SIMPLE LIVING HIGH THINKING - সাধারণ জীবন ও উচ্চ চিন্তা
SIMPLE LIVING HIGH THINKING - এই উক্তিটি শুনে আমার বন্ধু মন্তব্য করেছিল, ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখা আরকি। জানিনা, ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লক্ষ টাকার স্বপ্ন দেখা যায় কি না, তবে মানুষের চিন্তায় যখন উৎকর্ষতা আসে, তখন তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়। এটা আমার প্রত্যক্ষ করা সত্য।
দুপুরবেলা বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। গেটের দরজায়, দুটি মেয়ে এসে দাঁড়িয়েছে। আমাকে দেখে বললো, রামকৃষ্ণ আশ্রম থেকে এসেছি। কিছু সাহায্য চাই। বিলে দেখলাম, লেখা শ্রী রামকৃষ্ণ অনাথ আশ্রম । তো তাদের জিজ্ঞেস করলাম, অনাথ কে ? ঠাকুর রামকৃষ্ণ ? নাথ কথাটার অর্থ হচ্ছে ঈশ্বর। ঈশ্বর-বিহীন কেউ হতে পারে ? পারে না। বাপুজি আদর করে নাম রেখেছিলেন, হরিজন, অর্থাৎ হরির জন । অভিধান খুলে দেখি, হরিজন কথার একটা অর্থ হচ্ছে হিন্দু সমাজে অস্পৃশ্য করে রাখা সম্প্রদায়ের লোক।
বহু মানুষ মনে করেন, নির্যাতিত শ্রেণীর জন্য, শিক্ষার প্রয়োজন। আমার মাঝে মধ্যে মনে হয়, যারা নির্যাতন করেন , তাদের শিক্ষার প্রয়োজন আরো বেশি। অনাথ আমরা কেউ নোই, আবার হরিজন আমরা সবাই। বিশেষ শ্রেণীকে এই নামে ডাকা শুধু অন্যায় নয়, গর্হিত কাজ ।
আমার বাড়ির পাশে, একটা কুকুর ২টি বাচ্চা দিয়ে, অকালে মরা যায়। বাচ্চাগুলো একজায়গায় জবুথবু হলে শুয়ে থাকতো। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, কুকুরের বাচ্চাদের বড় করবার দায়িত্ত্ব হচ্ছে, মা-কুকুরের। বাবা কুকুরের কোনো দায়িত্ব নেই। মাঝে মধ্যে কুকুরের বাচ্চা গুলো বাড়ির মধ্যে চলে আসতো। কিন্তু তাড়া খেয়ে আবার ফিরে যেত। লাঠি-ঝাঁটা আর এঁটোকাঁটা খেয়ে তারা বড়ো হতে লাগলো। বাড়ির ছোটছোট ছেলেমেয়েরা কিন্তু ওই কুকুরের বাচ্চা গুলোকে ভালো বাসতো। তাদের আদর করতো, মাঝেমধ্যে খাবার খেতে দিতো। কিন্তু কুকুরের বাচ্চা গুলো সেই খাবার প্রথমদিকে ছুঁয়েও দেখতো না। বাচ্চাগুলোর কাছে গেলে, ওরা ভয় পেয়ে দৌড় লাগাতো। যখন কেউ ধারে কাছে থাকতো না, তখন তারা সেই খাবারগুলো খেয়ে নিতো। এর পরে লক্ষ করতাম, যেখানে খাবার দেওয়া হয়, সেখানে এসে কুকুরের বাচ্চাগুলো ঘুরঘুর করতো। এইভাবে, বেশ কিছুদিন যাবার পর, দেখলাম, বাচ্চা ছেলেমেয়েরা তাদের কাছে গেলে, তারা বাচ্চাদের সঙ্গে খেলা করতো, ধীরে ধীরে তাদের কাছে আসতে লাগলো। অর্থাৎ এখন কুকুরগুলো আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে। বড়দের কাছে, লাঠি-গুতো খেয়ে, এটাই তাদের প্রাপ্তি ভেবেছিলো, কিন্তু ছোটদের কাছে, খাবার পেয়ে, আদর ভালোবাসা পেয়ে, তারা বাচ্চাদের খেলার সাথী হয়ে উঠলো। এমনকি, তাদের রক্ষক হয়ে উঠলো।
তো যারা বিদ্বান, সভ্য, শিক্ষায় অনেকটা এগিয়ে, তাদেরকে বলি, অবহেলিত মানুষগুলো অকৃত্তিম ভালোবাসা চায়, লোকদেখানো মানবসেবা চায় না। তথাকথিত নিম্নবর্গের মধ্যে যারা নেতা স্থানীয়, তাদের পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখলে বুঝতে পারবেন, তারা কতনা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তারা যদি, তথাকথিত উচ্চবর্ণের মানুষের কাছ থেকে সহনশীলতা এবং ভালোবাসা পেতেন, তবে, তারা সেটাই ভাগ করে নিতে শিখতেন। তুমি যা পেয়েছো, সেটাই তুমি দিতে পারবে। তুমি যদি নিজে ভালোবাসা, সহানুভূতি না পাও, তবে তা তুমি দেবে কি করে ? এক উচ্চবর্ণের নেতা বলছিলেন, আমরা দলিতদের বিরুদ্ধে নোই, কিন্তু দলিত সংরক্ষণ আইনের বিরুদ্ধে। অর্থাৎ দলিতদের নির্যাতন করা তাদের চিরকালীন আইনসিদ্ধ অধিকার, তাদের বিচার করবার অধিকার কারুর নেই। অর্থাৎ মনুবাদী সমাজ যে কথা বলেছিলেন, তারা গো-ব্রাহ্মণের রক্ষক, মানুষের নয় । তাই তারা উচ্চবর্ণের অপরাধীদের জন্য সংরক্ষণ চায় । ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয়কে নির্যতন করলে, করতে পারে, ক্ষত্রিয় বৈশ্যকে নির্যতন করতে পারবে, বৈশ্য শূদ্রদের নির্যাতন করতে পারে। কিন্তু উল্টোটা হতে পারবে না। ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য সবাই মিলে শূদ্রদের নির্যাতন করতে পারবে, এটাই মনুবাদী সমাজের আইন। দেশের আইন সেইমতো কেন হবেনা ? সবল দুর্বলকে অত্যাচার করবে, নিধন করবে, ভোগ করবে, আবার সেবা নেবে, এটাই প্রকৃতির নিয়ম, জঙ্গলের নিয়ম । অন্যদিকে সভ্য সমাজ, ভগবানের সমাজ কিন্তু এর উল্টো কথা বলে, দুর্বলের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে বলে, দুর্বলের রক্ষক হতে বলে সবলকে । অন্যায়কারী, অত্যাচারী, অধার্ম্মিক এদের সভ্য করা, বিচারশীল হওয়া, ভগবানের রাজত্ত্বের নিয়ম। আমরা যদি সভ্য হতে চাই, আমরা যদি ভগবানের নিয়মকে মেনে চলতে চাই, আমরা যদি ভগবানের রাজত্ত্বে বাস করতে চাই, তবে জঙ্গলের নিয়মকে ভাঙতে হবে। দুর্বলকে সংরক্ষিত করে রাখতে হবে। তাদের আরো আরো ভালোবাসা দিতে হবে, আমাদের আরো সহনশীল হতে হবে, আমাদের আরো সহানুভূতিশীল হতে হবে।
একটা কথা বলি, সমাজ থেকে আপনি যেমন নেবেন, সমাজকে তেমনি দিতেও হবে। এই দেওয়া-নেওয়াই বেঁচে থাকবার রসদ।সংসারের নিয়ম। আমরা জানি শ্বাস-প্রশ্বাস দ্বারা আমরা বেঁচে থাকি। পুষ্টিকর খাদ্য নিয়ে আমরা বেঁচে থাকি। কিন্তু একটা কথা ভাবুনতো, আপনি খালি বাতাস গ্রহণ করবেন, শরীর থেকে বাতাস বের করবেন না, কুম্ভক করে বসে থাকবেন, তাহলে আপনি কি বেঁচে থাকতে পারবেন। ঠিক তেমনি, আপনি শুধু পুষ্টিকর সুস্বাদু খাবার গ্রহণ করবেন, কিন্তু বাহ্য-প্রচ্ছাপ করবেন না, তাহলে কি আপনি বেঁচে থাকবেন ? থাকবেন না। তেমনি সমাজে যদি শুধু গ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়েই চলে, ত্যাগীর সংখ্যা কমতে থাকে, তবে এই মনুষ্য সমাজ একসময় ভেঙে খান খান হয়ে যাবে।ভগবান এর প্রতিশোধ নেবেন। আমাদের উচিত, প্রযোজনয়ী-টুকু রেখে, বাকিটা ফিরিয়ে দেওয়া।
জীবনের উদ্দেশ্য, জীবাত্মার বিকাশ সাধন। পরমাত্মার জ্ঞান অর্জন। দেখুন, আমরা সবাই সম্পদ সংগ্রহে ব্যস্ত। তা সে জাগতিক সম্পদ বলুন, বা অন্তরের সম্পদ বলুন। আমরা সবাই আসলে দেহ ধারণ করি, কর্ম্ম করবার জন্য। নিজেকে সমৃদ্ধ করবার জন্য। আমাদের ব্যক্তিসত্ত্বার বিকাশের জন্য আমরা দেহ ধারণ করি। আমরা সবাই আনন্দে থাকতে চাই। দুই ভাবে, আমরা এই আনন্দের অবস্থায় যেতে পারি। জাগতিক সম্পদ বৃদ্ধি করে, আমরা আনন্দ পেতে পারি। আমাদের বেশিরভাগের উদ্দেশ্যই হচ্ছে প্রাচুর্য্যের মধ্যে শান্তির সন্ধান । গুটিকয় মানুষ আছেন, যারা জাগতিক বস্তু নয়, অন্তরের মধ্যে শান্তি খোঁজেন। আর এই শান্তি তাদের আসে পরিছন্ন চিন্তা থেকে, শুভ চিন্তা থেকে। আর এই চিন্তার উৎকর্ষ সাধনের উপায় বাতলায় ধর্ম্মীয় সৎগুরুগন। মানুষের চিন্তাধারার মধ্যে পরিবর্তনই আনাই তাদের কাজ। মানুষের মধ্যে প্রেম গুনের উৎকর্ষ সাধন তাদের কাজ।
আমাদের মতো সাধারনের জন্য সামাজিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার মানে হচ্ছে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান ইত্যাদির সংস্কার, বা সুলভ করা । শরীরকে টিকিয়ে রাখবার জন্য, আমরা সমস্ত বাধা অতিক্রম করতে চাই। অহং-এর চরিতার্থ করবার জন্য, আমরা সংগ্রাম করি। তাই যেখানে সে জন্মেছে, তার যে কর্ম্মক্ষেত্ৰ, তার যে আত্মীয়স্বজন, তাদের সঙ্গে তার যে সামাজিক সম্পর্ক - এটা বজায় রাখবার জন্য, এমনকি দৃঢ় করবার জন্য, সংগ্রামে লিপ্ত হই। আমাদের জীবন সংগ্রাম আসলে নিজেকে সফল করবার সংগ্রাম। আমাদের সংগ্রাম হিংসার সপক্ষে, ঈর্ষার সপক্ষে, অশান্তির সপক্ষে । প্রতিবেশীরা আমার থেকে এগিয়ে যাবে, এটা আমরা মেনে নিতে পারি না। এমনকি আমার স্ত্রী আমার থেকে এগিয়ে যাবে, এটা আমাদের কাছে অসহ্য। আর সারা জীবন এই সংগ্রামে লিপ্ত থেকে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাই আর মৃত্যুকালে আমাদের মধ্যে প্রশ্ন জাগে, কি পেলাম ? মানুষ তখন বুঝতে পারে, সে অসহায়, একটা হালবিহীন নৌকার যাত্রী।
আর ঐযে গুটিকয় মানুষের কথা বলছিলাম, তারা চেতনার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকেন। তারা তাদের চিন্তার মধ্যে সমতা আনেন। আর চিন্তার মধ্যে যখন তার সমতা এসে যায়, তখন সমস্ত জিনিসকে সে সঠিক ভাবে দেখতে পারেন। অর্থাৎ আপনি যত উপরে উঠে যাবেন, তখন যেমন নিচের জিনিসগুলোকে আলাদা করে চিহ্নিত করা যায় না, তেমনি সমস্যাগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে যান। তখন একটা ধর্ম্ম বৃক্ষের জন্ম হয়, যা একটি চরিত্রবান ও সৎগুণসম্পন্ন মানুষরূপ ফল প্রদান করতে পারে। একেই বলে দিব্যচেতনা সম্পন্ন মানুষ। একেই বলে আত্মউপল্বদ্ধি।
ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ। হরি ওম।
ঈশ্বরীয় প্রেম-ভালোবাসার খোঁজে। (১) ভালোবাসা কারে কয় ? : ঈশ্বর প্রেমের মহিমা। ভগবানকে ভালোবাসুন
জীবাত্মার অনন্ত যাত্রাপথে দুটো বাঁক - টার্নিং পয়েন্ট। একটা জন্ম একটা মৃত্যু। ভালোবাসা মানুষকে জন্ম দেয়, রূপান্তর ঘটায় , জীবনের বিকাশ ঘটায়, আর ভালোবাসার অভাব মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। ভালোবাসা মানুষকে বাঁচার প্রেরণা যোগায়।ভালোবাসার অভাব মানুষকে শেষ করে দেয় আজ আমরা নিখাদ ভালোবাসা নিয়ে কয়েকটা কথা শুনবো।
সাত-আট মাস আগে, আমার এক আত্মীয়ের নাতি হয়েছে, তো তাকে দেখতে গেলাম। তো বৌমা নাতিকে কোলে করে নিয়ে আমার কাছে এলো। আর বাচ্চাকে লক্ষ করে বলতে লাগলো। ওই দেখো দাদু- এসেছে, তোমাকে দেখতে। আরো কতসব কথা বৌমা বাচ্চার দিকে মুখ করে বলতে লাগলো। আমরা জানিনা, বাচ্চারা এইসব কথার অর্থ বুঝতে পারে কি না। বাচ্চাটা আমার দিকে মুখ করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। মুখে একটু মিষ্টি হাসি ফুটলো। এরপরদিন, আমি আবার ওদের বাড়িতে যাই, সেদিন বাচ্চাকে স্নান কারবার সময়। স্নানের আগে তেল মাখানোর সময় ও ভীষণ কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছে । আমি রাস্তা থেকে তার কান্না শুনতে পেলাম। বৌমা নানান কথা বলে তাকে শান্ত করবার চেষ্টা করতে লাগলো। আমার মনে হতে লাগলো, শিশু তো কথা বলতে পারে না। মা যা বলছে শিশু কি তা বুঝতে পারে ? শিশু বুঝুক না বুঝুক মা কিন্তু কথা বলা বন্ধ করে না। আসলে শিশু সব বুঝতে পারে। তাই মা যখন তাকে ধমক দেয়, তখন সে কেঁদে ওঠে। আবার মা যখন তাকে আদর করে, চুমু খায়, ভালো ভালো কথা বলে তখন সে হাসে। শিশু সব বুঝতে পারে। সে হয়তো মায়ের ভাষা বোঝেনা, কিন্তু ভাব বুঝতে পারে। ভালোবাসার ভাষা শুধু মানুষ নয়, জীবজন্তু, গাছপালা সবাই বুঝতে পারে। শিশু যেমন হাত-পা নেড়ে, মুখের হাসি দিয়ে তা প্রকাশ করে থাকে। ঠিক তেমনি পশু-পাখি বিভিন্ন ভাবে তা প্রকাশ করে থাকে। ভালোবাসা গাছের ফুল-ফল দিতে এমনকি নতুন পাতা ছাড়তে উদ্দীপ্ত হয়।
বিজ্ঞান এখনো মায়ের ভালোবাসার উৎসের সন্ধান দিতে পারে নি। কিন্তু শিশু স্বাভাবিক ভাবে বড়ো হয়ে উঠবার জন্য, তার বুদ্ধির স্বাভাবিক বিকাশের জন্য, মায়ের ভালোবাসা একান্ত প্রয়োজন। আমার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের মেয়ে সন্তান, জন্মের কিছুদিনের মধ্যেই তার মাকে-বাবাকে হারায়। মেয়েটি বহুদিন কিছু খেতে চাইতো না। ঘ্যানর ঘ্যানর করতো। ধীরে ধীরে তার শরীরের বৃদ্ধি হয়েছে ঠিকই কিন্তু তার মানসিক বুদ্ধি-বৃত্তির বিকাশ ঘটেনি। এটা-কি ভালোবাসার অভাবে ?
