দিব্যদৃষ্টি বলে একটা কথা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। কিন্তু কিভাবে এটা লাভ করা যায় ? পাতঞ্জলদর্শনের বিভূতিপাদ-এ এই সম্পর্কে উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়। যোগের ফলে বহু বিভূতির লাভ হয়, তার মধ্যে দিব্যদৃষ্টি একটা। ঋষি পতঞ্জলি বলছেন, চিত্তবৃত্তি নিরোধের নাম যোগ। আর যোগের একতানতা বা নিরবিচ্ছিন্নতা থেকে হয় ধ্যান। আর এই ধ্যান থেকে বিভিন্ন বিভূতি বা অলৌকিক ক্ষমতা লাভ যায়, তার মধ্যে একটি হচ্ছে দিব্যদৃষ্টি। আর এটা যে অসম্ভব নয়, তা আমরা একটা সাধারণ উদাহরণ থেকে বুঝতে পারি। আমাদের চারিদিকে বায়ুমণ্ডল, বিশাল জলরাশি, জলের নিচে আছে আবার মৃত্তিকাখণ্ড বা পৃথিবী, সবই এই এই জগতের অংশ, এবং এসবই ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত। পাখিরা আকাশে বিচরণ করছে, জন্তুরা ডাঙায় চড়ে বেড়াচ্ছে, জলচর প্রাণী জলে বিচরণ করছে। কে কার খোঁজ রাখে বলুন তো ? মাটির নিচেও আছে অনেক জীব। এরা কেউ কারুর অস্তিত্ত্ব সম্পর্কে অবহিত নয়। অন্যদিকে দেখুন মানুষ কিন্তু এ সম্পর্কে সম্যকভাবে ওয়াকিবহাল। তবে এও আবার ঠিক অনেক সাধারণ মানুষ কিন্তু এ সম্পর্কে কোনো খোঁজ খবর রাখেন না।
ঠিক তেমনি আমাদের পৃথিবীর সঙ্গে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত সাতটি লোক আছে - যেমন ভূ -ভূব -স্বঃ - মহঃ - জনঃ - তপঃ এবং সত্যম। এগুলো আর কিছুই নয়, একটা একটা dimension বা মাত্রা বা স্তর। যদিও আমি মনে করি, এই স্তরের সংখ্যা বহু, আবার কারুর কারুর মতে ৫১ টি। সে যাই হোক, এগুলো সবই আমাদেরকে ঘিরে অবস্থান করছে। আমাদের মতো সাধারণ লোক, এগুলো বুঝি না, বা আমাদের মধ্যে এগুলো ধরা পড়ে না। কিন্তু যদি দিব্যদৃষ্টি লাভ করতে পারেন, তবে তিনি এইসব জগৎ পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। এখন সাধারণ মানুষ এ সম্পর্কে কিছু জানে না, বা তাদের অনুভূতিতে আসে না বলে এগুলো নেই তা নয়। আছে, এবং সেটা আমরা একটু চেষ্টা করলেই ধরতে পারবো। আসলে আমরা পর্যবেক্ষেন করি কি ভাবে ? আলো ও শব্দের তরঙ্গ আমাদের অনুভূতি জাগায়, বা বলা যেতে পারে, আলো ও শব্দ তরঙ্গ অনুভব করবার শক্তি আমাদের থাকা আবশ্যক। সাধারণ মানুষের এই শক্তি নেই বলে, বা কম বলে, তারা এটা বুঝতে পারে না। অতএব এই সব জগতের স্পন্দন অনুভব করার শক্তি জাগ্রত করাই দিব্যদৃষ্টি লাভের উপায়।
এই ক্ষমতার আবার সামর্থ্যভেদ আছে। প্রথম দিকে, এই জগতের অস্তিত্ত্ব অনুভব হয় মাত্র। তার পরে, সেখানকার অর্থাৎ সেই জগতের অধিবাসীর সঙ্গে আলাপ ব্যবহার করার শক্তি জন্মায়। এই পর্যায়ে দূরের জিনিস দেখবার শক্তি জন্মায় না। অনাগত ভবিষ্যৎ বা অতীত সম্পর্কেও কিছু জানা যায় না। কিন্তু সাধনার উৎকর্ষতা যত বৃদ্ধি পায়, তত এই দুটি বিষয় সম্পর্কেও জ্ঞান জন্মায়।
