রুদ্রাক্ষ
রুদ্রাক্ষ কথাটা সংস্কৃত। রুদ্র+অক্ষ= রুদ্রাক্ষ । যার অর্থ হচ্ছে - রুদ্রদেবের চক্ষু। রুদ্র কথাটা এসেছে - রুদ + নিচ = রোদি (রোদন করানো + র (কর্তৃ) . অর্থাৎ যিনি রোদন করান । পূরাণে আছে, ব্রহ্মা কল্পারম্ভে সৃষ্টি চিন্তায় মগ্ন ছিলেন, এমন সময় এক বালক মূর্তি তার ললাট হতে আবির্ভূত হয়ে, কাঁদতে কাঁদতে ইতস্তত ভ্রম করতে লাগলেন। ব্রহ্মা তাকে রুদ্র নামে অবহিত করে, রোদনে নিবৃত্ত হতে বললেন, এবং তাকে রুদ্র, ভব, শর্ব্ব, ঈশান, পশুপতি, ভীম, উগ্র ও মহাদেব ইত্যাদি অষ্ট নামে ডাকতে লাগলেন। ইনিই একাদশ মূর্তিতে একাদশ রুদ্র নামে প্রসিদ্ধ।এই একাদশ রুদ্র হচ্ছেন - অজ, একপাদ, অহিব্রধু, পিনাকী, অপরাজিত, ত্র্যম্বক, মহেশ্বর, বৃষাকপি, শম্ভূ, হর, এবং ঈশ্বর। শিবের সংহার মূর্তিকেই বলে রুদ্র।
তো রুদ্রাক্ষ বলতে আমরা বুঝলাম, রুদ্রদেবের আঁখি। কথিত আছে, ত্রিপুরাসুরের বধের পর শিবের আঁখি থেকে অশ্রুবিন্দু পতিত হয়েছিল। ঐ অশ্রুবিন্দু থেকে এই বৃক্ষ ও ফলের উৎপত্তি। ইংরেজিতে একে বলে, utrasum bead (ইউট্রাসাম বিড ) ।
রুদ্রাক্ষের দানাগুলির মধ্যে একরকম অদ্ভুত চুম্বকীয় শক্তি ও বিদ্যুৎশক্তি নিহিত থাকে। এটা শুধু সাধুসন্তদের কথা নয়। আধুনিক বিজ্ঞান, এমনকি চিকিৎসা বিজ্ঞান একথা স্বীকার করে। বস্তুগত দিক থেকে এর গুন্ বা প্রভাব অনস্বীকার্য্য। ভারতের সঙ্গে সঙ্গে বিদেশেও রুদ্রাক্ষের চাহিদা ও প্রয়োগ দিন দিন বাড়ছে।
রুদ্রাক্ষের গাছ খানিকটা আমাদের জলপাই গাছের মতো দেখতে । তবে পশ্চিমবঙ্গে বা বাংলাদেশে বিচ্ছিন্ন ভাবে দুচারটে গাছ থাকলেও রুদ্রাক্ষের গাছ এখানে নজরে পড়ে না। এটি আসলে পাহাড়ি অঞ্চলের একটা বুনো গাছ। ভারতের হিমালয়ের জঙ্গলে অর্থাৎ উত্তরকাশি, গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী, ইত্যাদি জায়গায় এমনকি দক্ষিণ ভারতেও এই গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া, তিব্বত, চীনের কিছু অংশে,নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, জাভা, সুমাত্রা ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই আধ্যাত্মিক গুন্ সম্পন্ন গাছের দেখা পাওয়া যায়। বর্তমানে, এই গাছের ফলের ব্যবসায়িক মূল্য বৃদ্ধি হওয়ার জন্য, কেউ কেউ এর চাষ শুরু করেছেন। কিন্তু সেটা চোখে পরার মতো নয়।
ভৌগলিক ও জাতিগত কারণে, এই ফলের বিভিন্ন আকার, অর্থাৎ ছোট থেকে বড়, ও আকৃতি অর্থাৎ অর্দ্ধচন্দ্রাকৃতি থেকেচ্যাপ্টা, গোল ইত্যাদি হয়। যেমন ইন্দোনেশীয় রুদ্রাক্ষ আমাদের বুনো কুলের মতো হয়। নেপালের রুদ্রাক্ষ গোল হয়।এখানেই গোল একমুখী রুদ্রাক্ষ দুর্লভ হলেও পাওয়া যায়। দক্ষিণ ভারতের রুদ্রাক্ষ একমুখী ও অর্দ্ধ-চন্দ্রাকৃতি হয়।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে রোগ উপশমের জন্য রুদ্রাক্ষের উল্লেখ দেখা যায়।