ভালোবাসা মানুষকে নিরাপত্তা দেয়। ভালোবাসা মানুষকে সমস্ত ভয় থেকে দূরে রাখে। ভালোবাসা একটা দিব্য শক্তি। ভালোবাসা আমাদের কাজের প্রেরণা জোগায়। পৃথিবীর বিকাশের জন্য, মানবজাতির বিকাশের জন্য, এমনকি জীবজন্তু, উদ্ভিদ ভালোবাসার জোগানে সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে পারে। ভালোবাসা একটা জীবনদায়ী ঔষধ, আমাদের মানসিক সুস্থতা এমনকি শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গেলে ভালোবাসার মতো অমোঘ ঔষধ আর নেই। এই ভালোবাসাই পারে, একজন মানুষকে রুপান্তরিত করতে। মানুষকে মানবিক করে গড়ে তুলতে। ভালোবাসা মানুষকে দীর্ঘজীবী করতে পারে। আবার ভালোবাসার অভাব মানুষকে করতে পারে হতাশ, দুঃখী এমনকি নিষ্ক্রিয় করে রাখতে পারে। যে বাড়িতে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ভালোবাসা পায় না, তারা তাড়াতাড়ি অসুস্থ হয়ে পড়ে, এমনকি অকালে মারা যায়।
ছোটবেলা থেকে যে শিশু স্নেহ-ভালোবাসা পায় নি, সে হয়ে উঠতে পারে নিষ্ঠূর, কর্তব্য বিমুখ, অসৎ. সমাজ বিরোধী। ছোটবেলা থেকে যে শিশু ভয়ের পরিবেশে মানুষ হয়েছে, তার মধ্যে নিষ্ঠূরতা, ক্রূরতা, হিংসা - এইসব খারাপ গুণগুলো স্বাভাবিক ভাবেই বৃদ্ধি পাবে। তাই আমরা দেখতে পাই, বাড়িতে মা-বাবার সঙ্গে যখন ঝগড়াঝাটি হয়, তখন শিশু অসহায় হয়ে ওঠে, কেঁদে ওঠে - আর এই সব ঘটনার প্রভাব তার সারা জীবন ধরে চলতে থাকে।
আমাদের মধ্যে একটা সাধারণ ধারণা আছে, ভালোবাসা মানে একটা আবেগের খেলা, যা একমাত্র বিপরীত লিঙ্গের মধ্যে হতে পারে, আর যার শেষ পরিণতি হচ্ছে শারীরিক দিকে থেকে কাছাকাছি পৌঁছনো। ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়, ভালোবাসা কখনো কামনা-ভোগবাসনা বা দেহ সৌন্দর্য্যের এমনকি গুনের আকর্ষণের বিষয় নয়। ভালোবাসা একটা স্বীকৃতি। ভালোবাসা একটা সদবৃত্তির অনুসন্ধান ও প্রকাশ। ভালোবাসা মানে মনোযোগ। ভালোবাসা মানে সুখদুঃখের মধ্যেও স্মরণে রাখা। ভালোবাসা মানে পরিপূর্ন বিকাশের জন্য যা প্রয়োজন তা পূরণ করা।
আপনি আপনার সন্তানকে ভালোবাসেন, মানে সন্তানের পরিপূর্ন বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু করে থাকেন। এই ভালোবাসা সন্তানকে শাস্তি প্রদানের মাধ্যমেরও হতে পারে, আবার তার কৃতিত্বের জন্য প্রসংসা হতে পারে। আপনি যখন আপনার বাড়িকে-গাড়িকে ভালোবাসেন, তখন আপনি আপনার বাড়িকে বা গাড়িকে পরিষ্কার-পরিছন্ন করতে চাইবেন। সময়মতো তার মেরামতি করবেন। অর্থাৎ আপনার ভালোবাসা যার উপরে বর্ষিত হবে, সে যাতে ভালো থাকে তার চেষ্টা করবেন। আপনি আপনার দেহকে যদি ভালো বসেন, তবে আপনি অবশ্যই দেহের প্রতি খেয়াল রাখবেন। সময় মতো পুষ্টিকর খাদ্য খাবেন, সময়মতো ঔষধ সেবন করবেন। অর্থাৎ দেহকে ভালো রাখবার জন্য যা করবার তাই আপনি করবেন। এবং এর মাধ্যমে আপনি নিজেকে বা দেহকে ভালো রাখবেন। আপনি একটা আনন্দ অনুভব করবেন। তো আপনি দেখুন, ভালোবাসলে, যাকে আপনি ভালো বাসবেন সে যাতে ভালো থাকে তার জন্য আপনি সমস্ত উপায় খুঁজে বের করবেন, এবং সেই মতো কাজ করবেন, আর সত্যি কথা বলতে কি আপনি এর মাধ্যমে নিজের মধ্যে একটা তৃপ্তি খুঁজে পাবেন। সর্ব্বশেষে আপনি নিজে ভালো থাকবেন।
দেখুন আপনি যদি জনপ্রিয় হতে চান , তবে যাদের কাছে জনপ্রিয় হতে চান , তাদের আপনি ভালোবাসুন, তাদের সমৃদ্ধির কথা চিন্তা করুন , তাদের কাজে উৎসাহ দিন । তাদের উন্নতির কথা চিন্তা করুন । আপনি তখন তাদের কাছে অবশ্য়ই জনপ্রিয় হয়ে উঠবেন।
আবার আপনি যদি পণ্ডিত হতে চান , তবে আপনি বই-পাঠের প্রতি ভালবাসা গড়ে তুলুন । বইয়ের বিষয়ের প্রতি গভীরভাবে মনোযোগী হোন । যখন আপনি বইয়ের বিষয়ের প্রতি অনুরক্ত হবেন , তখন দেখবেন আপনার ভিতরে নতুন নতুন ক্ষেত্র খুলে যাবে, আপনার মধ্যে নতুন নতুন ধারণার জন্ম হবে, নতুন নতুন জ্ঞানের উন্মেষ ঘটতে থাকবে।
আপনি যদি সুস্থ থাকতে চান, তবে আপনি আপনারা চারিপাশের মানুষগুলোর সুস্বাস্থ্য কামনা করুন। এমনকি আপনার চারিপাশে যত জীবজন্তু ঘোরাফেরা করছে, এমনকি যত গাছপালা, আপনার চারিপাশে বিরাজ করছে তাদের ভালো থাকতে সাহায্য করুন । তবে দেখবেন আপনিও স্বাস্থ্যবান হয়ে উঠেছেন, তা সে শারীরিক হোক বা মানসিক ।
এরপরে আমরা আর একটু গভীরে প্রবেশ করুন । আপনি যদি ঈশ্বরকে ভালোবাসেন, যিনি বিশ্বপিতা, যিনি সমস্ত বিশ্বসংসারের মালিক, তাকে যদি আপনি ভালোবাসেন তাহলে কি হবে, আপনি ভগবানের ভালো চাইবেন, আর ভগবানের বিকাশের চেষ্টা করবেন। অর্থাৎ ঈশ্বর তখন আপনার মধ্যে প্রকাশিত হবে। আপনার মধ্যে তখন ঈশ্বরের অসীম গুনের প্রকাশ হতে থাকবে। এটাই ঈশ্বর-প্রেমের মহিমা। নিজের মধ্যে কিভাবে ঈশ্বরপ্রেম জাগিয়ে তোলা যায়, সে সম্পর্কে আমরা ভবিষ্যতে আলোচনা শুনবো।
ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ। হরি ওম।
ঈশ্বরীয় প্রেম-ভালোবাসার খোঁজে (২)
যে কোনোদিন প্রেমে পড়েনি, তাকে প্রেম সম্পর্কে কিছু বোঝানো ঝকমারি বটে। প্রেম আমাদের কাছে একটা অর্থবহ শব্দ বটে, কিন্তু প্রেম বলতে আমরা কিছুই বুঝতে পারি না। প্রেম বলতে আমরা বুঝি একটা মানুষের সঙ্গে আর একজন মানুষের গভীর ভালোবাসা। একটা রূপের সঙ্গে আর একটা রূপের নৈকট্য। তো ঈশ্বর যার কোনো বিশেষ রূপ নেই, তার সঙ্গে নৈকট্য কিভাবে হবে ? তাই ঈশ্বর প্রেম সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। কাউকে দিয়ে প্রেম করানো যায় না, প্রেম এমনি এমনি হয়। প্রেম আমাদের স্বভাবজাত কিন্তু দুটো আবরণ দিয়ে প্রেমকে ঢেকে রাখা হয়েছে। একটা হচ্ছে আমাদের অহংবোধ, আর একটা হচ্ছে আমাদের কামনা। প্রেম নদীর দুটি ধারা। একটা সমুদ্রমূখী, আর একটা উৎস মুখী। একটা জোয়ার আর একটা ভাটা। একটা কামনা বাহিত আর একটা অহং-বাহিত। আজ আমরা প্রেমকে কিভাবে অহং ঢেকে রেখেছে, সেই সম্পর্কে দুটো গল্প শুনবো।
প্রেম, জোয়ারে ভেসে ভেসে আমির সৃষ্টি হয়েছে। আর এই আমিই আর এক আমির জন্ম দিচ্ছে। যতদিন আমি আমি করবো, ততদিন আমিরই জন্ম হতে থাকবে। এখন এই অহং বা আমি কে ? আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি আমি কে ? দেহের মধ্যে যদি আমিকে খুঁজতে চাই, তবে আমিকে কোথাও খুঁজে পাবো না। আমার হাত, আমার পা, আমার মাথা, আমার বুক, আমার পেট, আমার শরীর, কোথাও আমি নেই। এগুলোকে বাদ দিলে যেটা থাকবে সেটি হচ্ছে শূন্যতা। এখানেও আমি বলে কেউ নেই। এই শূন্যতা আমি নয়, এই শূন্যতা ঈশ্বর।
এক ফকির সান্যাসীকে রাজা ডেকে পাঠালেন, যাঁকে সবাই পাগলা নিমাই বলে চেনে। তো রাজার লোক তাকে বললো, নিমাইবাবা আপনাকে রাজা ডেকেছেন। পাগলা সাধু বললো, এখানে নিমাই বলে কেউ থাকে না, নিমাই বলে কেউ নেই। রাজার লোক বললো, চালাকি করবেন না, আমরা আপনাকে দেখতে পাচ্ছি। আর আপনি কিনা বলছেন, নিমাই বলে কেউ নেই ? ঝুটমুট ছাড়ুন, আপনি যাবেন কিনা বলেন, নতুবা আমরা আপনাকে জোর করে নিয়ে যাবো। তো পাগলা সাধু নিজের শরীরের দিকে আঙ্গুল ঠেকিয়ে বললো, একে যেতে বলছো ? ঠিক আছে যাবে-ও। কিন্তু একটা জিনিস জেনে রেখো এখানে নিমাই বলে কেউ নেই। লোকে একে নিমাই বলে ডাকে বটে, কিন্তু নিমাই বলে এখানে কেউ থাকে না । তো পাগলের কথায় গুরুত্ত্ব না দিয়ে, রাজার আদেশ মতো, রাজার লোকেরা পাগলা নিমাইসাধুকে রথে চড়িয়ে রাজার দরবারে নিয়ে গেলো । রাজা বললেন, আসুন নিমাই বাবা। নিমাই বাবা বললেন, নিমাই বলে এখানে কেউ নেই। রাজা বললেন, আশ্চর্য্যের কথা বলছেন আপনি, নিমাই বাবা বলে যদি কেউ নাই থাকে, তবে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে কে ? আর আমার কথার জবাবই বা কে দিচ্ছে ? নিমাইবাবা বললেন, আপনার নিমাই রথে চেপে এসেছে। তাইতো ? কিন্তু এখানে রথ কোথায় ? রাজা বললেন, কেন সামনে রাখা আছে, আপনি দেখতে পাচ্ছেন না ? পাগোল নিমাই বললো, দেখতো পাচ্ছি, কতকগুলো ঘোড়া। আর তার পিছনে, চাকার উপরে কিছু কাঠ-গদ্দি, সামিয়ানা ইত্যাদি, ইত্যাদি । এগুলো সব আলাদা করে দিন। তো তখন কি থাকবে ? শূন্য। তো শূন্যটা কি রথ ? তো রথ কোথায় ? সম্রাট তখন নির্বাক হয়ে গেছেন। পাগলাবাবা বলতে শুরু করলেন, আসলে নির্দিষ্ট কিছু বস্তুর সমষ্টি হচ্ছে আপনাদের দৃষ্টিতে রথ। বস্তু গুলোকে আলাদা করে দিলে, রথের কোনো অস্তিত্ত্ব থাকবে না। কাঁঠালের মধ্যে কাঁঠাল বলে কিছু নেই, আছে ছোবড়া, ভূচরো, আছে কোয়া, আঁটি, মোথা, কাঁঠাল বলে কিছু নেই, এগুলোর মিলিত সত্ত্বাকে বলা হয়ে থাকে কাঁঠাল। এইভাবে যদি আমরা আমিকে খুঁজতে থাকি, তবে দেখবো, এই দেহের মধ্যে আমি বলে কেউ নেই। হাড্ডি-রক্ত-মাংসের শরীর। মন-বুদ্ধি-চিত্ত নিয়ে তৈরী হয়েছে অহংকার। শেষে আছে শুধু শূন্য। আর এই শূন্যতা আপনি নন, শূন্যতা হচ্ছে ঈশ্বর।
