Monday, 13 December 2021

আমিত্বের বিনাশ



আমিত্বের বিনাশ হবে কি করে ?

ঠাকুর রামকৃষ্ণ বলছেন, আমি মো'লে ঘুচবে জঞ্জাল। আমরা মাঝে মধ্যে মনে হয়, আমি যদি মরেই গেলাম, তাহলে আর থাকলো-টা  কি ? এই যে ঠাকুর বলছেন, আমি  মো'লে, এই অমিটা  কে ? আবার সমস্ত ধর্ম্মের মূল কথাই হচ্ছে, অহংকার বা আমিত্বের বিনাশ ক্রিয়াই আসলে ধর্ম্ম-কর্ম্ম। এখানে আবার কথা হচ্ছে আমিত্ব ঠিক আমি নয়। তো আমি আর আমিত্বের মধ্যে পার্থক্যটা কি ? প্রথমে বুঝে নেই "আমি"টা  কে ? "আমি" হচ্ছে এই শরীর মন ও আত্মা। তো এই শরীর না থাকলে আমি বলে কিছু থাকে না। আবার ধরুন শরীর আছে কিন্তু তার মধ্যে চেতনশক্তি নেই, তাহলেও আমি বলে কিছু থাকে না। আবার শুধু আত্মা অর্থাৎ শরীর মন বিহীন একটা আত্মা - এখানেও আমি বলে কিছু থাকে না। তো আমি বলতে বুঝি শরীর মন ও আত্মার বা  চেতনশক্তির একটা মিশ্রিত সত্ত্বা । 

এবার আমিত্ব মানে আমার-আমার  এই বোধশক্তি। অর্থাৎ আমার শরীর, আমার মন, আমার আত্মা।  আমার ছেলে-মেয়ে-মা-বাবা-আত্মীয়-স্বজন-বন্ধু-বান্ধব।  আবার আমার বাড়ি-গাড়ি-বিষয়-সম্পত্তি ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার আমার জ্ঞান, আমার বুদ্ধি, আমার চেতনা। এগুলো সবই আমার যা আমাদের আমিত্ব বোধ থেকে উৎপন্ন হয়েছে। তো আমির মধ্যে আছে দুটো বোধশক্তি।  একটা হচ্ছে "আমি" আর একটা হচ্ছে "আমার আমিত্ব"। এই দুটো বোধশক্তি ঘিরেই আমার এই বর্তমান অস্তিত্ত্ব ঘুরপাক খাচ্ছে। আর এই আমিকে পরিতৃপ্তি দেবার জন্য, তার ইচ্ছেকে পরিপূর্ন করবার জন্য, তার খেয়ালখুশীকে চরিতার্থ করবার জন্য আমরা বেঁচে আছি। আমরা সবাই যেন এই "আমি"র দাস।  আর তাকে খুশি করবার জন্য আমার জন্ম।  আমি আমার দেহকে ভালো রাখতে চাই। আমরা জিহ্বা-কে  খুশি করতে চাই, আমরা কানকে খুশী  করতে চাই, আমরা আমাদের পেটকে খুশি রাখতে চাই।  আমরা আমার চোখকে খুশি করতে চাই। এমনকি আমি আমার মনকে খুশি রাখতে চাই। সবশেষে বলা চলে আমরা সবাই আমার আত্মাকে খুশি করবার জন্য যেন বেঁচে আছি।  আমার কাজই  হচ্ছে এদেরকে খুশি রাখা, ভালো রাখা।

