সত্যধর্ম ও প্রেম
বাড়িতে বসে পুরোনো বই ঘাঁটছিলাম। হঠাৎ নজরে এলো "সত্যবার্তা" নামে সত্যধর্ম্ম মহামণ্ডলের একটা পত্রিকা। ৫ম সংখ্যা বৈশাখ (মিলনোৎসব) ১৪০৪ সাল, ১১২ সত্যাব্দ। সেখানে একদম শেষের পাতায় (১৯) শ্রী অশ্বিনী কুমার রানার একটি অসাধারণ আত্ম্বিশ্লেষণ-মূলক রচনা আছে । সেখানে শ্রী অশ্বনীবাবু বলছেন :
"কিছুদিন ধরে বিশিষ্ট গুরুভাইদের মধ্যে গুরুদেবের "প্রেম" প্রবন্ধটি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। একজন বিশিষ্ট দার্শনিক ও পণ্ডিত গুরুভ্রাতার ধারণা যে উক্ত প্রবন্ধটি গুরুদেবের রচিত নয়। হয়তো কোনো পারলৌকিক অনুন্নত আত্মা কর্তৃক কথিত। এই কারণে কতিপয় গুরুভ্রাতা এইসব কথার প্রতিবাদ করে, মহামণ্ডলের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেন। এবং মহামণ্ডলের উৎসবাদি বর্জন করে, নিজেরা বিভিন্ন স্থানে, উৎসব করে বেড়াচ্ছেন।"
এই লেখা দেখে, আমার মনে গুরুদেবের "প্রেম" প্রবন্ধটির গভীরে প্রবেশ করতে ইচ্ছা করে। সেই মতো আমি প্রবন্ধটি পড়তে শুরু করি। সেখানে কি পেলাম সেই কথাই আজ বলবো।
আসলে প্রেম করা যায় না। প্রেম হয়। প্রেম বই পড়ে হয় না। কতকগুলো জিনিস আছে আপন নিয়মে হয়, কেন হয়, কি ভাবে হয়, তা আমরা জানি না। শুধু হয়। প্রেম এমনি একটা জিনিস। আর প্রেম এমনি একটি বিষয়, যা নিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করা যায় না। এই আলোচনা সমানে সমানে হয়, না যায় গুরুজনদের সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা, না যায় স্নেহভাজনদের সঙ্গে। তাই আমাদের সমাজে "প্রেম" কথাটা স্পর্শকাতর। আর কেউ প্রেমে পড়েছে শুনলে আমরা বলি
- "ও গোল্লায় গেছে" । তাই "প্রেম" প্রবন্ধটি নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ ছিল না।
- "ও গোল্লায় গেছে" । তাই "প্রেম" প্রবন্ধটি নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ ছিল না।
প্রেম একটা নৈস্বর্গিক বিষয়। এ কাউকে বোঝানো যায় না। যে প্রেমে পড়েনি তাকে বোঝানো কঠিন, প্রেম কি জিনিষ। পরম-আত্মাকে যেমন ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তেমনি প্রেম এমন একটি বিষয় যা কাউকে বলে বোঝানো যায় না। এটি এমনি এমনি হয়।
কিন্তু মহাত্মা গুরুনাথের এই "প্রেম" প্রবন্ধটি পড়ে আমার ধারণা একদম পাল্টে গেছে। প্রেম-ও যে একটা করার বিষয়, তা এই প্রবন্ধটি না পড়লে আমি জানতে পারতাম না। প্রেম যে একটা শিক্ষার বিষয়, তা এই প্রবন্ধটি না পড়লে আমি জানতে পারতাম না।
