মহাপুরুষদের জীবন থেকে
একজন ভজন গান রচনা করেন। আর একজন সেটা তার সুরেলা কন্ঠে গেয়ে গেয়ে শোনান। গান যে বাঁধেন, তিনি হিন্দু ঘরে জন্মেছেন, নাম নানক । আর গান যে গেয়ে শোনান তিনি মুসলমান ঘরে জন্মেছেন নাম মর্দানা । তো গ্রামে গ্রামে তারা এই গান গেয়ে শোনান। গানের মাঝে মাঝে এই হিন্দু সাধক উপদেশ শোনান। তো গ্রামের লোকেরা তাদের গান শুনেআর উপদেশ তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, আপনারা কোন মঠের বাসিন্দা ? কোন সম্প্রদায়ের সাধু । তো যিনি গান বাঁধেন, তিনি বললেন যে নিরাকার সারা বিশ্বে আকার নিয়েছেন, আমরা তারই ধ্যান করি। তারই মহিমা গেয়ে বেড়াই দিকে দিকে। আমাদের কাছে নেই কোনো সম্প্রদায়ের প্রশ্ন, নেই কোনো উঁচু-নিচু পার্থক্য। আমার দৃষ্টিতে হিন্দু মুসলমানের ভেদ নেই। দেশে কি একটাও হিন্দু আছে ? মুসলমানও তো দেখছি না কাউকে।
তো গাঁয়ের মধ্যে এদের প্রচার হয়ে গেল। নবাবের কাজীর কাছে সংবাদ গেলো, একজন হিন্দু মুসলমানদের সম্পর্কে যা তা বলে বেড়াচ্ছে। গর্জে উঠলেন, কাজী। সেকি হিন্দুর ছেলে নানক, হিন্দুদের নিয়ে যা ইচ্ছে বলুক, কিন্তু মুসলমানদের নিয়ে তামাশা ? মুসলমানদের ধর্ম বা সমাজ নিয়ে হালকা কথা বললে তো তা সহ্য করা যায় না।
নবাব দৌলত খানের দরবারে হাজির করা হয় নানককে। নবাব রুক্ষ স্বরে বলেন, নানক আমি তোমার উপরে অত্যন্ত বিরক্ত হয়েছি। তুমি নাকি বলে বেড়াচ্ছো, এখানে হিন্দুও নেই আর মুসলমানও কেউ নেই। তবে কি বলতে চাও এই কাজী সাহেব বা আমি কেউ মুসলমান নোই ? আমরা সবাই অমুসলমান ?
নানক মুখে স্মিত হাসি হেসে উত্তর দিলেন : নবাব সাহেব, প্রকৃত মুসলমান আমি তাকেই বলবো, যার মধ্যে সত্যিকারের বিশ্বাস জেগেছে। পয়গম্বরের উপদেশবাণী যে নিজের জীবনে প্রয়োগ করেছে। আত্মাভিমান, কম, ক্রোধ, লোভ মোহ যিনি নির্মূল করতে পেরেছেন। জীবন আর মৃত্যু যার চোখে সমান হয়ে গেছে। আমি তাকেই বলবো প্রকৃত মুসলমান। ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে যার ইচ্ছার মিলন হয়েছে, সেই তো মুসলমান। যিনি সর্বত্র আল্লা-তালহকে দেখছেন তাকে ছাড়া কাকে বলবো মুসলমান ? এমন লোক কোথায় আছে আমাকে বলে দিন।
সভায় চাপা গুঞ্জন উঠলো। কাজীর মুখ ব্যাজার হয়ে গেলো। নবাব মনে মনে খুশি হলেন। নানকের এই উদার ধর্মবোধ উদার মনোভাবাপন্ন নবাবকে সত্যে প্রতিষ্ঠিত করলো। কিন্তু কাজী তো ছাড়বার পাত্র নয়। তো কাজী বললেন, নানক তোমার্ বক্তৃতা অনেক শুনলাম। এবার ঠিক করে বলতো তুমি কোন ধর্মের মানুষ ? হিন্দু না মুসলমান?
নানক বললেন, আমি কোনো ধর্ম বা সম্প্রদায়ের গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ নোই।
কেন ? এ আবার কি অদ্ভুত কথা ?