আমাদের আলোচ্য বিষয় প্রেম। আর এই শূন্যতা থেকেই প্রেমের জন্ম। এই শুন্যই পারে অন্য শূন্যের সঙ্গে মিলিত হতে। শূন্যের সঙ্গে শূন্যের মিলনের জন্য কোনো বাধা থাকে না। শূন্যের ব্যাপ্তি অসীম। আমাদের চিদাকাশ, আমাদের হৃদয়াকাশ, গন্ডিবদ্ধ নয়। ঘটাকাশ অসীম আকাশের অংশ মাত্র। ঘট ভেঙে গেলে ঘটাকাশ যেমন অসীমের সঙ্গে এক হয়ে যায়। ঠিক তেমনি আমাদের হৃদয়ের শূন্যতা অসীম শূন্যতার অংশ মাত্র। তাই হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয়ের মিলন হচ্ছে প্রেম। যা শূন্যের সঙ্গে শূন্যের মিলন মাত্র।
জলের জন্য কুঁয়ো খোঁড়ার দরকার, অর্থাৎ পাথর-মাটি সরিয়ে একটা শূন্যতা বের করে আনতে হবে. তবেই , কুয়োতে জল আসতে পারবে। জলকে খোঁজার দরকার পড়ে না, দরকার পড়ে শূন্যতার, যা আমরা মাটি-পাথর সরিয়ে আনতে পারি। জলকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে, তাই আমরা জলের সন্ধান পাচ্ছি না। জল বাইরে আসার সুযোগ পাচ্ছিলো না। জল যখন গর্তের মধ্যে শূন্যতার সন্ধান পেলো, তখন জল বেরুতে লাগলো। মাটির মধ্যেই জল ছিল।
আমাদের সবার মধ্যে ঈশ্বর-রূপ এই শূন্যতা আছে। আর এই শূন্যতা হচ্ছে প্রেমের আকর। এই শূন্যতাকে আমরা আমাদের মন-বুদ্ধি-অহং দিয়ে ঢেকে রেখেছি। হাড়-রক্ত-মাংস দিয়ে ঢেকে রেখেছি। আমাদের শূন্যতা "আমি" দিয়ে ভরাট করে রেখেছি। মানুষ আমি-আমি করে নিজেকে ভরিয়ে রেখেছে, তাই প্রেম-বারি বেরুতে পারছে না। আমাদের পেট-বুক ভর্তি অহংকার। তাই প্রেমের ঝর্ণার দেখা নেই।
খোলা আকাশের নিচে বহুকালের পুরোনো একটা গাছ ছিল। আকাশের দিকে তার শত শত হাত প্রসারিত করে দিয়েছিলো সে। যখন ওই গাছে সুগন্ধি ফুল ফুটতো তখন হাজার হাজার মৌমাছি মধু খেতে আসতো। যখন গাছে ফল হতো, তখন হাজার হাজার পাখি এসে হাজির হতো ফলের প্রত্যাশায়। যখন পাখিরা ডিম্ দেবার জন্য বাসার বানাবার প্রয়োজন মনে করতো, তখন সেই গাছের ডালে এসে বাসা তৈরী করতো। পোকা-মাকড় আশ্রয় খুঁজতো এই গাছের কোটরে। পথিক যখন রোদে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পড়তো, তখন গাছের ছায়ায় এসে ক্লান্তি দূর করতো।
তো এই গাছের নিচে একটা ছোট্ট শিশু রোজ এসে খেলা করতো। গাছ তো বিশাল কিন্তু শিশু ছোট্ট। কিন্তু তবুও তাদের মধ্যে বন্ধুত্ত্ব হলো। আসলে সেই বড়োর সঙ্গেই ছোটোর বন্ধুত্ত্ব হতে পারে, যে বড়ো নিজেকে কখনো বড়ো বলে মনে করে না। যে বড়ো তার নিজের মধ্যে শৈশব জাগিয়ে রাখে। যার মধ্যে বড়ো বলে কোনো অহংকার থাকে না। আসলে এই গাছটার মধ্যে কোনো ধারণাই ছিল না যে কত্ত্ব বড়ো। কতো বিশাল তার দেহ। কেননা সে সবসময় আকাশের বিশালত্ত্বই দেখেছে। সে সবসময় পৃথিবীর বিশালত্ত্ব দেখেছে। তাই সে নিজেকে বড়ো বলে ভাবতেই শেখেনি। আসলে আমি বড়ো এই অহংকার মানুষের মধ্যেই হয়ে থাকে। মানুষের অহংকার মানুষকে বড়ো ভাবতে শেখায়। আর প্রেম তার সঙ্গেই হোতে পারে, যার বড়ো-ছোটো জ্ঞান জন্মায় নি। যে কাছে আসে তার সঙ্গেই তার একটা সম্পর্ক তৈরী হয়ে যায়। তো শিশু খেলতে খেলতে গাছের সঙ্গে সখ্যতা তৈরী করে নিলো। গাছ শিশুকে আপন করে নিলো। গাছের উপরের ডালে ছিল, ফুল-ফল। গাছ তার মাথা নিচু করে শিশুকে ফল-ফুল দিয়ে আনন্দে রাখতো। মানুষের অহংকার মানুষকে নিচের দিকে ঝুঁকতে বাধা দেয়। কিন্তু গাছের তো কোনো অহংকার ছিল না। সে ঝুঁকতে রাজি ছিলো। বাচ্চাটি গাছের শীতল ছায়ায়, ফুল-ফল নিয়ে আনন্দে মেতে থাকতো।
কিন্তু প্রাকৃতিক নিয়মে, শিশু ধীরে ধীরে বড়ো হতে লাগলো। শিশু এখন কিশোর। এবার সে গাছের উপরে উঠতে পারে। তাই সে গাছের ডালে উঠে ঘুমিয়ে থাকতো। ফুল দিয়ে মালা গেথে গলায় পড়তো। নাচতো, গাইতো। ফল খেয়ে ক্লান্তি দূর করতো। গাছের পাতার মধ্যে ঘুমিয়ে থাকতো। ডাল ধরে ঝুলতো। দোল খেতো। গাছের এতে আনন্দ হতো। শিশুরও আনন্দ হতো।
শিশু ধীরে ধীরে আরো বড়ো হতে লাগলো। এখন আর সে প্রতিদিন আসতে পারে না। এখন সে স্কুলে যায়। পড়াশুনার চাপ। বড়ো হতে হবে, লেখাপড়া শিখে আরো বড়ো হতে হবে। পরীক্ষার চাপ, বাড়ির কাজের চাপ। প্রতিদিন আসা সম্ভব নয়, কিন্তু গাছটি প্রত্যাশায় থাকতো, আর ডাকতো - আয় শিশু আয়। প্রতিদিন ভাবতো আজ বুঝি আসবে। আসলে প্রেমিক সবসময় প্রেমাস্পদকে ডাকে। প্রেম সবসময় প্রতীক্ষায় থাকে, এই বুঝি সে আসবে। কিন্তু ছেলেটি প্রতিদিন আসতে পারতো না, তবে মাঝে মধ্যে আসতো। আর গাছ অপেক্ষায় থেকে থেকে উদাস হয়ে যেত।
ছেলেটি এখন কৈশোর থেকে যৌবনে পা দিয়েছে। এখন তার মধ্যে উচ্চাকাঙ্খা দেখা দিয়েছে। ঘর বাধার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিয়েছে। একদিন যুবক যখন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে, গাছ তখন যুবককে ডেকে বললো, তুমি এখন আসো না কেন ? আমি কিন্তু তোমার অপেক্ষায় থাকি। তো যুবক বললো, আমাকে এখন অনেক কাজ করতে হয়, রোজগার করতে হয়। তোমার কাছে এলে তো আর টাকা পাওয়া যাবে না। আমার টাকার খুব দরকার। আমাকে বিয়ে করতে হবে, সংসার করতে হবে। আসলে যুবকের এখন আমি বোধ এসে গেছে। আকাঙ্খা জেগেছে। তাই এখন তার অনেক কিছু দরকার। আর প্রেমের কাছে দরকার বলে কিছু হয় না। তবু সে দিতে চায়। গাছ বললো, আমি তোমাকে সব কিছু দিতে পারি। তুমি আমার ফল-ফুল নিয়ে বেচে টাকা পেতে পারো ;. তুমি আমার ডাল গুলোকে কেটে নিয়ে বেচে অনেক টাকা পেতে পারো। এগুলো নিয়ে যাও। ছেলেটি তখন ফল-ফুল-ডাল -পালা ভেঙে নিয়ে চলে গেলো। আর সেগুলো বেচে সে অনেক টাকা পেলো। কিন্তু এর পরে আর সে গাছের কাছে আসতো না। কারন গাছ তো তাকে আর কিছু দিতে পারবে না। এখন গাছে আর ফুল-ফল নেই, ডালপালা সব কেটে নেওয়া হয়ে গেছে। যুবক এখন ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে। টাকা দিয়ে কি করে টাকা ধরতে হয়, সে বিদ্যায় সে এখন রপ্ত হয়েছে। গাছের কথা সে ভুলেই গেলো। গাছটি উদাস হয়ে গেলো, কাটা গাছের গা বেয়ে রস পড়তে লাগলো। গাছ কাঁদছে। কেননা ছেলেটি এখন আর তার কাছে আসে না। সে নিজেকে উজাড় করে দিতে চায়। আর প্রতীক্ষায় থাকে ছেলেটি কখন আসবে।
তো হঠাৎ আবার একদিন ছেলেটি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে, গাছটি আবার তাকে ডাকলো। বললো, তুমি আসো না কেন ? ছেলেটি বললো, তোমার কাছে এসে কি হবে ? আমি এখন একটা বাড়ি তৈরি করবো, আমার অনেক টাকা দরকার। গাছটি বললো, তুমি আমাকে কেটে বাজারে বিক্রি করো। অনেক টাকা পাবে। তা দিয়ে তোমার বাড়ি হয়ে যাবে। ছেলেটি তখন গাছটিকে করাত দিয়ে কেটে বাজারে নিয়ে বিক্রি করে অনেক টাকা পেলো। এখন রইলো, শুধু গাছের গোড়া। এখনো গাছ ছেলেটির কথা ভুলতে পারে নি। সব সময় সে ভাবে ছেলেটি ভালো আছে তো। কোনো বিপদ-আপদ হয়নি তো ? তা না হলে সে আর আসে না কেন ? মনে মনে ভাবে, একটু যদি তার খবর পেতাম তাহলে নিশ্চিন্ত হতে পারতাম।
এই হচ্ছে প্রেম। যার জন্য সে তার সর্বস্য এমনকি জীবন পর্যন্ত দিয়ে দিতে পারে। প্রেমের কোনো ভাষা হয় না। প্রেমের কোনো শাস্ত্রব্যাক্ষা হয় না। প্রেম মানুষকে নিঃস্ব করে দেয়। প্রেম মানুষের দৃষ্টিশক্তির মধ্যে থাকে, প্রেম মানুষের বাকশক্তির মধ্যে থাকে, প্রেম মানুষের শ্রবণ শক্তির মধ্যে থাকে, প্রেম মানুষের স্পর্শে থাকে। প্রেম মানুষের শিরায় শিরায় প্রবাহিত হয়। প্রেম প্রকাশ পায় , নীরবতায়। তাই প্রেমের কথা বলা যায় না। প্রেম এক শূন্যতা। এই শূন্যতাই ঈশ্বর। প্রেম ও ঈশ্বরের মধ্যে কোনো ফারাক নেই। আগুন ও তার দাহিকা শক্তিকে আলাদা করা যায় না। জল ও তার আদ্রতা আলাদা করা যায় না। তেমনি ঈশ্বর ও প্রেম আলাদা করা যায় না। যথার্থ প্রেমিক সর্বদা ঈশ্বরের সংস্পর্শেই বেঁচে থাকেন। অহংয়ের লোপ না হলে প্রেমের সঞ্চরণ হয় না।