তা না হয় হলো, কিন্তু কেই এই দাস বা দস্যু যার কাজ হচ্ছে খুশি করা। আর কেই বা প্রভু যাকে খুশি করা দস্যু বা  দাসের কাজ ? মানুষ  ভাবে , সে তার সন্তান-স্ত্রী-বন্ধু -বান্ধবদের ভালোবাসে। কিন্তু সত্যিই কি সে এদের ভালো বাসে ? নাকি অন্য কোনো খেলা আছে এর মধ্যে ? আমরা দেখেছি, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা হচ্ছে না।  পিতা পুত্রের মধ্যে বনিবনা হচ্ছে না। আর যখনই বনিবনার অভাব হচ্ছে, তখনই ছাড়াছাড়ি হয়ে যাচ্ছে। পুত্র তার স্ত্রীকে নিয়ে বাবা মা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। স্বামীকে ছেড়ে স্ত্রী চলে যাচ্ছে। স্ত্রীকে ছেড়ে স্বামী চলে যাচ্ছে। তো, তবে সে কাকে ভালোবেসেছিলো ? কারজন্য সে প্রাণপাত পরিশ্রম করতো ?  শরীরকে সে ভালোবাসে, শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রতঙ্গকে সে ভালোবাসে। কিন্তু সেই  শরীরের পায়ে বা হাতে যখন পচন  ধরে, যখন অসার হয়ে যায়, এমনকি শরীরের কিডনি যখন কাজ করতে পারছে না, তখন সে নিজেকে বাঁচানোর জন্য এই অঙ্গগুলোকে শরীর থেকে সে  আলাদা  করে দিতে দ্বিধা করে না। তো কাকে সে ভালোবেসেছিলো ? কাকে নিয়ে সে বাঁচতে চায় ? আসলে সে নিজেকে ভালোবাসে। এই নিজ হচ্ছে আমাদের অহংবোধ।  

আসলে সে তার অহংকে  ভালোবাসে। এই অহংকে ভালোবেসেই সে ভালো মন্দ সব করে থাকে। আর এই অহংয়ের মধ্যেই ভেসে ওঠে আমি-আমার ভাব। এই অহংকে নিয়েই আমাদের পথচলা।  এই অহংকে নিয়েই গড়ে ওঠে তার ব্যক্তিত্ত্ব।  এই অহংকে ঘিরেই সে বেঁচে থাকতে চায়। এই অহংই স্বার্থপর করে তোলে, জীবকূলকে । সংক্ষেপে বলতে গেলে বলতে হয়, এই অহংই জীবের  আশ্রয়স্থল। এখান থেকে বিচ্যুত হতে চায় না সে । এই অহংই সেই শুদ্ধ আত্মার অশুদ্ধ রূপ। তাহলে কি আত্মা অশুদ্ধ হয় ? না  আত্মা কখনো অশুদ্ধ হয় না। সোনা সোনাই থাকে, কেবল নোংরার আবরণ সোনাকে সাময়িক ভাবে অশুদ্ধ করে তোলে। এই আবরণ-এর উৎপাটন হলেই শুদ্ধ আত্মা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। আত্মাকে যখন জীবসত্ত্বা ঘিরে ফেলে তখন আত্মা অশুদ্ধ বলে প্রতীয়মান হয়। একেই বলে অহং যা আসলে একটা স্বার্থপর "আমি" . তাই ঠাকুর বলছেন, আমি মো'লে ঘুচবে জঞ্জাল। ব্যক্তির যত সমস্যা। সমষ্টির যত  সমস্যা। পরিবারের যত  সমস্যা, সমাজের যত সমস্যা, রাষ্ট্রের যত সমস্যা সবই এই অহং-এর স্বার্থ রক্ষা করার জন্য। অর্থাৎ স্বার্থপরতা। সবাই চাইছে তার অহংকে খুশি করতে । আর এটা জীবের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। কিন্তু এক অহংকে খুশি করতে গিয়ে যখন অন্যের অহংয়ের আঘাত হানে তখন শুরু হয় দ্বন্দ, তখন শুরু হয় দুঃখ-কষ্ট। একে  নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে, মানুষ ধীরে ধীরে মহামানবে পরিণত হতে পারে ।এই স্বার্থপরতাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করাই  সভ্যসমাজের কাজ। এই কারণেই রাষ্ট্র আইন প্রণয়ন করে থাকে। এই কারণেই  ধর্ম্মে নীতিকথার প্রয়োজন হয়। একারনেই যুগযুগ ধরে অবতারপুরুষ আসেন, আমাদের নীতিকথা শোনাতে। মানুষ যত নিঃস্বার্থ হতে পারবে, মানুষ তত সভ্য হতে পারবে, মহামানব হতে পারবে । 