নানক বললেন, দেখুন, যে কোনো সম্প্রদায় চালিত হয় সেই সম্প্রদায়ের প্রবর্তক গুরুর উপদেশ বাণীর মধ্যে দিয়ে। আর আমি পথ চলি সেই অনাদি, অনন্ত, পরম পুরুষের প্রদর্শিত আলোতে। আমার চোখে ধর্মের ভেদ রেখা বিলুপ্ত হয়ে গাছে।
কথায় কথায় সন্ধ্যা হয়ে গছে। সন্ধ্যাকালীন নামাজের সময় হয়েছে। সভা ভঙ্গ করে দেওয়া হলো। নবাব বললেন, আমরা নামাজ পড়তে মাসজিতে যাচ্ছি। তুমি তো অনেক বড়ো বড়ো কথা বললে, তোমার চোখে ধর্মের ভেদ কিছু নেই। ইত্যাদি ইত্যাদি। .. তো আমাদের সাথে চলো মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়বে। তোমার আপত্তি আছে ?
নানক বললেন - বিন্দু মাত্র আপত্তি নেই। নামাজ তো ঈশ্বরের স্তূতি। ঈশ্বরের যে কোনো স্তূতি আমার কাছে পরম শ্রদ্ধার বস্তু। এই বলে নানক, কাজী ও নবাবের সঙ্গে চললেন মসজিদে।
নামাজ শেষ হয়ে গেলো।কাজী দেখলো, নামাজ কক্ষের এক প্রান্তে, নানক চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে । নামাজ পড়ে নি। তো কাজী চেপে ধরলো, নানককে - এই বুঝি তোমার নামাজ পড়া ? এই বুঝি তোমার সত্যবাদিতা ?
নানক বললেন - কাজী সাহেব আপনাকে অনুসরণ করে নামাজ পড়বো ভেবেছিলাম। পরম-ঈশ্বরের কাছে প্রাণের প্রার্থনা জানাবো, এই আশা নিয়েই তো এখানে এসেছিলাম। কিন্তু অনুসরণ করবো কাকে ? আপনি তো সত্যি সত্যি আজ এখানে নামাজ পড়েন নি।
কাজী রেগে গেলেন, গর্জে উঠলেন - তার মানে ? মুখ সামলে কথা বলো - বেয়াদপ কোথাকার !
নবাবের কানেও নানকের কথাটা ভালো লাগলো না। তিনি বললেন, তোমার এ কথার অর্থ কি ? তোমাকে এর জবাব দিতে হবে। নইলে পাবে কঠোর শাস্তি পেতে হবে ।
নানক বললেন - হুজুর সত্যি বলছি, আমি এতক্ষন দাঁড়িয়ে দেখলাম - কাজীসাহেব নামাজ পড়েন নি। আর যদি অভয় দেন তো বলি আপনিও নামাজ পড়েন নি।
এতে করে কাজী সাহেব আরো রেগে গেলেন। নবাব বললেন - তবে আমরা এতক্ষন কি করেছি ?
নানক বললেন - তাহলে শুনুন -কাজী সাহেবের বাড়িতে কিছু দিন আগে, একটা ঘোটকীর বাচ্চা হয়েছে। বাড়ির উঠোনে এই বাচ্চাটা ঘুরে বেড়ায়। আর এই উঠোনের পাশেই আছে একটা কুয়ো। কাজী সাহেব, নামাজের সময় ঈশ্বর স্তূতি তো মুখে বলছিলেন, কিন্তু মনে মনে ভাবছিলেন, ওই ঘোটকীর বাচ্চার কথা। দুশ্চিন্তা করছিলেন, বাচ্চাটা না কুয়ায় পরে যায়।
কাজী সাহেবের, নানকের কথা শুনে ভয় পেয়ে গেলেন, মুখ শুকিয়ে গেল। মনে মনে ভাবলেন, তাহলে এই তরুণ সাধক কি তবে অন্তর্যামী ?