আর একটা ব্যাপার হচ্ছে, স্থূল দেহকে অভিভূত করতে পারলে আমরা সুক্ষদেহে বিচরণ করতে পারি। এই ব্যাপারটা আমরা ঘুমোনো অবস্থায় প্রত্যেকেই অনুভব করতে পারি। শুধু নিদ্রিত অবস্থায় নয়, বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বা ক্লোরোফর্মের সাহায্যেও আমরা আমাদের সূক্ষ্ম দেহকে আমাদের স্থুল দেহ থেকে আলাদা করতে পারি। যদি কেউ সংকল্প দ্বারা নিজের সূক্ষ্ম দেহের ইন্দ্রিয়গুলোকে জাগ্রত করতে পারেন, তবে তিনি সূক্ষ্ম দেহে যা কিছু করেন বা দেখেন তার কিছু অংশ প্রকৃতিস্থ হবার পরেও মনে করতে পারেন। বার বার অভ্যাস করলে, সেটা স্বভাবে পরিণত হয়ে যায়। অনেক সময় কোনো বিশেষ গন্ধ, মানুষকে এই অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে। আবার উন্মত্যবৎ নৃত্য, বা একনাগাড়ে মাথা ঘোরালেও, এই অবস্থার উন্মেষ হতে পারে। ভার বা ভর পড়া যেখানে অকৃত্তিম, সেখানেও এই ব্যাপার ঘটতে পারে। কিন্তু এগুলো শারীরিক দিক থেকে ক্ষতিকর, এবং এর ফলও স্থায়ী হয় না। এমনকি আপনি যদি নিজের নাম বা যে কোনো ধ্বনি বার বার উচ্চারণ করতে পারেন, তবে এক সময় আপনি একটা বিশেষ দশায় উপস্থিত হবেন, যাতে আপনি এই সব জগতের অবস্থা অনুভব করবেন।
আমাদের দেশে, একটা পন্থা আছে, প্রাণায়াম, সেটা হচ্ছে, শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ। পূরক, অন্তঃকুম্ভ (৪-৮) রেচক, বাহ্যকুম্ভ (১৬-৩২)। এইভাবে শ্বাসের ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে, চিত্ত স্থির হয়, এবং এতেও এই শক্তি লাভ করতে পারা যায়। তবে, উপযুক্ত গুরু বা আচার্য্য ব্যতীত এই পথ বিপদমুক্ত নয়। এতে শরীর ও মন ব্যাধিগ্রস্থ হতে পারে। এর ফলে, আমি নিজেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। তাই এই পথে উপযুক্ত নির্দেশক ভিন্ন না এগুনো ভালো।
পরাবিদ্যাবিদগন এইসব পদ্ধতি অনুমোদন করেন না। তাদের মতে, দিব্যদৃষ্টি লাভ করবার শক্তি সংগ্রহের জন্য, প্রথমে দরকার আত্মানুসন্ধান। মানসিক ও নৈতিক উৎকর্ষ লাভ না করে, এই পথে পা বাড়ানো উচিত নয়। এসব করে সাময়িক ভাবে আপনার হয়তো ক্ষমতা লাভ হতে পারে, কিন্তু আপনার স্বভাব উন্নত না হওয়ার কারণে , আপনার নবজাত শক্তি আপনাকে বিপথে পরিচালিত করবে।
