজ, আলোক রশ্মি, ও তার বিচিত্রপূর্ন রঙ এটি আত্মার চোখ। এর নাম বিশ্বরূপ ৩. এই যে বায়ু এর নাম পৃথকবর্ত্ম , ইনি হলেন আত্মার প্রাণ। ৪. এই যে আকাশ এটিকে বলা হয় বহুল বা বিস্তৃত , আত্মার মধ্যভাগ হলো আকাশ। ৫. জল হচ্ছে আত্মার মূত্রাশয়। ৬. পৃথিবীকে বলা হয় প্রতিষ্ঠা। যিনি হচ্ছেন আত্মার পা।
এখানে আত্মার বিভিন্ন অংশকে আলাদা ভাবে, বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ বৈশ্বানর বা পরম-আত্মা হচ্ছেন, একটা বিরাট পুরুষ যার ব্যাপ্তি অসীম। আর তার অঙ্গগুলো হচ্ছে দ্যুলোক, সূর্য, বায়ু, আকাশ, জল ও পৃথিবী।
ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ। হরি ওম
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ :
আজ আমরা শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ থেকে ব্রহ্ম কথা শুনবো।একবার কিছু ব্রহ্ম জিজ্ঞাসু একত্রিত হয়ে পরস্পরকে প্রশ্ন করলেন - ব্রহ্মইকি এই জগতের কারন ? আমরা কোথা থেকে এসেছি ? আমাদের পালনপোষন কে করেন ? মৃত্যুর পর আমরা কোথায় যাবো ? আমরা কেন সুখ দুঃখ ভোগ করি ? আসলে এই প্রশ্নগুলো আমাদের সকলের, এবং সর্বকালের । প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে জগতের কারন কি ?
কেউ বলছেন, কালই জগতের কারন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জগৎ আজ এই অবস্থায় এসেছে। আবার কালের প্রভাবে এই জগতের নিস্পত্তি হয়ে যাবে। কেউ বলছেন, জগতের সমস্ত বস্তুর একটা নিজস্ব স্বভাব আছে, বা ধর্ম আছে। এই স্বভাবই জগৎ সৃষ্টির কারন। আবার কেউ বলছেন ওসব কিছুই নয়, জগৎ সৃষ্টির কারন হচ্ছে নিয়তি, অর্থাৎ কার্য্য-কারন প্রক্রিয়ার সমষ্টি। আবার কেউ বলছেন, যদৃচ্ছা অর্থাৎ সৃষ্টি কোনো নিয়মে আবদ্ধ নয়, ঈশ্বরের ইচ্ছে হয়েছে তাই এই সৃষ্টি হয়েছে। এর কোনো কারন নেই। ইচ্ছের আবার কোনো কারন হয় নাকি ? প্রাণ কেন সৃষ্টি হলো ? এর কোনো জবাব হয় নাকি ? কতকগুলো উপাদান অকারণেই একত্রিত হয়েছিল, তাই এমিবার সৃষ্টি হলো। কিন্তু কেন এগুলো অর্থাৎ এমিবার উপাদানগুলো একত্রিত হলো, তা কেউ জানে না। কেউ বললেন, ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম, এই পঞ্চভূত মিলেমিশে এই জগতের উদ্ভব হয়েছে। কেউ বললেন, পরম-আত্মা আর জীবাত্মা মিলে এই জগতের সৃষ্টি করেছে। কেউ বললেন, তোমরা যা বললে সেগুলো সবই সত্যি। একটা সম্মিলিত ক্রিয়ার ফলেই এই জগতের উদ্ভব। অন্যজন বললেন, দেখো যা কিছু ঘটছে, তার একজন কর্তা আছেন। তাহলে সেই কর্তাটি কে ? মানুষ বড় দুর্বল। মানুষ কখনো পঞ্চভূতকে একত্রিত করে জগৎ সৃষ্টি করতে পারে না। মানুষ নিজেই তার সুখ-দুঃখ দূর করতে পারে না। মানুষ যদি জগৎ সৃষ্টি করতো, তবে সুখ বই দুঃখ থাকতো না। কারন মানুষ কখনোই দুঃখ চায় না। জগৎটা তো ভালো-মন্দের, সুখ দুঃখের আগর। মানুষ যদি এই জগৎ সৃষ্টি করতো তবে সেটা খুবই মনোরম হতে পারতো। দেখছো না মানুষ দিনে দিনে সুখের সম্পদ বাড়িয়েই চলেছেন। প্রকৃতিকে টেক্কা দিয়ে কেমন নকল আলো বানাচ্ছে, হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে, দিন দিন কম কষ্টে কি করে বেশি লাভ করা যায়, তার সফল প্রয়াস কেবলমাত্র মানুষই করতে পারে। তাই এই সৃষ্টি যদি জীবাত্মা বা মানুষ করতো তবে না জানি কত সুন্দর হত আমাদের এই বাসভূমি।
এই আলোচনা যখন চলছে, তখন একজন বয়স্ক ঋষি ভাবলেন, এই ব্যাপারটা নিয়ে একটু গভীর ভাবে ভাবতে হবে। তো বললেন এস আমরা ধ্যান করি।
ঋষিরা গভীর ধ্যানে মগ্ন হলেন। এবং আত্মশক্তি বলে তারা অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখলেন জ্যোতির্ময় পরমাত্মার শক্তিই এই জগতের কারন। আর এই পরমাত্মাকে আড়াল করে রেখেছে মায়া। মায়া তার তিন গুণের সাহায্যে পরমাত্মাকে আড়াল করে রেখেছে। জ্যোতির্ময় পরমাত্মার শক্তিই এই জগতের কারন। আগে ঋষিরা জগৎ সৃষ্টির কারন বলে যা ভেবেছিলেন, সেগুলো কোনোটাই ভুল নয়, কিন্তু অসম্পূর্ন। আর এই সৃষ্টির কারন বলে তারা যা ভেবেছিলেন, তাদের সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করছেন এই পরমাত্মা।
ব্যাপারটা যেন কেমন মনে হয়। ধ্যানে বসলেন, আর সব কিছু পরিস্কার হয়ে গেল ? তাহলে এই প্রশ্ন (জগৎ কে সৃষ্টি করেছেন ?) হাজার বছর ধরে কেন চলছে। আর যদি কেউ এটা বুঝেই থাকেন, তো আমরা বুঝতে পারছিনা কেন ? অর্থাৎ ঋষিরা যদি এটা বুঝেই থাকেন, তবে আমরা বুঝতে পারছি না কেন ? আমাদের কাছে, এগুলো সব শোনা কথা, আমরা কেউ বিশ্বাস করি আর কেউ করি না। কেন ? আর যারা বিশ্বাস করেন , তারাও কি সত্যিই জানেন যে এই বিশ্বের নিয়ন্ত্রক হচ্ছেন, ব্রহ্ম।
