প্রণব মন্ত্র
প্রণব মন্ত্র
প্রণব কথাটার অর্থ ঈশ্বরের জপ্ । আমাদের অজ্ঞাতসারেই আমরা জন্ম থেকেই প্রণব মন্ত্র উচ্চারণ করি। প্রণব কথাটার আর একটা মানে প্রতিনিয়ত নতুন। কথিত আছে ব্রহ্মা সৃষ্টির প্রারম্ভে এই প্রণব মন্ত্র উচ্চারণ করেছিলেন। আর এই প্রণব থেকেই সমস্ত সৃষ্টি। অতএব ব্রহ্মা যদি আমাদের পিতা হন তবে প্রণব আমাদের আদি মাতা।এই প্রণবের গর্ভেই আমাদের সবার জন্ম। আবার প্রণব কথাটার আর একটা মানে হচ্ছে যা উচ্চারণ করে স্তব করা হয় তাকেই বলে প্রণব। বেদের মূল এই প্রণব। অর্থাৎ সমস্ত শব্দের মূল এই প্রণব। আমরা এমনকি সমস্ত জীব জগৎ, জ্ঞাতসারে, অজ্ঞাতসারে, এই প্রনব দিয়েই জীবনের প্রথম শব্দ উচ্চারণ করি। যা আসলে ঈশ্বরের জপ্। সমস্ত জীব জগৎ যে ভাষায় কথা বলে তাকে বলে বৈজিক ভাষা। সমস্ত ভাষার বীজ এই বৈজিক ভাষা। বৈজিক থেকে বৈদিক, গ্রিক, হিব্রু, ল্যাটিন ইত্যাদি ভাষার জন্ম হয়। এই বৈজিক ভাষাতেই সমস্ত জীব কথা বলে বা মনের ভাব প্রকাশ করে। প্রণব বা ওং এই বৈজিক ভাষার উচ্চারিত ধ্বনি ।
সনাতন হিন্দুদের কাছে প্রণব মন্ত্রের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ও বাধ্যতামূলক। আমাদের সবার বীজ মন্ত্র প্রণবপুত হওয়া জরুরী। নতুবা বীজ মন্ত্রের শক্তি অপ্রকাশিত থাকে। অবশ্য হিন্দু ব্রাহ্মণ পন্ডিতগণ এখানেও জাতপাতের ব্যাপারটা নিপুন ভাবে প্রয়োগ করেছেন। তান্ত্রিক সন্ধ্যা পদ্ধতির এক জায়গায় পড়ছিলাম স্ত্রী ও শূদ্রদের ওঁ বা ওম উচ্চারন করার অধিকার নেই। তারা বলবে "ঔং"অর্থাৎ দীর্ঘ প্রণব। যজুর্বেদীয় তর্পন পদ্ধতিতেও বলা আছে, শূদ্রগন "ওঁ" না বলে "নমঃ" বলবে।
যাই হোক, "ওম ". কথাটাকে ভাঙলে দাঁড়ায় অ-উ-ম। সনাতন হিন্দু মতে, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর অর্থাৎ সৃষ্টি, স্থিতি, লয় এর কর্তা। আবার সত্ত্বঃ, রজঃ, তমঃ এই তিন গুনের প্রতীক হচ্ছে "ওম"। কিন্তু কেউ কেউ বলেন, অ-আ-উ-ম্ এই চারটি বর্ণ নিয়ে প্রণব গঠিত। আবার কেউ কেউ বলেন, প্রণব পাঁচ অক্ষরের মিলন। অর্থাৎ অ -আ -উ -ঊ -ম অর্থাৎ ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুত, ব্যোম।
আবার প্রণব লেখাও হয় - চার রকম বানানে -ওম , ওঁ, ওং, ওঁং।
এর কারন কী ? ওম আসলে কত অক্ষরের মিলন তা আমরা একটু দেখে নেবো।
