শাঁখা, সিঁদুর, নোয়া, পলা - কেন ধারণ করে ?
হিন্দু বাঙালির বিয়েতে শাঁখা, সিঁদুর, নোয়া, পলা আবশ্যিক। কিন্তু কেন ?
বাঙালী হিন্দুদের বিয়ে একটা উন্নত সংস্কৃতির ধারক। একটা পরম্পরা, যা গভীর আত্মবিশ্বাস ও ঋজুতা নিয়ে পালন করা হয়। বাঙালি বিয়ের কনেকে, অন্যান্য অনেকের মতো লাল শাড়ী ব্লাউজ দিয়ে সাজানো হয় । এমনি অনেক ঐতিহ্যপূর্ণ অনুপম ধর্মীয় সংস্কার পালন করা হয়।
প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যে যেমন বিয়ের দিনে বা বিয়ের দিন থেকে বিয়ের নিদর্শন স্বরূপ কিছু শিষ্টাচার পালন করা হয়, তেমনি কিছু নিদর্শন বা চিহ্ন মেয়েরা সারা জীবন বহন করে নিয়ে চলে। এগুলোকে সৌভাগ্যের চিহ্ন বলে মনে করা হয়। এই সৌভাগ্যের চিহ্নেগুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে শাঁখা, সিঁদুর, পলা ও নোয়া (লোহা)।
শাঁখা : এটি একটি সাদা রঙের চুড়ি, যা তৈরি হয়, সামুদ্রিক শঙ্খ থেকে। দুই হাতেই এই শাঁখা পরিধান করা হয়। খেয়াল রাখতে হয় যাতে, এই শাঁখা বিয়ের এক বছরের মধ্যে ভেঙে না যায়। যদি কোনো কারণে, এই শাঁখা এক বছরের মধ্যে ভেঙে যায়, তবে তাকে অশুভ লক্ষণ বলে মনে করা হয়। যদিও এর মধ্যে কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই।
পলা : এটি একটি লাল রঙের চুড়ি। যা তৈরি হয় লাল coral বা প্রবাল থেকে। প্রবাল সামুদ্রিক প্রাণী। তার জীবাশ্ম থেকেই এই প্রবাল বা পলা তৈরি করা হয়ে থাকে। দুই হাতেই এই পলা পরিধান করা হয়। পলার ক্ষেত্রেও খেয়াল রাখতে হয় যাতে এটি এক বছরের মধ্যে নষ্ট না হয়। শাঁখার মতো পলাও যদি এক বছরের মধ্যে ভেঙে যায়, তবে তাকে অশুভ লক্ষণ বলে মনে করা হয়। যদিও এর মধ্যে কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই।
নোয়া : নোয়া কথাটা লোহার অপভ্ৰংশ। আসলে লোহা বা iron দিয়ে এই চুড়ি তৈরি করা হয়। এটি কেবলমাত্র "বা" হাতে ধারণ করা হয়। এটি কেউ কেউ, সোনা বা বা রুপা দিয়ে আচ্ছাদন করে বানিয়ে নেন ।
সিঁদুর : এটি আসলে লাল রঙের মাটি। সিঁদুর শরীরের দুই জায়গায় পড়ানো হয়। দুই ভ্রূযুগলের মাঝে গোল আকারে এবং সিঁথিতে লম্বা করে।
এই চারটি আসলে বিবাহিত মেয়ের চিহ্ন। যতদিন স্বামী জীবিত থাকেন, হিন্দু বাঙালিরা এই চিহ্ন বহন করে নিয়ে চলেন। অনেকের বিশ্বাস, এগুলো ধারণ করলে এর দ্বারা অশুভ শক্তিকে বিতাড়িত করা সম্ভব হয়।
এগুলো আসলে মেয়েদের সাজানোর জন্য অলংকার। শাঁখা, সিঁদুর, পলা পড়লে কনেকে এক ঐশ্বরিক সৌন্দর্য প্রদান করে। এমনকি, অন্য পুরুষের কুনজর থেকে বাঁচবার জন্য, এক রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করে।