থমাস নেওকমেন বা ধরুন অন্য কিছু নাম ভদ্রলোকের, চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন। আর লক্ষ করছিলেন, কেটলির জল গরম হয়ে, কেটলির মুখটাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিচ্ছে। তার মাথার মধ্যে চিন্তা উঠলো, কেন এমন হয় ? এই চিন্তা থেকেই একসময় আবিষ্কার হয় স্টিম ইঞ্জিনের। কিংবা ধরুন, গাছ থেকে আপেলটা পরে গেল, আর নিউটন ভাবতে লাগলেন, আপেলটা কেন গাছ থেকে নিচে পড়লো, উপরে গেল না কেন ? এর থেকেই আবিষ্কার হয় মাধ্যাকর্ষণ শক্তির। আমরা দেখি, শুনি, কিন্তু বুঝি না। আর যদি বুঝিও তা হলো - আপেলটা মাটিতেই পড়ে - এই জ্ঞান সঞ্চয় করি মাত্র আমরা। আগুনে জ্বাল দিলে জল গরম হয়, এটা আমাদের সঞ্চিত বা প্রত্যক্ষ জ্ঞান। কিন্তু কিছু মানুষ আছেন, তারা ভাবেন, কেন হয় ? এই কেন হয় যারা ভাবেন, তারা শুধু প্রতক্ষ্য জ্ঞানে সীমাবদ্ধ থাকেন না। তারা একটা অনুভবের জ্ঞান অর্জন করেন, এটাকে বলা হয় প্রজ্ঞা। জ্ঞান হচ্ছে প্রতক্ষ্য বা শোনা, বা বই পড়ে জানা। আর প্রজ্ঞা হচ্ছে অন্তরের অনুভূতি। আর এই অন্তরের অনুভূতি সব সময় ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না। যে কোনোদিন রসোগল্লা খায় নি, তাকে আপনি কি করে বোঝাবেন যে রসোগল্লা কেমন। আপনি বড়জোর বলতে পারেন, এটি মিষ্টি। কিন্তু মিষ্টি ও অনেক কিছুই হয়, রসোগোল্লা রসোগোল্লাই । তোমার তুলনা তুমি। ব্রহ্মও অনুভূতি লব্ধ জ্ঞান। এটি প্রাজ্ঞ ব্যক্তির হয়ে থাকে। অন্যকে বোঝানো সম্ভব নয়। আর এই জ্ঞানকে বলে স্বজ্ঞা। মনের গভীরে যখন জ্ঞান আপনা-আপনি জেগে ওঠে তখন তাকে বলে স্বজ্ঞা। যেকোনো প্রশ্ন নিয়ে মনের গভীরে প্রবেশ করলে মনের মধ্যেই এর উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়। আসলে আমাদের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর আগে থেকেই আমাদের মনের গভীরে গ্রোথিত হয়ে আছে। আমাদের কাজ হচ্ছে আমাদের অন্তর্চক্ষুকে সেই দিকে ফেরানো। ধ্যান হচ্ছে মনকে একমুখী করার প্রক্রিয়া। আর প্রজ্ঞা বা আমাদের যেকোনো প্রশ্নের উত্তর যখন আমাদের চেতন স্তরে ভেসে ওঠে, তখন তাকে বলে প্রজ্ঞা । তো ঋষিগণ এই ধ্যানের গভীরে প্রবেশ করে, ব্রহ্মকে জানলেন। আর যেহেতু ব্রহ্ম ভাষার অতীত, তাই তারা একটা উপমার সাহায্যে আমাদের ব্রহ্মজ্ঞান দেন করলেন।
তো ঋষিগণ একটা উপমার সাহায্যে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন। বলছেন : ব্রহ্ম যেন একটা বিশাল চক্র। যার নাম ব্রহ্মচক্র। এই ব্রহ্মচক্র, মহাবিশ্বকে ধারণ করে রয়েছেন। কি দেবতা, কি মানুষ, কি জীব-জন্তু, উদ্ভিদ, কীটাণুকীট,এমনকি গ্রহ, উপগ্রহ, তারকমণ্ডলী, সবকিছুই এই চক্রের অন্তর্গত। অর্থাৎ ব্রহ্ম এই মহাবিশ্বের রূপ দিয়েছেন।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কেমন করে এই রূপটা দিলেন। সৃষ্টি হচ্ছে ব্রহ্মর মায়াগুনের ক্রিয়া। ব্রহ্ম তার মায়া গুনের সাহায্যেই এই সৃষ্টি করেছেন। এই মায়া গুন হচ্ছে ব্রহ্মচক্রের পরিধি মাত্র। ব্রহ্ম হচ্ছে বিশ্বের অতীত। আর বিশ্ব হচ্ছে ব্রহ্মসমুদ্রের মধ্যে বুদ্বুদ মাত্র। ব্রহ্ম দ্বারা, ব্রহ্মের ভিতরে সৃষ্ট অর্থাৎ ব্রহ্মর একটা ফোটা এই বিশ্বের মধ্যেও আছেন। অর্থাৎ তিনি বিশ্বের মধ্যেও আছেন, আবার বিশ্বের বাইরেও আছেন। ব্রহ্মকে দেখা যায় না। কারন তিনি তিনটি গুনের দ্বারা আবৃত। এগুলো হচ্ছে সত্ত্বঃ, রজঃ ও তমঃ। এই তিনটি গুনের দ্বারা আবৃত আছেন বলে কেউ তাকে দেখতে পান না।
এই ব্রহ্ম চক্রের ষোলোটি কলা অর্থাৎ পঞ্চ ভূত, পঞ্চ কর্ম-ইন্দ্রিয়, পাঁচটা জ্ঞান ইন্দ্রিয় এবং মন।
পঞ্চভূত : আকাশ, বাতাস, আগুন, জল ও মাটি।
কৰ্মইন্দ্রিয় পাঁচটি : মুখ, হাত, পা, মলদ্বার, ও জনন-ইন্দ্রিয়।
জ্ঞান ইন্দ্রিয় : চোখ, কান, নাক, জিহ্ববা, ত্বক।
এর উপরে আছে আমাদের মন। এই মোট ষোলোটি অঙ্গ বা অংশ মিলিয়ে আমাদের বিশ্ব ।
এখন আমরা জানি, প্রত্যেকটি চাকায় কতকগুলো স্পোক বা শলাকা থাকে। ঋষিরা বলছেন, ব্রহ্মচক্র-তেও এইরকম পঞ্চাশটি শলাকা আছে। এই শলাকাগুলো আর কিছু নয় আমাদের মনের অবস্থা বিশেষ।
এগুলো হচ্ছে :প্রথম হচ্ছে ভ্রম : ভ্রম পাঁচরকম - আত্মপ্রীতি, আসক্তি, ঘৃণা, জীবনতৃষ্ণা এবং বিপর্যয়জ্ঞান।
দ্বিতীয়ত ত্রূটি বা আমাদের দুর্বলতা : এগুলো আছে ২৮টি। মিথ্যা তুষ্টি।
তৃতীয়ত : আমাদের অষ্টসিদ্ধি অর্থাৎ প্রথমতঃ অনিমা (ইচ্ছেমত ছোট হয়ে যাওয়া),
দ্বিতীয়তঃ : লঘিমা (ইচ্ছেমত বড়ো বা হালকা হয়ে যাওয়া), তৃতীয়তঃ প্রাপ্তি (যেখানে খুশি যেতে পারেন), চতুর্থতঃ প্রাকাম্যম (যা চাইবেন তাই পেতে পারেন), পঞ্চমতঃ মহিমা (পাহাড়ের মতো বিশাল হয়ে যেতে পারেন), ষষ্ঠত ঈশিত্বম (অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি), সপ্তমতঃ বশিত্বম (সবাইকে বশ করার ক্ষমতা) , এবং অষ্টমতঃ বা সবশেষে কাম-অবসাইত ( সব কামনা অপসারণ হয়ে গেল) ।
চতুর্থত : নয়রকম আছে তুষ্টি। এগুলো নিয়ে আমরা ভবিষ্যতে আলোচনা শুনবো।
তো আমরা জানলাম মোট ৫০টি স্পোক বা শলাকা আছে এই ব্রহ্মচক্রে।