মহাত্মা গুরুনাথ এখানে হাতে ধরে, প্রেম করা শিখিয়েছেন। কিসে প্রেম হয়। কিসে প্রেম টিকে থাকে, কিসে প্রেম নষ্ট হয়। কিসে প্রেম গভীর হয়, ইত্যাদি বিষয় এমন নিখুঁত ভাবে ভাষার কারিকুরি দিয়ে আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন, তা আমার কাছে অচিন্তনীয়।
গুরুদেবের বই পড়ে, বুঝতে আমার মতো সাধারণের খুব কষ্ট হয়। তার পরিশীলিত ভাষা, ও বিষয়ের কাঠিন্যে আমি হারিয়ে যাই। ভাষার দঙ্গলে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি। তবু, আমি আমার মতো করে যা বুঝেছি তারই দুএকটি কথা বলি।
গুরুদেব, "প্রেম ও অভেদ জ্ঞান " আলোচনা প্রসঙ্গে বলছেন, - প্রেম এই শব্দ শ্রবণ করলে, মানুষের নিধুবাবুর টপ্পা, দাশরথির পাঁচালির কথা মনে পড়ে। আমাদের মধ্যে অনেকেই ঘৃণা প্রকাশ করে, আসলে "প্রেম" এই মহান সরল গুন্কে ঘৃণা করা দূরে থাকুক, এটি সবথেকে আদরের এবং সাধনের বিষয়। তাই সত্যিকারের প্রেমের আলোচনা না কোনো শাস্ত্রীয় বিষয়, না কোনো কেতাবের বিষয়। একটা সত্যি গল্প বলি।
কোনো একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেবার জন্য,অনেক খুঁজে একজন যথার্থ সাধুকে আমরা আমন্ত্রণ করে ছিলাম। তো অনুষ্ঠানের দিন,আমি সাধুকে আনতে গেলাম । প্রেমের উপরে তার বক্তৃতা দেবার কথা ছিল। সাধুকে সঙ্গে নিয়ে, আমরা দ্রুত চলছিলাম। যেতে যেতে আমরা এক ক্ষত-বিক্ষত লোককে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখলাম। লোকটি চিৎকার করছিলো - আমাকে একটু সাহায্য করো। ...
আমি ভাবলাম লোকটাকে গাড়িতে তুলে নেই। আবার ভাবলাম, লোকটাকে নিলে তো তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের দেরি হয়ে যাবে। সাধু চুপচাপ ছিলেন, হয়তো আজকের বক্তৃতার বিষয় অর্থাৎ "প্রেম" নিয়ে কি বলা যায়, সে সব কথা ভাবছিলেন। আহত লোকটি আমাদের অবাক করে, বলে উঠলো, মহারাজ, আজতো আপনি প্রেমের উপরে বক্তৃতা দেবেন। আমি সেখানেই যাবো, আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে চলুন। আমরা দাঁড়ালাম। লোকটি আবার বললো, আমাকে ফেলে যেওনা। আমি মরণাপন্ন। তোমরা আমাকে ফেলে গেলে আমি মরে যাবো। আর আমি যদি মরে যাই, তবে ভগবান জানবে,তুমি কত নিষ্ঠূর, মিথ্যে প্রেমের কথা বলে বেড়াচ্ছো আর যদি না মরি, তবে সবাই জানবে, তুমি নিষ্ঠূর , প্রেমের কনা মাত্র তোমার মধ্যে নেই, আর তা আমিই বলে বেড়াবো। আমরা অবাক হয়ে গেলাম, তার কথা শুনে। গাড়ি থেকে নেবে তার কাছে গেলাম। সাধু তাকে দেখে একটু ঘাবড়ে গেলেন, তার মুখ দেখে মনে হলো সাধু আহত ব্যক্তিকে চেনেন। সাধু একটা হাত তার কাঁধে রাখলেন। অস্ফুট স্বরে সাধু বললেন, আমি যেন কোথায় তোমাকে দেখেছি। নিমেষে সাধু হাত সরিয়ে বলে উঠলো, এই লোকটা খুব খারাপ, নিষ্ঠূর। না না আমি তোমাকে বাঁচাতে