যারা গায়ত্রী মন্ত্রের যথার্থ অর্থ জেনে গায়ত্রী মন্ত্রের মনন করেন, তারা জানেন, এই মন্ত্রে একবার মনকে বহির্মুখী বিশ্বসত্ত্বার (ভূর্ভুবঃ স্বঃ) সঙ্গে বিলিয়ে দিতে হয়, আবার একবার অন্তর্মুখী ঈশ্বর সত্ত্বার (ভর্গো) সঙ্গে মিলিয়ে দিতে হয়। আর নিরন্তর এই জপের অভ্যাস  মানুষের মনকে অহং থেকে বিশ্বব্যাপী করে তোলে, আবার অন্তরীণ করে তোলে।  আমি বলে আর কিছু থাকে না তখন। ধর্ম্ম বলে থাকে, অহংকে সরিয়ে দিয়ে, ঈশ্বরকে বসাও। শুধু আমি নয়, তুমি। তত্ত্বমসি। তুমিই সেই। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে মহত্তম সত্ত্বা আছে সেটাই ঈশ্বর। সেই মহত্তম সত্ত্বার কাছে নিজেকে সমর্পন করো। মন,প্রাণ, ইচ্ছে,স্বার্থ, ভালো-মন্দ সব সমর্পন করো। যিনি প্রতিনিয়ত এই চিন্তন করতে পারেন, নিরন্তর  অভ্যাস করতে পারেন, তিনি একসময় অহং-এর মধ্যেই  ঈশ্বরকে উপলব্ধি করতে পারেন। যাকিছু মহত্তম যা  কিছু শ্রেষ্ট যা কিছু ভালো, সবই সেই ঈশ্বরের প্রতীক। যিনি ভূতেরও ভূত, যিনি কারণেরও কারন, যিনি প্রাণেরও প্রাণ, যিনি আত্মারও আত্মা তিনিই পরমাত্মা। এই মহতের মধ্যে মনকে নিবিষ্ট করলে, মানুষ সুখ-দুঃখের অতীতে পৌঁছে যান। সবার সুখে তার সুখ, সবার দুঃখে তার দুঃখ।  একেই হয়তো  বলে মুক্তি। কেননা তখন আমার আমি বলে কিছু থাকে না। ব্যক্তিসত্ত্বা বলে কিছু থাকে না। বিচ্ছিন্নতাবোধ বলে কিছু থাকে না। সকলের সঙ্গে তিনি একাত্ম অনুভব করেন। একেই বলে আমিত্বের বিনাশ। এক অদ্বৈত অনুভূতি। 

ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।  হরি ওম। 

------------------------ 

দুটো পাখির গল্প 

উপনিষদের এই গল্প আমাদের সবার জানা। একই গাছে দুটো পাখি বসে আছে। একটি অন্তর্মুখী নির্বিকার, নিষ্ক্রিয়, অন্তর্মুখী, শান্ত, দ্রষ্টা মাত্র। কিন্তু সচেতন। আর একটা বহির্মুখী, চঞ্চল, সক্রিয়। একই গাছে থাকে কিন্তু দ্বিতীয় পাখিটি ঘুরে ঘুরে গাছের ফল আস্বাদন করে। গাছের ফল কখনো কষা, কখনো টক, কখনো মিষ্টি। আর এই দ্বিতীয় পাখিটি গাছের ফল খেয়ে, কখনো খুশি, কখনো বিরক্ত , কখনও সুখী কখনো দুঃখী। তো সুখ-দুঃখের দোলায়, ভালোলাগা মন্দলাগা অনুভূতিতে তার মেজাজ কখনো খুশ তো কখনো দুরমুশ। প্রথম পাখিটি কিন্তু স্থির অচঞ্চল, বাইরের কোনো কিছুই তাকে প্রভাবিত করতে পারে না। 

গল্প তো গল্পই হয়। কিন্তু এই গল্পের মধ্যে একটা বিশেষ তাৎপর্য্য আছে। এই একটা গল্পই মানুষের অন্তরের শান্তির পথকে বিশ্লষণ ক'রে, শান্তিপথ নির্দেশ দিয়েছে। 