এরপরে আছে আরো কতকগুলো আছে উপশালাকা এদের সংখ্যা হচ্ছে কুড়িটি।
এরমধ্যে দশটা ইন্দ্রিয়। অষ্টৈক ষড়ভিঃ, অর্থাৎ মানবদেহে আটটি ধাতু। সেগুলো হচ্ছে -ত্বক, চর্ম, মাংস, রুধির, মেদ, অস্থি, মজ্জা, ও শুক্র।
ঋষিগণ বলছেন, এই জগৎ বাসনার বন্ধনে আবদ্ধ। এই বাসনাই আমাদের জগৎ অনুভূতি দিচ্ছে। জড় বস্তুর প্রতি আমরা আসক্ত। বিভিন্ন সম্পর্কের প্রতি, অর্থাৎ দারা-পুত্র-পরিবার এর প্রতি আমরা মোহগ্রস্থ। ইন্দ্রিয়সুখের প্রতি আমরা আসক্ত। আমাদের এই আসক্তি, মোহ, বাসনা যদি না থাকতো তবে আমরা মুক্ত পুরুষ হয়ে যেতে পারতাম। জগতের প্রতি আমাদের দৃষ্টিকোণ পালটে যেতো। জগৎ বলে আর আমাদের কাছে কিছুই থাকতো না।
ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ। হরি ওম।
সুষুপ্তি :
আমরা জানি আমাদের মনের তিনটি/চারটি স্তর আছে। প্রথম হচ্ছে চেতন অবস্থা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে স্বপ্নাবস্থা। তৃতীয়টি হচ্ছে সুসুপ্তির স্তর। চতুর্থটি হচ্ছে তুরীয় অবস্থা। আজ আমরা এই সুসুপ্তির অবস্থা সম্পর্কে জানবো।
আমরা যখন জেগে থাকি, তখন আমরা মনের চেতন অবস্থায় থাকি। আমরা যখন ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখি, তখন আমরা স্বপ্নাবস্থায় থাকি। এই স্বপ্নঅবস্থার পরে ঘুমের মধ্যে আমাদের যে অবস্থা হয় তাকে বলে সুষুপ্তি। শ্রূতি বা উপনিষদ বলছে, জীব যখন নিদ্রায় মগ্ন হয়, এবং কিছুই জানে না, তখন সে নাড়ীসমূহ অবলম্বনে হৃদয় আকাশে প্রবেশ করে। আমরা যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকি তখন আমাদের সমস্ত ইন্দ্রিয় শান্ত হয়ে যায়। কোনো ইন্দ্রিয় অনুভূতি তখন আমাদের থাকে না। এই সময় সে চিন্তা রোহিত হয়ে যায়। না থাকে কোনো সংকল্প, না থাকে কোনো দুশ্চিন্তা, না থাকে কোনো দুর্ভাবনা। না থাকে ভালো লাগার অনুভূতি, না থাকে খারাপ লাগার অনুভূতি। এই সময় আমাদের ইন্দ্রিয়শক্তি আমাদের নাড়ীর মধ্যে অবস্থান করে। এই সময় আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো নিজের মধ্যে মিশে যায়। বাইরের জগতের সঙ্গে আমাদের আর কোনো সম্পর্ক থাকে না। আমাদের নাড়ীগুলো তখন সূর্য্য রশ্মির তেজে পূর্ন হয়ে যায়। ইন্দ্রিয়গুলো কৰ্মরহিত হয়ে যায়। এই সময় আমাদের ভালো মন্দ জ্ঞান থাকে না। আর এই সময়টাতেই আমরা শুদ্ধ, মুক্ত, বন্ধনহীন অবস্থায়, আমরা আমাদের প্রকৃত স্বরূপে অবস্থান করি।
মৃত্যু পথযাত্রী মানুষ বা জীব যখন পরলোকে যাত্রার প্রস্তূতি নিচ্ছেন, এই সময় যদি আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবরা তাকে ঘিরে থাকে, তবে একটা প্রচলিত প্রশ্ন আমরা করে থাকি। আমাকে কি চিনতে পারছেন ? এই সময় তার একটা আচ্ছন্ন ভাব বা ঘোরের মধ্যে তিনি থাকেন। প্রাণ বায়ু যতক্ষন আসা যাওয়া করে, ততক্ষন তিনি চিনতে পারেন। কিন্তু প্রাণবায়ু চলে গেলে তিনি আর দেখতে পান না, চিনতেও পারেন না। কথাও বলতে পারেন না। মৃত্যুর ঠিক আগে আমরা এই সুসুপ্তির অবস্থায় বা আচ্ছন্ন অবস্থায় কিছুক্ষন অবস্থান করি। তার পরেই আমরা মনোময় দেহে স্থানান্তরিত হই।
মানুষ যখন স্বপ্নাবস্থায় থাকে তখন আমাদের আত্মা স্বপ্নবৃত্তি অবলম্বনে ইন্দ্রিয়গনকে সঙ্গে নিয়ে নিজের শরীরে যেমন ইচ্ছে ভ্রমন করেন। কখনো রাজা, কখনো ফকির, কখনো জলে কখনো আকাশে বিচরণ করেন। আবার তিনি যখন সুসুপ্তিতে থাকেন, তখন তিনি কিছুই জানেন না, কিছুই করেন না । আমাদের শরীরে যে বাহাত্তর হাজার নাড়ী আছে, সেই নাড়ীগুলোকে অবলম্বন করে এই শরীরেই অবস্থান করেন। অর্থাৎ সুসুপ্তির সময় আত্মা শরীর ছেড়ে কোথাও যান না। কিন্তু শরীরে ইন্দ্রিয়গুলোর সঙ্গে তিনি থাকেন না। সূর্য্য যেমন একস্থানে থেকে সমস্ত জগৎকে আলোকিত করেন, তেমনি এই আত্মা আমাদের হৃদয়ে থেকে সর্ব শরীরে চৈতন্য ব্যাপ্ত করে রাখেন। জাগ্রত অবস্থায় আমরা বুদ্ধির অনুসরণ করি, স্বপ্ন-অবস্থায় আমরা বুদ্ধি সংকুচিত হন। আর সুসুপ্তির অবস্থায় বুদ্ধির লোপ পায়। এইখানে একটা কথা বলা প্রয়োজন, আত্মার গমন নির্গমন বলে কিছু হয় না। কারন আত্মা সর্বত্র।
আসলে সুষুপ্তি কালে জীবাত্মা পরম-আত্মাতে উপাধিগুলোকে নিয়ে অর্থাৎ আমাদের ইন্দ্রিয়াদি সহ অবস্থান করে থাকে। কিন্তু জীবাত্মা যেহেতু মায়াদ্বারা আছন্ন হয়ে থাকে, তাই সুষুপ্তি কালে জীবাত্মার এই একত্ত্ব অনুভব করে পারে না। এই সুষুপ্ত জীব আবার জাগ্রত অবস্থায় আসে।
আমরা যখন সঙ্গাহীন হয়ে যাই, অর্থাৎ সাময়িক মূর্ছা যাই, তখন আমাদের আংশিক সুসুপ্তির উপলব্ধি করতে পারি। অর্থাৎ মূর্ছা-কালীন অবস্থার স্মৃতি আমাদের থাকে না। তেমনি সুসুপ্তির সময় আমরা কি অবস্থায় ছিলাম সেই স্মৃতিও আমাদের থাকে না।
ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ হরি ওম।