পারবো না। বলে আমাকে বললো - চলো, এই সব লোক মরে গেলেই ভালো। আমাদের অবাক করে দিয়ে, আহত লোকটি জোরে হেসে উঠলো। বললো সাধু আমরা আছি বলেই তোমরা আজ সাধু। আমরা যদি সব মরেই যাই তবে কাকে তুমি প্রেমের কথা শোনাবে ? আমাদের মতো খারাপ লোক আছে বলেই তোমরা বক্তৃতা দিয়ে বেড়াও। আমরা না থাকলে তুমি কার ভালো করবে ? সাধু ফিরে তাকালেন, - আমাকে বললেন। চলো সঙ্গে নিয়ে চলো - সত্যিই তো ওরা আছে বলেই আমাদের দরকার। সবাই যদি ভালো হতো তবে আমাদের দরকার ফুরিয়ে যেত। সেদিন আর সাধুর আর বক্তৃতা দেওয়া হলো না। বেঁচে গেল খারাপ লোকটি।
মহাত্মা গুরুনাথ, তার "প্রেম" প্রবন্ধে, প্রেমের কথা বলতে গিয়ে, প্রবন্ধের শেষে স্থূল প্রেমের কথা বলেছেন। আমার মনে হয়, সেইজন্যই মহাত্মা গুরুনাথের কথা কিছু লোকের পছন্দ হয় নি। আসলে সত্যকে উম্মুক্ত করতে হবে, অনাবৃত করতে হবে। তা না হলে আমরা সত্যকে জানবো কি করে ? কিন্তু আমরা নগ্নতা পছন্দ করি না। সমাজ সত্যকে ঢেকে রাখতে চায়। মহাত্মারা তা উন্মূক্ত করেন।আমাদের তাই ভালো লাগে না।
আসলে প্রেমকে বুঝতে গেলে কামকে বুঝতে হবে। কাম সম্পর্কে আমাদের ভুল ধারণা ভাঙতে হবে। তা-নাহলে প্রেমকে বোঝা যাবে না। আমার স্ত্রী যখন পঁচা খৈল ভেজানো বালতি, গাছের কাছে রাখে, তখন তার থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। সার থেকে তো দুর্গন্ধ-ই বেরোবে। কিন্তু তা ঠিক ঠিক মতো ব্যবহার করতে পারলে বীজ অঙ্কুরে রূপান্তরিত হবে, অংকুর চারাগাছে পরিণত হবে। চারাগাছ বড় হবে, সজীব হবে, আর যখন সেই গাছে ফুল ফুটবে, তখন মন-প্রাণ ভরে যাবে। আমরা কখনো কি ভেবেছি, এই দুর্গন্ধযুক্ত পচা খৈল থেকে একদিন সুগন্ধের জন্ম হবে। আসলে কামকে আমাদের রূপান্তরিত করতে হবে, তবেই আমরা প্রেমের স্বাদ পাবো। প্রেম নৈস্বর্গিক, আর তার উৎপত্তি কাম থেকেই। আমাদের তথাকথিত ধর্মগুরুরা, এই পবিত্র কামকে ধর্মের অন্তরায় বলে বুঝিয়েছেন। যা অসত্য। মহাত্মা গুরুনাথ সেটা বলেননি। তাই ব্রাহ্মণ্য সমাজের যারা ধারক বাহক তারা গুরুদেবের বিরুদ্ধে গিয়েছেন। এতে গুরুদেবের কিছু এসে-যায় না।
প্রেমের তিনটি স্তর । প্রথমতঃ শরীর বা শারীরিক। যারা শরীরকে ঘিরে প্রেমের কথা ভাবে, তারা প্রেমের এই নিম্ন স্তরে পড়ে আছে। দ্বিতীয়তঃ হচ্ছে মানসিক। এটি খুব চঞ্চল। অস্থির। শরীর স্থির, কিন্তু মন চঞ্চল। শারীরিক প্রেম জোর করে হতে পারে, মানসিক প্রেম জোর করে হতে পারে না। শরীর জড় পদার্থ। আমাদের সমাজ এই শারীরিক প্রেমে বিশ্বাসী। তাই তারা প্রেমের নামে বিবাহ-প্রথা চালু করেছে। আসলে এটা কোনো প্রেমের বাঁধন নয়। এটি শারীরিক ভোগের একটা সামাজিক স্বীকৃতি মাত্র। প্রেম