ওম-কে বলা হয় অক্ষর ব্রহ্ম। এঁকে একাক্ষর বলা যেতে পারে। অর্থাৎ অনুস্বার, চন্দ্রবিন্দু এগুলোকে বর্ণ থেকে বাদ দিয়ে এক অক্ষর বলা যেতে পারে। সত্যি কথা বলতে কি স্বরই পূর্ণ বর্ণ। কেবল স্বরেই পূর্ণমাত্রা আছে। ব্যঞ্জন পূর্ণ বর্ণ নহে। স্বর, স্বয়ং উচ্চারিত হতে পারে। কিন্তু ব্যঞ্জন, অন্যকে আশ্রয় করে উচ্চারিত হয়। সুতরং ও এবং ম্ এই দুটিতে মিলিত হয়ে যে ওম বা ওং হয়েছে, এঁকে এক বর্ণ বা এক অক্ষর বলা যেতে পারে। অতএব ব্যঞ্জন ও একটি স্বর একত্র থাকলে, এই দুটিকে একটি বর্ণ বলা হয়। অর্থাৎ প্রণব এক-অক্ষর, আবার দুই-তিন-চার-পাঁচ অক্ষর বলে বর্ণনা করা হয়।
এর কারন কী ? ওম আসলে কত অক্ষরের মিলন তা আমরা একটু দেখে নেবো।
ওম-কে বলা হয় অক্ষর ব্রহ্ম। এঁকে একাক্ষর বলা যেতে পারে। অর্থাৎ অনুস্বার, চন্দ্রবিন্দু এগুলোকে বর্ণ থেকে বাদ দিয়ে এক অক্ষর বলা যেতে পারে। সত্যি কথা বলতে কি স্বরই পূর্ণ বর্ণ। কেবল স্বরেই পূর্ণমাত্রা আছে। ব্যঞ্জন পূর্ণ বর্ণ নহে। স্বর, স্বয়ং উচ্চারিত হতে পারে। কিন্তু ব্যঞ্জন, অন্যকে আশ্রয় করে উচ্চারিত হয়। সুতরং ও এবং ম্ এই দুটিতে মিলিত হয়ে যে ওম বা ওং হয়েছে, এঁকে এক বর্ণ বা এক অক্ষর বলা যেতে পারে। অতএব ব্যঞ্জন ও একটি স্বর একত্র থাকলে, এই দুটিকে একটি বর্ণ বলা হয়। অর্থাৎ প্রণব এক-অক্ষর, আবার দুই-তিন-চার-পাঁচ অক্ষর বলে বর্ণনা করা হয়।
ওম আসলে দুটো অক্ষরে লেখা হয় অর্থাৎ ও এবং ম অথবা ও এবং" ঁ" বা "ং" তাই এঁকে দুই অক্ষরের মিলন বলা যেতে পারে। অর্থাৎ নিষ্ক্রিয় বা নির্গুণ ব্রহ্ম এবং সক্রিয় বা সগুন ব্রহ্ম।
তবে সব থেকে প্রচলিত অর্থ যেটা আমরা জানি তা হচ্ছে, অ, উ, ম - এই তিনটি বর্ণ নিয়ে ওম বা ওঁ অর্থাৎ সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়ের কর্তা (ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর ) .
.
কিন্তু কেউ কেউ বলেন, অ-আ-উ-ম্ এই চারটি বর্ণ নিয়ে প্রণব গঠিত। তাঁরা বলেন, অ-কার হচ্ছে পালন কর্তা , আ-কার হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা অর্থাৎ ব্রহ্ম, উ কারে লয়-কর্তা অর্থাৎ তমোগুণাত্মক ব্রহ্ম এবং ম বা ং (অনুস্বার) শব্দে পরব্রহ্ম অর্থাৎ গুণাতীত ব্রহ্ম। আর চন্দ্রবিন্দু হচ্ছে স্বরের অনুনাসিকত্ব জ্ঞাপক।
আবার কেউ বলেন ওং পঞ্চবর্নাত্বক অর্থাৎ অ-আ-উ-ঊ-ম অর্থাৎ পঞ্চভূতের (ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম )-এর প্রতীক বলা যেতে পারে।
এইখানে একটা কথা আমি বলি। প্রণব অর্থাৎ ওম, বা ওং বা ওঁ বা ওঁং। একটা জিনিষ খেয়াল করুন, ও এর সঙ্গে ম বা ং বা ঁ যোগ করা আছে -। "ম" অর্থাৎ মহেশ্বর বা কারুর কারুর, কথায় পরব্রহ্ম বা গুনাতীত ব্রহ্ম . কিন্তু,এই অনুস্বার বা চন্দ্রবিন্দু এর অর্থ কি ? বীজ মন্ত্রের অর্থ খুঁজতে গিয়ে দেখেছি ঁ (চন্দ্রবিন্দু ) হচ্ছে দুঃখ হরাত্মক বাচক। আর ং ( অনুস্বর ) হচ্ছে সুখপ্রদ ও দুঃখনাশন।