তবে এর কিছু দ্রব্যগুন, ও রঙের প্রভাব আছে। যা মানুষকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ রাখে। শুধু তাই নয়, বিয়ের দিন সকালে এই শাঁখা ও পলা কনের মা পড়িয়ে দেন। বিয়ের সময় সিঁদুর পাড়িয়ে দেন, স্বামী। আর লোহা পরিয়ে দেন, কনের শাশুড়ি অর্থাৎ বরের মা। তাই এগুলো তাদের আশীর্বাদের চিহ্ন।
শাঁখা যেমন দুই হাতেই পড়ানো হয়, তেমনি পলাও দুই হাতেই ধারণ করা যেতে পারে। লোহা বা নোয়া কেবলমাত্র "বা" হাতে পড়ানো হয়। শাঁখা ও সিঁদূর হিন্দু বাঙালিদের মধ্যে এতটাই গভীর রেখাপাত করে, যে অবিবাহিত মেয়েরা কিছুতেই এদুটো ধারণ করবে না। তা সে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যই হোক বা অন্য কোনো কারণে হোক। তবে তারা শাখা বা পলার আংটি ব্যবহার করে থাকে, এর দ্রাব্যগুন পাবার জন্য।
এখন দেখে নেবো এগুলোতে আদৌ কোনো উপকার হয় কি না। দেখুন, পৃথিবীটা রং ও আলোর খেলা। সূর্য রশ্মি থেকে যে আলোর বন্যা বয়ে বেড়াচ্ছে, সেখান থেকেই আমরা পুষ্টি বর্ধন করছি। এই আলো ৭টি রঙের সমাহার। আলোর মধ্যে থেকে যে রং বেরোচ্ছে তা আলোর গুন্। আমরা যে বিভিন্ন গ্রহ রত্ন ধারণ করি, তা আসলে ওই সূর্য্যরশ্মি থেকে রং সংগ্রহ করবার জন্য, যা আমাদের সুস্থ রাখবে, মানসিক শান্তি প্রদান করবে।অর্থাৎ শরীর ও মন দুটোকেই প্রভাবিত করে এই সূর্য্যের আলো বা তার রঙ। তাই সাদা, এবং লাল, রং থেকে পুষ্টি বর্ধন করবার জন্য, আমাদের শাঁখা পলা ও সিঁদুর একটা বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে।
তবে শাঁখাকে সাক্ষাৎ মা-লক্ষ্মীর প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়। এছাড়া, শঙ্খের অনেক প্রাকৃতিক গুন্ আছে। শাঁখা ভেজানো জল, বা শাঁখার গুঁড়ো, আমাদের অনেক রোগের উপশম করে । এছাড়া শঙ্খ হিন্দুদের কাছে একটি পবিত্র বস্তু, শাঁখের ধ্বনি-তরঙ্গ পরিবেশের negative energy-কে প্রতিহত করে। আমরা জানি, যে পদার্থ সূর্য থেকে যে রং গ্রহণ করবার ক্ষমতা রাখে, সেই বস্তু সেই রং ধারণ করে। তাই শাঁখা যেমন সাদা রং সংগ্রহ করে তাই পবিত্রতা প্রশ্নাতীত। মানুষের মনকে পবিত্র রাখতে এই সাদা রঙের প্রভাব আছে।
তেমনি পলা ও সিঁদুর লাল রং সংগ্রহ করে। পলারও কিছু দ্রব্য গুন্ আছে। শরীরে রক্তাল্পতা কমাতে, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে পলা ধারণের বা পলা ভেজানো জল খাবার বাব্যস্থা আছে। পলা ধারণ করলে, মেয়েদের রজঃস্রাব জনিত ব্যাথা ও সমস্যা প্রশমিত হয়। মেয়েদের শরীরের ক্ষয় পুরুষের থেকে অনেক বেশি। আর সেটা শুরু হয় মেয়েরা যখন রজঃস্বলা হয়। তখন থেকেই এই সব জিনিসের শারীরিক প্রভাব প্রয়োজনীয়।
