Tuesday, 27 May 2025


মরণ ঘুমের রহস্যঃ - নিদ্রা বা ঘুমের রহস্যঃ : ঘুমের সঙ্গে আত্মার সম্পর্ক কী ?  

মুক্তানন্দ বলছিলেন, ঘুমের রহস্য যদি তোমার কাছে পরিষ্কার হয়, তবে এই নিত্য-অনিত্য, সৎ-অসৎ, আত্মা-অনাত্মা এমনকি জন্ম-মৃত্যুর রহস্যঃ তোমার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। এমনকি  ওঙ্কারের বা প্রণবের রহস্যঃ তোমার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। কিন্তু জন্মের পর থেকেই, ঘুম তো আমাদের এমনি এমনি আসে, ঘুম ছাড়া আমরা কেউ বাঁচতে পারি না, এই ঘুমের মধ্যে আমরা প্রতিনিয়ত যাতায়াত করছি, কতবার যে ঘুম আসছে, আর চলে যাচ্ছে, এ যেন শ্বাস প্রশ্বাসের মতো, আসছে আবার চলে যাচ্ছে। এর মধ্যে কি এমন রহস্যঃ আছে, যাতে আমরা এমনকি জন্ম-মৃত্যুর রহস্যঃ বুঝতে পারবো ? 

মুক্তানন্দ বলছেন,  স্বাসের সঙ্গে যেমন তোমার জীবন জড়িয়ে আছে, অর্থাৎ তোমার এই  বেঁচে থাকা বা মৃত্যু বরণ করা জড়িয়ে আছে, তেমনি ঘুমের সঙ্গে তোমার আত্মা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। ঘুমের মধ্যে তুমি যদি সজাগ থাকতে পারো, অর্থাৎ সচেতন থাকতে পারো, তাহলেই সব রহস্যের উন্মোচন হতে পারে। কিন্তু কথা হচ্ছে, ঘুমের মধ্যে আবার কেউ সজাগ   থাকতে পারে নাকি ? ঘুমে আমরা জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। কিন্তু কথা হচ্ছে যাই কোথায় ? মুক্তানন্দ বলছেন, এই ঘুমের মধ্যে আমরা সবাই একটা অন্য জগতে চলে চাই, এমনকি ঘুমের মধ্যে আমরা  সবাই আত্মার সঙ্গে মিলিত হয়ে যাই। মুক্তানন্দ বলছেন, গাঢ়  ঘুমে আমরা প্রতিদিন একবার করে আত্মার সঙ্গে মিলিত হয়ে যাই।  কিন্তু জেগে উঠে আমাদের সেই স্মৃতি থাকে না। তাই আত্মা সম্পর্কে আমাদের কোনো জ্ঞান থাকে না। তো ঘুমের মধ্যে যদি তুমি সচেতন থাকতে পারতে, তবে তোমার মধ্যে এই আত্মার  জ্ঞান হতে পারতো। অর্থাৎ তুমি আত্মজ্ঞান লাভ করতে পারতে । 

আজ আমরা এই ঘুম সম্পর্কে, এবং ঘুমের মধ্যে সজাগ থাকার প্রক্রিয়া  সম্পর্কে শুনবো। 

প্রথমত ঘুম ব্যাপারটা কি ? ২. ঘুম কেন আসে ? ৩. ঘুমের মধ্যে আমরা কোথায় কি অবস্থায় থাকি।  ৪. ঘুম থেকে আবার আমরা আবার জেগে উঠি কেন ? 

ঘুম ব্যাপারটা কি ? 

বিজ্ঞান বলছে, আমাদের চোখের ভিতর থেকে একটা নার্ভ মস্তিষ্কে গিয়েছে, সেখানে হাইপো-থ্যালামাসে গিয়ে মিশেছে। মস্তিষ্কের এই হাইপো-থ্যালামাসে আছে ঘুমের চাবিকাঠি। একেই বলে আমাদের স্লিপ সেন্টার। এই হাইপো-থ্যালামাসে আছে সুপ্রাকায়াসমেটিক নিউক্লিয়াস যাকে   সংক্ষেপে বলা হয় SCN. তো আমাদের ঘুমের নিয়ন্ত্রক হচ্ছে এই SCN - দিনের বেলায় রেটিনা, আর রাতের বেলা পিনিয়াল গ্লান্ড থেকে নির্গত রস বা মেলাটনিন হরমোন আমাদের ঘুমকে ডেকে  আনে।  সবার ঘুমের মধ্যে পিটুইটারি গ্রন্থি একধরনের হরমোনের নিঃসরণ করে, যা আমাদের শরীরের ক্ষতিগ্রস্থ কলার মেরামতি করে। তো ঘুমের মধ্যে আমরা আমাদের ক্ষতিগ্রস্থ কোষগুলোর মেরামতি ক্রিয়া করে থাকি। 