বিজয়বাবুর জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানটি যিনি বা যারা রেকর্ড করেছিলেন, তারা আমাকে প্রচারের স্বার্থে দিয়েছিলেন। কিন্তু যখন আমাদের চ্যানেলটি অর্থ উপার্জনের যোগ্য হয়েছে, তখন অন্য কারুর রেকর্ড করা জিনিস থেকে অর্থ উপার্জন অনৈতিক বলে এটি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপনার অসুবিধার জন্য দুঃখিত। আপনার ফোন / জিমেল ঠিকানা দেবেন, যাদের ভিডিও তাদের বলে দেব। নমস্কার।
ব্রহ্মসূত্র বলছে, এই জলই , কালক্রমে মনুষ্যে রূপান্তরিত হয়। জীব মৃত্যুকালে জলাদি সমন্বিত হয়ে উৎক্রমন করে,এবং তারপরে আবার মনুষ্যরূপে জন্ম গ্রহণ করে।
আমাদের সৎকর্মের ফলভোগ শেষ হয়ে গেলে আমরা আবার পৃথিবীতে নেবে আসি। আমরা যে পথে গিয়েছিলাম আবার সেই পথেয় নেবে আসি। এখন কথা হচ্ছে, আমরা যদি কর্মফল ভোগ করার পরে , নেবে আসি আবার পৃথিবীতে, তবে যে বলা হয়ে থাকে যে আমরা প্রারব্ধ ফল ভোগ করার জন্য পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণ করি, সেটা কি তা হলে সত্য নয় ? আসলে দেবতা হয়ে মানুষ তার সৎকর্মের ফল ভোগ করে। কিন্তু তার যে অসৎ কর্মফল সঞ্চিত হয়েছে, তার কি হবে ? শুভ কর্মফল ভোগের জন্য যেমন দেব-দেহের প্রয়োজন, তেমনি মন্দ কর্মের ফল ভোগের জন্য পশু দেহ বা কর্ম অনুযায়ী ফলভোগের উপযুক্ত দেহের প্রয়োজন। তাই আমরা আবার দেহ ধরনের জন্য উদগ্রীব হই কিন্তু জীবের যাতায়াতের রাস্তাটা কি ?
ব্রহ্মসূত্র বলছে, মানুষ যে পথে আসে সেই পথেই যায়। কোথা থেকে আসে আর কোথায়ই বা যায়। ব্রহ্মসূত্র বলছে, মানুষ তার সুকর্মের জন্য স্বর্গ বা চন্দ্রলোকের দিকে যাত্রা করে। আর সেই একই মানুষের, তার দুস্কর্মের জন্য তাকে যেতে হয় যমলোকে। আর সঞ্চিত কর্মফলের ভোগ-অবশিষ্ট অংশ ভোগই নব জন্মের কারন। কতকগুলো কর্ম আছে, যার ফল দেহ ভিন্ন ভোগ সম্ভব নয়। তা সে ইতর জীবদেহ হতে পারে, আবার উৎকৃষ্ট মনুষ্য দেহ হতে পারে।
এই চন্দ্রলোক ও যমলোক কোথায়, এবং কাকে বলে, সে সম্পর্কে আমরা একটু জেনে নেবো। পড়াবিদ্যাবিদগণ বলছেন, এই পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টির পূর্বে চন্দ্রে জীবনের খেলা চলছিল। এই চন্দ্র তখন ছিল গ্রহ। কালে কালে চন্দ্রে জীবনীশক্তির বিস্তার ও রক্ষার পরিবেশ নষ্ট হতে থাকে। চন্দ্র নিজেও আস্তে আস্তে ছোট হতে থাকে। একটা সময় চন্দ্র ধোঁয়াশায় পরিণত হবে। এবং অদৃশ্য হয়ে যাবে।
সুতরাং আমরা যে ক্রমবিকাশ শক্তির অন্তর্গত তার মধ্যে স্থূল গ্রহ - মঙ্গল, পৃথিবী, বুধ। বাকি চারটি অদৃশ্য। আর আমরা ক্রমবিকাশ শক্তির চতুর্থ শৃঙ্খলের, চতুর্থ প্রদক্ষিণকালের চতুর্থ গ্রহ, এবং পঞ্চম মূল জাতির অন্তর্গত। পরাবিদগন বলছেন, পৃথিবীতে এখন পঞ্চম ও ষষ্ঠ শাখাজাতি বর্তমান আছে। যতদিন যাবে, ততই পৃথিবীতে সর্ববিধ উন্নতির বিকাশ দেখা যাবে। ষষ্ঠ ও সপ্তম মূল জাতির আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান জগতের শিক্ষিত ব্যক্তিগণ, ক্রমশ ধর্মবুদ্ধি লাভ ক'রে, সিদ্ধ শ্রেণীভুক্ত হবেন। এই সপ্তম মূল-জাতির অস্তিত্ব শেষ হতে কত লক্ষ বৎসর লাগবে, তা বলা যায় না।
পৃথিবী শৃঙ্খল শেষ হলে, নতুন গ্রহকে অবলম্বন করে পঞ্চম শৃঙ্খলের কাজ আরম্ভ হবে। আর তখন asteroids নামক যে গ্রহপুঞ্জ দেখতে পাওয়া যায়, সেটা পিণ্ডীভূত হয়ে একটা বড়ো গ্রহ হবে। এবং ছয়টি অদৃশ্য গ্রহকে নিয়ে, পঞ্চম শৃঙ্খলের কাজ আরম্ভ হবে।
পৃথিবী তখন, জরাজীর্ন ও ক্ষুদ্রাকার হয়ে, নতুন গ্রহের উপগ্রহ রূপে গণ্য হবে।
প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় শৃঙ্খলের কাজ শেষ হয়ে গেছে। একমাত্র চাঁদ ছাড়া, আর কোনো গ্রহের চিন্হ নেই। চাঁদও কালক্রমে জ্যোতির্ময় কুয়াশায় পরিণত হবে। চন্দ্রলোকে যারা জন্তু ছিলো, তারা এখন মানুষ হয়ে জন্মেছে, আর চাঁদে যারা উদ্ভিদ ছিল তারা এখন জন্তু হয়ে জন্মেছে। পৃথিবীর শৃঙ্খলকাজ শেষ হলে, এখানেও এই প্রকার ঘটবে। যে নতুন গ্রহে, পঞ্চম শৃঙ্খল-এর কাজ আরম্ভ হবে সেখানেও এই প্রকার হবে। আমাদের উদ্ভিদ ওখানে জন্তু হবে, আমাদের জন্তু ওখানে মানুষ হবে, কিন্তু অপেক্ষা করতে হবে, যতদিন না মানুষ সৃষ্টির পরিবেশ তৈরি হয়। আর যে সব মানুষ পৃথিবীতে আত্মউন্নতি লাভ করতে পারবে না, তাদের তাদেরও অপেক্ষা করতে হবে, যতদিন না ওখানে মানুষের আবির্ভাব হয়। এই অপেক্ষাকাল হবে, দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর। এটাকে বিচারাধীন কাল (Aeoniam Condemnation Period ) বলা যেতে পারে।
পরাবিদ্যা আর ব্রহ্মবিদ্যা মেলাতে গেলে একটা জিনিস মনে হয়, প্রাচীন মুনি ঋষিরা এই চন্দ্রলোক থেকে এসেছিলেন। তাই তারা মনে করতেন, পৃথিবীতে তাদের কাজ শেষ হয়ে গেলে, তারা আবার চন্দ্রে ফিরে যাবেন। কিন্তু যারা আত্মউন্নতি লাভ করতে পারবে না, অর্থাৎ অজ্ঞান তাদের স্থান হবে "অসূর্য্যা নাম তে লোকা"অর্থাৎ এক অন্ধকার আচ্ছন্ন জগতে। এইলোককে ব্রহ্ম বিদ্যাবিদগন বলছেন যমলোক।