রক্তচাপ : উচ্চ রক্তচাপের রুদ্রাক্ষ ভষ্ম ও স্বর্ণমাক্ষিক ভষ্ম সমপরিমাণ নিয়ে এক রতি পরিমান সকল সন্ধ্যে দুধ বা দইয়ের খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়। এছাড়া, রুদ্রাক্ষের মালা হৃদয় পর্যন্ত ঝুলিয়ে ধারণ করলে আশ্চার্য্য ফল লাভ হয়। কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।
মানসিক রোগ : একটা চারমূখী রুদ্রাক্ষ গরুর বা ছাগলের দুধের সঙ্গে ভালো করে ফুটিয়ে এক মাস খেতে দিতে হয়। এতে স্মরণশক্তিও বৃদ্ধি পায়।
অগ্নিদাহ : একটা রুদ্রাক্ষ শিলে বেটে নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে পোড়া জায়গায় প্রলেপ দিলে যন্ত্রনা কমে। যদি যন্ত্রনা বেশি হয় তবে সামান্য কর্পূর এর সঙ্গে মিশিয়ে প্রলেপ দিন।
এমনি হাজার-এক রোগে রুদ্রাক্ষের ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়।
এই গাছের মূল দিয়েও আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুসারে, অনেক রোগের উপশম করা হয়।
কিন্তু আমরা লক্ষ করেছি, বহু সাধু-সনত্দের গলায়, হাতে এগুলো পরিধান করে থাকেন । এর কারন কি ?
এর প্রথম কারন, যারা ঈশ্বর চিন্তায় মগ্ন থাকে চায়, তাদের এই রুদ্রাক্ষের মালা এক অসাধারণ একাগ্রতা এনে দেয়। চিত্ত ঈশ্বরে নিবিষ্ট হয়। েকে আপনি দ্রাব্যগুন বলতে পারেন। এক স্বামীজী বলছিলেন, একমুখী রুদ্রাক্ষ নিয়ম মতো ধারণ করলে, সে বারো দিনের মাথায় সংসার ত্যাগ করবে। অর্থাৎ সংসারের সাথে তার এমন তিক্ততা সৃষ্টি হবে, যে সে আর সংসারে থাকে পারবে না। তবে সুখের কথা হচ্ছে, সেই একমুখী রুদ্রাক্ষ অতিদুর্লভ, একমাত্র নেপালে সেটি পাওয়া যায়। তাও সাধারণমানুষ এটি সংগ্রহ করে কাছে রাখতে পারবে না। এই নাকি রাজ্ পরিবারের সম্পত্তি।
দ্বিতীয় কারন হচ্ছে, সাধুদেরকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় রাত কাটাতে হয়। এই বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে শরীরকে মানিয়ে নেবার জন্য, এই রুদ্রাক্ষ আমাদের সূক্ষ্ম দেহ বা লিঙ্গাদেহকে সাহায্য করে। ফলে, দেহ সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে। রুদ্রাক্ষের মালা শরীরকে উর্জা শক্তি সংগ্রহ করতে সাহায্য করে, তাই তারা ক্লান্তিহীন জীবন কাটাতে পারে। অর্থাৎ রুদ্রাক্ষের মালা ধারণকারীকে বিশ্বশক্তিতে পূর্ন রাখতে সাহায্য করে।