নানক বলে চললেন - নবাব সাহেবের মনও নামাজে ছিল না। নবাব সাহেবের মন নামাজ ছেড়ে বিচরণ করছিলো সুদূর কান্দাহার অঞ্চলে। একরাশ টাকা দিয়ে আপনি সেখানে কর্মচারী পাঠিয়েছেন ঘোড়া কেনবার জন্য। আপনি সেই কথাই বার বার ভাবছিলেন।
এই কথা শুনে, কাজীর যেমন অভিমান চূর্ন হয়ে গেছে। নবাব ভাবলেন, সব কথাই বর্ণে বর্ণে সত্য - নবাবের অস্বীকার করার উপায় নেই।
তখনকার নবাবদের মধ্যে একটা উদারতা ছিল।সত্যিকারের জ্ঞানী, ও সাধকদের তারা সন্মান করতেন।নানককে যথাযথ সম্ভ্রম ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে নানককে বিদায় দিলেন। নানকের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে লাগলো।
ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ। হরি ওম।
মহান আত্মা গুরু নানকের পরিব্রাজক জীবনে বহু অঘটন ঘটিয়েছেন। কখনো করুনার ধারা ঢেলে দিয়েছেন, আবার কখনো তার অলৌকিক যোগবিভূতির ঐশর্য্য ঢেলে দিয়েছেন। নানক তখন পদব্রজে সঈদপুরে এসেছেন। লালু নামে এক কাঠ-মিস্ত্রির ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। লালু গরিব কিন্তু ভক্ত। তো নানক তার বাড়িতে বসে গ্রামের মানুষদের ধর্ম-উপদেশ দিতে লাগলেন। প্রতিদিন বহু লোকের সমাগম হতে লাগলো।
পাঠান সুবেদারের দেওয়ান, মালিক ভগো, এই শহরেই থাকেন। দান-টান করেন। সাধু সন্তদের জন্য তার বাড়িতে প্রতিদিন ভান্ডারার ব্যবস্থা হয়। বহু সাধারণ মানুষও সাধু সন্তদের সঙ্গে খেতে আসেন। মালিক ভগো বেশ একটা আত্মতৃপ্তি অনুভব করেন। তো একদিন খবর পেলেন এক হিন্দু সাধু লালুমিস্ত্রির বাড়িতে এসেছে, কিন্তু সে কখনো এই ভান্ডারাতে আসেন না। তো ভগো, লোক পাঠালেন, সাধুকে ধরে নিয়ে আসবার জন্য। ভগোর লোকেরা যখন সাধুকে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন, তখন এক অমঙ্গলের আশঙ্কা নিয়ে লালু চললেন তাদের সঙ্গে সঙ্গে। মনে মনে ভাবছেন, না জানি আজ কি হতে চলেছে সাধুবাবার কপালে। লালু নিজেকেই এর জন্য দায়ী ভাবতে লাগলেন।
সাধুকে দেখেই মালিক ভগো প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন। আপনি তো শুনেছি উদার স্বভাবের সাধু, জাতটাত নাকি মানেন না। তো আমার ভাণ্ডারায় ভোজন করতে আসেন না কেন ?
নানক মিটি মিটি হাসছেন। আর নানকের নির্বাক হাসি দেখে আরো উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। বললেন আমার কথার উত্তর দিন।
একজন ভজন গান রচনা করেন। আর একজন সেটা তার সুরেলা কন্ঠে গেয়ে গেয়ে শোনান। গান যে বাঁধেন, তিনি হিন্দু ঘরে জন্মেছেন, নাম নানক । আর গান যে গেয়ে শোনান তিনি মুসলমান ঘরে জন্মেছেন নাম মর্দানা । তো গ্রামে গ্রামে তারা এই গান গেয়ে শোনান। গানের মাঝে মাঝে এই হিন্দু সাধক উপদেশ শোনান। তো গ্রামের লোকেরা তাদের গান শুনেআর উপদেশ তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, আপনারা কোন মঠের বাসিন্দা ? কোন সম্প্রদায়ের সাধু । তো যিনি গান বাঁধেন, তিনি বললেন যে নিরাকার সারা বিশ্বে আকার নিয়েছেন, আমরা তারই ধ্যান করি। তারই মহিমা গেয়ে বেড়াই দিকে দিকে। আমাদের কাছে নেই কোনো সম্প্রদায়ের প্রশ্ন, নেই কোনো উঁচু-নিচু পার্থক্য। আমার দৃষ্টিতে হিন্দু মুসলমানের ভেদ নেই। দেশে কি একটাও হিন্দু আছে ? মুসলমানও তো দেখছি না কাউকে।
তো গাঁয়ের মধ্যে এদের প্রচার হয়ে গেল। নবাবের কাজীর কাছে সংবাদ গেলো, একজন হিন্দু মুসলমানদের সম্পর্কে যা তা বলে বেড়াচ্ছে। গর্জে উঠলেন, কাজী। সেকি হিন্দুর ছেলে নানক, হিন্দুদের নিয়ে যা ইচ্ছে বলুক, কিন্তু মুসলমানদের নিয়ে তামাশা ? মুসলমানদের ধর্ম বা সমাজ নিয়ে হালকা কথা বললে তো তা সহ্য করা যায় না।
নবাব দৌলত খানের দরবারে হাজির করা হয় নানককে। নবাব রুক্ষ স্বরে বলেন, নানক আমি তোমার উপরে অত্যন্ত বিরক্ত হয়েছি। তুমি নাকি বলে বেড়াচ্ছো, এখানে হিন্দুও নেই আর মুসলমানও কেউ নেই। তবে কি বলতে চাও এই কাজী সাহেব বা আমি কেউ মুসলমান নোই ? আমরা সবাই অমুসলমান ?