পরের দিন আমরা প্রেমের অন্য যে আভরণ আছে - কামনা সে সম্পর্কে আলোচনা করবো।
ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ। হরি ওম।
ঈশ্বরীয় প্রেম-ভালোবাসার খোঁজে (৩)
ভোগ থেকেই ভগবানের প্রাপ্তি হতে পারে। কথাটা শুনে হয়তো তথাকথিত পণ্ডিত সাধু-সন্ত, যারা ভগবানের পসরা সাজিয়ে বিক্রিবাট্টা ক'রে, বেঁচেবর্তে আছেন, তারা আমার কথায় প্রতিবাদ করবেন। হয়তো তেড়ে আসবেন। কিন্তু সত্য হচ্ছে এই কামনার সিঁড়ি দিয়ে আমরা ইহজগতে নেবে এসেছি। ভগবান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছি। তো যে সিঁড়ি দিয়ে আমরা নেবে এসেছি, সেই সিঁড়ি দিয়েই আমরা আবার ভগবানের কাছে পৌঁছতে পারি। এটাই আমাদের চেনা পথ। কিন্তু তথাকথিত পণ্ডিত ব্যক্তিগণ এই সিঁড়িটাকে উপেক্ষা করতে বলছেন। আর পন্ডিতগণ যত এটাকে এড়িয়ে যেতে বলছেন, আমরা তত সেটাকে আঁকড়ে ধরে আছি। এক সাধু তার শিষ্যকে বলেছিলেন, ভগবানের নাম জপের সময় যেন সে হনুমানের কথা ভুলেও মনে না করে। আর সত্য হচ্ছে, শিষ্য যখনই জপে বসতো, তখন মনটা চঞ্চল হনুমানের মূর্তি দেখতে পেতো।
৩৫০০ বছর আগের রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের কথা আমাদের কাব্য গাথায় লেখা হয়ে আছে। হাজার হাজার বছর যাবৎ আমরা প্রেমের কথা শুনেছি, প্রেমের গান গেয়েছি, প্রেমের ভজন গেয়েই চলেছি। কিন্তু মানুষের মধ্যে আজও প্রেমের দেখা নেই। বরং বলা যেতে পারে, মানুষের মধ্যে বিষ। সাপে কামড়ালে মানুষ বেঁচে যেতে পারে। কুকুরে কামড়ালে মানুষ বেঁচে যেতে পারে। কিন্তু মানুষে কামড়ালে মানুষের মৃত্যু অবধারিত।
হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের সাধু-মাহারাজগন ঈশ্বরের কথা বলেছেন, কিন্তু আমরা আজও ঈশ্বরের দেখা পেলাম না। হাজার বছর ধরে আমাদেরকে কামনা-বাসনা ত্যাগ করতে বলেছেন, তাহলে আমরা নাকি শান্তিতে থাকতে পারবো, আজও আমাদের কামনা বাসনা লোপ পায়নি। আর এই যে ঈশ্বরের দেখা না পাওয়া, জীবনে শান্তি খুঁজে না পাওয়া, কামনা-বাসনা ত্যাগ করতে না পারা, এর জন্য নাকি আমরাই দায়ী। এমনকি কিছু-কিছু সাধু-সন্ত তো এই কামনা-বাসনার জালে ফেঁসে জেলের ভাত খাচ্ছেন।
এই দোকানদার পাখা বিক্রি করছে। এই পাখা নাকি হাজার বছর যাবৎ শীতল হাওয়া দিতে পারে। ৭ দিনেই পাখা ভেঙে গেলো। তো দোকানদার বললো, আপনি মশাই পাখার ব্যবহারই জানেন না। এটিকে সামনে রেখে মাথাকে ঘোরাতে হয়। আপনি ঠিক মাথাকে একজায়গায় রেখে পাখাকে ঘোরাচ্ছিলেন। তাই পাখাটার এই দশা হয়েছে।
মানুষের জীবনে প্রেমের ঝর্ণা ধারা কোনো ভজন-কীর্তন প্রবাহিত করতে পারেনি। পন্ডিতগণ বলে থাকেন, মানুষের মন এর জন্য দায়ী। মানুষের মনে বিষ তাই, প্রেম আসতে পারে না। আসলে সাধারণ মানুষের মনে বিষ নয়, বিষ হচ্ছে পন্ডিতের শিক্ষায়। পন্ডিতের কথায়। পন্ডিতের মুখে। কারন তারা করে এক আর বলে এক। পন্ডিতগণ বলছেন, নারী নরকের দ্বার। আবার এই পন্ডিতরাই মাতৃমূর্তি নারীর পুজোর ব্যবস্থা বিধান দিয়েছেন । ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের শেখানো হয়, তুমি মেয়েদের সাথে মিশবে না। আবার মেয়েকে বলা হয়, তুমি না মেয়ে, তোমাকে ভেবে-চিন্তে চলতে হবে। এর পরে যখন ছেলেমেদের বিয়েথা হবে, আর যখন তারা শারীরিক ভাবে মিলিত হবে, তখন তার মনে যদি একটা পাপবোধ আসে, তাকে সংশোধন করবো কি করে ? স্বামী দেবতা, স্ত্রী ঘরের লক্ষ্মী। কিন্তু শাস্ত্র বলছে, নারী নরকের দ্বার। তো আমার যিনি মা, আমার যিনি বোন, আমার যিনি স্ত্রী - সবাই আমাকে নরকের দ্বারে টেনে নেবার জন্য ? স্ত্রী আমার অর্ধাঙ্গিনী - তো আমার অর্থঅঙ্গ তাহলে নরক ? আসলে হাজার হাজার বছরের সংস্কৃতি ও কুশিক্ষার ফল হচ্ছে আজকের মানুষ। আমাদের সংস্কৃতিটাই দ্বৈতে ভরা, ভুলে ভরা । যার ফলে আমাদের মনে বিষ। বলা হয়, আমাদের সংস্কৃতি খারাপ নয়, আমরা খারাপ। আমি বলি, মানুষ তো আজ সংস্কৃতির জঞ্জালে চাপা পড়ে আছে, আসল মানুষটি হারিয়ে গেছে।
দেখুন জমিতে যে বীজ আপনি রোপন করবেন, সেই মতো গাছ হবে, সেই মতো ফল-ফুল হবে। এখন আপনি নিম গাছের বীজ পুঁতে যদি আশা করে সুমিষ্ট আম হবে, তার চেয়ে আহাম্মকি আর কি হতে পারে। আপনি নিজেকে আড়াল করবার জন্য বলতে পারেন, মাটির দোষ। কিন্তু আপনি জানেন, এটা মাটির দোষ নয়, এটা বীজের দোষ । কিন্তু আপনার-আমার সাহস নেই সেই সত্য কথা বলার। আমাদের সংস্কৃতি মানুষের মধ্যে হিংসা দ্বেষ -এর বীজ বপন করে রেখেছে। তাই মানুষ আজ ধর্ম্মের নামে হিংসায় লিপ্ত। মানুষ আজ উগ্র, অশান্ত, দন্দ্ব, অশ্রদ্ধা ঘৃনায় পরিপূর্ন। আসলে যে বীজ আমাদের ধর্ম্মগুরুগন রোপন করেছেন, তারই গাছ আজ বড়ো হয়েছে, তার ফল আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমাদের ধর্ম্মগুরুগন যদি আমাদের মধ্যে প্রেমের বীজ রোপন করে থাকতো তবে মনুষ্যরূপী বৃক্ষে প্রেমের ফলই দেখা যেত।
বলা হয়ে থাকে তুমি ধর্ম্মকে ঠিক মতো ব্যবহার করতে পারোনি, তাই তোমার কাছে, ধর্ম্মের ধ্বজা টিকতে পারেনি। এক ছাতার দোকানদার বলছেন, তার দোকানের ছাতা সারাজীবন চলে যাবে। এই ছাতার মতো ছাতা আর কোথাও পাবেন না। জীবনে আর দ্বিতীয় ছাতা কিনতে হবে না। তো ভদ্রলোক একটু বেশি দাম দিয়ে হলেও, বিশ্বাস করে ছাতাটা কিনে নিয়ে এলেন । ছাতার কাপড় ভীষণ পাতলা। শিকগুলোও কেমন নড়বড়ে। তবু দোকানদারকে বিশ্বাস করে, আর দোকানের চাকচক্য দেখে, সবচেয়ে বড়ো কথা দোকানের ভিড় দেখে ভদ্রলোক তাড়াতাড়ি একটা ছাতা সংগ্রহ করে নিলেন । ছাতাটা ৭-দিনের মাথায় ভেঙে গেলো। দোকানদার বললো, মহাশয় ছাতার কি দোষ, আপনি ছাতা ব্যবহার করতে পারেননি। আপনি নিশ্চয়ই রোদ-জলে ছাতা ব্যবহার করেছেন। আমাদের বিলে দেখবেন লেখা আছে, ছাতাকে রোদ জল থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন । তো সত্যধর্ম্মের কথা কোথাও হয়তো ছোট্ট করে লেখা আছে, আমরা সেটা দেখতে পাই না। তাই আমরা ধর্ম্মের ধ্বজা ভেঙে ফেলি।
প্রেম প্রকৃতির ধর্ম্ম। তাই মানুষের চেয়ে পশু-পাখির মধ্যে প্রেমের প্রবাহ দেখতে পাওয়া যায় বেশি । এদের কোনো সংস্কৃতি নেই, এদের কোনো সভ্যতা নেই। এমনকি মানুষের মধ্যে যারা তথাকথিত অসভ্য জাতি বলে পরিচিত তাদের মধ্যে প্রেমের ধারা অনেক বেশি। প্রেম মানুষের স্বাভাবিক স্বভাব। কিন্তু তথাকথিত সভ্য সমাজ সেই স্বাভাবিক স্বভাবকে দমিত করে রেখেছে। প্রেম এমন কোনো বস্তু নয়, যে তাকে খুঁজতে যেতে হবে। প্রেম আমাদের প্রত্যেকের ভিতরে আছে। প্রাণের সুগন্ধই প্রেম। আর এই প্রাণহীন জীব বলে কিছু হয় না। তো যার মধ্যে প্রাণের ছোঁয়া আছে, তার মধ্যেই প্রেমের ফল্গুধারা প্রভাহিত হচ্ছে। কেবল আমাদের সংস্কৃতি এই ফল্গুধারাকে চাপা দিয়ে রেখেছে, একটা কংক্রিটের বাঁধ দিয়ে রেখেছে। অতএব প্রেমের খোঁজ কোথাও করতে হবে না। প্রেমের জন্য কোনো বিশেষ সাধনা করতে হবে না।
একটা টুকরো পাথরের মধ্যে শিবলিঙ্গ আছে, আছে যীশু-কৃষ্ণের মূর্তি। ঢাকা পরে আছে। শিল্পী, মূর্তির বাইরের আবরণ সরিয়ে মূর্তিকে বের করে নিয়ে আসেন। শিল্পী কোনো মূর্তি তৈরী করেন না, তিনি কেবল পাথরের আবরণ গুলোকে সরিয়ে দেন, যাতে মূর্তি প্রকাশিত হতে পারে। ডাক্তার কখনো আমাদের শরীরের মধ্যে সু-স্বাস্থ্যের খোঁজ করেন না। তিনি আমাদের মধ্যে রোগ-জীবাণুর খোঁজ করেন। যা সরিয়ে দিলে, আমাদের স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের দেখা মিলতে পারে। স্বাস্থ্য আমাদের ভিতরেই আছে, রোগজীবাণু বাইরে থেকে আসে। আসলে স্বাস্থ্য ডাক্তাররা তৈরী করতে পারেন না। স্বাস্থ আমাদের ভিতরে আছে, কেবল যা আমাদের ভিতরে ছিল না, অথচ বাইরে থেকে ঢুকে গেছে, বা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেগুলোকে বের করে দেওয়াই আমাদের ডাক্তারের কাজ।
তাই প্রেমকে বুঝতে গেলে আমাদের বুঝতে হবে, প্রেম প্রকাশিত হতে পারছে না কেন, কোথায় বাধা প্রাপ্ত হচ্ছে, সেটাকে চিহ্নিত করা। ডাক্তার যেমন জীবাণুকে চিহ্নিত করে। আমাদের তেমনি বুঝতে হবে, আমাদের মধ্যে প্রেমের বিকাশ হচ্ছে না কেন, বাঁধাটা কোথায়?