যাই হোক, ওম , ওঁ, ওং, ওঁং - এই চারটিই প্রণব বাচক।
প্রথম "ওম" প্রনবটি তমোগুণের প্রতিপাদক, তাই জ্ঞানীরা ব্যবহার করেন না।
দ্বিতীয় প্রণব অর্থাৎ ওঁ নৈসর্গিক ঘটনায় শোনা যায়। বহু শাস্ত্রে, এই প্রণবের ব্যবহার পাওয়া যায়।
তৃতীয় প্রণব অর্থাৎ ওং কার ত্রিদেবাত্মক অর্থাৎ ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের প্রতীক। অনেকেই এটির ব্যবহার করেছেন।
চতুর্থ প্রণব অর্থাৎ ওঁং এর কথা প্রায় শোনা যায় না। তার কারন হচ্ছে - যাদের সগুন সাধনা সমাপ্ত না হয়েছে, তাদের পক্ষে এর ব্যবহার শক্তির অধিক কাজ বলে নির্দিষ্ট হয়। যাদের ভিতর থেকে জাতিভেদ জ্ঞান দূর হয় নাই, নির্গুণ সাধনার যোগ্য হন নাই, তাদের পক্ষে এই চতুর্থ প্রণব ব্যবহার করা উচিত নয়।
"ওঁং" বানানের প্রতিধ্বনি পাই শিব পূরণে। সেখানে ভগবান শিব, ব্রহ্মা ও বিষ্ণুকে বলছেন : আমার পাঁচটা মুখ। আর তা হচ্ছে সৃষ্টি, পালন, সংহার, তিরোভাব এবং অনুগ্রহ। সৃষ্টি ভূমিতে, স্থিতি জলে,সংহার অগ্নিতে, তিরোভাব বায়ুতে,অনুগ্রহ আকাশে স্থিত। পৃথিবী থেকে সৃষ্টি, জল থেকে বৃদ্ধি, অগ্নিতে সংহার, বায়ুতে স্থানান্তর আর আকাশ সকলকে অনুগ্রহিত করে। সর্বপ্রথম আমার মুখ থেকে ওঁংকার উদ্গারিত হয়। উত্তরদিকের মুখ থেকে অকার, পশ্চিম মুখ থেকে উকার, দক্ষিণ মুখ থেকে মকার, পূর্ব মুখ থেকে বিন্দু (ঁ) মধ্যের মুখ থেকে নাদ (ং) উচ্চারিত হয়েছে। এইভাবে পাঁচ অবয়ব দ্বারা "ওঁং"কার বিস্তারিত হয়েছে।
বেশিরভাগ পন্ডিতদের মতে, প্রণব আসলে ত্রিবর্ণাত্মক। আ বর্ণটি প্রথমটির অর্থাৎ অ এর উচ্চারণ ভেদ মাত্র।
বেশিরভাগ পন্ডিতদের মতে, প্রণব আসলে ত্রিবর্ণাত্মক। আ বর্ণটি প্রথমটির অর্থাৎ অ এর উচ্চারণ ভেদ মাত্র।
প্রণবকে ত্রিবর্ণাত্মক, অর্থাৎ সত্ত্ব, রজ, তম গুনের প্রতীক বলা যেতে পারে। আবার পঞ্চবর্নাত্বক অর্থাৎ অ-আ-উ-ঊ-ম অর্থাৎ পঞ্চভূতের (ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম )-এর প্রতীক বলা যেতে পারে।
আবার একাক্ষর বলা যেতে পারে। অর্থাৎ অনুস্বার, চন্দ্রবিন্দু এগুলোকে বর্ণ থেকে বাদ দিয়ে এক অক্ষর বলা যেতে পারে। সত্যি কথা বলতে কি স্বরই পূর্ণ বর্ণ। কেবল স্বরেই পূর্ণমাত্রা আছে। ব্যঞ্জন পূর্ণ বর্ণ নহে। স্বর, স্বয়ং উচ্চারিত হতে পারে। কিন্তু ব্যঞ্জন, অন্যকে আশ্রয় করে উচ্চারিত হয়। সুতরং ও এবং ম্ এই দুটিতে মিলিত হয়ে যে ওম বা ওং হয়েছে, এঁকে এক বর্ণ বা এক অক্ষর বলা যেতে পারে। অতএব ব্যঞ্জন ও একটি স্বর একত্র থাকলে, এই দুটিকে একটি বর্ণ বলা হয়।