উৎকৃষ্ট উপায় হচ্ছে ধ্যান-ধারণা । প্রতিদিন নিয়মিত সময়ে, নির্জন স্থানে, স্থির ভাবে বসে চিত্তকে একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে নিবিষ্ট রাখতে হবে। মনে অন্য কোনো বিষয় না আসতে পারে, তা দেখতে হবে। এই ভাবে প্রথমে একাগ্রতা অভ্যাস করতে হবে। এই অভ্যাস থেকেই ধীরে ধীরে ধ্যানের মধ্যে ঢুকে যাবেন আপনি। কথাটা যত সহজে বলে দিলাম আমি, ব্যাপারটা তত সহজ নয়। চিন্তা রোহিত হওয়া ভীষণ কঠিন। ছোটবেলায় আমাদের গ্রামে একটা প্রতিযোগিতা হতো। কলাগাছ বেয়ে ওঠা। মাত্র দশফুট কলাগাছে বেয়ে ওঠা ও উপরে রাখা পতাকা নিয়ে নাবা শুধু কষ্ট সাধ্য নয়, কোনো কোনো বছর এই প্রতিযোগিতাতে কেউ সাফল্য পেত না। তবে অসম্ভব নয়। একটু চেষ্টা করে দেখবেন, মাত্র পাঁচমিনিট চিন্তারোহিত থাকা কত কঠিন। কিন্তু সম্ভব।
কেউ যদি মনে করেন, জগতে এত জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা হচ্ছে, আর এই বিষয়টা চেষ্টা করলে হবে
না ? নিশ্চই হবে, তবে সব থেকে আগে যেটা দরকার সেটা হচ্ছে চরিত্র গঠন, চরিত্র সংশোধন। কুচিন্তা, কুঅভ্যাস, কুকার্য্য এগুলো আমাদের নিত্য সহচর। ধ্যান ধারণা সমাধিতে অভিনিবেশ করতে গেলে এগুলো আগে ত্যাগ করতে হবে। আমরা মনে মনে এমন সব চিন্তা করি, যা কার্য্যে পরিণত হলে, সমাজে এক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। আমাদের কামনা বাসনা এত নিম্ন পর্যায়ের, যা আমাদের উচ্চ ধারণা পোষণ করতে প্রতিপদে বাধা দেয়। তাই আগে আত্ম সংশোধন দরকার, তবেই চিত্তে উচ্চ ভাব আসবে।
যোগসিদ্ধ এই দিব্যদৃষ্টি লাভ করা কঠিন নয়, অনেকের এই শক্তি স্বভাবজাত। অনেকে সিন্ধুকের মধ্যে কি আছে, তা বাইরে থেকে দেখতে পায়। মাটির নিচে কোনো জন্তু থাকলে, বা কোনো জিনিস থাকলে তা তারা দেখতে পায়। সাধনার সাহায্যে এই শক্তি সঞ্চয় করা যায়। এবং ক্রমশঃ সূক্ষ্ম জগৎ পর্যবেক্ষণ করবার ক্ষমতা জন্মে। যারা এর চর্চা করেন, তারা সব সময় অনুভব করেন, যেন একটা শক্তি বা অদৃশ্য কেউ তাদের সঙ্গে সঙ্গে আছেন। তাদের কাছে নির্জনতা অর্থহীন হয়ে যায়। এই অবস্থা হলে বুঝতে হবে, সূক্ষ্মদৃষ্টি শক্তির উন্মেষ ঘটতে চলেছে। এবং সেই কারণেই এই সব সূক্ষ্ম আত্মার উপস্থিতি তিনি টের পাচ্ছেন। এই সময়, কখনো কখনো অন্তরে, একটা জ্যোতি, বা আলোর চ্ছটা অনুভব করেন।বর্ণময় আলোর বিচ্ছুরণ এক অনাবিল আনন্দ এনে দেয়। আধ্যাত্মিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এই সকল বিভূতি আপনা আপনি হয়।
তবে একটা কথা আবার বলি, চিন্তা শক্তির একাগ্রতা, একতানতা অর্থাৎ contituatuion থাকা চাই। প্রতিদিন, নিয়মিত ভাবে, নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট স্থানে, এবং নির্জনে এই অভ্যাস করা চাই। একটা উচ্চভাব মনে পোষণ করতে হবে, প্রতিনিয়ত এবং তাতেই তন্ময় থাকতে হবে। অসৎসঙ্গ, অসৎবাক্য, অসৎচিন্তা পরিত্যাগ করতে হবে। প্রথমে পাঁচ মিনিট থেকে শুরু করুন। ক্রমে দিনে ২-৩ ঘন্টা মনকে এই ভাবে ভাবরসে ডুবিয়ে রাখুন। একটা কথা মনে রাখবেন, একদিনের অনভ্যাস আপনাকে দশদিন পিছিয়ে দেবে। যিনি প্রতিনিয়ত ২-৩ ঘন্টা এইভাবে চিত্তকে স্থির রাখতে পারেন, তাঁর সিদ্ধিলাভের সময় কাছে এসে গেছে বুঝতে হবে। তবে আপনার চিন্তা শক্তির পবিত্রতা ভেদে সাফল্যের সময় নির্ধারণ হবে।