নদী সাগরে পৌঁছে যাবে, যদি না সে বাঁধা পায়। প্রকৃতির বাঁধাকে সে স্বাভাবিক ভাবেই অতিক্রম করতে পারে। এমনকি সামনে যদি পাহাড় এসে দাঁড়িয়ে যায়, তাহলেও সে পাহাড়কে পাশ কাটিয়ে সমুদ্রের অভিমুখী হবে। কিন্তু মানুষ যদি বাঁধা দেয়, কংক্রিটের বাঁধ তৈরী করে দেয় তবে নদী রুদ্ধ হয়ে যেতে পারে। বীজ প্রকৃতির বাঁধাকে অতিক্রম করবার জন্য, প্রকৃতির কাছ থেকেই শক্তি পায়। এমনকি এই বাঁধাই তাকে প্রকাশিত হতে সাহায্য করে, শক্তি সঞ্চয় করতে সাহায্য করে থাকে। বীজের উপরে সামান্য মাটি ছাড়িয়ে দিতে হয় , বীজকে অংকুরিত হতে সাহায্য করে থাকে, এই মাটির আবরণ । আমাদের কাছে মনে হতে পারে, বীজকে ঢেকে রেখেছে ওই মাটি। কিন্তু না ওই মাটিই তাকে শক্তি যোগাচ্ছে সূর্যকিরনের দিকে নিজেকে উন্মুখ করে দিতে।
এখন কথা হচ্ছে মানুষ বা আমাদের ধর্ম্মগুরুগন কি এমন বাধা সৃষ্টি করলো, যাতে আমাদের স্বাভাবিক স্বভাবের বিকাশ হতে পারলো না। আমাদের ভিতরের প্রেম প্রকাশিত হতে পারলো না। আসলে প্রেমের বিকাশ বাসনার মধ্যে দিয়ে হতে পারে। কামের মধ্য দিয়ে হতে পারতো। কিন্তু ধর্ম্মগুরুগন আমাদের এই পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। গঙ্গা যেমন বইতে শুরু করে গঙ্গোত্রী থেকে, তেমনি প্রেমগঙ্গা বইতে শুরু করে কাম-বাসনা থেকে। ধর্ম্মগুরুরা সবাই এই পথ সম্পর্কে বলেছেন কামনা-বাসনা ছিঃ - এটি অধর্ম্ম, এটি পাপ। এই পাপ থেকে বিরত থাকো। অথচ কেউ একবারও ভাবলেন না, কামনা আমাদের উৎসাহবর্ধক শক্তি। আর এই শক্তি রূপান্তরিত হয় প্রেমে। কাঠের পরিণতি কয়লা, কয়লার পরিণতি হীরে। কাঠের চেয়ে কয়লার মূল্য বেশি, কয়লার থেকে হীরের মূল্য অনেক বেশি। ঠিক তেমনি আমাদের কাম-শক্তি থেকে প্রেমের জন্ম হতে পারে। প্রেমের মন্দিরে উঠবার জন্য, প্রথম ধাপ হচ্ছে কামনা। যাকে আমরা শত্রূ করে ফেললাম। ধর্ম্মগুরুগন বললেন, কামের সঙ্গে লড়াই করো, ব্রহ্মচর্য পালন করো। তো যে শক্তি আমাদের উদ্দীপিত করতে পারতো, যে শক্তি আমাদে প্রেমের মন্দিরে যেতে সাহায্য করতে পারতো, সেই শক্তি ভেঙে ফেলে দেবার কথা বলা হলো। সেই শক্তির সঙ্গে লড়াই করতে বলা হলো।
আর একটা কথা হচ্ছে, প্রেম অনুভূত হয়, মনে। মন স্বাভাবিক ভাবেই চঞ্চল। বলা হলো মনকে শান্ত করো। ওকে কোথাও ঘুরে বেড়াতে দিও না। তো একটা শিশুকে আপনি যদি ঘরবন্দি করে ফেলেন, তার স্বাভাবিক বিকাশ হবে কি করে, মনকে যদি বন্দি করতে চান, তবে মনের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হবে। এমনকি সে বিদ্রোহ করতে পারে। তো যে মনের সাহায্যে আমরা প্রেমের আস্বাদন গ্রহণ করবো, সেই মনকে আমরা শত্রূ বানিয়ে ফেললাম। দমিয়ে দিতে চাইলাম।
ঈশ্বর আমাদের এই মনের সাহায্যে নিজেকে উদ্দীপ্ত ক'রে, কামনার উদ্রেগ করেছেন। আর মন যখন কামনার দ্বারা উত্তপ্ত হয়, তখন সে আনন্দের সঙ্গে মিলিত হবার জন্য সার্বিক প্রয়াস করে থাকে। অর্থাৎ ঈশ্বর যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এই জগতে ক্রিয়া করছেন , সেই দুটো স্বাভাবিক মাধ্যমকে আমরা অস্বীকার করলাম।
আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, আমর এই যে দেহ তা আমাদের মা-বাবার কামনার ফল। আমার যে সন্তান তা আমার কামনা-বাসনার ফল। গাছে যে ফুল ফল ফোটে সে সব কামনার শক্তিতেই সংগঠিত হচ্ছে। এমনি আমার এই যে ঈশ্বর প্রাপ্তির জন্য সাধনা সেসব এই কামনার ফল। এমনকি আমি যে জন্মান্তরে আবার ফিরে ফিরে আসবো, সেসব আমাদের কামনা বাসনার ফলমাত্র।
আপনি কি জানেন, পায়রা বকবকম করে কেন ? ময়ূর কেন নাচে ? কোকিল কেন কুহু-কুহু করে। আপনি কি জানেন, আমরা কেন সাজুগুজু করি ? সবই আমাদের কামনা-বাসনা থেকে উদ্ভূত। এই যে পাহাড়ের গুহায় শত শত সন্যাসী ধ্যানমগ্ন কিসের আশায়। বাসনা পূরণের আশায়। ঈশ্বরকে পাবার বাসনা তাদের মধ্যে এতটাই তীব্র যে, সব সংসার ছেড়ে, তারা গুহায় আশ্রয় নিয়েছেন। নিরাসক্ত হয়ে নয়, বাসনা চরিতার্থ করবার জন্য, সংসার ছেড়েছেন। আপনি বলবেন এসব উচ্চতর আদর্শ। দেখুন উঁচু নিচু বলে কিছু নেই। কেউ ছেলে চায়, কেউ মেয়ে চায়, কেউ মানুষকে ভালো বসে, কেউ প্রকৃতিকে ভালোবাসে, কেউ ঈশ্বরকে ভালোবাসে। আকাঙ্খ্যা সবার মধ্যে কাজ করছে। কামনা বাসনা মানুষকে উচ্চতর আদর্শের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এর কোনো বিকল্প নেই। তাই কামনা বাসনা ত্যাগের কথা, ধর্ম্মগুরুদের এই বাণী, শুধু অসত্য নয়, আমাদের বিপথগামী করে তুলতে পারে। ঈশ্বর-প্রদত্ত্ব এই শক্তিকে উপেক্ষা নয়, বরং একে আমাদের জীবনে প্রয়োগ করতে হবে। তবেই আমরা প্রেমের সন্ধান পাবো । তবেই আমরা আনন্দের সন্ধান পাবো।
ঋষি যখন নব-দম্পতিকে আশীর্বাদ করেন, তখন বলেন, শত-পুত্রের জননী হও। আমরা কি কামনা-বাসনা হীন হয়ে শতপুত্রের জননী হবো ? তাই কামের সঙ্গে শত্রুতা নয়, বন্ধুত্ত্ব স্থাপন করতে হবে। আর এই কামনা বাসনাকে রূপান্তর ক'রে, আমাদের প্রেমে পরিণত করতে হবে। মানুষের জীবনে প্রেমের বীজ নিহিত আছে। সেখানে কুড়ি ফোটাতে হবে, কুড়ি থেকে ফুলে পরিণত করতে হবে। আর এটা না হবার জন্য, মানুষই দায়ী - নিজের তৈরী বাঁধা সে অতিক্রম করতে পারছে না। প্রেমের গঙ্গা তো ঈশ্বর বইয়ে দিয়েছেন, আপনার আমার সবার মধ্যে। জীবাত্মা, সবসময় পরমাত্মার সঙ্গে মিলিত হবার জন্য উদগ্রীব। আমরা কামনা-বাসনার বিরোধিতা করতে গিয়ে, প্রেমের অঙ্কুরকে বিনষ্ট করে চলেছি। আমরা কামের বিরুদ্ধে লড়াই করে করে জীবন শেষ করে দিলাম। একটা কথা আমাদের মনে রাখা ভালো, মানুষ কখনো কামনা থেকে মুক্ত হতে পারবে না। কামনা বাসনা পূরণ করবার জন্য আমাদের দেহ ধারণ করতে হয়েছে। আর আমরা যা করতে এসেছি, আমরা যা করবার জন্য, জীবধারন করেছি, তাকে বলছি পাপ। আর এই পাপই সারা জীবন ধরে বহন করে চলেছি। এই ধারণা ত্যাগ করুন। এই ধর্ম্মগুরুদের ত্যাগ করুন। যারা প্রেমকে পাপ বলছে। যতদিন মানুষ পন্ডিতদের এই অনাচার থেকে মুক্ত হতে না পারবেন, ততদিন আমাদের প্রেমের বিকাশ হতে পারবে না। সূর্য্যের কাছে যাবার জন্য যেমন সূর্য্যরশ্মি সাহায্য করতে পারে। আর সূর্য্যরশ্মির মধ্যেই সমস্ত সূর্য্যশক্তি নিহিত আছে। তেমনি পরমাত্মার কাছে যাবার জন্য প্রেম হচ্ছে একমাত্র রশি বা সিঁড়ি যা বেয়ে আমরা ঈশ্বরের কাছে পৌঁছতে পারি।
ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ। হরি ওম।
প্রেম-ভালোবাসা আমাদের ইন্দ্রিগ্রাহ্য় বস্তু বা রূপের সঙ্গে হতে পারে। মানুষ যেমন মানুষকে ভালোবাসে,জীবজন্তুকে ভালোবাসে তেমনি সে গান ভালোবাসে, সৌন্দর্য ভালোবাসে । যদিও আমরা একটা মাটির বা পাথরের মূর্তি গড়ে, ঈশ্বরের রূপ দিয়েছি। কিন্তু আমরা মনে মনে সবাই জানি, এটি আসলে ঈশ্বর নয়। মহাত্মাগণ বলছেন, ভালোবাসা ও প্রেম, কাছাকাছি অর্থ বহন করে সত্য, কিন্তু এর মধ্যে একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। ভালোবাসা আসলে একটা অংকুর আর প্রেম হচ্ছে বৃক্ষ। ভালোবাসাই ধীরে ধীরে প্রেমে পরিণত হয়। যদিও ঈশ্বরপ্রেম কথাটা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কাছে, একটা অবাস্তব ব্যাপার। ভালোবাসা আমরা দেখতে পাইনা বটে, কিন্তু আমরা অনুভব করি, ভালোবাসা হয়ে থাকে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুর সঙ্গে। আমাদের মধ্যে যারা নিকৃষ্ট তারা মনে করে থাকেন, ভালোবাসা একমাত্র বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গেই হতে পারে। যাইহোক, ভালোবাসা পার্থিব, প্রেম অপার্থিব। ভালোবাসার পরিণতি হচ্ছে প্রেম। ভালোবাসা হচ্ছে জীবাত্মার স্বভাবজাত গুন্। আর প্রেম হচ্ছে পরমাত্মার স্বভাবজাত গুন্। আর পরমাত্মার অংশ হচ্ছে জীবাত্মা। জীবাত্মার মধ্যেই কিঞ্চিৎ প্রেম লক্ষিত হয়। ভালোবাসার প্রভাব মৃতপ্রায় মানুষকে বাঁচিয়ে তুলতে পারে। বৃদ্ধকে যুবকে পরিণত করতে পারে। কিছুদিন আগে খবরে পাতায় দেখছিলাম, এক বৃদ্ধাশ্রমে বসবাসকারী ৭৫ বছরের এক যুবক ৬৮ বছরের তরুণীকে নিয়ে মধুচন্দ্রিমা যাপন করতে যাচ্ছেন। তো ভালোবাসা মানুষকে চাঙ্গা করতে পারে। সে তখন বয়সের তোয়াক্কা করে না।
ভালোবাসা হচ্ছে অপরের সুখ-দুঃখের অনুভূতিকে নিজের বলে অনুভব করা। ভালোবাসার মানুষকে পেলে প্রাণ শীতল হয়ে ওঠে। ভালোবাসার মানুষ বা এমনকি জিনিস পেলে, আমাদের আত্মা তৃপ্তি লাভ করে থাকে। মনের মধ্যে এক অদ্ভুত রসামৃত ভোগের ভাবের উদয় হয়। আর উল্টোটা হলে আমাদের হৃদয় নিরস ক্লেশকর, একটা অশান্তির ভাবের সৃষ্টি হয়। আসলে আমাদের মধ্যে যখন ভালোবাসা জাগে, তখন আমরা ভালোবাসার দৌলতে ভালোবাসার পাত্র/পাত্রীর মধ্যে কেবল গুনের উৎকর্ষ দেখতে পাই। দোষ দেখবার চোখ থাকে না। কেবল গুন্ আর গুন্। ভালোবাসা আমাদের জীবনে একটা প্রশান্তি এনে দেয়।
ভালোবাসা গুনটি সমস্ত জীবের মধ্যেই বর্তমান। কেবল ভালোবাসার বস্তু বা ভাজন আলাদা আলাদা। আমরা বেশিরভাগ জাগতিক বস্তুর ভালোবাসায় আকৃষ্ট হই, আবার গুটিকয় মানুষ অপার্থিব বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হয় ।