স্রষ্টা-সৃষ্টি-সৃষ্ট এ তিনই এক। কিন্তু এ সব কথা যতক্ষন সাধকের ব্রহ্মজ্ঞান না জন্মায় অর্থাৎ এক ব্রহ্মর জ্ঞান না জন্মায় ততক্ষন অনুধাবন করা যায় না। এইজন্য, যেমন সাধক, সে অনুযায়ী সে বোঝে বা তাকে সেইভাবে বোঝানো হয়।
প্রণব অসীম শক্তির আধার। এই শক্তি অজ্ঞানীর কাছে সুপ্ত। জ্ঞানীর কাছে উদ্ভাসিত।
"ওম" বা প্রণবের মাহাত্য ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। অবিরত জপ্-ই এর উত্তর দিতে পারে।
এইবার প্রণব সম্পর্কে সুপ্ত সত্য কথা বলবো, প্রণব আসলে একটা ধ্বনি।জীবনরূপ অগ্নি ও প্রাণরূপ বায়ুর মিথুনে বা সংঘর্ষে এই ব্রহ্ম-শব্দ উৎপত্তি হয়েছে। এটি অর্থবহ শব্দ নয়। এই ধ্বনির কোনো অর্থ হয় না। পন্ডিতরা যে যার মতো করে অর্থ বের করেছেন।এই ধ্বনি প্রতিনিয়ত উদ্গীথ হচ্ছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে সর্বত্র, ও সর্বদা। ধ্যানস্থ হয়ে কান পাতলে এই শব্দ শোনা যায়। এবার, ধ্বনি বা শব্দ সৃষ্টির রহস্যঃ একটু দেখে নেই।
ওম নমঃ শিবায়ঃ।
স্রষ্টা-সৃষ্টি-সৃষ্ট এ তিনই এক। কিন্তু এ সব কথা যতক্ষন সাধকের ব্রহ্মজ্ঞান না জন্মায় অর্থাৎ এক ব্রহ্মর জ্ঞান না জন্মায় ততক্ষন অনুধাবন করা যায় না। এইজন্য, যেমন সাধক, সে অনুযায়ী সে বোঝে বা তাকে সেইভাবে বোঝানো হয়।
প্রণব অসীম শক্তির আধার। এই শক্তি অজ্ঞানীর কাছে সুপ্ত। জ্ঞানীর কাছে উদ্ভাসিত।
"ওম" বা প্রণবের মাহাত্য ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। অবিরত জপ্-ই এর উত্তর দিতে পারে।
এইবার প্রণব সম্পর্কে সুপ্ত সত্য কথা বলবো, প্রণব আসলে একটা ধ্বনি।জীবনরূপ অগ্নি ও প্রাণরূপ বায়ুর মিথুনে বা সংঘর্ষে এই ব্রহ্ম-শব্দ উৎপত্তি হয়েছে। এটি অর্থবহ শব্দ নয়। এই ধ্বনির কোনো অর্থ হয় না। পন্ডিতরা যে যার মতো করে অর্থ বের করেছেন।এই ধ্বনি প্রতিনিয়ত উদ্গীথ হচ্ছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে সর্বত্র, ও সর্বদা। ধ্যানস্থ হয়ে কান পাতলে এই শব্দ শোনা যায়। এবার, ধ্বনি বা শব্দ সৃষ্টির রহস্যঃ একটু দেখে নেই।
আমরা জানি, ধ্বনি চার প্রকার, পরা, পশ্যন্তী, মধ্যমা ও বৈখরী।
শব্দের বা স্বরের উৎপত্তি হচ্ছে পরা - আমাদের শরীরের ক্ষেত্রে এটি মূলাধার। এই মূলাধারে আছে বায়ুশক্তি বা উর্জা শক্তি।সৃষ্টিতত্ত্বের এখানেই অবস্থান। এইখানেই ধ্বনির উৎপত্তি। পরা কথাটার অর্থ হচ্ছে উচ্চ। অর্থাৎ ধ্বনির সর্বোচ্চ পর্যায়, যা আমাদের গোচরীভূত নয়।