আবার এই ঘুম আমাদের দুটি ধরন দেখা যায়,  যাকে  বিজ্ঞান বলছে, REM এবং NREM . REM বা  RAPID EYE MOVEMENT আর NREM অর্থাৎ NON RAPID EYE MOVEMENT. বলা হচ্ছে, ঘুমের মধ্যে নাকি আমাদের চক্ষু কখনো  স্থির থাকে, আবার কখনো চক্ষু নাড়াচাড়া করে।  

শরীর যখন ক্লান্ত  হয়ে যায়, বা আমাদের যখন ঘুমোতে যাবার ইচ্ছে হয় ষে একসময় আমাদের মস্তিষ্কের পিছন দিকে যে পনস আছে, তাকে নির্দেশ দিয়ে প্রথমে শরীরের কাজ কর্ম্মকে স্থগিত করে দেয়।  এবার ঘুম শুরুর প্রথম  অবস্থায় এই NREM বা স্থির চক্ষুর ঘুম শুরু হয়। অর্থাৎ আমরা চোখ বুজকে ঘুমুতে যাবার চেষ্টা করি। প্রথমে অর্থাৎ  ১ থেকে দেড় ঘন্টার এই অবস্থা থাকে, এর পরে REM ঘুম অর্থাৎ  চক্ষু নাড়াচাড়া শুরু করে, একে  অস্থির চক্ষুর ঘুম বলে।  কিছুক্ষন অর্থাৎ ১৫-২০ মিনিট নাকি চক্ষু দ্রুত নাড়াচাড়া করতে থাকে। তখন  এই অবস্থাকে বলে REM  ঘুম বলে।  এইভাবে  একবার REM ঘুম একবার NREM ঘুম চলতে থাকে।  চার পাঁচ ঘন্টা ধরে  এই চক্র  চলতে থাকে।  

এই যে NREM বা স্থির  চক্ষুর ঘুম এর শেষের দিকে আমাদের গভীর ঘুম হয়। অস্থির চক্ষুর ঘুমে বা REM ঘুমে  আমরা স্বপ্ন দেখে  থাকি। স্বপ্নাবস্থায় আমাদের হার্টবিট, পালসবিট বাড়ে, এই সময় মস্তিষ্কের মধ্যে ওয়েব বা তরঙ্গের মাত্রা বাড়ে। অন্যদিকে গাঢ়  ঘুমে, আমাদের হার্টবিট, পালসবিট কমে, শ্বাস প্রশ্বাসের হার কমে, এমনকি দেহের তাপমাত্রা কমে। 

এবার আমরা অধ্যাত্ম জগতের মহাত্মাদের কথা শুনবো।  তাঁরা ঘুম সম্পর্কে কি বলেন। এঁরা  বলছেন, ঘুম আর তোমার মৃত্যুর মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। আমাদের যে ঘুম তা কেবল মাত্র ৭/৮ ঘন্টা ব্যাপী হয়ে থাকে।  এর পরে আমরা আবার জেগে উঠি। আর যাকে  আমরা মৃত্যু বলি, সেও এক প্রকার ঘুম, যে ঘুম থেকে ফিরে আসতে আমাদের দশ/বিশ/ত্রিশ বা হাজার  বছর লেগে যায়। অর্থাৎ মৃত্যুতে আমরা দীর্ঘদিন ঘুমের মধ্যেই  কাটাই। কথায় বলে মরন ঘুম অর্থাৎ যে ঘুমে কেউ আর  জেগে ওঠে না। পরাবিদ্যাবিদগন বলছেন, মৃত্যু কালীন অবস্থাতেও, জীবের কিছুক্ষনের জন্য ঘুম ঘুম ভাব আসে। অর্থাৎ একটা অজ্ঞান ভাব তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে।  

আমাদের শাস্ত্র বলছেন, ঘুম তো নয়, এ এক বিশেষ অবস্থা মাত্র। জেগে থেকে আমরা যেমন স্থূল জগৎকে ভোগ করি, তেমনি ঘুমের সময় আমরা সূক্ষ্ম ও কারন জগতের বাসিন্দা  হয়ে যাই । ধ্যানে বসলে আমাদের ঘুম পায়।  আসলে ধ্যান আর ঘুমের মধ্যে পার্থক্য সামান্যই। গভীর ঘুমে আমরাদের জ্ঞান থাকে না, আর সমাধির ঘুমে আমরা অজ্ঞান থেকে বেরিয়ে যাই। মুক্তানন্দ বলছেন, মৃত্যু আসলে এক ধরনের সমাধি বিশেষ, যে সমাধি সহজে ভাঙে না। 

আমরা যখন মাণ্ডুক্য উপনিষদের  কথা শুনেছিলাম, সেখানে শুনেছি, জীবরূপী ব্রহ্মার চার অবস্থা -  জাগ্রত, স্বপ্ন, সুষুপ্তি ও তুরীয়।  
















No comments:

Post a Comment