নানক মুখে স্মিত হাসি হেসে উত্তর দিলেন : নবাব সাহেব, প্রকৃত মুসলমান আমি তাকেই বলবো, যার মধ্যে সত্যিকারের বিশ্বাস জেগেছে। পয়গম্বরের উপদেশবাণী যে নিজের জীবনে প্রয়োগ করেছে। আত্মাভিমান, কম, ক্রোধ, লোভ মোহ যিনি নির্মূল করতে পেরেছেন। জীবন আর মৃত্যু যার চোখে সমান হয়ে গেছে। আমি তাকেই বলবো প্রকৃত মুসলমান। ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে যার ইচ্ছার মিলন হয়েছে, সেই তো মুসলমান। যিনি সর্বত্র আল্লা-তালহকে দেখছেন তাকে ছাড়া কাকে বলবো মুসলমান ? এমন লোক কোথায় আছে আমাকে বলে দিন।
সভায় চাপা গুঞ্জন উঠলো। কাজীর মুখ ব্যাজার হয়ে গেলো। নবাব মনে মনে খুশি হলেন। নানকের এই উদার ধর্মবোধ উদার মনোভাবাপন্ন নবাবকে সত্যে প্রতিষ্ঠিত করলো। কিন্তু কাজী তো ছাড়বার পাত্র নয়। তো কাজী বললেন, নানক তোমার্ বক্তৃতা অনেক শুনলাম। এবার ঠিক করে বলতো তুমি কোন ধর্মের মানুষ ? হিন্দু না মুসলমান?
নানক বললেন, আমি কোনো ধর্ম বা সম্প্রদায়ের গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ নোই।
কেন ? এ আবার কি অদ্ভুত কথা ?
নানক বললেন, দেখুন, যে কোনো সম্প্রদায় চালিত হয় সেই সম্প্রদায়ের প্রবর্তক গুরুর উপদেশ বাণীর মধ্যে দিয়ে। আর আমি পথ চলি সেই অনাদি, অনন্ত, পরম পুরুষের প্রদর্শিত আলোতে। আমার চোখে ধর্মের ভেদ রেখা বিলুপ্ত হয়ে গাছে।
কথায় কথায় সন্ধ্যা হয়ে গছে। সন্ধ্যাকালীন নামাজের সময় হয়েছে। সভা ভঙ্গ করে দেওয়া হলো। নবাব বললেন, আমরা নামাজ পড়তে মাসজিতে যাচ্ছি। তুমি তো অনেক বড়ো বড়ো কথা বললে, তোমার চোখে ধর্মের ভেদ কিছু নেই। ইত্যাদি ইত্যাদি। .. তো আমাদের সাথে চলো মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়বে। তোমার আপত্তি আছে ?
নানক বললেন - বিন্দু মাত্র আপত্তি নেই। নামাজ তো ঈশ্বরের স্তূতি। ঈশ্বরের যে কোনো স্তূতি আমার কাছে পরম শ্রদ্ধার বস্তু। এই বলে নানক, কাজী ও নবাবের সঙ্গে চললেন মসজিদে।
নামাজ শেষ হয়ে গেলো।কাজী দেখলো, নামাজ কক্ষের এক প্রান্তে, নানক চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে । নামাজ পড়ে নি। তো কাজী চেপে ধরলো, নানককে - এই বুঝি তোমার নামাজ পড়া ? এই বুঝি তোমার সত্যবাদিতা ?
নানক বললেন - কাজী সাহেব আপনাকে অনুসরণ করে নামাজ পড়বো ভেবেছিলাম। পরম-ঈশ্বরের কাছে প্রাণের প্রার্থনা জানাবো, এই আশা নিয়েই তো এখানে এসেছিলাম। কিন্তু অনুসরণ করবো কাকে ? আপনি তো সত্যি সত্যি আজ এখানে নামাজ পড়েন নি।
কাজী রেগে গেলেন, গর্জে উঠলেন - তার মানে ? মুখ সামলে কথা বলো - বেয়াদপ কোথাকার !
নবাবের কানেও নানকের কথাটা ভালো লাগলো না। তিনি বললেন, তোমার এ কথার অর্থ কি ? তোমাকে এর জবাব দিতে হবে। নইলে পাবে কঠোর শাস্তি পেতে হবে ।
নানক বললেন - হুজুর সত্যি বলছি, আমি এতক্ষন দাঁড়িয়ে দেখলাম - কাজীসাহেব নামাজ পড়েন নি। আর যদি অভয় দেন তো বলি আপনিও নামাজ পড়েন নি।
এতে করে কাজী সাহেব আরো রেগে গেলেন। নবাব বললেন - তবে আমরা এতক্ষন কি করেছি ?