তরল, মন চঞ্চল, শরীর জড়। জড়পদার্থ এক জায়গায় পড়ে থাকে। সকাল-সন্ধ্যে একই রকম পড়ে থাকে। কিন্তু সুগন্ধি ফুল সকালে ফোটে, সন্ধ্যায় ঝরে যায়। শারীরিক স্তরে আমাদের যে প্রেম, তা মৃত, জড় তাই সকাল-সন্ধ্যে একই রকম থাকে। কিন্তু মানসিক প্রেম , সকালে এক রকম, সন্ধ্যায় আর এক রকম। আসলে শরীরের সঙ্গে থাকতে থাকতে আমাদের শরীরের সঙ্গে একটা সন্মন্ধ তৈরি হয়, যাকে আমরা প্রেম বলি। কিন্তু আসলে ওটা একটা সম্পর্ক মাত্র। তার বেশি কিছু নয়। একটা যান্ত্রিক সম্পর্ক মাত্র। মানসিক প্রেম আবার অন্য কথা বলে। মানসিক প্রেম ক্ষনে ক্ষনে পাল্টায়। তাই আমরা দেখি, যারা প্রেম-করে বিয়ে করেছিল। বিয়ের পরে তাদেরপ্রেম উবে যায়, প্রেমহীন হয়ে যায়। ভাবে ভুল করেছি। মন তখন, অন্য প্রেমাস্পদ খোঁজে। শারীরিক স্তরে প্রেমের স্থিরতা আসতে পারে। কিন্তু মনের স্তরে প্রেমের কোনো স্থিরতা নেই। তৃতীয়তঃ আর একটা প্রেম আছে যাকে বলে আধ্যাত্মিক প্রেম। এই স্তরে যখন প্রেম হয়, তখন তা হয় অনন্ত জন্মের জন্য।আধ্যাত্মিক প্রেম, মানসিক প্রেমের মতো চঞ্চল নয়, আবার শারীরিক প্রেমের মতো জড় নয়। এই প্রেম পুরুপুরি অনুভূতির বিষয়। এখানে না আছে শরীরের খেলা, না আছে মানসিক অস্থিরতা। এইখানে মানুষ অস্তিত্বের স্তরে প্রাণপুরুষের সঙ্গে এক হয়ে যায়। দূরত্ত্ব ঘুচে যায়। নদী যেমন শান্ত হয়ে যায়, সমুদ্রের কাছে গিয়ে। পাহাড়ে অর্থাৎ উৎসে সে ছিল চঞ্চল। সমুদ্রে সে হলো শান্ত।
আমাদের এই সব পথই পেরিয়ে আসতে হবে । অর্থাৎ শারীরিক-প্রেম , মানসিক-প্রেম পেরিয়ে যেতে হবে এবং তবেই আমরা একদম শেষে আধ্যাত্মিক প্রেমের ধাপে পৌঁছাতে পারবো । সিঁড়ির নিচের ধাপে যেমন পা রাখতে হবে। উপরের ধাপেও পা রাখতে হবে। আমরা যদি ভাবি, ধর্মকথা আলোচনা করতে বসে, শারীরিক প্রেমের কথা কেন বলবো। তাহলে আমরা ভুল করবো। আমরা যেখানে আছি, আমাদের সেখান থেকেই শুরু করতে হবে। আমরা প্রথম ধাপে পা না দিয়ে যদি একদম উপরের ধাপে পা রাখতে চাই, তবে ভুল করবো। আমরা কোনোদিনই শেষ ধাপে পা দিয়ে শুরু করতে পারি না। আমরা তো শরীরেই আছি, আমাদের তো মন আছে, অতয়েব আমাদের শরীর থেকেই শুরু করতে হবে। ধীরে ধীরে আমরা মানসিক প্রেম আয়ত্ত্ব করতে পারবো, একদম শেষে আধ্যাত্মিক প্রেমের অপ্রাকৃত মজা আমরা উপলব্ধি করতে পারবো।
তাই মহাত্মা গুরুনাথ প্রেমের কথা আলোচনা করে গিয়ে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব কথাই বলেছেন। প্রকৃত সাধক বুঝে নেবেন। প্রেমকে গুরুদেবের বই পড়ে বোঝা যাবে না। গুরুদেবের সাক্ষাৎ সান্নিধ্যে যারা এসেছেন, তাঁরাই প্রেমের উপলব্ধি করতে পেরেছেন। প্রেমের বই পড়ে, বিদ্বেষ উৎপন্ন হতে পারে, রাগ হতে পারে, প্রেম হতে পারে না। তাই যারা যথার্থ গুরুর সান্নিধ্যে এসেছেন, তারাই প্রেমের মাহাত্য বুঝতে পারেন। আর যাদের সে সৌভাগ্য হয়নি, তারা গুরুদেবের বই পড়ে রেগে গেছেন। ভগবান এদের মঙ্গল করুন।
নারীর মধ্যে শারীরিক প্রেম, মাতৃত্বের স্বাদ পাবার জন্য উৎপন্ন হয়। পুরুষ কেবলমাত্র শারীরিক সুখ খোঁজে। এই শারীরিক সুখে সাময়িক ভাবে, ক্ষনিকের জন্য আধ্যাত্মিক প্রেমের স্বাদ পায়। তাই সে বারবার নারীর কাছে ফিরে যায়। এই প্রেমের এক ঝলক আবার ধ্যানের মধ্যেও পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু যে ধ্যানের স্বাদ পায় নি, সে তো নারীকেই খোঁজে। পুরুষ সন্তান চায় না। যদি চায়-ও তা সে তার সম্পত্তির অধিকারীর পাবার জন্য খোঁজে। প্রেমের জন্য নয়, ভালোবাসার জন্য নয়।পুরুষ সন্তান চায় না, পুরুষের সন্তান হয়। পুরুষ সন্তানের জন্য মিলিত হয় না, তারা মিলিত হয় তাই সন্তান আসে। কিন্তু নারী সন্তান চায়, আর তা আধ্যাত্মিক সুখের জন্য। সন্তান হবার পরে, নারীর কামবোধ কমে যায়। পুরুষকে তখন সে পাষন্ড মনে করে। কামাসক্ত পুরুষের মধ্যে স্ত্রী নরক দেখতে পায়, প্রেম নয়। শুধু ভয় আর সুরক্ষার জন্য মিলিত হয় মাত্র। মা সন্তানের মধ্যে আধ্যাত্মিক স্তরের সম্পর্ক অনুভব করে। তাই মা সন্তানের জন্য সব কিছু করতে পারে, এমনকি প্রাণ দিতে পারে। কারন সেখানে সে আধ্যাত্মিক সুখ পায়। ভাগ্যবান কোনো স্ত্রী যদি স্বামীর মধ্যে আধ্যাত্মিক সুখ পায়, তখন তারা ভাই বোন হয়ে যায়। পতিকে তখন সে সন্তানের মতো মনে করে। তার মাথায় বিলি কেটে দেয় , গায়ে হাত বুলিয়ে দেয়। পুরুষ তখন, স্থির হয়ে যায়। স্ত্রীর মধ্যে সে মায়ের ছায়া দেখে, ভগ্নির ছায়া দেখে।
সব শেষে, রামকৃষ্ণের জীবন থেকে আধ্যাত্মিক প্রেমের একটা উৎকৃষ্ট উদাহরণ দিয়ে শেষ করবো। মা সারদা দক্ষিনেশ্বর এসেছেন। মনে অনেক আশঙ্কা, বাসনা নিয়ে স্বামীর ঘর করতে এলেন। পথে জ্বর হয়েছিল। রুগ্ন শরীর। ঠাকুর বললেন, তুমি এতদিনে এলে ? এর পরে, ঠাকুর সুযোগ পেলেই, মা সারদাকে মানব জীবনের উদ্দেশ্য, কর্তব্য ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান দেওয়া শুরু করলেন। রাতে একসাথেই এক বিছানায় শুতেন। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের কোনো কিছুই হলো না। ঘুমোনোর আগে, মা সারদা ঠাকুরের পা টিপে দিতেন। একদিন সাহস করে, পা টিপতে টিপতে, জিজ্ঞেস করলেন, "আমাকে তোমার কি বলে বোধ হয়" ? আসলে তখনও সারদা তো মা হয়ে ওঠেনি। বিবাহিত জীবনের একটা স্বপ্ন তো তার মধ্যে ছিল। কিন্তু ঠাকুরের কাছ থেকে তার কোনো সারা না পেয়ে, বাধ্য হয়েই এই প্রশ্নের সম্মুখীন করে দিলেন, ঠাকুরকে। ঠাকুর বললেন, " যে মা মন্দিরে আছেন, তিনিই তো শরীরের জন্ম দিয়েছেন, এখন নহবতে বাস করছেন, তিনিই এখন আমার পদসেবা করছেন। সাক্ষাৎ আনন্দময়ী রূপে তোমাকে দেখতে পাচ্ছি।"