এর পরে আছে পশ্যন্তি : এটি আমাদের নাভিমূল। যার জন্য কেউ কেউ বলে থাকেন, প্রণব নাভি থেকে উৎপন্ন শব্দ।আমাদের নাভিচক্রের বায়ু থেকে আসে। শোনা যায় যোগীরা এই ধ্বনি শুনতে পান। একে বলে নাদব্রহ্ম।
ধ্বনি এর পরে, নাভি থেকে চলে আসে হৃদয়ে। এখানকার অবস্থানে ধ্বনিকে বলা হয়, মধ্যমা। হৃদয়ের বায়ুচক্রে যখন ধ্বনি অবস্থান করে, তখন তাকে বলে মধ্যমা। এটিও সূক্ষ্ম। তাই হৃদয়ের ডাক সবাই শুনতে পায় না।
এরপরে, কন্ঠে - যেখান থেকে ধ্বনির উৎপত্তি বলে সাধারণের ধারণা। আসলে এই পর্যায়ে এসে ধ্বনি শব্দে পরিণত হয়ে যায়। এই ধ্বনি বা শব্দ আমরা শুনতে পাই। একে বলে বৈখরী।
এবার বিশ্বব্রহ্মান্ডকে যদি আমরা বিরাট পুরুষের দেহ বলে কল্পনা করি, তবে দেখতে পাবো, সেই বিরাট পুরুষের মূল ঊর্যাশক্তি থেকে এই ধ্বনির উৎপত্তি। এটি সৃষ্টির সূচক মাত্র। এর কোনো অর্থ হয় না। কেবল গুন্ বর্তমান।
দ্রব্যের যেমন গুন্ বা শক্তি আছে, শব্দেরও তেমনি শক্তি আছে। ভালো সুর শুনলে আমাদের মন মোহিত হয়। আবার বাজির শব্দে বা বজ্রের শব্দে আমাদের মন চমকে ওঠে।
শব্দ দুই রকম : ধ্বনি ও বর্ণ। ধ্বনি অর্থবহ নয়। যেমন বিভিন্ন বাদ্যের বাজনা।কাঁসর ঘন্টা,বাঁশির সুর, বজ্রের ধ্বনি। মেঘের ডাক। ইত্যাদি। তেমনি প্রণব অর্থবহ নয়। প্রণব ধ্বনি, তাই অর্থবহ নয়।
বর্ণ কিন্তু অর্থবহ। মানুষ এই বর্ণের সাহায্যেই কথা বলে। তাই অর্থবহ। বর্ণ আবার দুই প্রকার ব্যঞ্জন বর্ণ ও স্বরবর্ণ। স্বরবর্ণ নিজে থেকে উচ্চারিত হতে পারে। কিন্তু ব্যঞ্জন বর্ণ স্বরবর্ণের সাহায্যে উচ্চারিত হয়।
আমাদের মুনি ঋষিরা ধ্বনি ও শব্দ, উভয়ের মাহাত্য দিয়েছেন। বেদে ধ্বনির মাহাত্য। এইজন্য বেদের সূক্ত বা শ্লোকের উচ্চারণের প্রতি বিশেষ গুরুত্ত্ব দেওয়া হয়েছে। এই জন্য এঁকে শ্রূতি বিদ্যা বলা হয়েছে। অর্থাৎ এটি একমাত্র গুরুমুখে শুনেই শেখা বা আয়ত্ত্ব করা যায়।
অগ্নি ও বায়ুর মিশ্রনে বর্ণের সৃষ্টি। বর্ন আর কিছুই নয় আলোর বিন্দুর সমষ্টি। পরাবিদ্যাবিদ-গন বলছেন, দেবতারা যখন কথা বলেন, তখন এক আলোর আভা দেখতে পাওয়া যায়। তাই ওম হচ্ছে আদি ধ্বনি, এটি অর্থবহ নয়।অগ্নিতত্ত্ব ও বায়ুতত্ত্বের মিশ্রনে এই প্রণবের উৎপত্তি। যে যার মতো করে আমরা অর্থ দিয়েছি মাত্র।
ফলাফল :
এবারে আমরা ছান্দোগ্য উপনিষদের থেকে জেনে নেবো প্রণব জপ্ করলে কি হয় ?ছান্দোগ্য উপনিষদের প্রথম পাঁচটা অধ্যায় আছে এই প্রণব সন্মন্ধে।