তৃতীয় কারণ : এঁরা যেখানে যা পায় তাই খায়। আপনার শরীরের পক্ষে অনুপযোগী কোনো খাবারের এমনকি জলের উপরে যদি রুদ্রাক্ষের মালা রাখেন অর্থাৎ মালাটা উঁচু করে ধরেন, তবে উপযুক্ত খাদ্যের উপরে মালা ক্লকওয়াইজ ঘুরবে, খারাপ বা বিষাক্ত খাবার হলে মালা এন্টি ক্লক ওয়াইজ, ঘুরবে। ফলতঃ সাধুরা খাবার গ্রহণে সতর্ক হতে পারবে। রুদ্রাক্ষের মালা ধারণকারী সাধারণ-মানুষের থেকে অনেক বেশি সময় না খেয়ে থাকতে পারে। অর্থাৎ ক্লান্তিহীন জীবনের জন্য, এই মালা খুব উপকারী।এছাড়া এঁরা অনেক সময় জলে, জঙ্গলে, পাহাড়ে ঘুরে বেড়ান। সেখানে সাহসী থাকবার জন্য, এমনকি হিংস্র জীব জন্তুদের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য , এই রুদ্রাক্ষ নাকি অব্যর্থ কাজ করে।
চতুর্থ কারন : এই মালা ধারণ করলে যেমন একাগ্রতা বাড়ে, তেমনি ধ্যানস্থ অবস্থায় শরীরে কোনো ক্ষিদেবোধ থাকে না, ফলত যতক্ষন ইচ্ছে ধ্যানে নিমগ্ন থাকা যায়।
এই রুদ্রাক্ষের মালাতেও ব্রাহ্মণ পন্ডিতগণ জাত-পাতের ব্যবস্থা করে রেখেছে। এই রুদ্রাক্ষ চারটি রঙে পাওয়া যায়। ১. শ্বেতবর্ণ, ২. রক্তবর্ণ, ৩. পিত্ বা হলুদবর্ন ৪. কালো বা শ্যামবর্ণ। বলা হয়ে থাকে - এই শ্বেতবর্ণ বা সাদা রঙের রুদ্রাক্ষ ব্রাহ্মণগণ ধারণ করবেন . রক্ত বা লাল আভাযুক্ত রুদ্রাক্ষ ক্ষত্রিয়গন ধারণ করবেন। পিত্ বা হলুদ আভাযুক্ত রুদ্রাক্ষ বৈশ্যগন ধারণ করবেন। আর শ্যাম বা কালো রঙের আভাযুক্ত রুদ্রাক্ষ শূদ্র-জাতির লোকেরা পরিধান করবে। পন্ডিতদের অসামান্য পান্ডিত্তের জন্য কৃতিত্ত্ব অবশ্যি প্রাপ্য। হাস্যস্কর এই ব্যবস্থা।
আচার্য্য শঙ্কর রুদ্রাক্ষ ধারণ করতেন। এমনকি তার ভাবধারায় যে সব সন্যাসী আছেন, তারা সবাই রুদ্রাক্ষ ধারণ করেন। রামকৃষ্ণ মিশনের সমস্ত সন্যাসীর কাছে এই রুদ্রাক্ষের মালার খুব সমাদর। স্বয়ং শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ প্রত্যেকদিন রুদ্রাক্ষের মালায় জপ্ করতেন। জপ্ শেষে মায়ের পাদপদ্মে এই মালা রেখে দিতেন। স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড় মঠে শরীর ছাড়ার আগে, এই রুদ্রাক্ষের মালা নিয়ে জপে বসেছিলেন। রুদ্রাক্ষের মালা জপ্ করতে করতেই তার মহাসমাধি হয়েছিল। ভারত সেবাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা, শ্রী শ্রী প্রনাবন্দ এই রুদ্রাক্ষের মালা ধারণ করতেন। এবংসবাইকে ধারণ করতে বলতেন। স্বামী ত্রৈলঙ্গস্বামী, ভোলানন্দ গিরি, বালানন্দ ব্রহ্মাচারী, স্বামী নিগমানন্দ, বাবা লোকনাথ, সাধক রামপ্রসাদ, কমলাকান্ত, বামাক্ষ্যাপা, আনন্দময়ী মা, প্রভৃতি সাধক সাধিকা, এমনকি অনেক রাজনৈতিক নেতা নেত্রী, যেমন ইন্দিরাগান্ধী এই রুদ্রাক্ষের মালা ধারণ করতেন।