একরাতে, মা সারদাকে নিজের পাশে শুয়ে থাকতে দেখে, ঠাকুর আপন মনে বলছেন, মন এরই নাম স্ত্রীশরীর, লোকে একে পরম উপাদেয় বস্তু বলে জানে, ভোগ করবার জন্য সর্বদা লালায়িত হয়। কিন্তু এসব গ্রহণ করলে দেহেই আবদ্ধ থাকতে হয়। সচ্চিদানন্দঘন ঈশ্বরকে লাভ করা যায় না। ভাবের ঘরে চুরি। পেটে এক মুখে এক, রেখো না। সত্যি করে বলতো তুমি শরীর চাও না ঈশ্বর চাও। যদি শরীর চাও তবে সামনেই রয়েছে গ্রহণ করো। এই না ভেবে মা সারদাকে স্পর্শ করতে উদ্দত হলেন। কিন্তু কুন্ঠিত মন সহসা সমাধি পথে বিলীন হয়ে গেল। রামকৃষ্ণ আর এক জায়গায় বলছেন, মা সারদা যদি এতো ভালো না হতো, যদি দেহবুদ্ধি দিয়ে আমার সংযমের বাঁধ ভেঙে দিতো, তাহলে আমার দেহবুদ্ধি আসতো কি না কে বলতে পারে ?
তাই গুরুদেব বলছেন, মাসে এক বছরে বারো, যদি পারো আরো কম করো। শরীর ছেড়ে শরীরির সাথে প্রেমে মগ্ন হও। আমরা যারা গুরুদেবের কথা বুঝতে পারি না, তারা অযথা বিতর্কে জড়াই। দেহপাশে আবদ্ধ হই। প্রেম ঈশ্বরের সর্ব্বোৎকৃষ্ট গুন্। সেই গুনের সাধনা করতে হবে আমাদের ।
ওঁং মহাত্মা গুরুনাথায় নমঃ।
নারীর মধ্যে শারীরিক প্রেম, মাতৃত্বের স্বাদ পাবার জন্য উৎপন্ন হয়। পুরুষ কেবলমাত্র শারীরিক সুখ খোঁজে। এই শারীরিক সুখে সাময়িক ভাবে, ক্ষনিকের জন্য আধ্যাত্মিক প্রেমের স্বাদ পায়। তাই সে বারবার নারীর কাছে ফিরে যায়। এই প্রেমের এক ঝলক আবার ধ্যানের মধ্যেও পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু যে ধ্যানের স্বাদ পায় নি, সে তো নারীকেই খোঁজে। পুরুষ সন্তান চায় না। যদি চায়-ও তা সে তার সম্পত্তির অধিকারীর পাবার জন্য খোঁজে। প্রেমের জন্য নয়, ভালোবাসার জন্য নয়।পুরুষ সন্তান চায় না, পুরুষের সন্তান হয়। পুরুষ সন্তানের জন্য মিলিত হয় না, তারা মিলিত হয় তাই সন্তান আসে। কিন্তু নারী সন্তান চায়, আর তা আধ্যাত্মিক সুখের জন্য। সন্তান হবার পরে, নারীর কামবোধ কমে যায়। পুরুষকে তখন সে পাষন্ড মনে করে। কামাসক্ত পুরুষের মধ্যে স্ত্রী নরক দেখতে পায়, প্রেম নয়। শুধু ভয় আর সুরক্ষার জন্য মিলিত হয় মাত্র। মা সন্তানের মধ্যে আধ্যাত্মিক স্তরের সম্পর্ক অনুভব করে। তাই মা সন্তানের জন্য সব কিছু করতে পারে, এমনকি প্রাণ দিতে পারে। কারন সেখানে সে আধ্যাত্মিক সুখ পায়। ভাগ্যবান কোনো স্ত্রী যদি স্বামীর মধ্যে আধ্যাত্মিক সুখ পায়, তখন তারা ভাই বোন হয়ে যায়। পতিকে তখন সে সন্তানের মতো মনে করে। তার মাথায় বিলি কেটে দেয় , গায়ে হাত বুলিয়ে দেয়। পুরুষ তখন, স্থির হয়ে যায়। স্ত্রীর মধ্যে সে মায়ের ছায়া দেখে, ভগ্নির ছায়া দেখে।