দেখুন, ঈশ্বর নিরাকার, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়। আমাদের মতো সাধারণের পক্ষে তাঁর সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভবই নয়। সেই জন্য আমাদের পক্ষে সকাম উপাসনা করা ভালো। সকাম উপাসনা করলে আমাদের ধন, স্বাস্থ্য, সুনাম, ক্ষমতা ইত্যাদি, এমনকি স্বর্গলাভও হতে পারে। কিন্তু শাশ্বত শান্তি বা আনন্দ এতে পাওয়া যাবে না। একমাত্র আত্মজ্ঞান লাভই শাশ্বত শান্তির পথ বা মুক্তির পথ। এরই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে উদ্গীথ বা "ওম" আবৃত্তি বা জপ করতে বলা হয়েছে।
ছান্দোগ্য উপনিষদ বলছে :
প্রণব সর্ব্ব শক্তির আধার, তা সে জাগতিক বলুন আর আধ্যাত্মিক বলুন।শব্দের বা স্বরের উৎপত্তি হচ্ছে পরা - আমাদের শরীরের ক্ষেত্রে এটি মূলাধার। এই মূলাধারে আছে বায়ুশক্তি বা উর্জা শক্তি।সৃষ্টিতত্ত্বের এখানেই অবস্থান। এইখানেই ধ্বনির উৎপত্তি। পরা কথাটার অর্থ হচ্ছে উচ্চ। অর্থাৎ ধ্বনির সর্বোচ্চ পর্যায়, যা আমাদের গোচরীভূত নয়।
এর পরে আছে পশ্যন্তি : এটি আমাদের নাভিমূল। যার জন্য কেউ কেউ বলে থাকেন, প্রণব নাভি থেকে উৎপন্ন শব্দ।আমাদের নাভিচক্রের বায়ু থেকে আসে। শোনা যায় যোগীরা এই ধ্বনি শুনতে পান। একে বলে নাদব্রহ্ম।
ধ্বনি এর পরে, নাভি থেকে চলে আসে হৃদয়ে। এখানকার অবস্থানে ধ্বনিকে বলা হয়, মধ্যমা। হৃদয়ের বায়ুচক্রে যখন ধ্বনি অবস্থান করে, তখন তাকে বলে মধ্যমা। এটিও সূক্ষ্ম। তাই হৃদয়ের ডাক সবাই শুনতে পায় না।
এরপরে, কন্ঠে - যেখান থেকে ধ্বনির উৎপত্তি বলে সাধারণের ধারণা। আসলে এই পর্যায়ে এসে ধ্বনি শব্দে পরিণত হয়ে যায়। এই ধ্বনি বা শব্দ আমরা শুনতে পাই। একে বলে বৈখরী।
এবার বিশ্বব্রহ্মান্ডকে যদি আমরা বিরাট পুরুষের দেহ বলে কল্পনা করি, তবে দেখতে পাবো, সেই বিরাট পুরুষের মূল ঊর্যাশক্তি থেকে এই ধ্বনির উৎপত্তি। এটি সৃষ্টির সূচক মাত্র। এর কোনো অর্থ হয় না। কেবল গুন্ বর্তমান।
দ্রব্যের যেমন গুন্ বা শক্তি আছে, শব্দেরও তেমনি শক্তি আছে। ভালো সুর শুনলে আমাদের মন মোহিত হয়। আবার বাজির শব্দে বা বজ্রের শব্দে আমাদের মন চমকে ওঠে।
শব্দ দুই রকম : ধ্বনি ও বর্ণ। ধ্বনি অর্থবহ নয়। যেমন বিভিন্ন বাদ্যের বাজনা।কাঁসর ঘন্টা,বাঁশির সুর, বজ্রের ধ্বনি। মেঘের ডাক। ইত্যাদি। তেমনি প্রণব অর্থবহ নয়। প্রণব ধ্বনি, তাই অর্থবহ নয়।
বর্ণ কিন্তু অর্থবহ। মানুষ এই বর্ণের সাহায্যেই কথা বলে। তাই অর্থবহ। বর্ণ আবার দুই প্রকার ব্যঞ্জন বর্ণ ও স্বরবর্ণ। স্বরবর্ণ নিজে থেকে উচ্চারিত হতে পারে। কিন্তু ব্যঞ্জন বর্ণ স্বরবর্ণের সাহায্যে উচ্চারিত হয়।