এর জন্য কোনো শিক্ষকের প্রয়োজন নেই। আর একটা কথা শুনুন, আপনি উপযুক্ত হলে, শিক্ষক এসে যাবেন, আর যতদিন আপনি উপযুক্ত না হচ্ছেন, শিক্ষক পাবার কোনো আশা নেই। নিজেকে অমৃত পথে চালিত করতে অন্যের সাহায্য প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন বিবেকের নির্দেশ মেনে চলা।
ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ। হরি ওম।
ঠিক তেমনি আমাদের পৃথিবীর সঙ্গে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত সাতটি লোক আছে - যেমন ভূ -ভূব -স্বঃ - মহঃ - জনঃ - তপঃ এবং সত্যম। এগুলো আর কিছুই নয়, একটা একটা dimension বা মাত্রা বা স্তর। যদিও আমি মনে করি, এই স্তরের সংখ্যা বহু, আবার কারুর কারুর মতে ৫১ টি। সে যাই হোক, এগুলো সবই আমাদেরকে ঘিরে অবস্থান করছে। আমাদের মতো সাধারণ লোক, এগুলো বুঝি না, বা আমাদের মধ্যে এগুলো ধরা পড়ে না। কিন্তু যদি দিব্যদৃষ্টি লাভ করতে পারেন, তবে তিনি এইসব জগৎ পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। এখন সাধারণ মানুষ এ সম্পর্কে কিছু জানে না, বা তাদের অনুভূতিতে আসে না বলে এগুলো নেই তা নয়। আছে, এবং সেটা আমরা একটু চেষ্টা করলেই ধরতে পারবো। আসলে আমরা পর্যবেক্ষেন করি কি ভাবে ? আলো ও শব্দের তরঙ্গ আমাদের অনুভূতি জাগায়, বা বলা যেতে পারে, আলো ও শব্দ তরঙ্গ অনুভব করবার শক্তি আমাদের থাকা আবশ্যক। সাধারণ মানুষের এই শক্তি নেই বলে, বা কম বলে, তারা এটা বুঝতে পারে না। অতএব এই সব জগতের স্পন্দন অনুভব করার শক্তি জাগ্রত করাই দিব্যদৃষ্টি লাভের উপায়।
এই ক্ষমতার আবার সামর্থ্যভেদ আছে। প্রথম দিকে, এই জগতের অস্তিত্ত্ব অনুভব হয় মাত্র। তার পরে, সেখানকার অর্থাৎ সেই জগতের অধিবাসীর সঙ্গে আলাপ ব্যবহার করার শক্তি জন্মায়। এই পর্যায়ে দূরের জিনিস দেখবার শক্তি জন্মায় না। অনাগত ভবিষ্যৎ বা অতীত সম্পর্কেও কিছু জানা যায় না। কিন্তু সাধনার উৎকর্ষতা যত বৃদ্ধি পায়, তত এই দুটি বিষয় সম্পর্কেও জ্ঞান জন্মায়।
আর একটা ব্যাপার হচ্ছে, স্থূল দেহকে অভিভূত করতে পারলে আমরা সুক্ষদেহে বিচরণ করতে পারি। এই ব্যাপারটা আমরা ঘুমোনো অবস্থায় প্রত্যেকেই অনুভব করতে পারি। শুধু নিদ্রিত অবস্থায় নয়, বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বা ক্লোরোফর্মের সাহায্যেও আমরা আমাদের সূক্ষ্ম দেহকে আমাদের স্থুল দেহ থেকে আলাদা করতে পারি। যদি কেউ সংকল্প দ্বারা নিজের সূক্ষ্ম দেহের ইন্দ্রিয়গুলোকে জাগ্রত করতে পারেন, তবে তিনি সূক্ষ্ম