অধ্যাত্ম সাধকের নিত্য ও অনিত্য, সৎ-অসৎ বস্তু সম্পর্কে সাময়িক ধারণা থাকা দরকার। তা সে আপনি যে পথের পথিক হন। অর্থাৎ আপনি ভক্তিমার্গ, যোগমার্গ, বা জ্ঞান মার্গ - যে পথের সাধক হোন না কেন। জ্ঞান -ভক্তি-প্রেম কথাটা একসাথে উচ্চারিত হয়। আসলে জ্ঞান থেকে আসে ভক্তি। অর্থাৎ কারুর সম্পর্কে যখন আমাদের জ্ঞান হয়, যে ইনি আমার থেকে উন্নত অর্থাৎ আমার থেকে বয়সে বা গুনে, বা শারীরিক বলে, যে কোনো ভাবেই হোক, এমন ধারণা যে যিনি আমার থেকে উন্নত তখন তার সম্পর্কে আমাদের মধ্যে একটা ভক্তির ভাবের উদয়। আর এই ভক্তি থেকে আসে ভালোবাসা, আর ভালোবাসা থেকে আসে প্রেম।
ঠাকুর রামকৃষ্ণকে দেখতে আসা দর্শকের মধ্যে প্রথমে ঠাকুর সম্পর্কে একটা অন্যরকম ধারণা জন্মায় তার কথাবার্তা শুনে। অর্থাৎ ইনি যে আমাদের মতো সাধারণ মানুষ নন, এই ধারণা দর্শনার্থীর মধ্যে দৃঢ় হয়, প্রথমে। আর এই ধারণা যত দৃঢ় হয়, তত তার সম্পর্কে একটা উচ্চভাব পোষন হয়। এই উচ্চভাব দর্শকের মধ্যে ভক্তির উদ্রেগ করে। এই ভক্তি থেকে ভালোবাসা জন্মায়। এইখানে একটা কথা বলি, ভালোবাসা অনেক সময় আসক্তির জন্ম দিতে পারে। অর্থাৎ একদিনের না দেখা যেন অসহ্য বেদনার উদ্রেগ করে। ঠাকুর রামকৃষ্ণ নরেনকে ভালোবাসতেন, তাই তাকে প্রতিদিন আসতে বলতেন।আর নরেনকে দেখলেই ঠাকুর ব্যস্ত-সমস্ত হয়ে পড়তেন। তো নরেন ভাবতো, ঠাকুরের আমার প্রতি আসক্তি হয়েছে। তো নরেন ঠাকুরকে বলেছিলেন, আমার প্রতি তোমার এই আসক্তি ভালো না। তো এর পরে একসময় , ঠাকুর নরেনের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ঘরভর্তি লোকের সামনে হয়তো ঠাকুর নানান কথা বলছেন, এমন সময় নরেন এসেছে, তো তখন ঠাকুর কথা বন্ধ করে দিতেন। নরেন চলে গেলে আবার কথা শুরু করে দিতেন। কয়েক সপ্তাহ যাবৎ এই অবস্থা চলেছিল। এই সময় প্রতিদিন নরেন আসতো, ঠাকুরকে দেখে আবার চলে যেত। কোনো কথাবার্তা হতো না। কয়েক সপ্তাহ চলে যাবার পরে, ঠাকুর একদিন নরেনকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি তো সাথে কথা বলি না, তবু তুই আসিস কেন ? - তো নরেন বলেছিলো, আপনি কি মনে করেন, আমি আপনার কথা শুনে আসি ? আমি আপনাকে ভালোবাসি, তাই আসি। এই হচ্ছে ভালোবাসা, যা কোনো কিছুর প্রত্যাশা করে না।
প্রেম সীমাহীন। ভক্তি জ্ঞান থেকে আসে। এমনকি ভয় থেকেও ভক্তির উদ্রেগ হতে পারে। ভক্তির মধ্যে একটা দ্বৈত ভাগ থাকে। অর্থাৎ তুমি শক্তিশালী আমি দুর্বল, তুমি জ্ঞানী আমি অজ্ঞানী, তুমি অসীম আমি সীমিত - ইত্যাদি ইত্যাদি। ভক্তিতে একটা ভয় বা সমীহের ভাব থাকে। শক্তিশালী, বা ক্ষমতাশালীকে, এমনকি যিনি আমাকে লালনপালন করছেন, বিভিন্ন বিপদ থেকে রক্ষা করছেন, তাদের প্রতি আমাদের ভক্তি শ্রদ্ধা জন্মায় । তা সে আমার মাতা-পিতা হতে পারে, কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি হতে পারে, বা কোনো অধিক জ্ঞানী ব্যক্তি হতে পারে। ভক্তির ভাজন অসীম নয়, আবার ভক্তির লয় আছে। অর্থাৎ যাকে আমি ভক্তি করছি, তার কোনো একটা আচরণ বা কোনো গর্হিত কর্ম্ম আমাকে আঘাত করতে পারে। আমার বিশ্বাস ভেঙে যেতে পারে। এর ফলে তার প্রতি আমার যে ভক্তি কাজ করতো, সেটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
কিন্তু প্রেমে দ্বৈত ভাব থাকে না। প্রেমে দুটি সত্ত্বার একত্রীকরণ সম্ভব হয়। প্রেম আপনা-আপনি স্ফূরিত হয়, এর জন্য প্রেমিকের বা প্রেমভাজনের কোনো গুনের আবশ্যক নয়। প্রেম এমনি এমনি হয়। প্রেমের কোনো কারন নেই, প্রেম জীবাত্মার স্বভাব, যা পরমাত্মার প্রতিফলিত অংশ মাত্র। তাই প্রেমশক্তি যার মধ্যে একবার জাগ্রত হয়েছে, তা কখনো বিনষ্ট হবার নয়। প্রেম প্রস্ফুটিত হয়, স্ফূরিত হয়, প্রেমের জন্ম হয় না। প্রেম আমাদের বা বলা যেতে পারে, সমস্ত জীবাত্মার স্বভাবজাত গুন্ ।
আগেই বলেছি, প্রেম আমাদের স্বভাবজাত। কিন্তু আমাদের প্রেম স্থুলের মধ্যে সীমাবদ্ধ ও সম্পর্কযুক্ত। এখান থেকে আমাদের বেরুতে হবে। মহাত্মাগণ ঈশ্বরের সর্ব্বব্যাপী সত্ত্বাকে অনুভব করেন। শুধু তাই নয়, তারা ঈশ্বরের জন্য, জাগতিক সমস্ত কিছুকে ত্যাগ করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন না। আবার অন্যদিকে মানুষ যখন ঈশ্বর প্রেমে ব্যাকুল হন, তখন ঈশ্বর তাকে আরো কাছে পেতে চান আর তাই তার কাছ থেকে সমস্ত জাগতিক বস্তু এমনকি প্রিয়জনকে দূরে সরিয়ে দেন। আমরা আসলে ভাবি, ঈশ্বরকেও চাই, আবার সংসারকেও চাই। প্রেমিক যেমন প্রেমিকাকে একমাত্র তার-করে রাখতে চায়, অন্যের দিকে মনোযোগ একদম সহ্য করতে পারে না। ঠিক ঈশ্বরও তার ভক্ত-মানুষের প্রেমে পাগল হয়। আর তখন ভক্তকে নানান দিক থেকে সরিয়ে কেবলমাত্র ঈশ্বরানুরাগী করে গড়ে তোলে।আর এই জন্য আপনারা লক্ষ করবেন, ঈশ্বরপ্রেমীর জীবনে নানান দুঃখ কষ্ট। রামচন্দ্রকে চোদ্দ বছর বনবাসে কাটাতে হয়েছে। স্ত্রী-হরণ হয়েছে - ইত্যাদি ইত্যাদি, পান্ডবদের বনবাসে কাটাতে হয়েছে। শ্রীচৈতন্যদেব ছোটবেলায়, পিতৃহারা হয়েছেন, এমনকি তার প্রথম স্ত্রী মারা গেছেন। দ্বিতীয় স্ত্রীকেও তিনি ত্যাগ করেছেন। বুদ্ধদেব রাজসুখ ত্যাগ করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিলেন। ... ইত্যাদি ইত্যাদি।স্বামী বিবেকানন্দর পিতার মৃত্যুর পর, আর্থিক কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে। মা সারদাকে ঠাকুর দেহান্তরের পরে, আর্থিক দুর্গতির মধ্যে পড়তে হয়েছে। সমস্ত ঈশ্বরপ্রেমী মানুষের জীবনী পড়লে বুঝতে পারবেন, কেউ জাগতিক সুখ-ভোগের সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বরপ্রেমী হতে পারেন নি। আমাদের মধ্যে তিন ধরনের প্রেমিক আছে একদল যারা কেবল নিজের সুখের জন্য প্রেমিকাকে চায়। আর একদল আছে, যারা ভালোবাসা ভাগ করে নিতে চায়। এরা দু-জন দু-জনের সুখের কথা ভাবে। আর সর্বশেষে আর এক ধরনের প্রেমিক আছেন, যারা নিজের সুখের কথা ভেবে প্রেম করেন না, তাদের সমস্ত মন পরে থাকে প্রেমাস্পদের সুখের জন্য। এই শেষের শ্রেণী ঈশ্বরপ্রেমের উপযুক্ত। এই প্রসঙ্গে একটা গল্প বলি :
সম্মোহনী বিদ্যা আয়ত্ত্বের কৌশল : ঘুম পাড়ানো বিদ্যা। HYPNOTISM-1
তথ্যসূত্র : সম্মোহন বিদ্যা : প্রেফেসর রাজেন্দ্রনাথ রুদ্র।
আমরা বহু মানুষকে সমীহ করে চলি। তা সে আমাদের মা-বাবা হতে পারে, স্কুলের শিক্ষক হতে পারে, বা ডাক্তারবাবু হতে পারে, সরকারি কোনো বড় অফিসার হতে পারে। আবার কোনো সাধু সন্ন্যাসী হতে পারে। কেন ? আসলে তাদের সম্পর্কে অবচেতন মনে একটা সম্মানের জায়গা কখনথেকে তৈরী হয়ে আছে , তা আমরা জানি না। তাদের কথার অবাধ্য হতে পারি না। কেন ? সন্মোহিনী বিদ্যা এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারে।
প্রথমেই বলি সন্মোহনী বিদ্যা বা হিপ্নোটিজম হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসছে। কারুর কাছে, এগুলো ভোজবাজি, কারুর কাছে এগুলো অবিজ্ঞনিক - কুসংস্কার। সম্মোহন বিদ্যা একটা অদ্ভুত অলৌকিক বিদ্যা। এতদিন এই বিদ্যা গোপন ছিল। এই বিদ্যার দ্বারা মানুষের, যেমন উপকার করা যেতে পারে, ঠিক তেমনি অপকার করা যেতে পারে। আমরা এই বিদ্যার প্রয়োগ সম্পর্কে কিছু কথা শুনবো, যা আমাদের সাধুসন্তেরা করে থাকেন। হিপ্নোটিজম একটি স্বীকৃত বিজ্ঞান। কোনো ভোজবাজি নয়। ১৮৮২ সালে এই নিয়ে গবেষণার জন্য তৈরি হয় "দি সোসাইটি ফর ফিজিক্যাল রিসার্চ - THE SOCIETY FOR PHYSICAL RESEARCH. 1892 সালে ব্রিটিশ মেডিকেল এসোসিয়েশন বিস্তর অনুসন্ধানের পর রায় দেয় , যে হিপ্নোথেরাপি একটা বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি। ১৯৫২ সালে বি.এম.এ. আবার একে পুনরায় স্বীকৃতি দেয়। ১৯৫৮ সালে আমেরিকা আমেরিকান মেডিক্যাল এসোসিয়েশন স্বীকৃতি দেয়। এর পরে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশান হিপ্নোথেরাফিকে স্বীকৃতি দেয়। সবশেষে ২০০৪ সালে ভারত সরকারও হিপ্নোথেরাপি কে অনুমোদন দেয়।
ছোটবেলায়, আমরা মায়ের মুখে ঘুম পাড়ানো গান শুনেছি। গল্প শুনে শুনতেও আমাদের ঘুম এসে যায়। কারুর কারুর বই পড়তে পড়তে ঘুম এসে যায়। গান বা সুরধ্বনি শুনতে শুনতে আমাদের ঘুম এসে যেতে পারে। তো ঘুম আমাদের ক্লান্তি থেকে আসতে পারে, অর্থাৎ ক্লান্তি থেকে যখন আমরা বিশ্রাম নিতে চাই, তখন আমাদের ঘুম আসে। আমরা জানি এই ঘুমের সময় আমাদের অবচেতন মন কাজ করে থাকে। ঘুমের সময় স্বপ্নে আমরা বাহ্যিক জগতের মতো আর একটা এমনিতর জগতে বিচরণ করে থাকি।
হিপ্নোজ কথাটার অর্থ হচ্ছে ঘুম। এটি গ্রিক শব্দ। হিপ্নোটিজম বলতে আমাদের মধ্যে একটা ধারণা আছে, এটি বশিকরন বিদ্যা। ব্যাপারটা ঠিক অমনি নয়। আসলে ঘুমের মাধ্যমে, বা আমাদের তন্দ্রাবস্থাতে যে মন কাজ করে, তাকে কিছু নির্দেশ পাঠানো এই বিদ্যার কাজ। এবং এর মধ্যে, আমাদের শারীরিক অসুস্থতা ঠিক হতে পারে, মানসিক অসুস্থতা ঠিক হতে পারে। আসলে আমাদের অবচেতন মনকে কিন্তু নির্দেশ পাঠানো। আর অবচেতন মন যেহেতু কোনো যুক্তি তর্কের ধার ধরে না, তাই সে আমাদের নির্দেশ মতো কাজ করতে পারে। তা সে ভুল হোক বা ঠিক। তাই এই নির্দেশ পাঠাতে গেলে আমাদের সতর্ক থাকতে হয়, যাতে আমরা কোনো অনিষ্টকর নির্দেশ আমাদের অবচেতন মনকে না দিয়ে ফেলি।