যা তিনি সাধিকা আনন্দময়ী মায়ের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। ভারতের হাজার হাজার যোগী-সন্যাসী আজও এই রুদ্রাক্ষের মালা জপ্ করেন। বালিগঞ্জে ভারত সেবাশ্রমে গিয়ে দেখেছি, সন্যাসীদের শরীর ছাড়ার পরে, তাদের স্মৃতি জড়িত ঘরে, সেই রুদ্রাক্ষের দর্শন পাই, যা তিনি ব্যবহার করতেন। জানিনা এঁরা সবাই জাত পাতের বিচার বা হিসাব করে রুদ্রাক্ষ ধারণ করতেন কি না। আসলে সমস্ত জাতির লোক তা সে ব্রাহ্মণ হোক বা চণ্ডাল হোক, গুণবান হোক বা গুণহীন হোক, রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে, দ্রব্য বা ফলের গুন্ ধারণকারীকে আশ্রয় করবে, এব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এটা সত্য যে, প্রকৃতির যে কোনো দ্রব্য বা ব্যক্তি কিছু না কিছু গুন্ তার চারিদিকে বিচ্ছুরিত করছে। তন্মাত্রার মধ্যে এই সব গুন্ মিশে যায় এবং কাছাকাছি জিনিস বা ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে। তা সে আপনি বিশ্বাস করুন আর না করুন, ঔষধের গুন্ আপনাকে প্রভাবিত করবে। তা সে ঔষধের গুন্ আপনি জেনেই খান আর না জেনেই খান।
এখন কথা হচ্ছে, সাধুরা ভগবানকে পাবার জন্য, বা রমতা জীবন কাটানোর জন্য রুদ্রাক্ষ ধারণ করেন, এটা না হয় বোঝা গেল। কিন্তু সাধারণের জন্য, রুদ্রাক্ষ ধারনের কি আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে ? দেখুন রুদ্রাক্ষের প্রশংসা শুধু হিন্দু শাস্ত্রে বা পূরাণে আছে তাই নয়, বর্তমানে, ইউরোপ ও আমেরিকাতে পর্যন্ত এই রুদ্রাক্ষের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। ঐসব দেশে, রুদ্রাক্ষের অলৌকিক এবং ঔষধীয় গুন্ সমূহের সম্পর্কে নিত্য-নতুন গবেষণা হচ্ছে। এর ফলে, এই অদ্ভুত বুনো ফলের অদ্ভুত শক্তি ও গুন্ সমূহ প্রকাশ হচ্ছে। একজন ব্রিটিশ গবেষক লিখছেন, রুদ্রাক্ষের দ্বারা অসম্ভব কাজকেও সম্ভব করা যেতে পারে। ভ্রমনকারী ব্যক্তির পথের বাঁধা দূর হতে পারে। মানুষ কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করতে পারে। এমনকি তারা বলছেন, রুদ্রাক্ষের দ্বারা জীবনের দিশার পরিবর্তন হতে পারে। আমেরিকার গবেষক শ্রীমতি সুসন একটি গবেষণা পত্রে লিখছেন, রুদ্রাক্ষের প্রয়োগে ইপ্সিত সন্তান লাভ করা যেতে পারে। শারীরিক দুঃসাধ্য রোগ নিরাময় হতে পারে। আসলে রুদ্রাক্ষের যে সব আশ্চর্য্যগুন্ নিহিত আছে, তা এখনো অপ্রকাশিত। আমাদের তন্ত্র শাস্ত্রে রুদ্রাক্ষের যে গুনাগুন বলা হয়েছে সেটা একটু শুনুন।
শাস্ত্রে রুদ্রাক্ষ এক থেকে চোদ্দমুখী পর্যন্ত হয়ে থাকে বলে বলা হয়েছে। মুখ অর্থাৎ বাইরে থেকে দেখলে রুদ্রাক্ষের গায়ে চোদ্দটি পর্যন্ত শিরা বা দাগ দেখতে পাওয়া যায়। আসলে রুদ্রাক্ষটি যদি ঠিক মাঝ বরাবর কাটেন তবে দেখতে পাবেন সেখানে চোদ্দটি গর্ত আছে। আর গর্তের মধ্যে চোদ্দটি বীজ আছে। যা থেকে রুদ্রাক্ষ গাছ হতে পারে। তো একেকটা রুদ্রাক্ষ ফলের মধ্যে এমনি এক থেকে চোদ্দটি পর্যন্ত গর্ত দেখা যায়। আপনি যদি রুদ্রাক্ষটাকে এক্সরে (X -REY) করেন, তবে দেখতে পাবেন, রুদ্রাক্ষের মধ্যে এমনিসব গর্ত আছে। যে রুদ্রাক্ষে যতগুলো গর্ত সেই অনুযায়ী বাইরে দাগ দেখা যায়। বা বলা যেতে পারে, সেই রুদ্রাক্ষের ততগুলো কোয়া। এই শিরা বা কোয়া অনুযায়ী রুদ্রাক্ষকে ১৪ ভাগে ভাগ করা হয়। এর এক-একটার এক এক রকম গুন্ বা শক্তি আছে। যেমন :
একমুখী রুদ্রাক্ষ : এটি দুর্লভতম রুদ্রাক্ষ। এই একমুখী রুদ্রাক্ষের দেবতা স্বয়ং শিব। বেশিরভাগ রুদ্রাক্ষ পঞ্চমুখী অর্থাৎ পাঁচটি গর্ত সম্পন্ন হয়ে থাকে। কিন্তু এটিতে কেবলমাত্র একটি গর্ত থাকে। বলা হয়ে থাকে, এই একমুখী রুদ্রাক্ষের দর্শনেও পুন্য হয়। পূজন বা ধারণ করতে পারলেতো কথাই নেই। একমুখী রুদ্রাক্ষ যিনি কাপালজোরে পেয়ে গেছেন, তিনি যে সৌভাগ্যশালী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইনি জীবনের সমস্ত বাধা-বিপত্তি থেকে মুক্ত থাকেন। আধ্যাত্মিক জগতের জ্ঞান ও অনুভূতি তার বিনা আয়াশে হয়ে থাকে। মানুষ জন্ম-জন্মান্তরের সুকৃতির ফলে এই একমুখী রুদ্রাক্ষ লাভ করে থাকেন। এটি পাবার পরে, জীবনে আর কিছু চাইবার থাকে না। যাঁর কাছে এটি আছে,এমনকি যিনি এর পূজা অর্চনা করবার মতো সৌভাগ্য অর্জন করেছেন, তিনি অবশ্য়ই নমস্য। শোনা যায়, অবতার গোরখ্নাথের গুরুদেব, কৌল-অবধূত মৎস্যেন্দ্রনাথের কাছে, অর্থাৎ নেপালের পশুপতিনাথের মন্দিরে এই একমুখী রুদ্রাক্ষ ছিল, এবং এখনো সেটা সুরক্ষিত আছে। ওঁং হ্রীং নমঃ।
গৌরীশঙ্কর রুদ্রাক্ষ ও গনেশ রুদ্রাক্ষ : এই একমুখী রুদ্রাক্ষের সাথে,আরো দুটি রুদ্রাক্ষের কথা বলবো, যা প্রকৃতির এক অপূর্ব এবং আশ্চর্য্য সৃষ্টি। যার মধ্যে একটি হচ্ছে, গৌরী শঙ্কর রুদ্রাক্ষ, ও অন্যটি গনেশ রুদ্রাক্ষ। এই রুদ্রাক্ষ দুটি প্রাকৃতিক ভাবে একটু অন্য রকম। প্রথমটি অর্থাৎ গৌরীশঙ্কর রুদ্রাক্ষ আসলে দুটি রুদ্রাক্ষের প্রাকৃতিক মিশ্রণ। প্রাকৃতিক ভাবে দুটি রুদ্রাক্ষ একত্রে জোড়া থাকে। এটি বিভিন্ন মুখী হতে পারে। অর্থাৎ দুই বা তাতোধিক গর্ত থাকতে পারে এর ভিতরে। ভাগ্যক্রমে যদি এটি দুটি শিরা ওয়ালা হয় তবে এটি একমুখী রুদ্রাক্ষের মতো কাজ করে। গৌরীশঙ্কর রুদ্রাক্ষের পূজা হয়। এটি ধারণযোগ্য নয়।
গনেশ রুদ্রাক্ষ সাধারণতঃ একটাই রুদ্রাক্ষ কিন্তু এই রুদ্রাক্ষের গায়ে একটি গনেশের শুরের মতো দেখতে পাওয়া যায়। এটিও বিভিন্ন মুখী হতে দেখা যায়, বেশিরভাগই ৫ মুখী। তবে এটি যে কোনো মুখী হতে পারে। আসলে এটি যতমুখী হবে সেই অনুযায়ী ফল দান করবে। এটির দেবতা শ্রী শ্রীগণেশ। এই গনেশ রুদ্রাক্ষের সাধারণত পূজা করা হয়। এটি ধারণ করা হয় না।
No comments:
Post a Comment