দেহে যা কিছু করেন বা দেখেন তার কিছু অংশ প্রকৃতিস্থ হবার পরেও মনে করতে পারেন। বার বার অভ্যাস করলে, সেটা স্বভাবে পরিণত হয়ে যায়। অনেক সময় কোনো বিশেষ গন্ধ, মানুষকে এই অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে। আবার উন্মত্যবৎ নৃত্য, বা একনাগাড়ে মাথা ঘোরালেও, এই অবস্থার উন্মেষ হতে পারে। ভার বা ভর পড়া যেখানে অকৃত্তিম, সেখানেও এই ব্যাপার ঘটতে পারে। কিন্তু এগুলো শারীরিক দিক থেকে ক্ষতিকর, এবং এর ফলও স্থায়ী হয় না। এমনকি আপনি যদি নিজের নাম বা যে কোনো ধ্বনি বার বার উচ্চারণ করতে পারেন, তবে এক সময় আপনি একটা বিশেষ দশায় উপস্থিত হবেন, যাতে আপনি এই সব জগতের অবস্থা অনুভব করবেন।
আমাদের দেশে, একটা পন্থা আছে, প্রাণায়াম, সেটা হচ্ছে, শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ। পূরক, অন্তঃকুম্ভ (৪-৮) রেচক, বাহ্যকুম্ভ (১৬-৩২)। এইভাবে শ্বাসের ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে, চিত্ত স্থির হয়, এবং এতেও এই শক্তি লাভ করতে পারা যায়। তবে, উপযুক্ত গুরু বা আচার্য্য ব্যতীত এই পথ বিপদমুক্ত নয়। এতে শরীর ও মন ব্যাধিগ্রস্থ হতে পারে। এর ফলে, আমি নিজেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। তাই এই পথে উপযুক্ত নির্দেশক ভিন্ন না এগুনো ভালো।
পরাবিদ্যাবিদগন এইসব পদ্ধতি অনুমোদন করেন না। তাদের মতে, দিব্যদৃষ্টি লাভ করবার শক্তি সংগ্রহের জন্য, প্রথমে দরকার আত্মানুসন্ধান। মানসিক ও নৈতিক উৎকর্ষ লাভ না করে, এই পথে পা বাড়ানো উচিত নয়। এসব করে সাময়িক ভাবে আপনার হয়তো ক্ষমতা লাভ হতে পারে, কিন্তু আপনার স্বভাব উন্নত না হওয়ার কারণে , আপনার নবজাত শক্তি আপনাকে বিপথে পরিচালিত করবে।
উৎকৃষ্ট উপায় হচ্ছে ধ্যান-ধারণা । প্রতিদিন নিয়মিত সময়ে, নির্জন স্থানে, স্থির ভাবে বসে চিত্তকে একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে নিবিষ্ট রাখতে হবে। মনে অন্য কোনো বিষয় না আসতে পারে, তা দেখতে হবে। এই ভাবে প্রথমে একাগ্রতা অভ্যাস করতে হবে। এই অভ্যাস থেকেই ধীরে ধীরে ধ্যানের মধ্যে ঢুকে যাবেন আপনি। কথাটা যত সহজে বলে দিলাম আমি, ব্যাপারটা তত সহজ নয়। চিন্তা রোহিত হওয়া ভীষণ কঠিন। ছোটবেলায় আমাদের গ্রামে একটা প্রতিযোগিতা হতো। কলাগাছ বেয়ে ওঠা। মাত্র দশফুট কলাগাছে বেয়ে ওঠা ও উপরে রাখা পতাকা নিয়ে নাবা শুধু কষ্ট সাধ্য নয়, কোনো কোনো বছর এই প্রতিযোগিতাতে কেউ সাফল্য পেত না। তবে অসম্ভব নয়। একটু চেষ্টা করে দেখবেন, মাত্র পাঁচমিনিট চিন্তারোহিত থাকা কত কঠিন। কিন্তু সম্ভব।
কেউ যদি মনে করেন, জগতে এত জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা হচ্ছে, আর এই বিষয়টা চেষ্টা করলে হবে