লাল সিঁদুর পড়ানো হয় দুটো জায়গায়। এক, ভ্রূযুগলের মাঝে, এবং সিঁথিতে। অর্থাৎ যাকে আমরা আমাদের ত্রিনয়নের অবস্থান বলি বা আজ্ঞাচক্র বলি। । এটি খুব স্পর্শকাতর জায়গা। এই আজ্ঞাচক্র সক্রিয় থাকলে, মানুষের মধ্যে ভবিষ্যৎ বোঝার সম্ভাবনা শক্তি জাগ্রত হয় । আমি অনেক মায়েদের দেখছি, এমনকি আমার স্ত্রীকে দেখেছি, ওঁরা সহজে মানুষের ভিতরটা দেখতে পায়। তার উদ্দেশ্য বুঝতে পারে। এই ক্ষমতা ওর সিঁদুর পড়ার জন্য হয়েছে বলে আমার ধারণা। এই আজ্ঞাচক্রেই শাক্তরা সিঁদুর ধারণ করেন। বৈষ্ণবরা তিলক বা চন্দন ধারণ করেন। জ্যোতি ধ্যানের জন্য এই আজ্ঞাচক্রকেই নির্দিষ্ট করা আছে।অতয়েব জ্ঞাতসারে হোক বা অজ্ঞাত সারে হোক এই আজ্ঞাচক্র সক্রিয় করার জন্য সিঁদুর পড়া উপকারী বৈকি !
এছাড়া, নোয়ার চুড়ি অর্থাৎ লোহা বা ধাতব পদার্থ মানুষের শরীরে গুরুত্ত্বপূর্ন। iron tablet খেতে হবে না যদি আমরা প্রতিদিন লোহা ভেজান জল খেতে পারি। এছাড়া লোহা আমাদের শরীরের negative ও posetive শক্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এগুলো যেমন সুস্বাস্থের জন্য দরকার, তেমনি এটি সৌভাগ্যের প্রতীক। এগুলো মেয়েদের সহ্যশক্তির সীমা বাড়িয়ে দেয় অর্থাৎ যেকোনো পরিস্থিতে নিজেকে শান্ত রাখতে পারে। ফলতঃ দাম্পত্য কলহের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। আজকাল যেমন এর ব্যবহার কমে যাচ্ছে, তেমনি পারিবারিক জীবনে অশান্তিও বাড়ছে।
প্রত্যেক সমাজেই বিবাহিত মেয়েদের, কোননা কোনো ধরনের প্রতীক ব্যবহার করতে দেখা যায়। কেউ মঙ্গলসূত্র ব্যবহার করেন , উচ্চবিত্তের মধ্যে হীরের আংটি প্রদানের প্রথা চালু আছে। এগুলোও সুস্বাস্থ ও সৌভাগ্যের প্রতীক। তবে বাঙালি পরিবারে এই শাঁখা-পলা-সিঁদুর-নোয়া পরিধানের , এই যে সংস্কৃতি তা তাদের দাম্পত্য জীবনের সুখ, নির্বিরোধী মানসিকতা, এবং শারীরিক দিক থেকে, সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।
এখন প্রশ্ন হলো এগুলো যদি উপকারী তবে, অবিবাহিত মেয়েরা পড়ে না কেন ? আসলে, আজ থেকে ৭০/৭৫ বছর আগেও মেয়েরা রজঃস্বলা হলেই তাদের বিয়ের বন্দোবস্ত করা হতো। এবং এই শাঁখা পলা সিঁদুর লোহা ধারনের ব্যবস্থা হতো। এখন সময়ের ডাকে, সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু পুরানো সংস্কার আমাদের পিছু ছাড়েনি। তাই অবিবাহিত মেয়েরা এগুলো ধারণ করলে, সমাজে একটা ভুল বার্তা যাবে, অর্থাৎ ধরে নেওয়া হবে যে সে বিবাহিত। এই কারণেই অবিবাহিত মেয়েরা এগুলো ধারণ করেন না। তবে লক্ষ করবেন, বেশির ভাগ মেয়েরা পলার বা শাঁখার আংটি ব্যবহার করে থাকেন । এবং এতে তাদের উপকার হয়।
অতয়েব বাঙালি হিন্দুদের এই শুভ সংস্কার, মেনে চললে উপকার ভিন্ন অপকার নেই। এছাড়া শাঁখা পলা ও সিঁদুর মায়েদের একটা স্বর্গীয় সৌন্দর্য এনে দেয়। মমতাময়ী মায়ের চেহারা দৃষ্ট হয়। মেয়ে তখন "মা" হয়ে ওঠে।
ওঁ শান্তি শান্তি শান্তিঃ। হরি ওং