নানক বললেন - তাহলে শুনুন -কাজী সাহেবের বাড়িতে কিছু দিন আগে, একটা ঘোটকীর বাচ্চা হয়েছে। বাড়ির উঠোনে এই বাচ্চাটা ঘুরে বেড়ায়। আর এই উঠোনের পাশেই আছে একটা কুয়ো। কাজী সাহেব, নামাজের সময় ঈশ্বর স্তূতি তো মুখে বলছিলেন, কিন্তু মনে মনে ভাবছিলেন, ওই ঘোটকীর বাচ্চার কথা। দুশ্চিন্তা করছিলেন, বাচ্চাটা না কুয়ায় পরে যায়।
কাজী সাহেবের, নানকের কথা শুনে ভয় পেয়ে গেলেন, মুখ শুকিয়ে গেল। মনে মনে ভাবলেন, তাহলে এই তরুণ সাধক কি তবে অন্তর্যামী ?
নানক বলে চললেন - নবাব সাহেবের মনও নামাজে ছিল না। নবাব সাহেবের মন নামাজ ছেড়ে বিচরণ করছিলো সুদূর কান্দাহার অঞ্চলে। একরাশ টাকা দিয়ে আপনি সেখানে কর্মচারী পাঠিয়েছেন ঘোড়া কেনবার জন্য। আপনি সেই কথাই বার বার ভাবছিলেন।
এই কথা শুনে, কাজীর যেমন অভিমান চূর্ন হয়ে গেছে। নবাব ভাবলেন, সব কথাই বর্ণে বর্ণে সত্য - নবাবের অস্বীকার করার উপায় নেই।
তখনকার নবাবদের মধ্যে একটা উদারতা ছিল।সত্যিকারের জ্ঞানী, ও সাধকদের তারা সন্মান করতেন।নানককে যথাযথ সম্ভ্রম ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে নানককে বিদায় দিলেন। নানকের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে লাগলো।
ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ। হরি ওম।
মহান আত্মা গুরু নানকের পরিব্রাজক জীবনে বহু অঘটন ঘটিয়েছেন। কখনো করুনার ধারা ঢেলে দিয়েছেন, আবার কখনো তার অলৌকিক যোগবিভূতির ঐশর্য্য ঢেলে দিয়েছেন। নানক তখন পদব্রজে সঈদপুরে এসেছেন। লালু নামে এক কাঠ-মিস্ত্রির ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। লালু গরিব কিন্তু ভক্ত। তো নানক তার বাড়িতে বসে গ্রামের মানুষদের ধর্ম-উপদেশ দিতে লাগলেন। প্রতিদিন বহু লোকের সমাগম হতে লাগলো।
পাঠান সুবেদারের দেওয়ান, মালিক ভগো, এই শহরেই থাকেন। দান-টান করেন। সাধু সন্তদের জন্য তার বাড়িতে প্রতিদিন ভান্ডারার ব্যবস্থা হয়। বহু সাধারণ মানুষও সাধু সন্তদের সঙ্গে খেতে আসেন। মালিক ভগো বেশ একটা আত্মতৃপ্তি অনুভব করেন। তো একদিন খবর পেলেন এক হিন্দু সাধু লালুমিস্ত্রির বাড়িতে এসেছে, কিন্তু সে কখনো এই ভান্ডারাতে আসেন না। তো ভগো, লোক পাঠালেন, সাধুকে ধরে নিয়ে আসবার জন্য। ভগোর লোকেরা যখন সাধুকে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন, তখন এক অমঙ্গলের আশঙ্কা নিয়ে লালু চললেন তাদের সঙ্গে সঙ্গে। মনে মনে ভাবছেন, না জানি আজ কি হতে চলেছে সাধুবাবার কপালে। লালু নিজেকেই এর জন্য দায়ী ভাবতে লাগলেন।
সাধুকে দেখেই মালিক ভগো প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন। আপনি তো শুনেছি উদার স্বভাবের সাধু, জাতটাত নাকি মানেন না। তো আমার ভাণ্ডারায় ভোজন করতে আসেন না কেন ?
নানক মিটি মিটি হাসছেন। আর নানকের নির্বাক হাসি দেখে আরো উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। বললেন আমার কথার উত্তর দিন।
No comments:
Post a Comment