আমার মাঝে মধ্যে মনে হয়, মানুষ একটা অভিশপ্ত জীব।  আমরা বিভিন্ন পুরান কাহিনীতেও দেখি অমুক এই কাজ করে, অমুক দেবতা,  স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়েছেন, আর এই মৃত্যুপুরীতে জন্ম নিয়েছেন। আর এই পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণ করে, অসহ্য কষ্ট সহ্য করে, শেষে ভগবৎ কৃপায়, ইহ জীবন থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছেন। মানুষের মধ্যে যেমন ভগবান  অনেক ক্ষমতা দিয়েছেন, তেমনি দিয়েছেন অনেক অক্ষমতা, সিমাবদ্ধতা।  এই সীমা  সে অতিক্রম করতে পারে না। মানুষ যেমন নিজের চেষ্টায়, নিজের ক্ষমতায়, বাড়ি তৈরী করেছে, গাড়ি বানিয়েছে, শীত-তাপ থেকে নিজেকে রক্ষার ব্যবস্থা করেছে, বিজ্ঞানের প্রয়োগে বিবিধ স্বাছন্দের ব্যবস্থা করেছে, গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে ছুটছে, তবু তার অভাব মেটেনি। কোথায় যেন একটা আশঙ্কা, কোথায় যেন একটা ভয়, কোথায় যে একটা অতৃপ্তি ।  মৃত্যুকে সে জয় করতে পারে নি,  শারীরিক ব্যাধি-যন্ত্রনা  থেকে সে মুক্ত নয়।  এমনকি বার্ধক্য থেকেও তার রেহাই নেই। জীবন অনেক আরামপ্রদ হয়েছে, কিন্তু তার তৃপ্তি নেই, সে সর্বতঃ সুখী নয়। 

কিন্তু কিসের অভাব ? কিসের অতৃপ্তি ? আর এই অভাব বা অতৃপ্তির কারনই বা কি ? আমরা আজ এই প্রশ্নের জবাব খুঁজবো। আসলে এই প্রশ্নের জবাব আছে ওই দুটি পাখির গল্পে। মানুষ সর্বদা বহির্মূখী ওই দ্বিতীয় পাখিটির মতো। মানুষকে হতে হবে অন্তর্মুখী ওই প্রথম পাখিটির মতো। আমরা পৃথিবীর বহির্জগতের পরিবর্তন নিয়ে ব্যস্ত।  আমরা অন্তরের  দিকে ফিরেও তাকাই না। আমরা যদি অন্তর জগতের পরিবর্তন করতে পারতাম, তবে হয়তো  সম্পূর্ণ সুখী হতে পারতাম। সভ্যতার বিকাশ হয়েছে, কিন্তু মানুষ যেন আরো বর্বর হয়েছে। আদিম যুগের মানুষটির মধ্যে যেন কোনো পরিবর্তন হয় নি। অথবা হলেও  যা হবার কথা তা হয় নি।  আরো যেন বহির্মুখী হয়ে  উঠেছি আমরা।  

তাই আমাদের বহির্জগতের পরিবর্তন হলেও, আমাদের অন্তর্জগতের কোনো উন্নতি হয়নি। আজ মানুষের ক্রোধ, ঘৃণা, ঈর্ষা, ভয়, স্বার্থপরতা মনুষ্য সমাজকে ঘিরে রেখেছে। সাম্যবাদের মতো কিছু গালভরা বুলি হয়তো এসেছে, কিন্তু এগুলো মেনে চলবার লোক নেই বললেই চলে। দেখুন শত্রু মিত্রর সঙ্গে সমব্যবহার করা সহজ  কথা নয়। জ্ঞানী অজ্ঞানীর সঙ্গে একই কথা বলা যায়  না।  সবল দুর্বলের মধ্যে পার্থক্য না করে পারা  যায় না। বৈষম্যই জগতের বাস্তব। এখনও  ধনী-গরিব আছে, শিক্ষিত-অশিক্ষিত আছে, উন্নত-অনুন্নত আছে। তো আমরা সবাই সমান এই কথাটার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। কিন্তু এই অসাম্যের পুঁথি দিয়েই আমাদের মালা গাঁথতে হবে। অনৈক্যের মধ্যে ঐক্য আনতে  হবে। এই ঐক্যবোধ যখন জাগবে, তখন দেখবেন একের আঘাত অন্যকে পীড়া দিচ্ছে। কার উপরে আপনি রাগ করবেন ? কাকে আপনি ঘৃণা করবেন ? কাকে আপনি দূরে সরিয়ে দিতে চাইছেন ? আসলে কার কত সম্পদ আছে, বা কে কত শিক্ষিত হয়েছে, তার উপরে আমাদের শান্তি নির্ভর করে না। আপনি পদের দৌলতে, সম্পদের গর্বে, শারীরিক ক্ষমতায়  বলীয়ান হয়ে অন্যের উপরে প্রভুত্ত্ব করছেন। কিন্তু মনে মনে আপনি অসহায়। সম্পদ হারাবার ভয়, সন্মান হারাবার ভয়, শারীরিক অসুস্থতার ভয়, আপনাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। আর এর ফলে আপনি নিজের উপরেই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে অসহায় হয়ে গেছেন। মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই ক'রে, দুর্বলের সঙ্গে লড়াই ক'রে, অশিক্ষিতের সঙ্গে লড়াই ক'রে, নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমান করতে ব্যস্ত।  কিন্তু সে নিজের সঙ্গে লড়াই করে না। নিজের সঙ্গে সে যদি লড়াই শুরু করতে পারে, তবে সে বুঝতে পারবে সে কতটা  অসহায়  হয়ে রয়েছে। সে ভিতরে ভিতরে কতটা দুর্বল। 