আমরা জানি উদ্ধারের দুটো রাস্তা একটা কর্ম আর একটা জ্ঞান। কর্মের মাধ্যমে মানুষ পিতৃযানের প্রাপ্তি ঘটে, আবার বিদ্যা বা জ্ঞান দ্বারা মানুষ দেবযানের প্রাপ্তি ঘটে। আর একটা আছে ভক্তি যোগ, এরা কর্ম করে না আবার জ্ঞানের রাস্তাতেও যায় না কেবল জন্মায় আর মরে - "জায়স্ব-ম্রিয়স্ব" .। এরা তৃতীয় লোকের বাসিন্দা।
পৃথিবীতে চার ধরনের প্রাণী দেখা যায়। জরায়ুজ, অণ্ডজ, একটা স্বেদজ বা শ্যাওলা আর একটা হচ্ছে উদ্ভিদ । শ্যাওলা জল থেকে জাত। উদ্ভিদ পৃথিবীতে থেকে জাত, অর্থাৎ এই প্রকার প্রাণী স্ত্রী-পুরুষের মিলন ছাড়াই জন্ম নিয়ে থাকে।
জীব চন্দ্রলোক থেকে যাত্রা ক'রে, বিভিন্ন বাহনের মাধ্যমে, অর্থাৎ প্রথমে আকাশ, তার পড়ে বায়ু, বায়ু থেকে ধুম, ধুম থেকে কুয়াশা, কুয়াশা থেকে মেঘ, মেঘ থেকে বৃষ্টি। তারপর ব্রীহি অর্থাৎ উৎকৃষ্ট ধান উৎপাদনের শক্তি, বা অন্ন - ঔষধি গাছ, অর্থাৎ যে সব গাছ ফল উৎপাদনের পরেই মারা যায়। তার পরে বনস্পতি ইত্যাদি রূপে জাত হন। এবার যে কেউ এই ব্রিহী বা অন্ন যখন ভক্ষণ করে, তখন তার দেহে শুক্র উৎপন্ন হয়। এই শুক্র আবার যোনিপথে গর্ভে প্রবেশ করে। এবং গর্ভ থেকে একটা নতুন দেহের জন্ম হয়। যোনিকে আশ্রয় করে জীব স্বীয় ভোগায়তান দেহ লাভ করে। "যোনেঃ শরীরম।"
একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে, মানুষ কিন্তু এই ব্রীহি বা উদ্ভিদ হয়ে যান না। এগুলো হচ্ছে তাদের বাহন। এই বাহন গুলোতে চেপে জীব পৃথিবীতে আসে। মানুষ যখন মারা যায়, তখন তাকে চিতার অগ্নিতে বা কবরে চড়িয়ে দেওয়া হয়। এবার এই দেহ থেকে উদ্ভূত জল ধোঁয়া হয়ে উপরে উঠে যায়। এবং চন্দ্রলোকে গিয়ে ভোগ শরীর নির্মাণ করে। চন্দ্রলোকে হচ্ছে ভোগক্ষেত্র। চন্দ্রলোকে জীবগন দেবভোগ্য। অর্থাৎ দেবগন এদেরকে পেয়ে, দর্শন করে তৃপ্তি অনুভব করেন।
মানুষ যখন উর্দ্ধলোকে যান, তখন জ্ঞানীগণ পূর্ণমাত্রায় সচেতন থাকেন, অর্থাৎ আমাদের যেমন ইন্দ্রিয় অনুভূতি আছে, তাঁরাও ইন্দ্রিয় অনুভূতি সম্পন্ন থাকেন।তাদের গতি সম্পর্কে তারা পূর্ণমাত্রায় সচেতন থাকেন। কিন্তু যখন তারা ইহজগতে নেবে আসেন, তখন তারা সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। পাহাড় থেকে মানুষ পড়ে গেলে মানুষ যেমন কিছুটা সময়ের জন্য সংজ্ঞাহীন হয়ে যান, পরে আত্মীয়স্বজনরা তাকে সেবাসুশ্রতা দিয়ে, সুস্থ করে তুললে তিনি আবার জ্ঞান ফিরে পান। ঠিক তেমনি নেবে আসার যে যাত্রাপথ, জীবের এই অবস্থায়, সে সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই তার থাকে না। এবং তার ভাবনা অনুযায়ী বা সংকল্প-বাসনা অনুযায়ী তার দেহধারন হয়। জ্ঞানী আত্মা স্বর্গলোককেই নিজেদের বাসভূমি মনে করেন, আর পৃথিবীতে তাদের স্থিতিকালকে স্বপ্নাবস্থা মনে করেন।
এখন এই যে আমাদের যাত্রা এটি কে পরিচালনা করে ? উপনিষদ বলছেন এটি বৈশ্বানর। এখন এই বৈশ্বানর কে ? এই সম্পর্কে একটা গল্প শুনুন।
উপমন্যুর পুত্র প্রাচীনশাল, পুলস্ত পুত্র সত্যযজ্ঞ, ভাল্লবির পুত্র ইন্দ্রদ্যুম্ন, এবং শর্করাক্ষ পুত্র জন এছাড়া অশ্বতরাশ্বের পুত্র বুড়িল এই কয়জন গৃহস্থ সন্যাসীর মনে প্রশ্ন জাগলো, আমাদের আত্মা কে ? ব্ৰহ্মই বা কি ? তো এই প্রশ্নের উত্তর পাবার জন্য উদ্দালক, আরুণি মুনির কাছে গেলেন। তিনি এদের কেকয় পুত্র অশ্বপতির কাছে নিয়ে গেলেন।
অশ্বপতি বললেন : ১. যাকিছু সুন্দর, যাকিছু উজ্বল তাই বৈশ্বানর। কিন্তু এই দ্যুলোক আত্মার মস্তক মাত্র ২. আদিত্য বা সূর্য ও তার তেজ, আলোক রশ্মি, ও তার বিচিত্রপূর্ন রঙ এটি আত্মার চোখ। এর নাম বিশ্বরূপ ৩. এই যে বায়ু এর নাম পৃথকবর্ত্ম , ইনি হলেন আত্মার প্রাণ। ৪. এই যে আকাশ এটিকে বলা হয় বহুল বা বিস্তৃত , আত্মার মধ্যভাগ হলো আকাশ। ৫. জল হচ্ছে আত্মার মূত্রাশয়। ৬. পৃথিবীকে বলা হয় প্রতিষ্ঠা। যিনি হচ্ছেন আত্মার পা।
এখানে আত্মার বিভিন্ন অংশকে আলাদা ভাবে, বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ বৈশ্বানর বা পরম-আত্মা হচ্ছেন, একটা বিরাট পুরুষ যার ব্যাপ্তি অসীম। আর তার অঙ্গগুলো হচ্ছে দ্যুলোক, সূর্য, বায়ু, আকাশ, জল ও পৃথিবী।
ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ। হরি ওম
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ :
আজ আমরা শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ থেকে ব্রহ্ম কথা শুনবো।একবার কিছু ব্রহ্ম জিজ্ঞাসু একত্রিত হয়ে পরস্পরকে প্রশ্ন করলেন - ব্রহ্মইকি এই জগতের কারন ? আমরা কোথা থেকে এসেছি ? আমাদের পালনপোষন কে করেন ? মৃত্যুর পর আমরা কোথায় যাবো ? আমরা কেন সুখ দুঃখ ভোগ করি ? আসলে এই প্রশ্নগুলো আমাদের সকলের, এবং সর্বকালের । প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে জগতের কারন কি ?