আমাদের মুনি ঋষিরা ধ্বনি ও শব্দ, উভয়ের মাহাত্য দিয়েছেন। বেদে ধ্বনির মাহাত্য। এইজন্য বেদের সূক্ত বা শ্লোকের উচ্চারণের প্রতি বিশেষ গুরুত্ত্ব দেওয়া হয়েছে। এই জন্য এঁকে শ্রূতি বিদ্যা বলা হয়েছে। অর্থাৎ এটি একমাত্র গুরুমুখে শুনেই শেখা বা আয়ত্ত্ব করা যায়।
অগ্নি ও বায়ুর মিশ্রনে বর্ণের সৃষ্টি। বর্ন আর কিছুই নয় আলোর বিন্দুর সমষ্টি। পরাবিদ্যাবিদ-গন বলছেন, দেবতারা যখন কথা বলেন, তখন এক আলোর আভা দেখতে পাওয়া যায়। তাই ওম হচ্ছে আদি ধ্বনি, এটি অর্থবহ নয়।অগ্নিতত্ত্ব ও বায়ুতত্ত্বের মিশ্রনে এই প্রণবের উৎপত্তি। যে যার মতো করে আমরা অর্থ দিয়েছি মাত্র।
ফলাফল :
এবারে আমরা ছান্দোগ্য উপনিষদের থেকে জেনে নেবো প্রণব জপ্ করলে কি হয় ?ছান্দোগ্য উপনিষদের প্রথম পাঁচটা অধ্যায় আছে এই প্রণব সন্মন্ধে।
দেখুন, ঈশ্বর নিরাকার, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়। আমাদের মতো সাধারণের পক্ষে তাঁর সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভবই নয়। সেই জন্য আমাদের পক্ষে সকাম উপাসনা করা ভালো। সকাম উপাসনা করলে আমাদের ধন, স্বাস্থ্য, সুনাম, ক্ষমতা ইত্যাদি, এমনকি স্বর্গলাভও হতে পারে। কিন্তু শাশ্বত শান্তি বা আনন্দ এতে পাওয়া যাবে না। একমাত্র আত্মজ্ঞান লাভই শাশ্বত শান্তির পথ বা মুক্তির পথ। এরই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে উদ্গীথ বা "ওম" আবৃত্তি বা জপ করতে বলা হয়েছে।
ছান্দোগ্য উপনিষদ বলছে :
ওম-ইত্যে-তদ্-অক্ষরম-উদগীথম-উপাসিত : অর্থাৎ উদ্গীথ শব্দ-বাচ্য "ওম" এই অক্ষরকে উপাসনা করবে।
ওম-ইতি উদগায়তি : ওম দিয়েই উদ্গীথ গান করা হয়। (উদ্গাতার গেয় অংশই উদ্গীথ।)
বাক্ ও প্রাণ যখন মিলিত হয় তখন উদ্গীথ জন্ম নেয়। এই উদ্গীথ - এর বর্ণাত্মক অক্ষরই ওম বা ওঁ।
"ওম" সম্মতিসূচক শব্দ। ওম অর্থাৎ হ্যাঁ। ওম সমস্তকিছুর উৎস। সূর্য্য
আচার্য্য চানক্য বলছেন, বেদে "ওম" কে পরব্রহ্ম বলে স্বীকার করা হয়েছে। এই "ওম" শব্দের সঠিক প্রয়োগে, ও জ্ঞান অর্জনের দ্বারা, স্বর্গলোক এমনকি এই পার্থিব জগতের সমস্ত কিছুই লাভ করা যায়।
প্রণব সন্মন্ধে শব্দের বিরাম দেব। শেষ করার আগে শুধু একটা কথা বলবো : আচার্য্য চানক্য বলছেন, বেদে "ওম" কে পরব্রহ্ম বলে স্বীকার করা হয়েছে। এই "ওম" শব্দের সঠিক প্রয়োগে, ও জ্ঞান অর্জনের দ্বারা, স্বর্গলোক এমনকি এই পার্থিব জগতের সমস্ত কিছুই লাভ করা যায়।
ওম নমঃ শিবায়ঃ।
No comments:
Post a Comment