সব শেষে, রামকৃষ্ণের জীবন থেকে আধ্যাত্মিক প্রেমের একটা উৎকৃষ্ট উদাহরণ দিয়ে শেষ করবো। মা সারদা দক্ষিনেশ্বর এসেছেন। মনে অনেক আশঙ্কা, বাসনা নিয়ে স্বামীর ঘর করতে এলেন। পথে জ্বর হয়েছিল। রুগ্ন শরীর। ঠাকুর বললেন, তুমি এতদিনে এলে ? এর পরে, ঠাকুর সুযোগ পেলেই, মা সারদাকে মানব জীবনের উদ্দেশ্য, কর্তব্য ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান দেওয়া শুরু করলেন। রাতে একসাথেই এক বিছানায় শুতেন। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের কোনো কিছুই হলো না। ঘুমোনোর আগে, মা সারদা ঠাকুরের পা টিপে দিতেন। একদিন সাহস করে, পা টিপতে টিপতে, জিজ্ঞেস করলেন, "আমাকে তোমার কি বলে বোধ হয়" ? আসলে তখনও সারদা তো মা হয়ে ওঠেনি। বিবাহিত জীবনের একটা স্বপ্ন তো তার মধ্যে ছিল। কিন্তু ঠাকুরের কাছ থেকে তার কোনো সারা না পেয়ে, বাধ্য হয়েই এই প্রশ্নের সম্মুখীন করে দিলেন, ঠাকুরকে। ঠাকুর বললেন, " যে মা মন্দিরে আছেন, তিনিই তো শরীরের জন্ম দিয়েছেন, এখন নহবতে বাস করছেন, তিনিই এখন আমার পদসেবা করছেন। সাক্ষাৎ আনন্দময়ী রূপে তোমাকে দেখতে পাচ্ছি।"
একরাতে, মা সারদাকে নিজের পাশে শুয়ে থাকতে দেখে, ঠাকুর আপন মনে বলছেন, মন এরই নাম স্ত্রীশরীর, লোকে একে পরম উপাদেয় বস্তু বলে জানে, ভোগ করবার জন্য সর্বদা লালায়িত হয়। কিন্তু এসব গ্রহণ করলে দেহেই আবদ্ধ থাকতে হয়। সচ্চিদানন্দঘন ঈশ্বরকে লাভ করা যায় না। ভাবের ঘরে চুরি। পেটে এক মুখে এক, রেখো না। সত্যি করে বলতো তুমি শরীর চাও না ঈশ্বর চাও। যদি শরীর চাও তবে সামনেই রয়েছে গ্রহণ করো। এই না ভেবে মা সারদাকে স্পর্শ করতে উদ্দত হলেন। কিন্তু কুন্ঠিত মন সহসা সমাধি পথে বিলীন হয়ে গেল। রামকৃষ্ণ আর এক জায়গায় বলছেন, মা সারদা যদি এতো ভালো না হতো, যদি দেহবুদ্ধি দিয়ে আমার সংযমের বাঁধ ভেঙে দিতো, তাহলে আমার দেহবুদ্ধি আসতো কি না কে বলতে পারে ?
তাই গুরুদেব বলছেন, মাসে এক বছরে বারো, যদি পারো আরো কম করো। শরীর ছেড়ে শরীরির সাথে প্রেমে মগ্ন হও। আমরা যারা গুরুদেবের কথা বুঝতে পারি না, তারা অযথা বিতর্কে জড়াই। দেহপাশে আবদ্ধ হই। প্রেম ঈশ্বরের সর্ব্বোৎকৃষ্ট গুন্। সেই গুনের সাধনা করতে হবে আমাদের ।
ওঁং মহাত্মা গুরুনাথায় নমঃ।
ওঁং পরম-পিতা পরম-আত্মায় নমঃ
আমি এই লেখার প্রতিবাদ করছি। কারন এখানে গুরুনাথের লেখনীকে অতি স্থুল ও বিকৃতভাবে উপস্থাপন ও ব্যাখ্যা করা হয়েছে যা অত্যন্ত গর্হিত ও দুঃখজনক।
ReplyDelete