কেউ বলছেন, কালই জগতের কারন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জগৎ আজ এই অবস্থায় এসেছে। আবার কালের প্রভাবে এই জগতের নিস্পত্তি হয়ে যাবে। কেউ বলছেন, জগতের সমস্ত বস্তুর একটা নিজস্ব স্বভাব আছে, বা ধর্ম আছে। এই স্বভাবই জগৎ সৃষ্টির কারন। আবার কেউ বলছেন ওসব কিছুই নয়, জগৎ সৃষ্টির কারন হচ্ছে নিয়তি, অর্থাৎ কার্য্য-কারন প্রক্রিয়ার সমষ্টি। আবার কেউ বলছেন, যদৃচ্ছা অর্থাৎ সৃষ্টি কোনো নিয়মে আবদ্ধ নয়, ঈশ্বরের ইচ্ছে হয়েছে তাই এই সৃষ্টি হয়েছে। এর কোনো কারন নেই। ইচ্ছের আবার কোনো কারন হয় নাকি ? প্রাণ কেন সৃষ্টি হলো ? এর কোনো জবাব হয় নাকি ? কতকগুলো উপাদান অকারণেই একত্রিত হয়েছিল, তাই এমিবার সৃষ্টি হলো। কিন্তু কেন এগুলো অর্থাৎ এমিবার উপাদানগুলো একত্রিত হলো, তা কেউ জানে না। কেউ বললেন, ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম, এই পঞ্চভূত মিলেমিশে এই জগতের উদ্ভব হয়েছে। কেউ বললেন, পরম-আত্মা আর জীবাত্মা মিলে এই জগতের সৃষ্টি করেছে। কেউ বললেন, তোমরা যা বললে সেগুলো সবই সত্যি। একটা সম্মিলিত ক্রিয়ার ফলেই এই জগতের উদ্ভব। অন্যজন বললেন, দেখো যা কিছু ঘটছে, তার একজন কর্তা আছেন। তাহলে সেই কর্তাটি কে ? মানুষ বড় দুর্বল। মানুষ কখনো পঞ্চভূতকে একত্রিত করে জগৎ সৃষ্টি করতে পারে না। মানুষ নিজেই তার সুখ-দুঃখ দূর করতে পারে না। মানুষ যদি জগৎ সৃষ্টি করতো, তবে সুখ বই দুঃখ থাকতো না। কারন মানুষ কখনোই দুঃখ চায় না। জগৎটা তো ভালো-মন্দের, সুখ দুঃখের আগর। মানুষ যদি এই জগৎ সৃষ্টি করতো তবে সেটা খুবই মনোরম হতে পারতো। দেখছো না মানুষ দিনে দিনে সুখের সম্পদ বাড়িয়েই চলেছেন। প্রকৃতিকে টেক্কা দিয়ে কেমন নকল আলো বানাচ্ছে, হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে, দিন দিন কম কষ্টে কি করে বেশি লাভ করা যায়, তার সফল প্রয়াস কেবলমাত্র মানুষই করতে পারে। তাই এই সৃষ্টি যদি জীবাত্মা বা মানুষ করতো তবে না জানি কত সুন্দর হত আমাদের এই বাসভূমি।
এই আলোচনা যখন চলছে, তখন একজন বয়স্ক ঋষি ভাবলেন, এই ব্যাপারটা নিয়ে একটু গভীর ভাবে ভাবতে হবে। তো বললেন এস আমরা ধ্যান করি।
ঋষিরা গভীর ধ্যানে মগ্ন হলেন। এবং আত্মশক্তি বলে তারা অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখলেন জ্যোতির্ময় পরমাত্মার শক্তিই এই জগতের কারন। আর এই পরমাত্মাকে আড়াল করে রেখেছে মায়া। মায়া তার তিন গুণের সাহায্যে পরমাত্মাকে আড়াল করে রেখেছে। জ্যোতির্ময় পরমাত্মার শক্তিই এই জগতের কারন। আগে ঋষিরা জগৎ সৃষ্টির কারন বলে যা ভেবেছিলেন, সেগুলো কোনোটাই ভুল নয়, কিন্তু অসম্পূর্ন। আর এই সৃষ্টির কারন বলে তারা যা ভেবেছিলেন, তাদের সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করছেন এই পরমাত্মা।
ব্যাপারটা যেন কেমন মনে হয়। ধ্যানে বসলেন, আর সব কিছু পরিস্কার হয়ে গেল ? তাহলে এই প্রশ্ন (জগৎ কে সৃষ্টি করেছেন ?) হাজার বছর ধরে কেন চলছে। আর যদি কেউ এটা বুঝেই থাকেন, তো আমরা বুঝতে পারছিনা কেন ? অর্থাৎ ঋষিরা যদি এটা বুঝেই থাকেন, তবে আমরা বুঝতে পারছি না কেন ? আমাদের কাছে, এগুলো সব শোনা কথা, আমরা কেউ বিশ্বাস করি আর কেউ করি না। কেন ? আর যারা বিশ্বাস করেন , তারাও কি সত্যিই জানেন যে এই বিশ্বের নিয়ন্ত্রক হচ্ছেন, ব্রহ্ম।
থমাস নেওকমেন বা ধরুন অন্য কিছু নাম ভদ্রলোকের, চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন। আর লক্ষ করছিলেন, কেটলির জল গরম হয়ে, কেটলির মুখটাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিচ্ছে। তার মাথার মধ্যে চিন্তা উঠলো, কেন এমন হয় ? এই চিন্তা থেকেই একসময় আবিষ্কার হয় স্টিম ইঞ্জিনের। কিংবা ধরুন, গাছ থেকে আপেলটা পরে গেল, আর নিউটন ভাবতে লাগলেন, আপেলটা কেন গাছ থেকে নিচে পড়লো, উপরে গেল না কেন ? এর থেকেই আবিষ্কার হয় মাধ্যাকর্ষণ শক্তির। আমরা দেখি, শুনি, কিন্তু বুঝি না। আর যদি বুঝিও তা হলো - আপেলটা মাটিতেই পড়ে - এই জ্ঞান সঞ্চয় করি মাত্র আমরা। আগুনে জ্বাল দিলে জল গরম হয়, এটা আমাদের সঞ্চিত বা প্রত্যক্ষ জ্ঞান। কিন্তু কিছু মানুষ আছেন, তারা ভাবেন, কেন হয় ? এই কেন হয় যারা ভাবেন, তারা শুধু প্রতক্ষ্য জ্ঞানে সীমাবদ্ধ থাকেন না। তারা একটা অনুভবের জ্ঞান অর্জন করেন, এটাকে বলা হয় প্রজ্ঞা। জ্ঞান হচ্ছে প্রতক্ষ্য বা শোনা, বা বই পড়ে জানা। আর প্রজ্ঞা হচ্ছে অন্তরের অনুভূতি। আর এই অন্তরের অনুভূতি সব সময় ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না। যে