প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যে যেমন বিয়ের দিনে বা বিয়ের দিন থেকে বিয়ের নিদর্শন স্বরূপ কিছু শিষ্টাচার পালন করা হয়, তেমনি কিছু নিদর্শন বা চিহ্ন মেয়েরা সারা জীবন বহন করে নিয়ে চলে। এগুলোকে সৌভাগ্যের চিহ্ন বলে মনে করা হয়। এই সৌভাগ্যের চিহ্নেগুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে শাঁখা, সিঁদুর, পলা ও নোয়া (লোহা)।
শাঁখা : এটি একটি সাদা রঙের চুড়ি, যা তৈরি হয়, সামুদ্রিক শঙ্খ থেকে। দুই হাতেই এই শাঁখা পরিধান করা হয়। খেয়াল রাখতে হয় যাতে, এই শাঁখা বিয়ের এক বছরের মধ্যে ভেঙে না যায়। যদি কোনো কারণে, এই শাঁখা এক বছরের মধ্যে ভেঙে যায়, তবে তাকে অশুভ লক্ষণ বলে মনে করা হয়। যদিও এর মধ্যে কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই।
পলা : এটি একটি লাল রঙের চুড়ি। যা তৈরি হয় লাল coral বা প্রবাল থেকে। প্রবাল সামুদ্রিক প্রাণী। তার জীবাশ্ম থেকেই এই প্রবাল বা পলা তৈরি করা হয়ে থাকে। দুই হাতেই এই পলা পরিধান করা হয়। পলার ক্ষেত্রেও খেয়াল রাখতে হয় যাতে এটি এক বছরের মধ্যে নষ্ট না হয়। শাঁখার মতো পলাও যদি এক বছরের মধ্যে ভেঙে যায়, তবে তাকে অশুভ লক্ষণ বলে মনে করা হয়। যদিও এর মধ্যে কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই।
নোয়া : নোয়া কথাটা লোহার অপভ্ৰংশ। আসলে লোহা বা iron দিয়ে এই চুড়ি তৈরি করা হয়। এটি কেবলমাত্র "বা" হাতে ধারণ করা হয়। এটি কেউ কেউ, সোনা বা বা রুপা দিয়ে আচ্ছাদন করে বানিয়ে নেন ।
সিঁদুর : এটি আসলে লাল রঙের মাটি। সিঁদুর শরীরের দুই জায়গায় পড়ানো হয়। দুই ভ্রূযুগলের মাঝে গোল আকারে এবং সিঁথিতে লম্বা করে।
এই চারটি আসলে বিবাহিত মেয়ের চিহ্ন। যতদিন স্বামী জীবিত থাকেন, হিন্দু বাঙালিরা এই চিহ্ন বহন করে নিয়ে চলেন। অনেকের বিশ্বাস, এগুলো ধারণ করলে এর দ্বারা অশুভ শক্তিকে বিতাড়িত করা সম্ভব হয়।
এগুলো আসলে মেয়েদের সাজানোর জন্য অলংকার। শাঁখা, সিঁদুর, পলা পড়লে কনেকে এক ঐশ্বরিক সৌন্দর্য প্রদান করে। এমনকি, অন্য পুরুষের কুনজর থেকে বাঁচবার জন্য, এক রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করে।
তবে এর কিছু দ্রব্যগুন, ও রঙের প্রভাব আছে। যা মানুষকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ রাখে। শুধু তাই নয়, বিয়ের দিন সকালে এই শাঁখা ও পলা কনের মা পড়িয়ে দেন। বিয়ের সময় সিঁদুর পাড়িয়ে দেন, স্বামী। আর লোহা পরিয়ে দেন, কনের শাশুড়ি অর্থাৎ বরের মা। তাই এগুলো তাদের আশীর্বাদের চিহ্ন।
শাঁখা যেমন দুই হাতেই পড়ানো হয়, তেমনি পলাও দুই হাতেই ধারণ করা যেতে পারে। লোহা বা নোয়া কেবলমাত্র "বা" হাতে পড়ানো হয়। শাঁখা ও সিঁদূর হিন্দু বাঙালিদের মধ্যে এতটাই গভীর রেখাপাত করে, যে অবিবাহিত মেয়েরা কিছুতেই এদুটো ধারণ করবে না। তা সে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যই হোক বা অন্য কোনো কারণে হোক। তবে তারা শাখা বা পলার আংটি ব্যবহার করে থাকে, এর দ্রাব্যগুন পাবার জন্য।