না ? নিশ্চই হবে, তবে সব থেকে আগে যেটা দরকার সেটা হচ্ছে চরিত্র গঠন, চরিত্র সংশোধন। কুচিন্তা, কুঅভ্যাস, কুকার্য্য এগুলো আমাদের নিত্য সহচর। ধ্যান ধারণা সমাধিতে অভিনিবেশ করতে গেলে এগুলো আগে ত্যাগ করতে হবে। আমরা মনে মনে এমন সব চিন্তা করি, যা কার্য্যে পরিণত হলে, সমাজে এক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। আমাদের কামনা বাসনা এত নিম্ন পর্যায়ের, যা আমাদের উচ্চ ধারণা পোষণ করতে প্রতিপদে বাধা দেয়। তাই আগে আত্ম সংশোধন দরকার, তবেই চিত্তে উচ্চ ভাব আসবে।
যোগসিদ্ধ এই দিব্যদৃষ্টি লাভ করা কঠিন নয়, অনেকের এই শক্তি স্বভাবজাত। অনেকে সিন্ধুকের মধ্যে কি আছে, তা বাইরে থেকে দেখতে পায়। মাটির নিচে কোনো জন্তু থাকলে, বা কোনো জিনিস থাকলে তা তারা দেখতে পায়। সাধনার সাহায্যে এই শক্তি সঞ্চয় করা যায়। এবং ক্রমশঃ সূক্ষ্ম জগৎ পর্যবেক্ষণ করবার ক্ষমতা জন্মে। যারা এর চর্চা করেন, তারা সব সময় অনুভব করেন, যেন একটা শক্তি বা অদৃশ্য কেউ তাদের সঙ্গে সঙ্গে আছেন। তাদের কাছে নির্জনতা অর্থহীন হয়ে যায়। এই অবস্থা হলে বুঝতে হবে, সূক্ষ্মদৃষ্টি শক্তির উন্মেষ ঘটতে চলেছে। এবং সেই কারণেই এই সব সূক্ষ্ম আত্মার উপস্থিতি তিনি টের পাচ্ছেন। এই সময়, কখনো কখনো অন্তরে, একটা জ্যোতি, বা আলোর চ্ছটা অনুভব করেন।বর্ণময় আলোর বিচ্ছুরণ এক অনাবিল আনন্দ এনে দেয়। আধ্যাত্মিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এই সকল বিভূতি আপনা আপনি হয়।
তবে একটা কথা আবার বলি, চিন্তা শক্তির একাগ্রতা, একতানতা অর্থাৎ contituatuion থাকা চাই। প্রতিদিন, নিয়মিত ভাবে, নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট স্থানে, এবং নির্জনে এই অভ্যাস করা চাই। একটা উচ্চভাব মনে পোষণ করতে হবে, প্রতিনিয়ত এবং তাতেই তন্ময় থাকতে হবে। অসৎসঙ্গ, অসৎবাক্য, অসৎচিন্তা পরিত্যাগ করতে হবে। প্রথমে পাঁচ মিনিট থেকে শুরু করুন। ক্রমে দিনে ২-৩ ঘন্টা মনকে এই ভাবে ভাবরসে ডুবিয়ে রাখুন। একটা কথা মনে রাখবেন, একদিনের অনভ্যাস আপনাকে দশদিন পিছিয়ে দেবে। যিনি প্রতিনিয়ত ২-৩ ঘন্টা এইভাবে চিত্তকে স্থির রাখতে পারেন, তাঁর সিদ্ধিলাভের সময় কাছে এসে গেছে বুঝতে হবে। তবে আপনার চিন্তা শক্তির পবিত্রতা ভেদে সাফল্যের সময় নির্ধারণ হবে।
এর জন্য কোনো শিক্ষকের প্রয়োজন নেই। আর একটা কথা শুনুন, আপনি উপযুক্ত হলে, শিক্ষক এসে যাবেন, আর যতদিন আপনি উপযুক্ত না হচ্ছেন, শিক্ষক পাবার কোনো আশা নেই। নিজেকে অমৃত পথে চালিত করতে অন্যের সাহায্য প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন বিবেকের নির্দেশ মেনে চলা।
ওম শান্তি শান্তি শান্তিঃ। হরি ওম।
No comments:
Post a Comment