কোনোদিন রসোগল্লা খায় নি, তাকে আপনি কি করে বোঝাবেন যে রসোগল্লা কেমন। আপনি বড়জোর বলতে পারেন, এটি মিষ্টি। কিন্তু মিষ্টি ও অনেক কিছুই হয়, রসোগোল্লা রসোগোল্লাই । তোমার তুলনা তুমি। ব্রহ্মও অনুভূতি লব্ধ জ্ঞান। এটি প্রাজ্ঞ ব্যক্তির হয়ে থাকে। অন্যকে বোঝানো সম্ভব নয়। আর এই জ্ঞানকে বলে স্বজ্ঞা। মনের গভীরে যখন জ্ঞান আপনা-আপনি জেগে ওঠে তখন তাকে বলে স্বজ্ঞা। যেকোনো প্রশ্ন নিয়ে মনের গভীরে প্রবেশ করলে মনের মধ্যেই এর উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়। আসলে আমাদের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর আগে থেকেই আমাদের মনের গভীরে গ্রোথিত হয়ে আছে। আমাদের কাজ হচ্ছে আমাদের অন্তর্চক্ষুকে সেই দিকে ফেরানো। ধ্যান হচ্ছে মনকে একমুখী করার প্রক্রিয়া। আর প্রজ্ঞা বা আমাদের যেকোনো প্রশ্নের উত্তর যখন আমাদের চেতন স্তরে ভেসে ওঠে, তখন তাকে বলে প্রজ্ঞা । তো ঋষিগণ এই ধ্যানের গভীরে প্রবেশ করে, ব্রহ্মকে জানলেন। আর যেহেতু ব্রহ্ম ভাষার অতীত, তাই তারা একটা উপমার সাহায্যে আমাদের ব্রহ্মজ্ঞান দেন করলেন।
তো ঋষিগণ একটা উপমার সাহায্যে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন। বলছেন : ব্রহ্ম যেন একটা বিশাল চক্র। যার নাম ব্রহ্মচক্র। এই ব্রহ্মচক্র, মহাবিশ্বকে ধারণ করে রয়েছেন। কি দেবতা, কি মানুষ, কি জীব-জন্তু, উদ্ভিদ, কীটাণুকীট,এমনকি গ্রহ, উপগ্রহ, তারকমণ্ডলী, সবকিছুই এই চক্রের অন্তর্গত। অর্থাৎ ব্রহ্ম এই মহাবিশ্বের রূপ দিয়েছেন।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কেমন করে এই রূপটা দিলেন। সৃষ্টি হচ্ছে ব্রহ্মর মায়াগুনের ক্রিয়া। ব্রহ্ম তার মায়া গুনের সাহায্যেই এই সৃষ্টি করেছেন। এই মায়া গুন হচ্ছে ব্রহ্মচক্রের পরিধি মাত্র। ব্রহ্ম হচ্ছে বিশ্বের অতীত। আর বিশ্ব হচ্ছে ব্রহ্মসমুদ্রের মধ্যে বুদ্বুদ মাত্র। ব্রহ্ম দ্বারা, ব্রহ্মের ভিতরে সৃষ্ট অর্থাৎ ব্রহ্মর একটা ফোটা এই বিশ্বের মধ্যেও আছেন। অর্থাৎ তিনি বিশ্বের মধ্যেও আছেন, আবার বিশ্বের বাইরেও আছেন। ব্রহ্মকে দেখা যায় না। কারন তিনি তিনটি গুনের দ্বারা আবৃত। এগুলো হচ্ছে সত্ত্বঃ, রজঃ ও তমঃ। এই তিনটি গুনের দ্বারা আবৃত আছেন বলে কেউ তাকে দেখতে পান না।
এই ব্রহ্ম চক্রের ষোলোটি কলা অর্থাৎ পঞ্চ ভূত, পঞ্চ কর্ম-ইন্দ্রিয়, পাঁচটা জ্ঞান ইন্দ্রিয় এবং মন।
পঞ্চভূত : আকাশ, বাতাস, আগুন, জল ও মাটি।
কৰ্মইন্দ্রিয় পাঁচটি : মুখ, হাত, পা, মলদ্বার, ও জনন-ইন্দ্রিয়।
জ্ঞান ইন্দ্রিয় : চোখ, কান, নাক, জিহ্ববা, ত্বক।
এর উপরে আছে আমাদের মন। এই মোট ষোলোটি অঙ্গ বা অংশ মিলিয়ে আমাদের বিশ্ব ।
এখন আমরা জানি, প্রত্যেকটি চাকায় কতকগুলো স্পোক বা শলাকা থাকে। ঋষিরা বলছেন, ব্রহ্মচক্র-তেও এইরকম পঞ্চাশটি শলাকা আছে। এই শলাকাগুলো আর কিছু নয় আমাদের মনের অবস্থা বিশেষ।
এগুলো হচ্ছে :প্রথম হচ্ছে ভ্রম : ভ্রম পাঁচরকম - আত্মপ্রীতি, আসক্তি, ঘৃণা, জীবনতৃষ্ণা এবং বিপর্যয়জ্ঞান।
দ্বিতীয়ত ত্রূটি বা আমাদের দুর্বলতা : এগুলো আছে ২৮টি। মিথ্যা তুষ্টি।
তৃতীয়ত : আমাদের অষ্টসিদ্ধি অর্থাৎ প্রথমতঃ অনিমা (ইচ্ছেমত ছোট হয়ে যাওয়া),
দ্বিতীয়তঃ : লঘিমা (ইচ্ছেমত বড়ো বা হালকা হয়ে যাওয়া), তৃতীয়তঃ প্রাপ্তি (যেখানে খুশি যেতে পারেন), চতুর্থতঃ প্রাকাম্যম (যা চাইবেন তাই পেতে পারেন), পঞ্চমতঃ মহিমা (পাহাড়ের মতো বিশাল হয়ে যেতে পারেন), ষষ্ঠত ঈশিত্বম (অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি), সপ্তমতঃ বশিত্বম (সবাইকে বশ করার ক্ষমতা) , এবং অষ্টমতঃ বা সবশেষে কাম-অবসাইত ( সব কামনা অপসারণ হয়ে গেল) ।
চতুর্থত : নয়রকম আছে তুষ্টি। এগুলো নিয়ে আমরা ভবিষ্যতে আলোচনা শুনবো।
তো আমরা জানলাম মোট ৫০টি স্পোক বা শলাকা আছে এই ব্রহ্মচক্রে।
এরপরে আছে আরো কতকগুলো আছে উপশালাকা এদের সংখ্যা হচ্ছে কুড়িটি।
এরমধ্যে দশটা ইন্দ্রিয়। অষ্টৈক ষড়ভিঃ, অর্থাৎ মানবদেহে আটটি ধাতু। সেগুলো হচ্ছে -ত্বক, চর্ম, মাংস, রুধির, মেদ, অস্থি, মজ্জা, ও শুক্র।
ঋষিগণ বলছেন, এই জগৎ বাসনার বন্ধনে আবদ্ধ। এই বাসনাই আমাদের জগৎ অনুভূতি দিচ্ছে। জড় বস্তুর প্রতি আমরা আসক্ত। বিভিন্ন সম্পর্কের প্রতি, অর্থাৎ দারা-পুত্র-পরিবার এর প্রতি আমরা মোহগ্রস্থ। ইন্দ্রিয়সুখের প্রতি আমরা আসক্ত। আমাদের এই আসক্তি, মোহ, বাসনা যদি না থাকতো তবে আমরা মুক্ত পুরুষ হয়ে যেতে পারতাম। জগতের প্রতি আমাদের দৃষ্টিকোণ পালটে যেতো। জগৎ বলে আর আমাদের কাছে কিছুই থাকতো না।
ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ। হরি ওম।
সুষুপ্তি :
আমরা জানি আমাদের মনের তিনটি/চারটি স্তর আছে। প্রথম হচ্ছে চেতন অবস্থা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে স্বপ্নাবস্থা। তৃতীয়টি হচ্ছে সুসুপ্তির স্তর। চতুর্থটি হচ্ছে তুরীয় অবস্থা। আজ আমরা এই সুসুপ্তির অবস্থা সম্পর্কে জানবো।
আমরা যখন জেগে থাকি, তখন আমরা মনের চেতন অবস্থায় থাকি। আমরা যখন ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখি, তখন আমরা স্বপ্নাবস্থায় থাকি। এই স্বপ্নঅবস্থার পরে ঘুমের মধ্যে আমাদের যে অবস্থা হয় তাকে বলে সুষুপ্তি। শ্রূতি বা উপনিষদ বলছে, জীব যখন নিদ্রায় মগ্ন হয়, এবং কিছুই জানে না, তখন সে নাড়ীসমূহ অবলম্বনে হৃদয় আকাশে প্রবেশ করে। আমরা যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকি তখন আমাদের সমস্ত ইন্দ্রিয় শান্ত হয়ে যায়। কোনো ইন্দ্রিয় অনুভূতি তখন আমাদের থাকে না। এই সময় সে চিন্তা রোহিত হয়ে যায়। না থাকে কোনো সংকল্প, না থাকে কোনো দুশ্চিন্তা, না থাকে কোনো দুর্ভাবনা। না থাকে ভালো লাগার অনুভূতি, না থাকে খারাপ লাগার অনুভূতি। এই সময় আমাদের ইন্দ্রিয়শক্তি আমাদের নাড়ীর মধ্যে অবস্থান করে। এই সময় আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো নিজের মধ্যে মিশে যায়। বাইরের জগতের সঙ্গে আমাদের আর কোনো সম্পর্ক থাকে না। আমাদের নাড়ীগুলো তখন সূর্য্য রশ্মির তেজে পূর্ন হয়ে যায়। ইন্দ্রিয়গুলো কৰ্মরহিত হয়ে যায়। এই সময় আমাদের ভালো মন্দ জ্ঞান থাকে না। আর এই সময়টাতেই আমরা শুদ্ধ, মুক্ত, বন্ধনহীন অবস্থায়, আমরা আমাদের প্রকৃত স্বরূপে অবস্থান করি।
মৃত্যু পথযাত্রী মানুষ বা জীব যখন পরলোকে যাত্রার প্রস্তূতি নিচ্ছেন, এই সময় যদি আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবরা তাকে ঘিরে থাকে, তবে একটা প্রচলিত প্রশ্ন আমরা করে থাকি। আমাকে কি চিনতে পারছেন ? এই সময় তার একটা আচ্ছন্ন ভাব বা ঘোরের মধ্যে তিনি থাকেন। প্রাণ বায়ু যতক্ষন আসা যাওয়া করে, ততক্ষন তিনি চিনতে পারেন। কিন্তু প্রাণবায়ু চলে গেলে তিনি আর দেখতে পান না, চিনতেও পারেন না। কথাও বলতে পারেন না। মৃত্যুর ঠিক আগে আমরা এই সুসুপ্তির অবস্থায় বা আচ্ছন্ন অবস্থায় কিছুক্ষন অবস্থান করি। তার পরেই আমরা মনোময় দেহে স্থানান্তরিত হই।
মানুষ যখন স্বপ্নাবস্থায় থাকে তখন আমাদের আত্মা স্বপ্নবৃত্তি অবলম্বনে ইন্দ্রিয়গনকে সঙ্গে নিয়ে নিজের শরীরে যেমন ইচ্ছে ভ্রমন করেন। কখনো রাজা, কখনো ফকির, কখনো জলে কখনো আকাশে বিচরণ করেন। আবার তিনি যখন সুসুপ্তিতে থাকেন, তখন তিনি কিছুই জানেন না, কিছুই করেন না । আমাদের শরীরে যে বাহাত্তর হাজার নাড়ী আছে, সেই নাড়ীগুলোকে অবলম্বন করে এই শরীরেই অবস্থান করেন। অর্থাৎ সুসুপ্তির সময় আত্মা শরীর ছেড়ে কোথাও যান না। কিন্তু শরীরে ইন্দ্রিয়গুলোর সঙ্গে তিনি থাকেন না। সূর্য্য যেমন একস্থানে থেকে সমস্ত জগৎকে আলোকিত করেন, তেমনি এই আত্মা আমাদের হৃদয়ে থেকে সর্ব শরীরে চৈতন্য ব্যাপ্ত করে রাখেন। জাগ্রত অবস্থায় আমরা বুদ্ধির অনুসরণ করি, স্বপ্ন-অবস্থায় আমরা বুদ্ধি সংকুচিত হন। আর সুসুপ্তির অবস্থায় বুদ্ধির লোপ পায়। এইখানে একটা কথা বলা প্রয়োজন, আত্মার গমন নির্গমন বলে কিছু হয় না। কারন আত্মা সর্বত্র।
আসলে সুষুপ্তি কালে জীবাত্মা পরম-আত্মাতে উপাধিগুলোকে নিয়ে অর্থাৎ আমাদের ইন্দ্রিয়াদি সহ অবস্থান করে থাকে। কিন্তু জীবাত্মা যেহেতু মায়াদ্বারা আছন্ন হয়ে থাকে, তাই সুষুপ্তি কালে জীবাত্মার এই একত্ত্ব অনুভব করে পারে না। এই সুষুপ্ত জীব আবার জাগ্রত অবস্থায় আসে।
আমরা যখন সঙ্গাহীন হয়ে যাই, অর্থাৎ সাময়িক মূর্ছা যাই, তখন আমাদের আংশিক সুসুপ্তির উপলব্ধি করতে পারি। অর্থাৎ মূর্ছা-কালীন অবস্থার স্মৃতি আমাদের থাকে না। তেমনি সুসুপ্তির সময় আমরা কি অবস্থায় ছিলাম সেই স্মৃতিও আমাদের থাকে না।
ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ হরি ওম।
বিজয়বাবুর জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানটি যিনি বা যারা রেকর্ড করেছিলেন, তারা আমাকে প্রচারের স্বার্থে দিয়েছিলেন। কিন্তু যখন আমাদের চ্যানেলটি অর্থ উপার্জনের যোগ্য হয়েছে, তখন অন্য কারুর রেকর্ড করা জিনিস থেকে অর্থ উপার্জন অনৈতিক বলে এটি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপনার অসুবিধার জন্য দুঃখিত। আপনার ফোন / জিমেল ঠিকানা দেবেন, যাদের ভিডিও তাদের বলে দেব। নমস্কার।
No comments:
Post a Comment