এখন দেখে নেবো এগুলোতে আদৌ কোনো উপকার হয় কি না। দেখুন, পৃথিবীটা রং ও আলোর খেলা। সূর্য রশ্মি থেকে যে আলোর বন্যা বয়ে বেড়াচ্ছে, সেখান থেকেই আমরা পুষ্টি বর্ধন করছি। এই আলো ৭টি রঙের সমাহার। আলোর মধ্যে থেকে যে রং বেরোচ্ছে তা আলোর গুন্। আমরা যে বিভিন্ন গ্রহ রত্ন ধারণ করি, তা আসলে ওই সূর্য্যরশ্মি থেকে রং সংগ্রহ করবার জন্য, যা আমাদের সুস্থ রাখবে, মানসিক শান্তি প্রদান করবে।অর্থাৎ শরীর ও মন দুটোকেই প্রভাবিত করে এই সূর্য্যের আলো বা তার রঙ। তাই সাদা, এবং লাল, রং থেকে পুষ্টি বর্ধন করবার জন্য, আমাদের শাঁখা পলা ও সিঁদুর একটা বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে।
তবে শাঁখাকে সাক্ষাৎ মা-লক্ষ্মীর প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়। এছাড়া, শঙ্খের অনেক প্রাকৃতিক গুন্ আছে। শাঁখা ভেজানো জল, বা শাঁখার গুঁড়ো, আমাদের অনেক রোগের উপশম করে । এছাড়া শঙ্খ হিন্দুদের কাছে একটি পবিত্র বস্তু, শাঁখের ধ্বনি-তরঙ্গ পরিবেশের negative energy-কে প্রতিহত করে। আমরা জানি, যে পদার্থ সূর্য থেকে যে রং গ্রহণ করবার ক্ষমতা রাখে, সেই বস্তু সেই রং ধারণ করে। তাই শাঁখা যেমন সাদা রং সংগ্রহ করে তাই পবিত্রতা প্রশ্নাতীত। মানুষের মনকে পবিত্র রাখতে এই সাদা রঙের প্রভাব আছে।
তেমনি পলা ও সিঁদুর লাল রং সংগ্রহ করে। পলারও কিছু দ্রব্য গুন্ আছে। শরীরে রক্তাল্পতা কমাতে, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে পলা ধারণের বা পলা ভেজানো জল খাবার বাব্যস্থা আছে। পলা ধারণ করলে, মেয়েদের রজঃস্রাব জনিত ব্যাথা ও সমস্যা প্রশমিত হয়। মেয়েদের শরীরের ক্ষয় পুরুষের থেকে অনেক বেশি। আর সেটা শুরু হয় মেয়েরা যখন রজঃস্বলা হয়। তখন থেকেই এই সব জিনিসের শারীরিক প্রভাব প্রয়োজনীয়।
লাল সিঁদুর পড়ানো হয় দুটো জায়গায়। এক, ভ্রূযুগলের মাঝে, এবং সিঁথিতে। অর্থাৎ যাকে আমরা আমাদের ত্রিনয়নের অবস্থান বলি বা আজ্ঞাচক্র বলি। । এটি খুব স্পর্শকাতর জায়গা। এই আজ্ঞাচক্র সক্রিয় থাকলে, মানুষের মধ্যে ভবিষ্যৎ বোঝার সম্ভাবনা শক্তি জাগ্রত হয় । আমি অনেক মায়েদের দেখছি, এমনকি আমার স্ত্রীকে দেখেছি, ওঁরা সহজে মানুষের ভিতরটা দেখতে পায়। তার উদ্দেশ্য বুঝতে পারে। এই ক্ষমতা ওর সিঁদুর পড়ার জন্য হয়েছে বলে আমার ধারণা। এই আজ্ঞাচক্রেই শাক্তরা সিঁদুর ধারণ করেন। বৈষ্ণবরা তিলক বা চন্দন ধারণ করেন। জ্যোতি ধ্যানের জন্য এই আজ্ঞাচক্রকেই নির্দিষ্ট করা আছে।অতয়েব জ্ঞাতসারে হোক বা অজ্ঞাত সারে হোক এই আজ্ঞাচক্র সক্রিয় করার জন্য সিঁদুর পড়া উপকারী বৈকি !