এইখানে ধর্ম্মের একটি ভূমিকা আছে। ধর্ম্ম এমন কতকগুলো নীতির উপরে প্রতিষ্ঠিত যা মেনে চললে, একটা নির্দিষ্ট লক্ষে পৌঁছানো যায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে,  এই নীতিগুলো মূলত এক হলেও, বিভিন্ন মহাপুরুষ বিভিন্ন প্রতীকের মাধ্যমে, আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এগুলোকে ব্যক্ত করেছেন। একের সঙ্গে অন্যের ভেদ আছে। কিন্তু এই তথাকথিত ধর্ম্মের গভীরে আছে একটা অতী-ইন্দ্রিয় অনুভূতির জগৎ। এই জগতে কেউ কাউকে নিয়ে যেতে পারে না। এখানে সাধক নিজেই নিজের প্রভু। ধর্ম্মে একটা বাঁধাধরা নিয়মের মধ্যে নিজেকে নিয়ন্ত্রিত করতে হয়। ধর্ম্ম মানুষকে কতকগুলো মতবাদ, বিশ্বাস ও প্রতীকের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে।  এতে করে মানুষ সংঘবদ্ধ ও একসূত্রে বাঁধা  থাকতে পারে। কিন্তু মানুষ যখন অধ্যত্ম অনুভূতির জগতে চলে যায়, তখন তার কাছে   কোনো নিয়মের বেড়া থাকে না। এখানে সে অনবদ্য। এখানে তিনি আমাদের দৃষ্টিতে শিশু, উন্মাদ, পাগল। তিনি নিজের খুশিতে চলেন। কাউকে তোয়াক্কা করেন না। কে তার সাথে ভালো বা খারাপ ব্যবহার করলো, তাতে তার কিছুই যায়-আসে না। আবার  তিনি কার সাথে কেমন ব্যবহার করলেন, তার আপাত-ব্যাখ্যা আমরা খুঁজে পাই না। তিনি কখনো উদাসীন।  কখনো তার ব্যবহার অতি-আশ্চর্য্য। কেউ তার মিত্র নয়, কেউ তার শত্রু নয়।  কাউকে তিনি আঘাত করেন না। তার ন্যায়-অন্যায়  বোধের মাপকাঠি আমাদের মতো নয়। তিনি কোনো পরিবারের নয়, তিনি কোনো রাষ্ট্রের নয়, তিনি কোনো জাতির নয়, তিনি কোনো ধর্ম্মের নয়, তিনি একজন স্বতন্ত্র সত্ত্বা।  তিনি সবার আবার তিনি কারুর নয়। তিনি বিশ্বের আবার তিনি বিশ্বাতীত।  সব কিছুর অতীত। তিনি সকলের মঙ্গল কামনা করেন। তিনি কোনো ধর্ম্মম্ত প্রচার করেন না। তিনি কারুর আচার্য্য বা শিক্ষক নয়।  আবার তিনিই আমাদের অনুসরণীয়। তিনিই মহাত্মা। এই মহাত্মা আমাদের গল্পের প্রথম পাখি।

------------- 


 

               

      .

          











No comments:

Post a Comment