প্রত্যেক মানুষের মধ্যে দিব্যদৃষ্টি লাভ করবার একটা শক্তি নিহিত আছে। তা সে কারুর ক্ষেত্রে অল্প আবার কারুর ক্ষেত্রে অধিক। যাদের মধ্যে এই স্বভাব অধিক পরিমানে আছে, তারা স্বল্প চেষ্টাতেই সম্মোহনী বিদ্যা আয়ত্ত্বে আনতে পারেন। কিছু মানুষ দেখবেন, সিনেমা বা নাটক দেখতে দেখতে কাঁদছেন। এরা সাধারণত সংবেদনশীল মানুষ হয়ে থাকেন। এরা তাড়াতাড়ি সন্মোহিত হন। আবার এই মানুষগুলোর মধ্যেই যাদের আহার বিহারে সংযম আছে, যারা পবিত্র জীবন যাপন করে থাকেন, তাদের পক্ষে এই দিব্যদৃষ্টি লাভ সহজ হয়ে থাকে। এমনকি এই শক্তি আমাদের অজ্ঞাতসারে প্রাকৃতিক ভাবেই আমাদের কারুর কারুর মধ্যে দেখা দিতে পারে। সাধু-সন্তগন যখন এই শক্তি অর্জন করেন, তখন তাদের ত্রিকালজ্ঞ বলা হয়ে থাকে। হৃদয়ের গভীর আকাঙ্খ্যাকে বলে ইচ্ছাশক্তি। এই ইচ্ছাশক্তিকে বাড়িয়ে তোলা, এবং মানুষের মঙ্গলকর কাজে ব্যবহার করা এই বিদ্যার উদ্দেশ্য। আমরা আজ এই বিদ্যার সাহায্যে কিভাবে মানুষকে ঘুম পাড়ানো যায়, তার একটি ধারাবাহিক প্রবচন শুনবো।
ঘুম পাড়ানো বিদ্যা
বহু মানুষ আছেন, যারা অনিদ্রায় ভোগেন। তাদের জন্য এই ক্রিয়াটি প্রয়োগ করতে পারেন। আগে আপনি ঠিক করুন, কাকে আপনি ঘুম পাড়াবেন । প্রথমেই বলি, ঘুম পাড়ানো বিদ্যা প্রয়োগ করতে গেলে, যাকে আপনি ঘুম পাড়াবেন, তার সহযোগিতা দরকার। এবার তাকে বিছানায় শুয়ে পড়তে বলুন, হাতদুটো শরীরের পাশে মেলে রাখতে বলুন। অথবা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসতে বলুন। হাতদুটোকে কোলের উপরে রাখতে বলুন। শরীরের সমস্ত মাংশ-পেশীগুলোকে শিথিল করতে বলুন। এবার তাকে ভাবতে বলুন, আমার শরীর শক্তিহীন - বলশূন্য - নির্জীব হয়ে পড়েছে। মাথাটা ক্রমশঃ ভারী হয়ে আসছে। চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে - আমি কিছুতেই চোখের পাতা খুলতে পারবো না। ভাবতে বলুন, আমার শরীর অসার হয়ে আসছে, আমি অবসন্ন হয়ে পড়েছি, আমি এক্ষুনি ঘুমিয়ে পড়বো। আমার খুব গভীর ঘুম হবে. আমি এখনই ঘুমিয়ে পড়বো।
এবার আপনি ওর নাকের অগ্রভাগে স্থির ও গভীর দৃষ্টিপাত করুন। এরপর আপনার হাতদুটো দিয়ে পাস্ দিতে হবে। পাস্ অর্থাৎ উভয় হাতের আঙুলগুলোকে প্রসারিতকরে, মাথার সামনে স্থাপন করুন। এবার হাত দুটোকে ধীরে ধীরে শরীরের উপর থেকে টেনে পা পর্যন্ত নিয়ে যান। এইভাবে ৫ থেকে ১০ মিনিট করতে থাকুন। একে স্পর্শযুক্ত নিম্নগামী পাস্ বলে। এই পাস্ দেবার সময় আপনার দৃষ্টি সদা রুগীর নাসা-মুলে রাখতে হবে, আপনি নিজে কুঁজো হয়ে কাজটা করবেন। পাস্ দেবার সময় রুগীকে গম্ভীর স্বরে নির্দেশ দিতে থাকুন। - ঘুম - ঘুম - ঘুম - গভীর নিদ্রা - ঘুম ঘুম আরো গভীর ঘুম। ঘুম - ঘুম - ঘুম - আরো গাড়ো নিদ্রা। চার-পাঁচ মিনিট এইভাবে আদেশ দিতে থাকুন। এবার বলুন, তোমার মাথা আস্তে আস্তে ভারী হয়ে পড়ছে - তোমার শরীর ধীরে ধীরে খুব অলস - অবসন্ন হয়ে পড়ছে। তোমার চোখ বন্ধই আছে, তোমার চোখের পাতা গভীর ভাবে চোখের উপরে চেপে বসেছে। তোমার কেবলই ঘুম পাচ্ছে - ঘুমের মধ্যে তুমি হারিয়ে যাচ্ছ। আঃ কি আরাম - এমন ঘুম জীবনে কখনো হয়নি। এখন তুমি কিছুই অনুভব করতে পারছো না। তোমার একটুও নাড়াচাড়া করতে ইচ্ছে করছে না তোমার নাড়াচাড়ার শক্তি চলে গেছে। তুমি আমার কথা ছাড়া কারুর কথা শুনতে পাচ্ছ না। কেবল আমার্ কথাই শুনতে পাচ্ছ।চার-পাঁচবার এই একই নির্দেশ দিতে থাকুন। ঘুম-ঘুম-ঘুম গভীর ঘুম। ঘুম-ঘুম-ঘুম গভীর ঘুম। চার-পাঁচ বার এই একই কথা বলতে থাকুন। এবার বলুন, খুব আরামদায়ক ঘুমে তুমি প্রবেশ করেছো। গভীর নিদ্রায় তুমি প্রবেশ করেছো। শান্তিদায়ক নিদ্রায় তুমি প্রবেশ করেছো। গভীর নিদ্রা। গভীর ঘুম হচ্ছে তোমার। আরো গভীর ঘুম হচ্ছে তোমার। আমি না জাগালে এই ঘুম তোমার ভাঙবে না। আমি ছাড়া এই ঘুম তোমাকে কেউ ভাঙাতে পারবে না। এইবার তোমার জোরে জোরে শ্বাস প্রশ্বাস বইছে। খুব জোরে, আরো জোরে - আরো জোরে। এখন তুমি নাক ডেকে ঘুমুতে থাকবে। তুমি ঘুমোও, ঘুমোও।
এই সময় যদি দেখো রুগীর শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক ভাবে বইছে, জোরে বইছে না, তাহলে তুমি নিজে জোরে জোরে শ্বাস প্রশ্বাস টানতে-ফেলতে থাকো। তোমার শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ শুনে রুগীও জোরে জোরে শ্বাস প্রশ্বাস ফেলতে শুরু করবে। যখন রুগী শ্বাস প্রশ্বাস জোরে জোরে টানতে থাকবে, তখন তুমি শ্বাস প্রশ্বাস স্বভাবিক করো। আবার বলতে থাকো তোমার গভীর ঘুম এসে গেছে। তুমি গভীর নিদ্রায় মগ্ন হয়ে গেছো। তোমার ঘুম এখন আর ভাঙবে না। যতক্ষন না আমি তোমাকে জাগতে বলবো, ততক্ষন আর তুমি জাগবে না। গভীর নিদ্রা, গভীর ঘুম, আরামদায়ক নিদ্রা, শান্তিদায়ক নিদ্রা। .........
এখন কথা হচ্ছে ঘুম পাড়াবার চেষ্টা তো আমি করলাম, কিন্তু সে ঘুমুলো কি না সে কথা আমি বুঝতে পারবো কি করে ? কিছু দুস্টু ছেলে আছে, যারা এর পর খিল-খিল করে হেসে উঠে বলবে, আমি তো ঘুমোই নি। এবার তোমার পরীক্ষার করবার পালা। শুধু ঘুম তো নয়, তুমি এবার এর অবচেতন মনকে কিছু নির্দেশ দেবে, যা সে মানতে বাধ্য হবে। তো সেইজন্য, বুঝে নিতে হবে সে আমাদের নির্দেশ অনুযায়ী ঘুমুলো কি না। তবে একটা কথা বলি ঘুম পাড়ানোর এমনি তরো ১২টি পদ্ধতি আছে। একটা পদ্ধতিতে কাজ না হলে, অন্য পদ্ধতি বা একাধিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে।শুধু এইভাবে অন্যকে নয়, তুমি নিজেকেও নির্দেশ পাঠিয়ে নিদ্রার জগতে প্রবেশ করতে পার। আসলে ঘুম আমাদের উদ্দেশ্য নয়, আমাদের অবচেতন মনকে কিছু নির্দেশ পাঠানো, অর্থাৎ আমাদের সমস্ত কর্ম্মের যে নির্দেশক তাকে নিয়ন্ত্রিত করা, নির্দেশ পাঠানো। যদিও ঘুম মানুষের ক্রিয়া শক্তি সঞ্চয় করবার একটা আবশ্যক ও স্বাভাবিক ক্রিয়া। যাইহোক আমাদের রুগী ঘুমোলো কি না - তা একবার দেখে নেই। আরো একটা কথা ঘুম থেকে কিভাবে তাকে জাগাতে হবে, সেই প্রক্রিয়া না-জেনে কাউকে ঘুম পাড়াতে যাবে না। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। এর পরের দিন আমরা সেই সম্পর্কে আলোচনা করবো।
১. যদি রুগীর স্বাস প্রশাসগুলো সমান, দীর্ঘ ও গভীর হয়, তবে বুঝবেন, রুগী ঘুমিয়ে পড়েছে।
২. চোখের পাতা আস্তে টেনে তুলে কিছুক্ষন ধরে রাখতে হবে, যদি চোখের মনি নড়াচড়া করে, তবে জানবেন , সে ঘুমোয় নি। চোখের মনি নাড়াচাড়া করবে না গভীর ঘুমে থাকলে।
৩. চোখের মনির পাশে যে সাদা অংশ আছে, সেখানে আস্তে আঙ্গুল স্পর্শ করে দেখুন রুগী চোখের পাতা বন্ধ করবার চেষ্টা করছে কি না। যদি চেষ্টা না করে, তবে জানবে, রুগী গভীর ঘুমে আছন্ন।
৪. রুগীর চোখের মধ্যে আস্তে আস্তে ফুঁ দিলে, সে চোখ বন্ধ করতে চেষ্টা করছে কি না খেয়াল করো। যদি না করে জানবে, গভীর নিদ্রায় আছে রুগী।
৫.এবার রুগীর একখানা হাত আস্তে আস্তে উপরের দিকে ওঠাও, আর আদেশের স্বরে বলতে থাকো, তোমার এই হাতটাকে আমি সোজা করে দাঁড় করিয়ে রাখবো, একে শক্ত করে রাখো, শিথিল হবে না বা পড়ে যাবে না এবার . তোমার হাতটি ধীরে ধীরে খুব শক্ত হচ্ছে, লোহার মতো শক্ত হচ্ছে, হাত কিছুতেই নিচে পড়বে না, কখনো পড়বে না। যতক্ষন আমি তোমাকে শিথিল করতে না বলবো, ততক্ষন হাত লোহার মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। এতে তোমার ঘুমের কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। দুই-তিন বার এইভাবে আদেশ-নির্দেশ দেবার পরে, হাতটি শক্ত হয়েছে কিনা খেয়াল করো, কিছুক্ষন অপেক্ষা করো, এর পর হাত সোজা করে দাও, দাঁড়িয়ে থাকুক, হাতটাকে টিপে দেখো, হাত শক্ত আছে কি না। যদি হাত শিথিল না হয়ে শক্ত থাকে, দন্ডায়মান থাকে তবে জানবে, রুগী ঘুমিয়ে আছে। চার-পাঁচ মিনিট পরে আদেশ দিয়ে হাতকে আবার আগের মতো শিথিল করে নিচে নাবিয়ে দাও ।
৬. ঠিক একই ভাবে রুগীর পা আস্তে আস্তে উঠিয়ে সরল রেখায় সোজা করে শূন্যে দাঁড় করিয়ে দেবে। এই সময় বলবে, তোমার পা, উরু থেকে গোড়ালী পর্যন্ত শক্ত হচ্ছে - ধীরে ধীরে আরো শক্ত হচ্ছে, শক্ত হচ্ছে। আমি একে শূন্যে যেভাবে রেখেছি, পা সেইভাবে, সেই অবস্থাতেই থাকবে। কখনো শিথিল বা নুয়ে পড়বে না। যতক্ষন আমি শিথিল হতে না বলবো, ততক্ষন এইভাবে কঠিন ভাবে, পা উঁচু হয়ে থাকবে, এবং তোমার ঘুমের কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। ৪/৫ মিনিট এই অবস্থায় থাকলে তার নিদ্রা গভীর হয়েছে বলে বুঝবে। এবং তোমার আদেশ মতো রুগীর শরীর কাজ করছে, ইটা নিশ্চিত হতে পারবে । এর পরে আদেশ দিয়ে, পা-কে আবার শিথিল করে দাও। এর পরের দিন আমরা ঘুম ভাঙানোর প্রক্রিয়ার কথা শুনবো। ততক্ষন অপেক্ষা করুন। মনে রাখবেন, আমাদের কাজ কিন্তু ঘুম পাড়ানো নয়, আমাদের কাজ হচ্ছে, রুগীর শরীরের সমস্ত রোগ নিরাময় করা। ধীরে ধীরে আমরা সেইসব কথা শুনবো। অতিরিক্ত উৎসাহিত হয়ে, এই প্রক্রিয়ার প্রয়োগ করতে যাবে না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। এই একটি বিজ্ঞান সম্মত প্রক্রিয়া, কিভাবে এটি কাজ করে, সে সম্পর্কেও আমরা শুনবো। ধৈর্য্যধরে অপেক্ষা করুন।
ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ। হরি ওম।
সম্মোহনী বিদ্যা আয়ত্ত্বের কৌশল : মোহিত-ঘুম ভাঙ্গানো বিদ্যা। HYPNOTISM-2
তথ্যসূত্র : সম্মোহন বিদ্যা : প্রেফেসর রাজেন্দ্রনাথ রুদ্র।
ডঃ এডগার কেইসি। না ভদ্রলোকের কোনো ডাক্তারি ডিগ্রি ছিল না। কিন্তু তিনি চিকিৎসা বিদ্যায় একটা অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। ১৯১০ সালে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় একটা খবর বেরিয়েছিল। সেখানে বলা হচ্ছে, "এডগার কেইসিকে যখন সন্মোহিত করা হতো তখন তিনি চিকিৎসকের ভূমিকায় যে ক্ষমতা দেখাতেন তা দেখে বিশ্বের বড়বড় চিকিৎসকগন বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যেতেন। কেইসির অলৌকিক ক্ষমতা দেশের প্রখ্যাত চিকিৎসকদেরও নজর কেড়েছিল।" যাঁর চিকিৎসা সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না, তাকে যখন সম্মোহিত করা হতো, তখন তিনি রুগীর কি রোগ হয়েছে, তা বলতে পারতেন ও তার চিকিৎসা কি হবে তাও বলে দিতেন। তাকে শুধু রোগীর নাম, ঠিকানা দেওয়া হতো। রোগী যেখানেই থাক, তা পাশের ঘরেই হোক আর হাজার মাইল দূরে হোক, কেইসি তার সম্মোহিনী নিদ্রার মধ্যে অতীন্দ্রিয় দৃষ্টিতে সব দেখতে পেতেন . তিনি এই মোহিতনিদ্রার মধ্যেই কথা বলতে শুরু করতেন। এই অবস্থায় তিনি যে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতেন।
আমাদের দেশও বহুমহাত্মাগণ রুগীর শরীর স্পর্শ করে, কি সব বিড়বিড় করে বলেন, আর রুগী রোগমুক্ত হয়ে যায়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কুজোঁকে সোজা করেছিলেন। এসব আমরা শুনেছি, কেউ কেউ হয়তো এইসব ঘটনার সাক্ষী হতে পেরেছি। আসলে যার নির্দেশে আমরা সবাই নানান রকম কাজ করে থাকি, আমাদের শরীরের বিভিন্ন কাজ সম্পাদন হয়ে থাকে, তাকে সম্মোহনের মাধ্যমে কিছু নির্দেশ পাঠানো, এই বিদ্যার উদ্দেশ্য।
আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে এই ক্ষমতা কিভাবে অর্জন করা যায়। তার আগে আমরা দেখে নি ডঃ কেইসি কিভাবে এই ক্ষমতা অর্জন করেছিলেন। ডঃ কেইসির যখন মাত্র ২১ বছর বয়স, তখন তার ল্যারিঞ্জাইটিস হয়েছিল। আর এতে, তার গলার স্বর চিরতরের মতো হারিয়ে যায়। এই সময় হার্ট নামে এক যাদুকর, তাদের গ্রামে আসে। যাদুকর হার্ট কেইসিকে সম্মোহিত ক'রে, তাকে কিছু নির্দেশ পাঠান। আর কেইসি সেই সম্মোহিত অবস্থায় কথা বলতে শুরু করলেন । কিন্তু দুঃখের কথা হচ্ছে, তিনি যখন জেগে উঠতেন, তখন আর কথা বলতে পারতেন না। এর পরে, লেইন নামে এক অস্টিওপ্যাথিস্ট (অর্থাৎ হাড়, পেশীর অস্ত্রোপচার করে চিকিৎসা করেন) সম্মোহিনী বিদ্যা প্রয়োগ করে, কেইসিকে সারিয়ে সরিয়ে তোলেন। আর আশ্চর্য্যের কথা হচ্ছে, নিজেকে সারানোর এই চিকিৎসার পদ্ধতির কথা বলে দিয়েছিলেন, সম্মোহিত কেইসি নিজেই । অন্যদিকে লেইন নিজে পাকস্থলীর যন্ত্রনায় ভুগছিলেন বহুদিন থেকে। কেইসিকে সম্মোহিত করে, তার কাছ থেকে লেইনি তার নিজের চিকিৎসার কথাও জেনে নিয়েছিলেন। কেইসি পরে একটানা ৪৩ বছর যাবৎ এই ক্ষমতার মাধ্যমে হাজার হাজার রুগীকে তাদের রোগ নিরাময়ে সাহায্য করেছিলেন। তার এই অলৌকিক চিকিৎসা সম্পর্কে হাজার হাজার পৃষ্ঠার বই লিখেছেন বহু লেখক কিন্তু তার এই অলৌকিক বিদ্যার রহস্য সম্পর্কে অর্থাৎ সম্মোহিনী বিদ্যার বই খুব কম। আমরা সেই সম্মোহিনী বিদ্যা সম্পর্কে শুনবো প্রেফেসর রাজেন্দ্রনাথ রুদ্র মহাশয়ের লেখা বই "সম্মোহন বিদ্যা" থেকে যা প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৩৫ সালে, কলকাতা থেকে ।
কিন্তু যেকথা আপনাদের বলা প্রয়োজন সেটি হচ্ছে আমি মোহিতবিদ্যার শিক্ষক নোই। আমি কাউকে কখনো মোহিত করবার চেষ্টা করেও দেখিনি। তবে এই বিদ্যার সারবস্তু নিয়ে, আমার আগ্রহ আছে, নিজের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে দেখেছি, অর্থাৎ নিজের দেহকে সুস্থ রাখতে পেরেছি, এই বিদ্যার প্রয়োগ করে । এই বিদ্যার প্রয়োগকারীদের অনেক ঘটনার কথা নানান বইতে পড়বার সুযোগ হয়েছে। তাই এই বিদ্যা অর্জন করে, কেউ যদি কারুর উপকার করতে পারেন, বা নিজেও উপকৃত হতে পারেন, সেই আগ্রহ জাগিয়ে তুলবার জন্য, এই আলোচনা। কাউকে শেখানো বা জ্ঞান দেওয়া উদ্দেশ্য নয়। কেবলমাত্র এই গুপ্ত বিদ্যা সম্পর্কে আগ্রহ জাগানো উদ্দেশ্য। আমি যে বইয়ের সাহায্য নিয়েছি, তার নাম আগেই বলেছি, সম্মোহিনী বিদ্যা, লেখক প্রেফেসর রাজেন্দ্রনাথ রুদ্র। এই বইটি লেখক নিজেই ১৯৩৫ সালে প্রকাশ করেছিলেন, ১০৫/৫, সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী রোড, কলকাতা থেকে।
যাই হোক, এর আগের দিন আমরা শুনেছিলাম, কিভাবে রুগীকে নিদ্রিত করা যায়। অবশ্য এই নিদ্রা স্বাভাবিক নিদ্রা নয়। একে বলা যেতে পারে মোহিত নিদ্রা। অর্থাৎ নিদ্রার মধ্যেও রুগীর শরীর আমার নির্দেশ/আদেশ মতো কাজ করবে। এমনকি নিদ্রার মধ্যে সে কথা বলবে, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ চালনা করবে। আমাদের শরীরের ভিতরে অর্থাৎ ফুসফুস, হৃৎপিন্ড, লিভার, রক্ত-প্রবাহ , এমনকি আমাদের মাথার মধ্যে যে সব সুক্ষ স্নায়ুর ক্রিয়া, আমাদের মেরুদণ্ডের মধ্যে যে নাড়ীর ক্রিয়া, অর্থাৎ আমাদের শরীরের সমস্ত কিছু, নিয়ন্ত্রণ করে যে অবচেতন মন তাকে আমরা নির্দেশ পাঠাবো, আর সেই মতো অঙ্গগুলো পরিচালিত করবে অবচেতন মন।
প্রথমেই বলি, আমরা যাকেই মোহিত করবো, তা সে তার জাগ্রত অবস্থায়, হোক, বা নিদ্রিত অবস্থাতে হোক, এই অবস্থায় রুগীকে প্রকৃতিস্থ করতে গম্ভীর আদেশসূচক স্বরে "জাগো-জাগো-জেগে ওঠো-জেগে ওঠো- জাগো-জাগো- জাগো বলতে হবে। ৪/৫ মিনিট অপেক্ষার পরেও, যদি রুগী না জেগে ওঠে তবে তার শরীরের উপরে পাস্ দিতে হবে। নিদ্রিত করবার জন্য, আমরা স্পর্শযুক্ত নিম্ন গামী পাস্ দিয়েছিলাম, এবার স্পর্শযুক্ত উর্দ্ধগামী পাস্ দিতে হবে। অর্থাৎ আগে দিয়েছিলাম, মাথা থেকে পাস্ শুরু করেছিলাম, এবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পাস্ দিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে বলতে হবে - জাগো-জাগো-জাগো- সেরে গেছে -সেরে গেছে - জাগো -জাগো ইত্যাদি। যদি এতেও জাগ্রত না হয়, তাতে চিন্তা করবার কিছু নেই, বা ভয়ের কিছু নেই। কারন এই সম্মোহিনী নিদ্রা বা মোহিত নিদ্রা কখনোই বিপদজনক নয়। যারা স্বাভাবিক ভাবে একটু বেশি ঘুমকাতুরে, তাদের সহজে ঘুম ভাঙে না। এক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করবার কিছু নেই। রুগীকে একটু নির্জনে নীরব স্থানে রেখে দিন। দশ থেকে ত্রিশ মিনিটের মধ্যেই মোহিত নিদ্রা স্বাভাবিক নিদ্রায় পরিণত হবে। এখন আবার বলতে হবে - জাগো -জাগো -জাগো তুমি আর বেশিক্ষন ঘুমুবে না। জেগে ওঠো। আমি আর তোমাকে বেশিক্ষন ঘুমুতে দেব না। জাগো-জাগো-জাগো জেগে ওঠো। এখন আমি এক থেকে ২০ পর্যন্ত গুনবো, এর মধ্যে অবশ্যই তুমি জেগে উঠবে। এক-দুই-তিন-চার-পাঁচ জাগো জেগে ওঠো জাগো - ঘুমভেঙ্গে জেগে ওঠো তোমার ঘুম ভেঙে গেছে - জাগো -জাগো - ছয় -সাত-আট -নয়-দশ - জাগো -জাগো -তোমার ঘুম ভেঙে গেছে, তের -চোদ্দ -পনের-ষোলো- সতের -আঠারো-ঊনিশ -কুড়ি - জাগো-জাগো- ওঠো- জাগো - তোমার ঘুম ভেঙে গেছে - ওঠো- উঠে দাঁড়াও। এইভাবে নির্দেশ পাঠাতে থাকবেন। ঠিক ঠিক মতো এই নিয়মের অনুসরণ করতে পারলে, মোহিত ব্যক্তি অবশ্য়ই জেগে উঠবেন, এবং প্রকৃতিস্থ হয়ে উঠবেন। একটা কথা মনে রাখতে হবে, তাকে শারীরিক দিক থেকে কখনো আঘাত করবেন না। অর্থাৎ ঠেলে ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করবেন না। বা জোরে চিৎকার করে, বা হাততালি দিয়ে এই মোহিত ঘুম ভাঙতে চেষ্টা করবেন না। এতে ঘুমন্ত ব্যক্তির স্নায়ুমণ্ডলীতে আঘাত লাগলতে পারে। কেবল মৌখিক আদেশ-নির্দেশ ও পাস্ দ্বারা জাগ্রত করলে তার শরীরের বা মনের কোনো অনিষ্ট হবার সম্ভাবনা নেই। অতএব মোহিত বিদ্যা প্রয়োগ করতে গেলে, এই কার্যকরী নিয়মের প্রয়োগ ব্যতীত অন্য নিয়মের সাহায্য নেওয়া বাঞ্চনীয় নয়। রুগী জাগ্রত হয়ে গেলে বেশ সুস্থ সবল বোধ করবে। যদি এর অন্যথা হয়, তবে তার নাসামূলে স্থির ও তীব্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করবেন এবং আদেশের স্বরে বলবেন, তোমার কোনো প্রকার দুর্বলতা বা অবসন্নতা নেই - কোনো প্রকার শ্রান্তি বা অবসাদ নেই, তুমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ ও সবল হয়েছো। উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে, অর্থাৎ অহেতুক কোনো ব্যক্তিকে মোহিতনিদ্রার জন্য আহবান করবে না। তবে প্রথম প্রথম এই বিদ্যা-শিক্ষার অনুশিলন করবার সময়, নিদির্ষ্ট ব্যক্তির মধ্যে প্রয়োগ করে,অর্থাৎ শিক্ষর্থীদের মধ্যে একে অপরের উপরে প্রয়োগ করে বিদ্যা আয়ত্ত্বে আনা যেতে পারে।
ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ। হরি ওম।
ভগবানের ইচ্ছেটা কি ?
Hi there, I want to know your foundation address and contact details. Please....
ReplyDelete