এছাড়া, নোয়ার চুড়ি অর্থাৎ লোহা বা ধাতব পদার্থ মানুষের শরীরে গুরুত্ত্বপূর্ন। iron tablet খেতে হবে না যদি আমরা প্রতিদিন লোহা ভেজান জল খেতে পারি। এছাড়া লোহা আমাদের শরীরের negative ও posetive শক্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এগুলো যেমন সুস্বাস্থের জন্য দরকার, তেমনি এটি সৌভাগ্যের প্রতীক। এগুলো মেয়েদের সহ্যশক্তির সীমা বাড়িয়ে দেয় অর্থাৎ যেকোনো পরিস্থিতে নিজেকে শান্ত রাখতে পারে। ফলতঃ দাম্পত্য কলহের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। আজকাল যেমন এর ব্যবহার কমে যাচ্ছে, তেমনি পারিবারিক জীবনে অশান্তিও বাড়ছে।
প্রত্যেক সমাজেই বিবাহিত মেয়েদের, কোননা কোনো ধরনের প্রতীক ব্যবহার করতে দেখা যায়। কেউ মঙ্গলসূত্র ব্যবহার করেন , উচ্চবিত্তের মধ্যে হীরের আংটি প্রদানের প্রথা চালু আছে। এগুলোও সুস্বাস্থ ও সৌভাগ্যের প্রতীক। তবে বাঙালি পরিবারে এই শাঁখা-পলা-সিঁদুর-নোয়া পরিধানের , এই যে সংস্কৃতি তা তাদের দাম্পত্য জীবনের সুখ, নির্বিরোধী মানসিকতা, এবং শারীরিক দিক থেকে, সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।
এখন প্রশ্ন হলো এগুলো যদি উপকারী তবে, অবিবাহিত মেয়েরা পড়ে না কেন ? আসলে, আজ থেকে ৭০/৭৫ বছর আগেও মেয়েরা রজঃস্বলা হলেই তাদের বিয়ের বন্দোবস্ত করা হতো। এবং এই শাঁখা পলা সিঁদুর লোহা ধারনের ব্যবস্থা হতো। এখন সময়ের ডাকে, সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু পুরানো সংস্কার আমাদের পিছু ছাড়েনি। তাই অবিবাহিত মেয়েরা এগুলো ধারণ করলে, সমাজে একটা ভুল বার্তা যাবে, অর্থাৎ ধরে নেওয়া হবে যে সে বিবাহিত। এই কারণেই অবিবাহিত মেয়েরা এগুলো ধারণ করেন না। তবে লক্ষ করবেন, বেশির ভাগ মেয়েরা পলার বা শাঁখার আংটি ব্যবহার করে থাকেন । এবং এতে তাদের উপকার হয়।
অতয়েব বাঙালি হিন্দুদের এই শুভ সংস্কার, মেনে চললে উপকার ভিন্ন অপকার নেই। এছাড়া শাঁখা পলা ও সিঁদুর মায়েদের একটা স্বর্গীয় সৌন্দর্য এনে দেয়। মমতাময়ী মায়ের চেহারা দৃষ্ট হয়। মেয়ে তখন "মা" হয়ে ওঠে।
ওঁ শান্তি শান্তি শান্তিঃ। হরি ওং
No comments:
Post a Comment